লিখেছেন: সাকীব হাসান
আজ ২৯ তারিখ। রুমীর জন্মদিন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা আসলেই মনে পড়ে জাহানারা ইমামের কথা। উনার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য দলে দলে মানুষ সমবেত হয়েছিলো শাহবাগে। অল্প কিছু তরুণ রুমীর চেতনাকে বুকে ধারণ করে গড়ে তুলেছিল শহীদ রুমী স্কোয়াড। আন্দোলনের কথা ভাবলেই শহীদ জননীর বিশাল প্রতিকৃতির ছবি ভাসে সবার চোখে। এই ছেলেগুলা দিনরাত খেটে বানিয়েছিল এই প্রতিকৃতি। আর তা একসময় এই আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে গেছে।
আজকে এই ছেলেগুলা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তেছে। আমরণ অনশনের ৬৩ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ওদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিয়েছে। এই ছেলেগুলার অবস্থান প্রথম থেকেই পরিস্কার। এদের কোন দল নেই, স্বার্থ নেই। এদের দাবী অত্যন্ত স্পষ্ট। বাংলাদেশে দাবী- দাওয়া আদায়ের নামে মানুষ গাড়ি ভাংচুর করে, বাস পোড়ায়, মানুষ মারে। আজকে ও খবরে দেখলাম হরতালে ভয়াবহ সহিংসতার খবর। এরা তাদের দাবী আদায়ে সম্পূর্ণ অহিংস পথ বেছে নিয়েছে।
রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের গ্লানি থেকে দেশকে মুক্ত করার দায় তো শুধু এই ছেলেগুলার না। আমাদের সবার। যদি আরও লোক একত্রিত হয় ওদের সাথে, সংহতি জানায় তখন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। বাধ্য হবে সরকার একটা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিতে।
আমাদের দেশের লাশের রাজনীতির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই ছেলেগুলার কোন দলীয় খুঁটি নেই। এরা বাঁচল কি মরলো তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না কোন রাজনৈতিক দল। কিন্তু যদি আবার দলে দলে লোকজন একত্রিত হয়, সবাই মিলে বজ্রকন্ঠে শ্লোগান তুলে তখন সরকার বাধ্য হবে কিছু করতে। সবাই হয়ত নানা বিষয়ে হতাশ। কিন্তু এই দারুন মেধাবী ছেলেগুলা (দুজনের বয়স নাকি ১৮ এর কম) তো আমাদের সবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিছে। ওরা তো অনেক করছে।ওদের ও তো কত কাজ। কিন্তু আন্দোলনের শুরু থেকে নিরলস ভাবে খেটে গেছে। আজ এদেরকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার।
এই ছেলেগুলা ‘সূর্যের দিন’ আনবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। কিন্তু এখন তো দেশে পাকিস্তানী হানাদাররা নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে ও কি রুমীদের প্রাণ দিতে হবে? অনশনকারীদের অনেকের অবস্থাই খুব খারাপ। ওদের কিছু হলে, এবার কিন্তু রক্তের দাগ আমাদের হাতে লেগে থাকবে।
শহীদ জননী আজ বেঁচে নেই। উনি থাকলে নিশ্চয়ই আশ্চর্য হয়ে দেখতেন উনার সন্তান কীভাবে আবার বাংলায় ফিরে এসেছে। উনি নিশ্চয়ই উনার ছেলেদের এবার আর হারিয়ে যেতে দিতেন না।
আজ রুমীর জন্মদিন। আজ যদি এই রুমীদের কিছু হয়, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
হা, সত্যি তিনি দেখতেন কী করে তার সন্তানেরা ফিরে এসেছে। ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।