১৩৪৭ সালের অক্টোবর। ১২ টি বাণিজ্য জাহাজ কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্যসাগরে দীর্ঘ যাত্রা শেষে সিসিলির মেসিনা বন্দরে এসে থামল। এখানে লোকজন এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখল। জাহাজগুলোর নাবিকরা অধিকাংশই মারা গিয়েছে। যারা বেঁচে আসে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। তাদের শরীরে ভয়াবহ জ্বর এবং ক্ষুধামন্দা। সব থেকে অবাক করা বিষয় তাদের শরীরে কালো ঘা যেখান থেকে রক্ত আর পুঁজ বের হচ্ছে। এভাবেই রোগটার নাম হল কালো মৃত্যু।
সিসিলির বন্দর কতৃপক্ষ সাথে সাথে জাহাজ গুলো সরানোর নির্দেশ দিল।
কিন্তু বড় দেরি হয়ে গিয়েছে।
এই কালো মৃত্যু কি ছিল? এটি ছিল আসলে প্লেগ নামের একটি রোগ যা ইরসিনিয়া পেস্টিস নামে একটি গ্রাম নেগেটিভ রড ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়। এবং এই কালো মৃত্যুর উৎপত্তিস্থল ছিল চীন। এই ব্যাকটেরিয়াটি ফ্রান্স-সুইস ব্যাকটেরিওলজিস্ট আলেকজেন্ডার ইরসিন কর্তৃক আবিস্কৃত। ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এটি বিশ্বের ভয়ংকর প্রাণঘাতী তিনটি রোগের একটি হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ১৩২৮ সালে এই প্লেগ চীনে ৯ কোটি লোককে খুন করে। যেহেতু চীন পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত ব্যবসাকেন্দ্র তাই সেখান থেকে এই রোগটি পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ইঁদুর এই রোগের বাহক এবং Rat Flee নামক এক পতঙ্গ এই রোগ এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে ছড়াতে সাহায্য করে।
১৩৪৮ এর আগস্টের ভিতর প্লেগ ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে। কালো মৃত্যু নামটি এখান থেকেই আসে। একটি খুনি ইউরোপে প্রবেশ করেছে এবং মধ্যযুগীয় পথ্য এর কাছে অসহায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, “Realizing what a deadly disaster had come to them, the people quickly drove the Italians from their city. But the disease remained, and soon death was everywhere. Fathers abandoned their sick sons. Lawyers refused to come and make out wills for the dying. Friars and nuns were left to care for the sick, and monasteries and convents were soon deserted, as they were stricken, too. Bodies were left in empty houses, and there was no one to give them a Christian burial.”
আরেক ইটালিয়ান কবি রোগটির ভয়াবহতা দেখে লিখেছেন, “ মানুষ সকালবেলা বন্ধুদের সাথে নাস্তা করে এবং দুপুরবেলা স্বর্গে পূর্বপুরুষের সাথে খাবার খায়। ”
শীতের সময় মনে হল রোগটি উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন ফ্লিগুলো এই রোগকে আরও ছড়িয়ে দিল। আরও নতুন নতুন জায়গা আক্রান্ত হল।
পরবর্তী পাঁচ বছর এই কালো মৃত্যু ইউরোপে আড়াই কোটি লোককে মেরে ফেলে যা ছিল ঐ মহাদেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ।
বছর পেরিয়ে শতাব্দী হল তারপরও মহামারী চলতে লাগল। যারা বেঁচে গেল তারা প্রতি মুহূর্তে ভয়ে ভয়ে সময় কাটাতে লাগলো। কখন এই মরণ ফিরে আসে আবার। ১৬০০ সালের আগে এই মহামারী বিদায় নিল না। মধ্যযুগীয় ইউরোপ এই মহামারী থেকে বাঁচতে পারল না। এই ধাক্কা তারা কাটিয়ে উঠতে পারে নাই। এত মানুষ মারা গেল যে শ্রমিকের স্বল্পতা দেখা দিল। শ্রমিকরা বেশি বেতন চাইল কিন্তু ভূমিমালিকরা তা দিতে রাজি হল না। এর ফলে চতুর্বিংশ শতাব্দীর শেষে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং ইটালিতে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দিল।
এই রোগ মানুষের বিশ্বাসকেও নাড়া দিল। তারা প্রশ্ন করতে লাগল যে তাদের প্রার্থনার ফলাফল কি? তারা তো লাখে লাখে মারা গিয়েছে। ইউরোপে রাজনৈতিক সংঘাত এবং দার্শনিক বিপ্লবের সূত্রপাত হল।
আমার কাছেও গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি নিয়ে লেখাটি বড় বেশী অসম্পূর্ন বলে মনে হল।
আজকাল অনেকে এসব ঐতিহ্যবাহী মহামারী গোছের রোগের কারন হিসেবে ভিনগ্রহের এলিয়েনদের যোগ আছে ধারনা করছেন। মূল কথা হল ভিনগ্রহ থেকে স্পেস শিপে করে এলিয়েন এসে পৃথিবীতে মহামারীর জীবানু ছড়িয়ে গেছে। প্রমান হল সে যুগের নানান ছবি, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা যাতে তেমন আলামত দেখা যায়।
ভিনগ্রহ তত্ত্ব বাদ দিয়ে ক্লিনিক্যাল দিক আরেকটু বিস্তারিত জানালে ভাল হত, আমার ধারনা ছিল যে এই রোগ পৃথিবী থেকেই সম্পূর্ন লোপ পেয়েছে।
অনেক দিন পর মৃত্যুর কথা মনে পরে গেল। কাল জ্বর ভাল না। কাল জ্বর এর ফাঁসী চাই!
আসলে ইঁদুর প্রাণীটা দুশ্চরিত্র। কাল মৃত্যু কমে গেলেও মূল্যবান বই যেভাবে নষ্ট করছে আমার ঘরে, ইচ্ছে করে ওদের বংশ নির্বংশ করে দেই। যাইহোক। বাংলাদেশ এ প্লেগ এর কি অবস্থা? বাংলাদেশ প্লেগ থেকে বেঁচে গেল কি করে?
ব্ল্যাক ডেথের ঘটনাটি ভয়াবহ ও বিভৎস ছিল সন্দেহ নাই। ইউরোপের উপর এর প্রভাব ছিল সুদূর-প্রসারী।
লেখককে ধন্যবাদ। (তবে আরেকটু বিস্তারিত হলে ভাল হত)।
@সৈকত চৌধুরী,
আপনাকে ধন্যবাদ।
@নিঃসঙ্গ গ্রহচারী,
এই ভয়ংকর ঘটনা ইংল্যান্ডের টেক্সটবুকে প্রাইমারী ও জুনিয়র স্কুলের ইতিহাসে পড়ানো হয়। ছোটরাও কিছুটা জানে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখেছেন, কিন্তু লেখাটা যেন অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। আরো অনেক কিছু লিখতে পারতেন। লেখাটায় অনেক কিছু যেন মিস হয়ে গিয়েছে। এই প্লেগের কথা উঠলেই যে জায়গাটার কথা লিখতেই হয় তা হলো কাউন্টি অব ডরসেটের মেলকম্ব নামের একটি জায়গা যা সাউথ সি এর উপকুলবর্তি টাউন ওয়েমাউথের একটি ভিলেইজ বা গ্রাম। এলাকাটা, ইংল্যান্ডে আমার প্রথম জীবনের তথা যৌবনকালের সবচেয়ে সুন্দর ও স্মৃতিবিজড়িত জায়গা। কেউ যদি তিরিশবছর আগের কোন গ্রীষ্মকালে ওয়ামাউথ-বিচ দেখতে গিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই দেখার কথা সেখানে সাগরপাড়ে ওয়েমাউথের আকাশে পতপত করে উড়ছে কমনওয়েলথ কাউন্ট্রির অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। পতাকাটা নিজ হতে বানিয়েছিলেন ম্যারিয়া। অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলার জন্যে দুঃখিত। যেহেতু ওয়েমাউথ, পোর্টল্যান্ড, পোর্সমাউথ, সাউথাম্পটন সমুদ্র বন্দর এলাকা, প্লেগ ছড়াবার জন্যে এ গুলো উপযুক্ত স্থান। আর শেষে যে বলেছেন- ইউরোপে রাজনৈতিক সংঘাত এবং দার্শনিক বিপ্লবের সূত্রপাত হল। তা ইংল্যান্ডের ব্যাপারে কতটুকু সত্য তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। কোথা হতে এর আগমন আর সঠিক মৃতের সংখ্যা কত এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধেও মতপার্থক্য আছে। যাক বিষয়টা নিয়ে লিখেছেন যে সেটাই আমাদের জন্যে অনেক পাওয়া। লেখা চলতে থাকুক। (Y)
আড়াই কোটি ??? অবিশ্বাস্য বড় সংখ্যাটা!
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আসলেই অবিশ্বাস্য বড় সংখ্যাটা! 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁