বড়দিনের শুভেচ্ছা।

আকাশ মালিক

নভেম্বরের প্রথম দিক থেকেই দোকান-পাট রাস্তা-ঘাটে, পার্কে রেস্তুরায় বড়দিনের সাজ সাজ রব শুরু হয়ে যায়। লাল সবুজ নীল সোনালী রঙের অলংকার পরনের জন্যেই যেন ইংল্যান্ডের বৃক্ষাদি গায়ের পত্র-পল্লব সরিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকে। অপরূপ এক সাজে সজ্জিত হয় সারা ইংল্যান্ড। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছোট মেয়ে একটা কমপ্লেইন জানালো। আব্বু, একটা ক্রীসমাস ট্রি আমাদের দরকার ছিল। কারণ জিজ্ঞেস করায় উত্তর দিলো- ‘বড় আপু মানচেষ্টার ইউনিভার্সিটি থেকে, মেজো আপু নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছেন, তাদের জন্যে ক্রীসমাস প্রেজেন্ট কিনে রেখেছি, কিন্তু রাখার জায়গা পাচ্ছিনা’। আশচর্য ব্যাপার হলো এই ক্রীসমাস প্রেজেন্টগুলোর বেশীরভাগই কিনেছে আমার বউ। এরাও এক ধরণের মুসলমান। ঈদ উৎসবও করে ক্রীসমাস উৎসবও করে। ছেলে মেয়েরা মিলে যে ঘরটাকে ঝাড়বাতি, টিনস্যল, কাগজের ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিল বউ নিষেধ করেনা। সুতো দিয়ে টাঙ্গানো ছোট ছেলে আর মেয়েটার দুই রুমভর্তি তাদের বন্ধু-বান্ধবির দেয়া ক্রীসমাস কার্ড। প্রতিযোগীতা চলছে, ছোটরা বড় বোনদের দেখাচ্ছে কার কার্ড বেশী। আর এই সমাজেই কিছু বাঙ্গালী মুসলমান আছেন যারা তাদের সন্তানদের ক্রীসমাসের সকল আনন্দ-উৎসব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। গত দুই সপ্তাহের নার্সারী আর জুনিওর স্কুলের বেশ কয়েকটি ক্রীসমাস পার্টি, পান্টোমাইম, এসেম্বলি ও নাটকে উপস্থিত হয়ে তা লক্ষ্য করেছি। জানিনা স্কুলের সহপাটিদের আনন্দ-উৎসবে অংশ গ্রহন থেকে বঞ্চিত সেই ছোট্ট ছোট্ট শিশু কিশোরদের মনে কী অনুভুতি হয়। তাদেরকে অন্যান্যরা ক্রীসমাস কার্ড উপহার দেয় কিন্তু তারা কাউকে দিতে পারেনা।

দুপুর বারোটার মধ্যেই দেখা গেল, ডাইনিং টেবিল মোটামুটি নানা বর্ণের নানা রঙের উপহার খেলনায় ভরপুর হয়ে গেছে। তারা জানিয়ে দিল আজ সারাদিন টেলিভিশন তাদের দখলে থাকবে, বাইরে যাওয়া চলবেনা, শুধু ফিল্ম আর ফিল্ম। আমিও তাদের সাথে ছবি দেখায় শরিক হতে পারতাম, কিন্তু এই দিন কি আর সেই দিন আছে? এক সময় ক্রীসমাস দিনে অপেক্ষায় থাকতাম, বেন-হুর, জিসেস অফ নাজারাত, টেন কমান্ডমেন্ট দেখার আশায়। আজ সে সকল ফিল্ম লাইব্রেরিতেও খুঁজে পাওয়া যায় না। Charlton Heston কী অভিনয়টা না করেছেন বেন-হুর আর টেন কমান্ডমেন্টে । দেখার মত দুইটা ছবি। ধর্ম মানিনা কিন্তু ধর্মীয় ছবি দেখা সত্যি বলতে অন্যান্য ছবির চেয়ে আমার বেশী ভালই লাগে। হয়তো এর কারণ হতে পারে, বইয়ে পড়া অত্যাশ্চার্য গল্পের সাথে ছবির মিল খোঁজা। দ্যা মেসেজ ছবিটা কিনেই রেখেছি ঘরে, মাঝে মাঝে এখনো দেখি। হামজার চরিত্রে আন্টনি কুইনের কী দারুণ অভিনয়। আর হামজার কলিজা ভক্ষণকারী হিন্দা ও তার স্বামী আবু সুফিয়ানকে বাস্তবে দেখার লোভ আমার সব সময়ই ছিল। মহাভারতের দীর্ঘ সিরিজও দেখেছি, তবে ইদানিং বেহুলা লখিন্দরের এক ছবি দেখে আমি মহাভারতে নয় এক মহাসাগরে ডুব দিয়ে দিছি। আমার আগামী লেখা সেই গল্পটা নিয়েই হবে ইনশাল্লাহ।

আজকের দিনে বাঙ্গালীদের প্রায় সকল রেষ্টুরেন্ট বন্ধ। প্রচুর মানুষ সামাগমের লক্ষ্যে এই দিনটিকে বিজয় দিবস পালনের জন্যে অনেকেই উপযুক্ত মনে করেন। বেশ কয়েকটি টাউনে আজ রাতে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। আমাদের এলাকার আওয়ামী লীগও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দেশ থেকে বেশ কয়েকজন গানের শিল্পী আনা হয়েছে, উৎসবটা জমবে ভাল। সেখানে যাবার আগে ভাবলাম মুক্তমনাকে বড়দিনের শুভেচ্ছেটা জানিয়ে যাই। মুক্তমনার সকল পাঠক-লেখকবৃন্দকে-

যারা এখনও বেন-হুর, জিসেস অফ নাজারাত, ‘টেন কমান্ডমেন্ট’ আর ‘দ্যা মেসেজ’ এই ছবিগুলো দেখেন নি, তাদের জন্যে নিচে লিংক দেয়া হলো।

বেন-হুর,

জিসেস অফ নাজারাত,

টেন কমান্ডমেন্ট’

দ্যা মেসেজ’