ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-১
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-২
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-৩
সাম্প্রদায়িক ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো শিক্ষার ফল কোন মাত্রায় হতে পারে? কেন আমাদের চিন্তিত হতে হবে? এটা ব্যাখ্যা করা খুব অল্প কথায় কষ্টকর; সাম্প্রদায়িকতার কুফল কেবল অপরকে গালিগালাজ/ মৌখিক ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো কিংবা বড়জোর মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ভাংগার মত দুবৃত্তপনার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকৃত পক্ষে পুরো মনোজনগতকেই করে রাখে পংগু; যার ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে জীবন দর্শন, ইতিহাস চর্চা, রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা, শিক্ষা দীক্ষা সব ক্ষেত্রে। সোজা কথায় সব কিছুকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে চিন্তা করে বিকৃত, অবাস্তব, এক তরফা বিশ্লেষন দাঁড় করিয়ে সম্পূর্ন ভুল শিক্ষা দেওয়া হয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহন করা হয় অর্থহীন হীনমন্যতা। এ ধরনের বিকৃত, এক তরফা বিশ্লেষনের কিছু উদাহরন দেব। বিশেষ করে কিছুটা ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা ছাড়া কুফলের মাত্রা কিংবা বর্তমান কালের মেকানিজমও ভাল বোঝা যাবে না।
সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার ব্যাপক কুফল ব্যাক্তিগত ও সামষ্টিক দু’যায়গাতেই ব্যাপক মাত্রায় দেখা যায়। এই সাম্প্রদায়িকতা কখনো বা আপাত চোখে নির্দোষ, নিরীহ এমনকি মহা উপকারী মনে করার কারনে এর অন্য চেহারা সহজেই ঢাকা পড়ে যায়, এমনকি নিজেরা এর জন্য সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ বা চরম আঘাত খেলেও সেটাও স্বীকার করতে ধার্মিক মন চায় না। জন্মসূত্রেই সব দেশের মুসলমানই নিজেদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের বাইরেও মুসলমান নামের আরেকটি জাতীয়তাবোধ প্রাপ্ত হয়। তাতে দোষের কিছুই নেই, দ্বৈত জাতীয়তাবোধ অপরাধ বা দোষের কিছু নেই। প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসী অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরাও যেমন খৃষ্টান, ইহুদী, কিংবা হিন্দুরাও ধর্মীয় দ্বৈত জাতীয়তাবাদের পরিচয় জন্মসূত্রেই পায়। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মত বায়বীয় জাতীয়তাবাদ ছাড়াও দুই দেশের নাগরিকত্ব নিয়েও বহু লোকে শান্তিপূর্ন ভাবে বসবাস করছে, কোন রকমের আদর্শগত সঙ্ঘাতে সচরাচর পড়ে না। মুসলমান সমাজে এই ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্ব দেওয়া হয় অত্যাধিক। আপাত নিরীহ এই ধর্মীয় পরিচয়ের ব্যাপারে তাকে বাল্যকাল থেকেই এতই সচেতন করে তোলা হয় যে তার মনে অনেক সময়ই সরাসরি বা অবচেতন ভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের ব্যাপারে জন্মে এক ধরনের উদাসীনতা বা অনীহা, ক্ষেত্র বিশেষে বিদ্বেষ; উলটো দিকে নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মে অন্ধ পক্ষপাত। শিক্ষা ব্যাবস্থায় জাতিগত ঘৃনা বিদ্বেষের পাঠ নিঃসন্দেহে এই মানসিকতা বাড়ায়।
মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, শুনতে ভালও লাগে, এর কিছু উপকারিতা আছে নিজেও বিশেষ করে প্রবাসে পেয়েছি। এর অন্য দিকও আছে। যেমন এই ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের কারনে ‘৭১ সালের পাকিস্তান কিংবা আরব দেশের একজন মুসলমান বাংগালী মুসলমানের ধর্মের ভাই, পাশের বাড়ির বাংগালী বিধর্মী তার আপন নয়। আমাদের প্রথম পর্বের মূল ধর্মশিক্ষা বই এর কথাই ধরেন, এমনকি পরের কোট করা নানান কাল ও দেশের নানান বড় বড় আলেমদের রেফারেন্স দেখুন; জেহাদী কথাবার্তার প্রসংগ বাদ দিলেও সেসব সূত্রে পরিষ্কারভাবেই বিধর্মীদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখার ব্যাপারেই কড়া রকমের রাখঢাকের নির্দেশনা আছে। এমনকি প্রতিবেশীর হক পূরন কিংবা দান করার মত মৌলিক মানবিক ব্যাপারেও আগে মুসলমান খুঁজে বার করতে হবে, এর এক বাস্তব উদাহরন জাফর ইকবালের ’৭১ এর এক স্মৃতিচারনমূলক লেখায় আছে, এক মাওলানা সাহেব অসহায় হিন্দু পরিবারকে দান করলে সওয়াব পাওয়া যাবে না বলে তাদের সামনেই সবক দিচ্ছেন। সাম্প্রদায়িকতা মানেই রক্তারক্তি খুনাখুনী কিংবা রামু ষ্টাইলে মন্দির প্যাগোডা ভাংগা নয়। আমাদের দেশের বেশীরভাগ লোকে আমার মনে হয় সাম্প্রদায়িকতা বুঝতে তেমন কিছুই বোঝেন। নিজেকে কেবল নিজ সম্প্রদায়ের মাঝে সীমাবদ্ধতা করাটাও অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতা, যদিও এ ধরনের সাম্প্রদায়িকতা আইনের চোখে অপরাধ নয়। এ ধরনের নির্দোষ সাম্প্রদায়িকতা আপাত চোখে নিরীহ হলেও দেশের বা সমাজের ঐক্যের প্রশ্নে তুলতে পারে বিভেদের দেওয়াল, বিধর্মীদের মৌলিক অধিকারের ব্যাপারে করে তুলতে পারে উদাসীন যা এক পর্যায়ে তাদেরকে নিজ দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশেই সংশয়ী করে তুলতে পারে।
’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক বাঁধ ভাংগা আবেগের কাছে সব হিসেব নিকেশের পরাজয়, যা সম্ভব হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক দর্শনের কারনেই। প্রবাসী সরকারের পোষ্টারে তখন লেখা ছিল – ‘বাংলার খ্রীষ্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান-আমরা সবাই বাংগালী’। জাত ধরে কার সাথে বন্ধুত্ব করা নিষেধ, কে কার বিরুদ্ধে হাজার বছর ধরে জাতিগত ষড়যন্ত্র করে আসছে, কার আল্লাহ বড় নাকি কার দেবতা বড়, কাকে জাত ধরে অভিভাবক বা বন্ধু মানা যাবে না এই ধরনের ধর্মীয় বিধিবিধান খোঁজ করার কথা কারো মাথায় আসেনি। কিংবা ইতিহাসের আস্তাকুড় খুঁজে কার পূর্বপুরুষ কয়শো বছর আগে আরব দেশ থেকে এসে ভারত দখল করেছিল আর কার পূর্বপুরুষ কাকে জাত্যাভিমানের কারনে হাতে পানি ঢেলে দেয়নি এসব আবর্জনার দূর্গন্ধ টানার কথাও সাময়িক ভাবে ভুলতে পারা গেছিল। সোজা কথায় বাংগালী জাতীয়তাবাদের কাছে পরাজিত হয়েছিল ধর্মীয় জাতীয়তাবোধের যাবতীয় সংকীর্নতা। এ কারনেই বাংগালী জাতীয়তাবাদের প্রতি বদর রাজাকার গোষ্ঠির তীব্র বিরাগ। আজকের দিনে রাজাকার বদর গোষ্ঠীর গায়ে গতরে বেড়ে ওঠারও একটি বড় দর্শনগত কারন বাংগালীর নিজ সংস্কৃতিকে দিনে দিনে দূরে ঠেলে দেবার প্রবনতা।
ইসলামী জাতীয়তাবোধে কড়াভাবে বিশ্বাসীদের অধিকাংশই ’৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যূদয় মানতে পারেনি, যোগ দিয়েছিল পাক শিবিরে, আজো তারা অনেকেই বাংলাদেশের অস্তিত্বে একই কারনেই বিশ্বাস করে না। এদের মধ্যে যারা এমনকি বাংলাদেশের অস্তিত্ব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মেনেও নিয়েছে তারাও বাংগালী জাতীয়তাবোধ বা বাংগালী সংস্কৃতিকেই মনেপ্রানে ঘৃনা করে। বাস্তবে যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, কল্পনার রাজ্যে তারা ইসলাম নামক এক ইউটোপিয়ার রাজ্যের গর্বিত নাগরিক। তাদের কাছে বাংগালী সংস্কৃতি মানে হল হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। বিশ্বের সব মুসলমান মিলে এক ইসলামী খেলাফত গঠন করবেন এবং মোল্লা আলেমগনের নির্দেশনায় সেই স্বপের দেশ চালাবেন সেই সুদিনের আশায় তারা দিন গুজরান করেন, তাদের কাছে বাংগালী পরিচয় তেমন কোন অর্থ বহন করে না, উলটো বাংগালী জাতীয়তা সেই স্বপ্নের ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের পথে বাধা বলেই মনে হয়, কারন সেই কল্পনার রাজত্বে বাংগালী, পাকিস্তানী, ভারতীয় এ ধরনের ভৌগলিক জাতীয়তার অস্তিত্ব নেই, আছে কেবল মুসলমান পরিচয়। এটা মনে করার কোন কারন নেই যে এই মানসিকতার সকলেই রাজাকার কিংবা কেবলমাত্র রাজাকার ধরনের স্বল্প সংখ্যক লোকেই এমন ধারনা পোষন করে। এ মোটা দাগের ভুল অনেকেই করেন। এ বিষয়ে পরে বলব।
এই রাজনৈতিক দর্শনের সরল কারন ধর্মীয় নানান সূত্রে প্রাপ্ত যে জ্ঞান তাদের চিন্তা চেতনা আচ্ছন্ন করে রাখে তাতে তারা জগতের যাবতীয় সব সংঘটন বিচার করে ধর্মের পাল্লায়, যে পাল্লার দুই দিকে মুসলমান এবং অমুসলমান, বাকি সব ভ্যারিয়েবল বা বিচার্য এই পাল্লাতেই মূল্যায়িত হয়। আরব সংস্কৃতির বাইরের যে কোন সংস্কৃতিই ‘অনৈসলামিক’ কারন আরব দেশে নাজিলকৃত তাদের ধর্মীয় সূত্রে এসব সংস্কৃতির কোন উল্লেখ নেই, অনারব সংস্কৃতি মানেই যেহেতু বিধর্মীর, কাজেই গ্রহন করা যাবে না। বাংগাল দেশের আদি বাসিন্দা ছিল পৌত্তলিক হিন্দুরাই, কাজেই বাংগাল সংস্কৃতি মানে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি যাকে গ্রহন করা যায় না, সোজা হিসেব। অনারব যে কোন সংস্কৃতিকেই ধরে নেওয়া হয় স্বপ্নের ইসলামী সমাজ কায়েমের পথে বাধা; সে বাংলা ভাষা সংস্কৃতিই হোক আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতিই হোক। নিজ ধর্মীয় জাতীয়তার শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং বিধর্মীদের সম্পর্কে আজন্ম নানান কটূকথা শুনতে শুনতে বিধর্মীদের ভাষা সংস্কৃতি সম্পর্কেও ঘৃনা আসবে এটাই স্বাভাবিক। এটা এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলে দেখা গেছে, পাক আমলেও দেখা গেছে (এ সময় অবশ্য নিজ ভাষাকেও অনেকে ঘৃনা করেছে), এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশেও এর কবল থেকে নিস্তার নেই। পশ্চীমের উদাহরতার সুযোগ নিয়ে সেসব নানান দেশেও কিভাবে নিজেদের সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং বিধর্মী সংস্কৃতির বদনাম প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে দেওয়া হছে তারও উদাহরন গত পর্বে দিয়েছি।
অনেক ইসলাম প্রিয় ব্যাক্তি উপমহাদেশে মুসলমানদের আর্থ সামাজিক পতনের জন্য এত তরফা দায়ী করেন হিন্দুত্ববাদ, ইংরেজের মুসলিম বিদ্বেষ এমন কারনকে। ভাবখানা এমন যে বেনিয়া ইংরেজরা ইসলাম বিদ্বেষ এবং হিন্দু প্রীতির কারনে মুসলমানদের বাদ দিয়ে হিন্দুদের কোলে বসিয়ে নিজ গাঁটের পয়সা উজাড় করে বিলিয়েছে, হিন্দুদের মগজে অস্ত্রপ্রচার করে করে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ভরে দিয়েছে। সুলতানি আমলেও যে মুসলমানদের অবস্থা হিন্দুদের তূলনায় খুব ভাল ছিল তাও নয়। সাধারন হিন্দু মুসমানের অবস্থা একই রকম হতদরিদ্রই ছিল। হিন্দু ধনিক শ্রেনীর উত্থান বাংলায় মূলতঃ ইংরেজ নয়, সুলতানি আমলের শেষের দিকেই শুরু হয়। সিরাজউদ্দোলার পরাজয়কে এই সমস্ত ধর্ম প্রিয় বিশ্লেষক দেখে বিধর্মীর কাছে মুসলমানের পরাজয়, যার পর থেকে নাকি মুসলমানদের কপালে শনি নেমে আসে। মজার ব্যাপার হল সিরাজউদ্দোলা যে ক’জন রাজার ওপর রাজস্ব আদায়ের জন্য নির্ভর করতেন তারা প্রায় সকলেই ছিলেন হিন্দু, সে আমলের বেশীরভাগ বড় ব্যাবসায়ী যাদের নাম পাওয়া যায় সকলেই প্রায় হিন্দু বা জৈন। সে আমলের সবচেয়ে বড় ব্যাংকার ছিল জগত শেঠ। ইংরেজ আমলে মুসলমানদের পতনের মূল সূত্রপাত ছিল বস্তুত গোঁড়ামী; বিধর্মী ইংরেজী শিক্ষার প্রতি প্রবল অনীহা। যার ফলশ্রুতিতে আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান বিজ্ঞান অর্জন থেকেই তারা নিজেদের বঞ্চিত করেছে, শিক্ষা বলতে যে মাদ্রাসা মক্তব বাদেও কিছু হতে পারে তা বুঝতে তাদের বহুদিন লেগেছে, এর মূল্য পাকিস্তান বাংলাদেশকে আজো দিতে হচ্ছে।
১৮৩৫ সালে ব্রিটিশরা রাজ ভাষা ফার্সী বদল করে ইংরেজী প্রবর্তন করে। ইংরেজের তখন রাজ্য চালাতে দরকার ছিল অসংখ্য ইংরেজী জানা কর্মচারী। মুসলমানরা এই বাস্তবতা গ্রহনে অস্বীকার করে, গোঁয়াড়ের মত কাফের বিধর্মী ইংরেজী শেখা যাবে না পন করে। অন্যদিকে ততকালীন হিন্দু্রাও যে বিরাট উদারমনা ছিল তা নয়, তবে তারা বাস্তব বুঝত। মুখে ইংরেজদের ম্লেচ্ছ ফ্লেচ্ছ বলে গাল দিলেও ইংরেজী শিক্ষা শুরু করে ভাল চাকুরি পেতে থাকে, এভাবে সামাজিক ভাবে উচ্চ অবস্থানে চলে যায়, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে ঝুকে। মুসলমানদের এমনিতেই ছিল ক্ষমতা হারানোর বেদনা, এর সাথে যোগ হয় দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ার (প্রকৃত পক্ষে বলা উচিত হিন্দুদের উত্তরোত্তর উন্নতি দেখার ফলে) কারনে হীনমন্যতায় ভোগা। হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক কোন সময়ই উপমহাদেশে স্বাভাবিক না হলেও এভাবে দূরত্ব আরো অনেক বেড়ে যায়। বেনিয়া জাতি ইংরেজরা ধর্মকর্ম নিয়ে তেমন মাথা না ঘামালেও মুসলমানদের সাথে তাদের দূরত্ব হয় বেশী, কারন তাদের আশেপাশের কর্মচারী, আমত্যগন অধিকাংশই হিন্দু। সিপাহী বিদ্রোহে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই যোগ দিলেও বিদ্রোহ দমনের পর এ কারনে মুসলমানদের ওপর রাজরোষ পড়েছে বেশী পরিমানে।
বাংগালী হিন্দুরাও মুসলমানদের বাংগালী বলে মনে করত না, সে আমলের সাহিত্যিকদের মাঝেও এই ধরনের মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাব দেখা যায়। ভারতীয় স্কুলের ইতিহাস পাঠ্যসূচীতেও কিছু এক তরফা বিশ্লেষন আছে, যেখানে উপমহাদেশে মুসমানদের দেখানো হয় দখলদার বিদেশী শক্তি হিসেবে যাদের কোন ভাল অবদান নেই। তবে উল্টোদিকে আবার পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের কারনে বাম ধারার ঐতিহাসিকরা মুসলমান শাসনের অনেক কালো দিক ইচ্ছেকৃত ভাবে গোপন করেছে এমন অভিযোগও আছে। ভারত আমাদের মূল আলোচ্য নয়। ভারতীয়রা আর যাইই করুক জুজুর ভয়ে নিজেদের অন্তত নিজেরাই পিছিয়ে রাখেনি।
ততকালীন মুসলমান সমাজে ইংরেজী শিক্ষার অবস্থান কেমন তা স্যার সৈয়দ আহমদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝা যেতে পারে। স্যার সৈয়দ আহমেদ ছিলেন সে আমলে মুসলমানদের মধ্যে আধুনিকতার প্রতিভূ, তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে ইংরেজী হেলা করে জাতি কেবলই পিছাবে, সেই উপলব্ধির মূল্যও দিতে হয়েছে তাকে; তিনি যখন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু করেন তখন তাকে মোল্লা চক্র যথারীতি কাফের উপাধি প্রদান করে। বস্তুত মোল্লা চক্র এবং তার সমর্থকদের কাছে কোন রকম প্রগতিশীলতার কথা, নিজেদের আত্মসমালোচনার পরিনাম সব যুগেই অত্যন্ত কঠোর। আজকের দিনেও এর তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। মুসলমান সমাজে যারাই সামান্য আত্মসমালোচনা করেন তাদের ধরা হয় ঘরের শত্রু বিভীষন হিসেবে। আগের যুগে সরাসরি কাফের বলা হত, বর্তমানে তাদের ছদ্মবেশী নাস্তিক, পৌত্তলিক মুসলমান, মুসলমান নামধারি বিধর্মীর এজেন্ট জাতীয় বহুকিছু বলে অভিহিত করা হয়। ব্লগের কোন পরীক্ষিত ইসলাম ডিফেন্ডার ভাইও মোল্লা চক্র, গোড়ামির সমালোচনা করলে ক্ষমা পান না, তার হয়েও পুরনোদের স্বাক্ষ্য দিতে হয় যে তিনি আসলেই সাচ্চা মুসলমান, ছদ্মবেশী এজেন্ট নন।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রঃ) ছিলেন ব্রিটিশ আমলের উপমহাদেশের এক বড় আলেম, তার লেখা বহু বই পুস্তক ইসলাম প্রিয় জগতে এ যুগেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার লেখা “ইছলাহুর রুসূম” বা কুসংস্কার সংশোধন বইতে তিনি সরাসরি ইংরেজী, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা এসব শিক্ষা করা যে অনুচিত তা কোরানের আলোকে ব্যাখ্যা করে কুসংস্কার দূরীকরনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন [১]। ভাল চাকু্রী লাভের আশায় এসব অপবিদ্যা আয়ত্ব করার বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এই প্রবনতা কি আজো গেছে? ইরান বছর দুয়েক আগে দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান, আইন, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ জাতীয় ১২ বিষয় অতিমাত্রায় পশ্চীমা বলে আর নুতন বিভাগ খোলা হবে না এবং বর্তমান বিভাগগুলির কোর্স সংশোধন করা হবে ঘোষনা দিয়েছে [২] । সম্প্রতি আরো এক ধাপ এগিয়ে মহিলাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০টি কোর্স তারা নিষিদ্ধ করেছে [৩]।
আমার দাদা নানাদের জেনারেশনে মুসলমান সমাজে পড়শুনা করা বলতে মূলত বোঝাতো মাদ্রাসা মক্তব। সে সময় কিংবা আরো আগে মুসলমানদের মধ্যে হাতে গোনা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে পড়াশুনা করেছেন তাদের বিষয় দেখা যায় আরবী, ইসলামের ইতিহাস, নয়ত বড়জোর বাংলা, ফার্সী এই ধরনের। সেই একই যুগে এমনকি তারও আগে একই বাংলাতেই জন্ম নিয়েছেন জগদীশচন্দ্র, প্রফুল্ল রায়, সত্যেন বোস, মেঘনাদ সাহার মত বিজ্ঞানীরা। ইউরোপে প্রথম ভারতীয় হিশেবে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন আমাদেরই ঢাকা জেলার নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়, ১৮৭৬/৭৭ সালে। শেষ জীবনে তিনি ইসলাম গ্রহন করেন। ’৪৭ এর দেশভাগের পর পূর্ববংগ পড়েছিল বুদ্ধিজীবি শূন্যতায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও পড়ে গেছিল ভয়াবহ শিক্ষক সংকটে। পশ্চীম বাংলার বিখ্যাত বুদ্ধিজীবিদের এক বড় সংখ্যকেরই আদি নিবাস আমাদের বাংলাদেশ। সে তূলনায় ’৪৭ এর দেশভাগের পর সেখান থেকে আমাদের বুদ্ধিজীবি প্রাপ্তির তালিকা প্রায় শূন্য। আমাদের মেট্রিকে বাংলা দ্রুত পঠন হিশেবে ‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাস ছিল বিংশ শতকের গোড়ার মুসলমান সমাজের নানান কুসংস্কার, বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষা গ্রহনের অনীহা বিষয়ক গোঁড়ামী নিয়ে।
’৭১ সালের যেসব রাজাকার বই লিখেছে তাদের বই পড়লে দেখা যায় যে সকলের চিন্তাধারার পরতে পরতে আছে ইসলাম প্রেম এবং বাংগালী সংস্কৃতির প্রতি পাক সেনাদের মতই অপরিসীম ঘৃনা বিদ্বেষ। একই ধরনের ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় বর্তমান কালের বহু মোল্লা আলেম শ্রেনীর লোকের কথাবার্তাতেও। বাংগালী সংস্কৃতির প্রতি এই ঘৃনা বিদ্বেষ হালাল করার উপায় হিসেবে সনাতন হিন্দু সমাজের কঠোর বর্নপ্রথার জুজু দেখা, হিন্দু জমিদার বাড়ির সামনে মুসলমানকে জুতো পরতে দিত না স্মরন করানো (ভাবখানা এই নিয়ম কেবল মুসলমান প্রজাদের জন্যই ছিল এবং এখনো আছে), গ্লাসে জল না দিয়ে হাতে ঢেলে দিত (ভাবখানা হিন্দু সমাজ এখনো এসব নিয়মের চর্চা করে যাচ্ছে এবং স্কুলে শিক্ষা দিচ্ছে) এসবের বয়ান। হিন্দুরা দুশো বছর ব্রিটিশের সাথে তাল মিলিয়ে মুসলমানদের শোষন করেছে কারন জমিদাররা বেশীরভাগ ছিল হিন্দু। অদ্ভূত বিশ্লেষন। জমিদার শ্রেনী ছিল হিন্দু সমাজের ভেতরেও সংখ্যার বিচারে অতি স্বল্প সংখ্যক, তাদের শোষন, অত্যাচার থেকে দরিদ্র হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি। ভাবখানা এমন যে হিন্দু জমিদাররা বেছে বেছে কেবল মুসলমান প্রজাদেরই শোষন করেছিল আর হিন্দু প্রজাদের সোনায় মুড়ে রেখেছিল। মুসলমান জমিদাররা সংখ্যায় কম হলেও তারাও একই ভাবে গরীব প্রজাদের অত্যচার শোষন করেছে। তাদের বাড়ির সামনে দিয়েও জুতো পরা ছাতা খোলা নিষিদ্ধ ছিল। শেষের দিকে ইসলাম প্রিয় ভাইদের প্রিয় হয়ে ওঠা হুমায়ুন আহমেদের অয়োময় নাটকেও দেখা যায় মীর্জা বাড়ির সামনে দিয়ে গরীব প্রজা কাশেমকে বলপূর্বক জুতো খোলানো হয়েছে, কাশেম জমিদার হয়ে আবার খুলিয়েছে সোলায়মানকে।
এই ধরনের বিকৃত এক তরফা তত্ত্ব এখনো বহু রাজাকার সমর্থক এবং আধা রাজাকার গোছের লোকজন অকপটে বয়ান করে চলেছেন যাতে হিন্দু ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বিদের প্রতি বিদ্বেষ সদা জিইয়ে থাকে, এথনিক ক্লিঞ্জিং এর প্রতি পরোক্ষভাবে হলেও সহানুভূতি জন্মে, বাংগালী সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ জন্মে, এবং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ববাদের দাবী বজায় থাকে। স্বাধীনতাত্তোর ভারতের নানান সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ এই চক্রের কাছে আশীর্বাদের মতই দেখা দিয়েছে। এসব তারা বয়ান করেন কেবল ইতিহাস শিক্ষা দিতে নয়, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখতে। এ কারনেই এই অধ্যায় একটু গুরুত্ব দিয়ে লিখছি।
ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আন্দোলনেও হিন্দু মুসলমান সকলেরই অংশগ্রহন ছিল। ব্রিটিশের দালালিতেও হিন্দু মুসলমান কোন সম্প্রদায়ের উচ্চশ্রেনী/মধ্যম শ্রেনীই বাদ ছিল না, এখানেও ধর্মের কোন ব্যাপার ছিল না, তারা তাদের শ্রেনী স্বার্থের কারনেই তেমন ভূমিকা নিয়েছিল। খান বাহাদুর, রায় বাহাদুর এসব টাইটেল জমিদাররা ইংরেজের দালালি করেই পেত। যেমন সিপাহী বিদ্রোহ দমনে ইংরেজকে বিশেষ সহায়তার পুরষ্কার স্বরুপ ঢাকা ও আশে পাশের বেশ ক’জন হিন্দু মুসলমান জমিদারকে পুরষ্কৃত করা হয়। জমিদার আবদুল গণিকে সবচেয়ে বিশিষ্ট ভূমিকার কারনে নবাব উপাধী দেওয়া হয় [৪]। ঢাকা শহরের উন্নয়নে নবাব পরিবারের অসংখ্য অবদান থাকলেও সে নবাব উপাধির ইতিহাস হল সিপাহী বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ রাজকে সক্রিয় সহায়তা প্রদান। নবাব পরিবারের সাথে ব্রিটিশ রাজের ব্রিটিশ আমলের শেষ পর্যন্তই অত্যন্ত সুসম্পর্কই ছিল, এক নবাব হাবিবউল্লাহ ইংরেজের হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াইও করেছেন। নবাব পরিবার হিন্দু হলেই এসব তথ্য ভর করে দারুন সব বিশ্লেষন ফাঁদা যেত; যেমন ঢাকার হিন্দু জমিদার কাফের ব্রিটিশের সাথে ষড়যন্ত্র করে মুসলমান সিপাহীদের নির্মভাবে ফাঁসী দিয়েছিল বিশ্ব মুসলমানের মেরুদন্ড ভেংগে দেওয়ার কূট চক্রান্ত করে।
রাজাকারদের চোখে পাকিস্তান=ইসলাম, পাকিস্তান ভেংগে বাংলাদেশ গড়া মানে ইসলামের পরাজয়, হিন্দুত্ববাদের বিজয়, কাজেই পাক সমর্থন করা ঈমানী দায়িত্ব। একই রকমের মূল্যায়ন সাধারন ভাবে দেশের আলেম সমাজেরও ছিল। হিন্দু ভারতের সহায়তায় মুসলমান পাকিস্তান ভাংগা তত্ত্বীয় ধর্মজ্ঞানে কোনভাবেই সমর্থন করে না বলাই বাহুল্য। ইসলামের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকেই বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাদের ঘৃণার আগুন আজো জ্বলছে, যার প্রকাশ ঘটে নানান রূপে, যেমন বাংলা নববর্ষ হারাম, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া শিরকী এসব ফতোয়া প্রদান করার মাধ্যমে। আবারো বলছি, বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সম্পর্কে এমন ঘৃনা বিদ্বেষ কেবল পাক সেনা এবং অল্প কিছু আধা শিক্ষিত মোল্লা বা রাজাকার বদরের মানসিকতা ভাবা খুবই ভুল হবে। এই ধরনের মানসিকতার অধিকারী ছিলেন সেকালের ইসলাম প্রেমিক উচ্চশিক্ষিত বুদ্ধিজীবিকূলও। হিন্দু রবীন্দ্রনাথকে বাংলায় নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে বেড়াতেন ওনারা। অধ্যাপক আলী আহসান ’৬৪ সালে পাকিস্তানের স্বার্থে রবীন্দ্রনাথকে বিসর্জন দেবার দাবী জানিয়েছিলেন। একজন মৃত কবি ১৩ কোটি লোকের বিশাল এক দেশের জন্য রীতিমত হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন কেবলমাত্র ধর্মবিশ্বাসের কারনে।
মাওলানা আকরাম খাঁ ছিলেন ব্রিটিশ আমলের একমাত্র উল্লেখযোগ্য বাংলা পত্রিকা আজাদের প্রতিষ্ঠাতা। উনি নানান ধর্মীয় আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। উনি উদারমনা মাওলানা ছিলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে সদ্ভাব রাখায় বিশ্বাস করতেন। ’৫২ সালে পাক সরকার তার নেতৃত্বে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারে এক কমিটি করে, সেখানে তিনি মত দিয়েছিলেন যে বাংলা হল হিন্দুদের ভাষা, একে পরিমার্জন করে মুসলমান উপযোগী ভাষা বানাতে হবে। উদারমনা মাওলানার ভাষ্য এমন হলে বাকিদের চিন্তাধারা কেমন ছিল বোঝা যেতে পারে। ‘৬৭ সালে মুসলিম লীগের খান এ সবুর (’৭১ এর এক ভয়াবহ রাজাকার) রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করার দাবী জানানোর পর আজাদ পত্রিকায় হিন্দু সংস্কৃতির জয়গান গাওয়া রবীন্দ্রনাথকে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল বলে মত প্রকাশ করা হয় [৫]। উর্দু হরফে বাংলা প্রবর্তনের মত বহুবিধ ফর্মুলা এই চক্র পাক আমলে বহুবার প্রস্তাব করেছে।
মনে রাখতে হবে যে এরা সকলেই বাংগালী বা বাংলাভাষী, উর্দুভাষী পাকিস্তানী নয়। এদের বুদ্ধিবৃত্তিক বংশধররা বহাল তবিয়তেই আমাদের মাঝেই আছে। যতদিন না ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা বন্ধ না হয় এরা থাকবেই, দিনে দিনে আরো বাড়বে। জাতির মাঝে সফল ভাবে গড়ে তুলবে আদর্শগত বিভাজন যা ’৭৫ এর পর থেকে প্রকট ভাবে হয়েছে। এই বিভাজন কিন্তু হিন্দু মুসলমানের মত সরল বিভাজনও নয়।
আবার অতীতে ফিরে যাই। বংগবন্ধু ’৭১ সালে ঠিকই বুঝেছিলেন আসন্ন আন্দোলনে কোন পক্ষ বাংগালী হয়েও পাক দালালি করবে। ’৭১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী বাংলা একাডেমীতে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক এক স্মরন সভায় বংগবন্ধু সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বুদ্ধিজীবিদের উদ্দেশ্যে এক কঠোর বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, “৪৮ সালের ১১ই মার্চ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে কোন মুসলমান গণপরিষদ সদস্য তার প্রতিবাদ জানাননি। এর প্রতিবাদ করেছিলেন একজন হিন্দু, তিনি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। …যখন আমাদের সংস্কৃতির ওপর ক্রমাগত আঘাত এসেছে, যখন আমরা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিনত হয়ে গেছিলাম, তখন ক্ষমতার লোভে সবাই এত বেশী মুসলমান হয়ে গেছিলেন যে এর বিরুদ্ধে কেউ একটি কথাও বলেননি। ……সূর্যসেনের নাম বলতে আপনারা ভয় পান, কারন তিনি ছিলেন হিন্দু” [৬]। বংগবন্ধুও অনেকের মতই এই চক্রের সাম্প্রদায়িকতার কারন সম্ভবত ‘ক্ষমতার লোভ’ বুঝতেন যা সঠিক নয়।
ইসলাম প্রিয় বুদ্ধিজীবিরা পাকিস্তান আমল থেকেই বাংগালী সংস্কৃতিকে নিষ্ঠার সাথে ঘৃনা করে গেছেন, ’৭১ সালেও পক্ষ বেছে নিতে দ্বিধা করেননি। এই দলের একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, যিনি পাকিস্তানের স্বার্থে রবীন্দ্রনাথকে বিসর্জন দেবার আহবান জানালেও বিস্ময়করভাবে কলকাতায় হাজির হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে চমক দেন। সবচেয়ে দূঃখজনক হল যে পাক সমর্থক বা রাজাকার মানেই দাঁত মুখ খিঁচানো দানব প্রকৃতির কিংবা মূর্তিমান শয়তানের মত কূটিল যে চেহারা প্রথমেই ভেসে উঠে এসব স্বাধীনতা বিরোধীরা সকলে তেমন নন। এদের মধ্যে সত সজ্জন ভালমানুষরাও ছিলেন, আদর্শগত কারনেই এরা পাক পক্ষ সমর্থন করেছিলেন। এরা সকলে টাকা পয়সা ক্ষমতার লোভে রাজাকারি করেছিলেন এমন ধারনা খুবই হাস্যকর। আদর্শগত কারন ছিল মূল, যে আদর্শ তারা পেয়েছিলেন ধর্মীয় চেতনার কল্যানে, যার মূলে ছিল চরম সাম্প্রদায়িকতা। তাদের ধর্মীয় বিশ্লেষকের চোখে বিপন্ন ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষার্থে পাক আর্মির যাবতীয় কুকর্কমে সায় দিতে তাদেরও বিবেকে বাধেনি। ’৭১ এর ঘটনা বা নৃশংসতার জন্য ইসলাম দায়ী নয়। তবে পাক আর্মির বর্বরতা/নৃশংসতা, বিশেষ করে রাজাকার বদরদের নৃশংশতা/বেঈমানীর পেছনে ধর্মীয় চেতনার ভূমিকা অবশ্যই আছে।
আজকের দিনেও তালেবান জাতীয় কেউ সাচ্চা ইসলাম কায়েমের নামে বাংলা দখল করে নিলে এ ধরনের মানসিকতার অধিকারী বহু লোকেই তাদের দলে জুটে যাবে, কোন সন্দেহ নেই। আবার অনেকে বলেও যাবেন ইসলামের সাথে এসবের কোন সম্পর্ক নেই….এরা আসল ইসলাম জানে না ইত্যাদী।
ইসলামী জাতীয়তাবোধের কারনে জন্মে নিজ গোষ্ঠির প্রতি এক ধরনের বিশেষ মমত্ববোধ ও পক্ষপাতিত্ব, তাতেও থেমে থাকলে নাহয় হত। এই বিশেষ মমত্ববোধ ও পক্ষপাতিত্বের কারনে যখন স্বাভাবিক যুক্তিবোধ, নীতিবোধ হারিয়ে মৌলিক ন্যায় অন্যায় বোধই লোপ পায় তখনই হয় মুশকিল। আধুনিক বিশ্বে যার অন্যতম ভুক্তভোগী হয়েছে বাংলাদেশী মুসলমানেরাই। ’৭১ সালে আমরা মোটামুটি জানি যে অল্প কিছু ব্যাতিক্রম বাদে মোটামুটি ভাবে সব মুসলমান দেশ পাকিস্তানীদের পক্ষ নিয়েছিল। সৌদী আরব কিংবা ইরানের মত কট্টররাই শুধু নয়, এমনকি তুরষ্ক ইন্দোনেশিয়ার মত সেক্যুলার ধাঁচের মুসলমান প্রধান রাষ্ট্রও এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি। মুসলমান বিশ্বের উল্লেখযোগ্য বড় নেতাদের মাঝে কেবল প্যালেষ্টাইনী ইয়াসির আরাফাত এবং পাকিস্তানী সীমান্ত গান্ধী নামে পরিচিত খান আবদুল গাফফার খান সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কারো সাতে পাঁচে না থাকা নেপালী, তীব্বতীরা পর্যন্ত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেছে স্রেফ মানবিকতার দায়ে, কার কোন ধর্ম এসব ক্ষুদ্রতার মাঝে মানবতা জিম্মা রাখলে সেটা সম্ভব হত না। মুসলমান বিশ্বের নির্লজ্জ পাক সমর্থন কেউ কেউ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন আরব রাষ্ট্রগুলির মার্কিন ঘেঁষা নীতির কারনে। এ বিশ্লেষন ঠিক নয়। আরব দেশগুলি নিজেরাই এক যুক্ত বিবৃতীতে এ যুদ্ধকে ‘জেহাদ’ নামে অভিহিত করে পাকিস্তানের প্রতি অর্থ ও সামরিক সাহায্য বাড়িয়ে দিয়েছিল, এ থেকেই বোঝা যায় অন্ধ পাক সমর্থনের মূল কারন কোথায় ছিল। এই রকম যুক্তিহীন অমানবিক পক্ষপাতিত্ব তীব্র সাম্প্রদায়িকতা্র প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এটাও মানা যেতে পারে যে অনেক সময়ই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে নীতি গ্রহন করা হয় তা দেশের জনগনের মনোভাবের প্রকাশ নাও হতে পারে। যেমন ততকালীন মার্কিন সরকার নীতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হলেও সে দেশের জনগন তাদের সরকারী নীতির প্রতিবাদ করেছে, আমাদের জন্য চাঁদা তুলেছে, এমনকি ডিংগি নৌকো করে সাগর পাহারা দিয়েছে যেন পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবাহী জাহাজ রওনা হতে না পারে। বংগবন্ধুও পাক কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনের সাংবাদিক সম্মেলন এবং ঢাকার রেসকোর্সের জনসভায় মার্কিন জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
মুসলমান দেশগুলিতে তেমন কোন আলামত দেখা যায়নি। হাতে গোনা কয়েকটি বিবৃতি/মিছিল ছাড়া তেমন কোন প্রতিবাদের আলামত নেই। এমনকি ভারতের, বিশেষ করে পশ্চীম বংগের লোকজন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে চরম সহানুভূতিশীল হলেও মুসলমান সম্প্রদায়, বিশেষ করে অবাংগালী মুসলমানরা ছিল বিদ্বেষ ভাবাপন্ন। তাদের মালিকানাধীন পত্রপত্রিকায় সরাসরি পাক সমর্থক লেখা বের হত। এদের অনেককে অবশ্য প্রবাসী সরকার পরের দিকে বহু সাধ্য সাধনার পর আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। এমনকি কোন কোন মুসলমান দোকানী ঘর বাড়ি স্বামীহারা বাংলাদেশী মুসলমান উদ্বাস্তু মহিলার কাছেও নগদ দামে সওদা বিক্রি করতে অস্বীকার করেছে এমন ঘটনাও আছে। মুসলমান প্রধান দেশগুলি ও ভারতীয় মুসলমানদের এহেন ভূমিকা ছিল প্রবাসী মুজিবনগর সরকার ও ভারত সরকারের জন্য এক পর্বত প্রমান সমস্যা। এই সমস্যার মাত্রা কেমন ছিল তা বোঝা যায় যুদ্ধের পর পর প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র নীতির সুর থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছিল, “It is very painful to note that the Arab countries by and large have acted against our interests…..We considered this to be aweful failure of all the Governments who propagate Islamic brotherhood” [৭]. ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ শুনতে যতটা মধুর লাগে সবসময় ততটা মধুর নাও হতে পারে।
হুমায়ুন আহমেদ তার জ্যোতস্না জননীর গল্প বইতে মুসলমান রাষ্ট্রগুলির এহেন ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ কেন করেছেন তা তিনিই ভাল জানেন। এই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ততকালীন পোপের বিবৃতি কোট করে, সেকারনেই মনে হয় তার বেশী খারাপ লেগেছে। তবে এতে বিস্ময়ের কিছু থাকার কথা নয়। মুসলমান দেশগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষার নামে যে সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ্য চর্চা বাল্যকাল থেকেই করা হয় তাতে এহেন আচরনের উলটো কিছু হলেই অবাক হতে হত। ধর্মীয় চোখে বিশ্বের যাবতীয় সমস্যার বিশ্লেষন ইউনিক হতে পারে, যতই ভ্যারিয়েবল থাকুক না কেন চুড়ান্তভাবে মুসলমান বনাম অমুসলমান এই দৃষ্টিকোন মূল্যায়িত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলাফল যেমন হবার তেমনই ’৭১ সালে হয়েছিল। আজকের দিনেও পূর্ব তীমুর, দক্ষিন সুদানের স্বাধীনরতার মূল্যায়ন অনেকে এভাবেই করে।
সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শিক্ষা হল বিধর্মীরা সর্বদা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে (আমাদের ধর্মশিক্ষার বইতেই সরাসরি এই কথা আছে), তাদের বিরুদ্ধে সেই নবীজির আমল থেকেই জেহাদ চলে আসছে, এবং সে জেহাদে জাতিকে একতা বজায় রেখে কওম রক্ষা করতে হবে। এর মাঝে ন্যায় অন্যায় বিচার বিবেচনার তেমন অবকাশ নেই, মূল বিবেচ্য হল মুসলমান বনাম অমুসলমান, অন্য কথায় ন্যায় অন্যায়ের সীমারেখা হল মুসলমান অমুসলমান। তাই বাংগালী লাখে লাখে মরছে, ধর্ষিতা হচ্ছে, নিরন্ন, নিরাশ্রয় হয়ে অপর দেশে আশ্রয় নিচ্ছে সেসব দৃশ্য দুনিয়াময় আলোড়ন তুললেও মুসলমান বিশ্বে কোন আলোড়ন তোলেনি, কারন অত্যাচারী পক্ষ এখানে মুসলমান, যারা ইসলামের সেবক রক্ষক বলে নিজেদের দাবী করেছিল, অত্যাচারিত পক্ষ নিজেদের কোন ধর্মীয় পরিচয়ে আবদ্ধ করেনি। উলটা মুক্তিযুদ্ধকে বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে মুসলমান দেশগুলির মিডিয়াতে কলাম লেখা হয়েছে, ভারতের ভূমিকার পর এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কতটা জোরদার ছিল বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। আপনার মাথায় যদি গেঁড়ে বসে থাকে যে বিধর্মী মানেই ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে চিরকাল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে তবে মুশরিক ভারতের সহায়তায় সর্ববৃহত মুসলমান রাষ্ট্র ভাংগা কিভাবে গ্রহন করতে পারেন? আর কোন বিবেচনা লাগে?
এবার ’৭১ সালের পাক/ভারত পক্ষ পরিবর্তন করে একটি কাল্পনিক দৃশ্য চিন্তা করেন। আমেরিকার মদদে ভারতীয় বাহিনী পূর্ব বাংলার হাজার হাজার নাগরিক হত্যা করছে, গণধর্ষন করছে, হিন্দু ধর্মগুরুরা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলি মুসলমান হত্যা ধর্ষন ধর্মীয় অধিকার বলে উষ্কানি দিচ্ছে, বাংগালীরা পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া তখন কেমন দেখা যেত বলে মনে করেন? বাংগালী মুসলমান ভাইদের ভয়াবহ নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় তৌহিদী জনতার গর্জন ও পদভারে আরব বিশ্ব কেঁপে উঠত না? আমেরিকার বিরুদ্ধে জেহাদের হুমকি, ইন্দিরা/নিক্সনের কুশপুত্তলিকা দাহ চাই কি দূতাবাসে হামলা, সুইসাইড বোমা কিছু বাদ থাকত? আমাদের হয়ে কাফের ভারতীয়দের বিরুদ্ধে লড়তে বেশ কিছু জেহাদী মধ্যপ্রাচ্য ও নানান মুসলমান দেশ থেকে চলেও আসতেন, যেমনটা আফগানিস্তানে গেছিলেন, আমরা বাংগালীও কেউ কেউ আফগানিস্তানেই শুধু নয়, প্যালেষ্টাইনেও গেছি। বাস্তবে আক্রমনকারী পক্ষ যেহেতু পাকিস্তানী মুসলমান ছিল,কাজেই সেক্ষেত্রে কোন অন্যায় ঘটেনি। মুসলমান নির্যাতনের উদাহরন হিসেবে ইসলামী প্রিন্ট মিডিয়া, ইন্টারনেট সূত্রে বহু খতিয়ান দেখা যায়। বাংলাদেশের ৩০ লাখ নিহত মানুষ, ২ লাখ ধর্ষিতা (যাদের অধিকাংশই মুসলমান) উদাহরন হিসেবে কেউ দেখেছেন? এসব গবেষকের কাছে মূল বিবেচ্য হল ধর্মীয় পরিচয়, ন্যায় অন্যায় নয়। জাকির নায়েক ও সমমনারা ইসলামী সভ্যতা কত মহান আর আধুনিক সভ্যতা (যেহেতু পশ্চীমি মূল্যবোধ এখানে মূল চালক) কত খারাপ সেটা বয়ানে প্রায়ই বসনিয়া, ইরাক, আফগান, গুয়ান্তামো বে’র উদাহরন দেন, ভুলেও ওনারা বাংলাদেশের গনহত্যা, বালুচি গনহত্যা, ইরাক-ইরানের ৮ বছর ব্যাপী যুদ্ধে নিহতদের হিসেব, সাদ্দাম/গাদ্দাফির নির্যাতন কিংবা বর্তমানের শিয়া সুন্নীদের রক্তারক্তি কি সিরিয়ার ভয়াবহ নির্যাতন এসব উদাহরন হিসেবে মুখে আনবেন না। কেবল হত্যাকারী পক্ষ অমুসলমান হলেই এসবও তালিকায় মহা সমারোহে যোগ হয়ে যেত।
আর কিছু মুসলমান দেশের নিত্য বিধর্মী নিপীড়ন প্রসংগ তো আদৌ সত্য বলেই গ্রহন করবেন না, নিতান্ত বাধ্য হলে সাফ বলে দেবেন যে ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তখন উলটো জোর গলায় বলবেন যে কিছু সংখ্যক লোকের দায় কেন তাদের প্রিয় ধর্ম কিংবা কিংবা জাতি নিতে যাবে? যুক্তিটা অবশ্যই খুবই গ্রহনযোগ্য। মুশকিল হল যে এই যুক্তি আবার হাজার হাজার বছর আগের সুদূর আরব মূলুকে কে কাকে মেরেছিল ধরেছিল, কোথা থেকে বার করে দিয়েছিল সেসবের জের ধরে আজকের দিনেও নিজেদের সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জাতিগত ঘৃনা বিদ্বেষ শিক্ষা দেবার সময় বেমালুম ভুলে যান। নির্দ্বিধায় নিষ্পাপ শিশুদের মনে বাল্যকাল থেকেই কোন জাতি পথভ্রষ্ট, কোন জাতি চির অভিশপ্ত এসব শিখিয়ে যান।
এই মানসিকতার আরো উদাহরন নিজের চোখেই দেখেছি। ’৯০ সালে ইরাক বিনা নোটিসে এক রাতে কুয়েত দখল করে নিল, কুয়েতের শেখসহ বহু লোক হতাহত, বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একেবারে নিশ্চুপ, যেন কিছুই হয়নি। যেই রংগমঞ্চে আমেরিকা নামল অমনি ঢাকার রাস্তা কেঁপে উঠল ‘বাপের ব্যাটা সাদ্দাম’ সমর্থকদের পদভারে। কাফের আমেরিকা এসেছে মুসলমান ইরাকীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, আর কি চুপ থাকা যায় নাকি! মজার ব্যাপার দেখেছিলাম যে আমেরিকা বুশকে প্রচুর গালাগালি করা হলেও যাদের মাটিতে যাদের আহবানে, সক্রিয় সহায়তায় মার্কিনীরা ঘাঁটি গেড়ে যুদ্ধ করেছিল সেই আরব দেশের ব্যাপারে আবার বাপের ব্যাটা সমর্থকরা চরম উদাসীন।
ইতিহাসের অনাদিকাল থেকেই পৃথিবীর নানান প্রান্তে মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে। মুসলমান যখন মুসলমানদের অত্যাচার করে সেটাতে কোন সমস্যা পাওয়া যায় না, অমুসলমানদের ওপর অত্যাচার, রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানানো তো আমলেই আনা যায় না, নানান ষড়যন্ত্র পাওয়া যায়। যেমন দক্ষিন সূদানের স্বাধীনতা, ইন্দোনেশীয়া ভেংগে পূর্ব তীমুরের আবির্ভাব হল বিধর্মীদের চক্রান্ত। আমাদের ’৭১ সালের মূল্যায়নও এভাবে কিছু বিদেশী আলেম স্কলারের চোখে তেমনই। কোথাও অত্যাচারী পক্ষ অমুসলমান ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠির ধর্মীয় পরিচয় মুসলমান হলেই ব্যাস ঈমান চাংগা হয়ে যায়। কারন নিজেদের সদা সর্বত্র নিপীড়িত প্রমান করতে হবে, আক্রান্ত আছি ভাবতে হবে, এটাও ঈসলামী জাতীয়তাবোধের এক অলিখিত ট্রেডমার্ক। ধর্মীয় সূত্রের নানান ঘৃনাবাদের তত্ত্ব যেগুলি কেয়ামত পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে হবে সেসব সম্পর্ক নইলে সংশয় দেখা দিতে পারে। কাজেই ঘৃনাবাদ হালাল করার শ্রেষ্ঠ উপায় হল নিজেরাই সদা সর্বত্র এক তরফা নির্যাতিত এভাবে অব্যাহত প্রচারনা চালিয়ে যাওয়া।
মুসলমান নির্যাতনের খতিয়ান হিসেবে ইরাক, আফগান, চেচনিয়া, বর্তমানের মায়ানমার ইত্যাদী নানান উদাহরন সিরিজ আকারে পাওয়া যায়। সে সব খতিয়ানে অনেক সময়ই অর্ধসত্য কিংবা ডাহা মিথ্যা কথাও ব্যাবহার করা হয় নিজেদের বিধর্মীদের হাতে ভয়াবহ রকমের নির্যাতিত প্রমান করার জন্য, জাতিগত ঘৃনাবাদ ভালভাবে জিইয়ে রাখার স্বার্থে। সেদিন দেখি অন্য এক ব্লগে বিশ্বময় মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধদের ভয়াবহ নির্যাতনের নানান কাহিনী। পিলে চমকে যাবার মত তথ্য হল থাইল্যান্ডে মুসলমান নাম নেওয়া নিষিদ্ধ, মুসলমানদের দুই সন্তানের ওপরে জন্ম দেওয়াও নাকি নিষিদ্ধ। এমন আজগুবি তথ্যের সূত্র খুঁজতে বেহুদা কিছু সময় নষ্ট করতে হল। রোহিংগা ইস্যু নিয়ে দেখেছি অনেক উচ্চ শিক্ষিত মুসলমান যারা ধর্মকর্ম নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না তারাও যত্নের সাথে নানান ভূয়া ছবি প্রচার করে গেছেন। কোথাও নাক বোঁচা ধরনের লোকজনের মৃতদেহের ছবি পেলে সেটাও রোহিংগা গনহত্যার দৃশ্য হয়ে গেছে, সে ভূমিকম্পে নিহত তিব্বতী হোক কি থাইল্যান্ডে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় শুইয়ে রাখা আটক লোকজন হোক। ধরিয়ে দিলেও কিছু বলেন না, ছবিও সরান না। এসব ড্রামাটিক মিথ্যাচারের কি কোন দরকার আছে? নিপীড়িত মানুষ সে রোহিংগা মুসলমান হোক, কাল হোক, নিম্ন বর্নের হিন্দু হোক সকলেই এক। মানবাধিকার সবার জন্যই প্রযোজ্য, মুসলমান পরিচয়ের গুরুত্ব ঘটা করে কেন বেহুদা লাগবে? রোহিংগাদের ধর্মীয় পরিচয় মুসলমান ভিন্ন অন্য কিছু হলে সমস্যা ছিল না, তখন নীরবতা পালন করতেন?
এথনিক্যালি বহিরাগতদের সাথে স্থানীয় আদিবাসীদের রেষারেষি প্রতিযোগিতা বিরল কিছু নয়। শরনার্থী জীবন কোনদিনই সহজ নয়। এরা অনেক সময় জড়িয়ে পড়ে নানান অপরাধের সংগে, স্থানীয়দের সংগে দাংগা হাংগামা ঘটা খুবই সাধারন। একই জাতীয় সমস্যা পাকিস্তানেও হয়েছিল। ’৪৭ এর পর ভারত থেকে আগত উর্দূভাষী মুসলমানদের সাথে স্থানীয় সিন্ধীদের নানান বিরোধ দেখা দেয়, এরপর চলে সিন্ধী বনাম মোহাজির ব্যাপক দাংগা হাংগামা। করাচী পরিচিত হয় বিশ্বের অন্যতম সন্ত্রাসের শহরে, ৮০/৯০ এর দশকে করাচীতে হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে জাতিগত সন্ত্রাস এবং পালটা সেনা অভিযানে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক তালেবানী/আল কায়েদা সন্ত্রাসের আমলে সেই সন্ত্রাস ঢাকা পড়ে গেছে। সেসময়কার নিহত মুসলমানদের ছবি কয়জনে চোখের পানি ফেলে বিলি করেছিলেন?
মুসলমান বিশ্বের অন্যতম সংবেদনশীল প্যালষ্টাইনী শরনার্থীরাই বা অন্যান্য আরব দেশে কেমন আছে? খুব ভাল আছে? জর্দান ছাড়া অন্যান্য দেশে তারা তেমন ভাল নেই, লেবাননে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না, ডাক্তারী ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত ভাল ভাল পেশায় যোগদান নিষিদ্ধ আছে। জর্ডানেও ’৭০ সালে পিএলও যোদ্ধাদের সাথে জর্ডানী বাহিনীর যুদ্ধে হাজার হাজার প্যালেষ্টাইনী নিহত হয়েছে (ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামে পরিচিত [৮]), যার সংখ্যা ’৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মোট নিহত মুসলমান সংখ্যার কাছাকাছি হতে পারে। এর খবর কয়জনা রাখেন বা তাদের স্মরন করেন? ’৯১ সালে কুয়েত পুনরুদ্ধারের পর চলে ইরাক সমর্থক অভিযোগে সেখানে গণহারে অসংখ্য বিদেশীর ওপর চলে অত্যাচার নির্যাতন। সেখানে ’৩০ এর দশক থেকে বসবাস করা প্যালেষ্টাইনী এবং তাদের বংশোদ্ভূতরা ভুগেছিল সবচেয়ে বেশী। কারন খুবই অদ্ভূত; কুয়েত দখলের সময় ইয়াসির আরাফাত সাদ্দামকে সমর্থন করেছিলেন এটাই তাদের অপরাধ। চার থেকে সাড়ে চার লাখ প্যালেষ্টাইনীকে অতি দ্রুত বহিষ্কার করা হয়, প্যালেষ্টাইনীদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়, স্কুল থেকে শিশুদের নাম কেটে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্যালেষ্টাইনী নির্যাতনে কুয়েতী রাজ পরিবারের প্রত্যক্ষ মদদে ছিল। থানায়/সেনা ক্যাম্পে নিয়েও অনেককে বর্বরোচিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় স্রেফ প্যালেষ্টাইনী হবার অপরাধে। গনধর্ষনেরও অভিযোগ আছে বেশ কিছু। এসব কাহিনী সে সময় এন্টি সাদ্দাম উন্মাদনা আড়ালে মিডিয়ায় যায়গা পায়নি, আরো মার্কিন বাহিনী ছিল কুয়েতের মিত্র, পশ্চীমা মিডিয়াগুলির নীরবতার কারনও ছিল সেটা। আরব ও মুসলিম মিডিয়া নীরব ছিল সম্ভবত মুসলমানের হাতে মুসলমান নির্যাতনের কাহিনী গুরুত্বপূর্ন নয় বলে। এসব নিয়ে বহু সূত্র আছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সূত্র দিলাম [৯]।
এজন্যই বলি যে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার ভিত্তিতে বিশ্লেষনের কু-অভ্যাসের জন্য নিজেদের ভাই ব্রাদারদেরই ভুগতে হয় বেশী। ’৭১ সালে মুসলমিক বিশ্বের প্রত্যক্ষ মদদ না পেলে ইয়াহিয়া অত উন্মাদ হত না, মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাকিং পাওয়া জামাতি ধারার দেশীয় রাজাকাররাও নিরুতসাহিত হত। ’৯১ সালেও প্যালেষ্টাইনীদেরও নিঃসন্দেহে এতটা ভুগতে হত না।
[চলবে]
সূত্রঃ
১। ইছলাহুর রুসূম – মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (পৃষ্ঠা-৯৮)
২। Iran says some academic courses too “Western”
৩। Anger as Iran bans women from universities
৪। ঢাকা সমগ্র-২ – মুনতাসীর মামুন।
৫। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ – মুনতাসীর মামুন।
৬। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস – ড. মোহাম্মদ হান্নান।
৭। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ – এইচ টি ইমাম।
৮। Black September in Jordan
৯। A Victory Turned Sour: Human rights in Kuwait Since Liberation – Human Rights Watch
আদিল ভাই,
আপনার লেখায় বরাবরের মতো কোনো কিছু অতিরিক্ত বলার স্কোপ পাই না বলে আগে মন্তব্য করি নি। পরের পর্বে সম্ভবত শিক্ষিত তরুনদের মধ্যে ইসলামী জাতিয়তাবাদের প্রসার নিয়ে লিখবেন। সেটার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার নিজের ব্যক্তিগত জীবনের একটা শিক্ষা হলো যে আমার মনে হয় ধর্মীয় সাম্পরদায়িকতার (এটা আসলে এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদই বলা যায়) বিষবৃক্ষের বীজ আসলে রোপিত হয় স্কুলে-মাদ্রাসায় নয় নিজের পরিবার ও আশেপাশের লোকজনের মধ্য হতেই। স্কুলের ধর্মশিক্ষার বইকে কয়জন সিরিয়াসলি নেয়া এটা বলা মুশকিল। বইগুলোতে অন্যধর্মের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আছে ঠিকই, কিন্তু আরো আছে ৫ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে ভয়ংকর শাস্তি, মিথ্যা বলা মহাপাপ, পিতামাতার কথা না শুনলে দোজখবাস, মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল চিন্তা কর্ম মহাপাপ ইত্যাদি। কিন্তু এইসব বাণী স্কুল ছাত্রদের (এমনকি মাদ্রাসার ছাত্রদেরও) নামাজ ফাকি দেয়া, মিথ্যা কথা বলা, বাবামায়ের কথা না শোনা, মেয়েদের সাথে টাংকি মারা, পর্ণ দেখা এসব থেকে কি আর বিরত রাখতে পারছে। আসলে আমার মনে হয় অধিকাংশ স্বাভাবিক মানুষই মনের ভিতরে ধর্ম আর জীবনকে আলাদা কম্পার্টমেন্ট করে রাখে। তাদের মনের মধ্যে থাকে যে ধর্মের কথা ধর্মে থাকে, জীবনের কথা জীবনে।
কিন্তু তাই বলে বলছিনা যে এইসব মানুষ অসাম্প্রদায়িক, মুকতমনা। এসব জীবনমুখী মানুষদের মধ্যে একটু ঘাটিয়ে দেখলে দেখা যাবে ভয়াবহ সাম্প্রদয়িক চিন্তা, না ভাবে চিন্তেই চরম অমানবিকতাকে প্রশ্রয় দেয়া। আমার মনে হয় এই মানসিকতার কারন মোল্লাদের শিক্ষা বা জুম্মার নামাজের বক্তৃতা নয়। পরিবারের বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন (যারা নিজেরাও হয়তো কোনো রকমেই উগ্র নয়) খুব সুক্ষভাবেই এই ধরনের চিন্তা মাথায় গেড়ে দেন কোনো রকম পরিকল্পনা ছাড়াই। আমরা -ওরা আলাদা, আমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত -ওরা অভিশপ্ত, এই ধরনের ভাবনাগুলো মগজের অবচেতনে স্থায়ী হয় মনে হয় পরিবার-পরিজন থেকেই স্কুল কলেজে নয়।
আসলে প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা আলাদা। আমার নিজের ও আশে পাশের লোকজনের চিন্তার বিবর্তন নিয়ে পরে পোস্ট করার ইচ্ছে আছে।
@সফিক,
লেখা দেওয়ার থেকেই ভাবছিলাম আপনি এখানে আসেন না কেন, আপনার উতসাহ ছিল বশ ভাল মাত্রাতে। ভাবছিলাম আবার আমিই এবার ইসলাম বিদ্বেষী বিষয়ক ক্রশফায়ারে পড়ে গেলাম কিনা :)) ।
আমার ধারনা সাম্প্রদায়িকতার পাঠ আমাদের দেশে লোকে ৩টি প্রধান সূত্রে পায়ঃ
১। নিজের পরিবার থেকে।
২। আশেপাশের সামাজিক পরিবেশ থেকে (আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, মাদ্রাসা মসজিদের আলেম মোল্লা গোছের লোকজন থেকে)
৩। শিক্ষা মাধ্যম থেকে; স্কুলের পড়াশুনা, কিংবা বাজারে প্রচলিত অসংখ্য ইসলামী কিতাব বলে যা পরিচিত সেসব থেকে (এক্ষেত্রে অবশ্য পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড নির্ভর করে)।
সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ন পারিবারিক শিক্ষা কথা ঠিক। ভারতে সাম্প্রদায়িক শিক্ষা আমাদের মত স্কুলে পাঠ দেওয়া হয় না কিন্তু তাই বলে সেখানে সামপ্রদায়িকতা নেই এমন নয়।
তবে স্কুলের সিলেবাস কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ন নয়। এর একটি মূল কারন হল এভাবে সাম্প্রদায়িক শিক্ষাকে রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করা হল। আর কিন্তু বলার উপায় থাকে না যে সাম্প্রদায়িকতা আমরা শেখাই না, কিছু অশিক্ষিত মোল্লা আলেম বিচ্ছিন্নভাবে এসব প্রচার করে যেসবে সমাজের কোন সায় নেই।
আর সাম্প্রদায়িকতার চরমে যেতে হলে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বা তেমন কোন শিক্ষা দরকার। এক্কেবারে যে অশিক্ষিত লোক সে কিন্তু শিক্ষিত লোকের থেকে বেশী সাম্প্রদায়িক হবার সম্ভাবনা কম। তাকে নিজে নিজে ধর্মীয় সূত্র কিংবা বিকৃত এক তরফা ইতিহাস পাঠ করতে হবে চরম পর্যায়ে যাবার জন্য।
ছেলেপিলে যদি আশেপাশে যা শেখে স্কুলে তার স্বীকৃতি সিলেবাসে পায় তবে সর্বনাশের আর কিছু বাকি থাকে? আর এসব ব্যাখ্যা করার জন্য কোন স্কুলের কোন ধর্মশিক্ষক আরো কি সবক দেয় তা কিন্তু আমাদের এখানে জানার উপায় নেই। সেসব নিশ্চয়ই খুব প্রীতিকর কিছু হবে না। ধর্মশিক্ষা ক্লাসকে হালকাভাবে নিলেও এসবের গভীর ছাপ কিন্তু মনের ভেতর নিঃসন্দেহে থেকে যাবে। এরপর সে যখন সীমান্তে নিহত বাংলাদেশীর লাশের ছবি দেখবে, প্যালেষ্টাইনে নিহত শিশুর ছবি দেখবে, আমেরিকার নির্লজ্জ ভূমিকা দেখবে তখন তার কাছে সেই স্কুলে পাওয়া সাম্প্রদায়িক শিক্ষাকে মনে হবে অভ্রান্ত।
আমি কিন্তু আমার লেখায় ফোকাস করেছি বা শুরু করেছি স্কুলের শিক্ষা দিয়ে, কিন্তু সেখানে সীমাবদ্ধ রাখিনি। কারন ওপরে বলে ৩টি সূত্রেরই মূল আসলে এক যায়গায়। শুধুমাত্র স্কুলের সিলেবাসে তো অন্য গ্রহ থেকে এলিয়েন আলেমরা এসব ঢোকায়নি। ইসলামী মূল্যবোধে ব্যাপকভাবে যা প্রচলিত তাই স্কুলে পাঠ দেওয়া হচ্ছে। শুধু স্কুল থেকে এসব জঞ্জাল দূর করলেই সমস্যা যাবে না, তবে কিছুটা উপকার নিশ্চয়ই হবে। অন্তত অবস্থা আরো খারাপ হবে না।
তবে বিদ্যালয়ের পাঠ কিন্তু আরো গভীর ভূমিকা ঠিকই রাখে। যেমন ধরেন মাদ্রাসায় পড়া ছেলেপিলেরা কেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতি আগ্রহী হয় বেশী? অন্য কথায়, সাধারন শিক্ষালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার পরিমান বাড়ালে সেখানেও কিন্তু দেখা যাবে শিবির/হিতা এসবে যোগ দিচ্ছে অনেক বেশী বেশী ছেলে। কারন তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তখন এমন শিক্ষা পাবে যা তাদের শিবির হিতার মত সংগঠনে যোগ দিতে আগ্রহী করবে বেশী। তারা বাসায় বাবা মা যদি কট্টর আওয়ামী লীগারও হয় তাও কিন্তু লাভ খুব একটা হবে বলে মনে হয় না। সামনের পর্বে কিছুটা আসবে কিভাবে আধুনিক ছেলেপিলেও উগ্রবাদী ধর্মীয় সংগঠনে যোগ দিচ্ছে।
আমার জানামতেও বেশীরভাগ বাবা মা আমাদের দেশে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতা সরাসরি শিক্ষা দেন না, তবে সূক্ষ্মভাবে গেড়ে দেন। কেউ নিশ্চয়ই শেখান না যে হিন্দুদের ঘৃনা কর। তবে আমাদের ছোটবেলায় চাচা মামারা হিন্দু শুনলেই অনেকে নাক কুঁচকে বলে উঠতেন “ড্যান্ডাইয়া” (আমাদের অঞ্চলে হিন্দুদের অপমানসূচক এই নামে ডাকা হয়)। শিশুমন কলুষ করতে এমন কিছু আচরন, উক্তিই যথেষ্ট। ফলাফল হল হিন্দু পিপড়া হিশেবে লাল পিপড়া নিধনের শিশুতোষ খেলা।
– খুব ইন্টারেষ্টিং আলোচনা হবে সেখানে। আমারো বলার আছে অনেক কিছু।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি আমাদের ভাত মারলেন, আল্লায় এর বিচার করবো।
@গোলাপ মালিক,
কি আর করবেন রে ভাই, সবই যুগের দাবী, নুতনের কাছে পুরনো বিদ্বেষীয়া আর ভাত পাবে না, এটাই জগতের নিয়ম :)) ।
আমাদের বেতন বাড়তেই থাকবে, আপনারা চলে যাবেন বাতিলের খাতায়…
@গোলাপ মালিক,
😀 , বিস্তারিত পড়লাম। বেচারার এটেনশন পাবার এত শখ আগে বললেই হত, তার মত মানুষের পেছনে হাজারবার বিচ্ছিন্ন মন্তব্যের স্ক্রিন শট খুলে শোরগোল তুলে দুই বছর পর আবার আমাকে নিজেদের প্রিয় ব্লগে পরিচিত করানোর ভাড়ামিতে আমোদ পেতেই হবে। তার নামে নাকি গজব নেমে আসবে 😀 ? এত সময় কার আছে?
বেচারার জন্য খারাপই লাগে, কিছুদিন আগে দেখলাম আমার নামে কি কি বলে, নিজেদের ব্লগেই আর কেঊ বেচারের সাথে সুর মিলিয়ে একটাও গাল দিল না ;-( । এবার আশা করি অন্তত তার সম্মান রক্ষার্থে কেউ না কেঊ যোগ দেবে।
কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষী অভিজিত রায়ের একজন বিশিষ্ট ভক্তকে সকলের চিনে নেওয়া উচিত;
http://mukto-mona.net/Articles/raihan/Prithibita_Kemon_Hoto.pdf
স্মরনীয় বাণীঃ “প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ পরিমন্ডলে এক একটি নক্ষত্র!”
“এদের অন্তর ক্রিষ্টালের মতই ঝকঝকে তকতকে”
—–অভিজিত সম্পর্কে এমন হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা, স্তব রচনা আর কোন ভক্ত বাংলা ব্লগ জগতে আজ পর্যন্ত করেছে কি? আচ্ছা, ব্লগ জগতে কি অভিজিত আগে ইসলামপ্রেমী ছিল?? তা যদি না হয়ে থাকে তবে এহেন ঘৃণ্য ইসলাম বিদ্বেষীর এমন গুনগান যে গাইতে পারে সে কে?
মুসলমান নামধারন করে নবীজি নাকি সেলফ ডিফেন্স ছাড়াও হত্যাকান্ড চালিয়েছিলেন এমন চ্যালেঞ্জ কে দিতে পারে!!! মহানবীকে বুশের সাথে তূলনা করার মত স্পর্ধা কত বড় ইসলাম বিদ্বেষীর হতে পারে জাতি তার জবাব চায়!!! স্ক্রীন শটের মাধ্যমে তার প্রকৃত চেহারা তুলে ধরা দরকার।
http://mukto-mona.net/Articles/raihan/Thanks_Abid.pdf
অবয়ব ছাড়া প্রার্থনা করা সম্পর্কে ঈমান্দারদের মাঝে ফাতনা সৃষ্টিকারী কে হতে পারে??? এভাবে ছদ্ম ধর্মনিরপক্ষতার ভান ধরে পৌত্তলিকতার জয়গান গাওয়া হয়েছে!
http://mukto-mona.net/Articles/raihan/abc.pdf
ধার্মিক মুসলিমদের কিভাবে অপমান করা হয়েছে তা সকলের দেখা উচিত! ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ মুসলিম নাকি কবে কোথা থেকে কিভাবে মুসলিম হয়েছে তা জানে না!!! তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ!!! নাউজুবিল্লাহ বিন জালেখ! সদালাপের সকল নিয়মিত ভাইয়েরা সেই দশমিক ১ ভাগের মাঝে পড়েন তো?? কোরান হাদীসে নাকি হেটফুল ভার্স আছে!!!
http://mukto-mona.net/Articles/raihan/muslim_dharmik_muslim.pdf
মুসলমানরা ইহুদীদের কেন ঘৃনা করে অপরের লেখা এই লেখক এক কালে প্রচার করেছে! সে মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক প্রমান করতে চাইতো!!!
http://mukto-mona.net/Articles/raihan/eid_special-2.pdf
এক সময় সে খৃষ্টানদের মহান বানিয়ে তাদের সাথে মুসলিমদের তূলনা করে প্রশ্ন করতঃ
“মুসলিমরাও কি ধর্মের কিছু শ্লোকের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে সবার উপরে প্রাধান্য দিতে পারে না?”
-আমার বর্তমান সিরিজের যে সমস্যা আলোকপাত করা হয়েছে তার জবাব আসলে এই লেখক বহু আগেই দিয়েছে।
এসব পোষ্টের লেখককে চেনেন নাকি? আমি ঠিক চিনতে পারছি না, নুতন পাবলিক তো। ঈমান্দার ভাইদের দেওয়া সূত্রমতে এ লেখক নিশ্চিত মুসলমান নামধারী কোন বিরাট ইসলাম বিদ্বেষী (যদিও এই লেখকের লেখাগুলি আমাকে ব্লগ জগতে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছে প্রথম দিকে)। মুসলমান নাম ধরে কেন যে এরা ইসলাম বিদ্বেষ চালাতো তা ওনাদের সূত্র থেকেই বোঝা যায়! নিশ্চিত প্রভুদের চোখে পড়ার জন্য, মুসলিম নাম না নিলে তো প্রভুরা এদের পাত্তা দেবে না!!
প্রভুরা এখন এদের থেকে উন্নত মানের ইসলাম বিদ্বেষী (যেমন আমি) খুঁজে পাওয়ায় বেচারাদের মনে হয় মার্কেট ফুরিয়ে গেছে।
আমি ইসলাম বিদ্বেষী, কার কার চ্যালা সবই মেনে নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওপরের লেখক মহোদয়ের ক্ষেত্রেও একই বিশেষন কেন প্রয়োগ করা যাবে না? ওনার আরো মহান মহান সব বানী আরো বহু লেখাতেই পাওয়া যাবে। বর্তমানে তিনি তওবা করে ভাল হয়ে গেছেন হতে পারে, তবে এককালে নিশ্চিত আমার মতই মহা ইসলাম বিদ্বেষী, অভিজিতের স্বঘোষিত ভক্ত বা চ্যালা ছিলেন এতে তো কোন সন্দেহ নেই। ওনার অন্তত আমাদের আসল প্রভু যারা আমার মত ইসলাম বিদ্বেষীদের পয়সা দেয় তাদের নাম ঠিকানা ভাল জানা থাকার কথা।
তাদের প্রিয় ব্লগে আশা করি এ নিয়ে খোলা আলোচনা হবে, সেই ইসলাম বিদ্বেষী কার থেকে কত টাকা খেত তার সুরাহা হয়ে যাবে।
আপনের লিখা পরে মনে হয় এক নিশ্বাসে লিখেছন। আমি পরছি আর মন্তব্য করছি। লিখতে সমস্যা হচ্ছে। দু:খিত।
ভাল চাকু্রী লাভের আশায় এসব অপবিদ্যা আয়ত্ব করার বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
কে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তা স্পস্ত না।
আমার দাদা নানাদের জেনারেশনে মুসলমান সমাজে পড়শুনা করা বলতে মূলত বোঝাতো মাদ্রাসা মক্তব। –এ প্রসঙ্গে বলি ,আমি ৪/৫ দিন আগে হালুয়া ঘাট ঘুরে এলাম। সেখানে কোন স্কুল নেই। সব বাচ্চারা মাদ্রাসায় পড়ে।
হিন্দুরা দুশো বছর ব্রিটিশের সাথে তাল মিলিয়ে মুসলমানদের শোষন করেছে কারন জমিদাররা বেশীরভাগ ছিল হিন্দু। অদ্ভূত বিশ্লেষন। অদ্ভূত বিশ্লেষনটা কে করেছে ? এটার তথ্য সুত্র দিলে উপক্রিত হতাম।
আজকের দিনেও তালেবান জাতীয় কেউ সাচ্চা ইসলাম কায়েমের নামে বাংলা দখল করে নিলে এ ধরনের মানসিকতার অধিকারী বহু লোকেই তাদের দলে জুটে যাবে, যে হারে টুপি বাড়ছে তাতে বহু লোক থাকবে,বাকীরা তাদের দলে ছুটে যাবে।
কারো সাতে পাঁচে না থাকা নেপালী, তীব্বতীরা পর্যন্ত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেছে স্রেফ মানবিকতার দায়ে, কার কোন ধর্ম এসব ক্ষুদ্রতার মাঝে মানবতা জিম্মা রাখলে সেটা সম্ভব হত না। আশ্চর্য এই তথ্যটা কাউকে বলতে শুনিনি।
এবার ’৭১ সালের পাক/ভারত পক্ষ পরিবর্তন করে একটি কাল্পনিক দৃশ্য চিন্তা করেন। আমেরিকার মদদে ভারতীয় বাহিনী পূর্ব বাংলার হাজার হাজার নাগরিক হত্যা করছে, গণধর্ষন করছে, হিন্দু ধর্মগুরুরা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলি মুসলমান হত্যা ধর্ষন ধর্মীয় অধিকার বলে উষ্কানি দিচ্ছে, বাংগালীরা পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া তখন কেমন দেখা যেত বলে মনে করেন? বাংগালী মুসলমান ভাইদের ভয়াবহ নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় তৌহিদী জনতার গর্জন ও পদভারে আরব বিশ্ব কেঁপে উঠত না? আমেরিকার বিরুদ্ধে জেহাদের হুমকি, ইন্দিরা/নিক্সনের কুশপুত্তলিকা দাহ চাই কি দূতাবাসে হামলা, সুইসাইড বোমা কিছু বাদ থাকত? —-আপনার এই উদাহরণটা যুতসই হয়েছ্ ে।
কোথাও নাক বোঁচা ধরনের লোকজনের মৃতদেহের ছবি পেলে সেটাও রোহিংগা গনহত্যার দৃশ্য হয়ে গেছে, সে ভূমিকম্পে নিহত তিব্বতী হোক কি থাইল্যান্ডে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় শুইয়ে রাখা আটক লোকজন হোক। ধরিয়ে দিলেও কিছু বলেন না, ছবিও সরান না। কারণ এরা মানবাধিকারকমীর্। :lotpot:
এথনিক্যালি এটার বাংলা শব্দ দিলে ভাল হয়।
সেসময়কার নিহত মুসলমানদের ছবি কয়জনে চোখের পানি ফেলে বিলি করেছিলেন? মুসলমান মুসলমান যেহেতু ভাই ভাই,তাই ভাই তো ভাইকে মারতেই পারে।
এতোক্ষণ আপনার লেখর সাথে আড্ডা দিলাম। ভাল লাগলো। আগামি লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
@িশল্পভবন,
মনোযোগ দিয়ে পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্ন গুলিতে বোঝা যাচ্ছে যে আসলেই মন দিয়ে পাঠ করেছেন।
– অত্যন্ত সম্মানিত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রাঃ) উষ্মা প্রকাশ করেছেন। রেফারেন্সে আছে, ফ্রি ডাউনলোড, পাঠ করে দেখতে পারেন। হাতে সময় থাকলে এ জাতীয় হাই প্রোফাইল আলেমগনের নারী শিক্ষাও পাঠ করে চমতকৃত হতে পারেন (ঐ সাইটে বহু ভাল ভাল ইসলামী শিক্ষার আলোকে জীবন বিধানের বই আছে)। ওটা আপাতত আমার বিষয় নয় বলে সেসবে যাচ্ছি না। তবে ঘটনা সেই একই।
– হতে পারে। হালুয়াঘাটের কথা পার্টিকুলারলি জানি না, তবে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয় হোক সাধারন বিদ্যালয়ে না গিয়ে মাদ্রাসায় পাঠ করে, ফলে পরকালে হয়ত বেহেশতের চাবি সহজে পেতে পারে; কিন্তু ইহকালে বঞ্চিত হয় আর দশজন ছেলেমেয়ের সাথে সাধারন ভাল চাকরিবাকরি বলতে যা বোঝায় সেসবের জন্য প্রতিযোগিতা করতে।
দূঃখের এবং বিস্ময়কর বিষয় হল আমাদের সরকারী নীতিই আসলে এমন। এখনো সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে সাধারন শিক্ষার থেকে বেশী ব্যায় করে।
– বাংলা ব্লগ জগতেই এমন অনেকে আছে, এদের কেউ কেউ আবার ইসলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। একেবারে কারো নাম ধরে রেফার করলে বেহুদা ব্যাক্তিগত রেষারেষি শুরু হয়। আর রাজাকার আল বদর প্রকৃতির লোকদের নেই নেই করেও বেশ কিছু বই নেট এই পাওয়া যায়। সেগুলি পড়লেও দেখবেন হুবহু এই বিশ্লেষন।
– এতে সংশয়ের কোন কারন নেই। বাংলা হবে আফগান আমরা সবাই তালেবান শ্লোগান দিয়ে ঢাকার রাজপথ যেই বিশাল তৌহিদী জনতা কাঁপিয়েছিল তারা সকলে মাদ্রাসার ছাত্র যাদের মোল্লারা জোর করে ধরে এনেছিল এমন মনে করার কোন কারন নেই। এই দলে সাধারন লোকজনও প্রচুর ছিল, আমার মনে আছে মিছিলে অনেক তরুন ছিল যাদের পোশাক আশাক একেবারে অত্যাধুনিক বলতে যেমন বোঝায় তেমন ছিল। আর মিছিলে শারীরিকভাবে শরিক না হতে পারলেও মানসিকভাবে শরিক ছিলেন অনেকেই।
বাংলা ভাই এর দল যখন বাঘমারা এলাকায় প্রকাশ্যে মানুষ ঝুলিয়ে হত্যা করছে তখনো এক শ্রেনীর মহা আলেম তাদের প্রসংশা করেছে। এক উদাহরন হল আমার আগের পর্বের উদাহরন দেওয়া মারেফুল কোরানের বাংলা অনুবাদকারী মাওলানা মহিউদ্দিন সাহেব। উনি মাসিক মদিনা নামের এক অতি জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকার সম্পাদক এবং অসংখ্য ইসলামী বই এর রচয়িতা।
আর এটাও মনে রাখবেন যে এমন ঘটনা ঘটলে দলে দলে এক শ্রেনীর ইসলাম প্রেমি লোক এসবে যোগ দেবে, এবং ঘটনার ১০ বছর পর এসব শক্তি পরাজিত হলে আবার তারাই গলা উঁচু করে বলবে যে এসবের সাথে ইসলামের কোন যোগ ছিল না।
– শুনতেন। আরব অঞ্চল থেকে লোক এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলে ঠিকই শুনতেন, চাই কি তারা বীর উত্তম গোছের পদকও পেয়ে যেতেন। নেপালীদের কিছু ভূমিকা এখানে পাবেন। নেপাল সরকার মার্চ মাসের শেষেই সরাসরি পাক বাহিনীর গনহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের প্রতি পুর্ন সমর্থন জানিয়েছিল। তীব্বতিদের কিছু ভূমিকা এখানে আছে। অন্যান্য সূত্রও আছে।
– আসলেই তাই। তাড়াহুড়ায় সব শব্দের জুতসই বাংলা সবসময় মনে আসে না।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
শুধু বইয়ের পাতায় এই শিক্ষা আর সীমাবদ্ধ নেই এই শিক্ষা আজ মহাসমারোহে টিভি, অনলাইন, অডিও ভিডিও ক্যাসেট, পেপার পত্রিকা, বাসের গায়ে, সর্বত্রই চোখে পড়ছে।
@রাজেশ তালুকদার,
দাদা,
আমার কি মনে হয় জানেন, স্কুলের পাঠ্য বই, যা বাধ্যতা মূলক, সেখানে এই রকমের ভন্ডামী জেনে শুনে গিলতে বাধ্য করা এক ধরনের অমার্জনীয় অপরাধ। শুধুমাত্র পাঠ্য বই-এ আছে বলে এর যে গুরুত্ত্ব, শিশু আর তাদের অভিভাবকবৃন্দের মনে দাগ কাটে তা প্রায় অমচোনীয়। টিভি, অনলাইন, অডিও ভিডিও ক্যাসেট, পেপার পত্রিকা, বাসের গায়ে, রিক্সার গায়ে এগুলোর প্রভাব নিশ্চয়ই আছে তবে শ্রেণী ভেদে এই প্রভাবের তারতম্য হয়। আমি শংকিত আজকের শিশুদের নিয়ে। যারা স্কুলগামী। কারণ, আজকের তরুণেরা, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রেখেছে, তাদের দ্বিচারিতা আমাকে ভাবায়। যারা অতি শিক্ষিত, আমার কর্মক্ষেত্রেই দেখেছি তাদের কর্মকান্ড, কথাবার্তা, আচড়ন আর সামাজিকতা, ভেবে কুল পাইনি, কেবলই মনে হয়েছে এঁরা কি ‘বিজ্ঞান’ বোঝেন? আমার উর্ধতন একজন খৃষ্টান পি এইচ ডি ধারী প্রতিদিন দুপুরে খেতে গিয়ে ১ ঘন্টা বিলম্বে কাজে ফেরেন। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বললেন চার্চ থেকে এলেন। আমি বললাম, তুমি ১ ঘন্টা আর আমি তোমার জন্যে ১ ঘন্টা, মোট ২ ঘন্টা সময় নষ্ট করলাম, এর কি মানে আছে? সে একটু ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, আমি নাকি ভালো নই, কারণ খাবার সময় ঈশ্বরের নাম নেই না। আমি বললাম আমি তাদের কথা মনে রাখি যারা খাবারটা তৈরীকরে আর উপাদান গুলো ফলায়। সে বলে, ঈশ্বর না চাইলে আমি নাকি খেতে পারতাম না। আমি বললাম, ঠিকই তো আছে, তুমি অদৃশ্য ভূতের পায়ে তেল মালিশ করে খাও, আর আমি তার উপরে সর্দারি করে খাই! তোমার সাথে আর কতোজন সেখানে যাও? বললেন জনা পনেরোতো হবেই, সাথে বললেন, ঈশ্বর নাকি তাদের অনেক দিয়েছেন! আমি উত্তরে বললাম, তাই বলে কর্ম ঘন্টা থেকে ৩০ ঘন্টা বা তারও বেশী কেড়ে নেবার অধিকার নিশ্চয়ই ঈশ্বর তোমাদের দেননি। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে (বর্তমান) অত্যন্ত বিচক্ষন আর সজ্জ্বন বলে জানি। কিন্তু তার পরেও কেনো এই ধর্মশিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতা মূলক রাখা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। আমারতো মনে হয় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি হটকারী সিদ্ধান্ত পালন করছেন। তাঁর উচিৎ ধর্মশিক্ষা বিষয়টি পাঠ্যসূচী থেকে সম্পূর্ন বাতিল করে দেওয়া, নিদেনপক্ষে বাধ্যতামূলক না রাখা। সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপণ করবো, আর মুখে বলবো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা, এধরনের প্রহসন রাষ্ট্রযন্ত্রে কেনো থাকবে? আদিল মাহমুদকে অসংখ্য ধন্যবাদ সিরিজ আকারে এই অসংগতি গুলো তুলে ধরার জন্যে।
@কেশব অধিকারী/রাজেশ,
আমারো মনে হয় যে স্কুলে পাঠ্য বই আকারে এসব সামপ্রদায়িক বিষবাষ্প কোমলমতি ছেলেমেয়েদের মনে গেঁড়ে দেওয়া শুধু ভন্ডামিই নয়, রীতিমত অপরাধের সামিল। পাড়ার মোল্লা জুমার নামাজে দুই কথা, কাফের নাছারাদের গালিগালাজ করে সেটা এক কথা, আর সরকার থেকে সিলেবাস ছাপিয়ে এসব শেখানো সম্পূর্ন ভিন্ন কথা। এ জন্যই আমি সিলেবাসে গুরুত্ব দিয়েছি।
ধর্মওয়ালাদের দায় অস্বীকারের ক্ষমতা ঈর্ষনীয়, মজসিদ মাদ্রাসার ইমাম মোল্লাদের বক্তব্য, বাজারে প্রচলিত মোকসুদুল মোমেনিন গোছের হাজারো বই এর রেফারেন্স দিলে প্রথমেই বলবে এসবের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, ইসলাম জানতে হলে বড় বড় আলেম স্কলারের কথা শুনতে হবে, বিদ্যালয়ে পাঠ নিতে হবে এসব হেনতেন…তো দেশের বিদ্যালয়ে যে বছরের পর বছর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা ধর্মের নামেই চালানো হচ্ছে সে বেলায় কি বলা যাবে? ১৬ বছর দেখেননি তাও মানলাম, এখন দেখিয়ে দিলাম, এখন কি ওনারা এসব ‘ভুল’ ইসলাম যেসব ষড়যন্ত্রকারী সিলেবাস আকারে পড়াচ্ছে তাদের ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেবেন?
না জেনে আন্দাজি কিংবা ভুল ইসলাম শেখানোর শাস্তিও নাকি পরকালে ভয়াবহ। জেনে শুনে ওনারা কিভাবে দুনিয়াময় এত এত আলেম মোল্লাদের এমন ভয়াবহ পাপের ভাগিদার করে যাচ্ছেন? কেন তাদের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন না? কেবল যাবতীয় দায় বিদ্বেষীদের…ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোন ব্যাপারই নেই, সবই নাকি বিদ্বেষীদের অপপ্রচার?
এসব তথাকথিত ধর্মপ্রিয় লোকের এক বড় অংশ আসলে ঠিকই সাম্প্রদায়িক, তারা এক এক যায়গায় এক এক চেহারা দেখায় এখনো আসল চেহারা সব যায়গায় দেখানোর সময় আসেনি মনে করে। তারা ঠিকই চায় ধর্মের নামে যাবতীয় সাম্প্রদায়িক জঞ্জাল ছেলেমেয়েরা শিখুক। নইলে প্রতিবাদ করে না কেন? কেন এক এক যায়গায় এক এক চেহারা দেখায়?
আরেক অংশ জানে বুঝে ঠিকই যে এসব শেখানো ঠিক নয়, তাও ধর্মের অন্ধ আবেশের কাছে মানসিকভাবে দৈন্য। আর সে দৈন্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ইসরায়েল আমেরিকার কাজকারবার। এরা হয়ত প্রচার করবে না, তবে প্রচারে বাধাও দেবে না।
@আদিল মাহমুদ,
এই ফিল্মটা যদি দেখে না থাকেন একবার দেখে নিবেন, আপনার ভাল লাগবে।
@আদিল মাহমুদ,
একেবারে যথার্থ ধরেছেন। আমি এদেরকেই ভন্ড বলি। এরা উপরে উদার ভেতরে ভীষণ রকম মৌলুবাদি। উপরে উপরে বলে তোমার ধর্ম তোমার কাছে আমার ধর্ম আমার , আর ভিতরে ভিতরে বিধর্মীদের সম্পর্কে চুড়ান্ত বাজে ধারনা পোষণ করে ও তাদের নিপাত চায়। উপরে উপরে লাদেন বা বাংলা ভাইয়ের সমালোচনা করে মনের ভিতরে তাদেরকে প্রকৃত বীর হিসাবে প্রশংসা করে ও আল্লাহর কাছে তাদের মাগ ফেরাত কামনা করে।
আপনার নিরলস শ্রমলব্ধ সিরিজটি নিঃসন্দেহে অন্ধকারের মেঘ কাটতে সাহায্য করবে সন্দেহের দোলাচালে দুলতে থাকা বিশ্বাসীদের, অন্ধ বিশ্বাসের কানা গলিতে ঘুরপাক খেতে থাকা নবীন পথচারিদের সাহায্য করবে নতুন করে ভাবনার দুয়ারে কড়া নাড়তে। বিশ্বাসীদের কথা আপাতত ভুলে যান তারাতো- যেই লাউ সেই কদু। যতই শাবল কুড়াল মারুন না কেন তাদের বদ্ধ দুয়ারে রুদ্ধ থাকবে চিরদিন।
অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের।
@রাজেশ তালুকদার,
আমার লেখার মূল টার্গেট কিন্তু বিশ্বাসীরাই। ধর্মীয় সূত্রে যাইই বলা হোক, সব মানুষের ভেতরেই কম বেশী মনুষ্যবোধ কাজ করেই, সে কারনেই ধর্মীয় সূত্র যতই অভ্রান্ত বলে কড়া বিশ্বাসীরাও চেঁচাক সব কিছু কিন্তু নিজেরাও পালন করে না। সাম্প্রদায়িকতার কথা সব ধর্ম সূত্রেই কম বেশী থাকলেও তারপরেও ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যেও বন্ধুত্ব হয়, একে অপরের জন্য জীবনও দেয়।
মুশকিল হয় আসলেই তাদের নিয়ে যারা সন্দেহের দোলচালে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা দেখলে নীরবতা পালন করা নিরাপদ মনে করেন তাদের নিয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধার্মিক আসলে এই গোত্রের। এই গোত্রের ধর্মীয় আবেগজাত নীরবতা পূঁজি করে মৌলবাদীরা সমাজকে টেনে নামায় অন্ধকারের অতলে। পাকিস্তানে ঠিক তাই হয়েছে। আজ পাকিস্তানীরা মালালার জন্য দূঃখিত হয়েছে, যখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। সে দেশেও ধর্মীয় শিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িকতা উগ্রতার শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দিতে দিতে চরম পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকে নীরবে দেখে গেছে, প্রতিবাদ করেনি পাছে আবার কোন গুনাহ হয়ে যায়।
আমাদের দেশেও তাই হবে, আরো দশ বছর পর স্কুলের বই খুলে দেখবেন আরব দেশের পর্যায়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে, শুধু বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং অপরকে হেয় মনে করার শিক্ষা যেন কেউ না পায় সেটাই আমার কথা। শ্রেষ্ঠত্ববাদ থেকেই যত জাতিগত অশান্তি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
সন্দেহাতীত ভাবে অকাট্য বিশ্লেশন আদিল মাহমুদ। যা দেখিয়েছেন আর উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন, প্রাত্যহিক জীবনে যে কেউ তা দেখতে পায়, তবে উপলব্ধিটার তারতম্য মনে হয় আপনার বিশ্লেষিত কারনেই ঘটে বটে! আগামী প্রজন্মকে এই রাহুমুক্ত কিভাবে সম্ভব, নাকি আদৌ সম্ভব নয় কোন কালে?
@কেশব অধিকারী,
ধন্যবাদ।
আমি আসলেই নিত্য চোখের সামনে যা আমরা দেখি সেসবই কিছুটা প্রেক্ষাপট সহ ব্যাখ্যা করছি। এসবে নুতনত্বের কিছু নেই। সকলেই জানে, কেউ জেনেও সরাসরি জিজ্ঞাসা করা হলে অস্বীকার করে কিন্তু নিজেরা পবিত্র শিক্ষা হিসেবে এসব শেখে এবং শেখায়। আবার অনেকে জেনেও নয়া জানার ভান করে…
সম্ভব কেন হবে না? অবশ্যই সম্ভব। তবে একদিকে যদি দাবী করেন যে আমাদের কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই আর আরেক দিকে সাম্প্রদায়িক সব শিক্ষা সিলেবাস আকারে শিক্ষা দিতে থাকেন তবে কোনদিন কিছু হবে না। আর যদি সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষাকে ইসরায়েলী হামলা কিংবা ১০০ বছর আগের হিন্দু সমাজের জাতপাত দিয়ে জায়েয করার চেষ্টা করেন তো বলার কিছুই থাকে না।
আদিল ভাই আপনাকে অনেক দিন ধরেই খুজছিলাম একটা বিষয়ে আপনার সাথে কথা আলোচনা করা অতি জরুরি হয়ে গেছে আমি জানি আপনার ফেসবুকে একটা একাউণ্ট আছে কিন্তু আপনি খুব বেশী ব্যবহার করেন না আপনি আপনার ওই একাউণ্ট থেকে আমার ফেসবুকে একটু নক করতে পারবেন ?
ফেসবুকে আজাদ মাস্টার লিখে কিংবা [email protected] লিখে সার্চ দিলে আমাকে পাবেন ।
@মাস্টার সাহেব,
আমাকে [email protected] এ মেইল করলেই পাবেন।
বেশ কয়েকদিন পরে আসকে ফেসবুকে ঢুকেই এরকম এক মমিনের স্ট্যাতাস পাইলাম।
শেষ লাইনটা খেয়াল করেন। ৭শ-৮শ বছর আগের বাগদাদীরা তার আপনজন ছিল। কিন্ত বর্তমানের নন-মুসলিমরা এদের আপনজন হইতে পারল না। ধর্মের এমনই অপার মহিমা।
@হোরাস,
গাজায় যা হইতেছে সেইটা বাই নো ওয়ে সাপোর্ট করা যায়, হামাস সিভিলিয়ান এলাকায় থেকে রকেট মারুক আর যা করুক। প্যালেষ্টাইনীদের উচিত নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের ভিতর থেকে যেন ইসরাইলে বেহুদা হামলা না হয় সেইটা নিশ্চিত করা।
নন-মুসলিমরা আপন হবে কেমন করে? ধর্মীয় সূত্রমতে নন-মুসলিম সে যতই ভাল মানুষ পরোপকারী হোক তাকে আপন ভাবার উপায় রাখা হয় নাই।
তারে অল ওয়েজ সন্দেহের চোখে দেখতে হবে, কারন সে তো ধর্মনাশের ষড়যন্ত্রে জাতিগতভাবেই ১৪০০ বছর ধরে লিপ্ত আছে। বিশ্বাস না হইলে আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের ধর্মশিক্ষা বই খুলে দেখতে পারেন।
বাইবেল এমন শিক্ষাই দেয় যে, এমনকি একটা শিশু যদি খ্রিস্টান না হয়ে মারা যায়, তাকেও অনন্তকাল নরকের মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে কাটাতে হবে। তো এই শিক্ষার কুফল হয়েছিল এমন, আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ব্যাপক গণসমর্থন লাভ করত যাজকরা বা পাপাল এলিমেন্টস। তবে যুক্তির লড়াই এবং বিজ্ঞানের জয়যাত্রা তাদের হটিয়েছে, আদিল ভাই।
@কাজি মামুন,
যুক্তির লড়াই অবশ্যই দরকার।
তবে শুধু বিজ্ঞানের জয়যাত্রা কিন্তু যথেষ্ট নয়। যে আধুনিক ডাক্তারী শাস্ত্রে পাশ করে জ্বীন চিকিতসকের কাছে যাবার পরামর্শ দিতে পারে তার ব্যাপারে বিজ্ঞানের শিক্ষা কতটা প্রভাব রাখতে পারছে?
নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং বিধর্মীদের সম্পর্কে জাত ধরে কুতসা গাওয়ার লোক কিন্তু আমাদের আশেপাশেই বহু শিক্ষিত লোকেই করে।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যাঁ, ঠিকই অসংখ্য জীন,পরীতে পাওয়া রোগী গ্রামে গঞ্জে পাওয়া যায়। জীন,পরীদের আরো সাক্ষাৎ পাওয়া যায় বড় বড় মসজিদ, মাদ্রাসা,পীরের দরবারে এমনকি মাঝে মধ্যে কিছু কিছু বাংলা দেশী নামী দামী পত্রিকায়ও।
তবে মনে হয় এই জীন পরীদের বাসস্থান বোধ হয় শুধু মাত্র বাংলাদেশেই।
আমেরিকায় একটা জীন পরীরেরও সন্ধান পাওয়া যায়না।
তাতে মনে হয় উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তিতে অগ্রগতি লাভ করিয়া সমগ্র জীন পরীদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে আমাদের বাংলাদেশে বা তদনুরুপ অনুন্নত দেশ গুলীতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরা জীন পরী দেও দৈত্যদের এদের দেশে বসবাসের স্থান দিতে রাজী নয়।
এখন ঠেলাটা সামলাও।
আমি ছোট বেলায় গ্রামে বহু জীন পরীতে পাওয়া রোগী দেখেছি। এখন বুঝতে পারি এগুলী সব “HYSTERIA” রোগী ছিল।
আপনি কি কিছু জীন পরীদের কাহিনী জানেন?
ধন্যবাদ আপনার পর্যবেক্ষনের জন্য।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
জ্বী ভাই, জীন বিষয়ে কিছু জানি, শুধু কেচ্ছা কাহিনীই নয়; বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও জানি। জিন কেবল বাংলাদেশের সম্পদ আপনার এই ধারনা সম্পূর্ন ভুল। ধর্মগ্রন্থের কোথাও জীন কেবল বাংলাদেশেই থাকে এমন কথা লেখা নাই। আমেরিকা থেকেও আধুনিক আলেমরা জীনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ভদ্রলোক আধুনিক ডাক্তারীতে আমেরিকার মত দেশের পিএইচডি ধারি দেখা যায়।
কোরান পাঠে কিভাবে জীনের সাথে যুদ্ধ করা যাবে তা জানতে পারেনঃ
plausible scientific explanation of how reciting Quran combats the influence of jinn
সারাংশঃ so, based on this, the jinn seems to be something that vibrates, like the wave-like motion of a snake. and since reciting Qur’aan amounts to creating sound waves, it’s plausible that the Qur’aanic sound waves somehow negate the jinn’s waves.
জীন জাতি সম্ভবত সাইন ওয়েভে চলাফেরা করে বলে আমরা জানতে পারলাম। সেই ওয়েভকে কোরানিক সাউন্ড ওয়েভ দিয়ে প্রতিহত করার প্রস্তাবনা এই গবেষক দিয়েছেন। কোরান মনে হয় এ জন্যই সুরেলা কন্ঠে পাঠ করতে হয়, মেক সেন্স।
আরো উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞান দেখুন এখানে, যা বোঝার মত জ্ঞান আমার নেই। বুদ্ধিমানদের জন্য নিশ্চয়ই এখানে ইংগিত আছে, আমি বুদ্ধিমান নই, কাজেই বুঝি না। আধুনিক এস্ট্রো ফিজিসিষ্ট যারা আছেন তারা হয়তবা বুঝবেন।
The Jinn have weight means that we can detect their gravity and they can detect our gravity. So according to the Quran we cannot see the Jinn nor collide with them but we can detect their gravity.
এই জাতীয় বিদ্যার্জন কি অশিক্ষিত মোল্লার দ্বারা সম্ভব? আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা ছাড়া এসব বিদ্যার্জন সম্ভব নয়। শুধু বিজ্ঞানের জয়যাত্রা কিংবা উচ্চশিক্ষা কুসংস্কার বিতাড়নে কতটা সহায়ক এই প্রশ্ন ভাবা উচিত নয় কি?
@আদিল মাহমুদ,
যথেষ্ট নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে লেখা যত্নশীল এবং গবেষণালব্ধ একটি প্রবন্ধ। দারুল হারব এবং দারুল ইসলামের বিষয়টাও এবার সামনে এসেছে। মুসলিম বিশ্বে ‘দারুল ইসলাম’ যে একটা বাস্তবতা বিবর্জিত কল্পনা বিলাস সেটা হৃদয়াঙ্গম হতে এখনও বহুদিন বাকী , দূঃখজনক হলেও সত্য। এসবের পেছনে দারিদ্র , অশিক্ষা- কুশিক্ষা সহ যাবতীয় মানব উন্নয়ন সূচক সমূহকেও অবহেলা করা যায় না। একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত বাস্তববাদী মুসলিমদের রাজনীতিতে অনীহাও অনেকাংশে দায়ী। রাজনীতি ও ধর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং যতদিন বাস্তববাদী এবং বস্তুবাদী মুসলিমরা রাজনীতিতে নিজেদের আসন পাকপোক্ত করতে পারছে , সমস্যা সমাধানে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে বিদ্যমান স্হবিরতা কেবলমাত্র দীর্ঘায়িত হবে যা কারও জন্যেই মঙ্গলজন নয়। আশা করি আপনার মত অনেকেই এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসবেন।
@সংশপ্তক,
– সেই কল্পনার বৃহত্তর ইসলামী উম্মার আলোতেই কিন্তু ‘৭১ সালে আমাদের বাঁচা মরার লড়াই মুক্তিযুদ্ধ তখনকার আলেম সমাজ, বহিঃবিশ্বের মুসলমান জনগোষ্ঠির কাছে সমর্থিত হয়নি, তাদের সমর্থন ছিল পাক পক্ষে। উম্মা টিকিয়ে রাখতে হবে। আজকের দিনেও বদর রাজাকার গোছের লোকদের সাথেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকেও সদ্ভাব রাখে, বড় আলেম বলে সম্মান করে সেই উম্মার নামে, ঐক্য টিকিয়ে রাখতে হবে তো, নইলে ইসলামী খেলাফত গঠন করা যাবে কেমন করে। আর রাজাকারও বড় আলেম, ইসলামী পন্ডিত হলে তো কথাই নাই, তাদের অন্তর্ধানেও অনেকের দিলে চোট পড়ে।
তবে যাইই বলেন, এই মানসিকতার পেছনে কিন্তু দারিদ্র, অশিক্ষা এসব মূল কারন নয়। এসব কিছুটা প্রভাব রাখতে পারে দীর্ঘদিনের এক ধরনের পশ্চাতপদ আবেশ সৃষ্টিতে। আজকের দিনেও বই পুস্তক, এমনকি বাংলা ইংরেজী বহু ব্লগে দেখেন এই ধরনের দারুল ইসলাম জাতের তত্ত্ব আধুনিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিতরাই বয়ান করে চলেছেন।
– এটা সঠিক, তবে সব যায়গায় নয়। বাংলাদেশ পাকিস্তান এসব দেশের লোকে কিন্তু রাজনীতিতে ভাল রকম আগ্রহী। তবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মূল সমস্যা এসেই যায়, সেই ধর্ম হয়ে যায় এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক, সরাসরি না হলেও এর প্রভাব কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আমাদের দেশের কথাই ধরেন, দেশের লোকে কিন্তু এখন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা নাকি ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা এই নিয়ে মোটা দাগে বিভক্ত যার প্রভাব সুদুরপ্রসারী। এত মৌলিক প্রশ্নে এ ধরনের বিভক্তি নিয়ে এগুনো যায় না।
আপনাকে ধন্যবাদ, আমার ধারনা এসব নিয়ে আপনিও ভাল মানের বাস্তববাদী, নিরপেক্ষ লেখা লিখতে পারেন। তত্ত্বীয় ধর্মের কাটাছেঁড়া কমিয়ে ব্যাবহারিক দিকে হাত দিলেই সকলেরই মংগল বলে আমি মনে করি।
এইটা একটা চমতকার পর্যবেক্ষণ যে মুসল্মান মুসল্মান নিজেদের মধ্যে দাঙ্গাদাঙ্গি করে মরলে কোন তৃতীয় মুসলিম পক্ষ এই ব্যাপারে প্রদর্শন করে সম্পুর্ণই নির্লিপ্ততা। অথচ আরবে জাতিগত দাঙ্গায় মরেছে একটি বিশাল বিশাল সংখ্যক মানুষ, এখনও মরছে সিরিয়ায়। শুধুমাত্র শিয়া সুন্নি ঘুষাঘুষিতে মরেছে কতো মুসল্মান এইটা হিসাব করতে ষোল ডীজিটের ক্যালকুলেটর লাগবে। মুসল্মানদের এক সাবকালচার বলে অন্য সাবকালচার ছহি মুসল্মান না, শিয়া বলে সুন্নি মুসল্মান না, সুন্নি বলে কাদিয়ানি মুসল্মান না, গথ মুসল্মান বলে পাঙ্ক মুসল্মান ছহি মুসল্মান না- অতপর শুরু হয় দাঙ্গাদাঙ্গি। মুসল্মান অমুসল্মান নির্বিশেষেই কেনো জানি তাদের অন্তকার এই দাঙ্গাদাঙ্গির ব্যাপারে পালন করে নির্লিপ্ততা, যদিও অমুস্লিমে মুস্লিম মারলে এইটা পায় অবিশ্বাস্য রকম মিডিয়া কভারেজ। এইখানে কি এইটাই উল্লেখ্য হওয়া উচিত না কোন মারামারিতে বডিকাউন্ট সবচেয়ে বেশী, সেইটাই সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত না? যাই হোক, সমস্যাটা বোধহয় মুসল্মানদের সংস্কৃতিতে, সাংস্কৃতিক ভাবেই এরা প্রচন্ড প্রচন্ড সেক্টেরিয়ান। এমনকি বাংলাদেশ যেটা কিনা মুসল্মান দেশগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশী সহণীয়, সেখানেও কয়েকবছর পর পরই তারা দাঙ্গাদাঙ্গি বাজাচ্ছে। বড়ো স্কেলে বাজাতে পারছে না হয়তো, কিন্তু বাজাচ্ছে, সাম্প্রতিক কালে যেমন বাজালো রামুতে। এই সমস্যার সমাধান কি?
@আল্লাচালাইনা,
এটা মুহাম্মদের মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয়েছিল, ১৪শো বছর পরেও তা অব্যাহত আছে এবং থাকবে আরো বহুকাল। এর জন্যে যতসব মাল-মসলার প্রয়োজন মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা যথেষ্ট মজুত রেখে গেছেন তাদের ধর্মগ্রন্থে। ইসলামের ইতিহাস নিজেদের মধ্যে খুনা-খুনীর এক বিশাল রক্তাক্ত ইতিহাস। এর প্রমান সিফফিনের যুদ্ধে আলীর হাতেও কোরান ছিল মুয়াবিয়ার হাতেও। যে কোরান দিয়ে শিয়ারা সুন্নীদের মারে সেই কোরান দিয়ে সুন্নীরাও শিয়াদের মারে। মুসলমানকে তাদের ধর্মগ্রন্থই শতধারায় বিভিক্ত করে রেখেছে, এমনটা যে হবে তা মুহাম্মদ নিজেও জানতেন। এ জন্যে মুসলমানদের মাঝে আমেরিকা বৃটিশ ইসরাইলের কেরোসিন ছিটানোর প্রয়োজন নাই। এ থেকে পরিত্রাণের উপায়- কোরান আর হাদিস সংস্কার। কিন্তু তা সম্ভব নয়। মুসলমানদের সেই পথ খুঁজতে হবে, যে পথে ডাইনী পুড়ানো থেকে খৃষ্টানরা, সতী পুড়ানো থেকে হিন্দুরা বেরিয়ে এসেছে।
@আল্লাচালাইনা,
– এই প্রবনতার মূল কারন আসলে অতি মাত্রায় সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব, বাল্যকাল থেকে এ শিক্ষা নানান ভাবে দেওয়া হয়। নির্লিপ্ত থাকার কারন হল; নিজেদের ভেতর খুনোখুনী নিয়ে আলোচনাকে মনে করা হয় নিজেদের দূর্বলতার স্বীকৃতি যা শ্রেষ্ঠত্ববাদের অহংবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। বাইল ডিফল্ট তারা শিক্ষা পায় নিজেরা পূত পবিত্র ভালমানুষ, কেবল বিধর্মীরাই যাবতীয় নষ্টের গোড়া।
পুরোপুরি নির্লিপ্ততা পালন করে এটা ঠিক নয়। নির্লিপ্ততা পালন করে তখন যখন তৃতীয় কোন বিধর্মী পক্ষ জড়িত না থাকে তখন। তৃতীয় কোন বিধর্মী পক্ষ জড়িয়ে গেলে মুসলমান জনমত চলে যায় সেই মিলিত পক্ষের বিপরীতে। কুয়েত আক্রমন করে সাদ্দাম দখল দেবার সময় জনতা পুরো নির্লিপ্ত ছিল, রংগমঞ্চে আমেরিকার আবির্ভাব ঘটার পরেই তারা সরাসরি এক পক্ষ নিয়েছিল। ‘৭১ এর ঘটনাও একই; সে সময়েও ভারতের জড়িত হওয়া বিশ্ব মুসলিম জনমতকে প্রভাবিত করেছিল। কিছু মুসলমান দেশে এমনও লেখালেখি হয়েছিল যে ভারত ইসরাইলকে সমর্থন দেবে হুমকি দিচ্ছে।
সমাধান হল নিজেদের মুসলমান পরিচয়ের ওপরে আগে মানুষ পরিচয়ে অভ্যস্ত হওয়া।
ভাই আপনার বদ অভ্যাসটা গেল না। এত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা এত বড় হলে আমাদের যে চোখে সমস্যা হয় পড়তে গিয়ে সেটাও আপনার বোঝা উচিত। আপনার ৪ পর্ব লেখা অনায়াসেই ৭/৮ পর্ব করা যেত। তাতে প্রতিটি পাঠক আপনার লেখার নির্যাস পুরো পুরি আত্মস্থ করত। আর আমরাও হতাম উপকৃত। আপনার জানা উচিত আপনার এ বিশ্লেষণ ধর্মী বাস্তব ভিত্তিক লেখা থেকে আমরা বিভিন্ন সময়ে রেফারেন্স আকারে মানুষের সাথে আলাপ করি। যেমন কিছুদিন আগে দেখলাম বাংলাদেশের মাধ্যমিক লেভেলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। তখন এক লোকের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে আপনার লেখা থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছিলাম কিভাবে গোটা জাতিকে এভাবে ধর্মান্ধ করে গড়ে তোলা হচ্ছে একে বারেই কচি বয়স থেকে মহাসমারোহে সরকারী খরচে।
একেবারে মনের কথা বলেছেন। আমিও ঠিক এ ভন্ডামি সহ্য করতে পারি না। যখন সাদ্দাম কুয়েত দখল করল, কেউ টু শব্দটিও করল না , যেই কুয়েতি ও সৌদি আরবের আহবানে আমেরিকা আগমন করল সাথে সাথে মুসলমানদের চেহারা পাল্টে গেল। সব দোষ নন্দ ঘোষের মত , সব দোষ আমেরিকার ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। ঠিক এ ঘটনারই পূনরাবৃত্তি ঘটছে এখন হামাস ও ইসরাইলের সংঘর্ষে। সম্পূর্ন বিনা উস্কানিতে আগ বাড়িয়ে হামাস ক্রমাগত কয়েকশ রকেট ইসরাইলে নিক্ষেপ করল, কোথাও কোন মুসলমান টু শব্দটি করল না। যেই ইসরাইল পাল্টা হামলা চালাল অমনি সব শিয়ালের মত এক যোগে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। আপনার কি মনে হয় না , মুসলমানদের এ ধরনের মন মানসিকতার কারনে ক্রমাগত দুনিয়া ব্যপী তারা আস্তে আস্তে কোন ঠাসা হয়ে পড়বে ? তার গণ্য হবে হীনমন্য জাতি হিসাবে ? আর তখন তাদের বিরুদ্ধে হিটলারী কায়দায় ক্লিনজিং অপারেশন শুরু হয়ে যেতে পারে ?
@ভবঘুরে,
@ভবঘুরে,
আমি মূলতঃ হাইলাইট করেছিলাম সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কেবল মাধ্যমিক পর্যায়ের সিলেবাস থেকে কারন স্কুলের সিলেবাসে কচি বয়স থেকেই ধর্মের নামে এসব গার্বেজ শেখালে ফলাফল অতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। তাই বিশেষভাবে এটার গুরুত্ব আলাদা। কিন্তু বাস্তব হল যে এই জাতীয় কিংবা আরো ভয়াবহ রকমের সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম প্রচারের নামে নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন এমনকি হত্যার নির্দেশনা মূলক বই পুস্তক পবিত্র ধর্মীয় জীবন বিধান প্রচারের নামে প্রকাশ্যে প্রচারিত হয়ে আসছে। এমনকি সরকার পর্যন্ত গাঁটের পয়সা খরচ করে এসব শেখাচ্ছে। স্কুলের সিলেবাস বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেখা গেছে একই প্রবনতাই আছে, এমনকি পশ্চীমের উদারতার সুযোগ নিয়ে প্রবেশ করানো হচ্ছে সেসব দেশেও। আর ব্যাক্তিগত বা বিচ্ছিন্ন পর্যায়ে মোল্লা আলেমদের লেকচার, ফতোয়া, ওয়াজ মাহফিল এসবের তো কোন হিসেবই দেওয়া সম্ভব না।
আপনার ৪ পর্ব লেখা অনায়াসেই ৭/৮ পর্ব করা যেত। তাতে প্রতিটি পাঠক আপনার লেখার নির্যাস পুরো পুরি আত্মস্থ করত।
– আসলেই কি তাই? আগেও বলেছি, ছোট পর্বাকারে দিলে ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। মুক্তমনায় প্রথম পাতার থেকে না সরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, সেটা হতে ৭/৮ দিনও লাগে। এর মাঝে পাঠক যাবে ভুলে, ব্লগের বিনে মাগনা মাল আবারো স্মৃতি হাতড়ে পুরনো পর্ব থেকে রিক্যাপ করার ধৈর্য্য মনে হয় বেশী লোকের থাকে না। সত্য বলতে এ লেখা লিখতে যত নয়া সময় গেছে আরো বেশী সময় গেছে সাজাতে, কারন কোন বিষয়ে বেশী কম বলব, অতীত বর্তমান কিভাবে সাজাবো এসব নিয়ে বহুভাবে সাজাতে হয়েছে।
সবকিছুকেই মুসলমান বনাম অমুসলমান দৃষ্টিকোন থেকে দেখার প্রবনতা অত্যন্ত অপরিপক্ক মানসিকতার পরিচয়। আমার ব্যাক্তিগত ধারনা প্যালেষ্টাইন সমস্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেভাবে প্রভাব ফেলতে ব্যার্থ হয় এটাকে ব্যাপক ভাবে মুসলিমাইজেশন করার ফলে। মানবিক সমস্যা হিশেবে প্রচার করা গেলে কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়া যেত অনেক বেশী। হামাস চাইবেই ইসরাঈল এভাবে বিনা বিচারে হামলা চালাক, ইসরাঈলও পাগলা কুকুরের মত, আত্মরক্ষার নামে সিভিলিয়ান অবস্থানেও নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাবে, মারা যাবে নিরীহ মানুষ। এই চক্র থেকে সহসা মুক্তি আছে বলে মনে হয় না।
হিটলারের মত কিঞ্জিং অপারেশন পর্যায়ে যেতে অনেক দেরী আছে। আর সবই তো এক তরফা নয়, মুসলমানরা সমস্যা চিন্তা করে অপরিপক্ক মানসিকতার পরিচয় দিয়ে, কিন্তু তাদের পয়েন্ট যে নেই সেটাও ঠিক নয়। যদিও আধুনিক কালেও মুসলমান চিন্তাবিদরা সব সময়ই নিজেদের চিন্তা করে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে, সব মুসলমান মিলে এক রাষ্ট্র কবে গঠন করবে এই স্বপ্নই হল তাদের কাছে যাবতীয় সমাধান, মূল দর্শনই হল আমরা সকলের চাইতে আলাদা এবং আন্ডারলাইয়িং কজ হল আমরা শ্রেষ্ঠ। বলাই বাহুল্য যে এই ধরনের সব মুসলমানের দারুল ইসলাম অন্তত হাজার বছরের মধ্যে কায়েম হবার সম্ভাবনা নেই। এই আদর্শ মুসলমান রাষ্ট্রে জামাতি, হিতা, পাকিস্তানী, বাংলাদেশী সকলেই এক হয়ে যাবে কেবল ধর্মের বন্ধনে এমন অবাস্তব উন্মাদীয় চিন্তাভাবনা অপরিপক্ক মানসিকতারই লক্ষন। সেসব নিয়েও নিজেদের মাঝেই লেগে যাবে বিশাল গোলমাল। যেমন ‘৭১ সালের অধিকাংশ রাজাকারই আদালতে সাজা পাবে না, আদালত থেকে ক্লিন সার্টিফিকেট পেয়ে বেরিয়ে আসবে, তাই বলে তাদেরকে অন্তত সাধারন বাংগালী মুসলমান ধর্মের ভাই বলে বুকে টেনে নিতে পারবে কোনদিন?
ধর্মের বন্ধন বাস্তব জীবনের হাজারো ভ্যারিয়েবল পাশ কাটিয়ে টেকে না তা বহুবার প্রমান হয়েছে। প্যালাষ্টাইনীদের জন্য এত দরদ, সেই প্যালেষ্টাইনীরা কুয়েতে সাদ্দাম বিদায় হবার পর যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছে তা চিন্তা করা যায় না। একটা ঘটনা হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টে আছে একজন প্যালেষ্টাইনী ৬০ বছরের ডাক্তার তাকে সেনা ক্যাম্পে শুধু বুটের নীচে পাঁড়িয়ে পিঠ ভেঙ্গে মেরে ফেলা হয়েছিল। ইসরাইল সময় সময় আশেপাশে্র আরব এলাকাগুলিতে মুসলমান মারে ঠিক আছে, কিন্তু নিজ দেশের মুসলমানদের এভাবে জাত ধরে সন্ত্রাসী হিশেবে গনহারে মারা তো দুরের কথা, অত্যাচার নিপীড়নও করে না। ইসরাইলের ১৭% পপুলেশন মুসলমান। তাদের ওপর জাতিগত অত্যাচার নিপীড়ন হচ্ছে এমন প্রতীয়মান হয় না, তাদের দেশের ভেতর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভালই আছে। হামাস হিজবুল্লার সাথে দেশের মুসলমানরা যুক্ত আছে এই ছূতা ধরে সহজেই এদের নিকেশ করা ইসরাইলের পক্ষে ব্যাপারই ছিল না।
আদিল ভাই,
আপনার এই দীর্ঘ লেখনীতে সাম্প্রদায়িক মুসলমানদের বিষয়ে যা যা বলেছেন, তার সবই সত্য, সবই প্রাসঙ্গিক। তবে আমি খুব একটা হতাশ নই। মানব সভ্যতার গোটা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে পরিস্কার বোঝা যায়, হেগেলের ডায়ালেকটিক প্রসেস অনুযায়ী মুসলমানেরা এখন ঠিক রেঁনেসা পূর্ব ইউরোপের অবস্থায় রয়েছে। আমার মতে ভেতরে ভেতরে মুসলমানদের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, তবে পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হতে কিছু সময় তো লাগবেই।
লেখার জন্য- (Y) (F)
@চলনামৃত,
ধন্যবাদ আশাবাদী মন্তব্যের জন্য।
এটা আসলে এক পর্যায়ে নিজেদেরই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হতে পারে। বিশ্ব দিনে দিনে গ্লোবাল হচ্ছে। এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের সকলের থেকে আলাদা করে রাখার প্রবনতা নিজেদেরই ক্ষতি করা ছাড়া মংগলজনক কিছু নয়। নিজেদের এসেট কি লায়াবিলিটি কি সেটাও যদি না বোঝে তো বড় মুশকিল।
মুসলমানদের মধ্যে পরিবর্তন যে হঠাত করেই আজকেই শুরু হয়েছে তা নয়। পরিবর্তন সে হিসেবে বলতে গেলে সব আমলেই ছিল। কিন্তু সেটা সামাজিক চেতনা পরিবর্তনের মত বিপ্লবাকারে কোনদিন আসেনি। ব্রিটিশ ভারতেও দুয়েকজন স্যার সৈয়দ আহমেদ, সেলিমুজ্জামানের মত শিক্ষিত, বৈজ্ঞানিক ছিলেন। তবে তাদের অবদান পুরো সমাজে উদ্দীপনা হিসেবে ছড়াতে পারেনি, ব্যাতিক্রম হিসেবেই থেকে গেছে। কারন বোঝা কঠিন কিছু নয়, আপনি আধুনিক শিক্ষা গ্রহনের কথা বললে আপনাকে কাফের নাস্তিক গালাগালি শুরু করলে কয়জনার শখ পড়ে সমাজ পরিবর্তনের আলো জালাতে? ধর্ম হিশেবে সনাতন ধর্মে কুসংস্কার, বাজে সংস্কৃতির ব্যাবহার অনেক বেশী থাকলেও তাদের মধ্যে সংশোধনের হার অনেক বেশী, এখানে তারা অবশ্যই কৃতিত্ব পাবে। মুসলমান সমাজে রামমোহন রায় কিংবা বিদ্যাসাগর জাতীয় কেউ জন্মায়নি।
আধুনিক শিক্ষাও যে সীমিত সংখ্যক মুসলমান নিয়েছিলেন তাদেরও মৌলিক বা দর্শনগত চিন্তাধারা ঘুরিরে ফিরিয়ে সেই ধর্মকেন্দ্রিকই ছিল, তার ফলে তারা নিজ পেশায় ভাল করলেও সমাজ পরিবর্তনে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এই প্রবনতাও আজ পর্যন্তই মোটামুটি আছে। এ বিষয়ে D: হার্ডির লেখা বই এর সারাংশ ঃ
He stresses the force of religion in the growth of Muslim political separatism, showing how the ‘modernists’ kept the conversation among Muslims within Islamic postulates and underlining the role of the traditional scholars in heightening popular religious feeling.
খুব সুন্দর সাইকো এনালাইসিস (Y)
@সাগর,
ধন্যবাদ।
অসাধারণ বিশ্লেষণ।
চলুক, সাথে আছি (Y) (Y) (Y)
উপযুক্ত বক্তব্য। অল্প কিছু পড়েছি। আস্তে আস্তে দেখতে হবে।
এর সংগে আর কিছু যোগ করা যায়-যেমন,
সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ব নবী কোরান হাদিছের মধ্যে তো সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে গিয়েছেন, এর পরেও কি মুসলমানদের আর কোন জ্ঞান লওয়ার প্রয়োজন আছে ঐ সমস্ত আল্লাহর শত্রুদের নিকট থেকে, যারা চরম ঘৃনিত, যাদের বিরুদ্ধে কেয়ামত পর্যন্ত স্বয়ং নবিজী জিহাদ ঘোষনা করেছেন এবং তা চলতেছে ও।
যেহেতু তাহারা ঘৃনিত তাই তাদের আবিস্কৃত বস্তুটাও তো ঘৃনিত হওয়া উচিৎ ছিল।
তা না করে তাদেরটা উল্টো গ্রহন করা কি একটা লজ্জাস্কর ব্যাপার নয় কি।
আপনি কি বোখারী শরীফে চিকিৎসা বিজ্ঞান পেতে ইচ্ছুক? তা ও আপনি পাইবেন।
উটের মুত্র দ্বারা কি সুন্দরই না চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে-যে উটের মুত্র না-পাক,অপবিত্র, শরীরের জন্য ক্ষতিকর বর্জ পদার্থ-তাহাই পান করিয়া সব রোগ নিরাময় করা যাইবে।
কী দরকার আছে তাদের আবিস্কৃত লেজার পদ্ধতি, X-RAY, SCANNING, MRI এর মত উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করার?
সাবধান! কেহ নবীর বানী অবিশ্বাষ করিলে সে কিন্তু কাফের হয়ে যাইবে!!
তাহলে এই পবিত্র হাদিছ খানি একটু দেখে নিন।
একটা উপযুক্ত প্রবন্ধ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
আপনার মূল বক্তব্য সঠিক।
সে কালে উপমহাদেশে মুসলমান মননে অনেকটা এই ধরনেরই চিন্তাধারা কাজ করত যে কারনে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে তারা উতসাহি হয়েছে অনেক পরে। নিজেদের ধর্মগ্রন্থ শ্রেষ্ঠ এবং তাতে জগতের যাবতীয় সব সমস্যার সমাধান আছে এমন ধারনার বাইরে কিছু থাকতে পারে সেভাবে চিন্তা করা শুরু করতে সময় লেগেছে। বিশেষ করে বিধর্মী ভাষা, জ্ঞান বিজ্ঞানকে দেখা হত সন্দেহজনক চোখে, তাদের ধর্ম নাম করার ষড়যন্ত্র হিশেবে। তাই মোল্লা আলেমরা জাতিকে এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্ক সতর্ক করা দায়িত্ব মনে করেছেন, যেমন বিশিষ্ট আলেম আশরাফ আলী থানবী সাহেবের রেফারেন্স দিয়েছি।
এই যুগের ইসলাম প্রিয় লোকেরা এখন এসব বিশ্লেষন পছন্দ করবে না জানা কথা। কোন আলেম কি বলেছে এড়িয়ে যাবে। একই ভাবে ১০০ বছর পরের ইসলাম প্রিয় ভাইরাও আজকের দিনে যারা ধর্মের নামে বিবর্তনবাদ বিরোধী লেখা লিখে বিপুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন তাদের লেখাও অশিক্ষিত কাঠমোল্লার কথা বলে উড়িয়ে দেবে। ট্রেন্ড একই, এবং চিরন্তন।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার ঈমান নবায়ণ করবেন কবে? রিনিউ ডেইট তো বোধ হয় অনেক আগেই শেষ হলো। আশরাফ আলী থানভীর (রঃ) ইছলাহুর রুসুম এর নবম অনুচ্ছেদ পৃষ্ঠা ৩৭ পড়েন নি? প্রত্যেক দিন এক কিরাত অর্থাৎ উহুদ পাহাড়ের সমান গুনাহ করছেন, আস্তাগ ফিরুল্লাহ, আস্তাগ ফিরুল্লাহ।
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/untitledadil.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
😀
রিনিউয়ালের ডেট অনেক আগেই ওভার। এটা ভয়াবহ দূঃসংবাদ হলেও আমার তাই আর নুতন করে পাপের কোন ভয় নাঈ, উহুদ পর্বত জমা হয়ে হয়ে হিমালয়সম হয়ে গেছে। তাও ভাগ্য ভাল সুদ নিষিদ্ধ, নইলে চক্রবৃদ্ধি হারে পাপের পাহাড় আরো বাড়তেই থাকত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় একবার কলোনীর মসজিদ থেকে সম্ভবত এই অমূল্য জীবন বিধানের বইখানি এনে পাঠ করে ছবি তোলা গান শোনা বন্ধ করে দিছিলাম বেশ কিছুদিন :)) ।
@আদিল মাহমুদ,
শুরু হয়ে গেছে মনে হয়। ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে কিছু লেখা দেখলাম নেটে। আমাদের শৈশবে কুর’আন-হাদিসে উদ্ধৃতি দিয়ে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরমন্ডলের ধারণার বিরুদ্ধাচারণ করা হত, বই লেখা হত। এখন কুর’আন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েই তা সমর্থন করা হয়, আগের লেখকরা এখনকার লেখকদের দৃষ্টিতে অসচেতন কাঠমোল্লা।
লেখাটা খুব সখপাঠ্য হয়েছে, তবে আকারে একটু বড়। উপমহাদেশে মুসলমানদের দুর্দশার যে কারণ নির্দেশ করা হয়েছে, তা কিছুটা সাধারণিকরণ করলে গোটা দুনিয়ার মুসলমানদের পতনের ব্যাখ্যা হিসাবে খাটে।
@কাঠ মোল্লা,
আপনি মোল্লা মানুষ, ১৪০০ বছর আগেই ইসলামে বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যা গোছের লেখা সিরিজাকারে লিখা শুরু করেন। পেট্রোডলার ফাইন্যান্সিং এ বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
কারনগুলি আসলেই মোটামুটি সাধারন। এগুলি যারা সত্যের সেনানী তারাও যে জানে না যে তা নয়। তবে সেই যে নিজেদের সদা সর্বত্র বিধর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত মনে করার সাম্প্রদায়িক শিক্ষা বাল্যকাল থেকেই পায় তার কারনে সেটা স্বীকার করা যাবে না। সব সময়ই নিজেদের কোন দোষ নেই, সবই অন্যের দোষ, মহা ষড়যন্ত্র; নিজেরা কেবল সহজ সরল অসহায় ভিক্টিম। এভাবে শ্রেষ্ঠত্ববাদের দাবী কার্যত অচল হলেও চেঁচিয়ে যাওয়া যায়, ঘৃনাবাদের ধর্মগত শিক্ষা হালাল করা যায়। ফলাফল হল দিনে দিনে পতন, যা শোধরানোর উপায় নাই। যাদের আত্মসমালোচনা নেই তারা খুবই অসহায়।
ছোট আকারে লিখলে আসলে কন্টিনিউটি নষ্ট হয়ে যায়, আগের পর্ব বার করে সেখান থেকে শুরু করার মত ধৈর্য্য মনে হয় না বেশী লোকের থাকে বলে।
@আদিল মাহমুদ,
তার চ্যালেঞ্জের মুখে এ বিশাল জগতের কেউ দাঁড়াতে পারেনি। বিবর্তনবাদ নিয়ে তার একটা প্রশ্নের জবাব আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। বার বার যখন কাট মোল্লা কাট মোল্লা করছিল আমি ভেবেছিলাম আমাদের কাঠ মোল্লা ভাই। শেষে দেখি বানান ভুল করেছে এবং উনি আমাদের হোরাস ভাই। তবে আপনার পবিত্র নামটা তার প্রায় সব লেখাতেই আছে কোন ভাবেই ভুলতে পারছেনা। আর কী ভাবে যে জানলো আমার নতুন নাম ‘গোলাপ’ আল্লাহ মালুম। আমার রুজি রোজগারের খবরও জানে আল্লাহর বান্দা।
@গোলাপ মালিক,
😀
ওনার এই দাবী কিন্তু সঠিক, অন্তত আমি বহু আগেই ওনার কাছে বিবর্তন বিষয়ে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছি। বিবর্তনবাদ যে অক্সফোর্ড, কেম্ব্রীজ, হার্ভাড এ জাতীয় সব বিশ্ববিদ্যালয় (যাদের লোকে ভুল বশত বিশ্বের সব সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলে জানে) ও অভিজিত রায় হোরাসদের মিলিত ষড়যন্ত্র এতে আমার আর কোন সন্দেহ নেই। উনি আমাকে কেন রেহাই দেন না কে জানে।
আমার সাথে তর্কে নেমে কি হবে, আমি তো হার মেনেই নিছি বহু আগে। এখন ষড়যন্ত্রকারী সব বিশ্ববিদ্যায়ের বিবর্তনবাদী মোল্লারা কোনদিন ওনাদের কাছে নাকে খত দেয় সেটারই অপেক্ষা।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এই লেখাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে অন্যান্য ব্লগে প্রকাশ করার অনুরুধ যখন করবো, দেখি হুজুর তার মন্তব্যে একটা লিঙ্ক জুড়ে দিয়ে লেখাটির রিভিউ দিয়ে দিয়েছেন।
বাল্যকালের এই সাম্প্রদায়ীক শিক্ষা, অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণা, তালেবান কর্তৃক এই মালালা হত্যা, আমেরিকায় নাফিস গ্রেফতার, ফতোয়াবাজীর বলিদান হেনা, শেফালী, শাফিলিয়া, নুরজাহান, আর জিহাদী আগুনে পোড়া সাতক্ষীরা, রামু এ সব কোনদিন তাদের লেখায় উঠে আসেনা। এ সব যদি ইসলাম সমর্থন করেনা, যদি ইসলাম বিরোধী কাজ হয় তাহলে এ সবের প্রতিবাদে কয়টা মিছিল মাদ্রাসা থেকে বের হয়েছিল? কোন্ মউলানা কোথায় এ সমস্ত ইসলাম বিরোধী কাজের শাস্তির ফতোয়া দিয়েছেন। কিন্তু আরিফের বেলায় তারা সারা বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দিতে পারে। বলা হয় ওসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা, ওরা পথভ্রষ্ট নগন্য সংখ্যার কিছু মানুষ। সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের নীরবতাই নগন্য সংখ্যক মানুষের অপকর্মের প্রেরণা নয় কি?
@গোলাপ মালিক,
:hahahee:
বিশ্বাস করেন আমি কাল রাতে এই কমেন্ট লেখার পর থেকেই জানি যে সহসাই আমার ওপর আবারো নেক নজর আসছে, অনুমান ভুল হয়নি 😀 । এক্কেবারে ১০ এ ১০।
একই কথা ‘৭১ সালের আলেম সমাজের ইসলামী দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন সম্পর্কেও বলা যায়। এই আমলের এসব ইসলাম প্রিয় বান্দারা গলা ফাটিয়ে চেঁচাবে ইসলামের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতার কোন সম্পর্ক নাই, ইসলাম অন্যায় হত্যা জুলুম ইত্যাদী সমর্থন করে না…ইত্যাদী…ইত্যাদী…কেবল ওনাদের প্রিয় আলেম মোল্লা সহি ইসলাম শেখাবার কারখানা মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকগন কি কারনে তখন ইসলামের এত সরল বানী বেমালুম ভুলে জালেমের পক্ষে যোগ দিয়েছিল এটার কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না।
একজন মহান ব্লগার কিছুদিন আগে ইসলাম বিদ্বেষী মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান করে বেড়াচ্ছিল, সে সময়কার কিছু তথ্য প্রমান রেখে দিয়েছি:-D । লেখা তুলে নিয়েও যে তেমন একটা লাভ হয়েছে মনে হয় না:hahahee: । লোকে যে ছাগু সন্দেহ করলে লোককে আর কতটা দোষ দেওয়া যাবে।
সব সময়ই চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে, এক সময় সাদ্দাম ছিল বাপের ব্যাটা, এখন সেও ইসলামের কেউ নয়, তালেবান ছিল আদর্শ, এখন তালেবান ইসলাম ধারনা করে এ কথা কে কবে বলেছে!!!
@আদিল মাহমুদ,
তাতো জানতামনা। তর্কের কথা মনে আছে, আমার একটি লেখার উপরও তর্ক হয়েছে। নিজের চোখে যা দেখেছি আপন কানে যা শুনেছি তা দিয়েও বুঝানো গেলনা। সিলেটের সু বিখ্যাত সু পরিচত মউলানা নুরুদ্দীন মুহাদ্দিসে গহর পুরি রাজাকারে সংগঠক ছিলেন। গণহত্যায় জড়িত ছিলেন তা নিজের চোখের দেখা। আমি তখন তারই সিলসিলার মাদ্রাসার ছাত্র। আমাদের গ্রাম ও মাদ্রাসার সাথে তার গভীর সম্পর্ক। সিলেটের কে কোথায় কী বলেছেন, কী ওয়াজ করেছিলেন তা কি শুনি নাই। যাক ওসব বলে আর লাভ নেই। আগে জিহাদ ছিল কওমী মাদ্রাসার ভিতরে সীমাবদ্ধ এখন তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা আর ষোলকলা পুরণ করে চলেছেন বিদ্যাহংকারী বামপন্থী কম্যুনিষ্টরা।
আপনার সেই লেখাটা এখানে দিয়ে দেন না।
@আকাশ মালিক,
– এ বিষয় সামনের পর্বে আসছে।
@আকাশ মালিক,
(Y)
@গোলাপ মালিক ভাই,
তাই নাকি! আমাকে কাঠ মল্লা বলে নাকি কাঠমোল্লাকে আমার মাল্টিনিক মনে করে? এই গর্দভটার প্রশ্ন শুনলে আগে হাসি আসত কিন্তু এখন হাসিও আসে না দুঃখ লাগে। প্রকৃতি এই গর্দভটার মাথায় এক ছটাক ব্রেনও দেয় নাই। প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস। আফসোস।
আপনার মাল্টিনিক (গোলাপ) বেকুবটা কাছ থেকে জান্তে হইল, এ কারনে কিঞ্চিত দুঃখ পাইলাম। (H)
@হোরাস, আপনি এই বান্দাকে হয়ত অনেক আগে থেকে চেনেন, তাই হাসির পর্যায় পার হয়ে এখন দুঃখ পান। আমার কাছে হয়রান মোল্লা এখনো একটি নভেলটি , তাই তার প্রলাপ পড়ে এখনো বেশ বিনোদিত হই। তার প্রতিটি পোস্টে যেভাবে কাঠমোল্লা কাঠমোল্লা চেঁচামেচি করে তা বেশ হাস্যোদ্দীপক, যদিও মানসিক রোগীদের নিয়ে হাসাহাসি করা ঠিক না; আর তার অদ্ভূত যুক্তিবোধের বিনোদনমূল্যের কথা বাদই দিলাম।
@কাঠ মোল্লা, নেন বিনোদন নেন .. শুভকামনা রইল। তবে এর কান্ড কারখানা ফলো করতে থাকলে কয়দিন পর দেয়ালে মাথা ঠোকা শুরু করবেন সে ব্যাপারে আগেই সাবধান করে দিলাম। তখন আবার বইলেন না যে আগে থেকে সাবধান করি নাই।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
“কী দরকার আছে তাদের আবিস্কৃত লেজার পদ্ধতি, X-RAY, SCANNING, MRI এর মত উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করার? ”
তাই সময় বাড়ে আর সমভাবে বাড়ে প্রজনন!!!!!! :-Y
(Y)
আমাদের এক শুভাকাঙ্খি গল্পচ্ছলে একবার বলেছিলেন, যদি কেউ আমাদের দেশের মুসলমানদের বেছে নিতে বলে মক্কায় নাকি ঢাকায় বোমা হামলা হবে তবে কিছুক্ষণ দুশ্চিন্তার পর মাথা চুলকিয়ে তারা ঢাকাতেই হামলার পক্ষে সায় দিবেন। আমাদের দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদি চেতনা বাঙালি জাতীয়তাবাদি চেতনার চেয়ে দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এর ফল হচ্ছে জে এম বি, বাংলা ভাই, হিজবুত তাহরির, শিবিরের তাণ্ডব, প্রতি জেলায় হামলা, নববর্ষে হামলা, বৌদ্ধদের উপর বর্বর হামলা ইত্যাদি।
@সৈকত চৌধুরী,
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগার মাশুল খুব বড়ভাবেই দিতে হয়। আমাদের এক অংশ হিন্দী কপচিয়ে নিজেদের আধুনিক প্রমান করতে চায়, আরেক অংশ আরবী কালচার আমদানী করে বেহেশতে যায়গা বুক করে রাখতে চায়। ফাঁকতালে সুযোগ নিচ্ছে মৌলবাদী ও স্বাধীণতা বিরোধী চক্র। নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে কোন মৌলবাদী গোষ্ঠির বাবার ক্ষমতা ছিল না হুমকি হয়ে দেখা দেবার।
@সৈকত চৌধুরী,
গল্পচ্ছলে বললেও কথাটার মধ্যে নিদারূন সত্যতা রয়েছে।
একশ ভাগ এক মত। আচ্ছা, বাংলাদেশী জাতীয়বাদের কি হচ্ছে? এই জাতীয়তাবাদ কি ইসলামি জাতীয়তাবাদকে ছাড়িয়ে যাচ্চে, নাকি সাবসেট হয়ে যাচ্ছে?
(Y)
খান বাহাদুর আর রায় বাহাদুর আর ঊনাদের উত্তরিয়/খেলাপত পাওয়া দোসর-বাচ্চা’গণ এই তথ্য জানবে কিভাবে!!!!!!! তারা তো ব্যস্ত জনাবের এবং কত্তাবাবুর পদলেহনে।
এখানে স্তিভ জভস রুপক আর আই ফোন উম্মাদনা, উদ্দীপক মোদক।
মনে হচ্ছে- চিন্তার অন্তরা গিলছি গোগ্রাসে।
@স্ফুলিঙ্গ,
মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আসলে ব্রিটিশের দালালি শুনলে যতটা খারাপ প্রথমেই মনে হয় ততটা খারাপ নাও হতে পারে। এটাকে পাক বাহিনীর দালালির মত মনে হয় না চিন্তা করা যুক্তিসংগত বলে।
রায় বাহাদুর, খান বাহাদুর, নবাব এসব উপাধীর জন্য সে আমলের জমিদার, তালুকদার এরা লালায়িত ছিল সন্দেহ নেই। কারন এসব টাইটেল ছিল সোশাল ষ্ট্যাটাস বৃদ্ধির প্রতীক। তার অবধারিত মানে কিন্তু এও দাঁড়ায় না যে এইসব টাইটেল যারা মাথা পেতে নিতেন তারা সকলে নীচ ধরনের লোক। যেমন ঢাকার নবাবদের কথাই ধরেন, ইংরেজের টাইটেল নিয়েছে ঠিকই, সিপাহী বিদ্রোহ দমনে সহায়তা করে; এটা এখন আমাদের কাছে শুনতে খারাপ মনে হতে পারে। অন্যদিকে সে আমলের কথা মাথায় আনলে বোঝা যায় যে সিপাহী বিদ্রোহ আসলে আমরা যেভাবে চিন্তা করি সে আমলে সেভাবে লোকে সেভাবে চিন্তা করেনি। সাধারন মানুষের তেমন কোন সম্পৃক্তি এর সাথে ছিল না। ধনিক শ্রেনী এটাকে চিন্তা করেছে এখনকার বিডিআর ম্যাসাকারের মত কোন ব্যাপার, তাই তারা নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতে ইংরেজ পক্ষ নিয়েছিল। ঢাকার ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা, এখানে আদৌ বিদ্রোহ হয়নি। ইংরেজরাই নিজেরা বেহুদা আতংকে ভুগে সিপাহীদের উষ্কিয়েছে বিদ্রোহে নামিয়েছে, এরপর প্রহসন মূলক বিচারে ২৩ জনকে ফাঁসী দিয়েছে।
ঢাকার নবাবরা ইংরেজের সাথে সুসম্পর্কে রেখেই ঢাকা শহরের উন্নয়নে, জনকল্যানে অনেক বড় বড় ভুমিকা রেখেছে যা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।