অনেকে হয়ত ভার্চ্যুয়াল জগতের কল্যানে অলরেডি অবগত হয়েছেন, আবার অনেকে হয়ত এখনো জানেন না । তবে টাইটেলটা পড়ামাত্রই যেকোন পাঠকের পক্ষে (বাংলা সিনেমার মতো প্রথম দৃশ্যর পরে) ধারণা করা সম্ভব, কি ঘটবে পরবর্তীতে । নতুন কোন আবিষ্কার নয়, পুরাতন দাঙ্গা-হাঙ্গামার তরতাজা খবর নিয়ে এই যৎসামান্য লেখা । দূরে থেকে ও প্রিয়জনদের জীবনের হুমকি আরেকটি নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করাই । চোখগুলো ভেজাভেজা নয় তবে অনেক ক্লান্ত, ভারী মন, নার্ভাস অনুভব হচ্ছে । ২০১০ সালে অভিজিৎ দা একটা লেখা লিখেছিলেন, মোর গাঁয়ের সীমানার পাহাড়ের ওপারে প্রতিধ্বনি শুনি । সেই পাহাড়ের প্রতিধ্বনি আরো শোনা যাচ্ছে । বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর শহর রাঙামাটিতে বসবাসরত পাহাড়ীদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয় । গত সেপ্টেম্বারের ২২ তারিখ হতে পাহাড়ীরা নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করছে । চলছে মনভারী করার মতো মারো- ধরো, সেটেলারদের উল্লাস । চারদিকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় আকাশ অনেক ভারী । প্রশাসনের ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকাস্বত্তেও গত ২৩ তারিখের রাতে সেটেলারের উগ্রপন্থীরা পৃথক পৃথকভাবে ট্রাইবেল আদাম, রাজমনি পাড়া এবং ভেদভেদিতে আক্রমন চালানোর চেষ্টা করে । পাহাড়ীদের প্রতিরোধের মুখে তারা গ্রামগুলোতে ঢুকতে না পারলে ও মারো, জ্বালাও হৈল্লাস করতে করতে উস্কানি দিতে থাকে । চারিদিকে চাপা ভয়ে পাহাড়ী নারী -শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয় । ফেইসবুকের আপডেটগুলো পড়তে পড়তে হঠাৎ অবচেতন হয়ে পড়ার উপক্রম হই ।
বীর সেনাবাহিনীর নীরব ভূমিকা
তবে একটা কথা না বললে নয়, অনেক মেডিয়া এবং কি ব্লগ জগতে সাধারণ বাঙালি শুভাকাঙ্কিদের ও একই ধারণা পার্বত্য চট্রগ্রামে মারামারি মানে “বাঙালি-পাহাড়ীর সংঘর্ষ“, যা একটা পক্ষপাতমূলক ধারণার মতো হয়ে কাজ করে । ‘সংঘর্ষ’ এবং ‘হামলা’ দুটো ভিন্ন জিনিস । প্রতিরোধকে যদি সংঘর্ষের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে হামলার ইন্ধনদাতা মূল দুষ্কৃতিকারীরা আইনের হাত থেকে বেঁচে যান । এবার শুনি ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে হয়েছে।
video footage (1) of the Rangamati attack
যেভাবে বনরুপাতে আক্রমন করা হয়
স্বাভাবিকভাবে ভিন্নভিন্ন পত্রিকায় ভিন্নভিন্নভাবে ঘটনার বিবরণী তুলে ধরা হয় । আজকের প্রথম আলো” পত্রিকা থেকে;
আদিবাসী এক ছাত্রের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে রাঙামাটি কলেজের বাঙালি ছাত্রটি বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে কলেজে হামলা চালালে ছাত্ররা জাতিগত ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে কলেজের ঘটনাটিকে সংঘর্ষ বলা গেলেও কলেজের বাইরে যা ঘটেছে তা সোজাসাপ্টা জাতিবিদ্বেষী হামলা। বাঙালি ও আদিবাসী উভয় পক্ষ সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। সেনাবাহিনী এবং পুলিশ সংঘর্ষ-পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও শহরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীরা নির্বিচার হামলার শিকার হয়। উত্তেজিত কিছু বাঙালি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সভায় হামলা করে বেশ কয়েকজন আদিবাসী জনপ্রতিনিধিকে মারধর করে। প্রায় দেড় হাজার বাঙালি বনরূপা বাজারে আদিবাসীদের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। কয়েকটি আদিবাসী বসতিতেও হামলা করা হয়। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং পুলিশের তরফে ১৪৪ ধারা জারি হলে দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম্য কমে। সেই ১৪৪ ধারা এখনো চলছে এবং পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই শান্ত বলা যায় না।
পত্রিকাগুলোতে প্রথমে সংঘর্ষ হিসেবে লেখা হলেও পরবর্তীতে হামলা হিসেবে উল্লেখ করা হয় । যে হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন জুম্ম ছাত্র, একজন সরকারী চিকিৎসক, ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ২ জন কলেজ শিক্ষক ও ৫ জন বাঙালি ছাত্র আহত হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয় ও বিশ্রামাগারসহ জুম্মদের ঘববাড়ী ও দোকানপাত ভাঙচুর করে ।
ঐ পিছনে দেখা যায় একটা মসজিদ এবং আক্রমনাত্মক সেটেলার, মাঝখানে আর্মি এবং আর্মিদের মুখোমুখী দুজন প্রতিবাদী পাহাড়ী
‘দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার‘ এই প্রবাদটা বেশিরভাগ ডিগ্রীধারী লোকই জানে । বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে বহু সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীর বসবাস । সম্প্রতি বার্মায় রোহিংগা, আসামের ঘটনার প্রতিশোধমূলক আক্রমণ পার্বত্য চট্রগ্রামে যে ঘটনোর চেষ্টা করা হচ্ছে তার আভা অনেক আগে পাওয়া গেলেও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক মনোভাব কোন হামলাকে থামাতে পারে না । রাঙামাটির ঘটনাটি পূর্ব-পরিকল্পিত বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা কেননা নিমিষে কয়েকমিনিটের ব্যবধানে পুরা রাঙামাটি শহরে একযোগে হামলা চালানো হয় ।
সেটেলারদের আক্রমনে গুরুতর আহত ডাঃ সুশোভন দেওয়ান
এবং প্রতিবাদ
পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত । যেকোন সময়ই সেটেলার বাঙালিরা হামলা চালাতে পারে এমন আশংকা এখনো বিরাজ করছে, ২ বছর আগে যেমনটা ঘটেছিল খাগড়াছড়িতে । তবুও এই দেশ আমার বলে চোখের পানি মুছে হলেও বেঁচে থাকার জন্য প্রতিবাদ করি, যদিও আইনের রক্ষকরা এত উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ও চোখ-মুখ খোলা রেখে ঘুমান ।
নিচের লিংকগুলো সময় হলে …………… ।
…………………………………………………………………………………………………………………………………..
১. Prothom Alo: দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে দমন করুন: রাঙামাটিতে জাতিগত সন্ত্রাস
২. Banglanews24: বিলাইছড়ি হাসপাতাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
৩.BBC: BBC: রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা কালও থাকবে: প্রশাসন
৪. Prothom Alo: বাঙালি-আদিবাসী সংঘর্ষ, রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা
৫. The Daily Star: Rampage in Rangamati
৬. The New Age: Rangamati tense
৭. chtnews24: রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা
বিঃদ্রঃ ছবি এবং ভিডিওর জন্য ফেইসবুক বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা রইল
পার্বত্য ঘটনাপঞ্জি
*আনুমানিক ৫৯০ সালে চাকমা যুবরাজ বিজয়গিরি ও সেনাপতি রাধামন খীসা কর্তৃক রোয়াং রাজ্য(বর্তমান রামু),অক্সাদেশ(আরাকান সীমান্ত),খারং দেশ,কাঞ্চননগর(কাঞ্চনদেশ) ও কালজয়(খুকি রাজ্য) প্রভৃতি রাজ্য বিজিত হলে বিশাল পার্বত্য রাজ্য-র(চাকোমাস) পত্তন ঘটে।
*১৫২০ সালে চাকমা রাজা জনুর সময় রাজ্যসীমা ছিল পূর্বে নাম্রে(বর্তমান নাফ নদী),পশ্চিমে সীতাকুণ্ড পাহাড়,দক্ষিনে সমুদ্র ও উত্তরে চাইচাল পর্বতশ্রেণী।
*১৫৫০ সালে JOAO DE BARROS নামে জনৈক পর্তুগিজের আঁকা মানচিত্রে কর্ণফুলী নদীর পূর্বতীরে দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে চাকোমাস(CHACOMAS) নামে একটি রাজ্যের সন্ধান পান।এর অবস্থান শ্রীহট্ট ও ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিন পূর্বে এবং আরাকানের উত্তরে অর্থাৎ বর্তমানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পর্যন্ত।
*১৭১৪ সালের দিকে মুসলিম নবাবদের সাথে চাকমা রাজা জল্লাল খাঁর জুদ্ধ-বিগ্রহ।
*১৭১৫ সালে চাকমা রাজকুমার ফতে খাঁর সাথে মুসলিম নবাবদের শান্তি প্রতিষ্ঠা।
ইংরেজ আমল
*১৭৬০ সালের ১৫ অক্টোবর নবাব মীর কাশিম কর্তৃক চট্টগ্রামের শাষণভার ইংরেজদের কাছে অরপন।
*১৭৭৭ ও ১৭৮১ সালে চাকমা রাজা দৌলত খাঁর সাথে ইংরেজদের দুইবার যুদ্ধ ও চাকমা রাজার জয়লাভ।
*চাকমা রাজা জান বক্স খাঁর সাথে ইংরেজদের পরপর তিন বছর (১৭৮৩,১৭৮৪,১৭৮৫)যুদ্ধ।
*১৭৮৭ সালে চাকমা রাজা জান বক্স খাঁর কলকাতাই গিয়ে বড়লাটের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং ৫০০ মণ তুলা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা।
*১৮৪৪ সালে চাকমা রানী কালিন্দীর সাথে ক্যাপ্টান লুইনের (Hill Superintendent) দন্ধ।
*১৮৬০ সালের ১ অগাস্ট চট্টগ্রাম জেলা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা নামে স্বতন্ত্র জেলার সৃষ্টি।
*১৮৮১ সালের ১ সেপ্টেম্বর চাকোমাস রাজ্যকে (বর্তমান বৃহত্তর পার্বত্য চাট্টগ্রাম) তিনটি সার্কেল বিভক্তিকরণ।এর আগে ১৮৭০ সালে ঘোষিত সার্কেল বিভক্তিকরণের বিরুদ্ধে রানী কালিন্দীর আপিল অগ্রাহ্য করা হই।
*১৯০০ সালের ১ মে CHT REGULATION ,১৯০০ Act জারি।
*১৯১৫ সালে রাজমোহন দেওয়ানের নেতৃত্তে সর্বপ্রথম সংঘঠন ‘‘চাকমা যুবক সমিতি” গঠিত।
*১৯১৮ সালে ঘনশ্যাম দেওয়ানের নেতৃত্তে ‘‘চাকমা যুবক সংঘ” গঠিত।
*১৯২০ সালে কামিনীমোহন দেওয়ানের নেতৃত্তে ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি” গঠিত।
*১৯৩৯ সালে রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতাই ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সমিতি” গঠিত।
পাকিস্থান আমল
*১৯৪৭ সালের ২০ অগাস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্থানের শাষন প্রতিষ্ঠা।
*পাকিস্থান সরকার কর্তৃক ১৯৪৮ সালে ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ফ্রন্টিয়ার পুলিশ রেগুলেশন” ১৮৮১ বাতিলকরন।
*১৯৬৫ সালে অনন্তবিহারী খীসা ও ম্রিনালকান্তি চাকমার নেত্রিত্তে ‘‘Hill Students Association” গঠিত।
*১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে ৯৯ হাজার ৯ শ ৭৭ জন লোক বাস্তুহারা ও জমিহারা হয়ে পড়ে।এতে মোট চাষযোগ্য জমির ৫৪.০৬% অর্থাৎ ৫৪ হাজার একর আবাদি জমি প্লাবিত হয়।
*১৯৬৩ সালে পাকিস্থান সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার ‘‘বিশেষ এলাকা”-র মর্যাদা বাতিল এবং উপজাতিয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করণ।
*১৯৬৪ সালে পাকিস্থান সরাকারের পুনর্বাসনে অবহেলা ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৫০ হাজার নর-নারী ভারতে আর ৩০ হাজার নর-নারীর উদ্ভাস্তু হয়ে বার্মায় গমন।
*১৯৬৫ সালে এম এন লারমার নেতৃত্তে Tribal Students Association গঠিত এবং একই সময়ে রাঙ্গামাতিতে ঐ সংঘটনের শাখা ‘‘পাহাড়ি ছাত্র সমিতি’’ গঠিত।
*১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা অনন্তবিহারী খীসা ও জে. বি. লারমার নেতৃত্তে গঠিত হয় ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতিয় কল্যাণ সমিতি’’।
*১৯৭০ সালে জাতিয় পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চাকমা রাজা ত্রিদিপ রায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে সদস্য নির্বাচিত এবং একই সময়ে এম এন লারমা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে সদস্য নির্বাচিত হন।
*১৯৭০ সালের ৬ মে রাঙ্গামাতি কমিউনিস্ট পার্থী গঠিত।
ইংরেজ সরকারের শাসনামলে লর্ড কর্নওয়ালিশ কর্তৃক চিরস্থায়ি বন্দোবস্ত প্রথা চালু হয়।কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ইংরেজ রাজ্যের একটি শায়ত্তশাসিত অঞ্চল।চাকমা রাজা বা তিন চার্কেল চীপ শুধু মাত্র ইংরেজদের কাজনা দিতো কিন্তু প্রশাসনিক ব্যাবস্থা ছিল চার্কেল চীপদের হাতে।
*১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে ৯৯ হাজার ৯ শ ৭৭ জন লোক বাস্তুহারা ও জমিহারা হয়ে পড়ে।এতে মোট চাষযোগ্য জমির ৫৪.০৬% অর্থাৎ ৫৪ হাজার একর আবাদি জমি প্লাবিত হয়।
*১৯৬৩ সালে পাকিস্থান সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার ‘‘বিশেষ এলাকা”-র মর্যাদা বাতিল এবং উপজাতিয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করণ।
*১৯৬৪ সালে পাকিস্থান সরাকারের পুনর্বাসনে অবহেলা ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৫০ হাজার নর-নারী ভারতে আর ৩০ হাজার নর-নারীর উদ্ভাস্তু হয়ে বার্মায় গমন।
যেখানে পাকিস্থান সরকার জমির অভাবে টিকমত পুনর্বাসন করতে পারে নি সেখানে
জমিতে স্থায়ি বৈধতার জন্য কাগজপত্রের যে ব্যাবস্থা বা চিরস্থায়ি বন্দোবস্ত প্রথা তা পাকিস্তান সরকার ও পাশ কাটিয়ে গেছে।ফলে পাহাড়িদের মধ্যে একটি নতুন দেশের সাথে যুক্ত হয়েও জমি বন্দোবস্ত করার নিয়ম কানুন সম্পর্কে অজানা থেকে যায়।সে সময় পাহাড়িদের মধ্যে শিক্ষার হার ছিল খুবই কম।যারা শিক্ষিত ছিল তারা জমির কাগজ পত্র করল আর যারা জুম চাষি গরিব তাদের কাছে এই ব্যাপারতা অগোচরেই থেকে গেলো।ফলে যা হল,পাহাড়িরা একটি জমির উপর বংশপরস্পরাই ভোগ করতে লাগল,কিন্তু কাগজপত্র না থাকার কারনে সরকারের কাছে এগুলো খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত হল।
*১৯৮১ সালে ১ লক্ষ বাঙালি পরিবারকে ৫ একর জমি ও নগদ ৩ হাজার ৬ শ টাকা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করা হয়।
সরকার এই বাঙালি পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন করার আগে টিক ই জানত যে এই জমি দলিল পত্রে খাস হলেও আসলে এখানে লোক বাস করছে।কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য বা চিন্তায় তো আর মানুষ নেই আসে জমি।তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে নদী ভাঙ্গনের লোকজন এনে বসিয়ে দেওয়া হল পাহাড়িদের জমিতে।সব জমি তা তো আর পাহাড়িরা বাস করতো না।কিন্তু সরকার খালি জাইগায় না বসিয়ে তাদের বসালো যেগুলো পাহাড়িরা পরিষ্কার করে চাষ করছে এমন জাইগায়।কারন সে সময় বাঙালি সেটেলার তো জানে না কিভাবে জঙ্গল বা প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ত করে বেচে থাকতে হয়,তাই বসালো জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষের উপযুক্ত করে বানানো পাহাড়ির জায়গাই।উদ্দেশ্য পাহাড়িদেরকে নিজ ভুমি থেকে বিতারিত করে একটি কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করা।যেখানে ১৯৪১ সালে পাহাড়ি ছিলো ৯৭.০৬% এবং বাঙালি ছিলো ২.৯৪% সেখানে আজ
বাংলাদেশ জনশুমারি (আদমশুমারি) প্রতিবেদন ২০১১
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা
মোট: ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ জন
আদিবাসী জনসংখ্যা: ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪১ জন
বাঙালি জনসংখ্যা: ৮ লাখ ০৬ হাজার ৬৭৩ জন
রাঙামাটি
মোট: ৬ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন
আদিবাসী: ৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৩ জন
বাঙালি: ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬১ জন
বান্দরবান
মোট: ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৩ জন
আদিবাসী: ১ লাখ ৭২ হাজার ৪০১ জন
বাঙালি: ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৩২ জন
খাগড়াছড়ি
মোট: ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬৭ জন
আদিবাসী: ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ জন
বাঙালি: ৩ লাখ ২১ হাজার ৯৮০ জন
তাহলে এটা কি একটা পরিকল্পিত হামলা ছিল ?অবশেষে সব আশংকাকে কাটিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক হরিকিশোর চাকমা ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে,
ঘটনাটা আসলে যে পরিকল্পিত তার দ্বায়ভার রাষ্ট্রকে এড়িয়ে গেলে চলবে না । এমন চলতে থাকলে রামুর মতো সংখ্যালঘুদের উপর অপরাধীরা আরো হামলা চালাবে । রাঙামাটি ঘটনাটি নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্ট;
সেই দুই ছাত্রের হদিস মিলছে না!
প্রতিটি সভ্যদেশে উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্যে আলাদা রিজার্ভ জায়গা আছে যেখানে বসবাস, সম্পত্তির অধিকার দেশের সবার জন্যে উন্মুক্ত নয়। সমতল আর পাহাড়কে এক করে দেখা কোনো সভ্য মানসিকতা হতে পারে না। দেখা যাবে যারা এই পাহাড়-সমতল এক করে দেখছে তারাই আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এসবের পক্ষে সোচ্চার। সময় সুযোগ মতো বাংগালীরাও উগ্রজাতীয়তাবাদ দেখানোতে কারো চেয়ে কম যায় না।
@সফিক,
এই সোজা কথা মনে হয় ৯০% বাংগলাদেশীর মগজে কোনভাবেই ঢোকানো যাবে না। পাহাড়ে গোলমাল বিষয়ে প্রথম কথাই হল পাহাড়িরা দেশের যে কোন যায়গায় গিয়ে সেটল করতে পারলে সমতলের বাংগালীরা কেন পাহাড়ে গিয়ে বসত গাঁড়তে পারবে না? অকাট্য যুক্তি। দুনিয়ার সব দেশেই আদিবাসী রিজার্ভ এরিয়া থাকে যেখানে বাইরের লোকের জমি কেনার নানান রেষ্ট্রিকশন থাকে।
আর দ্বিতীয়ত; পাহাড়ে লোকে গাঁটের পয়সা দিয়ে জমি কিনে বাড়ি তুলে থাকলেও হয়ত বলার তেমন কিছু থাকত না। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অন্যভাবে ঘটনা ঘটে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পাহাড়ে আদিবাসীদের সংখ্যা পরিষ্কারভাবেই কমছে একটা ষ্ট্যাট এ দেখেছিলাম যেটার পরিমান সরল মাইগ্রেশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
জিয়ার আমলে পাহাড় ঠ্যাংগানোর দায়িত্বে ছিলেন তারই কথিত হত্যাকারী মেজর জেনারেল মঞ্জুর; ওনার একটি ডায়ালোগ ছিল অনেকটা পাক আর্মিদের মতই, হুবহু মনে নেই তবে ভাবটা এমন যে আমাদের লোকের দরকার নেই কেবল জমির দরকার। টিক্কা খানের কথা ছিল ম্যায়নে আদমি নেহি, জমিন মাংতা।
ব্যাক্তিগত আগ্রহ ও কৌতুহল হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী-পাহাড়ী অবস্থান নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করি। এর ভিত্তিতে এই লেখাটি দাঁড় করানো চেষ্টা করছি।
আগ্রহীরা দেখতে পারেন: লিংক
সাম্প্রতিক দাঙার শুরু করেছে পাহাড়ীরা। তারাই আগে বাঙালি ছাত্রটিকে মারধর করেছে।
এবং
আহতদের অধিকাংশই বাঙালি। প্রোপাগান্ডিস্টরা এই সত্যটাকে পুরোদস্তুর চেপে গ্যালো।
[img]http://sphotos-c.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-prn1/c0.6.720.344.19928825623/p843x403/67170_470129586351882_739549341_n.jpg[/img]
লিংক
@অরণ্য,
তাই? হলেও হতে পারে। কতো রকম প্রপাগাণ্ডাই তো থাকে, তাই না! 😉
কিন্তু সামরিক জান্তার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে লাঠি-সোটায় সশস্ত্র হামলাকারী কারা? তাদেরকে নিরাপত্তা বাহিনী কোন নিরাপত্তা দিচ্ছিলো? নাকী এর উল্টোটিই সেদিন রাঙামাটিতে ঘটেছিলো? এমনো তো হতে পারে, সেদিন রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলাকারীদের নিরাপত্তা বলয়ে দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনী পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ নির্বিঘ্নে করছিলো? [দ্র. চলতি থ্রেডের পোষ্ট এবং আকাশ মালিকের মন্তব্যের ঘরে দেওয়া প্রাসঙ্গিক দুটি ছবি]। :lotpot:
আপনার সরবরাহকৃত ছবির বেশ কয়েকটি মন্তব্যে একেবারে হা হা প গে কে ধ… :hahahee:
@অরণ্য,
ভাইজান, আপনি হলেন বাঙালি আর আমি হলাম পাহাড়ী। দু’জনে মারামারি করলাম, আর আমাদের দু’জনের মারামারিতে ওদের মাথা ফাটলো কেমনে? “অধিকাংশই বাঙালি” আর পাহাড়ীর একটাও ছবি নেই কেন? ভাগ্যিস, ডাঃ সুশোভন দেওয়ানের ছবিটা লাগাননি।
@অরণ্য,
দুই ছাত্রের মারামারি থেকে দাংগা হবার সূত্রে তো বাংলাদেশ সহ দুনিয়াময় ২৪ ঘন্টাই দাংগা হাংগামা চলার কথা। তাই নয় কি? ছাত্রজীবনে দেখেছি কত তুচ্ছ সামান্য কারনে রক্তারক্তি ঘটনা চোখের সামনে ঘটেছে। তাই বলে সেসব কেন্দ্র করে দাংগা লেগে গেছে?
নাকি পাহাড়ি ছাত্রের হাতে বাংগালী মার খেয়েছে (আপনার দাবীমত) তাই দাংগা লেগেছে? বাংগালীর হাতে পাহাড়ি মার খেলে দাংগা হত না?
@অরণ্য, প্রোপাগান্ডা কোনটা আমি তাই ভাবছি, কারণ হারিকেন লাগিয়েও ঐ দুই ছাত্রকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না (সূত্র প্রথাম আলো, ৩০ সেপ্টেম্বর)
@বিপ্লব রহমান,
অনেকদিন ব্লগিং করি না।
তারপরও আমার সেই পুরনো পোস্ট আবার আলোচনাতে উঠে আসায় মন্তব্য করতে এলাম।
বাঙালীই খারাপ…..পাহাড়ীরা ধোয়া তুলসী পাতা (উৎসর্গ : কতিপয় মানবতাবাদী-বৃন্দ) এই পোস্টের কোথাও কি আমি অস্বীকার করছি যে বাঙালী অন্যায় কিছু করে নাই?
বাঙালী-পাহাড়ী দুজনেই অন্যায় করেছে। হ্যা, এটা ঠিক, বাঙালী আগে অন্যায় করছে কিন্তু তার প্রত্যুৎত্তরে পাহাড়ীরা যা করছে সেটা কি ন্যায়ের মধ্যে পড়ে?
আমি পুরা পাহাড়ী জাতির কথা বলি নাই, বলতেছি, যারা ভায়োলেন্সের সাথে জড়িত। ঠিক তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব বাঙালীও দোষী না।
আর পাহাড়ে বাঙালী সেটলার আবার কি কথা?
বিপ্লব ভাই, আপনি তো ঢাকাই থাকেন, তাই না? আপনার আদি বাড়ি কই? ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন বলে, আমি যদি আপনারে ঢাকাই সেটলার বলি, তাইলে, আপনার কেমন লাগবে?
সব পাহাড়ী যেমন দোষী না, তেমনি সব বাঙালীও দোষী না।
বাঙালী দুষ্কৃতিকারীদের অন্যায় যেমন ক্ষমার অযোগ্য, তেমনি পাহাড়ীদের করা অপরাধগুলোও ক্ষমার অযোগ্য।
পাহাড়ে খাস জমিতে সেটলার আবার কি কথা? পাহাড়ীরা সমতলে জমি কিনতে পারলে, বাঙালীরা পাহাড়ে কিনতে পারবো না ক্যান?
পাহাড়ীদের অন্যায়ের ডিফেন্স না করে বরং পারলে উপরে আকাশ মালিক, মনজুর মুরশেদ, মহাপুরুষ, অগ্নি, সবুজ পাহাড়ের রাজার প্রশ্নগুলোর স্ট্রেট আনসার দেন।
যেসব বাঙালী অন্যায় করছে, ওদের বিরুদ্ধে লেখেন ঠিকাছে কিন্তু পাহাড় হইতে বাঙালী সরাইতে হবে, পাহাড়ে জমি কিনোন যাইব না, পাহাড়ী শান্তিবাহিনীরা খুব ভালো মানুষ, বাঙালীরা খুন-খারাবী করছে বইলা ওরা এক আধটু বাঙালী মারছে, এসব টাইপ কথা ছাড়েন মিয়া ভাই।
জয় বাংলা।
@একাত্তরের রক্ত,
মাফ করবেন। নাগুব্লগের ওই লেখাটি আপনার লেখা? এখানে আপনাকে দেখে ভালোই লাগছে। কিছু মনে করবেন না, সহ ব্লগার আকাশ মালিককে লেখাটি প্রসঙ্গে অন্তত দুদফায় খুব স্পষ্ট জানিয়েছি: লেখাটি একেবারেই সারবস্তুবিহীন+যুক্তি-তর্ক অযোগ্য+বক্তৃতাবাজীতে ঠাসা। শুধু তাইই নয়, এই সব অতি পুরাতন বুলি বিএনপি-জামাত-সেনা সমর্থিত বাঙালি সেটেলারদের সংগঠন ‘সম-অধিকার আন্দোলন’ এর মক্তব্যে হরহামেশাই পাখি পড়ানোর মতো করে পড়ানো হয়; শান্তিচুক্তির পর গত দেড় দশকে এটি এখন স্রেফ সেনা-সেটেলার কোং-এর আসমানী কিতাবে পরিনত হয়েছে।
এটি হচ্ছে দর্শনের দারিদ্রতাজনিত সমস্যা; পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল রাজনীতির প্রত্যক্ষ মানবিক পাঠেরও ঘাটতি বটে। তাই এই লেখা নিয়ে আপনার সঙ্গে বিতর্কে তীব্র অনিহা আছে। [দ্র. “বাঙালীই খারাপ…..পাহাড়ীরা ধোয়া তুলসী পাতা” http://www.nagorikblog.com/node/480 ]
কি আশ্চর্য! সব সহব্লগার/মন্তব্য দাতার প্রশ্নের জবাব/স্ট্রেট আনসার এক বিপ্লব রহমানকে দিতে হবে কেন? এই ইজারাদারী মানসিকতাটি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই বা কেনো? 😛
তখ্যসূত্র বিহীন এমন ঢালাও মন্তব্যে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আপনি বিপ্লব রহমানের কোনো লেখাই পড়েননি, না হয় পড়ে বোঝেননি বা আপনাকে বোঝাতে বিপ্লব রহমান একেবারেই অক্ষম।
এ পর্যায়ে আপনার সঙ্গে বাতচিত বৃথা। ভালো থাকুন। (Y)
@একাত্তরের রক্ত,
আপনার কথাগুলি শুনতে প্রথমে ভালোই লাগে, মারপ্যাঁচে অনেকেই পড়ে যাবে। কিন্তু ভাই এর মধ্যে ফাঁক আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দু ধরণের বাঙ্গালিঃ আদি ও সেটেলার। বাঙ্গালিদের সাথে মূল সমস্যা শুরু হয় যখন ১৯৭৯ থেকে ট্রাকে ট্রাকে বাঙালি পাঠানো হতে থাকে, তাদেরকে আর্মি প্রোটেকশন ও রেশন দিয়ে বসানো হয়। পাহাড়ে সমান/উর্বর/হালচাষের জমি সীমিত, জুমের জমি বহুলাংশে কাগজহীন, কাজেই অবধারিত ভাবে জমির বিরোধ শুরু হয়। এখন, সেটেলাররাও রাষ্ট্রের পুতুল ছাড়া আর কিছুই নয়। আর্মি সেটেলারদেরকে ভিডিপি বানিয়ে অস্ত্র/প্রশিক্ষণ দিয়েছে, নিজে পেছনে থেকে সামনে সেটেলার রেখে গ্রাম পুড়িয়েছে, হত্যায় কোন্দলে সাহায্য করেছে… ফলে আপনি দেখতেই পারছেন কী প্রক্রিয়ায় সেটেলার-পাহাড়ি সম্পর্কটা আর্মি-শান্তি বাহিনী ছাড়িয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে এবং কেন পাহাড়ি এখন সেটেলারকে জন্ম শত্রু মনে করে।
আপনি নিশ্চয়ই এখন শান্তি বাহিনী সেটেলারদের কচুকাটা করেছে এরকম কিছু উদাহরণ দেবেন। আমি নিজে আহিংসবাদী, কিন্তু শান্তি বাহিনী চিল গেরিলা যোদ্ধা, আর সেটেলার আনার প্রক্রিয়াটা চিল ম্যাসিভ ও একতরফা, সৎ চেষ্টার বাইরে গিয়ে পাহাড়িকে নিজভূমে সংখ্যালঘু করার দুই নম্বরী চেষ্টা এবং সেটেলার দিয়ে পাহাড়িদের শায়েস্তা করার মতলব। ফলে সেটেলার সহজ টার্গেটে পরিণত হয়। যা কিছু অনাচার শান্তিবাহিনী করেছে, আর্মি তার একশোগুন ফেরৎ দিয়েছে। অনেকটা প্যালেস্টাইনি হাতেবানানো মকটেলের জবাবে ইজরায়েলি ব্রাশফায়ারের মত। দুটার তুলনা হয় না।
কাজেই ‘সব পাহাড়ি যেমন দোষী না, সব বাঙ্গালিও তেমন দোষী না’ জাতীয় কমেন্ট করে আপনি যে সমান-সমান করার চেষ্টা করছেন, সেটি একটি অসাধু চেষ্টা।
@একাত্তরের রক্ত,
এখন কেন বিপ্লব রহমান ঢাকায় ‘সেটেলার’ নন, অথচ এতো বাঙালি পাহাড়ে সেটেলার সেটা নিশ্চয়ই একটু পরিষ্কার হল। স্বাভাবিক মাইগ্রেশনও যখন একটি এলাকার দীর্ঘদিনের ভারসাম্য/জীবনযাপন এলোমেলো করে দিতে থাকে, তখন অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেখানে এরকম পলিটিকাল, গায়ের জোর খাটানো সেটেলমেন্টে সমস্যা না হওয়াটাই আশ্চর্যজনক। ভূমি সংক্রারন্ত যে ক্যাচাল এখন লেগে আছে, সেটা ন্যায্যভাবে কখনো মেটানো যাবে কি না তাতে সন্দেহ আছে। এর উপর আরো নতুন আমদানি? অন্তত কয়েকশো বছরের পাহাড়ি বসতিতে এখন বাঙালি সর্বত্র। কাজেই নতুন আগমণের ব্যাপারে নিরুৎসাহ দেখানোই স্বাভাবিক।
আরো ভেবে দেখুন, পাহাড়ি সংস্কৃতির ধারক শুধু এই সিএইচটি, পাহাড়ি আইডেন্টিটির কেন্দ্রে আছে পাহাড়, জুম বা জুমের ইতিহাস, অরণ্য যা কিনা বুদ্ধীয়-এনিমিজমের বাসস্থান, ইত্যাদি। এই সবই মাইগ্রেশনের ফলে দ্রুত বিলুপ্তির পথে। আর কোন অঞ্চলে আপনি/আমি/বিপ্লব রহমান মাইগ্রেশন করলে একাধিক জনজাতি চিরতরে বিলুপ্ত/বিকৃত হবার আশংকা আছে? কাজেই আপনি আবার ‘সবাই বাংলাদেশের বাসিন্দা’ বলে যে একটা সমান-সমান সবাই-একই ভাব দেখাবার চেষ্টা করছেন, সেটাকে সূঁচবেশী ফাল মনে হচ্ছে।
নীতি- নৈতিকতা এবং ‘ন্যায়’ এর ধারণা আপেক্ষিক হতে পারেনা, হওয়া উচিত না। ‘ন্যায়’ কখনো আমার জন্য এক রকম আর আরেকজনের জন্য আরেক রকম হতে পারেনা, যদি হয় তবে সেটা ‘ন্যায়’ না, অন্য কিছু।
কথায় কথায় আমরা ‘ঔপনিবেশিকতা’-র উদাহরণ দেই, এর চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করি আর নিজেরা এমন ভাব করি যেন এই সব দোষ সব খালি ইংরেজ আর পাকিস্তানীদের ই আছে, আমরা বাঙ্গালীরা এই সব দোষমুক্ত নিষ্কলুষ! তের শতকের পর থেকে বাঙ্গালী পরাধীন, প্রথমে তূর্কী, পরে আফগান, তার পরে মুঘল, ইংরেজ আর সবশেষে পাকিদের লাথি গুতা খেতে খেতে ৭১ এ এসে রক্তের সাগরে ভাসতে ভাসতে শেষে স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম, কিন্তু স্বাধীনতার মর্ম আমরা বুঝতে পারলাম না গত ৮০০ বছরেও। স্বাধীনতার মানে যে সংখ্যা গরিষ্ঠের স্বেচ্ছা-চারিতা না, বরং উদারতা আর সহনশীলতা, সংখ্যা লঘিষ্ঠের প্রতি মমত্ববোধ এবং সম-অধিকারের চর্চা, এই কথাটা আমাদের কেউ শিখায় নাই। সংখার জোরে কখন যে নিজেরা ই ‘ঔপনিবেশিক’ হয়ে গেছি বুঝতে পারিনি। বাঙ্গালীর সংখ্যা তত্ব বড়ই আজিব জিনিষ। কখনো ‘জাতিতাত্বিক’, কখনো ধর্মীয় কখনো রাজনৈতিক যখন যেখানে যা সুবিধাজনক। মোটকথা সংখ্যায় বড় হলেই হলো, তা সে যেভাবেই হোক, তার পরে সব জায়েজ। মনে হয় বাঙ্গালীর অবচেতনে পরাধীনতার যে ভয়, তার থেকে আসে একধরনের অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা, আর এর ই প্রভাবে আসে আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাস। সমস্যার মুল মনে হয় এখানে।
স্বীকার করি আর না করি বাস্তবতা হল-
অমুসলিমদের আমরা সন্দেহ করি।
অবাঙ্গালীদের আমরা সন্দেহ করি।
রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, বিভিন্ন ধরনের সংস্কার, গোঁড়ামি এবং শিক্ষার অভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠের মাঝে প্রয়োজনয়ীয় উদারতার চর্চা গড়ে উঠেনি, একটা আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপযোগী মানসিকতা গড়ে তুলতে আমরা পারি নাই, ইচ্ছা বা চেষ্টা আছে, এরকম ও মনে হয় না । কিন্তু এই উদারতার চর্চা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার, এর অভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য কারন শাসন করার দিন অনেক আগে ই শেষ হয়ে গেছে, মানুষ এখন আর শাসিত হতে চায়না, মানুষ চায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। আধুনিক রাষ্ট্র একটা ভূ-রাজনৈ্তিক সমঝোতা মাত্র, চিরন্তন কিছু না, মানুষের রাষ্ট্রনৈ্তিক চাহিদা না মিটলে, মানুষ রাষ্ট্রের ভূগোল পরিবর্তন করে ফেলবে এইটা এখন চরম বাস্তবতা। আমরা নিজেরা ও তাই করেছি, সোভিএট য়ুনিয়ন, য়ুগোশ্লাভিয়া এইসব ত আমদের চোখের সামনেই ঘটতে দেখলাম।
CHT problem ও সঙ্খ্যাতত্ব অনুসারী রাজনৈ্তিক গোঁয়ার্তুমির ফল। এখন এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে রাষ্ট্রকে, সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগনকে এক্সট্রা অর্ডিনারী উদারতার পরিচয় দিতে হবে। আমাদের পাহাড়ী ও আন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠী যে বাঙ্গালীদের চেয়ে সব বিষয়ে আলাদা, এইটা মেনে নেয়া টা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মেনে নিতে ই বা সমস্যা টা কোথায়? তারা যদি তাদের নিজস্ব সমাজ-সংস্কৃতি-কৃ্ষ্টি নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে থাকতে চায় সেখানে রাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা করবেনা কেন? কিছুদিন আগে পাহাড়ী জনগন নিজেদেরকে আদিবাসি হিসেবে পরিচয়ের দাবি করেছিলেন, বাঙ্গালীদের আচরন দেখে মনে হয়েছে পাহাড়ীরা বাঙ্গালীদের ‘বে-ওয়ারিশ’ করে ফেলার দাবী তুলেছে । কারা কত হাজার বছর ধরে কোথায় কি করেছে এই নিয়ে কত কথা, কত টক শো! কেন এই inferiority complex? কিছু মানুষ যদি আদিবাসি হিসেবে পরিচিত হতে চায় তাতে কি এমন ক্ষতি-বৃদ্ধ্বি?আদিবাসি স্ট্যাটাস দিলে নাকি নানারকম বাধ্য-বাধকতার ফেরে পরে যাবে রাষ্ট্র! বেশ, রাষ্ট্র তবে তার নাগরিকদের ব্যপারে কোন বাধ্য-বাধকতায় থাকতে চায়না, দায়িত্ব যত কম নেওয়া যায়, না নিলে আরো ভালো! এইটা কি মানসিক সংকীর্নতা নয়?!
CHT problem এর সবচেয়ে বড় দিক হলো এর ভুমির দখল সঙ্ক্রান্ত জটিলতা। এই জটিলতা রাষ্ট্র তৈ্রী করেছে কিছু অর্বাচীন রাজনীতিবিদ আর আমলাদের মুর্খামীর কারণে। এরা CHT কে দেখেছে মুফতে পাওয়া ফাঁকা ভূমি হিসেবে, এর জনগোষ্ঠীকে সন্দেহের কারনে সব সময় রেখেছে হিসেবের বাইরে, জন ঘনত্বের ধুয়া তূলে আর ভুমিহীন্ বাঙ্গালীর দুর্দশার সূযোগ নিয়েছে পাহাড়ীদের টাইট দেয়ার জন্য। প্যলেস্টাইনে যদি এইটা অন্যায় হয়, তবে বাংলাদেশে ও এইটা অন্যায়!
খাস জমির যে ব্যখ্যাটা দেয়া হয়, সেইটা ও একটা চরম ফাঁকি তার কারন হলো ভূমির মালিকানা বলতে আমরা সমতলে যে রকম বুঝি, পাহাড়ে এই ধারণাটা একই রকম না। পাহাড়ের মালিকানা অনেকটা সামাজিক মালিকানার মত, ব্যক্তি মালিকানার ধারণা তাদের মাঝে ছিলনা বা নাই। পাহাড়ে কৃষি বলতে বোঝায় জুম চাষ। এখন এই জুম চাষের জন্য যদি কোন কৃ্ষক পরিবার এই বছর কোন জমির ব্যবহার করে, পরবর্তী চাষের জন্য পরের বছর সে আর এই এক ই জমি ব্যবহার করতে পারবেনা, জুম চাষের রীতি- পদ্ধতির কারনে এই জমিটা আবার ব্যবহার উপযোগী হতে পাঁচ দশ বছর সময় লেগে যাবে। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে যে জমিকে মনে হয় খালি পরে আছে তা আসলে খালি নয়, পরবর্তী চাষের উপযোগী হওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে মাত্র। আর দশ বছর পরে এই জমিতে যে সেই এক ই পরিবার আবার চাষ করবে এমন কোন কথা নাই, অন্য পরিবার ও করতে পারে। শত শত বছর ধরে এরকমটা চলে আসছে। এই কারনে সমতলে কৃষি কাজে যতটুকু জমি লাগে, পাহাড়ে লাগে তার চেয়ে অনেক বেশী।
পাহাড়ের মানুষ তাদের নিজেদের মতো করে জমির মালিকানার বিলি ব্যবস্থা করে আসছে যুগ যুগ ধরে, রাষ্ট্রীয় বিলি-ব্যবস্থার প্রয়োজন যেমন তারা বুঝতে পারেনি তেমনি শিক্ষার অভাবে নিয়ম কানুন কিংবা নিজের নামে কাগজ পত্র করে নেয়ার তাগিদ ও তাদের মধ্যে ছিলনা। এখন রাষ্ট্র যখন সমতলের আমলা’র চোখ দিয়ে এইসব ভু সম্পত্তির দিকে তাকায় তখন শুধু খাস জমি দেখে কারন কোন ব্যাক্তি মালিকানা নাই, কাগজ পত্র নাই, দখল নাই, কিছুই নাই। সমতলের ভুমিহীনদের যখন পাহাড়ে সেটল করা হল, তা্রা তাদের সমতলে প্রচলিত ব্যক্তি-মালিকানার ধারণাও সাথে করে নিয়ে গেল, তারা যখন দেখলো পাহাড়ের পর পাহাড় খালি (?) পড়ে আছে, সেগুলি তারা দখল করে নিতে থাকলো। প্রশাসন তো আগে থেকেই তথাকথিত ‘খাস জমি’ তত্বে বিশ্বাসী, সেই সাথে পাহাড়ে পাহাড়ীদের সংখালঘু করার এজেন্ডা যোগ হয়ে আজকের এই সংঘাত।
এই সমস্যার সমাধান সম্ভব সমস্যার কারণ এবং প্রকৃতি অনুধাবন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে। পাহাড়ের ভুমি সমস্যার সমাধান করতে হবে পাহাড়ী জনগনের সমাজ ব্যবস্থা এবং চাহিদার আংগীকে। প্রগতির নামে কোন ব্যবস্থা কারো উপর চাপিয়ে দিয়ে কাংখিত ফল পাওয়া যাবেনা। সেটলারদের ব্যপারে ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন করে পাহাড়ে ভুমিহীন পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করাই হবে ভাল কাজ। যদি একান্ত করতেই হয়, তবে অন্যান্য জনজাতি যেমন গারো, রাখাইন, মনিপূরী, সাওতাল ইত্যাদি যারা পাহাড়ি ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে পরিচিত এবং পাহাড়ি মুল্যবোধের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদের কে পূনর্বাসন করা হোক। কাজের মাধ্যমে পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস দূর করতে না পারলে শুধু ভাল ভাল উপদেশ আর মিলে-মিশে থাকার পরামর্শ পাহাড়িদের মনে কোন আবেদন তৈরী করতে পারবেনা।
মুক্তি আপা, হতাশ না হয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিন। আজ আপনি আমাদের এই ফোরামে বুঝিয়ে বলবেন; আমরা আরেকদিন আমাদের পরিচিত জনদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবো, এভাবেই তো ভুল ধারনাগুলো ঠিক হবে। আমি নিশ্চিত আপনি এবিষয়ে লিখলে আমরা সবাই উপকৃত হব।
@মনজুর মুরশেদ,
মনজু ভাই,আমিই না হই কিছু লিখলাম।।৭৫ পরবর্তী তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীগুলো সেটেলার পুনবার্সনের মাধ্যমে জুম্ম পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করা যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো তাহা এই জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো গোপন মেমোরেন্ডামগুলো দেখলেই হয়-
It has been decided that landless/river erosion affected people from your district will be settled in chittagong hill tracts(CHTS)The settlement will be done in selected zones and each family will be given Khas land free of cost according to the following scale:-
Plain Land……………………….2.5 acres
Plain&dumpy land……………..4 acres
Hill Land………………………….5 acres
It has decided that you will send 5000 families.
এখন এই পরিসংখ্যান দেখেন….
১৯৭৮-৮০ চেঙ্গী উপত্যাতে ১৫০০ টি পরিবার,কাপ্তাইতে ১০০০ পরিবার,রাঙ্গামাটিতে ৫০০০ পরিবার,লামায় ৩০০০ পরিবার,নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩০০০ পরিবারকে পুনবার্সন করা হয়েছিলো।।
তারপর দেখেন….
১৯৭৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া,ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জামালউদ্দিন,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান,চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও পার্বত্য চট্গ্রাম ডিসিদের বৈঠকে স্বিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে ৩০০০০ বাঙ্গালী পরিবারকে পুনবার্সন করা হবে।।
এর উপর ভিত্তি করে ১৯৮১ সালে জুন মাসে Far Eastern Economic Review লিখেছিল-
প্রেসিডেন্ট জিয়া “frankly admitted that the Dhaka authorities were planning to sattle between 200000 to 300000 bangalies in CHT area”
এখন যদি আমরা ধরি,২০০০০০ লোককে পুনবার্সন করা হলে পরিবার প্রতি ৪ জন করে ধরলে,পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ হাজারে।।আর সরকারি স্বিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বনিম্ন জমির পরিমান ২.৫ একর ধরলে দাঁড়াবে ৫০০০০*২.৫=১২৫০০০ একর জমি যেখানে আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৭৭০০০ একর।।তাহলে বুঝুন ব্যাপারটি কেমন হবে??
এই পুনবার্সন সম্পর্কে ১৯৮১ সালে ২৯ জুলাই লন্ডন গার্ডিয়ান লিখেছিল-
সাধারনতঃ উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার যেখানে পুর্নবাসন দেওয়া হবে,তা খুঁটি গেড়ে চিন্হিত করার পর আশেপাশে মিলিটারী ক্যাম্প বসানো হয়।তারপর খোলা হয় পুর্নবাসন শিবির।
জুম্ম পাহাড়িরা এইভাবে নিজ বসট-ভিটে হতে উচ্ছেদ হয়েছিলো।
@ আকাশ মালিক,
হুম……বুঝতে পারছি আপনি নিজেকে অনেক উদার মনে করেন। এমন অনেকেই নিজেকে মনে করে, আপনিও different কেউ নন। আসলে আপনাদের বিষয়টা এক বাক্যে যা বলা যায়, কাউকে কষে একটা চড় দিলাম এবং রেগে গেলে তাকেই আবার সংযম শিক্ষার উপদেশ দিলাম।
এতদিন সংখ্যালঘু,পাহাড়ী/উপজাতি/আদিবাসীদের কেনই বা অন্ধভাবে সহানুভুতি দেখিয়েছিলেন? সেটাইতো ভুল ছিল। ভালোবাসলেও সঠিক জেনেই ভালোবাসা উচিত, ঘৃণা করলেও সঠিকভাবেই জেনে ঘৃণা করা উচিত। আপনার অন্ধ সহানুভুতি আমাদের দরকার নেই। সত্য জানুন। আর সত্য জানতে গিয়ে যেই source দিয়েছেন দেখলামতো। একটা মানুষের ভাষা, হেডলাইন লেখার ধরণ দেখেইতো বোঝা যায় তাইনা?-যে সে কোনদিকে যেতে চাচ্ছে।ভালোটাও বোঝা যায়, খারাপ টাও বোঝা যায়। আপনি যদি পক্ষ, বিপক্ষ উভইয়ের লেখা বিশ্লেষণ করে দেখতেন তাহলে বুঝতাম আপনি মিনিমাম নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছেন। আপনার অবস্থা হয়েছে সেই ব্যক্তির মত যিনি CHTসম্পর্কে জ্ঞান ধারণের জন্য এবং বিশেষ জ্ঞান লাভের জন্য মেজর জেনারেল ইব্রাহিমের মত উগ্রজাতীয়তাবাদে উন্মাদ ব্যক্তির বইকে বাইবেল মেনে নেন।আর বিশেষ কি বলতে পারি যেখানে আপনি আপনাকে উদার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন একদিকে আবার তথ্য হিসেবে অকাট্য সত্য মানছেন কেবল বিরুদ্ধ লেখাগুলকে। শুরুতেই আপনি যেটা দেখতে চান, সেভাবেই mind set করেছেন, কার সাধ্যি আপনাকে বা আপনার মত যারা তাদেরকে বোঝায়! আমাদের প্রতি অন্ধ সহানুভূতি নয়, বরং আমাদের প্রেক্ষাপট অনুধাবণ করাটাই জরুরি। সেই ক্ষেত্রেই আপনাদের অধিকাংশ বাঙ্গালীরা ব্যর্থ। নাহলে এটা বুঝতেন যে রাঙ্গামাটির ৫ একর খালি জমি আর সমতলের ৫ একর খালি জমি এক নয়, তাই এখানে proportion টা নয়, বরং বাস্তবতাটা বুঝতে হবে। কিন্তু যখন দেখি এই বোধশক্তিটাই আপনাদের কাজ করে না, হতাশ লাগে।
Stereotype attitude!!! আপনারা বাঙ্গালীরা hostile আচরণ করবেন আর আমরা খুব উৎসাহ পাবো আপনাদের সাথে মেশার জন্য, এটা কি সঠিক হিসাব হল? আপনি আমার যুক্তি খন্ডন না করে উলটো আমাকেই blame করলেন।আপনার জ্ঞাতার্থে বলি, সারা জীবন বড় হয়েছি চট্টগ্রামে, কাজেই আমার সকল বন্ধুরাই বাঙ্গালী, পাহাড়ীদের সাথে কেবল চাকুরি সূত্রে মিশছি। কাজেই আপনার আমাকে এই typecast করার trickটা খাটলোনা। better হত আপনি আমার যুক্তি খন্ডন করলে। আপনার সাথে আমার পার্থক্যটা এখানেই আমি সব বাঙ্গলীদের এক কাতারে ফেলিনা কারণ আমার অনে…ক বাঙ্গালী বন্ধু আছে যারা মানবিক, অন্তত না জেনে মন্তব্য করে না বা baiased কিছু বলেনা। কিন্তু আপনার মত একাংশ ব্যক্তি কম জানেন কিন্তু বোঝেন একটু বেশী, বলেন আরো বেশী, অন্যদিকে দাবী করেন কতইনা উদার আর সহানুভুতিশীল তারা। সেই সহানুভূতির অধিকার নিয়ে আমাদের ভুল ব্যাখ্যা দেন আর আমাদের মানবতা শেখাতে আসেন। সত্যি বলতে কি আমরা আপনার মত লোকের ভুল আচরণে এবং দৃষ্টিভঙ্গীতে tired, to be specific “Pissed Off”( দুঃখিত ভাষার জন্য)। সেজন্য আর কথাও বলতে ইচ্ছা করে না। তবুও মাঝে মধ্যে থাকতে পারিনা respond না করে যখন মনে হয় নাঃ একজনের ভুল চিন্তাতেও যদি নাড়া দিতে পারি!
আমি আপনাকে request করবো দয়া করে (যদি সত্যিই জানতে আগ্রহী হন) আরো বিশদ জানুন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস পড়ুন, নৃতত্ত্বের ইতিহাস এবং স্বাভাবিকত্ত্বকে বোঝার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই বোঝার জন্য আপনাকে এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ এবং কেবল সেখান থেকেই সব চিন্তা-সমালোচনা শুরু করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৪১ বছর কিন্তু ইতিহাস আরো অনেক আগে থেকেই দৌড়াচ্ছে। যদি বর্তমানে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন তাহলে ভুল ফলাফল পাবেন। বরং অতীত থেকে যদি ইতিহাসের হাত ধরে বর্তমানের দিকে ধাবিত হন তাহলেই প্রেক্ষাপট বোঝা সম্ভব।আর সেই ইতিহাসে যদি নৃতত্ত্ব এবং ভারতবর্ষের বাহির অঞ্চল সমূহও include হয় তাহলেই বোধ হয় অনুধাবন করতে পারবেন। আর যদি কেবল biased ব্লগ, article, বই বা fallacy যদি হয় আপনার উৎস তাহলে সেটাও আপনার choice. তবে আপনি কি নিজে কখনো কোন পাহাড়ির সাথে মেশার চেষ্টা করেছেন? কারণ এটা আপনারো দায়িত্ব কেউ যদি ভুল বোঝে তার ভুল ভাঙানো।কারণ তারা আপনার অঞ্চলে পড়তে আসে, সেখানে আপনি host.
@মুক্তি চাকমা,
এ ক ম ত। (Y)
পুনশ্চ: সহব্লগার সৌরভ দিয়্যা চাকমা’র প্রসঙ্গিক একটি লেখাটির সঙ্গে যদিও প্রচণ্ড দ্বিমত আছে, তবু লেখাটি পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
___
বাঙালি মাত্রই উগ্র জাতীয়তাবাদী/সাম্প্রদায়ীক?
http://w4study.com/?p=3603
@ মুক্তি চাকমা
একেবারে মিথ্যা বলেন নি। সব সময়ই অন্ধভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলেন আর পাহাড়ি বলেন কিংবা উপজাতি বলেন বা আদিবাসি বলেন, তাদের প্রতি সহানুভুতিশীলতা দেখিয়েছি, তাদেরকে সমর্থন করেছি। ইদানিং পাহাড়িদের ব্যাপারে কিছুটা জানার চেষ্টা করেছি আর তারই সামান্য তথ্য শুধু শেয়ার করলাম, এটা আমার নিজের জাজমেন্ট নয়। আপনি স্বীকার করলেন বাঙ্গালিদের এভয়েড করেন। এটা ষ্টেরিওটাইপ এটিচিউড না? এভাবে চললে তো সমস্যার সমাধান হবেনা।
একই ভাবে এও তো প্রশ্ন করা যায়, কিছু বাঙ্গালিদের অত্যাচারের দায় কি সকল বাঙ্গালির উপর দেয়া যায়? নিচের লেখাটা পড়ে আপনার কী মনে হয় আমি কিছু নিজে থেকে বানিয়ে বলছি?
http://www.nagorikblog.com/node/480
[img]http://www.unmochon.net/sites/default/files/styles/large/public/229981_211046879025839_1283990577_n.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
চলতি বিতর্কের মাঝে অনুপ্রবেশের জন্য প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থণা।
প্রথমত, উক্ত নাগু-ব্লগের লিংকে ব্যাপক বিনোদন+শস্তা বক্তৃতা দুইই আছে, সারবস্তু/যুক্তি-তর্ক তেমন কিছুই নেই [নাকী আছে? থাকলে যুক্তিসহ উদ্ধৃতিসহ একে একে পেশ করা হোক, দ্র. “বাঙালীই খারাপ…..পাহাড়ীরা ধোয়া তুলসী পাতা” http://www.nagorikblog.com/node/480 ]। এই সব অতি পুরাতন বুলি বিএনপি-জামাত-সেনা সমর্থিত বাঙালি সেটেলারদের সংগঠন ‘সম-অধিকার আন্দোলন’ এর মক্তব্যে হরহামেশাই পাখি পড়ানোর মতো করে পড়ানো হয়; শান্তিচুক্তির পর গত দেড় দশকে এটি এখন স্রেফ সেনা-সেটেলার কোং-এর আসমানী কিতাবে পরিনত হয়েছে।
এরাই কী রাঙামাটিতে সামারিক জান্তার প্রতক্ষ্য মদদে সেদিন পাহাড়িদের রক্ত ঝরায়নি? গত চার দশকে এরাই কী একের পর এক গণহত্যায় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করেনি? এই সেনা-সেটেলার পাকিপনাই কী একযুগ ধরে প্রায় ৬০ হাজার পাহাড়িদের ত্রিপুরার শরনার্থী শিবিরে গ্লানিময় জীবন কাটাতে বাধ্য করেনি? [দ্র. “একটি রোমহর্ষক গণহত্যার কাহিনী” http://blog.mukto-mona.com/?p=15587%5D? তাহলে নিজস্ব যুক্তিতর্কের বাইরে ওই লিংকখানি উত্থাপনের যৌক্তিকতা কী?
দ্বিতীয়ত, বলা ভালো, নাগু-ব্লগের ওই চরম সাম্প্রদায়িকজনিত আস্ফালনটির উৎস উগ্র জাতীয়তাবাদ, এর শেকড় মৌলবাদের গভীড়ে গাথা [“তোরা সব বাঙালি হইয়া যা”– শেখ মুজিব, ১৯৭২]। বাঙালি উগ্র জাত্যাভিমানের এই বিষ ফোঁড়ার জরুরি অস্ত্রপচার প্রয়োজন; এর অভাবে বিষ ফোঁড়ার বিষাক্ত রক্ত+পুঁজ যে শুধু আদিবাসীদের অস্তিত্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তা নয়, এটি কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে বাঙালির হাজার বছরের প্রাচীন অসাম্প্রদায়ীক সংস্কৃতির গৌরবকেও।
তৃতীয়ত, মুক্তি চাকমার আশৈশব থেকে দেখা সব ধরণের জাতিগত নির্যাতন-নিপীড়ন-জুলুম থেকে উচ্চারিত ঢালাও বাঙালি জাতিবিদ্বেষজনিত ক্ষোভের উৎসটিও পরিস্কার। বিনীতভাবে তাকে পরামর্শ দেই, ব্যক্তিগত আক্রমণ পরিহার করে যুক্তি-তর্কে নিজস্ব মতটি প্রকাশ করার।
বাই লাইনে, জনৈক সহব্লগার এক ঊনগল্পে পাহাড়ি আদিবাসীদের বিপন্নতাজনিত ক্ষোভের বিষয়টি মূর্ত করেন এভাবে:
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা হচ্ছেন বৃহত্তর বাঙালি জাতিগোষ্ঠির সেই অসহায় খেলার শিকার!
আপনাদের ধন্যবাদ। বিতর্ক/আলোচনা চলুক। (Y)
___
ছবি: সেনা নিরাপত্তার বলয়ে লাঠিসোটা নিয়ে সশস্ত্র সেটেলাররা, রাঙামাটি সদর, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২, মাইকেল চাকমা।
@বিপ্লব রহমান,
দিগন্ত বড়ুয়া নামে মুক্তমনায় আমাদের একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। লেখাগুলো সম্ভবত ২০০২/৩ সালের লেখা। সেখান থেকেই মূলত পাহাড়িদের সম্মন্ধে আমার জানার শুরু। বাঙ্গালী আর মুসলমানদের প্রতি বড়ুয়ার কঠিন ভাষা ব্যবহার মাঝে মঝে রুঢ় অশালীন মনে হলেও প্রতি সপ্তাহ এই লেখার অপেক্ষায় থাকতাম নিজের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও ধিক্কার দেয়ার জন্যে। কারণ আমিওতো বাঙ্গালি মুসলমান পরিবার থেকে এসেছি। নিচে বড়ুয়ার ১১ পর্বের লেখার লিংক দিলাম উৎসাহী পাঠক পড়ে নিতে পারেন।
বিপ্লব দা, আপনি বারবার বহু জায়গায় সুযোগ পেলেই বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তিটি উল্লেখ করেন- তোরা সব বাঙ্গালি হয়ে যা। সময় কাল অবস্থা ও পরিবেশ বিবেচনায় কথাটার অন্য একটা ব্যাখ্যাও দেয়া যায়, কিন্তু তার আর কোন প্রয়োজন আছে মনে করিনা। কারণ সেই উক্তি পাহাড়িদের কী সর্বনাশ করেছিল বা বাঙ্গালিদের কী সুবিধে এনে দিয়েছিল, কিংবা শেখ মুজিবের এই উক্তির উপর ভিত্তি করে পাহাড়িদের কতটুকু জায়গা জমিন বাংগালিরা দখল করে নিয়েছিল আমি জানিনা। অন্তত বড়ুয়ার লেখায় তেমন কিছু পাইনি। এবার আমি দুটো প্রশ্ন আপনাকে করি- বাংলাদেশের অস্থিত্ব অস্বীকারকারী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোদ্ধাচারণকারী ত্রিদেবের লাশ জুম্মুদেশে আসছে বাংলাদেশে নয় আর চাকমারা ইচ্ছে করলে স্বাধীন রাষ্ট্র দাবী করতে পারে বলে কিছু লোক যে মন্তব্য করছেন, আপনি ব্যাপারটাকে কেমন চোখে দেখেন?
http://mukto-mona.net/human_rights/minority/BARUA_Hishab.pdf
http://mukto-mona.net/Articles/digonto/index.htm
[img]https://fbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net/hphotos-ak-prn1/539550_4533991958101_1981872654_n.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
সুহৃদ, প্রতি মন্তব্য ও আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
প্রথমত, এই ঐতিহাসিক শেখ মুজিবীয় উক্তিটি প্রসঙ্গক্রমে বার বার এসেছে, নানা জনের নানা লেখায় আসবেই। কারণ এই উক্তিটি উগ্র জাতীয়তাবাদী দর্শনটিকে ধারণ করে, যার শেকড় ফ্যাসিবাদ তথা মৌলবাদে গাঁথা [মুক্তি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুজিবের দুঃশাসন এবং পরবর্তী শাসকগোষ্ঠিগুলো এখনো এই দর্শনটিকেই ধারণ করে]। এর নীট ফলাফল অতি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধটিকে বাঙালি-আদিবাসীর যৌথ মুক্তি সংগ্রামকে অস্বীকার, ১৯৭২ এর সংবিধানে আদিবাসী/উপজাতিকে উপেক্ষা [দ্র.গেরিলা নেতা এমএন লারমা ] , জেনারেল জিয়া-এরশাদ-খালেদা-হাসিনা-খালেদা-মইন+ফখরুদ্দীন-হাসিনার সরকার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেটেলার বাঙালি-সামরিক জান্তার পাকিপনার ভূখন্ডে পরিনত করা; তারই জের টেনে শান্তিচুক্তি পূর্ব পাহাড়ি জনপদে অন্তত ১৩ টি বড় ধরণের গণহত্যা, বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদ করে প্রায় ৬০ হাজার পাহাড়ি শরণার্থীকে এবং শান্তিচুক্তি পরবর্তীতে গত দেড় দশকে অন্তত ১৪ টি সহিংস হামলা সংগঠিত করা হয়েছে [আলোচ্য রাঙামাটি সহিংসতার পোস্টও কী তার সাক্ষ্য দেয় না? দ্র. পাহাড়ে কেন এত সহিংসতা? ]
দ্বিতীয়ত, বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সহ ব্লগার অমি রহমান পিয়াল সম্প্রতি সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের লাশের সৎকার দেশ/বিদেশে করা নিয়ে একটি তথ্যবহুল নোট লিখেছেন [দ্র. রাজা(কার) ত্রিদিব রায় : এ লাশ সইবে না বাংলার মাটি]
সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা হয়েছে। চলতি থ্রেডে বিষয়টি অনেকটাই অপ্রসঙ্গ, তাই পুনর্বার সেই লেখার মন্তব্যটি পুরোপুরি কপি-পেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে না; অরপি’র লেখার লিংকে ক্লিক করাই যথেষ্ট। তবু অতি সংক্ষেপে এটুকু বলা যায়, একজন ত্রিদিব রায়ের রাজাকারিত্ব দিয়ে পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন চেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের তো বটেই, এমনকি আদিবাসী পাহাড়িদের মুক্তিযুদ্ধের সকল আত্নত্যাগেরই অপমান। ত্রিদিবের লাশের সৎকার দেশে/বিদেশে হওয়া বা না হওয়া নিয়ে আহাজারি এরই মধ্যে পাহাড়ে অভিবাসিত সেটেলার বাঙালি, জাতীয়তাবাদী শক্তি ও একটি বিশেষ মহলের মদদপুষ্ঠ “সমঅধিকার আন্দোলন” ইস্যু করে রাজনৈতিক ফটকাবাজারিতে বেশ খানিকটা ধোঁয়া দিয়েছে। এর যোগসূত্র– আগেই যেমন বলা হয়েছে, উগ্র জাতীয়তাবাদে, আর এর শেকড় অন্ধত্ব ও মৌলবাদে গাথা [দ্র. পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ: অন্য আলোয় দেখা] ।
তৃতীয়ত, চাকমারা [নাকি ১৩টি ভাষাগত সংখ্যালঘু আদিবাসী পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠি?] ইচ্ছে করলে স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করতে পারে বলে যে প্রচারের কথা আপনি বলছেন, সেটি অতি পুরাতন, প্রায় সনাতন একটি প্রচারই নয়, অপপ্রচারই মাত্র। প্রায় দুই দশক পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম চালানোর সময়ও সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনী কখনোই এমন দাবি করেনি। চলতি বাস্তবতায় এটি আরো অসম্ভব; তবু ভারত জুজুকে সামনে রেখে সেনা-সেটেলার কোং-এর ক্লিশে অপপ্রচারটি থাকছেই। সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা এই লেখককে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে [ ৫ মে, ১৯৯৪ সাল] এ বিষয়ে যা বলেছিলেন, তা অনেকটি এ রকম:
[” কথায় কথায় আমাদের বলা হয়, আমরা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী, বিভেদপন্থী, রাষ্ট্রদ্রোহী’ ইত্যাদি। কিন্তু আমরা আসলে তা নই। আমরা এ দেশের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী। আমাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়মিত জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। আমাদের স্কুল-কলেজেও একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালিত হয়।” দ্র. পাহাড়ের টুকরো কথা-০৫, গেরিলা নেতা সন্তু লারমা পর্ব]
চতুর্থত, দিগন্ত বড়ুয়ার লেখাপত্র পাঠের পরেই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব; বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। এই লেখার সন্ধান দেওয়ায় সাধুবাদ জানবেন। তবে–
পঞ্চমত, [আলোচনার বাই-লাইনে] মুক্তি চাকমার সঙ্গে বিতর্কে নাগু-ব্লগের বিনোদন+শস্তা বক্তৃতাবাজীসহ সারবস্তুবিহীন+যুক্তি-তর্ক অযোগ্য লিংকের আমদানী কেন প্রয়োজন [নাকী প্রয়োজন আছে? থাকলে যুক্তিসহ উদ্ধৃতিসহ একে একে পেশ করা হোক, দ্র. “বাঙালীই খারাপ…..পাহাড়ীরা ধোয়া তুলসী পাতা” http://www.nagorikblog.com/node/480 ] সেটিই এখনো খোলাসা হলো না। 😕
চলুক। (Y)
______
সংযুক্ত: ছবি- নিউ ইয়র্কে জুম্ম বিক্ষোভ, ধীমান চাকমা, রাঙামাটি সহিংসতা ও ত্রিদিব রায় প্রসঙ্গে সঞ্চয় চাকমার ফেবু নোট।
* ভুলক্রমে বাদ পড়া একটি প্রাসঙ্গিক লিংক [দ্র. গেরিলা নেতা এমএন লারমা ]
@আকাশ মালিক,
আলোচিত “বাংগালী হয়ে যা” ঘটনা ‘৭২ এর অক্টোবর মাসের ঘটনা। সে সময় সংসদে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ নিয়ে জোর বিতর্ক চলছিল, বিতর্ক বলা ঠিক না আসলে, কারনে এক মানবেন্দ্র লার্মার বিপরীতে ছিল পুরো সরকারী দল। মানবেন্দ্র দূঃখ করে বলেছিলেন যে দেশে স্বাধীন হলেও তাদের দূর্ভোগ যায়নি…
এর ক’দিন পর সংবিধানের ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদের সংশোধনীর প্রস্তাব আনেন এক আওয়ামী সদস্য আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া, তিনি দাবী করেন যে বাংলাদেশের সব নাগরিককে বাংগালী পরিচয় দিতে হবে। এতে কড়া আপত্তি তোলেন মানবেন্দ্র, তার কথা ছিল তারা পাহাড়ীরা বাংগালী নন, তিনি নিজে চাকমা, তবে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে একজন বাংগলাদেশী। এর আগে কেউ পাহাড়ীদের বাংগালী হয়ে যাবার পরামর্শ দেয়নি।
আপত্তি সত্ত্বেও এই সংশোধনী পাস হয়ে যায় (মানে হলে পাহাড়ীদের আইনত বাংগালী পরিচয়ই দিতে হবে), মানবেন্দ্র প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেন।
সংসদীয় উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে মানবেন্দ্র সহসাই আবার ফিরে আসবেন এবং তাঁর নিজের এবং জনগোষ্ঠীকে বাংগালী পরিচয় দেবার সুযোগ গ্রহন করবেন।
@আদিল মাহমুদ,
অল্প কথায় ইতিহাসটিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
[“তোরা সব বাঙালি হইয়া যা”— শেখ মুজিব, ১৯৭২] এর ঐতিহাসিক উক্তিটির সূত্রে [গেরিলা নেতা এমএন লারমা http://blog.mukto-mona.com/?p=7209%5D লেখার কথা বলা হয়েছে। ওই লেখা থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক অংশ তুলে দিলে বিষয়টি বরং আরো খানিকটা পরিস্কার হয়:
লক্ষ্যনীয়, মুজিবীয় [“তোরা সব বাঙালি হইয়া যা”] উক্তিটি উগ্র জাতীয়তাবাদী দর্শনটিকে ধারণ করে, যার শেকড় ফ্যাসিবাদ তথা মৌলবাদে গাঁথা [মুক্তি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুজিবের দুঃশাসন এবং পরবর্তী শাসকগোষ্ঠিগুলো এখনো এই দর্শনটিকেই ধারণ করে]।
এর নীট ফলাফল অতি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধটিকে বাঙালি-আদিবাসীর যৌথ মুক্তি সংগ্রামকে অস্বীকার এবং ১৯৭২ এর সংবিধানে আদিবাসী/উপজাতিকে উপেক্ষা করে; পরবর্তী সবগুলো সরকার এরই যোগসূত্রে পাহাড়ে সেনা-সেটেলার সমাবেশ ঘটায়, শান্তিবাহিনী-সেনা বাহিনী দুই দশকের বেশী সময় ধরে রক্তক্ষয়ী বন্দুক যুদ্ধ অব্যহত রাখে, পাহাড়ে অসংখ্য গণহত্যা, গণধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও-লুন্ঠন সংগঠিত হয়, প্রায় ৬০ হাজার পাহাড়ি শরণার্থী হিসেবে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় [দ্র. কল্পনা চাকমা : পাপ মোচনের দায় http://blog.mukto-mona.com/?p=16798 ], শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্তসমূহ [যেমন, ভূমি সমস্যার সমাধান] বাস্তবায়িত না হওয়ায় চুক্তির পরে পার্বত্য সমস্যা আরো জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে, পাহাড়ি-বাঙালি অবিশ্বাসজনিত সংঘাত [প্রধানত ভূমিকে কেন্দ্র করেই, দ্র. পাহাড়ে কেন এত সহিংসতা? http://blog.mukto-mona.com/?p=5455%5D চলতে থাকে। …
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ, আমার আসলে বংগবন্ধুর ঐ উক্তি সম্পর্কে সরাসরি কোন রেফারেন্স জানা ছিল না। সীমিত জ্ঞানে যা জানি বলেছি।
বংগবন্ধুর এই উক্তি জেনেছিলাম শাহরিয়ার কবিরের এক ফাটাফাটি কিশোর উপন্যাস ‘সীমান্তে সঙ্ঘাত’ বইতে, সিকি শতাব্দীরও আগে।
আপনার লেখাতেও সরাসরি কোন নিরপেক্ষ রেফারেন্স মনে হয় দেখছি না, তবে ততকালীন সরকারী দলের মনোভাবে এই উক্তি নিয়ে তেমন সংশয়ের কারন দেখি না। বংগবন্ধু অতি উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেতা ছিলেন (যদিও যুদ্ধের পর ধীরে ধীরে আপোষ শুরু করেছিলেন), তারও সীমাবদ্ধতা ছিল।
@আদিল মাহমুদ,
অত দ্রুত নয়। “অতি”, “উদার” “অসাম্প্রদায়িক” চেতনার নেতা অতিশয়োক্তি বলা যায়। রাজনীতিতে সাধারণত যুব বয়েসেই সবাই আদর্শবাদী হয়। কিন্তু মুজিব তরুন বয়স থেকেই সাম্প্রদায়িক চেতনার পরিচয় দিয়েছিলেন। পরে ঊনসত্তর-সত্তর দশকের সমাজতন্ত্র ঘেঁষা ছাত্রনেতাদের আন্দোলনের জোয়ারে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মেনে নেন। কিন্তু অতীতে (পাকিস্তান আমলে) তাঁর কথায় ও কাজে কখনো সেরকম চেতনার প্রকাশ দেখা যায়নি। বরং উল্টোটাই দেখা গেছে। কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যায়।
১৯৪৯ সালের জানুয়ারীতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগের অর্গানাইজিং কমিটিরে সভায় ছাত্রলীগ কর্মী অলি আহাদ পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগকে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন করে এতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল ছাত্রকেই সদস্য হওয়ার অধিকার প্রদানের দাবীতে এক প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু শেখ মুজিব, আব্দুর রহমান চৌধুরী ও নাঈমুদ্দিন আহমেদের তীব্র বিরোধিতার মুখে সে প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় । এর প্রতিবাদে অলি আহাদ বৈঠকেই তাঁর পদত্যাগ পত্র দাখিল করলে শেখ মুজিব পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। (পৃঃ ৮৪, জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫ – অলি আহাদ)
সাংবাদিক বসন্ত চ্যাটার্জীর সাথে এক সাক্ষাৎকারে মওলানা ভাষাণী বলেছিলেন যে “মুজিব আওয়ামী মুসলীম লীগ থেকে মুসলীম শব্দটি বাদ দিতেই প্রস্তুত ছিলেন না”
( ডঃ সালাহউদ্দিন আহমেদের “Bangladesh: Past and Present” পৃঃ ৩১২)
http://www.petercusters.nl/file/3 থেকেঃ
“Under the pressure of Maulana Bhashani, the then party’s president, the Awami League in the 1950s had agreed to drop the denomination ‘Muslim’ from the party’s name”
(ভাষানীর চাপেই “মুসলীম” শব্দটা বাদ পড়েছিল। অতি উদার অসাম্প্রদায়িক মুজিবের উদ্যোগে বা চাপে নয়)
১২ই জানুয়ারী, ১৯৭২ বাংলাদেশে ফিরে সেইদিনই রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণ সম্বর্ধনায় লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে মুজিব বলেন “আমি একজন মুসলমান। মৃত্যু আমার একবারই হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ” । একজন অতি উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেতার মুখে এই ধরনের ঘোষণা মানায় না, বিশেষ করে যখন সব সময় আওয়ামী পন্থীরা দাবী করে যে ‘৭১ এর চেতনার একটা গুরুত্বপূর্ণ চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িকতা তথা ধর্মনিরপেক্ষতা।
@ আকাশ মালিক,
আপনাদের মত বেশ কিছু বাঙ্গালীর সমস্যা কি জানেন? – পাহাড়ীদের বিষয়ে সঠিকভাবে জানার চেষ্টা না করে এবং ভুলভাল জেনে ((যেই তথ্য পান ক্রস চেক করার কখনই প্রয়োজন বোধ করেননা))খুব বেশি judgemental হয়ে যান। আপনাদের বাঙ্গালী দের এভয়েড করার এটাই অন্যতম কারণ।
প্রথম দেখাতেই উদ্ভট প্রশ্নবানে বিদ্ধ করা, শুরু থেকেই নিকৃষ্ট (জংলী না হোক অন্তত সভ্য তো তেমন নয় ই)ভেবে বসে থাকা এবং সেই অনুযায়ী বিহেইভ করা, আই কিউ লেভেল জিরো ভাবা, পাহাড়ী মেয়েদের সহজ লভ্য বা সস্তা ভাবা,,,,,,,,,,যাদের প্রতি এই চিরন্তন আচরন তারা কিভাবে উৎসাহ পাবে সেই তাদের সাথে মিশতে, যারা এই আচরন গুলো করে আঘাত দেয়??!!
দুর্ভাগ্য এই আচরণ ভার্সিটির ছেলে মেয়েরাই (সাধারণ পাবলিকও আছে যারা বিভিন্ন ফেলাসিতে আক্রান্ত)দেয় যারা খুব গর্ব বোধ করে ডি ইউতে পড়ে বলে!!! আপনিতো সেই বৃহৎ অংশের একজন যারা এই হস্টাইল আচরণ করে তাইনা? তাই আপনার বোধগম্য হবেনা এই আচরন পেলে কেমন লাগে। আপনি শুধু দেখবেন পাহাড়ীরা বাঙ্গালীদের সাথে মিশতে চায়না সেই দৃশ্যটাই।
আর হাসালেন ভাই, দুঃখের হাসি—পাহাড়ী কর্তৃক বাঙ্গালী নারী ধর্ষিত হয়!!!!!!!ইউপিডিএফ/জে এসএস যদি কোন বাঙ্গালীকে অত্যাচার করেও থাকে সেটা কি সব পাহাড়িরা মিলে করছে? জানিনা আপনার রিপো্র্রটের সোর্স গুলো কি??!!
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আপনি বেশ উদারতা বহন করেন কারন আপনি সবার সাম্য এবং সম নাগরিকত্বের কথা বলেছেন কারণ অনেকেতো সেইটাও স্বীকার করেনা। কিন্তু শুধু মুখে উইশ করেইতো আর এটা বাস্তবায়ন করা যায়না। দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার ও বদল দরকার। সেখানেই প্রায়ই সকলেই এক। আপনি চেষ্টা করেছেন কি যেগুলো আপনি রিপোর্ট পেয়েছেন সেগুলো কতদূর সত্যি বিবেচনা করতে?কিন্তু কত সহজে জাজমেন্টাল হয়ে গেলেন। আপনিই প্রমাণ করে দিলেন কেন পাহাড়িরা বাঙ্গালীদের সাথে মিশতে কুন্ঠা বোধ করে।
(Y)
এই বাংলাদেশে বাঙ্গালী ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবে না , থাকতে দেওয়া হবে না , থাকতে হলে বাঙ্গালী হও সবাই। বাঙ্গালী ছাড়া অন্য কোন অধিকার নেই দেশে থাকার
“ওয়াক থু” নিজের উপর, এই দলগুলিকেই ভোট দেই আমাদের নিজের উপর থুথু দেওয়ার অধিকার দেওয়ার জন্যে …………………………
@শান্ত শান,
কে কোথায় এমন কথা বলেছেন একটু তথ্য-রেফারেন্স দেন তো দাদা।
ভোট দেন নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে নিজের উপর থুথু ফেলার জন্যে নয়। তার আগে আপন নাগরিকত্বের পরিচয়টা জেনে নিন। এদেশে জাতি বৈষম্য বা জাতিভেদ নেই, এ দেশ বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি, চাকমা-গাড়, হিন্দু মুসলিম সকলের দেশ। এখানে সবাই বাংলাদেশী, সকলের সমান অধিকার। সমস্যার সমাধান তখনই সম্ভব হবে যখন সকলে মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনা অন্তরে ধারণ করবেন। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে অবাঙ্গালিরা বাঙ্গালিদের সাথে মিশতে চান না বা তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখেন এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। পাহাড়িদের কর্তৃক অন্যায় ভাবে বাঙ্গালিদের হত্যা খুন ধর্ষণের রিপোর্টও পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং এক তরফা ভাবে ন্যায় অন্যায় যাচাই করা সম্ভব নয়। সরকার ও জনগনকে সাথে নিয়ে শান্তি পূর্ণ প্রতিবাদ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
@আকাশ মালিক,
সম্পূর্ন একমত! এই দেশ সব বাংলাদেশীর, তারা বাঙ্গালী হোন আর পাহাড়ী হোন, মুসলিম হোন আর অমুসলিম হোন তাতে কিছু যায় আসে না। যদি পাহাড়ীদের জমি অন্যায়ভাবে দখল করা হয় তা অবশ্যই অপরাধ। তবে আমি বাঙ্গালী বলে পাহাড়ে জমি কিনতে পারব না বা বসতি করতে পারব না এ কেমন আবদার? আমি তো বলছি না পাহাড়ীরা সমতলে বাস করতে পারবেন না। আমাদের ছোট দেশে সবার শান্তিপূর্ন সহাবস্থানই কাম্য।
@মনজুর মুরশেদ,
(Y)
@মনজুর মুরশেদ,
আপনি যখন এই কথাগুলো বলছেন, তখন আমার মহান নেতা এম এন লারমা’র কথাগুলো যেন শুনতে পাচ্ছি। স্বাধীনতার পরপরই যখন দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হচ্ছিল এবং খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা চলছিল, তখন এম এন লারমাই ছিলেন একমাত্র সরব ব্যক্তি যিনি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। সংবিধানিক বিধানের মাধ্যমে যখন সব নাগরিককে বাঙালি হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন একমাত্র এম এন লারমাই বলেছিলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশী, বাঙালি নই। তিনি বলেছিলেন, আমার বাপদাতা চৌদ্দপুরুষ কেউই বলেনি, আমি বাঙালি। আমরা বাঙালি নই। আমি চাকমা …আমরা সবাই বাংলাদেশী। এই বাংলাদেশী পরিচয়টাকে সবাই যদি প্রথম ও প্রধান হিসেবে বিবেচনা করতেন, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কখনো বেদনাদায়ক ইতিহাসের সৃষ্টি হতো না।
আপনার দ্বিতীয় বাক্যে বলছেন, “যদি পাহাড়ীদের জমি অন্যায়ভাবে দখল করা হয় তা অবশ্যই অপরাধ”। এখনও বলছেন “যদি”। ভাইজান, “যদি” বাদ দিয়ে আপনাকে দৃঢ়ভাবে বলতে হবে – পাহাড়ীদের জমি অন্যায়ভাবে দখল করা হয়েছে এবং তা অবশ্যই অপরাধ” । পাহাড়িদের জায়গাজমি দখল করে নেওয়া হয়েছে এবং আমার ও আমাদের আত্মীয় স্বজনের জায়গা জমিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি এখন পুরোপুরি ভূমিহীন। আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা এখন প্রকৃত অর্থে উদ্বাস্তু ও দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষে পরিণত হয়েছে। আর ভূমি কেড়ে নেওয়ার যে অপরাধ, সে অপরাধটা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয়েছে। এখানে সেটেলার বাঙালিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
“পাহাড়ে বাঙালি কিনতে পারবে না” – এ কথা কোথাও কোন আইনে লেখা নেই। পাহাড়ে বাঙালিরা জমি কিনতে পারবে না – এটা সেটেলার তথা সাম্প্রদায়িক বাঙালিদের প্রোপাগান্ডা। আপনার আরও একটা বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার – স্বাভাবিক মাইগ্রেশন আর অস্বাভাবিক মাইগ্রেশন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় যা হয়েছে সেটা হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় অস্বাভাবিক মাইগ্রেশন এবং সেখানে বাঙালিদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো পাহাড়ীদের উপর। এখানে চরমভাবে মানবাধিকার লংঘিত হয়েছিলো। অন্যদিকে, স্বাভাবিক মাইগ্রেশন হলে সেভাবে অপরাধ সংঘটিত হতো না বা হয় না। অর্থনীতির সূত্র অনুসারে সেখানে চাহিদা-যোগানের মাধ্যমে বিষয়টার মধ্যে ভারসাম্য আসতো। না, এটা অস্বাভাবিক মাইগ্রেশন বলে তথাকথিত ‘পাহাড়ী-বাঙালি দ্বন্দ্ব’ হচ্ছে। এখানে যা হচ্ছে তা হলো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন এবং রাষ্ট্র সেটেলার বাঙালিদের ব্যবহার করছে এবং প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে।
@অডঙ চাকমা,
সমস্যাটি নিঃসন্দেহে জটিল। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান সরকার আর পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যার জন্য দায়ী। আমরা সমতলের অধিবাসীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পাহাড়ীদের অধিকারের কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি নি। কৃত্রিমভাবে কাপ্তাই লেক তৈরী করে আমরা অনেক পাহাড়ীকে সর্বস্বান্ত করেছি, আবার সমতল থেকে পাহাড়ে লোক নিয়ে গিয়ে তাদের জন্য নতুন সমস্যার তৈরী করেছি। তার উপর এই অঞ্চলে অলিখিত সেনাশাসনের নির্মমতা তো আছেই। পাহাড়ী অঞ্চলে বাস না করলেও, বাঙ্গালীদের সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকার কারনে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না এই অঞ্চলের বেশীরভাগ গোলযোগের পেছনে কারা দায়ী।
উপরে যা লিখেছি তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা সত্বেও ‘পাহাড় কেবলমাত্র পাহাড়ীদের জন্য’ এই কথাটি আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না; কারণ, বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রটির অখন্ডতা হারানোর ভয় আমাকে পেয়ে বসে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন একটি ব্যবস্থা কি হতে পারে না যাতে এই অঞ্চলে একদিকে যেমন পাহাড়ীদের সমস্যার মানবিক সমাধান হয়, আবার অন্যদিকে তা কোনভাবেই বাংলাদেশের অখন্ডতার জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায়?
@মনজুর মুরশেদ,
কারনটা জানতে পারি??কেন এমন মনৈ হই?
@উথেন জুম্ম,
আরেকদিন আপনার প্রশ্নের জবাব দেব। দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় আমি বিব্রত ও লজ্জিত।
ভাল থাকবেন।
@মনজুর মুরশেদ, পাহাড়ের সাথে সমতলের সম্পর্কের শুরু কবে থেকে? পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাটি চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত হয় ১৮৬০ বা তার কাছাকাছি সময়ে। এই সম্পূর্ণ ইতিহাসটা হচ্ছে, স্বাধীন জনগোষ্টীকে নানাভাবে পিঠে হাত বুলিয়ে রাষ্ট্রব্যাবস্থার ভেতরে আনা।ঐ জমি যে পাহাড়িদের সম্পত্তি নয়, বরং এখন কোন ম্যাজিকের মাধ্যমে ব্রিটিশ রাণীর সম্পত্তি হয়ে গেছে, এটা বোঝাতে এবং তৎকালীন রাজাদের বাগে আনতে ব্রিটিশদের প্রচুর ছলা-কলা-শক্তি প্রদর্শণের আশ্রয় নিতে হয়েছে। জমি নিয়ে রাষ্ট্রের সাথে একটা রফা হয়েছিল বলা যায়, যার ফলে রাষ্ট্র বিনা বাধায় অনেকখানি জায়গা রেলের স্লিপারের কাঠের জন্য ‘রিজার্ভ ফরেস্ট’ করে নিয়েছে, খানিকটাতে হালচাষ চালুর মাধ্যমে ট্যাক্স বাড়াবার চেষ্টা করেছে এবং বাকিটা পাহাড়ি গ্রাম থাকা/জুম ইত্যাদিতে ব্যাবহার করেছে। এই সবকিছু এক কথায় বাতিল হয়ে গেল যখন অঞ্চলটা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে বরাদ্দ দেওয়া হল। কে কার জমি কাকে দেয়? এই সব মীমাংসা হল না। ব্যাবহৃত সম্পত্তির মত সবকিছু সমেত হাতবদল হয়ে গেল। সমতলের যে জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের সাথে আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তান এ এসেছিল, তারা পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সাথে নতুন আন্দোলনে নিরত হল এবং কালেক্টিভ দুর্ভোগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্র পেল। কিছু ব্যাতিক্রম বাদে, পাহাড়িরা রাষ্ট্রপ্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বাইরে চিল, এবং থাকার জন্য চেষ্টা করেছে। আদিবাসী একেই বলে। অন্যান্য জাতিগোষ্টীর সাথে রাষ্ট্রের একরকম সমঝোতা হয়েছে, কিন্তু আদিবাসীর রাষ্ট্র সঙক্রান্ত মূল্যবোধ ভিন্ন ছিল – সারা পৃথিবীতেই তাই। এখন আমরা তাদের শেষ প্রতিরোধটুকু ভেঙ্গে দিয়ে তাদেরকে সম্পূর্ণ মিশিয়ে দিতে চাচ্ছি। ভিন্নভাবে পৃথিবী, প্রকৃতি, জীবন, অথোরিটি ইত্যাদিকে দেখার যে একটা আলাদা ফিলোসফি, সেই ভিন্নতাটাকে টিকিয়ে না রেখে বুলডোজার দিয়ে বাকিদের সাথে মিশিয়ে দিতে চাচ্ছি। পাহাড়ের জমি এই কারণেই সমতলের জমি থেকে আলাদা, কারণ পাহাড়ের মানুষ এই কিছুদিন আগ পর্যন্ত জমিকে দখলের জিনিস বলেই মনে করত না, এবং জমিকে কেন্দ্র করে তাদের নিজস্ব সমাজব্যাবস্থা আবর্তিত হয়েছে। চিটাগঙ্গের মানুষ যখন কুমিল্লা গিয়ে সেটেল করে, সে এই ধরনের কোন ইতিহাসে/অভিজ্ঞতায় নাড়া দেয় না, কিন্তু পাহাড়ে দ্রুত+কৃত্রিম সেটেলমেন্টের ফলে একটা ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়েছে, এবং সেটেলমেন্টের পুরো বিষয়টাই একটা সেনসিটিভ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের অদূরদর্শি কিংবা অতিদুরদর্শী নেতাদের বুদ্ধির ফল। কতদিনে এই প্যাঁচ ছাড়ানো যাবে বা আদৌ যাবে কি না বা যাবার ইচ্ছা আছে কি না সবই প্রশ্নবিদ্ধ।
সর্বশেষে, পাহাড়িরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে বাংলাদেশময় ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের অস্তিত্বই থাকে না। একটা জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার জন্য একটা জায়গা প্রয়োজনে ছড়িয়ে পড়লেও, নিজ এলাকাটিতো থাকতে হবে যেখানে তার ভাষা সংকৃতি বিকশিত হবে। যেমনটা বাংলাদেশ ও বাঙ্গালির সম্পর্ক। বাংলায় যদি বাঙালি সংখ্যালঘু হয়ে যায়, সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার স্বাধীনতা পেলেও লাভ হবে কি? এই ভাবে ভাবুন।
সহাবস্থান খুবই চমৎকার চিন্তা, কিন্তু সহাবস্থান হয় সমানে-সমানে। এক পক্ষ যদি আদান-প্রদানে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তার আগ্রহ কমে যাবারই কথা, এবং যদি তার নিজ প্রাণের জিনিস ‘আমরা সবাই ভাই-ভাই’ স্লোগানের আড়ালে আদান প্রদানে কেমনে কেমনে হাতছাড়া হয়ে যেতে থাকে, তাহলে সেই ভাইয়ের মিষ্টি কথার প্রতি সন্দেহ জন্মে যাওয়াও স্বাভাবিক।
@আকাশ মালিক,
কাগজে কলমে অনেক কিছুই লেখা থাকে কিন্তু বাস্তবে কিন্তু উল্টা টাই হচ্ছে এই দেশে…………………… (আর এই উল্টা টার জন্যে )
@আকাশ মালিক,
আপনিতো আধুনিক মনা মানুষ।বলেনতো দেখি এই শব্দ গুলো কেমন লাগে…..সাপ খাইয়া,ব্যাঙ্গ খাইয়া,মইগ্যা,চাংমো, আরো কতো কি ??আমার নাক চ্যাপ্তা,চোখ ছোট,হিল ট্রেক্টস থেকে এসেছি বলে এমন কথা সবসময় শুনতে হয়।।তাহলে আপনিই বলুন কিভাবে এই জুম্ম পাহাড়িরা মিশবে??
আমার জমিতে অন্য কেঊ জোর করে বসবাস শুরু করলে আম মেনে নিব না। তবে ১৯৯৭ এর শান্তি চুক্তির দিন যে যেখানে ছিল, তার ভিত্তিতে বা আরও যৌক্তিক কোনও কিছুর উপর ভিত্তি করে ভূমি সমস্যর সমাধান করতে হবে।
তবে শান্তি চুক্তির পর যদি কেঊ ওখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করে তাকে পাহাড় থেকে বের করে দিতে হবে।
@বেতান,
সাধারণত: অনেক বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে যেয়ে ঢাকায় শিফট হয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা/থানা হতে থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। এরকম ভাবে, কোন বাংলাদেশী পার্বত্য চট্টগ্রামে শিফট হলে তাকে কি সেখান থেকে বের করে দিতে হবে?
একটি বিষয় অনেকদিন ধরে খুঁজছি। কেউ জানালে উপকৃত হব।
ষাট, আশি ও নব্বইয়ের দশকে ভূমিহীন বাঙালীদের যখন পাহাড়ে পূর্নবাসিত করা হয়, সেটি কি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাস-জমিতে করা হয় নাকি, পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করে দখলকৃত ভূমিতে করা হয়?
পাকিস্তান ও বাংলাদেশী সরকারী নথি বলছে, সেটি খাস জমিতে করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি ছিল?
সেসময় কিছু পাহাড়ী নেতা সমস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাহাড়ী জাতির ভূসম্পত্তি হিসেবে ধরে নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। এত বড় একটি অঞ্চল কোন জাতির মানুষের নিজস্ব ভূসম্পত্তি হতে পারে কি?
তাহলে, চাটগাঁইয়ারা চট্টগ্রামকে, সিলোটীরা সিলেটকে আর নোয়াখালীর লোকেরা বৃহত্তম নোয়াখালীকে নিজস্ব ভূ-সম্পত্তি বলে দাবি করে, তাহলে বিষয়টি কোথায় দাঁড়াবে? হয়ত বলবেন, পাহাড়ীরা বাঙালীদের থেকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম, সেক্ষেত্রে চাটগাঁইয়া, সিলোটী, নোয়াখালীর লোকেরা বৃহত্তম বাঙালী জাতির অংশ। এখানেই মূল বিষয়টি দেখুন, ‘বৃহত্তম অর্থে’।
আমি নিজে একজন চাটগাঁইয়া হিসেবে জানি আমার স্বজাতিরা নন-চাটগাঁইয়াদের কি চোখে দেখে এবং বাঙালীদের সাথে ধর্ম ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে কত বেশি অমিল।
আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ কোন অবস্থাতেই একটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
বান্দরবানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল বছর আটেক আগে। সেসময় একটি বিষয় খেয়াল করি। সেটি হল: বাঙালীরা পাহাড়ীদের ব্যাক্তিগত ভূমি সম্পত্তি দখল করছে আর এ ব্যাপারে সহায়তা করছে প্রশাসন। তবে, সব বাঙালী যে এই কাজ করে, তা কিন্তু ঠিক নয়।
একজনের ভূসম্পত্তি আরেকজন কর্তৃক দখলের ঘটনা বাংলাদেশে নিত্য-নৈমত্তিক এবং এ নিয়ে সমতলেও প্রচুর সংঘাত হয়। নরসিংদী, ময়মনসিংহ, ব্রাম্মণবাড়িয়া, নারায়ণগন্জের বন্ধুদের থেকে এজাতীয় ঘটনা অহরহ শুনেছি, মোবাইলে ভিডিও দেখেছি। এসব ক্ষেত্রেও প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে সমর্থন করে।
অনেকে পাহাড়ে বাঙালী সেটলার নিয়ে আপত্তি তোলেন। এখানেও আমার প্রশ্ন আছে। আমার অনেক আত্মীয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় শিফট হয়ে স্থায়ীভাবে ঢাকায় সেটেল হয়েছেন। পাহাড়ে শিফট হয়ে সেটেল হওয়া আর ঢাকা বা, সমতলের অন্যান্য স্থানে শিফট হয়ে সেটেল হওয়ার মধ্যে পার্থক্য কি? হ্যাঁ, পার্থক্য হবে, যদি সেটলাররা অবৈধভাবে ওখানকার কারো ব্যাক্তিগত ভূসম্পত্তি দখল করে নেয়। কিন্তু বিষয়টি আবার সমতলের নিত্য-নৈমত্তিক ভূসম্পত্তি নিয়ে বিরোধের মাঝে পড়ে।
তবে, আসল ব্যাপার হল, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। নাইক্ষ্যংছড়িতে আমার এক বাঙালী বন্ধুর পিতার বাগান ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী এক বাঙালীর সাথে বিরোধে তিনি সেই বাগানের দখল হারান, যা তিনি কখনই উদ্ধার করতে পারেননি। একই রকম ঘটনা পাহাড়ীদের সাথেও ঘটছে। পাহাড়ী-বাঙালীর এই ভূসম্পত্তিগত বিরোধে ইন্ধন জুগিয়ে এইসব বৈষয়িক সংঘাতগুলোকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ দেয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল। সরকার, আর্মি, মুসলিম উগ্রবাদী দলগুলো এই বৈষয়িক সংঘাতগুলোকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে পরিণত করার আসল রূপকার। খোঁজ নিয়ে দেখেন, পাহাড়ী-বাঙালীদের এইসব সংঘর্ষে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখে মুসলিম উগ্রবাদী দলগুলো।
মূল ব্যাপারটি আসলে এখানে, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী-বাঙালী বৈষয়িক বিষয়বস্তুর সংঘাতগুলো সরকার, আর্মি, মুসলিম উগ্রবাদী আর সুযোগ সন্ধানীরা সাম্প্রদায়িক দাঙায় পরিণত করে। আর, এব্যাপারে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হচ্ছে ‘পাহাড়ীদের অমুসলিমত্ব ও অবাঙালীত্ব’।
তবে, কিছু শিক্ষিত পাহাড়ীদের মনেও সংকীর্ণতা কাজ করে। চবিতে পড়ার সময় দেখতাম, অধিকাংশ পাহাড়ীরা বাঙালীদের সাথে মিশতে চাইতো না। অবশ্য এরজন্য একতরফা পাহাড়ীদের দায়ী করব না। বাঙালীরাই বেশি দায়ী এই পরিস্থিতির জন্য। কিন্তু যদি শিক্ষিত পাহাড়ীরা মুক্তমনে মুক্তমনা বাঙালীদের সাথে মিশতে না পারে, তাহলে, শিক্ষিত হবার সুবিধা কোথায় রইল?
তবে, দিন শেষে একটাই কথা বলব, ছোট ভূ-আকৃতির বিশাল জনসংখ্যার আর্থিকভাবে দুর্বল আমার বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক বিভেদ-দাঙা দেখতে চাই না। পাহাড়ী, বাঙালী, মুসলিম, অমুসলিম, চাঁটগাইয়াদের মাঝে অন্য পরিচয়ের আগে মনুষ্যত্বের ও বাংলাদেশী পরিচয় দেখতে চাই।
বাংলাদেশের সব জাতি বাংলাদেশী পরিচয়ে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুগ-যুগান্তর ধরে টিকে থাকুক।
যাই হোক, পাহাড়ী জাতির মানুষদের মনে আঘাত করা বা, পাহাড়ীদের দোষী ও বাঙালীদের সাধু বানানো আমার উদ্দেশ্য ছিল না। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দু:খিত।
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
আপনি এই লিঙ্কটি দেখতে পারেন…..httpv://www.satp.org/satporgtp/countries/bangladesh/document/actandordinances/chittagon_hill.htm. httpv://en.wikipedia.org/wiki/Chittagong_Hill_Tracts_manual.
ষাট দশকে নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই তবে আশি দশকে ভূমিহীন বাঙ্গালীদের পূর্নবাসিত নিয়ে অবশ্যই অযৌক্তিকতা আছে।।ইহা সহজেই বলা যায় যে পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করে দখলকৃত ভূমিতে পূর্নবাসিত করা হয়।।কারন পাহাড়িদের ঐ সমস্ত বসট-ভিটে এখন সেটেলারদের দখলে আর যদি খাস জমিতে পূর্নবাসিত করা হতো তাহলে পাহাড়িদের তূলনায় সেটেলাররা আরো ভিতরে বসত-বাড়ি করতে হতো।।কিন্তু বাস্তবে ভিন্নতা দেখাই।।
আপনার এই মন্তব্যে কোন রেফারেন্স আছে কি??
এই ক্ষেত্রে আপনি প্রজন্মকে,বসবাসের স্থানকে বিভাজন করে দেখতে পারেন।পাহাড়ের সংঘাতময় পরিবেশ থেকে ঐ চবিতে পৌছা,স্বাভাবিকই সংকীর্নতা হওয়ার কথা।।তবে সেইক্ষেত্রে আমাদের বাঙ্গালী ভাইরা কতটুকু বন্ধুত্বপূর্ন,সৌহাদ্য আচরন করে সেটাই ভাবার বিষয়।।আর মুক্তমনা,বদ্ধমনা পাহাড়ি-বাঙ্গালী নিশ্চয় সবারই মাঝে থাকবে।।
এই চাওয়াটা যেনো বাস্তবে প্রতিফলিত হয়।।
@সবুজ পাহাড়ের রাজা, সেটেলার ও মাইগ্রেশন নিয়ে নিচে কিছু প্রসংগ পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি, আশা করি পড়ে দেখবেন। পাহাড়িদের ‘বন্ধুভাবাপন্নতা’ নিয়ে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।
আমি একবার একটা ওয়ার্কশপে গেছিলাম ঢাকার বাইরে, সেখানে পাহাড়ি একটি মেয়ে ছিল। মেয়েটা এক্কেবারে কথা বলে না, চোখে চোখ পড়লে ফিরিয়ে নেয়, অবসর সময়ে উল্টোদিকে মুখ ফিরে শুয়ে থাকে। আমি আর আমার অন্য বন্ধু মিলে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে কথাবার্তা চালু হলে জানা গেল সে তার জনগোষ্টীর একমাত্র অনার্স গ্রাজুয়েট, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে এর আগে আর আসেনি। পরে আরো তিনচারদিন যাবার পরে জানা গেল, তার ধারণা ছিল ওখানে বাঙ্গালিরা যেমন, সমতলে বাঙালি না জানি কেমন হবে। আমাদের সাথে কথা বলে তার ভুল ভাঙ্গলো, পরের বছর আমি আর এক বন্ধুকে নিয়ে তার বাড়ি গেলাম, তার স্বামীর সাথে আলাপ হল, তার বাপের বাড়ী, মামার বাড়ী ঘুরে আসলাম, কোথাওই একমুহূর্তের জন্য নিজেকে অনাকাঙ্খিত মনে হল না। কিন্তু নিজ গ্রামে তার চলাফেরার স্বাভাবিকতা ও বাঙ্গালি-অধ্যুষিত পাহাড়ি শহরে তার আড়ষ্টতা চোখে পড়ার মত, বাঙ্গালির ‘দৃষ্টি’ নিয়ে নিভৃতে আলাপও হল একবার, নিজ জাতির জন্য গর্ববোধ করতে পারলাম না।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার বান্ধবী আমার আচরণে স্বাভাবিক মানবিক শ্রদ্ধাবোধটুকু অনুভব করেছিল বলেই এতো সহজে আমাকে নিজের নিজস্ব জগতে নিয়ে যেতে পেরেছিল, আমার আচরণে উচ্চশিক্ষিত-ঢাকাবাসী পিঠচাপড়ানোপনার লেশমাত্র থাকলে যা হত না। আমি আপনার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না, কিন্তু কেন পাহাড়িরা কখনো ‘এড়িয়ে চলে’ মনে হয় তার ব্যাখা দেবার চেষ্টা করলাম।
ছোটবেলার স্কুলে একজন পাহাড়ী ছাত্রী আসায় ক্লাসের অন্যান্যরা এবং একজন শিক্ষকও কী রকম ‘চিড়িয়া’ ভাবে আচরণ করেছিল তা আমার মনে আছে। ঐ মেয়েটির বাবা ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারী চাকুরে, একই শ্রেণীর বাঙালি ছাত্রীটিকে সবাই যে (অন্যায্য হলেও) সম্ভ্রম দিত, শুধুমাত্র পাহাড়ি হবার কারণে এই মেয়েটি সেই স্থান থেকে খারিজ হয়ে যায় ও অদ্ভুত দৃষ্টি/আলাপের শিকার হয়। তার মনে চিরকালের মত যদি বিতৃষ্ণা জন্মে গিয়ে থাকে, আমি দোষারোপ করবো না।
পরবর্তীতে আমার ডিপার্টমেন্টে এবং চাকরিক্ষেত্রে আরো দুজন অন্য জাতির মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি – দুজনেই উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতি সচেতন এবং নিজ জাতির দুর্দশার ব্যাপারে চিন্তিত। এমনিতে দুজনই বন্ধুসুলভ, কিন্তু পাহাড় প্রসঙ্গে বাঙ্গালি, হয় বন্ধুপ্রতিম নয়, নতুবা সম্পূর্ণ অজ্ঞ বা উদাসীন – তিনটিই তাদের কাছে আপত্তিকর। যখন বুঝতে পেরেছে আমার কৌতুহল ও প্রশ্ন সৎ উদ্দেশ্য থেকে জানবার জন্য করা, তখন জবাব দিয়েছে, নিজের অবস্থানটা জানাতে চেয়েছে। মিশতে চায়নি এমন মনে হয় নি তো।
@শালিখ,
পড়লাম।
আমি সব শিক্ষিত পাহাড়ী সম্পর্কে ঢালাওভাবে উপরের কথাটি বলিনি। আমার লেখাতেও তার ইঙ্গিত ছিল। আমার চবির খুব ভাল বন্ধুদের দুজন পাহাড়ী। এদের মধ্যে একজনের সাথে প্রায়ই দেখা হয়। আমার ওই বন্ধু আমাকে ন্যাটা ঢাকে। দেখলেই জড়িয়ে ধরে বলে, কিরে ন্যাটাইয়া, ক্যান আসস?
কিন্তু সবাই একরকম নয়। এর জন্য বাঙালীরাই বেশি দায়ী, তা আমি উপরে বলেছি। আর নিপীড়িত জাতির একটা অংশের মাঝে ঘৃণাবোধ কাজ করবে, কিছুর মাঝে শোভিনিজ্যম কাজ করবে, এটা অস্বাভাবিক নয়।
তবে, বেলা শেষে একটাই কথা, আমরা মানুষ। পাহাড়ী-বাঙালী পরিচয়ের আগে আমরা মানুষ।
পাহাড়ে দোষীদের বিচার করা হোক। দখলকৃত জমি ফিরিয়ে দেয়া হোক। পাহাড়ী-বাঙালী সুন্দরভাবে পাহাড়ে বেঁচে থাকুক।
পাহাড়ে সেনা-সেটেলার সন্ত্রাস রুখো!!
সংখ্যালঘুদের মাঝেও আবার সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর বিভেদ আছে। “সংখ্যালঘু”দের হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও পাহাড়ীরা অবজ্ঞার শিকার হতে দেখেছি।
সমস্যাটা আসলে জাতীয়তাবোধে। পাহাড়ীদের আমি খুব কমই দেখেছি বাঙ্গালীদের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে মিশতে, ওরা নিজেদের নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। “আমি বাংলাদেশী” এই পরিচয় না দিয়ে কেউ যদি “আমি পাহাড়ী” ট্যাগ নিয়ে ঘুরে বেরায়, তাকে বিভেদের শিকার হতে হবেই।
মিডিয়ার কথা বলে লাভ নাই, বাংলাদেশের মিডিয়া সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ব্যপারে সবসময়ই নিরব।
@মহাপুরুষ,
ভাই বলেই তো খালাস।
পুরোপুরি মিথ্যা। বরং ওরা নিজেরাই কারো সাথে মিশতে চায় না। সত্য এই যে
ওরা নিজেদের নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। “আমি বাংলাদেশী” এই পরিচয় না দিয়ে কেউ যদি “আমি পাহাড়ী” ট্যাগ নিয়ে ঘুরে বেরায়, তাকে বিভেদের শিকার হতে হবেই।
তবে আপনার সাথে সম্পুর্ণ একমত যে ।।
আর দেশের প্রশাসন যতই অসাম্প্রদায়িক বলে গলা ফাটাক, সময় মতো ঠিকি জান্নাত নিশ্চিত করতে ছাড়ে না। নইলে পুলিশ, আর্মির সামনে কি করে মানুষের ঘর-বাড়ি পুরিয়ে দেয়!!!
@অগ্নি,
আমি বলেছি এটা আমার আগের কমেন্টেই।
ওরা নিজেরা মিশতে চায় না, কথা ঠিক, কিন্তু যখন বাঙালীরা নিজেদের মাঝে কথা বলে তখন পাহাড়ীদের কথা আলোচনায় আসলে তাদের সম্পর্কে প্রচন্ড অবজ্ঞাভরে কথা বলে। আমি কোনও বাঙ্গালীকে এখন পর্যন্ত পাহাড়ীদের সম্পর্কে ভালো কোনওকিছু বলতে শুনিনি। যাই হোক, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বললাম, মতভেদ থাকতেই পারে।
তবে এই অবজ্ঞার আরেকটা কারণ সম্ভবত আদিবাসী কোটা। আরেকটা কারণ সম্ভবত চট্টগ্রামে আদিবাসীদের স্বায়ত্বশাসনের দাবী, চট্টগ্রামে জমি কিনতে নাকি সন্তু লারমার অনুমতি…ইত্যাদি ইত্যাদি।
সমস্যাটা একটা জটিল সমস্যা। স্বাধীনতার ৪০ বছরে যেখানে মানুষ এখনও হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা থেকেই বেরোতে পারে নি, আদিবাসী তো বহু দূর…
জাতিয়তাবোধের বিষয়ে তাহলে কী বললাম? আদিবাসী ট্যাগ ছেড়ে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সবার সাথে মিশতে হবে। তা না করে “পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ” নামে সংগঠন খুলে বসে থাকলে সারা জীবন ঐ দেয়ালে চিকা মেরেই কাটাতে হবে। অধিকার আদায় আর হবে না।
@মহাপুরুষ,
সংস্কৃতিগত বিভেদ স্বাভাবিক, হিন্দু মুসলমান সম্পর্কও আমাদের অঞ্চলে স্বাভাবিক নয়। এমনকি বিদেশের বাংগালী মহলেও হিন্দু মুসলমান বিভেদ আছে। এসব কাটানো খুব সহজ নয়, কয়েক পুরুষ লেগে যাবে।
তবে এর দোহাই পেড়ে জাতিগত দাংগা হাংগামা বাধানো, জোর জবরদস্তি, বিশেষ করে সরকারী প্রশাসনের ছত্রছায়ায় হালাল করা যায় না।
@আদিল মাহমুদ,
হালাল করার কথা কী একবারও বলেছি? হয় আপনি ভুল বুঝেছেন অথবা আমি বুঝাতে পারি নি।
@মহাপুরুষ,
না, আপনি হালাল করার কথা সরাসরি বলেননি, তবে আপনার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শুনলে অনেকটা তেমন সুরই বোঝা যায়।
– এই বক্তব্যে বিভেদ বলতে ঠিক কি বোঝাচ্ছেন তা ১০০% পরিষ্কার নয়, এই লেখায় কথা হচ্ছে তাদের ওপর সাম্প্রদায়িক অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে, কাজেই ধরে নেওয়া যায় যে আপনার কথার মানে হল যেহেতু তারা আমি বাংলাদেশী এই পরিচয় না নিয়ে আমি পাহাড়ী ট্যাগ নিয়ে ঘোরে কাজেই তাদের মূলধারার লোকের থেকে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হওয়া যুক্তিসংগত।
পাহাড়িরা আমি বাংলাদেশী অস্বীকার করে বলে আমার মনে হয় না, তবে তারা তাদের পাহাড়ি পরিচয় ভুলতে চায় না, তাতে দোষের কিছু নেই। ডুয়েল আইন্ডেন্টিটি রেখেও ভাল নাগরিক হওয়া যায়। আর যদি বলেন যে বাংগলাদেশী পরিচয়ের আগে পাহাড়ি পরিচয় বড় করে দেখে (যা হতে পারে) তবে বলব যে তাতেও ক্ষতি নেই যতক্ষন না তারা দেশের প্রচলিত বিধিবিধানের বিরোধিতা করে। পৃথিবীর সব দেশেই এ জাতীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ ধরনের মানসিকতা কম বেশী দেখা যায়। আমেরিকা/কানাডা, অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এখনো মূলধারার সাথে পুরো মার্জ করতে পারেনি, অথচ আমরা এশিয়রা পর্যন্ত এসে মার্জ করে যাচ্ছি। এ কারনে তাদের বিভেদের শিকার হতে হবে এমন বলা যায় না।
@মহাপুরুষ,
একটা কথা বলতে ভুলে গেছি; আমার ব্যাখ্যা করা আপনার কথা হয়ত আপনি ঠিক সেভাবে বলতে চাননি, তবে আমার কাছে প্রথম পড়ে তেমন মনে হয়েছিল। আপনি হয়ত দাংগা হাংগামার সাফাই হিসেবে নয়, কারন হিসেবে বলতে চেয়েছিলেন তা হতে পারে।
@মহাপুরুষ,
জানি না কথাটি কতটুকু সত্য??তবে উপরোক্ত আপনার মন্তব্যটি সম্পূর্ন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বর্নিত।ভালো হতো,যদি মিশতে না পারার কারনগুলো,কিংবা আপনি যদি পাহাড়িদের সাথে মিশে কারনগুলো তুলে ধরতে পারলে।
অন্ধকারের ঢিল ছুড়ার ন্যায়।ভাই, জুম্ম পাহাড়িরা নিজেদের কখনো বাংলাদেশী পরিচয় দিতে দ্বিদ্ধাবোধ করে না, শুধু দ্বিধাবোধ করে বাঙ্গালী হিসেবে পরিচিতি হতে।পাহাড়ি ট্যাগ নিয়ে জুম্ম পাহাড়িরা ঘুরে বেড়ায় না বরং এই ট্যাগটা আমাদের বাঙ্গালী বন্ধুরা লাগিয়ে দেই।চোখ ছোট,নাক চ্যাপ্তা, এইসব নির্নয়ে পাহাড়ি ট্যাগ দিতে নিশ্চয় দেরী করা কথা নই।
@মহাপুরুষ,
কোন অর্থে কথাটা বলেছেন জানি না। হ্যাঁ, গোঁজামিল জাতীয়তা নিয়েই তো বড় সমস্যা। আপনারা হলে ‘বাঙালি’ এবং একেবারে সাংবিধানিকভাবে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। আপনি হলেন জাতি, বাঙালি জাতি। আর আমাকে বলেন ‘উপজাতি’। এই উপজাতি বলার মধ্যে কোন সম্মানবোধ নেই, বরং অধিকার হরণের চিন্তা থাকে। সেজন্যে তো বাঙালি জাতি নিজে জাতি হিসেবে থাকতে চায়, আর অন্যদের ‘উপজাতি’ হিসেবে রাখতে চায়। এখানেই ‘জাতি’-’উপজাতি’র দ্বন্দ্ব।
‘পাহাড়ীরা বাঙ্গালিদের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে কম মিশতে দেখেছেন’। জানিনা কথাটা কতটুকু সত্য। তারপরেও প্রশ্ন জাগে: তাহলে পাহাড়ীরা কেন বাঙ্গালিদের সাথে মিশতে পারে না। কারণগুলো কী কী? বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন?
“পাহাড়ীরা’ বাংলাদেশী পরিচয় দেয় না কথাটা – আপনার মনগড়া কথা। এম এন লারমাই প্রথম বাঙালির পরিবর্তে সংবিধানে বাংলাদেশী পরিচয়টা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্ধ বাঙালিদের কাছে এম এন লারমার সেই দাবী ছিলো একেবারে ফেলনা, তুচ্ছ। এরপরও পাহাড়ীদের দোষারোপ করবেন?
অবশেষে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও মুখ খুললেন যে রাঙামাটিতে সংঘাত পরিকল্পিত । তবে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে পুণরায় সেই একই মূলা, মূল ঘটনাকে ধামাচাপা এবং অপরাধীদের বাঁচাতে প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক আন্তরিকতার ফলে আজ রাঙামাটিতে উত্তেজনা প্রশমনে আয়োজন শান্তি শোভাযাত্রা । New Age: Rangamati violence premeditated: Menon । আজকের প্রথম আলোতে আরেকটা খবর প্রকাশিত হয়েছে রাঙামাটি অশান্ত কার ইন্ধনে? ।
পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যাকে পাহাড়ী – বাঙালী সমস্যা বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না, এমন হলে মূলসমস্যাটাকে অস্বীকার করা হবে, উপরে সোনায়ন চাকমা সংক্ষিপ্ত পরিসরে এর সৃষ্টের মূল কারণ সম্পর্কে ভালোভাবে তুলে ধরেছেন । অভিজিৎ দা সহ যারাযারা পার্বত্য চট্রগ্রামের মূল সমস্যাকে বুঝে আমলে নেন এমন সকল বাঙালি ভাই-বোনদেরকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা । ব্যবহারিক প্রয়োগে এবং প্রয়োজনে বাঙালি শব্দটি ব্যবহার করি বলে পাহাড়ীরা ‘বাঙালি বিদ্বেষী‘ তা ভাবলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রবল লাভ হয় । জিয়া সরকার এবং রাষ্ট্র তাই চেয়েছিল কৃত্রিমভাবে ভূমি সমস্যার মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্রগ্রামে এক দীর্ঘ মেয়াদী ‘পাহাড়ী -বাঙালি‘ সমস্যাটে জিইয়ে রাখা । রাষ্ট্রের এমন গোপনীয়তা রক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার Secret Memos of the Bangladesh Government ।
উপরে @ সবুজ পাহাড়ের রাজার জন্য যা দিতে পারি, পার্বত্য চট্রগ্রামের গণহত্যা । তর্কের কাটিরে অনেক তর্ক করা যেতে পারে । বাংলাদেশের সরকার বলে, মানুষ নয় মাটির যখন রাষ্ট্রের জন্য প্রধান তাহলে মাটির জন্য স্বাভাবিকভাবে রক্ত ঝড়বে । তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে সব পাহাড়িরা শান্তিবাহিনী ছিল না কিন্তু সকল সেটেলাররা পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রের কালোনীতির শিকার । তবুও আপনাকে ধন্যবাদ আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য । ফারুক ওয়াসিফ ভাইয়ের ফেবুকের একটা নোট, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম: পাহাড়িদের হয়ে কে কথা বলে? ।
গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুটি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উপরে সোনায়ন চাকমা যে কথাগুলো বলেছেন সেটা সম্ভবত সমস্ত পাহাড়ি ভাইদেরই অন্তরের কথা। তাদের এ অনুভাবের জন্য সম্মাননা জানাই। আর অনুতপ্ত হই নিজেদের অক্ষমতার জন্যও।
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
যে সমস্যাকে ‘পাহাড়ী-বাঙালী শত্রুতা’ হিসাবে দেখানো হয় বা হচ্ছে, সেটি তো একটি রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট জাতিগত আগ্রাসন বা সরাসরি রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত আগ্রাসন ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
পাহাড়ী আদিবাসীদের উপর চলমান রাষ্টীয় শোষণ পীড়ণ বন্ধ হোক। যেখানে রাস্ট্রই শোষণের হাতিয়ার হিসেবে পাহাড়ে বাঙালীদেরকে লেলিয়ে দিচ্ছে, সেখানে বিষয়টিকে “পাহাড়ী-বাঙালী শত্রুতা” আখ্যা একটি সত্যকে আড়াল এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিই মনে হচ্ছে।
“বাঙালীদের উপর পাহাড়ীদের নৃশংসতা যদি প্রতিরোধের(?) কাতারে পড়ে, তাহলে, ‘প্রতিরোধ’ শব্দটি পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে হবে।”
না, প্রতিরোধকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়নের বোধ হয় প্রয়োজন নেয়! যে চুক্তিতে রাষ্ট্র তাদের অধিকারের স্বপ্ন দেখিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, সে ঘুমতো এখনো ভাঙে নি, অত সহজে ভাঙার কথাও না! তাই রাষ্টীয় এই আগ্রাসন সহজে প্রতিরোধের মূখ দেখবে বলে মনে হয় না।
জাতিগত আগ্রাসনের রুপটি বোধ হয় খুব কমই চোখে পড়ে কেননা তা তো পাহাড়ী-বাঙালি সমস্যা হিসেবেই ভালো চলে! জমি দখল, ক্ষতের ফসল ও গবাদি পশু লুট তো মাঝে মাঝেই ঘটে, এই তো তিন চারদিন আগেও দিঘীনালাতে বাঙালি কর্তৃক এক আদিবাসী নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটল, তারো আগে ভেদভেদীতে বলিমিলে বা কাপ্তাই ও লংগদুতে কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা… আর এইসব ঘটনার প্রতিবাদ করলেই সাম্প্রদায়িক হামলা অনিবার্য। রাষ্টীয় পুলিশ-সেনারা যেহেতু জাতিগত বাঙালি, তাই তারা পাহাড়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয়, বরং তাদেরকে “পাহাড়ী-বাঙালি শত্রুতা” অনুযায়ী প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখে।
আমার কথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হলে খাগড়াছড়ির কমলছড়ি ইউনিয়নে একটু টু মেরে আসতে পারেন! নব্য বাঙালী বসতিগুলো কিভাবে পাহাড়ীদের জায়গাগুলো বেদখলের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে, তার কিছু খণ্ড চিত্র সেখানে পাবেন।
“পাহাড়ী-বাঙালী শত্রুতা” বলে রাষ্টীয় আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়া যাবে না।
যারা দূর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন জাতিগত সমস্যা হলে বলে “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান” দরকার তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন আপনার জায়গা জমি কেউ জোড় করে বেদখল করার পর তার সাথে কি আপনারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারবেন? এই ধরনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অর্থ কি এই নয় যে যা কিছু হারিয়েছ তাতে সন্তুষ্ট থাক! পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্ত জাতিগত সমস্যা তা অবশ্যই কৃত্রিমভাবে তৈরি ভূমি সমস্যা থেকেই। কেননা পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকের পাহাড়ি বাঙালীর যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তা আশির দশকের পর হঠাত্ কেন বদলে গেল? একজন মানুষ যখন তার জীবিকার উত্স হারায় সে সাথে হারায় তার জীবনের নিশ্চয়তাও তখন তার কাছে “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের” উপদেশ কেমন যে নিষ্ঠুর মনে হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে।
@সোনায়ন চাকমা,
পাহাড়ে সেনা-সেটেলার পাকিপনা নিপাত যাক! (Y)
সেপ্টেম্বার, ২০১২-এর ঘটনায় বাঙালীদের ভূমিকা দু:খজনক।
পাহাড়ী-বাঙালী শত্রুতা বন্ধ হোক।
বাংলাদেশের সবার মাঝে বাংলাদেশী পরিচয়বোধের চেতনা বিকশিত হোক।
পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসুক।
সেপ্টেম্বার, ২০১২-এর মারামারি বাঙালীরা শুরু করেছে (মিডিয়া তাই বলে), তবে, সবসময় যে বাঙালীই দোষী তা কিন্তু নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীদের উপর পাহাড়ীদের নৃশংসতাও কম নয়। বাঙালীদের উপর পাহাড়ীদের নৃশংসতা যদি প্রতিরোধের(?) কাতারে পড়ে, তাহলে, ‘প্রতিরোধ’ শব্দটি পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে হবে।
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক .. কিছুদিন ধরে আমি দেখছি পার্বত্য অঞ্চলের রাজাকে রাজাকার বলা হচ্ছে, এবং সেই প্ররোচিত ব্লগগুলো কোনো সংগঠক বা অর্থায়নকারী দ্বারা ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে ..
@পরমার্থ,
রাজাকারকে রাজাকার বলতে অসুবিধে কোথায়?
এক চাকমা রাজাকার তো আর পুরো চাকমা জাতিকে বুঝচ্ছে না। আমার দু’তিন জন পাহাড়ী বন্ধু আছে, যারা অন্যান্য অনেক বাঙালীর চেয়ে অনেক বেশি দেশপ্রেমিক।
@পরমার্থ, হাস্যকর যুক্তি, মনে হলো। অমি রহমান পিয়ালও টাকা খেয়ে ফেসবুকে এসব ছড়াচ্ছে, তা না?