চুম্বক অংশঃ আমাদের মূল গলদটা হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতির অনুসরণ। এই পদ্ধতি ক্লাশরুম পরিসরে ভাল কাজ করে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য আমাদের দেশের জন্য যে সূক্ষ্ম পরিমাপের প্রয়োজন তা এই পদ্ধতিতে নেই। লেটারগ্রেডের মাধ্যমে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মেধার সত্যিকারের মূল্যায়ন হচ্ছে না, আমরা এই সিস্টেমের মাধ্যমে তাদেরকে মেধাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি। তাই মূল সমাধান হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ এর বদলে পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং (Percentile Ranking) পদ্ধতি অনুসরণ করা। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে আত্মঘাতী। … এই লেখায় যত ধারনার উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলো লেখকের প্রকাশিতব্য বইতে যতদূর সম্ভব গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
১৯৯০ সাল। তখন আমি বুয়েটে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। একইসাথে বুয়েটের মাস্টার্সের ছাত্র। ঐ সময় আমার গবেষণার পথদ্রষ্টা, গাণিতিক বলবিদ্যায় গুরুত্বপুর্ন অবদানকারী, স্বনামধন্য গবেষক, ও আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডঃ সোহরাব আহমদ আমাকে বুয়েটের তৎকালীন ফাইনাল পরীক্ষা নির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করে ক্লাশ পরীক্ষার অন্তর্ভুক্তির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছিলেন। ক্লাশ পরীক্ষায় শতকরা বিশ ভাগ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছিল। এই নতুন পদ্ধতি শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সাল থেকে। আমরা ছিলাম এই পরীক্ষামূলক পদ্ধতির প্রথম ব্যাচ। এর ফল এমন ভাল হয়েছিল যে আমরা পূরকৌশলে ভর্তি হয়েছিলাম ১৮০ জন, কিন্তু চার বছর পর পাশ করেছিলাম ২০৮ জন। কিভাবে এমনটা হলো ! আমাদের আগের ব্যাচগুলোতে যে অগ্রজরা এক বা একাধিকবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন, তারা আমাদের সাথে পাশ করেছিলেন। এখানে পরীক্ষার মানের অবনয়ন করা হয় নি, এটা শুধু সারা বছর পড়াশুনা করতে বাধ্য হওয়ার সুফল। সারা বছর পড়াশুনার এই বাধ্যবাধকতার আশংকায় আমাদের ব্যাচের ছাত্ররা এই ক্লাশ পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের জন্য প্রচন্ড আন্দোলন করেছিল। আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মের বুয়েটের ছাত্রদের সৌভাগ্য যে আমাদের বিজ্ঞ শিক্ষকরা পক্ষের ও বিপক্ষের নানা যুক্তি বিবেচনা করে ক্লাশপরীক্ষা পদ্ধতি টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। যেহেতু ডঃ আহমদ বুয়েটের তৎকালীন সিনিয়র শিক্ষকদের শুধু একজনই ছিলেন না, ছিলেন বুয়েটের বড় প্রভাব বলয়ের কেন্দ্রের একজন, আমার ধারনা ছিল তিনি এই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তকদেরও একজন। কিন্তু উনি আমাকে বিস্মিত করে বললেন, তিনি প্রথমদিকে ক্লাশপরীক্ষার পক্ষে ছিলেন না। পরবর্তীতে গনতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একমত হয়েছিলেন। তিনি প্রথমে কেন এ পদ্ধতির পক্ষে ছিলেন না, তার ব্যাখ্যায় আমাকে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ কথামালায় বললেন, “দেখো, গো-দুগ্ধ আর গো-চোনা একসাথে রাখা ঠিক না।” এরও ব্যাখ্যায় বললেন, “বুয়েটের পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষার ফলাফল খাঁটি সোনার মতো জিনিষ। এখানে নকল তো দূরের কথা, নিকটে বসা ছাত্রের উত্তরপত্র দেখে লেখাও অসম্ভব। মূল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র দেওয়ার আগে কেউ নিজের স্মৃতি থেকেও উত্তরপত্রে কিছু লিখলে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। অথচ ক্লাশপরীক্ষায় ক্লাশের ছাত্রছাত্রীদের এত ঘন ঘন বসতে দিয়ে কি করে ক্লাশ পরীক্ষাগুলোকে সেমিস্টার শেষের পরীক্ষার মতো নির্ভেজাল রাখা সম্ভব?” উনার কাছে সেমিস্টার শেষের পরীক্ষাগুলো ছিলো গো-দুগ্ধের মতো “শ্বেত শুভ্র”। আর সম্ভাব্য দেখে লেখার সুযোগ পাওয়া ক্লাশপরীক্ষাগুলো হতে পারতো “গো-চোনা”, যার এক ফোঁটাই দুগ্ধের শুভ্রতা নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তবে বুয়েট বলেই হয়তো এযাত্রা কিছুটা বেঁচে গেছে। ছোটোখাটো ক্লাশপরীক্ষায় অসদুপায়ের দোষে ছাত্রছাত্রীদের বহিষ্কারের নজির আছে, আবার তা কঠোরতার জন্য বিতর্কিতও হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরেকটা সংকট মূহুর্তে অবতীর্ণ। মেডিকেল কলেজসমূহের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখন নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে মেডিকেল কলেজসমূহের ভর্তি পরীক্ষা বজায় থাকবে, নাকি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হবে। কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি রাস্তায় নেমেছে আন্দোলন করতে। পুলিশ নেমেছে তাদের ঠেকাতে। লাঠিচার্জ পর্যন্ত হয়েছে। অনেকে আবার রাজনীতির ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছেন। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাকে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সর্বশেষ আদালতে কর্তৃপক্ষ এ বছরের জন্য ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন, কিন্তু আগামি বছরগুলোতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল এর ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু মেডিকেলই নয়, কৃষি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে ভর্তি করতে হবে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে।
আমাদের সীমাবদ্ধ সম্পদের দেশে ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগও অপ্রতুল। প্রায় দশ লক্ষ ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করে। তাদের মধ্যে মাত্র প্রায় ৩০,০০০ জন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে) ভর্তি হতে পারে। এর মানে হলো প্রতি একশ জনে মাত্র তিনজন মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পায়। অনুরূপভাবে বুয়েটে প্রায় ৮০০ জন (১০০০ জনে প্রায় ১ জন), প্রকৌশলে প্রায় ২০০০ জন (১০০০ জনে প্রায় ২ জনে), চিকিৎসা বিষয়ে প্রায় ২৫০০ জন (১০০০ জনে প্রায় ২ জন) শিক্ষার সুযোগ পায়। তবে যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারে, তারা প্রায় বিনা খরচে অর্থাৎ সরকারি খরচে বা জনগনের পয়সায় পড়ার সুযোগ পায়। উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করলে এই সুযোগ শুধু ভর্তির সুযোগ নয়, চার বছরের পড়ার জন্য বেতনের সমান স্কলারশীপসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ। রাজত্ব ও রাজকন্যা পাবার মতো এই সুযোগ যারা পায়, তারা আমাদের জাতির আগামীদিনের কর্ণধার। জাতি হিসাবে আমাদের উচিত হবে যোগ্যদেরকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এই সুযোগ দান করা, যাতে যোগ্যতমরাই জাতির কর্ণধার হতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে যোগ্যতা নির্ধারণের তিনটা পথ আছে। এক, শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বাছাই; দুই, শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষার ভিত্তিতে বাছাই; তিন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের উপর যুক্তিপূর্ণ গুরুত্ব আরোপ করে বাছাই।
শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য বাছাই করার ইচ্ছেটা আপাতদৃষ্টিতে লোভনীয়। কারন (১) এতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তিযুদ্ধের জন্য আর পরিশ্রম করতে হয় না, (২) মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আর পরীক্ষা নিবার ঝামেলা পোহাতে হয় না, (৩) এতে ছাত্রছাত্রীদের অতীত শিক্ষাজীবনের পরিশ্রমের প্রতিফলন থাকে, এবং (৪) ভর্তি বানিজ্যের দৌরাত্ম সহ্য করতে হয় না। এখানে বর্ণিত এই চারটাই খোড়া যুক্তি, যা পরে ব্যাখ্যা করা হবে।
আপাতত আমি এখানে দেখাবো কোন কোন মূল কারনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল বা জিপিএ (GPA, Grade Point Average) কেন ভর্তির মানদন্ড হতে পারে না। জিপিএ তে কতগুলো পদ্ধতিগত অপ্রত্যাশিত পক্ষপাতিত্ব (Bias) আছে, যার জন্য এই পদ্ধতি সবার জন্য সমান সুযোগের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় না, যা একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিপন্থী।
১। প্রশ্নপত্রের অসম সহজতা-কঠিনতা — মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের যেকোন বিষয়ের উপর আটটা শিক্ষাবোর্ডের আট সেট প্রশ্নপত্রের উপর ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। এতে করে কোন বোর্ডে প্রশ্ন কঠিন হয়, কোন বোর্ডে প্রশ্ন সহজ হয়। এই কঠিন-সহজের উপর ছাত্রছাত্রীদের কোন হাত নেই। হাত আছে প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী পরীক্ষকের। তাই জিপিএ তে ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও পরিশ্রমের ফসলের মধ্যে ভাগ্যের প্রভাব ঢুকে পরে। তারপর বিভিন্ন ট্র্যাকে (সাধারন, মাদ্রাসা, ইংরেজি, ও কারিগরি মাধ্যমে) শিক্ষাব্যবস্থার ভিন্নতার ফলতো আছেই।
২। পরীক্ষকের নৈর্ব্যক্তিকহীনতা — একজন পরীক্ষক যদি গড়ে এক হাজার উত্তরপত্র পরীক্ষা করে নম্বর প্রদান করেন, প্রায় দশ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর উত্তরপত্র দেখেন প্রায় এক হাজার পরীক্ষক। এই এক হাজার পরীক্ষককে যদি ধরেও নেই যে সর্বদা সৎভাবে নৈতিকার সাথে উত্তরপত্র দেখেন ও নম্বর দেন, তবুও একটা বিষয় তাঁরা অতিক্রম করতে পারেন না, তা হলো তাঁরা কোন জাতীয় মানদন্ডে নয় তাঁদের নিজস্ব মানদন্ডে নম্বর প্রদান করেন। কেউ সহজে নম্বর দেন, কেউ নম্বর দিতে কার্পণ্য করেন। একই উত্তরপত্র এক হাজার জন পরীক্ষকের কাছে পাঠালে এক হাজার জন এক হাজারটা নম্বর দিবেন, যা তাঁদের কাছে ন্যায়সংগত মনে হবে। সেই নম্বরের পরিসংখ্যান নিয়ে আমরা বিপদে পরে যাবো। গড়ে সে উত্তরপত্রের প্রাপ্ত নম্বর গড়ে ৮০ হলেও কেউ দিবেন ৮৫, কেউ ৮৪, কেউবা ৮৩, ৮২, ৮১, ৮০, ৭৯, ৭৮, ৭৭, ৭৬, ইত্যাদি। তাই জিপিএ তে ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও পরিশ্রমের ফসলের মধ্যে ভাগ্যের প্রভাব আবারো ঢুকে পড়বে। তারপর কোন কোন মাধ্যমের শিক্ষকদের অসদভাবে ইচ্ছাকৃত অতিরিক্ত নম্বর দেবার ঝুকি তো রয়েই গেছে।
৩। গ্রেডিং পদ্ধতির পরিমাপের স্থূলতা ও ন্যায্যতার অভাব — পরীক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের নম্বর দেন শূন্য থাকে একশ আর মধ্যে। এখানে সম্ভাব্য ধাপ হল ১০১ টা। এই ১০১ টা ধাপ থেকে লেটার গ্রেডিং এ আনার সময় তা হয়ে যায় মাত্র ছয়টা ধাপ (A+, A, A-, B, C, F)। তার মানে আমরা সূক্ষ্মতা থেকে স্থূলতায় প্রবেশ করি। এই স্থূলতা পাশের মানদন্ডের জন্য যথেষ্ট হতে পারে, কিন্তু দেশের ভবিষ্যত কাদের হাতে তুলে দিব তার মানদন্ড নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। এই সূক্ষ্মমাপের নম্বর থেকে স্থূলমাপের লেটারগ্রেডিং এ আনার সময় আরেকটা ভয়ংকর রকম অবিচার সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে পরে। কেউ যদি ১০০ তে ৯৯ পায়, আর যদি কেউ ৮১ পায়, দুজনেই A+ এর আড়ালে সমান হয়ে যায়। আর কেউ যদি ৭৯ পায়, সে ভর্তির জন্য অপাংক্তেয় হয়ে যায়, তখন ঐ ছাত্রের জন্য দেয়ালে মাথা ঠোকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। বলতে হয় সবই ভাগ্যের পরিহাস।
৪। নকলের প্রভাব — সারা বাংলাদেশে এক হাজারের মতো পরীক্ষাকেন্দ্র থাকে। ছাত্রদের নকলের প্রবনতা আছে, আছে দেখে লেখার প্রবনতা। তা ছাড়া শিক্ষকরা নিজের বা স্কুলের সাফল্য দেখাতে কেউ কেউ নীতি বিসর্জন দিয়ে নকল সরবরাহ করে থাকেন। যদিও আগের তুলনায় নকলের প্রভাব অনেকটা কমেছে, তবুও প্রতি বছর শত শত ছাত্র ও শিক্ষককে বহিষ্কৃত হতে দেখা যায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নির্ধারকরা কি হলপ করে বলতে পারবেন যে বাংলাদেশে সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও কোন অসদূপায় অবলম্বন ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে? এক্ষেত্রে একজন ছাত্র বা ছাত্রী সৎ হলে অন্যদের অসদূপায়ের জন্য সমান সুযোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
এখানে দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল (জিপিএ) প্রশ্নপত্রের সহজতা-কঠিনতা, পরীক্ষকের নৈর্ব্যক্তিকহীনতা, গ্রেডিংপদ্ধতির পরিমাপের স্থূলতা, আর অসদূপায় অবলম্বনের সম্ভবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সবার জন্য সমান সুযোগের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও ডঃ সোহরাব আহমদের ভাষায় বলতে হয়, জিপিএ “গো-চোনায়” পর্যবসিত হচ্ছে।
তাছাড়া আমাদের জিপিএ পদ্ধতিতে কোন মান (Standard) প্রতিষ্ঠিত হয় নি। যেমন ২০০২ সালে জিপিএ ৪.৫ পাওয়া আর ২০১২ সালে জিপিএ ৪.৫ পাওয়া এক কথা নয়। আবার ২০১২ সালের ঢাকা বোর্ডের জিপিএ ৪.৫ আর কুমিল্লা বোর্ডের জিপিএ ৪.৫ এর মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। দেশের মধ্যেই আমরা জিপিএ এর মান তুলনা করতে পারি না, আন্তর্জাতিকভাবে আমরা মান তুলনা করবো কিভাবে? জিপিএ পদ্ধতির পরিমাপ বিজ্ঞান নির্ভর নয়। আন্তর্জাতিকতার নামে এই পদ্ধতি ধরে রাখার কোন মানে নেই।
তারপর জিপিএ কে ভর্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য বড় বাজি রাখা পরীক্ষা (High Stake Exam)। আর তাহলে শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নকল করবে না, শিক্ষকরাও নকল সরবরাহ করবে। অভিভাবকরাও ছাত্রছাত্রীদের অসদূপায় অবলম্বনে অনুপ্রানিত করবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়োজিত ব্যক্তিরা, বিশেষত রাজনীতিকরা “জনপ্রিয়তা” অর্জনের জন্য ও অন্যান্যরা “আঞ্চলিক উন্নতির স্বার্থে” নকল করার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বোর্ডের ছোটো-খাটো অফিসাররা অর্থের বিনিময়ে নম্বর জালিয়াতিতে মগ্ন হবে। বোর্ডের সৎ অফিসাররা প্রশাসনের অসৎ কর্তাব্যক্তিদের আর প্রভাবশালী সরকারী দলের রাজনীতিকদের চাপে ফলাফল পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। অপেক্ষাকৃত নকলমুক্ত পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গত কয়েক বছরের অর্জন হাতছাড়া হয়ে যাবে। শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা হবে সোনার পাথরবাটি।
দ্বিতীয় পথ হিসাবে ভর্তি পরীক্ষাই যদি বাছাই করার জন্য একমাত্র মানদন্ড হয় তাহলে জিপিএ তে জড়িয়ে থাকা অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিজনিত পক্ষপাতিত্ব দূর হবে, দূর হবে ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও পরিশ্রম বহির্ভূত তথাকথিত ভাগ্যের প্রভাব। প্রতিষ্ঠিত হবে সমান সুযোগের অধিকার। ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে যে কয়েকটি খোড়া যুক্তি দাঁড় করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জিপিএ কে মানদন্ড হিসাবে নেওয়া লোভনীয় মনে হয়েছিল, সেই যুক্তিগুলোকে এখন পুনঃপরীক্ষা করা যাক।
১। ছাত্রছাত্রীদের ভর্তিযুদ্ধ ও পরিশ্রম — উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের বুঝতে বাকি থাকে না যে যারা মানসম্মত মেডিক্যাল কলেজ, কৃষি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে, প্রাথমিক ভাবে জীবনযুদ্ধে জয় তাদেরই। অনেক পরিশ্রম করেও যদি ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে হয় তার জন্য তারা প্রস্তুত, প্রস্তুত তাদের অভিভাবকগণও। ভর্তিযুদ্ধের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে তারা রাজি; তারা শুধু সুযোগের অপেক্ষায়। আর উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রতিযোগিতা খুব ভালো জিনিস।
২। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেবার ঝামেলা — মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এটা গতানুগতিক। এখানে বাড়তি ঝামেলা নেই। বরং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বাধীনতা অনুযায়ী স্ব-স্ব মানদন্ডে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে উৎসাহ সহকারে।
৩। শিক্ষাজীবনের নিকট অতীতের ফল — শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বাছাই হলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় অতীত পরীক্ষার ফলাফল উপেক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু জ্ঞান যেহেতু ক্রমাগত অর্জনের ফসল, ভর্তি পরীক্ষায় নিকট অতীতের অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরে, প্রভাব পরে না শুধু অর্জিত সনদের। এই অর্জিত সনদের গুরুত্ব দেবার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি আছে। কেউ যদি অতীতে অসুস্থতার জন্য কোন পরীক্ষায় ভাল ফল করতে না পারে, তার প্রভাব কি ঐ ছাত্রকে বা ছাত্রীকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে? অনুরূপভাবে ভর্তি পরীক্ষার দিন কেউ অসুস্থ্ হয়ে গেলেও তার জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসতে পারে।
৪। কোচিং সেন্টারের ভর্তি বানিজ্য — কোচিং সেন্টারগুলো যদি তাদের গাইড বই আর টিউটরিং এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের অপেক্ষাকৃত যোগ্য করে তোলে, তাতে ক্ষতি কি? আমার অভিজ্ঞতা মতে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বইগুলো যেভাবে আত্মস্থ করে, তা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভাল ভিত্তি গড়ে দেয়। পরীক্ষার প্রভাবে ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতর হওয়ার চেষ্টা দেশের জন্য মঙ্গল।
যদি কেউ বলেন যে “কোচিং সেন্টার বা গৃহশিক্ষকতা শিক্ষা-উন্নয়নের পক্ষে বাঁধা” আমি বলবো কথাটা ভুল। সঠিক কথাটা হবে “কোচিং সেন্টার বা গৃহশিক্ষকতা শিক্ষা-উন্নয়নের পক্ষে বাঁধা যদি স্কুল বা কলেজ শিক্ষক কোচিং সেন্টারে বা গৃহশিক্ষকতায় যক্ত হন”। এতে মাননীয় শিক্ষকেরা ক্লাশে দায়িত্ব অবহেলা করে অর্থের লোভে ছাত্রছাত্রীদের কোচিং এ বাধ্য করেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা যদি উচ্চমাধ্যমিকের পরে অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং কোচিং করে নিজেকে অধিকতর যোগ্য করে তোলে, তাতে ক্ষতি কি?
যদি কেউ বলেন যে “কোচিং সেন্টার ও ভর্তির গাইড বইগুলো শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির জন্য অগ্রগামী করে তোলে” আমি বলবো কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। ভর্তির গাইড বইগুলোর মাধ্যমেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরাও ভর্তির পদ্ধতির কথা জানতে পারে। এমন কি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়াশুনা করেও কয়েক মাসের জন্য ঢাকা এসে ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে।
যদি কেউ বলেন যে “কোচিং সেন্টার ও ভর্তির গাইড বইগুলোতে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর প্রাধান্য আছে।” কথা সত্য। কিন্তু এগুলো বন্ধ করাটাই সমাধান নয়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরানো কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র বিনামূল্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অথবা স্বল্পমূল্যে ডাকযোগে দ্রুত সরবরাহ করতে হবে। ঐ বিশেষ গোষ্ঠীর প্রাধান্য খর্ব করার জন্য অধিকতর মানসম্মত প্রতিদ্বন্দ্বী গাইড প্রনয়ন করে বিনামূল্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরবরাহ করতে পারে, অথবা স্বল্পমূল্যে ডাকযোগে দ্রুত সরবরাহ করতে পারে।
যদি কেউ বলেন যে “অন্য দেশে কোচিং সেন্টার এবং ভর্তির গাইড নেই।” আমি বলবো কথাটা ভুল। দক্ষিণপুর্ব-, দক্ষিণ-, এবং পূর্ব-এশিয়া কোচিং সেন্টারে ঠাসা। খোদ আমেরিকাতে আছে কোচিং বাণিজ্য।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পদ্ধতিগত অপ্রত্যাশিত পক্ষপাতদুষ্ট নয়। এখানে প্রশ্নপত্র যত কঠিন বা সহজই হোক, সবাই যেহেতু একই প্রশ্নপত্রের উত্তর লেখে এবং ফলাফল যেহেতু তুলনামূলকভাবে (Relative Ranking) বিচার্য হয়, প্রশ্নপত্র পদ্ধতিগত পক্ষপাত সৃষ্টি করতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু নৈর্ব্যক্তিক হয়, এখানে পরীক্ষকের নৈর্ব্যক্তিকহীনতার দোষ ফলাফলে আসতে পারে না। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, পুরোপরি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র ছাত্রছাত্রীর মান বিচারে যথেষ্ট কি না। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুরোপুরি নৈর্ব্যক্তিক নয়। আগে এখানে ১৮ টা করে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিজ্ঞান ও অংকের প্রশ্ন থাকতো, আর ৬ টা ইংরেজী প্রশ্ন থাকতো। মোট ৬০ টা প্রশ্নের উত্তর একটা বিশাল টেবিলে বসে প্রায় ৬০ জন শিক্ষক সব উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতেন। বর্তমানে যেহেতু কিছু প্রশ্ন নৈর্ব্যক্তিক হয়ে গেছে, পরীক্ষকের সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু পদ্ধতি একই আছে। একজন শিক্ষক সব উত্তরপত্রের একটা মাত্র প্রশ্নের উত্তরের মূল্যায়ন করেন। সেজন্য প্রশ্নপত্র নৈর্ব্যক্তিক না হলেও, ফলাফল নৈর্ব্যক্তিকহীনতার দোষে দুষ্ট নয়। যেহেতু ফলাফল সূক্ষ্মভাবে নম্বরের মাধমে দেওয়া হয় ও লেটারগ্রেডে রূপান্তর করা হয় না, ফলাফল স্থূলতার দোষে দুষ্ট নয়। ভর্তি পরীক্ষা সাধারনত অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিতভাবে নেওয়া হয়। তাই নকল বা অসদূপায় থেকে মোটামুটি মুক্ত থাকা যায়। তবে বিগত কয়েক বছর যাবত মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের লোভে সংশ্লিষ্ট লোকজন পরীক্ষার আগেই বের করে দেওয়ার কারনে অসদভাবে ফলাফলে প্রভাব পরে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অনেক সতর্ক হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অসৎ ব্যক্তিদের বিশাল শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মাথা ব্যথার উপশম করতে যেমন মাথা কেটে ফেলার দরকার নেই, তেমনি অসদূপায় দূর করতে ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়ার কোন মানে হয় না।
তৃতীয় পথ হিসাবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের উপর উপযুক্ত গুরুত্ব আরোপ করে বাছাই এর মানদন্ড নিরূপন করা যায়। এতে অবশ্য জিপিএ এর পদ্ধতিগত ত্রুটির প্রভাব ভর্তি পরীক্ষার মানদন্ডে ঢুকে যাবে। এর জন্য আমাদের পদ্ধতিগত ত্রুটিমুক্ত নতুন গ্রেডিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
আমাদের মূল গলদটা হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতির অনুসরণ। এ পদ্ধতি ক্লাশরুম পরিসরে ভাল কাজ করে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য আমাদের যে সূক্ষ্ম পরিমাপের প্রয়োজন তা এই পদ্ধতিতে নেই। তাই মূল সমাধান হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ এর বদলে পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং (Percentile Ranking) পদ্ধতি অনুসরণ করা। এতে গ্রেডিং এ সূক্ষ্মতা ফিরে আসবে ও মেধার সঠিক বিচার সম্ভব হবে। জাতীয়ভাবে বুদ্ধি বিকাশে প্রতিযোগীতা শুরু হবে। তারপর সব বোর্ডে একই প্রশ্নপত্র ব্যবহার করলে সহজতা-কঠিনতা পক্ষপাতিত্ব দোষ দূর হবে। পরীক্ষার ফলাফলকে পরীক্ষকের সামান্য অতিরিক্ত পরিশ্রম আর গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে নৈর্ব্যক্তিক (স্ব-আরোপিত পক্ষপাতহীন) করা সম্ভব। এই পক্ষপাতহীন সূক্ষ্ম পরিমাপের পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি ছাত্রদের গ্রেডিং ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে নানা কাজে ব্যবহার করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ একটা স্কুলের ফলাফলের সাথে অন্য স্কুলের তুলনার মাধ্যমে স্কুলের র্যাঙ্কিং, একটা অঞ্চলের (যেমন উপজেলা) ফলাফলের সাথে অন্য অঞ্চলের তুলনা, কোন বিশেষ গ্রুপের (যেমন কোন পশ্চাদপদ গোষ্ঠী) শিক্ষায় ক্রম উন্নয়ন, জাতীয় মান প্রতিষ্ঠা, জাতীয় মানের ক্রম-উন্নয়ন, জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিমাপ (Success Matrix), ইত্যাদি। আমাদের দেশে পরীক্ষকগণ যে পরিশ্রম আর আন্তরিক চেষ্টায় ছাত্রছাত্রীদের বিচার করেন, আর প্রতি বছর মূল্যায়নের যে বিশাল ডাটাবেস তৈরি হয় তা আমাদের বোঝা নয়, বরং আমাদের অমূল্য সম্পদ। এর যথাযোগ্য ব্যবহার আমাদের নিশ্চিত করা উচিত।
একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং হলো এমন একটা সংখ্যা যা দ্বারা বুঝায় সে শতকরা কতভাগ ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভালো। উদাহরণস্বরূপ একটা ক্লাশে যদি একশ জন ছাত্রছাত্রী থাকে, আর যদি কারো মেধাক্রম অনুসারে র্যাঙ্ক হয় ২, সে ৯৮ জন ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভাল। তাহলে তার পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং হলো ৯৮। ক্লাশে যদি ৯,৫০,০০০ জন ছাত্রছাত্রী থাকে, আর কারো মেধাক্রম অনুসারে র্যাঙ্ক হয় ১,৫০,০০০, সে (৯,৫০,০০০- ১,৫০,০০০) অর্থাৎ ৮,০০,০০০ জন ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভাল। তাহলে তার পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং হলো (৮,০০,০০০/ ৯,৫০,০০০) X ১০০ = ৮৪.২১। কখনও কখনও “শতকরা কতভাগ ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভালো” এর বদলে “শতকরা কতভাগ ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভালো বা সমান” কথাটা ব্যবহার করা হয়, তখন গাণিতিক ফর্মুলায় একটু রদবদল ঘটে। তবে ধারণাটা একই রকম থাকে। অনেক সময় অনেক ছাত্রছাত্রীর র্যাঙ্ক একই হয়, তখনও গাণিতিক ফর্মুলায় আরেকটু রদবদল ঘটে। আর কতজন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একজনের অবস্থান তুলনা করা হলো তার উপর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং একটু হেরফের হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে যত ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা দিচ্ছে সবাইকে যদি একটা ব্যাচ ধরা হয়, তাহলে একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং এর মানকে বলা যাবে “২০১২ ব্যাচ পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং”। আর ২০১২ সাল অবধি যত ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা দিচ্ছে সবাইকে যদি একটা ব্যাচ ধরা হয়, তাহলে একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং এর মানকে বলা যাবে “২০১২ জাতীয় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং”। “ব্যাচ পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং” হিসাব করা সহজ। “জাতীয় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং” হিসাব করা সহজ নয়। তবে এই দুটো মান প্রায় কাছাকাছি থাকবে।
আমার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের জন্য একটা আদর্শ মূল্যায়ন পদ্ধতির নিম্নবর্নিত গুনাবলী থাকা উচিত। (১) তুলনা করার ক্ষমতা (Comparability) – বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত গ্রেড তুলনা করে যেন সহজে ভালোকে ভাল বলা যায়। (২) সূক্ষ্মতা ও ন্যায্যতা (Accuracy and fairness) – মূল্যায়ন পদ্ধতি যেন ছাত্রছাত্রীদের সূক্ষ্ম ও ন্যায়ভাবে বিচার করতে পারে। (৩) পদ্ধতিজনিত পক্ষপাতিত্বহীন (Unbiased)। (৪) প্রতিযোগিতায় উৎসাহিত করা (Encouraging Competition)। (৫) কার্যোপযোগী (Functional) — মূল্যায়ন পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের পাশ-ফেল নির্ধারণ ছাড়াও আর যে যে কাজে ব্যবহার করা হবে তার জন্য যেন উপযোগী হয়। যেমন ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারার সুযোগের অগ্রাধিকার নির্ধারণে, অথবা ভর্তির সরাসরি মানদন্ড হিসাবে সবাই সমান গ্রেড পেলে তা উপযোগী হতে পারে না। (৬) কর্তৃপক্ষের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য (Easily Adaptable to the Authority) – সহজে আরোপযোগ্য হতে হবে। (৭) জাতীয়ভাবে মান সম্মত (Nationally Standardizable)। (৮) সম্ভব হলে কোন আন্তর্জাতিক মানের সাথে তুলনীয় (Internationally Comparable)।
আমরা যাদেরকে অনুসরণ করে লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতির চালু করেছি, তারা আসলে ভর্তি পরীক্ষা বা যে কোন জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি অনুসরণ করে। যেমন, SAT, GRE, GMAT, MCAT সব পরীক্ষায় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ক্লাশরুম লেভেলের পরীক্ষার জন্য লেটারগ্রেড এবং জিপিএ ব্যবহার করা হয়। আসল উদ্দেশ্যটা হল সবচেয়ে ভাল আর সবচেয়ে খারাপ ছাত্র বা ছাত্রীর প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে অঙ্গুলি প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা। কেউ খুব ভাল হলেও তাকে বলা যে তুমি একা নও, তোমার গ্রুপে অনেকেই আছে তোমার মতো সম-মেধার । এতে ভাল ছাত্ররা অনুপ্রাণিত হয়, কিন্তু অহংকারে গা ভাসায় না। কেউ খুব খারাপ হলেও তাকে বলা যে, তুমি একা নও তোমার গ্রুপে আর অনেকে আছে যারা কিছুটা পশ্চাদপদ । এতে সে বিষণ্ণতায় ভোগে না। অথচ আমাদের দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে ঠিক উল্টোটা — ক্লাশরুম লেভেলের পরীক্ষায় ক্লাশ র্যাঙ্কিং আর জাতীয়ভাবে লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতি।
অগ্রসর দেশগুলোর তুলনায় জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোতে আমাদের দেশে আরও সূক্ষ্মভাবে গ্রেডিং করা উচিত। তার কারন আমাদের স্বল্প সম্পদের মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শিক্ষা সুযোগ বণ্টনে জালিয়াতি ও অবিচার ঠেকাতে হবে। সম্পদের ও সুযোগের প্রাচুর্য থাকলে এতো সূক্ষ্মভাবে পরিমাপের দরকার হতো না।
সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ জিপিএ এর ভিত্তিতে ভর্তির জন্য যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দেন, তাতে প্রায় সব ছাত্রের জিপিএ হবে পাঁচ ও সমান। তারপর সমান জিপিএ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের কিভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা নির্ধারণের (Tie Breaking) নিয়মাবলী আছে। কিন্তু সেগুলোর সবই হলো থোর-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোর। এতে জিপিএ পাঁচ পাওয়া ছাত্রদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে হবে প্রায় লটারির মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত নয়। এটা শুধু কর্তৃপক্ষের গা বাঁচানোর জন্য কোনমতে চালিয়ে যাওয়ার (Ad-hoc) পদ্ধতি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নীতিনির্ধারনী সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্নধারদের ভবিষ্যৎ।
এখানে সমস্যাটির আশু ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসাবে নিম্নলিখিত সুপারিশ করা হলো।
১। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসাবে গ্রেডিং সিস্টেমে রদবদল এনে পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। তবে সিদ্ধান্ত আজ নিলেও এটা প্রয়োগ করতে হবে যারা নবম বা দশম শ্রেনীতে পড়ে তাদেরকে দিয়ে। পরে তা ক্রমান্বয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আরোপ করতে হবে।
২। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি চালু করলেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যাল কলেজসমূহ চাইলে ভর্তি পরীক্ষার সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের অল্প গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল থেকে সিস্টেমজনিত পক্ষপাত ত্রুটি দূর করতে হবে। অধিকন্তু পক্ষপাত ত্রুটি দূর করার জন্য মৌখিক পরীক্ষা ভর্তি পরীক্ষার অংশ হতে পারবে না। যত বেশী ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যায় তত ভাল। পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং যেহেতু সূক্ষ্ম, এটা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিবার জন্য ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয় অনেকটা সহজ ও নৈতিকতার সাথে করা যাবে।
৩। স্বল্পমেয়াদী সমাধান হিসাবে, যতদিন না পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি চালু হয়, ততদিন ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই চালু রাখতে হবে। জিপিএ পদ্ধতির পরিমাপ যেহেতু সূক্ষ্ম নয়, ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিবার জন্য ছাত্রছাত্রীদের অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয় সামাজিক ন্যায়বিচারের সাথে করতে হবে। অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য শুধুমাত্র জিপিএ র ভিত্তিতে না করে জিপিএ এবং প্রকৃত প্রাপ্ত নম্বর উভয়ের ভিত্তিতে করতে হবে। প্রাপ্ত নম্বর অবশ্যই বোর্ডগুলোর কাছে আছে। এই নম্বরের সিস্টেমজনিত পক্ষপাতিত্ব আছে। সেটা আপাতত কয়েক বছর উপেক্ষা করা যায়।
৪। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে ও হয়রানি লাঘবের উদ্দেশ্যে সব মেডিক্যাল কলেজের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পুঞ্জিভূতভাবে বা যৌথভাবে (Joint Entrance Exam) নিতে হবে। যেমন সরকারি ও বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজের জন্য একটা ভর্তি পরীক্ষা হবে। সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট ভিন্ন) জন্য একটা ভর্তি পরীক্ষা হবে। BIT কালীন সময়ে তাদের একটা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ছিল যেখানে ছাত্রছাত্রীরা সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ভিত্তিক অপশন দিতে পারতো, যা ছিল সুন্দর একটা ব্যবস্থা। সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা ভর্তি পরীক্ষা হবে। অনুরূপভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলা, বিজ্ঞান, বানিজ্য, সমাজ, ও বিভাগ পরিবর্তনের জন্য পৃথক পৃথক কয়েকটি যৌথ ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। প্রতি ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ও তাদের পছন্দ অনুযায়ী তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবে তা নির্ধারণ করতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও অনুরূপ একটা সমন্বিত ব্যবস্থা থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা ঠিক করবেন কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগ কোন পুঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে । প্রতিটা ছাত্র বা ছাত্রী কয়েকটা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পুঞ্জির জন্য কয়েকটা ভর্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ পেলে তারা তাদের মেধার প্রমাণ দেবার একাধিক সুযোগ পাবে। অন্যথায় তাদের কেউ দৈবক্রমে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না পারলে, বা দৈবক্রমে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল না করলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হবে না।
৫। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি ও বিভাগ পরিবর্তন প্রায় “রুদ্ধদ্বার” নীতিতে চলছে। কেউ ভুল করে একটা বিভাগে ভর্তি হলে পরে তার পক্ষে আর বিভাগ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কেউ একবছর ভর্তি হতে না পারলে জীবনে আর দ্বিতীয়বার সুযোগ পায় না। লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতির অনুসরণের পর থেকে দ্বিতীয়বার সুযোগের অবকাশ একেবারে শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। হয়তো জালিয়াতি ঠেকাতে বিভাগ পরিবর্তনের নীতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, কিন্তু আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম যেন দ্বিতীয় এমন কি তৃতীয় সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার নির্ধারণের বাধা দূর করতে পারে।
৬। ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলকভাবে বিচারের ব্যবস্থা করে স্কুল, কলেজ, ও শিক্ষকদের র্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে কৃতিত্ব নির্ধারণ করে তাঁদের মূল্যায়ন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ উচ্চমাধ্যমিক স্কুল বা কলেজের কৃতিত্ব হল, ওই কলেজে পড়া সব ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ব্যবধান। অগ্রগামী স্কুল, কলেজ, ও শিক্ষকদের পুরস্কৃত করতে হবে। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে সুস্থ প্রতিযোগীতা তৈরী হবে ও বাংলাদেশের জনসম্পদ গড়ে তোলা সহজ হবে।
৭। সকল অঞ্চলকে (যেমন উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকা) তুলনামূলক বিচারে এনে র্যাঙ্কিং করে প্রতিটা অঞ্চলের অগ্রগন্যতা ও পশ্চাদপদতা নির্ধারণ করে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে হবে। পশ্চাদপদ স্কুল বা কলেজের ছাত্রদের পশ্চাদপদতার মাত্রা অনুযায়ী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বোনাস পয়েন্ট দিয়ে শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা দূর করা যায়। পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে এই পশ্চাদপদতা যেমন অনেক সুক্ষ্মভাবে নির্ধারণ করা যায়, তেমনি বোনাস পয়েন্টের ফর্মুলা খুব ভালভাবে দেওয়া যায়।
৮। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী প্রত্যেক পরীক্ষককে তাঁর মূল্যায়নের মানদন্ড অনুযায়ী প্রতি বছর তাঁর দয়ালুতা বা কার্পন্যের পরিমাপ করতে হবে। প্রতি বছর তাঁদেরকে ট্রেইনিং দিতে হবে যাতে তাঁদের মূল্যায়নের মানদন্ড যতদূর সম্ভব কাছাকাছি চলে আসে। যথাযথ মূল্যায়নকারী পরীক্ষকদের পুরস্কৃত করতে হবে।
৯। বছর বছর প্রতিটা অঞ্চলের শিক্ষায় ক্রম-উন্নয়ন বা ক্রম-অবনয়নের পরিমাপ করতে হবে, এবং এই পরিমাপ শিক্ষা-ব্যবস্থাপনায় ও নীতি নির্ধারনীতে ব্যবহার করতে হবে।
১০। গবেষণার ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার মান প্রতিষ্ঠা ও মানের ক্রমান্বয় উন্নতির বা অবনতির পরিমাপ করতে হবে।
এই লেখায় যত ধারনার উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলো লেখকের প্রকাশিতব্য বইতে[1] যতদূর সম্ভব গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ধারনাটা গাণিতিক হলে তার গাণিতিক সংজ্ঞা দেওয়া আছে, আছে উদাহরণসহ বিশ্লেষণ। ধারণাটা পদ্ধতি (Algorithm) হলে, তা ধাপে ধাপে বর্ননা করা আছে।
লেখকঃ ডঃ সুকমল মোদক একজন পুরকৌশলী, বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষক, ভুমিকম্পবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায়োগিক বলবিদ্যায় বিশেষত যে কোন স্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে নিউটনের গতিসূত্রের সমাধানের উপর ডক্টরেট, বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কেলে শহরে কর্মরত।
রেফারেন্সঃ
1. Sukomal Modak, “Percentile Ranking Based Grading System and Performance Measures – A Viable Option for the Secondary and Higher Secondary Education in Bangladesh,” a book to be published soon.
2. Sukomal Modak, “Ranking Schools, Colleges and Teachers Based on Distribution of Students’ Performance,” presented in the Conference “Ideas and Innovations for the Development of Bangladesh: The Next Decade” held at Harvard University, October 2009.
3. Sukomal Modak, “Quantifying Achievement in Education in the Perspective of SSC and HSC Level Examination Systems in Bangladesh,” presented in the “Bangladesh in the 21st Century Conference” held at Harvard University, June 2008.
4. Sukomal Modak, “Percentile Ranking Based Grading System and Performance Measures – A Viable Option for the Secondary and Higher Secondary Education in Bangladesh” presented at a seminar at BRAC University which was attended by high officials from all eight boards of education, the Joint Secretary of Education of GOB, and many specialists in Education in Bangladesh, February 2008.
5. Sukomal Modak, “Percentile Ranking Based Grading System and Performance Measures – A Viable Option for the Secondary and Higher Secondary Education in Bangladesh” presented at a seminar at the Teachers’ Training College, Dhaka, Bangladesh, February 2008.
6. Sukomal Modak, “In search of an objective measure of academic achievements of individual students in the perspective of SSC and HSC level examinations in Bangladesh” presented at a seminar at BUET, February 2008.
এই লেখাটির কিছুটা নবায়ন করা হয়েছে । বিশেষত “পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং” এর সংজ্ঞা যোগ করা হয়েছে, যোগ করা হয়েছে যে “এই লেখায় যত ধারনার উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলো লেখকের প্রকাশিতব্য বইতে যতদূর সম্ভব গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।” আর কিছু বানান শুদ্ধ করা হয়েছে।
(Y)
গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা সুকমল মোদকের। ভর্তি পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়ার মত হটকারী সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এ ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, বুয়েটের ভর্তিপরীক্ষা ছিল বলেই খুব ভালভাবে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেসময়। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যেভাবে পরীক্ষা নেয়া হয় কিংবা প্রশ্নপত্র সাজানো হয়, তাতে অল্প পড়েই ভাল ফলাফল করা যায়। একবছর এক চ্যাপ্টার থেকে প্রশ্ন আসলে ধরে নেয়া হয় যে পরের বছর সেখান থেকে প্রশ্ন আসবে না। বাংলা ইংরেজী, গনিত রসায়ন – সবকিছুতেই এভাবে ফাঁকি দিয়ে পার পাওয়া যায়। আসল পড়াটা হয় ভর্তি পরীক্ষার সময়ই।
@অভিজিৎ, সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সহমত।
প্রশ্নপত্র প্রনয়নের সময় এই বিশেষ নিশ্চয়তা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানার্জনের চেষ্টাকে খর্বিত করতো। এটা দেশের ভবিষ্যতের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়ার সমান। তবে এখন আর এমন নেই।
অবশ্যই। দুঃখজনক। কিন্তু সত্য।
আলোচনার শুরুতেই একটা বিষয়ে জানিয়ে রাখি – সামগ্রিকভাবে এই মুহুর্তে ভর্তি পরীক্ষার কোন বিকল্প দেখি না আমি। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পরেও আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আমি নীতিগতভাবে বিপক্ষদলে। যদি আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষাই নিতে হয়, তাহলে আর এইসব পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজনীয়তাটা কোথায়?
নীতিগতভাবে ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে থাকার পরেও কেন এই মুহুর্তে এর পক্ষে থাকছি? এর অন্যতম কারণ – পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে মেধার যাচাই হয়না বললেই চলে। মেধার যাচাই না হওয়ার মূল কারণ, আমার মতে, জিপিএ কিংবা নম্বর পদ্ধতি নয়; বরং যথাযোগ্যভাবে মূল্যায়ন না করাই আসল কারণ। মেধার যাচাই করার জন্য সর্বপ্রথমেই প্রয়োজন সঠিকভাবে প্রশ্নপত্র সেট করা। কার কাছ থেকে যেন শুনেছিলাম (সম্ভবতঃ নটরডেম কলেজের নিমাই স্যারের কাছ থেকে), ভাল প্রশ্নপত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – একজন গড় মানের শিক্ষার্থী (যে কিনা কেবল পাঠ্যপুস্তক পড়েছে) সেই প্রশ্নের ৬০ ভাগ উত্তর জানবে, এর চেয়ে বেশি উত্তর জানতে হলে পাঠ্যপুস্তক পাঠের সাথে তার উপলব্ধি ও কার্যকর বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে শতকরা পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও (৬০ ভাগ নাকি কমা নাকি বেশি), মোটের উপর এটাকে ভাল প্রশ্নপত্রের মানদন্ড মনে হয়। আমাদের প্রাথমিক সমস্যা – এই প্রশ্নপত্র সেট করা নিয়ে। এখানে প্রশ্নপত্র এমনভাবে সেট করা হয় যে, কোন ধরনের মেধার প্রয়োগ না করেই প্রায় সকলে সকল প্রশ্নের উত্তর জানে, যদি সে পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ (এমনকি পুরোটাও নয়) পড়ে থাকে।
প্রশ্নপত্রের এই বেহাল অবস্থা বজায় রেখে পার্সেন্টাইল র্যাংকিং, জিপিএ কিংবা নম্বর পদ্ধতি যেটাই চালু করা হোক না কেন, তা দিয়ে মেধার সঠিক যাচাই সম্ভব নয়। (এই মৌলিক অবস্থানের কেউ বিরোধিতা করলে জানাবেন এবং সেই সাথে কারণটাও জানালে খুশি হবো।)
প্রচলিত পাবলিক পরীক্ষাগুলোকে ভর্তি পরীক্ষার মানদন্ড না করার পিছনে এখানে ৪টা কারণ উল্লেখ করা হয়েছে –
কারণগুলোর সাথে কম-বেশি একমত। তবে এসবের সমাধানের ক্ষেত্রে যে ১০টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেগুলো এই সমস্যাগুলোর কতটা দূর করে তা প্রশ্নসাপেক্ষ বৈকি।
১) সারা দেশে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ার কথা এখানে না দেখে বেশ অবাকই হয়েছি বলতে হবে (আমার চোখ এড়িয়ে গিয়ে থাকলে দুঃখিত)। ১ নম্বর সমস্যা দূর করার জন্য এই প্রস্তাবটি সর্বাগ্রে করা উচিত বলে মনে হয়।
২) পরীক্ষকের নৈর্ব্যক্তিকহীনতা দূর করার জন্য মূল্যায়নকারী পরীক্ষকের মূল্যায়ন ও পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। এই ব্যবস্থা কিন্তু অনেক আগে থেকেই চালু আছে আমাদের দেশে। পরীক্ষকের উপর প্রধান পরীক্ষক থাকেন। মূল্যায়ন খারাপ হলে পরবর্তী বছর থেকে সেই পরীক্ষককে বাদ দেয়া হয়। সম্ভবতঃ শ্রেষ্ঠ পরীক্ষককে পুরস্কৃতও করা হয়। তবে এটা এমন একটা ব্যাপার যা চলে এসেছে এবং চলবে। এছাড়া লক্ষ লক্ষ খাতা একা দেখা সম্ভব না বলে এটুকু মেনে নিতেই হবে। এতে মেধা যাচাইয়ে সামান্য হেরফের হলেও মোটের উপর গ্রহণযোগ্য।
৩) প্রশ্নপত্র ও এর মূল্যায়ন যদি এমন হয় যে সকলেই ১০০ এর কাছাকাছি নম্বর পায় (শিক্ষকদেরকে বেশি-বেশি নম্বর দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় বোর্ড থেকে), তাহলে কি প্রস্তাবগুলো (মূলতঃ পার্সেন্টাইল পদ্ধতি) কোন কাজে আসবে?
৪) নকলের প্রভাব বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কিনা তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছি। আমি গ্রামের মানুষ, আগে যেখানে “চরম” নকল হতো। কিন্তু বেশ অনেক দিন ধরেই এখন আর সেখানে কোন নকল হয়না। এ ব্যাপারে বর্তমান ও আগের উভয় সরকারই ভাল পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য তারা সাধুবাদ প্রাপ্য।
এবার আসি প্রবন্ধের মূল প্রস্তাব প্রসঙ্গে – পার্সেন্টাইল র্যাংকিং সম্বন্ধে। এটা মোটের উপর নম্বর পদ্ধতির মতোই, কেবল কোন বিষয়ে (বা সর্বমোট) প্রাপ্ত নম্বরের পরিবর্তে শতকরা কতজনের চেয়ে বেশি বা সমান নম্বর পেল তা দিয়ে র্যাংকিং করা হয়। তাই এক বছরের হিসাব করলে নম্বর পদ্ধতি আর পার্সেন্টাইল র্যাংকিংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না, দুটা পদ্ধতিতেই একই র্যাংকিং আসবে। এর কার্যকারিতা পাওয়া যাবে একাধিক বছরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলনা করলে, মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে সে যাচাই। এক্ষেত্রে তা নম্বর পদ্ধতির চেয়ে ভাল কাজ দেবে।
কিন্তু আগে যখন নম্বর পদ্ধতি ছিলো সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি – দুইজন শিক্ষার্থীই ৯০ এর উপর পেলে সেখানে ২-৩ নম্বরের পার্থক্য কি তেমন বিশাল কোন পার্থক্য? আমার মনে হয় না। এই ২-৩ নম্বরের বেশিরভাগই নির্ভর করে পরীক্ষকের নৈর্ব্যক্তিকহীনতার উপর (যা ছিলো, আছে এবং থাকবে)। তাই সেই লেভেলে ২-৩ নম্বরের মধ্যে পার্থক্য না করাই “সামাজিক ন্যায়বিচার” বলে মনে হয়। মেধার মূল লড়াই কিন্তু হয় বেশি নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যেই। সেই বিচারে গ্রেডিং পদ্ধতিতে বিশেষ খারাপ কিছু দেখিনা, তবে দুইটা গ্রেডের মধ্যে ১০ কিংবা তারও বেশি পার্থক্য থাকা কাজের কথা না। তাই বর্তমানে গ্রেডিং পদ্ধতির পরিমার্জন দরকার বলে মনে হয়। তার পরিবর্তে র্যাংকিং পদ্ধতি চালু করলেও (যদি প্রশ্নপত্র ঠিকভাবে সেটা না করা হয়) লাভ তেমন কিছু হবে না, বরং আগের নম্বর পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার মতো খারাপ ব্যাপার হবে বলেই মনে হয়।
@প্রতিফলন, সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বিকল্প নেই।
সবাই তো আর বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে চায় না। কিন্তু সবারই সার্টিফিকেট দরকার। তাই পাবলিক পরীক্ষা নেয়াটা অবশ্য কর্তব্য।
সত্য। “গ্রেডিং পদ্ধতি” পুরো শিক্ষাব্যবস্থার একটা অংশ মাত্র। এর আগে আছে কারিকুলাম, পাঠদান ও পঠন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, তারপর তো গ্রেডিং। আমি শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞ নই। তবে আমি মনে করি বিজ্ঞান ও অঙ্কে (STEM – Science, Technology, Engineering, and Math) আমার কিছু দখল আছে। আমার এই সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে গ্রেডিং পদ্ধতির কিছু সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি মাত্র। বাকিগুলো অন্যদের হাতে ছেড়ে দেই।
ধন্যবাদ।
দেখা যাক আলোচনা করে।
এটা সংক্ষেপে বলা আছে। পুনর্ব্যক্ত করছি — “আমাদের মূল গলদটা হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতির অনুসরণ। এ পদ্ধতি ক্লাশরুম পরিসরে ভাল কাজ করে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য আমাদের যে সূক্ষ্ম পরিমাপের প্রয়োজন তা এই পদ্ধতিতে নেই। তাই মূল সমাধান হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ এর বদলে পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং (Percentile Ranking) পদ্ধতি অনুসরণ করা। এতে গ্রেডিং এ সূক্ষ্মতা ফিরে আসবে ও মেধার সঠিক বিচার সম্ভব হবে। জাতীয়ভাবে বুদ্ধি বিকাশে প্রতিযোগীতা শুরু হবে। তারপর সব বোর্ডে একই প্রশ্নপত্র ব্যবহার করলে সহজতা-কঠিনতা পক্ষপাতিত্ব দোষ দূর হবে।” এটাকে আমি আমার ১০ প্রস্তাবের প্রথম প্রস্তাবের অংশ হিসাবে দেখি।
আমার পরীক্ষকের মূল্যায়নের স্তরটা ভিন্ন। আমারটা অনেক যুক্তি নির্ভর। এ ব্যপারে আমি সাদিয়ার প্রশ্নের উত্তরে লিখেছি। আবার লিখছি।
আমার বইয়ের একটা অধ্যায় হল উত্তরপত্র মূল্যায়নের মান নির্ণয়। এখানে মূল্যায়নকারীকে মূল্যায়নের কথা বলা হচ্ছে। সব মূল্যায়নকারী তাঁদের নিজস্ব মানদন্ডে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে থাকে। এ ব্যপারে সমতা আনার জন্য একটু বেশী পরিশ্রম করতে হবে, আর অঙ্কের ব্যবহার করতে হবে।
ধরে নেই প্রত্যেক মূল্যায়নকারী সত্যিকারের ১০০০ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। প্রত্যেককে ১০০০ উত্তরপত্রের সাথে অতিরিক্ত ১০০ উত্তরপত্র দিবো মূল্যায়ন করতে। এই ১০০ উত্তরপত্র আমরা বাছাই করবো যাতে প্রাপ্ত নম্বরের মান শূন্য থেকে একশ এর মধ্যে প্রায় সমভাবে বণ্টিত (Uniform Distribution – Yes Statistical) থাকে। সব মূল্যায়নকারীকে “কিভাবে সুন্দরভাবে মূল্যায়ন করতে হয়” তার উপর একটা সংক্ষিপ্ত ট্রেইনিং এর পর এই ১০০ উত্তরপত্র ফটোকপি করে দিবো তাঁদের নিজস্ব মানদন্ডে মূল্যায়ন করতে। তারপর প্রতিটা উত্তরপত্রের গড় নম্বরের সাথে একেক জন মূল্যায়নকারীর দেওয়া নম্বর থেকে আমরা মূল্যায়নকারীর মানদন্ডের হিসাব করবো। পরে তাঁর দেওয়া নম্বর আর তাঁর মানদন্ড থেকে আমরা জাতীয় মানদন্ডে প্রাপ্ত নম্বর হিসাব করবো। মূলত মূল্যায়নকারীর দেওয়া নম্বরে আমরা তাঁর মানদন্ড অনুসারে কিছু নম্বর যোগ বা বিয়োগ (Correction) করবো যাতে আমরা জাতীয় মানদন্ডে নম্বর হিসাব করতে পারি।
এখানে মূল্যায়নকারীর মানদন্ড হিসাবের সময় অনেক স্ট্যাটিস্টিক্যাল তথ্য পাওয়া যাবে যা দিয়ে আমরা মূল্যায়নকারীর মানদন্ড ছাড়াও আরও অনেক হিসাব-নিকাশ পাবো যা উত্তর-উত্তর পদ্ধতিটাকে অনেক সুন্দর করে তুলবে। কিছু ধারণা দেওয়া হল – Grader Mapping Function, Grader Generosity Index, Grader Consistency Index, Mean and Standard Deviation of Grader Generosity Index for a Year, Mean and Standard Deviation of Grader Consistency Index for a Year, Variation of theses indices over the years, etc.
পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং বা আর যেকোনো পদ্ধতি কাজ করবে যদি সবাই নৈতিকভাবে কাজ করে। তবে সবাইকেই যদি উচ্চ নম্বর দেওয়া হয়, কিন্তু ভালদেরকে যদি একটু বেশী নম্বর দেওয়া হয়, নম্বরের ছড়াছড়ি হলেও অন্য পদ্ধতি কাজ না করলেও পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং পদ্ধতি কাজ করবে। কারন এখানে তুলনামূলক বিচার হয়।
সহমত। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলকে অতিশয় গুরুত্ব দিলে নকল আবার “চরম” পর্যায়ে চলে যাবে।
এটাই মূল ব্যক্তব্য। ধন্যবাদ।
এ কথা সত্য যে ২-৩ নম্বরের ব্যবধান ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের ব্যবধান থেকে আসতে পারে, আবার আমাদের মূল্যায়নের হেরফের হবার কারনেও আসতে পারে। দ্বিতীয়টার “বেশিরভাগই নির্ভর করে পরীক্ষকের নৈর্ব্যক্তিকহীনতার উপর”। নৈর্ব্যক্তিকহীনতা আগে ছিল। আমি নৈর্ব্যক্তিকহীনতা মাপার ব্যবস্থা করেছি এবং এটা দূর করার, বা নিদেনপক্ষে কমানোর, পদ্ধতির উল্লেখ করেছি। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করি, নৈর্ব্যক্তিকহীনতা কমাতে পারলেও ফল কিছুটা রয়ে যাবে। তাই আমিও উচ্চ লেভেলে, যেখানে নম্বর ৯০ এর চেয়ে বেশী, ২-৩ নম্বরের মধ্যে পার্থক্য না করাই “সামাজিক ন্যায়বিচার” বলে মনে করি। এই লেভেলে ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশনের লেজের দিকে (Tail end of statistical distribution) থাকবে, ২-৩ নম্বরের ব্যবধানে পার্সেন্টাইল র্যাংকিং এ তেমন কোন হেরফের হবে না।
অবশ্যই।
“পার্সেন্টাইল র্যাংকিং” আর “লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” দুইটারই মৌলিক ভিত্তি ঐ নম্বর পদ্ধতি। “পার্সেন্টাইল র্যাংকিং” খুব সুক্ষ্মভাবে হিসাব করে। “লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” পদ্ধতি স্থুল্ভাবে হিসাব করে। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার জন্য সুক্ষ্মভাবে হিসাব দরকার। “লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” এ ব্যপারে অকর্মন্য।
“পার্সেন্টাইল র্যাংকিং” আর পুরাতন “নম্বর” পদ্ধতি একই রকম সূক্ষ্মতা দেয়। কিন্ত “নম্বর” পদ্ধতি অ্যাবসোলুট (Absolute) পরিমাপ হওয়ায় এটা মুল্যায়নকারীর সামষ্টিক নৈর্ব্যক্তিকহীনতার উপর অনেক বেশী নির্ভরশীল। এটাকে বছর বছর তুলনা করা যাবে না। অন্যদিকে “পার্সেন্টাইল র্যাংকিং” বলার সাথে সাথে বলতে পারি একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর তুলনামূলক অবস্থান কোথায়। শুধু তাই নয় এটা দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার আরও অনেক বিষয়ের পরিমাপ করা যায়। জাতীয় শিক্ষার অগ্রগতির পরিমাপ করা সম্ভব।
একটা উদাহরণ হলো, যদিও আমাদের “লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” বা পুরাতন “নম্বর” পদ্ধতির গ্রেডিং কোন আন্তর্জাতিক গ্রেডিং এর সাথে তুলনীয় নয়, তবুও সহজেই বাংলাদেশের টপ (Top) ১ পার্সেন্টাইল মানের ছাত্র অন্য দেশের টপ ১ পার্সেন্টাইল মানের ছাত্রের সাথে কমবেশি তুলনীয়।
“লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” পদ্ধতি প্রতিটা ছাত্রছাত্রীর জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ হরণ করেছে যা “পার্সেন্টাইল র্যাংকিং” পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে পারে।
গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনতে হবে। সাথে থাকুন।
পার্সেন্টাইল র্যাংকিংয়ের পক্ষে বিস্তর কথা বলা হয়েছে এখানে। তবে এই র্যাংকিং পদ্ধতি সবার কাছে খুব পরিচিত নয় বলে এটা একটু ব্যাখ্যা করলে ভাল হতো। পার্সেন্টাইল র্যাংকিং সম্বন্ধে উইকি লিংকও খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। এ পদ্ধতি কীভাবে মেধার সূক্ষ্ম ও সঠিক যাচাই সম্ভব তা বিস্তারিত বললে আলোচনা করতে সুবিধা হতো।
@প্রতিফলন, মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং এর ব্যাখ্যা আমি লেখায় যোগ করেছি সম্প্রতি। আমি এখানে নতুন অংশটা পুনর্বক্ত করলাম।
একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং হলো এমন একটা সংখ্যা যা দ্বারা বুঝায় সে শতকরা কতভাগ ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভালো। উদাহরণস্বরূপ একটা ক্লাশে যদি একশ জন ছাত্রছাত্রী থাকে, আর যদি কারো মেধাক্রম অনুসারে র্যাঙ্ক হয় ২, সে ৯৮ জন ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভাল। তাহলে তার পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং হলো ৯৮। ক্লাশে যদি ৯,৫০,০০০ জন ছাত্রছাত্রী থাকে, আর কারো মেধাক্রম অনুসারে র্যাঙ্ক হয় ১,৫০,০০০, সে (৯,৫০,০০০- ১,৫০,০০০) অর্থাৎ ৮,০০,০০০ জন ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভাল। তাহলে তার পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং হলো (৮,০০,০০০/ ৯,৫০,০০০) X ১০০ = ৮৪.২১। কখনও কখনও “শতকরা কতভাগ ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভালো” এর বদলে “শতকরা কতভাগ ছাত্রছাত্রীর চেয়ে ভালো বা সমান” কথাটা ব্যবহার করা হয়, তখন গাণিতিক ফর্মুলায় একটু রদবদল ঘটে। তবে ধারণাটা একই রকম থাকে। অনেক সময় অনেক ছাত্রছাত্রীর র্যাঙ্ক একই হয়, তখনও গাণিতিক ফর্মুলায় আরেকটু রদবদল ঘটে। আর কতজন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একজনের অবস্থান তুলনা করা হলো তার উপর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং একটু হেরফের হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে যত ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা দিচ্ছে সবাইকে যদি একটা ব্যাচ ধরা হয়, তাহলে একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং এর মানকে বলা যাবে “২০১২ ব্যাচ পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং”। আর ২০১২ সাল অবধি যত ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা দিচ্ছে সবাইকে যদি একটা ব্যাচ ধরা হয়, তাহলে একজন ছাত্রের বা ছাত্রীর পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং এর মানকে বলা যাবে “২০১২ জাতীয় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং”। “ব্যাচ পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং” হিসাব করা সহজ। “জাতীয় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং” হিসাব করা সহজ নয়। তবে এই দুটো মান প্রায় কাছাকাছি থাকবে।
এটা ঠিক যে গ্রেডিং পদ্ধতিতে অনেক সমস্যা এবং পারসেন্টেজের যেই কথাটা বলেছেন সেটার সাথেও একমত।কিন্তু কথা হল গ্রেডিং পদ্ধতির থেকেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে যেসব রেখে গ্রেডিং পদ্ধতির সমাধান করলেও আদৌ কোন লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না।সমস্যাগুলোর একটি হল এতগুলি শিক্ষাবোর্ড।শিক্ষাবোর্ডগুলি র প্রশ্নপত্র আলাদা হওয়ায় একই নম্বর পেয়েও দুইটি বোর্ডের শিক্ষার্থী যে একই মানের তা কিন্তু নয়,আর বোর্ডগুলি নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যেই শিক্ষার্থী যত পাওয়ার যোগ্য না তত নম্বর দিতে শিক্ষকদের হুকুম দেওয়া হয়।যেমন-২০ পেলে ৩৩,৭০ পেলে ৮০। গ্রেডিং পদ্ধতি বাদ দিলে দেখা যাবে ৮০ কে ৯০ করতে বলছে।আর নম্বরের আগে যা দরকার তা হল খাতার পর্যাপ্ত মূল্যায়ন।আমাদের দেশের শিক্ষকেরা অনেকে তা ঠিক মত করেন না, না তা করার যোগ্যতা তাদের নেই তা আমার বোধগম্য নয়।সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি অবশ্যই একটি ভাল পদক্ষেপ।কিন্তু আপসোশের কথা হল আমাদের অনেক শিক্ষক(বিশেষ করে মাধ্যমিক) নিজেরাই সৃজনশীল প্রশ্ন বুঝেনা।এবার এস.এস.সি পরিক্ষার পদার্থ বিঙ্গানের উদাহরনই দেওয়া যায়।প্রশ্ন পত্রের সকল প্রশ্নের ‘ঘ’ নম্বরেই গাণিতিক বিশ্লেষণ চাওয়া হয়েছিল।আমার প্রায় কোন ফ্রেন্ডই কোন প্রশ্নের গাণিতিক ব্যাখ্যা দেয় নি(সেই সাথে অন্য ভুলের ছড়াছড়ি)।সেই দিক দিয়ে হিসেব করলে তাদের কারোই পদার্থে A+ আশার কথা না।কিন্তু তারা তা পেয়েছে।তার কারণ কিন্তু শুধু গ্রেডিং পদ্ধতি নয়,যে শিক্ষক খাতা কেটেছে তার নিজেরই হয়ত জানা নেই সেই প্রশ্নের গাণিতিক বিশ্লেষণ।এমন অনেক শিক্ষক নিজে দেখেছি বলেই বলছি।আমাদের দেশে বেসরকারি স্কুল কলেজগুলোতে মূলত শিক্ষক নিয়োগ হয় টাকার বিনিময়ে।তাদের নিজেদেরই শিক্ষার অবস্থা ভালো নয়।সেক্ষেত্রে কিন্তু সমস্যাটা চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায়।আর যেই প্রকিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা হয় সেটাকে কখনোই সমস্যামুক্ত বলা ঠিক নয়।সেক্ষেত্রেও সমস্যার শেষ নেই।শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়।আপনার কি মনে হয় একটা MCQ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মান বিবেচনা করা সম্ভব।একজন ভালো শিক্ষার্থীর সেই নির্দিষ্ট প্রশ্ন কয়টি না জানা থাকলে সে খারাপ করবে আমার একজন শিক্ষার্থী যে হয়ত কখনো ঠিকমত বই পড়েই নি,সে ভাগ্য বলে তার পড়া গুটিকয়েক মুখস্তবিদ্যার মধ্যে সবগুলো কমন পেল বা তার এমনি এমনি দাগানো উত্তরগুলো সঠিক হল।সেক্ষেত্রে এটা কি পূর্ণ মূল্যায়ন।আসলে শিক্ষার্থীদের পূর্ণ মূল্যায়ন করতে হলে আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই ঢেলে নতুন করে সাজাতে হবে সেক্ষেত্রে গ্রেডিং পদ্ধতি মাত্র একটা ক্ষুদ্র অংশ।জানি হয়ত অনেক বেশি অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছি,এ বিষয়ে আমার অনেক চাপা ক্ষোভ।তাই প্রকাশ পেল।অবশেষে এই সুন্দর লেখাটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ
@সাদিয়া, মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সব মতের সাথে একমত।
ধন্যবাদ।
সহমত।
সহমত। এর জন্য সব বোর্ডগুলোকে একই প্রশ্নপত্রের উপর পরীক্ষা নিতে হবে। এ কথা আমার লেখায় সংক্ষেপে উল্লেখ আছে। তবে অনেকগুলো বোর্ড মূল্যায়নের কাজ ভাগ করে ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করতে পারে। তবে সব ছাত্রছাত্রীর তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে একযোগে বিশ্লেষণ করতে হবে।
সব বোর্ডে আলাদা প্রশ্নপত্র রেখেও মোটামুটিভাবে“জাতীয় পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং” হিসাব করা যায়, তবে তা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। এ ব্যাপারে আপনি TOEFL, GRE, GMAT, MCAT, ইত্যাদি পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতির কথা ভাবুন। তারা বিভিন্ন ব্যাচের মধ্যে পারসেন্টাইল র্যাঙ্কিং এর মধ্যে সমতা আনতে পারে।
সহমত। যে কোন পদ্ধতি কাজ করবে পদ্ধতির সবাই নীতিপরায়ণ হলে। আঞ্চলিকতাপ্রীতি স্বজনপ্রীতির সমতুল্য। এটা অন্যায়।
সহমত। আমার বইয়ের একটা অধ্যায় হল উত্তরপত্র মূল্যায়নের মান নির্ণয়। এখানে মূল্যায়নকারীকে মূল্যায়নের কথা বলা হচ্ছে। সব মূল্যায়নকারী তাঁদের নিজস্ব মানদন্ডে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে থাকে। এ ব্যপারে সমতা আনার জন্য একটু বেশী পরিশ্রম করতে হবে, আর অঙ্কের ব্যবহার করতে হবে।
ধরে নেই প্রত্যেক মূল্যায়নকারী সত্যিকারের ১০০০ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। প্রত্যেককে ১০০০ উত্তরপত্রের সাথে অতিরিক্ত ১০০ উত্তরপত্র দিবো মূল্যায়ন করতে। এই ১০০ উত্তরপত্র আমরা বাছাই করবো যাতে প্রাপ্ত নম্বরের মান শূন্য থেকে একশ এর মধ্যে প্রায় সমভাবে বণ্টিত (Uniform Distribution – Yes Statistical) থাকে। সব মূল্যায়নকারীকে “কিভাবে সুন্দরভাবে মূল্যায়ন করতে হয়” তার উপর একটা সংক্ষিপ্ত ট্রেইনিং এর পর এই ১০০ উত্তরপত্র ফটোকপি করে দিবো তাঁদের নিজস্ব মানদন্ডে মূল্যায়ন করতে। তারপর প্রতিটা উত্তরপত্রের গড় নম্বরের সাথে একেক জন মূল্যায়নকারীর দেওয়া নম্বর থেকে আমরা মূল্যায়নকারীর মানদন্ডের হিসাব করবো। পরে তাঁর দেওয়া নম্বর আর তাঁর মানদন্ড থেকে আমরা জাতীয় মানদন্ডে প্রাপ্ত নম্বর হিসাব করবো। মূলত মূল্যায়নকারীর দেওয়া নম্বরে আমরা তাঁর মানদন্ড অনুসারে কিছু নম্বর যোগ বা বিয়োগ (Correction) করবো যাতে আমরা জাতীয় মানদন্ডে নম্বর হিসাব করতে পারি।
এখানে মূল্যায়নকারীর মানদন্ড হিসাবের সময় অনেক স্ট্যাটিস্টিক্যাল তথ্য পাওয়া যাবে যা দিয়ে আমরা মূল্যায়নকারীর মানদন্ড ছাড়াও আরও অনেক হিসাব-নিকাশ পাবো যা উত্তর-উত্তর পদ্ধতিটাকে অনেক সুন্দর করে তুলবে। কিছু ধারণা দেওয়া হল – Grader Mapping Function, Grader Generosity Index, Grader Consistency Index, Mean and Standard Deviation of Grader Generosity Index for a Year, Mean and Standard Deviation of Grader Consistency Index for a Year, Variation of theses indices over the years, etc.
সহমত। এটা ঠিক করতে প্রধান পরীক্ষককে একটা স্টান্ডার্ড উত্তরপত্র তৈরি করে সব মূল্যায়নকারীকে সরবরাহ করতে হবে, সব মূল্যায়নকারীকে আগে উল্লেখ করা সংক্ষিপ্ত ট্রেইনিং দিতে হবে, আর গাণিতিকভাবে মূল্যায়নকারীদের মানদন্ড পরীক্ষা করতে হবে।
সহমত।
সহমত।
সহমত। এক্ষেত্রে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি অনেক ভাল। এটার অনুসরণ করা যেতে পারে।
সহমত। “গ্রেডিং পদ্ধতি” পুরো শিক্ষাব্যবস্থার একটা অংশ মাত্র। এর আগে আছে কারিকুলাম, পাঠদান ও পঠন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, তারপর তো গ্রেডিং। আমি শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞ নই। তবে আমি মনে করি বিজ্ঞান ও অঙ্কে (STEM – Science, Technology, Engineering, and Math) আমার কিছু দখল আছে। আমার এই সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে গ্রেডিং পদ্ধতির কিছু সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি মাত্র। বাকিগুলো অন্যদের হাতে ছেড়ে দেই।
একটুকুও অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক নয়। আমরা যারা অগ্রজ তাদের দায়িত্ব হল নতুন প্রজন্মকে একটা ন্যায়সঙ্গত সিস্টেম রেখে যাওয়া, যাতে তাদের মধ্যে কোন “চাপা ক্ষোভ” না থাকে। আজকের প্রজন্মের এই চাপা ক্ষোভ খুবই ন্যায়সঙ্গত।
গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
….”মাথা ব্যথার উপশম করতে যেমন মাথা কেটে ফেলার দরকার নেই, তেমনি অসদূপায় দূর করতে ভর্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়ার কোন মানে হয় না ।”….
আমার ধারনা- আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রক কমিটিতে অনেক বিশেষঞ্জ ব্যক্তি আছেন যারা উন্নত দেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছেন। তারা কি করে সময় অনুপযোগী সিদ্ধান্ত নেন? তারা তাদের মেধাকে কি শুধুই নেতা/নেত্রীদের তেলবাজী করার জন্য ব্যবহার করেন? অবাক হই- যখন দেখি দেশের উপরের সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক একজন নেত্রীর দূর্নিতীগ্রস্থ ছেলের গুনগান, প্রসংশায় পঞ্চমূখ হন।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের(সবাই নয় তবে অধিকাংশের) মাঝে আছে দূরদর্শিতার অভাব, সীমাহীন অনৈতিক লোভ। একারনেই দেশের ভবিষ্যত আরও খারাপ দিকে যাবে বলে আমার মনে হয়।
সার্বিক উন্নতির সূচকে যদি মালয়েশিয়ার সাথে আমাদের দেশের তুলনা করি তাহলে কি দেখতে পাই- স্বাধীনতার কিছু দিন পর পর্যন্তও মালয়েশিয়া থেকে এদেশে ছাত্ররা পড়তে আসতো(প্রবীনদের কাছ থেকে শোনা)। এখন হচ্ছে উল্টোটা।
যে দেশে ভালো সিদ্ধান্তের জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে হয়, হাইকোর্টে রিট করতে হয়, সরকার নিজেই ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়- সেখানে ভালোর দিকে পরিবর্তনের আশা শুধুমাত্র মরিচীকা মাত্র।
লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
@ভক্ত, মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সব মতের সাথে একমত। তবে এ ব্যাপারে শুধু বর্তমান সরকারকে দোষ দেওয়া উচিত হবে না।
আমাদের মূল গলদটা হলো লেটারগ্রেড এবং জিপিএ পদ্ধতির অনুসরণ। এই পদ্ধতির অনুসরণের নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয় আমাদের “বিশেষজ্ঞদের” সুপারিশক্রমে আগের আওয়ামীলীগ সরকারের (১৯৯৬—২০০১) সময়ে। এই সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন এ. এস. কে. সাদেক সাহেব। তারপর এই পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরবর্তি বিএনপি সরকার (২০০১-২০০৭), কেয়ারটেকার সরকার (২০০৭-২০০৯), ও বর্তমান আওয়ামী সরকার (২০০৯–) সচারুভাবে কাজ করে। বিএনপি সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ডঃ ওসমান ফারুক। আর এখন হলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব। আমার মতে তিনজন শিক্ষামন্ত্রীই “লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” পদ্ধতির পক্ষে ভালভাবে কাজ করে গেছেন।
আমি দোষ দিবো আমাদের বিশেষজ্ঞদের। আর দোষ দিবে বিদেশ থেকে আগত কন্সালটান্টদের। এঁনারা সরকারকে বিপথগামী করেছেন।
আমি নিজেকেও কিছুটা দোষী ভাবছি। আমি ২০০৪ সালে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে “লেটারগ্রেড এবং জিপিএ” পদ্ধতির অনুসরণের ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রতিকারের জন্য বইটা লিখতে শুরু করেও সময়মত শেষ করিনি।
জাতীয় পর্যায়ে আমাদের অনেক সমস্যা আছে। সব একে একে সমাধান করতে হবে। সরকারে যারা থাকে তারাও মানুষ। সবারই জ্ঞান সীমিত। আমাদের নাগরিকদের দায়িত্ব হচ্ছে শুধু সমস্যা না, সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান সরকারের কাছে তুলে ধরা। We should be part of the solution, rather than be part of the problem.
“বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গ্রেডিং পদ্ধতি এবং ভর্তি পরীক্ষার বিড়ম্বনা” এই বিষয়ে আমার দীর্ঘদিনের কাজের ফসল আমার এই লেখাটি । জাতীয় এই গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে আমি সবাইকে আলোচনায় অংশগ্রহন করতে অনুরোধ করবো । শুধু লাইক চাই না, গঠন মূলক সমালোচনা চাই ।