রীক আর ফ্রেডী এই বাসাতে এক সাথে বাস করে আসছে বহু দিন। দুই রূমের এই বাসার ড্রইংরুমটা এতবড় যে তাদের থাকার ঘরদুটো একসাথে যোগ করলেও ওটার সমান হবেনা। সেই কবে, সঠিক দিন তারিখ মনে করতে পারে না রীক- তারা একত্রে এই বাসায় আছে, আছে সুখে দুঃখে পাশাপাশি। মাঝখানে কয়েক বছর বাদ দিলে, তা প্রায় চৌদ্দ বছর একসাথে একই অরফানেজে তারা বড় হয়েছে, লেখা পড়া করেছে সেখানে থেকে। তারপরে চাকরী পেয়ে এই বাসা নিয়েছে তারা একসাথে থাকার জন্য, সেও অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। রীক সাহিত্যের ছাত্র। ছাত্রত্ব শেষ হলেও সাহিত্য তারে ছাড়েনি। সাহিত্যে তার নেশা- মরন নেশা। চাকরী আর কাজের বাইরে বই তার সব সময়টুকু গিলে ফেলে। ছোট্র একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থায় সে কাজ করে। বেতন যা পায়, জীবন চলে যায় তাতে- যেমন আর সবার যায়। কাজের ভেতরে সে কাজ ছাড়া আরও অনেক কিছু খোজার চেষ্টা করে- অন্যরকম কিছু। উপন্যাসের ধ্রুপদী চরিত্রগুলোর হালকা ছিটে ফোটা অনুসন্ধান করে চলে সহকর্মীদের ভেতরে। তাতে কর্তব্য কাজে কোন ব্যাত্যয় ঘটে না। ওরা সবাই কাজই জানে, কাজছাড়া আর কিছু বোঝে না। মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা উচ্চাঙ্গ ভাবনা গুলো ওদের সাথে ভাগাভাগী করা আর হয়ে ওঠেনা। যোগাযোগের বাক্যগুলো সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততর হতে থাকে। হতাশ হয় রীক। উপন্যাসের চরিত্রগুলো কি মেকী? তা হয় কিভাবে। তাহলে ওগুলো বিশ্বব্যাপি এত এত পুরষ্কার আর সোনা জিতে আনে কিভাবে? আসলে মানুষে মানুষে বহুমুখী সম্পর্কের জাদুঘর হয়ে গেছে এখন উপন্যাস্যের সোনালী চরিত্রগুলো। বইয়ের বাইরে আর তাদের খুজে পাওয়া যাবে না হয়তো। তারপরেও ওসব সম্পর্কের স্বাদ নেবার জন্য ভয়ঙ্কর পিপাসিত হয়ে থাকে অন্তরটা তার। কি ভাবে মিটবে সে তিয়াস?
এদিকে ফ্রেডী আবার অত জটিলতায় নেই। খায় দায় কাজ করে। শুক্রবার রাতে সহজ আনন্দে গা ভাসিয়ে দেয়। মাসে মাসে কখনওবা সপ্তাহে মেয়ে বদলায়। কম্পিউটারের সফ্টঅয়ার তৈরীর প্রতিষ্ঠানে সে কাজ করে- মন দিয়ে কাজ করে। কাজ করে বেশী, কথা বলে আরও কম। ওর সাথে মন খুলে গল্পে মেতে উঠার কথা রীক ভাবতে পারে না। তবে কচিৎ কথা হয় তাদের কোন গার্হস্থ্য বিষয়ে অথবা স্বার্থ-দায়ের খাতিরে। ফ্রেডীর অন্য সব বাদ দিয়ে তার হাসিটাই বরং ভাল লাগে রীকের। কেমন নির্বোধের মত সাদা হাসি ঝলকে ওঠে মুখে ওর। মন্দ লাগেনা রীকের। তবে ভুলেও কখনও গল্পের বই ধরে না ফ্রেডী। ভয় আর বিরক্তি আছে তার সাহিত্যে। অবসর অবকাশে বইগুলোর ভেতরে ডুবে যায় রীক। কখনও মনে মনে ভাবে কি নেই এই ছাপার অক্ষরগুলোর ভেতরে। এর ভেতরে মা আছে, বাবা আছে, দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা, চাচী সবাই আছে তাদের উপযু্ক্ত আসন দখল করে। এর ভেতরে একবার ডুব দিতে পারলে নানামুখী সম্পর্কের স্বাদ নেয়া যায়- নেয়া যায়, কিন্তু দেয়া যায় না কিছুই। তাই চিত্ত পিপাসার্ত হয়ে থাকে বহুমাত্রায়। তাইতো ঐ জগত থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলে সব ধুসর লাগে। কেন এমন হয়? হয়তো ওগুলো ধরা ছোয়ার মত নয় তাই। অবাস্তব জিনিসের কাছে বেশী প্রত্যাশা ভাল নয়।
নিজের সম্পর্কে প্রায় সব খবর জেনেছে রীক। তারও তো বাস্তবে বাবা-মা ছিল। কিন্তু তাকে এতিমখানায় বড় হতে হয়েছে কেন? এসবের কারণ অনুসন্ধানে তার আর রুচী নেই। তবে কাঁচা বয়সে একবার আবেগের বসে বাবা-মা পাবার আশা জেগেছিল তার ছোট্ট মনে। চাইতেই পেয়েছিল দত্তক বাবা-মা। কিন্তু ওরে বাপরে! তাদের কথা স্মরণ করলে এখনও মাথা ঘুরায় রীকের। ওই কিশোর বয়সে শিশুশ্রমের যন্ত্রনা কাকে বলে হাড়ে হাড়ে বুঝে ছিল সে। সিন্ডেরেলার মনের ব্যাথা মর্মে মর্মে অনুভব করেছিল বালক রীক নকল বাবা-মার কল্যানে। দুধের সাধ কোনদিন ঘোলে মেটে না। এক বছরের মাথায় দৌড়ে পালিয়ে এসে উঠেছিল পুরোন আশ্রয়ে। দত্তক বাবা মায়ের কথাগুলো এখনও মাঝে মধ্যে কানের মধ্যে শব্দ করে বেজে ওঠে রীকের। বাবা-মা তার গ্রামের খামারী। স্বভাব দোষে হয়তো কখনও কাজের অবসরে একটা গল্পের বই নিয়ে বারান্দায় বসে পড়েছে বালক রীক। কোথা থেকে উড়ে এলো স্নেহের মা- দয়ার শরীর। তেলির ঘানির মত ঝঝিয়ে উঠলো তার কন্ঠ, “অমন জানোয়ারের মত বসে থাকা হচ্ছে কেন? ক্ষেতে কিশান দের সাথে একটু হাত লাগালে কি মান যায়? খাওয়ার সময় তো বড় বড় পিন্ড চলে যায় গর্তে।” গায়ের চামড়া যেন খসে পড়তো বালকের লজ্জায় আর অপমানে। বাপের কথা আর স্মরণ করতে চায় না রীক। আপন মায়ের আদর যার কপালে সয়না তারতো মাসীর কাছ থেকে পালাতেই হবে। তার থেকে অরফানেজ ঢের ভালো।
তারপরে একদিন যৌবন এলো। যৌবনের দোষও এলো সাথে সাথে। এখন নিজের ওজন নিজে বহন করতে পারে রীক। সঙ্গীর দরকার তার, মেয়ে সঙ্গী। পয়সা থাকলে বাঘের চোখ মেলে, মেয়ে তো কোন ছার। ভালবাসার এজেন্টদের দৌলতে শিক্ষিত, সুন্দরী, মিষ্টি ভাষী মেয়ে আসলো রীকের অল্পদামের জীবনে। নাহ, রীকের নজরটাই নষ্ট হয়ে গেছে। সব কিছুর ভেতরে কি যেন খোজে সে। সম্পর্কের ভেতরে খাটি সোনার রং খোজে সে, সুন্দরী নারীর ভেতরে খোজে অন্য সুবাস। কিচ্ছু মেলেনা সেসব। তার বদলে আবিষ্কার করে সে অধিকার, আর নিরাপত্তার সুক্ষাতিসুক্ষ হিসেবে নিকেশে ভরা অতিস্পর্শকাতর এক একটা নারী-মন। প্রথম প্রণয়ের সে নারীর কন্ঠ এখনও তার কানে বাজে মাঝে মাঝে ঠিক আগের ঝংকারে। মনে আছে তার, নরম এক আবেগ ঘন মুহুর্তে সাড়া দিতে যাবে রিক, ঠিক তক্ষুনি বলে বসলো সুন্দরী, “কালকে বাজার থেকে আমারে কি ধরনের অলংকার কিনে দেবে বলে ঠিক করেছ?” উত্তর দিতে পারেনি রীক। শুধু নরম মুহুর্তটারে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল সে। সেই সাথে সুন্দরীকেও। রীক তার ভাললাগার সাথে আপস করেনি কখনও, করবেও না। তারপরেও হতাশ হয়নি সে। আরও দুয়েকবার চেষ্টা করেছে- খাটি সুন্দর নারীর খোজে সময় দিয়েছে, কিন্তু ফলাফল একই। ঘা খেয়ে খেয়ে এখন সে নিজের কাছে ফিরেছে। নিজের ঘরে। নিজের মনের ভেতরে, মাথার ভেতরে খেলে বেড়ানো সাহিত্য রসে। সব সম্পর্কের আদর্শ ও উচ্চাঙ্গ চেহারা খুজে পেয়েছে সে সেখানে। আকন্ঠ পান করেছে সে সব হাজার কিছিমের সম্পর্কের অমৃত। শুধুপান করেছে, কিন্তু পান করাতে না পারায় অন্য এক ধরনের তৃষ্ণা দিনের পর দিন প্রবল হয়েছে তার মনের ভেতরে, শরীরের বাঁকে বাঁকে।
আজ শুক্রবার। বাসায় কেউ নেই রীক ছাড়া। রাত আটটা বেজে কিছুটা এগিয়ে গেছে ঘড়ির কাটাটা। ফ্রেডী বাসায় নেই। তার থাকার কথাও নয় এখন। সপ্তান্তে বান্ধবীদের ডাকে সাড়া দিতে চলে গেছে কোন বারে। সুখী মানুষ ফ্রেডী। সবকিছুতে আনন্দ খুজে পায় সে- ঠিক নিজের মত করে। রীক কেন পারেনা ফ্রেডী হতে? থাক তার কাজ নেই ফ্রেডী হয়ে। আরও অনেক কিছুতে তার কাজ নেই। বাবা-মা ভইবোন অথবা অন্য কোন বাস্তব ধরাছোয়ার সম্পর্কের খোজ খবর করেও তার কোন দরকার নেই। এই মুহুর্তে সে যে রসে ডুবে আছে তার একেবারে গভীরে গিয়ে রসাতলে হারিয়ে যেতে চায় তার পিপাসীত মন। এক মিষ্টি ধ্রুপদী উপন্যাসের সম্রাজ্যে এখন তার বিচরণ। তার পাঁচ ইন্দ্রীয়ও এখন সেখানে। আশেপাশে অথবা বাইরের পৃথিবীতে কি হচ্ছে তার বিন্দুমাত্র সংকেত সে সাম্রাজ্যে প্রবেশ করার পথ পাচ্ছে না। প্রচন্ড এক মুশলধারার বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাইরের জগতে। গ্রীষ্মের সময়ে এমন বর্ষন উত্তর আমরিকার আভাওয়ায় যদিও নতুন কিছুনা। তার সাথে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝিলিক আর বজ্রের চিৎকার সব অসম অস্তিত্বকে সমান করে দিতে চাচ্ছে। সেদিকে কোন খেয়াল নেই রীকের। চোখের সামনে মেলে ধরা উচ্চাঙ্গ সে উপন্যাসের একটা চরিত্র এখন সে। আদর, সোহাগ, স্নেহ-শাসন, আশীর্বাদ, বন্ধুত্ব আর প্রেমের ভিন্ন ভিন্ন নির্জাস আকন্ঠ পান করে চলেছে সে ক্ষ্যাপা পাগলের মত। শব্দ থেকে শব্দে, পাতা থেকে পাতায় নিঃশব্দ বিচরণ করতে করতে পৌছে গেছে সে শীতল ছায়া ঘেরা, বন্ধু-পরিজনে ভরা এক অতি সাধারণ বেশের সাধারণ ঘরে। ঘরের সে শান্ত-রেশমী ছোয়ায় কখন তার দুচোখের পাতায় নিদ্রা নেমে এসেছে তা বোঝার কোন অবকাশ পায়নি তার মন, তার দেহ। বিরাট এক পরিবারের সদস্য এখন রীক। এখানে তার স্নেহের মা আছে, বাবা আছে, ভাই বোন আছে, আবার বৃদ্ধ দাদা দাদিও স্নেহের শাসন দন্ড হতে মিটিমিটি হাসছে- ঐতো ঐ খোলা উঠানে বসে। বড় ভাল লাগছে তার এখন। প্রতিবেশীরাও কত ভাল, কত সরল আর সাধারণ। যৌথ পরিবারের নির্যাস রীকের শরীরের রক্তের সাথে মিশে গেছে এই স্বপ্নালোকে এসে। কোন ভাবে তা আর আলাদা করা যাবে না। রীক স্বপ্ন দেখছে। এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছে রীক। পৃথবীর সবচেয়ে শক্ত যে বাস্তবতা, স্বার্থপরতা, তার থেকেও বাস্তব এক স্বপ্ন দেখছে রীক। কত বছর, কত সময় এই সুখের সংসারে আছে সে তা তার জানা নেই। তবে তার হৃদয়ের পাত্রখানা যে চরম শান্তিতে কানায় কানায় ভরে উপচে পড়ছে তা সে ঠিকই ধরতে পারে। এমনই এক স্বপ্নালোকে, হঠাৎ খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে যায় রিক। ধড়ফড়িয়ে উঠেই সজাগ চেতনায় এক মহা প্রলয়ের গন্ধপায় যেন। এত বড় ঘরে কেউ নেই সে ছাড়া। তার বাবা-মা ভাই বোন, দাদা দাদী কোন ঘরে কেউ নেই। পাখী নেই, পোষা প্রাণী গুলো নেই। যে দিকে চোখ যায়- শুধু নেই আর নেই। তবে গাছগুলো আছে- ছোট বড় সব গাছ আছে। গাছেদের জীবনের স্পন্দন ধরা পড়তে চায় না অত সহজে। প্রচন্ড খীপ্রতায় গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রীক শহরের দিকে। একি মহা প্রলয়! কোন প্রাণ নেই কোথাও। কলকারখানা গুলো চলছে ঘটাঘট ফটাফট, কিন্তু কোন বুদ্ধিমান বা নির্বোধ প্রাণী নেই সেখানে। এই ভাবে এক দিন, দুই দিন, বহুদিন কেটে যায় রীকের প্রাণীর সন্ধানে। কিন্তু কিছুই মেলেনা। সব হারিয়ে ফেলেছে রীক। সে নিঃস্ব। ঘরে আলো জ্বালাবার ইচ্ছাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে রীক। দুঃসময়ের এমনি কোন একদিন আঁধার ঘরে শুতে গিয়ে খাটের উপর হাতে বাড়ি খায় নরম কোন দেহ- কোন মানুষের দেহ- মৃতদেহ না তো! ভয়ে-বিষ্ময়ে দৌড়ে গিয়ে আলো জ্বালে রীক। দেখে খাটের উপর বসে আছে সারা ঘর আলো করে এক অপূর্ব সুন্দরী। মুখের কোনে তার মৃদু হাসি। অন্ধকারে হাতের ছোয়ায় জেগে গেছে সে। রীকের চোখে শুধুই বিস্ময়, মুখে কোন কথা নেই।
সুন্দরী কথা বলে।
-আমার নাম নীলা। এই পৃথিবীতে এখন তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ বেচে নেই। সংকোচ আর লজ্জার সময় নেই। এসো রীক, আমরা আবার নতুন করে পৃথিবী আবাদ করি। মহা প্রলয় শেষ হয়ে গেছে। আর ভয় নেই। আর দৈবাত তুমি যাতে আমারে ভুলে না যাও কখনও, তাই এসো এই ব্রেসলেটটা তোমার হাতে পরিয়ে দিই।
মন্ত্রমুগ্ধের মত হাত এগিয়ে দিল রীক নীলার দিকে। রূপার চওড়া বন্ধনীর উপর সাদা পাথর বসানো। অদ্ভুত জিনিস। এমন জিনিস আগে কখনও দেখেনি রীক। বিনিময়ে কিছু একটা দেবার দরকার এই মেয়েকে। দেয়া যাবে পরে, ঘরে অনেক কিছু আছে তার। সব প্রাপ্তির আনন্দে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে সে কিছু সময়ের জন্য। নিঃশব্দে চারটে হাত আর চারটে চোখ এক হয়ে যায় নীরব সরলতায়। কিন্তু একি, একি! কে টানছে তারে পিছন থেকে? ধীরে ধীরে আবার সে সব যেন হারিয়ে ফেলতে চলেছে।
সকাল তখন গড়িয়ে দুপুর হবার পথে। তবু রীক বিছানা ছেড়ে উঠছে না দেখে ফ্রেডী চেষ্টা করছে বন্ধুকে উঠাবার। মরার মত শুয়ে আছে রীক। বারবার ধাক্কিয়ে চলেছে ফ্রেডী।
-রীক, এই রীক, দূপুর হয়ে গেল, ওঠো।
এবার জোরে এক ধাক্কা মারে ফ্রেডী রীকের পিঠে। ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে রীক। অপরিচিত শূন্য দৃষ্টিতে এদিক ওদিক কয়েকবার তাকায় সে।
-এই, আমি এখানে আসলাম কি করে? নীলা কোথায়, নীলা? আমার তো এখন বাড়ীতে থাকার কথা। নীলাকে দেখেছ তুমি? তুমি কে?
পাগলের মত চিৎকার করে কথা বলতে থাকে রীক। বিষ্ময়ভরা চোখ নিয়ে হাত তিনেক দূরে দাড়িয়ে অপরিচিত এক রীককে দেখতে থাকে ফ্রেডী।
-এই রীক, তুমি এসব কি বলছ! এটাই তো তোমার বাড়ী। আর নীলা কে? এই নাম তো কোনদিন শুনিনি তোমার কাছে।
– আমার সাথে ফাজলামী করোনা। তুমি জান না, আমার বাড়ী দুশো বিশ উলনার এভিনিউতে। আর নীলাকে তুমি চিনবে না, কেমন করে চিনবে? আমিইতো তোমাকে কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। ও আমার বান্ধবী। ওকে আমি বিয়ে করবো। এই দেখ, এই ব্রেসলেটটা ও আমাকে গতকাল দিয়েছে।
– কি বলছ এসব রীক। তোমার সাথে আমি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলাম, আর আমি জানবোনা তোমার বাড়ী আছে কি নেই। আর যে ব্রেসলেট দেখাচ্ছ, ওটাতো তো তোমার হাতে অনেক আগের থেকেই দেখছি। গতমাসে তুমি না বললে, তোমার এক বান্ধবী ওটা তোমাকে উপহার দিয়েছে।
ফ্রেডী বিপদের গন্ধ পায়। নিশ্চই রীকের মাথায় ভয়ংকর গোলমাল দেখা দিয়েছে। এখন সে কি করবে?
কোন কিছু করার সময় দেয় না রীক ফ্রেডীকে। ঝপ করে বিছানা ছেড়ে মেঝেতে লাফিয়ে পড়ে রীক, সেখান থেকে দরজা খুলে দৌড়াতে থাকে সে সিঁড়ির দিকে।
– যেও না রীক, দাড়াও।
ধরার চেষ্টা করে ফ্রেডী, কিন্তু পারে না, হাত ফসকে বেরিয়ে যায় রীক।
– আমি আমার বাড়ী যাচ্ছি। ওখানে নীলা আছে। আমার জন্যে সে অপেক্ষা করে আছে। আমাকে যেতেই হবে।
চিৎকার করে কথাগুলো বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে হনহনিয়ে পাগলের মত নীচে নেমে যায় রীক।
অমৃতের স্বাদ পেয়েছে রীক। হোক তা স্বপ্নে দেখা। সেই বাস্তবতা তাকে এই পৃথিবীর কঠিন ত্রিমাতৃকতাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর বিচারে সে এখন এক রকম ভারসাম্যহীন এলোমেলো। রীককে ফেলে রেখে পৃথিবী এইভাবে এগিয়ে যায় অনেক দূর। আর একই জায়গায় স্থির দাড়িয়ে থাকে রীক। উলনার এভিনিউ আর তার আশেপাশে খুঁজে ফেরে সে তার স্বপ্নালোকে পাওয়া স্নিগ্ধ বাড়ী আর তার অবাক করে দেয়া নীলা। জনে জনে জিজ্ঞেস করে ফেরে নীলা নামে মেয়েটার খোঁজ খবর বৃত্তান্ত। কেউ তার কথা শুনে উদাস হাসে, কেউবা হাসি চেপে চলে যায় আনমনে- মনে মনে ভাবে, আহারে! ওসব কোন কিছু নজরে যায় না রীকের। শুধু দুই ভ্রুঁর মাঝখানের জমিনটা সামান্য কুঁচকায় বিরক্তিতে- মনে মনে ভাবে, কথার কোন উত্তর করে না কেন ওরা? লোকগুলো অমন কেন?
মন খারাপ করা গল্প। আমরা মন খারাপ করতে চাই না। সবকিছু ভুলে ফুর্তি কেনার বাজারে ডুবে যেতে চাই।
মন খারাপ করে দে’য়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
@স্বপন মাঝি,
মানুষের মনটা ঐ ভাবেই তৈরী। সে কমেডী থেকে ট্রাজেডী গভীরভাবে উপভোগ করে। সেক্সপেয়ারের ট্রাজেডীগুলোই বেশী জনপ্রিয়। ধন্যবাদ আপনাকে।
বাহ ! মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
@মোজাফফর হোসেন,
ধন্যবাদ, অসংখ্য।
আপনি বরাবরই এমন ব্যতিক্রমধর্মী ইস্যু নির্বাচন করেন আপনার গল্পে। এবার পরিবার বিহীন বড় হওয়া শিশুদের মর্মবেদনা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আর এডিট করলেও পুপোপুরি বোধ হয় করেননি। বাক্যের দিকেও একটু নজর দিলে পাঠমধুর হবে। যেমন–
এখানে ও টা বাড়তি লেগেছে গল্পে। আবার লিখেছেন অবসরে অবকাশে। দুটো একই অর্থ বহন করে না?
যাহোক, আরও বৈচিত্র্যধর্মী প্লটের অপেক্ষায়।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ অনেক।
অসাধারণ রচনা, অসাধারণ বর্ণনা। এমন গল্প অনেকদিনপরে পড়লাম। তবে বানানের দিকে একটু খেয়াল করলে আরও ভালো হোত। যেমন বাড়ী না বাড়ি, আর অনেক জায়গায় চন্দবিন্দু থাকা দরকার ছিল। আপনি ইচ্ছে করলে সম্পাদনা করে নিতে পারেন।
যাই হোক সব মিলিয়ে আমার কাছে খুবই ভালো লাগলো- (F)
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ। কিছুটা এডিট করলাম।