১.
খুব বলশালী ও পালোয়ান এক লোক বনে যায় গাছ কাটতে। বিপুল বিক্রমে চলতে থাকে পালোয়ানের কর্তন ক্রিয়া। কুঠারের ঠোকরে যাতনাবিষ্ট বনভূমিতে ভেসে বেড়ায় কাঠোরির কঠিন সুর। যন্ত্রজালে আপাদমস্তক বন্দী হয়ে পড়ে গাছগুলো। । হঠাৎ চিৎকার করে উঠে একটি গর্জন গাছ, ‘’আমাকে আর কুঠ্রাঘাত করো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।‘’
গাছকে কথা বলতে দেখে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে বিশালকায়া কাঠুরিয়া। ওদিকে আহত গর্জনের আর্ত চিৎকারে বনের আকাশ-বাতাস তখন ভারাক্রান্ত কৃষ্ণগহবর।
২.
বনভূমিতে ঘুরঘুর করছিল সদা রোমাঞ্চপ্রিয় এক অনুসন্ধানী। তার চোখ প্রকৃতির প্রেম-সুধায় জর্জরিত। অরণ্যের সঙ্গে নিবিড় বন্ধনের কারণে, সে এমনকি গাছের শ্বাস-প্রশ্বাসও টের পায়। তাই আহত গাছটির করুন নিনাদ মুহূর্তের মধ্যেই পৌঁছে যায় তার কানে। সরেজমিন দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় প্রকৃতিপ্রেমী। কিছুদূর এগোতেই কাঁঠালের মত পড়ে থাকতে দেখে কাঠুরিয়াকে। কিন্তু ভূমিসাৎ কাঠুরিয়ার জন্য কোন দয়া উদ্রেক হয় না প্রকৃতিপ্রেমীর মনে।
চোখে এক রাশ ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সে অবশেষে ছুটে যায় কোপের মুখে পড়া নিপীড়িত গাছটির দিকে। গাছটির দুঃখ দেখে বুক ফেটে যায় প্রকৃতিপ্রেমীর। গায়ে হাত বুলাতেই দ্বিতীয়বারের মত কথা কয়ে উঠে গাছটি, “আমাকে আবার মারতে এসেছো? দোহাই তোমার, ছেড়ে দাও আমাকে!‘’
প্রকৃতিপ্রেমী এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে বলে, ‘’ওহ!, দুঃখিত! দুঃখিত! আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোমাকে মারতে আসিনি। বরং তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছিলাম।‘’ গাছ বলে, ‘’ও, তাই বল! আমি তো ভেবেছিলাম, তুমি ঐ কেঠো মিনসেটাই। কিন্তু ভাই, তুমি আমাকে কেন উদ্ধার করতে এলে? আমাকে বাঁচিয়ে তোমার লাভ কি?’’
প্রকৃতিপ্রেমী বলে, ‘’লাভালাভির কিছু নেই। তোমার কান্নার শব্দ আমার হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে। তাই ছুটে এসেছি তোমাকে বাঁচাতে’’। গাছ বলে, ‘’আমি অনেকগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি বনে বাদাড়ে। কিন্তু বিশ্বাস কর, আজ পর্যন্ত কেউ আসেনি বাঁচাতে। ভাগ্যিস তুমি ছিলে আজ এই বনে। নইলে কত গাছের যে শরীর কাটা পড়ত। গাছের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যেত আজ পুরো বন পথ। সত্যি, কি দৈবভাগ্য আমাদের! আজ তুমি কাছে না থাকলে..’’
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল গর্জন; কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমী থামিয়ে দেয় তাকে, ‘’অন্তত আমি থাকতে আর কেউ তোমাদের গায়ে হাত তোলার সাহস পাবে না। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পার।‘’
এরপরই প্রকৃতিপ্রেমী গাছটির গায়ে হাত রাখে। আলতোভাবে গাছের পিঠ বুলিয়ে দিতে থাকে। আবেগের আতিশয্যে একসময় জড়িয়ে ধরে গাছের নিম্নদেশ। এরপর বেয়ে বেয়ে উঠতে থাকে উপরের দিকে। এবং এক সময় মগডালে উঠে বসে থাকে। কিছুদিন পর প্রকৃতিপ্রেমী অস্থায়ী এক বন-বাসা বাঁধে সেখানে।
৩.
বেশ কিছুদিন হল, বনভ্রমন শেষে প্রকৃতিপ্রেমী ফিরে এসেছে নগরে। ধূলি-ধোঁয়ার আটপৌরে ভিড়ে প্রকৃতিপ্রেমীর তৃষ্ণা মেটায় এখন তার পোষা গাছগুলো।
ছোটবেলা থেকেই গাছ পোষার সখ প্রকৃতিপ্রেমীর; ছোট্র বাড়িটিতে প্রায় শদুয়েক টব রয়েছে। পোষা গাছগুলোর যত্ন-আত্তির কোন ত্রুটি করে না সে। প্রকৃতিপ্রেমীর আদর-সোহাগে গাছগুলোও বেশ ভুলে থাকে দেশের কথা, বনভূমির কথা। মনিবের হুকুম তামিল করে যথাসময়ে ফুলও ফোটায়। পলিমাখা পাপড়ির গন্ধে প্রকৃতিপ্রেমীর মন হয় উতলা। মনের আনন্দে সে বোঁটাসুদ্ধ ফুল তুলে নেয় হাতে। পাপড়ির তুলতুলে নরম পালকে নাক-মুখ গুঁজে দিয়ে পরমানন্দে বুঁদ হয়ে থাকে প্রকৃতিপ্রেমী।
৪.
প্রতিদিনের মত সেদিনও প্রকৃতিপ্রেমী তার বাসার গাছগুলোকে জলখাবার সরবাররহ করছিল। এক সময় সে তার টবে মোড়া ঘর-বাগান থেকে কিছু পুষ্প খসিয়ে নিতে উদ্যত হয়। কিন্তু অনেকটা আচমকাই কথা কয়ে উঠে একখানি ফুলবতী বেলি, ‘’তোমার পায়ে পড়ি, মনিব। আর ছিনিয়ে নিয়ো না আমাদের জীবন। ছেড়ে দাও! মুক্তি দাও আমাদের!’’
গাছের কথা সম্পূর্ণ অচেনা আর অশরীরী ঠেকে প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে। পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হয় তার কাছে। ভালবাসা হারানোর ভয়ে হতবিহবল হয়ে পড়ে সে। বিচ্ছেদের সম্ভাবনায় নেতিয়ে পড়ে দেহ-মন। তীব্র চিৎকার করে এক সময় জ্ঞান হারায় সে।
এরপর থেকে সেই প্রকৃতিপ্রেমী অপ্রকৃতিস্থ।
দুরকম কথা বলব। হয়ত, লিখাটির দুরকম অর্থ ধরা যায় বলে।
যারা ভেজিটেরিয়ান, শুধুই শাক সব্জি খান, সেই শাক সব্জিরও তো প্রাণ আছে। তাহলে… জানিনা। আমি চুড়ান্ত রকমের বিভ্রান্ত জীবনের এ পর্যায়ে। যে প্রকৃতিকে বাঁচাতে আমরা এত বলি ইন্টারনেটে বসে, সেই ইন্টারনেটই তো প্রকৃতির জন্য খারাপ।
@কাজী মামুন,- আপনাকে অথবা আপনার লিখাকে কেন্দ্র করে ওসব বলছিনা। আমি সত্যিকার অর্থেই বিভ্রান্ত এসব ভাবতে ভাবতে…আর সব কিছুর সাথে সব কিছু সম্পৃক্ত এ বাস্তবতা জেনে।
কুড়াল? না না
কুড়াল ব্যাবহার কি এ কালে সয়?
ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক করাতের সব দাঁত
গাছের ঠিক বুকে।
গাছটি কাঁদছে গো, কাঁদছে
আমার দু চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
চোখে পড়ল বেশ আলাদা স্বাদের লেখা। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্যে।
@আফরোজা আলম,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আপু! ভাল থাকবেন।
@তামান্না ঝুমু,
এই ফুল তবু আমার নিতে কোন সমস্যা হয়নি; হৃদয়ের ফুলের জন্য আসলে কোন ছেদন-কর্তনের প্রয়োজন হয় না। হৃদয়ের ফুল ফোটানোর সাধনা করতে হবে আমাদের। অবিচ্ছিন্ন প্রকৃতির ফুল আমাদের মনের জমিনকে উর্বর করে আর পরম মমতায় ফুটিয়ে তোলে এক একটি অনবদ্য হৃদয়পুষ্প।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, আপু।
গল্পটি সুন্দর। প্রকৃতিপ্রেম ও রম্যরসে ভরা। (F) (F)এই ফুল কিন্তু প্রকৃতি থেকে ছেঁড়া নয়।
ভালো লাগলো ছোটো গল্পটি (Y) ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত এক ভাইয়ার কাছ থেকে মন্তব্য পেয়ে আমি যারপরনাই খুশী। (F)
চমৎকার কথা! (F)
টাইটেল ধারী প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রকৃতির সবচেয়ে বড়ো শত্রু। বন পাহাড় ধ্বংস করে টবে গাছ লাগানোর কথা কয়। নিয়মিত থাপড়ানো উচিৎ এদের।
@অরণ্য,
একমত নই। হয়ত পালোয়ান কাঠুরিয়া আর তাদের সর্দাররাই সবচেয়ে বড় শত্রু এখনো। তবে অনেক নাগরিক প্রকৃতিপ্রেমি (যার ভিতর হয়ত আমি, আপনিও পড়ি), যারা প্রকৃতিকে ভোগ করতেই চায় শুধু, কোন আত্মত্যাগ করতে রাজী নয়, তাদের কথাই তুলে ধরেছি লেখাটিতে। দেখুন শখের প্রকৃতিপ্রেমে গর্জন গাছের প্রেমে পড়ে অস্থায়ী বাসা বাঁধলেও কিন্তু আবার ফিরে আসে নগরের টানে; আর বৃক্ষপ্রেমের লালসা মেটায় টবের গাছ দিয়ে।
তাহলে সত্যিকারের প্রকৃতিপ্রেমি কে? আমরা যদি এমন সংকল্প করতে পারি যে, কোন নগর হতে দেওয়া হবে না প্রকৃতি ধ্বংস করে, তবেই আমরা হয়ত নিজেদের সলিড প্রকৃতিপ্রেমি দাবী করতে পারব। আমাদের অনুভূতি হওয়া দরকারঃ ”ফিরিয়ে দাও সে অরন্য/লও এ নগর”। তা না হলে, আমরা প্রকৃতিপ্রেমি হতে পারব না; প্রকৃতিভোগীই থেকে যাব।
@কাজি মামুন,
দুঃখিত। আমিও আপনার সাথে একমত নই। অথবা আমি আমার বক্তব্য ঠিক করে বোঝাতে পারিনি আপনাকে।
টাইটেল ধারী প্রকৃতিপ্রেমী বলতে আমি “ডেস্টিনি” বা এইজাতীয় ভণ্ডদের বুঝাতে চেয়েছি। যারা সেমিনার সিম্পজিয়াম মিছিল মিটিং করে প্রকৃতিপ্রেমী বলে নিজেদের জাহির করে। আর ফিরে গিয়ে বন পাহাড় উজাড় করে গড়ে তোলে অট্টালিকার অরণ্য আর টাকার পাহাড়।
একজন কাঠুরিয়া কে আমি মোটেই প্রকৃতির শত্রু বলে মনে করি না। বরং প্রকৃতির অংশ হিসেবেই মনে করি।
তাছাড়া প্রকৃতি মানে শুধু গাছ কিন্তু নয়, আমরা সবাই এর অংশ।
সত্যিকারের কাঠুরিয়া যারা তাঁরা মোটেই বনের ক্ষতি করে না। তাদের গাছ কাটার কিছু নিয়ম আছে, কিছু রীতিও আছে। সুন্দরবন এর কাঠুরিয়া বা মৌয়াল বা এইজাতীয় যারা বনের উপর নির্ভরশীল আপনি যদি তাদের পর্যবেক্ষণ করেন, দেখবেন তাঁরা বনকে বৃক্ষকে দেবতার মত পুজা করে। তাঁরা জানে কোন গাছটা কাটা উচিৎ, কোনটা নয়।
বিলাসিতা! শখ!
দেখুন গাছে গিয়ে বাসা বানালে আর টবে গাছ লাগিয়ে আপনি যদি প্রকৃতির কোন উন্নতি হতো তাহলে ইদ্রিস আলীদের এত কষ্ট করে নিজের খাবারের টাকা বাঁচিয়ে গাছ লাগাতে হতো না।
কারো শখ বা বিলাসিতায় আমার কোন অভিযোগ নেই। টাকা আছে, করতেই পারে। এদের দিয়ে প্রকৃতির কোন ক্ষতি হয়না, তবে কোন উপকারও হয় না।
আপনার বাড়িটা আমাকে দিয়ে আপনি জঙ্গলে চলে যান। জাবেন কি??
তা যখন সম্ভব না, এর মানে হচ্ছে আপনার এই অনুভূতিতে একটু ভুল আছে। এর নাম প্রকৃতি প্রেম না। আর এভাবে হবেও না। যেহেতু আমরা প্রকৃতিরই একটা অংশ, সেহেতু আমাদের প্রকৃতির সঙ্গেই থাকতে হবে।
আদিম মানুষ হয়ে জঙ্গলেও ফিরে যাওয়া যাবে না, এবার অরণ্য ছাড়া ভালো করে বাঁচাও যাবে না।
পরস্পরের পরিপূরক হয়েই বাস করতে হবে।
প্রচেষ্টা ভালো (Y)
চালিয়ে যান। (F) (F)
@অরণ্য,
দুঃখিত, আমি শুধু এদের বুঝাইনি। এরা তো ভণ্ড/ ধূর্ত প্রকৃতিপ্রেমী। এরা আসলে প্রকৃতিপ্রেমী নয়; এরা অর্থ আর সুনামপ্রেমী। আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছি সকল নাগরিক প্রকৃতিপ্রেমিকে (যার মধ্যে এই অধম লেখকও রয়েছে), যারা সুরক্ষিত দালানে বসে প্রকৃতপ্রেমে মাতাল হয়; এরা আসলে প্রকৃতিপ্রেমি নয়; এরা প্রকৃতিভোগী।
আমি কিন্তু আসলে সর্দারদের (মানে সেইসব অর্থলোভী মানুষ যারা আইনি ও বেআইনি সব ধরনের গাছ-বাণিজ্যে লিপ্ত থাকে) তাদেরকেই ‘প্রকৃতির শত্রু’ বলতে চেয়েছি; গরীব কাঠুরিয়া যে অন্ন যোগানোর জন্য গাছ কাটে, তাদের উপর এক হাত নেয়ার কোন প্রবৃত্তিই আমার নেই। তবে লেখাটিতে বলশালী ও পালোয়ান যে লোকের কথা বলা হয়েছে, সে আসলে ঐ বন সর্দারদের প্রতিনিধিত্ব করছে (এভাবেই তাকে রূপায়িত করতে চেয়েছি)। লেখাটি কিন্তু রূপকধর্মী। যদিও সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণের দায়ভার পাঠকদেরই হাতে।
আপনি অন্তত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কোন উপকার হয় না। টবে গাছ লাগানো সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর, আমি আসলে তেমনটা বলতে চাইনি। আমার কথা ছিল যে, টবে গাছ লাগিয়ে আমরা অনেকেই প্রকৃতিপ্রেমে উদ্বেল হই, নিজেদের ভাবতে শুরু করি প্রকৃতির বড় রক্ষাকর্তা, কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখি যে, আমাদের বিলাসবহুল ড্রয়ই রুম বানাতে গিয়ে প্রকৃতির কত অনুষঙ্গকে চিরতরে বিসর্জন দিতে হয়েছে? আজকের এই ঝকঝকে তকতকে নগর-বন্দর-রাজপথ-দালানকোঠা সব কিছু বানাতে বনের পর বন উজাড় করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, যা চোখ মেললেই দেখা যায়। অথচ আজ আমরা এই নগর-দালানে বসেই প্রকৃতি রক্ষার জপ করে যাচ্ছি দিবানিশি। তো একে বিলাসিতা ছাড়া আর কি বলা যায়?
দেখুন, আমি কিন্তু আমার আগের মন্তব্যে বলেছে, আমার গল্পে বর্ণিত প্রকৃতিপ্রেমি আমি বা আপনিও হতে পারি। বস্তুত সকল বৃক্ষপ্রেমি নাগরিকই এই প্রকৃতিপ্রেমি হতে পারে। আর এই প্রকৃতিপ্রেমিদের আমি ‘ভিলেন’ও বানাতে চাইছি না। আমার কথা ছিল, আমরা নিজেদের জন্য প্রকৃতি ধ্বংস করে নগর বানিয়েছি। আর এই নগরে বসেই প্রকৃতি রক্ষার কথা ভাবছি। অথচ সেই ভাবনায় কি কখনো স্থান পেয়েছে স্বার্থত্যাগের কথা; বস্তুত প্রকৃতি রক্ষা করতে হলে নগরেরে চাকচিক্য কিঞ্চিত বিসর্জন দিতে হবে বৈকি।
বুঝলাম; কিন্তু কি করে হবে বলতে পারেন? আস্তে আস্তে প্রকৃতি কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছে। হাজারো চেষ্টায় তাকে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। আমি কিন্তু পুনরায় জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার কথা বলছি না। কিন্তু প্রকৃতিকে পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নাগরিক জীবনের যে পরিবর্তন কাম্য, তার জন্য যে স্বার্থত্যাগ দরকার, তার জন্য ন্যুনতম প্রস্তুতি কি আমাদের রয়েছে? না ইচ্ছে রয়েছে?
পরিশেষে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরার জন্য।
@কাজি মামুন,
একটা কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, ভালোবাসার জন্য কোন প্রস্তুতির দরকার পরে না। যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি ভালবাসতে পারেন। :))
আসুন প্রকৃতি নামের এই প্রেয়সীকে ভালোবাসি। মজার বেপার হচ্ছে, এ এমন এক প্রেয়সী যাকে সবাই মিলে ভালবাসা যায়, চাইলে যেকেউ এর gf বা bf হতে পারে। :))
আর আমার মনে হয় ভালোবাসাটুকু থাকলে, বাকি বিষয়গুলো আপনিই চলে আসবে।
ভালো থাকবেন!
পোষা শব্দটি ব্যাবহার না করে অন্য কিছু ব্যাবহার করা যেতনা?
গাছ প্রকৃতির একটি অংশ। প্রকৃতির সাথে টার মনিব-ভৃত্যের সম্পর্ক কিনা জানিনা কিন্তু মানুষের সাথে তার সম্পর্ক সত্যিই এমন নাকি?
@সাদ বিন শহিদ,
ভাই, আমার লেখাটি স্যাটায়ারধর্মী। সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে বোঝা সম্ভব, এ লেখা প্রকৃতির পক্ষে; প্রকৃতিকে বাঁচানোর কথাই বলা হয়েছে এখানে। শহরের সুসজ্জিত ড্রইং রুমে ততোধিক সুসজ্জিত টবে বৃক্ষ সাজিয়ে আমরা প্রকৃতিপ্রেমে মগ্ন হই ঠিক (এবং তাতে আপত্তিও নেই); কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবে দেখি যে, এই শহর, বিলাসবহুল ড্রইং রুম বানাতে কি পরিমাণ প্রকৃতি ধ্বংস সাধন করতে হয়েছে? আমরা কি প্রকৃতির জন্য সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী?
এখনো বাংলাদেশে প্রকৃতি ধ্বংসের চিত্র চোখ মেললেই দেখতে পাওয়া যাবে। আমাদের নাগরিক সমাজের (যার মধ্যে আমি পড়ি, যেহেতু এই শহরে আমিও বাস করি) মধ্যে বর্তমান এই দ্বৈত অবস্থানকেই তুলে ধরতে চেয়েছি লেখাটিতে কিছুটা রম্য ও রূপকথার আদলে।
পোষা শব্দটি দিয়েই আমাদের সুবিধাবাদী প্রকৃতি-প্রেমকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
সবসময়ে না হলেও ক্ষেত্র-বিশেষে মনিব-ভৃত্য সম্পর্কই বৈকি। রাজা-বাদশাদের হারেম পরিপূর্ণ থাকত অগণিত সুন্দরী নারী দিয়ে, যাদের সাথে রাজা-বাদশারা অবসর সময় কাটাত। বলতে পারেন, ঐ নারীরা রাজার প্রেয়সী ছিল না ভৃত্য ছিল?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
(F) (F)
@ঢাকা ঢাকা,
অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া। আপনার উৎসাহ আমাকে আরো ভাল লেখায় উদ্বুদ্ধ করবে। ভাল থাকবেন।
আমার এক ছাত্রী ছিল, একদিন আমাকে ফুল ছিড়তে দেখে বলেছিল, “ফুল পছন্দ করেন বলে ফুল ছিড়লেন। আচ্ছা, আপনি বাচ্চা পছন্দ করেন না? তাই বলে কি তার গলা কেটে টেবিলে সাজিয়ে রাখেন?” বড়ই মনে ধরেছিল কথাটা।
@প্রতিফলন,
মুক্তমনায় আমার প্রিয় লেখকদের একজন আপনি। আপনার মন্তব্য তাই আমাকে বিশেষ আনন্দ দিয়েছে।
অন্তঃসারশূন্য নাগরিক প্রকৃতিপ্রেমের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি লেখাটিতে। যে নাগরিক বিলাসবহুল ফ্লাটে বসে প্রকৃতিপ্রেমে মগ্ন, সে কখনো ভেবেও দেখে না, তার জন্য এই আরামপ্রদ আবাসন নিশ্চিত করতে কি পরিমাণ প্রকৃতি ধ্বংস করতে হয়েছে। আমরা কি পারব প্রকৃতির জন্য আমাদের আধুনিক বিলাসব্যসনকে ত্যাগ করতে? সামান্য পরিমান হলেও?
উপরে রাহাত মুস্তাফিজ ভাই খুব ভাল মন্তব্য করেছেন। আমাদের মেকি বৃক্ষবিলাস সবকিছুকেই বনসাই করে ফেলতে চাইছে; হয়ত আমরা একটি ‘বনসাই সভ্যতার’ দিকেই এগুচ্ছি।
ভাল থাকবেন, ভাইয়া।
এখানে শেষ হয়ে গেলে, কেমন হয়? শেষের তিন প্যারা কয়েকবার পড়েও যা মনে এলো, বলে ফেললাম। তবে শেষ কথা হলো লেখক; এখানে স্রষ্টা।
আর হ্যাঁ, লেখাটা নিয়ে আর একটু সময় ব্যয় করলে, মনে হয় আরো ভাল হতো।
ধন্যবাদ।
@স্বপন ভাই,
আমিও ভেবে দেখলাম, ওখানে শেষ হলে আসলেই লেখাটি আলাদা একটা মাত্রা পায়। যেহেতু মুল বার্তাটি দিয়েই শেষ করা যায় লেখাটি তাহলে। কিন্তু পোষা গাছের ভালবাসা হারানোর শংকায় অপ্রকৃতিস্থ প্রকৃতিপ্রেমীর কথা কিভাবে বলা যেত?
মন্তব্য ও উৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভাল লেগেছে গল্প। প্রকৃতি ও পরিবেশ বান্ধব বক্তব্য, রম্যরসও আছে। (Y)
@শাখা নির্ভানা,
অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে।
ভয়ে ভয়ে ছিলাম; ফালতু, উদ্দেশ্যবিহীন, সারবত্তাহীণ আর বাস্তবতাবর্জিত লেখা হিসাবে আখ্যায়িত হবার সমূহ আশংকা ছিল। যাহোক, আপনার মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, সেরূপ নাও ঘটতে পারে। আপনি লেখার উদ্দেশ্যটি ভালমতই বুঝতে পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে।
প্রথমে লেখককে ধন্যবাদ জানাই। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ‘– শহুরে মেকি পরিবেশে বৃক্ষ প্রেম অনেকটা ‘বৃক্ষ বিলাস’ এর মত। পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন এর এই কালে সবকিছু কেমন যেন বনসাই হয়ে যাচ্ছে । সবকিছুতে মানিয়ে নেয়ার, অভ্যস্ত হবার অর্থাৎ যেনতেনভাবে মেনে নেবার প্রতিযোগিতা চলছে।
লেখাটি সুন্দর,যদিও অনেক বানান ভুল আছে।
শুভেচ্ছা রইল।
@রাহাত মুস্তাফিজ,
অসাধারণ! পুরো লেখাটিকে এক কথায় প্রকাশ করতে সক্ষম আপনার এই বাক্যটি। লেখাটির জন্য এর চেয়ে ভাল মূল্যায়ন হয়ত সম্ভব নয়!
আপনি যদি ভুলগুলো দেখিয়ে দিতেন, তা হলে শুধরে নিতে পারতাম। তবে একটা কথা বলা দরকার, লেখাটিকে রম্য আদল দেয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু প্রচলিত শব্দকে অন্যরকম করে লিখেছি; যেমনঃ কাঠোরি (যেমন বাঁশ থেকে বাঁশরি, তেমনি কাঠ থেকে কাঠোরি), যাতনাবিষ্ট (যাতনায় আবিষ্ট), কুঠ্রাঘাত (কুঠারের আঘাত) ইত্যাদি।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন।