সভ্যতার প্রায় আদিকাল থেকেই একের পর এক ধর্মের উৎপত্তি হয়ে চলেছে । মজার ব্যাপার , এই ধর্ম গুলির আচার আচরণের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের যুক্তি গুলি সেই শুরু থেকে একই রকম রয়ে গেছে , তা সে ধর্মীয় তাত্ত্বিক আলোচনার ক্ষেত্রেই হোক বা কোনো সামাজিক সংস্কারের ইস্যুতে । যে ধরনের যুক্তি কোন হিন্দু ধর্মীয় বই তে পাওয়া যায় , একই ধরনের যুক্তি পাওয়া যায় ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মীয় গ্রন্থগুলিতে । যুক্তিগুলি যতই ভ্রান্ত হোক না কেন , সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এবং চাতুর্যপূর্ণ পরিবেশনের কারণে সেই আদি কাল থেকেই বেশিরভাগ মানুষকে অল্প বিস্তর প্রভাবিত করে ।
ফেসবুকে যখন থেকে নিয়মিত হলাম তখন থেকেই মনে হয় ধর্মীয় যুক্তি গুলির দোষ গুলি নিয়ে একটু লেখা দরকার । জানানো দরকার ধর্মীয় যুক্তি গুলির ভুল কিভাবে ধরা যায় । আর যেহেতু আমি যুক্তিবিদ্যার স্টুডেন্ট তাই এই কাজের দায় আমি এড়িয়ে যেতে পারি না । এবং সেই প্রচেষ্টা তেই আমার এই লেখা ।
যুক্তিবিদ্যায় সমস্ত যুক্তি কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয় । ছাঁচে ঢালা (ফর্মাল) যুক্তি ও বেছাঁচে (ইনফরমাল) যুক্তি । ছাঁচে ঢালা যুক্তি হল গণিতের মতো ব্যাপার । বেশি তত্ত্ব কথা না বুঝেও কষে ফেলা যায় । ছাঁচে ঢালা যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতাও নির্ণয় করা যায় কয়েকটি সূত্র প্রয়োগ করে , ঠিক গণিতের মতোই । কিন্তু বেছাঁচে যুক্তি (ইনফরমাল) এরকম ছাঁচে ঢালা নয় । সাধারণ মানুষের কথায় প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হওয়া এই ধরনের যুক্তি কে গণিতের মতো একে ছাঁচে ঢালা যায় না । সহজে সূত্র প্রয়োগে উত্তর বেরোয় না । যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতাও বুঝে ওঠা এক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে , কেননা , সাধারণ মানুষের অনেকে তার বিন্দু- বিসর্গ ও জানে না । আর যারা যুক্তিবিদ্যার স্টুডেন্ট তারা এই ধরনের যুক্তি নিয়ে আলোচনা প্রায় করেই না । তাদের আলোচনা মূলত কেন্দ্রীভূত আধুনিক গাণিতিক যুক্তি , সাঙ্কেতিক যুক্তি ইত্যাদি ফর্মাল বা ছাঁচে ঢালা যুক্তি নিয়ে । তাই ধর্মীয় বক্তা কিম্বা ধার্মিক রা যখন কুশলী শব্দ প্রয়োগ করে যুক্তি বা বক্তৃতা দেন , তখন সাধারণেরা তো বটেই, অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও অসহায় হয়ে পড়ি । বাধ্য হই তাদের বক্তব্য মেনে নিতে । তাই প্রত্যেক কে এই ধরনের যুক্তির দোষ গুলির সাথে একে একে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই—–
দোষ ১) প্রমানাভাবের সুযোগ নেওয়া :- অনেক সময় দেখা যায় যে ধর্মীয় বক্তা রা সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এই ধরনের যুক্তি দেন—- “ ঈশ্বর সত্য , কেননা , কেউ এখনো প্রমাণ করতে পারেনি যে ঈশ্বর মিথ্যা” । কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে না পারা কখনো ঈশ্বরের সত্য হওয়া কে প্রমাণ করতে পারে না । এই যুক্তির উত্তরে পাল্টা যুক্তি দিলে বিষয় টি বোঝা যায় , “ ঈশ্বর নেই , কেননা কেউ এখনো প্রমাণ করতে পারেনি যে ঈশ্বর সত্য ” । এই ধরনের যুক্তি গুলিতে যে দোষ ঘটে তা হল প্রমানভাবের সুযোগ নেওয়ার দোষ ।
দোষ ২) বিতর্কিত বিশেষণ প্রয়োগের দোষ :- ধর্মীয় বক্তা দের বিতর্কিত বিশেষণ প্রয়োগ করতে দেখা যায় । উদাহরণ স্বরূপ , “—–তসলিমার দ্বিখণ্ডিত নামক ওই পর্ণোগ্রাফিক ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ছড়ানো বইটির ছাড়পত্র যে কিভাবে সরকার দেয় !” এখানে আবেগ ভরা এবং বিতর্কিত “পর্ণোগ্রাফিক” ও “ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ছড়ানো”—এই দুটি শব্দ কিন্তু দ্বিখণ্ডিত বইটির বিশেষণ হিসাবে প্রমাণিত নয় । তাই এই শব্দ দুটি এই বইটির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আবেগ কে উস্কানি দিতে সক্ষম হলেও যুক্তির দিক থেকে এটি দোষ দুষ্ট । কেননা , প্রযুক্ত বিশেষণ বিতর্কিত ও অপ্রমাণিত ।
দোষ ৩) নজির উল্লেখের দোষ :- সাধারণত ধর্মীয় বক্তৃতায় এই দোষের বাহুল্য লক্ষ্য করা যায় । এই দোষ টি খুব ইন্টারেস্টিং । আমার একটি খুব পছন্দের বক্তা এটার অসাধারণ প্রয়োগ করেন । যুক্তি গুলি এরকম হয়—- “ নারীর অধিকার পুরুষের অর্ধেক । কেননা , কোরআনের সুরা নম্বর অমুক , আয়াত নম্বর অমুক এ এটা বলা আছে ।” সমস্যা হল । এই উক্তি আদৌ সেই বই তে আছে কিনা তা শ্রোতার পক্ষে সঙ্গে সঙ্গে পরখ করে নেওয়া সম্ভব হয় না । আর সত্যিই যদি তা থেকেও থাকে , তাহলেও যুক্তি হিসাবে তা দোষ যুক্ত । কেননা ,পূর্বে কোনও বইতে বা কারো বক্তব্যে এই কথার সমর্থন থাকাটা এই কথার সত্যতা প্রমাণ করে না । এই নজির উল্লেখের দোষ প্রকৃত পক্ষে এক ধরনের প্রতারণা । এবং ধর্মীয় বক্তা রা এটা অতি চাতুর্যের সঙ্গে খুব সফল ভাবেই প্রয়োগ করে থাকে।
দোষ ৪) জবরদস্তি মূলক যুক্তি :- এটি এমন এক প্রকার দোষ যেখানে , প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর মাধ্যমে কাজ হাসিলের অর্থাৎ নিজের বক্তব্য মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় । যেমন , “অবশ্যই ইসলাম আল্লাহ-র মনোনীত একমাত্র ধর্ম ।এবং আমাদের সকলের উচিত তা গ্রহণ করা । কেননা আল্লাহ-র অগোচর কিছুই নেই । অবিশ্বাসী দের জন্য কঠিন আযাব অপেক্ষা করে আছে । এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান ।” এখানে প্রথম দুটি বাক্যের সমর্থনে কোনও যুক্তি না দেখিয়ে কেবল ভয় দেখিয়ে মেনে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা চলছে ।
দোষ ৫) প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির অজুহাত :- অনেক সময় ধার্মিক রা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির অজুহাত দিয়ে থাকেন । যেমন । “ ঈশ্বর আছেন , কেননা আইনস্টাইন নিজে বলেছেন যে তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন ।” কিম্বা “ অমিতাভ বচ্চনের মতো ব্যক্তিও সম্প্রতি এক প্রখ্যাত জ্যোতিষীর কাছে হাত দেখিয়েছেন । অত এব , জ্যোতিষ বিদ্যা কে কিভাবে অগ্রাহ্য করা যায় ?” কিন্তু সমস্যা হল , সেই প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কি আলোচ্য বিষয়ে বলার মতো স্পেশালিষ্ট ? কিম্বা তিনি কি অন্যত্র এই বিষয়ে অকাট্য কোনও যুক্তি দিয়েছেন ?— তাহলে যুক্তি ছাড়া কেন আমরা তাদের নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নেবো ? এই ধরনের যুক্তি গুলি কোনও যুক্তি ই নয় । বরং নিজের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তির বদলে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির সমর্থন দ্বারা বক্তব্যের ভার বাড়ানোর অপচেষ্টা ।
দোষ ৬) সাধ্যস্বীকার দোষ :- সাধ্য বলতে বোঝায় ‘প্রমাণের বিষয়’ অর্থাৎ যাকে প্রমাণ করতে হবে(এখনো প্রমাণিত হয়নি) । কোনও বিষয় কে প্রমাণ করতে গিয়ে যদি দেখা যায় যে , প্রমাণের বিষয় কে আগে থেকেই ধরে নিয়েই তা প্রমাণের চেষ্টা চলছে , তাহলে একে বলা হবে সাধ্য স্বীকার দোষ । যেমন এই কথোপকথন টি —
কঃ-আল্লাহ আছেন ।
খঃ- কি করে জানলে ?
কঃ- কেননা কোরআনে আছে । এবং কোরআন অভ্রান্ত ।
খঃ- কেন ? কে বলল কোরআন অভ্রান্ত ?
কঃ- কোরআন অভ্রান্ত কেননা কোরআন আল্লাহ-র ই বানী ।
এই যুক্তি টির সরলীকরণ করলে দাঁড়ায় — ‘আল্লাহ-র বাণী অনুযায়ী আল্লাহ আছেন । অতএব আল্লাহ আছেন ।’ অর্থাৎ প্রমাণের বিষয় (আল্লাহ আছেন) টি প্রমাণের আগেই বক্তা ‘ক’ স্বীকার করে নিয়ে(আল্লাহ-র বাণী)-ই তা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। সুতরাং এখানে ক এর যুক্তি দোষ দুষ্ট এবং দোষ টির নাম হল সাধ্যস্বীকার দোষ ।
দোষ ৭) শাস্ত্রের দোহাই :- ধর্মীয় বক্তা দের বক্তব্যের বহুক্ষেত্রে দেখা যায় কোন একটি শাস্ত্র বাক্য উল্লেখ করে বলতে – “যেহেতু শাস্ত্র বাক্যে এই কথা বলা হয়েছে , তাই তা সত্য ।” কিন্তু এই যুক্তি ভ্রান্ত । কেননা শাস্ত্রের বহু বাক্য আজ ভুল বলে প্রমাণিত । তাই শাস্ত্রবাক্য মানেই তা অভ্রান্ত—একথা মানা যায় না । তাছাড়া শাস্ত্র বাক্য গুলির অর্থ অনেক সময় এতটাই অস্পষ্ট হয় যে ,দশ জন ব্যাখ্যাকারী তাকে দশ ভাবে ব্যাখ্যা করেন । তাই শাস্ত্রে থাকাই কোন বাক্যের সত্যতা কে প্রমাণ করতে পারে না । এই প্রকার দোষ কে বলা হয় , শাস্ত্রের দোহাই দেওয়ার দোষ ।
দোষ ৮) মধ্যপন্থার অজুহাত :- আমরা দেখি ,অনেক সময় একটি বিশেষ প্রশ্নে দুই টি চরম বিরোধী সমাধানের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে । সেক্ষেত্রে আমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করি । এবং এটাই বাঞ্ছনীয় । কিন্তু এই দুটির মধ্যে কোন এক পক্ষের সমাধান অধিক সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও যদি মধ্যপন্থার কথা বলা হয় , তাহলে তা সাধারণত মানুষ কে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হলেও তা আসলে মধ্যপন্থা নয় বরং মধ্যপন্থার অজুহাত । যেমন । “— আপনারা জানেন যে , ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি তে নারীর অংশিদারীত্ব স্বীকার করে না , যা নারীর প্রতি অবিচার । আবার সেক্যুলার সরকার নারীর সমানাধিকারের কথা বলে । কিন্তু একথা তো জলের মতো পরিষ্কার যে আল্লাহ তালাহ পুরুষ কে নারীর তুলনায় অধিক মর্যাদা দিয়েছেন । শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে অধিক সক্ষম করে সৃষ্টি করেছেন । তাই আল্লাহ-র মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামেনারীর অধিকার স্বীকৃত এবং সঙ্গত ভাবেই টা পুরুষের অর্ধেক । সমানও নয় , শূন্যও নয় । এই মধ্যপন্থা ইসলামের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়েছে , তাই ইসলাম ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ ।” — এটি নির্ভুল যুক্তি মনে হলেও , আসলে মধ্যপন্থার অজুহাতে নারীর সমানাধিকারের দাবী কে গলা টিপে মারার চেষ্টা ।
দোষ ৯) ব্যক্তিগত আচরণ দূষণের দোষ :- একটি জলসা তে বলতে শুনেছিলাম , “—–এখন আবার একদল লোক বলতে শুরু করেছে তারা নাকি ধর্ম মানে না । বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ধর্ম নাকি গুরুত্ব হীন হয়ে পড়েছে । এবং দুর্ভাগ্যবশত এদের অনেকেরই মুসলিম পরিবারে জন্ম ।(এরপর ভদ্রলোকের গলা সপ্তমে চড়ে গেল ) প্রশ্ন করুন সেইসব নাস্তিক দের ! তাদের নাম কি ইসলামি নয়? তাদের পিতামাতার বিয়ে কি ইসলামি রীতি তে হয়নি ? তাদের মৃত্যুর পর কি ইসলামি রীতি তে জানাযা পড়া হবে না ?—–” ইত্যাদি ইত্যাদি । বক্তার বাক্য গুলি ওই নাস্তিক ব্যক্তিদের কথা ও কাজের অসঙ্গতি দেখালেও অর্থাৎ তাদের ব্যক্তিগত আচরণের দোষ দেখাতে সক্ষম হলেও তাদের বক্তব্য কে (বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ধর্ম নাকি গুরুত্ব হীন হয়ে পড়েছে) মিথ্যা প্রমাণ করার যুক্তি হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় । এই দোষ টিকে বলা হয় ব্যক্তিগত আচরণ দূষণের দোষ ।
দোষ ১০) ব্যক্তিগত আক্রমণের দোষ :- ধর্মীয় যুক্তির দোষ গুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ব্যক্তিগত আক্রমণ । কোন ধর্মীয় জলসায় তসলিমা নাসরিন বা হুমায়ুন আজাদ এর মতো স্বাধীনচেতা দের প্রসঙ্গ উঠলেই এর মাত্রাধিক প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায় । যেমন , একটি জলসায় তসলিমার প্রসঙ্গে বক্তা বলে উঠলেন , “… ওই নচ্ছার , বেশ্যা মেয়েছেলে ,যে সমস্ত নারী জাতির কলঙ্ক ,সে আবার নারীর অধিকার শেখাচ্ছে ! আজ এই জলসায় সমস্ত বিশ্বাসী নারী দের কাছে আমার প্রশ্ন , আপনারা কাকে আদর্শ করবেন ? হজরত আয়েশা ,হজরত ফাতেমা, না বেশ্যা তসলিমা ?” — এই বক্তব্য তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষ দের তসলিমার প্রতি ঘৃণা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেও ,নারীর অধিকার সম্পর্কে তার বক্তব্য কে মিথ্যা প্রমাণ করার পক্ষে একেবারেই অকেজো । এই ভাবে যুক্তির পরিবর্তে প্রতিপক্ষ কে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করা হলে এই দোষ কে ব্যক্তিগত আক্রমণের দোষ বলে ।
পরিশেষে, একটি কথা বলা দরকার । আর তা হল , যেহেতু এই ধরনের কথ্য ভাষায় প্রযুক্ত যুক্তিগুলির বিশেষ কোন ছাঁচ নেই । তাই একাধিক যুক্তি অনেক সময় মিশ্রিত করে আরও জটিল ভাবে উপস্থাপন করা হয় । আবার কখনো একটি যুক্তি তে একাধিক দোষ ও দেখা দিতে পারে । শ্রোতা কে সেই দিক গুলি খেয়াল রাখতে হবে ।
——-
( এই বিষয়ে যুক্তিবিদ্যার অভিধান , ও রমাপ্রসাদ দাসের বই থেকে পারিভাষিক শব্দ গুলি নেওয়া হয়েছে । কয়েকটি ইনফরমাল লজিকের ইংরেজি বই এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে । এই বিষয়ে বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় কোন কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নাই । তাই রেফারেন্স চাইবেন না প্লিজ ।:-) আর আপনাদের যদি কোন রেফারেন্স জানা থাকে দয়া করে জানান । আমি এই বিষয়ে আরও কাজ করতে চাই । )
লেখাটা পরে মনে হচ্ছে লেখক আসলে ইসলাম সম্পরকে কিছুই জানেন না, কারন ইসলাম আপনাকে অন্ধ বিশ্বাস করতে বলে না। আপনি ইসলাম বিশ্বাস করবেন কি করবেন না সেটা আপনার ব্যাপার।কিন্তু আপনি একটা ধর্মের যোক্তিগুলু খন্ডন করতে হলে আগে আপনাকে সেই ধর্মের যোক্তিগুলু জানতে হবে। আপনি কি নিজে কখনো কুরআন পরে দেখেছেন কুরআনে কি বলেছে ?
@tanvir ahed saifulla, আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি ? এই লেখা টা ইসলাম নিয়ে নয় । বিষয় টা যুক্তিবিদ্যার । আমার পক্ষে ইসলামি উদাহরণ দিতে সুবিধা বলে দিয়েছি । আমার যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক এটাকে ভালো লেখা বলেছেন । আপনি হয়তো এটা কে আমার অন্য লেখা গুলোর মতো ধর্ম বিষয়ে লেখা ভেবেছেন ! যুক্তি বিদ্যা সম্পর্কে ই আপনার বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই । বাকি দের কমেন্ট পরেও কি বুঝলেন না !! :-Y
@মহসিনা খাতুন, (Y)
আপনার যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক ভাল বললে সেটা যদি ভাল হয় তাহলে ধর্মীয় নেতা ভাল বললে সেটা ভাল। কমেন্ট এর কথা বলছেন তাহলে নাস্তিক এর চেয়ে আস্তিক বেশি তাদের কথায় সঠিক বলে ধরে নেব।যুক্তি এমন দিবেন যা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করবেনা।
অনেক মজা পাইলাম।
এই দোষগুলো কি আপনার চিন্তানুসারে ক্রমান্বয়ে (১ থেকে ১০) সাজানো? যদি তা না হয়, তাহলে দোষগুলোর ক্রমের ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে আগ্রহী।
@প্রতিফলন, একেবারেই আম্মার চিন্তানুসারেই সাজানো । কোনও রেফারেন্স না পেয়ে সাজানোর ব্যাপারে সমস্যায় পরেছিলাম । কয়েকবার আলাদা ভাবে সাজিয়ে দেখলাম । এইটা ভালো লাগলো কেন জানি না । তাই এই ক্রম টাই দিলাম । 🙂
@মহসিনা খাতুন,
“বিতর্কিত বিশেষণ প্রয়োগের দোষ” এর চেয়ে “নজির উল্লেখের দোষ” কিংবা “সাধ্যস্বীকার দোষ” এর অবস্থান আরো উপরের দিকে হওয়া উচিত না কি? সাধারণত কেউ যখন কোন কিছু “ধর্মীয় যুক্তি”-তে বলার চেষ্টা করে, তখন মূলতঃ কোরানের উল্লেখ করে ও এর সপক্ষে নানান ধরনের নজির দিতে থাকে। আর এরপর কোরানের কথার দিকে চলতে থাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং ধরনের যুক্তি, যার মধ্যে বিতর্কিত বিশেষণ, ব্যক্তিগত আক্রমণ এসব আসে।
আমার কাছে, যুক্তির দোষ হিসাবে “প্রমাণাভাবের সুযোগ নেয়া”-র সাথেই আসে “সাধ্যস্বীকার দোষ”। মারাত্মক ধরনের বেসিক ভুল এটি এবং এটা করে প্রায় সবাই। অপ্রমাণিত তথ্যকে সত্য হিসেবে ধরে নিয়ে যে যুক্তি দেয়া হয় সেটা যে ভুল এটা বুঝার ক্ষমতাটুকু, এমনকি ইচ্ছাটুকুও নাই, বুঝিয়ে দিতে গেলে বরং ক্ষেপে যায়।
আরেকটা ব্যাপার আছে। ইসলামের কোন কোন বিধানের সাইড-ইফেক্ট হিসেবে ভাল কিছু থাকলে সেটাকে আল্লাহ’র আগে থেকে জানা থাকা বলে চালিয়ে দেয়া এবং এর সূত্র ধরে বাকি সবও আল্লাহ ঠিক জানেন ও ঠিক বলেছেন বলে রায় দেয়া। যেমন ধরুন, সুন্নতে খাতনার কথা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তাররা একে চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহার করে। আমি অনেকবার এর উল্লেখ শুনেছি। উল্লেখ্যঃ উদাহরণ হিসেবে এখানে কেবল ইসলামকে আনা হলেও সব ধর্মের ক্ষেত্রেই কম-বেশি সত্যি এটা।
@প্রতিফলন, প্লিজ আপনি একটা ক্রম বলে দিন । আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে বিচার করব । ক্রমের ব্যাপারে আমি খুব একটা ভাবি নি । কিন্তু আপনার ভাবনা টা দিলে, আমার পরের লেখা থেকে মন সরাতে হয় না ! প্লিজ ! তাছাড়া পি এইচ ডি এর কাজ এর জন্য খুব ব্যস্ত থাকি । টাই সময় দিতে পারি না বেশি ।
@মহসিনা খাতুন,
এক দ্রুত চিন্তায় আমার ক্রমটা এরকমঃ
প্রমাণাভাবের সুযোগ নেওয়া
সাধ্যস্বীকার দোষ
শাস্ত্রের দোহাই
নজির উল্লেখের দোষ
প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির অজুহাত
ব্যক্তিগত আচরণ দূষণের দোষ
ব্যক্তিগত আক্রমণের দোষ
জবরদস্তি মূলক যুক্তি
বিতর্কিত বিশেষণ প্রয়োগের দোষ
মধ্যপন্থার অজুহাত
আপনার ১ নং পয়েন্টের ক্ষেত্রে একটা বিষয় উল্লেখ যোগ্য
আপনার উপস্থাপনাতে মনে হয় আস্তিক ও নাস্তিক দু’দলকেই এই দোষে দুষ্ট বলা যায়। কিন্তু দেখেন, মানব সমাজের শুরুতে তো ঈশ্বর ধারনা ছিলনা, তারপর কেউ একজন প্রথমে ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে “Burden of proof” পড়ে ঈশ্বরের প্রবক্তার উপর। আইনের ভাষায় “the necessity of proof always lies with the person who lays charges.” সুতরাং, ঈশ্বর যে আছেন তা প্রমান করা আস্তিকদের দায়িত্ব, নাস্তিকদের ঈশ্বর নাই এটা প্রমান করার দরকার নাই। আর তাই, নাস্তিকদের উপর এই দোষ চাপানো যায় না।
@সোহেল চৌধুরী,
যথার্থ কথা। কিন্তু আসলে সেই সময় এ ছাড়া তারা আর কি করতে পারত। তবে এই একবিংশ শতাব্দীতে পশ্চিম ইউরোপে দীর্ঘদিন বাস করে কেউ যদি বিশ্বাস করে , শীত কাল আসে দোজখের শ্বাস গ্রহনের ফলে, গরম কাল আসে প্রশ্বাস ছাড়ার ফলে, তাকে আপনি কি বলবেন?
@সোহেল চৌধুরী,
এটা আমি ও জানি । আমি ভেবে চিন্তেই আমি ১ নম্বর যুক্তির দোষ টা দিয়েছি । আমি তাদের নাস্তিক দের পাল্টা যুক্তি দিয়ে দেখাতে বলেছি কোন কিছু প্রমাণ করতে নয় , বরং এই কাড়নেই ওই যুক্তি টা দিতে বলা যাতে ধার্মিক বক্তা যুক্তির দোষ টা বুঝতে পারেন ।
২) বার্ডেন অফ প্রুফ এর ব্যাপারটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক । এটা যুক্তির দোষের ব্যাপার নয় , বরং আন্তর্জাতিক আইন এর ব্যাপার । (এই কথা ফেসবুকে আমি একাধিক ধার্মিক কে বোঝানোর চেষ্টা করেছি ) এখানে কার কি দায়িত্ব সেটা মোটেই বিচার্য নয় । আর আপনি যে বিষয়ে প্রুফের কথা বললেন , সেটা তো আমি শুধু উদাহরণ হিসাবে দিয়েছিলাম ।
@মহসিনা খাতুন,
আমি কিন্তু আপনি জানেন না তা বোঝাতে চাই নি, বা আপনাকে জানাতেও কথাটা বলি নি। আপনার সেরকম মনে হলে আমি খুবই দুঃখিত। আপনার “প্রমানাভাবের সুযোগ নেওয়া” পয়েন্টটা আস্তিক ও নাস্তিক উভয় প্রেক্ষিতে পড়তে গিয়ে এ ব্যাপারটা মনে পড়ল বলে তা শেয়ার করলাম।
‘এখানে কার কি দায়িত্ব’ সেটা অবশ্যই আপনার লেখার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। তবে সংশ্লিষ্ট কি নয়? লেখক হিসাবে প্রসংগের আওতায় থাকা তো আপনার ব্যাপার, আমি পাঠক হিসেবে আপনার লেখা পড়তে গেলে সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু মনে পড়বে, সেটা স্বাভাবিক। আর তার কিছুটা শেয়ার করার জন্যই তো ব্লগ। তবে আপনি নিরুৎসাহিত করলে বিনীত ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে নিবৃত্ত করে নেব বৈকি। সর্বোপরি আপনার ব্লগে আপনার অভিরুচি প্রাধান্য পাওয়াই উচিত।
ধন্যবাদ
@মহসিনা খাতুন
বিশ্লেষণগুলো ভালোই লাগল।ধন্যবাদ।
দারুন । অসাধারন একটা লেখা ।
interesting. তবে আরো বড় স্কেলে হলে ভালো হত।
@হাসনাত সুজন, বুঝতেই পারছেন ! রেফারেন্স ছাড়া খুব খারাপ অবস্থা ! অবশ্যই চেষ্টা করব । আরও লিখতে ।
জম্পেশ একখান লেখা! (Y)
দারুন লেখা। পারলে সিরিজ করুন।
@অ বিষ শ্বাসী, ধন্যবাদ । চেষ্টা করবো অবশ্যই । 🙂
🙂
লেখে যান অবিরত।
@সৈকত চৌধুরী, চেষ্টা চালাচ্ছি ।
(F)
অসাধরন ভাল হয়েছে।
@ঢাকা ঢাকা, 🙂