আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম সম্প্রতি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের কয়েকজন সম্মানিত সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সামনে একাত্তরের মানবতা বিরোধী বিচার সংক্রান্ত কর্মকান্ড নিয়ে একটি বক্তব্য পেশ করেন। তার বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কিভাবে তদন্ত ও বিচারের উন্নত মানদন্ডের নীতিসমুহ পূঙ্খানুপূঙ্খ অনুসরণ করে তা বর্ণনা করেন। আইসিএসএফ এর অনুবাদ টিম ইংরেজিতে দেওয়া বক্তৃতাটি বাংলায় অনুবাদ করে। যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলোর প্রতিনিয়ত বিচারের মান নিয়ে করা মিথ্যাচারে যারা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়ী এবং একই সাথে যারা পুরো পক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেতে চান লেখাটি তাদের কাজে লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশ বিষয়ক সভা: যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জবাবদিহিতা প্রসঙ্গে মতবিনিময়
দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের সম্পর্কবিষয়ক কমিটি
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০১২
কক্ষ ১ই-২, আলতেইরো স্পিনেল্লি ভবন,
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ব্রাসেলস
বক্তব্য –
জিয়াদ-আল-মালুম
এডভোকেট
প্রসিকিউটর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সন্মানিত সদস্যবৃন্দ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
১. প্রথমেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনের সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেবার জন্য। বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের অপরাধসমূহের বিচারের দাবীকে সবসময় সমর্থন জানিয়ে আসার জন্যও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ইয়োরোপীয় পার্লামেন্টে ইতোপূর্বে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা, বিশেষ করে ২০০৫ সালে যখন আপনারা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের সন্মুখীন করার দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
২. এছাড়াও ধন্যবাদ জানাই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ (ICDB) এবং বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (BASUG)-কে, এই সভায় আমার উপস্থিতির আয়োজন করার জন্য।
৩. বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (অভিশংসন) টীমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে সন্মানিত বোধ করছি। চেষ্টা করছি বক্তব্যের কলেবর সংক্ষিপ্ত রাখবার।
“১৯৭৩ সালের আইন” এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা
৪. আপনারা অবগত আছেন যে, ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া অপরাধসমুহের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে আমাদের প্রায় ৪১ বছর লেগে গিয়েছে। তৎকালীন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ (“১৯৭৩ সালের আইন”) প্রণয়ন করেন গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধ সমুহ সংঘটনকারী ব্যক্তিবর্গের তদন্ত ও বিচারের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আইন যার ভেতর রয়েছে – ট্রাইব্যুনালের কাঠামো, বিচার্য অপরাধ এবং সেসবের সংজ্ঞাসমূহ, বিচারের কার্যপ্রণালী, সাক্ষ্য প্রমাণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী, ট্রাইব্যুনাল এবং এর বিচারকদের ওপর স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব আরোপ এবং তদনুযায়ী নিশ্চয়তা, মানোত্তীর্ণ স্বচ্ছ বিচার, অভিযুক্তের ন্যায্য অধিকার রক্ষা, তদন্ত গ্রেফতার, আটকাবস্থা এবং জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত বিধানাবলী, ভিকটিম ও উভয়পক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দোষী সাব্যস্ত হবার পর সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের বিধান, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে বিস্তারিত কার্যবিধি প্রণয়নে বিচারকদের ক্ষমতা ইত্যাদি বিধান।
বিচারকবৃন্দ, প্রসিকিউশন টীম এবং তদন্ত সংস্থা
৫. এই আইনের অধীনে মার্চ ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেন এবং একই সাথে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদেরও নিয়োগ দেন। বিচারকদের মধ্যে দু’জন হচ্ছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারক, এবং অপরজন হচ্ছেন ৩০ বছরের বিচারিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জ্যেষ্ঠ জেলা জজ যিনি সুপ্রীম কোর্টে বিচারক হবার যোগ্যতাসম্পন্ন। একই সময়ে ট্রাইব্যুনালের অংশ হিসেবে তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টীম গঠন এবং সে সবে তদন্তকারী অফিসারদের এবং প্রসিকিউটরদের নিয়োগ দেয়া হয়।
৬. ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরগণ সকলেই বহু বছরের আদালতের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজ্ঞ, যারা প্রত্যেকেই ফৌজদারী আইন এবং বিচার বিষয়ে সুদক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এছাড়াও গত দু’বছরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে প্রসিকিউটরগণ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন এর তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক বিভিন্ন দিকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি, প্রসিকিউটরগণ বিচারহীনতার পরিবেশে সমাপ্তি ঘটানোর পক্ষাবলম্বকারী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গের সাথে মত এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ও বিচারবিষয়ক তাদের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিচারাধীন মামলাসমূহ
৭. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন আটটি পৃথক মামলার কাজ পাশাপাশি চলছে। প্রত্যেকটি মামলা রয়েছে বিচার প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল একটি মামলার (দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর) সাক্ষীদের সাক্ষ্য শুনছেন। আরও ছয়টি মামলা রয়েছে যেগুলো এখন চূড়ান্ত অভিযোগ গঠনের ঠিক পূর্বস্তরে (মামলাগুলো হল: গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে)। অষ্টম এবং সর্বশেষ মামলা (যেটি আব্দুল আলীম এর বিরুদ্ধে) এখনও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এই বিচার প্রক্রিয়ার প্রকৃত স্বরূপ
৮. চলমান এই বিচার প্রক্রিয়ার সঠিক মূল্যায়ন করতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে এই প্রক্রিয়ার প্রকৃতি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করতে হবে। ১৯৭৩ সালের এই আইনটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংসদে পাশ করা একটি দেশীয় আইন। আরও যেটা মনে রাখতে হবে তা হল, প্বথিবীর অন্যান্য স্থানের অন্যান্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল থেকে বাংলাদেশের এই বিচার প্রক্রিয়া সকল অর্থেই ভিন্ন। কারণ, বাংলাদেশের এই বিচার প্রক্রিয়া কোনো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কিংবা আন্তর্জাতিক সমঝোতার ফল নয়। এই আইন যেই বিচার প্রক্রিয়ার পত্তন করেছে সেটি সম্পূর্ণভাবে একটি দেশীয় বিচার প্রক্রিয়া। এক কথায়, এই ট্রাইব্যুনাল কোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নয়, এটি একটি দেশীয় ট্রাইব্যুনাল যা “আন্তর্জাতিক অপরাধ” এর বিচার করছে। এই পুরো প্রক্রিয়ার একটি মাত্র “আন্তর্জাতিক” উপাদান হলো এখানে বিচার্য অপরাধের ধরন সংক্রান্ত। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এই আইনে উল্লেখ করা অপরাধসমূহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের একটি অংশ, কিন্তু ১৯৭৩ সালের আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের প্রচলিত সেই ধারণাগুলোকেই বাংলাদেশের দেশীয় আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা এবং আসামীর নির্দোষিতার পূর্বধারণা
৯. এই ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন এবং এই ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সম্মত বিচার করতে আইনত বাধ্য [সেকশন ৬(২এ)]। অভিযুক্তরা ‘সন্দেহাতীতভাবে দোষী’ (beyond reasonable doubt) সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘নির্দোষ’ (presumption of innocence নীতির অংশ হিসেবে) বলে বিবেচিত হবেন। অভিযুক্তের অধিকার সংক্রান্ত বিচারিক এই উচ্চ মানদণ্ডের বিষয়টি এভাবেই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে সুষ্পষ্টভাবে বিধৃত আছে, যা এই ট্রাইব্যুনাল অনুসরণ করে।
আটক, তদন্ত ও জামিনের ক্ষেত্রে প্রদত্ত সুরক্ষা
১০. বিচারপূর্ব ধাপে তদন্তকালীন সময়ে এই আইন এবং বিধিমালা অভিযুক্তের অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বেশ কিছু সুরক্ষা প্রদান করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অভিযুক্তদের অনির্দিষ্টকালের জন্য কিংবা দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকমূলক হেফাজতে রাখা যায় না, যে সুরক্ষা এমনকি অন্য অনেক আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রেও অনুপস্থিত। এ আইনে সুস্পষ্ট ভাবে অভিযুক্তের বিচারে অযথা কালক্ষেপণ এড়ানোর কথা উল্লেখ করা রয়েছে, যাতে অভিযুক্তকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশী সময় আটক থাকতে না হয়। শুধু তা-ই নয়, আইন অনুযায়ী প্রসিকিউটরগণের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে যাতে তারা নিয়মিত ট্রাইবুনালের বিচারকদের সামনে তদন্ত এবং চার্জ গঠনের অগ্রগতির প্রতিবেদন (progress report) পেশ করেন। এর লক্ষ্য হল – বিচারকরা যাতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি এবং তার আটকাবস্থার ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সন্তুষ্ট হতে পারেন। বলাই বাহুল্য, তদন্তাধীন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাজতে রাখার লক্ষ্য হল – আসামী যাতে সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট করতে না পারে, সাক্ষীদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করতে না পারে, কিংবা অন্য কোনভাবে তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে। এরপরও ১৯৭৩ সালের আইনে জামিনের কোন বিধান না থাকা সত্ত্বেও ট্রাইবুনালের বিচারকরা তাদের সুবিবেচনা থেকে অভিযুক্ত আবদুল আলীম এর ক্ষেত্রে পুরো তদন্তকালীন সময়টিতেই জামিন মঞ্জুর করেছেন। আবার অপর এক অভিযুক্ত গোলাম আজম এর ক্ষেত্রে তার বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় এনে ট্রাইবুনাল এমনকি পুরো তদন্তের সময়টিতেই তাকে এমনকি গ্রেফতারও করেননি। আসামী গোলাম আজমকে কেবল তখনই হাজতে নেয়া হয় যখন ট্রাইবুনালের বিচারকগণ প্রসিকিউশনের কাছ থেকে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (formal charge) পেয়ে আসামীর সম্ভাব্য অপরাধ বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়ে তা আমলে (cognizance) নেন। গোলাম আজমের ক্ষেত্রেও আইনে তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির মুক্ত থাকার কোন সুযোগ না থাকলেও ট্রাইব্যুনাল নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করে আসামীর মুক্ত থাকা নিশ্চিত করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদকালীন সুরক্ষা
১১. আইনানুসারে তদন্তকারী অফিসাররা এবং প্রসিকিউটরগণ তদন্ত চলছে এমন যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ (Interrogation) করতে পারেন। তবে এখােন যে বিষয়টি উল্লেখ করা জরুরী তা হল – জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামীর দেয়া কোনো তথ্য অথবা স্বীকারোক্তি আদালতে ব্যবহার কিংবা প্রমাণ হিসেবে ট্রাইবুনালে উপস্থাপন করা যাবে না। এই বিধানের মাধ্যমে কার্যত আইন অভিযুক্তকে কেবল নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য (self incrimination) দেয়ার হাত থেকে রক্ষাই করে না, অভিযুক্তের প্রতি জিজ্ঞাসাবাদের সময় বলপ্রয়োগকেও নিরুৎসাহিত করে। এ পর্যন্ত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদানের সাথে সাথে ট্রাইব্যুনাল এমন কিছু অনন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা : ক) এই আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই কিন্তু ট্রাইবুনাল তার সুবিবেচনা প্রয়োগের মাধ্যমে আসামীর অধিকার সুরক্ষা করেছেন, খ) বাংলাদেশের অন্যান্য আইনে অন্যান্য অভিযুক্তের ক্ষেত্রে যে সব সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ কখনোই ব্যবহার কিংবা প্রয়োগ করার কোন নজির নেই, গ) এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশেই যে সব সুরক্ষার নজির নেই। যেটা সবার জানা থাকা দরকার তা হল – ট্রাইব্যুনালের আদেশে প্রত্যেকটি জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্তের আইনজীবি এবং একজন চিকিৎসক উপস্থিত থাকেন, যাদের দু’জনই বিরতির সময় অভিযুক্তের সাথে আলোচনা করতে পারেন, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন ধরণের বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন। তদন্তকারী অফিসার এবং প্রসিকিউটরগণ শুধুমাত্র একবারই সীমিত সময়ের জন্য অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পান এবং তাও ট্রাইব্যুনালের নির্দিষ্ট করে দেয়া সময়ে। একটি মামলায় অভিযুক্তের শারীরিক অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল ক্ষেত্রবিশেষে অভিযুক্তের নিজ বাসগৃহেও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করেছেন। যেমন: আব্দুল আলীম এর ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসার ও প্রসিকিউশন জামিনে থাকা অভিযুক্তের বাসায় যান এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন চিকিৎসক ও তার নিজের আইনজীবীর উপস্থিতিতে। আমার জানা নেই পৃথিবীর আর কোনো বিচারপ্রক্রিয়ায় আসামীর জন্য এরকম ব্যবস্থার নজির আছে কি না! আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এভাবেই অভিযুক্তের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তার প্রতি প্রদর্শন করেন সর্বোচ্চ সহানুভুতিশীল আচরণ।
শুনানির ও আইনজীবী লাভের অধিকার, নিজকে নির্দোষ প্রমাণের অধিকার ও অ্যালিবাই
১২. ন্যায়বিচার পাবার জন্য প্রাপ্য সবধরনের সুরক্ষা অভিযুক্তের জন্য সুলভ করা হয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই ‘নির্দোষিতার পূর্বধারনা’ এবং ‘অভিযুক্তের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ’ এর মানদন্ডের কথা বলেছি। তাছাড়া আইন পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দিয়েছে যে একই অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে দু’বার অভিযুক্ত করা যাবেনা। এই ট্রাইব্যুনালের অভিযুক্তদের রয়েছে উম্মুক্ত আদালতে অনুষ্ঠিত বিচারকার্যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের অধিকার। শুনানি চলাকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে আইনত যোগ্য যে কোনো আইনজীবীর সাহায্যে অভিযুক্ত নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণের সুবিধা পাচ্ছেন। সার কথা হচ্ছে, অভিযুক্তকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ না দিয়ে কোনোভাবেই তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়না এই ট্রাইব্যুনালে, তাকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কিংবা নিজেকে দোষী ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়না, যা পূর্বেই বলা হয়েছে। অভিযুক্তের অ্যালিবাই (alibi) যদি বিফল হয় কিংবা অভিযুক্ত যদি তার অ্যালিবাই প্রমাণ করতে ব্যার্থ হয়, এমনকি তখনও তা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়না, এই বিষয়েও আইনের নির্দেশ খুবই স্পষ্ট।
সাক্ষ্য প্রমাণ, ভিকটিম ও উভয়পক্ষের সাক্ষীর নিরাপত্তা
১৩. সাক্ষ্য-প্রমাণের গ্রাহ্যতার (admissibility of evidence) ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল অন্যান্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বহুল চর্চিত মানদণ্ড “probative value নীতি” অনুসরণ করে। এই ট্রাইব্যুনাল দ্বারা পরিচালিত বিচার প্রক্রিয়া আরও কিছু কারণেও অনন্য। এ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের আইনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিচার প্রক্রিয়ায় ‘সাক্ষী ও ক্ষতিগ্রস্তের নিরাপত্তা প্রদান’ এর বিধি প্রণয়ন করেছে যার সুবিধা অভিযুক্ত ও প্রসিকিউশান নির্বিশেষে উভয়পক্ষই পাচ্ছেন। এর আগে বাংলাদেশের কোনো আদালতে সাক্ষী বা ক্ষতিগ্রস্তের নিরাপত্তার এই বিষয়টিই বিবেচ্য ছিলনা। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার নিশ্চিতকরণে সাক্ষী ও ক্ষতিগ্রস্তের নিরাপত্তা প্রদানের এই ব্যবস্থা, আমার মতে এই ট্রাইব্যুনালের সুদূরপ্রসারী অবদান হিসাবে বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকেও সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মিডিয়ার সামনে আদালতের প্রকাশ্য শুনানি
১৪. এই ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া প্রকাশ্যে হওয়ার ফলে ন্যায়বিচার শুধুমাত্র সম্পন্নই হবে না বরং তা যেন জনসমক্ষে দৃশ্যমান হয় তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদল থেকে শুরু করে মিডিয়া সম্পর্কিত যে কেউ এই ট্রাইব্যুনালের সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ, বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবেন। আসন সংখ্যার সীমাবদ্ধতা ছাড়া দর্শক অংশগ্রহণের বিষয়ে আর কোনোরূপ বিধিনিষেধ নেই।
আইনসংক্রান্ত ও অন্যান্য দাবী উত্থাপনের জন্য উভয়পক্ষকে পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান
১৫. এ যাবৎ আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালের কাছে বেশ কয়েকটি দাবী নথিভুক্ত করেছে যার মধ্যে জামিন মঞ্জুরের আবেদন থেকে শুরু করে, অভিযোগপত্র (indictment order), এমনকি ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের অব্যাহতির আবেদন(recusal) পর্যন্তও রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ধৈর্য্যের সাথে নিখুঁতভাবে প্রতিটি অভিযোগ ও দাবী শুনেছেন কোনো আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে। উল্লেখ্য, বাদী বা বিবাদী, কোনোপক্ষেরই তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, উভয় পক্ষকেই উম্মুক্ত আদালতে শুনানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
একটি অভিজ্ঞ ফোরামের সম্মুখে বিচারকার্য পরিচালনা, অপরাধী সনাক্তকরণ, দণ্ডাদেশের নির্ধারিত মাত্রা (proportionality requirement of sentence), এবং আপীল করার বিধান
১৬. এমনকি এই ট্রাইব্যুনালে যখন অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হবে এবং অপরাধ প্রমাণিত হবে, তখনও আইন অনুযায়ী তাকে কেবল তার অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী দণ্ডপ্রদানের নির্দেশ রয়েছে ১৯৭৩ সালের আইনে, ঢালাওভাবে শাস্তিবিধান নয়। এছাড়াও দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের নিকট রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এখানে উল্লেখ্য যে, ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের অন্যান্য আদালতের মতো নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রস্তাব ও আরজি শুনানির ক্ষেত্রে, তদন্তের অগ্রগতির দিকে লক্ষ্য রাখা এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল, বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের সাক্ষী/ক্ষতিগ্রস্তের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ, দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডাদেশ ঘোষণার সকল দায়িত্ব একটি অত্যন্ত বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ বিচারক প্যানেলের ওপর ন্যস্ত, যা বাংলাদেশের অন্যান্য বিচারিক আদালতের (trial courts) থেকে অনেক বেশী উচ্চ মান সম্পন্ন। পূর্বে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে, বর্তমাল ট্রাইব্যুনাল সুপ্রীম কোর্টের দু’জন বিচারক দ্বারা গঠিত যাদের সাথে রয়েছেন ৩০ বছরের বিচারিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন প্রবীণ জেলা জজ।
সমাপনী বক্তব্য
১৭. বাংলাদেশে রয়েছে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা এবং সমৃদ্ধ আইন চর্চার ইতিহাস, যা অন্যান্য কমনওয়েলথ সদস্যদেশগুলোর আইনী ঐতিহ্যের অংশীদার। অতীতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের আইনী ব্যবস্থার মান নিয়ে আশংকা প্রকাশের কোনো কারণ কখনোই ঘটেনি (যা তাদের অসংখ্য রিপোর্ট থেকে প্রমাণিত), এখনো তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ দেখিনা। এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট ১৯৭৩ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে নিয়েই গড়ে উঠেছে- যা বাংলাদেশের সেই আইনী ঐতিহ্যেরই একটি ধারাবাহিকতা। একজন প্রসিকিউটর হিসেবে এবং একজন আইনজীবী হিসেবে আমার রয়েছে প্রায় ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে আইন চর্চার, একজন মানবাধিকার আইনজীবিী হিসাবে জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করেছি মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে। আমি এতোটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে – আমার টিমের সদস্য এবং আমি, আমরা সবাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এবং এটি শুধু ক্ষতিগ্রস্তের জন্যই নয়, অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন এই বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আপনাদের প্রকৃত উপলদ্ধি এবং সমর্থন, যা আপনারা অতীতেও জ্ঞাপন করেছেন। আমরা বুঝতে পারি, এরকম একটি সংক্ষিপ্ত সভা সমগ্র বিষয়ের উপর পরিপূর্ণ আলোকপাত করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ, নিঃসংকোচে জানাতে পারেন আপনাদের জিজ্ঞাসা, মতামত এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বিষয়ক যে কোনো ভাবনা, যার জবাব আমরা প্রসিকিউটর টিম এর পক্ষ থেকে দিতে প্রস্তুত। ৪০ বছর পর বিচারের যে গুরু দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পণ করা হয়েছে সে বিষয়ে আমরা সচেতন, তাই আমরা এ ধরনের উদ্যোগকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি।
সবাইকে ধন্যবাদ আপনাদের মূল্যবান সময় ও মনোযোগের জন্য।
যদিও বাংলাদেশের সিআরপিসি ১৮৯৮ ( সংশোধিত ২০০৯) অনেকটাই ইংলিশ কমন ল- এর আদলে বানানো, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট ১৯৭৩ – এ মূল ভুখন্ডীয় ইউরোপীয় ধারার রোমান ল -এর বহুল প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এটা একটা ভালো দিক এবং এ কারনে ইউরোপীয় কমিশনের অবস্হান বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ইতিবাচক হবে বলে মনে হয়।
@সংশপ্তক,
আসলে বিভাজনটা কমন’ল-রোমান’ল না হয়ে কমন’ল-সিভিল’ল (বা কমন-কন্টিনেন্টাল বিভাজন) বোঝাতে চেয়েছেন মনে হয়। রোমান আইন এর অবদান কিন্তু দু’টোর ক্ষেত্রেই বেশ উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন ১৯৭৩ এ দুই ট্র্যাডিশনেরই সংমিশ্রন ঘটেছে, একথা ঠিক, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (কমিশন নয়) এর সমর্থন-বিরোধিতা আসলে নির্ভর করছে অন্য কিছু বিষয়ের ওপর। আইসিএসএফ এর পরবর্তী ওয়ার্কশপে এই বিষয়গুলো আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে পারবো আশা করি। অনুরোধ থাকলো এই একাউন্টটির দিকে নজর রাখার কারণ আমরা চেষ্টা করবো এই একাউন্টের মাধ্যমেই নোটিফিকেশনগুলো শেয়ার করার।
ধন্যবাদ।
@রায়হান রশিদ, ধন্যবাদ পোস্টটির জন্য, আইসিএসএফ এর পরবর্তী ওয়ার্কশপের কি ডেট পড়েছে? ‘৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের ভূমিকাটা কী হবে? তাদের কি করণীয় কিছু আছে, নাকি আন্তর্জাতিকভাবে সচেতনতা তৈরি করার জন্য বা সহমত গড়ে তোলার জন্য এই সেশনগুলো করা হচ্ছে?
@বন্যা আহমেদ,
ক’দিন আগেই একটা হয়ে গেল। পরের ওয়ার্কশপের দিন এখনো স্থির হয়নি, হলেই আর সব সাইটের পাশাপাশি মুক্তমনাতেও আইসিএসএফ একাউন্টের মাধ্যমে আমরা জানাতে পারবো আশা করছি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গত ৩১ জানুয়ারী যে শুনানীটি হয়ে গেল তার পুরো ভিডিওটি আইসিএসএফ এর ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে, এখানে:
ভিডিওটিতে দু’টো বিষয় লক্ষনীয়। এক, সেশনটির সভাপতি জিন ল্যামবার্ট এর মন্তব্যগুলোতে ই-ইউ’র আসল দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত রয়েছে। আরেকটি বিষয় হল – এই শুনানীটি ছিল আমাদের বিচারের পক্ষের মানুষদের জন্য একটি সুযোগ – প্লাটফর্মটিকে ভালভাবে কাজে লাগিয়ে কিছু অপ-প্রচারের জবাব দেয়ার।
আর সে সুযোগ আসলে আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি তার জন্য একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। তা হল – ইউরোপীয় পার্লামেন্টের হিয়ারিংটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের স্বীকৃতি নিয়ে ছিল না, মৃতের কিংবা ধর্ষিতের সংখ্যা, কিংবা ‘৭১ এর বিচারহীনতার নিরসনে ইইউ’র সমর্থন চাওয়া নিয়েও ছিল না। কারণ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই ওসব বিষয় নিয়ে তিনটি পৃথক রেজোল্যুশন পাশ করে রেখেছে আমাদের পক্ষে – পূর্ণ সমর্থন এবং একাত্মতা জানিয়ে।
এই হিয়ারিং এর মূল বিষয় ছিল একদমই আলাদা – ওদের কাছে এখন বিচার্য হল – আমাদের বর্তমান ট্রাইবুনাল due process and fair standards মানছে কি মানছে না, যা নিয়ে ডিফেন্স টিম আগেভাগেই ইইউ পার্লামেন্টকে কয়েক শত পৃষ্ঠার সমালোচনামূলক লিগ্যাল ব্রিফ দিয়ে রেখেছে (এর কপি সেখানে উপস্থিত প্রত্যেক বক্তাকেই আগেভাগে দেয়া হয়েছে)। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ডিফেন্স টিমের লবিইং তৎপরতার বদৌলতে এখন প্রায় কনভিন্সড যে বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়ার মান নিয়ে কিছু সংশয়ের যথেষ্ট অবকাশ আছে! সুতরাং, সেটার বিপরীতে ওদের বোঝানোই ছিল (বা বলা যায়, হওয়া উচিত ছিল) ৭১ পক্ষের উপস্থিত ডেলিগেটদের মূল লক্ষ্য।
আমাদের পক্ষের বক্তাদের দিক থেকে এটা ছিল আসামী পক্ষের যাবতীয় স্পেসিফিক সমালোচনার জবাব দেয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ। কারণ তারা যা বলে আসবেন আসামী পক্ষের সমালোচনার প্রত্যুত্তরে কেবল প্রাসঙ্গিক সেই অংশটুকুকেই ইইউ পার্লামেন্ট তাদের পরবর্তী রেজোল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত করবে বলে ধরে নেয়া যায়। সেই বিচারে এ্যামবাসাডর ইশরাত জাহানের বক্তব্য, এবং প্রসিকিউটর জেয়াদ-আল-মালুম এর বক্তব্য, যা এখন প্রোসিডিং এর অংশ (লিখিত টেক্সটটির কথা বলছি, যার অনুবাদ এখানে প্রকাশিত হয়েছে), ছিল মূল বিষয়ের ওপর। তুরিন আফরোজের বক্তব্যে, অন্য বিষয়ে অন্য অনেক কথার মাঝে অবশ্য “মানদন্ডের সার্বজনীনতার” পয়েন্টটিও উঠে এসেছে, যা এই শুনানির জন্য প্রাসঙ্গিক ছিল।
আইসিএসএফ এর ড আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং আমারও এই শুনানীতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনিবার্য জটিলতার কারণে আমি যেতে পারিনি, জিয়া ভাই উপস্থিত ছিলেন। পার্লামেন্ট ভবনে সেদিন আসামী পক্ষের প্রতিনিধিদের বাইরে যে ক’জন উপস্থিত যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, এর প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ যদি কেউ থাকে থাকেন, সেটা ছিল “একমাত্র” জিয়া ভাই। এতো বক্তার “ভিড়ে” অথচ উনাকেই কিন্তু বলবার জন্য সময় দেয়া হয়নি, তিনি উপস্থিত ছিলেন যদিও! (বিচারের খুঁটিনাটি নিয়ে খুব কাছ থেকে প্রতিদিন কাজ করছে আইসিএসএফ এর লিগ্যাল টিম, তাই ভেতরের বাইরের খবরগুলোর, চিন্তাগুলোর, সীমাবদ্ধতাগুলোর সবই জিয়া ভাই এবং আইসিএসএফ এর টিমের সদস্যরা খুব ভালভাবে অবগত)।
খুব দরকারি পোস্ট বলেই মনে হচ্ছে। তবে আমি আইন কানুন বেশি বুঝিনা। বিবেক বুদ্ধির চাইতে বড়ো কোন ট্রাইব্যুনালও খুজে পাই না। 🙂