আবুল কাশেম

নানা কারণে এই ধারাবাহিক রচনাটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত ছিল। বাকী অংশ এখন নিয়মিত প্রকাশের আশা রাখছি।

[রচনাটি এম, এ, খানের ইংরেজি বই থেকে অনুবাদিত “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” গ্রন্থের ‘ইসলামি ক্রীতদাসত্ব’ অধ্যায়ের অংশ এবং লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশনের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হলো।]

ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ৮

লেখক: এম, এ, খান

উত্তর আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাসদের ভোগান্তি: সুলতান মৌলে ইসমাইল ১৬৮৭ সালে যখন ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলস্থ ফ্রান্সের সুরক্ষিত শহর তারোদান্ত দখল করে বাসিন্দাদেরকে তরবারির ডগায় হত্যা করেন, সেখানে ১২০ জন ফরাসিকে ক্রীতদাস হিসেবে কব্জা করা হয়। সুলতানের জন্য শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাসরা ছিল অতি লোভনীয় ও মূল্যবান উপহার। বন্দি করার পর তাদেরকে খোঁচাখুঁচি করে উত্তেজিত করা হয় ও অধিক খাদ্যে পুষ্ট ঘোষণা দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য খাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখা হয়। যখন তারা খাদ্যের জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দেয়, তখন সুলতান আদেশ দেন তাদেরকে লং-মার্চ করিয়ে রাজধানী মেকনেসে নিয়ে যেতে। ক্রীতদাসদের একজন জিন লাদায়ার ফরাসি যাজক ডোমিনিক বুস্নতের কাছে ৩০০ মাইল পথের সে ভয়ঙ্কর যাত্রার বর্ণনা দেন। বেড়ি পড়ানো ও শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় তাদেরকে পশু-পালের মতো তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়; তারা দুর্বলকারক অসুস্থতা ও অবসাদ-ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে; তাদের কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মৃতদের মস্তক ছিন্ন করে জীবিতদেরকে দিয়ে বহন করানো হয়, কেননা রক্ষীরা ভয় পাচ্ছিল যে, সংখ্যায় কমে যাওয়া বন্দিদেরকে বিক্রি করার বা পালিয়ে যেতে দেওয়ার অভিযোগে ভয়ঙ্কর সুলতান তাদেরকে অভিযুক্ত করতে পারেন।[১০৩]

আটককৃত ক্রীতদাসদেরকে আফ্রিকায় ‘মাতামোর’ নামে পরিচিত ভূগর্ভস্থ অখ্যাত কারাকক্ষে অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত করুণ অবস্থায় গাদাগাদি করে রাখা হতো, প্রত্যেক মাতামোরে ১৫ থেকে ২০ জন করে। তার মধ্যে আলো ও বায়ু চলাচলের একমাত্র উৎস ছিল ছাদে একটা ক্ষুদ্র লোহার জাফরি। শীতকালে সে জাফ্রি দিয়ে বৃষ্টি পড়ে মেঝেতে বন্যা বইয়ে দিতো। সাপ্তাহিক বাজার বা হাটের দিন তাদেরকে বের করে এনে নিলামে তোলা হতো। বন্দিদেরকে সে জাফরির উপর থেকে ঝোলানো রশি বেয়ে বাইরে আসতে হতো। এসব ভূগর্ভস্থ অন্ধকার কুঠুরিতেই তাদেরকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটাতে হতো। বন্দি জার্মেইন মুয়েট সেসব মাতামোরে বসবাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়ে লিখেছেন: ‘‘ভেজা শীতের মাসগুলোতে মাঝে মাঝে কর্দমাক্ত মেঝে থেকে ময়লা পানি ও আবর্জনা ফুলে-ফেপে উঠতো।’’ বছরের ছয় মাসই সেসব কক্ষের মেঝেতে হাটু-পানি বিরাজ করতো, যা বন্দিদের ঘুম হারাম করে দিতো। শোয়ার জন্য ছিল পেরেকের সাথে ঝুলন্ত দড়িতে চাটাইয়ের বিছানা, যার একটা থাকতো আরেকটার উপর। সবার নিচে যারা শুতো, পানি প্রায় তাদের পিঠ স্পর্শ করতো। মাঝে মাঝেই উপরের বিছানার দড়ি ছিঁড়ে নিচের সবাইকে নিয়ে কাদা-পানির মধ্যে পড়ে যেতো এবং সে রাত্রি তাদেরকে বরফের মত ঠাণ্ডা পানিতে দাঁড়িয়েই কাটাতে হতো।

ভূগর্ভস্থ সে কুঠুরিগুলো এতই ছোট ও গাদাগাদি করে ভরা হতো যে, তাদেরকে সবার পা মাঝখানে রেখে বৃত্তাকারে শুতে হতো। মুয়েট লিখেছেন: ‘‘একটা মাটির পাত্র রাখার স্থানটুকু ছাড়া কক্ষের ভিতর একটুও খালি জায়গা থাকতো না যে তারা একটু আরামে থাকবে।’’ মুয়েট আরো লিখেছেন: ভেজা গ্রীষ্মকালের দিনগুলোতে মাতামোরগুলোর ভিতরটা মানুষের ঠাসাঠাসির কারণে ‘নোংরা, দুর্গন্ধময় ও পোকা-মাকড়ে’ ভরে উঠতো এবং ‘‘সবচেয়ে বেশি অসহ্য হয়ে উঠতো সব ক্রীতদাস যখন ভিতরে আসতো ও সেখানে পোকা-মাকড় জন্মাতো’’; অবস্থা এমন হয়ে উঠতো যে, ভিতরের বাসিন্দাদের জন্য মৃত্যুও আশীর্বাদজনক স্বস্তি ছিল, বলেন মুয়েট।[১০৪]

যুগ যুগ ধরে উত্তর আফ্রিকার ক্রীতদাসদের জন্য এটাই ছিল বসবাসের সাধারণ ব্যবস্থা। প্রায় এক শতাব্দ পূর্বে ১৬২০-এর দশকে আটক হওয়া ব্রিটিশ বন্দি রবার্ট অ্যাডামস্ ইংল্যান্ডে তার পিতামাতার কাছে একটি চিঠি পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। চিঠিটিতে তিনি বর্ণনা করেন সুলতান মৌলে জিদানের (রাজত্ব ১৬০৩-২৭) ক্রীতদাস-খোঁয়াড়ের জীবনযাত্রা বা অবস্থার কথা। অ্যাডামস্ লিখেন: ‘‘একটা ভূগর্ভস্থ কুঠুরি, যেখানে আমাদের ১৫০ থেকে ২০০ জনকে একত্রে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। একটা ছোট্ট ফোঁকড় ছাড়া ভিতরে আলো আসার কোনো রাস্তা নেই।’’ তার চুল ও ছেঁড়া-ময়লা কাপড়-চোপড়, লিখেন অ্যাডামস্, ‘‘কীট ও পোকা-মাকড়ে ভরে গিয়েছে, কিন্তু সেগুলো সরানোর সময় দেওয়া হয়না আমাকে… সেগুলো যেন আমাকে খেয়ে ফেলছে।”[১০৫]

মাতামোরে গাদাগাদি করে রাখা বন্দিরা খানা-খাদ্য পেতো সামান্য, কখনো কখনো ‘রুটি ও পানি ছাড়া আর কিছুই না’। নিলামের দিন বাজার পর্যন্ত সারাটা পথ তাদেরকে চাবুক দিয়ে প্রহার করতে করতে বন্য জন্তুর মতো তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। নিলাম-বাজারে তাদেরকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জনতার মধ্য দিয়ে এক ব্যবসায়ী থেকে আরেক ব্যবসায়ীর কাছে নেওয়া হতো। তাদের শক্তি ও কর্মপটুতা পরীক্ষা করার জন্য তাদেরকে লাফ-ঝাঁপ দিতে হতো। তাদের কান ও মুখের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দিয়ে একটা নিদারুণ লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর দৃশ্যের অবতারণা করা হতো।[১০৬] অথচ এসব হতভাগ্যরা কিছু দিন আগেও ছিল সম্মানিত মুক্ত ও মর্যাদাবান মানুষ ।

মালিক বা প্রভুর বাড়িতে বা আওতাধীনে আসার পরও ক্রীতদাসদের ভোগান্তি শেষ হতো না। ১২ বছর বয়সী ব্রিটিশ বালক টমাস পেলোকে ধরা হয়েছিল একটা জাহাজ থেকে; সে সুলতান মৌলে ইসমাইল কর্তৃক ক্রীত হয়ে তার রাজপ্রাসাদে এসে পড়ে (পেলো মারাত্মক ঝুকি নিয়ে পালিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে নিজের কাহিনী বর্ণনা করেছিল)। পেলো ও তার সাথিরা মরুভূমির মধ্য দিয়ে ১২০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে রাজধানীতে পৌঁছুলে প্রাসাদের বাইরে সমবেত শত্রুমনা মুসলিম জনতা, যারা তাদের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য খ্রিষ্টানদেরকে উপহাস ও গালিগালাজ করতে জমা হয়েছিল, তাদের দ্বারা ভয়ানক ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হয়। উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাদেরকে প্রাসাদে নেয়ার সময় চিৎকার করে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, এমনকি আক্রমণের চেষ্টাও করছিল। সুলতানের রক্ষীদের পাহারা সত্ত্বেও জনতার মধ্যে অনেকেই তাদেরকে ঘুষি ও চাবুক মারতে এবং মাথার চুল উপড়ে দিতে সক্ষম হয়।[১০৭]

রাজপ্রাসাদে পেলোকে প্রাথমিকভাবে সুলতানের বিশাল অস্ত্রাগারে শত শত ইউরোপীয় ক্রীতদাসের সঙ্গে কাজ করতে হয়। অস্ত্র মেরামত ও বিশুদ্ধ চকচকে রাখার জন্য তাকে প্রতিদিন ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। অচিরেই তাকে সুলতানের পুত্র যুবরাজ মৌলে আস্-সফার কাছে দেওয়া হয়। খ্রিষ্টান ক্রীতদাসদের প্রতি যুবরাজের ছিল প্রচণ্ড ঘৃণা। পেলো লিখেছে: “যুবরাজ পেলোকে চরমভাবে প্রহার ও প্রচণ্ড নির্যাতন করতো। তাকে সকাল থেকে রাত্রি অবধি যুবরাজের ধাবমান ঘোড়ার পিছে পিছে অযথা দৌঁড়াতে হতো।” পরে যুবরাজ তার রীতি মাফিক এ বলে পেলোকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য চাপ দেয় যে, “ধর্মান্তরিত হলে আমি চড়ার জন্য একটি সুন্দর ঘোড়া পাব এবং আমি তার একজন একান্ত বন্ধু হতে পারবো।” পেলো সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা না বলতে তাকে অনুরোধ করলে ক্রোধান্বিত আস্-সফা বলে: “তাহলে যে নির্যাতন-নিপীড়ন তোমার উপর আসছে তার জন্য প্রস্তুত হও। তোমার একগুয়েমি আচরণ সেটাই পাওয়ার যোগ্য।” এরপর আস্-সফা পেলোকে কয়েক মাস একটা কক্ষে আটকে রেখে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করে। “প্রত্যেক দিন আমাকে মারাত্মকরূপে বেত্রাঘাত করা হতো”, লিখেছে পেলো।[১০৮]

এ রকমটা ছিল ইউরোপীয় ক্রীতদাসদের জন্য সাধারণ শাস্তি। বন্দিদের দুই পা রশি দিয়ে বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে প্রহার করা হতো। সাধারণত দুই পায়ের পাতায় আঘাত করা হতো। ফাদার বুস্নত জানান: সুলতান মৌলে ইসমাইল দু’জন ক্রীতদাসকে ৫০০ ঘা বেত মারার আদেশ করেন; এর ফলে তাদের একজনের কোমর স্থানচ্যুত হয়ে যায়; অন্যদিন আরেক দফা বেত মেরে স্থানচ্যুত কোমর স্বস্থানে পুনঃস্থাপিত করা হয়।[১০৯]

পেলো লিখেছে: আস্-সফা ব্যক্তিগতভাবে তাকে প্রহার করতো এবং বলতো: “শেহেদ, শেহেদ। কুনমুরা, কুনমুরা! অর্থাৎ মুর (মুসলিম) হয়ে যা, মুর হয়ে যা।” এরূপ প্রাত্যহিক প্রহার তার জন্য অসহনীয় হয়ে পড়ে, কেননা প্রতিদিন প্রহারের মাত্রা বাড়তে থাকে। দিনের পর দিন তাকে অভুক্ত রাখা হতো; যেদিন খাবার দিতো, তা হতো শুধুমাত্র রুটি ও পানি। মাসের পর মাস এরূপ দুর্ভোগের পর, লিখেছে পেলো, ‘‘এখন আমার উপর নির্যাতন অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেল… হাত-পায়ের মাংস পুড়িয়ে হাড় থেকে পৃথক করা হচ্ছিল, যা স্বেচ্ছাচারীটা আমার উপর চরম নিষ্ঠুরতার সাথে পুনঃপুনঃ প্রয়োগ করতো।’’ অর্ধ-ভুখা পেলোর উপর নির্যাতন ও যন্ত্রণা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে, তখন একদিন আস্-সফা আরেকরার তাকে প্রহার করতে এলে, লিখেছে পেলো, ‘‘ঈশ্বরকে ডেকে ক্ষমা করে দিতে বললাম, যিনি জানেন, আমি কখনোই মন থেকে সম্মতি দেই নি।’’[১১০] কয়েক দশক আগে মরক্কোতে আটবার কূটনৈতিক মিশনে আসা জন হ্যারিসন (১৬১০-৩২) লিখেছেন: ‘তিনি (সুলতান) কিছু ইংরেজ বালককে জোর করে মূর (মুসলিম) বানিয়েছিলেন।’[১১১]

ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে ইউরোপীয় ক্রীতদাসদের নির্যাতন শুধু পুরুষদের উপরই সীমাবদ্ধ ছিল না; নারী ক্রীতদাসদেরকেও একইভাবে নির্যাতন করা হতো। বার্বার জলদস্যুরা বার্বাডোসগামী একটি ব্রিটিশ জাহাজে হানা দিয়ে লুটপাট করে ও কর্মচারীদরকে বন্দি করে মৌলে ইসমাইলের প্রাসাদে নিয়ে আসে। বন্দিদের মধ্যে ছিল চার মহিলা, যাদের একজন অবিবাহিতা। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস ব্রুকস উল্লেখ করেছেন, উল্লসিত সুলতান সে অবিবাহিতা বন্দিকে প্রলুব্ধ করতে থাকেন খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করার জন্য। সুলতান প্রতিশ্রুতি দেন: ‘‘সে যদি মূর (মুসলিম) ও তার শয্যাসঙ্গিনী হয়, তাহলে সে প্রচুর পুরস্কার পাবে।’’ মেয়েটার অস্বীকৃতি সুলতানকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং সুলতানের নির্দেশে ‘‘তার খোজা রক্ষীরা তাকে চাবুক দিয়ে পেটাতে থাকে যতক্ষণ না সে মৃতের মতো ঢলে পড়ে।’’ এরপর সুলতান তাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন এবং পচা রুটি ব্যতীত তাকে আর কিছুই খেতে দেওয়া হয়না। অবশেষে ‘‘হতভাগী তার শরীর সুলতানের কাছে সঁপে দিতে বাধ্য হয়, যদিও এতে তার হৃদয়ের সায় ছিল না,’’ লিখেছে ব্রুকস। এরপর সুলতান তাকে ধুয়েমুছে ভাল কাপড়-চোপড় পরিয়ে শয্যাসঙ্গিনী করেন। তার আকাংক্ষা যখন মিটে যায়, লিখেছেন ব্রুকস: ‘‘তিনি অমানবিকভাবে, অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে তার চোখের সামনে থেকে মেয়েটিকে সরে যেতে বাধ্য করেন।’’[১১২]

আরেক ঘটনায় মরক্কোয় নিয়োজিত ব্রিটিশ কূটনীতিক অ্যান্থনী হ্যাটফিল্ড এক আইরিশ মহিলার কথা লিখেছেন, যাকে ১৭১৭ সালে একটা বাণিজ্য-জাহাজ থেকে বন্দি করা হয়েছিল। ধর্মান্তরিত হতে না চাওয়ায় তাকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাকে বাধ্য হতে হয় আত্মসমর্পণ করতে। মুসলিম হওয়ার পর সে সুলতানের হেরেমে স্থান পায়।[১১৩] ১৭২৩ সালে ফাদার জিন দা লা ফেই ও তার ভাই মৌলে ইসমাইলের প্রাসাদস্থ ফরাসি বন্দিদেরকে মুক্ত করে আনার আশায় মরক্কো যান। তিনি এক নারী-বন্দি সম্বন্ধে লিখেছেন, ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে এমন বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয় যে, সে মরে যায়। ‘‘কৃষ্ণাঙ্গ রক্ষীরা’’, লিখেছেন ফাদার জিন, ‘‘মোম জ্বালিয়ে তার স্তনদ্বয় পুড়িয়ে দেয় এবং অশ্লীল-অরুচিকরভাবে তারা শীশা গলিয়ে তার দেহের এমন সব অঙ্গে ঢেলে দেয়, যার নাম উচ্চারণ করা যায় না।’’[১১৪]

পেলোর ইসলামে ধর্মান্তরের বিষয়ে ফিরে আসা যাক এখন। তার ইসলামিকরণের আনুষ্ঠানিকতার জন্য লিঙ্গত্বকচ্ছেদের বা সুন্নত দেওয়ার আয়োজন করা হয়। লিঙ্গত্বকচ্ছেদের বেদনা উপশম হবার পর আস্-সফা আবার পেলোকে প্রহার করা শুরু করে মুসলিম পোশাক পরতে অস্বীকার করার কারণে। অবশেষে নির্যাতনের চোটে পেলো মুসলিম পোশাক পরতে শুরু করে। এরপরও আস-সফা পেলোকে প্রহার করা অব্যাহত রাখে, এবারে খ্রিষ্টান ধর্ম আঁকড়ে থাকতে জিদ করার কারণে। পেলোর মুসলিম হওয়ার খবর ‘ধার্মিক’ সুলতানের কানে পৌঁছুলে তিনি উল্লসিত হন ও পুত্র আস্-সফাকে নির্দেশ দেন পেলোকে মুক্ত করে দিয়ে আরবি শেখাতে একটা মাদ্রাসায় পাঠানোর জন্য। কিন্তু যুবরাজ সুলতানের আদেশ অবজ্ঞা করে তার উপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে। যুবরাজের এ ঔদ্ধত্যে ক্রোধান্বিত সুলতান আস্-সফাকে তার সামনে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সুলতানের ইঙ্গিতে তার দেহরক্ষীরা যুবরাজকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। অবাধ্যতার কারণে সন্তান-সন্ততিদের প্রতি সুলতানের এ আচরণ না ছিল প্রথম বা না শেষ।[১১৫]

তবে সুলতান যে তার বন্দিদের প্রতি খুব দয়াবান ছিলেন, তা নয়। রাজপ্রাসাদের ক্রীতদাসরা ভয়াবহ জীবন যাপন করতো। তাদেরকে রাখা হতো চারিদিকে উঁচু ঢিবি দ্বারা ঘেরাও করা সামরিক জেলখানার মতো একটা আঙ্গিনায়। আঙ্গিনাটা যদিও বড়, কিন্তু তার মধ্যে এত বেশি লোককে রাখা হতো যে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। রাজপ্রাসাদে ক্রীতদাসদের বসবাসের অবস্থা ও তাদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে ব্রিটিশ বন্দি জন ইউলডন বলেন: এটা ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে বর্বর স্থান। তিনি লিখেছেন, তাকে ও তার ক্রীতদাস সঙ্গীদের ‘‘প্রত্যেককে ঘোড়ার মত কাঁধের সঙ্গে দড়ি লাগিয়ে শীশার গাড়ি টানতে বাধ্য করা হতো।’’ তাদেরকে প্রহার করে ও চাবুক মেরে গায়ের চামড়া ব্যথায় জরজর করা হতো। উইলডন বলেন: ‘‘আমাদেরকে কাঁধে করে এমন বড় বড় লোহার ফালি বহন করতে বাধ্য করা হতো যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হাঁটু পরিমাণ ময়লা কাদার মাঝে কোনোমতে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারতাম এবং জায়গাগুলো এতই পিচ্ছিল যে, কাঁধে ভার ছাড়াও খালিহাতে এগুনো আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল।’’[১১৬]

সমুদ্রপথে ধৃত হয়ে সুলতানের প্রাসাদে আসা এক ব্রিটিশ জাহাজের ক্যাপ্টেন জন স্টকার ক্রীতদাসদেরকে দেওয়া জঘন্য খাবারের কথা লিখেছেন। তিনি ইংল্যান্ডে তার এক বন্ধুর কাছে লিখেন: ‘‘কঠোর পরিশ্রমের পর চব্বিশ ঘন্টার জন্য তারা আমাদেরকে একটা ছোট রুটি ও পানি আর ছাড়া কিছুই দেয় না’’ এবং ‘‘আমি অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় আছি।’’ ক্রীতদাসদের থাকার স্থান সম্বন্ধে তিনি লিখেন: ‘‘আমি একেবারে খোলা আকাশের নিচে থাকি, গায়ে ঢাকা দেওয়ার মতো কিছুই নেই এবং আমি যতটা সম্ভব ততটা দুরবস্থার মধ্যে রয়েছি।’’ টমাস পেলোর সঙ্গীদেরকে দেওয়া হয়েছিল খড়ের তৈরি ছেঁড়া মাদুর। সেটা বিছিয়ে খালি গায়ে ঠাণ্ডা মাটির উপর শুতে হতো তাদেরকে। গোটা আঙ্গিনায় ছিল মাছি ও তেলাপোকার রাজত্ব। মধ্যগ্রীষ্মের দিনে ক্রীতদাস-খোঁয়াড়গুলো বাতাসশূন্য, আর্দ্র ও প্রচণ্ড গরম হয়ে উঠতো। ‘‘খোলা ক্রীতদাস-আশ্রমে তাদেরকে পোহাতে হতো গ্রীষ্মকালে গা-পোড়ানো সূর্যের উত্তাপ আর শীতকালে প্রচণ্ড কুয়াশা, তুষার, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝড়ো ঠাণ্ডা বাতাস,’’ লিখেছেন সাইমন ওক্লি।[১১৭]

দৈনন্দিন খাদ্যের বরাদ্দ ছিল ১ আউন্স কালো রুটি ও ১ আউন্স তেল, যা অতিরিক্ত শ্রমে বিধ্বস্ত ও ক্ষুধার্ত ক্রীতদাসদের জন্য ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। রুটিগুলো বানানো হতো একেবারে দুর্গন্ধ বার্লির ময়দা দিয়ে, যা কখনো কখনো ‘‘এমন গন্ধ ছড়াতো যে বমি এসে যেতো ও নাকে তার দুর্গন্ধ সহ্য করা যেতো না,” লিখেছেন বন্দি ক্যাপ্টেন হোয়াইট হেড। তদুপরি যখন বার্লির মওজুদ শেষ হয়ে যেতো, তখন তাদেরকে কিছুই দেওয়া হতো না। হোয়াইট হেড লিখেছেন: ‘‘একবার আমাদেরকে আট দিনের মধ্যে এক চিলতে রুটিও দেওয়া হয়নি।’’[১১৮]

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল অসহনীয় কঠোর পরিশ্রম ও নির্যাতন, যা দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত কৃষ্ণাঙ্গ-রক্ষীদের হাতে ক্রীতদাসদেরকে সহ্য করতে হতো। এসব ক্রীতদাস-চালকরা সকালে সূর্য ওঠার আগেই তাদেরকে গরু-ছাগলের মতো বের করে নিয়ে যেতো যার যার কার্যক্ষেত্রে, যেখানে তাদেরকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম পরিশ্রম করতে হতো। তারা বন্দি ক্রীতদাসদের উপর প্রভুত্ব খাটাতো এবং অসহায় হতভাগ্যদেরকে অযথা নির্যাতন ও প্রহার করে এক ধরনের ইতর আনন্দ ভোগ করতো এবং সাধ্যমতো তাদের জীবনকে যতটা সম্ভব দুর্বিষহ ও বিষময় করে তুলতো। তারা মাঝে মাঝে আনন্দের জন্য ক্লান্ত শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাসদেরকে নির্যাতন-নিপীড়নে অতিষ্ঠ করে তুলতো রাত্রিবেলা বাইরে অহেতুক হাঁটতে বা নোংরা কাজ করতে বাধ্য করে। কাজে সামান্য ঢিলা দিলে বা ভুল করলেও তারা ক্রীতদাসদেরকে ভয়ঙ্কর শাস্তি দিতো খাবার বন্ধ করে দিয়ে অথবা সর্বদা তাদের কাছে রাখা মুগুর দিয়ে পিটিয়ে। পেলো লিখেছে: তারা পিটানোর সময় শরীরের সেসব অংশ বেছে নিতো যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যথা লাগে। মুয়েট লিখেছেন: কোনো ক্রীতদাস অতিরিক্ত প্রহারের কারণে কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়লে ক্রীতদাস-চালকরা তাদেরকে কাজের যোগ্য করে তুলতো ‘‘প্রহার দ্বিগুণ করে, যাতে নতুন প্রহার তাদেরকে পুরানো প্রহারের কথা ভুলিয়ে দিতো।’’[১১৯]

ক্রীতদাসরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও কাজ থেকে রেহাই পেতো না। ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বিশ্রামের অনুমতি পেতো না, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গ-রক্ষীরা দেখছে যে তারা হাত-পা নাড়াতে পারছে,’’ লিখেছেন মুয়েট। অসুস্থ ক্রীতদাসদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে, লিখেছেন মুয়েট: ‘‘কোনো ক্রীতদাস তার শরীরে ব্যথা করছে বলে অভিযোগ করলে এক প্রান্তে আখরোটের সমান বোতাম লাগানো একটা লোহার দন্ড গরম করে হতভাগ্য ক্রীতদাসের শরীরের কয়েকটি অংশ পুড়িয়ে দিতো।’’ অসুস্থ হয়ে পড়া ক্রীতদাসদের উপর সুলতানের কোনোরকম কৃপা ছিল না, বরং তিনি তাদেরকে পিটাতেন যথেষ্ট পরিশ্রম না করার অভিযোগে। একবার বহু সংখ্যক ক্রীতদাস অসুস্থ হয়ে পড়ায় নির্মাণ পরিকল্পনা পিছিয়ে পড়লে সুলতানের নির্দেশে কৃষ্ণাঙ্গ-রক্ষীরা অসুস্থ ক্রীতদাসদেরকে টেনে-হেঁচড়ে বের করে এনে সুলতানের সামনে হাজির করে। অসুস্থ ক্রীতদাসরা নিজ পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে সুলতান, ‘‘তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাত জনকে হত্যা করে বিশ্রামাগারটিকে একটা কসাইখানা বানিয়ে ফেলে,” লিখেছেন ব্রুকস্।[১২০]

তার দৈনিক নির্মাণক্ষেত্র পরিদর্শনে সুলতান মৌলে ইসমাইল নির্দয় ছিলেন কাজে গাফিলতি বা অবহেলাকারী ক্রীতদাসদের প্রতি কিংবা তাদের কাজের মান তার মনোঃপুত না হলে। একবার ইট কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখতে পান ইট খুব পাতলা। সঙ্গে সঙ্গে ক্রুদ্ধ সুলতান তার কালো দেহরক্ষীদের নির্দেশ করেন প্রধান রাজমিস্ত্রির মাথায় ৫০টা ইট ভাঙ্গতে। শাস্তি দেওয়ার পর রক্তাক্ত ক্রীতদাসটিকে জেলখানায় পাঠানো হয়। আরেক ঘটনায় সুলতান নিম্নমানের চুন-বালি-পানির মিশ্রণ তৈরির জন্য কয়েকজন ক্রীতদাসকে অভিযুক্ত করেন। ক্রুদ্ধ সুলতান ‘‘নিজ হাতে একে একে সবার মাথায় আঘাত করে এমন ভয়ানকভাবে ভেঙ্গে দেন যে, স্থানটি রক্তে কসাইয়ের দোকানের মতো হয়ে যায়।’’[১২১]

সুলতানের প্রাসাদে আরো এক ধরনের ভয়ানক শাস্তি ভোগ করতে হতো ক্রীতদাসদেরকে। একবার এক স্পেনীয় ক্রীতদাস সুলতানের পাশ দিয়ে যাবার সময় তার মাথার টুপি নামাতে ভুলে যায়। ক্রুদ্ধ সুলতান হতভাগ্য ক্রীতদাসটিকে লক্ষ্য করে সাথে সাথে বল্লম ছুঁড়ে মারেন। বেচারা ক্রীতদাসকে তার শরীরের মাংসের মধ্যে বিদ্ধ বর্শাটিকে টেনে বের করে সুলতানের হাতে ফেরৎ দিতে হয় পুনরায় বর্শাটিকে তার পেটে নিক্ষেপ করতে। আরো একটি শাস্তি প্রায়শঃই ক্রীতদাসদেরকে ভোগ করতে হতো, যাকে বলা হতো ‘টসিং’ বা উর্ধনিক্ষিপ্তকরণ। পেলো লিখেছেন: সুলতানের নির্দেশে ‘‘তিন বা চারজন কৃষ্ণাঙ্গ-রক্ষী মিলে ক্রীতদাসটির উরু ধরে তাদের সাধ্যমতো উপরের দিকে এমনভাবে ছুঁড়ে দিতো, যাতে তার মাথা উল্টে এসে আগে মাটিতে পড়ে।’’ এ ভয়ঙ্কর শাস্তিতে কখনো তাদের গর্দান ভেঙ্গে যেতো বা স্কন্ধ স্থানচ্যুত হয়ে যেতো। এরূপ চলতে থাকতো যতক্ষণ না সুলতান থামার নির্দেশ দিতেন।[১২২]

স্বল্পাহার, অপুষ্টি, অতি-শ্রম ও ক্রীতদাস-খোঁয়াড়ের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভোগা ক্রীতদাসদের জন্য রোগ-বালাই ছিল নিত্য-সঙ্গী। মাঝে মাঝেই হানা দিত প্লেগ। কোনোরকম চিকিৎসার সুবিধা না থাকায় তারা মারা যেতো বহু সংখ্যায়, বিশেষত যারা ইতিমধ্যে দুর্বল ছিল বা উদরাময়-আমাশয়ে ভুগছিল। মুয়েট লিখেছেন: একটা ঘটনায় একবার প্রতি চার জন ফরাসি ক্রীতদাসের মধ্যে একজন মারা যায়।[১২৩]

রাজপ্রাসাদে একেবারে তুচ্ছ ভুলের কারণেও মৌলে ইসমাইলের ক্রীতদাসদের জন্য মৃত্যু আনতে পারতো। সুলতানের পুত্র মৌলে জিদান, লিখেছে পেলো, ‘‘একবার তার পছন্দের কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসটিকে নিজ হাতে হত্যা করেন,’’ কেননা যুবরাজ যখন তার পোষা কবুতরগুলোকে খাওয়াচ্ছিলেন, তখন ঘটনাক্রমে ক্রীতদাসটির কারণে কবুতর বিরক্ত হয়েছিল। ‘‘(সুলতান) এতই খামখেয়ালী, নিষ্ঠুর ও রক্তক্ষয়ী প্রকৃতির ছিলেন যে, এক ঘন্টার জন্যও কারো জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না,’’ লিখেছে পেলো।[১২৪]

এর নয় দশক পূর্বে ব্রিটিশ বন্দিদেরকে মুক্ত করার জন্য জন হ্যারিসন সুলতান মৌলে আব্দুল্লাহ্ মালেকের রাজদরবারে (রাজত্ব ১৬২৭-৩১) বারংবার কূটনৈতিক সফরে যান। তার সে ব্যর্থ মিশনে হ্যারিসন ক্রীতদাসদের উপর পরিচালিত নির্যাতন-দুর্ভোগের চিত্র পর্যবেক্ষণ করে লিখেন: ‘‘তিনি (সুলতান) তার উপস্থিতিতে মানুষগুলোকে প্রহার করিয়ে মৃতপ্রায় করতেন… কাউকে কাউকে পায়ের পাতায় পেটানোর পর তাদেরকে কাঁটা ও পাথরের মধ্য দিয়ে উপরে-নিচে দৌঁড়াতে বাধ্য করতেন।’’ তিনি আরো লিখেছেন: (সুলতান) তার কিছু ক্রীতদাসকে ছিঁড়ে টুকরো না হওয়া পর্যন্ত ঘোড়ার পিছনে বেঁধে টেনে নিয়ে যাবার হুকুম দিতেন এবং কয়েক জনকে জীবিত অবস্থায় টুকরো টুকরো করার নির্দেশ দেন ‘‘তাদের হাত-পায়ের আঙ্গুল গিরায় গিরায় কেটে কেটে, সে সাথে তাদের বাহু, পা ও মস্তক।’’ এর কয়েক বছর আগে বন্দি রবার্ট এডামস্ বর্বর জলদস্যুর শহর সালে-তে তার বন্দি-দশা সম্বন্ধে পিতামাতার কাছে লেখেন: ‘‘মালিক সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত একটা মিলে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয় ঘোড়ার মতো এবং আমার পায়ে বাঁধা থাকে ৩৬ পাউন্ড ওজনের এক-একটি শিকল।’’[১২৫]

মুসলিম শাসক বা প্রধানদের হাতে ভোগ করা ক্রীতদাসদের বন্দিত্ব জীবনের এসব দৃষ্টান্ত ও অমানবিক চিত্র আমাদেরকে মোটামুটি ধারণা দিবে মুসলিমদের হাতে বন্দিকৃত দাসরা বিভিন্ন পর্যায়ে কেমন ভোগান্তিতে ভুগতো। এটা একটা ব্যাপকভাবে গৃহীত সত্য যে, আফ্রিকায় মুসলিম দাস-শিকারি ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা ধৃত বন্দিদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্রীতদাস-বাজারে পৌঁছার আগেই মারা যেতো। এসব মৃতদের অনেকেই মারা যেতো খোজাকরণ পদ্ধতির কারণে। মুসলিম বিশ্বে বিক্রির লক্ষ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদেরকে সর্বজনীনভাবে খোজা করা হতো। সেটা যে কতটা বিশাল দুর্ভোগ ও মানবজীবনহানিকর ছিল তা অচিন্তনীয়। তারা যে শারীরিক ও মানসিক বেদনা, যন্ত্রণা ও মর্মপীড়া ভোগ করেছে, তা এক কথায় অবর্ণনীয়, সম্ভবত কল্পনারও অতীত।

[আগামী পর্বে আলোচিত হবেঃ ক্রীতদাসদের ভাগ্যঃ নির্মাণ ও স্থাপত্য কর্মে নিয়োগ]
সূত্রঃ

103. Milton, p. 34
104. Ibid, p. 66-67
105. Ibid, p. 20
106. Ibid, p. 68-69
107. Ibid, p. 71-72
108. Ibid, p. 79-80
109. Ibid, p. 81
110. Ibid, p. 82
111. Ibid, p. 21
112. Ibid, p. 121
113. Ibid, p. 173
114. Ibid, p. 219
115. Ibid, p. 83-84
116. Ibid, p. 91-92
117. Ibid, p. 92, 94
118. Ibid, p. 93
119. Ibid, p. 105
120. Ibid, p. 96-97
121. Ibid, p. 106
122. Ibid, p. 107
123. Ibid, p. 99
124. Ibid, p. 124-25
125. Ibid, p. 16, 20-21
————–
চলবে—

ইসলামে র্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ১)

ইসলামে বর্বরতা দাসত্ব অধ্যায় ২)

ইসলামে র্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৩)

ইসলামে র্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৪)

ইসলামে র্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ৫)