গতকাল দেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বরস্বতী পূজা হয়েছে। ঝকঝকে ছাপানো কার্ডে কয়েকটা দাওয়াত পেলাম। একজন সহযোগী অধ্যাপকের কাছ থেকে দাওয়াত পত্রটা নিতে নিতে বল্লাম। স্বরস্বতী যদি বিদ্যাই দিবে তবে স্যারদের এত টাকা বেতন দিয়ে কি লাভ? স্যার তীর্যক চোখে আমার দিকে তাকালেন। কার্ড দেয়াই যে বিফলে গেল তিনি এতক্ষনে হয়তো বুঝলেন।
গত লক্ষী পূজায় ওনার বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছি। এবং দূর্গা পূজায় অন্যান্য অনেক স্যারদের সাথে ঘুড়ে ঘুড়ে পূজা দেখছি। তাই এই পূজায় যাওয়াটা স্বাভাবিকই ছিল। এবার আমার সাথে আর একজন সমর্থন করলো। স্কুল কলেজে কেন মিলাদ মাহফিল হবে কেন স্বরস্বতী পূজা হবে। তিনি সবারে উদ্যেশ্য করে দুইচার কথা শুনিয়ে দিলেন। আমি লক্ষ আমি তাকিয়ে আছি সবার মুখের দিকে কে কি করে তা দেখার জন্য।অনেকের মুকে একটা প্রচ্ছন্ন হাসি থাকলেও বুকটাযে ভেঙ্গে যাচ্ছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
অনার্স করার সময় আমার রুমমেটের বন্ধু ছিল অভিজিৎ। পড়তো ক্যামেস্ট্রিতে। ডিপার্টমেন্টে সে ছিল ফাষ্ট বয়। দেখতেও নায়কের মতো চেহারা। স্বভাবও খুব নম্র। কম বেশি সবাই তাকে পছন্দ করতো। আমিও করতাম।
আমরা যখন ধর্ম নিয়ে কথা বলতাম সে বেরিয়ে যেত।তার এসব ভাল লাগেনা। না-ই লাগতে পারে। সবাই তো আর ধর্ম ত্যাগ করবেনা।
অভিজিৎ স্বরস্বতী পুজার সময় সকালে আমাদের হোস্টেলে চলে এল। সাথে করে এক ব্যাগ বই। আমি বল্লাম আজতো পূজার দিন। কলেজ কেমন সুন্দর করে সাজানো হয়েছে দেখ নাই। সে বল্ল,দেখেছি। আজ তো কোন ক্লাস নাই, প্রাইভেটওতো মনে হয় বন্ধ। তুমি কোন স্যারে বাসায় যাবে নাকি? সে বল্ল না । হে হে হে… পূজার জন্য নিয়ে এলাম।
যথারীতি আমি সময় করে পূজা মন্ডপে গেলাম। সবার সাথে দাঁড়িয়ে পূজার মন্ত্র পড়লাম,হলুদ আর আমের মুকুল খেলাম,সব শেষে প্রসাদ। চমৎকার মূর্তি দেখতে গিয়ে দেখি মূর্তির পায়ের কাছে অনেক বই। কি কান্ড? আগে জানতাম ফুল দিয়ে দেবীর পূজা করে , আজ কাল কি তবে বই দিয়েও করা শুরো হলো নাকি? আরে এ দেখি অভিজিৎ এর বই।
আরে তোমার বই এখানে কেন? কে আনলো? সে বল্ল আমিই এনেছি। কেন? বই এখানে দিলে কি হয়?
সে মিনমিন করে বল্ল সবাই দেয়। তাই আমিও দিয়েছি। দেবী কঠিন বই সহজ করে দেয়।
আমি তাকে বল্লাম , মনে হয় ঠিকই দেয়। না হলে তুমি প্রতিবার ফাষ্ট হও কি করে? হা হা হা….
সেই ফাষ্ট বয় একদিন গল্প করছে তাদের মনষা পূজা নিয়ে। সে বিশ্বাস করে সাপের নাগ-নাগিনী আছে, তারা ভরা পূর্ণিমায় মানুষের রুপ ধারন করতে পারে। তাকে পূজা না করলে বিপদ হয়। আমরা সবাই তাই পূজা করি। আমি জানতে চাইলাম আমরা তো করিনা। তবে আমাদের বিপদ হয় না কেন?
এই অভিজিৎরাই তো একদিন কলেজের অধ্যপাক হবে, সচিব হবে, মন্ত্রী হবে,বিচারপতি হবে। আমাদের গতানোগতিক শিক্ষা তাদের এই সব কুসংস্কার থেকে দূরে সরাতে পারেনি।তারা আবার তাদের পরবর্তি প্রজন্মের কাজে এই দ্বায়িত্ব দিয়ে যায়।
আমি একটি ঔষদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বই লেনদেন করি। সেই ঔষদের দোকানদার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে থাকে। যিনি নিজেকে নাস্তিক বলে প্রচার করেন এবং লাইব্রেরী থেকে এই সম্পর্কিত বই নিয়ে পড়েন। আর ধর্মের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। আমি যেহেতু ইসলাম বিষয়েই বেশি উৎসাহি। তাই প্রশ্ন গুলো এমনই হয়। তিনিও তার অসারতা প্রমান করেন। একদিন তার বাসায় গিয়ে দেখি বড়বড় করে স্বামীবিবেকান্দের ছবি টানানো, রামকৃষ্ণ পরমহংসের ছবি টানানো। আমি জানতে চাইলাম কেন?আপনি তো নিজেকে নিস্তিক বলেন। এরা তো কেউ নাস্তিক নয়?
কোন উত্তর নাই।
আমার এক বন্ধু বড় ব্যবসায়ী। প্রচুর বই কিনেন এবং পড়েন। চিন্তা ভাবনায় শতভাগ প্রগতিশীল। আমি প্রথম যখন তার গোডাওনে গিয়ে দেখি। তার দুই দরজার উপর একটা রামকৃষ্ণের ছবি অন্য পাশে গনেশের। আমি বল্লাম সুমন ভাই এসব কি? আমি ভেতরে ভেতরে এসবও করেন?
আর ধুর। এসব আগে থেকেই ছিল, আমি আর নামাই নি। আমি আরো দুই বছর ধরে দেখছি, ছবি গুলো আগের মতোই আছে। একদিন একটি ছবিকে বাঁকা করে রেখেছিলাম। কিছুদিন পরে গিয়ে দেখি ভগবানের কৃপায় তা সুজা হয়ে আছে।
আমাদের ঘরে পূজা দেওয়া সরস্বতীটা সারাদিন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ।ভাবি তার চোখ দুটি কেন ব্যাথা হয়না ।দেবী বলেই বোধহয় ।মশাই হিন্দুদের তবু নারী দেবী আছে মুসলিমরা তো নারীকে মানুষই ভাবেনা ।হা. হা হা ।ধন্যবাদ ভাই ।
সরল বয়ানে ভালো লিখেছেন। তবে সরস্বতী ইত্যাদি অনেক বানানে সমস্যা আছে, একটু নজর দেবেন।
@কৌস্তুভ,
ধন্যবাদ চমৎকার পরামর্শ দেয়ার জন্য।
লেখাটি পড়ে কোন গল্প নয় বরং প্রতিবেদন বলে মনে হল।একটু বিশ্লেষণ থাকলে আর একটু বেশী ভাল লাগত।পরবর্তী লেখার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে নিলে খুশি হব।ভাল থাকবেন।
@অভ্র ব্যাণার্জী,
হা হা হা…………. 😀 😀
নাস্তিকতায় আমার যাত্রা নতুন। কিন্তু এই অল্প কদিনেই জেনেছি যারা নিজেদের নাস্তিক হিসেবে দাবী করে, তারাও অনেক সময়ই অনেক অন্ধ বিশ্বাস থেকে বের হতে পারে না। আপনার লেখায় এটাই আবার ফুটে উঠছে। ভাল লাগল।
@নির্মিতব্য,
যুগযুগের বিশ্বাস থেকে বের হওয়া একটু কঠিনই।
:hahahee: :hahahee: :hahahee:
সত্যি বলতে কি হিন্দুদের জন্য মাঝে মাঝে দুঃখবোধ হয়। কারণ একটা ধর্মে এইইইইইইইইই পরিমাণ বাবাজি,অবতারদাবীকারী লোক থাকলে বিভ্রান্তি হয় বৈকি!! :-X তাদের আবার বৈশিষ্ট হল যে তারা নিজেদের মতবাদ অন্যধর্মের সাথে এক করে দেখান !!(যদিও অন্যধর্মের লোকেরা কাচঁকলা দিয়াও পাত্তা দেয় না)।আমার মনে হয় তারা হয়ত লোকের ভালোর জন্যই এসব করতে চান কিন্তু অসার যাই করা হোক আখেরে তো থলের বিড়াল বের হবেই। যখন দেখি রামকৃষ্ণ ঠাকুরের মঠের উপর ত্রিশূল, চাঁদ, চক্র,ক্রুশ সবি আছে তখন একচোট হেসে নিই……। তবে যাই সবখানেই কারণ আমি আবার খিচুরির গন্ধ পাইলে ঠিক থাকতে পারিনা :kiss: :kiss:
@অগ্নি,
এইটা আমার ও পছন্দ। 😀 😀 😀
আমি অনেক বাবা মাকে দেখেছি সন্তানের পরীক্ষার আগে পীরের কাছ থেকে কলম ফু দিইয়ে আনতে। এতে নাকি পরীক্ষা ভাল হয় পীরের ফু-য়ের কুদরতে।
@তামান্না ঝুমু,
হুম। এমন আমিও দেখেছি।
ভগবানের কৃপায় আরো কতোকিছু সোজা হয়! (H)
এটাই ভগবানের অস্তিত্বের প্রমাণ নয়? 😛
@নিটোল,
:hahahee: :hahahee: :hahahee: অবশ্যই প্রমান।
এটাই বাস্তবতা । ভালো লেগেছে (Y) ।
@নিলীম,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডাক্তাররা বলে এখন “আমাদের করার এর কিছু নাই সবই সৃষ্টিকর্তার হাতে” যদি সৃষ্টিকর্তার হাতেই সব কিছু থাকে তাহলে আর ডাক্তারের কি প্রয়োজন। এইটুকু যে কেন ডাক্তাররা বুঝে না এটাই আমি বুঝি না
@শাণ,
সৃষ্টিকর্তার হাতে ছাড়তে এত দেরি হলো কেন? প্রথম থেকেই তো ছাড়তে পারতো। নাকি প্রথমে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করতে পারেনি??????? হা হা হা….
@শাণ,
যেখানে বিজ্ঞান একটু থেমে দম নেয় সেখানে সৃষ্টিকর্তা রেফারির ভুমিকায় নেমে আসে। ক্ষতি কি?।
@সপ্তক, ক্ষতি তো কিছু টা আছেই, কারন যখনই সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দেওয়া হয় তখন তো ডাক্তার অন্য কিছু করা যায় কিনা সেই চিন্তার সীমাটা কিছু টা কমে যায় না ?
ভগবানই যেখানে সয়ং কৃপা করেন, সেখানে আর আমরা কিইবা করতে পারি?
এখানে আপনার বন্ধুরত্নটিই সম্ভবত সেই ভগবান! তাই আমার প্রশ্নটি শেষপর্যন্ত মানুষের ঘাড়েই চাপে।
কি আর করা, লেখাটি ভাল লাগল;
ভাল লাগার প্রকাশ ঠিকমত ঘটল কিনা বুঝতে পারছি না।
লেখককে ধন্যবাদ…..
@শাহ মাইদুল ইসলাম,
আমরা এসব দেখে কেবল হাসতে পারি।
আপনার লেখায় বাস্তবতার উপস্হাপন অত্যন্ত সাবলীল । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য (F) । লিখে যান। কেউ না কেউ উপকৃত হবেই আপনার এই অভিজ্ঞতা থেকে।
একেবারেই নিরেট বাস্তবতা। বিজ্ঞান পড়ে মানুষ হবে বিজ্ঞানমনষ্ক, তা নাহয়ে হয়ে পরে মোল্লা-পুরুত। এ এক তাজ্জব ব্যপার! আসলে ধর্মকে পারিবারিক পরিমন্ডল থেকে উঠিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের ফলে হয়তো এমনটি ঘটছে। আর বিজ্ঞান শিক্ষাটি হয়ে পড়েছে সার্টিফিকেট সর্বস্য। যার পরিনতি আজকের হাল বলে আমি মনে করি। শুধু বিজ্ঞান কেন, যেকোন বিষয়ই আজ আর শেখার উদ্যশ্যে নয় অন্ন সংস্থানের উদ্যেশ্যই সম্ভবত মূখ্য।
@কেশব অধিকারী,
ঠিক বলেছেন। গত বই মেলায় আমাদের এক বড় ভাই আমাদের সাথে খুবই বিরক্তি নিয়ে ঘুরছে। হঠাৎ দেখি সে আনু স্যারের একটা বই নিয়ে বলছে এই বইটা খুব ভাল। আমি যতদূর জানি তিনি খুবই ভাল ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও একাডেমিক বই এর বাইরে কোন বই পড়েন না। আমি জানতে চাইলাম :কেমন ভাল? সে উত্তর করলো: এটা থেকে বিসিএস এ প্রশ্ন আসতে পারে। হা হা হা…..
খোলাচোখে সোজাসাপ্টা পর্যবেক্ষণ আর যুক্তি। সংক্ষিপ্ত অথচ চমৎকার উপস্থাপনা (Y)
@কাজী রহমান,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সত্যি ভালো লাগলো।
@শিমূল,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
@আসরাফ,
দূর্দান্ত লিখেছেন। এমন লেখা আরো চাই- সুন্দর উপস্থাপনার জন্য (F)
@আফরোজা আলম,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
স্যার তীর্যক চোখে আমার দিকে তাকালেন। কার্ড দেয়াই যে বিফলে গেল তিনি এতক্ষনে হয়তো বুঝলেন।
উনাকে এবং উনার মতো অসংখ্যজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়াটা যে পুরোপুরি বিফল তা যদি বুঝতে পারতেন।
@অ বিষ শ্বাসী,
বুঝে কি করবো ? বুয়েট,ঢাবি মতো বড়বড় প্রতিষ্ঠান থেকেও হিজবুত তাহেরি তৈরি হয়, তাহলে আশা করার জয়গাটা কোথায়??
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
মনে কিছু নিবেন না,আপনার লেখাটি গল্প হিসেবে নিলাম।
@পাহাড়ি,
আপনি যা ইচ্ছে সেই হিসেবেই নিতে পারেন। এজন্য এত বিনয়ী হওয়ার দরকার নেই।
যদি বাস্তব বিবর্জীত হয় তবে কারনটা কি বলবেন?
@আসরাফ,
আমিতো দেখলাম লেখাটি আমাদের বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া এরকম অসংখ্য ঘটনার কিছু বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বরং, এটি এতই বাস্তব যে শব্দ বা সাহিত্যের মারপ্যাঁচে এটিকে গল্পের মোড়ক দিয়ে আবৃত্ত করে দেয়ার চেষ্টাটুকুও করা হয় নি।
@মইনুল রাজু,
গল্প আমি লিখতে পারিনা। চেষ্টাও করিনা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
@আসরাফ,
গল্প লিখতে পারবেন না কেন। আপনার এই লেখায় একটু কল্পনা মিশিয়ে দিলেইতো গল্প হয়ে যেতো। কিন্তু, এই লেখাটা পুরোটাই বাস্তবতার প্রতিফলন মনে হয়েছে আমার কাছে। উপরে করা আপনার একটা প্রশ্নের জবাবে আমার ব্যক্তিগত মন্তব্যটা দিলাম শুধু। লেখাটা বাস্তবতা বিবর্জিত হওয়ার সামান্যতম কারণও আমি দেখিনি।
ধন্যবাদ। 🙂
@আসরাফ,
আমিতো অবাস্তব কিছুই দেখছি না!
(নিজেরই বাংলা বানানের যা অবস্থা, তবুও বলছি লেখা পাঠানোর আগে একবার প্রুফরিড করে নিলে ভাল হয়)
@মনজুর মুরশেদ,
ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য।