আমার মানসপটে অতি যত্নে আঁকা আছে
একজন যুবা-পুরুষের ছবি।
সে যুবকটি সুপুরুষ, সুদর্শন, দীর্ঘ গড়ন।
যেন সোনায় মোড়ানো দেবতা।
তার গভীর, উজ্জ্বল, আয়ত দুটি চক্ষু হতে
কহিনূরের জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়।
ইচ্ছে করে সেই গভীর চক্ষে ডুবে যাই।
সেই মায়াময় চাহনী
প্রগাঢ় বিপুল মমতায়
সমগ্র পৃথিবী গ্রাস ক’রে নেয়।
তার ধনুকের মত ভুরু,
বাঁশির মত উন্নত নাসিকা,
গন্ধরাজের পাপড়ির মত
লাবণ্যময় গৌর মুখমণ্ডল।
ওষ্ঠ-অধর দুখানি শিউলির পাপড়ির মত
স্নিগ্ধ হাসি মাখানো।
সেই মৃদু হাসিতে
হৃদয় ছিঁড়ে যায়।
তার অতি শৌখিন ঢেউ খেলানো কৃষ্ণ কুন্তলরাশি
নেমে এসেছে ঘাড় অবদি।
সেই কুন্তলবিন্যাসে রয়েছে অপূর্ব শিল্পকর্ম।
পৃথিবীর পথে পথে আমি ঘুরেছি অনেক।
দেখেছি লাখো লাখো মানুষের মুখ।
এত স্নিগ্ধতা, এত লাবণ্য, এত প্রশান্তি
দেখিনি তো কভু আর কারো মুখে।
সেই যুবকটি যেন
সৌন্দর্য, শুভ্রতা আর শুচিতার প্রতিমূর্তি।
আমার মানসপটে অতি যত্নে আঁকা আছে
একজন যুবাপুরুষের ছবি।
অতি সুদর্শন সেই যুবকটি
বিশ্বকবি রবিঠাকুর, আমার কবি।
@তামান্না ঝুমু ,যতদূর বুঝি রবি ঠাকুরের বর্ণ অতটা গৌর নয়।রবীন্দ্রনাথের ১৮-১৯ বছরে যদি আপনি কবিতাটি তাঁকে দিতেন,তাহলে বোধয় আপনিই হতেন এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সাহসী এবং স্পষ্টভাষী তরুনী(যদিও আপনার বয়স জানা নেই)।দারুন লাগল!
@অভ্র ব্যাণার্জী,
আমি রবীন্দ্রনাথের রূপের বর্ণনা যত জায়গায় পড়েছি সবখানেই দেখেছি তাঁর গায়ের রং গৌর। তাঁর রূপের বিস্তারিত বিবরণ আছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলোতে।
রবীন্দ্রনাথের যৌবনে এমন কি বার্ধক্যেও অনেক নারীই উনার রূপে গুণে মু্গ্ধ হয়েছেন,প্রেম নিবেদন করেছেন।
এই জায়গায় এসে সত্যি ধাক্কা খেয়েছি; ভাবা যায়নি বা ভাবতে দেননি! মনে হয় প্রতিটি পুরুষ পাঠকই এ জায়গায় এসে মৃদু হোঁচট খাবে; যেন রঙ্গিন একটা স্বপ্ন মুহূর্তেই টুটে যাওয়ার মত!
দেবতা? সোনায় মোড়ানো? এখানে এসেও দ্বিধায় পড়ে গেছি!
খুব মজা লাগল! ভালবাসার ছোঁয়ায় ‘পাপড়ির মত মুখ’ যে হতে পারে না, তা কিন্তু নয়! 🙂
@কাজি মামুন,
নবীনচন্দ্র সেন তাঁর আত্নজীবনীতে রবীন্দ্রনাথকে প্রথম দেখার বর্ণনা করেছেন। তিনি একটি মেলায় গিয়েছিলেন। মেলার এক কোণে একটি গাছের নিচে এক নবযুবককে দেখতে পান, বয়েস ১৮-১৯। প্রথম দর্শনেই উনার মনে হয়েছিল “বৃক্ষতলায় যেন এক স্বর্ণমূর্তি স্থাপিত হয়েছে।”
বিভিন্ন কারণে মানুষের হৃদয়ে পরিবর্তন আসে। মনের মানুষেরও পরিবর্তন ঘটে কখনো কখনো। কিন্তু তাঁর প্রতি অপরিসীম ভালবাসার জোয়ারে একবিন্দু ভাঁটাও আসবে ব’লে মনে হয়না। তাই আমি পৃথিবীর সকল পুরুষকে একপাশে রেখে তাঁকে অনন্তকাল ভালবাসতে চাই। এই ভালবাসা নর-নারীর ভালবাসা নয়। এ এক অন্য রকম ভালবাসা।
ঠিক বলেছেন। পাখির বাসার মত যদি চোখ হতে পারে পাপড়ির মত মুখ হতে পারবেনা কেন? ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
কিম্বা “উটের গ্রীবার মত অন্ধকার” যদি হতে পারে৷ 🙂
খবরে প্রকাশ ঃ
“বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন এবং বারবার বিষণ্নতায় ভুগেছেন। তাঁর জীবনী নিয়ে প্রকাশিত নতুন একটি বইয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বইটির লেখক সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর রবীন্দ্রনাথ টেগোর: অ্যান ইন্টারপ্রিটেশন শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ ১৯১৪ সালে সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভোগেন। এর আগের বছর তিনি প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। ”
হায় কবি যদি জানিতেন কেহ তাহাকে খুজিয়া বেড়ায়
ভুগিতেন না বিষণ্ণতায়।
@সপ্তক,
কবির বিষণ্নতায় ভোগার অনেকগুলো কারণ ছিল। একের পর এক প্রিয়জনের মৃত্যু তার মধ্যে একটি।