[সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধকে বহুবছর ধরে বিভ্রান্তির ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে। খাটো করে দেখা হয়েছে পাহাড়ি জনগণের মুক্তিযুদ্ধ তথা ১৯৭১ সালে তাদের সব ধরণের চরম আত্নত্যাগের ইতিহাস। একই সঙ্গে সারাদেশে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগকেও অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। এ কারণে লেখার শিরোনামে ‘অন্য আলোয় দেখা’ কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। বলা ভালো, এটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর কোনো গুঢ় গবেষণাকর্ম নয়; এটি নিছকই পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আলোচনার অবতারণা মাত্র।]
প্রথম পর্ব
ত্রিদিব রায়ের ভূমিকা, ১৯৭১
লেখার শুরুতেই বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অমি রহমান পিয়ালকে উদ্ধৃত করা যাক। এই লেখকের পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি খসড়া নোটে তথ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ায় অরপিকে ইমেল করে ১৯৭১ সালে সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের ভূমিকাসহ এ সংক্রান্ত মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। ওই ইমেইল বার্তার জবাবে তিনি একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে খুব চমৎকার করে তুলে ধরেন পুরো বিষয়। অরপি বলছেন:
অমি রহমান পিয়াল
জুন ২৫, ২০১১ at ৮ : ৫৯ অপরাহ্ণ লিঙ্কসুপ্রিয় বিপ্লব রহমান, আপনার মেইল পেয়ে পোস্টটি পড়লাম এবং অনুরোধ রাখতেই আমার বক্তব্য রাখলাম। বিব্রতবোধ করছি এইজন্য যে সে বক্তব্য আপনার পোস্টের বক্তব্য সমর্থন নাও করতে পারে। তার আগে বলে নিচ্ছি যে আমি আরাফাতুর রহমানের লেখাটা পড়িনি। আপনারটা পড়েই আমার যা বলার বলছি। কোনো বাতুলতা নিজগুণে ক্ষমা করবেন।
প্রথমে আসি আদিবাসী রাজাকার প্রসঙ্গে।অবাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো। পক্ষে এবং বিপক্ষে। এখানে লক্ষণীয় তাদের বসবাসের জায়গাটা সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় সেখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী- দুইপক্ষই ছিলো ভীষণভাবে ত্ৎপর। এই পর্যায়ে এসে আদিবাসীরা গোষ্ঠীগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোন পক্ষে যাবে। সাওতাল এবং গারোরা সরাসরি পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। চাকমারা পক্ষে।(মগরা নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে আবার পাকিস্তানীদের বার্মায় পালাতেও সাহায্য করেছে।)এটা গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত, গোষ্ঠী প্রধানের নির্দেশ। এখানে সমর্থন অর্থে বলা হয়েছে। এই সমর্থনের অর্থ ইনটেলিজেন্স, আশ্রয় এবং লোকবল দিয়ে সহায়তা।
প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হয়ে গারোরা লড়েছেন, সাওতালরা লড়েছেন। ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ এবং ইপিআরের সদস্য যেসব আদিবাসী ছিলেন তারা লড়েছেন। এদের মধ্যে মারমা-মুরং-গারো-লুসাই সব গোষ্ঠীই ছিলেন,ছিলেন চাকমারাও। তারা তাদের সম্প্রদায়গত সিদ্ধান্তের বদলে প্রায়োরিটি দিয়েছেন কর্তব্যবোধ এবং ক্যামোরেডরিকে।
চাকমাদের জন্য এই সিদ্ধান্তটা এসেছে রাজা ত্রিদিব রায়ের তরফে।অতিনি গোষ্ঠীপ্রধান। এপ্রিলের শুরুতেই রাঙ্গামাটিতে পাকিস্তান থার্ড কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান অবস্থান নেয়। স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট কমান্ডোদের প্রধান মেজর জহির আলম খান (শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করেছিলেন তিনিই) ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে দেখা করে সবধরণের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পান। সঙ্গে যোগ দেয় লালডেঙ্গার নেতৃত্বাধীন মিজোদের একটি ব্রিগেড। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে মুক্তিবাহিনী এবং বিএসএফের সম্ভাব্য ত্ৎপরতা এবং তা ঠেকানোর জন্য সহায়তার কথা ছিলো সে প্রতিশ্রুতিতে। শুধু ত্রিদিব রায়ের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দলই নয়, রাঙ্গামাটিতে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (ইপিসিঈফ) প্রাথমিকভাবে যোগ দেয় প্রায় শ তিনেক চাকমা। যুদ্ধশেষে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের সংখ্যাটা এক মাসে ছিলো দেড় হাজারের ওপর। যদিও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় তাদের সবাইকেই পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এমনকি দুর্গমতার কারণে পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের কোনো ঢেউই লাগেনি- আপনার এই কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। ৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই পাহাড় ছিলো উত্তাল। এখানে অপারেশনাল ছিলো মেজর জেনারেল সুজয় সিং উবানের তত্বাবধানে থাকা মুজিব বাহিনীর একটা অংশ (শেখ মনির নেতৃত্বাধীন) এবং উদ্বাস্তু তিব্বতীদের নিয়ে গড়া স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। চেহারায় সাদৃশ্য থাকার কারণে (মঙ্গোলয়েড) তিব্বতীরা নভেম্বরের শুরু থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশনে নামে (অপারেশন মাউন্টেন ঈগল)। এই লড়াইয়ে পাকিস্তানীদের পাহাড়ে গাইড এবং ইন্টেলিজেন্স দিয়ে সহায়তার দায়িত্ব পালন করে ইপিসিঈফের চাকমারা।
এখন ত্রিদিব রায়কে আপনি স্রেফ পাকিস্তানের একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক বা যে তকমাই দিতে চান না কেনো, তার প্রাথমিক পরিচয় তিনি চাকমাদের রাজা। এমন যদি হতো তিনি শুধু রাঙ্গামাটির চাকমাদের রাজা, বা অন্যরা তাকে রাজা বলে স্বীকার করতো না তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু রাজার দায় তার গোষ্ঠীর ওপর খানিকটা বর্তায় বৈকি!পার্বত্য চট্টগ্রামের দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে (সেগুলো বেশ চমকপ্রদ একদিন শেয়ার করা যাবে) চাকমারা তাই রাজার নির্দেশই পালন করেছে। কিংবা সে নির্দেশের বিপক্ষে যায়নি। ত্রিদিব রায় শুধু তার গোষ্ঠীকেই সহায়তার নির্দেশ দিয়ে বসে থাকেননি। নিজে মাঠে নেমেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সমর্থন আদায় করতে গেছেন কলম্বো, সেখানে সিংহলীজ ছাত্রদের ধিক্কার শুনে ফিরেছেন। স্বাধীনতার পরপর পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য যে ১২ জনের নাগরিকত্ব বাতিল এবং সহায়সম্পত্তি ক্রোক করা হয় আদালতের নির্দেশে সে তালিকায় গোলাম আজমের সঙ্গে রাজা ত্রিদিব রায়ও আছেন। তিনি নাগরিকত্ব ফিরে পেতে কোনো তদবির করেননি। যদিও সহায়সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে যুক্তিতে গোলাম আজমের বিচার করা যায়, সেই একই যুক্তিতে ত্রিদিব রায়কেও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় কিনা। আমার ধারণা যায়, যদিও তিনি পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে সে দেশেই রয়ে গেছেন, কয়েকদফা মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ধরাছোয়ার বাইরেই। বাকি থাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী অক্সিলারি ফোর্সের চাকমারা। এরা সাধারণ ক্ষমা পেয়েছে। এদের কারো বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ এব লুটপাটের অভিযোগ ছিলো না। দে জাস্ট মার্চড এলং ফলৈং দেয়ার কিং। তবে সেরকম কোনো প্রমাণ নিয়ে কেউ যদি আসে, তাহলে নিশ্চয়ই তাদেরও বিচার করা যাবে। ব্যাস এটুকুই।
আগেই বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ত্ৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় যেমন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তেমনি মং রাজা মং প্রু সেইন আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। সে সময় রাজা মং প্র সেইন মুক্তিবাহিনীর জন্য নিজ প্রাসাদ উজাড় করে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তার প্রাসাদে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন, বহু সাহায্য পেয়েছিলেন। এছাড়া পাহাড়ি নেতা এমএন লারমা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। চাকমা রাজার কাকা শ্রী কেকে রায়ও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। কিন্তু শুধু সন্দেহের বশে তাকে ত্রিপুরায় আটক করা হয়েছিল। পাহাড়িদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়টি আমরা তৃতীয় ও শেষ পর্বে আলোচনা করবো।
ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) জহির আলম খান পাকিস্তান ডিফেন্স জার্নালে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কথাও ছিলো (একাত্তরের মাঝপথে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়)। সেখানে ত্রিদিব রায়ের অনুসারী চাকমাদের একাংশের সহায়তার বিষয়ে মতামত হচ্ছে :
The Chakma and the Mizo tribesmen co-operated with the Pakistan Army in 1971. You were closely associated with them. How was the experience?
We landed in Rangamati just after nightfall, the next morning I called on Raja Tridiv Roy, the Chakma Chief, He lived in an old bungalow on an island separated from the mainland by a channel about fifty yards wide.
I explained to the Raja that the army had come to re-establish the control of the Pakistan Government on the Hill Tracts and asked for his co-operation in maintaining peace and to keep me informed about any rebel movement, concentration and activity, the Raja agreed and co-operated right upto the surrender. At the request of our government Raja Tridiv Roy came to West Pakistan before our surrender in East Pakistan, he was our ambassador in a number of countries and now lives in Islamabad.
সাবেক চাকমা রাজা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিদেশেও সক্রিয় ছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন দূতাবাসের গোপন তারবার্তায় জানায়, রাজা ত্রিদিব রায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত হিসেবে শ্রীলঙ্কা যান। তারবার্তাটি নিম্নরূপ:
Department of State
TELEGRAM
CONFIDENTIAL 444
COLOMB 03360 270603 Z
19
ACTION NEA-11
INFO : OCT-01 EUR-14 CIAE-00 DODE-00 PM-06 H-02 INR-06 L-03 NSAE-00 NSC-10 P-
03 RSC-01 PRS-01 SS-14 USIA-12 10-12 SP-02 ORM-03 AID-20 RSR-01 EA-11 /133 W
……….060184
P 261110 Z NOV 71
FM AMEMBASSY COLOMBO
TO SECSTATE WASHDC 7259
INFO AMEMBASSY ISLAMABAD
AMEMBASSY LONDON
AMEMBASSY NEW DELHI
USMISSION USUN
CONFIDENTIAL COLOMBO 3360
SUBJ : PRESIDENT YAHYA KHAN’S SPECIAL ENVOY TO CEYLON1. SUMMARY: Raja Tridiv Roy in Ceylon as representative of GOP President Khan. Main thrust of mission seems aimed at Ceylon’s Buddhist majority. Roy suggests Pakistan would welcome Bandaranaike’s involvement in Indo-Pak dispute. Local interest in dispute running quite high. End summary.
2. Raja Tridiv Roy, identified by press reports as quote Pres Yahya Khan’s special envoy to ceylon unquote arrived Colombo Nov 25 and is scheduled meet with PM Bandaranike on Nov 26. Roy accompanied on visit by S.L. Leghari, director of Foreign Affairs, GOP. Roy identified as hereditary chief Chakma community in Chittagong hills, quote one of the largest Buddhist groups in East Pakistan unquote. In addition to scheduled meetings with PM and other cabinet members he has met with representatives of All-Ceylon Buddhist Congress and Young Men’s Buddhist Association.
3. Main reason for Roy visit reportedly is to convey to PM Bandaranaike President Khan’s assessment quote of the serious threat to peace posed by the full¬scale assaults on Pakistan’s borders …and to explain to Mrs Bandaranaike the treatment meted out to minorities, particularly to Buddhists in East Pakistan. Unquote.
4. In Nov 26 Sun Roy stated that quote all countries have high regard or Prime Minister Bandaranaike. Any formula put forward by her to ease the situation in East Pakistan would be most welcome. Unquote. With regard refugee problem, Roy stated that quote Pakistan has opened the door for the refugees to return to their homeland,
but India is trying to discourage them from going home in order to increase tensions in the area. Unquote. Published itinerary calls for him to visit Thailand, Nepal and Burma following visit here.5. Roy visit seems to be bringing Pakistan question back to front burner in local debates. Group calling itself Ceylon Committee for Human Rights in Bangla Desh was refused interview with Roy and promptly branded him quote an outcast.. .who cannot reconcile the teachings of the compassionate Buddha with murder, rape and pillage by the military clique whose cause he had come here to espouse. Unquote. Nov 26 Daily News editorial roundly criticized both sides in the conflict but placed major blame for military activity on India, arguing that quote anybody who believes that Pakistan, in her present plight, would launch a war against India should surely have his brains washed again in the holy Ganges. Unquote.
6. Comment: Roy’s suggestion that intervention by PM Bandaranaike would be welcomed by Pakistan raises possibility that such role may be attempted again. As shown by Indian Ocean Peace Zone proposal, PM Bandaranaike is seeking new prestige in international arena. Successful involvement in Indo-Pak dispute could earn for her that prestige as well as score domestic points because of the increased interest in the conflict here in Ceylon. GP-3
STRAUSZ-HUPESource: The American Papers – Secret and Confidential India.Pakistan.Bangladesh Documents 1965-1973, University Press Limited, p.73 – 733
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায় একটি তালিকা ছাপা হয় যেখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহায়তার অভিযোগে দালাল আইনে অভিযুক্তদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়; নুরুল আমিন, সবুর খান, গোলাম আযমসহ দালালদের সে তালিকায় ৮ নম্বরে ছিলো ত্রিদিব রায়ের নাম।
এদিকে জনৈক আরাফাতুর রহমান জানাচ্ছেন:
চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সহযোগিতায় রাঙামাটিতে গণহত্যা চলে। এই সময়ে রাঙামাটি মুক্ত করতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র এবং এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ইফতেখারসহ ৮-১০ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়।
চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তার বির্তকিত বই The Departed Melody-তে লেখেন, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সকালে তিনি (রাজা ত্রিদিব রায়) তার ভগ্নিপতি কর্নেল হিউম, ম্যাজিট্রেট মোনায়েম চৌধুরী, মোঃ হজরত আলী এবং আরো কয়েকজন বাঙালি মুসলিম লীগ নেতাসহ চট্টগ্রামের নতুন পাড়ায় অবস্থিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেন্টার-এর পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে ম্যাজিস্ট্রেট মোনায়েম চৌধুরী এবং রাজা ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে আসা আরো কয়েকজন বাঙালি ঢাকা থেকে আসা জুনিয়র অফিসারকে সঙ্গে করে কাপ্তাইয়ে যাবেন। ঠিক সেদিনই বিকেলে কাপ্তাই থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল কয়েকটি লঞ্চ এবং স্পিডবোট নিয়ে রাঙামাটি আসে এবং বিনা প্রতিরোধে দখল করে নেয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত (ফেব্রু-২০১১) ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’ বইয়ে জামালউদ্দিন লেখেন, ‘…অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাক দালাল খ্যাত চিহ্নিত এক উপজাতীয় নেতার (রাজা ত্রিদিব রায়) বিশ্বাসঘাতকতায় ঐ দিনই পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রাঙামাটিতে এসে চুপিসারে অবস্থান নেয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। ভারত প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি পৌঁছার সাথে সাথে সেখানে ওৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। এই দলের মধ্যে ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইফতেখার।’ [পৃষ্ঠা ৩৭৯-৩৮০]
এর আগে রাঙামাটি মহকুমা সদরের এসডিও আবদুল আলী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে দুটি স্পিডবোটে করে মহালছড়ি থেকে রাঙামাটি আসেন। স্পিডবোটে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এস এম কালাম, আবদুল শুকুর, শফিকুল ইসলাম, মামুন, সামসুল হক মাস্টার এবং রাঙামাটি হাইস্কুলের তদানীন্তন হেডমাস্টার রহমান আলীর ছেলে ইফতেখার। এর মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য আবদুল আলীকে রাঙামাটিতে পুলিশ লাইনের এক ব্যারাকে আটক করে রেখে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে আঁচড় দেয়া হয়েছিল। এরপর সেসব জায়গায় লবণ দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তাকে একটি জিপের পিছনে বেঁধে টেনে রাঙামাটির বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়েছিল। সূত্র : ‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শরবিন্দু শেখর চাকমা, (অঙ্কুর প্রকাশনী, জানু-২০০৬ পৃষ্ঠা ২৫]।
তবে ওই লেখক তার লেখায় মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা বেমালুম চেপে যান। এমনকি লেখাটি যে কেউ পড়লে ধারণা জন্মাতে পারে যে, ১৯৭১ এ আদিবাসী মাত্রই ত্রিদিব রায়ের অনুসারি তথা রাজাকার ছিলেন! তিনি ভুলে যান কথিত ‘আদিবাসী রাজাকারের বংশধর’, বর্তমান চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় ১৯৭১ এ মাত্র ১১ বছরের বালক ছিলেন এবং পিতার কৃতকর্মের দায়ভার কোনোভাবেই তার ওপর বর্তায় না এবং চাকমা রাজা হিসেবে তার এ পর্যন্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড আদিবাসী তথা বাংলাদেশের স্বার্থই রক্ষা করে। বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক রাজা দেবাশীষ পার্বত্য সমস্যা নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গবেষণাগ্রন্থ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ; এমনকি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির খসড়াটিও তারই করা। চাকমা ভাষায় রয়েছে তার লেখা ও সুর করা অসংখ্য গান এবং গুনি এই ব্যক্তি বাঁশির সুরে ধরেছেন পাহাড়ি লোক ঐতিহ্য। সংক্ষেপে, রাজপরিবারের আশিবার্দে নয়, নিজস্ব যোগ্যতায় বর্তমান চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় পরিনত হয়েছেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে।
কিন্তু আরাফাতুর রহমান উগ্র জাতিগত বিদ্বেষজনিত কারণে আরো লেখেন:
এই যুদ্ধাপরাধীদের বংশধররা বংশপরম্পরায় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে। বর্তমান আমরা তাদেরই আবার দেশের প্রতিনিধি বানিয়েছি বিশ্বদরবারে, জাতিসংঘে। যুদ্ধাপরাধী চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় এবং বিচারপতি সায়েমের উপদেষ্টা ত্রিদিব রায়ের মা বিনীতা রায়ের বংশধর এবং উত্তরাধিকারী দেবাশীষ রায় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজামী ও মুজাহিদের মতো তার গাড়িতেও বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে। তিনি সম্প্রতি মেক্সিকোর কানকুনে শেষ হয়ে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের পক্ষে কাজ করেছেন। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংগঠন ইউএনএফসিসিসি (UNFCCC) এবং ইউ এন পার্মানেন্ট ফোরাম অন ইনডিজিনাস ইস্যুর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। (সূত্র : প্রথম আলো, ০২ জানুয়ারি ২০১১)
রাজাকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর পুত্র হিসেবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যদি ওআইসির (ঙওঈ) মহাসচিব পদের জন্য নির্বাচন করে দেশের ভাবর্মূতি নষ্ট করতে পারে তাহলে কেন ত্রিদিব রায়ের মতো প্রমাণিত রাজাকারের পুত্র বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে? এখন তো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত সরকার। তাদের অপরাধের কেন বিচার হবে না?
এ যেনো আমতত্ত্ব। আম গাছে তো আমই ফলে নাকি? ফকাচৌ’র পুত্র সাকাচৌ যুদ্ধাপরাধী হলে ত্রিদিব পুত্র দেবাশীষ কেনো বালক রাজাকার হবেন না? লা জবাব গরলীকরণ!!
—
ছবি: ত্রিদিব রায়, ১৯৭০, জুলফিকার আলী ভূট্টোর সঙ্গে, ১৯৭২, চট্টগামে দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথের সঙ্গে, ১৯৬১ এবং বর্তমান সময়ে, আন্তর্জাল।
—
আরো পড়ুন:
১। দেশের একমাত্র আদিবাসী বীরবিক্রম ইউকেচিং,
৩। মহাকাব্যের অগ্রন্থিত কবিতা : মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী।
খুবই মূল্যবান গবেষণা। চলুক।
[…] […]
চমৎকার সিরিজ। পাহাড়িদের নিয়ে এত সূক্ষ্ম গবেষণা এর আগে আপনার মত কেউ করেছে কি না আমার জানা নেই। তাই এই রকম একটা সিরিজ আপনার মত উপযুক্ত ব্যক্তির হাত ধরে বয়ে যাচ্ছে দেখে খুব ভাল লাগছে।
@রাজেশ তালুকদার,
আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামীতেও সঙ্গে থাকার বিনীত অনুরোধ। (Y)
ত্রিদিব রায়কে আমি স্যালুট জানাই এজন্য যে তিনি আজ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করেননি পাকিস্তানের সাথে আর বাংলাদেশের কোন বিষয়েও নাক গলাননি। তিনি ক্ষমা পেয়েও দেশে ফেরত আসেননি তাতে তার বিশ্বাসের, রাজা পদবি তথা তার প্রজাদের অমর্যদা হবে বলে। বিপরীতে বাকি রাজাকারদের আমরা কি দেখি? তারা এখনো এদেশে সেই পাকিস্তানি চেতনা শুধু ধারন করেনা উলটাপালটা মতবাদও প্রচার করে যাচ্ছে। সেসব রাজাকাররা ত্রিদিব রায়ের পথ অনুসরণ করলেতো এদেশের কোন সমস্যা থাকতোনা। বংগবন্ধুও খুন হতেননা, সামরিক সরকারও বারবার এ দেশ শাসন করতোনা। ইসলামের জুজুও থাকতোনা। তারাতো ফিরে এসে প্রতি পদে পদে দেশের মাথা তুলে দাড়াতে দিচ্ছেনা।
@সুপ্রিয়,
দুঃখিত। খুব সম্ভবত ব্যক্তিপূজার ধারণা থেকেই আপনি এই সেল্যুট জানানোর কথা বলছেন। ত্রিদিব রায় বা গোলাম আজম পাকিস্তান বা বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, না করেননি — তার চেয়েও বড়কথা হচ্ছে: যুদ্ধাপরাধ, যেটি এখনো তামাদি হয়নি।
আশাকরি, এই ফোকাস পয়েন্টটি আপনার যুক্তিবোধকে সুসংহত করবে।
অনেক ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান, ব্যক্তিপূজার বিষয় নয়। আমি তার রুপবদল না করার দৃঢ়তার কথা বলছি।
সুন্দর লেখা
@বেয়াদপ পোলা,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি, আগামীতেও সঙ্গে থাকবেন। (Y)
শুনেছিলাম (সত্যতা যাচাই করা যায় নাই) স্বাধীনতার পর সন্তু লারমার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাদের বলেছিলেন,” তোরা বাঙ্গালী হয়ে যা”। এটা শুনে বা পড়ে আমার খুব অবাক লেগেছিল , বঙ্গবন্ধুর মত এত বড় একজন নেতা এ কথা বলেন কিভাবে?। এ লেখাটা পড়ে বুঝলাম বঙ্গবন্ধু আসলে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন।কিন্তু বর্তমানে আদিবাসী বা পাহাড়ি বা বাংলাদেশি যে নামেই ডাকা হোক না কেন তাদের ওপরে পাকিস্তানি হানাদার দের মত বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও অত্যাচার চালালে আমরাও যুদ্ধাপ রাধি ।
@সপ্তক,
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এই লেখাটির পাঠ প্রতিক্রিয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশের জন্য।
কিন্তু ভ্রাতা বিনয় করে বলি, আপনার তথ্যে গুরুতর ঘাটতি আছে। ১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধান রচনাকালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে উপেন্দ্র লাল চাকমা, এমএন লারমাসহ পাহাড়ি বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় শেখ মুজিব প্রতিনিধি দলের মুখের ওপর ফাইল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অমন উদ্ধত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। পরে এমএন লারমার আপত্তি স্বত্ত্বেও সংবিধানে দেশের সকল নাগরিক পরিচয় ‘বাঙালি’ হিসেবে স্বীকৃত হয়।
ইতিহাস স্বাক্ষী, বাংলাদেশের যাত্রাশুরুর ওই ঐতিহাসিক ভুলের মাশুল পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী, তথাদেশকে রক্ত দিয়ে শোধ করতে হয়েছিল, যা অসংখ্য গণহত্যা, ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ, লুণ্ঠনসহ আরো নানা ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর জের ধরে শান্তিবাহিনীর প্রায় আড়াই দশকের গেরিলা যুদ্ধ এবং শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরেই সমস্যাটি এখনো শেষ হয়ে যায়নি, বরং নতুন মাত্রা পেয়েছে মাত্র।
অন্যদিকে পাহাড়ে পাকিপনার জন্য সেনা-সেটেলাররা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধী; মানবাধিকার লঙ্খনের এতসব গুরুতর বিষয়ের যৌক্তিক অবসান ছাড়া পাহাড়ে আদৌ শান্তি প্রতিষ্ঠা নয় বলেই আমার ধারণা।
আগামীতেও সঙ্গে থাকার বিনীত অনুরোধ। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
আমি আসলে বলতে চেয়েছি ত্রিদিব রায় এর কারনেই হয়ত বঙ্গবন্ধু অমন্টি করেছিলেন। তাঁর কাছে হয়ত পুরো ব্যপারটি পরিস্কার ছিল না। আমার মত ভুলও হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু যদি বলে থাকেন, ” তোরা বাঙ্গালী হয়ে যা”, তাহলে তা ছিল চরম ভুল।আমি এও মনেও করি সমান সম্মান না দিলে কোন জাতি গোষ্ঠী একসাথে থাকবে না। শিখ দের থেকে যদি প্রেসিডেন্ট /প্রধানমন্ত্রী না বানান হত খালিস্তান এর দাবি যেমন বাদ যেত না , আমাদের পাহাড়ি বা আদিবাসী ভাইদেরও তেমনি সম্মান না দিলে পাহাড়ের আগুন নির্বাপণ হবে না। ভারতেও উলফা রা থামবে না । মানুষকে মানুষের সম্মান দিতেই হবে।
@সপ্তক,
আবারো আপনার সবিনয় উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ।
তবে আমার মনে হয়, শেখ মুজিবের অমন বৈরি আচরণের কারণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সদ্য স্বাধীন দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের পদ। শুধু ত্রিদিব রায় নয়, আসলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জোয়ারে তখন অন্যান্য ভাষাগত সংখ্যালঘু জনজাতিগুলোর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি ভেসে গিয়েছিল। 🙁
@বিপ্লব রহমান,
“তবে আমার মনে হয়, শেখ মুজিবের অমন বৈরি আচরণের কারণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সদ্য স্বাধীন দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের পদ। ”
নাহ ভাই এটা মানি না। বঙ্গবন্ধু কিন্তু ৬ দফার সাথে আপোষ করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন । ক্ষমতার লোভ তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনে অনেকবার অতিক্রম করেছেন। আপনি যেভাবে রাজা দেবাশিস কে রাজা হিসেবে পিতার অপকর্ম থেকে রেহাই দিতে চাচ্ছেন তা অতি সরলীকরণ কারন আমরা ধরেই নিতে পারি যেহেতু পিতা বাংলাদেশে আর ফিরে আসেন নাই তাই বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্ত দেখিয়ে তিনি রাজা হয়েছেন, হোক না তা ক্ষমতা বিহীন, মন্ত্রি ত হএছিলেন, রাজা না হলে ত হতেন না।যেহেতু ঐ রাজ পদে থেকে তাঁর বাবা রাজাকারি করেছিলেন সেহেতু ঐ পদ এ না বসে যদি তিনি পাহাড়ি ভাইদের জন্য মাঠে নামতেন ভাল হত,যেম্নিভাবে ভালহত যদি বঙ্গবন্ধু ওভাবে আপনার ভাষায় বৈরী আচরন না করতেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতা, তাঁর অনেক ভুল আছে, তারপরেও তিনিই একমাত্র নেতা যিনি জীবনে আপোষ করেন নাই। বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দেখাতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। সমালোচনা ভিন্ন কথা, পাহাড়িরা আমাদের ভাই। আমি চাই পাহাড়িদের মাঝথেকে দেশের প্রেসিডেন্ট করা হোক। সবার সম্মান সমান এটা প্রমান করার কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ বুঝতেন কিন্তু সঙ্খ্যালঘুদের যাতনা বুঝতেন না এতটা সরলীকরণ ঠিক না।হয়ত তাঁর ভুল ছিল , কিন্তু কোন পদে থাকার জন্য তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তা মনে হয় না।
অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব, এই কৌতুহ্লোদ্দীপক বিষয় নিয়ে সিরিজ লেখার জন্য। খুব আগ্রহ নিয়েই সিরিজটি পড়ছি, এবং অনেক কিছু জানছি।
উপরে গীতাদির সাথে আমারও কিছুটা একমত হতে হল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
@অভি দা,
আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া বরাবরই আমার জন্য প্রেরণাদায়ক।
গীতা দি’র সঙ্গে যে বিষয়ে আপনি একমত হয়েছেন, সে প্রসঙ্গে ওপরে প্রতিমন্তব্য দিয়েছি; অনুগ্রহ করে সেটি দেখার অনুরোধ রইলো।
অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
বিপ্লব রহমান,
তবুও, নিরপেক্ষভাবে যদি বিশ্লেষণ করি তবে তো বলতেই হবে যে ত্রিদিব রায়ের ছেলে না হলে তো দেবাশীষ রায় রাজাই হতে পারতেন না। রাজত্ব তো রাজাকার বাবার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। বাবার সাথে ব্যাংককে গিয়ে দেখা করে আসেন। বাবার রাজত্ব করছেন । উনি কিন্তু রাজত্ব মানে রাজা উপাধি ছেড়ে দিয়ে স্ব পরিচয়ে পরিচিত হতে পারতেন।যা তিনি করেননি।
তবে তার ভূমিকা যেহেতু সাকাচৌ এর মত নয় তাই তাকে সরাসরি বালক রাজাকার বলা হয়তো ঠিক নয়, তবে তিনি যে উত্তরাধিকার বয়ে বেড়াচ্ছেন তা কিন্তু রাজার সাথে রাজাকার এর উত্তরাধিকারও।
@গীতা দি,
মাফ করবেন। বিষয়টি বোঝাতে পারিনি; এটি আমারই ব্যর্থতা। দেবাশীষ রায়ের রাজতন্ত্র (যা এখন প্রায় পুরোটাই আলংকরিক পদমাত্র) পৈত্রিক বটে; কিন্তু এ জন্য পিতার যুদ্ধাপরাধ তথা ফৌজদারি অপরাধের দায়ভার তার ওপরে বর্তাবে কেনো? 😕
আপনার বিনীত পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। চলুক। (Y)