আবুল কাশেম
[রচনাটি এম, এ, খানের ইংরেজি বই থেকে অনুবাদিত “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” গ্রন্থের ‘ইসলামি ক্রীতদাসত্ব’ অধ্যায়ের অংশ এবং লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশনের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হলো। এ পর্বে আলোচিত হয়েছেঃ অন্যত্র মুসলিমদের দ্বারা দাসকরণ]
ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ৪
লেখক: এম, এ, খান
অন্যত্র মুসলিমদের দ্বারা দাসকরণ
মুসলিম হানাদার ও শাসকরা সর্বত্রই তাদের হামলার শিকার ও যুদ্ধে পরাজিত বিধর্মীদেরকে বিপুল সংখ্যায় ক্রীতদাসকরণের কাজে লিপ্ত হয়েছে। বিক্রি বা গৃহকর্মে নিয়োগ ও উপপত্নীকরণে নবি মুহাম্মদ কর্তৃক অমুসলিমদেরকে পাইকারিভাবে ক্রীতদাসকরণের অভিষেকের পর তা ক্রমান্বয়ে গতি ও বিস্তার লাভ করে সঠিক পথে পরিচালিত খলিফাগণ (৬৩২-৬৬০) এবং উমাইয়া (৬৬১-৭৫০) ও আব্বাসীয় (৭৫১-১২৫০) শাসনকালের মধ্য দিয়ে ইসলামি ক্ষমতা উত্তরোত্তর বর্ধিত হওয়ার সাথে সাথে।
খলিফা ওমরের নির্দেশে মুসলিম সেনাপতি আমর ৬৪৩ সালে ত্রিপোলি জয় করে খ্রিষ্টান-ইহুদি উভয় ধর্মের নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করে নিয়ে আসেন। নবম শতকের ইতিহাসবিদ আবু খালিফ আল-ভূটুরি জানান: খলিফা ওসমান ৬৫২ সালে পরাভূত নুবিয়ার (সুদান) শাসকদের উপর একটা চুক্তি আরোপ করেন আনুগত্যকর হিসেবে প্রতিবছর ৩৬০ জন ক্রীতদাস খলিফাকে ও ৪০ জন মিশরের গভর্নরকে পাঠানোর শর্তে।[৭২] ১২৭৬ সাল পর্যন্ত এ চুক্তিটি কার্যকর থাকে। একই ধরণের চুক্তি আরোপ করেছিল উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা ট্রানসক্সিয়ানা, সিজিস্তান, আর্মেনিয়া ও ফেজান (আধুনিক উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা)-এর শাসকদের সঙ্গে, যাদেরকে প্রতিবছর নারী-পুরুষ উভয় লিঙ্গের নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রীতদাস আনুগত্য-কর হিসেবে প্রদান করতে হতো।[৭৩] উমাইয়া শাসনামলে বিশিষ্ট ইয়েমেনি সেনানায়ক মুসা বিন নুসায়েরকে নবোত্থিত বার্বার বিদ্রোহ দমন ও ইসলামের পরিসর বৃদ্ধির জন্য উত্তর আফ্রিকার গভর্নর নিযুক্ত করা হয় (ইফ্রিকিয়া, ৬৯৮-৭১২)। মুসা সফলভাবে সে বিদ্রোহ দমনকালে ৩০০,০০০ বিধর্মীকে ক্রীতদাস হিসেবে বন্দি করেন। খলিফার এক-পঞ্চমাংশ হিস্যার ৬০,০০০ বন্দিকে দাস-বাজারে বিক্রি করে দিয়ে গৃহিত অর্থ খলিফার কোষাগারে জমা করা হয়। মুসা বন্দিদের মধ্যে থেকে ৩০,০০০-কে তার সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেন।[৭৪]
স্পেনে তার চার বছরের অভিযানে (৭১১-১৫) মুসা কেবলমাত্র সম্ভ্রান্ত গোথিক পরিবারগুলো থেকেই ৩০,০০০ অবিবাহিত বালিকাকে আটক করেছিলেন।[৭৫] এ সংখ্যা ছিল ক্রীতদাসকৃত অন্যান্য নারী-শিশুদের থেকে ভিন্ন। ৭৮১ সালে এফিসাস (বর্তমান তুর্কিতে) লুট ও ধ্বংসযজ্ঞে ৭,০০০ গ্রিককে ক্রীতদাসরূপে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮৩৮ সালে আমোরিয়াম (তুর্কিতে) দখলে বন্দিকৃত ক্রীতদাসের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে, খলিফা আল-মুতাসিম তাদেরকে পাঁচ ও দশজনের দলে ভাগ করে নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেন। থেসালোনিয়া আক্রমণে (গ্রিস, ৯০৩ সাল) ২২,০০০ খ্রিষ্টানকে ক্রীতদাস করে সেনানায়কদের মাঝে ভাগ কিংবা বিক্রি করে দেওয়া হয়। ১০৬৪ সালে আল্প আরসালান-এর জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া ধ্বংসযজ্ঞে বিপুল সংখ্যক লোক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এবং জীবিত অবশিষ্টদেরকে ক্রীতদাস করা হয়। স্পেনের আলমোহাদ খলিফা ইয়াকুব আল-মনসুর ১১৮৯ সালে লিসবন আক্রমণ করে প্রায় ৩,০০০ নারী-শিশুকে ক্রীতদাস বানান। ১১৯১ সালে তার কর্ডোভাস্থ গভর্নর পর্তুগালের সিলভে আক্রমণ করে ৩,০০০ নারী-শিশুকে ক্রীতদাস বানান।[৭৬]
১১৮৭ সালে ক্রুসেডারদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে নিয়ে সুলতান সালাহুদ্দিন নগরীর খ্রিষ্টান জনগণকে ক্রীতদাস বানিয়ে বিক্রি করে দেন। ১২৬৮ সালে অ্যান্টিওক দখল করে মামলুক সুলতান আল-জাহির বেইবার (শাসনকাল ১২৬০-৭৭) গ্যারিসনের ১৬,০০০ প্রতিরোধকারী যোদ্ধাকে তলোয়ারের ডগায় হত্যার পর সে স্থানের ১০০,০০০ লোককে ক্রীতদাস বানান। হিট্টি লিখেছেন: ‘দাস-বাজার এতই ভরপুর হয়ে উঠে যে, একজন দাস-বালক মাত্র বার দিরহামে ও দাস-বালিকা পাঁচ দিরহামে বিক্রি হয়।’[৭৭]
ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মুসলিমরা ক্ষমতাগ্রহণের মাধ্যমে দাসপ্রথাকে এমন এক স্তরে পৌঁছে দেয় যে, এক শতাব্দী পর পর্তুগিজরা এসে দেখে প্রায় সব মানুষই কোনো না কোনো দাস-মালিকের অধীন; আর মালিকের মধ্যে আরবরা বা আরব-বংশোদ্ভূতরা ছিল শীর্ষ স্থানে। এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মুসলিম শাসকরা একটা ভূখণ্ড দখল করার পর কখনো কখনো গোটা জনসংখ্যাকেই দাস হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে। মুসলিম শাসকরা জনসংখ্যার একটা বড় অংশ, যারা পাহাড়ে বাস করতো, তাদের প্রায় সবাইকে হামলা ও ক্রয়ের মাধ্যমে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল। মালয় বিজয়ের পর আচেহ্ সুলতান ইস্কান্দর মুদা (১৬০৭-৩৬) হাজার হাজার ক্রীতদাসকে তার রাজধানীতে নিয়ে আসেন। ১৫০০ শতাব্দীর দিকে জাভা হয়ে উঠেছিল প্রধান ক্রীতদাস রপ্তানিকারক। গ্রন্থকার রীড জানান, এসব ক্রীতদাসকে ‘ইসলামিকরণমূলক যুদ্ধে’ আটক করা হতো।[৭৮] ফিলিপিনে স্পেনীয়রা মুসলিম অঞ্চল দখল করে নেওয়ার অবিরাম হুমকি হওয়া সত্ত্বেও সুলু সুলতানাত ১৬৬৫ ও ১৮৭০ সালের মধ্যে মোরো জিহাদী মুসলিমদের হামলার মাধ্যমে স্পেনীয় নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে প্রায় ২৩ লক্ষ ফিলিপিনোকে ক্রীতদাস করে নিয়ে আসে। ১৮৬০ থেকে ১৮৮০’র দশকের শেষদিক পর্যন্ত মালয় উপদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জের মুসলিম-শাসিত অঞ্চলে ক্রীতদাসরা ছিল মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ থেকে দুই-তৃতীয়াংশ।
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে মরক্কোর সুলতান মৌলে ইসমাইল (১৬৭২-১৭২৭) ২৫০,০০০ কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের এক বিশাল সামরিক বাহিনী গড়েছিলেন।[৭৯] ১৭২১ সালে মৌলে ইসমাইল এটলাস পর্বতের এক বিদ্রোহী ভূখণ্ডে হামলার নির্দেশ দেন, সেখানকার জনগণ সুলতানকে আনুগত্যকর প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে। বিদ্রোহীদেরকে পরাজিত করার পর তাদের সকল সমর্থ পুরুষকে হত্যা করে নারী-শিশুদেরকে রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়। এর পরপরই তিনি তার পুত্র মৌলে আস-শরীফের নেতৃত্বে ৪০,০০০ শক্তিশালী এক যোদ্ধাবাহিনীকে গুজলান বিদ্রোহী নগরীর বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন, কারণ তারাও আনুগত্যকর প্রদান বন্ধ করেছিল। প্রচণ্ড যুদ্ধের মুখে বিদ্রোহীরা জয়ের কোনো আশা নেই দেখে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু মৌলে আস-শরীফ প্রত্যেককে হত্যা করে মস্তক ছিন্ন করার নির্দেশ দেন।[৮০] তাদের নারী ও শিশুদেরকে অনিবার্যরূপেই ক্রীতদাসকরণের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গিনি (আফ্রিকা, বর্তমানে ৮৫ শতাংশ মুসলিম) মুসলিম শাসনাধীনে আসে অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এ শতকেরই শেষ দিকে ‘আপার গিনি উপকূলে এক-এক জন নেতা বা সর্দারের অধীনে ১,০০০ বাসিন্দা অধ্যুষিত ‘ক্রীতদাস-নগরী’ ছিল।’ ১৮২৩ সালে ইসলামি সিয়েরালিওন ভ্রমণ করতে গিয়ে মেজর লেইং ফালাবা’য় ‘ক্রীতদাস নগরী’ প্রত্যক্ষ করেন, যা ছিল সালিমা সুসু’র রাজধানী।[৮১] ওসব ক্রীতদাসরা নগরী-প্রধানের কৃষিখামারে কাজ করতো। খ্যাতিমান সুলতান সৈয়দ সাঈদের পূর্ব আফ্রিকার সাম্রাজ্য, যার রাজধানী ছিল জাঞ্জিবার (১৮০৬-৫৬), ‘সেটা গড়েছিলেন ক্রীতদাসের উপর ভিত্তি করেই… সেখান থেকে ক্রীতদাসদেরকে উত্তর আফ্রিকা ও পারস্যের বাজারগুলোতে পাঠানো হতো গৃহকর্মে ব্যবহার বা উপপত্নীরূপে বিক্রির জন্য।’[৮২]
ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল লেখক রোনাল্ড সিগল জানান,[৮৩] সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে মুসলিম বাহিনীতে নিযুক্ত করার জন্য দশ থেকে বার বছর বয়সের বিপুল সংখ্যক আফ্রিকার শিশুকে ধরা হতো ক্রীতদাসরূপে। পারস্য থেকে মিশর, মিশর থেকে মরক্কো, পর্যপ্ত ৫০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ হাজারের ক্রীতদাস-বাহিনী ছিল মামুলি ব্যাপার।[৮৪] অটোমান জানিসারি সেনাদেরকে সংগ্রহের মতোই (নিচে আলোচিত) সুলতান মৌলে ইসমাইল কৃষ্ণাঙ্গ-ক্রীতদাস উৎপাদন খামার ও নার্সারি থেকে দশ-বছর-বয়স্ক শিশুদেরকে বাছাই করে খোজা করার পর দুর্ধর্ষ যোদ্ধারূপে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দিতেন। এসব যোদ্ধাদেরকে বলা হতো ‘বোখারী’, কেননা তাদেরকে ‘সহি বোখারী’ স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করানো হতো সুলতানের প্রতি আনুগত্যের নিমিত্তে। উৎকৃষ্ট বোখারীরা হতো সুলতানের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও প্রাসাদরক্ষী; বাকিদেরকে প্রদেশগুলোতে সামরিক কর্মকাণ্ড পালনে নিযুক্ত করা হতো। রাজধানী মেকনেস রক্ষার জন্য তিনি রাখতেন ২৫,০০০ বোখারী; ৭৫,০০০ মোতায়েন করেছিলেন গ্যারিসন নগরী মাহাল্লায়।[৮৫]
পল লাভজয়ের হিসাব অনুযায়ী (ট্রান্সফর্মেশনস ইন শ্লেইভারী, ১৯৮৩), কেবলমাত্র উনবিংশ শতাব্দীতেই আফ্রিকা ও লোহিত সাগরের উপকূল থেকে ২০ লক্ষ ক্রীতদাসকে মুসলিম বিশ্বে পাঠানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ৮০ লক্ষ লোক মারা যেয়ে থাকতে পারে, কেননা ক্রীতদাসকরণ অভিযান থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত মৃত্যু হার ছিল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। অষ্টাদশ শতাব্দীর হিসাব অনুযায়ী আফ্রিকায় ১,৩০০,০০০ জন (১৩ লাখ) কৃষ্ণাঙ্গকে ক্রীতদাস করা হয়। লাভজয় হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আফ্রিকা থেকে মোট ১১,৫১২,০০০ জন (১ কোটি ১৫ লক্ষ ১২ হাজার) ক্রীতদাসকে মুসলিম বিশ্বে পাচার করা হয়। অপরদিকে রেইমন্ড মুভি (‘দ্যা আফ্রিকান শ্লেইভ ট্রেইড ফ্রম দ্যা ফিফটিন্থ টু দ্যা নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি’, ইউনেস্কো, ১৯৭১) মোট সংখ্যা দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৪ লক্ষ, যার মধ্যে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে আটককৃত ৩০০,০০০ জন ক্রীতদাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৮৬] মারে গর্ডনের ‘শ্লেইভারি ইন দ্য আরব ওয়ার্ল্ড’ গ্রন্থে মুসলিম ক্রীতদাস-শিকারিদের দ্বারা সংগৃহীত কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১০ লক্ষ। এ সংখ্যা নিউ ওয়ার্ল্ড বা নতুন বিশ্বের (উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ) উপনিবেশগুলোতে ইউরোপীয় বণিকদের নিয়ে যাওয়া ক্রীতদাসদের সংখ্যার প্রায় সমান। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে সুদানের দারফুর থেকে ক্রীতদাস বোঝাই গাড়িবহরগুলোতে এক যাত্রায় ১৮,০০০ থেকে ২০,০০০ ক্রীতদাস কায়রোতে নিয়ে যাওয়া হতো। এমনকি ১৮১৫ সালে ইউরোপ দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার পর তা বন্ধ করতে মুসলিম সরকারগুলোকে চাপ প্রয়োগ সত্ত্বেও, ‘১৮৩০ সালে জাঞ্জিবারের সুলতান ৩৭,০০০ ক্রীতদাসের বাৎসরিক পাওনা দাবি করেন; ১৮৭২ সালে সুয়াকিন (আফ্রিকা) হতে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ ক্রীতদাস আরবাঞ্চলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে’, লিখেছেন ব্রডেল।[৮৭]
[আগামী পর্বে আলোচিত হবেঃ অটোমান দিউশারমি (ক্রীতদাস সংগ্রহ প্রথা)]
সূত্রঃ
72. Vantini G (1981) Christianity in the Sudan, EMI, Bologna, p. 65-67
73. Ibn Warraq (1995) Why I am not a Muslim, Prometheus Books, New York, p. 231
74. Umayyad Conquest of North Africa, Wikipedia, http://en.wikipedia.org/ wiki/Umayyad_conquest_of_North_Africa
75. Lal KS (1999) Theory and Practice of Muslim State in India, Aditya Prakashan, New Delhi, p 103; Hitti PK (1961) The Near East in History, D. Van Nostrand Company Inc., New York, p. 229-30
76. Brodman JW (1986) Ransoming Captives in Crusader Spain: The Order of Merced on the Christian-Islamic Frontier, University of Pennsylvania Press, Philadelphia, p. 2-3
77. Hitti (1961), p. 316
78. Reid A (1988) Southeast Asia in the Age of Commerce 1450–1680, Yale University Press, New Haven, p. 133
79. Lewis B (1994) Race and Savery in Middle East, Oxford University Press, Chapter 8, http://www.fordham.edu/halsall/med/ewis 1.html
80. Milton G (2004) White Gold, Hodder & Stoughton, London, p. 143, 167-71
81. Rodney W (1972) In MA Klein & GW Johnson eds., Perspectives on the African Past, Little Brown Company, Boston, p. 158
82. Gann L (1972) In Ibid, p. 182
83. Segal emphasizes that anti-Semitism is in complete conflict with the amicable relationship Prophet Muhammad had established with Judaism and Christianity. He asserts that there is no historical conflict between Jews and Muslims, although some conflict arose only after the crusades. Such assertions go directly against Prophet’s exterminating or exiling the Jews of Medina and Khaybar and his final instruction, while in death-bed, to cleanse Arabia of the Jews and Christians. He also urged his followers to killl the Jews and Christians. He also urged his followers to kill the jews to the last one (Sahih Muslim, 41:6985)
84. Segal R (2002) Islam’s Black Slaves, Farrar, Straus and Giroux, New York, p. 55
85. Milton, p. 147-150
86. Segal R (2002) Islam’s Black Slaves, Farrar, Straus and Giroux, New York, p. 56-57
87. Braudel F (1995) A History of Civilizations, Translated by Mayne R, Penguin Books, New York, p. 131
ইসলামি ক্রীতদাসত্ব, খণ্ড ৫
[রচনাটি এম, এ, খানের ইংরেজি বই থেকে অনুবাদিত “জিহাদঃ জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” গ্রন্থের ‘ইসলামি ক্রীতদাসত্ব’ অধ্যায়ের অংশ এবং লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশনের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হলো। এ পর্বে আলোচিত হয়েছেঃ অটোমান দিউশারমি (ক্রীতদাস সংগ্রহ প্রথা)]
লেখক: এম, এ, খান
অটোমান দিউশারমি (ক্রীতদাস সংগ্রহ প্রথা)
ইসলামি দাসপ্রথার একটা অতি নিন্দিত ব্যবস্থা হলো অটোমান সাম্রাজ্যে প্রচলিত ‘দিউশারমি’ প্রথা, যা অটোমান সুলতান ওরখান প্রবর্তন করেছিলেন ১৩৩০ সালে। এ প্রকল্প অনুযায়ী অটোমান সাম্রাজে বসবাসকারী খ্রিষ্টান ও অন্যান্য অমুসলিম পরিবারের ৭ থেকে ২০ বছর বয়স্ক বালকদের একটা অংশকে যোগাড় করা হতো। নীতিটির প্রবর্তন সম্বন্ধে বার্নার্ড লুইস ষষ্ঠদশ শতকের অটোমান ইতিহাসবিদ সাদেদ্দীন (হোক্কা ইফেন্দি)-এর উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেছেন এভাবে:
‘খ্যাতিমান রাজা… তার রাজ্যের মন্ত্রীদের নিয়ে এক আলোচনায় বসেন, যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ভবিষ্যতে অবিশ্বাসীদের সন্তানদের মধ্য থেকে কর্মক্ষম সাহসী ও পরিশ্রমী যুবকদেরকে বাছাই করা হবে; তাদেরকে ইসলাম ধর্মের দ্বারা মর্যাদাবান করা হবে, যা হবে তাদেরকে ধনী ও ধার্মিক করার একটা উপায় এবং অবিশ্বাসীদের শক্তিকেন্দ্র ধ্বংস করার এক মোক্ষম উপায়ও।’[৮৮]
এ পরিকল্পনার অধীনে অটোমান শাসনাধীন গ্রিস, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, ম্যাসিডোনিয়া, বস্নিয়া-হার্জেগোভিনা, আর্মেনিয়া ও আলবেনিয়া থেকে অমুসলিম শিশুদেরকে চয়ন করা হতো। নির্দিষ্ট দিনে অমুসলিম পিতাকে (প্রধানত খ্রিষ্টান) একটা নির্দিষ্ট খোলা মাঠে তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে আসতে হতো। মুসলিম নিয়োগ কর্মকর্তারা তাদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্যবান, শক্তিশালী ও সুঠামদেহী বালকদেরকে বাছাই করতো। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেত কনস্টান্টিনোপল (পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তাম্বুল) জয় করার পর ‘দিউশারমি’ প্রথা ব্যাপক প্রসার লাভ করে, যে বিষয়ে স্টিফেন ও’শিয়া লিখেছেন: ‘এ বিজয়ের সূত্র ধরে ফাতিহ্ (বিজয়ী সুলতান) নিষ্ঠুর ‘দিউশারমি’ বা ‘সংগ্রহ’ পদ্ধতিটি সম্প্রসারিত করেন, যার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক খ্রিষ্টান তরুণকে অপহরণ করে রাজধানীতে আনা হতো… কয়েক বছর পর পর মেধাবী বালক সংগ্রহকারী কর্মকর্তারা সৈনিকদের সাথে গ্রামে গ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে খেলার সাথী ও জ্ঞাতিদের মধ্য থেকে প্রতিশ্রুতিশীল কৃষক-সন্তানদেরকে বাছাই করে ধরে নিয়ে যেতো।’[৮৯] ‘দিউশারমি’ প্রথার মাধ্যমে সংগ্রহকৃত শিশুদের সংখ্যার ব্যাপারে ‘কোনো কোনো পণ্ডিত এ সংখ্যা বছরে ১২,০০০ বলে উল্লেখ করেছেন, কেউ কেউ বলেছেন ৮,০০০; তবে সম্ভবত গড়ে বছরে কমপক্ষে ১০,০০০ বলে ধরা যেতে পারে।’[৯০]
এভাবে সংগ্রহকৃত উৎকৃষ্টতর খ্রিষ্টান, ইহুদি ও জিপ্সি (বেদুইন) সন্তানদেরকে সুন্নত দিয়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হতো। অতঃপর সহজেই প্রভাবান্বিত হওয়ার মতো এ তরুণ বয়স থেকেই তাদেরকে জিহাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা হতো এবং অটোমান বাহিনীর জ্যানিসারি রেজিমেন্টের অধীনে জিহাদী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ব্যারাকে আবদ্ধ ও বিবাহ-নিষিদ্ধ এসব তরুণের জীবনের শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল: অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া, কয়েক বছর আগেও যারা ছিল তাদেরই জাতি ও ধর্মের মানুষ।
এ নীতিটি অটোমান শাসকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠে। মুসলিম শাসকরা খ্রিষ্টান ধর্মের সর্ববৃহৎ ও আকর্ষনীয় কেন্দ্রস্থল কনস্টান্টিনোপল দখলের জন্য খলিফা মুয়াবিয়ার (মৃত্যু ৬৮০) আমল থেকে বারংবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে কনস্টান্টিনোপল দখলের অভিযানে বহুবার তারা মারাত্মকভাবে মার খেয়েছিল। পরিশেষে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জ্যানিসারিরা কনস্টান্টিনোপলের উপর ভয়ানকভাবে চড়াও হয়ে তা জয় করে ইসলামের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার বয়ে আনে। তৎকালীন অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মেহমেত জ্যানিসারিদেরকে তিন দিন ধরে এক-কালীন তাদেরই স্বধর্মী লোকদেরকে পাইকারি হারে হত্যা ও নগরীর সর্বত্র লুটতরাজ করার অনুমতি দেন। যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদেরকে ক্রীতদাস করা হয়। পরে বাছ-বাছাইহীনভাবে জ্যানিসারি রেজিমেন্টে সৈনিক নিয়োগ করা হয়, যখন ‘দিউশারমি’র অংশরূপে মুসলিমদেরকে, এমনকি অনেক সুফিকেও, জ্যানিসারি বাহিনীতে নিযুক্ত করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে রেজিমেন্টটিতে শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তা ভেঙ্গে পড়ে, যার সাথে সাথে ঘটনাক্রমে অটোমান শক্তির পতনেরও সূচনা হয়।
‘দিউশারমি’ প্রথা এ সত্যটির সাক্ষী হয়ে রয়েছে: কীভাবে ইসলামি বিশ্ব বিধর্মীদেরই শক্তি বা বাহুবলকে তাদের ভূখণ্ড দখলে ব্যবহার করতো! দিউশারমি প্রথাকে অনুকরণ করে সমকালীন ভারতে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক (শাসনকাল ১৩৫১-৮৮) একই উপায়ে হিন্দু শিশুদেরকে তার বাহিনীতে নিয়োগ করতেন। তিনি প্রাদেশিক কর্মকর্তা ও সেনাধ্যক্ষদেরকে নির্দেশ দেন উৎকৃষ্ট অমুসলিম তরুণদেরকে ক্রীতদাস হিসেবে ধরে এনে তার দরবারে পাঠিয়ে দিতে। এ প্রক্রিয়ায় তিনি ১৮০,০০০ তরুণকে ক্রীতদাসরূপে যোগাড় করেছিলেন।[৯১]
দিউশারমি প্রথার সমালোচনা: ১৬৫৬ সালে বিলুপ্ত হওয়া অটোমান ‘দিউশারমি’ ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্রীতদাস সংগ্রহের প্রক্রিয়া ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। তবে গোঁড়া অটোমান শাসকরা, যারা সুন্নি শরীয়া আইন মোতাবেক রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি বিধিবদ্ধ করতেন, ‘দিউশারমি’ প্রথা প্রণয়নে কোরান ও ইসলামি আইনে তারা যথেষ্ট যৌক্তিকতা ও সমর্থন পান। কোরানের ৮:৪২ নং আয়াতে বলা হয়েছে: ‘এবং জেনে রাখো যে, তোমরা যা কিছুই (যুদ্ধে লুণ্ঠিত মালামাল) কব্জা করো, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও তাঁর নবির।’
যুদ্ধে অর্জিত মালামালের এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত নবির জন্য বরাদ্দ। প্রাথমিক পর্যায়ে এটা যেতো নবি মুহাম্মদ-কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত তাঁর উদীয়মান ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাগারে। তাঁর মৃত্যুর পর এ অংশটি যেতো খলিফার রাজকোষে। জিম্মি প্রজাদের নিকট থেকে খলিফা ওমরের ঘোষিত করনীতির অধীনে ‘খারাজ’ হিসেবে আদায় করা হতো উৎপাদিত পণ্যের কমপক্ষে এক-পঞ্চমাংশ, যদিও বিশেষ পরিস্থিতিতে অথবা খামখেয়ালি মুসলিম শাসকদের অধীনে প্রায়শই তা আরো উচ্চহারে আদায় করা হতো। যেহেতু অবিশ্বাসীদের নবজাতক শিশুরাও ছিল রাষ্ট্রের এক ধরনের উৎপাদিত সম্পদ, সে সূত্রে পবিত্র ইসলামি আইনে ‘দিউশারমি’ প্রথা বৈধতা পায়। নবি নিজেই খ্রিষ্টান শিশুদেরকে জোরপূর্বক সংগ্রহ করার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিলেন, যখন তিনি তাগলিব গোত্রকে তাদের সন্তানদেরকে ব্যাপটাইজকরণ নিষিদ্ধ করেন, যার মাধ্যমে সেসব সন্তানরা মুসলিম হিসেবে গৃহিত হয়। পরে খলিফা ওমরও আরেকটি তাগলিব গোত্রকে নির্দেশ দেন তাদের সন্তানদেরকে চিহ্নিত (কব্জিতে ‘ক্রস’ চিহ্ন প্রদান) না করতে ও তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা না দিতে (অর্থাৎ ব্যাপটাইজ না করতে)।[৯২] এর ফলে, সেসব শিশুরা ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তবে একটা মাত্র পার্থক্য রয়েছে: ‘সংগ্রহ’ বা ‘দিউশারমি’ প্রথার মাধ্যমে অটোমানরা কেড়ে নিতো মাত্র এক-পঞ্চমাংশ বা তারও কম অমুসলিম সন্তানকে; কিন্তু নবি ও খলিফা ওমর সংগ্রহ করেছিলেন তাগলিব গোত্রদ্বয়ের সমস্ত শিশুকে।
কোরানের এরূপ অনুমোদন ও নবির দৃষ্টান্ত খলিফা ওমর কর্তৃক পালনের পর, সঠিক পথে পরিচালিত খলিফা ওসমান ‘দিউশারমি’র মত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন নুবিয়ার খ্রিষ্টানদেরকে আনুগত্য-কর হিসেবে প্রতিবছর কায়রোতে ক্রীতদাস পাঠাতে বাধ্য করে (৬৫২-১২৭৬); একইরকম চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে, যা ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং ‘দিউশারমি’ নীতি অটোমানদের আবিষ্কার নয়। অধিকন্তু অটোমানদের প্রবর্তিত এ নীতি অনেক বেশি মানবিক ছিল নবি মুহাম্মদের ক্রীতদাস ধরার নীতির তুলনায়, যা তিনি বানু কোরাইজা, খাইবার ও মুস্তালিক ইহুদি গোত্রের উপর প্রয়োগ করেছিলেন, এবং যার মাধ্যমে তিনি আল্লহর স্বর্গীয় অনুমোদনে (কোরান ৩৩:২৬-২৭) সমস্ত সাবালক পুরুষকে হত্যা এবং নারি ও শিশুকে ক্রীতদাস করেছিলেন। বহু শতাব্দীব্যাপী ইসলামের বিজয় ও শাসনে ‘দিউশারমি’র চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ঠুর ও বর্বর নবি মুহাম্মদের এ ক্রীতদাসকরণ নীতি সাধারণভাবে প্রয়োগ করা হয়।
[আগামী পর্বে আলোচিত হবেঃ ক্রীতদাসদের সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান]
সূত্রঃ
88. Lewis B (2000) The Middle East, Phoenix, London, p. 109
89. O’Shea S (2006) Sea of Faith: Islam and Christianity in the Medieval Mediterranean World, Walker & Company, New York, p. 279
90. Ibn Warraq, p. 231
91. Lal (1994), p. 57-58
92. Al-Biladhuri AY (1865) Kitab Futuh al-Buldan, Ed. KJ De Geoje, Leiden, p. 181
————–
ইসলামে র্বরতা (দাসত্ব অধ্যায় ১)
:guru: সময় এসেছে বদলাবার। এধরনের তথ্য ভিত্তিক লিখা মানুষ যখন জানতে পারবে এবং উপলব্ধি করতে পারবে তখন পৃথিবীতে আমার মনে হয় ধর্ম বলে কিছু থাকবেনা। সবাই মানুষ হয়ে যাবে। দুঃখের বিষয় আমাদের সংখ্যা খুবই কম । মুক্তমনার ব্যাপক প্রচার হওয়া দরকার।
আবুল কাশেম ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (F)
কি বলবো????!!!!!
ধিক শত ধিক।।।
যথার্থই লিখেছেন। আমি গত কিছুদিন যাবত ঐ হতভাগা আট জন বাঙ্গালি যুবকের গলা কেটে হত্যা করার সাথে বনি কুরায়জার গণ হত্যার দৃশ্য কল্পনা করছিলাম।
সে কি বিভৎস্য দৃশ্য! কেউ ভেবে দেখুন। এই দৃশ্য যে গ্যাস চেম্বারে ইহুদেরকে হত্যা করার দৃশ্যকেও হার মানায়।
আর সৌদিরা প্রকাশ করছে—এই ই আল্লার শাস্তি–এইই ইসলামী শান্তি।
কবরের শান্তি—
বানু কুরাইজার ‘নৃশংস হত্যা’ কান্ডের চিত্র কল্পনায় এলে আমার গা গুলিয়ে যায়, বমি বমি লাগে। ক’দিন আগে সৌদী আরবে প্রকাশ্য দিবালোকে উৎফুল্ল জনতার সামনে ৮ জন হতভাগ্য বাংলাদেশী তরুনকে “জবাই করার দৃশ্য” বিশ্ববাসী ইউ-টিউবে দেখেছেন। অধিকাংশ স্বাবাভিক মানুষই দৃশ্যটি দেখে ‘অসুস্থ্য বোধ’ করেছেন। সংখ্যাটা ৮ (আট) না হয়ে যদি ৮০০ (আট শত) হতো এবং একই পদ্ধতিতে প্রকাশ্য দিবালোকে জনতার সামনে একটা একটা করে “জবাই করে লাশ-গুলো গর্ত ফেলা হতো”- তাহলে সেটা কি পরিমান ভয়াবহ হতে পারতো যে কেহই সহজেই অনুমান করতে পারেন। বনি কুরাইজার ‘নৃশংস হত্যাকান্ডে” ঠিক তাইই ঘটেছিল। মুহাম্মাদের অনুমতিতে এবং তার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে বনি কুরাইজার আট’শ জন লোককে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে, , আত্ম-সমর্পন করার পরেও(‘তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন’), তাদের বাড়ী থেকে বের করে এনে ‘খোলা বাজারের (Market place) মাঝখানে’ একে একে গলা কেটে খুন করা হয়। মুহাম্মাদের ‘নৃশংতার’ এরুপ অনেক উদাহরন বিশিষ্ট মুসলীম ঐতিহাসিকরা (ইশাক /তাবারী) তার জীবনী-গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। অধিকাংশ বিশ্বাসী মুসলমানই “মুহাম্মাদের এই বর্বর-আমানুষিক-নিষ্ঠুর-কুৎসিত চেহারার” সাথে একেবারেই অপরিচিত। পরবর্তীকালের অসৎ ইসলামী পন্ডিতরা সাধারন মুসলামানদের অজ্ঞতার সূযোগে ইচ্ছামত ‘আদি ইতিহাসকে বিকৃত/আড়াল করে’ তাকে আল-আমিন /দয়ার সাগরে রুপান্তরিত করে গিয়েছে।
একটি অতি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন, “বনি-কুরাইজার ইহুদিদেরকে কেন খুন করা হয়েছিল?” বলা হয়েছে, তারা খন্দকের যুদ্ধে “কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল”।কুরানের ভাষায়ঃ
এটা কিভাবে সম্ভব? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে খন্দকের যুদ্ধে ‘মদীনার’ চারিধারে গর্ত (পরিখা) খোঁরা হয়েছিল। কুরাইশরা ছিল গর্তের ওপাশে আর মুসলামান এবং বনি কুরাইজা গোত্র্রের ইহুদীরা ছিল গর্তের অপর পাশে। তাদের কাছে ‘মোবাইল টেলিফোন, টেক্সট মেসেজিং, ই-মেইল’ ব্যবস্থা এসবের কিছুই ছিল না। এমতাবস্থায় মুসলমানদের কড়া নজরদারীর মধ্যে থেকে কিভাবে গর্তের অন্য পাশে অবস্থানরত কুরাইশদের সাহায্য করা সম্ভব? যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে তাদের দুই-এক জন রাতের অন্ধকারে অপর পাশের কুরাইশদের সাথে কোন না কোনভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। এই অসম্ভব ব্যাপারটা যদি সত্যও হয়, তবুও সেই অল্প-কিছু লোকের অপরাধের শাস্তি স্বরুপ “গোত্রের সমস্ত জনতাকে ‘খুন/বন্দী'” করার পিছনে কোনই যৌক্তিকতা নাই। কোন সামান্য বিবেকবান মানুষও তা করতে পারে না। তাহলে মুহাম্মাদের এ নৃশংসতার পিছনে ‘আসল উদ্দেশ্য’ কি ছিল? তা বুঝা যায় ঠিক পরের আয়াতটি থেকেঃ
কি বুঝা গেলো? আসল উদ্দেশ্য হলো “তাদের ভূমির, ঘর-বাড়ীর, ধন-সম্পদ এবং ভূ-খন্ডের মালিক” হবার বাসনা। সোজা ভাষায় ‘ইহুদীদের ধন সম্পদ এবং তাদের বউ-বেটি-বাচ্চাদের কব্জা’ করা। মুহাম্মাদের আল্লাহর ‘ঐশরিক বিধানে’ অপরের “সম্পত্তি লুন্ঠন এবং তাদের বউ-বেটিদের (right hand possesses) সাথে ‘যৌন-বাসনা’ চরিতার্থ করা” সম্পূর্ন হালাল। এ সুযোগ তো আর হাত ছাড়া করা যায় না! দরকার ছিল একটা উপলক্ষের। “তারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল” হলো সেই উপলক্ষ্য। খন্দকের যুদ্ধ মুহাম্মাদকে “সেই উপলক্ষটারই” জোগান দিয়েছিল।
এর অল্প কিছুদিন আগে মুহাম্মাদ ও তার সাংগো-পাংগোরা মদীনার আরো দুটি ইহুদী গোত্রের জনগুষ্ঠীকে (বনি কুইনাকা এবং বনি নাদির) ভিটে-মাটি ছাড়া করে তাদের ‘ঘর-বাড়ী, ধন-সম্পদ এবং ভূ-খন্ডের মালিক” বনেছিল।
@গোলাপ,
কিছু মুসলমান সেটাও স্বতঃস্ফুর্তভাবে মেনে নিত। স্বদেশের প্রতি তাদের ঘৃণা, সৌদির প্রতি তাদের প্রেম দেখে মনে হয়, কোন ওজুহাতে আরব যদি আজ বাংলাদেশ আক্রমণ করে, এরা সবাই সৌদির পক্ষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রাজাকারের খাতায় নাম লিখাতে দ্বিধাবোধ করবেনা।
@গোলাপ,
বানু কুরাইজার নৃশংস হত্যাকান্ড পবিত্রভূমিতে প্রতি জুমাবারে জুমার নামাজের পরে পবিত্র কোরান পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত এভাবে কত লক্ষ কোটি মানুষকে জবাই করা হয়েছে চিন্তা করে দেখুন। সে দিন শুধু ৮ জনকে জবাই করা হয়নি। মোট ৫২ জনকে জবাই করা হয়েছিল। বাংলাদেশী ৮ জন ছিল। ওরা লাশ ফেরত দেয়না কেন? আমার ত মনে হয় এ লাশগুলো ওরা বিক্রি করে ফেলে।
বানু কুরাইজা গোত্র মুহাম্মদের বাহিনীর কাছে পরাজিত হবার কারণ কি? তারাও ত সংখ্যায় কম ছিলনা। নাকি মুহাম্মদ তাদের অতর্কিত আক্রমন করেছিল?
@তামান্না ঝুমু,
ছোট বেলায় মন্দিরে পাঁঠাবলি দেখতাম। উচ্চৈঃশ্বরে হরিবোল আর পুরোহিতের মন্ত্রু উচ্চারণের মাঝে এক বিশালদেহী লোক খালি দেহে এক কোপে খড়্গ দিয়ে বাচ্চা পাঁঠাটার কল্লা দেহ থেকে কেটে ফেল দিত।
সে ছিল কি পৈশাচিক দৃশ্য। মন্দির থেকে বাড়ি ফিরে ভাত খেতে গেলে বমি হয়ে গেল। সারারাত ছটফট করতাম–ঘুম কিছুতেই আসত না।
আর দেখছি ইসলামি নরবলি–আল্লাহু আকবর ধবনি আর কোরানের মন্ত্র উচ্চারণের মাঝে। কি অপূর্ব ইসলামিক শান্তি-ই না বিরাজমান এই মসজিদ নামীয় বধ্যভূমিতে।
একটু সময়ের হিসাব করুন। মনে হচ্ছে সারাদিন–হয়ত সন্ধে পর্যন্ত চলেছিল এই নরবলি যজ্ঞ।
আমাদের শান্তির নবীজিও তাই করেছিলেন–সেই ভোর বেলা থেকে শুরু করে সারা রাত্রি মশাল জ্বালিয়ে ৮০০ জন আত্মসমার্পিত বনী কুরায়জার ইহুদীদেরকে পাঁঠার মত বলি দিলেন। নবীজি নিজের হাতেই জবাই করলেন কয়েকজনকে। আর হযরত আলী সারাদিন রাত্রি ব্যাস্ত ছিলেন এই হত্যযজ্ঞে, স্বীয় ছুরি ও তরবারি দিয়ে ধড় থেকে দেহ আলাদা করে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছিলেন গর্তে। চিন্তা করুন সেই সব ভয়াল আর্ত চীৎকার, রক্তের নদী আর ইসলামী জল্লাদদের অট্টহাসি।
এ ছাড়াও নবীজি উনার মসজিদ প্রাঙ্গনে নরবলি দিয়েছিলেন–আল্লাহু আকবর আর কোরান তেলাওয়াতের সাথে।
কি অপূর্ব ইসলামিক শান্তি!
@আবুল কাশেম,
কোরান হাদিসের আলোকে মুহাম্মদের জীবনীর উপরে একটি মুভি বানানো যায়না?
@তামান্না ঝুমু,
ভাল প্রস্তাব। এই প্রস্তাব আগেও অনেকবার করা হয়েছিল–বোধ করি কেউ এর চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন–মনে হয় বছর দশেক আগে। কিন্তু ঐ পর্যন্তই।
বিড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে?
ইসলাম ওয়াচে বোধ করি একটা কার্টুন আছে এই পৈশাচিকতার উপর। একটু ঘাঁটাঘঁটি করে দেখতে পারেন।
@আবুল কাশেম,
বিদেশের ভাল কোন নির্ভিক চলচ্চিত্র নির্মাতার সাথে যদি পরিচয় থাকে এ ব্যাপারে আলোচনা করে দেখতে পারেন।
@আবুল কাশেম,
আমি কোথায় যেন পড়েছি, সারা দিনে বনি কুরাইজার সবাইকে কোতল করা সম্ভব হয় নি। রাতে বাতি জ্বালিয়ে সে গণহত্যা সম্পন্ন করা হয়।
@অবিশ্বাসী,
হাঁ, তাই-ই হয়েছিল। নবীর জীবনী থেকে তা জানা যায়।
@আবুল কাশেম, ঐ দিন ৫২ জন নয়, এই বছরে (২০১১) তে সর্বমোট ৫২ জনকে গলা কেটে মারা হয়েছে। উচ্ছাসের আতিশস্যে মোল্লাদের মতো নতুন মিথ তোৈরীতে লেগে যেয়েন না।
@সফিক,
তাতে কি হয়েছে? এতে কি ইসলামিক পৈশাচিকতা হ্রাস পেল না কি? বৎসরে ৫২–তাহলে গড়পড়তা সপ্তাহে একজনের শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে।
কি অপূর্ব! প্রতি জুমার দিনে মুসল্লিদের জন্য রয়েছে আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা! নামাজ শেষ করেই মুসল্লিরা যাচ্ছে বধ্যভুমিতে–নরবলির দৃশ্য উপভোগ করতে। আর সবাই মিলে আল্লাহু আকবর চিৎকার দিবে। কোরানের আয়াত বিড়বিড় করে বলবে—মুণ্ডুটা দেহ থেকে যখন পড়ে যাবে–এক বিকট চিৎকার শ্রবন করবে মুসল্লিরা। আর দেহটা কয়েক সেকেণ্ডের জন্য ছটফট করবে তখন সবাই হাততালি দিবে জল্লাদকে। আর দেখা যাবে মুণ্ডুটার মুখে জিহবা বেরিয়ে আসছে–সেই দেখে মুসল্লিরা —ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ ধ্বনি তুলবে।
রক্তে মাটি ভিজে থাকবে–তাই দেখে মুমিনেরা কতই না জ্বয়ধ্বনি দিবে–লাই লাহা ইল্লা আল্লাহ বলে।
কি অপূর্ব ইসলামিক শান্তি বিরাজ করবে এই নরবলি উৎসবে। এ যে দুনিয়ার সব চাইতে ভয়ঙ্কর হরোর চলচ্চিত্রকে হার মানাবে।
এই ইসলামিক নরবলি যে হিন্দুদের পাঁঠা বলিকেও হার মানাবে।
ভাইজান, আরও কিছু কি বলবেন এই ব্যাপারে?
@আবুল কাশেম, ইতিহাসের সুন্দরতম লেখা লিখে, ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায় কে শ্রেষ্ঠতমভাবে তুলে ধরেছেন আপনি। আপনাকে মানবসভ্যতার বৃহত্তমতম অভিনন্দন।
@তামান্না ঝুমু,
খুব সুন্দর প্রশ্ন। উত্তরটা মুহাম্মাদই আমাদের জানিয়েছে। দেখুনঃ
হ্যাঁ। মুহাম্মাদের মত “টেরর” তার প্রতিদ্বন্দীদের কেহই হতে পারে নাই।মুহাম্মাদ কোন নিয়ম-নীতির ধার ধারতো না। কিন্তু তৎকালীন আরব জনগুষ্ঠী ‘ন্যায়-অন্যায়, সততা, সন্ধি-চুক্তির প্রতি সন্মান’ বজায় রাখার সর্বাত্তক চেষ্টা করতো। তারা যুদ্ধবাজ ছিল, কিন্তু ‘বেঈমান’ ছিল না। কিন্তু মুহাম্মাদের বিবেকে এসবের কোন বালাই ছিল কিনা সন্দেহ। তার নীতি ছিল, “The end justifies the means”। দেখুন এই হাদিসটিঃ
এখন আসি বানু-কুরাইজার এই নির্দিষ্ঠ ঘটনায়। অত্যন্ত করুন এই ঘটনাটি মুহাম্মাদের বহু বহু নিষ্ঠুরতার একটি। বানু কুরাইজার কোন সদস্য মুহাম্মাদ কিংবা মুসলমানদের উপর কোন রুপ আক্রমন করে নাই। There had been no combat, they never attacked Muslims! মদিনার এই ইহুদী জনগুষ্ঠি ছিল শান্তি-প্রিয় কৃষিজীবি ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। ঘটনার বর্ননা (‘ইবনে ইশাকের’) নিম্নরুপ (সংক্ষিপ্ত)ঃ
সা’দ বিন মুয়াদ ছিলঃ
১) মুহাম্মাদের প্রিয় পাত্র
২) ঐ যুদ্ধে আহত
৩) তার “রায়” ঘোষনার আগে মুহাম্মাদের নির্দেষে তাকে আতিরিক্ত সন্মান দেখানো (সবাইকে দাঁড়াতে বলা)
সা’দ এর “রায়টা যে মুহাম্মদের ইচ্ছার” অনুকুলে হবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। সাদ বিন মুয়াদের সেই ‘আমানুষিক-বর্বর-হৃদয়হীন-নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত’ মুহাম্মাদকে যে কি পরিমান উল্লেসিত করেছিল তা বুঝা যায় ঘোষনার পরপরই মুহাম্মাদের উক্তিটির মাধ্যমে, “Thou hast decided according to the will of Allah, above the seven firmaments”.
ইসলামকে ভালভাবে বুঝতে হলে ‘মুহাম্মাদকে’ জানা অত্যন্ত জরুরী।
আমার মত অজ্ঞ পাঠক, যারা আছেন তাদের চোখ আকাশে। সপ্ত আকাশ ভেদ করে আরো আরো কোন আকাশ থাকলে, সেখানেও কাঙ্খিত ঈশ্বরের সন্ধানে চোখের বিরামহীন যাত্রার পতন হোক।