ফেইসবুকের বদলৌতে উপরের ভিডিও ক্লিপটি হয়তো আপনাদের অনেকেই দেখেছেন। নিঃসন্দেহে খুবই প্রেরণা দায়ক ভিডিও! খুব উপভোগ করেছিলাম ভিডিওটির প্রধান চরিত্রটির সূক্ষ রসবোধ আর অবাক হয়েছিলাম তার মনোবল দেখে। ভিডিওটির হাত পা বিহীন মানুষটির নাম নিক ভয়চেচ (Nick Vujicic)। ১৯৮২ সালে তার জন্ম ব্রিসবন অস্ট্রেলিয়ায়। ফিন্যান্স ও একাউন্টিং এ দ্বৈত অনার্স ডিগ্রী ধারী নিক একাধারে একজন প্রেরণা প্রদানকারী বক্তা (motivational speaker) , একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, একজন স্টক ব্যবসায়ী এবং একজন লেখক। ২০০৫ সালে নিক সমাজ ও জাতির প্রতি তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ‘ইয়াং অস্ট্রেলিয়ান অব দ্যা ইয়ার’ পুরুস্কার জিতেন। ২৪ টিরো বেশি দেশে ৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ তার স্পিচ শুনেছে।
আমি যখন আজ থেকে বছর খানেক আগে এই ভিডিও ক্লিপটি দেখি তখন এই ভিডিওখানিতে নিককে দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি আমাকে অনেক ইন্সপায়ারড করেছিলো নিকের এই ভিডিওখানি। তাই ইচ্ছা ছিলো তার হিউমেন মটিভেশনের উপর নিকের কোন সম্পূর্ণ স্পিচ শোনার। কিন্তু কেন জানি তা আর হয়ে উঠে নি। অনেক দিন পর কাল রাতে ইউটিউবে নিকের Inspirational Talk-Life Without Limbs ভিডিও স্পিচটি দেখে বড় রকমের ধাক্কা খাই! নিকের স্পিচের সাথে আমি মিল খুজেঁ পাই জাকির নায়েকের স্পিচের। জাকির নায়েক যেমন তার বক্তৃতায় কোরাণের লাইন উল্লেখ্য করে আল্লাহ আর মুহাম্মদের গুণাগুণ কীর্তণ করেন সেই একই ভাবে নিক বাইবেলের লাইন উল্লেখ করে স্রষ্টা ও যীশুর মহিমা বর্ণনা করেন। নিকের মতে, স্রষ্টার প্রত্যেক মানুষের জন্যে একটা প্লেন আছে । নিকের মতে, স্রষ্টা কখনোই কোন ভুল করেন না যদিও আপাত দৃষ্টিতে স্রষ্টা প্রার্থনার জবাব দেন না মনে হলেও। নিক যে রোগে আক্রান্ত তার নাম Tetra-amelia syndrome। কিন্তু তার মতে তার এই শারিরীক প্রতিবন্ধকতা স্রষ্টার ভালোবাসার অলৌকিক নিদর্শন। আসলে তার এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পিছনে মূল কারণ হিসেবে আছে রোগাক্রান্ত জীণ এই কথাটাই মানতে নারাজ নিক। তিনি খারাপ সময়ে বেশি করে, এমনকি প্রত্যেক ঘন্টায় প্রার্থনা করবার পরামর্শ দেন।
প্রচন্ড রসবোধ আর জীবণ শক্তির জন্য নিক আমার কাছে এখনো একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব কিন্তু আমি এটাও জানি নিকের অন্ধ ধর্ম ভক্তি চাপা দিয়েছে নিকের যৌতিক চিন্তা ভাবনার ক্ষমতাকে। আর অযৌতিক অলৌ্কিকতায় বিশ্বাসের করবার মাধ্যমে তিনি মানুষকে মানসিক ভাবে দৃঢ় করবার যে চেষ্ঠা করছেন তা প্লাসিবো ঔষধের মতো ক্ষেত্র বিশেষে কাজে আসলেও তার প্রচেষ্ঠা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। নিক যদি তার ব্যক্তিগত জীবণে তার ধর্ম বিশ্বাসকে সীমাবদ্ধ রাখতো তবে আমি এই পোষ্ট কখনই লিখতে আগ্রহী হতাম না। কিন্তু সরল ভাষায় বলতে গেলে নিক তার মটিভেশনাল প্রডাক্টের সাথে স্পিরিচুয়ালিটি মিশিয়ে তা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে। আর তাই দশটি কুসংস্কারের মতো এর সমালোচনা হওয়া উচিত।
কোন মানুষ বিখ্যাত হলেই কিংবা ‘সবর্জন শ্রদ্ধেয়’ হলেই তার বিষয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না, কেবল তাকে মাথায় তুলে স্তব করতে হবে- আমাদের এই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সে রবীন্দ্রনাথই হোক,ইসলাম ধর্মের প্রচারক মোহাম্মদ কিংবা বংগ বন্ধু শেখ মুজিবই হোন। প্রত্যেকের কাজের নির্মোহ সমালোচনার মাধ্যমে সত্য উন্মোচন হওয়া উচিত। উচিত যুক্তির আলোয় বিশ্বাসকে ঝালাই করে দেখা।
নিকের Inspirational Talk-Life Without Limbs ভিডিও-
আমি আগে দেখিনি। অসাধারন!
(Y)
আমিও তাই মনে করি, কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে হওয়া উচিত না। তবে সমালোচনাটা যেন অতিরঞ্জিত কিংবা বানানো কোন তথ্যের উপর ভর করে না হয়।
@হোরাস, তাতো অবশ্যই।
ধন্যবাদ লেখককে। খুবই প্রেরণাদায়ক। এমন একজন ব্যক্তির এমন কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবলই সে সমাজের বদৌলতে, যা ব্যক্তির সম্ভাবনাকে সর্বাধিক প্রস্ফুটিত করে তুলার সুযোগ সৃষ্টি করে। আমাদেরকেও সেরূপ সমাজ গড়ার লড়াই করতে হবে।
খুবই সত্য কথা! এভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে স্রস্টার ভালবাসা বলে চালিয়ে দিলে রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম ও বিজয়গাঁথাকে অস্বীকার করা হয়! তাছাড়া নতুন প্রজন্ম রোগাক্রান্ত জীন আবিষ্কার ও তার প্রতিকারের আগ্রহও হারিয়ে ফেলতে পারে!
তবে নিকের এই পরামর্শে আমি কোন সমস্যা দেখি না! প্রার্থনা আদৌ পৌঁছে কিনা স্রস্টার কাছে, সে বিতর্কে যোগ না দিয়েও বলা যায়, প্রার্থনা প্রায়ই মেডিটেশনের মত মনকে শান্ত ও স্থির করতে সাহায্য করে, যা খুব দরকারি, বিশেষ করে বিপদের মুহূর্তে বা খারাপ সময়ে!
সাবাশ জাহিদ। এই কাজটাই করতে চাচ্ছি আমরা মুক্তমনায়। কোনো মান্যবরকেই বিনা প্রশ্নে মান্যবর বলে মেনে নিতে রাজি নই আমরা। যুক্তি এবং নির্মোহ দৃষ্টির কষ্টিপাথর দিয়ে মেপে মেপে দেখা হবে সকল মান্যবরদের।
ধন্যবাদ ফরিদ ভাই।
জাকির নায়েক আর নিক কখনো এক জিনিস না। জাকির নায়েকের নিয়ত খারাপ এবং সে নির্বোধ আর নিক নিজের অবস্থার একটা ব্যাখ্যা খুজে পেয়েছে বিশ্বাসের ভিতরে। ব্যক্তিগত শান্তি খুজে পেয়েছে। তার নিয়ত ভাল।
@শাখা নির্ভানা, আপনার কথায় যুক্তি আছে। আসলেই নিকের নিয়ত ভালো। সে মানুষকে মানসিক ভাবে দৃঢ় করে জীবণ জয়ের স্বপ্ন দেখায়।
দেখে অবাক হয়ে গেলেম।।।খুব ভাল লাগ্ল।।।
মানুষ যখন খুব কষ্টের মাঝ দিয়ে যায় তখন হয় খুব খোদা ভক্ত হয় অথবা নাস্তিক হয়। নিক ভক্তর দলে। এক ই অবস্থা স্টিফেন হকিং এর ৩৫ বছর এর বেশী সময় ধরে পঙ্গু এই হকিং বলেছেন, গড ইজ আ ফেয়ারই টেল । নিজেকে জান… এরা বা নিক রা নিজেকে জানে না ।