নূরী, ফেলী, বিউটীর মত শেফালী এই লাইনে আছে বহুদিন হয়ে গেল। তা প্রায় ছয় বছর তো হবেই। এই কাজে ঝামেলার শেষ নেই। ঝাকে ঝাকে গাও-গেরাম থেকে মেয়েছেলে এই শহরে এসে দিশে হারায়ে ফেলে। ভিড়ে যায় গতর খাটানির ব্যবসায়। গতরে যার যত চেকনাই, তার আয় রোজগার ততো বেশী। তবে শেফালী এই কামে বেশী দিন থাকতে চায় না। বড্ড বেশী ঝামেলা হয় আজকাল। পুলিশ বাবাদের অত্যাচার তো আছেই, তার উপর দিন দিন ভাগীদারদের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে তাতে অন্য কাজে চলে যাওয়া তার ফরজ হয়ে গেছে। তবে আর কয়টা দিন তার অপেক্ষা করা লাগবে। মেয়েটা তার ছয় কেলাশ পাশ দিয়ে এইবার সাত কেলাশে উঠবে। ওই তার একমাত্র ভরসা। এই মেয়েই তার সব- সব। মরার সময় মুখে পানি দেবার মত যদি কেউ থেকে থাকে, তাহলে সে এই মেয়ে। তার জন্যেই বেচে আছে শেফালী। মেয়ের কথা মনে পড়তে জমাট দুঃখে বুকের ভেতরে দম আটকে যাবার মত লাগে তার। কার্তীক মাসের ঝড়ের মত বহু উলোট-পালট করা ছোট ছোট কেয়ামত তার উপর দিয়ে বয়ে গেছে এই মেয়ে নিয়ে। স্কুলে ভর্তি করাবার সময় একবার যুদ্ধ করতে হয়েছিল স্কুলের মাষ্টারদের সাথে। বাপের নাম ছাড়া ভর্তি হওয়া যাবে না। কি কথার ছিরি। বাপ কি গাছের গোটা? সে জানবে কি করে বাপের নাম? কেউ কি জানতে পারে তা এই লাইনে কাজ করতে এসে? শুনলে গা জ্বালা করে। মাষ্টারদের মুখের উপরে সোজা শুনিয়ে দিয়েছিল সে- “আমরা মানুষ না? আমরা কি জন্তু জানোয়ার? এই বাচ্চাটার কি দোষ, হেয় কি করছে? পুরা দুনিয়াডারে কি কিন্না নিছ তোমরা? যা ইচ্ছে হয় তাই করবা? এই সব অনাচার আল্লায় সইবেনা।” মানুষ জড় করে ফেলেছিল সেদিন শেফালী। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মেয়ে ভর্তি করতে পারেনি। এর পর থেকে আর অমন বোকামী করেনি সে। যেখানে যেমন সেখানে তেমনি হতে হয়-শিখেছে সে চারপাশ থেকে। খালি মইশের মত শিং ঠেকায়ে যুদ্ধ করলে হয় না- মাঝে মাঝে শিয়েলের মতও হতে হয়।
অনেক কষ্ট করে, অনেক মেহনত করে এক মিনষের পুতেরে যোগাড় করেছিল শেফালী। বহু হাতে পায় ধরে তারে রাজীও করানো হয়েছিল-তার পেটের মেয়েটারে বাপের পরিচয় দিয়ে এট্রুখানি স্কুলে পড়ার সুযোগটা করে দেবে। কি চোখ ব্যাটার! বাচ্চা মাইয়াটারে এক্কেবারে গিলে খায় পারলে। মেয়েরে আড়াল করেছিল শেফালী।
-মাসুম মাইয়াডার দিকে অমন কইরা তাকান ক্যান? দেখতে চাইলে আমারে দেহেন।
কাজীর ব্যাটারে মুখ ঝমটা দিয়েছিল শেফালী। বাচ্চা মেয়ের সামনে এরচেয়ে আর বেশী কিছু বলতে পারেনি সে, পাছে মাইয়া কি ভাবে- কি বোঝে।
অবশেষে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানো গেল- আবাসিক স্কুলে। মাঝে মাঝে হোষ্টেলে গিয়ে চুপি চুপি দেখা করে আসলেই হলো। কষ্টের ভেতরে ঐটুকুই- কোমরের জোর বাড়াতে হবে। গাইটের থেকে বড় বড় নোট খরচ করতে হবে। মেয়ের কারনে শেফালী সব করতে পারে। রাইত দিন পরিশ্রম করবে। যৌবনের শেষ চেকনাইটুকু থাকতে সে গতর খাটিয়ে যাবে। মেয়ে তার একদিন বড় হবে- লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে। তখন সব ক্ষতি পাই পাই উশুল হবে- মান ইজ্জতও। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানো গেলেও নতুন এক দেনার জালে জড়ায়ে যায় সে- কাজীর ব্যটার শক্ত কুটিল জালে। কাজী ব্যবসায় লাভ করতে জানে- সুদে আসলে সব ক্ষতি উসুল করে নিতে জানে। কাজী সাহেব সমাজসেবী আবার সংসারীও- বউ আছে। সুন্দরী বউ আছে তার ঘরে, তবে নিঃসন্তান। সমাজের ছোট বড় সবাইকে তার সেবা দিতে হয়- দিতে হয় শেফালীকেও। শর্তে জড়ায়ে গেছে তার সাথে পথের মাইয়া। মাঝে মধ্যে কাজীর বউ বাপের বাড়ী যায়, তখন ডাক পড়ে কাজী বাড়ীতে তার। এই যেমন এখন এই রাত আটটার দিকে তার ডাক পড়েছে কাজী বাড়ীতে। যেতেই হবে সেখানে। দেহ দিতে হবে গৃহীকে। কাজীর ব্যাটার কথা মনে হতেই মুখটা বিকৃত হলো শেফালীর। একদলা থুথু ফেললো সামনের কালো পঁচা ড্রেনটার ভেতরে সে। ব্যাটা প্রতারক ভুতুম বউয়ের সাথে ইতরামী করতাছে। যত দোষ রাস্তার মাইয়া শেফালীর। সব মাছে গু খায়, দোষ হয় ঘাউরা মাছের? আরও একদলা থুথু ফেলে হালকা লাগে নিজেকে। ‘মাইয়াডা বড় হইতাছে। যদি জানতে পারে তার নোংরা জীবনের কিচ্ছা, তহন কি হইবো? এই কাম তার ছারতেই অইবো আইজ হউক আর কাইল হউক’ – মনে মনে ভাবে সে। কিন্তু কে তাকে কোন কামে নিবে? এই মরার কাজ ছাড়া সে আরতো কোন কাজ জানে না। তাছাড়া সে তো নোংরা-অচ্ছুত, নর্দমার কীট- বড্ড বেশী হাবিজাবী ভাবছে আজকাল সে। হাটায় মন দেয় শেফালী। এক ডাকে সাড়া দিয়ে আরেক ডাকে হাজিরা দিতে চলেছে সে- কাজীর ব্যাটার ডাকে। বিনা পয়সায় সেবা দিতে হবে তারে। দ্রুত পা চালায় শেফালী। বাহাদুর শাহ পার্কটার মোড়ে এসে বাম দিকে সোজা চলা শুরু করে সে। আবছা অন্ধকারে পেছন থেকে কে যেন ভারী গলায় শক্ত আদেশ ছুড়ে মারে পিঠের শিঃরদাড়ার উপরে- এই দাড়াও।
পেছন ফিরে তাকায় পথের মেয়ে। অস্ত্রধারী টহল পুলিশ থামতে বলছে তাকে। থেমে যায় শেফালী।
– এই তুমি এই হানে ঘোরাঘুরি করতাছ ক্যান?
পুলিশের চোখ, জহুরীর চোখ। দাত বার করে হেসে দেয়- বুঝতে পারে সব। বুঝতে পারে খ্যাপ ধরতে চলেছে বাজারের নষ্ট মেয়ে। খুব কাছে এসে নষ্ট মেয়ের দেহের ঘনিষ্ঠ হয়। পা থেকে মাথা অব্দি চোখ বুলায়। তারপর আবছা অন্ধকারে দ্রুত তালে অচ্ছুত বুকের উদ্ধত চুড়ায় অনধিকার সুখ হাতড়িয়ে চলে কিছু সময় আধুনিক পুলিশ।
রাত নটা বেজে গেছে। কাজী সাহেব অধীর কামনা নিয়ে অপেক্ষা করছে শেফালীর আগমনের- নিষিদ্ধ ফলের। সব নিষিদ্ধ জিনিসেই গভীর আনন্দ,আর ভোগ লুকিয়ে থাকে। কলিং বেলের শব্দে হয়- দরজা খুলে দেয় কাজী সাহেব।
– আইলা তাহলে। তোমার লাইগা আমি অপেক্ষায় আছি হেই সন্ধ্যা থেইকা।
কাজীর ব্যাটার কন্ঠে পোশাকী দরদ ঝরে পড়ে।
– কি করুম কাজী সাব, হাইটা আইতে যাইয়া দেরী হইলো।
কাজী সাহেব বেশী কথায় সময় নষ্ট করতে চায়না। সে যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল। বেশী তর সয়না তার। সুখের খোজে ঝটপট পথের মেয়ে নিয়ে বিছানায় ঢুকে পড়ে কাজীর ব্যাটা। কিছু সময় ঝটাপট শব্দ তারপর সব নীরব নিথর নিঃশব্দ। নৈশ্বব্দ ভেঙ্গে কিছু একটা বলতে চায় শেফালী। অতঃপর মুখ খোলে প্রথম ন্যুনতম মানুষ হবার অধিকারে।
-কাজীসাব, কতদিন আর এই ভাবে চলবো, চার বছর তো অইয়া গেল। আর কত কাল আমারে বাইন্ধা রাখবেন?
– তার মানে? তুই কী বলতে চাস? আমি তোর জন্যে কিছুই করি নাই? আমি তোর জন্য করতাছি, আর তুই আমার জন্য করতাছস। এইতো শোধ বোধ।
কাজীর ব্যাটার কন্ঠে হতাশা আর ছদ্মরাগ প্রকাশ পায়। নাকের দুইপাশে ঘৃনার সরল রেখাগুলো পরিস্কার হয়ে উঠে। রাস্তার এই সব মেয়েদের ভেতরে কৃতজ্ঞতা বলতে কিছুই নেই। এত কিছু করেও এদের মন পাওয়া যায় না। তখন যদি সে বাচ্চাটার বাপের পরিচয় না দিতো, তাহলে এই পথের মেয়ে কোন দিন পারতো তারে স্কুলে ভর্তি করাতে? অথচ কৃজ্ঞতার চিহ্ন মাত্র নেই দেহে!
– কাজী সাব, রাগ অইয়েন না। রাগ অইয়েন না। অনেকদিন ধইরা এট্রা কতা কইতে চাইয়াও কইতে পারি না। কিভাবে যে কই?
– এত শরম কিয়ের? কি কইতে চাস, ক না।
– আমি, মানে আমি তিন মাসের পোয়াতী। বিশ্বাস করেন, খোদার কসম, আমনে তার বাবা।
শেফালীর কথা শেষ হবার আগেই গর্জে ওঠে কাজীর ব্যাটা। ফেটে পড়ে ক্রোধে, আক্রোশে আর ঘৃনায়।
-শালা, নোংরা মাগী, তুই আমারে ফাসাইতে চাস। তা পারবিনা। তুই এক্ষনি দূর হইয়া যা আমার বারি থেইকা।
থর থর করে কাঁপতে থাকে কাজী সাহেবের নধর দেহ। চোখ দুটো তার জবাফুলের মত লাল। বিছানার উপর চুপ করে বসে থাকে নষ্ট মেয়ে। মুখ তার ভাবলেশহীন। আরও একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় সে।
-তয় এত যে খোয়াব দেহাইলেন। এত বছর ধইরা মিডা মিডা এত কতা সবই মিছা?
ভাবহীন মুখের জমিনে সহসা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখা দেয়। যুদ্ধ আর বেশী দূর এগোয় না। স্বাভাবিক এক নারীর মত হঠাত করে কান্নাতে ঝরে পড়ে শেফালী।
-এই বাচ্চা আমি নষ্ট করুমনা। এই বাচ্চা আমার, আপনের। আপনের সংসারে সন্তান নেই। এই সন্তান আপনাদের অইবো। আমি আপনাদের বান্দী অইয়া থাকুম। আমি সব ছাইরা দিমু- বালা অইয়া যামু। খোদা জানে, আমি আমনেরে বালা পাই। আমারে এট্রুহানি সুযোগ দ্যান কাজী সাব- এট্টু সুযোগ।
নষ্ট মেয়ের চোখের পানিতে ভেসে যায় পবিত্র সংসারের পবিত্র ফরাস। তাতে একটুও মায়া বা দয়ার উদ্রেক হয় না কাজী সাহেবের দেহে। তার বদলে তার মাথার ভেতরে এক ভয়ংকর কাল সাপ ফনা তুলে গজরাতে থাকে। সাপের মাথায় চক্কর দেয় ভাবনা- কাজীর ব্যাটার মান-সম্মান, সমাজ-সংসার সব গজব কইরা দিবো এই মাইয়া। এরে বাচায় রাখা যায় না। ওদিকে শেফালীর কোন দৃষ্টি নেই আগ্রহ নেই, নেই সাপের ছোবল থেকে বাচার মত পূর্বসতর্কতা। ফলে যা হবার তাই হলো। বিরাট এক উদ্ধত-ফনা কাল সর্প দারুন ক্ষিপ্রতায় ঝাপিয়ে পড়লো স্পর্ধিত নষ্ট মেয়ের উপর। কাজী সাহেবের শক্ত দুই হাতের দশ আঙ্গুল শাড়াশির মত চেপে ধরলো অধিকার চাওয়া পথের মেয়ের কন্ঠ নালী। সে চাপে বুক ভরে বাতাস নেবার সব অধিকার হারালো শেফালী। মারা গেল নষ্ট মেয়ে। ঠিক সেই মুহুর্তে শেফালীর কন্যা, তার চকচকে জীবনের স্বপ্ন দেখা কন্যা চিরতরে অধিকার হারালো আবাসিক স্কুলে আট কেলাশে পড়ার সব অধিকার। আর ওদিকে পরদিন কানা গলির দুর্গন্ধময় ডাষ্টবীনে মরা ইদুর, আর গলিত কুকুরের দেহের সাথে একসঙ্গে পাওয়া গেল শেফালীর মৃত যৌবন। অনেকে এলো কৌতুহলে। একদল পুলিশকেও আসতে হলো দায়িত্ব ভারে। আধুনিক সেবক পুলিশ। তাদের ভেতরে কেউ একজন চিনতে পেল মৃত দেহটাকে। উচ্চস্বরে আওয়াজ দিল সে- আরে এটাতো সেই। কিন্তু কোন সেবক আর নষ্ট মেয়ের মরা যৌবনে সুখ হাতানোর চেষ্টা করলো না একটি বারও। কেন করবে? পুলিশওতো মানুষ। এতটুকু সামাজিক জ্ঞান তাদের থাকতে হয়। আর বিচার? তা সে কোন দিন চায়নি। আজও চায় না। মড়ার আবার বিচার কি?
তারপরেও শেফালীরা মরে না। তাদের বেচে থাকতে হয় অনেক অনেক দিন। নূরী, ফেলী আর বিউটির মত পরগাছারা আর দেখতে পায়না তাদের সঙ্গী শেফালীকে বাহাদূর শাহ পার্কের আশে পাশে বা অন্য কোন অভিসারে। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে ঠিক শেফালীর মত দেখতে বার-তের বছরের এক বালিকা শিকারীকে- মরদ শিকারীকে। তারা বুঝতে পারে- তাদের আরেক জন ভাগীদার এলো বুঝি। কিন্তু একথা হয় তো তারা কোন দিনও জানতে পাবে না- এটা শেফালীর কন্যা- তার পেটের মেয়ে, অথবা তার পুনর্জন্ম।
আপনার উপর মনে হয় “লেখক হরিশংকর জলদাসের” ভূতের আচড় পড়েছে।ওনার সাম্প্রতিক লেখা বই ‘কসবি’বেশ্যাদের জীবন নিয়ে সাম্প্রতিক এক দুঃসাহসিক লেখা। লেখক নিজেই কোন রাখডাক না রেখে বলেন তিনি কৈবর্তসন্তান।জন্মেছেন জেলেপাড়ায়,৩০ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের বাবার সাথে মাছধরার সহযোগী ছিলেন।এই তার প্রানপ্রিয় বাবা তাঁকে জলে-স্থলে অনবরত,অবিরাম কানের কাছে মন্ত্রের মতো উচ্চারন করে গেছেন–শংকর তোমাকে পড়তে হবে,জলচর থেকে স্থলচর হতে হবে।
হরিশংকর সে সম্মান রেখেছেন আর এক এক করে তাঁর লেখার উঠে এসেছে প্রতিবাদ দলিত মানুষের প্রতি ভদ্দরলোকদের ঘৃনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
তিনি লিখলেন “জলপুত্র,কৈবর্তকথা,দহনকাল এবং নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্তজনজীবন এবং কবিতা ও আরো অনেক অনেক বই।
আপনার গল্পের নায়িকা “শেফালীর ঠিক বিপরীত হচ্ছে “দেবযানী” আর কসবি না পড়ে থাকলে যোগাড় করে পড়লে ঠকবেন না এক কথা বাজি ধরে বলতে পারি।
‘পূনর্জন্ম”পড়লে একই চক্রের বা বৃত্তের শেষ পূনরাবৃত্তি ঘটে,এর থেকে কি বের হয়ে আসা যায় না এবং নতুন জীবনের ও নতূন পথের সূচনা করা কি যায় না ??
(Y)
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ। এই লেখকের কসবি বইটা আমার অবশ্যই দরকার। এনাদের কথা কেন আমরা সেভাবে জানতে পারিনা? ভাগ্যদোষে দেশের বাইরে পড়ে আছি। হয়তো বইটা এখানেও পাওয়া যাতে পারে। শ্রেনী চরিত্রের প্রভাব অনেক বেশি আমাদের সমাজে। তাই অনেকে এদের নিয়ে কথাবার্তা পছন্দ করে না। আসলে ওরা তো আমাদেরই অংশ- সমাজ দেহের একটা উপাদান। পুনরায় ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা,
ভাগ্যদোষে আমিও প্রায় ২ যুগের কাছাকাছি পরবাসী।কিন্তু গত ৫,৬ বছর দেশে প্রতিবছর যেতে চেষ্ঠা করি।গতবার বইমেলায় “শুদ্ধস্বর”প্রকাশনী থেকে হরিশংকর জলদাসের “কসবি” বইটি বের হয়।কথায় আছে শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশিদ টুটুল সব সময় নতুন ও নতুন প্রজন্মের লেখকদের বই প্রকাশ করতে তাঁর কার্পন্য একেবারেই নেই অবসর,আগামী,সময় এর পাশাপাশি “শুদ্ধস্বর” প্রকাশনী বলতে গেলে এখন প্রগতিশীল কবি ,লেখক,বুদ্ধিজীবিদের আড্ডাখানায় পরিনত হয়েছে। প্রকাশনাটি ঢাকার আজিজ মার্কেটে অবস্থিত।
আপনার কোন আত্বীয়কে দিয়ে বইটি যোগাড় করে নিতে পারেন।সাথে অন্যগুলিও।
ভালো থাকুন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
খুব গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেলাম। আমার দরকার হবে। ধন্যবাদ।
জেমসের একটা পুরনো গান মনে পড়ছে—
স্টেশন রোডের
জীবন ধারা
ফুটপাথের ঐ নগর নটিরা
ভাতের আশায় দিচ্ছে শরীর
যেন ত্রিমাত্রিক জীবন্ত ছবি
স্টেডিয়ামের জরিনা বিবি
ভিষন জ্বরে ঘুম আসেনা
ভাতের আশায় দিচ্ছে শরীর
যেন ত্রিমাত্রিক জীবন্ত ছবি।
লোভী দৃষ্টি এখানে সেখানে
ছড়িয়ে আছে কিছু মাংসপিন্ড
অসহায় মানুষের আর্তনাদে
মেঘনা যমুনার পাড় ভাঙে
কত সুন্দর সব স্বপ্নকলি
অসময়ে হায় হয়রে পতন
অনিন্দ কোলাহল থমকে যায়
বেড়েই চলে শুধু মৃত আশা
এসো সবাই মিলে গড়ে তুলি
আনকোড়া এক নতুন সমাজ
ধর্মের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলো
স্বাধীনভাবে কিছু
ভাবতে শেখো
লোভী দৃষ্টি এখানে সেখানে
ছড়িয়ে আছে কিছু মাংসপিন্ড
অসহায় মানুষের আর্তনাদে
মেঘনা যমুনার পাড় ভাঙে..
আপনার লেখার জন্য মন্তব্য করার মত কোন ভাষা পাইনি।
@রাজেশ সরকার,
আপনার অনুভবকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। কেন জানি ব্যন্ড সংগীত সব সময় আমাকে বিকর্ষন করে। তবে তার কথাগুলো যে এত সুন্দর হয় তা আপনার কাছে জানলাম। আর আমার লেখা যদি কার ও ভেতরের মানুষটাকে এক টুখানি নাড়া দেয় তবেই আমার লেখা এবং জীবন দুটোই সার্থক হবে।
আপনার সংগে একমত। এ এক দুষ্ট ক্ষতই। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটি পড়েছি কিন্তু মন্তব্য কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা ।তবে শুধু এইটুকুই বলব আসুন আমরা পতিতা বৃত্তির বিরুদ্দে রুখে দাড়াই ।যাইহউক লেখাটি চমৎকার হয়ছে।
(F) [img]httpv://[/img]
প্রকৃতিও নারীর প্রতি বিরূপ। সব বোঝা, সব কলঙ্ক নারীকেই বহন করতে হয়।
@তামান্না ঝুমু,
সত্য বলেছেন। তবেদুর্ব লেরাও সবলদের দ্বারা নির্যাতিত হয় আমাদের সমাজে অহরহ। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা,
অভিজ্ঞতার প্রতিফলন আছে লেখাটিতে। আমি কর্ম উপলক্ষ্যে দৌলদিয়া ফেরিঘাটের মানে গোয়ালন্দ যৌন পল্লীতে বেশ কয়েকবার ভিজিট করা সুযোগ পেয়েছিলাম। এমন কাহিনী শোনারও সুযোগ হয়েছিল।
ধন্যবাদ আবেগ জাগানিয়া লেখাটির জন্য । লেখায় আপনার বিষয়বস্তু নির্বাচন ব্যতিক্রমধর্মী ও চমৎকার।
যৌনকর্মীদের নিয়ে একটা কবিতা লাইন মনে পড়ল,
‘ভাবনা কি তোর সেবি
নাভির নীচে চেক আছে
ভাঙ্গিয়ে ভাঙ্গিয়ে খাবি।’
আপনার কলম অবিরাম চলুক।
@গীতা দাস,
কবিতার পদ্গুলো খুব অদ্ভুত ও বাস্তব। যৌন কর্মীদের সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলেও বুঝতে পারি কতখানি শ্রেনী বৈষাম্যের শিকার এই দলিত মানুষগুলো। জাতি পেশা নির্বিশেষে সব শ্রেনী পেশার ধারকদের সাথে মানবিক আচরন করতে পারাই আসল কাজ। পর্যবেক্ষন করার ক্ষমতা তীক্ষন রাখতে পারলে খুব কষ্ট করে কাছে যাবার দরকার হয়না। যেমন পেপারে একটা খবর মনযোগ দিয়ে পড়লে নিজ গুনে বোঝা যাবে তার পেছনে কতটা মানবিক প্রাপ্তি বা আবেগ লুকান আছে।
কিভাবে মন্তব্য করা যায় বুঝতে পারছি না , শুভ কামনা আপনার জন্য ।
@স্বত্তিক,
উপভোগ নয়, শুধু অনুভব করতে পারলে আমার চেষ্টা ধন্য হবে। অনেক ধন্যবাদ।
দারুন লেখা…
@অপু,
ধন্যবাদ আপ্নাকে। আপনাদের সাড়া পেয়ে আরও অনুপ্রানিত হই।
লেখাটা ভাল হয়েছে, সহজ সরল চিত্রপট। (Y)
@সীমান্ত ঈগল,
সময় নিয়ে কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ছোট ছোট দুঃখ কথা নিতান্ত সহজ সরল- সেভাবেই চেষ্টা করেছি। ব্যর্থের চেষ্টা বলা যায়।
লেখকরাও আজকাল বাজার মুখি। বেস্ট সেলারের প্রতিযোগিতায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আর আপনি কি-না এমন সব মানুষদের নিয়ে লিখছেন যাদের বাজার মূল্য শূন্য। আপনার পতন অনিবার্য। কিন্তু লেখক হিসাবে বেঁচে থাকবেন। সেটা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও।
যাদের নিয়ে খুব খুব বেশি লেখালেখি হওয়া উচিত, তারাই অন্ধকারে। আপনি আরো আরো লিখুন, লিখে যান।
@স্বপন মাঝি,
আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্যা ধন্যবাদ। তারকা হতে চাই না কোন কালে। মনে একটু সাধ মানুষ যেন তার দেহটার দিকে একটু নজর দেয়। একটা দেশের সব মানুষই তার দেহ। একটা গ্রহের সব মানুষই তার শরীর। শরীরের কোন এক জায়গায় ক্ষত রেখে কিভাবে ভাল থাকবে মানুষ। ভাই আমরা কেউ ভাল নেই। কষ্ট লাগে।
@শাখা নির্ভানা,
এই বোধটুকুর দরকার খুব বেশি।