লিখেছেনঃ তাসাহো
-আম্মু, অফিসে একদিন ও দেরি হচ্ছে না।
-বল, আল্লার রহমতে দেরি হচ্ছে না।
-ও আচ্ছা। আল্লার রহমতে দেরি হচ্ছে না।
(আচ্ছা আল্লা কিন্তু আমাকে জাগাচ্ছেন না। মাঝে মাঝে মশার কারণে আমার ঘুমাতে বেশ কষ্ট হয়।এই বিষয়ে দেখি তাঁর কোন মাথাব্যাথা নেই। যাহোক তবে একদিন কিন্তু আমার অফিসে পৌছাতে বেশ দেরি হয়েছে রাস্তায় জ্যাম ছিল বলে। সকালে অবশ্য এতো জ্যাম থাকে না। পরে দেখলাম ওই জ্যাম এর কারণ আল্লা নিজে। উনার নির্দেশেই রাস্তায় এক্সিডেন্টে এক ছেলে মারা গেল । তাই আমার এক ঘন্টা দেরি। তো কেন আমি বলবো আল্লার রহমতে আমার দেরি হচ্ছে না। কারণ উনিই তো আমার একটি মাত্র দেরির কারণ। তাও বললাম আল্লার রহমত। বলাতো যায় না বাবা, এটাও হয়তবা রহমত। নাহলে আবার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। রহমতের বিপরীত শব্দ কিন্তু পরীক্ষা। কারণ আল্লা ক্ষমাশীল। পরম ক্ষমাশীল।
যাহোক ,ঐ যে বলেছিলাম একটা ছেলে মারা গেল এক্সিডেন্টে। এটা কিন্তু আমিও হতে পারতাম।এটা আমার উপর উনার চরম রহমত। ছেলেটার লাশ দেখলাম।দেখে মনে হয় বয়স ১৭-১৮ হবে।এই বয়সে আর কতই বা গুনা করবে সে? তারপরও আল্লা কিন্তু ভয়াল গুনাগারকে বাঁচিয়ে রাখে , এই কিশোর মারা যায়। কিশোরটির পরিবার যদি বিশ্বাসী হয় তবে সান্ত্বনা পাবে এই ভেবে যে হায়াত মওত আল্লার হাতে।উনি হয়তোবা ছেলেটার বাবা-মার পরীক্ষা করছেন।
পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা।
হয় রহমত , নয় পরীক্ষা। কোন মানুষ যদি খুব কষ্টে বাঁচে, তার থাকার ঘর না থাকতে পারে, তার হাঁটার পা না থাকতে পারে, সে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে পারে, তাও তারপরও তার পরীক্ষার শেষ হবে না। হয়তোবা কোন ক্রসফায়ের তার চোখ হারাতে পারে। এটাও কিন্তু ওই একই পরীক্ষা। জাস্ট নতুন প্রশ্ন যোগ হওয়া। কেও আবার থাকতে পারে বিশাল বাংলোতে। এটা কিন্তু আবার রহমত।
তবে এই পরীক্ষা গুলা একটু অন্য রকম।এই পরীক্ষা আমাদের সবার দিতেই হয় এবং যখন তখন খাতা জমা দিয়ে চলে আসা যাবে না পরীক্ষার হল থেকে। পরীক্ষার মাঝখানে খাতা জমা দিলেই আগুন। শুধু অংশগ্রহন এইখানে বড় কথা না।পাশ তোমাকে করতেই হবে।নাহলে কিন্তু আগুন।
একবার খুব ছোট থাকতে এক স্যারের সাথে কথা হচ্ছিল। স্যার শুধু পরীক্ষা নিতে চাইতো । তবে পরম দয়ালু ছিলেন। সবাইকে পাশ করাতেন। কেউকে ৪০-৪৫ দিয়ে আর কেউ পেত ৯০-৯৫ দিয়ে। “সবাই তো পাশ করে স্যার। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে লাভ কি?” স্যার বললেন, “তোরা কে কি রকম মনোযোগী ছাত্র এটা জানার জন্যে।” এটা আবার স্যার কি বললো? স্যার এতো কিছু জানেন কিন্তু এটা জানেন না?
এখন বুঝি, এটা কিভাবে জানবেন স্যার। কিন্তু এটা বুঝি না কেন পরীক্ষা নিচ্ছেন আল্লা । উনি ও কি জানে না?
এটাও কি জানেন না ওনার পরীক্ষার রহমত আর রহমতের পরীক্ষা কতো জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে? জানেন না মনে হয়। কারন উনি তো আবার সব জানেন! এই সব জেনে কি করবে! )
– আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাক। আজ রাখি।
– আচ্ছা আম্মু।
মাসাল্লাহ! ভাল লিখেছেন। রহমত আর পরীক্ষার যাতাকলে জীবনটা অতিষ্ট হয়ে গেল। মুলতঃ এটা সাধারণ মানষকে বুঝ মানানোর সহজ উপায় মাত্র। এইটুকু মাথায় ঢুকাতে না পারলে আল্লাহকে পাত্তা দেয় কে বলুন?
গল্পচ্ছলে তুলে ধরেছেন আপনার অনুভুতির কথা। মুক্তমনায় আপনাকে স্বাগতম।
@বাদল চৌধুরী,
ঠিক কথা। একটা মানুষ জীবন শুরু করতে না করতেই এইসব নিয়ে অতিষ্ট থাকে। আর একটা মজার কথা আছে..
“মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দিবেন তিনি।”
হা হা।
ধন্যবাদ
েবশ সুন্দর।
@বাসার,
ধন্যবাদ
স্রষ্টার পরীক্ষা ব্যাপারটি আসলেই হাস্যকর। সে সব জানলে পরীক্ষা দরকার হয় কেন? ভালো লিখেছেন,আপনাকে মুক্তমনায় স্বাগতম।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
হাস্যকর থেকেও পেইন বেশি।
মুক্তমনায় স্বাগতম ভাইয়া। 🙂
ভালো লেগেছে সহজ কথার গল্পছলে চিন্তাগুলো। তোমার আরো আরো লেখা দেখবো আশা করি।
আজ সকালে তোমার ফোন পেয়ে আসলেই আমি দারুন খুশি হয়েছি। তোমার প্রথম লেখার খবর জানাতে ফোন করেছ, অসম্ভব আনন্দ! তখন যদি আমাকে দেখতে বুঝতে কতটা। আমার চঞ্চল দুষ্টু দুষ্টু চেহারার হাসিটা মনে করে নাও, আর সাথে আপুর স্নেহ। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
আপু আমার পরিচিতদের মধ্যে আপনি একমাত্র এখানে লিখেন আর আমার আর এক বন্ধু রাফি নিয়নিত পড়ে। তাই প্রথমে আপনাদের জানানোর লোভ সামলাতে পারলাম না।
অভিনন্দন বন্ধু। তোমার যা অবস্থা পাশ করলেও সিজিপিএ কিন্তু বেশি সুবিধার হবে না।
@রাফি,
এটা বেশ চিন্তার বিষয় বটে। 🙂
:lotpot:
আল্লাহের বিশাল রহমতের কাহিনী এতো সংক্ষিপ্ত কথায়!!!আহ কি রহমত!
হয় রহমত, নয় পরীক্ষা। 😀
@রাহনুমা রাখী,
ধন্যবাদ.
খুব সহজ সাধারন প্রশ্ন। সরল ভাবে উত্থাপিত। সচ্ছতায় ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। চিন্তার ভাষিক রূপমাধ্যমে প্রকাশিত। এই তো চাই।
খুব মৌলিক প্রশ্নগুলি বার বার হোক উচ্চারিত। হোক অনবরত সত্যানুসন্ধান।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
@কাজী রহমান,
ধন্যবাদ ।
হয় রহমত , নয় পরীক্ষার মারপ্যাঁচে এক সময় মাথা খারাপ হয়ে যেত।
কষ্ট পেলাম তো আল্লাহর পরীক্ষা , সুখ পেলাম তো আল্লাহর রহমত । কোথায় যেন একটা লেখা পড়েছিলাম , টাইটেল টা ছিল ‘হয় জিত নয় জিত’ ।
আল্লার রহমতে ছোট হলেও আপনার লেখা সুন্দর হয়েছে ।
ধন্যবাদ।
@ছদ্মবেশী,
আমার প্রথম লেখা।
ধন্যবাদ
চমৎকার লেগেছে। খুব সহজ করে বলা।
শেষ লাইন দু’টো ঠিক বুঝিনি বা কেমন জানি খাপছাড়া মনে হচ্ছিল।
@স্বপন মাঝি,
দৃশ্যটাতে মায়ের সাথে ছেলের কথা হচ্ছে ফোনে। কথার মাঝখানে মায়ের “বল, আল্লার রহমতে দেরি হচ্ছে না” এর জবাবে ছেলের মাথায় যা যা চিন্তা আসে তাই এইখানে তুলে ধরা হয়েছে।
তাই শেষ দুটা লাইন হলো ফোন রাখার আগের কথা।
আল্লাপাক আপনার লেখা আমাদেরকে পড়িয়ে আমাদের ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন! :-X
ঠিকই বলেছেন, আসলে সবই পরীক্ষা আর পরীক্ষা। এই যে মুক্তমনা আল্লাপাকের বিরুদ্ধে কথা কয় এটাও আল্লাপাকেরই ইচ্ছা। আল্লাপাক কতো মহান!
@নিটোল,
আসলে সবই পরীক্ষা ! হা হা