মুখবন্ধ

মাসুদ রানা এবং বেশ কিছু মুক্তমনা সদস্য, মার্ক্সবাদের ওপর আমার আগের একটা লেখাতে প্রীত না। মুশকিল হচ্ছে, মার্ক্সবাদের আসল বক্তব্য কি হওয়া উচিত ছিল-তা অনেকটাই কোরান চর্চার মতন। আমার যেটা ঠিক বলে মনে হয়েছে, আমি সেটাই লিখেছিলাম। এবার সেটা আরো বিস্তারিত লিখতে বাধ্য হলাম। প্রথমে আগের প্রবন্ধে একটা ত্রুটি স্বীকার করে নিই। যদিও তাতে প্রবন্ধের বক্তব্যের কিছু পরিবর্তন হয় না। বঙ্গানুবাদের প্রডাকশন প্রসেসকে পদ্ধতি না ব্যাবস্থা-কি আলাদা হল, আমি এখনো বুঝি নি। ভাবানুবাদের ক্ষেত্রে দুটোই এক। আর বিজ্ঞানের প্রয়োগই প্রযুক্তি। এই দুটো অনুবাদে কোন ভুল নেই। সুতরাং যেখানে উৎপাদন ব্যাবস্থাটিই বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটি শাখা হিসাবে পরিণত হচ্ছে ( The productive process becomes sphere of application of science)। -এতে আমি কোন ভুল দেখছিও না।এর মানে যদি এও হয়, উৎপাদন পদ্ধতি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে-তাহলেও বৃহত্তর অর্থ বদলাচ্ছে না।

মূল কথা প্রযুক্তির উদ্ভাবনই উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। জনবিপ্লব দ্বারাও সেই কাজ হতে পারে-মার্ক্স ও তাই লিখে গেছেন-তবে তা হবে দার্শনিক প্রশ্নবিদ্ধ। মানে মুরগী আগে না ডিম আগের মতন ব্যাপার। সেই ব্যাপারে একটু বাদে আসছি।

Outlines of a Critique of Political Economy (1843) এঙ্গেলেসের লেখা -এটা আমার লেখাতে ভুল থাকলেও, সবাই জানে, এই প্রবন্ধটিই মার্ক্সবাদের ভিত্তি প্রস্তর। এই প্রবন্ধের মূল সুরেই মার্ক্স এর পরবর্তী চার দশক কাজ করবেন। লেখাটি মার্ক্সবাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওটি মার্ক্সবাদের অবিচ্ছেদ্য এবং প্রধান স্তম্ভ-তাই এঙ্গেলস লিখলেও ব্যাপারটা একই থাকে।

http://cnc.sagepub.com/content/21/2/123.abstract
Cyril Smith Abstract

Engels’ Outlines of a Critique of Political Economy (1843) was the starting point for the major work of Marx for the next four decades, and yet in all of his later writings purporting to represent Marx’s views, Engels never gets to grips with those aspects which Marx himself regarded as essential. Since Engels’ writings have had such an influence on late readings of Capital, acknowledging this can help us to see what Marx was trying to do.

********* এই সব ছোটখাট ভুল নিয়ে হুজ্জুতি করার মানে নেই। প্রবন্ধের যে মূল বক্তব্য সেটা নিয়েই আলোচনা বা বিতর্ক চলতে পারে-যার ভিত্তি মার্ক্সবাদ বিবর্তন না বিপ্লব-কি নির্দেশ করে? এটি নিয়ে গত ১৫০ বছর ধরে বিতর্ক চলছে-আজকেও সেই বিতর্ক চলতেই পারে। আমি লিখলাম, এই নিয়ে আমি বিস্তারিত লিখব। দেখা গেল মাসুদ রানা ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে চাইছেন না। সুতরাং আমি দ্রুতই লিখছি
*******************************************************
[২]
মার্ক্স যে ব্যাক্তিগত জীবনে বিপ্লব চাইতেন, বিপ্লব করতে গিয়েছিলেন-সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। সেটা সত্য হওয়া সত্ত্বেও, গত ১৫০ বছরে কমিনিউস্ট বলে একদল ফ্যাসিস্ট মতবাদিদের হাতে মার্ক্সবাদ ছিনতাই হয়েছে।

যে ব্যাপারগুলি অধিকাংশ মানুষের অলক্ষ্যে থেকে গেছে-

[১] মার্ক্স কি রক্তাত্ব বিপ্লবে আস্থা রাখতেন?
[২] যে কোন ধরনের জন বিপ্লব কি মার্ক্সবাদের বিবর্তন তত্ত্ব থেকে আসে?
[৩] গনতান্ত্রিক না সশস্ত্র বিপ্লব- মার্ক্সবাদের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন?
[৪] মার্ক্সবাদ কি মার্ক্সের ব্যাক্তিগত মতবাদ?

গুগল করলে এই তিনটি প্রশ্নের জন্যে হাজার হাজার প্রবন্ধ উঠে আসবে। একটু গভীরে গেলেই দেখবেন গোলমাল আছে। প্রথম গোলমাল এটাই- একটি সামাজিক বিবর্তনের তত্ত্বে -বিপ্লব বা রাতারাতি সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন কোথা হইতে আসে??? এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের তত্ত্বকি আদৌ বৈজ্ঞানিক? কার্ল মার্ক্সের অজস্ত্র লেখা আছে যেখানে বিপ্লবী এবং জনবিপ্লবের কথা লিখেছেন। জনবিপ্লবের প্রতি তার ভালোবাসা এই প্রবন্ধে আরো ভাল করে পাবেন

— http://www.runmuki.com/paul/writing/marx.html

এটি পড়লে দেখবেন মার্ক্স সারা জীবন বিপ্লবের সাথে যুক্ত ছিলেন-বিপ্লবীদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল- প্যারী কমিউনের সমালোচনাতে দেখা যাচ্ছে উনি কমিনিউস্টদের তীরস্কার করেছেন বুর্জোয়া সেনাবাহিনী এবং শ্রেনী শত্রু খতম না করার জন্যে। উনার সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স পড়ার পর কারুর কোন দ্বিধা থাকারই কথা না-উনি সরাসরি শ্রেনীশত্রু নিকাশের (খতমের) পক্ষেই ছিলেন এবং যা পরবর্তীকালে লেনিন করে দেখাবেন।

কিন্ত তার মানেই কি মার্ক্সবাদ রক্তাত্ব বিপ্লবের সমার্থক হয়? উনি প্যারি কমিউন নিয়ে যা লিখেছিলেন-সেটাকি আদৌ মার্ক্সবাদ থেকে আসে? লক্ষ্যনীয় তার প্যারি কমিউনের ওপর লেখাটি কোন বিশ্লেষণাত্বক লেখা না-সেখানে উনি কমিনিউন বিপ্লবীদের প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যত বিপ্লবের জন্যে আরো রক্তপাতের সুপারিশ করেছেন। এসব ঠিক আছে-কিন্ত সেগুলো কি তার মার্ক্সবাদি বিশ্লেষণ থেকে আসে -না বৈপ্লবিক আবেগ থেকে এসেছিল?

সাথে সাথে মার্ক্স, তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে এটাও বুঝেছিলেন ঐধরনের রক্তপাত বিপ্লব দিয়ে সমাজপরিবর্তন তাত্ত্বিক মার্ক্সবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন না। বস্তুত হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিক আদৌ কোন বৈপ্লবিক দর্শনে টানা যায় কি না, সেই নিয়ে দার্শনিক মহলেই বিতর্ক রয়েছে-এবং প্যারী কমিউন বিপ্লবের ব্যার্থতাতে মার্ক্স নিজেই এই ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
***************************************
http://evolutionrevolutionatrhodes.blogspot.com/2010/02/dialect-according-to-marx.html

Like Hegel, Marx also argued for the master-slave dialect to be understood through an historical perspective. This became the foundation for approaching Marx’s own dialect which emphasized the dialects historical importance as a continuous process which would develop throughout history. However, unlike Hegel, Marx saw a particular end to the dialect. For Marx, the end was a class revolution. Within the tenets of Marxism, the struggle between both the proletariat (working class) and the bourgeois class could only come to an end upon the social awakening of the entire proletariat class. This social or “class awakening” would only complete itself upon a revolutionary movement by the proletariat class. Marx argued that because of the long and tumultuous struggle between the proletariat and bourgeois classes, that one day the proletariat (working class) would eventually rise up and overthrow their “masters”(bourgeois class) thus liberating themselves the from enslavement. Personally, I find Marx’s spin on Hegel’s dialect a little far-fetched. Although I do see the relevance in Marx’s application of the dialect, I do not, on the other hand, see if Hegel ever intended his dialect to be understood through certain political agenda (in this case Marx’s agenda). Having said this, I question whether or not Marx used Hegel’s dialect devoid of any ill-conceived reasons. Meaning, was Marx forcing his own application of the dialect to illicit political response, or was Marx correct in applying Hegel’s dialect to the politics of class struggle. Lastly, I want to suggest that Marx’s use of the dialect fails to encompass consciousness’ struggle for recognition until the death, to which Hegel argued।

*************************************************************************

এর মূল কারন অনুধাবন করাই ছিল আমার প্রবন্ধের লক্ষ্য। সেই দার্শনিক বিতর্কের গভীরে না গিয়ে, ব্যাক্তিগত আক্রমন করে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। মনে রাখতে হবে-এই বিতর্কের ভিত্তিতেই মার্ক্সবাদিরা গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী ( যেমন বার্নস্টাইন) এবং কমিনিউস্ট বিপ্লবী এই দুই ভাগে ভেঙে গেছে। এই ইতিহাস ত বহু চর্চিত। এই প্রশ্নগুলি সবার প্রথমে তোলেন এডোয়ার্ড বার্নস্টাইন যিনি স্যোশাল ডেমোক্রাসীর জনক হিসাবেই বিখ্যাত। উনার লেখাগুলি ধরেই আমরা প্রথমে এগোব-কেনা না তিনিই মার্ক্সবাদের গণতান্ত্রিক ব্যাখ্যার দিকে এবং বিপ্লব নস্যাত করে, বিবর্তনের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বার্নস্টাইনের বক্তব্য ছিল, ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনের মাধ্যেমে আস্তে আস্তে শ্রমিকদের হাতে উৎপাদনের রাশ আসবে এবং মালিক পক্ষর মালিকানা হাল্কা হবে।

রোজা লুক্সেমবার্গ যদিও বার্নস্টাইনের সমর্থক ছিলেন না, তবুও উনি বার্নস্টাইনের একটি সুন্দর সংক্ষিপ্তকরন দিয়েছিলেনঃ the trade union struggle for hours and wages and the political struggle for reforms will lead to a progressively more extensive control over the conditions of production,” and “as the rights of the capitalist proprietor will be diminished through legislation, he will be reduced in time to the role of a simple administrator.” “The capitalist will see his property lose more and more value to himself” till finally “the direction and administration of exploitation will be taken from him entirely” and “collective exploitation” instituted.

বার্নস্টাইন বলেছেন আসল মার্ক্সবাদি হতে গেলে মার্ক্সবাদের সমালোচক হতে হবে। সেই প্রকৃত মার্ক্সবাদি যে মার্ক্সবাদের দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করতে পারবে এবং তোতাপাখির মতন মার্ক্সবাদ সর্বসত্য বলে চিল্লাবে না।
http://www.marxists.org/reference/archive/bernstein/works/1899/evsoc/ch01.htm

But this duty can only be accomplished if one gives an account unreservedly of the gaps and contradictions in the theory. In other words, the further development and elaboration of the Marxist doctrine must begin with criticism of it. To-day, the position is that one can prove everything out of Marx and Engels. This is very comfortable for the apologists and the literary pettifogger. But he who has kept only a moderate sense for theory, for whom the scientific character of socialism is not “only a show-piece which on festive occasions is taken out of a plate cupboard but otherwise is not taken into consideration,” he, as soon as he is conscious of these contradictions, feels also the need of removing them. The duty of the disciples consists in doing this and not in everlastingly repeating the words of their masters।

রোজা সহ বাকি কমিনিউস্টদের যুক্তি ছিল ট্রেড ইউনিয়ান ধনতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থায় শোষনের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হতে পারে কিন্ত কখনোই সেই আন্দোলন উৎপাদন ব্যাবস্থার মালিকানা শ্রমিকদের হাতে দেবে না। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, বলশেভিক বিপ্লবেও কিন্ত শ্রমিকদের হাতে মালিকানা আসে নি। সে মালিকানা গেছিল রাষ্ট্রের হাতে। ফলে মস্কোতে বুরোক্রাটরা স্ফূর্তি করেছে-আর গ্রামে দুর্ভিক্ষে কৃষক শ্রমিকরা অনাহারে মরেছে। আর ১৯১৯-১৯২০ সালে অসংখ্য শ্রমিক এবং কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে রাশিয়াতে। সোভিয়েত ইউনিয়ানে লালসেনারা যত না শ্রেনীশত্রু মেরেছেন-তার থেকে বেশী হত্যা করেছেন কৃষক এবং শ্রমিক। সমস্ত কমিনিউস্ট বিপ্লবে শ্রমিক বা কৃষকদের হাতে যে ক্ষমতা আসে নি -তার মূল কারন ক্ষমতা গেছে রাষ্ট্রের হাতে-আর তা বকলমে ভোগ করেছে কিছু কমিনিউস্ট পরিবার। যা রুমানিয়া বা উত্তর কোরিয়া বা কিউবাতে প্রায় রাজতন্ত্রের রূপ নেয়। সুতরাং কমিনিউস্ট বিপ্লব আসলেই অনেক দেশে রাজতন্ত্রকেই ফিরিয়ে আনে। শুধু তাই না-ক্ষমতার কেন্দ্রীকরনে স্টালিন বা পলপটের মতন কুখ্যাত খুনে দেশনেতা বিংশশতককে লেনিনবাদের উপহার। এগুলো লেনিনবাদিরা স্বীকার করেন না-উনারা এটাকে বুর্জোয়া মিডিয়ার চক্রান্ত -আমেরিকার চক্রান্ত বলে চালাতে চান। এই সব ত্রুটিকে অস্বীকার করে লাভ কি কিছু হয়? তারা জনসমকক্ষে আরো মূর্খ বা পাগল বা অশিক্ষিত বলে প্রতিপন্ন হন। যা জনসাধারনকে মার্ক্সবাদ এবং সমাজতন্ত্র থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলন নিজেরাই টিকতে অক্ষম-এবং ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক। লেনিনবাদ পৃথিবীকে দুর্ভিক্ষ এবং নরহত্যা ছাড়া কিছু দেয় নি। তাহলে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভবিষ্যত কি?

সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে কি উপায়ে শ্রমিক বা কৃষক শ্রেনীর হাতে উৎপাদন ব্যাবস্থার মালিকানা আসবে?

সাম্য বা সমাজতন্ত্রের চেয়েও এই যৌথ শ্রমিক মালিকানার প্রশ্নটিই আসল। এর জন্যে কি বিপ্লব দরকার না তা সমাজ বিবর্তনের পথেই আসতে পারে?

(3)

মার্ক্সবাদের যে ইতিহাস আমরা জানি, বা বাংলা ভাষাতে পাওয়া যায়-তার বাইরেও যে একটা বিরাট ইতিহাস আছে, তা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্টরা চেপে যায় বা অজ্ঞতার কারনে জানেই না। একথা অধিকাংশ লোকেই জানে না- ইউরোপে লেনিনবাদি রক্তাত্ব বিপ্লবের বিপক্ষে বা লেনিনবাদের বিরুদ্ধে দুটি শাখার জন্ম হয়। একদল দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশানাল থেকেই স্যোশাল ডেমোক্রাসি বা ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনে বেশী আস্থা রাখে। এই দলটির কথা আমরা জানি-কারন এদের শোধনবাদি হিসাবে গালাগাল দেওয়াটা লেনিনিস্টদের ব্রেকফাস্ট ছিল। কিন্ত যে দলটির কথা বাংলাভাষা বা মার্ক্সবাদি চর্চায় আসে না-অথচ যাদের চর্চায় আদি মার্ক্সবাদের তত্ত্ব সব থেকে বেশী প্রাসঙ্গিক- তারা হচ্ছে কাউন্সিল কমিনিউজমে বিশ্বাসি ইউরোপের অটো রুলে, হার্মান গর্টার, এনটন প্যানেকক। আমি মূলত তাদের চিন্তাভাবনা এবং তাদের সূত্র ধরে পরবর্ত্তিকালে শিল্প প্রযুক্তি বিপ্লবের প্রসঙ্গে আসব।

আমি কেন কাউন্সিল কম্যুনিজম নিয়ে লিখছি তার একটা গৌড়চন্দ্রিকা দরকার। কাউন্সিল কমিনিউজমের ধারনা কমিনিউজমের ব্যার্থতার যুগে কেন প্রাসঙ্গিক সেটাও জানা দরকার। প্রথম কথা হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেনীর কতটা স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বা সমাজতন্ত্রের দিকে সিস্টেম কতটা অগ্রসর হয়েছে ? ভারত, আমেরিকা বাংলাদেশ যেদিকেই দেখি-সেদিকেই ব্যার্থতা। আমেরিকাতে এই দুই দিন আগে উইনস্কনসিন থেকে আইন করে সরকারি কর্মচারিদের ট্রেড ইউনিয়ান করা বন্ধ করা হয়েছে। রিপাবলকানরা হুমকি দিচ্ছে ক্ষমতায় আসলে গোটা আমেরিকাতেই তারা ট্রেড ইউনিয়ান বন্ধ করে দেবে। ইউরোপের ওয়েলফেয়ার দেশগুলির অবস্থাও ভাল না। ওয়েলফেয়ার চালাতে গিয়ে দেউলিয়া হওয়ার পর, সর্বত্র ছাঁটাইকে তাদের ও মেনে নিতে হচ্ছে নইলে ঘরে চুল্লী জ্বলবে না। ভারতে শ্রমিক বিরোধি বিল ঠেকানোর মতন বামশক্তি নেই-তারা ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। আগামী দিনে তাদের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। নতুন প্রজন্ম বিশ্বাস করা শিখছে বাম ধারনাগুলি ঐতিহাসিক ভুল-কারন তা সমাধান আনতে সর্বত্র ব্যার্থ। অথচ গোটা বিশ্বে ধনবৈষম্য বেড়েই চলেছে এবং শোষন ও বাড়ছে সীমাহীন ভাবে। গতবছর আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চলেছে হরিয়ানা এবং বাংলাদেশে। এসব দেশে গরীবরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ-অথচ বামশক্তি দুর্বলতর হচ্ছে। অদ্ভুত না? বামেদের জিজ্জেস করুন তারা নিও লিবারিলজম, মিডিয়া ইত্যাদির সাতকাহিনী শুনিয়ে দেবে। অথচ বাম শাসিত রাজ্যেই বামেরা জমি হারাচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত। গোটা পৃথিবীজুরেই এটা ঘটছে এবং বামেদের পিছু হটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।

এর উত্তর কোন লেনিনবাদিকে জিজ্ঞসে করলে দেখবেন-সে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে দেবে-এমন ত জানা কথা। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র যে সোনার পাথরপাটি এবং আসলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দরকার-এসব নাকি, লেনিনের শোধনবাদের বিরুদ্ধের অবস্থানকেই দৃঢ় করে! অথচ এরা একবারেও স্বীকার করতে চাইছে না-লেনিনবাদ আসলেই স্টেট ক্যাপিটালিজম বা সরকারি ধনতন্ত্র ছাড়া কিছু না। এবং তা নির্মম আদিম মিশরের দাস প্রথার বেশী এই বিশ্বকে বেশীকিছু দিতে পারে নি। গত শতাব্দির সব গণহত্যা এবং দুর্ভিক্ষগুলি পৃথিবীকে লেনিনবাদের উপহার । পশ্চিম বঙ্গেও পাটিতন্ত্র মানুষের জীবনে অভিশাপ হিসাবেই এসেছে-তা আশীর্বাদ হয় নি।

অর্থাৎ মার্ক্সবাদের লেনিনবাদি ধারা বা গনতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ধারা-দুটিই সম্পূর্ন ভাবে ব্যার্থ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। সুতরাং প্রশ্ন উঠবেই কেন বামপন্থা ব্যার্থ? তার মানে কি মার্ক্সবাদও ব্যার্থ? বলশেভিক বিপ্লবে লেনিনের নৃসংশতা এবং কৃষক শ্রমিকদের বিদ্রোহের ওপর লাল বাহিনীর কুত্তাকাটা আক্রমনে ১৯২০ সাল থেকেই ইউরোপের “বিপ্লবী” মার্ক্সিস্ট গোষ্টির অধিকাংশই বলশেভিক বিপ্লবের ভুয়ো তত্বে বিশ্বাস হারায়। আবার তারা এটাও দেখছিলেন, ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলন আসলেই শোষনের হাতকে শক্ত করছে। এর পর স্টালিন স্যোশালিজম ইন ওয়ান কান্ট্রি ইত্যাদি ভুয়ো তত্ত্বের প্রচলন করতে আরো পরিস্কার হয় লেনিনবাদ আসলেই লাল-ফ্যাসিজম।

সুতরাং এন্টন পেনকক , অটো রুলে এসব দেখে নতুন ধরনের বামপন্থী আন্দোলনের চিন্তা করতে থাকেন। তারা মূলত লেনিনবাদ, এনার্কিজম এবং স্যোশাল ডেমোক্রাসির ব্যার্থতা পর্যালোচনা করে-এই সিদ্ধান্তে আসেন যে ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বা শ্রমিকদের হাতে উৎপাদনের সরাসরি মালিকানা ছাড়া বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের হাতে মালিকানা মানে সেখানে পুঁজিপতিদের স্থানে যম হয়ে আসে পার্টি মেম্বার আর বুরোক্রাটরা। তাছারা পৃথিবীর সর্বত্র রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানাগুলির উৎপাদিকা শক্তি দুর্বল। আর এনার্কিস্টরা উৎপাদন নিয়ে চিন্তাই করেন না। উৎপাদন কিন্ত একটা কাঠামো ছাড়া সম্ভব না। ট্রেড ইউনিয়ানের কথা ছেড়ে দিলাম। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে তারা তালপাতার সেপাই ছাড়া কিছুই না।

লেনিনবাদ কেন সব জায়গায় ব্যার্থ এটা বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে- রাষ্ট্রীয় দমননীতির চেয়েও ব্যার্থতার মূল কারন উৎপাদন ব্যাবস্থার উন্নতিতে ব্যার্থতা। চীনে গত ৪-৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বিশেষ-সিঙ্গাপুরেও প্রায় ডিক্টেটরশিপ-কিন্ত বিপ্লবের আশঙ্কা নেই। এসবের মুল কারন, এই ফ্যাসিস্ট সিস্টেমগুলি উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থা নিয়ে আনতে সক্ষম যার কারনে জনগন বস্তুবাদি লাভেই তুষ্ট- রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। পশ্চিম বঙ্গেও লেনিনবাদিদের শত অত্যচার সত্ত্বেও, সিপিএম টিকে যেতে পারত-যদি তারা এটা বুঝত উৎপাদনে অগ্রগতি না হলে, তাদের সিস্টেমের মৃত্যু অবধারিত। মোদির ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গুজরাট নীরব-কারন উৎপাদনে গুজরাট শীর্ষে। ধনতন্ত্রও টিকে আছে সেই উৎপাদন শক্তির জোরে। আমেরিকাতে আগে কখনো ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে এত সোচ্চার হতে লোকে দেখে নি। এখন দেখছে-কারন এখানে ধনতান্ত্রিক উৎপাদনে ভাঁটা পড়েছে বিশ্বায়নের কোপে। উৎপাদন শক্তিতে সংকট না এলে রাজনৈতিক সিস্টেমে সংকট আসে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। সোভিয়েত ইউনিয়ান থেকে সব কমিনিউস্ট দেশগুলি-এমনকি আমাদের ৩৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সিপিএম ধ্বংশ হতে চলেছে শুধু একটাই কারনে-সেটি হচ্ছে এই রাজনৈতিক সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল উৎপাদন শক্তির জন্ম দেয়। আর এই দুর্বল উৎপাদন শক্তি থেকে জন্ম নেয় দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ এবং বেকারত্ব-যা ক্রমশ বিদ্রোহের রূপ নেয়। আর তা থামাতে যখন পার্টির গুন্ডাবাহিনী মাঠে নামে-তখন কমিনিউজমের পতন হয় আরো দ্রুত।

সুতরাং দুটি জিনিস সমাজতান্ত্রিক শাসনে দরকার-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন বা উৎপাদন ব্যাবস্থার ওপর উৎপাদকের মালিকানা এবং উন্নততর উৎপাদন। প্রথমটি গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। দ্বিতীয়টি সাম্যবাদের শর্ত।

যৌথ মালিকানা উন্নততর উৎপাদন দিতে পারে কি না- সেটি বিতর্কিত। কিন্ত আমেরিকান স্টার্টআপ কোম্পানীগুলি উদ্ভাবনী শ্রমিকদের দ্বারাই শুরু হয়। চীনের বৃহত্তম কোম্পানী হুয়াইও ১০০% শ্রমিক মালিকানাধীন। এবং তা মাত্র ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানীতে রূপান্তরিত। আমেরিকার বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানী সিসকোকেও তারা ছাড়িয়ে গেছে। আমেরিকান স্টার্টাআপ এবং হুয়ায় বা জিটিই এর সাফল্য থেকে পরিস্কার শ্রমিক মালিকানাধীন কোম্পানী বা যৌথ শ্রমিক উৎপাদন ব্যাবস্থা বর্তমান ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যাবস্থার থেকে উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থা দিতে সক্ষম। আমি হুয়াই নিয়ে যতটা জানি-সেটাতে দেখেছি-সেখানে কোম্পানী পরিচালনের সর্বস্তরে শ্রমিকদের বক্তব্য থাকে। এটা আমেরিকান ধনতন্ত্রের উন্নত প্রযুক্তির কোম্পানীগুলিতেও হয়। কিন্ত সেখানে ছাঁটাই এর ভয়ে কেওই কোম্পানীর সাথে নিজেকে মানসিক ভাবে জড়ায় না। দায়সারা ভাবে পেশাগত কাজ সারে। শ্রমিক মালিকানাধীন কোম্পানীগুলিতে স্বাভাবিক ভাবেই শ্রমিকদের আবেগ এবং মন অনেক বেশী জড়িয়ে থাকে। ভারতের মারোয়ারী কোম্পানীগুলি কোনদিন কোন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির শিল্প গড়তে পারবে না। কারন তাদের কোম্পানীগুলি সম্পূর্ন শ্রমিক শোষনের ওপর তৈরী এবং সেখানে ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ন পরিবারের হাতে। মিত্তল থেকে আম্বানীর বিপুল সম্পত্তির উৎস সরকারকে ঘুঁশ খাওয়ানো -তারা মোটেও বিলগেটস বা জুকারবাগে মতন নতুন প্রযুক্তি তৈরী করে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম না। মনে রাখতে হবে বিল গেটস বা জুকারবাগও এক অর্থে শ্রমিক-মাইক্রোসফটে বা ফেসবুকে এরা নিজেরা কোড লিখেছেন।

সুতরাং নানান উদাহরন থেকে পরিস্কার শ্রমিকের হাতে কোম্পাণীর সরাসরি মালিকানা থাকা উৎপাদনের জন্যে শ্রেষ্ঠতর। ভারতের আই আই টির ব্যাবস্থার সাফল্যও এখানে নিহিত। আই আই টি গুলি কিন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রনে সরাসরি নেই-তা চলে সেনেটের দ্বারা যা অধ্যাপক নিয়ন্ত্রিত-স্বয়ত্বশাসিত। সুতরাং এই স্বয়ত্বশাসিত শ্রমিক মালিকানা-যাকে ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বলে অবিহিত করা হয়-সেটাই মার্ক্সবাদি সমাজের বা শোষনমুক্ত সমাজের জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি।

ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বনাম ট্রেড ইউনিয়ানের পার্থক্য বোঝা দরকার। ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলন সফল হলে-তা কিন্ত উৎপাদন শক্তির বিরুদ্ধেই কাজ করে-এবং তা আজ গ্লবালাইজেশনের যুগে সংকটের মুখে। ই এস জেড বা স্পেশাল ইকনমিক জোন করে, ট্রেড ইউনিয়ানই তুলে দেওয়া হচ্ছে-কারন তা প্রতিযোগিতার বাজারে কোম্পানীকে তোলার বদলে ডোবাতে সক্ষম। স্পেশাল ইকনমিক জোনের সংখ্যা সব দেশেই বাড়ছে-এবং ট্রেড ইউনিয়ান ততটাই অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছে। আই টি এবং বিপিও শিল্পেও ট্রেড ইউনিয়ান অপ্রসাঙ্গিক- অথচ এমন না এদের ওপর শোষন নেই। কালকেই পড়লাম ভারতের বিপিও গুলি আদিম দাস ব্যাবস্থা চালাচ্ছে। কলসেন্টারের একটি মেয়ে কোন কোন দিন আট ঘন্টার মধ্যে একবার বাথরুমেও যেতে পারে না ভয়ে- কল মিস হয়ে গেলে, চাকরী থেকে ছাঁটাই হবে। কারন এমন হয়েছে। অথচ, এদের ট্রেড ইউনিয়ান নেই-এরা ট্রেড ইউনিয়ানকে ঘৃণা করে। কারন এদের ধারনা এসব শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ান চললে, বিপিওটা ফিলিপিন্সে বা আর্জেন্টিনাতে চলে যাবে। খুব অমূলক কিছু না। ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনের চোটে পশ্চিম বঙ্গকে শিল্প শ্বশান বানিয়েছিল সিপিএম।

এখানেই ফ্যাক্টরি কাউন্সিল ট্রেডইউনিয়ান থেকে এগিয়ে থাকবে। ফ্যাক্টরি কাউন্সিলের ধারনায় কারখানার মালিকানা এবং ম্যানেজমেন্ট শ্রমিকদের হাতে। সেখানে ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন না হলে-কোম্পানী লসে চললে-তাদের বেতন হবে না। আবার লাভ করলে, লাভের ভাগ সবাই পাবে। সুতরাং ফ্যাক্টরি কাউন্সিলে উৎপাদন আরো বাড়ে-শ্রমিকরা আরো দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ করে-এবং তার লাভটাও তারা ভোগ করে। সম্প্রতি চীন এর একটা ভাল উদাহরন রেখেছে। সেখানে অনেক গ্রামে “উৎপাদন কমিনিউটি” তৈরী হয়েছে যেখানে গ্রামটাকেই একটা কোম্পানী করে দেওয়া হয়েছে। এমন একটা গ্রাম উজিয়াজুই। ১৯৯৫ সালের আগে এটি ছিল গরীব জেলেদের গ্রাম। এখন সেখানে অনেক আধুনিক উৎপাদন কারখানা। গ্রামের সবাই তার মালিক। গ্রামবাসীদের বার্ষিক উপায় ৯০০০ ডলারের ওপরে। এবং তারা সপ্তাহে সাতদিনই খাটে। করবেই বা না কেন? লাভের গুড়ত মালিকের পকেটে যাচ্ছে না-পাচ্ছে তারাই।

(৪)
উৎপাদন ব্যাবস্থাতে শ্রমিক মালিকানা এলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কি পরিবর্তন হবে? একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানের গণতন্ত্র সম্পূর্নভাবেই মালিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সাধারন মানুষের প্রত্যাশাপূরন অনেকটা বাচ্চাকে ললিপপ খাওয়ানোর মতন। যেটুকু দিলে স্থিতিশীল অবস্থা জারী থাকে এবং একটি স্বার্থপর মধ্যবিত্ত শ্রেনী [ বুর্জোয়া কথাটা ব্যাবহার করলাম না] সেই ব্যাবস্থার সেবাদাস হিসাবে নিজেদের নিয়োজিত করে-ঠিক সেই ভাবে চলছে বর্তমানের পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র বা প্রক্সি গণতন্ত্র। তবুও তার মধ্যেও কিছু ভাল আছে-যেমন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরন অন্তত এখানে হয় না-যা সবার আগে দরকার। আবার জনগনের হাতে ক্ষমতাও যায় না।

বর্তমান গণতন্ত্রের সংকট সব থেকে ভাল বোঝা যাচ্ছে এখন আমেরিকাতে। ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফিল্ম। রিপাবলিকানরা চাইছে বড়লোকদের ট্যাক্স কমাতে এবং সব ধরনের স্যোশাল ওয়েলফেয়ার তুলে দিতে। ডেমোক্রাটরা চাইছে ওয়েলফেয়ার রাখতে আর বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স বসাতে। এখানে শ্রেনীদ্বন্দ গণতন্ত্রের মাধ্যমে খুব সামনে এসে গেছে। কিন্ত জিতছে কে? রিপাবলিকান রা। কেন? আমেরিকাতে সবাই ধনী হয়ে গেল না কি? না সেরকম কিছুই না। বেসিক্যালি ব্যাবসায়ীরা ডেমোক্রাট এবং রিপাবলিকান সবাইকেই কিনে নিয়েছে। যার জন্যে ডেমোক্রাটরা যখন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিল সাধারন মানুষের ভোটে জিতে- তখন না কমালো ডিফেন্স বাজেট-না বাড়ালো বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স। আবার ভোট পাওয়ার জন্যে ওয়েল ফেয়ার ও রেখে দিল। বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স বাড়ালো না -কারন তাদের টাকাতেই নির্বাচনী তহবিল ফুলে ওঠে। ফলে আমেরিকা দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল- সঙ্গত কারনে আমেরিকান কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা জিতল এবং তারা ওয়েলফেয়ার উঠিয়ে দিতে চাইছে এখন। কিন্ত বড়লোকদের পকেটে হাত দেওয়া যাবে না! গরীবদের শিক্ষা আর চিকিৎসার টাকা কাট! অর্থাৎ এই শ্রেণীদ্বন্দে স্যোশাল ডেমোক্রাটরা হেরে যাচ্ছে কারন তারাও ব্যাবসায়ীদের হাতে বিকিয়ে আছে। আমাদের সিপিএম থেকে আমেরিকার ডেমোক্রাট-কেওই এর ব্যাতিক্রম না।

বটমলাইন হচ্ছে উৎপাদন ব্যাবস্থা যার হাতে- গনতন্ত্র তথা রাজনীতির রাশ তার হাতেই থাকবে। এটাই হওয়া উচিত-এবং গনিতিক নিয়মেই তাই হয়। লেনিনবাদিরাও এটাই জানেন। কিন্ত সরকার যদি সেই উৎপাদন ব্যাবস্থার ওপর অধিকার নিতে যায়-তখন ক্ষমতা যায় বুরোক্রাটদের হাতে। সোভিয়েত ইউনিয়ান বা নেহেরুর ভারতে সেটাই হয়েছিল। সেটা আরো খারাপ। ব্যাবসায়িদের যাও বা দায়বদ্ধতা আছে বুরোক্রাটদের তাও নেই। সুতরাং ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বা কোপরেটিভ গুলি শক্তিশালী হলে রাজনীতিতে বড় কোম্পানীর স্থলে, ক্ষমতার কেন্দ্র এদের হাতেই আসবে। এবং সেটা হবে নীরব মার্ক্সীয় বিপ্লব-যা গণতন্ত্রের ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমেই সম্ভব। শুধু দিশাটা ঠিক থাকলেই হল। আর চীনের মডেলে শ্রমিক পরিচালিত কোম্পানীগুলির পেছনে সরকারি ব্যাঙ্ক এবং সরকারের ব্যাপক সাহায্য দরকার। শেষের কাজটা গনতান্ত্রিক উপায়েই সম্ভব। তার জন্যে ছত্রিশগড়ের জঙ্গলে গিয়ে পুলিশ মারতে হয় না।