(১)
এক অদ্ভুত দেশ ভারত। প্রতি বছর ভারতে গিয়ে দেখি নতুন নতুন বিজ্ঞান প্রযুক্তি সংস্থা যেমন খুলছে-পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মন্দির। এই মোড়ে মা শীতলার গরম মাথা ঠান্ডা করতে কোমরে জলের ঘটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মহিলাদের দল- আর রাস্তার অন্য মোড়ে শনির কুদৃষ্টি আটকাতে ঢং ঢং ঘন্টা। কুড়ি
বছর আগে এসব কিছু ছিল না। এটা হয়েছে ভারতের সর্বত্রই-পশ্চিম বঙ্গে কমিনিউস্ট শাসিত বাম সরকার থাকা সত্ত্বেও প্রগতিশীলতার কিছুই চোখে পড়বে না সাধারন মানুষের মধ্যে। ওরা একই সাথে শনির মন্দিরেও গিয়ে থাকে- আবার সিপিএমের সদস্যও। আরো অদ্ভুত দৃশ্য মহিলাদের মধ্যে। একই সাথে তারা ডিসকোথেকে পিঠ খুলে শীলা -কি জওয়ানী ছোঁয়ার চেষ্টা করছে আর তার পরের দিন উপোস করে ব্রত উদযাপন।
ভাবার চেষ্টা করা যেতে পারে সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এমন আচরনের কারন কি?
আমি তিন বছর আগে, মানুষের ধর্মাচারন কেন সামাজিক উপযোগিতা নির্ভর তার ওপর একটা লেখা লিখেছিলাম। বর্তমান প্রবন্ধটি বুঝতে গেলে, আগের লেখাটি পড়ে নিলে সুবিধা হবে। স্যোশাল ইউটিলিটির তত্ত্বের মূল বক্তব্য মানুষের ব্যাবহারগুলি এক অদৃশ্য “সামাজিক” বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং সেই বাজারের পণ্য হিসাবে সে নিজের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে ।
সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ব্যাপারটা সমাজ বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কারন মানুষের সামাজিক ব্যাবহারগুলির মূলে এই স্যোশাল ইউটিলিটির তত্ত্ব। প্রথমেই সেই সব মেয়েদের বা আরো প্রিসাইজলি সেই সব বৌদের কথাতে আসি যারা একই সাথে ডিসকোথেক আর ব্রত নিয়ে ব্যাস্ত। সামাজিক কারনেই সব বৌদের দুটো সার্কল থাকে-একটা সমবয়সীদের সার্কল-অন্যটা শাশুড়ি বা মা, মাসীদের সার্কল। তারা দুটো সার্কলেই জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। ব্যাবসায়ীদের মধ্যেও আমরা একই জিনিস দেখব। সমাজে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দায় তাদের মধ্যে অনেক বেশী। কারন ব্যাবসার মূল ভিত্তিই গ্রহনযোগ্যতা।
আজ থেকে দুশো বছর আগে, যেখানে প্রযুক্তির উন্নতি হয় নি এবং যৌথ উৎপাদন ব্যাবস্থাতেই সমাজ চলেছে-সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার মধ্যে কোন পরস্পর বিরোধি দ্বন্দ ছিল না-কারন সমাজের বিবর্তন হয়েছে খুব ধীর গতিতে। শিল্প বিপ্লবের ফলে উৎপাদন ব্যাবস্থা সামাজিক শক্তির কেন্দ্রগুলি থেকে মুক্ত হতে থাকে এবং ভেঙে পরে যৌথ পরিবার ব্যাবস্থা। ফলে সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য না হয়েও বেঁচে থাকার পথ পরিস্কার হয়। নারীবাদ থেকে বস্তুবাদি সমাজতান্ত্রিক ধারনা বা যা কিছুকে আমরা প্রগতিশীল চিন্তা বলে মনে করি, তার ভিত্তিপ্রস্তর এই সমাজ নিরেপেক্ষ উৎপাদন ব্যাবস্থা, যা উন্নত প্রযুক্তির দান।
উদাহরন দিচ্ছিঃ
তামিলনাডু বা বাংলাদেশে সব পরিবারেই ধর্মের খুব প্রাবল্য। আজ থেকে দুশো বছর বাদে যদি সেখানে কোন তরুণের মধ্যে ঈশ্বরে অবিশ্বাস জন্মাত-তার হাল কি হত?
তার পারিবারিক ব্যাবসা বা জমি থেকেই তার ভরনপোষন হত বলে, তার পরিবারের ধার্মিক আচরনকে সে মেনে নিতে বাধ্য হত। সেটাই সামাজিক বাধ্যবাধকতা। কিন্ত আজকের দিনে ছেলেটা ভাল পড়াশোনা করে সফটোওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সে পৃথিবীর যেকোন উন্নত শহরে নিজের মতন থাকতে পারে। এটি মেয়েদের জন্যে আরো অধিক সত্য। দুশ বছর আগে নারীবাদিই হও আর ঘাসীবাদিই হও পরিবার জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিত। আজকের মেয়েটি কিন্ত পড়াশোনা করে নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে। এবং সে যে এটা পারে- এর মূলে কোন নারীবাদি আন্দোলন নেই-আছে উৎপাদন ব্যাবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন যার কারনে সে স্বাধীন ভাবে চাকরী করতে পারে এবং তার সব কিছু চাহিদাই পেশাদারি ভাবে সমাজ মেটাতে সক্ষম। উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদন ব্যাবস্থা এই সমাজ নিরেপেক্ষ জীবনকে বাস্তবায়িত করেছে।
এতগুলো কথা লিখতে হল এটা বোঝানোর জন্যে আমাদের সামাজিক ব্যাবহারগুলি উৎপাদন ব্যাবস্থার সাথে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে আছে। ধর্মও একটি সামাজিক ব্যাবহার যা উৎপাদন ব্যাবস্থা বহির্ভূত কিছু নয়। উৎপাদন ব্যাবস্থা যত সমাজ নিরেপেক্ষ হবে, কোন ধর্মীয় ক্লাবে যোগ দেওয়ার চাপ কমবে!
(২)
ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আমি ধর্মীয় ক্লাব বলি। বাঙালী হিন্দুদের অনেক ধর্মীয় ক্লাব আছে- রামকৃষ্ণ মিশন, মতুয়া, ইস্কন, বাবা লোকনাথ, বাবা অনুকুল ঠাকুর ইত্যাদি। মুসলমানদের ও অজস্ত্র ক্লাব আছে-তবলিগী, জামাত ( জামাতের মধ্যেও অনেক ভাগ) , আতাহারি, আগাখান -শেষ নাই। খ্রীষ্ঠান চার্চের সংখ্যাও অজস্র।
এবার আমরা যে প্রশ্নটা করব -একটা লোক এই সব ক্লাবের মেম্বার হতে চাইছে কেন? এর পেছনে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ভূমিকা কি? যারা আগাখানের শিষ্যদের সাথে মেলামেশা করেছেন-দেখবেন তাদের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন “গর্ব” আছে যে তারা “উৎকৃষ্ট” ইসলামিক ক্লাবের মেম্বার।
বাঙালী হিন্দুদের মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনের “ভক্তদের” মধ্যেও দেখবেন নাক উঁচু ভাব
আছে। এই সব ক্লাবগুলির ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় আমাদের সমাজে এই ক্লাবগুলির গ্রহণযোগ্যতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন রামকৃষ্ণ মিশনের ভক্তদের মধ্যে উচ্চশ্রেনীর বাঙালী বেশী নজরে আসবে যেখানে বাবা লোকনাথের শিষ্য আমজনতা। এগুলো খুব বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়-যেখন রাষ্ট্রশক্তি কোন একটা গোষ্টিকে বেশী নিরাপত্তা এবং অন্য একটি গোষ্টিকে উৎপাত করা শুরু করে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্যে জনগন গোষ্টি বদল করে-বা নিরাপদ গোষ্টির মেম্বারশিপ নিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
দুটো উদাহরন দেওয়া যাক। প্রথমেই পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের মেম্বারশিপ নিয়ে একটু আলোচনা করি। সিপিএমের মধ্যগগনে রাম শ্যাম যদুমধু -সবাই সিপিএমের মেম্বার ছিল। সিপিএম [ বা গ্রামের ভাষায় ছিপিএম] না করলে রেশন থেকে শুরু করে কোন সরকারি সাহায্য পাওয়া যেত না। জায়গা জমি সব কিছুই লোপাট হয়ে যেতে পারত। ফলে মনসাসেবক থেকে শিবসেবক, জামাত থেকে
ওয়াহাবি মুসলিম সবাই এই কমিনিউস্ট ক্লাবের সদস্য হয়। আবার এবার সিপিএম ভোটে গোহারা হারলে তাদের অনেকেই তৃণমূল ক্লাবে চলে যাবে। বা অনেকেই সময় বুঝে চলেও গেছে।
বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যালোপের পেছনেও একই ব্যাপার কাজ করেছে। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতে ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মের নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়া। ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্টিগুলি-যা হিন্দুই হোক বা আহমেদিয়াই হোক বা বাহাই হোক-আস্তে আস্তে দুর্বল হয়েছে।
অন্যদিকে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতেও ধর্মীয় সম্প্রদায় ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি এরিজনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড উইগনারের প্রকাশিত একটি গবেষনাপত্রে- উনি দেখিয়েছেন কি করে উন্নত বিশ্বে ধর্ম বা ধর্মাচারন বা এই সব ধর্মীয় ক্লাবগুলির সদস্য হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। এবং তাদের নন লিনিয়ার মডেল দেখাচ্ছে -উন্নত বিশ্বে ধর্ম এই শতাব্দিতেই লুপ্তপ্রায় হবে।
এক্ষেত্রে আসলে উলটো ব্যাপার ঘটেছে। এখানকার উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থার বস্তুবাদি সুবিধা নিতে গেলে ধর্মীয় ক্লাবের মেম্বার হওয়াটা কোন কাজে আসে না-ধনতন্ত্রে প্রতিভা এবং অভিজ্ঞতাই শেষ কথা। ধর্মীয় আচরন বরং উন্নত বিশ্বে উন্নতির অন্তরায়। যেমন নাস্তিক বলে, আমেরিকান বা বৃহত্তর বাণিজ্যিক গোষ্টির কাছে আমি অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য [ অবশ্য আমি সে জন্যে নাস্তিক না-ঈশ্বরের বিশ্বাস করার কোন কারন খুঁজে পায় নি কোনদিনই!] যেটা হিন্দু হলে অসুবিধা হত। অধিকাংশ আমেরিকান ধরে নেয় হিন্দু মানে তৃণভোজি-তাদের সাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়া বিড়াম্বনা। এগুলো সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার পরিপন্থী। সেটাও আসল কারন না । আসলে ধর্মে বিশ্বাস নেই বলে, সব সিদ্ধান্ত নিতে, নিজের বুদ্ধির ওপর ভরসা রাখতে আমি বাধ্য। ঈশ্বরের ওপর ত কিছু ছাড়তে পারি না-ভাগ্যের হাতেও না। ফলে চোখ কান অনেক খোলা রেখেই যেকোন জিনিস বোঝার চেষ্টা করাটাই আমাদের একমাত্র অস্ত্র। এই যুক্তিবাদি মন ধনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার উৎপাদন কাঠামোতে অনেক সুবিধা দেয়। আমেরিকাতে যত সিইও দের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে-সবাই নাস্তিক। একজন সিইওর আসল দাম, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাতে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাকে যুক্তিবাদি হতে হবে। এই ভাবেই যুক্তিবাদি লোকেরা উন্নত বিশ্বের উৎপাদন কাঠামোতে শীর্ষস্থানে আছে এবং বাকিরাও যেহেতু সেই ক্লাবের মেম্বার হতে চাইবে -খুব স্বাভাবিক ভাবেই উন্নত বিশ্বে আস্তে আস্তে লোকেরা ধর্মের পা মারাতে চাইছে না । উইগনারের বর্তমান গবেষণা সেটারই দিকেই নির্দেশ দিচ্ছে।
[৩]
এবার উইগনারের গবেষণাপত্রটি বোঝার চেষ্টা করি।
পাশের এই লেখচিত্রটিতে ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ভিয়েনা এবং নেদারল্যান্ড-এই চারটি দেশে গত ১৫০ বছরে ধর্মের প্রাবল্য কিভাবে কমেছে, তার লেখচিত্র আছে। তাদের মডেল এবং পরীক্ষামূলক তথ্য যেখানে মিলে যাচ্ছে। এবং এই দেশগুলিতে এখন ধর্মহীন লোকেরাই সংখ্যাগুরু।
সুতরাং ধর্ম নির্ভর সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্মহীন সত্যিকারের ধর্মনিরেপেক্ষ সমাজে বিবর্তনের জন্যে উইগনারের মডেলটি বোঝা দরকার।
উনি রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যারা ধর্মালম্বী বনাম যারা ধর্মহীন। ধরা যাক এরা দুটো ক্লাব-আমাদের মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের । বা ওর থেকে ভাল উদাহরন সিপিএম এবং তৃণমুল। ২০০৯ সালে তৃনমূল কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতা দখলের পর আমরা দেখেছি দলে দলে অনেকেই সিপিএম ক্লাব ছেড়ে তৃণমুল ক্লাবে যোগ দিয়েছে।
উইগনার ও বলছেন “লোকে ধর্মালম্বীদের ক্লাব ছেড়ে, ধর্মহীনদের ক্লাবে এবং উলটোটাও সব সময় হচ্ছে। এর কারন অনেক কিছুই হতে পারে- তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা, নিজের মূল্যায়ন বাড়ানো ইত্যাদি কাজ করে। কোন ধর্মপ্রান হিন্দু বা মুসলিমকে কাজে নিতে যেকোন কোম্পানী দুবার ভাববে-কারন অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানে এদের মধ্যে যুক্তিবাদি মন কম, বিশ্লেষন ক্ষমতা কম। ফলে চাকরী পাওয়ার জন্যেই একজন মুসলিম যেমন তার ইসলিময়ৎ কমাতে বাধ্য হবে-ঠিক তেমনি একজন হিন্দু তার হিন্দুয়ানী কমাবে। সেটা করেই তারা তাদের “সামাজিক মূল্য” বাড়াবে। এই সামাজিক মূল্য বাড়াবার তাগিদেই উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থায় আস্তে আস্তে জনগোষ্টি ধর্মহীন হওয়ার দিকে ঝুঁকবে।
আরেকটা উলটো উদাহরণ হাতের সামনেই আছে। জিয়উল হকের আগে পাকিস্থানে ইসলামের এত প্রাবল্য ছিল না । রাষ্ট্র থেকে ইসলাম পন্থীদের অনেক সুবিধা দেওয়া শুরু হল ১৯৭৮ সাল থেকে। সেকুলারিস্টদের খুন করা শুরু তখন থেকেই, যা বেনজির ভুট্টো থেকে পাঞ্জাবের গর্ভনর সালমন তসীরের মৃত্যুতে অব্যাহত। ফলে পাকিস্তানে অমুসলীম গোষ্ঠী আরো ছোট হচ্ছে এবং তার ফল কি হাতে নাতেই দেখা যাচ্ছে।
আবার এটাও আমরা দেখছি ভারতে ইসলামিস্ট এবং হিন্দুইস্ট বা ধর্মধারীরা বহাল হালেই থাকে। এর কারন ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও নেতারা ধর্মগুরু এবং ধার্মিক সম্প্রদায়ের নিকট সম্পূর্ন আত্মসমর্পণ করেছে। বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে বি এন পির আমলে রাষ্ট্রীয় মদতে ইসলামপন্থীদের অনেক সুবিধা দেওয়া হত-ফলে বাংলাদেশের ধর্ম নিরেপেক্ষ জনগোষ্টির জন্যে সেটা বাজে সময় ছিল। আবার এখন আওয়ামী লীগ যেহেতু বস্তুবাদি উন্নতির দিকে বা উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থার দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, খুব স্বাভাবিক ভাবেই ধর্মহী গোষ্টি ভুক্ত হওয়া বাংলাদেশ আস্তে আস্তে “লাভজনক” হচ্ছে।
সুতরাং মোদ্দা কথা হচ্ছে উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থায় বুদ্ধিমান এবং যুক্তিবাদি লোকেদের বাজারদর “ধর্ম প্রাণ” লোকেদের চেয়ে বেশী। সুতরাং রাষ্ট্র এবং রাজনীতি যদি ধর্ম প্রাণ ব্যাক্তিদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করে-বিবর্তনের
স্বাভাবিক নিয়মেই ধর্ম আর আগামী শতাব্দির মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হবে। কারন বাজারদর বাড়াতে সবাই ধর্মহীন গোষ্ঠিতেই সামিল হবে।
অবশ্য ধর্ম এবং আধ্যাত্মিক দর্শন বা আত্মদর্শন এক না । ধর্ম নিশ্চিহ্ন হলেও আধ্যাত্মিক দর্শনের কিছু চিন্তা থেকেই যাবে।
[ পাশের চিত্রটি উইগনারের পেপার থেকে নেওয়া। এখানে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৮০ টি গোষ্টীর মধ্যে ধর্ম থেকে ধর্মহীনতায় বিবর্তন এক মডেল অনুসরণ করে। ]
অসাধারণ বিশ্লেষন দিয়ে লেখেছেন। এই জিনিস গুলো চিন্তা করে আমি ওখানে বলেছিলাম ধর্মের মৃত্যু আসন্ন। উতপাদন ব্যবস্থায় যেটি বেশী সহায়ক সেটি টিকে যাবে।”উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থায় বুদ্ধিমান এবং যুক্তিবাদি লোকেদের বাজারদর “ধর্ম প্রাণ” লোকেদের চেয়ে বেশী।” এটি চিরন্তন সত্য। ফিনল্যান্ডের ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ তেমন দেখা যায় না। ধর্মের ক্লাব গুলো বন্ধ হবে অচিরেই আশা করি আমাদের দেশে ও শুরু হবে। ফেসবুকে শেয়ার করলাম। ধন্যবাদ বিপ্লব দা।
ধর্মের নামে কু-সংস্কারের মৃত্যু হবে,ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থের নয়।পৃথিবী যতদিন থাকবে ধর্মও ততদিন থাকবে।এবং মান্য করবে মানুষ ধর্ম গ্রন্থ ও ধর্ম প্রবর্তককে।
কারণ, ধর্ম গ্রন্থে এমন সব কথা বলা হয়েছে,যাহা জীব কল্যাণ ও বিশ্বশান্তির একমাত্র নিয়ামক।তাই মানুষ যত শিক্ষিত হবে,ততই ধর্মের প্রতি তাদের আস্থা বৃদ্ধি হবে।এটাই চিরন্তন সত্য।
সত্য সহায়।গুরুজী।।
দু’বছর আগের লেখাগুলি, আশঙ্কাগুলি সত্যিই এখোনো বেশ প্রাসঙ্গিক। আচ্ছা হেফাজতে ইসলামের এইসব প্রচারের ফলাফল দীর্ঘ মেয়াদে কেমন হতে পারে বিশ্লেষণ করবেন? আমার কিছু অনুমান আছেঃ
জোটের শরিকদের সাথে আচরণের ব্যাপারে আওয়ামীলীগ আর বি এন পির নী বেশ আলাদা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাবার পর নিজের পথেই চলে, শরিকদের ধর্তব্যের মধ্যে আনে যদি পথ মিলে যায় তবে। বি এন পি শরিকদের মনে রাখে, ২০০১ এ তারা ক্ষমতাসীন হবার পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন কি সেকথাই প্রমাণ করে না? হেফাজত ছাড়া আগামী নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসতে সমস্যা হত কি না বা হেফাজত তাদের ক্ষমতায় আরোহনে এগিয়ে দেবে কিনা তা বুঝতে পারছি না। কিন্তু আওয়ামীলীগের বহু ব্যার্থতা, অনাচার আর সেগুলি ঢাকতে ক্রমান্বত জামাত-শিবিরিকে দোষারোপ, সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় আর জামাত আক্রান্ত অঞ্চলগুলিতে লীগ এমপিদের পরিদর্শন না করা সর্বোপরি বাংলাদেশের গত ক’বারের রীতি অনুযায়ী ধরে নিলাম যে আগামী নির্বাচনে বি এন পি আসছে। সেক্ষেত্রে হেফাজতের দাবি মতে হয়তো নাস্তিক ব্লগারদের ভালো হয়রানির শিকার হতে হবে। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমাদের সামনে খারাপ সময় আসছে।
অপরদিকে হেফাজত আর আমার দেশের বদৌলতে নাস্তিকরা বিপুল প্রচার পেয়ে গেছে সারা দেশে। তবে এ প্রচার ইসলাম বিরোধী শক্তি হিসেবে, হয়তো যেভাবে এভারেজ মুমিনরা আমেরিকা-ইস্রায়েলকে দেখে সেই ভাবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ নাস্তিক কি জানেনা। হয়তো তাদের মানষপটে আসবে শাহবাগ যাকে তারা ভাববে আমেরিকা-ইস্রায়েলের মত করে। কিন্তু হেফাজত বা জামাতের Rampage দেখে বড় হচ্ছে যেসব কিশোর কিশোরী আর যৌক্তিক চিন্তার স্বাধীনতা যাদের কিছুটা বেশি, তাদের মধ্যে এই প্রচার কি নাস্তিকের সংখ্যা বাড়াবে না?
অপর্যাপ্ত তথ্য আর বল্গাহীন অনুমান হয়তো বেশি এসে গেছে। তবে অস্থির সময়ে কি হবে সেটা বোঝার চেষ্টা করাটা মানসিক শান্তির খোঁজার একটা উপায় মনে হচ্ছে আমার।
(FF)
পুরো লেখাটা উইগনারের গবেষণা প্রভাবিত বলে মনে হয়। উদাহরণ গুলোও যেন জোড় করে ফিট করা হয়েছে। ঠিক ঠাক ফিট হলে আমিও খুশী হতাম। বাংলাদেশ এবং ভারতের বেলায় কতটা খাটে? দক্ষিন ভারতীয় অনেককেই এদেশেও কপালে তিলক লাগিয়ে গবেষণাগারে যেতে দেখা যায়, যেমন দেখা যায় তবলীগ ল্যাবাসী মুসলমানদের। ধর্মের সাথে উতপাদনের যোগসূত্র নেই এদের বেলায়। দেশে এরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। এখানেও দিন দিন বাড়ছে।
ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের দুরত্ব মাপতে ফুট-ইঞ্চির পরিবর্তে মাইক্রোমিটার হলে ভাল হয়। বাংলাদেশের মানুষেরা ধর্ম প্রাণ। ধর্মই আসল পরিচয়। সিইওরাও ধর্মপ্রাণ। তারা যুক্তিবাদেও পিছিয়ে নেই, আবার কথায় কথায় আল্লাহর নাম এবং নামাজ রোজাতে একটুও পেছনে নেই।
আমিও তাই চাই।
“ব্যাবস্থা, ব্যাস্ত, ব্যাক্তি” ইত্যাদি বানানগুলো তীরের ফলার মত বিঁধছে। একটু সতর্ক হলে ভাল হয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
একেবারে সহমত। ধর্মের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বি এন পির মাঝে বস্তুত কোন তফাৎ নাই। উভয় দলেই আছে প্রচুর মোল্লা, মাওলানা, পীর, দরবেশ, মু্রীদ—ইত্যাদি সবকিছুই। আওয়ামী লীগ শাসনতন্ত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ ্রাখা এবং ইসলাম রাস্ট্র ধর্ম রাখা। এই ব্যাপারে বি এন পি, জামাত, আওয়ামী লীগ সবার একই রা।
@আবুল কাশেম, (Y)
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনি কি বলতে চাইছেন বাংলাদেশে সেকুলারিস্টদের একই হাল বি এন পি বা আওয়ামী লিগের আমলে? বাকীরা কি বলে?
যাইহোক না কেন-বাংলাদেশের উৎপাদন কাঠামো এখনো আদিম।
ভারতে ব্যাঙ্গালোর বা হায়দ্রাবাদ-যে শহর গুলিতে এই উন্নত উৎপাদন কাঠামোর ছোঁয়া লেগেছে-অর্থাৎ যেখানে প্রতিভা সমাদৃত সেখানে ধর্মের প্রভাব বেশ কম। পাব কালচার বেশী। বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যাবস্থা যখন উন্নত হবে আস্তে আস্তে-তখন এই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
@বিপ্লব পাল,
আপনাকে একটা শোনা কথা শুনাই, আপনার লেখার পক্ষে যাবে। তারপরেও কিন্তু ‘কিন্তু’ থেকে যাবে।
বাংলাদেশে জামাত মালিকানাধীন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির বেশীর ভাগ ফিনান্সিয়াল অফিসার নাকি হিন্দু। সূত্র – শোনা কথা।
“কিন্তু” হল – তাহলেই কি ধর্ম উঠে গেল? না। যে যার ধর্ম নিয়ে ঠিকই মেতে আছেন। শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থের খাতিরে একপাত্রে খাচ্ছেন।
অট – জামাত হিন্দু ফিনান্সিয়াল অফিসার নিচ্ছে একজন হিন্দু চুরি-ধারি কম করবে মনে করে। হিন্দু হলেই কি তিনি সৎ? বাংলাদেশে হিন্দুদেরকে সাবধানে থাকতে হয়। সেই সাবধানতা থেকেই সততা। কারণ সততাই বল। সেই জন্য জামাত অফিসে হিন্দু ফিনান্সিয়াল অফিসার।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
বাংলাদেশে এখনো কিছু হিন্দু আত্নীয় আছে আমাদের। আমি শুনেছি হিন্দু শিক্ষক এবং ডাক্তারদের ডিমান্ড বেশী-কারন তাদের সৎ বলে মনে করে অধিকাংশ মুসলমান!
যাইহোক, আসল ব্যাপার হল, যুক্তিবাদি প্রতিভার স্বীকৃতি কোন কাঠামো দিচ্ছে কি না। সেটা হলেই অনেক কিছুয ঠিক হয়ে আসবে।
@বিপ্লব পাল,
না, না, আল্লায় ধর্মকে এত কম হায়াত দিয়ে দুনিয়ায় পাঠায় নাই। সে থাকবে কিন্তু বয়সের ভারে তার বিষদাঁত ভেঙ্গে যাবে। স্লোলি বাট শিওরলি ইসলাম তার আগের অবস্থানে মোটেই নেই। চার বা ততোধিক বিবাহ, বাল্য বিবাহ, রাতভর জেগে শবে কদর, শবে বরাতে নামাজ, তাবিজ ব্যবসা, খতম ব্যবসা, মাজার ব্যবসা, ঝাড়-ফুক, যাদু-টোনা ব্যবসা আগের মত আর নেই। আজ ব্লগে ব্লগে বিশ্বজুড়ে ইসলামের সমালোচনাকারী, কোরানের সমালোচনাকারী মুসলিম পরিবার থেকে আসা লেখকদের ছড়াছড়ি, বিশ বছর আগে তা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের প্রচুর সংখ্যক যুবক-যুবতি আজ নাস্তিক অবিশ্বাসী, বাজার দর বাড়ার বা আর্থিক সচ্ছলতার কারণে নয়, বরং বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির কারণে। এটাও তো বিবর্তনের ধারা তা’ই না?
@আকাশ মালিক,
নিজেকে তারা কোন দলের সাথে বা কোন ক্লাবের সদস্য হিসাবে দেখাতে চাইবে- তার মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। এবং এখানে যে বাজার দরের কথা বলছি-তা আপেক্ষিক।
উদাহরন দিচ্ছি। একটু খেয়াল করে দেখুন কারা কারা সদালাপের সদস্য হতে চাইছে-আর কারা মুক্তমনার। লক্ষ্য করে দেখুন মুক্তমনাতে শিক্ষিত তরুণ কিশোরের সংখ্যা অনেক বেশী- সেখানে সদালাপের যদি কিছু সদস্য থেকেও থাকে গড় বয়স বেশী। কোন বিজ্ঞান শিক্ষিত তরুণ [ মানে যে বিজ্ঞান বোঝে] সদালাপের সাথে নিজেকে জড়াতে চাইবে বা রায়হানের ঐ লেখাগুলোর সমর্থক হবে? কোন ধর্মান্ধ বিজ্ঞানের ছাত্র হতেই পারে-কিন্ত যার মাথায় সামান্য বুদ্ধি আছে সে জানে সদালাপের সদস্য হওয়া মানে, উচ্চশিক্ষিত বাঙালীদের কাছে তার বিজ্ঞানের জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
এটার “লস ভ্যালু” কত? এটা নির্ভর করছে সে কোন সমাজে মিশছে তার ওপর। এখন আশে পাশের সব ফ্যামিলি বা বন্ধু যদি ধর্মপ্রান দেখা যায়-তাহলে সদালাপের সদস্য হওয়াতে লাভ আছে তাদের। কিন্ত তাত হচ্ছে না-বিজ্ঞানের যুগে যারা অপবিজ্ঞানের চর্চা করে তাদের অনেকটাই বিজ্ঞান অজ্ঞ একটা বয়স্ক বাহিনী-তরুনরা কিন্তু এই ভাইরাস মুক্ত-যদি স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষা ঠিক পেয়ে থাকে। ফলে এই তরুণ প্রজন্মের কাছে সদালাপের সদস্য হওয়াটা লসের, মুক্তমনার সদস্য হওয়া লাভের। তাছারা মুক্তমনা ক্লাবে তাদের শেখার স্কোপ ও ১০০ গুন বেশী-এবং গুনী মহলে গ্রহণযোগ্যতাও বেশী। এটাই মুক্তমনা ক্লাবে যোগ দেওয়ার সোশ্যাল ইউটিলিটি ভ্যালু বা সামাজিক বাজারদর।
তরুণ প্রজন্ম কেন সদালাপ ছেড়ে মুক্তমনাতে ভীড় করছে, সেটা বিশ্লেষন করলেই এর উত্তর পাবেন। আবার যারা সাহিত্যমনা তারা দেখেছি সচল সদস্যপদ বেশী পছন্দ করে কারন সাহিত্যের সমাজে, সচলপদের ব্রান্ড ভ্যালু বেশী।
@বিপ্লব পাল,
সৎ আছেন বলেই ত বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় হিন্দু এখনও প্রাণে বেঁচে আছেন। সৎ না থা্কলে এই সব হিন্দুদের কী অবস্থা হত তা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।
বিদেশে এসে আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশের সংখালঘুরা কী পরিমাণ প্রাণভয়ে ভীত থাকেন বাংলাদেশের ভিতরে। তাই আমরা বাংগালিরা যখন নিজেদের সহনশীল ও মোডারেট মুসলিম বলে দাবী করি তখন আমার হাসি পায়। সত্যি বলতে কী আমার মনে হয় আমাদের মত এত বর্ণ ও ধর্ম বৈষম্মমূলক দেশ দুনিয়াতে খুব কম আছে। এই ব্যাপারে যাদের সাথে আমাদের কিছুটা মিল রয়েছে তারা হচ্ছেন আরব, লেবানীজ, ও পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ সমূহ। এটা আমার চল্লিশ বছর বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা। অনেকে আমার সাথে অমত হবেন–তা্তে আমি আশ্চর্য্য হব না।
@আবুল কাশেম,
বাংলাদেশী হিন্দুরা যে প্রচন্ড ভীতু থাকেন সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমেরিকাতে তাদের সাথে কথা বলে তাই মনে হয়েছে। তারা কোন বাংলাদেশী মুসলমানকেই বিশ্বাস করতে পারে না- এটাই প্রায় সব বাংলাদেশী হিন্দুদের মনোভাব। এটা আশঙ্কাজঙ্কক। বাংলাদেশী মুসলিমদের অত্যচার তাদেকে এমন অনুদার মনের আধার করে রেখেছে, ভাবলেই কষ্ট হয় ধর্ম একটা সমাজে এবং একই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির মধ্যে কি পরিমান ড্যামেজ ঢোকাতে পারে। বস্তুত ব্রাহ্মন্য হিন্দুধর্ম এবং ইসলাম -দুই ধর্মই বাংলার বহিরাগত সংস্কৃতি। বাংলার মনন এবং সংস্কৃতির থেকে এদের অবস্থান বেশ দূরে। অথচ বাঙালী এত ভৃত্যমনোভাবাসম্পন্ন জাতি, সে ইসলাম বা হিন্দুত্ব অস্বীকার করতে ভয় পায়। এই দুই বিদেশী সংস্কৃতির ভৃত্য এবং বশ্যতা স্বীকারেই সে আনন্দ লাভ করে।
বৈজ্ঞানিক সত্য এটাই ইসলাম বা বৈদিক হিন্দু ধর্ম আসলেই আদিবাসী নমাডিক সংস্কৃতির অংশ-বর্তমান কালের জন্য, আমাদের জন্য সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক। অথচ আমাদের বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের একটা অংশ, নিজেদের বাজার ধরে রাখার জন্য ইসলাম আর হিন্দুত্বকে মহান করেছে। ফলে সংখ্যা গরিষ্ঠ বাঙালী, আধুনিক চিন্তার দিকে না গিয়ে, এখনো ধর্মের নর্দমাকর্মদাক্ত জলকে অমৃত মনে করে পান করে চলেছে।
ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের গভীর দর্শন আছে। সেগুলো নিয়ে চর্চা করতে বাধা নেই। কিন্ত এগুলো বাঙালীর ধর্ম হতে পারে না। বাঙালীর ধর্ম বাঙালী সংস্কৃতি-এই ভাবে গড়ে উঠুক ২১ বিংশ শতাব্দি।
@বিপ্লব পাল,
আর সেই গভীর দর্শনযুক্ত ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের চর্চা করেইতো বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের কাছে ইসলাম আর হিন্দুত্ব এতো মহান হয়ে আছে, এর বাজার দর অদুর ভবিষ্যতে পরে যাবে বলেতো বোধ হচ্ছেনা।
@ব্রাইট স্মাইল্,
চর্চাটা বিজ্ঞান সম্মত ভাবে হয় না।
যেমন উপনিষদের প্রশ্ন গুলি সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক-কিন্ত উত্তর গুলো না। ঠিক তেমনি কোরানে কিছু কিছু আয়াতে বেশ কিছু গভীর জীবন বোধের পরিচয় পাওয়া যায় কিন্ত বাকি বেশীরভাগটাই তৎকালীন আরব রাজনীতি এবং সমাজনীতির জন্যে প্রাসঙ্গিক আজকের জন্যে না। এই ধরনের কঠিন নিরেপেক্ষ বিজ্ঞান সম্মত অবস্থান নিতে বাঙালীর মেইন স্ট্রিম মিডিয়াগুলো ভয় পায়। এটা সমস্যা।
@বিপ্লব পাল,
বাংলাদেশে সরকার ইসলাম ধরমোকে রখখা করে, এবং ইসলামকে promote করে। আর অমুশলমানদেরকে discriminate করে। সরকার জদি এগুলও continuous করে তখন অমুশলমানরা confidence পায় না; ভয় পেয়ে যায়। হয়ত ইসলাম কোন pluralistic system-এর ভিতর comfortable নয়।
@আবুল কাশেম,
আমার বাংলা লেখা ভাল নয়। তাই আগেই খমাপ্রাথহি। আসলে বাংলাদেশের সরকার ধরমোনিরপেখো নয়। সরকার ইসলাম ধরমোকে রখখা করে, এবং ইসলামকে promote করে। আর অমুশলমানদেরকে discriminate করে। সরকার জদি এগুলও continuous করে তখন অমুশলমানরা confidence পায় না; ভয় পেয়ে যায়। এমনিতেই মানুশ daily life-এর hassles নিয়ে ব্যাতিবাস্ত। আর রোজ রোজ তো মানুশ ঝগড়া করতে যাবে না।
@নৃপেন্দ্র সরকার, বিশ্লেষনটা ভাল লেগেছে। তবে এটা একটি ট্রেন্ডে রূপ নিচ্ছে কী না , জানি না।
@ফারুক, Thanks.
আমি অতিশয় দুঃখিত—নাম দুটি হবে অচেনা এবং বাদল চৌধুরী।
এই ভুলের জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিলাম বাদল চৌধুরীর কাছে।
আপনি যা লিখেছেন তা অনেকাংশে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। এখানকার এক জরীপে ঐ ধরণেরই ফল দেখা যাচ্ছে— অর্থাৎ ধর্মের প্রতি আধিকাংশ লোকের তেমন আগ্রহ নাই। এর ব্যতিক্রম মনে হয় ইসলাম।
তবে এই জরীপের ফলাফল মনে হয় শুধুমাত্র কিছু পশ্চিমা বিশেষতঃ ইউরোপীয় দেশের বেলায় প্রজোয্য বলেই আমার ধারণা।
ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে আমি অচেনা এবং বেলাল চৌধুরীর সাথে একমত। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আজকাল পশ্চিমাদের ধর্মের প্রতি অনীহার সম্পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে মুসলিমরা। তাই চারিদিকে চার্চ কে মসজিদে রূপান্তরের পালা চলছে। বিশ্বব্যাপি চলছে শরীয়া প্রতিষ্ঠার জিহাদ। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে হালাল খাবার, মসজিদ ও অজুর ব্যাবস্থা।
এই সব দেখে, কেন জানিনা সন্দেহ হচ্ছে ধর্মের–বিশেষতঃ ইসলামের মৃত্যু এত নিকটে নয়। আর তাছাড়া ধর্ম বিবর্তন হবে—যেই ইসলামীরা আজ যৌন অপরাধের জন্য পাথর ছুড়ে হত্যার দাবী করছে—তারাই দেখবেন কিছুদিন পর বলবে–এই ধরণের কোন সাজা ইসলামে নাই। এই রকমের অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
আসলে ধর্ম আমাদের মত অত বোকা নয়—ধর্ম জানে কেমন করে টিকে থাকতে হয়।
তাই ধর্মের মৃত্যু অত সহজে হবে বলে আমার মনে হয় না।
@আবুল কাশেম,
আপনি যথার্থ সত্য কথা বলেছেন। আমারও মত তাই। যারা মনে করে এমনিতেই একদিন ধর্ম দুনিয়া থেকে লোপ পাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। মানুষের জীবন আজ এত চাপের মধ্যে যে তা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ বুঝে বা না বুঝেই অনেক সময় ধর্মের যাতা কলে আশ্রয় গ্রহন করে একটু শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। সুতরাং সবাই বোঝার পরেও যে ধর্ম ত্যাগ করে বা করবে তা ঠিক নয়। সব চাইতে বড় বিপদটা হলো – যারা উদারপন্থি তারা একেবারেই অসংগঠিত। পক্ষান্তরে যারা মৌলবাদী বিশেষ করে ইসলাম পন্থি মৌলবাদী তারা ভীষণ সংগঠিত ও অর্থ পুষ্ট। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বর্বর অথচ সুসংগঠিত জাতি অনেক সময় তাদের চাইতে উন্নত জাতিকে পরাস্ত করেছে। খোদ মুসলমানরা একেবারে গোড়ার দিকে সে কাজটা করেই তো বিস্তার লাভ করেছিল। সুতরাং সুসংগঠিত একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে অসংগঠিত একটা বুদ্ধিমান বাহিনীর যুদ্ধে, বুদ্ধিমান তথা নাস্তিকরা যে ধ্বংস হয়ে যাবে না , তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
@ভবঘুরে,
একেবারে সত্যি কথা।
আসলে মৌলবাদীরা আমাদের চাইতে অনেক চালাক, ক্ষমতাশালী এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতে।
আর আমরা হচ্ছি, তর্ক ও কলহপ্রিয়, অসংঅঠিত, বোকা এবং নিঃস্ব। এমতাবস্থায় অচিরেই ধর্ম, বিশেষতঃ ইসলামের মৃত্যুর কোন সম্ভবনা আমি দেখছি না।
@আবুল কাশেম,
আমার এক প্রতিবেশী ছিল ধার্মিক উড়ে, তারপরে এল এক বোরখা পড়া দাড়িওয়ালা আরব!
মজার ব্যাপার কি জানেন, অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্ম আমেরিকাতে, আর ধার্মিক থাকে না। মেরীল্যান্ড কলেজ পার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০০০ হিন্দু পড়াশোনা করে-ওদের হিন্দু এসোশিয়েশনে মেরে কেটে ১৫০ জন সদস্য আছে-তাও যারা ভারত থেকে এসেছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের খুব কমই আছে। দ্বিতীয় প্রজন্ম আমেরিকান প্রজন্মে মিশে যাবে, যতই তার বাবা মা তাকে কোরান শেখাক- সে আমেরিকান স্কুলে গেলে আমেরিকানই হবে। তবে এখানে অনেক শরিয়া স্কুল বা মুসলিম স্কুল ও আছে-সেখানে পড়ালে অবশ্য তারা মুসলিম হয়েই থাকবে। এই ধরনের মুসলিম বা জিউস স্কুল আমেরিকাতে থাকতে দেওয়া উচিত না। তবে কজন মুসলমান শিশু মুসলিম স্কুলে যায় আমেরিকাতে?
দ্বিতীয় প্রজন্মের যেসব মুসলিমদের সাথে আমি মিশেছি-তাদের ধর্মপ্রান বলে মনে হয় নি-আরেকজন আমেরিকান বলেই মনে হয়েছে।
@বিপ্লব পাল,
আমি প্রায়শঃই উল্টোটাই দেখছি এদেশে, বিশেষতঃ ৯/১১ এর পরে। আমার ছোট শহরে কোন বোরখা বা পর্দা করা মহিলা দেখিনি আগে। একটি ছোট মেয়ে এখনও পর্দা করেনা বিধায় অনেক পর্দা করা ছোট মেয়ের বাবারা মেয়েটির সাথে মিশতে দেয় না।
যিনি শির উচু করে সংশয়বাদী বলে দাবী করতেন, বাসায় পানাহারের ব্যবস্থা রাখতেন এরকম একজনকে মনে হয় তজবী হাতে দেখব অচিরেই। প্রশংসা করি, তার স্ত্রী একদিন আমার স্ত্রীকে honestly বলেছেন – তোমার বাসায় কেন এখন কারও বাসাই যেতে ইচ্ছে করে না। কারও বাসায় গেলে আমি এখন অসস্তিতে ভূগি, অনুশোচনা হয়। মনে হয়, সময়টা নষ্ট হয়ে গেল, একটা ধর্মের বই পড়তে পারতাম।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ধর্ম একটা নেশা। যা মদের মতন অনেক বাস্তবতা থেকে মানুষকে “মুক্তি” দিয়ে স্বস্তি দেয়। সেট অস্বীকার করার উপায় কি? কিন্ত ধনতান্ত্রিক সমাজের সুবিধা হচ্ছে বাস্তবতাকে অস্বীকার করলে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে যেতে হয়। আমেরিকাতে চাকরি, স্ত্রী, বাড়ি, সম্পত্তি সবই অনিত্য-নিত্য শুধু অভিজ্ঞতা আর প্রতিভা।
এখানে দুই শ্রেনীর মুসলিম দেখি ধর্মপ্রান-এক ডাক্তার আর দুই কুলি, ড্রাইভার ইত্যালি ব্লুকালার জবের লোকেরা। কেন? কারন এই দুই শ্রেনীর লোকদের জীবনে অনিশ্চিয়তা নে ই এবং তাদের বুদ্ধি দিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকতে হয় না। বুদ্ধি দিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকতে হলে এত ইসলাম ইসলাম করত না-বুদ্ধি খাটাত বাঁচার জন্যে-ভবিষ্যতের জন্যে।
@বিপ্লব পাল,
আপনার অভিজ্ঞতাকে আমি খাটো করে দেখছিনা।
কিন্তু আমি আস্ট্রেলিয়াতে যা দেখেছি এবং দেখছি তা কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত। আমার কিছু বন্ধুর সাথে আমার আর কোন যোগাযোগই নাই–তার কারণ তারা একেবারে গোড়াঁ মুসলমান হয়ে গিয়েছেন। আপনি হয়ত আশ্চর্য্য হবেন যে তাদের ছেলেরা ১৯-২০ বছরেই দাড়ি রাখা শুরু করেছে আর তাঁদের কন্যারা হিজাব পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে বাঙ্গালি মহিলা শড়িই পরেন না–তাঁরা আরব মেয়েদের মত মত আলঅখাল্লা পরতে পছন্দ করেন। কোথায় হালাল খাবার পাওয়া যাবে তাই তাদের প্রধাণ চিন্তা। অস্ট্রালিয়ার সরকারও মিন মিন করে তাদের অনেক ্দাবীই মেনে নিচ্ছে। এই সব দাবী আসছে কিন্তু এই তরুন মুসলিমদের কাছ থেকেই–তাদের পিতা মাতার কাছ থেকে নয়।
আমি অস্ট্রেলিয়ায় যে বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করি সেখানে বেশ কিছু মুসলিম ছাত্র অনেক আগে থেকেই দেখা যেত। গত ৩-৪ বছরে আমি তাদের মাঝে বিরাট পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে গেলাম। ঐ সব খুবই তরুণ ছেলেরা দেখি দাড়ি রাখা শুরু করেছে—আর শুধু তাইই নয় ক্লাশ চলাকালীন তারা আমার অনুমতি চায় যাতে তারা নামাজ পড়তে পারে। বলাবাহুল্য এই অল্প কিছু তরুন মুসলিমদের সরব গলার জন্য কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে একটা ছোট ক্লাশ ঘর ছেড়ে দিতে যাতে তারা নির্বিঘ্নে নামাজ পড়তে পারে। অন্য কোন ধর্মের—এমনকি অনেক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান কারো বেলায় এই ছাড় দেয়া হয়নি।
এই সব দেখে কি বুঝা যায়? ইসলামের মৃত্যু নিকটে না ইসলাম নতুন জীবন পেয়েছে?
আরও একটা ব্যাপার। লক্ষু করুন, আজকাল পশ্চিমা দেশে, ামেরিকা সহ, নতুন জিহাদী ও আত্মঘাতী ইসলামিরা কিন্তু প্রায় সবাই নতুন প্রজন্মের–মানে তাদের বেশি্রভাগ বাপ দাদারা কিন্তু ইসলামের ধার ধারতনা। কিন্তু এই সব বাপ দাদার ছেলেমেয়েরাই হচ্ছে ইসলামি জঙ্গিবাদে দীক্ষিত।
@আবুল কাশেম,
প্রবাসে আসলে লোকেদের মধ্যে ধর্মের ঘনঘটা বৃদ্ধি পায়। এটা আমি হিন্দুদের মধ্যেও দেখেছি। তবে হিন্দু ধর্ম লিব্যারাল বলে, এর প্রভাব দ্বিতীয় পজন্মে আসে না। হিউস্টনের দুর্গাবাড়িতে দেখবেন ১২ মাসে ১২০ টা পূজো হচ্ছে যার অনেক কিছুই ভারত থেকেই উঠে গেছে।
প্রবাসে আইডেন্টিটির ওপর একটা “থ্রেট” থাকে। সেই অনিশ্চয়তা থেকে লোকে আরো বেশী ধর্মপ্রবন হয়ে ওঠে।
@ অচেনা, বিপ্লব পাল ,
Innovation আশে rational/logical thinker-দের কাছ থেকে। মুক্ত বুধধির চরচা থেকে। এজন্ন গত কয়েক শত বছরে western দেশ থেকে নতুন প্রজুক্তি এশেছে।
আশা করতে দোষ কী? এমন ভবিষ্যতবাণী করার মাঝে কোন রিস্ক নেই। আমরা তো আর ততদিন বেচে থাকব না , সত্যতা যাচাই করার জন্য!! :lotpot:
@ফারুক,
এটা তুমি ভালো বলেছো।
@Truthseeker,
এরকম আক্রমণাত্মক মন্তব্য মডারেশন পার হয় কেমনে?
ট্রুথসীকার, কারও মন্তব্য পড়ে বিরক্ত বা ক্ষোভ অনুভব করলে সেটা শালীনভাবে প্রকাশ করলেই ভাল হয়। বিরক্তিটা বিদ্বেষে গিয়ে ঠেকলে নীরব থাকাই ভাল, মুক্তমনার মঙ্গল কামনা করলে দয়া করে এরকম অসভ্য মন্তব্য সাবমিট করবেন না।
@পৃথিবী, ধন্যবাদ। আপনার মতো শালীন ও যুক্তিবাদী ব্লগার আছে বলেই , বারে বারে মুক্তমনায় ফিরে ফিরে আসি।
@Truthseeker,ধন্যবাদ মহামান্য। আপনার ধনাত্মক মন্তব্য পেয়ে আমি গর্বিত। :guru:
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। গবেষণাপত্রটি দেখার পর থেকে ভাবছিলাম যে মুক্তমনায় একটি লেখা আসলে ভালো হতো। ধর্মের বিবর্তন চলবে, তবে কতদিন লাগবে সেটার মৃত্যুঘন্টা বাজতে সেটা ভবিষ্যতবানী করার মত অবস্থায় এখনো আমরা আসিনি। অথবা বিবর্তিত হয়ে নুতন একটি অবস্থায় এসেও টিকে থাকতে পারে। যা হোক লেখাটির জন্যে আবারো ধন্যবাদ।
এই তত্ত্বের অনেক ফাঁকফোকর আছে, তাই ধর্ম যে সহসা উধাও হয়ে যাবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি , আমি একটা উন্নত দেশে Times Higher Education রাঙ্কিং মতে উপরের দিকে আছে এরকম একটা ইউনিতে পড়াশুনা করছি। প্রথম দিকে যখন এখানে আছি তখন ইউনির ক্যান্টিনে হালাল খাবার পাওয়া যেতো না তাই ধার্মিক মুলসমান ছাত্ররা ইউনির বাইরে খানাপিনা করত কিন্তু গত কয়েক বছরে তা বৈপ্লবিক ভাবেই পরিবর্তন হয়ে গেছে এখন ইউনির সবগুলা ক্যান্টিনেই হালাল খাবার পাওয়া যাচ্ছে আরেকটা জিনিস কয়েক বছরের মধ্যে চেঞ্জ হয়েছে তা হচ্ছে তা ইংলিশ কমোডের সাথে সাথে বাংলা কমোড ( হাঁটু গেড়ে শরিয়া সম্মত ভাবে হাগার বন্দবস্ত !) ছাগলা দাঁড়ি তালেবানি বাঙালি ভাইকে ( উনি আবার এস্ত্রফিজিকে পিএইচডি করছে ! ) বিষয়টা নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই হাসতে হাসতে বলল শরিয়া সম্মত হাগার জন্য ইউনি প্রশাসন এই সিস্তেম করে দিয়েছে দেখা যাছে পুঁজিবাদী বাজার শক্তিকে ( demand supply) থিয়রিকে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সুনিপুন ভাবে ব্যবহার করে চলছে ! কারণ বেশি করে মুসলমান ছাত্র পাওয়ার জন্য ইউনি এ ধরনের নয়া নয়া হালাল কাজ করছে , কয়েকদিন আগে পত্রিকায় পড়লাম মুসলিম মেয়েদের ছেলেদের আকৃষ্ট করবার জন্য এখানে বড় একটা প্রসাধনি ব্র্যান্ড হালাল প্রডাক্ট ছাড়বে বাংলাদেশে HSBC ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংক খোলা এবং ভারতের মুম্বাইয়ে হালাল শেয়ার বিজনেস চালূর ঘোষনা কি এটাই প্রমাণ করে না ধার্মিকেরা নয় পুঁজিবাদ করপোটই নিজেদেরকে চেঞ্জ করে ফেলবে মুনাফার কামানোর স্বার্থে
আর দেশে মেয়েরা ধর্ম পালন করে মা খালাদের খুশি করতে এটাও মেনে নিলে এখানে আমি একটা বাঙালি ফ্যামিলিকে চিনি যেখানে ফ্যামিলির উভয়েই ডাক্তার উচ্চ ইনকামের গ্রুপে পড়েন নিউক্লিয়ার পরিবার ( দুই ছেলে) কিন্তু দুজনের একজনেও একটা নামাজ কাজা দেন না, ছেলেদের আরবিক ইস্ক্যুল দিইয়েছেন চোখের সামনে দেখছি এরকম বহু পরিবার এই পশ্চিমা বিশ্বে বসেও । আমেরিকার কথা বলতে পারব না তবে রেনেসার মূল প্রান কেন্দ্র ইউরোপেও তো এর ওরজিনাল পুপলেসন বয়সের ভারে ধীরে ধীরে কমে যাছে , মুসলমানরা সেখানে ( জার্মানি ও ফ্রান্স এ ২য় বড় জনগোষ্ঠী) এর সাথে তুরস্কও যদি ইউতে যোগ দ্দেয় তবে হালাল খানা, টয়লেট দিয়ে দেশগুলা ভড়ে যাবে সেটা আমি নিশ্চিত।
আমেরিকাতেও তো লিবারেল সেকুলার ওবামা সমর্থকেরা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারাছে ( ভারতে কংগ্রেস এবং বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ অবস্থায়ও বেশি সুবিধার নয়) ভারতের কংগ্রস বিজেপি এবং ভিএইচপি আরএসএস অগ্রযাত্রা যেমন ঠেকাতে বিফল হয়েছে এই বিদেশেও এদের কার্যক্রম চোখের পড়ার মতো তেমনি আওয়ামীলীগও নানা ইস্যুতে ধর্মান্ধদের ছাড় দিচ্ছে ক্রমাগত । কাজেই ৬০ ৭০ দশকের দিকে যেমন বাম নেতারা পুঁজিবাদের ইতিহাসের ক্রমাগত গতিতে পতন হবে এরকম হাঁক দিয়ে জাবর কাটত সেরকম ভাবে মুক্তমনারাও যদি ফালাফালি করে তাহলে এই বামদের মতোই তাদেরও হাসির পাত্রে পরিনত হতে হবে।
@অচেনা,
দীর্ঘ মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। যেকোন তত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রমানই সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার ছারপত্র। হালাল এবং ভারতীয় সংস্কৃতির আমেরিকাতে জয়জয়াকার মানেই ধর্ম এগোচ্ছে না। ওটা ্প্রবাসীদের সাংস্কৃতিক সমস্যা। যা দ্বিতীয় জেনারেশনে থাকে না।
উইগনারের গবেষণার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু…
এর তো কোন ব্যাখ্যা পেলাম না লেখায়।
@রৌরব,
ইন্দিরা গান্ধী এবং নেহেরুর শিক্ষাদীক্ষা ছিল বেশ উঁচুমানের এবং তারা ধর্মের বাঁদরামোকে রাজনীতিতে ঢুকতে দেন নি। তাদের উত্তরাধিকারী রাজীবের আমল থেকেই রাজনীতিতে ধর্ম এবং ধর্মকারীদের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। বিজেপির উত্থান এবং তার পালটা ইসলামিক দলগুলির ভারতে উত্থান এই আমলেই। ভারত রাষ্ট্রটি গত দুই দশকে ধর্মের শক্তিগুলির কাছে সম্পূর্ন আত্মসমর্পন করেছে। যা ইন্দিরা বা নেহেরুরা আমলে সম্ভব ছিল না।
@বিপ্লব পাল,
সহমত, কেননা তাহলে তারা এতো দূর পর্যন্ত এগুতে পারতেন না। ইন্দিরা গান্ধীর পড়াশোনা তার বাবার তদারকিতে হয় বলেই এমন যোগ্য উত্তরসূরি রেখে যেতে পেরেছিলেন তাঁর বাবা।
@আফরোজা আলম,
ইন্দিরার রাজনৈতিক গুরু কৃষ্ণ মেনন, যিনি ইংল্যান্ডে ইন্ডিয়ান লিগের প্রতিষ্ঠাতা। কৃষ্ণ মেনন জ্যোতি বসুরও রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। ইনি ছিলেন নির্ভেজাল দেশপ্রেমি এবং সমাজতন্ত্রী ও সংস্কারক। ফলে ইন্দিরা ছিলেন বাস্তববাদি সমাজতন্ত্রী এবং ধর্ম নিরেপেক্ষ চরিত্রের ।
@বিপ্লব পাল,
খুব ভালো লাগলো জেনে। আসলে আমাদের বাড়িতে ছোট বেলায় একটা বই দেখেছিলাম” glimpses of world history”.। বড় ভাই, বড় বোনেরা পড়েছে। আমি বড় হবার পর দেখি ওটা উধাও। সেই বইটায় নাকি অনেক চিঠি ছিল যা নেহেরু জেলখানায় বসে মেয়ে ইন্দিরাকে লিখেছিলেন। এবং আরো নানান তথ্য। ভাবছি বইটা খুঁজে পেতে কিনব,তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে।
তবে যে লিখেছেন ধর্মের মৃত্যু ঘন্টা
আহা যদি এটা সত্য হত। বড়ো আমোদ পেতাম। ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য।
আপনি যত তাড়াতাড়ি ধর্মের মৃত্যু ঘন্টা শুনতে পাচ্ছেন আমার মনে হয় ধর্মের নিশ্চিহ্নতা এত দ্রুত হচ্ছে না। অন্তত আগামী শতাব্দীতে তো অবশ্যই না। উইগনারের গবেষণাটি থেকে যে সম্ভাবনার কথা অনুমান করা যায় সেটি আমাদের এই ভারত ও বাংলাদেশে খুব বেশি একটা কার্যকরীও না। আমাদের এই বাংলাদেশের প্রায় ৮০% মানুষ (শিক্ষিত বা অশিক্ষিত) এখনো মনে করে বিজ্ঞান তথা এই প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদনশীলতাকে ধর্মগ্রন্থের দান বা সৃষ্টিকর্তার অশেষ নেয়ামত। এটাকে মানুষের মস্তিস্ক থেকে রাতারাতি সরানো যাবেনা। পাশাপাশি এই চেতনাকে শান দেয়ার কাজ তো চলছেই। একজন বিজ্ঞানের ছাত্র বা একজন বিজ্ঞানের অধ্যাপক ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞানের অস্তিত্বের পক্ষে তর্ক করেন। জানিনা এই শ্রেণির লোকদের আপনি সমাজের কোন পর্যায়ে রেখে বিচার করবেন। ধর্মের প্রতি এসব মানুষের অনুরাগটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। তাদের যত উন্নতি যত প্রগতি সব এই অনুরাগটিকে বহাল তবিয়তে রেখেই ঘটছে। অবচেতনভাবে বা কৌশলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এড়িয়ে যাচ্ছে ধর্মহীনতার ম্যাসেজটাকে। আমার দেখা এমন অনেক পরিবারের কথা আমি আপনাকে বলতে পারি, যারা সমাজের (হোক ক্ষুদ্র পরিসরে) শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে বানিজ্যিক পরিসরেও অবাধ প্রতিনিধিত্ব করছে, কিন্তু তারা ধর্মহীনতার এই ম্যাসেজটাকে সম্পূর্ণরুপে পাপ বলে মনে করছে। এমনকি এর বিরুদ্ধে অনেকটা প্রতিরোধমূলক অবস্থান নিয়ে আছে। এরা সংখ্যায় যত কমই হোক কিন্তু এদেরকে ডিফেন্ড করছে তার চেয়ে দশগুণ মানুষ। তাদের কখনো ক্ষমতা নেই এই গন্ডির বাইরে যাওয়া। দায়ী আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। পরিবর্তনটা খুবই দ্রুত হতো যদি না ব্যক্তি বা পারিবারিক পর্যায়ে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মাপকাঠি থেকে মূল্যবোধের সমৃদ্ধিতে ডাইভার্ট করা যেত।
@বাদল চৌধুরী,
ধর্মীয় ভাববাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থানটা আরেক ধরনের ধর্ম বিরোধি ভাববাদ। শুধু চেতনা দিয়ে সমাজ বদলায় না। ইতিহাস দেখাচ্ছে একমাত্র উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনেই সমাজ বদলায়। বাংলাদেশ ভারত এগুলো আধা-ধনতান্ত্রিক আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশ। নইলে ২০১১ সালে ভারত বা বাংলাদেশের শ্রমিকদের ওপর গুলি চলে কি করে? এই সব দেশগুলিতে যুক্তিবাদি মেধাবী লোদের দরকার নেই-এখানে অসৎ মেধাবী লোকেদের বাজারদর বেশী। কারন উৎপাদন কাঠামো এখনো অনেকটাই আদিম। ভারতের আই টি শিল্প এই ব্যাপারে কিছু পরিবর্তন এনেছে। আরো আসবে। উৎপাদন কাঠামোতে যুক্তিবাদিদের বাজারদর না বাড়লে, যুক্তিবাদি আন্দোলন বেশী কিছু করতে পারবে না। তবে যুক্তিবাদি আন্দোলনের অবশ্যই দরকার আছে। কারন বীজ না থাকলে গাছ আসবে কোথা থেকে?
ভাল লেগেছে তবে কিছু জায়গায় মনে হল ঠিক নেই। আমি নিজে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। আপনি নিশ্চয়ই রহরা রামকৃষ্ণ মিশনের নাম জানেন। সেখানে আমি একজন অনাথ শিশু হিসেবে যে ভাবে মানুষ হয়ে উঠেছি সেটা কোন সরকারি অনাথ আশ্রমে থাকলে সম্ভব হত না। তাই আপনার ” ধর্মীয় ক্লাব ” শব্দটি আমার পছন্দ হয়নি। অনেক কথাই আপনি ঠিক বলেছেন। আমি দেখেছি বাংলাদেশ থেকে অনেক হিন্দু মা বাবারা তাদের ছেলেকে ভারতের রামকৃষ্ণ মিশনে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এবং আমি তাদের সাথে কথা বলে এটাও জেনেছি যে তারা চায় তাদের ছেলেরা ভারতের নাগরিক হয়ে যাক।
@শেসাদ্রি শেখর বাগচী,
আমি নিজে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। এবং সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে চিরকৃতজ্ঞও বটে। যদিও অনাথ নই-খুব ব্যাকোয়ার্ড জায়গায় বাড়ি ছিল বলে নরেন্দ্রপুরে না গেলে ভারতের এলিট শিক্ষা ব্যাবস্থা আমার নাগালের বাইরেই ছিল। কিন্ত তাতে কি সত্য আটকাবে?
সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এগুলো ক্লাব মেম্বারশিপের সমতুল্য। লায়ন্স ক্লাব ইত্যাদিরা ত সমাজ সেবাও করে। ক্লাব কথাটা খারাপ কেন? আগা খান মুসলিমরাও রামকৃষ্ণ মিশনের ন্যায় সেবা ধর্মে বিশ্বাসী।
@বিপ্লব পাল, এটা ঠিক যে কিছু মানুষ আছে যারা সবসময় ধর্মকে নিজেদের সামাজিক status এর একটা মানদণ্ড হিসাবে চিন্তা করে তাই বলে সেটা ক্লাব হতে পারেনা। আজকে আপনি পশ্চিমবঙ্গে যে কোন সরকারি অনাথ আশ্রমে গিয়ে দেখে আসুন সেখানে কিভাবে সেবা হচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ন্যাসীরা যে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে তার জন্যই আপনি এলিট শিক্ষা ব্যাবস্থা দেখেছেন। সরকার যদি সরকারি আশ্রমগুলোর নাম বদলে রামকৃষ্ণ মিশন রাখে তাহলে কি জনগন সেখানে নিজের নাম নথিভুক্ত করবে? বাড়তি সামাজিক স্ট্যাটাস পাবার জন্য।
@শেসাদ্রি শেখর বাগচী,
আমিও রামক্রিশনো মিসনে পরেছি। ক্লাব মানে খারাপ কিছু নয়।
ক্লাব কোন খারাপ জিনিস নয় সেটা ত ঠিক, সেটা আমিও বুঝি। বিবেকানন্দ তাহলে রামকৃষ্ণ ক্লাব এই নামটা ব্যাবহার করতে পারতেন। তা না করে উনি কিন্তু নাম রেখেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন। মিশন শব্দটির ব্যাবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আপনি বিবেকানন্দের কার্যাবলী পরলে জানতে পারবেন উনি এই মিশন শব্দটি ব্যাবহার করার আগে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছিলেন।
কর্পরেট সামাজিক শক্তি না। তার লিগ্যাল স্ট্রাকচার ও আলাদা। যদিও সফল উদ্ভাবকরা বলছেন কোম্পানী সফল করতে গেলে কোম্পানীর একদম নীচু তলার লোকেদের সাজেশনও নিতে হবে।
জাতি সংঘে বাত বিতন্ডা হয় না তা নয়। কিন্ত বৈদিশেকি সাহায্যের বিনিময়ে বা ছোট দেশের এলিটদের কিনে নিয়ে ভোট কেনা বেচা চলে। তার সাথে এই প্রবন্ধের কি সম্পর্ক বুঝলাম না।
গ্লোবালাইজেশন পুরোটাই তার ফল!
যদ্দিন ভারতীয়রা আমেরিকাকে কাজ করত না , তদ্দিন আমেরিকা সমরাস্ত্রএ উন্নত ছিল না? বস্তুবাদি উৎপাদনের ফল গ্লোবালাইজেশন যে আমেরিকান কোম্পানীগুলি ভারত এবং চিনকে উৎপাদন ব্যাবস্থার মধ্যে এনেছে।
সৃষ্টি রহস্যের ওপর ধর্ম বা আধ্যাত্মিক দর্শন টিকবে না। কারন তা বিজ্ঞান উন্মোচোন করেছে। অন্যদিকে জীবনের উদ্দেশ্য আসলেই ত নেই-তাই মিছে উদ্দেশ্যের পেছনে লোকে কেন দৌঁড়াবে বুঝলাম না। বরং যুক্তি এবং বিজ্ঞানের পথে প্রত্যেকে নিজের উদ্দেশ্য খুঁজে নেবে।
ধর্মীয় দর্শনের বিকাশ মানেই ধর্মীয় দলের বিকাশ হবে তা না। এখানেই সামাজিক বিবর্তন বুঝতে হবে। উদাহরন স্বরূপ আধ্যাত্মিক গুরু জিডু কৃষ্ণমূর্তির কথা বলি। উনার অনেক ভক্ত আছে-কিন্ত সেটা কোন ধর্মীয় দলের সৃষ্টি করে নি-আর উনার দর্শনে কোন ঈশ্বর নাই-পুরোটাই নাস্তিক দর্শন।
আসলে আগে ধর্মীয় দর্শনের বিকাশ হতে-দল পাকাতে হত। কারন তা না হলে সেই মিম ভাইরালি ছড়াত না। সব থেকে বড় কথা এর মধ্যে যেসব মিমগুলি রাজ্য শাসনে কাজে লাগে, সেগুলিকে রাজহস্তে টেকানো হত।
যেমন মুসলিম শাসকরা হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা তোলার চেষ্টা করেন নি-বরং সেটাকে কাজে লাগিয়েছেন নিজেদের রাজ্য শাসনে। প্রতিটা দেশেই ইসলাম টিকে আছে রাষ্ট্রর দানাপানি খেয়ে-কারন তা দিয়ে রাজ্য শাসন সোজা। আফগানিস্থানে ৪ টে বড় রাজনৈতিক দল। প্রত্যেকের মটো- আরো ভাল ইসলাম আনবে তারা আফগানিস্থানে!
আচ্ছা অধ্যাপক উইগনার কি তাঁর পেপারে ধর্মকে সংজ্ঞায়িত করেছেন? ধর্ম নিয়ে কিছু বলার আগে ধর্ম বলতে কি বোঝানো হচ্ছে, সেটা অবশ্যই আগে হাইলাইট করা দরকার। বাংলাদেশের কথাই ধরি। বাংলাদেশ পাকিস্তানের মত উগ্র না, কিন্তু বাংলাদেশকে আমার কাছে ঠিক ধর্মীয়ভাবে উদারও মনে হয় না। বাংলা ব্লগোস্ফিয়া্রের মনস্তত্ত্ব ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। নিম্মবিত্তের কথা বাদ দিলাম, উচ্চ-মধ্যবিত্ত বৃত্তে্র অনেককেই দেখেছি যাদের সাথে তবলিগী-জামায়াতীদের আপাতঃ কোন সাদৃশ্য না থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিকই ভেতরের ধর্মীয় দানবটা বের হয়ে আসে। জৈববিবর্তনতত্ত্ব, সমকামীতা, গর্ভপাত বিতর্ক(এটার পেছনে ধর্মীয় মোটিভেশনের চেয়ে আমার কাছে বিজ্ঞান অসচেতনাকেই মুখ্য মনে হয়), রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা তেমনই কিছু বিষয়।
আমার সমবয়সীরা আচার-আচরণে এরা পশ্চিমাদের মত ভোগবাদী। গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড, আড্ডাবাজী, খেলা, মুভি, গান ইত্যাদির মধ্যেই তাদের জীবন সীমাবদ্ধ। জীবন নিয়ে চিন্তার করার সময় যাদের নেই, তাদেরকেও আমি “সব ইহুদিরা শয়তান”, “সবাই মুসলমানদের অত্যাচার করে”, “ইসলামে প্রচুর বৈজ্ঞানিক মিরাকল আছে, জাকির নায়েকের লেকচার দেখ” জাতীয় কথা বলতে দেখেছি। এদেশের অনেক মেয়েই একজন আদর্শ মুসলিমের মত পর্দা করে না। আমার নিজের মাও প্রায়ই মাথায় কাপড় দিতে ভুলে যায়(বাবা নিরুৎসাহিত করার পরও অবশ্য আম্মু পর্দা করা ছাড়েনি), আমাদেরই প্রতিবেশী এক হুজুরের(পেশায় ব্যবসায়ী) বউকে তো দেখে মনে হয় বোরকা পড়া যেন ফ্যাশনেরই একটা অংশ। এই শ্রেণীর মহিলারা আচার-আচরণ ও দৈনন্দিন জীবনে মোল্লাদের মত না হলেও ধর্মান্ধতার চাষের জন্য তারা উর্বর ভূমি। বাংলাদেশে জামায়াত কিন্তু এই শ্রেণীর মুসলমানদেরই টার্গেট করে। আমার তো মনে হয় বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াতের যে পরিমাণ লোকবল আছে, পাকিস্তান আমলে তার সিকিভাগও তাদের ছিল না।
উৎপাদন ব্যবস্থা গণহারে মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণকে পরিবর্তন করতে পারে, মুক্তচিন্তার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরী করতে পারে, কিন্তু গণহারে সবাইকে যুক্তিবাদী বানিয়ে দিতে পারে না। অন্যদিকে ধর্ম হল এমিবার মত, এর কোন নির্দিষ্ট রুপ নেই। ৩০০ বছর আগে কেউ ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করত না, কারণ তখন সবাই ধর্মকে বাই ডিফল্ট বিজ্ঞানের সুপিরিয়র ধরে নিয়েছিল। সময় বদলেছে, এখন কাটমোল্লারা “বিজ্ঞান আজকে একটা কথা বললে কালকে আরেকটা কথা বলে” মার্কা উত্তরাধুনিক মন্তব্য করলেও কোরানের “বৈজ্ঞানিক মিরাকল”কে বাতিল করতে তারা নারায, অবচেতন মনে তারাও বোঝে যে এই যুগে বিজ্ঞানকে উপহাস করে টিকে থাকা যাবে না। ভবিষ্যতে মানুষের ধর্মাচরণ কিরকম হবে তা বলা যায় না, আমি নিশ্চিত তখনও আমরা ধর্মবাদীদের সার্কাস দেখব, ভবিষ্যতে মুসলমান-খ্রীষ্টানরা ধর্মগ্রন্থে সমকামী বিবাহের বৈধতা দেওয়ার কথা দাবি করলেও অবাক হব না। ধর্ম যেহেতু অনন্য সব উপায়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলে(তার সংকীর্ণতাকে সংরক্ষিত রেখেই), তাই ধর্মের মৃত্যু না ঘটাতাই স্বাভাবিক। তাই কেউ যখন দাবি করে যে ধর্ম অচিরেই হাওয়া হয়ে যাবে, তখন আমার সেটাকে উইশফুল থিংকিং ছাড়া কিছু মনে হয় না। ধর্মকে হাওয়া করতে চাইলে সব শ্রেণীর পাঠ্যসূচীতে সংশয়বাদী দর্শন বিষয়ক ম্যাটেরিয়াল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড অব লাইফ উন্নত হলেই সবাই নাস্তিক হয়ে যাবে এটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না।
@পৃথিবী,
ধর্ম বিবর্তনের প্রোডাক্ট। তাকে পরিবর্তিত হয়েই টিকে থাকতে হবে। ইসলামের সাথে এত সংঘাত কেন?কারন সে পরিবর্তিত হতে চায় না যেখানে সব ধর্মই পরিবর্তন মেনে নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। হিন্দু ধর্মের গত ২০০ বছরের ইতিহাসে এই পরিবর্তন সব থেকে বেশী দেখবে।
@পৃথিবী, একমত।
@লীনা রহমান,
@পৃথিবী
তোমার কথায় যুক্তি আছে,কিন্তু এদেশের মানুষের মাঝে ধর্ম নিয়ে গোড়ামি যেমন আছে তেমনি মুক্ত চিন্তার মানুষ ও আছে। ইসলাম ধর্ম একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনচেতা ধর্ম। এদেশের মোল্লারা শুধু কিছু নিয়ম নিয়ে ফতোয়া দিচ্ছে,আসলে তার ভিত্তি ইসলামে নেই। একথা সত্য যে জামায়াত এর লোকবল বেশি,তার কারণ এদেশে মুক্তচিন্তার বিকাশ তেমন ঘটছে না। ধর্ম আর ফতোয়ার ভয়ে মুক্তচিন্তার মানুষগুলো ও আত্মপ্রকাশ করতে চায়না।আসলে আমরা সবাই কম বেশি এই ভয়ে ভীত।কারণ ধর্ম সম্পর্কে আমরা তেমন গ্যয়ান আমরা রাখি না। আমাদের উচিত ভবিষ্যত প্রজন্ম কে সবধরনের গ্যয়ান এর দ্বার খুলে দেয়া।
বিপ্লব পাল,
খুবই আকর্ষনীয় লেখা সন্দেহ নেই, অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম এই যে সাম্প্রতিক কালে ধর্মীয় ঝনঝনানীর ক্রমবর্ধমান রূপ, এর পেছনের রহস্যটা আসলে কি? আজকের এই প্রবন্ধ থেকেই এর সুন্দর উত্তর গুলো পেয়ে গেলাম। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই গেলো, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই কর্পোরেট গুলোতে কি অধিকতর গনতান্ত্রিক আচড়নের আলামত আছে? আর তাই যদি থাকবে তো জাতিসংঘের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কেনো আজো পক্ষপাতদোষে দুষ্ট বলে মনে হয়? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কি এই বস্তুবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা জনিত ধ্যান-ধারনার প্রতিফলন রয়েছে? হয়তো রয়েছে এই ভাবে যে, প্রাচ্য-প্রতীচ্যের মেধাকে আংশিক ভাবে হলেও কাজে লাগিয়ে যে প্রকৌশলগত উন্নয়ন, সেই উন্নযনেই পাশ্চাত্য আজ সমরাশ্রের বলে বলীয়ান। এই হলো মূল ব্যবসা। সেই সমরাস্রই প্রয়োগ হচ্ছে প্রাচ্যের ক্লাব গুলোর মধ্যেকার বিরোধ মেটাতে।
আপনি বলছেন,
আমার মনে হচ্ছে আত্মদর্শন হচ্ছে সেই, যা মানুষ তার ভুত-ভবিষ্যত এবং নিরাপত্তা, উত্থান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আধ্যাত্মিক দর্শন তো কোন না কোন ধর্মীয় মোড়কে আচ্ছাদিত। যেখানে সৃষ্টিরহস্য এবং জীবনের উদ্যেশ্যই মূলতঃ বিধৃত হয়। সেই ক্ষেত্রে কি ধর্ম বিলুপ্তির কোন সম্ভাবনা থাকে? কারন আধ্যাত্মিক দর্শনের তো একজন রূপকার থাকবে, আর সেই চেতনার বিকাশ হবে নতুন ধর্মীয় দর্শন। কাজেই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতেই অগ্রসর অপেক্ষাকৃত কৌশলী ধনতান্ত্রিক পাশ্চাত্যই প্রতীচ্যের গনতান্ত্রিক অভিযাত্রার আন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। যা আজ আমরা দেখছি অহর্নিশি। উইগনারের যে গবেষনা পত্রটির উল্লেখ এখানে রয়েছে তা মূলতঃ স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলো বা তার আশেপাশের দেশগুলোর পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পত্রস্থ। মূল উপজীব্য সঠিক ধরা হলেও ঠিক ঐ সামাজিক বাস্তবতায় আসতে এবং ঊৎপাদন-বন্টনের ভারসাম্যে পৌঁছুতে যে চালিকা শক্তির দরকার, যেমন প্রকৌশলগত উন্নয়ন এবং প্রাচ্যে তার সর্বব্যপী বিস্তার, তার যোগান কি করে সম্ভব হবে?
কাজেই স্বপন মাঝির মন্তব্যের সুর ধরে সন্দেহের অবকাশ কিছুটা তো থেকেই যায়! তবে সার্বিক বিশ্ব-সামাজিক গতি প্রকৃতি কিন্তু প্রবন্ধের মূল সুরটিকে বিলক্ষ্মন ইঙ্গিত করছে!
মুনাফা কেন্দ্রিক নতুন এই ঈশ্বরের আগমনে পায়ের তলার মাটি কাঁপছে। অলৌকিক ঈশ্বরগুলো যতটুকু ক্ষতি করেছে, লৌকিক ঈশ্বরগুলো যে তা থেকে আরো এক পা এগিয়ে থাকবে না, এ নিশ্চয়তা কে দেবে?
@স্বপন মাঝি,
আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্ত সমাজ ত বিবর্তিত হবেই-এবং যেক্ষেত্রে এই বিবর্তনের ভিত্তি যদি দুই যুক্তিবাদি গোষ্ঠির দ্বন্দ থেকে উদ্ভুত হ য় এবং সেই দ্বন্দ যদি গনতন্ত্রের মাধ্যমে নির্নিত করে নেওয়া যায় -তাহলে তা ভালোই হবে।
যেমন লাগামহীন বস্তুবাদি উন্নতির বিপক্ষে উন্নত বিশ্বে গ্রীন লবি উঠে আসছে যারাও যুক্তিবাদি ক্লাবেরই মেম্বার। কিন্ত অব্জেক্টিভ আলাদা। ধনতান্ত্রিক লুঠপাঠের অন্যমেরুতে তাদের অবস্থান। কিন্ত তারাও যুক্তিবাদি। এবং অনেকেই সেই গ্রীন ক্লাবের মেম্বার হতে চাইবে।
সমস্যা সেখানেই যেখানে এই বস্তুবাদি দ্বন্দগুলি নিরসনের জন্যে কোন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র থাকলে এসব কোন সমস্যাই না।
বিপ্লব পাল,
অসম্ভব সুন্দর বিশ্লেষনী লেখা। আরো একবার পড়ে নেই, তারপরে আলোচনায় আসছি। ধন্যবাদ আপনাকে।