[মুক্তমনায় ভর্তি হয়ে গেলাম। অভিজিতকে ধন্যবাদ একটি এ্যাকাউন্ট খুলে আমাকে লিখতে নিমন্ত্রণ করার জন্য। বনবাস থেকে ফিরতে দেরী হওয়া দুঃখিত, তবে ঠকেননি নিশ্চিত জানবেন। শুরু করছি, যেখানে শেষ করেছিলাম প্রায় এক বছর আগেঃ বিপ্লব পালের লেখার সূত্র ধরে।]

সবাই কি সব-কিছু পড়ে সমান-ভাবে বুঝতে পারেন? প্রশ্নটি সাধারণ হলেও উত্তরটি জটিল। কগনিটিভ সাইকোলজীর বিষয়। সাইকোলজীর যতো ‘লেভেল অফ এ্যানালাইসিস’ আছে, তার মধ্যে কগনিটিভ এ্যানালাইসিসটাই জটিলতম বলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী মনে করেন।

কগনিটিভ সাইকোজীতে বহু থিওরী বা মডেল আছে যা কম্পিউটার সাইন্সকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছ। তাই, মানুষের কগনিশনকে কম্পিউটিংয়ের বেসিক ইনপুট-প্রসেসিং-আউটপুট এবং স্টৌরিং ও রিট্রাইভ্যাল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। কগনিটিভ এ্যানালাইসিসের বেসিক এ্যাসাম্পশনে মানুষকে ‘এ্যাক্টিভ প্রোসেসর অফ ইনফর্মেশন’ মনে করা হয়।
তবে এটিও মনে করা হয় যে, ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও মৌটিভেশনের মতো ফ্যাক্টরগুলো তার ইনফর্মেশন প্রোসেসিংকে প্রভাবিত করে। সুতরাং, দুটো কম্পিউটারে একই ডেইটা ইনপুট ও একই প্রোসেসিং-কমান্ড দিলে আমরা নিশ্চিত হুবহু একই আউটপুট পাবো, কিন্তু দুটো মানুষের ক্ষেত্রে তা হয় না।

বিজ্ঞানে মতবাদের অস্তিত নেই, বিপ্লব পালের এ-দাবীর বিপরীতে আমার সপ্রমান মন্তব্যের উত্তরে তিনি অপ্রাসঙ্গিক-ভাবে আমাকে ‘মার্ক্সবাদী সাহিত্যের গভীরে ঢোকা’র আহবান করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই যে-কোনো আহবানে আহুত ব্যক্তি প্রথমেই আহবায়ককে বুঝার চেষ্টা করেন। মার্ক্সবাদী সাহিত্যের গভীরে ঢোকার আহবায়ক বিপ্পব পালের নিজের বুঝাটা বুঝার জন্য আমি কয়েক দিন সময় নিয়ে তার কিছু লেখা পড়ার চেষ্টা করলাম। দেখলাম মার্ক্সের লেখা পড়ে বুঝার ক্ষেত্রে বিপ্লব পালের প্রোসেসিংয়ে গোলমাল আছে। কীভাবে বুঝলাম? তার আউটপুট দেখে। নিচে ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হলামঃ

বিপ্লব পাল মার্ক্সবাদের আসল ও নকলের পৃথকীকরণের উদ্দেশ্যে লিখলেন জন বিল্পব বনাম প্রযুক্তি বিপ্লব বিষয়ে। তার মূল কথা হলো, মার্ক্স বলেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে-সাথে সামাজিক উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, তাই শ্রেণী-সংগ্রাম সেখানে অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয়। তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেলনে, ‘সাধের শ্রেনী বিপ্লবের কি হইবে?’

মার্ক্সকে উদ্বৃত করার চেষ্টা করলেন পাল। জানালেন, মার্ক্স ‘outlines of the critics of political economy’ প্রবন্ধে এ-প্রসঙ্গে লিখেছেন। তিনি সুনির্দিষ্ট ইংরেজী বাক্য উপস্থাপন করে তার বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা হাজির করলেন এবং তার উত্থাপিত বিষয়টি বুঝার জন্য সে-বাক্যটি বুঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবী করলেন। অখণ্ড মনোনিবেশে লক্ষ্য করলাম বিপ্লব পালের পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির অগভীরতা ও যত্নহীনতা।

প্রথমেই হালকা দ্রব্য দিয়ে শুরু করি। বিপ্লব পালের নির্দেশিত প্রবন্ধের শিরোনামটি ভুল। যাকে ‘শুরুতে গলদ’ বলা হয়। প্রকৃত শিরোনামটি হলোঃ Outlines of a critique of political economy. দৃশ্যতঃ পালের দৃষ্টিতে ও মননে ধরা পড়েনি critique ও critics এর মধ্যে পার্থক্য। তিনি critique- কে critics বুঝেছেন।
প্রসঙ্গতঃ জানাই, critic হচ্ছে সমালোচক, আর critique হচ্ছে সমালোচনা। একটি ব্যক্তি, অন্যটি বিষয়। বিষয়ের আউটলাইন্স হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তির আউটলাইন্স হয় না, যদি না তার পৌর্ট্রেইট আঁকা হয়।

দ্বিতীয়তঃ প্রবন্ধটি মার্ক্সের লেখা নয়। অবাক? হ্যাঁ, মার্ক্সের নয়। মার্ক্সের চেয়েও লম্বা দাড়ি-ওয়ালা এক লোকের লেখা এটি। নাম এঙ্গেলস। মার্ক্সেরই বন্ধু।
পলিটিক্যাল ইকোনমী নিয়ে তিনি মার্ক্সের অনেক আগে কাজ শুরু করেছিলেন এঙ্গেলস। ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত হয় তার এ-রচনা। মার্ক্স পড়ে তাতে ‘কন্ট্রিবিউট’ করেছেন পরে, যা দেড় দশক পরে ‘A contribution to the critique of political economy’ নামে প্রকাশিত হয়।

লক্ষ্য করুন, এঙ্গেলস ‘এ্যা ক্রিটিক’ লিখেছেন। ইন্ডিফিনিট আর্টিকল দিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। মার্ক্স পরে ‘দ্য ক্রিটিক’ হিসাবে ডেফিনিট আর্টিকলে রেফার করে তাতে কন্ট্রিবিউট করেছেন এবং পরে এই কন্ট্রিবিউশন তার বিখ্যাত ‘Des Capital’এ অন্তর্ভুক্ত হয়।

এঙ্গেলেসের কিছু-কিছু লেখা আছে, যার স্মরণে মার্ক্সবাদী সাহিত্য জানা ব্যক্তির ভুল করার কথা নয়। ‘দ্য কন্ডিশন অফ দ্য ওয়ার্কিং ক্লাস ইন ইংল্যান্ড ইন ১৮৪৪’, ‘দ্য অরিজিন অফ দ্য ফ্যামিলী, প্রাইভেট প্রোপার্টী এ্যান্ড দ্য স্টেইট’, ‘এন্টি ডুরিং’, ‘সোশ্যলিজমঃ ইউটোপীয়ান এ্যান্ড সাইন্টিফিক’ এবং পথ-প্রদর্শক লেখা ‘আউটলাইন্স অফ এ্যা ক্রিটিক অফ পলিটিক্যাল ইকোনমী’, ইত্যাদি লেখায় এঙ্গেলস বিখ্যাত। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে জানা-শোনা লোকদের মধ্যে এমন কোনো উজবুক (উজবিকিস্তানী অর্থে নয়) আছেন কি, যিনি বলবেন দেবদাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন?

উপরের দু’টো বিষয় এতো আহা-মরি কিছু ভুল নয়। উল্লেখ করলাম, বিল্পব পালের দেখার ও বুঝার ক্ষেত্রে প্রিসিশনের অভাব বুঝাতে (আমি আকাশ মালিকের মতো তার বানান ত্রুটি নিয়ে বলিনি; জানি, বাঙালী শিক্ষিতেরা ইংরেজী বানান ভুল করলে নিজেকে ছোট মনে করলেও বাংলা বানান-ত্রুটিতে তারা অনেক সময় গর্ব-বোধ করেন)।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তৃতীয় বিষয়টি, যা পাল নিজেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলেছেন। পালের কথার কপি-এ্যান্ড-পেইস্ট করে দেখাইঃ

‘মার্ক্স এর বক্তব্য ছিল বিজ্ঞানের বলেই মানুষ প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন ব্যাবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে। এবং ধণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় “পুঁজির” উদ্ভাবনের মাধ্যমেই মানুষ বিজ্ঞানের দ্বারা উন্নততর উৎপাদন করছে-এই জন্যেই বিজ্ঞানকে একটি স্বয়ংপূর্ন শাখা হিসাবে দেখতে হবে, যেখানে উৎপাদন ব্যাবস্থাটিই বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটি শাখা হিসাবে পরিণত হচ্ছে (The productive process becomes sphere of application of science)। শেষের কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ …’

গুরুত্ব বুঝাতে পাল তার বঙ্গানুবাদ আন্ডারলাইন করেছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথাটা কি পাল নিজে ঠিকভাবে বুঝেছেন? দুঃখের সাথে জানাই, পাল ইংরেজী চাবি-শব্দগুলো এবং তা দিয়ে তৈরী গুরুত্বপূর্ণ বাক্যটি বুঝতে পারেননি অথবা বুঝতে চাননি। কীভাবে বলি এ-কথা? বলি বিনীত ভঙ্গিতে নিম্নরূপেঃ

বিপ্লব পাল ‘Productive process’ কথাটা বুঝেছেন ‘উৎপাদন ব্যবস্থা’ হিসেবে। কিন্তু এটি ঠিক নয়। ‘Productive process’ এর অর্থ হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। যদিও দুয়ের মধ্যে দ্বান্দ্বিক মিথষ্ক্রিয়া বর্তমান, কিন্তু প্রক্রিয়া মূলতঃ ব্যবস্থার ফল।

প্রসসেসিং হচ্ছে সিস্টেমের অংশ। এদুটো এক নয়। ব্যবস্থা অগ্রগামী আর প্রক্রিয়া অনুগামী। সিমান্টিক পার্থক্য ছাড়াও স্মূক্ষ্ম দার্শনিক পার্থক্য আছে এর মধ্যে। বুঝতে ভুল করলে সিদ্ধান্তেও ভুল হতে বাধ্য।

এঙ্গেলসের লেখা ধারালো। তিনি দেখিয়েছেন, শোষণ-মূলক ব্যবস্থা কীভাবে নিম্ন মানসিক প্রক্রিয়ার জন্ম দেয়। এঙ্গেলসের লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মার্ক্স ‘এ্যা কন্ট্রিবিউশন টু দ্য ক্রিটিক অফ পলিটিক্যাল ইকোনোমী’তে আরও আলোকপাত করেছেন।

অর্থ বুঝার ক্ষেত্রে পালের দ্বিতীয় ভ্রান্তি ‘application of science’ ক্লজটির অনুবাদে প্রকটিত। ‘application of science’কে তিনি বুঝেছেন ‘বিজ্ঞান প্রযুক্তি’ হিসেবে। এটি মারাত্মক ভুল। ‘application of science’ কথাটার যথার্থ হচ্ছে ‘বিজ্ঞানের প্রয়োগ’ – অর্থাৎ, বিজ্ঞানের ব্যবহার।

শব্দার্থে পালের তৃতীয় ভুল sphere-কে ‘শাখা’ মনে করা। যেখানে sphere-এর অর্থ ‘গোলক’ বা ‘ক্ষেত্র’, সেখানে একে ‘শাখা’ মনে করার মধ্যে শুধু শব্দগত নয়, কাঠামোগত ভুলও প্রতিভাত। ‘শাখা’র মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে একটি হাইয়ারার্কী। মূল না হলে শাখা হয় না। কোনো কিছুকে শাখা মনে করা হলে তার জন্য একটি অগ্রগামী মূল ভাবতে হবে। কিন্তু sphere তা নয়। sphere-এর মধ্যে একটি আপেক্ষিক স্বাধীনতা আছে। সুতরাং ‘স্ফিয়ার’ বুঝাতে বিপ্লব পালের ‘শাখা’য় আরোহণ শাখামৃগের চালাকী না হলেও অন্ততঃ মনুষ্য-ভ্রান্তি বলে মানতেই হবে।

উল্লিখিত তিন ভুলের উপর দাঁড়িয়ে বিপ্লব পাল চতুর্থ ও চূড়ান্ত ভুলটি করে শাখা থেকে সম্পূর্ণভাবে পতিত হলেন। ইংরেজী উদ্ধৃতি ‘The productive process becomes sphere of application of science’-এর অর্থ যেখানে, ‘উৎপাদন প্রক্রিয়া বিজ্ঞানের প্রয়োগ-ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে’, সেখানে তিনি বুঝলেন কিংবা বুঝালেন, ‘উৎপাদন ব্যবস্থাটাই বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটি শাখা হিসাবে পরিণত হয়েছে’।

আমি শিক্ষক হিসেবে এ-জঘন্য অনুবাদের জন্য তাকে ১০ এর মধ্যে দুটো শূন্য (০০) দেবো। এটি একটি সম্পূর্ণ লেক্সিক্যাল, গ্র্যামাটিক্যাল, সিমান্টিক ও সর্বোপরি কনসেপচুয়্যাল ভ্রান্তি। দৃশ্যতঃ এর জন্য তার দার্শনিক দারিদ্র্য অথবা ইংরেজিতে কমান্ডের অভাবকেই দায়ী করবো। অথবা দুয়ের সঙ্গমে তার বোধের গর্ভে ভ্রান্তির জন্ম হয়েছে।
বোধের দারিদ্র্য পালকে বিদ্রোহী করে তুলেছে শ্রেণী সংগ্রামের বিরুদ্ধে। তিনি যেহেতু বুঝেছেন যে, মার্ক্স উৎপাদন ব্যবস্থাকে ‘বিজ্ঞান প্রযুক্তি’র শাখা হিসেবে মনে করেন, তাই ‘বিজ্ঞান প্রযুক্তি’র উল্লম্ফন বা বিপ্লব হলে উৎপাদন ব্যবস্থারও স্বয়ংক্রিয় উল্লম্ফন বা বিপ্লব হবে। এটি একটি ম্যাকানিক্যাল ভাবনা – ডায়লেক্টিক্যাল নয়। কিন্তু তার চেয়ে বড়ো কথা, মার্ক্স-তো তা বলেননি।

বিপ্লব পালেরা প্রোডাক্টিভ সিস্টেম, প্রোডাক্টিভ ফৌর্স ও প্রোডাক্টিভ প্রোসেসের কথা বলেন, কিন্তু মার্ক্স যেটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি বেমালুম চেপে যান। ‘A contribution to the critique of political economy’র প্রিফেইসে মার্ক্স সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন যে, একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন ব্যবস্থায় মানুষ ইচ্ছা নিরপেক্ষভাবে একটি উৎপাদন সম্পর্কে প্রবেশ করে। সে উৎপাদন-ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত উৎপাদন-সম্পর্ক যখন উৎপাদিকা-শক্তির বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে, তখন বিকাশের স্বার্থে এই সম্পর্কের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন উৎপাদন-ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে।

মার্ক্সবাদের ডায়ালেক্টিক্স বুঝলে, এটি বুঝার ক্ষেত্রে সমস্যা হবার কথা নয় যে, এ-বিকাশ সরল থেকে জটিলে, অনুন্নত থেকে উন্নততর স্তরে উল্লম্ফিত হয়। এবং যে-পয়েন্টে এ-উল্লম্ফনটি সংঘটিত হয়, সেটিই পয়েন্ট অফ রেভ্যুলিউশন। এটি একটি নির্মম শ্রেণী সংগ্রামঃ ক্ষমতার জোরপূর্বক দখল – সরল শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নয়।

বিপ্লব পালেরা শ্রেণী সংগ্রামের ধারণার বিরুদ্ধে। প্রচলিত ব্যবস্থায় যারা সুবিধাভোগী শ্রেণীতে অবস্থা করছেন, তারা শ্রেণী সংগ্রামের বিরুদ্ধাচরণ করবেন, তাতে আশ্চার্য্যান্বিত হবার কিছু নেই। আমি নিজেই সুবিধাভোগী শ্রেণী থেকে এসেছি এবং দিব্যি আরামেই রয়েছি। শ্রেণী সংগ্রাম তো আমার ভালো লাগার কথা নয়।

প্রসঙ্গ এখানে ভালো লাগা-না-লাগার নয়। প্রশ্ন হচ্ছে সঠিকতা ও ভ্রান্তি নিয়ে। ভূ-ভারতে প্রচুর ‘বাম’ (ইদানিং এটি একটি চতুর শব্দে পরিণত হয়েছে) আছেন, যারা ‘বিপ্লবে বিশ্বাস’ করেন কিন্তু শ্রেণী সংগ্রামে নয়। আরেক দল আছেন, যারা শ্রেণী সংগ্রাম বলতে নিজেদের সংজ্ঞা মতো যে-কোনো বিষয়ে প্রতিপক্ষকে খতম করা বুঝেন।

আমি বিপ্লব পালের শ্রেণী অবস্থান নিয়ে ভাবিত নই। আমি তাকে বেনিফিট অফ ডাউট দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তির অভিযোগ থেকে রেহাই দিচ্ছি। মার্ক্সবাদীরা হয়তো দিবেন না। তারা বিপ্লব পালকে উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তক হিসেবে চিহ্নিত করে বলবেন, মার্ক্সের বক্তব্যকে তিনি বিকৃত করেছেন। বলা বাহুল্য, বিকৃতির মধ্যে কোনো পাণ্ডিত্য নেই। বিকৃতির মধ্যে আছে শঠতা, কিংবা মূঢ়তা, কিংবা উভয়ই।

বিপ্লব পালের নিমন্ত্রণ ছিলোঃ ‘… আসুন মার্ক্সবাদী সাহিত্যের গভীরে ঢোকা যাক’। পালকে বলি মেট্যাফরিক্যালীঃ নিমন্ত্রণের আগে খাদ্যের প্রস্তুতি নিতে হয়, আর যে-খাদ্য আপনার নিজেরই বদ-হজম হয়েছে, তা আপনি আমাকে খাওয়াবেন কোন্‌ ভরসায়? সাহসের কথা না হয় বাদই দিলাম।

তবে, না-বুঝে যাচ্ছেতাই বলার নির্বোধ সাহসের জন্য আপনাকে তারিফ না করেও পারছি না। এটিও একটি গুণ বটে। এতে অধিকতর কিছু নির্বোধ ভক্ত জোটে, যারা ‘দাদা’, ‘দাদা’, বলে করতাল বাজাতে বাজাতে ছোটে। আপনাকে গোপনে বলি, আমিও আপনার অন্য রকমের ভক্ত। আমোদের আক্রার বাজারে আপনার লেখা কিন্তু আমার দারুন লাগে। চালিয়ে যান! আমি আছি আপনার পিছনে।

মাসুদ রানা
১০ জুন, ২০১০
পুলাউ পিনাং, মালেসিয়া