মানব সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অসংখ্য উত্থান-পতনের ইতিহাস আছে। যার প্রথমটা জুড়ে নারী পুরুষের অবদান ছিল সমান। অনুমান করা হয় আগুনের আবিষ্কার বা গার্হস্থ্যায়ন করেছে নারী। যদি তা নাও হয় নারীরাই আগুন ও তাপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খাদ্য সংরক্ষণ করতে শিখেছে। নারীদের হাতেই ১৫ থেকে ২০ হাজার বছর আগে কৃষিকাজের সূচনা হয়। সমাজকে মৃৎপাত্র তৈরির রাসায়নিক প্রক্রিয়া, সুতা কাটার পদার্থবিদ্যা, তাঁতের প্রযুক্তি এবং শন ও তুলার উদ্ভিদবিদ্যার জ্ঞানদানের কৃতিত্ব শুধুমাত্র নারীদের। নারীরাই প্রথম চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী। নারীদের বাসস্থান শুধু রন্ধনশালা ও সেলাইকক্ষ দিয়ে সাজানো ছিল না। নিজ বাসগৃহে তারা তৈরি করেছে বিজ্ঞান গবেষণাগার।
বুঝতে শেখার পর থেকেই কারও কারও মনে এই প্রশ্নটি উদ্ভুত হওয়া স্বাভাবিক: মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীদের সংখ্যা এত নগন্য কেন? যেভাবেই হোক এক্ষেত্রে আরো অনেক নারীকে খুঁজে পাওয়া যাবে। অথচ ইতিহাসবেত্তারাই মানব সভ্যতার ইতিহাস লিখতে গিয়ে বার-বার তা এড়িয়ে গিয়েছেন। ইতিহাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র ও চিকিৎসাবিজ্ঞান সর্বত্রই নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাসবিদদের অনিয়ম এবং অবমূল্যায়নের কারণে সভ্যতার ইতিহাসে নারীদের সংখ্যা ক্রমশ কমে এসেছে। তারপরও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জাল ভেদ করে অনেকে আমাদের সামনে চলে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: হাইপেশিয়া, লরা বেসি, সোফিয়া কোভালেভস্ক্যায়া, লাইস মিটনার। যদিও বেশিরভাগ ইতিহাসবিদই যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন তাঁদের অবদানগুলোকে আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখতে। এই কয়েকজন নারী ছাড়াও – ক্যারলিন র্হাসেল, মেরী এ্যানি ল্যাভিয়েসিয়ের এবং ডি.এন.এ গবেষক রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন– এর কথা উল্লেখ করা যায়; যারা তাঁদের পুরুষ সহযোগীদের সাথে একনিষ্ঠচিত্তে কাজ করেছেন। অথচ ঐ সহযোগীরাই এক সময় তাদের অবদানকে ক্রমশ অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে। তাছাড়া আরো কিছু নারীর কথা উল্লেখ করা যায়, যাদের অবদান স¤পর্কে নামমাত্র তালিকা করা হয়েছে এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি কেবলমাত্র নিজস্ব কৌতুহল ও আনুসঙ্গিক নির্দেশনার মাধ্যমে। আর নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে অবশিষ্টদের জীবনযাত্রা ও কাজের অস্তিত্ব স¤পর্কে আমরা হয়তো ভবিষ্যতেও কিছু জানতে পারবো কিনা সন্দেহ! সর্বোপরি এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নারীরা সভ্যতার উষালগ্ন হতে পুরুষশাসিত সমাজের সীমাবদ্ধতায় পথ হারিয়েছে বারবার। তারপরও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে যে সকল নারী বিজ্ঞানের ইতিহাসে আলোকশিখা জ্বালিয়েছেন তাদের ১৩৫ জনের নাম আমরা বলতে পারব। হারিয়ে যাওয়া পথের এই সীমাবদ্ধতায় মাঝেও যে সকল নারীরা বিজ্ঞান জগতে এক বিরল দৃষ্টান্ত রেখেছেন তাদের কয়েকজনের কথাই সংক্ষেপে এই নিবন্ধে তুলে ধরা হল।
১.হাইপেশিয়া: (৩৭০ সাল – ৪১৭ সাল)
বিজ্ঞানে নারীদের মধ্যে যে নামটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিয়ে ওঠে এসেছে, যার মৃত্যুর সাথে জড়িয়ে আছে আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের ধ্বংস, যার মৃত্যুর সাথে মধ্যযুগীয় অন্ধকার যুগের সূচনা হয়েছিল, যার নাম মনে আসলে পুরো খ্রিষ্টাব্দের আগের ও পরের ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো জানতে ইচছা করে তিনি হলেন হাইপেশিয়া। গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও দার্শনিক হাইপেশিয়াকে বলা যায় প্রাচীন বিজ্ঞান ও গণিতকে বোঝার একটি দরজা। এই নারী আলেক্সান্দ্রিয়া গ্রন্থগারের শেষ প্রাণ প্রদীপ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি নাটকও লিখতেন। তিনি ৪০০ অব্দের দিকে নব্য প্লেটোনিক ধারার স্কুলের প্রধান হয়েছিলেন। তিনি খ্রিস্টান ধর্মসহ তখনকার ধর্মগুলো সম্পর্কে অবগত ছিলেন। কিন্তু তা তাকে আকর্ষণ করতে পারে নি। তিনি বলেছিলেন পরিণত বুদ্ধির জাতির জন্য থাকা উচিত যুক্তিসহ জ্ঞানভিত্তিক ধর্ম, যা ছিল গ্রিকদের। আমি আলেক্সান্দ্রিয়া বসে যথাশক্তি কাজ করে যাচ্ছি। ৪১৭ খৃস্টাব্দের কোনো এক গোধূলীবেলায় খৃস্টান ধর্মান্ধরা এই মহীয়সী নারীর শরীর টুকরো-টুকরো করে ছিঁড়ে আগুনে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার দেহ যখন খ্রিস্টান ধর্মান্ধরা ছিন্নভিন্ন করছিল তখন একবারের জন্য চেচিয়ে, কেঁদে মিনতি করে জীবন ভিক্ষা চেয়ে নিজের মর্যদা ক্ষুন্ন করেন নি। যাঁর মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের হাতে লেখা পাঁচ লক্ষ বইয়ের ধ্বংস এবং সেইসাথে সূচনা হয় মধ্যযুগীয় অন্ধকারের।
২. সোফি জার্মেইন: (১৭৭৬ সালের ১ এপ্রিল – ১৮৩১ সালের ২৭ জুন)
অষ্টাদশ শতাব্দীর এক অপ্রতিরোধ্য নারী ছিলেন গণিতবিদ সোফি জার্মেইন-যাঁর জন্ম ফরাসী বিপ্লবের সময়, ফ্রান্সের প্যারিসে। তাঁর বাবার নাম ছিল এমব্রোইজ-ফ্রানকোইস এবং মায়ের নাম ছিল মেরি জার্মেইন (গধৎরব এবৎসধরহ) একজন বিপ্লবী সৈনিকের মতো, তাঁর জীবনও কেটেছে অনেক অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমে।’ মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই গণিতের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখা দেয়। রোমান সৈনিকের হাতে মহাগণিতজ্ঞ আর্কিমিডিসের মৃত্যুর কাহিনী পড়েই এ আগ্রহের সূচনা হয়। এ ঘটনা যেন সোফির কৌতুহলকে স্ফুলিঙ্গায়িত করে তোলে। তিনি শুধু বিস্ময়ে প্রশ্ন করেন, গাণিতিক সমস্যায় আত্মমগ্ন থাকা একজন গণিতজ্ঞ কোনো সৈন্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে মৃত্যুবরণ করতে হয়! গণিতে তাঁর অবদানের মূল্যায়ন পেতে সোফি’কে জীবনের অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এমনকি আজও এটা মনে করা হয় যে, তিনি যে পরিমাণ অবদান রেখেছেন সংখ্যাতত্ত্ব এবং গাণিতিক পদার্থবিদ্যায় তার কোনো কৃতিত্বই তাকে দেয়া হয় নি; শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার কারণে।
বাবা-মা মনে করতেন যে, একজন নারী হিসেবে সোফির গণিতের আগ্রহ অনুপযুক্ত। যদিও মা-বাবার নজর এড়িয়ে গভীর রাতে তিনি পড়াশুনা শুরু করতেন। কিন্তু একদিন মা-বাবা দেখলেন বিছানায় রাতের পোশাকে নিজেকে প্রচণ্ড শীতের মাঝেও তাপ ও আলো থেকে বঞ্চিত করে গভীর রাতে একটানা পড়াশুনা করে যাচ্ছেন। শিক্ষকের সহায়তা ছাড়াই ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের মতো গণিত শিখেছিলেন। সামাজিক কারণে ছেলেদের ছদ্মনামে বিখ্যাত গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী: জে.এল.ল্যাগরেঞ্জ, কার্ল ফ্রেডারিক গাউস, লিজেণ্ডার-জোসেফ ফুরিয়ারের যোগাযোগ গড়ে তোলেন এবং নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। সোফিকে মূলতঃ স্মরণ করা হয় তাঁর সংখ্যাতত্ত্বের জন্য, কিন্তু স্থিতিস্থাপকতা সূত্রের ক্ষেত্রেও গণিতে তাঁর অবদান যথেষ্ট গুরুত্ববহ। ১৮৩১ সালে গণিতিবিদ গস এর সুপারিশের ফলে গোয়েটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাকে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৩. প্রথম ফসিল অনুসন্ধানী মেরি অ্যানিং (১৭৯৯ সালের ২১ মে – ১৮৪৭ সালের৯ মার্চ): মেরি অ্যানিংকে প্রথম ফসিল অনুসন্ধানকারীও বলা যায়। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু ইংল্যান্ডের লাইম রিজিসে । তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন বড় মাপের একজন জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য। লন্ডনের জিওলজিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক Ichthyosaurus এর একটি অনুসন্ধানের জন্য অ্যানিংকে একটি বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি উড়ন্ত সরিসৃপ (Plesiosaurus) জাতীয় প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছিলেন। অ্যানিং বাবার কাছ থেকে ফসিল উত্তোলনের পদ্ধতি করতে হবে তা অনুসন্ধান শিক্ষা নিয়েছিলেন। ১১ বছর বয়সে একদিন তিনি সমতল পাথরের ঢাকা একটি স্থানকে সন্দেহ পোষণ করায় তাকে হ্যামার দিয়ে খনন শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহ চেষ্টার পর ৪ ফুট লম্বা একটি মুখমণ্ডল বের হয়। তার ভাই এটাকে সামুদ্রিক ড্রাগন নামে অভিহিত করেন।
১৮৩২ সালে বিখ্যাত প্রতœজীবাশ্মবিদ জিডিওন মানটেল, যাঁকে সবচেয়ে প্রাচীন ডাইনোসরের ফসিল সনাক্তকরণের জন্য কৃতিত্ব দেয়া হয়। তিনি মেরির নামের শুরুতে যুক্ত করেছিলেন সিংহী ভূ-তাত্বিক মেরি অ্যানিং। খ্যাতনামা এক জার্মান পরিক্ষণবিদ লডউইগ লাইচহার্ডট মেরিকে ডাকতেন প্রত্নজীবাশ্মবিদ রাজকন্যা বলে। মেরি অ্যানিং আসলে জীবদ্দশায় যা করেছিলেন তাই তাঁকে এত বিখ্যাত করেছে, করেছে প্রাচুর্যময়। অ্যানিং শৈশবে সমুদ্রের সৈকতে আপন মনে ঘুরে বেড়াতেন এবং নিষ্ঠা আর আন্তরিকতায় বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর নতুন জীবাশ্ম নমুণা খুঁজতেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব কম থাকালেও প্রত্নজীবাশ্মবিদ্যায় বিশাল অবদান রেখে গিয়েছেন। তাঁর নিজস্ব প্রকাশিত একটি প্রত্নজীবাশ্মবিদ্যা ভিত্তিক প্রকাশনাও ছিল।
৪. মাদাম মেরী কুরী (১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর – ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই)
তিনিই প্রথম নারী যিনি দুবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আজীবন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করে এক অজানা রোগে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর আইনস্টাইন বলেছিলেন: সুপ্রসিদ্ধ মনীষীদের মাঝে একমাত্র মেরি কুরীর জীবনই যশের প্রভাবমুক্ত ছিল। নিজের জীবনটা যিনি অপরিচিতের মতো সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পেরিয়ে গিয়েছেন, সেই চিরকেলে নারীর কথা লিখতে বসে আজ আমি নিজের মধ্যে সাহিত্য প্রতিভার অভাব বোধ করছি। মেরী স্কলোডসকা কুরীর জন্ম পোল্যান্ডের ওয়ার্স এ রাশিয়ায় অত্যাচারী জার শাসনের নিষ্পেষণের সময়। পরিবারে তাঁকে মানিয়া নামে ডাকতো। তাঁর বাবা ব্লাদিস্লাভ শক্লোদোভস্কি ওয়ার্সে একটি নামকরা কলেজের পদার্থের অধ্যাপক ছিলেন এবং মা ছিলেন একটি নামকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর বাবা প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় মেরীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ে আসর বসাতেন।
একসময় তাঁর পরিবার মারাÍক অর্থ সংকটে পড়ায় তাঁর বড় বোনের পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য তিনি ১৮৬৬ সালের ১ জানুয়ারি মাসিক পাঁচশ রুবল-এর বিনিময়ে এক অভিজাত রুশ আইনজীবির বাড়িতে গভর্নেসের চাকরি নেন। তাদের দুবোনের মধ্যে শর্ত ছিল একজনের পড়াশুনা শেষ হবার পর অপর জনের পড়াশুনার খরচ যোগাবে। তাই অনেক মানসিক পীড়নের মধ্যে তাঁকে তিন বছর চাকরি করতে হয় এবং এরই মধ্যে তার বড় বোন ব্রোনিয়া ডাক্তারী পাস করে। পূর্ব শর্তানুযায়ী এবার মেরী তাঁর বোনের আর্থিক সহায়তায় বিজ্ঞানের উচচশিক্ষার জন্য প্রথমে অস্ট্রিয়ার শাসনাধীন ‘ক্রাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। কিন্তু সেখানে তিনি বিজ্ঞান ক্লাসে যোগ দিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচিব তাকে অসম্মতি জ্ঞাপন করে বলেন “বিজ্ঞান মেয়েদের জন্য নয় তাই তিনি যেন রন্ধন শিক্ষা ক্লাসে যোগ দেন।” পরিচয় ঘটে এক ফরাসী বিজ্ঞানী পিয়ারে কুরীর সাথে যিনি ইতিমধ্যে চুম্বকত্ব ও পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পিয়ারে কুরী তার জীবনকে পরিবর্তীত করার ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা রাখেন। তারা বিয়েও করেন। ১৮৯৮ সালেই এই দ¤পতি প্রথমে পিচব্লেণ্ড হতে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পলোনিয়াম (৯৪চঁ২৩৯) এবং পরে রেডিয়াম (জধ) আবিষ্কার করেন যা ইউরোনিয়াম [৯২ট২৩৯] হতে দশ লক্ষগুণ বেশি শক্তিশালী। এই রেডিয়ামের ব্যবহার অপরিসীম। তাদের কাজের অবদান স্বরূপ ১৯০৩ সালে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি কুরী দ¤পত্তিকে ডেভী পদক প্রদান করে। এবং এ বছরই পদার্থবিজ্ঞানে হ্যানরী বেকেরেলের সাথে তাদেরকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
তিনি রেডিয়ামকে বিশুদ্ধ অবস্থায় আলাদা করতে সক্ষম হন। এবং পুণরায় তাঁর যোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হন। তার এই কৃতিত্বের জন্য ১৯১১ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে তিনি একা নোবেল পুরস্কার পান। দ্বিতীয় যুদ্ধে আহত সৈনিকদের যিনি দিয়েছেন একাগ্র সেবা, ভবিষ্যত বিজ্ঞানীদের দিয়েছেন উপদেশ ও পরামর্শ। সর্বোপরি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে যিনি ঢেলে দিয়েছেন তাঁর সবটুকু সময়।
৫. লাইস মিটনার: (১৮৭৮ সালের ৭ নভেম্বর – ১৯৬৮ সালের ২৭ অক্টোবর)
পরমাণু বা নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী এই নারী ছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী যিনি কখনো মানবিকতাকে হারান নি। যাকে এমিল ফিশার ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। তিনি একজন অপরূপা নারী তাই অন্যবিজ্ঞানীদের কাজে মনোযোগ নষ্ট হবে বলে। তাঁকে নোবেল পুরষ্কার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল তাঁরই ৩০ বছরের সহযোগী অটোহ্যানের কৌশলগত কারণে। অথচ ফিশন বিক্রিয়ার তিনিই পথিকৃত বা ব্যাখ্যাদাতা। যাকে বলা হতো -“এটম বোমা তৈরির ইহুদী-মাতা, অথচ তিনি পরমাণু বোমা তৈরির কাজ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সবকিছু মিলিযে তিনি ছিলেন বিজ্ঞান জগতের এক কিংবদন্তীর নায়িকা।
তাঁর গবেষণার এটি বিষয় ছিল ‘মহাজাগতিক প্রক্রিয়ার (cosmic process) ক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয়ার তাৎপর্য’। এ ঘটনাটি এই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এ যেন পুরষশাষিত সমাজের ই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এ যেন পুরষশাষিত সমাজের দীর্ঘ ধারাবাহিকতার ফল – যে ধারাবাহিকতা একজন সৃষ্টিশীল নারীর প্রতিভাকে এমন নির্মমভাবে পরিহাস করতে শিখিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও (১৯৩৯-১৯৪৫) আগ পর্যন্ত আমেরিকাতে তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ব্যাক্তি। এই নারীকে নাৎসীদের জন্য রিক্ত হাতে জার্মান থেকে পালাতে হয়েছিল। পলায়নের পর স্টোকহোম থেকে মিটনার চিঠিতে লিখেছিলেন: নিজেকে আমার ঝড়ে উল্টে যাওয়া পুতুলের মতো মনে হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু ঘটনা আমাদের সাথে বন্ধুসুলভ ভাব প্রকাশ করে কিন্তু তার কোনো নিজস্ব স্বকীয়তা নেই। এ থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কতটা নির্মমভাবে কাটিয়েছেন।
৬. এমি নোয়েথার: জন্ম : (১৮৮২ সালের ২৩ মার্চ – মৃত্যু : ১৯৩৫ সালের ১৪ এপ্রিল)
এমির জন্ম জার্মানীর এরল্যাঞ্জেন-এ; মৃত্যু ব্রাইন মাউর – পেনসিলভেনিয়া। নোয়েথারের জীবনালেখ্য অঙ্কিত ছিল গাণিতিক মহত্ত দ্বারা। জার্মানির গোয়েটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের উপর তিনি যে কাজ করেন তা এখনও নোয়েথারের তত্ত্ব নামে পরিচিত। তিনি গোয়েটিংগেনে দীর্ঘদিন বিনা বেতনে নামমাত্র সহযোগী অধ্যাপনার কাজ করেন শুধুমাত্র একজন নারী ছিলেন বলে। এরপর ১৯০৭ সালে তিনি গণিতে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
নোয়েথার ১৯০৮ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের অর্থ এবং পদবী ছাড়াই এরল্যাঞ্জেনের একটি গণিত ইনস্টিটিউটে কাজ করেন। অথচ সেই সময় তিনি আর্নস্ট অটো ফিশচার -এর মতো বীজগণিতবিদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন এবং আরম্ভ করেন সাধারণ, তাত্ত্বিক বীজগণিতের উপর গবেষণা। যার জন্য পরবর্তীতে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। বিখ্যাত গণিতবিদ হারম্যান মিনকোওস্কি, ফেলিক্স ক্লেইন এবং ডেভিদ হিলবার্টের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছিলেন। ১৯১৫ সালে তিনি গটিনজেনের গণিত ইনিস্টিটিউটে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং ক্লেইন ও হিলবার্টের সাথে আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯১৮ সালে তিনি দুটো উপপাদ্য প্রমাণ করেন যা সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং মৌলিক কণা-পদার্থবিজ্ঞানের মূল বিষয় ছিল। যেগুলোর একটি এখনও নোয়েথারের উপপাদ্য নামে পরিচিত।
কিন্তু তখন পর্যন্ত তিনি লিঙ্গ-বৈষম্যের কারণে গোয়েটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হতে পারেন নি। তার দোষ তিনি নারী ছিলেন। তবে হিলবার্ট-এর সহকারী হিসেবে তাকে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। হিলবার্ট এবং আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর পক্ষে সুপারিশ করলে ১৯১৯ সালে তিনি বক্তৃতা দেয়ার অনুমতি অর্জনে সক্ষম হন; যদিও তখন পর্যন্ত তা বিনা বেতনে ছিল। তাঁর গাণিতিক কাজগুলো পদার্থবিদ ও কেলাসতত্ত্ববিদদের খুবই ব্যবহারোপযোগী ছিল। ১৯২৮ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত একজন পরিদর্শনকারী অধ্যাপক হিসেবে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কাজ করেন। ১৯৩০ সালে ফ্রাঙ্কফ্রুটে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩২ সালে জুরিখে আন্তর্জাতিক গণিত কংগ্রেস একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তৃতা দেন। একই বছর তাঁকে গণিতের উপর একটি সম্মানজনক পুরস্কার ‘একারম্যান-টিউনার মেমোরিয়াল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
৭. রজার আরলিনার ইয়ং (১৮৯৯ সাল – ১৯৬৪ সাল)
প্রথম আমেরিকান যিনি প্রাণিবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। এই প্রাণীবিদকে সারাজীবনই সংগ্রাম করতে হয়েছে। তার পঙ্গু মায়ের সেবার পাশাপাশি নিরলসভাবে তিনি গবেষণা ও শিক্ষার কাজ করে গেছেন। তার জীবন কাহিনী হলো দৃঢ় চরিত্র ও অধ্যবসায়ের একটি গল্প। তিনি বড়ো হন পেনসিলভেনিয়ার বারগেটসটাউনে। হাউয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের আর্নেস্ট এভারেট জাস্ট -এর অধীনে তার প্রথম বিজ্ঞান কোর্স শুরু করেন। গ্রেড কম হলেও তার মধ্যে জাস্ট সম্ভাবনা দেখতে পান। জাস্ট তাকে গবেষণা করার জন্য ১৯২৭ সালে ম্যাসিচুয়েটস-এ মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে আমন্ত্রণ জানান। তারা সামুদ্রিক প্রানির প্রজনন প্রক্রিয়া এবঙ হাইড্রেশন, ডিহাইড্রেশনের উপরও গবেষণা করেন। এ ব্যাপরে এতই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যে জাস্ট তাকে প্রাণী বিজ্ঞানের একজন সত্যিকারের প্রতিভা বলে চিহ্নিত করেন। পরবর্তীতে জাস্ট এর সঙ্গে তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি মারা যান দরিদ্র ও নিঃসঙ্গ অবস্থায়।
৮. রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন (১৯২০ সালের ২৫ জুলাই -১৯৫৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি)
তিনি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন, একটি স্বচ্ছল ইহুদি পরিবারের মেয়ে ছিলেন রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন একজন অণুজীববিজ্ঞানী এবং ভৌত রসায়নবিদ। যাঁকে সবচেয়ে ভালভাবে স্মরণ করা হয় কয়লা, ডি.এন.এ এবং উদ্ভিদ ভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণায় তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য। তার মতো আর কোনো নারী-বিজ্ঞানীর জীবন এতটা বিতর্কিত এবং কর্মমূখর ছিল না। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে একটি গবেষণাগারে কাজ করেন। এখানেই তিনি রঞ্জনরশ্মি বিচ্ছিন্নকরণ কৌশল শিখেছিলেন, গবেষণা করেছিলেন কেলাসতত্ববিদ জ্যাকস মিরিং -এর সাথে ঘনিষ্টভাবে। খুুব সাধারণ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে, ফ্রাঙ্কলিন ডিএনএ-এর একক তন্তুর উচ্চ বিশ্লেষণীয় ফটোগ্রাফ নেয়ার জন্য একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন-এর এই কেলাস সম্পর্কিত কাজ ওয়াটসন, ক্রিক ও উইলকিনস কর্তৃক উপস্থাপিত ডাবল হেলিক্স মডেলের পরীক্ষামূলক সমর্থন যুগিয়েছিল। অথচ জেমস ওয়াটসন, ফ্রানসিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিনসকে ডিএনএ-র ডাবল হেলিক্স গঠনের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হলেও রোজালিন ফ্রঙ্কলিনকে এই অমূল্য কাজের জন্য কোনো কৃতিত্বই দেয়া হয়নি। অবশ্য এর আগে ১৯৫৬ সালের শরতে রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাই ডিএনএ-র গঠন কাঠামো আবিষ্কারের গল্পকে এখনও বলা হয় একটি প্রতিযোগিতামূলক ষড়যন্ত্র্র।
৯. রোজসা পিটার (১৯০৫ সালের ১৭ফেব্র“য়ারি – ১৯৭৭ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারি)
রিকার্সিভ ফাংশন তত্ত্বের (Recursive function Theory) প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণিতবিদ রোজসা পিটার গণিতবিদদের মধ্যে পরিচিত হয়ে আছেন। আধুনিক গণিতে তার বহুবিধ অবদান রয়েছে। নারী হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে তাকে অর্জন করতে হয়েছে এই স্বীকৃতি। তার জন্ম হাঙ্গেরীর বুদাপেষ্ট।
১০.হেলেন সয়ের হগ (১৯০৫ সালের ১ আগস্ট – ১৯৯৩ সালের ২৮)
হেলেন সয়ের হগ ছিলেন এমন একজন নারী যিনি নক্ষত্রের কৌতুহল সবার মধ্যে দেখতে চেয়েছেন। জ্যোতিবিজ্ঞানী হিসেবে তার জীবন অতিবাহিত হয়েছে খুবই উল্লেখযোগ্য কর্ম সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে। তার গবেষণার বিষয় ছিল বর্তুলাকার নক্ষত্রপুঞ্জে পরিবর্তনশীল নক্ষত্রের উপর। কিন্তু তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হবে তার জ্যোতির্বিজ্ঞানের কলামের জন্য যা তিনি লিখেছেন ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর। তিনি চেয়েছিলেন বিজ্ঞানে নারীদের প্রবেশ এবং এর জন্য উৎসাহ ও সাহস যোগাতেন। ১৯২৬ সালে হারভার্ড অবজারভেটরিতে বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী হ্যারলো শেপলির সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। তাকে রাতের আকাশের অসাধারণ ক্লান্তিহীন পথিক বলা হয়। তিনি ২০০ এর বেশি গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন। যেগুলো তাকে দীর্ঘপথে চলতে সহায়তা করেছে। পরবর্তনশীল বা ভেরিয়েবল স্টারের উপর তার তালিকা জ্যোতিবিজ্ঞানীরা এখনও ব্যবহার করেন। তিনি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যকার দূরত্ব পরিমাপের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন।
১১. আডা বায়রন: (১৮১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর – ১৮৫২ সালের নভেম্বর):
বিখ্যাত এই মেটাফিজিশিয়ান এবং সায়েন্টিফিক গণনার প্রতিষ্ঠাতা ইংল্যান্ডের লন্ডনে জন্মগ্রহন করেন এবং ওখানেই তার মৃত্যু হয়। আডা বায়রন ছিলেন রোমান্টিক কবি লর্ড বায়রন (খড়ৎফ ইুৎড়হ) ও অ্যানে ইসাবেলে মিলব্যাংকের (অহহব ওংধনবষষব গরষনধহশব) কন্যা। কিন্তু এই দম্পতি অ্যাডার জন্মের ঠিক এক মাস পর পৃথক হয়ে যান। ৪ মাস বায়রন চিরকালের ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যান। অ্যাডা কখনোই তার বাবার সঙ্গে দেখা করেন নি (১৮২৩ -এ অ্যাডার বাবা গ্রিসে মারা)। তার মা লেডি বায়নই তাকে বড়ো করে তোলেন। তার জীবন আবেগ ও যুক্তির, অধ্যাত্মবাদ (ংঁনলবপঃরারংস) ও বিষয়মুখতা (ড়নলবপঃরারংস), কবিতা ও গণিতশাস্ত্র এবং অসুস্থ স্বাস্থ্য ও শক্তি স্ফুরণের মধ্যকার সংগ্রামে মহিমান্বিত।
লেডি বায়রন কোনো ভাবে চাননি তার মেয়ে বাবার মতো কাব্যময় হোক। তিনি চেয়েছিলেন অ্যাডা গণিত ও সঙ্গীত শিক্ষার মধ্যদিয়ে বড়ো হোক যাতে বিপদজনক কাব্যিক প্রবণতাকে প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু অ্যাডার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ঐতিহ্য ১৮২৮ সালের প্রথম দিকে প্রতীয়মান হয়েছিল, যখন তিনি ফ্লাইং মেশিনের নকশা প্রণয়ন করেছিলেন। আর গণিতশাস্ত্র তার জীবনকে দিয়েছিল উড়ে চলার গতি।
উল্লেখ্য আধুনিক কমপিউটারের জনক চার্লস একটি ডিফারেন্সিয়াল যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। যার উদ্যেশ্য ছিল বিভিন্ন সংখ্যার ঘাত গণনা করা অর্থাৎ কোনো সংখ্যাকে সেই সংখ্যা দিয়ে একবার, দুবার, তিনবার চারবার গুণ করলে যে ফল হয় তা বের করা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই বিয়োগযন্ত্র বানানোর সময় আরেকটি নতুন যন্ত্র বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন এই যন্ত্রই তাকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। এর নাম তিনি দিয়েছিলেন এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন বা বিশ্লেষণী যন্ত্র। চার্লস ব্যাবেজের কল্পিত এই যন্ত্রে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় কমপিউটারের অনেকগুনই উপস্থিত ছিল। সৌভাগ্যের ব্যাপার ব্যাবেজের অনেক ধারণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ কবি কন্যা আডা বায়রন। অ্যাডা বায়রন লাভলেক এই যন্ত্রের কর্মসূচি বা প্রোগ্রাম করেছিলেন। তাই তাকে পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয়।
খালেদা ইয়াসমিন ইতি
ডিসকাশন প্রজেক্ট
এখানে এগারোজন কিংবদন্তী নারী বিজ্ঞানীকে নিয়ে লেখা হয়েছে। সবাইকে চিনতাম না, আপনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও জানতে পারলাম। প্রথমের লাইনগুলো পড়ে অবশ্য একটু আশাহত হয়েছিলাম। কারণ এই নয় য়ে আমি পুরুষ, কিন্তু আজকাল প্রায়ই এমনসব নারীবাদীদের দেখা যায় যারা নিজের অস্তিত্বের সম্পর্কে কিছুই জানে না, কিন্তু অহেতুক পুরুষদের গালাগাল করে যায়। এটাকে আমি নার্সিসিজম নামে ডাকি। যা হোক আপনাকে সে দোষে দুষ্ট করবো না। ভালো কিছু তথ্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ………শুভকামনা।।।
এদের মধ্যে মেরী কুরী আর হাইপেশিয়া আমার সবচেয়ে পছন্দের কয়েকজন মানুষের মধ্যে দুজন। আডা বায়রন, রোজালিন ফ্রাঙ্কলিনের কথা জানতাম, বাকিদের নামই জানতামনা, ধন্যবাদ জানানোর জন্য। আরো লেখা পাবার আশায় থাকলাম। মুক্তমনায় স্বাগতম। (F)
বেশীরভাগ বিজ্ঞানী যাদের কথা আপনি বলেছেন হাইপোশিয়া আর মেরী কুরী ছাড়া তাদের কথা জানতাম না। মেরী কুরী আমার আইডল ১৪ বছর বয়স থেকে। আমি তার প্রচন্ডরকম ফ্যান ছিলাম এবং আছি।
আপনার লেখাকে (Y)
:))
বেশ ভাল লিখেছেন আপনি। (F) । অনেকের সম্বন্ধেই আরও কিছু জানতে পারলাম। তবে জীবিত কিছু নারী বিজ্ঞানীর কথা আনা গেলে আরেকটু ভাল হত।
আমার লেখাটি পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। সেইসাথে আরো ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদেরকে যারা লেখাটি পড়ে মন্তব্য পাঠিয়েছেন। লেখাটি আমার বইয়ের অঙশবিশেষ। আপনাদের এই মন্তব্য আমার বইটিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। এর মধ্যে অভিজিত ভাই, বন্যা আপা এবং মামুন ভাই যাদের সাথে দেখা হয়েছে। আপনাদের সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। আমি চেষ্টা করব আপনাদের সাথে থাকার।
খালেদা ইয়াসমিন ইতি
নারীদের অবদান কিছু জানতাম কিন্তু এতটা জানা ছিল না।অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং এইসব নারীদের প্রতি সন্মান আর বেড়ে গেল। (Y)
ভাল লেগেছে ও ভবিষ্যতে বিজ্ঞানে নারীদের অবদান নিয়ে কথা বলতে রেফারেন্সের কাজ দেবে।
বই মেলায় এক সন্ধ্যায় এক ঝলক দেখা। আশা করি মুক্ত-মনায় সে ঝলক স্থায়ী হবে।
সবার কথা জানতাম না!
সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ!
ইতি,
বই মেলায় ঝটিকা সাক্ষাৎতে তেমন কথাবার্তা বলতে পারি নি।পরে আপনাদের সাথে ১৮ ফেব্রু, অন্যান্যরাসহ দেখা হওয়ার কথা হয়েছিল আসিফ ভাই এর সাথে, কিন্তু সেদিন অন্যত্র আপনাদের প্রোগাম থাকায় ওনি বললেন যদি সময় করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আসবেন কিন্তু আসা হলো না।পরে আমাদের মধ্যে ফোনে কয়েকবার কথা হয়েছিল।আগামীতে অবশ্যই দেখা ও কথা হবে এ আশা থাকল।
আর এমন একটি চমৎকার লেখা নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হওয়ার জন্য রক্তিম ফুলেল শুভেচ্ছা। (F)
ভালো থাকবেন।
মুক্তমনায় যাত্রা শুভ এবং দীর্ঘ হোক আপনার।
ইতি, মুক্তমনায় স্বাগতম। আশা করি আপনাকে নিয়মিতভাবে পাবো এখানে।
চমৎকার লেখা…অনেক ধন্যবাদ..
রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন যদি আগে মৃত্যুবরণ না করতেন তাহলে সমীকরনটা অন্যরকম হত অবশ্যই। অসাধারন এই মহিলার অনেক ডাটাই ব্যবহৃত হয়েছে ডিএনএ গঠন সংক্রান্ত গবেষনায় এবং বর্তমানে তার অবদান সর্বস্বীকৃত। তার তোলা সেই ডিএনএ অনুর এক্সরে ডিফ্রাকশনের ফটোগ্রাফ photograph 52 অত্যন্ত্য গুরুত্বপুর্ণ ছিলো ওয়াটসন ক্রীকের ডাবল হেলিক্স মডেল তৈরীতে। ১৯৬২ র নোবেল কমিটি তাকে আদৌ মনোনীত করেনি, ৫০ বছর ধরে আটকে রাখা এই পুরষ্কার সংক্রান্ত আর্কাইভ ২০০৮ প্রকাশ হলে দেখা যায়, সেখানে তার নাম কেউ মনোনীতই করেননি। যদিও নোবেল কমিটি তাদের নিয়ম ছিল মরোনোত্তর কাউকে তারা মনোনীত করতে পারেনা।
মাঝে একটি ডকুমেন্টারীতে দেখছিলাম ফরাসী মহিলা বিজ্ঞানী এমিলি দ্য শ্যাতেলে’কে (১৭০৬-১৭৪৯), ভলতেয়ার যার সম্বন্ধে বলেছিলেন, “a great man whose only fault was being a woman”; তার বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ন রচনা আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার কমেন্ট্রি সহ প্রথম ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করেন। এছাড়া তিনি প্রথম কাইনেটিক শক্তির একটি যুগান্তকারী ব্যাখ্যা দেন। নিউটন, ভলতেয়ার এবং প্রচলিত ধারনাকে তিনি বদলে দিয়ে বলেন, কোন গতিশীল পদার্থের শক্তি তার গতির সরাসরি সমানুপাতিক না, বরং তার গতির বর্গফলের সমান ( square), যা পরবর্তীতে E=mc2 এর পথ সুগম করে দেয়। সেই প্রামান্য চিত্রটা এখানে:
httpv://video.google.com/videoplay?docid=5542538089222274088#
পবিত্র গাভী !!
১১ জনের মাঝে মাত্র ১,৩,৮ ও ১১ নং নারী সম্পর্কে জানি। গুগল মিয়াকে এখুনি অন্যদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি। 🙂
যাইহোক ধন্যবাদ, বাকিদেরকেও পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। এভাবে কোনোদিন খুজে দেখা হয়নি।
“খড়ৎফ ইুৎড়হ” ধরণের বহু অর্থহীন শব্দ দেখতে পাচ্ছি।
মুক্তমনায় স্বাগতম, ইতি। আর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির জন্যও অনেক ধন্যবাদ। কিছু জায়গায় ব্রেকেটের ইংরেজী লেখাগুলো হিজিবিজি এসেছে। ঠিক করে দিতে পারেন।
আশা করব যে আপনি সক্রিয়ভাবে মুক্তমনায় লিখবেন এবং আলোচনায় অংশ নেবেন।