এক শনিবারে বইমেলায় গিয়ে বইমেলার কথাচিত্র (ক) লিখেছি। আরেক শনিবারে গিয়ে বইমেলার কথাচিত্র (খ) লিখতে বসে ভাবছি কীভাবে শুরু করব। প্রথমে শিরোনামটিতে ২০১১ সংযোজন করলাম। তা না হলে কেমন যেন অসম্পূর্ণ লাগছে। পোস্টিংয়ের তারিখ ও সময় থাকলেও ভবিষ্যত পাঠকের কথা বিবেচনায় এনে সালটি সংযোজন।
লম্বা লাইন ধরে মেলায় ঢুকেছি। ভীড়ের জন্য লাইন নয়। নিরাপত্তার জন্য। তবে বাংলা একাডেমীর ভিতরে ঢুকে প্রথমেই অনুভূতি হল মেলায় ভীড় বেড়েছে।
লেখক,পাঠক আর প্রকাশকের একসূত্রে গাঁথার মেলা হলেও লেখক আড্ডায় পরিচিত কোন লেখক কবিকে দেখলাম না। আফরোজা আপা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না বলে লেখক আড্ডায় গিয়ে বসে আছে। সে সুবাদে আমারও ঢু মারা। কয়েকজন তরুন পর্যায়ক্রমে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে শুরু করে স্বরচিত কবিতা পড়ে শুনিয়ে শেষ করছে। একজন বাংলা একাডেমী নামটির অংশ একাডেমী শব্দটি ইংরেজী বলে এর পেছনে ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে এর আশু পরবর্তন দাবী করলেন। একজনকে তার পরিচয় জানতে চাইলে জানালেন, উনি বঙ্গবন্ধু লেখক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি। তবে তার চার লাইনের কবিতাটি কিন্তু আমার ভাল লেগেছিল। লেখক আড্ডার কয়েকজনঃ

এদিকে মামুন ব্যাগ ভর্তি তিন রকমের খাবারের নিয়ে ঘুরে ঘুরে আমাদের খাওয়াচ্ছে। আলুর চপ, বেগুনী, পুরী। যে যত খেতে পারে। একটা করে খেয়েই আমি কাৎ। পরে বাংলা একাডেমীর কেন্টিনে কফি। চা পাওয়া যায় না। সত্যি বলছি। আমিও প্রথমে বিশ্বাস করিনি যে একমাত্র কেন্টিনটিতে চা পাওয়া যায় না। মামুন নিজেই কফি এনে পরিবেশন করেছে। সাইফুল নামে একজনকে রনদীপম দা পরিচয় করিয়ে দিতেই আমরা ভাবছিলাম মুক্ত-মনার কবি সাইফুল। মামুন তো কবি সাইফুল ভেবে বিশেষ আপ্যায়নে ব্যস্তঃ

সব সাইফুলই কবি নয়


পরে ভুল ভাঙ্গে যে না এ সাইফুল আমাদের কবি সাইফুল নয়।

তরুন কিছু লেখক তাদের প্রকাশকের স্টলের আশেপাশে রয়েছেন। পরিচিতজনরা অটোগ্রাফ নিচ্ছে।

তবে তাদের কয়েকটি বই নিজে কিনে নেড়েচেড়ে দেখলাম এখনই বেশ বুদ্ধিজীবীর ছাপ। বইগুলো এখন আমার পড়ার সময় নেই। প্রকাশনা সংস্থার ক্যাটালগ ও ইন্টারনেট ঘেঁটে পছন্দের বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করার সময়। ফেব্রুয়ারি শুধু যেন বাজেট বুঝে বই কেনারই সময়। স্বকৃত নোমান তাদেরই একজন। সে একটি পত্রিকায় চাকরি করলেও তার ঈশ্বর বিষয়ক একটি লেখা ঐ পত্রিকার সম্পাদক ছাপাতে আগ্রহী নন। রনদীপম দা প্রস্তাব করলেন মুক্ত-মনায় লেখার জন্য। হয়ত অচিরেই তার লেখা মক্ত-মনায় পড়তে পারব।
অঙ্কুর প্রকাশনীর স্টলে দেখা পেলাম ‘বিবি থেকে বেগম’ খ্যাত আকিমুন রহমানের। পাশে আফরোজা আপা। আমাদেরও আহ্বান করলেন ভিতরে যেতে। সুযোগ পেয়ে একটা ছবি তুলে নিলাম।

আকিমুন রহমানের সাথে আমরা ক'জন

একটু পরে আবার দেখা হল মুক্ত-মনার লেখককূলের সাথে। আর তখনই আবার ক্লিক। তানভিরুল ও আসিফুজ্জামানসহ আমরা বাকীরা। তবে লীনা এক ঝলক দেখা দিয়ে চলে গিয়েছিল বলে ছবিতে নেই। দুঃখের কাহিনী শুনিয়ে গেছে। এক ছাত্রের বাসায় তিন মাসের বেতন বাকী। দিচ্ছে না। রণদীপম দা এ কথা শুনে তার ছাত্র পড়ানোর করুণ কাহিনী শুনালেন। যাহোক। প্রত্যেককেই এখানে চিনতে পারছেন তো?

চেনা চেনা লাগে তবুও কি অচেনা?

আমাদের এ জোটবদ্ধতা দেখে আসিফুজ্জামানের ছেলের বায়না তার ছবি তুলতে হবে বিশেষ ভঙ্গিমায়। শিশুর এমন আব্দার কে না রাখে?

আসিফ ও ইতির ছেলে

তবে আসিফুজ্জামানের স্ত্রী ইতি ছবিতে না থাকলেও কথা হল। আমরা একে অপরের পরোক্ষভাবে পরিচিত। আরেকদিন ইতির ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া হবে না।
যে যেদিকেই যাই আবার ফিরে আসি শুদ্ধস্বর এর মোহনায়। দেখা হল কবি মাহবুব লীলেন এর সাথে। পরিচিত হইনি, তবে ছবি তুলতে ভুলিনি। বলেই তুলেছি ছবি। মামুন অনুমতি নিয়েছে আর আমি তুলেছি।

ট্যারাটক এর কবি

ওদিকে অনুষ্ঠান মঞ্চে গিয়ে দেখি আজ মঞ্চস্থ হবে রবীন্ত্রনাথ ঠাকুরের শ্যামা। পরিবেশনায় বাফা। আসন দর্শকে পরিপূর্ণ। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আজানের পর শুরু হবে। রবীন্ত্র ভক্তদের ধৈর্য দেখে আমি তো মুগ্ধ। আর নিজে অধৈর্য হয়ে অন্যত্র গমন।

এরই মধ্যে আফরোজা আপা, মামুন আর আমার কথোপকথন বাংলাদেশে মুক্ত-মনা ফোরাম নিয়ে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল পাঁচটায় সভা। তপন বাগচিকে আমন্ত্রণ জানালে কেমন হয়? যেই কথা সেই কাজ। সাথে সাথে উনার অফিসে। রাত আটটায়। যথারীতি প্রস্তাব উপস্থাপন এবং মেলা চলাবস্থায় রাত নয়টার আগে মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়ার অনুমতি নেই তথ্য জানিয়ে তপনদার সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ।

দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত তপন বাগচী

কার সাথে আবার কখন দেখা হবে তা না জানিয়েই বিদায়। অলিখিত ও অনুচ্চারিত সিদ্ধান্ত —- মেলায় তো দেখা হবেই!তাছাড়া মোবাইল আছে কেন?