আমার হাজব্যান্ড ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারী চাকরি থেকে অবসর কালীন ছুটিতে(LPR) যাবে। সময় পেলেই পেনসনের টাকার হিসাব করে আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। পেনসনের টাকা এককালীন তুলে ফেলবে না আজীবন এর সুযোগ ভোগ করবে। হিসাবের বাইরেও দুয়েক জনের সাথে পরামর্শ করে কোনটা লাভজনক, নিশচয়তা, ঝামেলাবিহীন ইত্যাদি ইত্যাদি। এককালীন সব টাকা তুলে ফেললে কোথায় বিনিয়োগ করবে এ নিয়েও পরিকল্পনা চলছে।
এ নিয়ে আমার বেশ মজার অভিজ্ঞতা হচ্ছে।
কিছু মুসলিম পরিচিতজন আগেই জানে যে হিন্দুরা পেনসনের টাকা এককালীনই তুলে ফেলে। পরে সুযোগ বুঝে ভারতে চলে যায়। কাজেই আমার হাজব্যান্ড তো তা করবেই। এ নিয়ে আর ভাবাভাবির কিছু নেই। সংখ্যালঘুদের দেশপ্রেম মূল্যায়নের এক অভিনব নির্দেশক জানলাম।
কিছু হিন্দু পরিচিতজন পরামর্শ দেয় হিন্দুদের পেনসনের টাকা এককালীনই তুলে ফেলা উচিত। কখন এ দেশ থেকে বিতারিত হতে হয়! আগে ভাগেই প্রস্তুতি থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। সরকারী চাকরীজীবীদের পেনসনের টাকা উত্তোলন নিয়ে সংখ্যালঘুদের দেশপ্রেম নির্ণীত করলাম।
কেউ কেউ ধর্ম নির্বিশেষে বুদ্ধি দেয় পেনসনের টাকা এককালীনই তুলে ফেলা ভাল। তা না হলে প্রতি মাসেই টাকা তুলতে ঝামেলা পোহাতে হবে। এমন গল্পও প্রচলিত আছে যে, যার পেনসন তাকেই বলা হয় আপনি যে মৃত নন এ রকম সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। দেশ সম্পর্কে এক হতাশার চিত্র।
সংখ্যায় কম হলেও কয়েকজন হিসাব ছাড়াও মতামত দিয়েছে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে। কাজেই ভবিষ্যতে পেনসনের টাকা মাসে মাসে খুব সহজেই উঠানো যাবে।
আবার আলাপ আলোচনায় বুঝা যায় কয়েকজন কট্টর আওয়ামীলীগপন্থী পেনসনের টাকা একবারেই তুলেছন এবং অন্যকেও পরামর্শ দেন একবারে টাকা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে তাদেরও আস্থা নেই। তারা অন্যকে স্বপ্ন দেখায়, কিন্তু নিজেরা দেখে না। সে স্বপ্নে বিশ্বাসও করে না। তাদের একজন অবশ্য অজুহাত হিসেবে বলেছেন, বাড়ির কাজ শেষ করার জন্য টাকাটা একবারে তুলেছেন।
যাহোক, আমার বিশ্লেষণ হলো আমার পরিচিত কিছু হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকই পরিস্থিতি বিবেচনা না করে ঢালাওভাবে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে। এর মধ্যে শতকরা হিসেবে প্রায় ৬০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মতামত পেনসনের টাকা এককালীন তুলে নেওয়াই উত্তম। কারণ তারা এদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করে। এ দলটি এদেশে কোন স্থাবর সম্পত্তি করতেও নারাজ।
মুসলমানদের মধ্যেও শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ হিন্দুদের দেশপ্রেম নিয়ে সন্দিহান। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হিন্দুদের এক পা ভারতে আরেক পা এদেশে। তারা মনে প্রাণে চায় হিন্দুরা এদেশ ছেড়ে দিলে সংখ্যাধিক্য কমবে এবং দেশ যখন ছাড়বেই তখন যত আগে যায় তত কম সম্পদ পাচার হবে।
আমার কাছ মনে হয় পেনসনের টাকা উঠানোর ব্যবস্থা এক সময় এ টি এম কার্ডে টাকা উঠানোর পদ্ধতির মতই সহজ হবে। তা না হলে কিসের ডিজিটাল বাংলাদেশ! কোন ঝক্কি ঝামেলা ঘাটতে হবে না। অথচ অন্য অনেকেই তা বিশ্বাস করছে না। আর আমি এটাও বিশ্বাস করি যে তা কোন একক রাজনৈতিক দলের সাফল্যের জন্য নয়। যুগের বাতাসে, সময়ের টানে, বিজ্ঞানের উৎকর্ষে , নাগরিক অধিকার উপভোগের দাবিতে আর জনমানুষের সেবা পাবার তাগিদ থেকেই তৈরি হবে এসব সুযোগ সুবিধা।
আমার পরিচিত এক সরকারী কর্মকর্তা যিনি সরকারী চাকরি থেকে কিছুদিন আগে এককালীন পেনসন নিয়েছেন। তার কঠোর হুঁশিয়ারি —- রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য পেনসনের টাকা উঠানোর পদ্ধতি বান্ধব না হয়ে বন্ধুরই থাকবে। কাজেই একবারে উঠিয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাকে দেখলেন না? আমিই ভরসা করতে পারি না। আর আপনারা? ভেবে পাই না আমরা কি? আমরা কি উনার চেয়ে আলাদা কেউ?
উনার সাথে সম্পর্কটি মোলায়েম বলে প্রশ্ন করেছি, আমরা কী?
আরে ম্যাডাম,আপনারা হিন্দু মানুষ। কখন রাজাকারেরা দৌড়ানি দিবে এর ঠিক আছে না কি? এখন নব্য রাজাকারে চারপাশ ভরপুর। তখন তো ইন্ডিয়া দৌড়াতে হবে।
এ শুধু মুসলিম বন্ধুদের কথা নয়। হিন্দু আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বেশীর ভাগের অভিমতেও একই সাম্প্রদায়িক সুর —- হিন্দুদের এদেশে দীর্ঘমেয়াদী আশায় থাকা অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।
আমার ধারণা ছিল পেনসনের টাকার সাথে শুধু আর্থিক লাভালাভ জড়িত। এখন এর সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি সাম্প্রদায়িক প্রেক্ষাপটও জড়ো করার অনেক অভিজ্ঞতা হলো। এতে আমার হাজব্যান্ডের হিসেবের কাটাকুটি বেড়েছে বৈ কমেনি। এর সাথে তার সিদ্ধান্তহীনতায় কাঁপছে মন।
আমার এক ছোট ভাই পরামর্শ দিয়েছে, সামাজিক সম্পর্কের চাপে পেনসনের টাকা ধার দিতে গিয়ে কিছু খোয়াবেন। কাজেই সব টাকা তুলে কাজ নেই। আর টাকা তুলে বিনিয়োগ করবেন কোথায়?
আমি ৯০ এর দশকে দেখেছি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের অনেক বিহারী রেলওয়ে থেকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক নিয়ে পাকিস্তানে চলে গেছে। তাদের অনেকেই ভারত হয়ে পাকিস্তানে গেছে। তাহলে বাংলাদেশী বিহারী আর বাংলাদেশী বাঙালী হিন্দুদের মধ্যে পার্থক্য রইল কোথায় ? একটি সম্প্রদায় এদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, অন্যরা জাতিগত সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘুত্বের মানও কি একই? নিজেকে বিহারীদের সাথে তুলনা করতে গিয়ে আমি অসহায় বোধ করি।
আমার তখন মহাদেব সাহার ‘দেশপ্রেম’ কবিতাটি মনে পড়ে—-
‘তাহলে কি গোলাপেরও দেশপ্রেম নেই
যদি সে সবারে দেয় ঘ্রাণ,
কারো কথামতো যদি সে কেবল আর নাই ফোটে রাজকীয় ভাসে
বরং মাটির কাছে ফোটে এই অভিমানী ফুল
তাহলে কি তারও দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ উঠবে
চারদিকে!’
আমি কিন্তু এত সব বিশ্লেষণের আগেই আমার অভিমত দিয়েছিলাম আজীবন এর সুবিধা ভোগ করার জন্য। কারণ — প্রথমত, এককালীন টাকা তুলে তা বিনিয়োগ করা নিয়ে অহেতুক ঝামেলা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়ত,আমাদের পরিবারের বেলায় প্রযোজ্য না হলেও আমার আশেপাশের কমপক্ষে এক ডজন পরিচিতজনের বেলায় দেখেছি পেনসনের টাকার জন্য ছেলেমেয়ে বা মেয়ের জামাই অথবা পুত্রবধূ কিংবা ভাই অথবা ভগ্নিপতি, অনেক সময় অন্যান্যদের বিভিন্ন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এ টাকার প্রতি লোভ। ধার নেওয়া, ব্যবসায় খাটানোর প্রলোভনসহ বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ। কাজেই মাসিকভাবে নিয়মিত টাকা নেওয়াই উত্তম। হাঁস মেরে একবারে সব সোনার ডিমের লোভে লাভ নেই। তৃতীয়ত, আরও একটা লাভ আছে, লোভও বলা যায়। আজীবন সরকারী ব্যবস্থার সাথে যোগসূত্র থাকবে। এদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাথে, নিয়মনীতির সাথে সক্রিয় ও সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ।
চতুর্থত,আমার হাজব্যান্ডের আগে আমি না মরলে আমিও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আজীবন পাব। কাজেই মাসে মাসে পেনসন নেওয়ার সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকবে। আমিও কি তবে নিজের স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক হলাম?
জীবনে কিছু কিছু জটিল কৌতুক মনে হয় হাতে-কলমে না শিখলে বিশ্বাসই হয় না।
“চিরসূখী জন,ভ্রমে কী কখন,
ব্যথিত বেদন,বুঝিতে কী পারে।
কি যাতনা বিষে,কভু আশিবিষে,
দংশেনি যারে।”
@কমল,
একমত। :yes:
গীতাদি, লেখাটা পড়ে একটা অদ্ভুত অনিভূতি হচ্ছে, লিখবো না লিখবো না করেও লিখছি। হয়তো পলিটিকালি ইনকারেক্ট হবে, তাও না হয় বলি।
আচ্ছা দেশের সব হিন্দুরাই কি সাম্প্রদায়িকতার স্বীকার হন নাকি তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সাম্প্রদায়িকতার মাত্রার তারতম্য ঘটে? জন্ম থেকেই আমার চারপাশে হিন্দুর অভাব ছিল না, এখনও নেই 🙂 । তাদের বেশীরভাগই অবশ্য বেশ ভালো পজিশনে ছিলেন এবং আছেন, তাদের উপর এই সাম্প্রদায়িকতার চাপটুকু খুব বেশী বলে মনে হয়নি কখনই। এদের অনেকেই এখনো এত প্রতাপ নিয়ে ঘুরেফিরে বেড়ান যে মাঝে মাঝে অবাকই হই। আবার ওদিকে গ্রামের হিন্দুদের উপর বা নিম্নবিত্ত হিন্দুদের উপর অনেক নির্যাতনের কথাতো হরহামেশাই শুনি। তবে আমার স্যমাপ্লিং এররও থাকতে পারে। আপনার কিংবা আপনার হাজবেন্ডের এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিরকম, তা কী আমাদের সাথে শেয়ার করবেন? যেমন ধরুন, আমি নিজে কানাডা আমেরিকায় ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনে কালার্ড ইমিগ্রেন্ট এবং নারী হিসেবে কখনও কোন বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি বলে মনে পড়ে না, কিন্তু তাই বলে বৈষম্য নেই সেটা দাবী করাটা মোটেও ঠিক হবে না। আরেকটা ব্যাপার চোখে পড়ে প্রায়ই, বাংলাদেশের পুলিশে কী হিন্দুদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী? পত্রিকা খুললেই পুলিশে যত হিন্দু নাম দেখি আর কোন প্রফেশনে দেখি বলে মনে হয় না।
@বন্যা আহমেদ,
ধন্যবাদ দ্যোদুলমানতা কাটিয়ে লেখাটিতে মন্তব্য করার জন্য।
বন্যা , বাইরে থেকে তা মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রমোশন , বিদেশে প্রশিক্ষণসহ অনেক ধরণের
বৈষম্য চলে। আর শ্রেণীগত অবস্থানের কারণে সাম্প্রদায়িকতার মাত্রার তারতম্য তো ঘটেই।
আপনি ঠিকই শুনেছেন। ভৌগোলিক অবস্থানও একটা ফ্যআক্টর। কাজেই গ্রাম আর শহরের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি ২০০১ এর সাধারণ নির্বাচনের পর। সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা গ্রামেই ঘটেছিল।
গত ২৯ ডিসেম্বর ব্র্যআক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের ‘Religion in Women’s Everyday Lives: Implications for Secular rights Movement’ বিষয়ে গোল টেবিল বৈঠকে ছিলাম। একজন স্বনামধন্য হিন্দু নারী ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মুসলিম শিশুদের এক অমুসলিম শিশুর প্রতি আচরণের উদাহরণ দিলেন। সময় ও সুযোগ মত তা জানাব।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মন্তব্য ধারাবাহিক লেখার বিষয়বস্তু সম্প্রসারণে সহযোগিতা করে।কাজেই আবারও ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
বিশ্বের সবকটি দেশে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ সংখ্যালঘু এবং মানুষ
পেনশনের কথা বলে ভালো কথা মনে করিয়ে দিলেন। আমার বাপ-চাচা-দাদারা কয়েক পুরুষের সরকারী আমলা ছিলেন এবং তাদের অনেকেই এখনও আমলা হিসেবে বহাল আছেন । সঙ্গত কারনেই তাদেরকেও পেনশন নিতে হয়েছে , যদিও আমার এক জুয়ারী চাচা ছাড়া কাউকেই পেনশনের সব পয়সা এক সাথে উঠানোর কথা কখনও আমার কানে আসেনি।
এবার একটা সাম্প্রতিক ঘটনার কথা কথা বলি। চীনে বিপুল সংখ্যক পান্ডা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্ম নেয়। কিন্তু যখনই তাদের বুনো পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয় , বুনো পান্ডারা ঐ সকল কৃত্রিম প্রজননে জন্ম নেয়া পান্ডাদের চিনে ফেলার পরে মেরে ফেলে। এটা একটা বড় সমস্যা , যে কারনে এখন কৃত্রিম প্রজননে জন্ম নেয়া পান্ডাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের চেষ্টা চলছে যাতে তারা বুনো পরিবেশে টিকতে পারে। তবে এই প্রচেষ্টা সফল হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ইউরোপে একজন শেতাঙ্গের সাথে এক দন্ড কথা বলার পর বোঝা যায় যে সে স্থানীয় নাকি সে অন্য ইউরোপীয় দেশের বাসিন্দা যদিও চেহারা দেখে সব সময় অত সহজে বোঝা যায় না।
ভারতের ব্যাপারটা একটু জটিল। নেপালীরা ভারতে অবাধে বিচরন করতে পারে এবং তারা নেপালী এটা জানার পরেও তেমন কোন সমস্যা তাদের হয় না যতটুকু উত্তর প্রদেশ অথবা বিহার বা বাংলা থেকে মুম্বাই আসা একজন কর্মজীবীর ক্ষেত্রে ঘটে। পশ্চিম বঙ্গে যেসব বাংলাদেশী সীমান্ত বর্তী এলাকার বাসিন্দা , তাদের ওপারের একই অঞ্চলে ভাষাগত সমস্যা নেই বললেই চলে যদি না তারা কোলকাতায় বসবাস করে কারন তারা প্রায় একই রকম আঞ্চলিক ভাষায় অভ্যস্ত। কুচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে আমার অনেক আত্মীয় স্বজন আছেন , কোন সমস্যা ছাড়াই।
পশ্চিম বঙ্গে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভাষাগত সমস্যা হয় মধ্য-দক্ষিন বাংলাদেশ থেকে আগত বাংলাদেশীদের যাদের সাথে পশ্চিম বঙ্গের কোন অঞ্চলেরই ভাষাগত মিল নেই। মূখ খুললেই লোকজন জেনে যায় আসল বিষয় এবং সেই সাথে যথাযথ বৈষম্য অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া কাগজ পত্র বানানো এখন পূর্বের চাইতে অনেক বেশী কঠিন। দেশ ছাড়তে চাইলে ইউরোপ-আমেরিকায় আসুন। যে গরু দুধ দেয় , তার লাথি খাওয়া যায়। বন্ধ্যা গরুর লাথি সহ্য করা কঠিন।
@সংশপ্তক,
আলোচনা কাঙ্ক্ষিত দিকেই এগোচ্ছে। আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম যে, বাংলাদেশের দেশত্যাগী হিন্দুরা ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ভাল থাকেন কি না, তখন যে বিষয়গুলো আমার মাথার মধ্যে ছি্ল, তার দুটো হচ্ছে এঁদের বাঙাল উচ্চারণ এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার বিষয়টি। এ দুটো বিষয়ই আপনার বিশদ এবং ভজনদার সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে উঠে এসেছে। এর বাইরে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁরা নিজেদেরকে কীভাবে খাপ খাওয়ায় সে বিষয়টাও জানার আগ্রহ রয়েছে আমার। এটা নিশ্চয় খুব সহজ কাজ নয়। আজন্ম পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে নতুন একটা দেশে মিথ্যা নাগরিক সেজে সেখানে শিকড় গাড়াটা ভয়ংকর কঠিন কাজই হবার কথা। জান-মাল বা সম্মানের উপর আসন্ন হুমকি এলে ভিন্ন কথা, কিন্তু অনাগত দিনে আক্রমণ হতে পারে, এই আশংকায় যাঁরা দেশ ছাড়েন, তাঁরা কি বিনিময় মূল্যটা একটু বেশি-ই দিয়ে ফেলেন না?
@ফরিদ আহমেদ,
বিদেশ বিভূঁইয়ে কি রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় তা আপনার আমার মত ভুক্তভোগী মাত্রই অবগত আছেন। তারপরও আমাদের অবস্থান ছিলো এমন সব দেশে যেখানে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের নিশ্চয়তা আছে । আমাদের বিদেশ যাত্রার অনেক কারন থাকলেও অনাগত দিনের আক্রমণের আশংকা সেই কারন গুলোর অন্তর্ভূক্ত ছিলনা। বাংলাদেশে সরক দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চাইতে হাজার গুনে বেশী এবং তা ধর্ম – বর্ন নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর নিরাপত্তাই যদি দেশ ত্যাগের প্রধান কারন হয়ে থাকে , তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে অভিবাসন নেয়া হবে বড় রকমের ভূল সিদ্ধান্ত। বেশিরভাগ জানমালের নিরাপত্তাজনিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের চেয়ে অনেক ভালো। অনেকেই মিছামিছি প্যানিক সৃষ্টি করেন যে বাংলাদেশে অমুসলিমদের নিরাপত্তা নেই কিন্তু ভারতে নিম্ন বর্ন হিন্দুদের, খ্রিষ্টানদের অবস্হা বাস্তবেই যে শোচনীয় তা তারা জানেন না। বিজেপি সমর্থিত আর এস এস যেরকম সরকারী কানামাছি খেলে তা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
@সংশপ্তক,
ঠিক কথা।
@সংশপ্তক,
@ব্রাইট স্মাইল্,
কথাটা ঠিক, তবে একটা দুর্ঘটনা আর অন্যটা পরিকল্পিত।
সংখ্যালঘু নিরুপনের মাপকাঠি কী? শুধুমাত্র ধম ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য দিয়ে কি তা নিরুপন করতে হবে?
অনেক সময় দেখা যায় এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে বসতি করে। অন্য জেলার মানুষেরা বসতি করা মানুষদের ভালো চোখে দেখে না। ভাষা ধম এক হওয়া সত্বেও এরা কি সংখ্যালঘু হিসেবে গণ্য হবে?
@মাহফুজ,
সংখ্যালঘু নিরুপনের মাপকাঠি কী? শুধুমাত্র ধম ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য দিয়ে কি তা নিরুপন করতে হবে?
না, অন্যান্য ক্ষেত্রও রয়েছে। যেমন —- আঞ্চলিক ইজম, আপনি যা বলেছেন।
কোন পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় সেটা বুঝি বলে এ নিয়ে আমার কোনো ছুৎমার্গ নেই । সুখে থাকলে নিশ্চয়ই কেউ দেশত্যাগ করে না। তবে, আমার একটা ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আছে। দেশ ছেড়ে হিন্দুরা যখন ইন্ডিয়াতে যান, তখন কি সত্যিই সত্যিই তারা ভাল থাকেন দেশের চেয়ে? এ বিষয়ে কি কারো কোনো অভিজ্ঞতা জানা আছে? বিহারিদের ক্ষেত্রে যেমন একবার পত্রিকায় একটা রিপোর্ট পড়েছিলাম। বাংলাদেশে আটকে পড়া অনেক বিহারি-ই পাকিস্তানকে তাঁদের স্বপ্নের দেশ বলে মনে করেন। অনেকেই চোরাই পথে পাকিস্তানে পাড়িও জমিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানে যাবার পরে তাঁদের বোধোদয় ঘটেছে যে ওটা আসলে তাঁদের দেশ নয়। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চোরাই পথে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। এ কারণেই মনে হয় নতুন প্রজন্মের বিহারি-রা বাংলাদেশি বনে যাবার দিকেই বেশি ঝুঁকেছে।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ, তোমার মত আমারও এ নিয়ে কৌতূহল আছে।ওদেশে অনেক আত্মীয় স্বজনও আছে। আমি বেশ কয়েকবার ইন্ডিয়াও গেছি, তবে বেড়াতে নয়। ১৯৭১ সালে তাড়া খেয়ে আর পরে কর্মশালা, সেমিনারে অংশ নিতে। কাজেই বিষয়টির ভেতরে যেতে পারিনি। ইচ্ছে আছে এ নিয়ে নিজে জানার ও তোমাদের জানানোর।
তবে এ দেশ থেকে ইন্ডিয়া গিয়ে অনেকেই বিজেপি করে। এমন এক পরিচিত আমার ঢাকার বাসায় উঠেছিল লম্বা ভ্রমণে বিরতির জন্য। আমার সে কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা ও মানসিকতাও জানানোর ইচ্ছে আছে।
@গীতা দাস,
একটা বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে প্রত্যকেবার পশ্চিমবংগ ভ্রমনে| ভ্রমন কথাটা আমার ক্ষেত্রে সঠিক কিনা নিজেও দু’দন্ড ভেবেছি|কারণ, আমার নিজের নিকট আত্মীয়-স্বজন সবাই থাকেন ওপারে ( আমি বলি পরপারে)| এমনকি বাবা-মাও| মায়ের কাছে যাওয়া ভ্রমন কিনা, আমি জানি না| হাতের কাছে অভিধান নেই|’যথাশব্দ’ বইটিও নেই|তাই ভ্রমনের ব্যবহারের যথাথতা নিয়ে দ্ধিধাটুকু থেকেই যায়!
যাহোক, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রত্যকেটি মানুষের বাংলা বলা নিয়ে সেকি কসরত?আমরা যেমন প্রবাসীরা এক্সেন্ট নিয়ে হিমশিম খাই তেমনি|বাড়িতে শুদ্ধ বাংগাল আর বাইরে গেলেই সচেতন আর সকষ্টের ঘটি বলার চেষ্টা|মুখের এই উচ্চারণটা ছাড়া তেমন তো কোন দেয়াল নেই স্রোতে মিশে যাবার|সেটা নিয়েই যত যন্ত্রনা!
অন্যদিন লেখা যাবে সবিস্তারে| আপনার লেখা বরাবরের মতই ভাল লেগেছে|ভাল থাকবেন|
@ভজন সরকার,
সবিস্তারে পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই
কেউ হয়তো আর্থিক দিক দিয়ে ভাল থাকে, কেউ হয়তো থাকে না।
কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের জন্ম স্থানের কথা প্যাচাল পাড়ে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেকে যারা বাবুর মত চলত, কাঠ ও টিনের নির্মিত ভাল দোতলা বাড়িতে থাকতো তাঁরা পশ্চিমবাংলার গিয়ে কোন রকমে মাথা গোঁজে কুড়ে ঘরে তাও কোন মুসলমান প্রাধান্য গ্রামে। দির্ঘশ্বাস ফেলে বলেছে হায়রে এরা এদেশে কত খুশি, আমারা যদি এর কিছুটা অন্তত দেশে বাড়িতে পেতাম। (লক্ষনিয়, দেশেবাড়ি এই শব্দটি তারা কখন মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে না)
যারা দেশে বসে কখন পরের জমিতে কৃষানের কাজ করে নাই তাদের কে আমি নিজে চোখে দেখেছি পশ্চিম বাংলায় গিয়ে পরের জমিতে মজুরের কাজ করতে।
আবার দেশে (বাংলা দেশে) বসে অনেকে পরের বাড়িতে লজিং থেকে পড়া শু্না করত তারা ইন্ডিয়ায় গিয়ে চাকরি বাকরি পেয়ে ভাল আছে। এমন নয় যে তারা দেশে চাকরি পেত না।
এমনটি ও শুনেছি হাটে চাল বেচার সময় সামান্য তর্কাতর্কিতে কান মলা খেয়ে একমাস পরে দেশ ছেড়েছে অপমান সহ্য করতে না পেরে। অবাক ব্যপার হল তারা যদি পশ্চিম বাংলায় বসে কান মলা খেত তবে কিন্তু পশ্চিম বাংলা ছেড়ে অন্য কথাও যেত না।
যে গ্রামে হিন্দুরা ইন্ডিয়া যেতে শুরু করেছে অনেক সময় সেই গ্রামের মধ্যে ইন্ডিয়া যাবার একটা হাওয়া বইতে থাকে। এই হাওয়া কিন্তু সব সময় সাম্প্রদায়িক না।
অনেক সময় আবার মিশ্র। আর্থিক ও সামাজিক।
দিল্লি বসে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দির একটা ছেলে একবার আমায় বলেছিল যদি মুসলমানও হতাম তাহলে দেশে থাকে পারতাম।
পশ্চিম বাংলায় এসে সবাই এক সংগে থাকতে পারে নাই। আত্মিয় সজন কে কোথায় দুর দুরান্তে চলে গেছে যারা দেশে মোটা মুটি সবাই পাশা পাশি গ্রামে থাকতো।
যদি বাংলাদেশের পাশে ইন্ডিয়া না হয়ে পাকিস্তান হত তবে কিন্তু বাংলাদেশি হিন্দুরা বাংলাদেশেই থাকত।
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্ছল থেকে হিন্দুদের ইনন্ডিয়া গমন এখনও রোখা যেত যদি বাংলাদেশের প্রসাশন ও জনগন সত্যি সত্যি উদ্যক নিত। সেই সংগে যদি পশ্চিমবাংলা কঠর পদক্ষে নিত বাংলাদেশি হিন্দুদের গ্রহন না করতে।
@সেন্টু টিকাদার,
সংখ্যালঘুদের দেশ ত্যাগের ও ভারতে তাদের অবস্থানের কয়েকটি চিত্র তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
ঐ বিহারীদের বাংলাদেশী বনে যাওয়া যতটা সহজ, হিন্দুদের ক্ষেত্রেও কি তাই?
সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিষ আমাদের অস্থিমজ্জার অন্তর্গত হয়ে গেছে, মনে হয়। সুশিক্ষা ছাড়া এর হাত থেকে মুক্তি নেই।
আপনার দেখার চোখ আছে, সংবেদনশীল মন আছে, আর আছে দারুণ লেখার হাত। আশা রাখি, আপনার লেখা পড়ে হয়তো অনেকরই বোধোদয় ঘটবে।
@ইরতিশাদ,
সেই সুশিক্ষার জন্য চাই অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠ্যসুচি এবং সে সুদিনের অপেক্ষায়ই আছি।
গীতা দি,
তীক্ত হলেও চরম সত্যি কথা বলেছেন। বেশীর ভাগ ধর্মীয় সংখ্যাগুরু মুসলামানের মনোভাব ওইরকমই। এমন কি ভাষাগত সংখ্যালঘু আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও তাদের মনোভাব একই। :deadrose:
@বিপ্লব রহমান,
একমত। তাছাড়া আমার লেখা পড়া এবং মতামত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হা হা হা….
আপনে নিজের স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক হননি । অসাম্প্রদায়িক হয়েছেন, দেশ কে ভালবাসার কারনে ।
নিজের জন্ম ভূমি ছাড়ার প্রসংগ কেন যে আসে, সেটাই বুঝতে পারি না । ধর্মের দোহাই দিয়ে, মানবতার অপমাণ করাটাই, চরম অধর্ম !!!!!
ভাল থাকবেন ।
@সেজবা,
ভাল আছি এবং থাকব। আপনিও ভাল থাকবেন বলে প্রত্যাশা করি।
আপনার লেখাগুলো বেশ ভালো লাগে। সাবলীলভাবে মনের কথাগুলো বলেন, সাম্প্রদায়িকতার চিত্রগুলো দুরে থেকেও টের পাই।
আমার একটা সাম্প্রদায়িকতা-অসাম্প্রদায়িকতার-গুষ্টি-গিলানো-স্বার্থপর দর্শন হলোঃ নিজের/নিজেদের স্বার্থ দেখার সময় দেশপ্রেম, সংখ্যালঘু এসবের কোনপ্রকার কেয়ার না করা। যদি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নিজের স্বার্থের ভালোর জন্যে দেশ ছাড়াটাই ভালো মনে করে, তবে সেটা তার করা উচিত নিসংকোচে, কারণ এটা তার অধিকার। এবং এটা করার সুযোগ তার আছে বলে সে অন্যের চেয়ে রাষ্ট্রের সুবিধা কম পাবে এমনও হতে পারে না। পেনশনের টাকা উঠিয়ে ভারতে চলে যেতে সংকুচিতবোধ করার কোনো কারণ থাকা ঠিক না তার, দেশপ্রেমের মত অকাজের দোহাইয়ের কথা চিন্তা করে।
অন্যের ক্ষতি না করে নিজের স্বার্থের জন্যে কিছু করা মানুষের মৌলিক অধিকার।
@রূপম (ধ্রুব),
এত সরলীকরণ কি সম্ভব? দেশটার জন্য তো মনটাও পুড়ে। নিজের পরিবেশকে ফেলে রেখে ওখানে গিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে ভাল থাকতে পারছে না।
আমারা লেখা আপনার ভাল লাগে জেনে খুশি লাগছে।ধন্যবাদ।