মুসলমানদের মধ্যে সব চাইতে স্ববিরোধিতা প্রকাশ পায় একটা ঘটনায়। তারা যে সব দেশে সংখ্যা গরিষ্ঠ সে সব দেশকে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত না করে, যে সব দেশ তাদের ভাষায় ইহুদি, নাসারা, কাফেরদের দেশ যারা অর্থনৈতিকভাবে বিপুল উন্নতি করেছে সেসব দেশে অকাতরে স্থায়ী ভাবে চলে যেতে চায়। আজ যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এসব দেশের মানুষকে ভিসা ছাড়া ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়াতে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়, দেখা যাবে এসব দেশ একেবারে উজাড় হয়ে গেছে, কেউ আর নেই এদেশে বাস করার জন্য। কেন তারা তাদের দেশকে উন্নত না করে ইহুদী নাছারা কাফেরদের দেশে যেতে চায় যেখানে গেলে তাদের ধর্ম পালনে যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে জানা সত্ত্বেও ? একটাই কারন অর্থনৈতিক। তার মানে তাদের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের মধ্যে ব্যপক পার্থক্য বিদ্যমান। তারা বিশ্বাস করে এ জগত সামান্য কয়দিনের জন্য, এ জগত আসল জগত না, আসল জগত হলো পরজগত যা হলো অনন্ত অসীম তার জন্যে সবাইকে এ ইহজগতে প্রস্তুত হতে হবে। পরজগতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য মুসলমান অধ্যুষিত ইসলামী পরিবেশে বাস করলে বেশী সুবিধা নাকি কাফেরদের দেশ অধিক অনুকুল, যেখানে ঠিক মতো নামাজ পড়া যাবে না , রোজা রাখা যাবে না , ঠিক মতো হালাল খাবার খাওয়া যাবে না , চারিদিকে নাফরমানী কান্ড কারখানার ছড়াছড়ি ? সব চাইতে মজার কান্ড ঘটেছিল নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর। যখন জানা গেল ঘটনাটা ঘটিয়েছে মুসলমান জঙ্গীরা, এর পর সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমনের ভয়ে মুসলমানরা লম্বা দাড়ি বা জোব্বা বা বোরখা পরা তো বন্দ করেছিলই, পরুন্ত অনেকে মুসলমান নাম পর্যন্ত বদলে ফেলেছিল। তখন কিন্তু রাতারাতি তাদের ভোল পাল্টে গেছিল।

যদি একটা জরীপ করা হয় , পৃথিবীতে বর্তমানে কোন জাতি (ধর্মীয় পরিচয়ে) সব চাইতে বেশী গরিব, দুর্নীতি গ্রস্ত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, নীতিহীন , গনতন্ত্রহীন, স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন তাহলে মুসলমানদের নাম শীর্ষে অবস্থান করবে।

প্রতি বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সারা বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকা প্রস্তুত করে। তাদের প্যারামিটার অনুসারে যেসব দেশ ৯.১ থেকে ৯.৪ পয়েন্ট প্রাপ্ত হয় সেসব দেশকে দুর্নীতি মুক্ত দেশ বলা যায়। আমরা যদি মোটামুটি দুর্নীতিমুক্ত দেশের প্যরামিটার এ আদর্শ পরিমাপের অর্ধেক ৪.৫- এর উপর ধরি দেখা যাচ্ছে নিম্ন বর্নিত মুসলিম দেশগুলো সবাই ৪.৫ পয়েন্টের নীচে অবস্থান করছে। অর্থাৎ এরা দুর্নীতি গ্রস্ত দেশ। আর এটা হলো ২০০৮ সালের তালিকা যা ২০০৯ সালে প্রকাশ করা হয়েছে।

সোমালিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, সুদান, বাংলাদেশ, চাদ, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, ইন্দোনেশিয়া, আজারবাইজান, সিরিয়া, কাজাকিস্তান, ইয়েমেন, ইরান, পাকিস্তান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মিশর, আর্মেনিয়া, মঙ্গোলিয়া, লেবানন,আলজেরিয়া, সেনেগাল, আলবানিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, টিউনিশিয়া। – আর এসব দেশে মোট দুনিয়ার মুসলমানদের ৯০% এর বেশী বসবাস করে।

৪.৫ এর উপর যে কয়টি মুসলিম রাষ্ট্র আছে সেগুলো হলো – মালয়েশিয়া ( ৫.১), জর্ডান(৫.১),বাহরাইন(৫.৪), ওমান(৫.৫), আরব আমিরাত(৫.৯) ও কাতার(৬.৫)

সবচাইতে অবাক ব্যপার হলো ইসলামের সুতিকাগার ও মহানবীর জন্মস্থান সৌদি আরবের অবস্থান। এর পয়েন্ট হলো-৩.৫ অর্থাৎ ব্যপক দুর্নীতি গ্রস্ত দেশ যেখানে বাংলাদেশের প্রাপ্ত পয়েন্ট হলো- ২.১। বাংলাদেশের দুর্নীতির কারন হিসাবে যদি আমরা দারিদ্রকে চিহ্নিত করি, সৌদি আরবের ব্যপক দুর্নীতিকে আমরা কিভাবে ব্যখ্যা করব? এখানে তো বাংলাদেশের মত দারিদ্র নেই। সৌদি নাগরিকের জন্য উচ্চ বেতনের চাকরীর নিশ্চয়তা আছে, যারা বেকার তাদের জন্য সম্মানজনক বেকার ভাতা আছে। তারপরেও তারা কেন দুর্নীতিবাজ ? স্বয়ং আল্লাহর নবীর দেশের লোকজন কি তাহলে জাহান্নাম- এর ভয় পায় না ? এর মধ্যে আকর্ষর্ণীয় তথ্য হলো ইসলামের পরিভাষায় যারা সব চাইতে ঘৃণিত ও নিম্ন মানের জাতি ইহুদি, সেই ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের পয়েন্ট হলো -৬ যার উপরে মাত্র একটি মুসলমান দেশ অবস্থান করছে যেটা হলো কাতার, আর নবীর দেশ পেট্রো ডলার সমৃদ্ধ সৌদি আরবের চাইতে প্রায় দ্বিগুন। মাত্র ০.৫ পয়েন্টের ব্যবধানে কাতার ইসরাইলের চাইতে এগিয়ে আছে। তার মানে নৈতিক চরিত্রে কোরানের ভাষায় সব চাইতে খারাপ মানুষ ইহুদীরাও মুসলমানদের চাইতে অনেক এগিয়ে আছে। নৈতিক চরিত্র একারনে বলা হলো কারন – দুর্নীতি নৈতিকতা পরিমাপের একটা বড় উপাদান যদি নৈতিকতা মাপনের সত্যিকারের কোন প্যারামিটার থাকে। আরও বিস্ময়কর ব্যপার হলো ব্যপক দারিদ্র অধ্যুষিত ও মুসলমানদের ভাষায় মূর্তি পুজারী ভারতের প্রাপ্ত পয়েন্ট হলো -৩.৪ যা সৌদি আরবের প্রায় কাছা কাছি। তার মানে ভারত যদি তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আর একটু উন্নতি করতে পারে তাহলে তারা সৌদি আরবকে ছাড়াতে বেশী দেরী করবে না। এছাড়া খৃষ্টান ও নাস্তিক অধ্যুষিত ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া এদের প্রাপ্ত পয়েন্ট ৭/৮ এর বেশী। তার মানে দুর্নীতি থাকলেও তার পরিমান খুব কম আর যার প্রভাব সাধারন মানুষের জীবনে তেমন একটা পড়ে না যাকে আমরা কর্পোরেট দুর্নীতি বলতে পারি।

দুর্নীতি গ্রস্ত দেশের তালিকা থেকে একথা স্পষ্ট যে দারিদ্র দুর্নীতির অন্যতম একটা উপাদান হলেও এটা প্রধান কারন নয়। তাহলে সৌদি আরব . কুয়েতের মত দেশ দুর্নীতি গ্রস্ত তালিকায় এত উপরের দিকে থাকত না। একই সাথে ভুটান আমাদের জানা মতে পৃথিবীর অন্যতম একটি দরিদ্র দেশ যার প্রাপ্ত পয়েন্ট হলো ৫ , যার মানে হলো সে দেশের মানুষ দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতির মাত্রা এমন কম হতো না।

যাহোক, একটা কথা পরিস্কার ইসলাম ধর্ম মুসলমানদেরকে মোটেও সৎ করতে পারেনি, নৈতিক চরিত্র উন্নত করতে পারেনি। তা করলে সিংহভাগ মুসলিম দেশে এত বেশী দুর্নীতি থাকত না। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, দুর্নীতিকে মুসলমানরা খারাপ কোন কাজ বা ইসলামের ভাষায় গোনাহের কাজ বলে মনে করে কি না সেটাও বিচার্য।

এ বিষয়ে আমার দেশ বাংলাদেশকে উদাহরন ধরে বিচার করতে পারি। কারন এদেশের মানুষ হিসাবে আমি এদেরকেই ভাল চিনি ও জানি। এদেশে কি দেখি? দেখি- সরকারী এমন কোন অফিস নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না, উপজেলা লেভেলের একটা সরকারী অফিস থেকে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত সব জায়গায় দুর্নীতি। ঘুষ ছাড়া চাকরী, সরকারী সেবা পাওয়া যায় না। এক সময় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে মেধা ভিত্তিতে চাকরী হতো , তো সেদিনও শেষ। এখন পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাস করে দিয়ে দুর্নীতি করা হয়। বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে মানুষ যায় না , তাতে উল্টে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশী, অথচ চোর ডাকাত সন্ত্রাসীরা যাবতীয় অপরাধ করে পুলিশের অফিসে বসে আড্ডা দেয়। রাস্তা ঘাটে বখাটেদের উৎপাতে মেয়েরা নিরাপদে চলাচল করতে পারে না, চুরি ছিনতাই এর ভয়ে রাতে একা চলাচল করা যায় না, আবার এদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে উল্টে প্রান যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। রাস্তা ঘাটে গাড়ীতে চলাচল করা বিপজ্জনক কারন কেউ তেমন ট্রাফিক আইন মানার পরোয়া করে না , তা দেখার কোন লোক নেই। অবাধে কালো ধোয়া উড়িয়ে গাড়ী চলছে রাস্তায় পরিবেশ দুষন করছে কিন্তু দেখার কেউ নেই। কোন আর্জি বা অভিযোগ কোন সরকারী অফিসে করলে তা স্বাভাবিক নিয়মে তদন্ত হবে এটা বাংলাদেশে কখনো ঘটেছে বলে মনে হয় না। সরকারের মূল সরকারী কাজের দপ্তর হলো সচিবালয় , কেউ কোন দিন মন্ত্রী বা সচিবের কাছে কোন অভিযোগ করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার উত্তর পেয়েছে এরকম ঘটনা কোনদিন ঘটেনি। বাংলাদেশে যেদিকে তাকানো যায়, শুধু অনিয়ম, অব্যবস্থা আর দুর্নীতির উপস্থিতি ব্যপকভাবে দৃশ্যমান। অথচ টাকা দিলে যে কোন অফিসে যে কোন কাজ ত্বরিত গতিতে হয়। কথায় বলে টাকা দিলে নাকি বাঘের চোখ মেলে। একটা মুসলমান দেশে কেন এরকম অব্যবস্থা , দুর্নীতি ? কেন মানুষ ইসলামের নীতি বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে জান্নাত বাসী হওয়ার জন্য ভাল কাজ করে না যদিও তারা মুখে বলে এগুলো হলো গোনাহর কাজ , এসব কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হয়. তার পরেও কেন তারা এ ধরনের কাজ করে ? যারা পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, ত্রিশ রোজার একটাও নষ্ট করে না , হজ্জ করেছে তারাও পর্যন্ত দুহাতে ঘুষ খায়, মানুষকে যেমন ভাবে পারে ঠকায়, কথায় কথায় মিথ্যা বলে। এমন কি পবিত্র মাস রমজানেও আজান দিয়ে ঘুষ খায় । কেন এ হেন চিত্র? কেন মানুষের নৈতিক চরিত্রের এত অবক্ষয়, তাদের জীবনে তাদের ভাষায় ইসলাম নামের একমাত্র সত্য ধর্ম থাকার পরেও ?

এবারে একটু আরব দেশের দিকে চোখ ফেরাই। দেখিনি তবে সৌদি আরব সহ অন্যান্য মুসলিম আরব দেশে যে সব ঘটনা ঘটে তার সামান্য বর্ননা দেব। বাংলাদেশের গরীব মানুষ ওদেশে কাজ করতে যায় জীবিকার তাগিদে, যে আরবী লোক নিয়োগ দেয় সে অগ্রীম টাকা যা অবশ্যই ঘুষ ছাড়া নিয়োগ পত্র বা ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করে না, তার মানে ওখানকার সংশ্লিষ্ট সরকারী অফিস ঘুষ ছাড়া এসব বৈধ কাগজ পত্র ইস্যু করে না তবে একটা বড় অংশ নিয়োগকর্তাই ঘুষ হিসাবে গ্রহন করে তারা মুসলমান হিসাবে বাংলাদেশের মানুষকে খাতির করে না , এমন কি ভাই (মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই ) হিসাবে স্বীকার না করে মিসকিন বলে সম্বোধন করে , রাষ্ট্রিয় কোন বড় কেনা কাটা বা কন্ট্রাক্ট সর্বদাই সৌদি রাজ পরিবারের লোকদেরকে ঘুষ দিয়ে করতে হয় , খোদ রাজপরিবার দুনিয়ার সবচাইতে দুর্নীতিবাজ পরিবার। সৌদি আরবে তেল বিক্রির অর্থ মূলত সৌদি জনসাধারনের , কিন্তু এক তথ্যে জানা যায় , বার্ষিক যে অর্থ তেল বিক্রি করে আয় হয় তার প্রায় ৬০% ব্যায় হয় সৌদি রাজপরিবারের ভোগ বিলাসে, আর তাদের প্রায় ৫০০০ রাজকুমারকে পুষতে, প্রতিটি রাজ কুমারকে নাকি বার্ষিক গড়ে আড়াই লক্ষ ডলার ভাতা দেয়া হয়, মাত্র ৪০% ব্যয় হয় সাধারন নাগরিকদের জন্য। সৌদি পরিবারে যে সব বিদেশী গৃহপরিচারিকা কাজ করে তাদের অধিকাংশই গৃহকর্তা কর্তৃক ধর্ষিতা হয়, অনেক সময় বাবা ছেলে এক সাথে ধর্ষণ করে, অনেক ফিলিপিনো মেয়েই ফেরার সময় গর্ভবতী অবস্থায় দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়, ধনী লোক যার বয়স সত্তর হয়ে গেছে টাকা দিয়ে বিয়ে করে ষোল বছরের বালিকাকে , দেশে অবাধ সুযোগ না থাকায় ওরা ব্যংকক যায় অবৈধ যৌনাচার করতে, মদ খেয়ে মাতাল হতে আর জুয়া খেলতে। মোট কথা এমন কোন অনাচার নেই যা তারা করে না। অথচ আকন্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত সৌদি রাজপরিবার সারা বিশ্বে ইসলাম রপ্তানী করায় ব্যপক অর্থ খরচ করছে, তাদের কাছে বার্তা পৌছানোর চেষ্টা করছে ইসলাম হলো সত্য ধর্ম যা মানুষকে নৈতিকভাবে উন্নত করে, অথচ তারা নিজেরা কেন নৈতিক চরিত্রে উন্নত হতে পারছে না ?

এর কারন খুজতে গিয়ে যা পাওয়া গেল তাতে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আসলে এসব অপকর্মকে মুসলমানরা মুখে খারাপ বললেও অন্তর থেকে খারাপ বা অনৈসলামিক মনে করে না , অর্থাৎ ইসলাম এসব কার্যকলাপকে একপ্রকার অনুমোদন দেয়। তাহলে মুখে খারাপ কেন বলে ? খারাপ বলে তার কারন , সভ্য জগতে এটা অনেকটা স্বত:স্ফুর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত যে দুর্নীতি হলো একটা অপকর্ম বা খারাপ বা অনৈতিক কাজ। বাস্তবে সভ্য জগতের এর প্রচলিত ঐতিহ্যের খাতিরে তারা একে খারাপ মনে করে কিন্তু অন্তর্নিহিত ভাবে ইসলামী বিধি অনুযায়ী তারা এসবকে মোটেও খারাপ কাজ মনে করে না।

ইসলামে তাকিয়া বলে একটা প্রথা আছে। এ প্রথায় বলে ইসলামকে রক্ষা বা ভবিষ্যতে ইসলামের প্রসারের লক্ষ্যে অবস্থার চাপে পড়ে (যেমন ভীতি প্রদর্শন, সতর্কতা, জবরদস্তি ইত্যাদি)যে কোন হারাম বা নাজায়েজ কাজ করলেও তাতে কোন গুনাহ হবে না। খোদ আল্লাহর নবী নিজেই তা তার জীবনে এ প্রথা চালু করে গেছেন। এমনকি কোরানেও এর উল্লেখ আছে, যেমন-

যার ওপর যবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব ও তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। ১৬:১০৬

আয়াতটি এক বিশেষ উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছিল। একবার মোহাম্মদের কিছু অনুসারী কাফেরদের কর্তৃক বন্দী হয়েছিল। বন্দীদের মধ্যে ছিল হযরত আম্মার , তার পিতা ইয়াছির, তার মাতা সুমাইয়া, সুহায়েব, বেলাল ও খাত্তাব। কাফেররা তাদেরকে ইসলাম ত্যাগ করতে বলে ও এর জন্য তারা কিছু বাক্য উচ্চারন করতে বলে যা ইসলাম বিরোধী। ইয়াছির, সুমাইয়া ও খাত্তাব তা অস্বীকার করলে তাদেরকে হত্যা করা হয়। কিন্তু আম্মার কাফেরদের কথা মত তাদের কুফুরী সম্বলিত বানী উচ্চারন করে ও মুক্তি পায়। অত:পর সে মোহাম্মদের নিকট এসে পুরো ঘটনা খুলে বলে ও জানতে চায় তার কুফরী বানী উচ্চারনের কারনে কোন গুনাহ হয়েছে কি না। তখন মোহাম্মদ বলেন – যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস থাকে কিন্তু কোন প্রকার জবরদস্তির প্রেক্ষাপটে কুফুরী বানী উচ্চারন করে থাক বা কোন হারাম কাজ করে থাক তাহলে তাতে তোমার কোন গুনাহ হবে না ।

উপরোক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মুসলমানরা যেসব হারাম কাজ করে বা অহরহ মিথ্যা কথা বলে তা কিন্তু সবই জায়েজ করা যায় এভাবে যে অবস্থার চাপে তারা এসব করতে বাধ্য হচ্ছে। যে ঘুষ খায় সে বলবে উপরওয়ালাকে টাকা দিতে হবে না হলে চাকরী থাকবে না তাই সে ঘুষ খেতে বাধ্য হয়। তাছাড়া সে আরও বলতে পারে সে যে ঘুষ খায় সে টাকা সে সব নিজের জন্য খরচ করে না , তার কিছু অংশ সে মাদ্রাসা বা মসজিদে দান করে , কিছু এতিম খানায় দান করে , কিছু ফকির মিসকিনকে খাওয়ায় , ইসলাম প্রচারের জন্য নানা রকম জলসার আয়োজনে সাহায্য করে , এতে করে ইসলামের বিরাট উপকার হয়। মানুষকে সে ইসলামের পথে থাকতে সাহায্য করে। তাই আপাত দৃষ্টিতে ঘুষ খাওয়া হারাম মনে হলেও সে ঘুষের টাকার একটা অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে তাই ঘুষ খাওয়া কোন হারাম হতে পারে না। সে আরও জোর দিয়ে বলতে পারে , ঘুষ খায় বলেই সে ইসলামের এত হেদায়েত করতে পারে, আর ইসলামের হেদায়েত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ কাজ। সৌদি রাজ পরিবার বলবে , তারা ব্যপকভাবে তেল বিক্রির টাকা নিজেদের পকেটে নেয় ও ঘুষ খায় বলে সারা দুনিয়ায় তারা ইসলাম প্রচারে, মসজিদ, মাদ্রাসা স্থাপনে ব্যপক অর্থ সাহায্য করতে পারে আর এটা ইসলামের হেদায়েতের জন্য দরকার। সব অর্থ জনগনের জন্য খরচ করলে তা কি তারা পারত? তাই আপাত দৃষ্টিতে তারা যা করে তাকে হারাম মনে হলেও সূক্ষ্ম বিচারে তা মোটেও হারাম নয় বরং তা ইসলামের হেদায়েতের জন্য সহায়ক। তারা যে তাদের দেশে কাজ করতে যাওয়া গরীব নারীদেরকে ধর্ষণ করে সেটাও কিন্তু ইসলাম জায়েজ করে। কোরানে বলা আছে- দাসীদেরকে উপভোগ করা যাবে। তাদের দেশে কাজ করতে যাওয়া নারীরা একে তো অমুসলিম তার ওপর তাদেরকে একপ্রকার দাসী হিসাবে গন্য করা হয় তাই তাদেরকে ধর্ষণ করা কোন অনৈসলামিক কাজ নয়।

এছাড়া নিচের আয়াত থেকেও এ ব্যপারে জানা যায় –

মুমিনগন যেন কোন মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন না করে। যারা এরূপ করবে তাদের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন ক্ষতির আশংকা কর তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ সে সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেছেন। ০৩:২৮

এ আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে মুসলমানরা কোন সময়ই অমুসলিমদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহন করতে পারবে না তবে তাদের সাথে চাতুরীপূর্ন আচরন করে আপাত: বন্ধুভাব দেখাবে, কিন্তু অন্তরে কোন বন্ধুভাব থাকবে না। এর অর্থ ইসলাম মুসলমানদেরকে সব সময় কপট আচরন করতে বা ভাল মানুষের অভিনয় (হওয়া নয়) করার কথা বলছে। একজন মুসলমান যদি অমুসলিম দেশে বাস করে তাহলে সে সব সময় এ ধরনের কপট আচরনই করবে টিকে থাকার স্বার্থে আর তলে তলে চেষ্টা করবে সে দেশের অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দিতে। সে ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলা কোন হারাম নয়। এমনকি অমুসলিমদের সাথে ভালভাবে মেশার ভান করতে গিয়ে প্রয়োজনে হারাম খাবার যেমন মদ পান ইত্যাদিও করা যেতে পারে যাতে তাদের ভিতরে ভালভাবে প্রবেশ করে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া যায়। একজন সাচ্চা মুসলমান প্রশ্ন করতে পারে -ইসলাম বা কোরান হাদিস তো কাউকে অমুসলিমদের সাথে কপট আচরন করতে বলেনি । খুব সত্য কথা । কিন্তু কোরানে অমুসলিমকে বন্ধুরূপে গ্রহন করতে বার বার কঠোর ভাবে নিষেধ করার পর যদি বলা হয় তাদের সাথে সতর্কভাবে মিশতে তাহলে সেটাকে কপট আচরন করা ছাড়া আর কি বলা যায় ? আর মুসলমানরা যদি কোন অমুসলিম দেশে বসবাস করে তাহলে তো সব সময়ই তাদেরকে এ ধরনের কপট আচরন করে যেতে হবে কারন তারা প্রতি নিয়ত প্রত্যেকটি কাজের জন্য অমুসলিমদের সাথে মিশতে বাধ্য হবে তাদের বেচে থাকার জন্য। তারা এভাবে সেখানে বেচে থাকবে ভবিষ্যতে সেদেশে ইসলাম প্রচারের স্বার্থে , আল্লাহর রাস্তায় কাজ করার স্বার্থে। আর তা করতে যাবতীয় হারাম কাজ সব হালাল কারন তা আল্লাহর রাস্তায় করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য , কপট আচরন হলো মুখে মধু অন্তরে বিষ অথবা মনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন মানুষের সাথে আপাত ভাল মানুষের মত আচরন করা । হাদিসের নানা ঘটনায় বর্নিত আছে মোহাম্মদ মাঝে মাঝে অমুসলিমদের সাথে খুব ভাল ও বন্ধুত্ব পূর্ন আচরন করতেন, যাকে ইসলামী পন্ডিতরা তার চরিত্রের অতুলনীয় গুন হিসাবে প্রচার করে, আলোচ্য আয়াত পাঠ করার পর খুবই স্পষ্ট যে আসলে সেসব ছিল মোহাম্মদের কপট আচরন। মোটেও কোন সত্যিকার আচরন নয়। কপট আচরনের মাধ্যমে তিনি অমুসলিমদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতেন। এটাকে আমরা বর্তমানের প্রেক্ষিতে এক সুনিপুন কুটনৈতিক আচরন হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারি। নিচের হাদিসটি দেখা যেতে পারে,

আল্লাহর ইচ্ছায়, যদি আমি কোন ব্যপারে শপথ করি আর পরে দেখি এর চেয়ে ভাল কিছু আছে তখন আমি যেটা ভাল মনে করি সেটাই করি আর তখন পূর্বেকার শপথ রক্ষার কোন দরকার মনে করি না। সহি বুখারী, বই – ৬৭, হাদিস-৪২৭

তার মানে আল্লাহর নবীর কাছে শপথের কোন দাম নেই। দাম যে নেই সে দায় তিনি আবার চাপাচ্ছেন আল্লাহর ঘাড়ে কারন তিনি বলছেন আল্লাহর ইচ্ছায়। সুতরাং একজন মুসলমান যখন কোন পাশ্চাত্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করে তখন তাকে একটা শপথ বাক্য পাঠ করতে হয় যাতে তাকে শপথ নিয়ে বলতে হয় যে সে সেদেশের প্রচলিত নিয়ম কানুন সব মেনে চলবে। আর প্রচলিত নিয়ম কানুনের মধ্যে আছে গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি। কিন্তু একজন মুসলমান অবশ্যই সে শপথ মেনে চলতে বাধ্য নয় কারন তার মনের মধ্যে তো আছে অন্য রকম বিশ্বাস আর তার প্রতি অন্ধ আনুগত্য যেটা তার কাছে পাশ্চাত্য মূল্যবোধের চাইতে অনেক বেশী মূল্যবান মনে হয়। তাই সে শুধুমাত্র নাগরিক হওয়ার জন্য কপটভাবে শপথ বাক্য পাঠ করে। যে কারনে একজন প্রকৃত মুসলমান পাশ্চাত্য দেশের নাগরিক হয়ে সে দেশের যাবতীয় নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরেও সে দেশের সত্যিকার নাগরিক হয়ে ওঠে না , সে দেশের প্রতি তার আনুগত্য জন্মায় না , ভালবাসা জন্মায় না ,মনে মনে তার পরিপূর্ন আনুগত্য থাকে সেই আরব দেশটির প্রতি যেখানে মোহাম্মদ জন্মেছিলেন। বিগত বছর সমূহে আমরা পাশ্চাত্য দেশ সমূহে যত সন্ত্রাসী আক্রমনের ঘটনা দেখেছি সবগুলোই ঘটেছে এ ধরনের অভিবাসী মুসলমানদের দ্বারা। তারা সে দেশের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করেও সে দেশের মানুষ হয়ে ওঠেনি, আর তাই তারা সেদেশের নিরীহ মানুষ হত্যা করতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করেনি। এমনকি দ্বিতীয় তৃতীয় প্রজন্মের যে সব মুসলমানরা সেসব দেশে এখন বসবাস করে তাদের মন মানসিকতাও প্রায় একই রকম। কারন তারা তো তাদের আনুগত্যের প্রাথমিক শিক্ষাটা তাদের ঘরে পিতা মাতার কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। অর্থাৎ একেবারে শৈশবেই তাদের কচি মাথাটা নষ্ট করে দেয়া হয় যা তারা পরে সারাটা জীবন টেনে বেড়ায়। তারা যে আশ্রয় দাতা দেশকে নিজের দেশ মনে করতে পারে না ভালবাসতে পারে না এতে কিন্তু তারা কোন অপরাধবোধ বা হীনমন্যতায়ও ভোগে না। কারন সেই তাকিয়া। যা তাদেরকে ইসলাম রক্ষার ও প্রসারের নামে যা ইচ্ছা খুশী করার বা ভাবার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। তা সে ভাল হোক বা খারাপ হোক কিছুই যায় আসে না, তাতে কোন গুনাহ নাই।

তাকিয়ার নামে যাবতীয় অপকর্ম, অমানবিক কর্ম জায়েজ করা যায় এ বলে যে এসব করা হচ্ছে আল্লাহর জন্য ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য। মুসলিম দুনিয়ায় যত মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালু আছে , যেমন আর্মষ্ট্রং এর ইসলাম গ্রহন, কোরানের মধ্যে ১৯ এর অলৌকিকত্ব, কোরানের মধ্যে বিজ্ঞানের খনি ইত্যাদি এসব ই তাকিয়ার নামে অনুমোদিত কারন এসব ঘটনা এক দিকে যেমন মুসলমানদের ইমান শক্তিশালী করে অন্যদিকে তেমনি অমুসলিমদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে তথা ইসলাম প্রচারে এসব করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিমানে বোমা পেতে রাখা বা বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ন স্থানে বোমা পেতে রাখার ভূয়া খবর প্রচার করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো , অমুসলিম দেশগুলোর মানুষ জনদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া যাতে করে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা কাজ কর্ম ব্যহত হয় , যাতে করে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করা যায় আর এ সব কিছু্ই করা হয় তাকিয়ার নামে।

ইসলামী পন্ডিতরা প্রায়শই বলে থাকে যে, ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই, আত্মহত্যার কোন স্থান নেই, ইসলামের নাম ব্যবহার করে কতিপয় বিপথগামী মুসলমান ইসলামের ক্ষতি করছে। মূলত: এসবও কিন্তু তাকিয়ার মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ প্রকৃত সত্য চাপা দিয়ে মিথ্যে প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে আকৃষ্ট করা বা তাদেরকে ধোকা দেয়া আর তা বলা বাহুল্য আল্লাহর ইচ্ছায় ও ইসলাম প্রচারের স্বার্থে। অথচ এখন হাদিস গবেষণা করে জানা যাচ্ছে যে – ইসলাম প্রচারই হয়েছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে। মোহাম্মদের সত্যের ও শান্তির বানীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম কবুল করেছে খুব কম মানুষই। খৃষ্টান ধর্মের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে , মানুষ সেখানে দলে দলে খৃষ্টান হয়েছিল যীশু খৃষ্টের আত্মত্যাগ দ্বারা। কিন্তু মোহাম্মদ নিজেই অস্ত্র ধারন করে তার বানী প্রচারে নামেন। তার পন্থা ছিল যখন তিনি মদীনাতে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে একটা শক্তিশালী দল গঠন করলেন তখন তিনি মদিনার পাশ্ববর্তী গোত্রগুলোর কাছে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত পাঠাতেন তাতে কোন কোন গোত্র সাড়া দিত ইসলামের বানীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নয় বরং মোহাম্মদের বাহিনীর আক্রমনের হাত থেকে বাচার জন্যে। তার জ্বাজ্জল্য প্রমান হলো ইসলামের ভাষায় মুনাফেকরা। মুনাফেক হলো যারা মোহাম্মদের কাছে এসে ইসলাম কবুল করত , কিন্তু নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে ইসলাম ত্যাগ করে নিজের ধর্ম আচরন করত। এরকম কেন করত ? এরকম করত মোহাম্মদের ভয়ে। যদি মোহাম্মদ তাদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হুমকি ধামকি , ভয় ভীতি প্রদর্শন না করত তাহলে তো তারা মোহাম্মদের কাছে এসে ইসলাম কবুল করার ভান করত না। তার মানে ইসলামের প্রাথমিক যুগে এর প্রচার প্রসার হয়েছিল হুমকি , ধামকি , ভয় প্রদর্শন , সন্ত্রাস এসবের মাধ্যমে। মোহাম্মদের নবুয়তের একেবারে প্রথমে যারা মুসলমান হয়েছিল তারা ছিল মুলত: গুটিকয় দাস শ্রেনীর অতি গরিব ও সামাজিক ভাবে হীন লোক জন। উল্লেখযোগ্য যে লোক প্রাথমিক ভাবে মোহাম্মদের কৌশলে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহন করেছিল তার মধ্যে তার নিজ বৃদ্ধা স্ত্রী খাদিজা ও হযরত আবু বকর ছাড়া আর কেউ ছিল না। মোহাম্মদের ধর্ম সত্যি সত্যি আল্লাহ প্রেরিত হয়ে থাকলে সর্বপ্রথম যার ইসলাম গ্রহন করার কথা তিনি হলেন তার চাচা আবু তালিব। কারন আবু তালিবই মূলত: তাকে শৈশব থেকে মানুষ করে যুবকে পরিনত করেন। সুতরাং মোহাম্মদ যে আসলে কোন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তা সবচাইতে বেশী জানার কথা আবু তালিবের অন্য কারো নয়। তিনি যদি সত্যি সত্যবাদী আল আমীন হয়ে থাকেন তাহলে আবু তালিব কেন তার জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহন করলেন না এটা কিন্তু একটা বিরাট প্রশ্ন। দেখা যায় , মোহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খাদিজা যে বছর মারা যায় ঠিক সে বছরই আবু তালিব মারা যায়। মোহাম্মদের বয়স যখন ৫০ তখন খাদিজা মারা যায়। মোহাম্মদ ৪০ বছর বয়েসে সর্বপ্রথম ওহী প্রাপ্ত হন। তার মানে তার ইসলাম প্রচারেরও ১০ বছর পর্যন্ত আবু তালিব বেঁচে ছিলেন কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও তিনি ইসলাম কবুল করেন নি। যদি ধরে নেই যে, কুরাইশদের একজন সম্ভ্রান্ত নেতা হওয়ার কারনে ও কোরাইশদের নির্যাতন থেকে মোহাম্মদকে রক্ষা করার জন্য তিনি ইসলাম কবুল করেন নি , কিন্তু তিনি যখন মৃত্যু শয্যায় তখনও তো তিনি ইসলাম কবুল করতে পারতেন , তাও করেন নি। এ বিষয়ে যে হাদিস আছে তা একটু দেখা যাক-

যখন আবু তালিব মৃত্যু শয্যায় আল্লাহর নবী মোহাম্মদ তার কাছে গেলেন এবং দেখলেন সেখানে আগে থেকেই আবু জেহেল ও আব্দুল্লাহ বসে আছে। আল্লাহর নবী আবু তালিবকে বললেন- চাচা, বলূন আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তাহলে আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সাক্ষ্য দেব। তখন আবু জেহেল ও আব্দুল্লাহ উভয়ে বলে উঠল- আপনি কি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মকে অস্বীকার করছেন? আল্লাহর নবী বার বার আবু তালিবকে অনুরোধ করলেন , বলুন, আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। জেহেল ও আব্দুল্লাহ তারাও বার বার তাকে জিজ্ঞেস করল- আপনি কি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম অস্বীকার করছেন ? অত:পর আবু তালিব তার শেষ বাক্য উচ্চারন করে মারা গেলেন যা ছিল- আমি আব্দূল মুত্তালিবের ধর্মে বিশ্বাসী এবং আল্লাহর নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলেন। তখন আল্লাহর নবী বললেন -তারপরও আমি আপনার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব যদি না তিনি নিষেধ করেন। সহি বুখারী, বই – ২৩, হাদিস নং-৪৪২

তার মানে দেখা যাচ্ছে আবু তালিব মোহাম্মদকে স্পষ্টভাবেই আল্লাহর নবী হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন ও ইসলামও কবুল করেন নি। কারন আব্দুল মুত্তালিব হলেন মোহাম্মদের দাদা যিনি মোহাম্মদের শৈশবেই মারা গেছিলেন। অর্থাৎ তার ধর্ম ছিল পৌত্তলিক। যাহোক. মৃত্যুকালে আবু তালিব ইসলাম কবুল করলে কোনই অসুবিধা হতো না। এ থেকে আরও একটা বিষয় বেশ পরিস্কার তা হলো – মোহাম্মদ সম্পর্কে মহান সত্যবাদী বলে যে একটা মিথ ইসলামী দুনিয়াতে বহুল প্রচলিত তাও যথেষ্ট সন্দেহজনক। কারন মোহাম্মদ কতখানি সত্যবাদী ছিলেন তা সব চাইতে বেশী আবু তালিবের বেশী জানার কথা কারন তার কাছেই ছোট কাল থেকে মোহাম্মদ বড় হয়েছেন তার স্নেহ-ভালবাসায় পুষ্ট হয়েই। সুতরাং মোহাম্মদ যখন নিজেকে নবী বলে দাবী করলেন , দাবী করলেন জিব্রাইল ফেরেস্তা তার কাছে আল্লাহর বানী নিয়ে যখন তখন হাজির হয়, তখন তো আবু তালিবেরই সর্বপ্রথম বিশ্বাস করার কথা। কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস তো করেন নি , পরন্তু এর দশ বছর পরও তা বিশ্বাস করেন নি।

আরও একটা ব্যপার এখানে প্রনিধান যোগ্য। মোহাম্মদকে সবচাইতে বেশী আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছিলেন আবু তালিব। আর আর্থিক ভাবে তাকে স্বাচ্ছল্য দিয়েছিল মোহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা। যতদিন তারা বেচে ছিলেন ততদিন মোহাম্মদ মক্কা ছেড়ে কোথাও যান নি। তার নবুয়ত দাবীর পরও দশ বছর যাবত তিনি মক্কাতে ছিলেন। এ সময়কালে কুরাইশরা তাকে একটা আপোদ হিসেবেই গন্য করত। তাই মাঝে মধ্যে তারা আবু তালিবের কাছে এ বিষয়ে একটা ফয়শালা করার জন্য অনুরোধ করত। মোহাম্মদকে কখনই একটা বিরাট প্রতিপক্ষ হিসাবে মনে করত না। বিরাট প্রতিপক্ষ হিসাবে মনে করলে তারা আবু তালিবের ভাতিজা বলে মোহাম্মদকে মাফ করত না। হয় তাকে হত্যা করে ফেলা হতো, না হয় তাকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হতো। এটাই ছিল তখনকার আরব দেশের সামাজিক পরিবেশ। আবু তালিব ও বিবি খাদিজার সমর্থন লাভের পরেও দশ বছর যাবত তিনি মক্কাতে তার ধর্ম ইসলাম প্রচারে বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি। তখনও তার অনুসারীর সংখ্যা গুটিকতক। তার মানে দীর্ঘ সময়ে কোন রকম জারি জুরিতেও কোরাইসদেরকে বোঝানো যায় নি যে তিনি সত্যিই আল্লাহর নবী আর আল্লাহর বানী তার কাছে যখন তখন আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং এমনিতেই তার ধর্ম প্রচারে মোটেই কোন সুবিধা হচ্ছিল না মক্কাতে অথচ তার বয়স বেড়ে যাচ্ছিল। এটা খুব স্পষ্ট যে মক্কাতে তার ইসলামের কোনই ভবিষ্যত ছিল না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকে অন্য চিন্তা করতে হচ্ছিল। তাই তিনি গোপনে গোপনে তার অনুসারীদেরকে আশে পাশের অঞ্চলে পাঠিয়ে তার বার্তার কার্যকারিতা যাচাই করছিলেন। ভাগ্যক্রমে মদিনা থেকে মোটামুটি ভাল সাড়া পাওয়া গেল। সুতরং তার চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী যখন মারা গেলেন তখন তার আর মক্কায় থাকার কোন মানে ছিল না , বরং একাকী মোহাম্মদ তখন বেশ অসহায়। ওদিকে মদিনা থেকে সাড়া পাওয়া গেছে তাই মক্কায় থাকার কোন দরকারও ছিল না। এর সোজা অর্থ হলো- তাকে যদি কোরাইশরা মেরে ফেলতে নাও চাইত তাহলেও তাকে মক্কা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হতো তার ভাগ্য পরীক্ষার জন্য। এ বাস্তব কারনে কেন জানি মনে হয় , কোরাইশরা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল এটাও একটা ভুয়া প্রচারনা। সত্যি সত্যি মেরে ফেলতে চাইলে আবু তালিব বেচে থাকতেই তা করত বা আবু তালিব মারা যাওয়ার পর পরই তা করতে পারত। যেহেতু মোহাম্মদ মক্কায় মোটেও সুবিধা করতে পারছিলেন না তাই তাকে কুরাইশরা মেরে ফেলার মত অত কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়নি কারন মেরে ফেলার মত অত বড় হুমকি মোহাম্মদ কখনই মক্কায় হয়ে ওঠেন নি। তবে মাঝে মাঝে তারা মোহাম্মদকে হুমকি ধামকি দিত বলে মনে হয়। আর সেটাই স্বাভাবিক। বরং আপদ মক্কা থেকে বিদায় হয়ে মদিনায় যাওয়াতে কোরাইশরা হাফ ছেড়ে বেচেছিল। একটা প্রবাদ আছে- পীররা নাকি নিজ গ্রামে ভাত পায় না। বিষয়টা যে কতটা সত্য তা একবার আমি আট রশির পীরের মাজারে গিয়ে ভালমতো উপলব্ধি করেছিলাম। ওখানে গেছিলাম আসলে কৌতুহলী হয়ে যে সারা দেশের মানুষ কিসের ধান্ধায় ওখানে যায় গরু ছাগল নিয়ে তা নিজ চোখে দেখতে। তো ওখানে যাওয়ার পর কৌতুহলী হয়ে আশে পাশের গ্রামে একটু ঘুরতে বেরোলাম। ঘুরতে ঘুরতে নানা মানুষের সাথে আলাপ করে জানলাম ওরা কেউই আটরশির পীরের মুরিদ না। শুনে আমি বেশ বিস্মিত বোধ করি। তাদেরকে বললাম সারা দেশের এত মানুষ তার মুরিদ আর আপনারা মুরিদ না , কারন টা কি ? ওরা এটা সেটা করে যে বুঝ দিল তা হলো-পীর হিসাবে মানার মত কোন কেরামতি তারা তার মধ্যে দেখেনি। ঠিক হুবহু একই ঘটনা ঘটেছিল মোহাম্মদের ক্ষেত্রে। দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে আপ্রান চেষ্টা করেও মক্কাতে তার অনুসারীর সংখ্যা সামান্যই রয়ে গেছিল , খোদ তার চাচা আবু তালিব পর্যন্ত তাকে বিশ্বাস করেন নি। অথচ সেই মোহাম্মদ মদিনাতে যাওয়ার দুই তিন বছরের মধ্যেই এক বিরাট বাহিনী গঠন করে গোটা মদিনার একচ্ছত্র নেতায় পরিনত হলেন আর তার অনুসারীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেল। পরবর্তীতে আমরা মোহাম্মদের যে আগ্রাসী চরিত্র দেখি অর্থাৎ বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে তাদের শেষ করে দেয়া, ইসলাম কবুল না করলে তাদেরকে হত্যা করা বা খুন করা এসব এর কারন কিন্তু নিহিত আছে তার জীবনের প্রাথমিক ব্যর্থতার মধ্যে। মূলত সেই ব্যর্থতার কারনে তার মনে জিঘাংসার ভাব খুব বেশী জাগরিত হয়। আর তার যারা সাহাবী ছিল তারা তো ছিল আরও বেশী আগ্রাসী কারন তারা এ আগ্রাসনের শিক্ষাটা খুব ভালভাবে পেয়েছিল তাদের গুরু মোহাম্মদের কাছ থেকে। এদের মধ্যে তার সাগরেদ ওমর সবচাইতে বেশী উগ্র ছিল। তা ছাড়া প্রকৃতি গত ভাবে উষর , অনুর্বর, কঠিন ও রুক্ষ্ম মরুভূমির লোকজনরা এমনিতেই উগ্র ও নিষ্ঠূর প্রকৃতির। খুন জখম রাহাজানি, ডাকাতি ধর্ষণ এসব ছিল তাদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ কারবার। মোহাম্মদ ইসলামের নামে তাদের জোর করে একত্রিত করলে সত্ত্বর তারা একতার শক্তি উপলব্ধি করতে পারে। এর ফলে তারা ইসলাম ত্যাগ করার চিন্তা বাদ দিয়ে বরং ইসলামের নাম ব্যবহার করে রাজ্য বিস্তারে মন দেয়। মোহাম্মদের আগ্রাসী চরিত্র, মনোভাব ও কর্মকান্ডের জন্যই মদিনাতে থাকতে তিনি আল্লাহর নামে যেসব ওহী প্রচার করেছিলেন তার মধ্যে বিরাট গুনগত তফাৎ বর্তমান। আক্রমনাত্মক ও অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণাত্মক সব আয়াত মদিনাতে মোহাম্মদ কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। তার আগ্রাসী চরিত্রের সাথে হিটলারের তুলনা করা যায়। হিটলার যেমন তার জার্মান শ্রেষ্ট জাতি তত্ত্ব প্রমান ও বাস্তবায়নের জন্য যাবতীয় অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন, ইহুদি নিধন যজ্ঞ সংঘটিত করেছিলেন, মোহাম্মদও ঠিক সেটাই করেছিলেন। যেকারনে দেখা যায় মুসলমানদের মধ্যে হিটলার প্রীতি ব্যপক।

তাকিয়ার একটা বহুল ব্যবহার দেখা যায়- নন-মুসলিমদের কাছে যখন ইসলামি প্রবক্তারা ইসলামের কথা বলে তখন তারা মাক্কী সূরাগুলো উল্লেখ করে ইসলাম একটা শান্তির ধর্ম হিসাবে প্রচার করে ও প্রতারনা করে। আর এগুলো করে তারা ইসলাম যে একটা শান্তির ধর্ম এরকম একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে যে মানুষ কিছুটা হলেও প্রতারিত হয় তা কিন্তু বোঝা যায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নায়কদের বক্তব্যে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ র্বুশ জুনিয়র, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রমুখদের বক্তব্য থেকে তা বোঝা যায়। এমনকি এই কিছুদিন আগে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান আমেরিকার বিমান বন্দরে নাজেহাল হওয়ার পর ইসলামকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে বলেছিল- ইসলাম একটা শান্তির ধর্ম। ভাবখানা যেন ইসলাম সম্পর্কে তার অগাধ পান্ডিত্য। মক্কায় থাকাকালীন সময়ে দুর্বল মোহাম্মদ যে সব আয়াত প্রচার করেছিলেন সেগুলো যেমন –

তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে। ১০৯:০৬
নিশ্চয়ই যারা অত্যাচারী তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ১৪: ২২
যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না। ৪২: ৪০

এখানে একটা ব্যপার প্রনিধানযোগ্য। তা হলো সূরা সংকলনে কোরানে ধারাবাহিকতা নেই একেবারেই। ভাল মতো পরীক্ষা করলে দেখা যায়, যেমন ইচ্ছা খুশী তেমন ভাবে সূরা সংকলন করা হয়েছে। যেমন সর্বপ্রথম সূরা হলো সূরা আলাক তা গেছে ৯৬ নম্বরে। আবার অনেক সূরার কিছু অংশ মক্কায় বাকী অংশ মদিনাতে অবতীর্ন করেছে মোহাম্মদ। আবার মদিনাতে যাওয়ার সাথে সাথেই তো মদিনাবাসী তাকে একচ্ছত্র কতৃত্ব দেয়নি, তাই মদিনায় যাওয়ার পর পর যে সব সূরা মোহাম্মদ প্রচার করেছেন তার মধ্যে মাক্কি সূরার সূর লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ এসময়ের কিছু কিছু সূরার মধ্যে খানিক উদারতার বহি:প্রকাশ দেখা যায়। যেমন-

দ্বীনের ব্যপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই ।০২: ২৫৬, মদিনায় অবতীর্ন
আল্লাহ বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না। ০৫:৬৪, মদিনায় অবতীর্ন

এসব শুনলে মনে হয় , সত্যি ইসলাম একটা সত্য ও শান্তির ধর্ম। আর কিছু মানুষ যারা ইসলামের কিছুই জানে না তারা এতে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হয়।

এর পর পরই যদি মদিনায় আবির্ভূত হিংসাত্মক আয়াত গুলো উল্লেখ করা হয় তাহলে ধরা পড়ে ইসলাম কতটা শান্তির ধর্ম। তখন ইসলাম তথা মোহাম্মদের আসল চেহারা ধরা পড়ে , যেমন-

আল্লাহর কাছে জিহাদের সমতূল্য আর কিছু নাই। ০৯:১৯
হে ইমানদারগন , তোমাদের কি হল , যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে(জিহাদ) বের হবার জন্য বলা হয় তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে ?……….. যদি বের না হও আল্লাহ তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন,……………….। ০৯: ৩৮-৩৯
হে নবী , কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন, মুনাফেকদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। ০৯:৭৩
তোমরা বের হয়ে পড় প্রচুর সরঞ্জামের সাথে , জেহাদ কর আল্লাহর পথে জান- মাল দিয়ে, এটি তোমাদের জন্য অতি উত্তম যদি তোমরা তা বুঝতে পার। ০৯: ৪১
তারা চায় যে তারা যেমন কাফের তোমরা তেমনি কাফের হয়ে যাও যাতে তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। অতএব তাদের মধ্য থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে না আসে। অত:পর তারা যদি বিমুখ হয় তাদেরকে পাকড়াও কর. এবং যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরুপে গ্রহন করো না, এবং সাহায্যকারীও বানিও না। ৪:৮৯
হে নবী, আপনি মুসলমানদেরকে জেহাদের প্রতি উৎসাহিত করুন। ০৮:৬৫
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ওই লোকদের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ বিচার দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে না। আল্লাহ ও তার রসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহন করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষন তারা করজোড়ে জিজিয়া কর প্রদান না করে। ০৯:২৯
হে ইমানদারগন, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও, এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক, আর জেনে রাখ আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। ০৯:১২৩
হে ইমানদারগন , নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেত ভাবে বেরিয়ে পড়। ০৪: ৭১

আর যারা মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দেবে না বা অন্যায় যুদ্ধে যেতে গড়ি মসি করবে তাদের প্রতি কি রকম ভয় দেখানো হচ্ছে , যেমন-

পেছনে থেকে যাওয়া লোকেরা আল্লাহর রসূল থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে আনন্দ লাভ করেছে; আর জান মালের দ্বারা আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে অপছন্দ করেছে, আর বলেছে, এ গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও , উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত। ০৯:৮১

এ হলো তাকিয়া যা মোহাম্মদ নিজে চালু করে গেছেন আর কোরানে যার উল্লেখ করা হয়েছে। এ তাকিয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা ন্যায় অন্যায়, অপরাধ, মিথ্যা কথা বলা, প্রতারনা করা ইত্যাদি সকল রকম আকাম কুকাম করতে পারে অবলীলায় যা করলে তাদের কোন গুনাহ হবে না , স্বয়ং নবী তা বলে গেছেন। সুতরাং আমরা দুনিয়ায় মুসলিম দেশগুলোকে যে এত দুর্নীতিগ্রস্ত দেখি, নৈতিক চরিত্রে মুসলমানরা যে এত নীচু , যে কোন অন্যায়, অত্যাচার , খুন খারাবি , রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি করতে যে তারা একটুও দ্বিধা গ্রস্ত হয় না তার মূল কারন এখানেই নিহিত। কোরান হাদিস ভাল মতো পড়লে , গবেষণা করলে এ সিদ্ধান্তেই আসতে হবে যে – ইসলাম মানুষকে কোনই নৈতিক শিক্ষা দেয় না , সভ্য মানুষ গড়তে সাহায্য করে না , সুশীল সমাজ গড়তে দেয় না। ইসলাম বড়জোর মানুষকে একটা আধা সভ্য বর্বর সমাজ ব্যবস্থা উপহার দিতে পারে যার প্রতিফলন আমরা দেখেছি তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে।

ঠিক তখনই ইসলামি প্রবক্তারা বলে বসবেন, ইসলামে যে সব নীতি কথা বা ভাল কথা আছে সেসব তালাশ না করে কেন এর মধ্যের ত্রুটি বা খুত বের করার চেষ্টা করছি। আসলে কোন ত্রুটি বা খারাপ কথা খুজে বের করা হচ্ছে না। য্টো করা হচ্ছে তা হলো ইসলাম আধুনিক সমাজ সভ্যতার উপযোগী কোন বিধান কি না সেটার বিশ্লেষণ। সেটা করতে যেয়েই আমরা এগুলো বের করছি আর স্পষ্ট হচ্ছে যে ইসলাম বড়জোর সেই ১৪০০ বছর আগেকার আরব সমাজের জন্যই প্রযোজ্য ছিল , বর্তমানে এর কোনই উপযোগীতা নেই। ইসলামে এমন কোন নীতি কথা নেই যা মানুষ আগে জানত না , এমন কোন আইন নেই যা মানুষ আগে জানত না, এমন কোন উপদেশ নেই যা মানুষ আগে জানত না। অর্থাৎ ইসলামে নতুন কোনই কথা নেই। ইসলাম ছাড়াই বিশ্ব সভ্যতা এতদুর এগিয়ে এসেছে, সভ্য সমাজ গড়ে তুলেছে, ন্যয় বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার পত্তন ঘটিয়েছে। তাই ইসলাম ছাড়াই খুব ভালমতো মানব সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। বরং যে সব দেশে ইসলাম পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসে আছে সেসব দেশ ও জাতি অনেক পিছিয়ে আছে সব দিক দিয়েই- অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাযুক্তিক অগ্রগতির সর্বক্ষেত্রেই মুসলমান সমাজ যোজন যোজন পিছিয়ে আছে। ইসলাম পৃথিবীতে এমন কোন আদর্শ ও উন্নত সমাজ এ পর্যন্ত ১৪০০ বছর যাবৎ গড়তে পারেনি যা মানব সভ্যতার জন্য অনুকরনীয় হতে পারে। ইসলামিষ্টরা ইসলামের সোনালী শাসন বলতে যে চার খলিফার রাজত্বের কথা বলে, তাদের একজন ছাড়া বাকি সবাই নিজেদের লোকদের দ্বারাই খুন হয়েছে নির্মম ভাবে , ওসমান তো নামাজ পড়া অবস্থায় খুন হয়েছে। আলী তো ক্ষমতা পাকা পোক্ত করতে মোহাম্মদের প্রিয়তমা বালিকা বধু আয়শার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। এ ঘটনাগুলো নিশ্চয়ই কোন সোনালী শাসনের পরিচয় বহন করে না। তাকিয়া প্রথার মাধ্যমে যতই মিথ্যা ও প্রতারনাপূর্ন বাগাড়ম্বর করা হোক না কেন , সত্য যা তাকে চিরদিন গোপন করে রাখা যায় না। মোদ্দা কথা হলো- ইসলাম মানুষকে সভ্য মানুষ হওয়ার চেয়ে বরং অসভ্য ও অসৎ হতেই বেশী উৎসাহিত করে যা পরিশেষে আমাদের হাজার হাজার বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা এ সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি বলেই দিবালোকের মত প্রকাশ্য।