সাইবার আত্মহত্যা!

 

নাসিম মাহ্মুদ

 

ফেসবুক এখন সারা বিশ্বের মানুষের মতো বাংলাদেশিদেরকেও ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট করেছে সকালে ঘুম থেকে জেগেই স্ট্যাটাস চেইঞ্জ করতে হবে বুড়োধারি হলেও একটা বালক সুলভ স্টাটাস দেয়াটাই যেন রিতী যেমন ধরুন, আজ আমি সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজবো, খটখটা চৈত্র মাসেও এই স্টাটাস দিতে হবে ফেসবুকে বাংলায় লেখার সুবিধা চালু হওয়াতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে দিন আগেও এরা ইংরেজি হরফে লিখত, আজ আমা সারা ডিন বৃষ্টিটে ভিজ বা অথবা, আনাকদিন পারা নাইস আকটা উইকেন্ড কাটালাম বন্ধুদের সাথা! সেই সাথে আছে নানা ছবিতে অকারন কমেন্ট করা ফেইসবুকেরও বলিহারি, কমেন্ট করতে পয়সা লাগে না বেশীর ভাগ কমেন্টই, আপনি খুব সুন্দর আপনি আমার বন্ধু হবেন? সেই সাথে ফোন নাম্বার কেউ আবার এক কাঠি সরেস, নিজে পোস্ট করে বন্ধুর নাম্বার দিয়ে দেয়

 

আছে নব্য ভাষার ব্যবহার, ভাইজান, ছবিটা সেই রকম কিসের সাথে তুলনা করছে, বোঝা গেল না কেউ স্টাটাসেই কথোপকথন চালাচ্ছে, আরও কত কি? আছে ফেইসবুক অ্যাপ্লিকেশন, শত রকম ফটো অফ দ্যা ডে, ফ্রেন্ড অফ দ্যা ডে, হাউ ডিপ ইস ইওর লাভ? লাভ ক্যালকুলেটর, অসংখ্য এমন কি ব্লাড গ্রুপ দিয়ে পার্সনালিটির সনদও এই সকল অ্যাপ্লিকেশন দিচ্ছে পোস্ট হচ্ছে ওয়ালে, ওয়াল থেকে ওয়ালে ইদানিং শুরু হয়েছে খবরের কাগজের লিংক শেয়ার করা তাতেও চলছে, কমেন্ট, আসছে ইমেইল, খুলছি ফেইসবুক, আবার কমেন্ট, এক চক্র যখন এই চক্র একঘেয়ে হয়ে যায়, আর কেউ নিজের ছবিতে কমেন্ট করে না, স্ট্যাটাস গুলোতেও বন্ধুরা কমেন্ট করে না, আসেনা নোটিফিকেশন এই পর্যায়ে শুরু হয় স্ট্যাটাসে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখা, মানুষকে সুরসুরি দেয়া, তাতেও কাজ না হলে, শুরু হয় ফ্রাস্ট্রেশন এর থেকে মূক্তি কী! এই পর্যায়ে শুরু হয় গেম খেলা, মাফিয়া ওয়ার, ফার্ম ভিলে, আরও কত কী! আবার শুরু হয়, ইমেইলে নোটিফিকেশন আসা, কিছুক্ষন ব্যাস্ত থাকা

 

আমরা আঁতেলরা যারা দীর্ঘ ব্লগ লিখে, বিদ্যুৎ তড়ঙ্গে ছড়িয়ে দিতাম প্রেম, কিংবা পরিবর্তন তাদের কেউ শুরু করে ফেসবুকে ব্লগের লিংক পোষ্ট করা (এই লেখাটাও তার ব্যতিক্রম নয়), ফেসবুক তাদের জন্য এনেছে, ফেসবুক নোট ব্লগার না হয়েও নোট লিখে যাও মনের মাধুরী মিশিয়ে! সেখানেও আছে লাইক বাটন কোথাও নেই আনলাইক বাটন (বাংলাদেশ অনলাইন রেডিও (www.BangladeshOnlineRadio.com ) এর রয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, সেখোনে লাইক বাটনের পাশাপাশি রয়েছে ডিসলাইক বাটন!)

 

সব কিছুতেই আসছে নোটিফিকশনএত দিকে নজর দিতে গিয়ে কারও জীবন ঝালাপলা কারও জীবন ঝালাপলা কারন কেউ তাদের স্টাটাস ফলো করছে না কারও ক্ষোভ, বান্ধবী বা বন্ধু ছবিতে ভাল মন্তব্য লিখেনি অথবা কোন মেয়ে বা ছেলেরপরীদের আজ মন খারাপস্টাটাসে ছেলে বা মেয়ে বন্ধুটি লিখেছে, “নদু পানা করো নাতারা একটা ছুতো ধরে ফেসবুক থেকে তখন সরে পরতে চায় তারা ভাবতে শুরু করে, কেউ তার মনের কথা বুঝে না, কেউ না এদের কেউ কেউ ভিশন ভাবে জটিলতায় ভোগে, ভীষন কেউ কেউ তখন বিশেষ কিছু বন্ধুকে ডিলিট করে দেয়; তারা যদি বাস্তবেও বন্ধু হয় (অনেকেরই ফেসবুক বন্ধুদের অর্ধেকেরও বেশীকে সে নেজেই চেনে না!), সেই সম্পর্কেও ছেদ পড়ে অনেক ক্ষেত্রে এই ক্ষোভের সমাপ্তি ঘটে আত্মহত্যার মধ্যদিয়ে সাইবার আত্মহত্যা ফেসবুক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া এদের মধ্যে অনেকেই আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভোগে, তারা আবার আসে, আবার যায় আবারও আসে!

 

বাঙালীর অনেক কাজের মতই এই ফেসবুকে আসা যাওয়াতা খুব তড়িৎ! গত সপ্তাহে প্রাইভেসি নিয়ে কন্ঠ দিয়ে রক্ত ঝরিয়ে ফেসবুক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে, আজই জয়েন করে স্টাটাসে লিখবে, “অনেক দিন ডুব দিয়ে ছিলাম, বন্ধুরা ভাল আছোতো?” অমনি কিছু লাইক পড়বে কিছু কমেন্ট পড়বে, আবার কিছুদিন চলবে এই ভাবে কিন্তু একসময় আবারও বিরক্তি আসে আবারও ডুব, কিন্তু দেখতে ইচ্ছা করে বন্ধুরা কে কি করছে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে কেউ কি মিস করছে তাকে আর এই সমস্যার সমাধান করছে সেপুকু(http://www.seppukoo.com/ ) নামের একটি ওয়েবসাইট সেপুকু হচ্ছে জাপানী কায়দায় আত্মহত্যা করার একটি রিচুয়াল বা আনুষ্ঠানিক রিতী কেউ ফেসবুক থেকে সত্যি সত্যিই সম্মানজনক ভাবে আত্মহত্যা করতে চাইলে, এই ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে এর মাধ্যমে ফেসবুক একাউন্টটি বন্ধ করলে, সেপুকু ফেসবুকের বন্ধুকে জানিয়ে দিবে সাইবার মৃত্যু সংবাদ, আর এর হোমপেজে তৈরি করবে একটি কবর তখন ফেসবুকের বন্ধুরা এসে সেখানে আবার মন্তব্য বা শোক বার্তা লিখেতে পারবে এক চুক্তিবদ্ধ আত্মহত্যা এদের দাবি, এতে কেউ ফেসবুক থেকে দূরে সরে গেলেও বুঝতে পারবে কোন বন্ধু তাকে স্মরন করলো কি না, অথবা কোন বন্ধু সত্যিই তাকে মিস করে এর মূল উদ্দেশ্য হল, কত বন্ধু আসলে আপনার কাছে এল, আপনার দারা প্রভাবিত হল তাই ভীষন ভাবে নানা রকম কম্প্লেক্সে ভোগাদের জন্য এটা হয়ত হতে পারে, সম্মানজনক সাইবার আত্মহত্যার সরলীকৃত পথ কিন্তু এটা কি আসলে আবারও সাইবার জগতেই ফিরে আসা নয়?

[ সম্পাদনায়: এস, সুলতানা ]