লেখকের নামের জায়গা থেকে আমার নামটি সরিয়ে নেয়ার পদ্ধতি না জানার কারণে তা সম্ভব হলোনা। সময়োপযোগী এবং তথ্যবহুল এই লেখাটির লেখক অমি রহমান পিয়াল এর অনুমতিক্রমে মুক্তমনায় প্রকাশ করা হলো।
(সংগ্রহ- আকাশ মালিক)
লিখেছেন : অমি রহমান পিয়াল
…মধুমতির উপর দিয়ে খোলা নৌকায় বাসন্তিবালার বাবা মেজো মামাকে ধরে আছে। বড়ো আশায় বারবার বলছে, কথা ক। কথা ক, অ কপিল। এই সময় একটি লঞ্চ দূর থেকে ভটভট করে আসতে দেখা গেল। দোতলার রেলিংয়ে কিছু লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। একটা শালু কাপড়ে লেখা- জাগো বাঙালী, জাগো। বড় মামা বিরক্ত হল। ঢেউ দুলিয়ে দিচ্ছে ছোট নৌকাটাকে। তাল সামলানো মুশকিল। ঢেউয়ের আড়াআড়ি নৌকাটা তুলে দিল। বলল, কাগু কপিলরে ধইরা রাইখো ঠিক কইরা। হঠাৎ মেজো মামা লাফিয়ে উঠল। দাঁড়ালো সোজাসুজি। মাথা খাড়া করে দুহাত ছড়িয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে বলল, মুজিব ভাইইই! লঞ্চের বাইরে সাদা পাঞ্জাবী দীর্ঘদেহ চশমা পড়া পাইপ হাতে কে একজন জলদ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন- জয় বাংলা… (পরীকথা : কুলদা রায়)
…………………………………………………………………………………………………………
আলী আহমদ গানের বই বিক্রি করেন। সিনেমার গান। বইয়ের মলাটে নায়ক-নায়িকাদের ছবি থাকে। মোহাম্মদ আলী-জেবা। উল্টোদিকের বাড়িতে দুই বাঁধা কাস্টমার আছে তার। অল্পবয়সী দুই কিশোর কিশোরী। হাসিনা ও কামাল। টাকা না থাকলে বাকিতে বই নিয়ে যায়। ঠিক অনিচ্ছেতে নয়, ভয়েই দিয়ে দেন আলী। দোতলা বাড়ির ওই ভাড়াটিয়াকে নিয়ে তার মধ্যে একটা তীব্র আতঙ্কবোধ কাজ করে। কিছুদিন পরপর এ বাড়িতে পুলিশ আসে। কিছুদিন পর পর গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ওই ভাড়াটিয়াকে। তার মানে কত বড় ডাকাত ওই লোক! ঈদের দিন আলী অবাক হন বাড়ির সামনে গাড়ীর ভিড় দেখে। বিখ্যাত সব লোক, শিক্ষিত সব লোক, নামী সব লোক! এরা এই ডাকাতের বাড়িতে কি করে! আলী যান সেই বাড়িতে। পাওনা টাকা চাইতে এসেছে ভেবে হাসিনা ও কামাল মাকে খবর দেন, বসতে দেন অতিথিকে। তিনি আসেন আলীকে নাস্তা-পানি দেন। আর বলেন, ‘সবসময় তো হাতে টাকা থাকে না, ওদের বাবা প্রায়ই দূরে থাকেন। তারপরও ওরা যা চায় দিয়ে দিবেন, আমি টাকা দিয়ে দিব।’ আলী বলেন, ‘আমি তো পাওনা চাইতে আসি নাই আম্মা। আসলে ফুটফুইটা দুই ছেলে মেয়ে আপনার, বাড়ীঘর দেইখা বুঝা যায় বংশ ভালো। সাহেবরে বলেন আজেবাজে কাজ ছাইড়া ভালো হইয়া যাইতে। দুইদিন পরপর পুলিশ আইসা তারে বাইন্ধা নিয়া যায়, এইটা কি ভালো কিছু?’ উত্তরে আলী যা শোনেন তাতে তার চোখ ছানাবড়া। কোনো ডাকাত নন, ওই ভাড়াটিয়ার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান সামরিক জান্তার সার্বক্ষণিক এক মাথাব্যথা, যাকে যে কোনো ইস্যুতে চৌদ্দশিকের আড়ালে না রেখে স্বস্তি পায় না তারা। আলী সেই প্রথম জানলেন শুধু ডাকাত নয়, দেশের মানুষের রাজনীতি করলেও পুলিশ ধরে। তিনি আগ্রহী হন। পল্টন মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে শোনেন ছয় দফার গান। সিনেমার বই লাটে ওঠে, এই লোকের কথা মানুষের কাছে পৌছানোর পণ করেন আলী। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের তখন পর্যন্ত করা বক্তৃতা সংকলন ৩৬ হাজার কপি বিক্রি হয় তার।
আলী আহমদ একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ মাত্র। দীর্ঘদিন একটি ভুল ধারণা বয়ে বেড়াবার পর যখন চোখ খুলে গেলো অসংখ্য মুজিবপ্রেমীর একজন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এদের কেউ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আর জুতো পায়ে দেননি। কেউ এখনও এই বৃদ্ধ বয়সে দেশজুড়ে সাইকেল রিকশা চালিয়ে মাইকে শুনিয়ে বেড়ান সেই মহামানবের বজ্রকঠিন কণ্ঠস্বর। কেউ নিঃস্ব অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার সময়ও হাত দেননি শেষ সহায় একখন্ড জমিতে, যে জমি মুজিবের এতিম কন্যা শেখ হাসিনার নামে কেনা! এদের কারো স্মৃতিতে এখনও জ্বলজ্বল আবেগী এক আলিঙ্গনের স্মৃতি, তার আগে সেই কথাগুলো, ‘পিছনে বইসা আছো কেন মেন্তু মিয়া, সামনে আসো। চলো সরিষা তেলে মাখা মুড়ি খাই।’ এই বাংলাদেশে এখনও অসংখ্য মানুষ শেখ মুজিবের গল্প করার সময় স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাদের চোখমুখ অন্যরকম হয়ে যায়। তাদের চোখের জল কখনোই বাঁধ মানে না। এ আসলে এক ভয়ানক ব্যর্থতা। ব্যর্থতা সেই সব অপশক্তির, যারা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে এদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম ও নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের পর তাদের হাতে রেডিও টিভি সংবাদপত্রসহ যাবতীয় প্রচার মাধ্যম ছিলো। তারা যাই চেয়েছে, যেভাবে চেয়েছে, তাই প্রচারিত হয়েছে, তাই ছাপা হয়েছে। এদেশের ক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধীদের অধিষ্টানের জন্য জরুরী ছিলো মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বিতর্কিত করা, প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর সেজন্য সবচেয়ে জরুরী ছিলো এই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাকে নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে কলঙ্কিত করা। এতে তার সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া যায়, নেপথ্যের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে বৈধতা দেওয়া যায়, মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করা যায়, স্বাধীনতাবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধকালীন যাবতীয় অপকর্মকে বৈধতা দেওয়া যায়। সর্বোপরি যেই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে গোটা একটা জীবন উৎসর্গ করেছেন শেখ মুজিব নামের মহামানুষটা, তার বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে রাখা যায়। ঠারেঠোরে পক্ষপাতটা পাকিস্তানের দিকেই রয়ে যায়।
তাই বলে একেবারে ব্যর্থ কি তাদের বলা যায়? না বলা যায় না। এদেশের সাধারন মানুষের কাছে শেখ মুজিব এতদিন পরও এক কিংবদন্তীসম মহান পুরুষ। বিপরীতে দেশের শিক্ষিত সমাজের একটা বড় অংশই তার নামে নাক সিঁটকায়। এই শিক্ষিতরা প্রজন্মান্তরে ওই অপপ্রচারণার সফল শিকার। তারা সেগুলো বিশ্বাস করেছে, ধারণ করেছে। প্রচারও করেছে। তলিয়ে না দেখে দিনের পর দিন কুতর্ক চালিয়ে গেছে। ব্যাপারটা যে কত ভয়াবহ রূপে একদল মানুষের মনে গেড়ে বসেছে, তা আতঙ্কিত হয়ে আবিষ্কার করেছি আন্তর্জালে। আধুনিক প্রযুক্তির সর্বাধুনিক মাধ্যম বাংলা ব্লগে লেখালেখির সময় আবিষ্কার করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কি সব ভয়ঙ্কর কল্পকথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। আজকে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের তত্ত্ব দেয়, কিন্তু দলটির কোনো পর্যায়ের কোনো বুদ্ধিজীবিকেই কখনও দেখা যায়নি এসব অপপ্রচারের দাঁতভাঙা জবাব নিয়ে হাজির হতে। দায়টা স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেই আমরা কয়েকজন যারা স্রেফ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার সংকল্পে জাতির জনকের যাবতীয় কলঙ্কমোচনকে যুদ্ধজ্ঞান করি। প্রতিটি অপপ্রচারের জবাব দলিল দস্তাবেজ, অডিও ভিডিও, ছবি সহকারে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের যাবতীয় আত্মপ্রসাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নতুন নতুন গল্প বানানো হয়। আমাদের লড়াইয়ের খবর মূলধারার প্রকাশনায় আসে না, মগজধোলাইর শিকার কাগজ পাঠকদের অগোচরে থেকে যায়। এই লেখাটিতে সেরকমই কিছু অপপ্রচারণা নিয়ে খানিকটা আলোকপাত করা যাক। এতে দীর্ঘদিন ভুল গল্প বিশ্বাস করে অন্যকে বলে বেড়ানো কিছু মানুষের হয়তো কাণ্ডজ্ঞান ফিরলেও ফিরতে পারে।
তার আগে কিছু কথা না বললেই নয়। মুজিববিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী এসব লেখালেখির ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরানো। বাংলাদেশে ব্লগ তো সেদিনের ঘটনা। কিন্তু নানা ইংরেজী মাধ্যমে, নানা প্রকাশনায় এসব লেখালেখি চলে আসছে কয়েকযুগ ধরে। লেখকদের প্রত্যেকেই ’৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকারকের ধামাধরা লোক, অনেকেই যুদ্ধকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দালাল শিক্ষক, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পোষা বুদ্ধিজীবি। ধারাবাহিকতায় আনলে খুব মোটা দাগের কয়েকটি অভিযোগকে চিহ্নিত করা যায়, যেগুলোতে এরা দিনের পর দিন বাতাস দিয়ে যাচ্ছে। শুরুটা মুজিবের রাজনৈতিক উত্থানের সময়টা নিয়ে। অভিযোগ তিনি মহা দাঙ্গাবাজ লোক। দেশভাগের সময় কলকাতায় মুসলীম লীগের হয়ে দাঙ্গায় অংশ নিয়েছেন আর তারপর ’৫৮ সালে প্রাদেশিক সংসদ অধিবেশন চলার সময় স্পিকার শাহেদ আলীকে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। কি ভয়াবহ আবিষ্কার। মুসলীম লীগের এত বড় গুন্ডাটা কিনা পাকিস্তান হওয়ার পরপর ভোলপাল্টে ধর্মনিরপেক্ষতার আলখেল্লা চাপিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে মুসলিম নামটাকে প্রত্যাহার করে একে সার্বজনীন রূপ দিলো! আর এতবড় দাঙ্গাবাজের এককোটির উপর সমর্থককে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাড়ে নয়মাস খাইয়ে দাইয়ে আশ্রয় দিয়ে লড়তে রসদ যুগালো সেই কলকাতার অধিবাসীরা! স্পিকার শাহেদ আলীর ঘটনা নিয়ে পড়তে চাইলে তার বিবরণ যে কোনো সমকালীন লেখালেখিতেই মিলবে।
’৭০ এর আগে পাকিস্তানে কোনো সাধারণ নির্বাচন হয়নি। যা হয়েছে তার নাম সিলেকশন। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়া সামরিক বাহিনীর তল্পীবাহক একদল রাজনীতিবিদ পূর্ব পাকিস্তানের সাম্যবাদী ডাককে দমিয়ে রাখতে পুতুলের ভূমিকা নিয়েছেন। ’৫৮ সালের সেই ঘটনা ছিলো পাকাপাকিভাবে সামরিক শাসন আনার এক ষড়যন্ত্র মাত্র। আর তাতে শেখ মুজিবকে জড়ানোর কোনো অবকাশই নেই। তখনকার তখনকার নিউইয়র্ক টাইমস (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮) ও টাইমস ম্যাগাজিন (অক্টোবর ৬, ১৯৫৮) যে খবর প্রকাশিত করে তাতে আবু হোসেন সরকারসহ যে ১২ জন রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করে জামিন দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে মুজিব ছিলেন না। ঘটনার বিবরণ এরকম যে স্পিকার আবদুল হাকিম সরকারী চাকুরী করার অভিযোগে ৬ জন সদস্যের সংসদপদ বাতিল করেন। সুবাদেই সংখ্যাগরিষ্টতা হারায় সরকারী দল। উত্তেজিত হাকিমকে ‘উম্মাদ’ আখ্যায়িত করে ধাওয়া দেন তারা। অধিবেশন আবার বসলে, ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী স্পিকারের দায়িত্ব নেন এবং ৬ জনের সদস্যপদ বহাল করেন। এবার উত্তেজিত হয় বিরোধী দলের সদস্যরা যার নেতৃত্ব দেন আবু হাসান সরকার এবং তারই ছোঁড়া মাইকের স্ট্যান্ডের আঘাতে রক্তাক্ত মাথায় লুটিয়ে পড়েন শাহেদ আলী। ক’দিন কোমায় ভোগার পর মারা যান তিনি। আর পরিণামে সব ধরণের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আইয়ুব খান দখল করেন পাকিস্তানের ক্ষমতা। এই ঘটনার আট বছর পর যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র নামের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় বঙ্গবন্ধুর বিচার করছে পাকিস্তান সরকার, তারা নিশ্চিত প্রমাণ হাতড়ে বেরিয়েছে। অথচ শাহেদ আলীর ঘটনায় মুজিবের বিন্দুমাত্র ভূমিকা থাকলে, তাকে ঝোলাতে দুবার ভাবতো না সামরিক জান্তা। প্রমাণ ওই ঘটনার ২০ বছর পর জুলফিকার আলী ভুট্টো দিয়ে গেছেন। আহমেদ রাজা কাসুরি হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে ফাঁসি দিয়েছেন জিয়াউল হক।
আগেই বলেছি, ’৭০ সালের নির্বাচন ছিলো পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন যাতে প্রথমবারের মতো সারা দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়। আর এই নির্বাচনেই নিজেকে বাংলার মানুষের একমাত্র প্রতিনিধি অন্যভাবে বললে ‘সবার নেতা’ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করলেন বঙ্গবন্ধু। শত ষড়যন্ত্রেও ঠেকানো যায়নি তার সেই উত্থান। তাকে ও বাঙালীকে প্রাণের দাবি থেকে বঞ্চিত করার উপায় ছিলো একটিই, গণহত্যা। সুবাদেই শুরু হলো প্রতিরোধের লড়াই, পাল্টা মারের লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি অধ্যায় অনেক আগেই ছক কেটে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু। তার অনুপস্থিতিতে, স্রেফ তার নামেই একটি দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় বিস্মিত অনুভূতি জানিয়েছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। কিন্তু আসলেই বিস্ময়ের কিছু ছিলো না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা লড়ে গেছেন দ্রোহের তীব্রতায়। একাত্তরের মার্চেই শুরু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আর এই মার্চকে ঘিরে তিনটি ভয়ানক অপপ্রচার চালানো হয় মুজিবকে নিয়ে। প্রথমটি ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে। বিশ্ব রাজনীতির পাঠক মাত্রই এই ভাষণটিকে এ যাবতকালের সেরাদের তালিকায় ওপরের দিকেই রাখেন। প্রেক্ষাপট, ঘটনার পর্যায়ক্রম ইত্যাদি মিলিয়ে এটি ধ্রূপদীই বটে। কিন্তু সেই ভাষণেই হঠাৎ করে জয় বাংলার পর জিয়ে পাকিস্তান কথাগুলো আবিষ্কার করে বসলো একদল কূপমন্ডুক। তখনও রাষ্ট্রটা পাকিস্তান, সাধারণ নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের নেতা মুজিব। হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নায্য হকদার। জিয়ে পাকিস্তান তিনি বলতেই পারেন, কিন্তু বলেননি। জনপ্রিয় উপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ নামের ফিকশনে এই কল্পগল্পটি আমদানী করেন। উদ্ধৃতি দেন প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের। এরপর হাবিবুর রহমানও নাকি তার কোন এক স্মৃতিকথায় এমনটি লিখেছেন। কিন্তু তার সমর্থন মেলেনি সেই জনসভায় উপস্থিত লাখো শ্রোতার কারো তরফেই। বাংলাদেশ কিংবা বিদেশী নানা আর্কাইভে রেকর্ড হিসেবে থাকা সেই বক্তৃতার কোনো সংস্করণেই জিয়ে পাকিস্তান কিংবা জয় পাকিস্তান নামে কোনো বাক্য নেই। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিটিভি আর্কাইভে গোটা একটা দিন কাটিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ওই শব্দ দুটো খুঁজে বের করতে। হাস্যকর প্রয়াস। কিন্তু তারপরও কথাগুলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের সমর্থক প্রজন্মের মননে। এরা তা বিশ্বাস করে কুতর্কে নামে, শত প্রমাণেও নিবৃত্ত হয় না।
বলা হয় শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে এতটাই বিভোর ছিলেন যে ২৩ মার্চ তার বাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়েছেন। এখন এই মিথ্যেবাদীরা এটা জানে না সেদিনের ঘটনার ফুটেজ আছে, ইউটিউবে খুঁজলেই মিলবে। সেদিন ছিল পাকিস্তান দিবস। অথচ গোটা বাংলাদেশে পালন হয়েছে প্রতিবাদ দিবস হিসেবে। দেশজুড়ে উড়েছে কালো পতাকা। স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছে একটাই, সেটা বঙ্গবন্ধূর বাসভবনে। শেখ মুজিব নিজের হাতে উড়িয়েছেন তা। সেদিন সারাদিন ঘর থেকে বের হননি তিনি। গোটা ঢাকা জুড়ে মিছিল হয়েছে, আর তা আছড়ে পড়েছে ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের গেটে। ‘জয় বাংলা বাহিনী’ সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়েছে। সেদিন বঙ্গবন্ধু হ্যান্ড মাইক হাতে নিজে শ্লোগান ধরে উদ্দীপ্ত করেছেন উপস্থিত বাঙালীদের। ‘জাগো জাগো, বাঙালী জাগো, তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, সংগ্রাম সংগ্রাম চলবে চলবে, জয় বাংলা…’ বঙ্গবন্ধুর নিজের কণ্ঠে এই কথাগুলো শোনার পর শরীর ঝিম ধরে যায়। শ্লোগানের পর কিছু কথা ছিলো : মনে রাখবেন নীতির সঙ্গে আপোষ চলে না। বিশ্বাস রাখতে হবে।’ তার মানে বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার সঙ্গে আপোষে যাচ্ছেন এমন একটা কথা ইচ্ছা করেই রটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তা পাত পায়নি।
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার নিয়েও নানা কুকথা। একদল বলে শেখ মুজিব যদি স্বাধীনতাই চাইবেন তাহলে কেনো পালিয়ে গেলেন না! কেনো নিজে দাড়িয়ে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন না! কেনো গ্রেফতার বরণ করলেন! আরেক দল তো আরো রূঢ়। দেশকে রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে বঙ্গবন্ধু নাকি পাকিস্তানে অতিথি হয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তদবীর চালাতে। হায় পাপাচার! এই মূঢ়েরা বোঝে না স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনটা নিয়েই কতবড় একটা জুয়া খেলেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি পালাবেন? পালিয়েছেন কোনো কালে? তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একবারও কি পালিয়েছেন? ’৭৫এর সেই কালো রাতে যখন ঘাতকরা স্টেন উচিয়ে এগিয়ে আসছে, পালিয়েছেন? নাকি মুখোমুখি হয়েছেন নির্ভয়ে? আরে এই লোকটা বাঙালীর নেতা। বাঙালীর ইজ্জত তার হাতে। তার পালালে চলে? আর তার অভিধানে থাকতে হবে তো শব্দটা! কোনোকালেই ছিলো না। তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধ নায্য লড়াইর স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ্ব জেনেছে জনতার রায়কে বুটে মাড়িয়ে, তাদের রক্তে হোলি খেলে, তাদের নেতাকে হাতকড়ি লাগিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উপনিবেশবাদ কায়েম রাখতে ইয়াহিয়া কতখানি মরিয়া। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বুলেটে নিকেশ করার সেই ষড়যন্ত্রের নায্য প্রতিবাদ হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। নায্য হয়েছে তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী সরকারের লড়াই। তারা সব নির্বাচিত প্রতিনিধি, দেশের জনগনের ভোটে নির্বাচিত। কোনো বিদ্রোহী উপদল নয়, গৃহযুদ্ধের যুযুধান অংশ নয়। মুজিব গ্রেফতার না হলে অনেক সহজ হয়ে যেতো পাকিস্তানীদের কাজটা। তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতা হিসেবে চিহ্নিত করে গণহত্যা জায়েজ করা যেতো। যে কোনো সময় হত্যা করে সেটাকে বৈধতা দেওয়া যেত। আগামী একশ বছরেও পূর্ব পাকিস্তান থেকে আর স্বাধীনতা শব্দটা উচ্চারিত হতো না। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আর নাইবা বলি, এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তবে ২৫ মার্চ গভীর রাতে গনহত্যা শুরু হয়ে যাওয়ার পরপরই যখন প্রতিরোধের লড়াই চলছে দেশজুড়ে, মুক্তিযুদ্ধ চলছে। তখন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাট প্রপোগান্ডা রেডিও স্টেশনের কোনো ঘোষণার আলাদা মূল্য থাকে না। ৪৮ ঘণ্টা কম সময় নয়।
আজ যখন দেশজুড়ে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক দালালদের বিচারের তোড়জোর চলছে, তখন আবার মুজিবকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সব যুদ্ধাপরাধীকে রেহাই দিয়েছেন। এটিও একটি জঘন্য মিথ্যাচার। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর যে সাধারণ ক্ষমা তিনি ঘোষণা করেছেন তার কোথাও হত্যাকারী, ধর্ষক ও লুটেরাদের ক্ষমা করার কথা নেই। তিনি নিজেই বলেছেন তাদের ক্ষমা করা হবে না। এ বিষয়ে পরদিন ১ অক্টোবরের দৈনিক বাংলার প্রতিবেদনটিকে আমলে আনা যেতে পারে। এখানে সবিস্তারেই লেখা রয়েছে সব।
বলা হয় বঙ্গবন্ধু ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীকে রেহাই দিয়েছেন। এটিও সমমানের আরেকটি মিথ্যাচার। ১৯৫ জন পাকিস্তানীর বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে আটক ২ লাখ বাঙালীকে ফিরিয়ে এনেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের স্বীকৃতি এনেছেন, মুসলমানদের হ্জ্ব করার অধিকার আদায় করেছেন, জাতিসংঘে সদস্যপদ নিয়েছেন। আর যারা ত্রিদেশীয় চুক্তিটি পড়েছেন, তারা জানেন, সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে পাকিস্তান নিজেরাই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে বলে অঙ্গীকার করেছে।
মুজিবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি তিনি বাকশাল নামে একটি ভয়ানক জুজুর আমদানী করেছিলেন। যারা অভিযোগটি তোলে, তারা কখনোই এর ব্যাখ্যা দেয় না। প্রাসঙ্গিকভাবেই আসে সিরাজ শিকদারের কথা। সর্বহারা বিপ্লবের শেষ কথা বলা হয় তাকে। কিন্তু সিরাজ শিকদার একটি স্বাধীন দেশের যে পরিমান ক্ষতি করেছেন তাতে তার বিপ্লব মোটেও মর্যাদা পায় না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন একের পর এক ব্যাঙ্ক লুট করে, একমাত্র রফতানীযোগ্য পণ্য পাটের গুদামে আগুন দিয়ে কিসের বিপ্লব করছিলেন তিনিই জানেন। অসহায় পুলিশদের গুলি করে মারা হচ্ছিলো। এই সিরাজ শিকদার নিজেরই দলের বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়েন। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশি প্রেসনোটে বলা হয় গাড়ি থেকে পালানোর সময় তাকে গুলি করা হয়েছে। এরপরই এই হত্যাকাণ্ডে মুজিবকে ভয়াবহভাবে জড়ানো হয়। বলা হয়, তার মৃত্যুর পরদিন সংসদে দাড়িয়ে নাকি বঙ্গবন্ধু দম্ভভরে বলেছেন : কোথায় আজ সিরাজ শিকদার!! ইতিহাস বলে ১ জানুয়ারি সিরাজ মারা গেছেন, আর সেবার সংসদ বসেছে ২৫ জানুয়ারি। এই অধিবেশনেই বঙ্গবন্ধূ তার দ্বিতীয় বিপ্লব অর্থাৎ বাকশাল কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। আর সেই ঘোষণার এক পর্যায়ে সিরাজ প্রসঙ্গ আসে। কথাগুলো ছিলো হুবহু এরকম : স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর যারা এর বিরোধীতা করেছে, যারা শত্রুর দালালী করেছে, কোনো দেশেই তাদের ক্ষমা করা হয় নাই। কিন্তু আমরা করেছি। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেছি দেশকে ভালোবাসো। দেশের স্বাধীনতা মেনে নাও। দেশের কাজ করো। কিন্তু তারপরও এদের অনেকে শোধরায়নি। এরা এমনকি বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে বিদেশ থেকে টাকা নিচ্ছে। ওরা ভেবেছে আমি ওদের কথা জানি না! একজন রাতের আঁধারে মানুষ মেরে যাচ্ছে আর ভাবছে তাকে কেউ ধরতে পারবে না। কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? তাকে যখন ধরা গেছে, তখন তার সহযোগীরাও ধরা পড়বে। আপনারা কি ভেবেছেন ঘুষখোর কর্মকর্তাদের আমরা ধরবো না? যারা বিদেশীদের থেকে টাকা নেয় তাদের আমরা ধরবো না? মজুতদার, কালোবাজারী আর চোরাকারবারীদের ধরবো না? অবশ্যই ধরবো। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। তারা কিছুই হজম করতে পারবে না। ইনশাল্লাহ, পাপী একদিন ধরা পড়বেই…’
ফিরে আসি বাকশালে। এই ভয়ানক বস্তুটি দিয়েই বঙ্গবন্ধু নাকি সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। হায়রে, মৃত্যুর আগপর্যন্ত এমনিতেও বাঙালী এই দেশের সর্বক্ষমতা যার হাতে সঁপে দিয়েছিলো তিনি নতুন করে আর কি কুক্ষিগত করবেন! কি এই বাকশাল? আপনি বলার চেয়ে বরং শোনা যাক খোদ বঙ্গবন্ধুর মু্খেই। আবীর আহাদ নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক বাকশাল কর্মসূচী ঘোষণার পরপরই সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন তার। সেখানে বঙ্গবন্ধু নিজের মুখেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার কর্মসূচীর। তিনি কি চান। মোটের ওপর একদলীয় যে শাসন ব্যবস্থার কথা বলেছে বাকশাল, তা জনগনের শাসন। স্বাধীনতা যদি বিপ্লব হয়, সেই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় এসেছিল বাকশাল। হঠাৎ করে নয়। প্রথম বিপ্লব, স্বাধীনতা, রাজনৈতিক মুক্তি। দ্বিতীয় বিপ্লব অর্থনৈতিক মুক্তি, সাধারণ মানুষের। চীন-রাশিয়া বাদ দিলাম, কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর ইমাম খোমেনীও বিপ্লবের রেশ বজায় রাখতেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই চালিয়ে গেছেন। এদের কাউকে নমস্য মানেন? তাহলে মুজিবের কি দোষ? সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখা? যে বাংলার মানুষ হবে স্বাবলম্বী, নিজের উপার্জনে চলবে, ভিক্ষা করে খাবে না।
httpv://www.youtube.com/watch?v=4BEgMGYFpcE&feature=player_embedded
অপপ্রচারের শেষ নেই, অপপ্রচারকারীদেরও ক্ষান্তি নেই, বিরাম নেই। সবশেষে বিনয়ের সঙ্গে পাঠকদের কাছে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। মুজিব যখন সপরিবারে নিহত হলেন, তার বাড়ি থেকে কয় মন সোনা, কয় কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে? বিদেশের কোন ব্যাঙ্কে, কয়টা একাউন্ট পাওয়া গেছে তার তথাকথিত ব্যাঙ্ক ডাকাত ছেলেদের নামে? সেখানে কয়টাকা ছিলো? প্রশ্নটা অহেতুক, কারণ এই অপবাদ ঘোরতর শত্রুও দিতে পারবে না। প্রমাণ করতে পারবে না। মানুষটা দেশকে ভালোবেসে দেশের মানুষের জন্য মরেছেন, মরেছেন বাঙালী নামের কিছু কুলাঙ্গারের হাতেই, যাদের জিনেই রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা। মানুষটাকে সত্যিরূপে চিনতে হলে শুধু মাত্র একটি সংবাদসম্মেলনের ভাষ্য দেখুন। ইউটিউবে পাওয়া যায়। ৮ জানুয়ারী ১৯৭২ সালের সেই সংবাদ সম্মেলনটি লন্ডনের। পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সেখানে উড়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। সেই ভরা মজলিশে একমাত্র শেখ মুজিবের পক্ষেই সম্ভব ব্রিটিশদের সরাসরি বলা : তোমরা অনেক বছর আমাদের শাসন করেছো। আমার বাংলার অনেক সম্পদই ভোগে লাগিয়েছো, নিজেদের সমৃদ্ধ করেছো। এবার খানিকটা ফিরিয়ে দাও। আমার জনগণ না খেয়ে আছে, দেশজুড়ে লাশ ছাড়া আর কিছু নেই। একমাত্র মুজিবের পক্ষেই সম্ভব সৌদি বাদশাহ ফয়সালের বাংলাদেশের নাম বদলে রাখার প্রস্তাবে মুখের ওপর বলা : মাননীয় বাদশা, আপনার দেশের নামও তো ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি আরব নয়। আপনার পূর্বপুরুষ আরব বীর ইবনে সৌদের নামে দেশের নাম রেখেছেন, আমরা মুসলমানরা তো আপত্তি করিনি, আমার দেশের নাম নিয়ে নাই বা মাথা ঘামালেন।’
httpv://www.youtube.com/watch?v=y27R7Y4EJqo&feature=player_embedded
প্রায় দেড় যুগ আগে শেখ হাসিনার লেখা একটা স্মৃতিকথা পড়েছিলাম। বাবাকে নিয়ে। প্রায়ই জেলে থাকা বঙ্গবন্ধু ছেলে শেখ কামালকে দেখেননি, বাবাকে দেখেননি কামালও। জেলগেটে ভাইবোন যখন গেলেন, হাসিনাকে কামাল খুব অনুনয় ভরে বলেছিলেন : হাসু আপা তোমার বাবাকে একবার বাবা বলে ডাকি?’ আমাদের জাতির পিতাকে যারা তার প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু দিতে নারাজ, যারা দিনমান তার কুৎসায় ব্যস্ত, তাদের মুখে ঝামা ঘষে নিশ্চয়ই নতুন প্রজন্ম একদিন সত্যিকার ইতিহাস খুঁজে পাবে। সেদিন বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা এমন অনুরোধ আরো পাবেন। তবে সেজন্য তার অনুমতির দরকার হবে না কারোরই।
১৫ আগষ্ট, ১৭ আগষ্ট, ২১ আগষ্ট বৎসরের ক্যালেন্ডারের পাতায় তিনটি কলংকিত ভয়াবহ দিন। এ নিয়ে কিছু চিত্র দেখুন-
@অমি রহমান পিয়াল,
শতভাগ একমত।
😕
জাতির পিতার মত ফালতু কনসেপ্টটাও ওই মধ্যপ্রাচ্য (আব্রাহামিক) আর ইন্দো-ইয়োরোপীয় আর্যদের (রোমান) কাছ থেকেই ধার করে নেয়া। অনেককেই বলতে শুনি জাতি থাকলে তো জাতির পিতা থাকবেই!
বাঙালী জাতির পিতা মানে তো আরো ভেজাল। একে তো আমার ধারণা অনুযায়ী হাজার বছরের পুরোনো বাঙালী জনগোষ্ঠী একজনের ঔরসে জন্মগ্রহণ করে নাই। তার চেয়েও বড় বিষয় হাজার বছর পরে এসে সেই জাতি তার পিতার জন্ম দেয় কিভাবে!
সমস্যা নেই তাঁকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনকও বলা হয়। ৭১এর আগে আমরা বাঙালী ছিলাম পরেও বাঙালী আছি। যুদ্ধ করে অর্জন করেছি বাংলাদেশ নামক এক রাষ্ট্র। সেই মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পুরো বাংলাদেশ অস্বীকার করলেও এটা সত্য। কিন্তু ত্রিশ লাখ মানুষের লাশ আর লক্ষ লক্ষ মায়ের ক্ষত বিক্ষত দেহের উপর যে রাষ্ট্র দাড়িয়ে, সে রাষ্ট্রের জনকের প্রয়োজন কোথায় আমাকে বলবেন? কে হতে চায় সে রাষ্ট্রের জনক?
মন্ত্রপাঠের কারণ বা উদ্দেশ্যের চেয়ে (অর্থনৈতিক মুক্তি আর গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়) মন্ত্রের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় তো এত সমস্যা। সব ক্ষেত্রেই।
😕
সুযোগ ছিল কি? শেখ মুজিব আত্মীয় ও দলীয় তোষামোদকারীদের কথায় ভিজতেন কিনা ভাল জানিনা। তবে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ মন্ত্র এখনো যখন মূল থাকে তখন সেই সময়ের অবস্থা কেমন ছিল বুঝতে কষ্ট হয় না। শেখ মুজিবুর রহমান সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন কিনা? তাঁর ব্যক্তিত্ত্বের প্রখরতার কারনে সম্মুখ সমালোচনাকারী তেমন পাননি হয়ত। তা সত্ত্বেও ন্যাপ ও কমিউনিষ্ট পার্টি আওয়ামী লীগারদের সীমাহীন দুর্নীতির সমালোচনা করায় কি ফল হয়েছে? ন্যাপ ও কমিউনিষ্ট পার্টির মিছিলগুলোতে আওয়ামী লীগ বাহিনীর হামলা, পুলিশের গুলিবর্ষণ। বিক্ষোভ করার দরুণ ন্যাপ কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস টফিস জ্বালিয়ে দেয়া এই সবই তো?
মাও, লেনিন বা খোমেনি সরাসরি গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছিল কি? আজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা (৭১রের পূর্ববর্তী সময়ে) শেখ মুজিবের গণতন্ত্র ছাড়া আর কোনো তত্ত্ব আমলে আনার কথা ছিল কি?
শেখ মুজিব কি ধরণের গণতন্ত্র দিয়েছিলেন? দিয়ে থাকলেও যার জন্য এত সংগ্রাম এত ত্যাগ, ক্ষমতা পাওয়ার পর সেই গণততন্ত্রই হয়ে গেল অকার্যকর ও ত্রুটিপূর্ণ!
এক হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানীরাও কিন্তু বুঝেছিল গণতন্ত্রের অপব্যবহার কিভাবে হয়।
গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ ভক্ত আমি না। গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর কথাগুলি রূঢ় বাস্তব। সবচেয়ে বড়ো ভয় অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হবার। কিন্তু সেখানে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীও তিনি ছিলেন। অথচ চাটুকার ও তোষামোদীদের রাজত্ব তাঁর সময়ে কেন হল? হেন বাহিনী তেন বাহিনী কেন গড়ে উঠল? দুর্নীতিগ্রস্থদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠল কেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ?
বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের আত্মনিবেদন নিয়ে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। সমালোচনা হয় অগণতান্ত্রিক ভাবে অফুরন্ত ক্ষমতা হাতে রাখা এবং তার সঠিক ব্যবহার করতে না পারাকে। অন্য কেউ হলে বলা হত তিনি ব্যর্থ ছিলেন কিন্তু মানুষটা শেখ মুজিবুর রহমান বলে আমরা বলি তিনি কিছু ভুল করেছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ মুজিবুর রহমান ব্যর্থ ছিলেন বললে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর অবদানকে কি অস্বীকার করা হয়? উত্তর অবশ্যই না তারপরেও এই মনোভাব সকল সময় আওয়ামী লীগারদের মধ্যে কাজ করে কি? করে থাকলে প্রকৃত ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে তা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কিনা।
থিওরির দোষগুণ নিয়েও কথা বলা যায়। থিওরিটা তো আর হাওয়া হয়ে যায় নি।
তবে বিএনপি আর জামাতিদের বাকশাল বাকশাল চিৎকারে আসলেই কান ঝালাপালা হয়ে যায়। বিএনপিদের চিৎকার কবে থামবে জানি না তবে আপাতত জামাতিদের চিৎকার থামলেও শান্তি।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত করূণ পরিস্থিতির ম্যধ্য দিয়ে আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশকেও যেতে হয়েছে। পাজল অস্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এর সাথে আরও একটা বড় সমস্যা ছিল। সেটা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশাসনিক অদক্ষতা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, ‘চারিদিকে সব চাটার দল’ এবং ‘লোকে পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি’ কিন্তু কিছু করতে পারেন না। সমাধান হিসেবে বেছে নেন বাকশালকে!
রাষ্ট্রগঠনে যুদ্ধকালীন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের (মওলানা ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং মনোরঞ্জন ধর) উপেক্ষা করলেন কেন? তিনি থাকতে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ত্যাগী ও দূরদর্শী নেতা তাজউদ্দীন আহমদকে , যিনি একটি যুদ্ধ পরিচালনায় যোগ্যতম নেতৃত্ব দিয়েছেন, কোণঠাসা হয়ে পড়ে থাকতে হয় কেন?
@নাসির উদ্দীন,
এরকম সমালোচনা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। এরই নাম বোধ হয় আত্মসমালোচনা। মুক্তমনায় আপনার উপস্থিতি ও লেখা কামনা করি। :yes: :yes:
@নাসির উদ্দীন, যুক্তিপুর্ন ব্যাখ্যা। :yes:
“মুজিবই ছিলেন বাঙলাদেশে প্রকৃত একনায়ক – মহাএকনায়ক; তাঁর পরে যে সামরিক স্বৈরাচারীরা এসেছে, তারা তাঁর পাশে তুচ্ছ, আমের আঁটির ভেঁপুবাজানো বালকমাত্র।” (হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” থেকে, পৃঃ ৫৭-৫৮)
আমি মুজিবের মতো মহাএকনায়কের বা কোনো সামরিক স্বৈরাচারীর শিশ্ন চুষে, আপনাদের মতো করে, বেঁচে থাকতে পারবোনা।
বাকশাল বা সমাজতন্ত্র কখনো বাস্তবে সম্ভব নয়, বুলিতে, কাগজ কলমে, আর রুপকথায় ছাড়া। এত বয়স হলো আপনাদের, পৃথিবীর ইতিহাস দেখে অন্তত এতটুকু হয়তো বোঝা উচিৎ ছিলো। মনে রাখবেন, ইতিহাস কিন্তু একই বৃত্তের সাধক, বারবার তার একই রুপের দেখা দেয়। এটা যদি ভুলে যান তবে বাকশাল বা সমাজতন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারেন।
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটি পড়েছি, তবে আপনাদের মতো করে, মুজিবের ভূতের কোলে বসে পড়িনি।
দেশ নয়, দেশের মানুষদেরকে ভালবাসুন। ব্যাক্তি নয়, ব্যাক্তির ধ্যানকে ভালবাসুন। তা না হলে নিজের সাথে ভন্ডামী হবে, মহাএকনায়ক হয়ে উঠবেন।
একটা টাইপো হয়ে গেলো শেষ বাক্যটায়। মুজিবের প্রেমে পড়ে যাবেন লেখতে গিয়ে সঙ্গে বাকশালও যোগ হয়ে গেছে। বাকশাল বাদে পড়তে হবে বাক্যটা। হুমায়ুন আজাদ স্যার তার বইয়ে মুজিবকে ছোটো করে কিছুই লেখেননি
মুক্তমনার সবাইকে অভিবাদন। সুহৃদ আকাশ মালিক আমার লেখাটি এখানে রিপোস্ট করেছিলেন। তাকে ধন্যবাদ। এরপর আদিল মাহমুদ ভাইয়ের কাছে শুনলাম এখানে নাকি বেশ বিতর্ক হচ্ছে। হাতে সময় ছিলো না বলে যোগ দিতে পারিনি। সেটা খুব একটা জরুরীও ছিলো না। কারণ এমন কোনো আহামরি পোস্ট এটা নয় যে খেয়ে না খেয়ে তর্কে নামতে হবে। তারপরও অভিজিৎদা পরোক্ষ একটা নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন, তার সম্মানেই আসা।
প্রথমেই বলে নিই আমি ভ্রান্তির শিকার মগজ ধোলাইর শিকার যে শিক্ষিত সমাজের ইঙ্গিত আমার পোস্টে দিয়েছি, মুক্তমনায় তাদের অনেকের দেখা মিলেছে। এরা স্রেফ মানতে নারাজ। আকাশ মালিক মূল পোস্টের দুটো লিংক মিস করেছিলেন। এর একটি বাকশাল নিয়ে অন্যটি যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা সংক্রান্ত বিতর্ক। এ দুটো থাকলে ও তাতে গুতোলে অনেকের এই পোস্টকে রেফারেন্সবিহীন গালগল্প বা লেখকের নিজস্ব অভিমত জাতীয় তকমার কষ্টটা কমতো।
আমি এই পোস্টে আমার জাতির পিতার বিরুদ্ধে কিছু অপপ্রচারকে মিথ্যে বলেছি, সাধ্যমতো যুক্তি এবং প্রমাণ দিয়েছি। সেটা কারো কারো গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটা একান্তই তার বা তাদের সমস্যা। মুজিবকে আমি জাতির পিতা মানি। হতে পারে আপনার জাতির পিতা ইব্রাহিম কিংবা মাও সেতুং কিংবা কায়েদে আযম। আমরা কেউ মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মপ্রচারকের জীন বহন করি, কেউবা দিনেমার খালাসি কিংবা ইংরেজ নীলকরের। মারাঠা মঙ্গোলরাও বাদ পড়েনি। স্রেফ ভাষা ও সাংস্কৃতির আলোকে বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস তাই নাও আসতে পারে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাড়িতদের একজন। আর এই মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিলো জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। আমি মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যাবতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়ি। সুবাদেই বঙ্গবন্ধুও এসে পড়েন। স্বাধীনতার তিনি স্বপ্নদ্রষ্টা বলেই আমাদের জাতির পিতা। তার বিরুদ্ধে কেউ উল্টাপাল্টা বললে সেটা ডিফেন্ড করা বাঙালী হিসেবে আমার কর্তব্য। আর কেনো তার বিরুদ্ধে এত কুকথা ছড়ানো হয় সেটা আমি পোস্টে বলেছি।
অনেকে বাকশাল নিয়ে নানা কথা বলেছেন। এটিকে বঙ্গবন্ধু নিজের মুখে বলেছেন দ্বিতীয় বিপ্লব। এর মূলে ছিলো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ এবং আমলাতন্ত্রের বিনাশ বঙ্গবন্ধুর এই পরিকল্পনায় ছিলো। তিনি বারবার ৫ ভাগ সুবিধাবাদীর জায়গায় ৯৫ ভাগ দরিদ্র বাঙ্গালীর শাসনের কথা বলেছেন। এটি একই সঙ্গে সেই সময়ের সমাজতন্ত্রী বিপ্লবীদের জন্য একটি সপাট চড় ছিলো। তারা মাওয়ের থিসিস আর চে গুয়েভারার থিসিসে বিপ্লবের কথা ভেবেছেন যার উপযোগিতা এই বদ্বীপে নেই। ট্রটস্কি লাইনে সিরাজুল আলম খান বলেছেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা। লাখো মেধাবীকে বিপ্লবী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে আত্মঘাতে নামিয়েছেন। মুজিব দিলেন বাংলার উপযোগী সমাজতন্ত্র। নাহ, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়।
কেউ কেউ বলেছেন একদলীয় শাসনের কথা। শাসন সবসময় একদলই করে। বহুদলীয় হয় গণতন্ত্র, তারপরও শাসন ক্ষমতা এক হাতেই থাকে। বাকশালে একীভূত দলগুলো বাদে মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কারা ছিলো যারা মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন? আমি লিখেছি যে কোনো বিপ্লব (ডান কিংবা বাম) শেষে তার ধারাবাহিকতার জন্যই অন্য কোনো তত্বকে আমলে আনা হয় না। সেটা মাও করেননি, লেনিন করেননি, খোমেনি করেননি। মুজিব গণতন্ত্র দিয়ে বুঝেছেন সুযোগসন্ধানীরা এর অপব্যবহার কিভাবে করে। যাহোক, বাকশাল থিওরিতেই ছিলো, বাস্তবায়ন হয়নি। হলে না হয় এর দোষগুণ নিয়ে তর্কে নামা যেতো। শুধু শুধু হাওয়ার উপর ঘুষি চালিয়ে শক্তিক্ষয় আর না করি।
অনেকে বলছেন শাসক হিসেবে মুজিব ব্যর্থ। বিপ্লব তো দুঃশাসনের থাম্বস ডাউন দিলেন। সুশাসন বা দুঃশাসন ব্যাপারটা যারা বোঝেন তাদের আমি একটা পাজল দিতে চাই। আপনাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হলো। আপনার হাতের সমস্যাগুলো তুলে ধরছি : ১. কোটি কোটি লোক স্বজনহারা, ঘরবাড়ি জ্বলেপড়ে গেছে। ২. নদীনালায় তখনও লাশ, মাছ খাবার অনুপযুক্ত, জেলেরা বেকার। ৩. চাষাবাসও তেমন হয়নি যুদ্ধের কারণে। ৪. ভারত থেকে এক কোটি শরণার্থী দেশের পথে। এদের খাবার জোগাড় করতে হবে। ৫. দুই লাখের উপর ধর্ষিতা, তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। ৬. অবৈধ অস্ত্র প্রচুর, এগুলো নানা সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৭. স্বাধীনতাবিরোধীরা (মাওবাদীরাও স্বাধীনতা স্বীকার করেনি) সক্রিয়, এরা পাটের গুদামে আগুন দিচ্ছে, ব্যাংক লুট করছে, রাজনীতিবিদ ও পুলিশদের হত্যা করছে, নাম দিচ্ছে বিপ্লবের। ৮. পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী সমস্যা, বিনিময়ে দুই লাখ বাঙালীকে জিম্মি করা হয়েছে। ৯. একই কারণে আরব দেশগুলো স্বীকৃতি দিচ্ছে না, যুক্তরাষ্ট্রও সাহায্য দিতে গরিমসি করছি। ১০. শীতল যুদ্ধের সে সময়টা মেপে পা ফেলার। রাশিয়া চাপ দিচ্ছে তার ব্লকভুক্তির। ১১. চীন জাতিসংঘের সদস্যপদ আটকে রেখেছে ভেটো দিয়ে। অথচ দেশের স্বীকৃতিটা খুব জরুরী। ১২. সারা বিশ্বে একটা অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, দাতাদের হাত বন্ধ। ১৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেমে নেই, বন্যার পর অবশ্যম্ভাবী একটা দুর্ভিক্ষ এসে হাজির। আপাতত এই সমস্যাগুলোর একটা দুর্দান্ত সমাধান দিয়ে আপনি সুশাসন কায়েম করুন।
অভিজিৎদা একটা চমৎকার কথা বলেছেন। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে সেটাও প্রমাণাদি সহকারে দাখিল করা উচিত। এতে বিতর্কটা উপভোগ্য হয়। এখানে সেটার বেশ অভাব বোধ করলাম। সেই গতানুগতিক বকাবাজি যা যুগযুগ ধরে চলে আসছে স্রেফ শোনা কথার উপর ভিত্তি করে। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার দেখলাম হুমায়ুন আজাদ স্যারের ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে মুজিব আমলকে দুষছেন। হাস্যকর। আমি নিশ্চিত এরা বইটা পড়েনি। সময় থাকলে স্ক্যান করে আপলোড করে দিতাম। প্লিজ সংগ্রহ করে পড়ুন, মুজিব আর বাকশালের প্রেমে পড়ে যাবেন!
জানি এই মন্তব্যটাকেও ধুয়ে দেওয়ার মতো দিগগজ কম নেই মুক্তমনায়। আমি বিনীতভাবে সেই বিতর্ক থেকে অব্যহতি চেয়ে নিলাম। শুধু একটা কথা, প্রচারণার জবাবে আমি যা লিখেছি তার প্রতিটা অক্ষর আমি ধারণ করি, বিশ্বাস করি। আর এই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই আমার লড়াইটা চলবে।
@অমি রহমান পিয়াল,
😕
@অমি রহমান পিয়াল,
হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?” (আগামী প্রকাশনী, ২০০৪) থেকে (পৃষ্টা ৬৩), তাঁর স্বভাবসুলভ ভাষায় –
“আদি, দূর্গত, করুণ, নিহত সংবিধানে ছিলো দু বারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না, থাকতে পারবেন না। সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান নকল ক’রে রচিত হয়েছিলো এটি। রচনার সময় তাঁদের হয়তো মনে ছিলো না জর্জ ওয়াশিংটনের কথা।
“চতুর্থ সংশোধনীতে তা লোপ করা হয়, বিধান করা হয় তিনি, অর্থাৎ মুজিব, যতোবার ইচ্ছে ততোবার, আজীবন, রাষ্ট্রপতি থাকতে পারবেন। মুজিব তাই চেয়েছিলেন? নিশ্চই চেয়েছিলেন। মুজিব বেঁচে আছেন, অথচ অন্য কেউ বাঙলাদেশ চালাচ্ছে, এটা মুজিব ও তাঁর পুজোরীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলো না। কিন্তু এটা ছিল নিয়তির নির্মম পরিহাস।
“রাষ্ট্রপতিকে অমর ও প্রভু ক’রে রাখতে হবে – এই ছিলো চতুর্থ সংশোধনীর পবিত্র উদ্দেশ্য। একটি কথা তারা লেখে নি যে রাষ্ট্রপতি চিরকাল জীবিত থাকবেন, ম’রে গেলেও তাঁকে জীবিত গণ্য করতে হবে”।
হুমায়ুন আজাদ এর পরে ব্যাখ্যা দেন চতুর্থ সংশোধনীতে কিভাবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারন বা অভিসংশন করার প্রক্রিয়াকে চরম দুরূহ (অসম্ভবই বলা উচিত) করে তোলা হয় (পৃষ্টা ৬৩-৬৪)।
“বিধাতার বিরুদ্ধে কেউ অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে না। বলা যেতো রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা একধরনের রাস্ট্রদ্রোহিতা; কার এতো সাহস যে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিধাতার বিরুদ্ধে?
“এটা অসুন্দর দেখাতো হয়তো। যারা চতুর্থ সংশোধনী এনেছিলো, তাদেরো সৌন্দর্যবোধ ছিলো! তাই বলা হয় সংবিধান লংঘন (সেটি তখন কোথায় যে তাকে লংঘন করবেন?), মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যাবে; তবে একটা গগনচুম্বী ‘কিন্তু’ জুড়ে দেয়া হয়।
“বলা হয় অপসারণের প্রস্তাব আনতে হ’লেই লাগবে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা, আর তা গৃহীত করার জন্যে লাগবে তিন-চতুর্থাংশ গরিষ্ঠতা। অর্থাৎ যদি ১০০ জন সদস্য থাকে, তাহলে প্রস্তাব আনতেই লাগবে ৬৭ জন, আর গৃহীত করানোর জন্যে লাগবে ৭৬ জন। যা এক অসম্ভব ব্যাপার; এর চেয়ে সূর্যকে একদিনের জন্যে উঠতে না দেয়াও সহজ।
“রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠেন সংবিধানের থেকেও পবিত্র। কেননা সংবিধান, একটা তুচ্ছ জিনিশ, সংশোধন করতে লাগে ২/৩ গরিষ্ঠতা, আর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে লাগে ৩/৪ গরিষ্ঠতা। রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠেন সংবিধানের প্রভু; তিনি অনেক ওপরে সংবিধানের; সাত আশমানের ওপর বিরাজ করেন তিনি।
“মুজিব হয়ে ওঠেন প্রভু, সংবিধান হয় তাঁর পদতলের পাপোশ”।”
দুঃখিত, আমি মুজিবের প্রেমে পড়তে পারলাম না।
শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে নিরপেক্ষ আলোচনা করতে হলে তার সমগ্র কর্মজীবনকে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাকে বিশ্লেষণ করার আগেই যদি অন্ধ বিশ্বাস কিম্বা বিরোধী মনোভাব পোষণ করা হয় তাহলে তার ফল সে রকমই হবে। আবেগতাড়িত ভালোবাসার মোহ কিম্বা বিরাগভাজনের চিন্তাগুলো দূরে ঠেলে দিয়ে আলোচনা করলে, সেটাই হবে উপযুক্ত বিশ্লেষণ বা মূল্যায়ন। একপেশে দৃষ্টিভঙ্গী অবশ্যই দূর করতে হবে।
মোকছেদ আলী এক অখ্যাত ব্যক্তি। তিনি কোনো সময়ই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন নি। তার সামনে যা ঘটতো তিনি সেগুলো লিখে রাখতেন। তার লেখা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি-
(…মানুষের মৃত্যুতে উল্লাসের নৃত্য আমি দেখিয়াছি- ১৯৭৫ সনের ১৫ ই আগস্টে। সকালের রেডিওতে ঘোষণা দিল, “স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে খতম করা হইয়াছে। বাংলাদেশের জনগণের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মত চাপিয়াছিল, সেই শেখ মুজিবকে খতম করা হইয়াছে। মার্শাল ল জারী করা হইয়াছে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন খন্দকার মুস্তাক আহম্মদ। আপনারা কেহ বাড়ির বাহির হইবেন না। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কেহই ঘরের বাহির হইবেন না।”
৭॥. কোটি বাংগালীর প্রিয় নেতা মুজিবকে কে বা কাহারা হত্যা করিল? যাহারা হত্যা করিল তাহাদের নিকট শেখ মুজিব স্বৈরাচারী নেতা হইয়া গেল। ‘স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়াছে- শুনিয়াই বুঝিতে পারিলাম শেখ মুজিবের জন্য প্রকাশ্যে শোক প্রকাশ করা যাইবে না।
শেখ মুজিবের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর শুনিয়া কিছু মানুষ আনন্দ উল্লাসে নৃত্য করিতে লাগিল। যাহারা মুজিবের অনুসারী ছিল, মুজিবকে যাহারা ভালবাসিত তাহারা শোকে দুঃখে মূহ্যমান হইয়া আত্মগোপন করিল।….)
মোকছেদ আলী আরো লিখেছেন-
সোমবার, ২ রা নভেম্বর ১৯৭৫। দোকানে বসিয়া আছি। পাশের শামছুলের দোকান হইতে কে একজন বলিল- “ঢাকা রেডিও সেন্টার বন্ধ। রাজশাহীতে শুধু বাজনা বাজছে।” আমি বললাম- “যান্ত্রিক গোলযোগ হতে পারে।” প্রতিবাদ করিয়া সেই ছেলেটি কহিল, না, যান্ত্রিক গোলযোগ নয়। ঢাকায় কোন গন্ডগোল হতে পারে। আমি তখন তাহার কথায় সায় দিয়া কহিলাম, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে গোলযোগ হওয়া মোটেই বিচিত্র নহে, তবে এ-বিষয়ে মন্তব্য করা এখনি ঠিক হবে না।”
ঢাকায় গোলযোগের কথা ও রেডিও সেন্টার বন্ধের কথায় পথ চলতি কে একজন মন্তব্য করিল, ঢাকায় এখন পাকিস্তান হইয়া গিয়াছে। ফটো স্টুডিওতে বসিয়া থাকা একজন যুবক কহিল, “ঢাকা পাকিস্তানও হতে পারে আবার ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও হতে পারে। কিসের মধ্যে যে কি হচ্ছে, তা এখনি কিছুই বলা যাবে না।”
বিকাল বেলায় মানুষেরা এই রেডিও সেন্টার বন্ধ নিয়ে নানারূপ আলোচনা মন্তব্য করিতে লাগিল। সন্ধ্যার সময় হঠাৎ লাইট অফ হইয়া গেল। মানুষেরা আরো কিরূপ যেন আতঙ্কগ্রস্থ হইল।
তারপর সন্ধ্যার সময়, কে একজন কহিল, মোস্তাক খোনকার আর প্রেসিডেন্ট নাই। খালেদ মোশাররফ এখন প্রেসিডেন্ট। শেখের দল আবার পাওয়ারে গেল। দেশ এবার রক্ত গঙ্গায় বয়ে না যায়। জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হল। শেখ পন্থীরা উল্লাস করিতে লাগিল। খোনকার পন্থীরা ম্রিয়মান হইল।
শেষ রাত্রে চেতন পাইয়া রেডিওতে ভ্যলুম দিলাম। একি? ইসলামী সঙ্গীত বাজিতে লাগিল। হঠাৎ মনের মধ্যে নতুন চিন্তা উদয় হইল। তবে কি খোনকারের দল আবার পাওয়ারে গেল। চিন্তার অবশান ঘটাইয়া রেডিওর ঘোষক ঘোষণা করিল, এক্ষুনি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ভাষণ দিবেন।
রেডিওতে ঘোষিত হইল- আমি জিয়া বলছি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, আনসার ও জনগণের সহযোগীতায় বিদ্রোহ দমন করা হইয়াছে।
এরপর আবার ৩ নভেম্বর শেখ মুজিবের লোকেরা এক ব্যর্থ অভ্যুত্থান ঘটাইয়া খালেদ মোশাররফকে গতিতে বসায়।
৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার পাল্টা আক্রমণে খালেদ মোশাররফ ঢাকা ক্যন্টনমেন্টে নিহত হন। কিন্তু ঘন্টাখানেক পরেই আবার জিয়ার নেতৃত্বে সাবেক খোন্দকারের দল আবার পাওয়ারে গেল। দেখা যাক এরা আবার কি করে? কেউ কেউ তো বলিতেছে- ‘সব রসুনের পুটকি এক’।
মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট গবেষক অমি রহমান পিয়ালের এ লেখাটি আগেই অন্যত্র পড়েছি। এখন আবারো পড়লাম। খুবই আবেগতাড়িত ও বেশ ভালো একটি লেখা। কিন্তু যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুজিবীয় দুঃশাসনের চিত্র এতে নেই। বরং কথিত জাতির পিতার স্বৈরশাসকের ভূমিকা এতে বেশ খানিকটা আড়াল করা হয়েছে। :no:
রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে হুমায়ুন আজাদের বইকে তথ্যসূত্র ধরার ব্যাপারে আমার রিজার্ভেশন আছে। হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটি আমি পড়িনি, তবে তাঁর চারটি বই, একাধিক প্রবন্ধ ও প্রবচন সমগ্র পড়ে আমার মনে হয়েছে তাঁর রাজনীতি-বিশ্লেষণ খুবই অনুভূতিপ্রবন। রাজনীতিবিদ বাদে কেউই রাজনীতি পছন্দ করে না, তাই বলে “সব ব্যাটা চোর” বলে বসে থাকলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি।
শেখ মুজিবুর রহমান তো দেখছি একজন ছোটোখাটো হযরত হয়ে উঠেছেন। হযরতকে নিয়ে কিছু বললেই কাঁপে দুনিয়া, আর শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছু বললে কাঁপে ৫৬০০০ বর্গমাইল।
@আদনান,
এই আশঙ্কাটা মোটেও অমূলক নয়। মুজিবের নামের আগে বঙ্গবন্ধু বা জাতির পিতা না বলাতে অনেককে তেড়ে আসতে দেখেছি – অনেকটা মুহাম্মদের নামের শেষে দরুদ না পড়লে যেমন ধর্মান্ধরা ক্ষিপ্ত হন। বাংলাদেশের এই নতুন হযরতের ইমেজ রক্ষার জন্য সংবিধান সংশোধন করার কাজ শুরু হয়েছে, তাঁর ‘ইমেজ’ (ছবি) অফিস-আদালতে ঝোলানো বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। ব্লাসফেমি আইনটা বানিয়ে ষোলকলা পূর্ণ করতে আর বেশি দেরি নাই ।
@আদনান, :laugh: :laugh: :laugh:
পড়লাম, অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন, আমি কেবল এইটুকু বলবো
@ আকাশ মালিক
আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটা লেখা প্রকাশ করার জন্য।
স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্ম ভালই বিভ্রান্ত। আমাদের মেকী স্বাধীনতাবোধ অনেক আছে, যেটা বিভিন্ন দিবসে প্রকাশ পায়। একাত্তুরের সময়কার নেতাদের নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে এত মতামত দেখে আমরা মনে হয় বিভ্রান্ত। অনেকেই পুরোন ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি তেমন পছন্দ করে না। তাই অনুরোধ থাকবে, আমার মাথায় আইডিয়াটা ঠিক মত আসছে না, যেটা বলতে চাচ্ছি অনেকটা এরকম, সেই সময়কার জাতীয় নেতাদেরকে নিয়ে তথ্য ও যুক্তিযুক্ত এবং যথা সম্ভব নির্মোহ একটা আর্কাইভ করার কথা মুক্তমনা কতৃপক্ষ ভেবে দেখবেন কি?
@আনাস,
ভাই, পড়ার কোন বিকল্প নেই। আপনি পড়বেননা অথচ আমার দেশ, জনকন্ঠ বা নয়াদিগন্ত থেকে ইতিহাস শিখবেন তাহলে তো বিভ্রান্তের পরিমাণ অনেক বেশী।
বই পড়েন, ১-২ টা দিয়ে হবেনা। অনেক পড়েন, সত্য জানা খুব একটা সহজসাধ্য কাজ নয়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে আপনার—এমনও শ্রুতি আছে যে মুজিবের চরিত্রহননের জন্য আর্মি অর্থায়নে বিদেশীদের দ্বারা বই লেখানো আছে।
শত্রু পক্ষের লেখা বইও পড়বেন, মানে পাকিস্থানী লেখকদের। সত্যানুসন্ধানে আপনার শত্রুর মুখে সমালোচনাটাও শুনা জরুরী। যাহোক, আপনার ইতিহাস জানবার চেষ্টা সফল হোক, এই কামনায়।
ধন্যবাদ।
তত@সিসিপাস, সহমত।
আমি সেইজন্য চেস্টা করি পাকিস্তানি জেনারেলদের লেখা সকল বই সংগ্রহ করার। মোটামুটি ভাল সংগ্রহ করেছি।
জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে এখন যত কথা হয় ,তার বিন্দুমাত্র আলোচনায় তিনি ছিলেন না পুরো একাত্তর জুড়ে।অধিকাংশ মানুষ তার নাম শুনেছিল যুদ্ধের পর।যারা তাকে এখন যুদ্ধের নায়ক বানাতে চান তাদের কাছে প্রশ্ন….
১..যুদ্ধের সময় তিনি বেতন নিতেন কিনা।
২..তিনি পুরো নয় মাস কোন গুলি ছুড়েছিলেন কিনা।
৩..তার অধীনস্হ সেক্টরের কোন যুদ্ধে উনি ঊপস্হিত ছিলেন কিনা।(অধিকাংশ
সেক্টর কমান্ডার যুদ্ধে উপস্হিত থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং আহত হয়েছেন)
৪..আপনাদের ভাষায় যুদ্ধের নায়ক জিয়াউর রহমান যুদ্ধের পর কবে দেশে
ফিরেছিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান যে কি ছিলো তা হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটিতে কিছুটা পাওয়া যাবে। আমি তার সময়ে ছিলাম না, তা আমার সৌভাগ্য,তার মতো একনায়কের সময়ে আমাকে আত্মহত্যা করতে হতো।
@আদনান,
আপনার বয়েস যদি ২৫-এর ওপরে হয়, তাহলে এরপর অনেক স্বৈরাচারের আমলেই আপনি বাস করেছেন। এতজন স্বৈরাচারের আমলেও যখন আপনার আত্মহত্যার প্রবৃত্তি হয় নি, তখন আপনার উদ্দেশে প্রথমত ওপরে করা সংশপ্তকের মন্তব্যটা তুলে ধরি:
দ্বিতীয়ত, ব্লগমণ্ডলে বহুলপ্রচলিত একটি উক্তি তুলে ধরি আপনার পরিচিতির সুবিধার্থে: “ল্যাঞ্জা ইজ এ ভেরি টাফ থিং টু হাইড।”
শেখ মুজিবের মরণোত্তর ফাঁসি চাই অলিভার ক্রমওয়েলের মতো (বিএনপির এক নেতা এমনই দাবি তুলেছিলেন ২০০১-২০০৬-এর সংসদে, তবে ক্রমওয়েলের কথা তিনি জানতেন না নিশ্চয়ই)।
@আদনান,
হুমায়ুন আজাদ নিজেই যখন আত্মহত্যা করেন নি, আপনি মরবেন কেন দাদা? এমন কী কথা হুমায়ুন আজাদের বইয়ে পেলেন যা আপনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে?
@আকাশ মালিক, :laugh:
@আদনান,
বিশ্বাস করুন সত্যিই বলছি আমার রীতিমত সন্দেহ হচ্ছে আপনি কি ঐ বইটা পড়েছেন নাকি?
(ভাইজান গঞ্জিকার সেবক নাতো?? :-/ )
@সাইফুল ইসলাম,
😀 :laugh: 😛 :lotpot: :hahahee: :clap2: :guru:
(ওভাবে বলতে নেই জনাব…… )
বাঙালি অনেক আবেগপ্রবণ জাতি। একথাটা প্রায়ই বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে আগে বলেছেন। উপরে ফরিদ ভাইও সেই একই কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আবেগের মাত্রাটা বোঝা যায় যখন পছন্দের কোন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নিজের পছন্দের ব্যক্তিত্বকে মহাপুরুষ বানাতে কারোরই যেন কার্পণ্য নেই। তা সে গান্ধীই হোক, রবীন্দ্রনাথই হোক কিংবা বঙ্গবন্ধু। যুক্তিবাদিদের প্রধাণ কাজই হোল যুক্তির নিরিখে তথ্যকে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসা, অন্ধ আবেগে গা ভাসিয়ে দিয়ে নয়। মুক্তমনার মত প্ল্যাটফর্মে অন্ধ স্তাবকতার চেয়ে যে যুক্তিসিদ্ধ আলোচনা এবং সমালোচনাই বেশি কাংক্ষিত এবং পছন্দনীয়, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে। কিন্তু তার পরেও দেখা যায় আমরা বহু সময়েই যুক্তি বাদ দিয়ে আবেগেরই স্মরণাপন্ন হই। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা একবার আমাদের সাইটে (তখন ব্লগ ছিলো না) নির্মোহভাবে আলোচনা শুরু করেছিলাম। প্রশংসার পাশাপাশি উঠে এসেছিল নানা ধরণের অন্ধকার দিকের কথাও। রবীন্দ্র স্তাবকেরা খুশি হননি। অনেকেই দেখেছিলাম নারীদের সম্পর্কে (রমা বাঈ-এর বক্তৃতা উপলক্ষে দ্রঃ) চরম অবমানকার উক্তিগুলোকেও মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে সায় দিয়ে চলেছেন – রবীন্দ্রনাথের বাণী বলে কথা! বলা বাহুল্য এ ধরণের আচরণ আসলে ধর্মবাদীদের আচরণের সাথে (যারা অবলীলায় নবী পয়গম্বরদের সব কিছু ডিফেন্ড করেন) খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করে না। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। তিনি নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির এক অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তার মত ক্যারিশমেটিক নেতা বাঙ্গালি জীবনে এখনো দ্বিতীয়টি আসে নি। তার সুযোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়াটা প্রায় অসম্ভবই ছিল। কিন্তু তারপরেও তিনি দোষত্রুটির উর্ধে ছিলেন না। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাঙ্গালিদের ঐক্যবদ্ধ করতে যতটা সফল ছিলেন বোধ হয় ততটাই ব্যর্থ ছিলেন দেশ পরিচালনায়। অবশ্য সে সময় যুদ্ধত্তোর দেশকে বিভিন্ন কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তারপরেও দেশ পরিলনায় মুজিবের সঠিক পরিকল্পণার অভাব অপ্রকাশিত থাকেনি কখনো। সব কিছু বাদ দেই, যেভাবে তিনি বাকশাল কায়েম করেছিলেন, কিংবা তরা সব বাঙ্গালি হইয়া যা বলে চাকমা জাতিসত্ত্বাকে ঠিক পাকিস্তানী কায়দায়ই অস্বীকার করেছিলেন – তা রাষ্ট্রনায়কের কোন দুরদর্শীতাকে তুলে ধরে না। এগুলো কিন্তু সবারই মনে রাখতে হবে। মুজিব কিংবা রবীন্দ্রনাথকে নবী পয়গম্বরের মতো স্তব করার কিছু নেই। তাদের ‘মহাপুরুষ’ বলতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু মহাপুরুষদের অমহাপুরুষসুলভ বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করাটাও কিন্তু মুক্তমনাদের ক্রিটিকাল থিংকিং এর অবিচ্ছেদ্য অংগ। হুমায়ুন আজাদ তার নারী গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের নারী ভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। আহমদ শরীফ তার বইয়ে কাঙ্গাল হরিনাথের উপর ঠাকুর বাড়ির প্রবল আক্রোশের কথা সুনিপুন শিল্পীর মতো তুলে ধরেছেন। প্রবীর ঘোষ তার অলৌকিক নয়, লৌকিক গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে অনুকূল চন্দ্র সহ ভারত বর্ষের সব সম্মানিত পুরুষদের অযৌক্তিক ধ্যান ধারনার উল্লেখ করেছেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স মাদার টেরেসার অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে (কিভাবে তিনি কালোবাজারিদের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে দারিদ্র-ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতেন ইত্যাদি) বই লিখেছেন। তারা সেগুলো করেছেন তাদের মুক্তবুদ্ধির প্রতি দায়িত্ব থেকেই। কিন্তু তারপরেও রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের জায়গাতেই আছেন, মাদার তেরেসা তার জায়গায়। এ সব সমালোচনা থেকেই কিন্তু পাঠকেরা খুঁজে পেয়েছেন জীবনের নতুন মাত্রা। অন্ধ স্তাবকতায় আটকে থাকলে আর যাই হোক সামনে এগুনো যায় না।
কিন্তু তারপরেও কিছু কথা থাকে। যারা এ ধরণের স্তাবকতার বিরোধিতা করেন নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বলে দাবী করেন, তাদেরও কিছু দায়দায়িত্ব থাকে। অনেক সময় তারাও বহুবছর ধরে চলে আসা গুজবকেই শিরোধার্য করে আক্রমণ শানান । শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাত ছিলেন, তিনি মেজর ডালিমের মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, মুজিব শিরাজ সিকদারকে নিজ হাতে হত্যার পর ‘কোথায় সিরাজ সিকদার’ বলে দম্ভোক্তি করেছিলেন ইত্যাদি সহ বহু শোনা কথার শরনাপন্ন হয়ে থাকেন, বলে বসেন, মুজিব ও তার ছেলে শেখ কামালের কুকীর্তিগুলিও কি গালগল্প? কিন্তু তাদের যদি বলা হয়, শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করেছিলেন, তো কোন ব্যাংক ছিল সেটা, ঢাকার কোন ব্যাংকের শাখা, ম্যানেজার কে ছিলো – এই তথ্য গুলো বই থেকে নিয়ে আসতে – তখন আবার কেউই পারবেন না। আমি এর আগেও এ বিষয়ে তর্ক তথ্য চেয়েছি – কেউই দিতে পারেননি।সবাই শেষ পর্যন্ত সম্বল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শোনা কথাকে। তাই হবার কথা – কারণ শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতির মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। যে টা হয়েছিল শিরাজ সিকদারকে ধরার সময় পুলিশের গুলি তার পায়ে লেগেছিল। ডালিমের স্ত্রীকে ভাগানোর ব্যাপারটাও বানোয়াট। সেটা ডালিমই তার নিজের ওয়েব সাইটে লিখে রেখেছিলেন। ডালিমের লিখিত গ্রন্থ “যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি ” সেখানেও একই কথা তিনি বলেছিলেন। শেখ কামাল মোটেই এগুলোতে জড়িত ছিলেন না। ইন্টারনেটেও নীড় সন্ধানী র এই শেখ কামাল কি কারনে মেজর ডালিমের বউকে হাইজ্যাক করেছিল? পোস্ট নুরুজ্জামান মানিক মেজর ডালিমের বই থেকে সরাসরি অংশ বিশেষ তুলে দিয়েছিলেন- সেটা পড়া যেতে পারে (পোস্টের ৯ নং মন্তব্য)। এছাড়া উপরে আদিল মাহমুদের দেয়া রেফারেন্সটিও দেখুন। শেখ কামাল সংক্রান্ত বিভিন্ন মিথ গুলোর খন্ডন ইন্টারনেটেই আছে। যেমন নীচের লিঙ্ক গুলো বিভিন্ন সাইট থেকে দেখা যেতে পারে –
পল গোয়েবল বিগ লাই থিওরী,৩৫ বছর ধরে লালন করা কয়েকটি মিথ্যা । ইতিহাসের কাঠগড়ায় যখন সত্য ।
স্মৃতির ঝাঁপি : ইতিহাসের কালো অধ্যায়-২
শেখ কামাল কি কারনে মেজর ডালিমের বউকে হাইজ্যাক করেছিল?
সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা
ওই লিঙ্কগুলোতে যা লেখা আছে সবই ঠিক কিংবা শেখ কামাল ভাল মানুষ ছিলেন তা কিন্তু বলার চেষ্টা করছি না। যেটা বলছি, স্তাবকদল যদি শেখ মুজিবের মাহাত্ম্য নিয়ে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকেন, বিরোধীরাও একই দোষে দোষী হবেন, যদি তারাও স্রেফ লোককথার মত কিছু মিথকে সত্য বলে ধরে নিয়ে সেটাকে স্তাবকদলের উপর ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। আসলে দুই পক্ষকেই সচেতন থাকতে হবে তথ্য এবং অনুসন্ধানের প্রতি।
অফটপিকঃ অমি রহমান পিয়ালকে লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আকাশ মালিককেও ধন্যবাদ এই লেখাটি লেখকের অনুমতি নিয়ে এখানে পোস্ট করার জন্য। এ সংক্রান্ত আলোচনাগুলো না হলে অপ্রকাশিতই থেকে যেত। আমি আকাশ মালিককে অনুরোধ করব অমি রহমান পিয়ালকেও এখানে এসে আলোচনার অনুরোধ করার জন্য। তার লেখা তিনিই ভাল ডিফেন্ড করতে পারবেন।
@অভিজিৎ,
:yes:
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছিলেন “বাঙালী প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ”, মাঝে মাঝে মনে হয় বাঙালী প্রচ্ছন্ন মূর্তিপূজক, ধর্ম যাই হোক না কেন।
তবে শেখ মুজিবের অবদানকে সমূলে উৎপাটিত করার চেষ্টা যে হয়েছিল (এবং বন্ধ হয়নি), প্রতিক্রিয়াশীল স্তাবকতার বিরোধিতা করার সময়ও এটা মনে রাখা দরকার, যেটি আপনি, আদিল মাহমুদ ও অন্যান্যরা অসাধারণ ভাবেই করেছেন :rose: ।
তেরেসার ব্যাপারে একটি মন্তব্য। হিচেন্সের মতে তাঁর সদ্গুণ আদৌ কিছু নেই, পুরোটাই ফাঁকি। রবি ঠাকুর বা মুজিবের ভাল-মন্দ মিশানো আলোচনার চেয়ে হিচেন্সের সমালোবনার সুর ভিন্ন।
@রৌরব,
একই কথা বলা যায় জিয়ার বেলায়ও। মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবদানকেও সমূলে উৎপাটিত করার চেষ্টা চলছে। এক আওয়ামী মন্ত্রীতো বলেই বসেছেন যে জিয়া নাকি পাকিস্তানের গুপ্তচর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে লড়েছিলেন।
@কালযাত্রী,
আওয়ামীরাও একই পথ ধরেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই অসূস্থ কালচার শুরু করল কে সেটা ভেবেছেন? বংগবন্ধু স্বাধীনতার পর ব্যার্থ ছিলেন মানলাম। তার সরকারের পতনে সেসময় মানুষ সামগ্রিকভাবে খুশীই হয়েছিল বলা যায়।
কিন্তু তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান জয় বাংলা কেন নিষিদ্ধ হয়ে গেল? যেই শ্লোগান দিয়ে দলমত নির্বিশেষে এমনকি জিয়াও যুদ্ধ করেছিলেন, যা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরনাদায়ক শ্লোগান সেই শ্লোগানও বংগবন্ধুর নানান অনাচারের সাথী ছিল তাই তাকে নিষিদ্ধ করতে হল? এর প্রতিবাদ কেউ করলে সে আওয়ামী দালাল চরমপন্থী হয়ে যাবে? ৭৫ এর পর কেন আমাদের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে বংগবন্ধু, ৪ নেতার কোন অবদান জানতে পারিনি? কেন খালি খারাপ দিকগুলিই প্রচার করা হত? এগুলির উদ্দেশ্য খুব সত ছিল বলে মনে করেন?
বংগবন্ধুর মৃত্যুদিনে কেউ ৩ বার জন্ম নেবার দাবী করে ৬০ পাউন্ড ওজনের কেক কেটে হাস্যমুখর পরিবেশে জন্মদিন পালন করলে সেই দলের নেতার প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল হবে?
জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের অবদানে সন্দেহ নেই। তবে বেশ কিছু অকথিত বিষয় আছে, যাই হোক সেগুলি এখানে বলতে চাই না। তবে তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন এমন কোন তথ্য নেই।
@আদিল মাহমুদ,
সংবিধানে বিসমিল্লাহ ,গোলাম আজমের নাগরিকত্ব, পাকিস্তান মুখী উল্টো বিবর্তন ইত্যাদি বাস্তবায়নের জন্যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর প্রয়োজন ছিল । হুমায়ুন আজাদের হত্যাকারীরা আজ তারই লেখা বই দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার যৌক্তিকতা প্রচার করছে । কি নির্মম পরিহাস !
@সংশপ্তক,
হুমায়ুন আজাদের ঐ বইটা কিন্তু অসম্ভব ভাল। বাংলাদেশের সামগ্রিক অধ:পতন নিয়ে এমন নির্মোহ নিরপেক্ষ সরল বিশ্লেষন আর কখনো পড়িনি। ঐ বইতে আওয়ামী বিরোধীদের অবদানও আছে।
ভাবখানা দেখলে মনে হ্য় যে এ দেশের যাবতীয় অনাচার, কুকাজ, ফ্যাসীবাদ সব আওয়ামী আর মুজিবের অবদান। আওয়ামীরা না থাকলে দেশ আজ আমেরিকা না হোক সিংগাপুর হত। অথচ এ দেশের ইতিহাসে আওয়ামী বিরোধী শিবিরই ক্ষমতায় থেকে বেশি। আওয়ামীদের মত এককভাবে কোন দলকে একচেটিয়াভাবে অপপ্রচারের শিকার হতে হয়নি।
@আদিল মাহমুদ,
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পিকিং পন্থী বামদের ভুমিকা সম্পর্কে কিছু আমাদের বলুন।
@সংশপ্তক,
কি দরকার ভাই নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি করার?
ডান বাম সবারই তো কিছু না কিছু সমস্যা আছে। ক্ষুদ্র কিছু পিকিং বামে কি করল তাতে কি এসে যায়।
তবে বামদের বেশ কিছু অভিযোগ সত্য। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব যেন বামদের হাতে কোনমতেই না যায় এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ছিল খুব সতর্ক। ভারতীয়রাও ছিল বামদের ব্যাপারে খুব সন্দিহান। এমনকি বহু যায়গায় বামদের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে ভর্তি হতে সমস্যা হয়েছে।
@আদিল মাহমুদ,
১৫ আগষ্টকে হালাল বা যায়েজ করার জন্যে তা জরুরী ছিল।
আমেরিকা বা সিংগাপুর বানানোর জন্যে ১৫ আগষ্ট ঘটানো হয়নি, হয়েছিল মস্কো বা পিকিং, মদিনা বা করাচী বানানোর জন্যে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, দ্বীর্ঘকাল আওয়ামী শুন্য রাজনীতির মাঠে মস্কো বা পিকিং পন্থিদের টেক্কা দিয়ে করাচী-মদিনা গ্রুপ অনেক এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। ২১ আগষ্ট যদি পুরোপুরি সফল হতো ——
থাক, বাক্যটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েই থাক।
@আদিল মাহমুদ,
শুধু ‘জয় বাংলা’ নিষিদ্ধকরণ কেন, মুজিব পরিবার সবংশে নির্বংশ করার পরিকল্পনাকারীদের উৎসাহপ্রদান (“তোমরা জুনিয়রেরা যখন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ, গো অন…”), নিজের হাতে না পারলেও প্রণোদনা হিসেবে মহিমান্বিত সূর্যসন্তানদের নানান দেশের দূতাবাসে প্রাইজ পোস্টিং, সর্বাংশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলার আপ্রাণ প্রয়াস, এমনকি সংবিধানে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বদলে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বসানো, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে ঘাতকদের রাজনীতি এবং রাজ্যশাসনে সাদরে আমন্ত্রণ, গণতন্ত্র্রের নামে ‘কিংস পার্টি’ তৈরি করে নিজের ক্ষমতালোভের রাগমোচন, হাজারে হাজারে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য ক্লিনজিং…বাব্বাহ, হাঁপিয়ে উঠছি। আর, এতো গেলো স্রেফ একটা আমল। বাকিগুলো বাদ দিলাম। ক্লান্ত খুব।
পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন কি না, জানি না। কোন সলিড প্রমাণ নেই। তবে, পাকিস্তানিরা কি এর চাইতে বেশি ক্ষতি করতে পারতো? সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার, প্রশংসনীয়ভাবে দেশের সার্বিক চেতনা দ্বিখণ্ডিত করা, যেকারণে আজ রাজনৈতিক হানাহানি সর্বব্যাপ্ত। আর কী চাই বলুনতো ঠিক?
অপ্রা: কেন বেগম জিয়া ‘৭১-এ তাঁর সংসার যিনি রক্ষা করলেন, তাঁর ও তাঁর পরিবারের উচ্ছিন্নদিনে জশনে জুলুছে মিলাদ ম্যহফিল করেন (ধরে নিন এটাও কানকথা), আর যিনি ‘৭১-এ পাকবাহিনীর তরফ থেকে তাঁর পাহারার দায়িত্বে থাকেন, তাঁর মৃত্যু সংবাদে নিদারুণ মর্মাহত হয়ে দ্রুতগতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও খোদ পাকিস্তানে শোকবার্তা পাঠান?
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
বাংলার লাভ ক্ষতি হিসেবে অনেকের কাছে এগুলির কোনই গুরুত্ব নেই।
শুধুই সেই বাকশাল, যা এমনকি আলোর মুখও দেখেনি সেটাই সবচেয়ে ক্ষতিকর। বাকশাল আমি নিজেও সমর্থন করি না। কিন্তু তার দায় আজ একা মুজিবকে কেন নিতে হয়? সেদিন কয়জনের এর প্রতিবাদ করেছিলেন? চাটুকারের দল তখন ছিল বাকশাল বন্দনায় ব্যাস্ত, আজ তাদের অনেকেই বাকশাল কত খারাপ তা নিয়ে বড় বড় কথা বলেন।
তখনকার পত্রপত্রিকায় নিয়মিত ছবি থাকত আজ অমুক পেশাজীবি দল মুজিবকে মালা পরিয়ে বাকশালে যোগদান করছেন। রাজনীতিকদের মাঝে শুধু তাজউদ্দিন, ব্যারিষ্টার মঈন, নির্মল সেন, ওসমানী বাদে কেউই বিরোধীতা করেননি। বলা হয় যে বিরোধীতা করার পরিবেশ ছিল না। এরা বিরোধীতা করায় এদের কি ক্ষতি করা হয়েছে?
@আদিল মাহমুদ,
দুপক্ষেরই অবদান আছে ইতিহাস বিকৃতকরণে সন্দেহ নেই। একপক্ষ খারাপ বলে আরেক পক্ষ ভাল হয়ে যাবে কেন? কিন্তু সব কিছুর মূলেই তো আছে মুজিবের দুঃশাসন। ১৯৭৫ এর ঘটনাবলী তো এরই প্রতিক্রিয়া জনিত পরিণতি। বাকসাল ঘোষণার পর তাজুদ্দিনই মুজিবকে বলেছিলেন “স্যর,এর দ্বারা আপনাকে গণতান্ত্রিকভাবে অপসারণের দ্বার বন্ধ করে দিলেন”। দেশ স্বাধীন হবার পর মুজিব যখন দেশে ফিরলেন তখন প্রেরণায় উদ্বেল গোটা জাতি তাঁর মুখ চেয়ে ছি্ল দেশকে যোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাবার আশায়। একটা ঐতিহাসিক সু্যোগ এসেছিল মানুষকে সঠিক পথে চালিত করার। কিন্তু চরম ভাবে নিরাশ করলেন তিনি। দল বড় হয়ে গেল দেশের চেয়ে। দুর্নীতি আর দলীয় রাজনীতিতে চরমভাবে ডুবে গেলেন তিনি। জয় বাংলা শ্লোগান নিষিদ্ধকরণ আনুষ্ঠানিকভাবে আইনের মাধ্যমে করা হয় নি বলে জানি। এটা আইনীভাবে নিষিদ্ধকরণ করা হলে যেমন হাস্যকর হবে এটা নিয়ে আবেগময় ইস্যু করাও তেমনি হাস্যকর। এটা ভবঘুরের সাথে একমত হয়ে বলতে হয় আমাদের দেশের মানুষের সেই আজব বৈশিষ্ট্যেরই এক দিক। দেশের কি ভাল বা মন্দ করা হল সেটাই বিবেচ্য হয়া উচিত বাস্তবাদী মুক্তমনের লোকের কাছে। এটা মনে রাখতে হবে যে মুজিব/বাকসালের পতনে ১৯৭৫ এ গোটা দেশ হাঁফ ছেড়ে বেচেছিল, সেটা আপনিও স্বীকার করেন। সে কারণেই জয় বাংলা শ্লোগান যেটা মুজিব বাকসালের সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেটাও ধিকৃত হয়ে গিয়েছিল জনগণের মাঝে এর সাথে। জয় বাংলা বলা মানে তো বাকসালের পক্ষে শ্লোগান দেয়া তখন। কাজেই বাস্তব কারণেই ঐ শ্লোগান অ-জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল। মুজিব দলের নেতা হয়ে দুঃশাসনে নিমজ্জিত না হয়ে দেশের নেতা হলে এরকমটি ঘটতনা।
দেশের আজ এই বিভক্তির মেরুকরণে তিন দলেরই অবদান আছে। কিন্তু যেটা আগে বললাম মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা উপেক্ষা করে দলের নেতা হয়ে দুঃশাসনে নিমজ্জিত না হলে ইতিহাস অন্যদিকে মোড় নিত। সেটাই সবাই আশা করেছিল।
@কালযাত্রী,
বাংগালী চরিত্র যা দেখেছি তাতে মুজিব হাইপোথিটিক্যাল হলেও বলতে পারি যে মুজিবের যায়গায় অন্য কেউ বা দল ৭২ সালে ক্ষমতায় বসলেও ঘটনার এমন কিছু ১৯/২০ হত না। পরবর্তিকালের মুজিব বিহীন বাংলার ইতিহাস তেমনই বলে। যাক সে কথা। মুজিবের শাসন ভাল ছিল না সব সময়ই স্বীকার করি, যতই সীমাবদ্ধতা থাকুক তিনি দলের কাছে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারেননি যার মাশুল দেশকে দিতে হয়েছে। বাকশাল নিয়ে যা বলার আমি বলেছি, বহুজন বলেছে।
দেশে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা থেকে জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামা নুতন কিছু নয়। চার্চিলের মত নেতা পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনেই নির্বাচনে হেরেছিলেন। আর থাক তো আমাদের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ।
মুজিব খারাপ হলে জয় বাংলার মত মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপক শ্লোগান বাতিল করে দিতে হবে? খুবই চমতকার যুক্তি। তাহলে তো মুক্তিযুদ্ধকেই বাতিল করে দিতে হয়, তার নেতৃত্বে তো সেই মুজিব ও আওয়ামী গং। তার কম চেষ্টা অবশ্য হয়নি। মুজিব খারাপ তাই হয়ত আমাদের স্কুলে ইতিহাস পড়ানো হত “হানাদার বাহিনী’, পাকিস্তানী শব্দটা এই জন্যই বাদ দেওয়া হত। কারন শত্রুর শত্রু মানে তো নিপাতনে বন্ধু। তাই না? মুজিবের শত্রু পাকিস্তান, আবার পাকিস্তানের শত্রু মুজিব। এবার বুঝতে পেরেছি।
মুজিবের কড়া সমালোচকরা আজকাল দেখি হঠাত তাজউদ্দিনের বিরাট ভক্ত বনে গেছেন। তো সেই তাজুদ্দিনের অবদানই বা কেন আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি? তিনি এককালে মুজিবের সাথে রাজনীতি করতেন দেখেই মনে হয় জনতা ঘৃনায় তার নামও বর্জন করেছিল, কি বলেন? ভাগ্যিশ দেশে ভাত ডাল খাওয়া জনগন দয়া করে বন্ধ করেনি, মুজিব তো ডাল ভাতও খেতেন।
জয় বাংলা অফিশিয়ালী নিষিদ্ধ না করেও কার্যত আরো কড়াভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু জয়বাংলা লেখার জন্য যে মানুষের চাকরি গেছে জানেন? মুজিবের শাসনের অবসান ৭৫ এ মানুষ চেয়েছিল ঠিক ই, কিন্তু যেভাবে প্রচার করা হয় তেমন তীব্র ঘৃনা ছিল না। অমন হলে এক মুজিবের কবর ঢাকার যায়গায় টুংগি পাড়ায় দিতে হত না। ৭৫ এর সেই দূঃসময়ও মুজিবের এক ডাকে লাখো মানুষ ঠিকই রাজপথে জড়ো হত। অত অজনপ্রিয় হলে তাকে রাতের আঁধারে খুন করতে হত না, এরশাদের মত গণান্দোলনই গড়ে উঠত।
কোন নষ্টামি শুরু হলে তার দায় প্রথম যারা শুরু করেছে তাদের উপরেই পড়ে। আপনাকে কেউ কবছর অনবরত গালিগালাজ করলে আপনি কি আদালতে মামলা করবেন নাকি পালটা গালি দেবেন? এই গাল্গালি শুরু হলে তার দায় আপনি শেয়ার করবেন নাকি যে আগে শুরু করেছে তাকেই মূলত দেবেন?
এ দেশে ইতিহাস বিকৃতকরন শুরু হয় ৭৫ এর পর থেকে। আপনার লেখায় তার কোন প্রতিবাদ দেখলাম না, উলটা আরো দায় চাপাচ্ছেন মুজিবের উপর। কোন লোকের দূঃশাসনে ত্যাক্ত হয়ে আপনার মতে জনগন ইতিহাস বিকৃতি শুরু করেছে এবং তাতে তেমন দোষ আপনি দেখেন না। ভাল বলেছেন।
জয় বাংলা অবশ্যই আমার কাছে আবেগময় ইস্যু। মুক্তিযুদ্ধ বা দেশ এগুলি সবই আবেগের ইস্যু, আবেগ ছাড়া মানুষ হয় না। জয় বাংলা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়ে যুদ্ধ করেছে কয়জন মুক্তিযোদ্ধা একটু দেখান।
আজ ভারতে বন্দে মাতরম বাদ দিয়ে অন্য শ্লোগান বা পাকিস্তানে পাকিস্তানে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বাদ দিয়ে অন্য শ্লোগান ধরলে আপনার মতে সেখানকার লোকে এত সহজে পাশ কাটাবে না।
@আদিল মাহমুদ,
:yes:
@কালযাত্রী,
উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কি কইরছিলেন দাদা একটু সবিস্তারে বলবেন কি? উনার মত বহু মেজর টেজরদের তো হুক্কা টানতে টাকা দেওয়া হইতো না। নাকি কন? হেতেরে রাহাই অইছিল যুইদ্ধের লিগ্যা। তো হেতে তো যুইদ্ধই কইরব নাকি?
শুনুন ব্রাদার, বঙ্গবন্ধুর নামের সাথে উচ্চারন করা যেতে পারে এমন ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নাই। আমি কখনই বঙ্গবন্ধুর নামে হা হুতাশ করিনি বা করাটা পছন্দও করি না। সেই জন্যই এই পোষ্টে কোন মন্তব্য করিনি এখনও। কিন্তু আপনার বক্তব্য শুনে মঙ্গল গ্রহের যেকোন লোক বঙ্গবন্ধু আর তার নখেরও অযোগ্য গৌণ জিয়াকে সমান ক্যালিবারের মনে করবে।
হাস্যকর কথাবার্তা কি না বললেই নয়?
@সাইফুল ইসলাম,
জিয়ার নেতৃত্ব্বে ওসমানীর বিরুদ্ধে কিছু সেক্টর কমান্ডার অনাস্থা প্রকাশ করেন।
আরো বেশ কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনকি প্রবাসী সরকার জিয়ার নামে এরেষ্ট ওয়ারেন্টও ৭১ সালে বের করেছিল।
@কালযাত্রী,
এতে আপনার বিশেষ কোমলাঙ্গ জ্বলে দেখছি, কিন্তু, যখন মুজিবের বিরুদ্ধে (যাঁর নামে স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়, কোন জেনারেলের নামে নয়) মৃত জিয়াকে দাঁড় করানো হয় ‘৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক (নিজেও জীবদ্দশায় যিনি ঘুণাক্ষরেও এ-দাবি করেন নি) এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের পরিত্রাতা হিসেবে, তখন আপনার প্রতিবাদমুখরতার কোনও মর্দে মুজাহিদি দলিল দাখিল করুনতো, দেখে এবং পড়ে তৃপ্তি পাই যে, কোনও একদেশদর্শি স্বাভাবিক বাংলাদেশির সাথে আলোচনা চালাচ্ছি না।
আওয়ামি মন্ত্রিকুলের মূর্খতার বা আলটপকা বাতকর্মের দৃষ্টান্ত এই প্রথম নয়, কিন্তু, একটা জিনিস ঠিক জানি না। একটু খোলাসা করুন না, জিয়াকে কেন ‘৭১-এ সেক্টর কমান্ডারের পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, যে-সম্মান আর কারোর ভাগ্যে জোটে নি?
@অভিজিৎদা, শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতির প্রসঙ্গে আরেকটা প্রশ্নও কিন্তু থেকেই যায়- দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় ব্যক্তির পুত্রের যদি নিতান্তই অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে তার ব্যাংক ডাকাতির দরকার পড়ল কেন? তারেক জিয়া তো কখনও দলবল নিয়ে মাইক্রোবাসে চড়ে ডাকাতি করতে যাননি।
@পৃথিবী,
আমরা যারা ৭০/৮০ এর দশকে স্কুলে গেছি তখন অত্যন্ত সুশৃংখল ভাবে আমাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে এসব গাজাখুরি গল্প শুনিয়ে। সাথে ভারতীয় জুজু, জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক এসব রেকর্ড বাজানো হয়েছে।
এটা অনেকটা ধর্মবিশ্বাসের সাথে তূলনা করা যায়। ছেলেবেলায় তোমাকে যা অনবরত বলা হতে থাকবে তার যৌক্তিক বিশ্লেষনের ক্ষমতা তোমার আর বড় হয়েও থাকবে না। হয়েছেও তাই। আমাদের প্রজন্মের বেশীরভাগ ছেলেপিলে কড়াভাবে মুজিব বিরোধী। শেখ কামাল যে নিজের জন্মের আগে মারা গেছে তার নামে এসব গল্পকাহিনী সহজেই বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু তারেক কোকোর কীর্তিকলাপ চোখের সামনে দেখলেও তা উড়িয়ে দিতে হয়।
শেখ কামালের সময়কার যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তাদের অনেকের সাথে কথা বলেছি। একজনও বলেননি যে সে গুন্ডা গোছের তেমন কিছু ছিল। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার তেমন কোন রেকর্ড ছিল না। গান বাজনা খেলাধূলা এসব নিয়েই বেশী থাকত।
@অভিজিৎ,
পিয়ালের সাথে কাল রাতে কথা হয়েছে। সে এখন প্রচন্ড ব্যাস্ত, তাই আমিও আর এখানকার কথা তাকে বলিনি।
@আদিল মাহমুদ,
বলে দেখতে পারেন। উনার লেখার বিভিন্ন জায়গার রেফারেন্স নিয়ে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে (যেমন উপরে ইরতিশাদ ভাই বাদশাহ ফায়সালের সাথে মুজিবের কথোপকথনের সূত্র চেয়েছেন), বাকশাল নিয়েও তিনি যা বলেছেন অনেকের কাছে সেটা খুব বেশি যথার্থ মনে হয়নি। মূল লেখকই পারবেন তার রেফারেন্সগুলো দিয়ে অস্পষ্টতা দূর করতে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সাথে আমার কোন পরিচয় নেই। কখনো কথাও হয়নি। আপনার সাথে পরিচয় থাকলে আপনি বলে দেখতে পারেন।
@অভিজিৎ,
আমার সাথে তার ভালই পরিচয় আছে আমার ব্লগে।
মুশকিল হল উনি আজকাল আর ব্লগে তেমন সময় দিতে পারেন না। আজ একটা পোষ্ট দিয়ে আবার চলে গেছেন।
বলে দেখব।
বাকশাল সম্পর্কে তার এটা নিতান্তই ব্যাক্তিগত অভিমত হিসেবেই আমি দেখি, কোন ঐতিহাসিক দলিল নিশ্চয়ই না।
তবে এইটুকু মোটামুটি জানি যে ঐতিহাসিক কোন তথ্য তিনি দিলে তার কোন না কোন দালিলিক রেফারেন্স অবশ্যই ওনার কাছে থাকে।
ওনার কাছে বেশ কিছু বিরল রেফারেন্স আছে, যেমন স্বাধীনতার পর গোলাম আজম পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি খুলে যে চাঁদা তোলা শুরু করেছিল তার রশিদ।
@আদিল মাহমুদ,
বাকশালের মৃত্যু হয়েছে সূতিকাগারে। ফলে বাংলাদেশে এর সুফল বা কুফল কোনটাই নেই। তবু কেন যে এর এত মূল্য বুঝিনা। তবে বিএনপি যখন বাকশাল নিয়ে এখনও আওয়ামী বিরোধী রাজনীতি করে তখন আওয়ামী লীগের খুশীই হওয়া উচিত। কারণ, আওয়ামী লীগের আর কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছে না।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
🙂
সেটা তো আমারো কথা। কড়া আওয়ামী বিরোধীরা দেখি আওয়ামী লীগের ৯৬ টার্মের শাসনামলেরও তেমন সমালোচনা করেন না। চট করে চলে যান ৭৫ এ। কারন এসব বাকশাল, রক্ষী বাহিনী এসবের কথা তুললে খুনীদের সমর্থনের জন্য আরেক দলের দয়ার সাগর বনে যাওয়ার সাফাই গাওয়া যায়।
বাকশাল দেশে ছিল কতদিন? আমি মানি ব্যাবস্থাটা ভাল না। কিন্তু বাকশাল না গঠন করলে কি তাকে খুনীরা খুন করত না? খুনীদের এন্তেজাম শুরু হয়েছিল ৭২ সাল থেকেই। মুজিবের ভ্রান্ত নীতি, আওয়ামী দূঃশাসন শুধু তাদের সাহায্য করেছিল মাত্র।
@অভিজিৎ,
সম্ভবত “মুজিবের রক্ত লাল” বাই এম,আর,আখতার মুকুলের লেখা বইয়ে ১৯৭৩ আলজিয়ার্সের ন্যাম সম্মেলনে মুজিব এবং বাদশাহ ফয়সালের সাক্ষাতকার তুলে ধরা হয়েছে।
ধন্যবাদ।
@সিসিপাস,
আপনাকে এখানেও দেখে খুব ভাল লাগছে।
আশা করি নিয়মিত আসবেন।
শেখ মুজিবকে নিয়ে আমার মুগ্ধতার সীমা-পরিসীমা নেই। একটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যিনি সফল নেতৃত্ব দেন তাঁর প্রতি মুগ্ধতাবোধ না থাকাটাই বিরাট অন্যায়। এই মুগ্ধতার বশেই মুক্তমনায় রাজনীতির কবি নামে একটা আবেগময় লেখা লিখেছিলাম। কিন্তু কেন যেন সেই লেখাটি সুধীজনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে নি একেবারেই। 🙁
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার করে দেই এখানে। আমার এই মুগ্ধতার অপরিসীমতা সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে আমি দোষে-গুণে সমৃদ্ধ একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করি। দোষ ত্রুটিহীন কোনো মহাপুরুষ বা দেবতা তিনি আমার কাছে নন।
অমি রহমান পিয়ালের এই লেখাটাও আবেগময়। তবে তিনি খেটেখুটে রেফারেন্স জোগাড় করে সেই আবেগটাকে যুক্তির বৈধতা দেবার চেষ্টা করেছেন। যদিও বাকশালের ক্ষেত্রে এই কাজটা তিনি খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে করতে পারেন নি। এই বিষয়ে একটু পরে আসছি। তবে তার আগে এই পরিশ্রমসাধ্য দারুণ লেখাটির জন্য টুপি খোলা অভিবাদন অমি পিয়ালের জন্য।
আমি খেয়াল করেছি যে, শেখ মুজিবের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই চরম ধরনের। একদল তাঁকে দু চোখে দেখতে পারে না, সব কিছুতেই তাঁর ত্রুটি খুঁজে পায়। আরেকদল আছে যারা শেখ মুজিবের মুগ্ধতায় এমনই আচ্ছন্ন যে, তাঁকে পারলে দেবতা বানিয়ে তোলে। এর মাঝামাঝি নিরপেক্ষ এবং নৈর্ব্যক্তিক কোনো অবস্থান যে থাকতে পারে সে বিষয়ে আমাদের ধারণাটা খুব একটা প্রবল নয়।
অমি পিয়ালের লেখাটি এই চরম দুই ধরনের লোকের জন্য বেশ কার্যকর। অহেতুক মুজিব ঘৃণাকারীদের বিরুদ্ধে এটা হতে পারে চমৎকার একটি অস্ত্র। আবার অন্যদিকে মুজিবকে দেবতা বানিয়ে বন্দনাকারীদের জন্য এই লেখাটি হতে পারে বেশ ভাল একটা নিরাপদ আশ্রয়। তবে, এই দুই পক্ষের বাইরের সেই মাঝামাঝি অবস্থানের ব্যক্তিদের জন্য এই লেখার কিছু কিছু অংশ যেমন বাকশাল বিষয়ক একপেশে বক্তব্যটি হতে পারে যথেষ্ট অস্বস্তিকর এবং পীড়াদায়ক।
মূল সত্যি হচ্ছে যে, যে শেখ মুজিব একেবারে ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে মাটির কাছাকাছি রাজনীতি করতে করতে একাত্তরে নিজেকে নিয়ে গেছেন হিমালয়সম উত্তুঙ্গ অবস্থানে, দেশ স্বাধীন হবার পরে সেই তিনিই নিজের উচ্চতাকে ভয় পাওয়া শুরু করেছেন। কেটেছেঁটে নিজেকে ছোট করা শুরু করছেন তিনি। করতে করতে পচাত্তরে এসে বামনে পরিণত হয়েছেন। ফলে, রশীদ-ফারুক-মোশতাক গং-দের মত ছাগলদের পক্ষে সহজেই তাঁকে স্ববংশে গিলে ফেলা সম্ভবপর হয়েছে। অথচ হিমালয়সম মুজিবকে স্পর্শ করার সাহস পাকিস্তানিরাও করে নি একাত্তরে।
মুক্তমনায় বাকশাল নিয়ে কেশব অধিকারীর মানবাধিকার সংগঠনের মানবিকতা! প্রবন্ধে বেশ ভালই বিতর্ক হয়েছিল। ওই বিতর্কে আমিও যুক্ত ছিলাম। সেখানে একটা মন্তব্য করেছিলাম। সেই মন্তব্যটাই একটু কাটছাঁট করে এখানে তুলে দিচ্ছি।
হাজার যুক্তি দিলেও যেমন কালোকে সাদা বানানো যায় না, তেমনি হাজার যুক্তি দিয়েও বাকশালকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বানানো যাবে না। শেখ মুজিব বাঙালি জাতিকে একটা দেশ দিয়ে গেছেন, কিন্তু তার মানেই এই না যে তার কোন ভুল ত্রুটি থাকবে না। আর সেইসব ভুলের জন্য তাঁর একাত্তরের এবং একাত্তরের আগের ভূমিকা খাটো হয় না একবিন্দুও।
সারাজীবন গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে গেছেন যেই ব্যক্তি, সেই ব্যক্তিই আবার বাকশালের মাধ্যমে গণতন্ত্রকেও কবর দিয়ে গেছেন। স্বাধীন দেশে ক্ষমতায় পুষ্ট হয়ে, অজানা কোন কারণে হয়ে উঠেছিলেন একজন স্বৈরাচারী। কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিলেন এই সব আবোলতাবোল যুক্তি দিয়ে একে জায়েজ করা যায় না কিছুতেই। সেনাশাসকদেরও ক্ষমতা দখল করার অকাট্য যুক্তি থাকে। তাতে করে কোন সেনাশাসনই বৈধ হয়ে যায় না। আমি বাকশাল নিয়ে, সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে মাত্র চারটি পত্রিকা রাখা বা শেখ মুজিবকে সারাজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট করা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত যাবো না। কারণ আমার বক্তব্য উপরে আদিল মাহমুদের বক্তব্যের হুবহুই হবে।কাজেই বৃথা সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই।
শেখ মুজিব কীভাবে স্বৈরাচারে পরিণত হচ্ছিলেন তার একটি চমৎকার বিশ্লেষন পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালের ২৭ শে জানুয়ারী লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লেখা পিটার জিলের একটি আর্টিকেলে। আমি মূল আর্টিকেলটি পেলাম না। সেলিম সি এটিকে অনুবাদ করেছেন। সেই অনুবাদটিই এখানে তুলে দিলাম।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলী টেলিগ্রাফ এর ১৯৭৫ সালের ২৭শে জানুয়ারী সংখ্যায় পিটার গিল ‘মুজিব একনায়কত্ব কায়েম করেছেন’ শিরোনামে লেখেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান তার দেশে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। গত শনিবার ঢাকায় পার্লামেন্টের এক ঘন্টা স্থায়ী অধিবেশনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে ক্ষমতা অর্পন করেছে। অনেকটা নিঃসন্দেহে বলা চলে গণতন্ত্রের কবর দেয়া হয়েছে। বিরোধী দল দাবি করেছিল যে, এ ধরণের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিন দিন সময় দেয়া উচিত। জবাবে সরকার প্রস্তাব পাশ করল যে এ ব্যাপারে কোন বিতর্ক চলবে না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাস গৃহযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত কিন্তু গর্বিত স্বাধীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব এমপিদের বলেছেন যে, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অবদান। কিন্তু বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বৃটিশ বিশেষজ্ঞরাই সাহায্য করেছিলেন। তিনি দেশের স্বাধীন আদালতকে ঔপনিবেশিক ও দ্রুত বিচার ব্যাহতকারী বলে অভিযুক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট খেয়ালখুশি মত বিচারক বরখাস্ত করতে পারবেন। নাগরিক অধিকার বিন্দুমাত্রও যদি প্রয়োগ করা হয় তা প্রয়োগ করবে নতুন পার্লামেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত স্পেশাল আদালত। এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে একটি জাতীয় দল প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন শাসনতন্ত্র মুজিবকে ক্ষমতা প্রদান করেছে। তার গঠিত দলই হবে দেশের একমাত্র বৈধ দল। যদি কোন এমপি যোগদান করতে নারাজ হন অথবা এর বিরুদ্ধে ভোট দেন, তবে তার সদস্যপদ নাকচ হয়ে যাবে।
এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঢাকায় সমালোচনা বোধগম্য কারণেই চাপা রয়েছে। কিন্তু ৩১৫ সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ৮জন বিরোধী দলীয় সদস্যের ৫জনই এর প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের ১১জন সদস্য ভোট দিতে আসেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ গেরিলা বাহিনীর নায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী জেনারেল এম এ জি ওসমানী। শেখ মুজিব ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে শাসন করতে পারবেন। নতুন শাসনতন্ত্র ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত জাতীয় পার্লামেন্টের মেয়াদও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে পার্লামেন্ট বছরে মাত্র দু’বার অল্প সময়ের জন্য বসবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও কাউন্সিল অফ মিনিষ্টারস এর মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হবে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মনসুর আলীকে যথাক্রমে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট।
বাংলাদেশের ঘনায়মান আর্থিক ও সামাজিক সংকটে বিদেশী পর্যবেক্ষকগণ সন্দেহ করছেন যে, দেশে একনায়কত্বের প্রয়োজন আছে কিংবা শেখ মুজিবের আরো ক্ষমতার প্রয়োজন আছে।প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে যে নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ ও অরাজকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ মুজিবের নতুন ম্যান্ডেট তাতে তেমন কোন তারতম্য ঘটাতে পারবে কিনা? এক মাস আগে শেখ মুজিব জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বামপন্থী গেরিলা নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করা হয়েছে।কিন্তু ইতিমধ্যেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, জরুরী আইন প্রয়োগে বিন্দুমাত্র সুশাসন (বর্তমানে সুশাসন বলতে কিছু নেই) পুনঃপ্রতিষ্ঠা আদৌ সম্ভব কিনা? নতুন প্রেসিডেন্টের যে আদৌও প্রশাসনিক দক্ষতা নেই তা গত বছরেই প্রমাণিত হয়েছে। তার ষ্টাইল হচ্ছে ডিকটেটরের স্টাইল। তিনি গুরুত্বহীন বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান এবং গুটিকয়েক আমলার প্রমোশনে ও তাদের অভিমতকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রায়ই ফেলে রাখেন। একদলীয় শাসন সৃষ্টির ফলে র্দুনীতি দূর না হয়ে বরং বাড়তে থাকবে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি প্রফেশনাল বুক রিভিউয়ারের কোন চাকরি পেলে বাকি জীবন রুটি রুজির চিন্তা থাকবে না।
আমাদের মূল সমস্যা কোথায় তা আপনার কথার মাঝেই আছে।
– আমরা বড় বেশী আবেগপ্রবন জাতি। আবাগের কাছে যুক্তি হয় সহজেই পরাজিত। এটা ব্যাক্তি জীবন থেকে জাতীয় জীবন সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
@ফরিদ আহমেদ, :yes:
@ফরিদ ভাই,
অসাধারন বলেছেন।আমি পুরাপুরি একমত এই কথাগুলির সাথে।
আসলে কাউকে মহাপুরুষ বানানো মানেই তার চাটুকারীতা করা, আর মানুষের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।সম্ভবত খোন্দকার মোশতাক এই শ্রেনীর লোক ছিল।যার চাটুকারীতায় ভুলে গিয়ে বঙ্গবন্ধু এমনকি তাজউদ্দিন আহমদ কেও দূরে সরিয়ে দিলেন, যার ফলাফল হল মর্মান্তিক।
আসলেই চাটুকাররা কোনদিন প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না।এরাই আসলে অপ্রকাশ্য শত্রু।
আজো দেখেন শেখ সাহেবের চাটুকারের অভাব নেই। লীগ ক্ষমতা হারানোর পরেই এরা অন্য সুরে গান গায়।নিকট অতীতেও আমরা এমনটা দেখেছি।
এ লেখায় আসলেই বাকশালের স্বপক্ষের যুক্তিগুলি দূর্বল, যা লেখার মান কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তবে এই লেখার মূল লক্ষ্য কিন্তু মুজিবকে ধোয়া তূলসী পাতা প্রমান নয়। মুজিবেরও বহু দোষ ত্রুটি ভুল ভ্রান্তি হয়েছে, আমরা সবাই জানি।
তবে সেগুলি পুজি করে কিছু স্বাধীনতা বিরোধী তার ও পরিবারের নামে অনেক গালগল্পও ছড়িয়েছে। যৌক্তিক সমালোচনা অবশ্যই কাম্য, তাই বলে মিথ্যা গালগল্প বের করে বিষ বাষ্প ছড়ানোর তো কোন মানে নেই।
অমি পিয়াল ঐতিহাসিক অনেক নথিপত্র ঘেটে এ জাতীয় বেশ কিছু মিথ্যা বানোয়াট গল্প মিথ্যা প্রমান করেছে। ওনার এর উপর সিরিজ আছে।
@আদিল মাহমুদ,
চমৎকার বলেছেন । আপনার তুলনা আপনি নিজেই ।
@সংশপ্তক, 🙂
লজ্জা দিলেন।
সুনীলের মনে হয় এই নামে একটা বই আছে।
পিয়াল আসলেই সফলভাবে অনেক অপপ্রচারের জবাব দিয়েছে। বাকশাল সম্পর্কে এখানে যা বলেছে তা নিজের মত, অবশ্যই কোন ঐতিহাসিক দলিল নয়। ৭১ এর ঘাতক দালালদের কুকুর্মেরও অনেক মূল্যবান বিরল দলিল সে বহু কষ্ট করে বের করছে।
এখানে তার ব্লগ দেখতে পারেন সবাই। অনেক কিছু জানতে পারবেন।
@আদিল মাহমুদ,
স্বাধীনতা বিরোধী নয় এরকম অনেকেও মুজিব ও তার ছেলে শেখ কামালের কুকীর্তির সমালোচনা করে। সেগুলিও কি গালগল্প? আসলে ব্যাপারটা হল মুজিব বা শেখ কামালের সমালোচনা করলেই তা স্বাধীনতা বিরোধীর গালগল্প হয়ে যায়।
বানোয়াট গল্প নিজেই বানিয়ে তা খন্ডন করা খুব সহজ। সিরিইয়াস অভিযোগ গুলি মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছেন উনি? ইসলামিস্টরাও একই ট্যাকটিকই অনুসরণ করে।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন। আপনার প্রশংসাকারী শংশপ্তক তাঁর মন্তব্যে বলেছেনঃ
“শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে এ লেখাটি মুক্তমনায় দেয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল”
অর্থাৎ মুজিব/বাকসালের সমালোচনা যারা করে তারা শত্রু । কার শত্রু? এতেই ফ্যাসিবাদের গন্ধ পাওয়া যায়।
@কালযাত্রী,
আপনি খুব গোড়াতেই ভুল করছেন।
যৌক্তিক সমালোচনা আর মিথ্যা গালগল্প এক কাতারে টেনে আসছেন।
আমি শুধু এই দুয়ের মাঝে বিভেদ টানতে চেয়েছি।
কেউ বাকশাকের সমালোচনা করলে আমি কোন আক্কেলে তাকে স্বাধীনতা বিরোধী বলতে যাব? কিংবা ৪ পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করার কথা কেউ তুললে আমি তাকে রাজাকার বলতে যাব নাকি?
তাই বলে কামাল ডালিমের বউ তুলে এনে রেপ করেছে বললে অবশ্যই কিছু কথা প্রতিবাদে বলব। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
@আদিল মাহমুদ,
আমার পয়েন্টটাই আপনি প্রমাণ করলেন। এই ধরণের গুটিকয়েক অভিযোগই আওয়ামীদের সম্বল, কারণ এই অভিযোগ কোন নির্ভরযোগ্য সমালোচক করেন না। তাই এটা ভুল বলে কাউন্টার করা সহজ। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর অভিযোগ আছে মুজিব/বাকশালের বিরুদ্ধে, যেগুলি অনেক নির্ভরযোগ্য সমালোচক করেন উপযুক্ত রেফারেন্স দিয়েই। এগুলি তারা ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। আর এই ধরণের খেলো অভিযোগের বরাতে তারা ঐ সব গুরুতর অভিযোগকেও স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচার বলে চালিয়ে বিরাট মাইলেজ পাওয়ার চেষ্টা করে। ডালিমের স্ত্রীকে অপমান করেছিল গাজী গোলাম মোস্তফার ভাই ও তার আওয়ামী লীগের মাস্তান যুবকেরা। ডালিমের স্ত্রী সুন্দরী ছিলেন। অপমানটা রেপ না হলেও আওয়ামী লীগের মাস্তান যুবকেরা সেই সময় অনেক রেপই করেছিল। টঙ্গীতে আওয়ামী মাস্তানের নববিবাহিত তরুনীর রেপের কথা তো খুবই আলোচিত ছিল সেই সময়। সেই সময়কার মুজিববাদী যুবকদের দ্বারা মেয়েদের লাঞ্ছনার কথা সাংসদ আশরাফী পাপিয়ার সংসদে তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণেই শোনা যায়। আর তারই ঐতিহ্য তো এখন চলছে।
আপনি না বল্লেও মুজিব/বাকশাল সমর্থকেরা তাই বলে। আপনাকে মীন করে বলিনি আমি।
@কালযাত্রী,
আর কথা বাড়ানোর তেমন দরকার দেখি না। কার কথা কে প্রমান করে তা একটি বিতর্কিত হতে পারে।
আপনি বার বার বাকশাল নিয়ে আমাকে কেন বলছেন জানি না। বাকশাল সমর্থন করে কোনদিন কোন কথা বলেছি বলে মনে পড়ে না। তার নিন্দাই করেছি সবসময়। তারপরেও বলতে হচ্ছে যে গনত্ন্ত্র ও যে ভুল বা ঠিক তার কি কোন সর্বসম্মত ঐক্যমত হতে পারে? পৃথিবীতে একনায়কতন্ত্র এখনো বহু দেশেই চলে, যদিও আমি তার সমর্থক নই। কেউ বাকশালের বিরোধীতা যেমন করতে পারেন কেউ সমর্থনও করতে পারেন। সমর্থন করলেই তিনি বিরাট অন্যায় অতি অবশ্যই করে ফেলভেব এমন ভাবনাও বাড়াবাড়িই মনে হয়।
ডালিম স্ত্রী অপহরন ঘটনা খোদ ডালিমের নিজের সাইটেই আছে। তাতে অনেকটা সত্য ঘটনাই আছে। গাজীর ছেলে ডালিমের স্ত্রীকে অপমান করেছিল তেমন কিছু তাতেও দেখিনি, আজ সাইটটা ডাউন তাই রেফারেন্স দিতে পারছি না। ঘটনা মেয়ে ঘটিত ছিল না। গাজির ছেলেরা গুন্ডামী ও অন্যায় করেছিল ঠিক ই, তবে মেয়ে তুলে রেপ জাতীয় কিছুর ধারে কাছেও না। মেয়ে ঘটিত কোন বিষয়ই তাতে ছিল না।
ডালিমের নিজের সাইট থেকে এই ঘটনা তার মুখেই শুনেনঃ
-ঘটনা হয়েছিল এক লম্বা চুল তরুনের চুল টানাটানি জাতীয় ছেলেমানূষী ফাজলামি নিয়ে। বংগবন্ধু শুধু মিটমাট করেছিলেন, ডালিমের স্ত্রী বংগবন্ধুর বাড়িতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বেশ শান্তিতেই। এগুলি আমার বা কোন আওয়ামী দালালের কথা না। খোদ ডালিমের কথা।
সে সময় গুন্ডামী পান্ডামী অনেক হয়েছে। কে অস্বীকার করবে? সদ্য স্বাধীন দেশে হাতে অস্ত্র, কোন বিরোধী দল নেই, চারিদিকেই বিশৃংখলা।
আজও গুন্ডামী হয়। ২০০২ সালে বিএনপি জামাতের হাতে স্কত হিন্দু মেয়ে রেপ হয়েছিল? আজ ছাত্রদলের কোন সোনার ছেলে রেপ করলে আমরা বলব যে আসলে তারেক রহমান সেই রেপ করেছে? রেপের ধারে কাছেও কিছু যে আদৌ হয়নি তা ডালিম নিজেই বলেছে।
বাকশালের ব্যাপারে আলোচনাটা যথেষ্ট মনে হল না।
আকাশ মালিক,
শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে এ লেখাটি মুক্তমনায় দেয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল । স্বাধীনতা বিরোধীদের সংখ্যা ও ব্যপ্তি কিছুসংখক ধর্ম বাদীদের মধ্যে শুধু সীমাবদ্ধ নয়, যদিও অনেকেই এ ভূল করে থাকেন ।
লীনা রহমানকে বলছি,
(প্রক্সি সাইট থেকে সরাসরি জবাব অপশন খুলতে পারলাম না। )
দেখুন, সব সম্ভবের দেশ এই বাংলাদেশ আর বাঙালীরা বোধ হয় দুনিয়ার সব চাইতে আজব জাতি। দুনিয়ার আর দ্বিতীয় একটি জাতি পাবেন না যাদের মধ্যে এত বেশী পরিমানে বিশ্বাসঘাতক, ঠকবাজ, ধান্ধাবাজ, সুবিধাবাদী, বদমাশ, লম্পট,ধর্ম ব্যবসায়ী, দেশ দ্রোহী আছে। আবার এত বেশী সাদা সিদা সরল মানুষও পাবেন না যাদেরকে ধর্মের কথা বলে এত সহজে বিভ্রান্ত করা যায়। বাঙালীরা হলো স্বভাবে অসহিষ্ণু , চঞ্চল, ভুলোমনা, অস্থির, অকৃতজ্ঞ, ভাবপ্রবন অথচ একই সাথে অতিথি পরায়ন , বন্ধুবতসল। মোট কথা বাঙালী জাতি বাস্তবিক অর্থেই এক আজব চিড়িয়া, এদের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করা দুরুহ। এদেরকে নিয়ে ভাল কিছু কল্পনা করাও মূর্খতা।
@ভবঘুরে,
মন্তব্য খুবই বাস্তববাদী।
@ভবঘুরে, আপনার সাথে আমি একমত। তবে সব বাঙ্গালিকে নিয়ে ভাল কিছু কল্পনা করা মূর্খতা এটা সবসময় সত্যি না। আমিও তো বাঙ্গালি। দেখা যাবে আমাকে নিয়ে আপনি এক সময় ভাল কিছু কল্পনা করতে পারছেন 😛
আমি বাকশাল সম্পর্কে কিছু জানিনা তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করবনা। আমি মুজিবের স্বাধীনতাপূর্ববর্তী নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়েছি, তার সকল কার্যক্রম বা তার দলকে নয়। আর আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা। এরা আমার বা কারোরই মূল্যবান সময় নেয়ার যোগ্য না। আমি এবার প্রথম বারের মত ভোটার হব। কিন্তু হয়ে কি করব বুঝতেছিনা। ভোটই তো দিবনা। 😉
😀 (এত দিন কি কল্পনা করছে আল্লাফাকই জানে) 😀
@সাইফুল ইসলাম,
:laugh:
@লীনা রহমান,
একটি গনতান্ত্রিক দেশের ভোটার যখন বুঝতে পারেন যে তিনি কাউকে ভোট দিতে পারবেন না তার চেয়ে দূঃখজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর কি হতে পারে?
এমন গনতন্ত্রের থেকে তো মনে হয় স্বৈরতন্ত্রও ভাল, তাতে অন্তত আশা থাকে যে গনতন্ত্র আসবে।
@লীনা রহমান,
ওহ বলতে ভুলে গেছি, বাঙালীরা কিন্তু ভীষণ পরশ্রীকাতর, দরকারে নিজের নাক কেটে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে রাজী। সোজা কথা আমি বাঙ্গালদের মধ্যে কোন ভাল গুনের খোজ পাই না একারনে যে – যার জন্যে দেশ স্বাধীন হলো, হতে পারে তার চরিত্রে কিছু দুর্বলতাও ছিল, তাকে অশ্লীল ভাষায় যে জাতির একটা বিপুল সংখ্যক লোক গালি গালাজ করতে পারে সে জাতি আর যাইহোক সভ্য জাতি না। সুতরাং তর্কের খাতিরে নানা কথা বলতে পারেন কিন্তু আমি বাঙ্গালী জাতির মধ্যে কোন গুনবাচক জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখি না। ১৭৫৭ সালে আর ১৯৪৭ সালে দুইবারই এই বঙ্গ সন্তানদের বিশ্বাস ঘাতকতার কারনে দেশ পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়েছিল যা আমি অন্য কোন জাতির ইতিহাসে দেখি নি। কেউ দেখে থাকলে উল্লেখ করতে পারেন।
@ভবঘুরে,
এটা আসলে সামগ্রিকভাবে জাতির দোষ বলা যায়না। এই সমস্ত দোষগুলো বেশীরভাগই দারিদ্রতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমরা আসলে যে জাতিগুলোকে চিনি, জানি তারা বেশীরভাগই ধনী। ধনী বলেই তারা পৃথিবীতে সুপরিচিত। তাই এইসব দোষগুলো দুনিয়ার দ্বিতীয় আর একটি জাতির মধ্যে আমরা খুঁজে পাইনা। প্রায় ৫০% লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা জাতির মতো পৃথিবীতে অন্য কোন জাতির মধ্যে এই বিশেষনগুলো খুঁজে পাওয়া যাবেনা এমন কথা হলপ করে বলা যায়না।
@ব্রাইট স্মাইল্,
দুনিয়ার আর কোন জাতির মধ্যে কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এত অধিক সংখ্যক মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধী লোক জন যে কম ছিল না তা কিন্তু বর্তমানে মানুষ জনের মন মানসিকতার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সুতরাং এ ধরনের একটা জাতিকে আমি কোন অজুহাতেই কোন ক্রেডিট দিতে রাজী নই। এ এমন এক জাতি যে তার বীর সন্তানদের সম্মান করে না , গুনিদেরকে ইজ্জত দেয় না , এ জাতি লম্পট বদমাশ আর সন্ত্রাসীদেরকে বীর মানে, সম্মান করে আর বাহবা দেয়। এ জাতির মধ্যে স্বদেশ প্রেম ভীষণ রকম কম। তার প্রমান – এদেশের বহু মানুষ উন্নত বিশ্বে স্থায়ী হয়েছে যারা এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যপক ভুমিকা রাখতে পারত, কিন্তু তারা কেউ তা তো করে না , উল্টো বিদেশের মাটিতে নিরাপদে বসে নানা রকম সবক আর উপদেশ দেয়। এটা একমাত্র বাঙ্গালীদের পক্ষেই সম্ভব।
@ভবঘুরে,
বাংগালী জাতি সম্পর্কে আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো বেশীরভাগই ব্যক্তিগত ইমোশানের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয় আমার কাছে। এগুলো কোন প্রমান নির্ভর নয় এবং সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের কোন উপায় আছে কিনা আমার জানা নেই। যেমন একটা জাতির কত পারসেন্ট লোক লম্পট বদমাশ এটা বুঝবার উপায় কি? অথবা বলা যায় একটা জাতির কত পারসেন্ট লোক লম্পট বদমাশ হলে সে জাতিকে খারাপ বলা যাবে? এর কি কোন মান দন্ড আছে?
প্রত্যেকটি মানুষ তথা প্রত্যেকটি জাতি পরিবেশ বা পরিস্থিতির স্বীকার হয় এবং তার জন্য সে জাতির কিছু ক্যারেক্টারিস্টিকস্ গড়ে উঠে। বাংগালী জাতিও এর বাইরে নয়। শুধু ইমোশান দিয়ে একটি জাতিকে ইভালুট করলে তা বায়াসড্ হয়ে গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
আর এটাও মনে করবেন ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।’
লেখাটা পড়ে হতাশ হলাম। আবেগের প্রাচুর্য আছে, ‘অবজেক্টিভিটি’ নাই। ঢালাও মন্তব্য আছে, ইতিহাস নাই। লেখকের মতে শেখ মুজিব ছিলেন ধোয়া তুলসী পাতা। তা তিনি ছিলেন না, নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
বাকশাল নিয়ে অনেক কথা বলা যেতে পারতো, লিখলে আরেকটা বড়সড় পোস্ট হয়ে যাবে, সময় নাই। লেখকের বক্তব্যের সাথে আমি অবশ্যই ভিন্নমত পোষন করছি। আমার মতে বাকশাল ছিল মুজিবীয় অপশাসনের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী প্রকাশ। যাঁরা আরো জানতে চান, পড়তে পারেন, হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?”
লেখাটায় প্রয়োজনীয় রেফারেন্স নাই। যেমন বাদশাহ ফয়সলের সাথে মুজিবের কথোপকথনের গল্পের কোন সূত্র লেখকে দেন নি, তাই আমি এটাকে গল্পই বলবো।
@ইরতিশাদ,
অবশ্যই তিনি তুলসী পাতা ছিলেন না। জগতের কোন মানুষই ধোয়া তুলসী পাতা নন।
পড়েছি, কিন্তু শুধু তা থেকে বাকশাল ছিল মুজিবীয় অপশাসনের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী প্রকাশ এই সিদ্ধান্ত টেনে নেয়াটা সঠিক হবে?
@আকাশ মালিক,
শুধু ওই বইটা পড়েই নয়, নিজস্ব প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটা আমার নিজের। হয়তো আরো অনেকেরই, যাঁরা রক্ষীবাহিনী আর লাল বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
@ইরতিশাদ,
সম্পূর্ণ একমত। মুজিব/বাকসালের সমালোচনা করলেই আওয়ামী ধর্মান্ধরা তাদেরকে প্রথমে পাকি/জামাতি ইত্যাদি বলতে চেষ্টা করবে। যখন তা স্পষ্টতই সম্ভব না তখন বলবে এরা নাইভ, নেগেটিভ প্রচারণায় বিভ্রান্ত, ইত্যাদি। শুধু হুমায়ুন আযাদ কেন, সাংবাদিক টনি ম্যাস্কারেনহাস এর “Legacy of Blood” পড়লেই মুজিব শাসন আমলের অন্ধকার যুগের কথা জানা যায়। আর যারা ঐ সময় জীবিত ছিল তারা তো এসবেরই র প্রত্যক্ষ সাক্ষী। অন্ধ রাজনৈতিক আনুগত্য বা ব্যক্তি পূজা যে মুক্তমনের পরিপন্থী সেটা এরা বোঝে না।
@কালযাত্রী,
ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য। মুজিব বিরোধীতা আর স্বাধীনতা বিরোধীতাকে যারা এক মনে করেন তারাই ফ্যাসীবাদী মানসিকতার পরিচয় দেন। এই প্রবণতাটা আজকাল দুঃখজনকভাবে বেশি বেশি চোখে পড়ছে।
@ইরতিশাদ,
আমিও exactly এই কথাগুলোই বলতে চেয়েছিলাম। শেখ একটি (একজন) বৃহত (বড়) মানুষ (ব্যক্তিত্ব)।
স্বাধীনতা আগের মুজিব এবং পরের মুজিবে বিস্তর ফারাক।
শেখ সাহেবের ভাষনের যে লিঙ্ক আছে, সেখানে তাঁর মুখেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ইঙ্গিত আছে।
বাকশাল ব্যবস্থা যদি ভালই হত তাহলে আওয়ামী লীগ এখনও ওটা নিয়েই রাজনীতি করত। জিয়াউর রহমান খালকেটে বাংলাদেশ উদ্ধার করে ফেললেন! বেগম জিয়া আর খাল কাটেন না! এটা কি প্রমান করেনা – খাল কাটা মানে অন্য কিছু কাটা।
@ইরতিশাদ,
Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and
the Saudi Raj
By Wasif Sattar
(এম আর আখতার মুকুর রচিত ‘মুজিবের রক্তলাল’ ৩য় সংস্করণ সেপ্টেম্বর ১৯৯২, থেকে অনুবাদ করেছেন ওয়াসিফ সাত্তার)
“The introduction was prefaced by a formal hug and kisses. Next the two leaders sat next to each other on a sofa. King Faisal’s interpreter sat on a nearby chair. On the sofa facing them sat representatives of the two countries. After exchanging pleasantries about each other’s health, the conversation proceeded thus:
Faisal: Your Excellency, I have heard that Bangladesh is actually expecting some assistance from us. But the question is, what kind of assistance are you looking for? Of course we have some pre-conditions for providing any form of assistance.
Mujib: Your Excellency, please forgive me for my brashness. I am the Prime
Minister of Bangladesh. But I don’t think Bangladesh is begging for alms from you.
Faisal: Then what is it that you are expecting to receive from the Kingdom of Saudi Arabia?
Mujib: The pious Muslims of Bangladesh wish to claim their right to worship at the site of the Holy Kaaba. Your Excellency, you tell me if there can be any preconditions to that? You are great and the Bengali Muslims hold you in high esteem. You are the custodian of the Holy Kaaba. Muslims from all over the world have a right to worship there. Can there be any conditions for exercising that right? Your Excellency we are looking forward to brotherly relations with you on an equal basis.
Faisal: But this not a political discussion. Your Excellency, please tell me what is it that you want from the Kingdom of Saudi Arabia.
Mujib: Your Excellency, you are aware that after Indonesia, Bangladesh is the country with the second highest Muslim population. I wish to learn why Saudi Arabia has not recognized the independent and sovereign nation of Bangladesh to this day.
Faisal: I do not have to answer to anybody expect the Most Merciful Allah. But since you are a Muslim, I can tell you that in order to receive Saudi recognition, the name of Bangladesh has to be changed to the “Islamic Republic of Bangladesh”.
Mujib: This condition cannot be applied to Bangladesh. Whereas the overwhelming majority of the population of Bangladesh is Muslim, we also have over 10 million non-Muslims. All participated together in our fight for freedom or suffered its consequences. Besides Almighty Allah is not only for the Muslims but He is the creator of the universe. Your Excellency, please forgive me, but your country is not named the “Islamic Republic of Saudi Arabia”. This great country is named after one of the greatest geniuses and politicians of the Arab world the late King Ibn Saud as the “Kingdom of Saudi Arabia”. None of us objected to this name.
Faisal: Your Excellency, besides this we have another condition which is the
release of all Pakistani POWs.
Mujib: Your Excellency, this is a bilateral matter between Bangladesh and Pakistan. There are many other unresolved issues between the two countries. Among these are the issues of the return of several hundred thousands of Pakistani citizens and the proper distribution of assets to Bangladesh. These matters may take some time to be settled. That’s why the matter of unconditional release of Pakistan POWs cannot be dealt with independently. Why is Saudi Arabia so concerned about this?
Faisal: Your Excellency please be informed that Saudi Arabia and Pakistan are practically the one and the same. Pakistan is our closest friend. Then your Excellency, there is nothing else to discuss between us. But please think over our two conditions. One is the declaration of an Islamic republic and the other is the unconditional release of all Pakistani prisoners of war.
Mujib: Your Excellency, I would appreciate if you explain one thing to me.
Faisal: Your Excellency, please tell me what it is.
Mujib: Due to the non-recognition of Bangladesh by Saudi Arabia for almost two years, the pious Muslims of Bangladesh are not able to perform the Hajj. Has your Excellency given thought to this? Is it fair to create such a barrier? Muslims from all over the world have a right to worship at the Holy Kaaba. Then why has this barrier been created? Why do thousands of faithful Bengali Muslims have to travel on Indian passports to perform Hajj?
———————————————————————
The essay was originally published in News from Bangladesh on19th October, 1998
@আকাশ মালিক,
মডুরা আমারে ব্যান করেন, তয় একডা গাইল আমি দিমুই। খাপো, মাচো সউদি আর পাকি পুটকিগুলার যে গোড়া একজায়গাতই, আর আমগো দেশের চুমা…রা যে কিয়েল্লাইগা বারবার হেগোর দিকে তাকায়, তাও যারা বুজে না, হেগোর ….থাক, বেশি অচলিল হৈয়া যাইতাসে গা।
দর্মনিরপেক্কতা মানি না, সবডি হালায় ইহুদি-নাসারাগো চক্কর।
দেহেনসে, কি সোন্দর দর্মনিরপেক্কতার …মার্সে।
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক, ধন্যবাদ আপনাকে আবার। এই লেখাটি পড়ে শেষ করলাম।বলার তেমন কিছু নেই। খুব ভাল লেখাটি।তারচেয়েও ভাল লেগেছে সাইফুল ভাইয়ের এই মন্তব্য
আল্লাহফাক কথাটি আমি প্রথম পেয়েছিলাম ধর্মকেরী তে।
খুব কষ্ট হয় যে সেই সময়ের সাইফুল ভাই আর বর্তমানের সাইফুল ভাই আর এক নেই। আগেও এক পোষ্টে সাইফুল ভাইয়ের সেই অনুবাদের কথা বলেছিলাম( আলী সিনার প্রবন্ধটি)।
আল্লাহ আল্লাহফাক বলার মধ্যে বিশেষ কৃতিত্ব নেই, কিন্তু বর্তমান সাইফুল ভাইয়ের এই ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যাওয়াটা বেশ চোখে লাগছে। উনি নাকি পরে আলাপ করবেন উনার দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপারে( কেন এখন কেউ ইসলামের সমালোচনা করলেই উনি তেড়ে আসেন এই নিয়ে আর কি), কিন্তু ৫ মাস হতে চলল উনার কাছ থেকে কিছুই জানতে পারলাম না উনার পরিবর্তির দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে।
(-?)
@ইরতিশাদ,
এম, আর, আখতার মুকুলের লেখা “মুজিবের রক্ত লাল” বইটিতে সম্ভবত এ সাক্ষাতকার সম্মন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা আছে। ১৯৭৩ এ আলজিয়ার্স (সম্ভবত)এ হয়ে যাওয়া ন্যাম সম্মেলনে মুজিব ও বাদশা ফয়সালের এই সাক্ষাতকারটি হয়েছিল।
ধন্যবাদ।
@সিসিপাস,
ধন্যবাদ। পিয়াল এই রেফারেন্সটাও উল্লেখ করেন নি। তবে আমি পিটার জিলের মতো (নীচে ফরিদ আহমেদের মন্তব্যে দেখুন) নিরপেক্ষ রেফারেন্স আশা করছিলাম। এম আর আখতার মুকুলের মতো অন্ধ মুজিব-ভক্ত ‘গল্পকারের’ নয়।
মূল লেখাটিতে এখানে একটা লিঙ্ক ছিল লেখকের বাকশাল সম্পর্কিত আরেকটি লেখার যেখানে সাক্ষাতকারটি তুলে দেয়া হয়েছে।লিঙ্ক দেয়াটা মনে হয় কোনভাবে মিস হয়ে গেছে।
@লীনা রহমান,
প্রবন্ধ এডিট না করে সাক্ষাতকারটি এখানে তুলে দিলাম। আগ্রহী পাঠক প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
বাকশাল প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাতকার।
– বঙ্গবন্ধু, আপনার রাজনৈতিক চিন্তাধারার মূলনীতি বা লক্ষ্য কি?
– আমার রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা ধ্যান ও ধারণার উৎস বা মূলনীতিমালা হলো গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই চার মূলনীতিমালার সমন্বিত কার্যপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি শোষণহীন সমাজ তথা আমার দেশের দীনদুখী শোষিত বঞ্চিত শ্রমজীবি মেহনতী মানবগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের সমষ্ঠিগত প্রকৃত ‘গণতান্ত্রিক একনায়কতান্ত্রিক’ শাসন প্রতিষ্ঠাকরণই আমার রাজনৈতিক চিন্তাধারার একমাত্র লক্ষ্য।
– বঙ্গবন্ধু, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কি একযোগে বা পাশাপাশি চলতে পারে?
– যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে তাকে সংখ্যালঘু ধনিক শোষকদের গণতন্ত্র বলাই শ্রেয়। এর সাথে সমাজতন্ত্রের বিরোধ দেখা দেয় বৈকি। তবে গণতন্ত্র চিনতে ও বুঝতে আমরা ভুল করি। কারণও অবশ্য আছে। আর তা হলো শোষক সমাজ গণতন্ত্র পূর্ণভাবে বিকাশলাভ করুক তা চায় না। এবং গণতন্ত্রকে কিভাবে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার হাতিয়ারে পরিণত করা যায়- এখানে চলে তারই উদ্যোগ আয়োজন। এভাবেই প্রকৃত গণতন্ত্রকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ অজ্ঞ জনগণই শুধু নয়- তথাকথিত শিক্ষিত সচেতন মানুষও প্রচলিত আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে বুঝতে অক্ষম। এরা ভাবে যে ভোটাভুটিই হলো গণতন্ত্র। একটু তলিয়ে দেখে না প্রাপ্তবয়স্ক মোট জনসংখ্যার কত পার্সেন্ট ভোট দিলো, কোন শ্রেনীর লোকেরা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলো, কারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলো, ক্ষমতাসীনরা কোন পদ্ধতিতে তাদের শাসন করছে, সাধারণ জনগণ কতোটুকু কি পাচ্ছে। সুতরাং আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি- প্রচলিত গণতন্ত্রের বদৌলতে সমাজের মাত্র ৫% লোকের বা প্রভাবশালী ধনিকশ্রেনীর স্বৈরাচারী শাসন ও বল্গাহীন শোষণকার্য পরিচালনার পথই প্রশস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রচলিত গণতন্ত্রের মারপ্যাচে সমাজের নিম্নতম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর শাসন ও প্রভাব প্রতিপত্তি, সর্বপ্রকার দূর্নীতি শোষন অবিচার অত্যাচার ও প্রতারণায় সমাজের সর্ববৃহত্তম অজ্ঞ দুর্বল মেহনতী কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানব গোষ্ঠীর (শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ) মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রকৃত গণতন্ত্র বলতে আমি এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝি, যে ব্যবস্থায় জনগনের বৃহ্ত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বৃহত্তর কল্যাণের নিমিত্তে তাদের জন্য, তাদের দ্বারা এবং তাদের স্বশ্রেণীভুক্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকার প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে তাদেরই প্রকৃত শাসন ও আর্থসামাজিক মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা প্রচলিত গণতান্ত্রিক উপায়ে অর্জিত হতে পারে না। কারণ প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে চলে অর্থ সম্পদের অবাধ ও মুক্ত প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে এ জাতীয় আর্থ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া কোনো প্রকারেই সম্ভব না। একমাত্র সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিই এদেরকে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের কার্যকরী নিশ্চয়তা দিতে পারে-তাদের আর্থ সামাজিক মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এজন্য আমি মনে করি প্রকৃত গণতন্ত্রের আরেক নাম সমাজতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যেই প্রকৃত গণতন্ত্র নিহিত। এজন্যেই আমি গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি। আমি মনে করি প্রকৃত গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের ভেতর কোনো বিরোধ নেই।
– অনেকে বলেন ‘বাকশাল’ হলো একদলীয় বা আপনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার একটি অপকৌশল- এ সম্পর্কে আপনি পরিষ্কার মতামত দিন।
– সাম্রাজ্যবাদের অবশেষ পুঁজিবাদী সমাজসভ্যতা ও শোষক পরজীবিদের দৃষ্টিতে ‘বাকশাল’ তো একদলীয় শাসনব্যবস্থা হবেই। কারণ বাকশাল কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে আমি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি বহুজাতিক পুঁজিবাদী শোষক, তাদের সংস্থা সমূহের লগ্নিকারবার এবং তাদের এদেশীয় সেবাদাস, এজেন্ট, উঠতি ধনিক গোষ্ঠীর একচেটিয়া শোষণ ও অবৈধ প্রভাবপ্রতিপত্তি-দুর্নীতি-প্রতারণার সকল বিষদাঁত ভেঙ্গে দেবার ব্যবস্থা করেছি। এজন্য তাদের আঁতে ঘাঁ লেগেছে, বাকশাল ও আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীশক্তি শাসকরা এদেশে গোপনে অর্থ যোগান দিয়ে তাদের সেবাদাস ও এজেন্টদের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক কার্যক্রমকে বানচাল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, সভাসমিতি এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আমার সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন থানায় তাদের ভাড়াটে চরদের দিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, গণহত্যা, অসামাজিক কার্যকলাপ ও সাম্প্রদায়িক তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রতিদিন তাদের ষড়যন্ত্রের খবরা-খবর আমার কানে আসছে।
প্রচলিত গনতান্ত্রিক বৈষম্য, শোষণ-দূর্নীতিভিত্তিক সমাজকে, দেউলিয়া আর্থসামাজিক ব্যবস্থা, জরাজীর্ণ প্রশাসন ও অবিচারমূলক বিচার ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটিত করে একটি শোষণহীন, দূর্নীতিহীন, বৈষম্যহীন ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক সাম্যবাদী সমাজ বিপ্লবের পথ রচনা করেছি। এই সমাজ বিপ্লবে যারা বিশ্বাসী নন, তারাই বাকশাল ব্যবস্থাকে একদলীয় স্বৈরশাসন ব্যবস্থা বলে অপপ্রচার করছেন। কিন্তু আমি এ সকল বিরুদ্ধবাদীদের বলি, এতোকাল তোমরা মুষ্ঠিমেয় লোক, আমার ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ দুখী মেহনতী মানুষকে শাসন ও শোষণ করে আসছো। তোমাদের বল্গাহীন স্বাধীনতা ও সীমাহীন দূর্নীতির মধ্য দিয়ে ব্যক্তিসম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অবাধ ও মুক্ত প্রতিযোগিতার হোলিখেলায় আমার দুখীমানুষের সব আশা-আকাংখা-স্বপ্ন-সাধ ধুলায় মিশে গেছে। দুখী মানুষের ক্ষুধার জ্বালা ব্যথা বেদনা, হতাশা-ক্রন্দন তোমাদের পাষাণ হৃদয়কে একটুও গলাতে পারেনি। বাংলার যে স্বাধীনতা তোমরা ভোগ করছো, এই স্বাধীনতা, এই দেশ, এই মাটি ঐ আমার দুখী মেহনতী মানুষের সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন সংগ্রাম এবং জীবন মৃত্যুর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তোমাদের অবদান কতটুকু আছে, নিজেদের বুকে একবার হাত দিয়ে চিন্তা করে দেখো। বরং অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছো। বিদেশী শাসক-শোষকদের সহায়তা করেছো। নিজের ঘরে থেকে ভাইয়ের ঘর পুড়িয়েছো, মানুষকে হত্যা করেছো। মা-বোনদের লাঞ্ছিত করেছো, আরো কি না করেছো! এসবই করেছো ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের ঘৃন্য লক্ষ্যে।
আমার দেশের মাত্র ৫ পার্সেন্ট লোক ৯৫ পার্সেন্ট লোককে দাবিয়ে রাখছে, শাসন-শোষণ করছে। বাকশাল করে আমি ওই ৯৫ ভাগ মানুষের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক শাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির ব্যবস্থা করেছি। এতকাল মাত্র ৫ ভাগ শাসন করেছে, এখন থেকে করবে ৯৫ ভাগ। ৯৫ ভাগ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথে ৫ ভাগকে মিশতে হবে। আমি মেশাবোই। এজন্য বাকশাল করেছি। এই ৯৫ ভাগ মানুষকে সংঘবদ্ধ করেছি তাদের পেশার নামে, তাদের বৃহত্তর কল্যাণে, তাদের একক দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশালে। মূলত বাকশাল হচ্ছে বাঙালীর সর্বশ্রেণী সর্বস্তরের গণমানুষের একক জাতীয় প্লাটফর্ম, রাজনৈতিক সংস্থা, একদল নয়। এখানে স্বৈরশাসনেরও কোনো সুযোগ নেই। কারণ বাঙালী জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত বা সমষ্ঠিগত শাসন ব্যবস্থায় কে কার উপর স্বৈরশাসন চালাবে? প্রত্যেক পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে শাসন পরিষদ গঠন করা হবে। কোনো পেশা বা শ্রেণী অন্য পেশার লোকদের ওপর খবরদারী করতে পারবে না। যে কেউ যিনি জনগনের সার্বিক কল্যাণের রাজনীতিতে তথা সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তিনি এই জাতীয় দলে ভিড়তে পারবেন।
যারা বাকশালকে একদলীয় ব্যবস্থা বলেন, তাদের স্মরণ করতে বলি, ইসলামে ক’টি দল ছিলো? ইসলামী ব্যবস্থায় একটি মাত্র দলের অস্তিত্ব ছিলো, আর তা হলো খেলাফত তথা খেলাফতে রাশেদীন। মার্কসবাদও একটি মাত্র দলের অনুমোদন দিয়েছে। চীন, রাশিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম কিংবা অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রে কতটি করে দল আছে? এইসব ইসলামী রাষ্ট্রসমূহকে বাদ দাও, ওখানে মহানবীর ইসলাম নেই। বস্তুত প্রকৃত গণতন্ত্র বা সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই একটি একক জাতীয় রাজনৈতিক সংস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। একটি জাতীয় কল্যাণের অভিন্ন আদর্শে, ব্যাপক মানুষের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে একটি মাত্র রাজনৈতিক সংস্থার পতাকাতলে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু বহুদলীয় তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় কোনোভাবেই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়। সেখানে বহুদলে জনগণ বহুধা বিভক্ত হতে বাধ্য। আর বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত, পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বসংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানির রাজনীতি দিয়ে জাতির বৃহত্তর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কোনোভাবেই অর্জিত হতে পারে না। ইতিহাস সে সাক্ষ্য দেয় না। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও তাই বলে।
– বঙ্গবন্ধূ, বাকশালের মূল লক্ষ্য বা এর কর্মসূচী সম্পর্কে কিছু বলুন।
– বাকশালের মূল লক্ষ্য তো আগেই বিশ্লেষণ করেছি। তবে এক কথায় আমি যা বুঝি তা হলো একটি শোষণহীন, দূর্নীতিমুক্ত সমাজ ও শোষিতের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠাকরণ। বাকশাল কর্মসূচীকে আমি প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। এক. রাজনৈতিক, দুই. আর্থসামাজিক, তিন. প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা।
(এক) রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক পেশাভিত্তিক লোকদের জাতীয় দল বাকশালে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা রেখেছি। এবং পর্যায়ক্রমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় দলের একাধিক প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণ তাদের মধ্যে থেকে একজনকে নির্বাচিত করবেন। প্রেসিডেন্ট জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। জাতীয় দলের সদস্য যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। প্রেসিডেন্ট পদাধিকার বলে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান হবেন। প্রেসিডেন্ট জাতীয় সংসদের আস্থাভাজন একজনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে মন্ত্রীদের নিয়োগ করবেন। সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের অনাস্থায় প্রেসিডেন্টকে অপসারিত করতে পারবেন। মন্ত্রীসভা প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় সংসদের কাছে দায়ী থাকবেন। স্থানীয় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সর্বস্তরের জনগণের প্রতিনিধিত্ব প্রত্যক্ষভাবে বজায় থাকবে।
(দুই) আর্থসামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক বহুমূখী গ্রাম-সমবায় প্রকল্প। এর মাধ্যমে গ্রামীন আর্থব্যবস্থায় উন্নয়ন বা স্বনির্ভর-স্বাধীন গ্রামীন ব্যবস্থা, বিশেষ করে ভূমিসংস্কারের প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের পুনর্বাসন তথা কৃষকদের হাতে জমি হস্তান্তর, উৎপাদন বৃদ্ধি ও সাম্যভিত্তিক বন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। ভারী শিল্পকারখানা, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, বৈদেশিক বানিজ্য, ব্যাংক, বীমা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি জাতীয়করণ করে জনগণের যৌথ শেয়ার মূলধনে নতুন নতুন কৃষিজাত শিল্প ও অন্যান্য শিল্প কলকারখানা ও সংস্থা প্রতিষ্ঠা। সীমিত ব্যক্তিমালিকানাকে উৎসাহদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন সংস্থাসমূহ যাতে জনসাধারণ ও তাদের শ্রমিকদের শোষণ করতে না পারে তার ব্যবস্থা থাকবে।
(তিন) প্রশাসনিক কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, কর্পোরেশন ও বিভাগগুলোর পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন তথা মাথাভারী প্রশাসনের উচ্ছেদ সাধন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জেলা গভর্নর ও থানা প্রশাসনিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ, মহকুমা ও বিভাগীয় প্রশাসনকে তুলে দেয়া হচ্ছে। জেলা ও থানাগুলো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হবে। গ্রাম সমবায় পরিষদ সদস্যদের ভোটে থানা পরিষদ গঠিত হবে। তবে থানা পরিষদের প্রশাসক/চেয়ারম্যান ও জেলা গভর্ণর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। থানা প্রশাসক/চেয়ারম্যানরা ও জেলা গভর্ণররা জনগণ, স্ব স্ব পরিষদ ও প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ী থাকবেন। গ্রাম সমবায় পরিষদ থানা পরিষদের কাছে, থানা পরিষদ জেলা পরিষদের কাছে দায়ী থাকবে। গ্রাম সমবায় পরিষদ, থানা পরিষদ, জেলা পরিষদ- এরপরই থাকবে জাতীয় সরকার। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে জাতীয় সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতাকে বিপুলভাবে বিকেন্দ্রিকরণ করে প্রশাসনকে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র, স্টিলফ্রেম গতানুগতিক বা টাইপড চরিত্রকে ভেঙ্গে গুড়ো করে দেবার ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকারী কর্মচারীরা এখন থেকে জনগণের সেবক।
বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টকে রাজধানীতে বহাল রেখে হাইকোর্ট বিভাগকে আটটি আঞ্চলিক বিভাগে বিকেন্দ্রিকরণের ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে সুপ্রিমকোর্টের অধিবেশন বছরে অন্তত একবার করে প্রতিটি আঞ্চলিক বিভাগে (হাইকোর্ট) বসবে। জেলা আদালতসমূহ বহাল থাকবে। প্রতিটি থানাতে থাকবে একাধিক বিশেষ ট্রাইবুনাল। প্রত্যেকটি আদালতে যে কোনো মামলা ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে মিমাংসা করতে হবে। গ্রামে থাকবে একাধিক শালিস বোর্ড। শালিস বোর্ড গঠিত হবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে। শালিস বোর্ড চেয়ারম্যান থাকবেন সরকার নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা। এভাবে সুষ্ঠু, ন্যায় ও দ্রুততর গণমুখী বিচারকার্য সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরণ করা হয়েছে।
– বঙ্গবন্ধু, অনেকে বলেন, আপনি নাকি কোনো একটি পরাশক্তির চাপের মুখে বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাকশাল কর্মসূচী দিয়েছেন এবং এ ব্যবস্থা নাকি সাময়িক কালের জন্য করেছেন- এ বিষয়ে আপনি অনুগ্রহ করে কিছু বলবেন কি?
– কারো প্রেশার বা প্রভাবের নিকট আত্মসমর্পন বা মাথা নত করার অভ্যাস বা মানসিকতা আমার নেই। এ কথা যারা বলেন, তারাও তা ভালো করেই জানেন। তবে অপপ্রচার করে বেড়াবার বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই, তাই উনারা এ কাজে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। করুন অপপ্রচার। আমি স্বজ্ঞানে বিচার বিশ্লেষণ করে, আমার অভিজ্ঞতার আলোকে, আমার দীনদুখী মেহনতী মানুষের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে আমি বাকশাল কর্মসূচী দিয়েছি। আমি যা বলি, তাই করে ছাড়ি। যেখানে একবার হাত দেই সেখান থেকে হাত উঠাই না। বলেছিলাম এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো, মুক্ত করেছি। বলেছি শোষণহীন দুর্নীতিমুক্ত সমাজতান্ত্রিক বাংলা গড়বো, তাই করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ। কোনো কিন্তুটিন্তু নাই, কোনো আপোষ নাই।
– বঙ্গবন্ধু, বাকশাল বিরোধীমহল অর্থাৎ ঐ ৫% সংখ্যায় অতি নগণ্য হলেও তাদের হাতেই রয়েছে বিপুল সম্পদ। তাদের সাথে রয়েছে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী শক্তির যোগসাজশ। তাদের পেইড এজেন্টরাই রয়েছে প্রশাসনিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার কেন্দ্রে। তাদের কায়েমী স্বার্থের উপর আপনি আঘাত হানতে যাচ্ছেন, এই অবস্থায় তারা চোখ মেলে, মুখ গুজে বসে থাকবে বলে আপনি মনে করেন? তারা তাদের অবস্থান নিরাপদ ও সংহত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে না?
– আমি জানি তারা বসে নাই। ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতিদিনই ষড়যন্ত্রের উড়ো খবর আমার কাছে আসে। সাম্রাজ্যবাদ ও তার পদলেহীরা এসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। গোপন পথে অঢেল অর্থ এ কাজে লাগাবার জন্য বাংলাদেশে আসছে। সুকৌশলে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ চলছে। অপপ্রচার চলছে। আমি জাতির বৃহত্তর কল্যাণে এ পথে নেমেছি। জনগণ সমর্থন দিচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্র করে, বাধার সৃষ্টি করে, হুমকি দিয়ে আমাকে নিবৃত্ত করা যাবে না। আমার কাজ আমি করে যাবোই।
হয়তো শেষ পর্যন্ত ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে। পরোয়া করি না। ও মৃত্যু আমার জীবনে অনেকবার এসেছে। একসিডেন্টলি আজো আমি বেঁচে আছি। অবশ্যই আমাকে মরতে হবে। তাই মৃত্যু ভয় আমার নেই। জনগন যদি বোঝে আমার আইডিয়া ভালো, তাহলে তারা তা গ্রহণ করবে। আমার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। আমার একটা বড় স্বান্তনা আছে, যুদ্ধের সময় আমি জনগনের সাথে থাকতে পারিনি। জনগণ আমারই আদেশ ও নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। আজকের এই শোষণমুক্ত সমাজতন্ত্র বা অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লবে আমি যদি নাও থাকি, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার বাঙালীরা যে কোনো মূল্যে আমার রেখে যাওয়া আদর্শ ও লক্ষ্য একদিন বাংলার বুকে বাস্তবায়িত করে ছাড়বে ইনশাল্লাহ।
অমি রহমান পিয়ালের লেখার প্রশংসা শুনেছি আমার এক বন্ধুর কাছে। আজ পড়ে বুঝলাম উনি এর যোগ্য দাবিদার। আকাশ মালিককে ধন্যবাদ লেখাটি এখানে পোস্ট করার জন্য। এখানে যে বিষয়গুলো বলা আছে শেখ মুজিব সম্পর্কে তা আমিও শুনেছি অনেক আওয়ামীলীগ বিরোধী মানুষের কাছে। কিন্তু কারো কাছ থেকে তার বিপরীতে এমন আলোচনা শোনার সুযোগ হয়নি। আমার মনে হয় শেখ মুজিবকে কোন দলের নেতা হিসেবে মনে না করে স্বাধীনতাকামী এবং স্বাধীন সকল বাঙ্গালীর নেতা হিসেবে সম্মান দিলে তাঁর নেতৃত্বের যথাযোগ্য মূল্যায়ন হবে।