[সতর্কীকরণঃ ব্লগটির নাম বিভ্রান্তিকর। এর মধ্যে বিবর্তনের কিছু নেই। শুধু আছে বিবর্তনের উপর একটি প্রশ্ন। প্রশ্নটা পরিষ্কার করে উপস্থাপনের জন্যই এই অবতারণা]
এই যে আমাদের বুকভরা এত আবেগ এর সাথে ডারউনের Survival of the Fittest এর যোগসুত্রটা কী? আমাদের হাসি-কান্না-মাথাগরমের সাথে বিবর্তনের সম্পর্কটা কিভাবে? বিপরীত লিঙ্গের মানুষ দর্শনে যৌনাভূতির উদ্রেক হয় জিনের বংশগতি রক্ষার জন্য। বোধগম্য। কোন প্রশ্ন নাই। কিন্তু গান শুনলে হৃদয় জুড়িয়ে যায়, নিকট জনের বিয়োগ ব্যথায় বুকে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, চোখের জলে আচল ভিজে যায়, কারও কথায় পিত্ত জ্বলে যায়। আবার মুক্তমনায় কারও মন্তব্য পড়েই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠি। আমাদের এরকম অদ্ভূত আচরণের ব্যাখ্যা বিবর্তন কী ভাবে দিয়ে থাকে!
ধর্ম ও সংস্কৃতি ভেদে আবেগের প্রকৃতি এবং বিস্ফোরণের মাত্রায় পার্থক্য লক্ষনীয়। নিকট জনের মৃত্যুবেদনা কোন সংস্কৃতির মানুষেরা দিনের পর দিন কেঁদেও শেষ করতে পারে না। আবার কোথাও দেখা যায় তারা এক ফোটা চোখের জলও ফেলে না। বাস্তবিকতাকে সহজেই মেনে নেয়। জীবন চলতে থাকে জীবনের মত।
হরমোন, বাইল, খাদ্য পরিপাক সহায়ক লালা সব কিছুই প্রয়োজনের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিক্রেসন হয়ে থাকে আমাদের শশীরে। এসব কোন সুক্ষ্ম রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফসল হবে হয়ত। বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কান্নার জলও সেরকম রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হতে পারে। যদি তাই হয়, তবে মানুষের ধর্মবোধ বা বিশ্বাস রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রনে প্রভাব রাখছে। আমার এই ভাবনা গুলো দু-একটা অপ্রয়োজনীয় উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করব। পাঠক ইচ্ছে করলে উদাহরণগুলো ডিংগিয়ে যেতে পারেন।
প্রিয়জনের মৃত্যুতে কান্নাকাটিতে হিন্দুদের জুড়ি নেই। কান্না চলবে দিনের পর দিন। কোন কোন হিন্দু সমাজে এই কান্না এক মাস পর্য্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হয়। মাস শেষে শ্রাদ্ধ করে অফিসিয়ালী কান্নার ইতি দেওয়া হয়। মানুষ তারপরও কাঁদে। পিতার মৃত্যু সংবাদ শুনে আমার স্ত্রী কয়েক বার ফিট হয়। আঠার ঘন্টা পরে জ্ঞান ফিরে আবুল তাবুল বলতে শুরু করে। ভাইয়ের মৃত্যু হয়। ধীরে ধীরে অত্যন্ত সাবধানে সংবাদটি দেওয়া হল। কান্না সাংগ হয়েও শেষ হল না। একবছর পরে দেশে গিয়ে নতুন করে পারিবারিক কান্না শুরু। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে অজ্ঞান। মৃতের স্ত্রীও অজ্ঞান। আশে পাশের লোকজনে বাড়ী ভরতি। মৃতের স্ত্রী ঠিক হলেন। কিন্তু আমার স্ত্রী ঠিক হচ্ছেন না। সমস্ত গা শক্ত। শশীরের জট সারতে না সারতেই কাঁপুনি শুরু। গ্রামে ডাক্তার নেই। সাঙ্ঘাতিক বিপদ।
হিন্দু কান্না এখানেও শেষ হয় না। গয়াতে পিন্ড দেওয়ার সময় একবার। কাশীতেও একবার। সেই পিন্ডদান একবছর পরেই হোক আর বার বছর পরেই হোক। বুক ভাংবে, চোখে বৃষ্টির ধারা বইবে। মুসলমানের বেলায় কান্নার ব্যাপারটি অন্য রকম। আল্লাহর নির্দেশে আজরাইল আসে। জান কবজ হয়। হাশরের মাঠে বাহাত্তুর কাঁতারের কোন একটি কাঁতারে দাঁড়াবে। বিচার হবে। কান্নাকাটি আল্লাহ বিরুদ্ধ কাজ। হিন্দুরা তা বুঝে না। তাই মুসলমানদের আত্মীয় বিয়োগ দেখে হতাশ হয়। ওদের কোন আত্মা নেই। কোন মায়ামমতা নেই। এ্কদিন কি দুই দিন। তারপর সব শেষ।
তবু তো মুসলমানরাও কাঁদে। অনেক জনগোষ্টি আছে যাদের চোখ একেবারে শুষ্ক – মরুভূমি।
১৯৯৯ সালে এরিক ভ্যালি একটি ফিল্ম ক্রু নিয়ে তিব্বত যান। তিব্বতিদের জীবন-যাপন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী বানাবেন। কমুনিটির বৃদ্ধ নেতা টিনলের সহায়তায় একটি স্ক্রিপ্ট তৈরী করলেন। পাহাড়ি চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে তিন-চার মাসের বিপদ-সংকুল অভিযান। একপাল ক্ষুদ্রকায় মহিশ নিয়ে ভাটির পথে যাত্রা। লবন আনবে। দ্বিতীয় আর একটি অভিযান হবে পাহাড়-পর্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে। সেখানে কৃষিকাজ হয়। মহিশের পিঠে লবন যাবে। মহিশের পিঠেই ধান-গম আসবে। তাই সারা বছরের খাবার গ্রামবাসীর। টিনলে পরিবারের হাতে বংশপরম্পরায় নেতৃত্ব। টিনলে বৃদ্ধ। এবার ছেলের উপর দ্বায়িত্ব। এটাই তার প্রথম যাত্রা। ছোট ছেলেপুলেরা, মহিলা এবং বৃদ্ধজনেরা অপেক্ষায় থাকে। পাহাড়, পর্বত, শৈত্যপ্রবাহ। এদের কোন না কোন দেবতা রুষ্ট হন। পাহাড় থেকে ছিটকে প্রতিবারই অনেকেই মারা যায়।
তিন-চার মাস পরে মহিশ গুলো এল। প্রতিটির পিঠে ঝলানো লবনের বস্তা। একটির পিঠে লবনের বস্তা নেই। পরিবর্তে একটি মানুষ ঝুলে আছে। টিনলের একমাত্র ছেলেটি। একদিকে পা। আর একদিকে মাথা আর হাতদুটো। সবাই ক্ষনিক থমকে দাঁড়লো। মা ঘরের চৌকাটে দাঁড়িয়েই ছেলেকে চিনলেন। চৌকাঠে হেলান দিয়ে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন। স্ত্রী প্রেমাও তাই করল। কারও চোখে জল নেই। দেবতা ক্রুদ্ধ হন। মানুষের বিপর্যয় আসে। জীবন চলতে থাকে।
টিনলে বেড়িয়ে এলেন। সবাইকে নির্দেশ দিলেন লবন নামাতে। পন্ডিতেরা দিনক্ষন ঠিক করবেন। এই লবন নিয়ে যেতে হবে অন্যদিকে। শৈত্যপ্রবাহ আর বরফ স্তুপের উপর দিয়ে দূর্গম অঞ্চলে যেখানে কৃষিকাজ হয়। কারও কোন বেদনা নেই। দুঃখ নেই। কষ্ট নেই। আবেগ নেই। টিনলে মৃত ছেলেকে নিয়ে কাছেই একটা পাহাড়ে গেলেন। বড় একটা ছোড়া দিয়ে মৃত ছেলেকে টুকরো টুকরো কাটলেন। তারপর এদিক ওদিক ছড়ায়ে দিলেন। শকুনের রূপ নিয়ে দেবতারা এলেন। ভূড়ি ভোজন করলেন।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ নিয়ে ডকুমেন্টারী করতে এসেছিলেন এরিক ভ্যালি। কিন্তু তা হলনা। তৈরী তার চেয়ে বিরাট একটা কিছু। হয়ে গেল অত্যন্ত ভাল একটি ফিল্ম। অস্কারের কথা মনে এল। পাঠালেন। অস্কার পেলেন না। জুটল Oscar nod. Best Foreign Language Film ক্যাটাগরীতে।
netflix গ্রাহকরা এখানে ক্লিক করে ছবিটি দেখতে পারেন আমি একই সাথে চারবার দেখেছিলাম।
গতকাল (৮-৯-২০১০) এক মৃতের funeral service. ডালাসের কাছে একটি ছোট শহর, Burleson. ফুলেফুলে শোভিত ভাব-গাম্ভির্য পূর্ণ অনুষ্ঠান। পৌঁছেই মনটা শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে উঠল। মৃতের পরিবার-পরিজন হাস্যবদনে আমন্ত্রিতদের অভ্যর্থনা করলেন। কারও মনে কোন দুঃখবোধ নেই। সবাইকে একটা কাগজ দেওয়া হল। তাতে লেখা
God saw you getting tired
And a cure was not to be
—
—
God broke our hearts to prove us
He only takes the best
অসম্ভব যাদু এক লেখাগুলোয়। বুঝতে দেরী হল না এই লেখাগুলোতে বিশ্বাসবোধই মৃতের পরিবার-পরিজনের সমস্ত শক্তির উৎস। তাই তাদের কোন দুঃখবোধ নেই। জীবনের অন্য দিনগুলোর মতই এই দিনটিও স্বাভাবিক। জীবন চলতে থাকে Godএর নির্দেশে।
একটা ছোট কাগজে লেখা মৃতের হয়ে লেখা
মৃতের কাছ থেকে শান্তি ও বিশ্বাসের বাণী – I’ll greet you with a smile and say “Welcome Home” যাদুকরী এই বাণী স্বজন-বিয়োগ জনিত কষ্ট বেদনা ধূয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়। সবার প্রানে তাই আনন্দের ধারা। হাসিমুখে অভ্যর্থনা। গীটার সহযোগে বিদায়ী গান।
একই বেঞ্চে মাঝখানে আমার মেয়ে ইয়েন, স্ত্রী মিনু আর আমি। আমরা ভিন্ন, আলাদা। ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমাদের কাজ-কারবারও ভিন্ন। মৃতের একমাত্র মেয়েটি Mercy Me এর Homesick গানটি ধরল –
আমার স্ত্রী পার্সে টিস্যু পেপার খুজছেন। আমার চোখও ভিজে ছপছপ করছে। হাত-ইশারায় আমি একটি চাইলাম। ডানপাশের ভদ্রলোক আমাদেরকে Kleenex এগিয়ে দিলেন।
আমাদের আত্মা নেই। কিন্তু আবেগ আছে। কারও বেশী। কারও কম। আমাদের দেহের ভিতর কোথায় এরা বাস করে? কী কারণে এরা জাগ্রত হয়? ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রভাব ভিন্ন ভাবে কাজ করে আমাদের জৈবিক প্রক্রিয়ায়। বিবর্তন কী ব্যাখ্যা আনে এখানে?
টেক্সাস, ১০-১১-২০১০
দারুন লেখা। আমাদের আত্মা নেই, আবেগ আছে। ঐটুকুই যথেষ্ট। আবেগটুকু আছে বলেই মৃত্যু অব্দি বেঁচে থাকতে চাই। আবেগটুকু আছে বলেই মানুষ বলে নিজেকে পরিচয় দেই।
@জওশন আরা, আপনাকে নতুন দেখছি মনে হয়। কিন্তু আপনার মন্তব্য দেখে নতুন মনে করা ভুল। মন্তব্যগুলো বড়ই যুৎসই। চিন্তাপ্রসূত।
@নৃপেন্দ্র সরকার, জ্বী, নতুন এখানে। ধন্যবাদ 🙂
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, পুরোনোরাও মাঝে মাঝে নতুন রূপে, নতুন সাজে ফিরে আসে। বসন্ত যেমন বার বার ঘুরে আসে; ঠিক তদ্রুপ। অবশ্য অন্য কারণেও আসতে পারে, সেই কারণটি হচ্ছে- :heart:
ভালো থাকবেন।
আচ্ছা , গত রাতে আমি একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম আমি বেহেস্তে চলে গেছি আর সেখানে হুরদের সাথে মৌজ করছি। – এর কি কোন বিবর্তনীয় ব্যখ্যা আছে ? কেউ কি আছেন উত্তর দেয়ার ?
@ভবঘুরে,
বিবর্তনীয় নয়, তবে ফ্রয়েডীয় ব্যাখ্যা আছে। আদিলের (এবং ফরিদ ভাইয়ের) ভাগ্নে তানভী ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবে।
@অভিজিৎ,
আপনি ঠিক বলেছেন, এর কোন বিবর্তনীয় ব্যখ্যা নেই তবে ফ্রয়েডীয় ব্যখ্যা আছে। আসলে বিবর্তন নিয়ে মহা ডামাডোলে ফ্রয়েডীয় ব্যখ্যার কথা মনেই ছিল না। মুক্তমনাতে খালি বিবর্তন আর বিবর্তন। যেন আর কোন তত্ত্ব নেই দুনিয়া দারীতে।
@ভবঘুরে,
খুব সহজ ব্যাখ্যা।
এসবে ছাইপাশ লেখালেখি বাদ দিয়ে একটা বিয়ে করেন, পরিবেশ অনুকুল হলে একাধিকও করতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
দারুন সমাধান। মুসকিল আসান নামে একটা সাইট খোলার ব্যাপারে আপনার সহযোগীতা কামনা করছি।
@আতিক রাঢ়ী/ভবঘুরে,
কথায় বেশ ভাল যুক্তি আছে। যে দিনকাল পড়েছে তাতে বিকল্প আয়ের চিন্তা সময় থাকতে করা অতীব প্রয়োযন।
হুমায়ুন আহমেদের বহুব্রীহি নাটকে আসাদুজ্জামান নুর এমন পরামর্শ কেন্দ্র খুলেছিলেন। বাংলাদেশে এই ব্যাবসার তেমন ভবিষ্যত দেখি না, কারন পরামর্শ মনে হয় একটি বিরল বস্তু যা বাংগালী বিনে পয়সায় না চাইতেই খুশী হয়ে ভুরি ভুরি দেয়।
বিদেশে ভবিষ্যত মন্দ না। এখানে অতি আপন জন না হলেকেউ কাউকে অযাচিত পরামর্শ দেয় না। বিশ্বকাপের পর তো দেখি টিয়ে পাখী বেচারাদের চাকরি যাবার উপক্রম হয়েছে। আমি অলস টাইপ লোক, আপনারা উদ্যোগ নিলেই আমি এগিয়ে আসব।
ভবঘুরের সমস্যার সমাধান কিন্তু যায়গামতই দিয়েছি বলে আমার বিশ্বাস 😀 ।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এই যায়গামত সমাধান দিতে পারার ক্ষমতাইতো আমার বনিক সত্ত্বাকে লালায়িত করে তুলছে। 😀
@আদিল মাহমুদ,
হা হা হা , দারুন মুসকিল আসান বটে। আপনি যদি কি করিলে কি হয় নামক একটা সাইট খোলেন আমার ধারনা ভাল ব্যবসা হবে। কারন মানুষ যতই আধুনিক মনস্ক হোক না কেন, এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ ভাগ্য গননা করতে ভাল বাসে। আমি একবার বান্দর দিয়ে ভাগ্য গুনিয়েছিলাম। আর একবার টিয়ে পাখীকে দিয়ে ভাগ্য গোনাতে গিয়ে দেখি যতবারই ভাগ্য গোনাই টিয়ে পাখি ঠিক আগের সেই খাম টেনে তোলে। আমি তো তাজ্জব। পরে আমি গননকারীকে খামটা অন্য জায়গায় রাখতে বললাম। সে রাজী হলো না। তখন কারসাজীটা বুঝতে পারলাম।
@ভবঘুরে,
বালিশের নীচে মকসুদুল মোমেমিন, বেহেস্তি জেওর রেখে ঘুমালে বেহেস্তি হুরদের সাথে মৌজ দেখবেন না তো কী দেখবেন?
@আকাশ মালিক,
আমি ভবঘুরেকে একটা প্রস্তাব বিনীত ভাবে করতে চাই। আপনি ঘুমের আগে ফরিদ আহমেদের লেটেস্ট গল্পটা একবার পড়ে ঘুম দেন। বালিশের তলায় উনার গল্পের একটা কপিও রাখতে পারেন। তারপর কি স্বপ্ন দেখলেন আমাদের জানান 😀
মানুষ আবেগ প্রবন প্রানী, কান্নাকাটি হবেই; বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা থাক আর যাই থাক। শুধু মানুষই নয়, প্রিয় সখা/সখীর শোকে পশুরাও প্রবল শোক প্রকাশ করে। এই যুগে মানুষ শোকে না খেয়ে মারা যায় তেমন আর শোনা যায় না, পশুরা কিন্তু অধিক শোকে না খেয়ে মারা যেতে পারে।
মৃত প্রিয়জনের জন্য শোক প্রকাশ সবাই করে, তবে মাত্রা নির্ভর করে সমাজ সংস্কৃতির ওপর। যে যেটা জন্ম থেকে দেখে আসে সেটাই তার কাছে সংস্কৃতি। যেমন আমাদের দেশে যাকে বলে বুক ফাটা কান্না শুরু করতে হয়, একটু রুঢ় শোনালেও এটা যাকে বলে নিয়মের মত। কান্নার মাত্রা কম হলে অনেকে আবার সন্দেহের চোখে তাকাতে পারে। আমি নিজে বহুবার দেখেছি অধিক শোকে মৃতের প্রিয়জন স্তব্ধ হয়ে গেলে তাকে কাদো কাদো বলে আশেপাশের লোকজনেরা উদ্ধুদ্ধ করছেন।
পশ্চীমের দেশগুলিতে এর মাত্রা ও প্রকাশ নিঃসন্দেহে ভিন্ন। পশ্চীমা কালচারে শোক প্রকাশটা গণ নয়, নিজের ব্যাপার। শোক প্রকাশ সবাই চেষ্টা করে নিজের মত আড়ালে করতে। এই অংশটা ভাল মনে হয়। তবে পশ্চীমা অনেক কিছুর মতই এই ফুনেরালের মধ্যেও কিছু ফর্মালিটির আতিশয্য আছে যা বাড়াবাড়ি মনে হয়। সবাইকে কালো পোশাকে আসতে হবে এবং আর্থিক অবস্থা যাই হোক মৃতের সম্মানে মোটামুটি রাজকীয় ভোজ দিতে হবে।। দেখতে ভালই লাগে, সবাই কালো কোট জামা পরিহিত।
আমার এক আত্মীয়া এখানে এক সাদা আমেরিকান বিয়ে করেছে। তার দাদী শ্বাশুড়ি মারা গেলেন। আমার আত্মীয়াদের আর্থিক অবস্থা তখন মোটেও ভাল নয়। সে অবস্থায় তাদের বাজার থেকে কয়েক শো ডলার দিয়ে কালো পোষাক কিনতে হল। এর কোন বিকল্প তাদের ছিল না।
মৃতের হয়ে লেখা কবিতাটি আসলেই হৃদয়গ্রাহী।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমি দুটো ব্যক্তিগত ঘটনা না বলে থাকতে পারছি না।
১)
আমার মেয়ে ইয়েনের বয়স দুই। বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের টিন শেডে থাকি। ফুরুত ফুরুত করে চড়াই পাখি কার্নিসে ঢুকে। ভারি বিরক্ত লাগে। একটা ধরে ফেললাম। সূতোয় বেঁধে বারান্দার কাপড় শুকানোর দড়িতে আটকায়ে দিলাম। পুরুষ চড়াইটা ঘুর ঘুর করেচ। কাছে আসে। আমরা ঘরের ভিতর গেলেই সে কাছে এসে আটকা পাখীটার সাথে কথা বলে। আমার মেয়ে আনন্দ করে। আমরা আনন্দ পাই।
পরের দিন ভোরে দেখি ঘরের দরজার সামনে পুরুষটি পাখীটি মরে পড়ে আছে।
২। মাত্র একবছর আগের ঘটনা। Summer. Backyardএ বাগান করি। Okra গাছ গুলো কেবল উঠছে। একটা দুটো পাতা হয়। খরগোস এসে খেয়ে যায়। কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। শেষে দেশ থেকে আনা ঝাকি জাল (Sommervilleএ মাছ ধরি) দিয়ে ঢেকে দিই। পরদিন জালটি ঠিক আছে কি নেই দেখতে গেছি। দেখি ভিতরে ফুরুত ফুরুত। পাখিটাকে বের করেদিই। তার পর দেখি তার জোড়াটা মরে আছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
মাঝে মাঝে কি মনে হয় না যে পশু পাখীরা অনেক কিছুতে আমাদের থেকে উন্নত? নাকি এটা বাস্তবতাবোধ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়?
দেখি নিমাই দত্ত ওরফে অভিজিত এ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করেছেন কিনা।
@আদিল মাহমুদ,
আধা দিন সময় দিন। দেখবেন নিমাই দত্ত দুনিয়ার তাবত গবেষণা একত্র করে একটা লেখা নিয়ে আসছেন।
আমি বললাম “সংস্কৃত গত ভিন্নতার বিষয়টির জন্য অপেক্ষা করব”। অপেক্ষা শুরুই করতে পারলাম না। ব্যাখ্যা এসে গেছে। পড়ি কখন?
@আদিল মাহমুদ,
ভূিকম্প সুনামির মত দূর্যোগে পশুপাখিদের উত্তেজিত হতে দেখা যায়।এর ব্যাখ্যা কী?
@arnab,
আমি নিশ্চিত জানি না এই মুহুর্তে। খুব সম্ভবত নিম্ন শ্রেনীর কিছু প্রানীর কিছু বিশেষ সেন্স খুবই শক্তিশালী। ব্যাপারটা এমন যে কুকুর বা ভালুকের শ্রবন শক্তি মানুষের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী।
খুব সম্ভবত এরা তেমন কোন ইন্দ্রিয় শক্তির সাহায্যে ভূ-কম্পন জাতীয় প্রাকৃতিক ফেনোমেনাগুলি আগে আগে টের পায়। শুনেছিলাম যে এসব নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমারো একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমার ছোট ভাই একজোড়া বাজরিকা পালতো। মেয়েটা ছিল ভয়ানক দেমাকি। শত চেষ্টা করেও পুরুষটা তার সংগীর মন জোগাতে পারেনি। একদিন সকালে দেখি মেয়ে পাখিটি খাঁচায় নেই।আমি ছোট ভাইকে বোঝালাম, একটাকে রেখে লাভ কি, চল এটাকে ছেড়ে দেই। আমরা খাঁচার দরজা খুলে দিলাম, কিন্তু আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো দরজা খোলা থাকার পরেও পাখিটি কোথাও যাবার চেষ্টা করলো না। দুপুরে দেখি পাখিটি মরে পড়ে আছে। তাহলে পাখিদেরোকি সংস্কৃতি আছে ?
@আতিক রাঢ়ী,
সব কিছু মানুষের মত। বরং আবেগের ব্যাপারটা ওদের মধ্যে আমাদের চিয়ে বেশীই মনে হচ্ছে। বাইরে ওই পাখীটি জ্বালাতনের ভয়ে গেলই না। আশ্চর্য।
@আতিক রাঢ়ী,
এ জাতীয় বহু অভিজ্ঞতা আমার আছে।
তারা কিন্তু শুধু নিজেদের সংগী/সংগিনীর জন্যই নয়; মানুষের শোকেও ভুরি ভুরি মারা যায়।
স্কটল্যান্ডের ববি নামের কুকুরের কাহিনী নিশ্চয়ই মোটামুটি সবাই জানেন। কিছুদিন আগে কাগজে পড়েছিলাম আরেক কুকুরের কাহিনী, মনে হয় সাউথ আফ্রিকার। তার মালিক তাকে নিয়ে কোন গ্রামের দিকে থাকত, তাকে নিয়মিত ট্রেনে আসা যাওয়া করতে হত। কুকুর প্রতিদিন বিকেলে ষ্টেশনে হাজির থাকত মালিককে অভ্যর্থনা জানাতে। মালিক মারা গেল। তাতে কুকুরের রুটিনের ছেদ পড়ল না। সে এরপরেও ৫ বছর জীবিত ছিল, প্রতিদিন বিকেলে সে ষ্টেশনে নিয়ম করে গেছে, যদি তার মালিক আবার ফিরে আসে।
আমার বাবার কিছু প্রিয় কবুতর ছিল। তিনি মারা যাবার পর সেগুলি স্বেচ্ছায় না খেয়ে মারা যায়। সারাদিন গা ফুলিয়ে ঘাড় গোঁজ করে বসে থাকত।
@আদিল মাহমুদ,
কোথায় আজকে নিমাই দত্ত ? বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা চাই, দিতে হবে -দিতে হবে।
@আতিক রাঢ়ী,
দত্ত ভাই ইতোমধ্যেই একখানা নামিয়ে দিয়েছেন, আরেকখানা বানাতে মনে হয় ব্যাস্ত আছেন।
শুরুটা মনে হয় এভাবে হতে পারে,
“পশু পাখীর শোক দেখে আমরা অভিভুত হই, অবাক হই, এতে অবাক হবার কিছু নেই…সবই বিবর্তন মনোবিজ্ঞান সফলভাবে ব্যাখ্যা করে…বিগ ব্যাং এর পর অক্সিজেন, কার্বনের মত যে সব জড় মৌলিক জড় উপাদান প্রকৃতিতে ছিল তাদের মাঝেও পরস্পরের প্রতি এমন আবেগ অনুভুতির প্রমান দেখা যায়…”
বাকিটুকু আশা করি হয়ে যাবে।
@আদিল মাহমুদ,
ওই মিয়া, আমার পিছে লাগছেন ক্যানো? কষ্ট কইরা ব্যাখ্যাও দিমু আবার গালিও খামু – এইটা কি ঠিক নাকি?
আর বিবর্তনের ব্যাখ্যা ট্যাক্ষ্যায় কাম নাই। সবই তেনার ইচ্ছায় হইসে। এই ব্যাখ্যাই সর্বোৎকৃষ্ট।
@অভিজিৎ,
খেপেন কেন?
আমি তো আপনেরে সাহায্য করতেই ট্রাই দিলাম 🙂 ।
ওহ হো, সাথে দুই চারটা খটমট আংরেজী বই এর নাম ঢুকাইয়া দিবেন। সুকুমুমার রায়ের চালিয়াত গল্পের মত; “তোমরা কি অমুকের চাইতে বেশী জানো?” ব্যাস, আর পায় কে!
@আদিল মাহমুদ,
অসাধারন।
শুরুটা বেদম হইছে। একটু খেটে পুটে নামিয়ে দিন না। বেচারা দত্তর প্রতি এত চাপ দেয়া ঠিক হচ্ছে না। উনি নিশ্চিৎ অপিসের কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন।
@আতিক রাঢ়ী,
কাকে যে কি বলেন। হাজারো ব্লগে গুলতানি মারিয়া বেড়াইতেছেন যিনি, উনার ওভারটাইম করনের সময় কই?
তবে উনার শুরুটা আসলেই ভালু হইছে!
@অভিজিৎ,
কথা সত্য। এই লোকের এখনও চাকরি আছে কি করিয়া ভাবিয়া পাই না।
ঐখানেও কি মামু-খালুর ব্যাপার আছে নাকি ?
@আতিক রাঢ়ী,
দত্তের আবার চাকরি, ব্যাং এর আবার সর্দি!
মুক্তমনা সাইট খুলে আমার মত লোকের ঈমান নষ্ট করার বিনিময়ে সে যত টাকা কামায় তারপর আবার কিসের চাকরি! এই কাজে কাফের নাসারাদের মাল্টি বিলিয়ন ডলার বাজেট আছে বলে পাকা খবর আছে।
@আদিল মাহমুদ,
লিংক ও রেফারেন্স ছাড়া খবর খামু না।
@সৈকত চৌধুরী,
রেফারেন্স???
আমার থেকে বড় রেফারেন্স আর কি হয়???
পাহাড়সম ঈমান থেকে আজ আমার ঈমান ছূচ পরিমানে নেমীসেছে এই নিমাই দত্ত গং এর আছরে।
নৃপেন্দ্র দা,
প্রিয়জনের মৃত্যুতে কান্নার বিষয়টি অনেক সময় একই পরিবারের ব্যক্তিভেদেও ভিন্নতা দেখেছি। এমনকি আপনি নিজেও আপনার স্ত্রীর ও তার ভাইয়ের স্ত্রীর উদাহরণ দিয়েছেন। কাজেই প্রিয়জনের মৃত্যুতে চোখের জলের পার্থক্য শুধু সংস্কৃতির ভিন্নতার জন্য ঘটে না।
তবে আপনার বিষয় ভাবনাটি ব্যতিক্রমধর্মী এবং প্রকাশভঙ্গিটিও চমৎকার হয়েছে।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ।
আমি সংস্কৃতি ভেদে বিস্তর ভিন্নতা লক্ষ্য করছি।
অভিজিৎ দা, আপনার মাধ্যমে মডুদের কাছে একটা অনুরোধ, এখানে করছি বলে আশাকরি নৃপেন দা কিছু মনে করবেন না।
‘একুশে টিভিতে কবি নাজনীন সীমন’ এই লেখার মন্তব্য অপসন খুলে দেয়া হোক। বাংলা সাহিত্যের একটা ক্লাসিক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ও তার পর। অনেক হেভি ওয়েট ব্লগার হাতা কাছিয়ে বিতর্কে নেমেছিলেন। আমরা অনেক কিছু শিখছিলাম। উত্তেজনার ভয়ে অলোচনা বন্ধ করে দেয়াতে কেমন জানি পানি পানি লাগছে সব কিছু। উত্তেজনা মাঝে মাঝে ভাল। ব্যাক্তিগত আক্রমনের মাধ্যমে কেউ নিজেকেই কেবল উপস্থাপন ধরতে পারে। এজন্য অন্যদের বঞ্চিত করা কেন ?
@আতিক রাঢ়ী, এক্মমত।
@আতিক রাঢ়ী,
মনে করব কি? আমারও কিছু বলার ছিল।
মডারেটরদের উপরে আমাদের কিছু বলার নেই।
মাহফুজের মধ্যে শিশুসুলভ একটা সুন্দর মন আছে। ও প্রচুর পড়াশুনা করে। চাকুরীসুবাদে বিভিন্ন জেলা ঘুরে বেড়ায়। তা থেকে সময় বের করে মুক্তমনার বিষয়াদি পড়ে এবং লিখে। তার সাথে বিদ্যুত বিভ্রাট আছে, যে সমস্যা আমাদের নেই। সেজন্যই ওকে সেন্সর করাটা আমার খারাপ লাগছে। ভীষন খারাপ লাগছে। নিজে ভুলটা স্বীকার করেছে সাথে সাথেই।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ রাখব বিষয়টি পূনর্বিবেচনা করে সেন্সরশীপের মেয়াদ কমানোর জন্য।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
শিশুসুলভ কাজের সাথে দাদাসুলভ ঝাড়ির একটা প্রত্যক্ষ যোগ আছে। মডু দাদাদের ভালাবাসার প্রতি আমার ভরসা আছে। তারা মাহফুজ ভাইকে শীঘ্রই সেন্সরের আওতা মুক্ত করবেন। তবে মাহফুজ ভাইয়ের এটা প্রাপ্য ছিল, তা উনি নিশ্চই বুঝবেন।
@আতিক রাঢ়ী,
আমার ভরসা কম। ভয়ে ভয়ে থাকি কোনদিন আমাকেও টিকিট দেয়।
আচ্ছা, মডু দাদারা সবাই মিলে ডিসিশন নেয় নাকি পুলিশের মত একা একাই টিকিট দেয়?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
খুবই ভয়ের মধ্যে ফেলে দিলেনতো দেখি। গণতন্ত্র মুক্তি পাক, নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
@নৃপেন দা,
মন্তব্যের অপশন, মাহফুজের স্ট্যাটাস সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিব।
কিন্তু আমার একটু অবাক লাগছে। মাহফুজ এমন একটি অশোভন কমেন্ট করার পরেও আপনার মায়াকান্নাটা যেন তার দিকেই। আপনি কি সত্যই দেখেছিলেন তিনি কি বলেছিলেন? মাহফুজের যে এটা প্রাপ্য ছিল সেটা আতিক রাঢ়ীও স্বীকার করেছেন। অনেকেই তা বলবেন। আমার মনে হচ্ছে আপনি আসলেই মন্তব্যের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না। আমি যদি সেরকম একটি কুৎসিৎ কমেন্ট আপনাকে এবং বৌদিকে নিয়ে করতাম, তবে কেমন শোনাতো, বলুন তো? মাহফুজকে কিন্তু মডারেটরের তরফ থেকে কিন্তু আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তার ব্যবহারের কোন উন্নতি লক্ষ্য করিনি। “মাহফুজের মধ্যে শিশুসুলভ একটা সুন্দর মন আছে। ও প্রচুর পড়াশুনা করে” -এগুলো বললেই তো হয় না, তার প্রতিফলনও তো মন্তব্যে থাকতে হয়। আমি সচরাচর অসন্তুষ্ট হই না। এবারে আমিও মাহফুজকে নিইয়ে হতাশ। আরো হতাশ যে ব্যাপারটির গুরুত্ব আপনি বুঝতেই পারছেন না।
@অভিজিৎ,
মাহফুজের উক্তিটি অশোভন এটা না বুঝার কোন কারণ নেই। মাহফুজ নিজেও বুঝতে পেরেছে। কাউকে জবর-দস্তি করে বুঝানোর দরকার হয় নাই। স্বাধীনের মন্তব্যের সাথে সাথেই কয়েকটি মন্তব্যে সেটি আন্তরিক ভাবে প্রকাশ করেছে।
মেয়াদ কমানোর অনুরোধটাই রেখেছিলাম। মাহফুজ ভুল করেছে এই কথাটি লিখে দেওয়া উচিত ছিল।
কুলদা রায়ের
উত্তরটা
সরাসরি উত্তর দিলে এই জটিলতার সৃষ্টি হত না। আমার মায়াকান্নাটা ওখানেই।
আমি মডারেটরের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মুক্তমনা প্ল্যাটফরমের নির্মল পরিবেশ রক্ষার্থে এরকম সিদ্ধান্ত নিতেই হয়।
সবাই ভাল থাকুন।
@নৃপেন্দ্র দা,
কবি হাসানআল আবদুল্লাহ-র উত্তরটা সরাসরি কীভাবে হলো না বুঝতে পারছি না আমি। আমার কাছেতো মনে হচ্ছে অত্যন্ত সরাসরি এবং খুবই চমৎকার বাক্যবন্ধের মাধ্যমে নাজনীন সীমন যে তাঁর সঙ্গী বা স্ত্রী সেটা তিনি বলেছেন।
তাঁরপরেও ধরে নিচ্ছি যে, বোঝা যায় নি ওনার উত্তর থেকে তাঁদের সম্পর্কটা আসলে কী ধরনের। সেক্ষেত্রেও কী আপনি মনে করেন যে মাহফুজ সাহেবের অযাচিতভাবে ওই রকম করে জিজ্ঞেস করার কোনো প্রয়োজন ছিল?
মাহফুজ সাহেবের প্রতি মায়াকান্নার যুক্তিটা খুব একটা শক্তিশালী হচ্ছে না আপনার। বরং, তাঁর প্রতি আপনার অন্ধ স্নেহটাই বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিটি মন্তব্যে।
@ফরিদ আহমেদ,
প্রয়োজন অবশ্যই ছিল না। সেই জন্যই দ্বিতীয় কেউ ওরকম প্রশ্ন করেনি। আর করেছে বলেই কয়েকবার দুঃখ প্রকাশও করেছে। স্বাধীনও কিন্তু এটা স্বীকার করেছেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
না নৃপেনদা মাহফুজ সাথে সাথেই দুঃখ প্রকাশ করেনি, করেছে হাজারো রকমের ত্যানা প্যাচানোর পর। উনি বরং পর পর দুটো কমেন্টে নিজেকে ডিফেন্ডই করে যাচ্ছিলেন ইনিয়ে বিনিয়ে। পরে সবাই বলার পরে ক্ষমা চাওয়া শুরু করেছেন। যারা সেসময় মন্তব্যগুলো দেখছিলেন সবাই এটা লক্ষ্য করছিলেন।
আমার খুব দুঃখ লাগছে যে যাদের উপর এমন অপমানজনক বক্তব্য প্রযুক্ত হয়েছে তাদের প্রতি আপনার কোন মমতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, মমতা কেবলই মাহফুজের প্রতি। আসলেই আপনার অন্ধ স্নেহটাই বেশি প্রকাশিত হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব যেহেতু আপনি বুঝতে পারছেন না, আমার মনে হয় মদারেটররা কি করবে না করবে সেটা তাদের উপর ছেড়ে দেয়াই ভাল। একই জিনিস বার বার ব্যাখ্যা করতে ভাল লাগছে না।
@অভিজিৎ,
ডিফেন্ড করা সঙ্ক্রান্ত মন্তব্যগুলো গুলো মিস হয়ে গেছে। আপনাদেরকে জ্বালাতন করার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
আমি কিন্তু আগেই মডারেটরদের প্রতি আমার শ্রদ্ধার কথা জানিয়েছি। দেখুন
আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এটা নিয়ে আর কিছু বলবেন না প্লিজ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমি বুঝতে পারছি না, ঠিক কোন বিষয়টি আমি স্বীকার করেছি বলে বলছেন। নীচে আমার মন্তব্যটি এখনো আছে। হ্যাঁ, আমি বলেছি উনি শেষ পর্যন্ত ভুল স্বীকার করেছেন। কিন্তু কয়েকবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন সেটি কোথাও বলিনি। বরং এটাই বলেছি উনি উনার প্রথম কমেন্টের সাফাই হিসেবে আরো দু’টি কমেন্ট করেছিলেন যা মডারেটররা মুছে দিয়েছেন। তাই উনি সাথে সাথে ভুল স্বীকার করেছেন আপনার সে কথাটি ঠিক নয় সেটাই পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি। আমারো মনে হয় এটা নিয়ে এর চেয়ে বেশি বলার আর কিছু নেই।
@স্বাধীন,
আমি এটাই মীন করেছি। উদ্ধৃতি দেওয়া দরকার ছিল।
হ্যা, এই চ্যাপ্টার শেষ করাই ভাল।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমিও বুঝতে পারছিলাম কি মিন করতে চাচ্ছিলেন, যদিও বাক্যটি কিছুটা ভিন্ন অর্থও বহন করে। আপনার বাক্যটির আরেকটি অর্থ হতে পারে যে, মাহফুজ কয়েকবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সেটা আমার বক্তব্যে এসেছে। সে কারণেই আমি আবার নিজের কথা পরিষ্কার করলাম।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এখানে কিছুটা দ্বিমত আছে। উনি উনার মন্তব্যের পক্ষে আরো দু’টো মন্তব্য করেছিলেন যেগুলো আপনারা দেখতে পারছেন না, কারণ মডারেটররা মুছে দিয়েছেন। আমি দেখেছি, কারণ সেগুলো আমার মন্তব্যের জবাবে হয়েছে, এবং এর একটি কপি আমার ব্যক্তিগত ইমেইলে এসেছে। তাই উনি ভুলটা সাথেই সাথেই স্বীকার করেছেন এটি ঠিক নয়। তবে, হ্যাঁ, উনি যে শেষ পর্যন্ত ভুল বুঝতে পেরেছেন এটার জন্য সাধুবাদ অবশ্যই জানাবো। কিন্তু উনাকে মডারেশনের আওয়তায় আনাটা উনার জন্যই এবং মুক্তমনার জন্য প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি। সাময়িক উপলব্ধি যেন দীর্ঘমেয়াদী উপলব্ধিতে পরিণত হয় তার জন্যেই প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমি মডারেটেরদের পক্ষেই থাকবো।
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ। আমি নিশ্চয় ওগুলো মিস করেছি।
@স্বাধীন,
আমি একমত।
@আতিক রাঢ়ী,
একটু ধৈর্য ধরেন ভ্রাতা। যেদিন আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে ক্লাসিক কোন বিতর্ক শুরু করবে সেই কেউ একজন, সেদিন মন্তব্য করার অপশন যাতে কোনমতেই হরণ করা না হয় এমন আন্দোলনে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলবো আমরা সকলেই মিলে। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
হ(ই)বোনা, হ(ই)বোনা, সকলে মিলা কোন কাম বাঙ্গালীর দ্বা্রা হইছে কোন কালে ? বৃথাই ধৈর্য ধরা। 🙁
@আতিক রাঢ়ী,
আচ্ছা যান, সবাই বাদ। আমি একাই আন্দোলন করমুনে। আপনি এখন খালি ক্লাসিক কোনো বিতার্কিকের সুনজরে পড়ার চেষ্টা করেন বিপ্লবের মত। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
যুদ্ধ দেখা আর যুদ্ধকরা কি এক জিনিষ নাকি ? যতই ফুসলান গ্লাডিয়েটর হবার কোন সখ আমার নাই। 🙂 আমি বরং ধৈয্য ধরতে রাজি আছি।
@আতিক রাঢ়ী,
যুদ্ধ করা যে আপনার কাজ না সে আমি জানি। তাই গ্লাডিয়েটর হইতে কই নাই আপনারে। কইছি খালি বালিভর্তি বস্তা হইতে। মজাতো দেখুম আমরা সবাই মিলা। আপনি খালি একাই অন্যের মার খাওয়া দেইখা মজা লুটবেন তা আর হইবো না। কেউ খাইবো কেউ খাইবো না, তা হইবো না তা হইবো না। (এইখানে লাল ঝান্ডার ইমো হইবো)
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি কিন্তু আমাকে নাগিয়ে দিচ্চেন, নেগে গেলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
দেখুন মজাঃ
😀
লেখাটা চমৎকার হয়েছে নিঃসন্দেহে।সত্যি বলতে বিবর্তন বাদ নিয়ে আমার খুব একটা স্বচ্ছ ধারনা নেই।বিষয়টা আমি আমার মত ব্যখ্যা করার চেষ্টা করছি- ছোট বেলা থেকেই আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে বাস্তব প্রয়োগিগ জীবনের অনেক কিছু দেখে শুনে শিখে তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি এবং একি সাথে বংশ পরম পরায় জীন গত কিছু বৈশিষ্ট্য ও আমরা লাভ করি।
খুব সম্ভবত এ সমস্ত কারনে মানব জীবনে ঘটে যাওয়া সমান বিষয়ের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে দেখা যায়।
@রাজেশ তালুকদার,
নিজে ভিন্ন সংস্কৃতির funeral service attend করে তাই উপলব্ধি করলাম। আমি তাই বিবর্তনীয় আলোকে জিনিষটি বুঝার আগ্রহী। অভিজিত রায় একটা পোষ্টিং দিয়ে ফেলেছেন। পড়ব এখনই।
ছোট ছোট আকারে কিছু ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করি। সব কিছু ব্যাখ্যা করতে গেলে এটাই একটা ঢাউস বই হয়ে যাবে। তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার ব্যখ্যা গুলো শুধু বিষয়গত দিকগুলোর আবছা অবতারণা। যাদের কৌতুহল আছে, তাদের এ সংক্রান্ত বইপত্র এবং গবেষণালব্ধ কাজ কর্ম একটু খুঁজে দেখতে হবে।
শুরু করি নৃপেনদার এই লাইনটি দিয়ে –
আবেগের ছোটখাট বহিঃপ্রকাশ কমবেশি সব প্রাণির মধ্যেই কিন্তু আছে। এবং এটা বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই উদ্ভুত। ভয় পাওয়ার ব্যাপারটি ধরা যাক। এটি তো এক ধরনের আবেগই। এই আবেগের উৎস কোথায়? আবেগের উৎস আসলে ডারউইন কথিত জীবন সংগ্রামের মধ্যেই। এই আবেগটি নিঃসন্দেহে একসময় টিকে থাকতে বাড়তি উপযোগিতা দিয়েছে । কারণ শিকারী যখন শিকারকে আক্রমণ করে ‘ভয়’ জিনিসটা না থাকলে সে কিন্তু পালাবে না। শিকারের হাতে পড়ে নিমেষেই শেষ হয়ে যাবে। এরকম সবাই যদি করতো, তাহলে ত সেই প্রজাতি আর টিকে থাকতে পারত না। বাঘের দেখা পেয়েই যে হরিণ তাড়াতাড়ি পালাতে পেরেছে বিপদসঙ্কুল পরিবেশে, তারা হয়তো অধিকহারে টিকে গেছে; আর ভয় না পাওয়া বোকা হরিণেরা বাঘের পেটে গিয়ে মারা পড়েছে। বোঝা যাচ্ছে ভয়ের একটা বিবর্তনগত উপযোগিতা ছিল। ঠিক একইভাবে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন রাগ, ঘৃণা, ভালবাসা, বিষন্নতা, উতফুল্লতা এবং এমনকি পরার্থতা এবং সহমর্মিতাও (altruism)ও আসলে বিবর্তনের বন্ধুর পথেই প্রানীজগতে এবং সর্বোপরি মানুষের মধ্যে উদ্ভুত হয়েছে। একটি সাধারণ উদাহরণ দেই। কোন শিকারী পাখি যখন কোন ছোট পাখিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে, তখন অনেক সময় দেখা যায় যে গোত্রের অন্য পাখি চিৎকার করে ডেকে উঠে তাকে সতর্ক করে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে সেই শিকারী পাখি আর তার আদি লক্ষ্যকে তাড়া না করে ওই চিৎকার করা পাখিটিকে আক্রমণ শুরু করে। এই ধরনের পরার্থতা এবং আত্মত্যাগ কিন্তু প্রকৃতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়। এই ব্যাপারগুলো বিবর্তনের কারণেই উদ্ভুত হয়েছে। এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যার জন্য আমাদের বিবর্তন আর্কাইভ থেকে এই ধারণাটির উত্তর দেখা যেতে পারে-
বিবর্তন মানব-সমাজে নৈতিকতার উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না – এই দাবীর উত্তর
Paul Ekman, Robert Zajonc, Carroll Izard, Joseph LeDoux সহ অনেকেই আবেগের বিবর্তনীয় উৎস নিয়ে কাজ করেছেন। কেউ কম সময়ে সারাংশ চাইলে চাইলে উইকি থেকে Evolution of emotion লেখাটি দেখে নিতে পারেন। আর বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা চাইলে দেখতে পারেন Leda Cosmides & John Tooby’র Evolutionary Psychology and the Emotions প্রবন্ধটি।
এ ছাড়া জিওফ্রে মিলারের মেটিং মাইন্ড বইটিও পড়তে পারেন। তিনি তার বইয়ে দেখিয়েছেন যে, ময়ুরীরা যেভাবে সেক্সুয়াল সিলেকশনের মাধ্যে বড় পুচ্ছওয়ালা ময়ুর নির্বাচন করেছে, ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও খুব কেয়ারফুল সেক্সুয়াল সিলেকশনের মাধ্যমে আমাদের আবেগের বিভিন্ন দিকগুলো নির্বাচন করেছিল। সেজন্যই আমরা স্মার্ট মানুষ পছন্দ করি, আবেগময় কবিতা গল্প লেখা পড়তে অনেকেই ভালবাসি ইত্যাদি। আমি জিওফ্রি মিলারের বই থেকে কোট করি –
Our evolution was shaped by beings intermediate in intelligence : our own ancestors, choosing their sexual partners as sensibly as they could. We have inherited both their sexual tastes for warm, witty, creative, intelligent, generous companions, and some of these traits that they preferred. We are outcome of their million year long genetic engineering experiment in which their sexual choices did the genetic screening.
আপাততঃ এই পর্যন্ত থাকুক। পরে আপনার প্রন্ধের অন্য অংশগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে, বিশেষতঃ সংস্কৃতিগত ভিন্নতার বিষয়টি নিয়ে।
(বাই দ্য ওয়ে, Survival of the Fittest শব্দটি এখন বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ব্যবহৃত হয় না, ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও শব্দটি পছন্দ করি না। ডারউইন অরিজন অব স্পিশিজ বইয়ের প্রথম সংস্করণে যেভাবে ব্যবহার করেছিলেন – স্ট্রাগেল ফর এগসিস্টেন্স তার বাংলা হিসেবে জীবনসংগ্রাম শব্দটিই আমার অধিকতর পছন্দের।)
@অভিজিৎ,
Survial of the Fittest কথাটি নিঃসন্দেহে ভ্রমাত্মক। আমিও বুঝতে পেরেছি প্রথমে যিনি বাক্যটি ব্যবহার করেছেন নিশ্চয় এ থেকে আসন্ন জটিলতার কথাটি তাঁর মাথায় আসেনি।
আপনার দেয়া রেফারেন্সগুলো আমি পড়ব।
র জন্য অপেক্ষায় থাকব।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
নৃপেনদা, সংস্কৃতিগত ভিন্নতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছি এখানে।
@অভিজিৎ,
এত তাড়াতাড়ি একটা লেখা রেডি করে ফেলেছেন আমার জন্য! আপনারা পারেন ভাই। কিছু বলার নাই।
@অভিজিৎ,
“ব্যাখ্যা” বলতে আসলে কি বোঝায়? সাধারণত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ভবিষ্যৎবাণী করতে সমর্থ। আমাদের আবেগ বা নৈতিকতার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা কি সে পর্যায়ে পৌঁছেচে?
@রৌরব,
সাধারণতঃ, তবে সব সময় নয়। অবশ্য যদি না আপনি সেই ল্যাপ্লাসের যুগেই পড়ে থাকেন। তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি কণার অবস্থান ও গতি সংক্রান্ত তথ্য যদি জানা যায়, তবে ভবিষ্যতের দশা সম্বন্ধে আগেভাগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে। কিন্তু বৈশ্বিক জটিলতার প্রকৃতি (nature of universal complexity) তাঁর সে উচ্চাভিলাসী স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে অনেক আগেই।
বিবর্তন অনেকাংশেই একটি ইতিহাস-আশ্রয়ী বিজ্ঞান। ইতিহাসকে খুব সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু সব সময় আগেভাগেই তার ‘নিশ্চয়তাবাদী ভবিষ্যৎবাণী’ করা যায় না। এজন্যই বিখ্যাত বিবর্তনবিদ বিজ্ঞানী জে. গুলড তার ‘ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ বই তে বলেছিলেন যে, বিবর্তনের টেপটি যদি রিওয়াইন্ড করে আবার নতুন করে চালানো হয় তাহলে ফলাফল কখনই এক হবে না। বিবর্তনে ভবিষ্যদ্বানী করা যায় না বলেই আমরা হলফ করে বলতে পারব না যে আজ থেকে দুই লক্ষ বছর পরে মানব প্রজাতির চেহারা কি হবে, কিংবা আদৌ তা টিকে থাকবে কিনা ইত্যাদি। বিবর্তন নৈতিকতা নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী না করতে পারলেও এর উৎসের সন্ধান দিতে পারে। বিবর্তন আসলে যা করে তা প্রেডিকশন নয়, রেট্রোডিকশন। এটাই বলেছেন জেরি কয়েন তার ‘হোয়াই এভুলুশন ইজ ট্রু’ বইয়ে। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদা কিংবা প্রত্নতত্ত্ব অনেকটা সেই নিয়মেই কাজ করে। কিন্তু কেউ বলবে না যে সেগুলো বিজ্ঞানের কোন শাখা নয়।
@অভিজিৎ,
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা সম্ভাবনা তাত্বিক প্রেডিকশন করে। অর্থাৎ আপনি বহু সংখ্যক কণাকে একসাথে দেখলে তাদের ব্যবহার প্রেডিক্ট করা সম্ভব (১০০ ভাগ নয়, কিন্তু একটা সম্ভাবনার ভেতর)। এটা পারিসংখ্যানিক পদার্থবিদ্যায় আগে থেকেই ছিল, কাজেই সম্ভাবনার ব্যাপারটি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার একেবারে নতুন কোন বিষয় নয়।
একই কথা তো বিবর্তনের টেপটি যদি রিওয়াইন্ডের ব্যাপারেও বলা যায়। ফলাফল এক হবে না মানে কি এই যে ডিস্ট্রিবিউশনটি random? তা নিশ্চয় নয়, যেখানে বার বার জোর দিয়ে বলা হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন random নয়। পারিসংখ্যানিক বলবিদ্যার মত সেখানেও সম্ভাবনা তাত্বিক প্রেডিকশন সম্ভব হতে পারে।
বিবর্তনও তো প্রেডিকশন করে বলেই তো জানতাম। দুটি ফসিলের মধ্যবর্তী অন্য কি কি ফসিল পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ক কিছু প্রেডিকশন মিলে গেছে বলেই তো শুনেছিলাম।
@রৌরব,
ব্যাখ্যা বা ভবিশ্যৎবাণী করার কাজ মৌলিক তত্বের, যেমন মহাকর্ষের বিশেষ বা সাধারণ তত্ব, বা কুয়ান্টাম তত্ব। মৌলিক তত্বের দ্বারা লব্ধ (Derived) বা কারণে ঘটিত যে কোন পর্যবেক্ষিত ফলাফল (Empirical result) বা ঘটনাকে ঐ মৌলিক তত্বের ভবিষ্যৎবাণী বলা যায়। বিবর্তনের নিয়ম এরকমই মৌলিক তত্বেরই এক ভবিষ্যৎবাণী বলা যায়। এই লব্ধকরণ (Derivation) কিছুকিছু ক্ষেত্রে গাণিতিকভাবে করা গেলেও (যেমন মহাকর্ষের সাধারণ তত্ব দিয়ে সূর্য দ্বারা নক্ষত্রের আলো বাঁকান) সবসময় সেভাবে লব্ধ করা যায় না, জটিলতার জন্য। কিন্তু পরোক্ষ যুক্তি দিয়ে সেটা লব্ধ করা যায়। যেমন বিবর্তনের নিয়ম। বিজ্ঞানে এরকম অনেক সেকন্ডারী বা লব্ধ সূত্র আছে সেগুলো নিজেই মৌলিক তত্বের ফল বা ভবিষ্যৎবাণী।
@অপার্থিব,
বিবর্তনের তত্ব অন্য কোন তত্বের ভবিষ্যৎবাণী হিসেবে শুরু হয়েছিল বলে তো জানতাম না। আমার ভুল হতে পারে অবশ্য।
@রৌরব,
বোঝার ভুল। আমারই বোঝানোর ভাষার দুর্বলতার কারণে মন হয়। বিজ্ঞানের প্রসঙ্গে ভবিষ্যৎবাণী, গণকদের অর্থে ভবিষ্যৎবাণী নয়। েখানে সময়ের পরিবর্তে কার্যকারণ সম্পর্কইটা মুখ্য। ভবিষৎবাণী বলতে মৌলিক তত্বের দ্বারা লব্ধ বা মৌলিক তত্বের মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকা বোঝাচ্ছে। সেটা জানা বা বোঝা যে কোন সময়ে হতে পারে। যেমন সূর্যের দ্বারা তারার আলো বাঁকান মহাকর্ষের সাধারণ তত্বের দ্বারা ভবিষ্যতবাণী করা যায়। এই ভবিষ্যৎবাণী পদার্থবিজ্ঞানীরা যে কোন সময়ে করতে পারেন। তারার আলো বাঁকানোর বাস্তব পর্যবেক্ষণ এই ভবিষ্যৎবাণীর আগে বা পরে হতে পারে। বাস্তবে অবশ্য এটা ভবিষ্যৎবাণী পর পর্যবেক্ষিত হয়েছিল। আগে পর্যবেক্ষিত হলে পদার্থবিজ্ঞানীরা হন্যে হয়ে এর ব্যাখ্যা খুঁজতে শুরু করতেন আর একসময় মহাকর্ষের সাধারণ তত্বের দ্বারা তা ব্যাখ্যা করতে পারতেন। প্রিডিকশান তখন রেট্রডিকশান হয়ে যেত। ব্যখ্যা মানেই তো রেট্রডিকশান। কিন্তু ব্যাপারটা একই। বিবর্তন কি প্রক্রিয়ায় ঘটে সেটা আমরা মোটামুটি জানি। কিন্তু সেই মূল ক্রিয়ার পশ্চাতে কি? পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মই তো। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মেই বিবর্তনের নিয়ম প্রচ্ছন্ন। অন্তত ইন প্রিন্সিপ্ল্ পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের দ্বারা বিবর্তনের নিয়ম লব্ধ করা সম্ভব। কিন্তু জটিলতার কারণে এবং অনেক অজানা গূণকের কারণে ব্যবহারিকভাবে তা অসম্ভবই বটে।
@অপার্থিব,
ধন্যবাদ। এ ব্যাপারে আমার তেমন কোন দ্বিমত নেই, সম্ভবত ভাষাগত ছাড়া। অর্থাৎ আমি নিজে জটিলতার ধারণা মুক্ত “ইন প্রিন্সিপল” এর কথা হয়ত বলব না। অন্যভাবে বলা যায় “পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মেই বিবর্তনের নিয়ম প্রচ্ছন্ন” এটা আমি নিজেও বিশ্বাস করি, তবে একে বৈজ্ঞানিক তথ্য বলব না, সেটা demonstration সাপেক্ষ। যাহোক, এটা পোস্টের মূল প্রসঙ্গের সাথে অসংশ্লিষ্ট।
শ্রী নৃপেন্দ্র সরকারের বিবর্তন সম্পর্কীয় প্রশ্নগুলির উত্তর না দিয়ে জনাব মাহফুজ, শ্রী অভিজিৎ ও ভবঘুরে পাশকাটিয়ে চলে গেছেন । সরকার বাবুর প্রশ্নের সামন্য উত্তর দিয়ে আমিও অগ্রগামী মন্তব্যকারীদের পথ অনুসরণ করবো ।
প্রানী জগতে মানুষই চিন্তা করতে সক্ষম । মানব মস্তিষ্কে সৃষ্ট ক্রিয়া ভাবের ধারণার জন্ম দেয় । ভাব আবার স্থান, কাল ও মানব গ্রুপ, অর্থ্যাৎ সামাজিক কাঠামার উপর নির্ভরশীল ।
মানব চিন্তার শ্রেনী বিনাশ হলো ঃ বস্তুবাদ ও ভাববাদ । ভাব বা আত্মার সাথে ধর্ম যুক্ত এবং বস্তুর সাথে বিজ্ঞান যুক্ত ।
সামাজিক কাঠামোর সাথে সম্পদ যুক্ত । তাই পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে । ফলে খাদ্য সংগ্রহ থেকে সমাজ পুজিবাদে বিবর্তিত হয়েছে । কিন্তু সামন্তবাদ বা পুজিবাদ মানব সমাজের অনিশ্চয়তা দূর করতে সমর্থ হয়নি । ফলে সমাজ থেকে ধর্মের বিলুপ্তি ঘটেনি ।
রাসয়নিক ক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপদানগুলির এফিনিটির প্রয়োজন হয় । তেমনি জন্মের পর পরিবারের যে সকল মানুষের সাহায্য-সহযোগীতা পেয়েছে এবং নিজে যাদেরকে দিয়েছে তাদের জন্য এফিনিটির সৃষ্টি হয় । তবে এফিনিটি সম্পদের উপর নির্ভরশীল । তাই কান্নার তারতম্য ঘটে ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
ধন্যবাদ আমার সমস্যাটি নিয়ে আলোকপাত করার জন্য।
আমি ব্যাপারটা বিবর্তনের আলোকে বুঝতে চাই।
কয়েকটা রেফেরেন্স পেয়েছি। সময় নিয়ে পড়তে হবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার, বিবর্তন একটি দার্শনিক তত্ত্ব, যা ডারউইনের অরিজিন অব স্পিশিজ তত্ত্বের বহু পূর্বে দার্শনিক কর্তৃক উদ্ভাবিত এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কর্তৃক স্বীকৃত । জীব-বিজ্ঞানের উক্ত তত্ত্ব হলো দার্শনিক তত্ত্বের প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ।
দার্শনিক তত্ত্বের সাথে ডারইউনের Survival of the fittest সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । কারণ Fittest কে নির্ধারণ করবে, ঈশ্বর বা অন্য কেউ । ডারইউনের থিসিস উপস্থাপনের পরপরই জীব-বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা সারভাইভাল অব দা ফিটেষ্ট প্রস্তাবটি প্রথমেই বাদ দিয়ে দেন । ডারইউনের জীবের সাধারন উৎস এবং Natural selection তত্ত্ব দার্শনিক বিবর্তন তত্ত্বে বর্ণিত বস্তুর তিন মৌলিক বৈশিষ্টের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে ।
তাই “বিবর্তন” আমার কাছে জীব-বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব নয়, এটা একটি দার্শনিক তত্ত্ব । আবেগ, চেতনা, ভাব প্রভৃতি মনের ব্যাপার, অর্থ্যাৎ চিন্তার প্রতিফলন, অর্থ্যাৎ মস্তিষ্কের ক্রিয়া, যা দার্শনিক বিবর্তন তত্ত্বের অংশ বিশেষ । মস্তিষ্কের ক্রিয়ার ফসল হলো পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্র । কেউ স্বীকার করুক বা না করুক এগুলি সবই বিবর্তন তত্ত্বের অংশ ।
@আ. হা. মহিউদ্দীন,
আপনার বিশ্লেষণটি ভাল লেগেছে। কিন্তু আমি শুধু বিবর্তনের আলোকে আবেগ জিনিষটি বুঝার চেষ্টা করছি।
@নৃপেন্দ্র সরকার, Psycophysiological এর মতো আধুনিক জ্ঞানের ব্যাখ্যয় না গিয়ে, আবেগ, যা আপনি বুঝার চেষ্টা করছেন, তার সংজ্ঞা হলো, মানব চিন্তার একটি স্তর । যা নির্ভর করে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উপর । তাই যারা সমাজ-বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ফ্রেইড্রিক এঙ্গেলসের “The origin of the family, private property and the state” পুস্তকটি পড়েছেন, তারা মানব চিন্তা ও আবেগের বিবর্তন সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন ।
সম্প্রতি এই বইটি পড়েছি, আমার কাছে ভাল লেগেছে বইটির লেখার স্টাইল।
Evolutionary psychology : an introduction / Lance Workman and Will Reader.
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের উপর এটি একটি ভাল রেফারেন্স হতে পারে। এখানে আলাদা করে একটি অধ্যায় রয়েছেঃ The evolution of emotion। হয়তো আপানার অনেক প্রশ্নের জবাবই পেতে পারেন। আমি নিজে তা দিতে গেলাম না, কারণ এখনো সব বুঝে উঠতে পারিনি। বইটির সবগুলো অধ্যায় এখানে দিয়ে দিলাম, যদি কারোর আগ্রহ হয়।
1 Introduction to evolutionary psychology
2 Mechanisms of evolutionary change
3 Sexual selection
4 The evolution of human mate choice
5 Cognitive development and the innateness issue
6 Social development
7 The evolutionary psychology of social behaviour – kin relationships and conflict
8 The evolutionary psychology of social behaviour – reciprocity and group behaviour
9 Evolution, thought and cognition
10 The evolution of language
11 The evolution of emotion
12 Evolutionary psychopathology and Darwinian medicine
13 Evolution and individual differences
14 Evolutionary psychology and culture
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ। chapter 11 দেখতে হবে।
আমার বাবা মারা গেছেন। দেশ ছাড়ার চার দিন পরে। জানি বিশ দিন পরে চিঠির মাধ্যমে। এক ফোটা জল পড়েনি। কিন্তু মেয়েটির গান আমার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ওদের কাউকে emontional দেখিনি।
funeral service টা নতুন করে ভাবাচ্ছে।
লেখাটা দারুন ও চিন্তা উদ্রেকারী সন্দেহ নাই। কিন্তু লেখক সম্ভবত পাঠকদেরকে একটু আধিভৌতিক জগতের মধ্যে ভ্রমন করাতে চান যেখানে বিবর্তন প্রক্রিয়া ব্যখ্যা দিতে অসমর্থ হবে বলে তার যথেষ্ট সন্দেহ। আসলে লেখক যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন তা আমাকেও মাঝে মাঝে বিচলিত করে, এগুলোর উত্তর জানার কৌতুহলও প্রকাশ করি।কিন্তু আমরা প্রথমেই যে ভুলটি করি তা হলো- আমরা ধরে নেই বিবর্তন-প্রক্রিয়ার যাবতীয় রহস্য বোধ হয় বিজ্ঞানীরা বের করে ফেলেছেন, আর সেই পয়েন্ট থেকেই আমরা সব প্রশ্নগুলোর উত্তর খোজার চেষ্টা করি। বিবর্তন প্রক্রিয়ার আভ্যন্তরীন গঠন কাঠামোর অনেক কিছুই হয়ত জানা গেছে কিন্তু সেই আভ্যন্তরীন গঠন কাঠামো কিভাবে জীবের জীবনাচারে ও স্বভাব-চরিত্রে সার্বিক প্রভাব ফেলে বা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তা এখনও বেশী জানা যায়নি। ক্রমাগত গবেষণার মাধ্যমে তা হয়ত ভবিষ্যতে জানা যাবে এটুকুই আপাতত বলা যায়।
@ভবঘুরে,
মোটেই না। বিবর্তনের আমি কিছুই জানি। অ, আ levelএর ছাত্র মাত্র।
আমি মেয়েটির গানে অভিভূত হয়েছি এটিও মিথ্যে নয়। বিবর্তনের আলোকে উত্তরটা পেলে আমার বিবর্তনের শিশু শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উত্তরণ হবে।
অবশ্যই বিশ্বাস করি। আমার মনে হয় এসব হয়ত কোন nano level এ রাসায়নিক ক্রিয়া।
চমৎকার লেখা। আপনার প্রশ্নগুলোর বিবর্তনীয় উৎস জানা আছে, কিন্তু ব্যাখ্যা দিব কিনা ভাবছি। অনেক কাঠখোট্টা শোনাবে, হয়তো লেখার আবেদনটাই মাটি করে দিতে পারে 🙂 ।
তার চেয়ে কিশোর কুমারের গানটাই না হয় শুনি …
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ। আর কিছু চাই না।
হেব্বি, দারুন, মারভেলাস, ফাটাফাটি।
তাই আজ নয় কোন কথা কাটাকাটি।