আম পাতা জোড়া জোড়া
তৎকালে লোকে প্রেমকে লাইন বলিতো। আমাদিগকে বলা হইয়াছিলো, ইহা ভালো নয়। ভাবেসাবে আমরা বুঝিয়াছিলাম, লাইন একটি বখাটেপনা, সামাজিক অপরাধ বিশেষ। …
এই ঢাকা তখন সেই ঢাকা ছিলো না। ফুলবাড়িয়াতে ছিলো রেল স্টেশন। রিকশাই ছিলো সর্বত্র জনপ্রিয় বাহন। ইপিআরটিসি’র লাল দোতলা বাস বিআরটিসি হইয়াছে মাত্র। বাবার হাত ধরিয়া সেই দোতলা বাসে চাপিয়া মিরপুর-ফুলবাড়িয়া ভ্রমন করিয়া জীবনকে মনে হইয়াছিলো সার্থক। রমনা পার্কের দোলনায় আবার কবে চড়িবো, সেই ভাবনায় ছোট্ট শিশু মন কতই না রঙিন স্বপ্ন আঁকিয়াছিলো। …কিন্তু ‘ছেলেধরা’ নামক আতঙ্কে আমাদের ঘরে বন্দি থাকিতে হইতো। গ্রাম হইতে আসা ‘কামলা’ অমুক ভাইয়ের হাত ধরিয়া ইস্কুল-বাসা-দোতলা বাসার ছাদ অবধি ছিলো আমাদের দৌরাত্ন।
আমরা শিশু পাঠ্যে পড়িয়াছিলাম:
আম-পাতা জোড়া জোড়া
মারবো চাবুক চলবে ঘোড়া
ওরে বুবু সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া…
এবং
হাতেম ভাই হাতি চড়ে,
বাঘ-ভাল্লুক শিকার করে …
এবং
আমাদের ছোট নদী
চলে বাঁকে বাঁকে…
আর ‘সিলভার বেলস-এর রাইম:
টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টার…
ফ্রাস্টেশন! ফ্রাস্টেশন!
তৎকালে রাজ্জাক-শাবানা, ববিতা-জাফর ইকবাল হিট করিতে শুরু করিয়াছে। বড় ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ ‘সিনেমা’ , ‘চিত্রালী’ , ‘বিচিত্রা’ পড়িবার জন্য হা-পিত্যেশ করিতেন।
তাহাদের বিনোদনের জন্য বলাকা, মধুমিতা, গুলিস্তান সিনেমা হল ছিলো আদর্শ। বায়না ধরিয়া, তাহাদের হাত ধরিয়া হাফ টিকিটে দু-একটা সিনেমা দেখিতে গিয়া জানিয়াছি, সাদা-কালো চলচ্চিত্র তখন ‘বই’ হইয়া উঠিয়াছিলো। ইহাতে লাইনের গুনগান থাকিলেও নায়ক-নায়িকার জাপ্ট-জাপ্টির বাইরে ঘনিষ্টতা বুঝানো হইতো দুইটি পাখি উড়িয়া যাইবার অথবা হংস-মিথুন জলকেলি দৃশ্য দ্বারা। এইসব বইতে অবশ্য ‘উজ্জত লুটিয়া লইবার’ দৃশ্য শাড়ির আঁচল টানিয়া ব্লাউজ ছেঁড়া অবধি গড়াইতো!
তখন কী আর জানিতাম ছাই, লাইন ছাড়া গাড়ি চলে না। অথবা কবি যেমন বলেন, ভালবাসা কৃষিকাজ নহে, ইহাতেও রহিয়াছে যুদ্ধরীতি, ইহারও কুটনীতি, হিসাব-কিতাব আছে।…
লম্বা চুল রাখিয়া, বেল-বটম প্যান্ট পড়িয়া, ‘মোর’ সিগারেট ফুঁকিতে ফুঁকিতে প্লাস্টিকের লং প্লে রেকর্ডারে বড় ভ্রাতা শুনিতেন আজম খান:
ফ্রাস্টেশন! ফ্রাস্টেশন!
জ্বালা, জ্বালা, জ্বালা শুধু মনেরই,
জ্বালা, জ্বালা, জ্বালা শুধু প্রাণেরই।…
সে সময় নূরা পাগলা হাইকোর্টের মাজারে নাকি আস্তানা গাড়িয়া তরুণ প্রজন্মের ভেতর গাঁজার মজা ছড়াইয়াছিলেন। তাহার ছালাটি নাকি নিলামে বিকিয়াছিলো ১০০ টাকায়! আজাম খান আবার গাহিয়াছিলেন:
হাইকোর্টের মাজারে
কতো ফকির ঘোরে
কয়জনা আসলও ফকির?প্রেমেরও বাজারে
কতো প্রেমিক ঘোরে
কয়জনা আসলও প্রেমিক?…
এসো লড়বে যদি
সে যাহাই হোক। এই সবই ব্লগর ব্লগর, মূল কথনের বাই-লাইন মাত্র।
পাঠকের হয়তো মনে পড়িবে, তৎকালে আমাদের কচিকাঁচাদের প্রায় হাতের নাগালের বাইরে ছিলো গল্প-উপন্যাস। পাঠ্য বইয়ের বাইরে ইহাদের বলা হইতো ‘আউট বই’। তো নাটক-নভেল বা আউট বই আমাদের জন্য ছিলো দুস্প্রাপ্য। ইহারা সবই মা, খালা, মাসি-পিসিরাই দখল করিয়া রাখিতো। মলাট দিয়া পড়া হইতো নিহার রঞ্জন, আশুতোষ, ফাল্গুনী, নিমাই ভট্টাচার্য…। অন্যান্য পত্র-পত্রিকার সহিত বাবা নিয়মিত রাখিতেন ‘উল্টোরথ’। রবিবার ছুটির দিনের দুপুরে আকাশবানী কলিকাতার নাটক শোনা হইতো পান-দোক্তা মুখে লইয়া। রেডিও টিউনিং-এ আমার বিশেষ দক্ষতা ছিলো।
সেই সময় আমরা যাহারা ইঁচড়ে পাকা, অক্ষর চিনিবামাত্র বই গিলিতে শুরু করি, তারা শিশুপাঠ্য তেমন কিছু না পাইয়া শুরু করিয়াছিলাম বড়-ভাইবোনোর পাঠ্যবই পাঠ। বিজ্ঞানের বইয়ে ফিতা কৃমি, জবা ফুলের পরাগায়ন, ব্যাঙ ও আরশোলার শরীর ব্যবচ্ছেদ — ইত্যাদি ছবি দেখিয়া, লেখা পড়িয়া, খানিকটা অস্পষ্ট বুঝিয়া ও বেশীরভাগই না বুঝিয়া নানান প্রশ্নবানে বড়দের উত্যাক্ত করিতাম এবং ‘গোবেট’ এর মতো উপাধীতে অহরহই চিহ্নিত হইতাম।
মনে পড়িবে নিশ্চয়ই, বড়দের ওই পাঠ্য বইয়ে শরৎবাবুর নতুনদা’র গল্পখানি বেশ লাগিয়াছিলো। তাহাতে একটা লাইন ছিলো অনেকটা এই রকম:
আমি ডাকিলাম, নতুন দা! নতুন দা এক গলা পানিতে হইতে জবাব দিলেন, এই যে। তাহারপর নৌকায় উঠিয়া তিনি হাহাকার করিয়া উঠিলেন, আমার ড়্যাপার? পাম্প শ্যু?…
তাহার এই দুরাবস্থার কথা কল্পনা করিয়া মনে মনে খুশী হইয়াছিলাম। এখন বোঝ ব্যাটা অহেতুক পাওয়ার দেখাইবার ফল!
তৎকালে বিশ্ববিখ্যাত মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলি এই পোড়া শহরে পদধূলি রাখিয়াছিলেন। ঢাকা স্টেডিয়ামে মোহাম্মাদ আলির প্রদর্শনী দেখিয়া বড় ভ্রাতা বাড়ির উঠানে ( জ্বি মশাই, উঠান। তখনও ঢাকার এক তলা – দোতলা বাড়িতে এই উঠান ও চৌবাচ্চা বস্তুটি একেবারে বিরল ছিলো না।) বালুর বস্তা ঝুলাইয়া, ঘুষোঘুষি প্র্যাকটিস করিয়া দুই হাতে ফোস্কা ফেলিয়াছিলেন। মোহাম্মাদ আলির মুসলমান হইবার কাহিনী লোকমুখে ফিরিতো। তখন মাস দুই ধরিয়া রেডিও গান বাজিয়াছিলো:
সে মোহাম্মাদ
সে মোহাম্মাদ আলি
এসো লড়বে যদি।…
কি চমৎকার দেখা গেলো
ভোরবেলা বাবা রেডিওতে বিবিসি’র খবর শুনিতেন। সকাল সকাল আব্দুল আলীম গান ধরিতেন:
চিরদিন পুষিলাম এক অচিন পাখি
ভেদ পরিচয় দেয় না আমায়
ওই খেদে ঝরে আঁখি।পোষা পাখি চিনলাম না
এই দুঃখ তো গেলো না
আমি উপায় কি করি?একবার চেনাল পেলে চিনে নিতাম
যেতো মনের ধুক-ধুকি।…
অথবা
দুয়ারে আইসাছে রে পাল্কি
নাইওরে দ্বার খোলো রে খোলো মুমিন
আল্লা-রসুল সবে বলো।…
বিস্মৃত আরেক শিল্পীর নাকী গলার আরেকটা গানের কথা মনে পড়িয়া যায়:
শুনো মমিন মুসলমানো
করি আমি নিবেদনো
এ দুনিয়া ফানা হবে জেনেও জানো না।ইস্রায়েল ফেরেশতা যবে
শিঙ্গাতে ফুকিবেন তবে
ইয়া নফসি, ইয়া নফসি পড়িবেন সবাই।নেকী লোক আছেন যারা,
নূরের ছায়া পাবেন তারা। …
আরো পরে ইস্কুলের নীচু ক্লাসে থাকিতেই সাদা-কালো টিভি আসে পাশের বাড়িতে। দুই পাল্লার সাটার দেওয়া সেই টিভি দেখিতে সন্ধ্যা বেলায় ভীড় জমাইতাম মেঝেতে মাদুর পাতিয়া। টারজানের ডাক অবিকল নকল করিয়া বাড়ি মাথায় করিতাম। ‘ক্যাসপার–দি কার্টুন শো’ ছিলো জীবনের অধিক প্রিয়।
হঠাৎ একেকদিন চাল ভাজা, বাদাম ভাজা, হট প্যাটিস ও ফুচকাই ছিলো আমাদের ফার্স্ট ফুড। মাথায় করিয়া বিক্রি হওয়া বরফ ও কুলপি আইসক্রিম, ‘তারপরেতে কী হইলো? রাজা বলো-মন্ত্রী বলো’ বুলিসহ হাতল ঘোরানো বায়েস্কোপ, কালো কাপড়ের আস্তরের ভেতর মাথা ঢুকাইয়া তাৎক্ষনিক ছবি তুলিয়া দিতে সক্ষম ভ্রাম্যমান বক্স ক্যামেরাম্যান, গাছ তলার নাপিত, সার্কাসের ওয়ান ম্যান শো, বিহারী বানরওয়ালা প্রমুখগণ বিনোদন বিলাইতো প্রচুর।
সেই সময় ছাদে উঠিয়া বাল্ব গুঁড়া করিয়া ভাতের মার সহযোগে সুতায় মাঞ্জা দিয়া ঘুড়ি উড়াইবার আনন্দ ছিলো। শবে বরাত কী চাঁন রাত্রে দোকান হইতে বোমা-পটকা কিনিয়া পাড়া কাঁপানো ছিলো স্বাভাবিক। কিশোর বাংলা, বিজ্ঞান সাময়িকী, শাপলা-শালুক, শিশু–ইত্যাদি সাময়িকী পড়িবার জন্য আমাদের আহাজারীর অন্ত ছিলো না। লুকাইয়া সেই বেলায় দস্যু বনহুর, দস্যু বাহারাম, কিরিটি রায়, কুয়াশা এবং কিঞ্চিত পরে মাসুদ রানাও পড়িয়াছি।
এই সব করিতে করিতে আমাদের শৈশবকাল ঘুচিতে থাকে। আমরা কলেজে উঠিয়া কোনো কোনো ক্লাস মেটের প্লে-বয় ম্যাগাজিনের উত্তেজক ছবি দেখিয়া থাকিবো। ইহার পর রাতারাতি জানিবো নর-নারীর প্রেমলীলার গোপন রহস্য। বন্ধুদের কারো বাসায় ভিসিপিতে দেখিবো নীল ছবি।
পাপা ডোন্ট প্রিচ, আই অ্যাম নট আ বেবি
তৎকালে সতিত্ব বলিয়া একটি অস্পষ্ট কথা শুনিয়াছিলাম; কিন্তু শিশু বেলায় ইহার অর্থ বা মর্ম কোনটাই বুঝি নাই। কিশোরী গৃহপরিচারিকা আলেয়া বু’কে লইয়া আমরা কচিকাঁচার দল ছড়া কাটিয়া তাহাকে উত্যাক্ত করিতাম:
আলেয়া, আলেয়া, ডাক পারি,
আলেয়া গেছে কার বাড়ি?
হঠাৎ একদিন সেই আলেয়া বু’কে লইয়া বাড়ির বড়রা রূদ্ধদ্বার বৈঠকে বসিলেন। হাত পাখার ডাঁটি দিয়া সে বেচারাকে খানিক মারধোর করা হইলো। ভাতের সন্ধানে পাষানপুরিতে আসা ফর্সাপানা গাঁয়ের মেয়ে, আমাদের আলেয়া বু’ ফোঁপাইয়া কাঁদিয়াছিলো মাত্র। প্রতিবাদ করে নাই। তাহাকে আমার বাবা ডাক্তার-চিকিৎসা করাইয়াছিলেন। তবে শিগগিরই তাহাকে ছাড়াইয়া দেওয়া হইয়াছিলো।
বুদ্ধি পাকিবার পর বুঝিতে পারি, ওই সতিত্ব নাশ করিবার দায়ে আলেয়া বু’র ওপর গঞ্জনা আসিয়াছিলো। গলির কোনো বখাটে তাহার সঙ্গে গোপনে লাইন করিয়া বেড়াইতো। বিবাহ করিবার লোভ দেখাইয়া তাহাকে বাড়ির বাহির করিয়া যুবক কিছুদিন এদিক-সেদিক ঘুরিয়া আমোদ-ফূর্তি করিয়া বেড়ায়। পরে একদিন তাহাকে আবার গলির মুখে ছাড়িয়া দিয়া কাটিয়া পড়িয়াছে!
বড় ভ্রাতার নকশাল-ব্লাড ওই লোফারকে শিক্ষা দিবার জন্য নাচিয়া উঠিয়াছিলো; কিন্তু অনেক করিয়াও তাহার সন্ধান মিলে নাই।…
এই বেলা আরো বুঝিয়াছি, তৎকালে সতিত্ব নামক ওই অদৃশ্য মহার্ঘ্যটিকে রক্ষা করিবার জন্যই বুঝি অভিভাবকগণ ‘লাইনের’ ওপর খড়গহস্ত ছিলেন। সেই বেলা গর্ভ নিরোধক বড়ি ও বেলুনও প্রসারিত হয় নাই, তাই লাইন লইয়া এতো বাড়াবাড়ি, সতিত্ব লইয়াও এতো কড়াকড়ি।
এই বেলা বুঝি, এইকালে উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত গর্ভনিরোধক হাতের নাগালেই পাইয়াছে। তাহারা ইস্রায়েল শিঙ্গাটির মিথটিকে ‘বড়দের রূপকথা’ ভাবিতে শিখিয়াছে। তাহার ডিজুস, পিতা-মাতার অঢেল কড়ি উড়াইতে মোটেই নয় কঞ্জুস। হনুমানের ন্যায় পশ্চিমা অনুকরণ> হনুকরণে তাহারা পোশাক-আশাক, চলন-বলন, ফার্স্ট ফুড, পার্টি, বয়/গার্ল ফ্রেন্ড, চিন্তন ও শিক্ষনে পশ্চিমা হইতেছে। ইহা যেন সেই বিদ্যাসাগর মশাই কথিত: ‘দিশি কুত্তার বিলিতি ডাক!’
ইহার ফলে ক্রমেই সতিত্বের ধারণা হইতেছে ক্ষীণতর; লাইনে উঠিয়াই নায়ক-নায়িকা লাগামহীন; সতিত্ব দূর-অস্ত! আরো বুঝিয়াছি, এই বেলায় লাইন ছাড়া গাড়ি চলে না। নির্ঘাত তাহার পরের কথাসমূহ অনুরূপ:
মক্কাতে ইঞ্জিনখানা তার
বাগদাদে বগিখানা
ওদের খেলা ওরাই বোঝে
আমরা কিছু বুঝি না
বুঝি না, বুঝি না।লাইন ছাড়া যে গাড়ি চলে না।…
—
ছবি: চশমা পরিহিত লেখকের বালক বেলা, সাতের দশকের পারিবারিক অ্যালবাম।
একটি লেখা লিখতে যে কত কস্ট সেটা আমি জানি । কিন্তু যখন কেউ যখন এরকম লেখা লিখে তখন বুঝতে পারি- লেখার মধ্যে অপার আনন্দ আছে জন্যই আপনার মত লোক লিখে যাচ্ছে । কতো সহজভাবে ! :guru:
@আবু সায়েম,
কস্কী মমিন? 😛
অদ্ভূত তোমার শৈশব কৈশর..যৈবনের শুরু……অনেক মজা করে লিখেছো….মুগ্ধ হয়ে পড়লাম……..বাস্তবতার অকপট ধারাবাহিকতা দারুণ লাগলো………সত্যিতো সময়টা কত বদলেছে……এখন অনেক কিছুই কত সহজ…….
@সেঁজুতি,
অনেক ধন্যবাদ, ও বন্ধু আমার! (Y)
একটা ভুল আছে –
মনে হয় কথাটা ঠিক।
এখানে -হবে
” মনে হয় কথাটা ঠিক না”।
ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
@আফরোজা আলম,
সুন্দর মন্তব্যর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। :rose:
আসলে একেকটি লেখা বোধহয় একেক রকম প্রকাশভঙ্গী দাবি করে। শরৎচন্দ্র চলিত ভাষায় পড়তে নিশ্চয়ই শ্রুতিকটু ঠেকবে, তাই না? আবার দেখুন, সাধু ও চলিতের মিশ্রণও কোনো কোনো লেখায় কী চমৎকার মানিয়ে যায়:
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
আমি যেনো সারাদিন ভাল হয়ে চলি।…
—
অ/ট: মন্তব্যের সংশোধনের সুবিধাটি কী আরো সহজ করা যায়? অ্যাডমিন, প্লিজ হেল্প!
আমি অত্যন্ত মনোযোগ নিয়ে পড়লাম। কতোটা ভালো লাগলো বুঝাতে পারবনা। খুব সহজ সরল ভাবের লিখে গিয়েছেন। পড়ার পরে মনে হলো” শেষ হইয়াও হইলনা শেষ” কী অদ্ভুত নিবিড় লেখা। কথায় আজকাল বলে “পুরানো দিনের লং লাস্টিং প্রেম” আগের দিনের প্রেম ও ছিল আলাদা। যতো গোপন ততো মধুর।
তবে একটা কথায় একমত হতে পারলাম না ভাই, আপনি বলেছেন সাধু ভাষায় না লিখলে তখনকার দিনের রূপ রেখা ফুটে উঠতোনা। মনে হয় কথাটা ঠিক। তবে সাধু ভাষা অনেকদিন পরে ভালোই লাগলো নিঃশন্দেহে। আপনি দেখুন নিশ্চয় বিমল মিত্রের “কড়ি দিয়ে কিনলাম” বইটা পড়েছেন। আমি অনেক আগে পড়েছিলাম। ক’দিন আগে আবার পড়লাম,স্বাদ আগের মতই একই রকম লাগলো। বলা বাহুল্য “কড়ি দিয়ে কিনলাম” ২ খণ্ডই আমার জীবনে পড়া যতো বই আছে তার মাঝে সেরা। সে বই কিন্তু চলিত ভাষায় লেখা।
তবু, আপনার লেখা আমার কাছে অসাধারণ লাগলো। এমন আরো লেখা দিলে খুব ভালো লাগবে।
ছবিতে বালকটির চশমা তো তখনই পান্ডিত্যের পরিচয় বহন করে।
মাহফুজের মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে বিপ্লব রহমান যে বলেছেন,
একমত। তবে এহেন কঠিন-কঠোর নিয়তিকে বদলানোর কৌশল খুঁজতে হবে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে নারীদেরকেই।
@গীতা দাস,
আমি মনে করি- শুধু নারী নয়, এর পাশাপাশি পুরুষদেরও সহযোগী মনোভাব থাকতে হবে।
@মাহফুজ,
একমত।
@গীতা দাস,
থ্যাঙ্ক ইউ। :rose2:
@গীতা দাস,
পাঠ প্রতিক্রিয়া পেয়ে ভালো লাগলো।
@ মাহফুজ,
চমৎকার বলেছেন। নারীমুক্তি আসলে নারী-পুরুষ যৌথ আন্দোলনেই সম্ভব।
—
আপনাদের ধন্যবাদ। :yes:
এক্কেরে চান্দনি পহইরা রাইতের ঝিলিক মারইন্যা লেহা। আফনেরে নান্নার বিরানি খাওয়ানের কাম।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের পুরনো ঢাকার উয়ারিতে ছিলো পালোয়ানের বিরিয়ানী। দোকানটি উঠে গেছে সেই কবে! পালোয়ানের খবরও এখন কেউ জানে না! 🙁
আসল ঢাকার পুরোনো ছবি। খুব ভালো লাগলো। :rose2:
@আশিকুর রহমান,
অনেক কৃতজ্ঞতা।
খুব ভাল লাগল!
সে সময়ের ছবিটা নিঁখুত ভাবে তুলে ধরেছেন।
মনে হল খুব পরিচিত সব!
@লাইজু নাহার,
অনেক ধন্যবাদ।
@ বিপ্লব রহমান,
ইহা শিরোনামহীন হইবে কেন আমি তো আপনার ছেলেবেলা দেখিতে পাইতেছি। ভালোই লাগিল। কিন্তু হঠাৎ করিয়া চলিত রীতি হইতে সাধুরীতিতে গড়াইলেন কেন?
আপনার আলেয়া বু’রে নিয়া যাহা হইয়াছিল আমাদের এলাকাতেও ঐরকম ঘটিয়াছে। তাহার নাম ছিল সখিনা। সখিনা পোয়াতীও হইয়াছিল। কিন্তু ছেলেটি কোথায় যে পালাইয়া গেল খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। সখিনাকেও খেদাইয়া দেওয়া হইয়াছিল, কোনই খোঁজ রাখি নাই। অনেক বছর পর শুনি বিষ খাইয়া আত্মহত্যা করিয়াছিল।
@মাহফুজ,
আবারো সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। :rose:
বিনয় করে বলি, একটি লেখা বা ছবির শিরোনাম যে বোধের কারণে ‘শিরোনামহীন’ হয়, একই কারণে এই লেখার নামকরণও তাই। যদি জানতে চান, কি সেই বোধ? তবেই বিপত্তি। এটিকে ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না…
লেখাটিতে ছেলেবেলার কথা বেশ খানিকটা থাকলেও লক্ষ্য করবেন, এতে আরো নানা গুরুতর বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে– এমন কি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ‘ফ্রাস্টেশন’ও। এটিকে বরং ছেলেবেলার খণ্ডচিত্র বলাই ভাল।
সাধুভাষায় না লিখলে ঠিক পুরনো ওই সময়টিকে লেখায় ধরা যাচ্ছিল না, তাই এই লেখনীরীতি; অনেকটা পুরনো আমলের ঘটনা নিয়ে এ সময় বানানো সাদাকালো সিনেমার মতোন। এর আরো একটি গূঢ় কারণ এই যে, সে সময়ে আমাদের পাঠ্যবই কাষ্ঠ-কঠিন সাধুভাষায় লেখা হতো, যা হয়তো এ সময়ের প্রজন্ম ঠিক কল্পনাও করতে পারবে না। এখনো মনে আছে, আমাদের ভূগোল বইয়ে এ রকম একটি প্রশ্ন ছিলো : নরওয়েকে ধীবরের দেশ বলা হয় কেনো? এছাড়া সাধুভাষায় লেখা আমার একটি নীরিক্ষাও বটে।
আলেয়া বা সখিনারা সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে, হয়তো আগামী ডিজিটাল বাংলাদেশেও তারা ভিন্ন নামে থাকবে। এই-ই যেনো এইসব ভাগ্যহতর কঠিন-কঠোর নিয়তি! :deadrose:
@বিপ্লব রহমান,
এত সুন্দর করে মন্তব্যের প্রতিত্তোর দেবার জন্য কতটা গোলাপ দিলে খুশি হবেন জানি না। তবে :heart: …।
@মাহফুজ, 🙂
ভালো লাগল। আমরা যারা আর এক দশক পরের অর্থাৎ আশির দশকের দিকে বেড়ে উঠছি তখন ঢাকার এই চিত্রটি তার শেষ রেশটুকু মুছে ফেলছে। তবু অগ্রজদের ভাব ভংগী- স্টাইল আর চিন্তার মধ্যে তার ছাপ কিছুটা ছিল।
@বকলম,
তাই? এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে আলাদা একটি লেখা প্রত্যাশা করছি। লিখবেন নিশ্চয়ই।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে গেলাম। চমৎকার।
@সৈকত চৌধুরী,
অনেক ধন্যবাদ।