fb-daily-star-310510‘ফেসবুক ব্যান করে, করে কোতোয়ালি/মামাদের আজি হাঁটে ভাঙিলো যে হাঁড়ি/ঘটা করে বলে, দিবো বাক স্বাধীনতা/আদতে পুড়িলো বসি অঙ্গীকারের খ্যাতা’ — সুরঞ্জনা হক নামে একজন ব্লগার এ ভাবেই রম্য ছড়ার মাধ্যমে ফেসবুক বাংলাদেশে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। [লিংক]

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক শনিবার বাংলাদেশে সরকারিভাবে বন্ধ করার পর চলছে আর্ন্তজালে তীব্র প্রতিবাদ।

বিভিন্ন বাংলা ব্লগ সাইট ও জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণেও প্রতিবাদ চলছে। এমনকি ব্লগার মাহবুব মূর্শেদ এরই মধ্যে খুলেছেন বিকল্প ফেসবুক bikolpofacebook.ning.com। এর ব্যানারে লেখা হয়েছে: ব্যান তুলে নাও, খুখে দাও ফেসবুক। তবে এখনো শুধুমাত্র আমন্ত্রিতরাই এখন সেখানে নিবন্ধিত হয়ে পারছেন। [লিংক]

এছাড়া জি-মেইলের বাজ-এও চলছে সরকারি এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা।

অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, এটি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান। এ ঘটনা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ। তাঁরা বলছেন, সাইবার ক্রাইমের জন্য অপরাধী শাস্তি পেতে পারে; এর সমাধান ওয়েবসাইটটি নিষিদ্ধ করে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ হওয়া সংক্রান্ত সংবাদটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়েছে। দৈনিক কালের কণ্ঠে রবিবার এ সংক্রান্ত শীর্ষ খবরটি অনলাইনে পড়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বার। [লিংক] এ সম্পর্কিত সংবাদের বিষয়ে আন্তর্জালের পাঠকরা সব জাতীয় দৈনিকে সবচেয়ে বেশি মন্তব্য করেছেন। [লিংক]

বাংলায় জনপ্রিয় ব্লগ সাইট মুক্তমনা ডটকম ও সচলায়তন ডটকম শনিবার রাতেই তাদের ব্যানার বদল করে। মুক্তমনা ব্লগের ব্যানারে খাঁচাবন্দি বাক স্বাধীনতার একটি প্রতীকী ছবি এঁকে একপাশে ছোট হরফে লেখা হয়েছে, ‘মত প্রকাশের অধিকারে শিকল পরানো চলবে না।’ পাশে বড় হরফে লেখা হয়েছে ‘ফেসবুক ব্যান উঠিয়ে নিন।’

সচলায়তনে ব্যানার বদলে লেখা হয়েছে, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যানের মধ্যযুগীয় সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

সেন্সর বিহীন বাংলাব্লগ সাইট আমারব্লগ ডটকম একদিন পর পরিবর্তন করে তাদের ব্যানার। ফেসবুকের ঘন নীল বর্ণের প্রচ্ছদ দিয়ে ব্যানার তৈরি করে জনপ্রিয় এই ব্লগ সাইটি লিখেছে: অবমুক্তি চাই! [লিংক]

এ ছাড়া সামহোয়ারইনব্লগ ডটনেট, নির্মাণব্লগ ডটকম, নাগরিকব্লগ ডটকমসহ বিভিন্ন বাংলা ব্লগ সাইট ব্যানার বদল না করলেও সেগুলোতে শনিবার রাত থেকে বাংলাদেশ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অসংখ্য লেখা ও মন্তব্য প্রকাশ চলছে। ফেসবুক আবার খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে অসংখ্য ব্লগার তাঁদের প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করে ফেসবুকের লোগো নীল রঙা ‘এফ’ অক্ষর ব্যবহার করছেন।

নাগরিক ব্লগে রুবাইয়াত নামের একজন ব্লগার কম্পিউটারে ইমেজ সম্পাদনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ করেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকের নীল কপোত ওড়াতে দেখা যায়। তাঁর লেখার শিরোনাম: দ্বার বন্ধ করে ভ্রমটারে রুখি। [লিংক]

ফেসবুকে ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর দল’ নামের গ্রুপের অধিকারী এবং আমারব্লগ ডটকম-এর ব্লগার মাহমুদুল হাসান রুবেল একজন পুরনো ফেইসবুক ব্যবহারকারী। তিনি বলেন, আমরা ১২৫ জন গ্রুপ সদস্য ফেসবুক ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে প্রায় চার লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি। এখন সাইটটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

মুক্তমনা ব্লগে প্রবাসী ব্লগার আদিল মাহমুদের ভাষ্য মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত তরুণ সমাজকে ক্ষুব্ধ করবে, যারা একই সঙ্গে নতুন ভোটারও। কারণ তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ফেসবুক ব্যবহার করেন। শেষ পর্যন্ত এটি আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তার বিপক্ষেই যাবে। পাকিস্তান সরকারের মতো বাংলাদেশ সরকারও ফেসবুক বন্ধ করে মৌলবাদীদের কাছে নতজানু মনোভাব প্রকাশ করছে।

প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে ফেসবুকে ঢুঁ মেরে দেখা গেছে, এখনো সাইটটির সব ফিচার ব্যবহার করা যাচ্ছে। সেখানেও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। স্ট্যাটাস ও নোট আকারে সেখানে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ চলছে।

ব্যক্তি মালিকানায় ২০০৪ সালে ফেসবুক ডটকম চালু করা হয়। তবে বাংলাদেশে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বছর চারেক আগে। অনলাইনে বিনামূল্যে নিজের প্রোফাইল বানানো, ছবিসহ নিজের মনের কথা প্রকাশ, বন্ধু-বান্ধব তৈরি, চ্যাট, প্রিয় ব্যক্তিত্ব, সংগঠন বা সাইটের নামে ফ্যানক্লাব খোলাসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে এর ব্যবহারকারীর বড় একটি অংশ শিক্ষার্থীরা।

আন্তর্জাল পরিসংখ্যানকারী এলেক্সা ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক বাংলাদেশে দ্বিতীয় জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। সার্চ ইঞ্জিন গুগলের পরেই এর স্থান।

ফেসবেকার্স ডটকমের তথ্য মতে, বাংলাদেশে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় আট লাখ ৭৬ হাজার ২০ জন। প্রায় ছয় লাখ ৪২ হাজার ৯২০ জন পুরুষ ও দুই লাখ ২২ হাজার ৪৪০ জন নারী সাইটটি ব্যবহার করেন। চলতি মাসের ২৮ মে পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক মাসেই ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার।

এদিকে ফেসবুক চালু করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। মানববন্ধনের পরে সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত একটি বড় বাধা। [লিংক]
*পুনর্লিখিত। ।


পড়ুন: আবেদ খানের বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদন: এসব করলে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে? [লিংক]

প্রতিবাদে সরব ইন্টারনেট [লিংক]

পাকিস্তানে ফেসবুকের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার [লিংক]

ছবি: শাহরিয়ারের কার্টূন, ডেইলি স্টার, ৩১ মে, ২০১০।