১৮ বছর পেরিয়ে
১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাস। পরিপূর্ণ শীত। শেষ বিকেলের আলোতে জানালা দিয়ে বাইরের জগৎ খুব ম্লান লাগছিল। হলরুমের ভিতর চারিদিকে বিবর্তন ও গ্রহ নক্ষত্রের ছবি, বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন ম্যাপ ও চার্টে পরিবেশটা অন্যরকম। হলরুমের ভিতরে ৪৪/৪৫ জন লোক খুব মনেযোগ দিয়ে একটি বক্তৃতা শুনছিলেন, যাদের বয়স ১৬ থেকে ৭৫ বছর। বক্তৃতা করছিলাম কসমিক ক্যালেন্ডার নিয়ে। আমার পিছনে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি বিশাল ছবি টানানো। এই গ্যালাক্সিতে আমরা বাস করি যার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এমনকি আলোর যেতেও সময় লাগে এক লক্ষ বছর। কসমিক ক্যালেন্ডার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মহাবিস্ফোরণ, প্রাণের উৎপত্তি, বিবর্তন, সভ্যতার কথাও চলে এসেছিল। বক্তৃতা শেষে প্রায় প্রতিটি শ্রোতা অজস্র প্রশ্ন করা শুরু করলেন। তারা শিশুদের মত কৌতুহলী হয়ে পড়েছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে এক মহাজাগতিক পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল যেখানে মানব সভ্যতার উষা, পরিণতি, নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু অনেক ধরনের প্রশ্ন করা যায়। তার কিছু কিছু ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি প্রশ্ন আমাকে চমৎকৃত করে। একজন শ্রোতা ভূ-তাত্ত্বিক কালপঞ্জির চার্টটাকে ইঙ্গিত করে বললেন আচ্ছা মানব সভ্যতার বয়স কি জিওলজিক্যাল টাইম স্কেলে পরিমাপ করা সম্ভব হবে? মানুষের আবির্ভাব যদিও পৃথিবী সৃষ্টি ও নক্ষত্রের জীবনকালের তুলনায় খুবই অল্পদিনের ঘটনা। এই দর্শক-শ্রোতাদের এই আলোচনা শুনতে ডেকে নিয়ে আসা হয়নি। তারা ৪০ টাকা করে টিকিট কেটে এই বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান শুনতে এসেছিলেন, যা বাংলাদেশে খুব সম্ভবত প্রথম।
অনুষ্ঠান শেষে আমি যখন বাইরে এলাম, তখন সন্ধ্যা অতিবাহিত হয়ে কেবল রাত নেমেছে। শীতের রাত। চারিদিকের ছোট ছোট দোকানপাটে এক ধরনের জটলা, এক ধরনের বিতর্কের আভাস পাচ্ছিলাম। তারা প্রবল কৌতূহল ও বিস্ময় নিয়ে প্রাণি বিবর্তনের কথা, বানর থেকে মানুষের বিবর্তন সরাসরি ঘটেনি এ সংক্রান্ত কথা, প্রাণ উৎপত্তির অর্থাৎ জড় থেকে জীবনের উদ্ভবের কথা আলাপ করছিল। এটা ছিল ডিসকাশন প্রজেক্টের প্রথম ওপেন ডিসকাশনের অভিজ্ঞতা, যে সংস্থা গত ছয় বছর ধরে বিজ্ঞান ও সভ্যতার উপর দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতার আয়োজন করে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। সাময়িকভাবে হলেও আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম এই ভেবে : এটা কি গোয়েটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয় শহরের তরুণ শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কের রাত, না ভূমধ্যসাগরের তীরে গড়ে-ওঠা এথেন্সের পথেঘাটে সক্রেটিসের মতো প্রশ্ন-প্রতিপ্রশ্নের মাধ্যমে বিষয়ের গভীরে চলে যাওয়ার চেষ্টা অথবা তারও আগে ঈজিয়ান সাগরের পূর্বাঞ্চল আয়োনিয়াতে ২৬শত বছর আগে জেগে ওঠা সেই আবেগ, সবকিছু সম্পর্কে সর্বগ্রাসী কৌতুহলে জেগে ওঠা পরিবেশ-আয়োনীয়রা প্রশ্ন করেছিল ও তার সত্যতা যাচাই করার জন্য তারা পরীক্ষা-নিরিক্ষা পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছিল যেটাকে আমরা বলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি; ওরা ছিল নাবিকের, তাতিদের, কৃষকের সন্তান।
ডিসকাশন প্রজেক্টর মাধ্যমে আমি এই কাজ ১৯৯২ সালের ১৯মে মাত্র দুজন শ্রোতা নিয়ে শুরু করি। দর্শনী নেওয়া হয় এজন্য যে এতে শ্রোতারা মনযোগী হন আর অনুষ্ঠানের খরচ কিছুটা উঠে আসে। তাছাড়া কোনকিছু যদি অবসর সময়ের কাজ হয় তাহলে তার গুরুত্বও কমে যায়। আর কোন কিছুকে কাজ বলতে হলে তার অর্থনৈতিক স্বীকৃতি দরকার। জানামতে এরকম পেশাদারী বক্তৃতা বাংলাদেশে আমরাই প্রথম শুরু করি। যাহোক ১৯৯৩ সালে জুন মাসে ৮ জন শ্রোতাকে নিয়ে শেষবিকেলের এক আলো-আঁধারি পরিবেশে আমাদের প্রথম গ্রুপ-ডিসকাশনের যাত্রা। সেদিনের বিষয়বস্তু ছিল বর্হিজাগাতিক সভ্যতা। সেদিনের আলোচনার স্থান হয়তো ছিল খুব সাধারণমানের। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে অন্যকোন নক্ষত্রের গ্রহের প্রাণীদের নিয়ে পেশাদার আলোচনায় বসেছে একটি দরিদ্র দেশের অল্পকিছু সাধারণ মানুষ এই চেতনাবোধে সবার স্নায়ুতে ছিল অন্যরকম উত্তেজনা, অন্যরকম ঘোর। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষেরা যেভাবে চিন্তা করেন আমরা সেরকম করে চিন্তা করতে চেয়েছি। আমার ছোট্ট কক্ষটা সাজানো হয়েছিল বিশাল বিশাল কয়েকটি ম্যাপ এবং গ্রহ-নক্ষত্র ও বিবর্তনের বেশ কয়েকটি চার্ট ও ছবি দিয়ে। আরও ছিল দেশী-বিদেশী চার হাজার বইয়ের এক সংগ্রহ, পাশাপাশি বিজ্ঞান ও সভ্যতাভিত্তিক প্রচুর পোস্টার এবং ডকুমেন্টারি ফিল্মের বেশ কিছু ভিডিও ক্যাসেট। পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র ও দরিদ্র দেশের অধিবাসীদের কাছে সভ্যতার উপকরণের এ ধরনের সংগ্রহ এবং এ আলোচনা সেই সাধারণমানের স’ানটিকে অসাধারণ করে তুলেছিল। মিশরীয় হায়রোগ্লিফের রহস্য উম্মোচনে শ্যামপেলিয়নের/শাপোলিয়ঁর অভিযান নিয়ে সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। একই পৃথিবীতে থাকলেও দুই হাজার বছর ধরে প্রাচীন মিশরীয়রা ছিল আমাদের কাছে অনেকটা বর্হিজাগতিকদের মতই। শ্যামপেলিয়ন তার জীবনের ১৫ বছর সময় ব্যায় করেন এই রহস্য উদ্ধারে। ৫০ টাকা দর্শনী দিয়ে আসা আটজনের একজন অত্যনত উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল এরকম আর একটি ডিসকাশন কবে হবে? ওদের উৎসাহে আমি ছিলাম অভিভূত। আমি ডিসকাশন শেষে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রাতের বয়ে যাওয়া নদীকে দেখছিলাম আর মৃদু বাতাসে ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে হচ্ছিল বিশাল একটা কাজ শেষ হলো। সবকিছু অদ্ভুত স্বপ্নময় লাগছিল। ভাবছিলাম বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতার কথা-এমন একটি সভ্যতা যেখানে জ্ঞান ও জ্ঞানের বিশুদ্ধতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাহলেই জিওলজিক্যল টাইমস্কেলে আমাদের সভ্যতার বয়স নিরূপণ করা যাবে। এ ব্যাপারে কার্ল সেগানের কথাগুলোই আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছিল। অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়েছিল সেগানের কথা বলা মানে নিজের কথা বলা। ফলে কয়েকটি বক্তৃতা আমি কার্ল সেগানের উপর দিয়েছি এবং দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে তা শুনেছে। তখনই মনে হয়েছে কার্ল সেগানের বিজ্ঞান ও সভ্যতা সম্পর্কে চিন্তা এবং তাঁর বইগুলোর বক্তব্য নিয়ে একটি বই লেখা যায় কিনা, যে বই পড়ে পাঠকেরা কার্ল সেগানের নিজের লেখা বইগুলো পড়তে উৎসাহিত হবে এবং তাঁর বৈজ্ঞানিক কাজগুলো সম্পর্কে জানবে, জানতে পারবে দীর্ঘকাল সভ্যতার টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর কথাও।
১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর বর্হিজাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান ও প্রাণের অস্তিত্ব সঙক্রান্ত ’দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে’ শীর্ষক ১৩-তম ওপেন ডিসকাশনে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ডিসকাশন শুরু হওয়ার আধঘন্টা আগেই কাউন্টারে রক্ষিত সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। তারপরও অনেক দর্শক টিকিট চাইতে থাকেন, যারা পাননি তাদের অনেকে পরের শো-টা কখন হবে জানতে চান। ফলে দর্শকদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য ডিসকাশন প্রজেক্টের সাথে জড়িত লোকজন বের হয়ে আসে, তারপরও ২৫/৩০জন দর্শক বাইরে দাড়িয়ে বক্তৃতা শোনেন। এগুলো বাদ দিলেও টিকিট কেটে ১৫০ জন দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ৫০ টাকা করে টিকিট কেটে বিজ্ঞান ও সভ্যতার উপর বক্তৃতা শুনতে এত লোকের সমাগম শুধু ডিসকাশন প্রজেক্টের ইতিহাসে নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক অসাধারণ ঘটনা। শিল্প-সংস্কৃতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা বাংলাদেশে দুর্লভ আর এতো বিজ্ঞানের আলোচনা। আজ সারা বিশ্বব্যাপী আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলের মধ্যে চলছে এক সর্বনাশা প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগীতায় কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে, পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাবে, সার্টিফিকেট তথা নগদ কিছু পাবে, এই হয়ে দাড়িয়েছে জীবনের মূল লক্ষ্য। তারপরও এই ডিসকাশনগুলোতে যারা এসেছেন বা আসছেন তারা নগদ লাভ বা কোন লোভে আসেননি, এসেছেন বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্যে, উপলব্ধি হতে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বর্তমান বিশ্বের এ নগদ লেনদেনের যুগে একে বিরাট সাফল্য মনে করি, যা আমাকে দেখিয়েছে মহাজাগতিক সভ্যতার স্বপ্ন-মস্তিস্ক বিবর্তনের বিপজ্জনক ফলাফল R-complex এর প্রভাবমুক্ত এক সমাজ।
ডিসকাশনে যারা এসেছিলেন তাদের বয়স ১৪/১৫ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত। তারা কেউ ছাত্র, শিক্ষক কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ সামান্য কর্মচারী। তাঁরা ছিলেন সমাজের সাধারণ লোক। কিন্তু তারপরও তারা প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে অথবা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া নিম্নাঞ্চল ডিঙ্গিয়ে ৫০টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ডিসকাশনে এসেছেন, অসাধারণ সব প্রশ্ন করেছেন : জৈবিক বিবর্তনের তুলনায় সাংস্কৃতিক বিবর্তন কেন দ্রুত হয়েছিল? মানুষের কি আর বিবর্তন ঘটবে? যদি নির্দিষ্ট সময় পর তেজস্ক্রিয় বস্তুক্ষয় হয়ে গেলে একটি পরমাণুর ক্ষেত্রে কী ঘটবে, যেখানে পরমাণু পদার্থের একক? বিগ ব্যাং এর আগে কী ছিল? অক্সিজেন ছাড়াও প্রাণীরা কিভাবে দীর্ঘসময় কাটিয়ে এসেছে? ব্লাক হোলে সময় কেন সি’র? কোয়ান্টাম তত্ত্ব কি? এই মহাবিশ্বে দুটি বুদ্ধিমান গ্রহবাসীর মধ্যে পরস্পর যোগাযোগের সাধারণ ভাষা কি? এসব প্রশ্ন আমাকে আলোড়িত করেছিল। কৌতূহল মানুষকে কিভাবে জাগিয়ে তোলে তাই দেখেছিলাম। সামান্য পরিবেশ আর প্রশ্ন করার মতো সহযোগিতা পেলে মানুষ কত অসাধারণ প্রশ্ন করতে পারে আমার ডিসকাশনগুলো তার প্রমাণ। এইভাবে গ্রুপ, ওপেনসহ প্রায় ২৫০টি ডিসকাশন করেছি যা কয়েক হাজার লোক টিকিট কেটে শুনেছে প্রশ্ন করেছে, যার ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞান ও সভ্যতার উপর কার্ল সেগানের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে এই বইটি লিখতে শুরু করি। বইটি লিখতে ডিসকাশন প্রজেক্টের সাথে জড়িত সদস্যরা যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
এ কাজ করার সময় কখনো রাস্তা দিয়ে হাটার সময়, কখনো রেস্টুরেন্টে বসে, কখনো নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি বারবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি যে মানুষের এত জ্ঞান অর্জন করে কী লাভ? সহজ উত্তর হলো আমাদের টিকে থাকার জন্যই জ্ঞান খুবই জরুরি, যার কোন বিকল্প নেই। সব সমস্যার সমাধান না হলেও আজ আমরা যে রাস্তা দিয়ে নিরাপদে হেঁটে যেতে পারি তা এই জ্ঞানচর্চার ফসল। কারণ এরফলে R-complex -এর অনেক প্রভাবকেই আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। নিজেদের ভিতর এমন কিছু বোধ বা নীতিমালা (সম্পূর্ণভাবে না হলেও) তৈরি করতে পেরেছি যে, কাউকে অযথা আক্রমন করা ঠিক নয়, জোর করে কিছু ছিনিয়ে নেওয়া উচিৎ নয়। স্বাভাবিক ধ্বংসাত্মক প্রবণতা কাটিয়ে উঠে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ, ভালবাসা অর্থাৎ মানবিক বোধ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এগুলো যত বাড়বে ততই আমাদের সভ্যতার টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে, আত্মধ্বংসের প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আমাকে একজন একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন মানুষের প্রয়োজন খুব সামান্য, বাঁচেও অল্পদিন। শুধু শুধু এত জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে কি লাভ? তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তারও দুদিন পর যখন তারই ভাই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছিল এবং শেষ চেষ্টা হিসেবে বিদেশ(মাদ্রাজ) যাওয়ার জন্য সবার কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাচ্ছিল তখন তাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে আমার বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি? জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে ওর ভাই আজ নিশ্চিতভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অজ্ঞতা-কুশিক্ষার ফলে আমাদের দেশের ডাক্তারদের কাছে সে সামান্য আশাও করতে পারছে না। কারণ আজ যারা ডাক্তার হয়েছে তাদের বেশিরভাগতো শুধু এইভেবে ডাক্তার হয়েছে যে এতে প্রচুর অর্থ আসবে, সামাজিক সম্মান নিশ্চিত হবে, তাদের কাছে আন্তরিকতা আশা করা অর্থহীন। আমাদের দেশের যেকোন ধারার পড়াশুণার অবস্থাই এরকম।
কতটুকু জানলে আমাদের লাভ হবে আর কতটুকু না জানলে চলবে এইভেবে কখনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হতে পারে না। খুব কম ক্ষেত্রেই এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। পড়াশোণার ক্ষেত্রে এধরনের মনোভাব আমাদের জ্ঞানের বিকাশকে পুরোপুরি রূদ্ধ করে দেবে। প্রত্যেকে জ্ঞানচর্চা করেছে কৌতুহল থেকে, মনের অভাববোধ থেকে, তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। পরে দেখা গেছে এগুলো দ্বারা সমাজ ভালভাবে উপকৃত হয়েছে। একবার ইউক্লিডের নিকট শিক্ষারত জনৈক ছাত্র জ্যামিতির উপর প্রথম পাঠ নেওয়ার পর জিজ্ঞেস করেছিল ‘এইগুলো শিখে আমার কী লাভ হবে?’ এই কথা শুনে ইউক্লিড তার দাসকে ডাকলেন এবং বললেন ‘একে একটি মুদ্রা দান কর, কারণ সে যা শেখে তার দ্বারা সব সময় লাভ করতে চায়।’ আজকালও এরকম অসংখ্য নির্বোধ আছে যারা জ্ঞানার্জনকে হাতেনাতে লাভজনক হিসেবে দেখতে চায়। তারা এতে সফল হলে জ্ঞান অর্জন বিযয়টা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হবে। আমাদের দেশে তার চরম বিকাশ ঘটেছে। আমরা নাম্বারবাজ জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছি যার সমর্থন যোগাচ্ছে আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতি। এটা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে জ্ঞান অর্জন বিযয়টা পুরোপুরি অর্ন্তধানের পথেই। একবার ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেকে(১৭৯১-১৮৬৭) বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় আবেশ আবিষ্কার সম্পর্কে রানী ভিক্টোরিয়া জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘এর ব্যবহার কি?’ তখন ফ্যারাডে উত্তর দিয়েছিলেন ‘ম্যাডাম, সদ্যজাত শিশুর ব্যবহার কি?’ আজ ১৫০ বছর পরে আমরা জানি বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুললে মানুষ হাসবে।
এ ধরনের কাজের ফলে অনেকের সংগে আমার আলাপ হয়, জিজ্ঞেস করা হয় আমার লক্ষ্য কী? আগে লক্ষ্য স্থির করা দরকার, কারণ সাধারণ মানুষের কসমস, কোয়ান্টাম জগত, জ্যামিতি জেনে কী লাভ? তারচেয়ে তাদের সাধারণ প্রয়োজনের জিনিষ জানানোই কি বেশি লাভজনক নয়? আমি এই প্রশ্নের সাপেক্ষে কোন কথা বলিনি, অস্বস্তি অনুভব করেছি কী বলবো ভেবে। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করেছি একজন মানুষের কতটুকু জানলে প্রয়োজন মিটে যাবে তা আমি নির্ধারণ করার কে, তা নির্ধারণই বা কিভাবে সম্ভব? একজন মানুষ কি তাই : যে পৃথিবীতে জন্মাবে তিনবেলা খাবে ঘুমোবে আর সন্তান জন্ম দেবে তারপর মারা যাবে–এগুলোই জীবনের একমাত্র সার্থকতা, তাহলে পশুর সাথে আমাদের পার্থক্য কি?। সে কি জানবে না নক্ষত্রের কিভাবে জন্ম ও মৃত্যূ হয়, কত নক্ষত্র আছে এই মহাবিশ্বে, সেখানে তার অবস্থান কি, অণু-পরমাণুর জগতকে কিভাবে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, স্থান-কালের বক্রতা কি, আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে ছুটলে সি’র কাঠামোর সাপেক্ষে কেন সময় শ্লথ হয়ে যায়? একজন বিশেষজ্ঞের মতো হয়তো নয় কিন্তু তার ফলাফলগুলোকে অনুধাবন না করতে পারলে তার মধ্যে সেই সাংস্কৃতিক বোধ জন্মাবে কেমন করে যে এই মহাবিশ্বের তুলনায় মানুষ কত ক্ষুদ্র, কত অল্পসময় অধিকার করে আছে। তা জানেনি বলেই কুসংস্কার দূর হয়নি বুঝতে পারেনি কিভাবে সে দাসত্বের নিগঢ়ে বাঁধা পড়েছে শারীরিক এবং মানসিকভাবে, যুক্তির থেকে অন্ধ আবেগকে বেশি প্রশ্রয় দিয়েছে ও দিচ্ছে। এইভাবে মানুষকে ব্যবহার করে অন্ধ ধর্মীয় আবেগে তাড়িত করে এক শ্রেণীর ক্ষমতালোভী ব্যাক্তি ও পুরোহিত ধ্বংস করেছিল আলেক্সান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারসহ সেই সময়কার সমস্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলগুলোকে, রক্ষা করতে পারেনি আয়োনীয় আবেগকে যা পারলে আমরা হয়তো আন্ত:নাক্ষত্রিক সভ্যতায় উপনীত হতে পারতাম এবং আলফা সেন্টরী ও বার্নাডের নক্ষত্র, সাইরাস ও টাউ সেটির মতো নক্ষত্রে আমাদের প্রথম সার্ভে জাহাজগুলো ঘুরে আসতো অনেকদিন আগে আর আন্ত:নাক্ষত্রিক ট্রান্সপোর্ট বা পরিবহনের বিশাল বহরগুলো চষে বেড়াতো মহাজাগতিক সমুদ্রে। আমরা হয়তো অবস্থান করতাম আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতার মিলন-মেলাতে।
রচনাকাল: ১৯৯৮
লেখক পরিচিতি: বিজ্ঞান বক্তা ও লেখক।
আমি অনেক ভাগ্যবান যে আসিফ ভাইয়ের মত একজন মানুষের সংস্পর্শে আসতে পেরেছি। সবসময় বিজ্ঞানের প্রতি অনেক ভালবাসা এবং পড়াশোনার আগ্রহ । বিশেষ করে ২০০৭ সালে যখন মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ পেলাম তখন থেকে আরও বেশি । ঢাকাতে আসার পর যখন আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম, কথা শুনলাম তখন থেকে মনে হল আমরাই পারি বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে।তখন থেকে আসিফ ভাই এবং ডিসকাশন প্রোজেক্ট এর সাথে আছি। আসিফ ভাইয়ের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ এজন্য যে তার মত উচু অবস্থানের মানুষ এত সহজে আমাকে আপন করে নিল।
অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটা পোস্ট। বন্যার কাছে আগেই শুনেছিলাম আসিফের কথা, শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। পড়ে আরো ভালো লাগলো। বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ছোটদের কাছে নিয়ে যাওয়া খুবই দরকারী একটা কাজ। বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম এভাবেই তৈরি হবে। আসিফ এই কাজটা নিষ্ঠার সাথে করছেন নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও। আসিফকে স্যালুট।
আসিফ ভাই, কেমন আছেন?
অনেক দিন পর আপনাকে নেট এ পেলাম। লেখাটি আগে পড়েছি। এখনো পড়লাম। আমি নিয়মিত মুক্তমনা পড়ি। আপনাকে পাবো সবসময় আশা করছি।
@kabir bitu,বিটু এটা শতাব্দীর কাজ। এটা চলত েথাকব।ে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়টা কেমন নষ্ট হয় গেছে। হাটা যায় না। লখোটা পড়ার জন্য তোমাক েধন্যবাদ। ভালো থকোে
১৮ বছর ধরে এক জেলা থেকে আরেক জেলায়, এক শহর থেকে আরেক শহরে, কখনো দ্বীপাঞ্চলে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমি যখন ঘুরে বেড়াই তখন মহাদেশ থেকে মহাদেশে ঘুরে বেড়ানোর অনুভুতি কাজ করে আমার মধ্যে। আর কিশোর-তরুণদের প্রশ্নের মুখোমুখি হলে এমন এক ধরনের আবেগ ঘিরে ফেলে যা আমাকে নিয়ে যায় থেলিস, পিথাগোরাস, ডেমোক্রিটাস, এমপিডকলেস আর অতীশ দীপঙ্করের কাছে। মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে দাড়িয়ে শুনতে পাই সেই সব মানুষদের রক্তের স্পন্দন যাদের কাছে এই পৃথিবী ঋণী।
ডিসকশন প্রজেক্ট ঃ একটি স্বপ্ন লেখাটার আপনাদের আলোড়িত করেছে। আপনাদের একাত্মতা ও অনুভূতি প্রকাশ আমাদের চলার পথকে অনুপ্রাণিত করবে। ডিসকাশন প্রজেক্ট নিশ্চয় আরো কিছু সহযাত্রী পাবে। আপনাদের ধন্যবাদ
@ আসিফ, আপনি যা থেকেই আবেগাপ্লুত হন না কেন, আমি কিন্তু আপনাকে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটা ব্যবহার করতে দেখেই যার পর নাই আবেগে আপ্লুত হয়ে যাচ্ছি। আপনি যে কোনদিন ব্লগে অংশগ্রহন করবেন সেটা ভাবাটাই আমার জন্য অকল্পনীয় ছিল।
আর আপনার ব্লগিং আমাকে নিয়ে যাচ্ছে জাষ্টিন হল, স্টিভ জবস্ বা ল্যারি পেজ এর যুগে :rotfl: ।
@বন্যা আহমেদ,
বন্যা আপা, আসিফ ভাইকে ব্লগে লিখতে, ব্লগের সাথে যুক্ত করতে আমি ম্যালা চেষ্টা করেছি। পারি নাই। তাছাড়া, অফিসিয়াল কারণে বেশি ব্যস্ত থাকার কারণে তার সাথে আগের মতো আর দেখা-সাক্ষাৎ নাই। সেজন্য মূর্শেদ ভাইয়ের কনভার্টার লিংক দিয়ে আমি খালাস হৈছিলাম। তবে আপনি আর অভিজিৎ দা মিলে তাকে যে ব্লগে আনতে পারলেন, সেজন্য আপনাদের অভিনন্দন।
ডিসকাশন প্রজেক্টের ১৮ বছর পূর্তি নিয়ে আমি একটা লেখা লিখছিলাম। সেটা আসিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলে মুক্তমনায় দিতে এসে দেখলাম, রেজিস্ট্রেশন করে লেখা দেয়ার অপশন নাই। রণদাকে ফোন দিলাম। উনি বললো, মেইল করে দিতে। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। ভাবলাম আজকে যদি না আসে, তাহলে তো মুশকিল। তাই সামুতে দিলাম। সচলে দিই নাই, সচলের প্রথম পাতায় আমার আরেকটা লেখা ছিল। লেখাটার লিংক দিলাম এখানে। http://www.somewhereinblog.net/blog/PanthaRahmanReza/29158319
লিংক দেয়াটা যদি প্রচার মনে হয়, তবে মডারেটরদের অনুরোধ, লিংকটা ডিলিট করে দিবেন।
@পান্থ, আপনার সাথে দেশে সেই যে দেখা হল তারপর আর কোন যোগাযোগই নেই, অবশ্য আসিফের কাছ থেকে আপনার কথা শুনেছি মাঝে মধ্যে। আজকেও আসিফের সাথে কথা হল, এবার মনে হয় সে ফাইনালি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার উপযোগিতা বুঝতে শুরু করেছে, তার ফিলসফিকাল জগৎ থেকে একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতায় ফেরত আসতে শুরু করেছে 🙂 । মুক্তমনায় এই লেখাটায় বিভিন্ন মানুষের মন্তব্য দেখে মনে হল অনেকেই তাকে চেনে, অবশ্য এখানে বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি বা পড়তে পছন্দ করে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশী, তাই আমার স্যম্পলিং এরর ও হতে পারে।
মুক্তমনার মডারেটরদের অনুরোধ করছি পান্থকে ইউজার আইডি/পাস ওয়ার্ড পাঠাতে। আশা করি আপনাকে মুক্তমনায় পাবো।
ওহ আচ্ছা, আসিফ বললো মহাবৃত্ত বেড়িয়ে গেছে। আসিফ সময় পাচ্ছে না মুক্তমনায় দিতে, আপনি একটু দিয়ে দেন না, কভার পেজটা, কোথায় পাওয়া যাবে, কি কি লেখা আছে এইসব নিয়ে একটা লেখা এখানে। তাহলে দেশের আগ্রহী পাঠকেরা কিনে নিতে পারতো, শুনলাম খুবই ভালো মানের পত্রিকা হয়েছে নাকি।
@বন্যা আহমেদ,
বন্যা আপা, এই বিপদে ফেললেন। এখন মহাবৃত্ত বিষয়ে আসিফ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তার ‘সেই’ লেখাটার কথা বলবেন। আমি তো সেটা আধখেঁচড়া অবস্থায় রেখে দিয়েছি, এখনো শেষ করতে পারি নাই। 🙂
মহাবৃত্ত পত্রিকাটা মফিদুল হকের অফিসে মেকাপ দেওয়ার সময় দেখেছি মাসখানেক আগে। কারা লিখছেন, তার তালিকাটাও তখন দেখা হয়ে গেছে। তিনচারদিন আগে আসিফ ভাইয়ের সাথে সর্বশেষ কথা অনুযায়ী এখন বাজারে আসার কথা। বলছিলেন, আজিজের তক্ষশীলায় পাওয়া যাবে। দাম ১৬০ টাকা। পত্রিকাটা হাতে পেলে একটা রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
@পান্থ ,
মুক্তমনায় স্বাগতম। দেখেন তো এডমিন ব্যাটায় আপনাকে ইউজার আইডি পাসোয়ার্ড পাঠাইসে কিনা। না পাঠাইলে জানান দিয়েন। 🙂
সায়েন্স ওয়ার্ল্ডে আপনার বিজ্ঞানের লেখাগুলো খুব দুর্দান্ত ছিলো। সেরকম কিছু লেখা কিন্তু এখানেও কামনা করি।
@অভিজিৎ দা,
অ্যাডমিন দেখছি ব্যাপক করিৎকর্মা! ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়া দিছে। 🙂 আমিও সেটা হালনাগাদ করে নিছি। 😀 হুম, চেষ্টা থাকবে লেখালিখির।
ডিস্কাশন প্রজেক্টের ১৮ বছর পূর্তিতে অভিনন্দন। :rose2:
আশা করি মুক্তমনায় আসিফ ভাইকে নিয়মিত পাব।
আসিফ ভাই হোক আমাদের প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশে কেউ যে গাঁটের পয়সা খরচ করে এমন কথাবার্তা শুনতে আসে তা আমারও ধারনার বাইরে ছিল। আমি নিজেই বিদেশের মাটিতেও পিজা বা স্ন্যাক্সের টোপ না থাকলে এ জাতীয় অনুষ্ঠানে যেতে তেমন আগ্রহ বোধ করি না দেখেই মনে হয় 🙂 ।
ভাল লাগল আমাদের দেশেও এক প্রকৃত জ্ঞান পিপাসু মানুষজন আছেন দেখে, তারা হয়ত সবসময়ই ছিলেন। কেউ হয়ত আগে তাদের সংঘবদ্ধ করার তেমন কার্যকরি উদ্যোগ নেয়নি।
আসিফকে অভিনন্দন।
খুব ভালো লাগলো আপানার লেখাপড়ে। মুক্তমনায় আপনাকে নিয়মিত পাব আশাকরছি।
আর আপনাদের বক্তৃতার সময়সূচী যদি এখানে আপডেট দেন তাহলে উপকৃত হতাম।
আসিফ ভাই, শেষতঃ আপনাকে মুক্তমনায় দেখে ভালো লাগলো।গতবার দেশে গিয়ে অনন্ত ও চিম্ময়সহ আপনার বাসায় যাওয়া,বিজ্ঞান ও দর্শন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা তারপর হঠাৎ করে ভাবীর মিষ্টি হাতের ছোয়ায় আমাদেরকে এতো আপন করে দুপুরের খাওয়া যেভাবে খাওয়ার টেবিলে পরিবেশন করলেন তা কোনোদিন ভূলার নয়।ভাবীকে শুভেচ্ছা দিবেন।
বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও ধ্র্মীয় অন্ধকারের যে বর্বর সময় কালের গর্ভে অতিক্রম করছে সেখানে আপনাদের মতো কিছুলোক মিট মিট করে নিভু নিভু আলোর মশাল নিয়ে সকল কূপমন্ডুকতার বি্রুদ্ধে যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য ওই অন্ধকারের ভেতর থেকে জেগে উঠা আলোকিত মানুষগুলো আপনাদের কাছে আজীবন ঋনী থাকবে।
ডিস্কাশন প্রজেক্টের ১৮ বছর পূর্তিতে অভিনন্দন। :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2:
আসিফ ভাই, আপনার ডিসকাশন প্রজেক্ট সম্পর্কে আগে জানা ছিলনা। এতদিনে মনে হচ্ছে আমার অশেষ কৌতুহল নিবারনের একটা মোক্ষম স্থানের সন্ধান পাইছি।
আবার কবে ডিসকাশন হবে? কোথায় হবে? আমি অংশগ্রহন করব। শুধু আমিই নই, আমার যত বন্ধু আছে যারা ধর্মগ্রন্থের মধ্যেই জগতের সকল জ্ঞান নিহিত আছে, এই ধারনা পোষন করে বসে আছে তাদেরকেও নিয়ে আসার চেস্টা করব।
আপনার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু কখনও আপনার সাক্ষাত পাবার সৌভাগ্য হয়নি। তবে এবার মনে হচ্ছে হবে।
ভালো থাকবেন।
পাঠকদের অনেকেই হয়তো জানেন না যে, আসিফের হাতে গড়া ডিস্কাশন প্রজেক্টের আজ ১৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। বাংলাদেশে বসে আসিফ তরুণদের নিয়ে বিজ্ঞান চেতনার যেভাবে উন্মেষ ঘটিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে বিরল এবং প্রেরণাদায়ক।
আমার মনে আছে আমার প্রথম বই আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী লেখার সময় হঠাৎ করেই হাতে এসেছিলো আসিফের মহাজাগতিক আলোয় ফিরে দেখা বইটি। অভিভুত হয়েছিলাম পড়ে। আমি তখন দেশের বাইরে। কিন্তু বইটির বিষয়বস্তু এবং সর্বোপরি লেখনী কৌশল এত বেশি প্রভাবিত করেছিল আমায় যে তাকে অভিবাদন জানিয়ে বড় একটা ইমেইল করেছিলাম। শুধু তাই নয়, আসিফের ফোন নম্বর যোগাড় করে ফোনই করে ফেললাম একদিন। আমি সাধারণতঃ এই যোগাযোগের ব্যাপারে খুবই খারাপ । কাউকেই আগ বাড়িয়ে ফোন টোন করা হয়ে উঠে না কখনো। আসিফের ব্যাপারটা এতোটাই ব্যতিক্রম ছিলো আমার জন্য যে আমার নিজেরও অবাক লেগেছিল। চিনি না জানিনা একজন লোককে এভাবে ফোন করেছি বলে মনে পড়ে না। এটার একটাই কারণ – আসিফের এই ধরণের কিছু অসামান্য লেখনী এবং বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি। অপার্থিব লেখকের অনুভূতির সাথে যেভাবে সম্পূর্ণ একাত্মতা বোধ করছেন, আমিও ঠিক একইভাবে একাত্ম হয়ে যাই আসিফের মহাজগৎ নিয়ে আলোচনা আর লেখায়।
তারপর আরো অনেকদিন চলে গেছে। বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশে গিয়ে আসিফের সাথে দেখা হয়েছে, কাজ নিয়ে কথা হয়েছে, কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তার বক্তৃতা শোনা হয়ে উঠেনি। কিংবা যে সামান্য সময়টুকুতে বাংলাদেশে থাকার জন্য যেতাম সে সময় বক্তৃতার কোন সিডিউল আসিফের ছিলো না। আমার মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে আর বন্যার বিবর্তনের পথ ধরে বইগুলো যখন বেরিয়েছিলো, তখন আসিফ বইগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, সেগুলোর রিভিউয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন সায়েন্স ওয়ার্ল্ড পত্রিকায়। সায়েন্সওয়ার্ল্ডের সম্পাদক ছিলেন তিনি। কোন বিজ্ঞানের পত্রিকা এত জনপ্রিয় কখনো হয়নি, আসিফ সায়েন্স ওয়ার্ল্ড নিয়ে যা করতে পেরেছিলেন। এই কয়দিন আগেও ডারউইন দিবস পালনের কথা উঠলে আমাদের সকলের লেখা নিয়ে দৈনিক সমকালে কালস্রোতের এক স্পেশাল এডিশন বের করলেন আসিফ। সব মিলিয়ে আসিফের তুলনা আসিফ নিজেই!
এই দিনে আসিফ এবং তার ডিস্কাশন প্রজেক্টের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। ডিস্কাশন প্রজেক্টের ১৮ বছর পূর্তিতে আবারো অভিনন্দন।
আসিফ, এভাবে টিকেটের বিনিময়ে বাংলাদেশ মানুষ যে বিজ্ঞান বক্তৃতা শুনতে আসতে পারে সেটা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত। ডিসাকাশন প্রজেক্টের ১৮ বছর পূর্তিতে অভিনন্দন রইলো।
ইশশ, এটা কি বললেন, আমি তো আরও ভাবছিলাম বিবর্তনের ধারায় ‘মানুষ আসলে যে পশুই’ এটা নিয়ে মোটাসোটা একটা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখবো, দিলেন তো সব মাটি করে 🙂
@বন্যা আহমেদ,
“পশুর সাথে আমাদের পার্থক্য কি?” না বলে যদি আসিফ বলতেন “মানুষ পশুর সাথে অন্য পশুর পার্থক্য কি?” তাহলে এই সমস্যাটা হত না। উনি ওটাই বলতে চেয়েছেন বলে আমরা না হয় মনে করে নেই। তাতে দোষ কোথায়?
@অপার্থিব, @অপার্থিব,
আসলে মন্তব্যটা নিতান্তই ফাজলামি ছিল, আসিফের সাথে দুই একটা সারকাস্টিক/ফালতু/গুতাগুতি মার্কা কথা না বলে কোন আলোচনা করা আমার পক্ষে খুব কষ্টকর। সে জন্যই স্মাইলি দিসিলাম, নাহহহহহ, এরম কোন প্রবন্ধ লেখারও প্ল্যান ছিল না… :-Y । আসিফ কিন্তু খুব সিরিয়াস বিবর্তনবাদী, তাই আজাইরা ওরে খোঁচাইতেসিলাম, কিছু মনে নিয়েন না… 🙂 .
খুবই প্রেরণাদায়ক লেখা। লেখকের অনুভূতির সাথে সম্পূর্ণ একাত্মতা বোধ করছি। লেখক নিজে সক্রিয়ভাবে প্রজেক্ট এ জড়িত হয়ায় লেখাটার আকর্ষণ ও গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এটা করে কি লাভ এই ধরণের প্রশ্ন খুবই ব্যাপক। তাদেরকে এই পাল্টা প্রশ্নও করা যায়, কবিতা লিখে, গান গেয়ে কি লাভ? ইতিহাস পড়ে কি লাভ? ধুম ধাড়াক্কা মার্কা হিন্দি চ্যানেল দেখে কি লাভ? এগুলি যদি বিনোদন হতে পারে তাহলে জ্ঞানের বিষয়ে লেখা, পড়া বা আলোচনা করা এগুলো বিনোদন হতে পারে না কেন? আগেরগুলির ব্যাপারে তাঁরা তো এই ধরণের প্রশ্ন করেন না। জ্ঞানের ব্যপারেই এই বিমাতাসুলভ মনোভাব। আমার মনে হয় বৌদ্ধিক হীনমন্যতার কারণেই এই মনোভাব। যাহোক একটা অনুরোধ এই ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক মনোভাবে মুখেও যেন হতাশ হয়ে এই মহতী কাজে ক্ষান্ত দেবেন না। আর একটা অনুরোধ হল এর পর কোন বক্তৃতা/আলোচনা হলে এই ব্লগে তার সময় স্থান আগাম জানিয়ে দেবেন। এতে যে ব্লগ সদস্যরা বাংলাদেশে থাকেন বা ঐ সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তারা এতে অংশ নিতে পারেন। অনেক ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখার জন্য।
আসিফ,
অভিনন্দন আপনাকে!
দেশে আপনার মত অসংখ্যজনের বড় প্রয়োজন!
ডিসকাশন প্রজেক্টের বহুল পরিচিতি হোক!
@লাইজু নাহার, আপনার কথায় আমি আবেগ অনুভব করছ। আমরা আসলে প্রত্যেকেই তার নিজস্ব জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেটাকে অনুধাবন করাটাই জরুরী। ভালো থাকবেন।
“আজকালও এরকম অসংখ্য নির্বোধ আছে যারা জ্ঞানার্জনকে হাতেনাতে লাভজনক হিসেবে দেখতে চায়। তারা এতে সফল হলে জ্ঞান অর্জন বিযয়টা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হবে। আমাদের দেশে তার চরম বিকাশ ঘটেছে। আমরা নাম্বারবাজ জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছি যার সমর্থন যোগাচ্ছে আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতি। এটা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে জ্ঞান অর্জন বিযয়টা পুরোপুরি অর্ন্তধানের পথেই।”
আপনি ঠিকই বলেছেন। আজকাল যখন একজন ছাত্র প্রচুর পড়াশুনা করে GPA 5 পায় আর একজন ছাত্র যৎসামান্য পড়াশুনা করে GPA 5 পায় তখন নির্বোধেরা বাহ্যিক GPA 5 ই দেখে, পড়াশুনার মাধ্যমে অন্তরে বিকাশিত জ্ঞানের খবর কে আর রাখে?
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আর কি বলব। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মানে মুক্তমনে জ্ঞানার্জন করা, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা হচ্ছে কিছু নোট গলাধঃকরন কর আর পরীক্ষার খাতায় উগরিয়ে দাও।
আর system টাই এরকম যে কিছু মেধাবী ছাত্র ছাড়া বাকিদের আর কিছু করারই থাকে না।
আসিফদা, আপনাদের মাসিক বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন “সায়েন্স ওয়ার্ল্ড” আমি নিয়মিত পড়তাম। “সায়েন্স ওয়ার্ল্ড” হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল কেন?
@রনবীর,
শুধু একটি সুষ্ঠ শিক্ষানীতির কারণে একটা দেশেরে অবস্থা এরকম হতে পারে বাংলাদেশ তার প্রমাণ। যে দেশের রাজনীতিবিদদের আমরা দোষ দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন যখন বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাক্তি হিসেবে যাদরেক চিনি তারাও এমন এক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে তাতে কোনো শিশুর শৈশবকাল থাকে না। পঞ্চম শ্রেণীতে পরীক্ষা তার বাস্তব প্রমাণ। আমরা যদি নোয়াম চমস্কি এবং স্টিফেন পিঙ্কারের কাছে ফিরে যাই তাহলে দেখাবো কত বড়ো ভুলের মধ্যে বসবাস করি। যে জাতির শৈশবকাল থাকে না তার কোনো ভবিষ্যত থাকে? নিশ্চয় আগামীতে আমরা সম্মিলিতলতভাবে কাজ করবো; ভালো থাকবেন।
আসিফ ভাই, সম্ভবত মুক্তমনা বাংলা ব্লগে আপনার কোন লেখা আমি প্রথম পড়লাম। খুব ভালো লাগলো, শুধু লেখার গুণেই নয়, আমিও মাঝে মাঝে এরকমই অদ্ভুত ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হই বলে। দুঃখ হয় যখন অফিসের সহকর্মীরাই বলে- ‘এই যে এসব লেখালেখি করেন, তাতে দু-পয়সা আয় হয় ? কী হবে এসব করে ! তারচে’ পারলে কিভাবে টাকা রোজগারের উপায় হয় সেটা করেন।’
এরা কি ভালোবেসে করে, না কি বিদ্রূপ করে, বুঝি না। হয়তো ঝাঁঝের সাথে উত্তরও দেই- পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে নিজের স্বার্থ না-ভাবা কিছু আজাইরা মানুষ ছিলেন বলেই আপনারা আজকে এই সুশোভিত অফিসে বসে সমস্ত আধুনিক সুবিধা ভোগ করতে করতে নির্দ্বিধায় জ্ঞান ছড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন !’
আর মনে মনে বলি- ‘গরু-ছাগলরাও বোধ করি এতোটা আত্মকেন্দ্রিক হয় না !’
অথচ এরাই হচ্ছে আমাদের দেশ ও দশের ভাগ্যবিধাতার পর্যায়ের তথাকথিত হোমড়া-চোমড়া ব্যক্তিবর্গ। হাহ্ !
মাঝে মাঝে আপনাকে এখানে পেলে খুব ভালো লাগবে আসিফ ভাই। সম্ভবত এই জায়গাটাও আপনার ডিসকাশন প্রজেক্টের বাইরে থাকা কাম্য নয়।
ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
@রণদীপম বসু,
এভাবে ভাবাটা ঠিক না। আমি পেশার থেকে অনেক বেশী সময়, লেখাতে দিয়েছি-কিন্ত আমাদের কর্ম যতক্ষন না ইকনমিক সিস্টেমের সাথে যুক্ত না হচ্ছে, তা খুব একটা ইম্পাক্ট করতে পারে না। তাছারা সোশ্যাল মিডিয়াই ভবিষ্যতের মিডিয়া-এবং ব্লগার রাও আস্তে আস্তে পেইড ব্লগার হবে। যেটা আমেরিকাতে হচ্ছে।
@বিপ্লব পাল,
”
আপনার কথার সাথে সহমত পোষন করছি। :yes:
“আজকালও এরকম অসংখ্য নির্বোধ আছে যারা জ্ঞানার্জনকে হাতেনাতে লাভজনক হিসেবে দেখতে চায়। তারা এতে সফল হলে জ্ঞান অর্জন বিযয়টা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হবে। আমাদের দেশে তার চরম বিকাশ ঘটেছে। আমরা নাম্বারবাজ জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছি যার সমর্থন যোগাচ্ছে আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতি। এটা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে জ্ঞান অর্জন বিযয়টা পুরোপুরি অর্ন্তধানের পথেই”
অত্যন্ত গুতুত্বপুর্ণ কথা।
@আফরোজা আলম,লেখোটাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল। যোগাযোগ থাকবে।
@রণদীপম বসু,
নিশ্চিয়ই অমরা এ অবস্থা থেকে েবের হয় েঅসেবো। অাপনার শুভ কামনাই তার ইইঙ্তি।যোগাযোগ অব্যহত থাকেব।ে