ব্রামাকা পরিবারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো আরবদের নিকট থেকে পারসীয়ান সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার-যদিও তা ব্যর্থ হয়, তথাপি তারা আরব সমাজে তাদের পারসীয়ান সংস্কৃতি, রীতি-নীতির এমন প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলো যে বিশেষ করে কোরানে বর্ণিত যে ইসলাম মুহম্মদ (সাঃ) প্রচার করেছিলেন তার সম্পূর্ণটা পরিবর্তন করে এক নতুন আজামি বা অনারবীয় ইসলামের প্রচার শুরু করেন। তবে এর সূত্রপাত ঘটে আবু মুসলিম খুরাসানির মাধ্যমে যিনি একজন পারসীয়ান ছিলেন। তিনি আব্বাসীয় রাজত্বে অনারবীয় সৈন্য দলে অনেক পারসীয়ানদের নিযুক্ত করেন। খালিদ ব্রামাকা এভাবেই আবু মুসলিমের মাধ্যমে সৈন্য দলে যুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে প্রশাসনিক কার্যালয়ে অন্তর্ভূক্ত হন। ফজল ব্রামাকার মন্ত্রীত্ব কালে খুরাসান প্রদেশের সৈন্য দলে অনেক পারসীয়ানকে নিয়োগ দান করেন। ব্রামাকারা বিশেষতঃ প্রশাসনিক কার্যালয়ের পদগুলিতে কে নিয়োগ পাবে তা নির্ধারন করতেন। অর্থমন্ত্রনালয়ও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো, এমনকি খলিফা হারুন রশিদকেও রাজকোষের অর্থ খরচের জন্য তাদের অনুমতির প্রয়োজন পড়ত। যখন ইমাম মুহম্মদ বিন আলী আব্বাস মৃত্যূ বরন করেন তখন আবু মুসলিম তার শোক দিবস পালন উপলক্ষে সৈন্য দলের ইউনিফর্ম কালো পড়তে নির্দেশ দেন এমনকি প্রদেশের সব কিছু কালো কাপড়ে আচ্ছাদনের নির্দেশ দেন। শুধু তাই না সাধারন জনগনকেও কালো কাপড় পরিধান করতে বলা হয়। দেখা যায় যে, আবু মুসলিম আব্বাসীয় সময়ের জনগনের বাইরের রুপটি পরিবর্তন করেন আর ব্রামাকারা তাদের চিন্তাধারা, রীতি-নীতি এমনকি জীপন-যাপনের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনেন। খালিদ ব্রামাকার মন্ত্রীত্বের সময় প্রথম পারসীয়ান ‘নওরোজ’ অনুষ্ঠান প্রদর্শিত হয়; এরপর থেকে এটা রাজ্যের একটা স্হায়ী অনুষ্ঠান হিসেবে প্রাধান্য পেতে থাকে। আর জা’ফর ব্রামাকা ‘জাশানে মেহার জান’ নামে আরেকটি পারসীয়ান অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু করেন।
অনেকেই মনে করতেন ব্রামাকারা শিয়া দলের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন, কিন্তু তারা শিয়া বা সুন্নী কোনটাই ছিলেননা। তারা আদর্শ, বিশ্বাস এবং রীতি-নীতিতে যরোয়াস্ট্রিয়ান ছিলেন। আবু মুসলিম খুরাসানী বা ব্রামাকারা একসময় আব্বাসীয় রাজ্য থেকে হারিয়ে যায় বটে কিন্তু তাদের বপিত ইসলামের বীজ চারিদিকে ছড়াতে শুরু করে, এমনকি রাজ্যশক্তি কেন্দ্রীয়ভাবে দুর্বল হতে থাকে এবং অন্যদিকে প্রাদেশিক শক্তি বাড়তে থাকে।
‘দিয়ালাম’ বলে পারস্যের একটি অংশ খলীফা ওমরের সময় আরবরা জয় করে; সেখানকার অধিবাসীগণ প্রথমদিকে নিজেদের ধর্ম পরিবর্তন না করলেও পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহন করে। এই অঞ্চলের অধিবাসী ‘বাওয়াইয়া দালমি’ একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি এবং তার পুত্রগণ প্রথম পারস্যের একটি প্রদেশে ভিন্ন রাজত্ব গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে ইরাকের কিছু অংশ যুক্ত করেন এবং সর্বশেষে বাগদাদ আক্রমণ করেন (৩৩৪ হিজরী)। এই দিকে আব্বাসীয়দের ক্ষমতা সে সময়ে এত দুর্বল অবস্হায় পৌঁছে যে খলীফা মুকতাফি যুদ্ধ না করে বরং তাদের শাসন ক্ষমতাকে মেনে নেয়। সেই সময় থেকেই খলীফাদের নাম শুধুমাত্র ধর্মীয় গুরু হিসেবে সন্মিলিত প্রার্থনার সময় খোতবায় পাঠ করা হতে থাকে। খলিফা মুকতাফিকে বাগদাদ আক্রমণের চল্লিশদিন পরেই হত্যা করা হয়।
এই বনি বাওয়াইয়ারা শিয়া দলের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তাদের রাজত্ব ৪৪৭ হিজরী পর্যন্ত টিকে থাকে এবং এর পর সলোজকারা ক্ষমতায় আসে। সলোজকর রাজত্বের ৬০ বছর পর্যন্ত আব্বাসীয় খলিফাদের নাম জুম্মার নামাজের খোতবায় পাঠ করা হয়। অবশেষে চেংঙ্গীজ খানের পুত্র হালাকু খান ক্ষমতা দখল করে। আবু আল কামী সে সময় বাগদাদের মন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি একজন ‘ঘালি শিয়া’ ছিলেন। অন্যদিকে হালাকু খানের মন্ত্রী নাসিরউদ্দিন তুসীও একজন ‘ঘালি শিয়া’ ছিলেন। এই দুই মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রে তখনকার খলিফা মুস্তাসামকে হত্যা করে আব্বাসীয় রাজত্বের (৬৫৬ হিজরী) অবসান ঘটানো হয়।
পারসীয়ানরা এভাবেই তাদের হারানো রাজত্ব ফিরে পায়। হুসায়েন কাজিমযাদা ইরানের একজন পরিচিত ইতিহাসবিদ। তিনি তার বই ‘তাজাল্লিয়াত-ই-রুহ-ই-ইরান দার আরদোয়ার-ই-তারিখী’তে বলেনঃ “When Sa’ad bin abi Wqas, as a representative of the second Caliph (Hazrat Omar) conquered Iran, the Iranians since then had nurtured feelings of jealousy and revenge within themselves, which were expressed off and on in different forms, until they completely surfaced with the foundation of the Shia sect. The well informed people know very well and agree that in the foundation and appearance of Shiaism, in addition to the ideological differences, there is also a political element. Iranians could neither forget nor forgive that a handful of barefoot desert people of Arabia conquered their ancient kingdom, looted its treasures and killed so many innocent people.”
হুসায়েন কাজিমযাদা আরো লিখেছেন যে তাদের পূর্ব পুরুষদের মনে বনি ফাতিমা এবং তার বংশধরদের জন্য কোন ভালবাসা ছিলনা, এমনকি বনি উমাইয়াদের সাথেও কোন শত্রুতা ছিলনা। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো যেমন করেই হোক এই আরব শাসকদের উপড়ে ফেলে তাদের হারানো সাম্রাজ্য ফিরিয়ে আনা। কিন্তু হাশিমীয় রাজত্ব প্রায় হযরত আলীর মৃত্যূর সাথে সাথেই সমাপ্তি ঘটে এবং এরপর উমাইয়া রাজত্ব শুরু হয় যা সম্পূর্ণভাবে আরবদের ক্ষমতায় চলে যায় এবং ইসলামকে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এরফলে অনারবীয়গণ নতুন পথ বের করে—হাশিমী বংশের পুনরুদ্ধারে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় আর ক্ষমতায় থাকা শাসকের বিরুদ্ধে মদদ দিতে থাকে। এভাবেই হাশিমীদের সাহায্য করে যখন বনি উমাইয়াদের রাজত্ব শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসে, তখন আব্বাসীয় বংশ যা একসময় হাশিমী বংশের অংশ ছিলো তা আলাদা হয়ে যায় এবং রাজত্ব দখল করে। এই আব্বাসীয় বংশকেই কুপোকাত করে হালাকু খান পারসীয়ান রাজত্বকে আরবদের হাত থেকে মুক্ত করেন।
তথ্য সূত্রঃ ‘কন্সপিরেসিস এগেইন্সট দ্য ইসলাম’ —- ড. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ
বুঝতে পারছি না লেখিকা এখানে আসলে কাদের ইতিহাস আলোচনা করছেন? মুসলমানদের গৌরবের নাকি পার্সিয়ানদের ক্ষমতা দখল করার চেষ্টার?
একটু পরিষ্কার করলে ভাল হত।
এ লেখাটা অনেক দিন যাবত মন্তব্য বিহীন হয়ে আছে। ভালো মন্দ পরে কিন্তু,একজন লেখক কস্ট করে লিখলেন অথচ মন্তব্য শূন্য থাকছে।কেমন খাপছাড়া দেখায়। আমি যতোটুকু বুঝলাম একটা ঐতিহাসিক
পটভুমিকাকে রূপ দিতে চেয়েছেন। চেষ্টাটা অতোটা সফল না হলেও ভালো লাগলো ।