(Excessive Religious Zeal and Conservatism May Lead to Extremism)
এস.এম. আমার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। টেলিফোনে প্রায় কথা হয়। এস.এম.ই ফোন করে। আমার অনেকগুলো দোষের মধ্যে একটা হলো কাউকে ফোন না করা। একবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার মত উন্নত একটা দেশে বাস করেও আমি সেল্ফোন ব্যবহার করিনা। টুকটাক দরকারি ফোন-টোন যা করা লাগে, তা বাসার ল্যান্ড ফোন থেকেই সেরে ফেলা যায়। “ও তো এখন বাসায় নেই, কোনো মেসেজ দিতে হবে?” কিম্বা “ড্যাড্ বাসায় নেই, মসজিদে গেছেন; আসলে কিছু বলতে হবে?”- এ জাতীয় রিজোনিং বা এক্সকিউজগুলো কেবল ল্যান্ড ফোনের সুবাদেই আমাকে অসংখ্য খেজুরে আলাপের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়। সেল্ফোন সাথে থাকলে এসব এক্সকিউজের সুযোগ থাকতোনা নিশ্চয়। অবশ্য আমার ফোন না করার ঘাটতি আমার স্ত্রী অনেকাংশে পুষিয়ে দেন। তার সেল্ফোন ছাড়াও বাসার ল্যান্ড ফোনে ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল কি সব আন্লিমিটেড সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডাসহ বাংলাদেশে এবং সাথে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন করা যায়। মজার ব্যাপার হলো, টেলিফোনে প্রায় নিয়মিতই আমার পরিবারের সদস্যদেরসহ আমার ঘনিষ্ট বন্ধুদের স্ত্রীদের সাথে কথা বলেন আমার স্ত্রী, যা আমাকে ‘অসামাজিক’ খেতাব পাওয়া থেকে ক্রমাগত রক্ষা করে চলেছে।
এস.এম.-এর সাম্প্রতিক পরিবর্তন তার ও আমার বাড়তি ঘনিষ্টতার আরেকটা কারন। বুয়েটের একসময়ের প্রগতিশীল একটা রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির একজন ছাত্রনেতা, বিতার্কিক, তুখোড় প্রেমিক এবং ফটকাবাজ এস.এম.-এর ধর্মচর্চাহীন জীবন-যাপন থেকে সাম্প্রতিককালের ধর্মীয় জীবন-যাপনে উত্তরণ রীতিমত লক্ষ্যনীয় এবং অনেকের জন্যে শিক্ষনীয়ও। ধর্ম আমাদের বন্ধুত্বের সাম্প্রতিক গাঢ়ত্বে অন্যতম প্রভাবক। কেননা আমরা দুজনই মোটামুটি ধার্মিক। সমস্যা শুধু একটাই। ধর্মের ব্যাপারে আমার মডারেট এ্যাটিচিউড এস.এম.-এর একেবারেই পছন্দ নয়। তাতে অবশ্য আমাদের বন্ধুত্বে তেমন অসুবিধে হয়না; কেননা একতরফা বিতর্কে আমি বেশীরভাগ সময়ই নিরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করি। তাছাড়া টেলিফোনে তর্ক-বিতর্কের বাড়তি সুবিধা হলো প্রতিপক্ষের চেহারা দেখা যায়না। আমি নিশ্চিত, আমাকে ননস্টপ উপদেশবলী দেয়ার সময় আমার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে এস.এম. হয়ত চেপে যেতো।
যেমন, মওলানা আবুল কালাম আজাদের ব্যাপারটা, যিনি এনটিভি’র ‘আপনার জিজ্ঞাসা’ নামক ইসলামিক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। আমি বললাম, “লোকটাকে আমার পছন্দ নয়; কথাবার্তায় সবসময় কেমন যেন একটা এ্যারোগ্যান্ট-এ্যারোগ্যান্ট ভাব। তাছাড়া আমি কবে যেন একটা আর্টিকলে পড়েছি লোকটা নাকি একাত্তরে রাজাকার ছিল; তৎকালীন ‘বাচ্চু’ নামধারী এই লোকটা ফরিদপুরে মানুষ হত্যা, রেইপ্ করা থেকে শুরু করে এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা সেসময় করেনি”। ব্যস, এস.এম. আমাকে চেপে ধরলো, “ভদ্রলোক একাত্তরে নাকি একান্নতে কি করেছিল সেটা নিয়ে এখনও পড়ে থাকবি? তোরা কবে ওসব ছাইপাশ ইতিহাস ভুলে সামনের দিকে তাকাতে শিখবি? ভদ্রলোকের নলেজ দেখেছিস ইসলামে? তাছাড়া এমন সুন্দর সুন্দর যুক্তি দিয়ে সব কথা বলেন! যেন একেবারে মনের কথা। বাংলাদেশের ইসলামী সমাজে ওনার এখনকার কন্ট্রিবিউশনটাই বড় কথা। ওসব ইতিহাস খোঁচাখুঁচির দরকার কি? কে কবে কি করেছিল সেটা বড় কথা নয়, এখন কি করছে সেটাই ইম্পর্টেন্ট। তোদের এই এক দোষ, নিজেরা ইসলামের জন্যে ভাল কিছু করবিনা; আর ওনার মত পটেনশিয়াল কেউ তা করতে গেলে অমনি ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করবি। উনি আজ আমাদের দেশের অন্যতম একজন রিলিজিয়াস ফিগার। ওনার সম্পর্কে আন্দাজে এসব উল্টাপাল্টা বলা ঠিক না”। আমি মিনমিন করে বলতে গেলাম, “ঠিক আছে, লোকটা তোর-আমার মত রহিমউদ্দিন, করিমুদ্দিন হলে সমস্যা ছিলনা; কিন্তু উনি দেশের এতবড় একটা রিলিজিয়াস ফিগার বলেই না ওনার পেছনের ইতিহাস জানাটা গুরুত্বপূর্ণ!” উত্তরে ধমকে উঠলো এস.এম., আমাকে পাত্তাই দিলো না।
এবছর একুশে ফেব্রুয়ারী পড়লো রোববারে। মেট্রো ফিনিক্স-এর চ্যান্ড্লার শহরের একটা চার্চে একুশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো স্থানীয় বিভিন্ন বাংলাদেশী সংগঠন। সকাল এগারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান। প্রভাতফেরী এগারটায়। আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে সকাল সকালই পৌঁছে গেলাম। বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েকে আমাদের ভাষা, আমাদের দেশের কৃষ্টি এবং এসবের ইতিহাসের সাথে আরো একবার পরিচয় করিয়ে দেয়াটাও যাওয়ার আরেকটা উদ্দেশ্য। গতবছরও গেছি। প্রভাতফেরীর পর যখন গান-বাজনা শুরু হয়, তখন সাধারনত চলে আসি আমরা। এবারই শুধু ব্যতিক্রম। ‘শিকড়’ বাংলা স্কুলের ষ্টলে আমার প্রথম প্রকাশিত বই ‘রঙ দিয়ে যায় চেনা’ বিক্রি হচ্ছিল। কাজেই আমাকে প্রায় সারাদিনই থাকতে হলো অনুষ্ঠানে। পরের রোববারে এস.এম.-এর ফোন পেলাম- “কিরে, গত রোববার সারাদিন কোথায় ছিলি?” একুশের অনুষ্ঠানে ছিলাম শুনেই ফোড়ন কাটলো এস.এম.- “ও, তুইতো আবার ‘ম-দা-রে-ত’ মুসলমান, যাকে আরেক ভাবে বলা যায় ‘মদ’ খাওয়া মুসলমান। দিস্ ইজ প্লেইন্লি স্টুপিড। কাঠ-খড় আর কাপড় দিয়ে তিনটে খাম্বা বানিয়ে সেখানে ফুল দেয়ার যে কি মানে, তা আমার মাথায় আসেনা। দিনশেষে যেটা ভেঙ্গেই ফেলবি, সেটা বানানোরই বা দরকার কি? আর সেখানে ফুল দেয়ারই বা মানেটা কি? এ সবই আসলে হিন্দুয়ানী কালচার; পুজা দোস্ত, পুজা; দিস্ ইজ প্লেইন্লি পুজা। মূর্তি বানিয়ে পুজা করা আর মনুমেন্ট বানিয়ে ফুল দেয়া আসলে একই জিনিষ। আমার মাঝে মাঝে কি ইচ্ছে হয় জানিস? তোদের এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে যদি এক লাথিতে ওসব শহীদ মিনার-ফিনার ভেঙ্গে ফেলতে পারতাম, তাহলে হয়ত আরেকটু বেশী শান্তি পেতাম মনে”। আমি মিনমিন করে খানিকটা প্রতিবাদ করতে গেলাম পুজার ব্যাপারটা নিয়ে; এস.এম. এক ধমকে আমাকে থামিয়ে দিলো, পাত্তাই পেতে দিলোনা।
কি জানি, হয়ত এস.এম.-এর কথাই ঠিক। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়ত ধর্মীয়ভাবে ঠিকনা। আফ্টার অল, গান-বাজনা শুরু হওয়ার আগেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি যে বাসায় চলে আসি, তার কারনটাও তো ধর্মীয়ই। কোনো ওলামাকে কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি ধর্মীয়ভাবে ব্যাপারটা কতখানি ঠিক নাকি ঠিকনা। তবে বুদ্ধিগত দিক দিয়ে বিষয়টাকে দেখলে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এটাকে অনেকখানিই দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার বলে মনে হয়। আমি যে একুশের দিন শহীদ মিনারে যাই তাতেও যেমন আহামরি কোনো লাভ নেই, আবার এস.এম. যে শহীদ মিনারে যায়না তাতেও আহামরি কোনো ক্ষতি নেই। ব্যাপারটা রিলেটিভ এবং তত্ত্বগতভাবে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সাথে এর সম্পর্ক হওয়া উচিত বলে আমার ধারনা। সে অর্থে এস.এম.-এর সাথে এ বিষয়ে আমার কোনো মৌলিক দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। তবে সমস্যা হলো শহীদ মিনার বিষয়ে সামগ্রিক মনোভাবটা নিয়ে।
এস.এম. চরমপন্থী মনোভাবের ঠিক একধাপ পেছনে রয়েছে। এই ধাপটা ক্রস্ করলেই শহীদ মিনারে বোমা ফাঁটানো, প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহনকারীদেরকে শারিরিকভাবে আক্রমন করা, ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সহজেই যুক্তিযুক্ত ও স্বাভাবিক মনে হয়। লাথি দিয়ে শহীদ মিনার ভাঙ্গার বাসনা হওয়ার পরের ধাপটাই কিন্তু সর্বশেষ ধাপ, যা ভায়োলেন্ট। ধর্মচর্চাহীন জীবন-যাপন থেকে ধর্মীয় জীবন-যাপনে উত্তরণে এস.এম. একটা প্রসেস-এর ভেতর দিয়ে গেছে যেখানে ধর্ম নিয়ে যথেষ্ট পড়াশুনা করার পাশাপাশি আমাদের উপমহাদেশসহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অসংখ্য মুসলিম স্কলারদের বক্তৃতা সে শুনেছে (বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশে এবং ইন্টারনেটে)। এটা একটা প্রচলিত প্রসেস যার মাধ্যমে আধূনিক শিক্ষিত মুসলমানদের অনেকে ধর্মচর্চাহীন জীবন-যাপন ছেড়ে ধর্মীয় জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এবং তত্ত্বগতভাবে এতে ভাল ছাড়া খারাপ কিছু থাকার কথা নয়। কেননা, আমার নিজের ধর্মীয় জীবন-যাপনে পদার্পনও এই প্রসেসের মাধ্যমেই। তবে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, এই প্রসেসটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুটো ডিস্টিংক্ট (distinct) পথের যে কোনো একটাতে মানুষটাকে টেনে নিয়ে যায়। একটা পথ হলো, নিরীহ ধর্মপালনের একাগ্রতা বা উৎসাহ জাগা যা ক্রমে বৃদ্ধি পেলেও সাধারনত ভায়োলেন্ট মনোভাবের দিকে যায়না। পক্ষান্তরে, দ্বিতীয় পথটা শুরুতে নিরীহ ধর্মপালনের একাগ্রতা বা উৎসাহ জাগার মাধ্যমে শুরু হলেও ক্রমে তা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে প্রতিক্রিয়াশীলতা ও চরমপন্থার দিকে টার্ন নেয় যা মানুষটার মাঝে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি প্রচ্ছন্ন বা প্রকাশ্য বিদ্বেষের জন্ম দেয়। আর দুঃখজনক হলো, এই রোগ কেবল এস.এম.-এর একার মধ্যে নয়, বাংলাদেশী এবং নন-বাংলাদেশী- এদেশে বসবাসকারী অনেক মুসলমানের মধ্যেই আমি এহেন এক্সট্রিম মনোভাবের প্রাদূর্ভাব লক্ষ্য করেছি। সমস্যাটা সেখানেই। কেননা এই মনোভাবেরই পর্যায়ক্রমিক ও প্রক্রিয়াগত এ্যাড্ভান্স্ড্ রূপ হলো আজকের ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষ সমর্থন।
এবার তাসের অন্য পিঠটা দেখি। কবে যেন কার কাছে একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, “অন্যের পকেটের পয়সাতেই যখন খাবো, তখন ডাল-ভাত কেন? পোলাও-কোর্মাই খাই”। ক্রিশ্চিয়ান রেডিক্যালিজমে অধূনা কনভার্ট হওয়ার অসংখ্য উদাহরন যদিও খুঁজে পাওয়া যাবে আধূনিক সভ্যতার দেশ খোদ আমেরিকাতেও, তবে ছোট-খাট এসব উদাহরন না খুঁজে আমেরিকার একসময়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর মানুষটার কথাই ধরিনা কেন? যারা আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, জর্জ ডব্লিউ বুশ-এর রাজনৈতিক উত্থানের ওপর নির্মিত হলিউডের ‘W’ মুভিটা দেখেছেন, তাদের হয়ত মনে আছে, টেক্সাসের গভর্ণর নির্বাচিত হওয়ার প্রায় বছর আষ্টেক আগে বুশ কিভাবে ‘বিলি গ্র্যাম’ (Billy Graham) নামের একজন রেডিক্যাল প্রোটেস্ট্যান্ট প্রীষ্ট-এর (Protestant Priest) হাতে বায়াত হয়ে ধর্মীয় নবজীবন লাভ করেন (became a born-again Christian) এবং আমার বন্ধু, এস.এম.-এর মতই ধর্মচর্চাহীন জীবন-যাপন ছেড়ে ধর্মীয় জীবন-যাপন শুরু করেন। মজার ব্যাপার হলো, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশ, যিনি নিজে একজন মডারেট এপিস্কোপাল প্রোটেস্ট্যান্ট (Episcopal Protestant) ছিলেন এবং সেসময় সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্যে নিজেকে তৈরী করছিলেন, এভানজেলিক্যাল (Evangelical) খ্রীষ্টানদের ভোটব্যাংক-কে তার দিকে আকৃষ্ট করার জন্যে মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বিলি গ্র্যামের সাথে তার পরিবারের ঘনিষ্টতার সূত্রপাত করেন। দুঃখের বিষয়, বিলি গ্র্যাম একসময়ের মডারেট মেথোডিষ্ট প্রোটেস্ট্যান্ট (Methodist Protestant) জুনিয়র বুশকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন তার ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে রেডিক্যালিজমে কনভার্ট হতে যা পিতা সিনিয়র বুশ কল্পনাও করেননি এবং যা তাকে যার-পর-নাই উদ্বিগ্ন করেছিল জুনিয়র বুশের ভবিষ্যত ভাবনায় যা মুভিটাতে দেখানো হয়েছে। অবশ্য মতান্তরে শোনা যায়, বুশ নাকি তারও প্রায় বছর খানেক আগেই রেডিক্যালাইজ্ড্ হন ‘আর্থার ব্লেসিট’ (Arthur Blessitt) নামের আরেক রেডিক্যাল প্রীষ্ট-এর বক্তৃতা শুনে কিম্বা মতান্তরে তার সংস্পর্শে এসে। মজার ব্যাপার হলো, বিলি গ্র্যাম বা আর্থার ব্লেসিটকে তালেবান নেতা মোল্লা ওমর কিম্বা ইয়েমেনে নির্বাসিত মুসলিম রেডিক্যাল ধর্মনেতা আনোয়ার আওলাকী’র খ্রীষ্টান ভার্শন বললে মনে হয়না খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে।
ডব্লিউ বুশের ‘রিলিজিয়াস ফেইথ’-এর ওপর লিখিত অসংখ্য আর্টিকলে পাওয়া যায়, বুশ বিশ্বাস করতেন রেডিক্যাল মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যেই ঈশ্বর তাকে পছন্দ করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবং তার আফগানস্থান ও ইরাক আক্রমন প্রকারান্তরে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতিফলন। ‘নাইন-ইলেভেন’-এর পর বুশের মুখ দিয়ে প্রথম যে শব্দটা বের হয়েছিল প্রতিক্রিয়া হিসেবে তা হলো, ‘ক্রুসেড’ অর্থাৎ মুসলমানদের সাথে খ্রীষ্টানদের ধর্মযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বুশের মুখনিসৃত এ অসম্ভব কথাটা বিশ্ববাসীকে অবাক করলেও ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে বুঝা যাবে, বুশ আসলে লিবিয়ার রাষ্ট্রনেতা গাদ্দাফী কিম্বা ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ-এর খ্রীষ্টান ভার্শন বৈ আর কিছু নয়। বুশ তার হোয়াইট হাউসের ওয়েষ্ট উইং-এ নিয়মিত রোমান ক্যাথলিক রেডিক্যাল পাদরীদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রুদ্ধদ্বার মিটিং করতেন যেখানে তার প্রশাসনের কারো প্রবেশাধিকার ছিলনা। এমনকি চরম কন্সার্ভেটিভ হিসেবে পরিচিত তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রাম্স্ফেল্ড, কিম্বা তার রাজনৈতিক গুরু, কার্ল রোভ-এরও নয়। শোনা যায়, ডমেষ্টিক নীতি নির্ধারন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে পলিসি মেকিং-এ বুশ এসব রেডিক্যাল পাদরীদের পরামর্শ নিতেন। ইরাক আক্রমনের আগে বুশ তার ওয়েষ্ট উইং-এর অফিসে এসব পাদরীদের ডেকে নিয়ে তাদের দিয়ে ইরাক যুদ্ধকে হালাল করিয়ে নিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই, যেভাবে আফগানস্থানের তোরাবোরা পাহাড়ের গুহায় নেতৃস্থানীয় ওলামাদের ডেকে নিয়ে তাদের দিয়ে ‘বিন লাদেন’ আমেরিকায় সন্ত্রাসী হামলা চালানো তথা ‘নাইন-ইলেভেন’-এর হামলাকে হালাল করিয়ে নিয়েছিল বলে শোনা যায়। ভাবতে অবাক লাগে, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের এক্সেসিভ রিলিজিয়াস জিল্এবং আল্ট্রা কন্সার্ভেটিভ মানসিকতা কিভাবে সবাইকে একই কাতারে টেনে এনে পরষ্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়! ‘নাইন-ইলেভেন’-এর সন্ত্রাসী হামলাকে হালাল বলে ফতোয়া দানকারী মুসলিম মোল্লাদের সাথে ইরাক আক্রমনকে হালাল বলে ফতোয়া দানকারী খ্রীষ্টান মোল্লাদের কি কোনো মৌলিক পার্থক্য আছে? নাকি সে অর্থে মৌলিক পার্থক্য আছে বিন লাদেনের সাথে বুশের? সাদা জোব্বা, সাদা পাগড়ী পরে কালো পাহাড়ের গুহায় বসে নিরীহ মানুষ হত্যার নীলনক্সা করা যেভাবে সন্ত্রাস এবং নক্সাকারী যেভাবে সন্ত্রাসী, কালো স্যুট-বুট পরে ‘সাদা হাউসে’ বসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরীহ মানুষ হত্যার নীলনক্সা করা একইভাবে সন্ত্রাস এবং নক্সাকারী একইভাবে সন্ত্রাসী। দুঃখের বিষয়, দু’জনই সমানভাবে মানবতার শত্রু হলেও বিশ্ববাসীর চোখে কেবল একজন অসভ্য এবং বাকিজন সভ্য হিসেবে বিবেচিত।
এ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির (ASU) ‘মেমোরিয়াল ইউনিয়ন’ ভবনে প্রতি রোববার বিকেলে একদল বাংলাদেশী বাচ্চাকে নিয়ে বসে ‘শিকড়’ বাংলা স্কুল। আমার ছেলেমেয়েরা ‘শিকড়’-এর নিয়মিত স্টুডেন্ট। সপ্তাহ তিনেক আগের কথা। ‘মেমোরিয়াল ইউনিয়ন’ ভবনের দোতলায় ২৩৮ নম্বর রুমে ‘শিকড়’-এর ক্লাস হচ্ছে। শফিকের বড় ছেলেটাও ‘শিকড়’-এ যায়। শফিক বুয়েটের। আমার এক বছরের জুনিয়র। বাচ্চাদের নামিয়ে দিয়ে শফিক আর আমি সাধারনত এ.এস.ইউ. ক্যাম্পাসের পাহাড়টাতে হাঁটতে যাই বৈকালিক ব্যায়ামটা এই সুযোগে সেরে নেয়ার জন্যে। সেদিন কেন জানি শফিক আসেনি। ‘মেমোরিয়াল ইউনিয়ন’ ভবনের দোতলায় সপ্তাহের অন্যান্য দিন ইউনিভার্সিটির রেগুলার ক্লাস হয়। লম্বা করিডোরের জায়গায় জায়গায় সোফা ফেলানো রয়েছে বসার জন্যে। মাত্র দু’ঘন্টার ব্যাপার। চোখ বন্ধ করে কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করেই দু’ঘন্টা পার করে দিতে পারবো ভেবে তেমনই একটা সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়লাম। যে সোফাটায় আমি বসেছি, তার বিপরীত দিকেই একটা ক্লাস রুম। রুমের দরজাটা বন্ধ। তবে কাঠের দরজার খানিকটাতে গ্লাস লাগানো রয়েছে, যা দিয়ে রুমের ভেতরটা অনেকাংশেই দেখা যায়। দেখলাম প্রায় ১০/১২ জন যুবক ভেতরে রয়েছে যাদের প্রত্যেকের বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। চেহারা দেখেই বুঝা যায় আমাদের সাব-কন্টিনেন্টের। প্রত্যেকের গায়ে কালো গেঞ্জি। তবে পরনে অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের ফুলপ্যান্ট। প্রত্যেকের কপালে লাল ফিতা বাঁধা। রুমের সাদা টিউব লাইটগুলো নেভানো। তবে রুমের চারকোনায় চারটা টেবিল ল্যাম্প জ্বালানো রয়েছে যেগুলোর উজ্জ্বল হলুদাভ আলোতে রুমের সবকিছুই মোটামুটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ছেলেগুলোর প্রত্যেকে মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে এবং একইসাথে কোমর সোজা রেখে ‘নীল-ডাউন’ (kneel down) ভঙ্গীতে এক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের সবচেয়ে যে সামনে রয়েছে, তারও সামনে একটা চেয়ারের গায়ে লম্বা একটা লাঠিতে লাল-কালো রঙা একটা পতাকা জড়ানো রয়েছে এবং পতাকার দু’পাশে মাটিতে কতগুলো মোমবাতি জ্বলছে। প্রত্যেকেই ‘নমষ্কার’ ভঙ্গীতে দুইহাত একসাথে করে চোখ বুজে রয়েছে। ছেলেগুলোর সবার মুখ রুমের সামনের দিকের পতাকার দিকে ফেরানো কেবল একজন ছাড়া। এই ছেলেটা পতাকার অপর পাশে বাকি ছেলেগুলোর দিকে মুখ করে একইরকম ‘নীল-ডাউন’ ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে কি কি যেন বলছে এবং বাকিরাও প্রত্যুত্তরে কি কি যেন বলছে। আমি কৌতুহলী চোখে ব্যাপারটা লক্ষ্য করতে থাকলাম। একটু পরই তাদের ‘রিচুয়াল’ শেষ হলো। মোমবাতি নেভানো হলো; টেবিল ল্যাম্পগুলোও নেভানো হলো এবং প্রায় একইসাথে রুমের সাদা টিউব লাইটগুলো জ্বলে উঠলো। মাথা থেকে লাল ফিতা খুলে ফেলে ছেলেগুলো রুমের দরজা খুলে করিডরে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। সবচেয়ে আগে বেরুনো ছেলে দু’টো শ্যেন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। ওদের চোখের দিকে তাকিয়ে কেন জানি অপার্থিব একটা অনুভূতি আমার মেরুদন্ড বেয়ে শির শির করে নীচে নেমে গেল। আমি অস্বস্তিতে চোখ সরিয়ে নিলাম। তবে চোখ সরানোর আগে ওদের গায়ের কালো গেঞ্জিতে বড় বড় সাদা অক্ষরে লেখা ‘Hindu Yuva’ শব্দটা আমার নজর এড়ালোনা।
ব্যাপারটা তত্ত্বগতভাবে আমার কাছে খুব আশ্চর্যজনক কিছু মনে হওয়া কিন্তু উচিত নয়। কেননা, মসজিদে আমাদের মুসলমানদের নামাজ পড়ার সাথে এদের ‘রিচুয়াল’ পালনের খানিকটা মিল আছে, যেমনটা ইমাম সাহেব করেন এবং বাকি মুসল্লীরা তাকে অনুকরন করেন। কিন্তু এখানকার ব্যাপারটা অন্যরকম। আমি যদি কোনো হিন্দু টেম্পলে যেতাম এবং সেখানে একদল হিন্দু নারী-পুরুষকে অনুরূপ ‘রিচুয়াল’ পালন করার একটা দৃশ্য দেখতাম, তাহলে আমার কাছে সেটা সামান্যও অস্বাভাবিক লাগতো না। বরং ভালই লাগতো। কেননা, আমি বরাবর অন্যান্য ধর্মের ‘রিচুয়াল’-এর ব্যাপার-স্যাপারগুলো জানতে আগ্রহ বোধ করি এবং তা করি শ্রদ্ধার সাথেই। কিন্তু ২০/২৫ বছর বয়সী ১০/১২ জন ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া যুবক ভিন্ন দেশে পড়তে এসে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে যখন এমন কট্টরভাবে কোনো ‘রিচুয়াল’ পালন করে, তখন কেন জানি খানিকটা খটকাই লাগে।
হঠাৎ করেই আমার তখন বুয়েটের কথা মনে পড়ে যায়। বুয়েটের ক্লাস শুরুর তখন এক সপ্তাহও হয়নি। আমি থাকতাম আহসানউল্লাহ হলের নীচতলার একটা রুমে, যেটা ‘রাজনৈতিক রুম’ হিসেবে সেসময় বিখ্যাত ছিল। ছাত্র ইউনিয়নের আহসানউল্লাহ হল শাখার সভাপতি এবং ছাত্রলীগের আহসানউল্লাহ হল শাখার সহ-সভাপতি আমার দুই রুমমেট ছিলেন। আমিই ছিলাম ঐ রুমের একমাত্র অরাজনৈতিক ব্যক্তি। কামরুল ভাই আমার দেশী, মানে ঝিনাইদহের এবং উনি তখন ছাত্র শিবিরের বুয়েট শাখার সভাপতি কিম্বা সাধারন সম্পাদক ছিলেন। উনি থাকতেন আহসানউল্লাহ হলেরই চার তলায়। এক বিকেলে কামরুল ভাই ওনার রুমে আমাকে ডেকে পাঠালেন। ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারনে রাজনীতিতে আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা। কাজেই কামরুল ভাইয়ের সাথে স্বভাবতই আমার বৈরীতার কোনো কারন ছিলনা। ওনার রুমে পৌঁছে দেখি মিটিং হচ্ছে ওনাদের। আমাকে সবার সাথে একে একে পরিচয় করিয়ে দিলেন কামরুল ভাই। মুখে কেউ কিছু না বললেও বুঝলাম ওনারা সবাই শিবিরের। হাদিসের একটা বই থেকে ওনারা গোটা কয়েক হাদিস পড়লেন। এরপর পুরো সপ্তাহে কে কি কি আমল করেছেন বা করতে পারেননি, সে বিষয়ে হিসেব-নিকেশ নেয়া-দেয়া করলেন। এবং সবশেষে দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার কি অগ্রগতি এবং কে কি ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন, সে বিষয়ে আলোচনা করলেন ওনারা। আমি যদিও সেসময় ধর্ম-কর্মের একদম ধার ধারী না, কিন্তু ধর্ম পালন না করার কারনে এক ধরনের অপরাধবোধ মনে মনে খানিকটা ছিলই। সে হিসেবে কামরুল ভাইদের মিটিংটাকে আমার কাছে বরং ভাল লাগারই কথা ছিল। কিন্তু ওনাদের কথাবার্তায় এমন কিছু ছিল, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক এ্যারোগ্যান্স এবং সুপিরিয়রিটির এমন একটা টোন্ (tone) ছিল, যা আমার কাছে কেন জানি মনে হয়েছিল পটেনশিয়াল ‘রেড ফ্ল্যাগ’ (red flag) এবং এরপর থেকে শিবিরকে আমি আর কোনোদিন পছন্দ করিনি। ‘Hindu Yuva’র ছেলেগুলোকে দেখে প্রথম নজরেই কেন জানি ছাত্র শিবিরের কথা মনে হয়েছিল আমার। এটাকেই বোধহয় বলে মানুষের ‘সিক্সথ্ সেন্স’, কেননা ‘Hindu Yuva’ সম্পর্কে আমি তখনও পর্যন্ত কিছুই জানিনা।
ঐ দিন বাসায় ফিরে রাতে গুগল সার্চ দিয়ে যা পেলাম তাতে মনটা খারাপই হলো। উইকিপিডিয়াতে ‘হিন্দু ইউভা বাহিনী’ সম্পর্কে নীচের ডেফিনিশন্টা পেলামঃ
The Hindu Yuva Vahini (HYV) is a Hindu youth group, founded by Yogi Adityanath, the leader of the Gorakhpur Mutt temple in Gorakhpur, India. The group has a high penetration among the largely unemployed youth of eastern Uttar Pradesh, where the collapse of the sugar industry and the closing down of a Fertilizer Corporation of India plant has led to increased unemployment in recent years.
By organizing various movements such as ‘Ram Prakostha’ for pavement dwellers and the ‘Bansfod Hindu Manch’ for woodcutters, Adityanath has provided a sense of identity for many of these frustrated youth, who have swelled the ranks of the Hindu Yuva Vahini. The HYV has many Dalit members in addition to traditional caste Hindus, and the group is united by opposition to Islamic Fundamentalists who have a history of dominating the region and engaging in the persecution of Hindus, especially low-caste Dalits who were rarely accorded protection from Islamic persecution by the caste Hindus because of traditional casteist prejudices.
The Hindu Yuva Vahini has been implicated by Islamist sympathizers in the Mau riots of October 2005, where they organized the Hindu forces in opposition to the militant Islamist politician Mukhtar Ansari, the alleged murderer of Bharatiya Janata Party (BJP) state legislature member Krishnanand Rai. Charges of inciting riots, murder, and arson were brought against Hindu Yuva Vahini leaders Ajit Singh Chandel and Sujit Kumar Singh, along Ansari and some others in the opposite camp. Eventually, a curfew was imposed on Mau for nearly a month.
The same groups accuse HYV of involvement in the Gorakhpur riots of January 26-31, 2007. After the arrest of Yogi Adityanath, the HYV launched retaliations. Two coaches of the Mumbai bound Mumbai-Gorakhpur Godan Express were set ablaze on January 30, 2007.
Note: the abbreviation of ‘Hindu YUVA’ is Hindu Youth for Unity, Virtues and Action.
সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এবং এর পাশাপাশি অশিক্ষা, দারিদ্রতা ও বেকারত্ব কিভাবে ধর্মীয় রাজনীতির ছাঁয়াতলে একদল বঞ্চিত মানুষকে এক্সট্রিম একটা আইডিয়োলজির পেছনে সুসংহত করে, তা একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে না বুঝার কোনো কারন নেই। উত্তর প্রদেশের গোরাখপুরে যোগী আদিত্যনাথ কর্তৃক হিন্দু ইউভা বাহিনীর প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তীতে এই বাহিনীর উত্থান অনেকটা আফগানস্থানে তালেবানদের উত্থানের মত যেখানে এক্সট্রিমিজিম মূলত অশিক্ষা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও ধর্মীয় রাজনীতির বাই-প্রডাক্ট। গোরাখপুরের স্থানীয় কোনো কলেজে হিন্দু ইউভা বাহিনীর একদল যুবককে সংঘবদ্ধভাবে এমন ‘রিচুয়াল’ পালন করতে দেখলে আমি হয়ত সামান্যও অবাক হতাম না। কিন্তু আমেরিকার মত সুসভ্য, প্রগতিশীল একটা দেশে বসে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া একদল ছেলে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ‘Hindu Yuva’ মনোগ্রাম খঁচিত গেঞ্জি গায়ে এক্সট্রিম একটা আইডিয়োলজী অন্তরে লালন করছে এবং তার চর্চা করছে দেখে মনটা খারাপই হলো আমার। ইন্টারনেটে আরেকটু ঘেঁটেঘুঁটে দেখলাম, হিন্দু ইউভা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা, যোগী আদিত্যনাথ ভারতের হিন্দু মৌলবাদী রাজনৈতিক দল, বিজেপি’র একজন সাংসদ এবং একইসাথে একজন চরম প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ। ভারতের সংসদে দেয়া এক ভাষনে তিনি একবার বলেছিলেন, “মহাত্মা গান্ধীর বদলে জাতির জনকের সন্মান ভগবান রাম অথবা কৃষ্ণকে দেয়া উচিত”। চারদলীয় জোট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী, জামাতে ইসলামী’র নিজামী কিম্বা মুজাহিদ-এর সাথে যোগী আদিত্যনাথ-এর কি কোনো মৌলিক পার্থক্য আছে? নাকি সে অর্থে খুব বেশী মৌলিক পার্থক্য আছে শীর্ষস্থানীয় পাকিস্থানী তালেবান নেতা, ক্বারী হুসেইনের ধর্মশিষ্য, সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটির টাইম্স্ স্কয়ারে গাড়ীভর্তি এক্সপ্লোসিভ বিস্ফোরণ ঘটানোর নিষ্ফল পরিকল্পনাকারী, পেশাজীবী MBA, ফয়সাল শাহজাদের এক্সট্রিম আইডিয়োলজির সাথে ASU-এর গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস্, হিন্দু ইউভা বাহিনীর সদস্য এই ছেলেগুলোর এক্সট্রিম আইডিয়োলজির?
এতক্ষণে হিন্দু ইউভা বাহিনীর ছেলে দু’টোর আমার দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকানোর ‘শানে নজুল’ পরিষ্কার হলো। আমার গোঁফহীন লম্বা দাঁড়ি এবং গায়ে হাঁটু অব্দি লম্বা ফতোয়া দেখে যে কেউই বুঝে যাবে আমি একজন কট্টর মুসলমান এবং অমুসলিম কারো এধারনা হওয়াও নেহায়েত অমূলক নয় যে, আমি হয়ত ‘বিন লাদেন’ কিম্বা ‘মোল্লা ওমর’-এর দূরসম্পর্কের জ্ঞাতি ভাই। মনে মনে ভাবলাম, “আচ্ছা! আজ আমি ধূতি পরা, গলায় পৈতে ঝুলানো একজন নিরীহ ধর্ম পালনকারী ভালমানুষ হলেও কি ঠিক একই চোখে আমার দিকে তাকাতো না এদেশের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া একজন ‘মুসলিম উম্মাহ’ তথা প্রবাসী ছাত্রশিবির কর্মী? তাহলে হিন্দু ইউভা বাহিনীর ছেলেগুলোরই বা দোষ কতটুকু?”
আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ মে, ২০১০
জনাব আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনার লেখাতে সুন্দর বিশ্লেষন আছে, যা ভাল লেগেছে। ভাবছি, আপনি যদি নীজের সম্পর্কে নীরব থাকতেন তবে এই লেখাটি হয়তো ভিন্ন ভাবে নেয়া যেত। একটা লেখা পড়ার সময় লেখকের ব্যাপারে কি আসলেই পুরোপুরি উদাসীন থাকা যায় ? ধরুন সাকা চধুরি যাদি বলে -৭১ এর শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, তবে আমরা কিন্তু এর মধ্যে অবশ্যই ভিন্ন মানে খুঁজব।
ধর্মশ্রয়ী আস্তি্কদের মধ্যে ধর্ম উন্মাদনার প্রবনতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা সব সময়ই থাকে, যা আপনিও বলেছেন। কিন্তু এটার কারন কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন ?
আমার ধারনা, প্রতিটি ধার্মিক ব্যাক্তি নীজের ধর্মকে অন্য ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে। এটা যে সে নীজে থেকে পছন্দ করেনি সে কথা এক বারো না ভেবে। এই মনোভাবের মধ্যেই রয়েছে ফ্যাসিজমের বীজ। উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই তা অঙ্কুরিত হয়। অপনি একজন ধার্মিক ব্যাক্তি। যে কোন ফ্যাসিজমকেই আমি অন্যায় মনে করি। ধার্মিক ব্যাক্তিরা প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট মনোবৃত্তি সম্পন্ন। আপনি কি নীজেকে অন্য ধার্মিকদের থেকে আলাদা মনে করেন ? করলে কেন করেন, দয়াকরে জানাবেন।
@আতিক রাঢ়ী,
“একটা লেখা পড়ার সময় লেখকের ব্যাপারে কি আসলেই পুরোপুরি উদাসীন থাকা যায়?”। ঠিক বলেছেন, আসলেই যায়না। তবে এও সত্যি, অনেক সময় বক্তব্যের বিষয়বস্তু লেখকের ব্যক্তিগত পরিচয়ের চেয়েও প্রাধান্যতা পেতে পারে। কেননা প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ কিম্বা তাসলিমা নাসরিন স্বঘোষিত ধর্মত্যাগী হওয়া সত্বেও তাদের পাঠককুলের সিংহভাগই সম্ভবত আস্তিক। আমি নিজেও ওনাদের অনেক বই পড়েছি। কিছু কিছু বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত আপত্তি থাকলেও তাসলিমা নাসরিনের অনেক পর্যবেক্ষন আমার কাছে খুবই তথ্যপূর্ণ এবং যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে। তার নাস্তিকতার ব্যাকগ্রাউন্ডের চেয়ে তার বক্তব্যই কিন্তু আমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। কাজেই এর অপোজিট ব্যাপারটা ঘটা কঠিন হলেও অসহনীয় হওয়া বোধহয় উচিত নয়।
“আপনি কি নীজেকে অন্য ধার্মিকদের থেকে আলাদা মনে করেন?”- খুব কঠিন প্রশ্নরে ভাই। অল্প কথায় এর উত্তর দেয়া সম্ভব না। তবে হ্যাঁ, সুনির্দিষ্ট কোনো একটা অবস্থান থেকে দেখলে একজন রেডিক্যাল মনোভাবাপন্ন ধার্মিকের সাথে আমার তেমন পার্থক্য কারো চোখে নাও পড়তে পারে। আবার এমন একটা ‘স্কুল অব থট্’ আছে যাদের কাছে হয়ত পরিষ্কার পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হবে। “মডারেট ধার্মিক” বলে কারো অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা তত্ব্বগত এবং ব্যবহারিক দিক থেকে দেখার বিষয় এবং নিঃসন্দেহে একটা জটিল ও তর্কের বিষয়। এত স্বল্প পরিসরে এটা বলতে যাওয়া কঠিন। তবে অদূর ভবিষ্যতে বিষয়টা নিয়ে লেখার ইচ্ছে রইলো।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
নাস্তিকতার ব্যাকগ্রাউন্ডের কারো বক্তব্য বা পর্যবেক্ষন কোন ধার্মিক লোকের কাছে যখন যুক্তিযুক্ত মনে হয় তখন সেটা একটা অবাক করা ব্যাপারই বটে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আপনার অবাক হওয়ার দু’টো অর্থ হতে পারে। এক- বক্তব্যটা অবিশ্বাস্য লাগা। দুই- বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হওয়া। কোনো অর্থটাই আসলে খারাপ নয়। তবে প্রথম অর্থটা যতখানি পজিটিভ, দ্বিতীয়টা ততখানি নয়। আপনি যেহেতু শুধু অবাক হওয়ার কথাই বলেছেন এবং অর্থটা পরিষ্কার নয়, কাজেই আমি প্রথমটাই ধরে নিচ্ছি। ২০০৬-এ পরিচিত কয়েকটা ই-ফোরামে “আস্তিকতা, নাস্তিকতা ও মানবতার ভুল সমীকরন” নামে আমার একটা বিতর্কধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। লেখার এক জায়গাতে আমি তসলিমা নাসরিন প্রসংগে লিখেছিলাম, “এ কথা অবশ্য স্বীকার করতে অসুবিধে নেই যে, সংগত কারনে ব্যক্তি তসলিমা নাসরিনকে যদিও আমি যথেষ্ট অপছন্দ করি, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘূ নির্যাতন ও ধর্মের অপব্যবহার প্রসংগে তসলিমা নাসরিনের বেশীরভাগ পর্যবেক্ষনের সাথেই আমি একমত পোষন করি”। বলাবাহূল্য, তাকে অপছন্দ করার কারন কিন্তু তার নাস্তিকতা ছিলনা যা ঐ লেখাতেই বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা ছিল। আপনি অবাক হয়েছেন বলেই আমার মনে হলো, আরেকটা উদাহরন দিই বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আমার অবাক হওয়ার অর্থ সোজা কথায় বুঝার অক্ষমতা।
ব্যক্তি তসলিমা নাসরিনকে ‘যথেষ্ট অপছন্দ’ করার বিষয়টা ব্যক্তিগত অভিরুচির ব্যাপার, সেটা মুখ্য বা দরকারি বিষয় নয়। কিন্তু ধর্মের অপব্যবহার প্রসংগে তসলিমা নাসরিনের পর্যবেক্ষন ও সর্বোপরি তাঁর নাস্তিকতার বিষয়টা একজন ধার্মিক লোকের মতামতের সাথে কনফ্লিক্ট করছেনা আমার অবাক হওয়ার ব্যাপারটা সেখানে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
“কিন্তু ধর্মের অপব্যবহার প্রসংগে তসলিমা নাসরিনের পর্যবেক্ষন ও সর্বোপরি তাঁর নাস্তিকতার বিষয়টা একজন ধার্মিক লোকের মতামতের সাথে কনফ্লিক্ট করছেনা আমার অবাক হওয়ার ব্যাপারটা সেখানে”।
ঠিক বলেছেন; জটিল ব্যাপারটা আসলে সেখানেই। সাইফুল ইসলাম এবং আদিল মাহমুদের মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য পড়লে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায় কনফ্লিক্টটা কোথায় কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়না। অদূর ভবিষ্যতে বিষয়টা নিয়ে লেখার ইচ্ছে রইলো। ভাল থাকবেন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে লেখার সূত্রগুলি শেয়ার করার জন্য ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে যারা করে সাধারণত তাদের মধ্যে দুইটা শ্রেণী থাকে এক গ্রুপ যারা সত্যিকার অর্থেই চায় আধুনিক শাসন ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন করে ধর্ম গ্রন্থ ভিত্তিক শাসন কায়েম করতে আরেক গ্রুপ আছে তারা মানুষের ধর্মিয় অনুভূতিকে সুড়সুড়ি দিয়ে ক্ষমতার মসনদে যেতে আগ্রহি তবে ধর্ম রাজ্য কায়েমে তাদের আগ্রহ দেখা যায় না। বাংলাদেশের দিকে খালি তাকান বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ যার বাসা হতে ১/১১ সময় মদের বোতল পাওয়া গেছে অথচ এ ব্যক্তিকেই পত্রিকায় খবরে দেখি হিযবুত বা জামাতের আয়োজিত ইসলামিক সভায় গিয়ে ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে লেকচার দিচ্ছে ! জর্জ বুশকে আমার এ শ্রেণীভুক্ত রাজনীতিবিদ বলেই মনে হয়েছে সব সময়। না হলে জর্জ বুশের অধীনে রিপাবলিকান দল তার ২য় মেয়াদে যেরকম, ভোট পেয়েছিল তাতে যদি সত্যিকার অর্থেই সেরকম বুশ গোড়া ধার্মিক হত তাহলে আমেরিকার সংবিধান পরিবর্তন করে খ্রীষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম, বাইবেল ছাড়া বাকি ধর্ম বইগুলাকে নিষিদ্ধ করা ( যে রকম টা SAUDI ARAB এ করা হয়েছে)মতো পদক্ষেপ নিতেন তাকে সেরকম কোন কিছুই করতে দেখা যায়নি গে রাইট বা এবরসন রাইট , বিরোধী কিছু আইন গির্জাগুলার জন্য কিছু সরকারি ফান্ড দিয়ে তিনি তার ভোট ব্যাংককে খুশি করেছেন ( যেমনটা বিএনপি কওমি মাদরাসাগুলার সার্টিফিকেট এর মান ভার্সিটির সমান করে মোল্লাদের খুশি করতে চায়) কিন্তু ওভারওল তিনি আমেরিকার সেকুলার আইন প্রথা মেনেই দেশ শাসন করেছেন। তার ইরাক আক্রমণ পলিসির পিছনে যতোটা না ধর্মযুদ্ধ থিয়োরি কাজ করেছে তার হতে বেশি কাজ করেছে নিউ কনদের তেলের ভাণ্ডারের উপর আমেরিকার দখল বজায় রাখার নীতি। এ কারণেই SAUDI ARAB এর মতো কট্টর শরিয়ত মেনে চলা দেশকে বুশ সমঝে চললেও সাদাম হোসেনের মতো সেকুলার একনায়ক বুশের চোখের বিষ হয়েছে আপনার দেওয়া Washington post পত্রিকার লিংকে কিন্তু কার্ল রোভ এবং ডিক চেনির মতো ঘাগু ব্যক্তিদের অবহেলা করে রোমান পাদরিদের সাথে পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে মিটিং করার উল্লেখ পেলাম না বরং
বড়লোকদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে যাতে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত লোকদের রোসানলে না পরতে হয় এজন্য তার এই চার্চ প্রীত আমাদের দেশে ৪৭ সাল জমিদার খান নবাবদের দল মুসলিমলীগ গরিব মুসলমানদের সমর্থন পাওয়ার জন্য মুসলিম উন্মা, ইসলামীক আদর্শ বড় বড় বুলি যারত বুশের পলিসিও সেরকম মনে হল
খবরের আরেকটা জায়গায় পেলাম
রোমের পোপ হছে ক্যাথলিকদের সবচেয়ে বড় নেতা দেখা যাচ্ছে বুশ তার উপদেশকেই পাত্তা দিচ্ছেন না
আমি আপনার এই মন্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ ভাবেই একমত ইনফোরমেশন এজ হিযবুত তাহরির অথবা ভিএইচপির মতো সংগঠনকগুলিকে তাদের বার্তা সহজেই সব জায়গায় পাঠাতে এবং কিছু সমর্থক বানাতে হেল্প করেছে
উন্নত দেশ আমেরিকার সাথে অনুন্নত দেশ বাংলাদেশের রাজনীতির এই একটা জায়গায় মনে হয় ব্যাপক মিল আছে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মকর্ম পালন করুক বা না করুক আম জনতা পরেজগার ইমেজের লোকদের রাষ্ট্র প্রধান দেখতে যায় একারনেই খালেদা জিয়া বার বার হজে যান, আওয়ামিলিগের নেত্রী মাথায় তজ্জবি জায়নামাজে বসা পোষ্টার দিয়ে ইলেকশন প্রচারনা আরম্ভ করেন ইসলাম বিরোধী কোন প্রকার আইন করবেন না বলে ওয়াদা করেন। আমেরিকার লাস্ট প্রেসিডেন্ট ইলেকসনে যতগুলি কাণ্ডিডেট ছিল তাদের কাউকেই আমি নাস্তিক ধর্মকর্ম করিনা বলে প্রচারণা চালাতে দেখেনি এমনকি সবচেয়ে লিবারেল ওবামাকেও দেখি তিনি কত ভালো বাইবেল বিশ্বাসি তা প্রমানে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে চার্চ নেতাদের সাথে ডিনার করতে
অপরদিকে বুশ তো তার যুবক জীবনে মাদক আসক্ত হিসেবে এমনিতেই কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন বর্ণ এগেন খৃস্টান না হলে বুশ তার রাজনীতিক জীবনে কতোটা সাফল্য পেতেন তা একবার চিন্তা করুন, আমি অবাক হব না যদি দেখি আর কয়েক বছর পর তারেক জিয়াও দেলোয়ার হোসেন সাঈদির ওয়াজ শুনে বর্ণ এগেন মুসলমান হয়ে রাজনীতিতে আবার এন্ট্রি করেন। 😎
@কালো ওঝা,
“আপনার দেওয়া Washington post পত্রিকার লিংকে কিন্তু কার্ল রোভ এবং ডিক চেনির মতো ঘাগু ব্যক্তিদের অবহেলা করে রোমান পাদরিদের সাথে পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে মিটিং করার উল্লেখ পেলাম না”
ঠিক। তবে সন্দেহাতীতভাবে আমি এটা একটা আর্টিকলে পড়েছি। কিন্তু মেমোরী থেকে গুগোল সার্চ দিয়ে যে কটা আর্টিকল-এর কথা আমি আপনার প্রতিমন্তব্যের উত্তরে দিয়েছি, তার কোনোটাতেই আমি নিজেও খুঁজে পাইনি। অবশ্য “The Bush Tragedy” অনেক বড় আর্টিকল দেখে পুরোটা চেক করে দেখিনি ওটাতে আছে কিনা। আমি আরেকবার গুগোল সার্চ দিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখবো এই তথ্যসূত্রটা পুনরুদ্ধার করতে পারি কিনা। পেলে আপনাকে জানিয়ে দেবো।
একটা ব্যাপার আমি খুব লক্ষ্য করেছি যে লোক দেশে থাকতে যারে ঠেলেও নামাজ কালামা পড়ান যেতো না , বিড়ি সিগারেট না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে উলটা তেড়ে আসত এধরনের লোক বিদেশে গেলেই হঠাৎ করে খাটি মুসলমান হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে এমনকি সাবানের মধ্যেও হালাল হারাম খুঁজা আরম্ভ করে এটা মনে হয় খালি মুসলমানদের বেলায় নয় অনেক হিন্দুদের বেলায়ও খাটে এটার পিছনে আমার মনে হয় যতো না ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়ার ইচ্ছা কাজ করে তার হতে বেশি কাজ করে বিদেশে আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগার ফলে নিজের জন্য একটা আইডেনটি খুঁজা, পশ্চিমি সভ্যতার কাছে বিলীন হয়ে যাওয়ার এক ধরনের অজানা ভয়, এর সাথে আরও কিছু ব্যাপার আছে যেমন যে দেশে গেছেন সেখানকার লোকদের সাথে আপনার ইণটারএকশন কেমন যদি দেখা যায় ভালো ভালো বন্ধু হয়ে গেছে দেশে যেরকম সামাজিক লাইফ ছিল সেখানেও সেরকম তাহলে কিন্তু দেখা যায় খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না ধর্মী পরিচয়ের প্রয়োজন হয় তখনই যখন একজন ব্যক্তি নিজেকে একা মনে করছে বিদেশের মাটিতে তখনই সে খুঁজতে আরম্ভ করে সবচেয়ে কাছের মসজিদ বা মন্দিরটা কই যেখানে সে খুঁজে পাবে তার মতো চিন্তা করে যাদের সাথে মিশে নিজের সার্কেল বানানোর ইচ্ছা
পোষ্ট ভালোই হয়েছে তবে আপনার পোষ্টের কিছু তথ্যের মধ্যে ভুল আছে
ক্যাথলিক পাদারিদের সাথে এরকম শলা পরামর্শ করার বুশের কোন প্রশ্নেই আসেনা মুসলমানদের মধ্যে যেমন শিয়া সুন্নি সেরকম ভাবে বাইবেল অনুসারীদের মধ্যে protestant এবং catholic বিভাজন বহু যুগের তা এখনও আগের মতো না হলেও এখনও ভিতরে ভিতরে আছে এ কারনেও কেনডি যখন ইলেকশনে নামেন তখন তার catholic পরিচয়ের কারনে তাকে অনেক হেপা পোহাতে হয়েছে বুশ protestant কাজেই ক্যাথলিকদের পাদারিদের সাথে এরকম পরামর্শ করার প্রশ্নই আসে না মূলত তার ক্ষমতায় থাকাকালিন যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালি ছিলেন তিনি হলেন কার্ল রোভ আর ডিক্ চেনি যার দুজনেই ধর্মের ধারতেন না, আর ইরাক আক্রমনের পিছনে ক্রুশেডের হতে বেশি কাজ করেছে তেল খনিগুলা দখলে ইচ্ছা।
@কালো ওঝা,
ভাল লাগল আপনাকে এখানে দেখে, আশা করি নিয়মিত অংশ নেবেন।
বুশের ক্যাথলিক কানেকশনের খবর আমার কাছেও নুতন ছিল। নিশ্চিত নই তথ্য সূত্র সম্পর্কে।
বিদেশে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস সম্পর্কে যা বললেন তা ষোল আনাই খাঁটি বলে মনে করি।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ আসলে সচল এবং মুক্তমনার কমেনট এর ক্ষেত্রেও মডারেশন পলিসি চালু করায় অনেক সময়ই মন্তব্য করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না লেখার ব্যাপারে মডারেশন করার পলিসির কারন আমি অনুধাবন করতে পারি কিন্তু কমেনট উপর মডারেশন আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না ।
@কালো ওঝা,
আমি কম্পিউটারে ভালই দূর্বল। এই লেখাটার দু/তিনটে লেখার আগ পর্যন্তও আমি সরাসরি ব্লগে ঢুকে লেখার খুব একটা ভরসা পাইনি। মুক্তমনা এ্যাডমিনের একজন মডারেটরকে (যার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে ইমেইল যোগাযোগ ছিল বেশ আগে থেকেই) আমি ইমেইল এটাচ্মেন্ট হিসেবে আমার লেখাগুলো পাঠাতাম এবং উনি সামান্য বিরক্ত না হয়েও একের পর এক আমার পক্ষ হয়ে লেখাগুলো ছেপে গেছেন। এখানে এটা উল্লেখ করার এটাই উদ্দেশ্য যে, নিবন্ধে বা মন্তব্যের মধ্যে কিভাবে কোনো ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিতে হয়, তা আমি জানিনা। লিঙ্ক বোতামে চাপ দিলে প্রতিবারই ওয়েবসাইটের ওপরে হলুদ রঙের একটা বার ভেসে উঠছে। কম্পিউটারে না আবার কোনো সমস্যা হয়ে যায়! যাহোক, সেকারনেই ‘হার্ড ওয়ে’তে যেতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।
Bush attends an Episcopal church in Washington and belongs to a Methodist church in Texas, and his political base is solidly evangelical. Yet this Protestant president has surrounded himself with Roman Catholic intellectuals, speechwriters, professors, priests, bishops and politicians. These Catholics — and thus Catholic social teaching — have for the past eight years been shaping Bush’s speeches, policies and legacy to a degree perhaps unprecedented in U.S. history.
“I used to say that there are more Catholics on President Bush’s speechwriting team than on any Notre Dame starting lineup in the past half-century,” said former Bush scribe — and Catholic — William McGurn.
Even before he got to the White House, Bush and his political guru Karl Rove invited Catholic intellectuals to Texas to instruct the candidate on the church’s social teachings. In January 2001, Bush’s first public outing as president in the nation’s capital was a dinner with Washington’s then-archbishop, Theodore McCarrick. A few months later, Rove (an Episcopalian) asked former White House Catholic adviser Deal Hudson to find a priest to bless his West Wing office.
Before he sent U.S. troops into Baghdad to topple Saddam Hussein, he (Bush) met with Catholic “theocons” to discuss just-war theory. White House adviser Leonard Leo, who heads Catholic outreach for the Republican National Committee, says that Bush “has engaged in dialogue with Catholics and shared perspectives with Catholics in a way I think is fairly unique in American politics.”
With George W. Bush — a devout born-again Christian — now in the White House, the Bible Belt is not funny any more. And it becomes clearer each day that the President’s religious beliefs are shaping U.S. foreign policy.
উদ্ধৃতিগুলো Washington Post, Globalist, Slate ইত্যাদি প্রসিদ্ধ পত্রিকাগুলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধ থেকে নেয়া। “ক্যাথলিক পাদারিদের সাথে এরকম শলা পরামর্শ করার বুশের কোন প্রশ্নেই আসেনা”- তত্ত্বগতভাবে আপনার এই দাবী সঠিক হওয়াই উচিত ছিল। কিন্তু আমি-আপনি লজিক দিয়ে যা ভাবি, তার বাইরেও জগতে উল্টাপাল্টা বহু কিছু হয়রে ভাই।
গুগোল সার্চ-এ “A catholic wind in the White House”, “George W Bush’s holy war”, “How George Bush really found Jesus”, “The Bush tragedy”, ইত্যাদি শিরোনামগুলো লিখে সার্চ করলেই আমার দেয়া তথ্যগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে।
মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
@কালো ওঝা,
বুশের সাথে ক্যাথলিকদের কানেকশন-এর তথ্যগুলো দেয়ার সময় আরেকটা ব্যাপারে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমিও আপনার ‘বিদেশে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ ব্যাপারটার সাথে অনেকাংশে সহমত প্রকাশ করি যদিও শতভাগ নয়। একটা ‘স্কুল অব থট্’ বিশ্বাস করে সমাজতন্ত্রের এক সময়ের উত্থান, সাফল্য এবং পরবর্তিতে পতনের পর সামগ্রিকভাবে বর্তমান কালের মানুষের মাঝে একধরনের ‘রিলিজিয়াস আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ তৈরী হয়েছে যেখানে পুঁজিবাদ রাজনৈতিক কারনে ধর্মকে ব্যবহার করছে এবং এর বাই-প্রডাক্ট হিসেবে রেডিক্যালিজম-এর ক্রমশ পুনরুত্থান ঘটছে। পৃথিবীর সাম্প্রতিক গ্লোবালাইজেশনে তথ্যের আদান-প্রদান সহজ হয়ে যাওয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সমমনা, স্বধর্মের এবং স্বজাতীয়/স্বগোত্রীয় মানুষদের সম্পর্কে মানুষ বেশী বেশী এবং খুব দ্রুত জানতে পারছে এবং এই প্রসেসটা রেডিক্যালিজম বৃদ্ধিতে গতিময়তা সৃষ্টি করছে। আপনি ইসরায়েলের লোকাল নিউজপেপারে প্যালেষ্টাইনীদের পেটানোর খবর প্রকাশিত হওয়ায় আমেরিকায় বসবাসকারী জিউসদের (সবাই নয়) উল্লাসময় কমেন্টস্ পড়ে হতবাক হয়ে যাবেন। যদিও কম-বেশী সব ধর্মের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা প্রযোজ্য, তবে এখানে পার্টিকুলারলি জিউসদের উদাহরন দেয়া কিন্তু মুসলমানদের তথাকথিত ‘ইহুদী বিদ্বেষ’ থেকে নয়। আমার নিবন্ধটায় হিন্দু, মুসলমান এবং খ্রীষ্টানদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে বিধায় এখানে উদাহরন হিসেবে জিউসদের বিষয়ে উল্লেখ করাটা বেশী যুক্তিযুক্ত বলে মনে হলো। আমি একসময় কয়েকটা আর্টিকল পড়েছিলাম এ বিষয়ে, যদিও এখন নাম-ধাম বা তথ্যসূত্র মনে নেই। এটা হয়ত চুড়ান্ত (এ্যাবসলিউট) কোনো তত্ত্ব নয়, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ‘স্কুল অব থট্’টাকে খুব একটা উড়িয়ে দিতে পারিনি। ভবিষ্যতে যদি কখনও সুযোগ হয় এবং তথ্যসূত্রগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারি, তবে এ বিষয়ে লেখার খানিকটা চেষ্টা করবো। বাই দ্য ওয়ে, বুশের বোধহয় আমার-আপনার মত ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ থাকার কথা নয়। সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
খানিকটা অবাক ও তাজ্জব হলাম!!!
এই লেখার বক্তব্য পরস্পরবিরোধী কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করেছি । তা নিয়ে আমার মনেও কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, তবে এখন আর সেদিকে গেলাম না । একটি ব্যাপারে আপত্তি জানালাম, এখানে মন্তব্যে কেউ কেউ লেখার বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, যা কাম্য নয় ।
মুক্তমনার সদস্যদের মন্তব্য এবং প্রতিমন্তব্য করার সময় ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষণ প্রয়োগ কিংবা ব্যক্তিগত আক্রমণ বাদ দিয়ে লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা/সমালোচনা হোক এটাই কাম্য।
আপনার লেখাটার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমি বেশ কনফিউশনে আছি। আপনি বলতে চেয়েছেন যে অতিরিক্ত ধর্মপ্রবনতা ধর্মীয় চরমপন্থার দিকে যেতে পারে। কথা শত ভাগ সত্য। কিন্তু অবাক হই তখন যখন দেখি আপনার জনৈক বন্ধুর চরমপন্থার দিকে ক্রমশ অগ্রগমন দেখে আপনার ভিতরে কোন আলোড়ন হচ্ছে না। এটাকে আপনি স্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছেন। আপনার একবারও মনে হচ্ছে না অতিরিক্ত ধর্মীয় প্রবনতা যদি মানুষকে চরমপন্থার দিকেই নিয়ে যায় তাহলে আপনি যে শান্তির পথের একমাত্র ডিলার ইসলাম ধর্ম পালন করছেন রীতিমত দাড়ি, টুপি পড়ে সেই ধর্মটি কিভাবে পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারে? কেননা আপনি যতই বেশি ধর্মের দিকে ঝুকবেন ততই চরমপন্থি হবেন(এটা কিন্তু আপনার নিজের থিওরি)।
আমার কাছে ব্যাপারটা লাগছে অনেকটা,” জাতের মেয়ে কালোও ভালো”। যেহেতু মুসলমান একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেছেন সুতরাং ইসলাম পালন করতেই হবে ভাল হোক বৈকি খারাপ।
মানুষের ব্যক্তিগত ব্যপারে কথা বলাটা অত্যন্ত অশোভন। তারপরেও না বলে থাকতে পারছি না, আপনাদের মত শিক্ষিত ভন্ডের জন্যই আজকে ধর্মীয় সন্ত্রাসের থাবা সমাজটাকে খামচে ধরেছে। যেখানে আপনি নিজেই স্বীকার করছেন যে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা ভাল নয় সেখানে আপনি কেন ধর্ম পালন করছেন? কেননা ধর্মতো বিজ্ঞান নয়, যে আজকে যা পালন করলেন কালকে তা ভুল প্রমানিত হলেই বর্জন করবেন। দু তিন হাজার বছর আগে যা ছিল ধর্ম আজও ঠিক তেমনিই আছে। বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি, আর হবেও না।
মডারেট মুসলমান বলে ইসলামে কোন কথা নেই। মডারেট মুসলমান মানে হল শিক্ষিত জ্ঞ্যানপাপী।
আমার কথা ভুল হয়ে থাকলে আপনার কাছ থেকে যুক্তিযুক্ত উত্তর আশা করি। আপনার মনে আমার কথা কষ্ট দিলে আমি আগেই ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।
@সাইফুল ইসলাম,
@সাইফুল ইসলাম,
আমি আপনার এই মন্তব্যে আপত্তি জানাচ্ছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন এটা ব্যাক্তি আক্রমন হয়ে গেল। কেউ যদি তার ধর্ম বিশ্বাসকে ব্যাক্তিপর্যায়ে রেখে ধর্মপালন করতে পারে তবে কারোরই উচিত নয় তার সেই ধর্মবিশ্বাসে নাক গলানো। অবশ্য এটা আমার সম্পূর্নই ব্যাক্তিগত মতামত।
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা আর ধর্ম পালন করা কি এক হল? বাড়াবাড়ি তখনই হবে যদি উনি ওনার ব্যাক্তিগত বিশ্বাস অন্যের উপর চাপাতে চান। আর উনি সেটা কোথাও করেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। উনি কোথাও নিজের বিশ্বাসটাই যে সেরা তা প্রমানের চেষ্টা করেননি। বরং অন্যের এ ধরনের প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। আর তা করে উনি ভন্ড কিভাবে হলেন বুঝতে পারছিনা।
আমার বুঝতে ভুল ও হতে পারে। যদি ভুল হয় তবে তা ধরিয়ে দিতে অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদ।
@মিঠুন, ঠিক বলেছেন।
@মিঠুন,
আপনি বোধহয় আমার কথা বুঝতে পারেননি। অথবা এমনও হতে পারে আমি বুঝাতে পারিনি। যাই হোক, আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করে বলছি। লেখক ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছেন কি করেন নি ওটা আমি ধর্তব্যের মধ্যেই আনছি না।
লেখাটির শিরোনাম হল, অতিরিক্ত ধর্মীয় উদ্দিপনা এবং রক্ষনশীলতা চরমপন্থার দিকে ধাবিত করতে পারে। ব্যাপার হল, ইসলামে উদারপন্থা বলতে কিছু নেই। প্রকৃত মুসলমান হতে হলে আপনাকে কোরান এবং হাদিসের প্রত্যেকটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। তার মানে হল আপনি, ইসলামের এই কথাটা মানলে চরমপন্থার দিকে যেতে পারে ভেবে কোন নির্দেশ অমান্য করতে পারবেন না। এবং তার মানে হল ইসলাম যা পালন করতে বলে তা করাটাই হল চরমপন্থা। এখন আমি ইসলামের বিভৎস নির্দেশগুলোর কথা বাহুল্য বলে উল্লেখ করলাম না। মুক্তমনাতে এই নিয়ে অনেক অনেক লেখা আছে।
যখন একজন কেউ বুঝতে পারে যে একটা নির্দেশ পালন করলে তা হয়তবা চরমপন্থার দিকে যেতে পারে তখন যুক্তিবাদী যে কেউ তা বর্জন করতে বাধ্য। যদি সে তা না করে তাহলে সে নিজেই চরমপন্থি। আর যদি সে মুখে বলে পালন করলে চরমপন্থী কিন্তু নিজেই পালন করে তখন সে যুক্তি অনুযায়ীই ভন্ড। যদি তাকে ভন্ড বলা না যায় তাহলে তাকে কি বলে সম্মোধন করব বা করা যায় জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
আর একটা ব্যাপার, মুক্তমনায় ইদানিং ব্যক্তি আক্রমন ব্যাপারটা হট টপিক হয়ে গেছে। আচ্ছা বলুন তো ব্যক্তি আক্রমন বলতে আপনি কি বোঝেন?
আমি ব্যক্তি আক্রমন বলতে বুঝি এক জন কারো বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ তোলা যার কোন উপস্থিতি তার ভেতরে নেই বা যা সে করেনি। এখন একজন চুরি করে জীবিকা নির্বাহ করলে আপনি তাকে চোর বলতে বাধ্য। এখন তাকে চোর বলার জন্য যদি সে আপনাকে ব্যক্তি আক্রমনকারী বলে অভিযুক্ত করে আপনার তখন হা করে তাকিয়ে থাকা আর কিছু কি করার থাকবে?
অবাক হই তখন যখন দেখি একই অভিযোগ মুক্তমনাও করছে।
কারো চরিত্র নিয়ে সত্য কিছু বলা যদি ব্যক্তি আক্রমন করা হয় তাহলে মুক্তমনাও কিন্তু এই অভিযোগ এড়াতে পারে না। আকাশ মালিক ভাইয়ের বই ” যে সত্য বলা হয় নি” হবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ব্যক্তি আক্রমনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সম্প্রতি লেখা ফরিদ ভাইয়ের অন্যান্য সব লেখার মতই অত্যন্ত সুপাঠ্য একটি লেখা “মাথিনের জন্য শোক গাথা”র থেকে একটা লাইন দিচ্ছি,
আপনার কি মনে হয় এটা কোন ব্যক্তি আক্রমন? আমার কিন্তু মনে হয় না। কেননা আপনি লেখাটা পড়লেই বুঝতে পারবেন যে বিশেষন গুলো দেয়া হয়েছে তা সম্পুর্ন সত্যি। এখন এই লেখাকে যদি আপনি বা কেউ ব্যক্তি আক্রমন বলে তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
মুক্তমনা এডমিনের কি ফরিদ ভাইয়ের সুবিশাল লেখাটা চোখে পড়েনি? আমার মন্তব্য যদি ব্যক্তি আক্রমন হয় তাহলে ফরিদ ভাইয়ের লেখাটা এবং ওখানে করা আরও ব্যক্তি আক্রমন না করা অনেকের মন্তব্য কেন ব্যক্তি আক্রমন বলে এডমিন সাহেবের কাছে মনে হয় নি তা বুঝতে আমি সত্যি অপারগ।
সব চেয়ে বড় কথা হল আমি কিন্তু আমার আগের মন্তব্যে মনে ব্যথা দিয়ে থাকলে লেখকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। আমি লেখকের কাছ থেকে জবাব আশা করছিলাম। তিনি যেহেতু দেননি এর দুটো মানে হতে পারে, হয় তিনি আমার মন্তব্যের সাথে একমত অথবা আমার “নষ্ট” মন্তব্যের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।
আমার কথা যদি আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হয় তাহলে আমি এখনও আমাকে শোধরানোর জন্য এক পায়ে খাড়া। আপনার উত্তর আশা করছি তাহলে। ভুল হলে অবশ্যই স্বীকার করব। ব্যক্তি আক্রমনকারী হলেও ভুল স্বীকার করার সৎ সাহস আছে।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
চরমপন্থার কি ধরাবাধা কোন সংজ্ঞা আছে?
আবিদ ভাই এর মাঝে কি কি দেখেছেন যাতে তাকে চরমপন্থী বলে মনে হয়? যদি না ধার্মিক মানেই চরমপন্থী ধরে নেন। এখন যদি বলেন যে কেউ আল্লাহয় বিশ্বাস করে মানেই চরমপন্থী তাহলে অবশ্য কথা নেই।
আমি শুধু দেখতে পাচ্ছি যে উনি দাড়ি রাখেন, আর মনে হয় গান বাজনা শুধু অপছন্দই নয়, মনে করেন তার ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক (এতে অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি ঠিকই)। শুধু এর জন্য কি তাকে চরমপন্থী বলা চলে? দাড়ি তো ধর্ম বিশ্বাস ছাড়া আরো বহু লোকে এমনিতেই রাখে। আর উনি বলপূর্বক গান বাজনায় বাধা না দিয়ে শুধু নিজে নি:শব্দে সংগীত সমাবেশ ত্যাগ করতে তাতে কারো কিছু এসে যাচ্ছে?
আবিদ সাহেবের কাছে নিশ্চয়ই মনে হয় যে উনি যে মাত্রায় ধর্ম পালন করেন তা মাত্রাতিরিক্ত নয়, অন্য আরো যারা বাড়াবাড়ি করে তারাই মাত্রাতিরিক্ত। তেমনি আপনার কাছে মনে হচ্ছে আবিদ সাহেব নিজেই বাড়াবাড়ি করেন।
মুক্তমনা কে বা কারা তাকেও কি নিখুতভাবে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব? সংস্কার না মানা যদি মুক্তমনার একই আবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য হয় তবে কি আমরা সবাই কিছু না কিছু সংস্কার মেনে চলি না?
@আদিল মাহমুদ,
আদিল ভাই আমি শুধু তর্কের খাতিরে তর্ক করতে চাই না। সলিড কোন লজিক থাকলে দেখান নাহলে আসেন ক্ষান্ত দেই। দুজনেরই সময় নষ্ট করে কি লাভ?
অবশ্যই আছে। এই লিঙ্ক থেকে কষ্ট করে দেখে নিয়েন।
আর চরমপন্থার কি কোন সংজ্ঞা আছে কিনা সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করার কোন যৌক্তিক কারন আমি দেখতে পারছি না। আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন লেখক। চরমপন্থার উদ্ভাবকও তিনি এই লেখাতে। তো এব্যাপারে তাকেই জিজ্ঞেস করাটা কি যৌক্তিক ছিল না?
আচ্ছা আমার কোন কথাটা দেখে আপনার মনে হল যে আমি লেখককে চরমপন্থি বলেছি?
এই কথাটা দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে আমি তাকে চরমপন্থি বলেছি? তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
আপনার দেয়া ব্যক্তি আক্রমনের অভিযোগের জবাব আমি দিয়েছিলাম। যেহেতু ঐ ব্যাপারে কোন আলোচনাতে যান নি আশা করছি এই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে।
@সাইফুল ইসলাম,
– ভুল হল, আমি আপনাকে এখানে আপনাকে ব্যাক্তি আক্রমনের অভিযোগ করিনি। আমি শুধু আবিদ সাহেবকে ভন্ড বলায় আপত্তি করেছি, কারন তাতে আমার দ্বি-মত আছে। কেন দ্বি-মত আছে তা আমার মত যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। আমার মতে আবিদ সাহেব ভন্ড নন, তবে বিভ্রান্ত। এতে আপনাকে ব্যাক্তিগত আক্রমনের কোন অভিযোগ নেই।
আপনার দেওয়া চরমপন্থার সংজ্ঞা দেখলাম। অনেকটাই গ্রে এরিয়া। এই সংজ্ঞা থেকে নির্দিষ্টভাবে মনে হয় না কাউকে বিতর্কের উর্ধ্বে চরমপন্থী বলা যায়। আবার এক্সট্রিমিজমের সাথে র্যাডিকেলিজম মিলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। এখানেও মডারেট মুসলিম ও চরম মুসলিমের উদাহরন আছে, তবে কি কি ক্রাইটেরিয়ায় কে কোন দলে যাবে তা ব্যাখ্যা করা নেই, কারন তা আসলে সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটা আপেক্ষিক।
চরমপন্থীর প্রসংগ আমি আনিনি, আপনার আলোচনা থেকেই এসেছে। আমি ভন্ড বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম প্রাথমিকভাবে। আপনার কোট করা অংশ থেকে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে আবিদ সাহেবের মাঝেও আপনি চরমপন্থা দেখতে পান। এটা হয়ত আমার বোঝার ভুল, আপনি হয়ত শুধু উদাহরন দিয়েছেন।
আবিদ সাহেবের এই লেখার সামগ্রিক মূল্যায়ন আমার চোখে হল, প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসীদের ব্যাবহারিক জীবনে যে বিভ্রান্তি পদে পদে সংশয়বাদী মনকে নাড়া দিতে পারে তার একটি সত্যবাদী উদাহরন।
@সাইফুল ইসলাম,
ভাই, ব্যক্তিআকক্রমনের ব্যপারে আপনার সংগার সাথে সম্পূর্ন একমত আমি। আমি আপনাকে হয়ত ব্যক্তিআক্রমনের দায়ে দোষী করেছি কারন আমার কাছে মনে হয়নি যে লেখক ভন্ডের মত আচরন করছেন, তাই। আমি আমার অবস্থান নিচে ব্যাখ্যা করছি-
বিশ্বাস বিবর্জিত একজন মানুষও আপনি পৃথিবীতে খুজে পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। কারন লাখ লাখ বছর ধরে এই বিশ্বাসের আবর্তেই মানুষের বসবাস। লেখক যেভাবে তার জীবনধারা পালন করেন তাও একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে; যে বিশ্বাসের সাথে আর কারো বিশ্বাসেরই হবুহু মিল নেই। প্রত্যেকটি মানুষের বিশ্বাসের ধরনই সম্পুর্ণ স্বতন্ত্র। কারো সাথেই কারো মিল আপনি খুজে পাবেন না। দেরিদার ডিকনস্ট্রাকশন তত্ত্বের মত। যে যেভাবে বুঝল সে সেভাবেই পালন করল- ব্যাপারটা অনেকটা এরকম। ইসলামের অনেক বিধান মানবতা বিরোধী। লেখক তা বোঝেন কি না তা আমার জানা নেই। তবে কোন মানবতাবিরোধী কাজ করতে যে খোদা নির্দেশ দিতে পারেনা তা বুঝেই কিন্তু উনি ওনার ধর্মবিশ্বাসকে নিজের মত সংস্কার করে নিয়েছেন। আর আপনার আপত্তির জায়গাটা সম্ভবত এখানেই। আপনার মতে- এটা করতে গিয়ে উনি আর প্রকৃত মুসলমান নেই। কারন সেই প্রকৃত মুসলমান যে কোরান হাদিস অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। উনি যেহেতু নিজে দাড়ি রাখেন, জোব্বা পড়েন আর নিজেকে ধার্মিক মুসলমান বলে দাবী করেন অথচ কোরানের নির্দেশ মত কাফের হত্যায় ঝাপিয়ে পড়েন না তাই আপনার চোখে উনি ভন্ড হয়ে গেছেন। তবে আমি বলব ইসলামের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে না মেনেও উনি নিজেকে মুসলমান দাবী করেন, কারন একজন মুসলমানের পক্ষে এই বিশ্বাস পরিত্যাগ করা কুবই কঠিন। তারউপর ওনার লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে যে উনি নিজেও অনেক কনফিউশনের মাঝে আছেন। এটা অবশ্যই ওনার নিজস্ব বিশ্বাসের সাথে ইসলামের মূলনীতির সংঘর্ষের কারনে হয়েছে।যাই হোক সামগ্র্রিক বিবেচনায় আমি ওনাকে প্রথমেই ভন্ড বলে দিতে রাজী নই। এতে ওনার মনে বিরুপ প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। আর বিশ্বাস করেনা এমন মানুষ দুনিয়াতে ্কটিও আছে কিনা সন্দেহ। আমি নিজে যদিও নাস্তিক তারপড়েও মাঝে মাঝে মনে হয়, ইস এমন যদি কেউ থাকতো যার কাছে না পাওয়ার কস্ট বেদনাগুলো জানানো যাবে, অভিযোগ করা যাবে তাহলে কতই না ভাল হত!! এরকম বিশ্বাস বহনকারী প্রতিটি মানুষকেই তাহলে ভন্ড বলতে হয়।
ব্যাক্তি আকক্রমনের অভিযোগটা আমি তুলে নিচ্ছি। আর সজেন্য আমি দু:খিত। আমি শুধু আপনার ভন্ড বলাটাকে মেনে নিতে পারছিনা।আপনার সাথে যে আমার মতের মিল থাকতেই হবে এমন কোন কথা নাই। আমি শুধু আমার মত জানালাম। ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
লেখককে ভন্ড বলাটা উচিত হল না। উনি নিজেও কিন্তু আত্মসমালোচনা করেছেন। তার নিজের বন্ধুকে গোঁড়ামীর জন্য সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি নিজেরও কিছু ধর্মীয় আচার আচরনের উদাহারন দিয়ে নিজের কাছেই প্রশ্ন করেছেন;
মানে তিনি নিজেও আসলে জানেন না যে তার বন্ধুকে গোঁড়ামীর দায়ে অভিযুক্ত করার নৈতিক অধিকার তার আছে কিনা। কারন তিনি নিজেও সে হিসেবে একই অভিযোগে দুষ্ট হতে পারেন। এ মানসিকতাকে হয়ত কনফিউজ়ড বলা যায়, তবে ভন্ডামীর তো কিছু নেই।
ভন্ড হল যারা মুখে এক করে আর এক তারা। উনি তো নিজেকে বিরাট যুক্তিবাদী, ধর্মের কোন রীতিনীতি কিছুই মানেন না এসব কিছু দাবী করেননি।
মডারেট মুসলিম বলে তত্ত্বীয়ভাবে কিছু না থাকতে পারে, কিন্তু ব্যাবহারিক দিক দিয়ে অবশ্যই আছে। শুধু মডারেট মুসলিম নয়, সব ধার্মিকই আসলে কিছু মাত্রায় মডারেট।
বিশুদ্ধ ধার্মিক কাকে বলা যেতে পারে? আমাদের মুসলিম সমাজের কথাই উদাহরন হিসেবে দেই। ১০০% বিশুদ্ধ ধার্মিক হতে হলে কাউকে কোরান হাদীসের যাবতীয় নির্দেশাবলী অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। পৃথিবীতে এমন মুসলমান একজনও আছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। বলতে পারেন যে তারা তেমন দাবী করেন। দাবী করা আর পালন করতে পারা এক নয়। যারা দাবী করেন তারা অনেকটা গোয়ার্তূমী বশতঃই দাবী করেন।
তাই ব্যাবহারিক অর্থে সব ধার্মিকই কিছুটা হলেও মডারেট। এর মাত্রা নি:সন্দেহে ব্যাক্তি বিশেষে ভ্যারী করে।
@আদিল মাহমুদ,
সম্পূর্ণ সহমত। ১০০% বিশুদ্ধ ধার্মিক একটি অবাস্তব ধারনা। কারন ধর্মের নিয়মকানুন ১০০ ভাগ মেনে চলে এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কয়জন মুসলমান ধর্মের আহবানে জিহাদের ডাক দেন? হয়ত ১০%। কেউ কেউ এই ১০% কেই বিশুদ্ধ ধার্মিক বলে চিহ্নিত করতে পারেন। কিন্তু এখানেও আমার আপত্তি আছে। শুধু জিহাদ মানলেই তো আর হবেনা। এই দশ শতাংশের নিজেদের ভিতরই ধর্মের অনেক কালাকানুন নিয়ে মতভেদ আছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একদল আবার আবার আরেক দলকে ঘোষনা দিয়ে অমুসলিম দাবী করছে। অথচ কার ধর্ম যে সঠিক তা হলফ করে বলার কোন উপায় নেই। সবারই দাবী, তারাই সঠিক বাদবাকী সব ভুল। তাই বলা যায় ধর্ম যেখানে নিজেই সুসংগায়িত কোন বিষয় নয় তাই ১০০% বিশুদ্ধ ধার্মিক একটি অবাস্তব ধারনা।
এরকম একটি বিশ্বাস কেউ যদি নিরবে নিভৃতে পালন করতে চায়, তো করুক না। আর এটা পালন করার সাথে সাথে সে যদি নিজের বিশ্বাসকে শ্রেফ একটি বিশ্বাস বলে বুঝতে পারে তবে সে বাহবা পাবার যোগ্য।
@আদিল মাহমুদ,
মিঠুন ভাইকে দেয়া আমার উত্তরটি দেখে নিন।
আপনাকে একটি সাধারন প্রশ্ন করি। ধরুন আপনি একটা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা ট্রাক আপনার দিকে প্রচন্ড বেগে ছুটে আসছে। আপনি রাস্তার মাঝখানে যদি দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে ট্রাকটি একসময় আপনাকে ধাক্কা দেবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন আপনি যদি দাড়িয়েই থাকেন তাহলে আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করতে বলবেন যে ট্রাকটির উপরে আপনার বিশ্বাস ছিল যে সে আপনাকে এক সময় ধাক্কা দিবে? কেননা যে কোন সুস্থ মানুষই ঐ রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াবে। যদি আপনার মত না দাঁড়ায় তাহলে আমরা কি বুঝব? হয় সে ট্রাকটা উপরে বিশ্বাস করেনি অথবা সে ট্রাকটা দেখেনি। তাই না?
প্রত্যেকটি ধার্মিক ব্যক্তি দাবী করে থাকে তারা আল্লাহ বলেন ঈশ্বর বলেন ঐ ধরনের একটা সত্বায় বিশ্বাস করে। তাদের কথা অনুযায়ী তারা যদি গডের কথা না শোনে তাহলে তারা নির্ঘাত দোজখবাসী হবে।
যদি না মানে তার মানে হল সে গডে বিশ্বাসী না। সে মিথ্যা বলছে। আর যদি দাবী অনুযায়ী বিশ্বাস করে তাহলে তাকে ১০০% নিবেদিত থাকতে হবে। এর কম হওয়া মানেই সে আসলে বিশ্বাস করে না।
বুঝতে পেরেছেন? এর মাঝে কোন ৫০-৫০ ব্যাপার স্যাপার নেই।
সে জন্যেই আমি বলেছি মডারেট ধার্মিক মানেই হল ভন্ড।
মনে হয় আমি ক্লিয়ার করতে পেরেছি আমার অবস্থান।
@সাইফুল ইসলাম,
যুক্তি মানা গেল না, দূঃখিত। আমি আগেই বলেছিলাম যে থিয়োরিটিক্যালী সম্ভব না, তবে প্র্যাক্টিক্যালী খুবই সম্ভব।
প্রথম কথাই হল, ধর্ম ব্যাপারটাই কোন যুক্তির বিষয় নয়, পুরোটাই বিশ্বাসের ব্যাপার। এক একজনের কাছে ধর্ম এক এক রকম। কার ধর্ম আসল? হিন্দু, মুসলমান? তাতেও সমস্যার সমাধান হবে না। মুসলমানদের মাঝে শিয়া, সুন্নী, আহমদিয়া? কার ধর্ম আসল? কার ধর্মকে বলা যাবে ১০০% খাঁটি? বিভিন্ন সেক্টের মধ্যেই কি পার্থক্য হচ্ছে না? আহমদিয়ারা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশী উদার। মুনীর কমিশনের কথা শুনেছেন তো? পাকিস্তানে ৫০ এর দশকে কাদীয়ানী ঠ্যাংগানো ভয়াবহ দাংগার পর দাবী ওঠে তাদের নিষিদ্ধ করতে, কারন তারা মুসলমান নয়। সরকার বিচারপতি মুনীরের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে কে আসল মুসমান তা নির্ধারন করতে। বহু কাঠ খড় পুড়িয়েও এই বেচারারা বের করতে পারেননি কে বা কারা আসল মুসলমান তা নির্নয় করতে। দেশের শীর্ষ আলেম মোল্লারাও পরিষ্কার বলতে পারেননি আসল মুসলমান কারা।
ধর্ম পালন করতে গেলেই এই এই জিনিস করতেই হবে, নাহলে ধার্মিক বলেই পরিচয় দেওয়া যাবে না না এমন কোন কথা কিন্তু নেই। যেমন ধরেন, আমি মুসলমান, কিন্তু ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ি না যা ইসলামের অন্যতম ফরয। এখন কি আমি নামায পড়ি না দেখে আমার ধার্মিক বা মুসলমান ষ্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়া হবে? ঐচ্ছিক বিষয়ের কথা তো বাদই থাকল, যেমন দাড়ি রাখি না দেখেই আমি ধার্মিক নই? কি বলতে চাচ্ছি বুঝছেন তো? আমি কিন্তু ১০০% এর নীচে, কিন্তু আমার মুসলমান ষ্ট্যাটাস চলে যাচ্ছে না।
বলতে পারেন যে আমি নামাজ না পড়লে অনেক মোল্লা আমাকে এটা সেটা বলতে পারে। বলে পারে, তবে তা ধর্মসম্মত নয়। হ্যাঁ, আমি যদি দাবী করি যে আমি মুসলমান এবং তারপর আল্লাহ মানি না বলে ঘোষনা দিলাম তবে সেক্ষেত্রেই আমার মুসলমান ষ্ট্যাটাস বাতিল হবে। তবে খুটিনাটি অনেক নিয়ম কানুন রিচূয়াল আছে যেগুলি পালন করা ব্যাক্তি বিশেষে ভ্যারী করবে। কেউ মনে করে পরপুরুষের সামনে যাওয়াই যাবে না, এমনকি বোরখা পরেও না। কেউ মনে করবে নিনজা ষ্টাইলের বোরখাই ফরয, কেউ আবার মনে করবেন নিনজা ষ্টাইল বোরখার কথা কোরানে নেই, শুধু নির্দিষ্ট কিছু অংগ ঢাকলেই চলবে। এখন এসব রিচূয়ালের পার্থক্যের জন্য কি ধর্মীয় ষ্ট্যাটাস নষ্ট হয়ে যাবে? সবার অবস্থানই কি ০ থেকে ১০০ এর মাঝে পড়ে না? কেউই ০ না, আবার কেউই ১০০ না। খেয়াল করবেন, যারা এমন বিভিন্ন রীতিনীতির ব্যাখ্যা নিজের মত করে নেন তারাও কিন্তু মনে করেন যে তারা ১০০% ই আল্লাহ বা কোরান মেনে চলছেন। শুধু তাদের নিজ মত ব্যাখ্যা করছেন। সবাই দাবী করেন যে গডের কথা তিনিই আসলে বুঝেছেন, অন্যরা বুঝতে পারছে না। আসলে যারা একটু স্মার্ট, তারা দুই কুলই রক্ষা করতে পারেন। ধর্মও মানছেন, আবার মোটামুটি যুগের সাথে বেশী বেখাপ্পা লাগে না এভাবে ধর্মকে শেপ করে ফেলছেন।
কাজেই ধার্মিক মানেই চরমপন্থী হতে হবে এই ধারনা তত্ত্বীয়ভাবে হয়ত ঠিক,তবে ব্যাবহারিক অর্থে খাটে না।
আমার প্রশ্নের জবাব দেননি; পৃথিবীতে হাদীস তো দূরে থাক, কোরানের সব আদেশ নির্দেশ পক্ষরে অক্ষরে মানেন এমন কয়জন মুসলমান পাবেন? যদি দুয়েকজন পাওয়াও যায়, তাহলে বাকিরা কি সব ১০০% মুসলমানের থেকে কম ষ্ট্যাটাসের মুসলমান নয়? ৫০-৫০ এর ব্যাপার ধর্ম জগতেও হতেই পারে, এবং হচ্ছেও।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এই লেখার জবাব কোথার থেকে যে শুরু করি বুঝতে পারছি না।
বিশ্বাসের ব্যাপার বলেই কিন্তু ১০০% ধার্মিকতা ধার্মিকদের থাকা উচিত।
ধার্মিক পরিচয় দেয়া যাবে না এমন তো আমি বলিনি। বলেছি দেয়াটা ভন্ডামি হবে। আপনার আমার মুসলমান স্ট্যাটাসটা দিচ্ছে কে? সমাজ। এখন সমাজের কয় জন লোক আছে যে ১০০% ধর্ম মানে। একটাও নেই। সে জন্যই আল্লাহ খোদা কিছুতে বিশ্বাসের কথা বললেই সবাই ধার্মিক বলে ধরে নিচ্ছে। নিজেদের মান সম্মান বাচাতেই।
আমি বুঝতে পারছি না সহজ ব্যাপারটা কেন আপনি বুঝতে চাচ্ছেন না। আপনি বলবেন যে আল্লাহকে আপনি বিশ্বাস করেন এবং আল্লাহ বলেছে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। এখন যদি আপনি সেই
নামাজ না পড়েন তাহলে আপনাকে ভন্ড ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? আপনি বলবেন চুরি করা মহাপাপ। আবার নিজেই চুরি করবেন তাহলে আপনাকে মানুষ ভন্ড ছাড়া কি বলতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
আমাদের দেশের রাজনীতিবীদরা মুখে বলে তারা জনগনের জন্য এই করে সেই করে। কিন্তু কাজের বেলাতে ফুটো। এখন জনগন তাদের ভন্ড ছাড়া আর কি বলতে পারে? আপনিই বলে দেন।
পৃথিবীতে ১০০% ধার্মিক নেই। আর নেই দেখেই সমস্ত ধার্মিকরাই ভন্ড। আমি বুঝতে পারছি না আপনি বার বার এই ধরনের উদাহরন দিচ্ছেন কেন? আমি কি বলেছি না যে ১০০% ধার্মিক সম্ভব? এই সহজ ব্যাপারটা যদি আপনি এত কথা বলার পরেও বুঝতে না পারেন তাহলে আমার আর কিই বা বলার থাকতে পারে।
আর সব শেষে, ধার্মিক মানে যেহেতু ১০০% বিশ্বাসী হতে হবে সেই জন্যেই যৌক্তিকভাবেই ধার্মিক মানেই চরমপন্থি হতে সে বাধ্য। আমি সুবিধাবাদী ধার্মিকদের কথা বলছি না। ১০০% ধার্মিক না হয়েও(আপনার কথা অনুযায়ী) ধার্মিকরা যা করছে দুনিয়াতে তাতে ১০০% হলে কি হ ভাবতেই গা শিউরে উঠে।
@আদিল মাহমুদ,
আর একটা ব্যাপার বলতে ভুলে গেছি আদিল ভাই। আচ্ছা ধর্ম ছাড়া আর কি কি ব্যাপার আছে যেগুলো তাত্ত্বিক ভাবে সম্ভব নয় কিন্তু প্রাক্টিকালি সম্ভব? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব। আমি কি আসলেই জানিনা নাকি এখন মনে পড়ছে না বুঝতে পারছি না। তাই জানতে চাইছি। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
এ মুহুর্তে লিষ্ট মনে আসছে না; তবে আমি গোঁড়ামী, ধার্মিক, উদারতা এ ব্যাপারগুলিকে অনেকটা সংখ্যা রেখার মত দেখি; মানে পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। সংখ্যা রেখার শুরু কিংবা শেষ আছে? বড় জোর বলা যায় যে এই সংখ্যা এই সংখ্যার থেকে মানে বড় কিংবা ছোট। তবে কখনোই বলা যায় না যে এখানে শুরু এবং এখানে শেষ, অর্থাৎ পরম বলে কিছু নেই।
বড় সংখ্যা বা ছোট সংখ্যা কাকে বলা যাবে? বড়জোর সংখ্যা রেখার মাঝে কোন নির্দিষ্ট প্যারামিটারের বেসিসে একটা জোন নির্ধারন করা যাবে। এই জোনটার পরিব্যাপ্তি হবে শুধুমাত্র এই প্যারামিটারের জন্যই।
আমার কাছে ধার্মিক, মুক্তমনা, গোঁড়ামী এসবের সংজ্ঞাও অনেকটা এমন। এগুলি সবই আপেক্ষিক। স্থান কাল পাত্র ভেদে পরম বলে কিছু নেই, থাকতে পারে না। হাজার বছর আগের ধার্মিক কিংবা মুক্তমনার সাথে তাই এ যুগের ধার্মিক কিংবা মুক্তমনার তফাত থাকবেই।
ধর্মের তো আরো সুবিধে এই এটা যেহেতু বিশ্বাসের ব্যাপার, তাই এর প্রয়োগ হল ব্যাক্তি নির্ভর। যুক্তি বা গণিত নির্ভর হলে বলা যেত যে এই ধার্মিকেরা যুক্তিহীন ধর্ম পালন করছে, তাই তারা দাবী করলেও তারা আসল ধার্মিক নয়। ধর্মে এমন কোন কথা বলার অবকাশ নেই। যার যা বিশ্বাস সেটাই ধর্ম। এভাবেই একই মূল ধর্ম থেকে জন্ম নেয় শিয়া, সুন্নী এসব গোত্রের। কে আসল ধার্মিক, কে ভন্ড বা নকল এটা নির্ধারন করার কোন উপায় নেই আগেই বলেছি।
– এখানেই যুক্তি তর্কের খুব গোঁড়াতেই মতের বড় তফাত। আমি আগেই বলেছি যে আপনার কাছে ঈশ্বরে বিশ্বাস মানেই চরমপন্থী বোঝায় তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমার কাছে তা নয়, আমার ধারনা এখানের অনেক সদস্যই তেমনি ভাবেন, যদিও যুক্তির জগতে গনতন্থের স্থান নগন্য। আমার বিবেচনায় কাউকে শুধুমাত্র ঈশ্বরে বা ধর্মে বিশ্বাসী হলে চরমপন্থী বলা যায় না, বড় জোর বলা যায় কুসংস্কারবাদী, যেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানিত সত্য নয়। চরমপন্থী হলে দেখাতে হবে যে সেই ঈশ্বরে বিশ্বাস অন্য কোন কারো ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখানে মানতে হবে যে বেশীরভাগ ধার্মিককে এবার দোষারপ করা যাবে। কারন বেশীরভাগ ধার্মিক শুধুমাত্র ইশ্বরে ব্যাক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না। তবে তত্ত্বীয়ভাবে তারা শুধুমাত্র নিজের মাঝে সেই বিশ্বাস রাখলে সমস্যা হয় না, তেমন উদাহরন ধর্মজগতে কম হলেও আছে।
– আমিও তো একই কথাই বলেছি। তত্ত্বীয়ভাবে খাঁটি ১০০% ধার্মিক মনে হয় না কেউ আছেন বলে। আমি কিন্তু বলেছি যে ধর্মের অত্যন্ত মৌলিক বিষয় ছাড়া বেশীরভাগ রীতিনীতি না মানলেও কিন্তু কাউকে ধর্মের চোখেই অধার্মিক বলা যাচ্ছে না। এখানে ভন্ড হবে কেমন করে? যেমন, ধার্মিক হতে গেলেই নামাজ পড়তে হবে, দাঁড়ি রাখতে হবে এমন কোন কথা আছে? নামাজ না পড়লে হয়ত গুনাহ হবে বলে ধর্ম মত দেয়, তবে একেবারে অধার্মিক বলে দেয় না। কাজেই আমি নিজেকে মুসলমান দাবী করে নামাজ না পড়লে ভণ্ডামী বলা যাবে কি?
আমার কাছে ভন্ড তারাই যারা মুখে দিনরাত যপে কোরানের সকল বিধিবিধান সব যুগে সব দেশে পালন করতে হবে, কিন্তু নিজেরা সেটা করে না, জিজ্ঞাসা করা হলে নানান যুক্তি দাড়া করায় তারা। আমি আগেই যদি স্বীকার করি যে সেগুলির অনেক কিছুই এই যুগে পালন সম্ভব নয় তবে কি আমাকে ভণ্ড বলা যায়? আমাকে সুবিধাবাদী ধার্মিকও বলা যায় না, কারন আমি কোরান থেকেই কিছু আয়াত কোট করে আমার দাবীর স্বপক্ষে যুক্তি দিতে পারব। ধর্মের সুবিধে বা অসুবিধে দুইই এখানে 🙂 । নিজের বক্তব্য প্রমানে ব্যাখ্যা দাবী করা এমন কিছু নয়। এক কোরান দিয়েই বি্বর্তনবাদের স্বপক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্কের খেলা করা যায়।
“১০০% ধার্মিক না হয়েও(আপনার কথা অনুযায়ী) ধার্মিকরা যা করছে দুনিয়াতে তাতে ১০০% হলে কি হ ভাবতেই গা শিউরে উঠে।”
– কথা সত্য। ধর্মের নামে অনেক গা শিউরে ওঠা ব্যাপার ঘটে। তবে পৃথিবী থেকে ধর্ম উঠে গেলেই কি এসব চলবে না? বা ধার্মিক ছাড়া আর কেউ ভয়াবহ কিছু করে না?
@আদিল মাহমুদ,
আদিল ভাই আপনি বলেছেন,
আমার দেয়া প্রথম মন্তব্যে লেখককে আমি একটি কথা বলেছিলামঃ
একজন মুসলমান বলতে বুঝায় এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোরান এবং হাদিসের প্রত্যেকটি কথা মনেপ্রানে বিশ্বাস করে। মুসলমান হবার প্রথম শর্তই হল এটা, আপনাকে কোরান এবং হাদিস সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে হবে। কেউ যখন নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবী করে তখন কোরান এবং হাদিসের উপরে তার বিশ্বাসের কথাই বলে।
এখন কেউ যদি বলে আমি মুসলমান কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে কোরানের এবং হাদিসের প্রত্যেকটি নির্দেশ এই সমাজে পালন করা যাবে না। তাহলে তাকে ভন্ড ছাড়া আর কি বলা যায়?
মুসলমান কিন্তু কোরান এবং হাদিসের সব নির্দেশকে সর্বকালীন বলে মনে না করাটা হল সোনার পাথর বাটির মতই অবাস্তব জিনিস।
কেননা ইসলাম কিংবা অন্যান্য ধর্ম কিন্তু গডের বানী। এখন কেউ যদি ইসলামের গড মানে আল্লাহর উপরে বিশ্বাস করে, কিন্তু একই সাথে এও বলে যে আল্লাহর সব বানী এই যুগে প্রযোয্য নয় তাহলে আপনি তাকে কি বলবেন? উত্তর দেবেন আশা করি।
আমার যে কথাটার প্রেক্ষিতে এই কথা বলেছেন সে কথাটা আর একবার পড়ে দেখুন। ঈশ্বর বিশ্বাসের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। আপনি ঈশ্বর বিশ্বাসী হয়ে দিব্বি ভাল একজন মানুষের জীবন কাটাতে পারবেন। ডিইষ্টরা কিন্তু ধর্ম ছাড়াই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে।
কিন্তু আমার আপত্তি হল ধার্মিকদের নিয়ে। ধার্মিক মানে হল যে একটি নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস করে। এখন আপনি যদি ইসলাম ধর্মে কিংবা সনাতন ধর্মে বিশ্বাস করেন তার মানে হল আপনি ইসলাম কিংবা সনাতন ধর্মের ঈশ্বরে এবং তার দেয়া বানীতে বিশ্বাস করেন। এখন এই আপনিই যদি বলেন যে আমি ইসলাম ধর্মের আল্লাহতে বিশ্বাস করি কিন্তু তার সব বানী সার্বজনীন নয়। তাহলে আপনাকে ভন্ড ছাড়া কি বলা যায়? আপনি মুসলমান মানেই হল আপনি আল্লাহ ও তার কোরানে বিশ্বাস করেন। যেহেতু ধর্মের কোন পরিবর্তন করা যাবে না ঠিক সেই জন্যেই যখনই বলবেন যে আপনি একজন মুসলমান আর কোরানের সব আয়াত সর্বকালীন নয় তার মানে কি দাঁড়ায় বলে আপনার মনে হয়?
@সাইফুল ইসলাম, আপনার বক্তব্যের সাথে একমত।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনি তো এবার আমাকে বিপদে ফেলে দিলেন, দিব্ব্যী হালকার উপর ঝাড়ি ঝুড়ি দিয়ে ভেবেছিলাম কাটিয়ে দেব, এক সময়ে বিরক্ত হয়ে ক্ষ্যামা দেবেন 🙂 । এবার মনে হয় ধরা খেলাম।
– আপনার এই উক্তি বা তারপরের বেশ কিছু লাইন অনুযায়ী স্বীকার করতে বাধা নেই যে তাদের ভন্ড বলাটা আসলে যুক্তিসংগত।
আমি নিজে এ বিষয়টা নিয়ে অন্য ব্লগের কঠিন ধার্মিক ভাইদের প্রায়ই বিপদে ফেলি। আমিও প্রকারন্তে সরাসরি না হলেও তাদের ভন্ড বলার চেষ্টা করি। আবেগময় কথাবার্তার বাইরে যা শুনতে পারি তা অত্যন্ত জটিল।
ধর্মীয় বেশীরভাগ ব্যাখ্যার মত এর কারনও বহুবিধ।
বেশীরভাগ ধার্মিকই বিশ্বাস করেন যে কোন কারন বশতঃ তারা ১০০% কোরান মানতে পারছেন না, তবে তারা ব্যাক্তিগতভাবে অবশ্যই চান, এতে কোন খাদ নেই। এখন তারা পারিপার্শ্বিকতার কাছে সাময়িকভাবে পরাজিত। মুসলমানদের ঈমানের ঘাটতি প্রধান কারন। এর সাথে পার্থিব জীবনের লোভ, কাফের নাসারাদের ষড়যন্ত্র এমন বহুবিধ বিষয় আছে। তবে তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ইনশাল্লাহ একদিন দুনিয়া জুড়েই ১০০% কোরানিক আইন কায়েম সম্ভব হবে।
এখন প্রশ্ন, যারা মন থেকে এমন বিশ্বাস করেন তাদের যৌক্তিকতাবোধ বা বাস্তবতাবোধ নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কি ভন্ড বলা যায়? আমার তো মনে হয় ভন্ড বলাটা যায় না। কারন, আমি জানি যে তারা বেশীরভাগই আসলেই মন থেকে উপরের কারনগুলি বিশ্বাস করেন। কোরানের যতটুকূ তাদের সাধ্যের মধ্যে পালন করা সম্ভব পালন করেন।
– তত্ত্বীয়ভাবে আমি আর এতে নিশ্চিত নই। আজকাল অনেক ইসলাম প্রিয় ভাইদেরই বড় বড় জ্ঞানগর্ভ লেখা লিখতে দেখি কোরানের মানসুখ আয়াত সম্পর্কে। মানসুখ আয়াত এনাদের মতে হল কোরানের কিছু আয়াত যেগুলি পরে নাজিল হওয়া আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল হয়ে গেছে। এটা মেনে নিলে আর কোরানের সব আয়াত সব যুগে পালন করতে হবে এই মূল নীতি কিভাবে সম্ভব? এই মতবাদের প্রচারকদের মুসলমান ষ্ট্যাটাস বাতিল হয়ে গেছে? আমি জানি না। তবে ইসলাম ডিফেন্ডার ভাইয়েরা অন্তত এনাদের এখনো তেমন কোন অপবাদ দেননি।
কোরানে পূর্ণ বিশ্বাস মানেই সব যুগে সব দেশে ১০০% কোরান মেনে চলা? এতেও আমি অতটা নিশ্চিত নই। কোরানেরই কিছু আয়াত ব্যাখ্যা করে এই ধারনায় ভিন্নমত সম্ভব।
আমার ব্যাক্তিগত অভিমত, এ ব্যাপারে ধর্মীয় জগতের লোকজন সুষ্পষ্ট বিভ্রান্তির জগতে থাকেন। একদিকে বর্তমান দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা, আরেক দিকে বাল্যকাল থেকে শিখিয়ে দেওয়া কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন ভংগের ভয়াবহ শাস্তির ভয়। দুটোর কোনটাকেই অস্বীকার করতে পারেন না। যারা একটু স্মার্ট তারা ধর্মীয় আয়াত শ্লোকের যুগোপযোগি ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেন। এতে কিছুটা কাজ হলেও সনাতনপন্থীদের সাথে লেগে যায় সংঘাত।
ডীঈষ্ট এবং প্রথাগত ধার্মিকদের পার্থক্য আছে। আপনার চরমপন্থার তত্ত্ব শুধু প্রথাগত ধার্মিকদের জন্য প্রযোজ্য বুঝতে পারলাম, শুধু ঈশ্বর বিশ্বাসে আপনার আপত্তি নেই। তবে তত্ত্বীয় দিক ছাড়া, আবারো বলতে হচ্ছে যে বাস্তব জীবনে অনেক লোকেই নিজেকে জোর গলায় মুসলমান দাবী করেন , কিন্তু ধর্মীয় যেসব আচার আচরনের সমালোচনা করা হয় সেগুলি তারা পালন করেন না। এদের ভন্ড বলা যায় কিনা তা বিতর্কের বিষয় (আগেই কিছু বলেছি), তবে চরমপন্থী বলা যায় না। এদের অমুসলিম বলার অধিকার কারো আছে বলেও আমার জানা নেই।
@আদিল মাহমুদ,
এটা বিতর্কের বিষয় এটা ঠিক। ইসলামী ব্যাংকে যেমন সুদের নাম দেয়া হয়েছে ‘মুনাফা’, তেমনি ‘ভন্ড’ শব্দটার ইসলামীক দৃষ্টিভংগীতে গ্রহনযোগ্য অন্য কোন ইতিবাচক নাম দেয়া যেতে পারে। এদেরকে চরমপন্থী বলা যায়না ঠিক, কিন্তু এদেরই চরমপন্থী হওয়ার দিকে ধাবিত হবার সম্ভাবনা বেশী থেকে যায়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
একমত। বাস্তবিকার পরিপেক্ষিতে সেটাই বেশী লক্ষ্য করা যায়; অস্বীকার করতে পারি না।
ইসলামী ব্যাকং প্রসংগটা খুবই ভাল প্রসংগ। আমি এর পক্ষে বিপক্ষে জানতে চাই। ইসলামের বহু কিছুএর সমালোচনা হলেও এর সমালোচনামূলক পূর্নাংগ কোন লেখা আমি এ পর্যন্ত বাংলায় পাইনি। পেলে উপকৃত হব। আমি নিজে সামান্য ওয়েব ঘাটাঘাটি করে যা বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে এটা ভন্ডামীরই নামান্তর, সুদকে সুদ না বলে মুনাফা নাম দেওয়া ছাড়া নুতন কিছু বুঝিনি।
ইসলাম সমালোচনার এই মোক্ষম অস্ত্র কেউ নিচ্ছেন না কেন জানি না 🙂 , কেউ লিখলে পক্ষেও নিশ্চয়ই কিছু জানা যাবে, কারন আমার অর্থনীতি বা ব্যাকিং এর জ্ঞান খুবই সামান্য, তাই সূদ/মুনাফা হয়ত ঠিক্মত বুঝছি না।
যারা যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ধর্ম একটা ফান্ডামেন্টাল বিষয়। তাতে যেহেতু বিশ্বাস করি, সে অর্থে আমিতো ফান্ডামেন্টালিষ্টই। মজার ব্যাপার হলো, আমার লিখিত সুবিশাল আর্টিকলটায় আমি মূলতঃ কন্টেম্পরারী কয়েকটা ধর্মের রেডিক্যাল আইডিয়োলজির উত্থানের ওপরে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। কেবল কথা প্রসঙ্গে অস্পষ্টভাবেই এটুকু উঠে এসেছে যে, আমি একজন ধার্মিক মুসলমান। আমি অবাক হলাম এটা দেখে যে, এতকিছু বাদ দিয়ে অনেকে এমন সব মন্তব্য করেছেন যে, একজন ধার্মিক মুসলমান হয়ে এমন একটা আর্টিকল লেখাই যেন আমার জন্যে বড় অন্যায় হয়ে গেছে। জানিনা আমি চালাকিটাই বা কি করেছি এখানে। মন্তব্য করার মাঝেও কিন্তু ‘একেবারেই সহ্য না করা’র এটিচিউডও প্রকাশ পায়। সেকারনেই মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমি বোধহয় এই ফোরামটার আবহাওয়াতে একেবারেই উপযুক্ত নই।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনি লিখেছেন একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে যান কিন্তু গান বাজনার অনুষ্ঠানে থাকেন না , আপনার বন্ধু একজন কট্টরপন্থি, সে যখন কোন ধর্মীয় বিষয়ে তর্কবিতর্ক করে আপনি চুপ করে শুনে যান প্রতিউত্তর করেন না তার অর্থ মৌনতা সম্মতির লক্ষন , আপনার দাড়ি আছে ও জোব্বা মার্কা কাপড় পরিধান করেন যা মোহাম্মদ পরতেন যদিও তা ইসলামী পোশাক নয় বরং তা আবহাওয়া ও পরিবেশ গত কারনে মরুভুমির পোশাক, – এত কিছুর পরে আপনি দাবি করছেন নিজেকে উদারপন্থি হিসাবে, হাস্যকর নয় কি? আপনার ধারনাও একজন কট্টর পন্থির মত তা হলো- ধর্ম হলো ফান্ডামেন্টাল বিষয় তাই আপনি ফান্ডামেন্টাল। না ভাই আমরা মনে করি না ধর্ম কোন ফান্ডামেন্টাল বিষয়, আমার ধারনা আধুনিক মনস্ক মানুষও ঠিক তাই মনে করে।তা ছাড়া ফান্ডামেন্টাল যদিও ফান্ডামেন্ট শব্দ থেকে উদ্ভুত , তার পরেও এর অর্থ ব্যপকভাবে পাল্টে গেছে ইদানিং কালে যা আপনি নিজেও জানেন এবং এর আধুনিক অর্থ হলো গোড়াপন্থি বা অন্য কথায় চরম পন্থি। মুক্তমনা আসলে সবার জন্য , আপনি আপনার মত প্রকাশ করবেন আমি আমার , কেউ সেখানে বাধা দেবে না , বরং আপনাদের মত মুখোশধারী উদারপন্থী লোকজন থাকলে আমাদের সুবিধা । তাহলে আমরা আপনাদের সর্বশেষ মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি।
আমি মনে করি চরমপন্থী হওয়ার পিছনে নিম্মের চারটা কারণ কাজ করতে পারে।
১) “প্রগতিশীল” রাজনীতি করার জন্য যারা ধর্মকর্ম ছেড়ে দেয় তারা জেনে বুঝে ধর্মত্যাগ করে কিনা জানি ন। মধ্যবয়সে যখন তাদের মাথায় মরণচিন্তা ঘুরঘুর করা শুরু করে, তখন মানুষের সেই চিরায়ত মৃত্যুভয়টাই তাদের মনে ধর্মানুভূতির পোশাকে আবির্ভূত হয়। যে রক্তগরম করা স্লোগান শুনে বাম রাজনীতি করে আর যে তত্ত্ব বুঝে বাম রাজনীতি করে, তাদের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে। প্রথম প্রথম তারা(হুজুগে বামপন্থীরা) ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা্র মধ্যেই ধর্মচর্চা সীমাবদ্ধ রাখে, ধর্মবেত্তারা পরে বিশ্বাসের তেলে আগুন লাগিয়ে দেন।
২) মানুষ যখন বিচিত্র কারণে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে, তখন স্বর্গের হুর-পরীদের আবেদন হঠাত করেই মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়।
৩) ছোটবেলায় মানুষকে অতিরিক্ত ধর্মশিক্ষা দিয়ে তার স্বাভাবিক চিন্তাক্ষমতা বিনষ্ট করে দিলে তারা পরে খুব সহজেই মৌলবাদী আন্দোলনের সাথে জড়িতে হয়ে পড়ে।
৪) ধর্ম যখন ভাবের জগত ছেড়ে রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি, বিজ্ঞানের মত ইহজাগতিক অবভাস বা phenomena এর প্রতি ঝুকে পড়ে, তখন মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আফটার অল, ধর্মের ভিত্তি বিশ্বাস আর “বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর”।
ধর্মের ব্যাপারে কনজারভেটিজম বা রক্ষণশীলতার অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না। হয় আপনি ধর্ম মানছেন নয়ত আপনি মানছেন না। ইসলামে নৃত্যশিল্প অবশ্যই হারাম- একটা অচেনা মেয়ের চুল দেখলে যেখানে মুসলমানদের যৌনানুভূতিতে সুড়সুড়ি লাগে(পর্দাপ্রথা অন্তত তাই ইঙ্গিত করে), সেখানে একদল নারীর অঙ্গভঙ্গী নিঃসন্দেহে একজন মুমিনের ঈমান ধ্বংস করে দিবে। ইসলাম মেনে চলতে গেলে আমাদের সংস্কৃতি থেকে নৃত্যশিল্প বাদ দিতে হবে। গানের ব্যাপারে কোরানে যদিও কিছু বলা হয়নি, একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে গানের কথাগুলোর সিংহভাগই অনৈসলামিক উপাদানে ভর্তি। বাংলা গানগুলো থেকে প্রেম ও নারী সম্পর্কিত অংশগুলো কেটে দিলে বাংলা গানের কিছুই বলতে গেলে বাকি থাকবে না(এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রেম সাহিত্যের একটা বিরাট এলাকাজুড়ে বিরাজ করে)। আমাদের সংগীতশিল্প মৃতপ্রায় হয়ে যাবে। সমাজে আমরা যদি ইসলামি জেন্ডার সেগ্রেগেশন প্রতিষ্ঠা করি, তাহলে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর কি দশা হবে সেটা আপনার কল্পনাশক্তির কাছে ছেড়ে দিলাম। এখন আপনি কতটুকু ধর্ম মানছেন সেটা আপনিই জানেন।
মোদ্দা কথা হল, “মডারেট মুসলিম” একটা অস্পষ্ট টার্ম। এই পশ্চিমা সুভাষণটা উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে, তাই এটা পরিহার করা দরকার।
ইসলাম মেনে চলতে গেলে পুরো্ সমাজকেই উল্টে ফেলতে হবে। নাচ,গানতো আছেই এরপর পত্রপত্রিকায় ছাপানো ছবি, বিলবোর্ড, টেলিভিসন, গল্পের কাহিনি, পোষাক কোনটা আমাদের ইসলামসম্মত? বেশিভাগ মানুষ সুবিধাবাদি, পা দিয়ে থাকে দুই নৌকায়, “তাল গাছটি আমার” এর মত বলতে থাকে আসলে ইসলামই সঠিক।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কথা অনেকটাই সত্য। ব্যাবহারিক অর্থে তেমনই দাঁড়ায়। আক্ষরিক অর্থে মূল ইসলাম মানতে গেলে অনেকটা এরকমই দাঁড়ায়। পৃথিবী হবে মুসলিম এবং নন-মুসলিম এই দুটি ভাগে বিভক্ত।
এটা যারা বোঝেন তারা যথাসম্ভব মডারেট হতে চেষ্টা করেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করেন কোরান হাদীসের বিধি বিধানকে কোনভাবে যুগোপযোগী ইন্টারপ্রেশটশন দিতে।
ভাই আবিদ
আপনার প্রবন্ধে ধরি মাছ না ছুই পানি জাতীয় কিছু লিখেছেন যা বোধগম্য হলো না ঠিকমতো। আপনার নিজের যে বেশ ভূষা ও আচরনের বর্ননা করেছেন, তাতে আপনি ঠিক এক্সট্রিমিষ্ট না হলেও যথেষ্ট ফান্ডামেন্টালিষ্ট তা কিন্ত চালাক পাঠক বুঝতে পারে । আপনার ধরি মাছ না ছুই পানি জাতীয় কথা বার্তার এটাও অন্যতম কারন হতে পারে বলে মনে হয়। ফান্ডামেন্টালিষ্টরা মনে করে তারাই সব চাইতে বেশী চালাক, 😛
আবিদ ভাই আপনার শিরোনামের ‘may’ কথাটা না থাকলেও চলত। ঘটনাতো তাই হচ্ছে।
বিস্তারিত আলোচনায় গেলামনা। তবে মুসলমানরা বোধহয় মিউজিক শুনতে পারেনা তাই না? আচ্ছা অন্য শিল্পগুলো কি তারা উপভোগ করতে পারে? যেমন চিত্রকলা, সাহিত্য? ভালো সাহিত্য ভালো কিন্তু ভালো সংগীত বোধহয় ভালো না? অনেক আগে বেহেশতী জেওর বইতে দেখছিলাম যে মাওলানা আশরাফ আলী থানাভী মহিলাদের সাহিত্য পড়তে না করেছেন।
আচ্ছা ছবি দেখার সময়ে যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হয় সেটা শুনলে কতটা পাপ হতে পারে? যেমন আপনি যে বুশ কে নিয়ে ছবিটার কথা বললেন তাতে নিশ্চয়ই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল?
সেল ফোন ব্যবহার না করার আরেকটি ইসলামী উপযোগিতা পেলাম। সেল ফোনের রিং টোন অনেকটা মিউজিকের মত। যদি গুনাহ হয়? (অবশ্য রিং টোন এ অনেকে আযান বা কোরান তেলাওয়াত ও টিউন করতে পারেন।)- দুষ্টামি করলাম, সিরিয়াসলি নিয়েন না।
শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনার লেখাটি আমার চিন্তায় গতিময়তা দান করেছে। সে বিষয়ে পরে আলাপ করি। আগে আমার চোখে ধরা পড়া একটি সমস্যা নিয়ে কথা বলা যাক।
আমি বেশ কয়েকদিন থেকে লক্ষ্য করছি আপনারা যারা প্রবাসে জীবন যাপন করছেন তাদের প্রত্যেকটা লেখনিতেই কেমন যেন দৃষ্টিকটু পারিভাষিক শব্দের ছড়াছড়ি (আমাদের দেশীও নব্য ইংরেজী জানা মানুষগুলোও একই রকম কাজ করছে) । মানে ইংরেজী শব্দের ছড়াছড়ি।
হয়ত আপনারা প্রবাসে দীর্ঘসময় কাটানোর কারনে মুখের বোলে ইংরেজী শব্দের খৈ এড়িয়ে যেতে পারছেন না। তবে আমি একটা কথা বলিঃ একজন লেখক হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের পাঠক কারা তা বুঝতে হবে। যাতে সকলেই, মানে শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলেই আমাদের লেখাটা পড়ে কল্যাণ লাভ করতে পারে, যা জানাতে চাই তা জানতে পারে সেই দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। রচনার প্রাঞ্জলতার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিষম গুরুত্বপূর্ণ মনে করি আমি। তাই আমাদের সর্বদা চেষ্টা থাকা উচিত সর্বদা সকলের কাছে একটি অনায়াশলব্ধ লেখনি উপহার দেবার যাতে সকল মানুষের স্তরে লেখাটি প্রবেশ করতে পারে।
তাই বলি, লেখনিতে ইংরেজী শব্দ পরিহার করে বাংলায় লিখুন। এই যেমনঃ আপনি শিরনামই শুরু করলেন একেবারে ইংরেজীতে, একজন ইংরেজী না জানা বা কম জানা লোক আপনার শিরোনাম দেখেই ভরকে যাবে, হয়ত আর লিখাটা পড়ে ওঠা হবে না, ফলে আপনি যে নিজ মতামত সকল মানুষের কল্যাণের খাতিরে জানানোর উদ্দেশ্যে লেখাটি লিখছেন তা কি কিছুটা অবশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায় নি? দয়াকরে শিরোনামটি বাংলায় লিখে দিন।
আপনার সমগ্র প্রবন্ধব্যাপী কিছু শব্দ অবশ্যই বাংলায় লিখতে পারলে পাঠকের কাছে জিনিষটি আরও তাড়াতাড়ি পৌছাত ; আমার মত মূর্খ মানুষের ক্ষেত্রবিশেষে অভিধানের শরনাপন্ন হতে হত না। এই যেমনঃ
আর উইকেপিরিয়ার লেখাটি আপনি অনুবাদ করে দিতে পারতেন যাতে সকলেই পড়তে পারত ( এমন লোকও তো থাকতে পারে যে ইংরেজী জানে না , ফলে ওই অনুচ্ছেদ থেকে সে কিছুই জানতে পারল না , অথবা ভাষা ভাষা ইংরেজী জ্ঞান থাকার কারণে অনুচ্ছেদ থেকে সামান্য মর্মই উদ্ধার করতে পারল অথবা ভুল বুঝল ) আপনার যদি অনুবাদের বিশুদ্ধতার ভয় তাকে তবে নিচে বন্ধনীতে মূল ইংরেজী অনুচ্ছেদটি দিয়ে দিতে পারেন।
আমার কথা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন। আমি একটা কথাই বলতে চাচ্ছি আমাদের অবশ্যই সর্বসাধারণের বোধগোম্য একটি লেখা উপহার দেওয়া উচিত, যাতে সর্বসাধারণ বিষয়টি পড়ে সকলে জানতে পারে ; এক অংশ জানল আর এক অংশ জানল না তাতে আমার মনে হয় সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হয় না। আমার বেয়াদপী ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে আমার মন জুড়াতো। আপনাকে ধন্যবাদ। :rose2:
@মুহাইমীন,
অনেকগুলো ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করার জন্যে দুঃখিত। এরপর থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ইংরেজী শব্দের ব্যবহার এড়ানোর। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
আব্দুর রহমান আবিদ, আপনার লেখাটার শিরোনাম এবং পুরো লেখা পড়ে একটা প্রশ্ন মনে আসলো – আপনি ঠিক কী করলে সেটাকে ‘এক্সেসিভ’ বলে মনে করেন?
আপনি নিজেও তো ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী দাঁড়ি রাখেন এবং হাঁটু পর্যন্ত কাপড় পরেন, একুশের অনুষ্ঠানে গানবাজনা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু সেটাকে বোধহয় এক্সেসিভ রিলিজিয়াস যীল বা কনজারভেটিজম বলে মনে করছেন না, তাই তো? তাহলে, আপনার বন্ধু বা অন্যদের ক্ষেত্রে ঠিক কোন জিনিষটাকে করছেন?
এতোদিন পর, এই ২০১০ সালেও এটা ভাবতে অবাক লাগছে?! সত্যি? 🙂
@স্নিগ্ধা,
ধর্মের সাথে ধর্মহীনতার পার্থক্য যত পরিষ্কার, এখানে সেভাবে কোনো ‘ফাইন লাইন’ টানা কঠিনই। আমি একটা ‘স্কুল অব থট’ থেকে নিরীহ ধর্মপালনের সাথে ‘রেডিক্যাল’ মনোভাবের পার্থক্য দেখার চেষ্টা করি। এবং আমার থট প্রসেস অবশ্যই চুড়ান্ত (এ্যাবসলুট) নয়। এবং এও সত্যি, ভিন্ন আরেকটা ‘স্কুল অব থট’ থেকে জিনিষটাকে দেখলে আমার বন্ধুর সাথে আসলে আমার তেমন পার্থক্য কারো চোখে নাও পড়তে পারে। আপনার প্রশ্নের ঠিক উত্তর দেয়া নয়, কেবল আমার ষ্ট্যান্ডটা একটু ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা করলাম শুধু।
চমতকার লাগল।
আমি ছাড়াও যে এই যুগে আর কেউ সেল ফোন ছাড়াই দিব্ব্যী আছেন জেনে আরো ভাল লাগল 🙂 ।
আজকের দুনিয়ায় চরমপন্থা মনে হয় দিনে দিনে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত লোকে যখন এম এম টাইপের মানুষে গণহারে বিবর্তিত হন তখন খুবই আশংকার কথা।
@আদিল মাহমুদ,
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। সাথে কমপ্লিমেন্টস্-এর জন্যেও।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনার আমার সেল ফোন ছাড়াও আরো বড় মিল আছে, আমিও বুয়েট সাহিত্য বিভাগেরই ছাত্র, তবে আপনার জুনিয়র।
@আদিল মাহমুদ,
“আমিও বুয়েট সাহিত্য বিভাগেরই ছাত্র”!!!!!!!
:laugh: :laugh: :laugh:
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনার সাহিত্য শিক্ষা যথাযথ হয়েছে বলা যায়, আমার ভেজাল আছে তাই আপনাদের মত লিখতে পারি না। 🙂
@আদিল মাহমুদ,
আদিল ভাই, বুয়েটিয়ান শুনলেই মনে হয় যেন, আহ্ আপনজন কাউরে পাইছি।
ভাইয়া কিছু মনে কইরেন না, বুয়েটে কোন ব্যাচ আপনি আর কোন ডিপার্টমেন্ট?
আমি ০১ ব্যাচ, মেকানিক্যাল। :rose2:
@মিঠুন,
তাই নাকি??? এতদিন তো বলেন নাই, একজন মেকু পাওয়া গেছে।
আমি ৯০ ব্যাচ, সাহিত্য মানে তো বুঝেনই।
@আদিল মাহমুদ,
আগে আসলে আমি জানতাম না যে, আপনি বুয়েটের। তাই আর বলা হয়নি।
সাহিত্য বিভাগের রহস্যটা ধরতে পারছিনা 🙁
@মিঠুন,
ধরতে না পারলেই ভাল ছিল, নেহায়েত জানতে চাচ্ছেন তাই…
সিভিল।
@আদিল মাহমুদ,
আমি শুধু সিভিলই নই। ফোর্থ ইয়ারে ‘মেজর’ ছিল ‘এনভায়রনমেন্ট’ এবং ‘ওয়াটার’। যাকে বলা যায় “সাহিত্যের ওপরে সাহিত্য”!!!!
@আব্দুর রহমান আবিদ,
তবে আমার মনে হয়, বুয়েটের সব থেকে বড় সাহিত্য বিভাগ হল urban and regional planning. 😀
@আব্দুর রহমান আবিদ,
এইবার আপনার সাহিত্য প্রতিভার কারন বুঝলাম। আমার ছিল ষ্ট্রাকচার এনভায়রমেন্ট, সেজন্যই ভেজাল।
আমিও সেল ছাড়া থাকতে চাই। যন্ত্রটা বড্ড যন্ত্রনা দেয়।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
বাংলাদেশে বোধহয় এখন আর আক্ষরিক অর্থেই সেল বিহীন জীবন সম্ভব নয়। ল্যান্ড ফোন পাওয়া এমনিতেই খুব কঠিন। দেশের নাটক মাঝে মাঝে দেখলে মনে হয় যে মোট
এখানেও সেল ফোন বিহীন জীবন খুব বিরল। আমাদের একটি আছে, যা বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ রাখি, শুধু রাস্তা ঘাটে নামলে চালাই। নিজেকে কেমন যেন বন্দী বন্দী লাগে, আর নিত্য নুতন চটকদার ফীচার ওয়ালা ফোনের দ্রুত বাজার দখলকে মনে হয় অপ্রয়োযনীয় শিল্প। চলাফেরা শুধু বাসা অফিস বাসা, ফোনের মধ্যে ইন্টারনেট নিয়ে কোন ঘেঁচু করব তাই বুঝি না 🙂 ।