গত ২৬ মার্চ বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে মাওলানা নিজামী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতির আসনে রেখেই মুক্তিযুদ্ধ হয় এবং তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বলেছিলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। পরে তিনি সংসদীয় পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে বাংলাদেশের মুসলিম পরিচয় ত্যাগ করেননি।’
মাওলানা নিজামী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্যে দেশবাসী ও অন্যান্য দেশের প্রতি কী বার্তা ছিল তা আওয়ামী লীগ নেতাদের গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর েপ্রক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী বলেন, তিনি নিজের বিশ্বাস থেকে এবং জামায়াতে ইসলামী শেখ মুজিবুর রহমানকে এভাবেই মূল্যায়ন করে এসেছে। কিন্ত– তাদের বত্তপ্তব্যগুলো মিডিয়ায় অনেক সময়ই সঠিকভাবে প্রচার করা হয়নি। নিজামী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ভারত ও রাশিয়ার বিরোধিতা উেপক্ষা করে লাহোরে ওআইসি’র মহাসেম্মলনে যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুসলিম পরিচিতিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুসলিম জাহানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। (খবর; ২৭ মার্চ নয়াদিগন্ত)
নিজামীর এ ধরনের বক্তব্য সবাইকে রিতিমত অবাক ও বিম্মিত করে। একেক জনের অবাক হবার পেছনে আছে আবার একেক কারন । কেউ ভুতের মুখে রাম নাম শুনে অবাক, কেউ ধর্মপ্রান নিজামির অবনতি নিয়ে চিন্তিত, আবার কেউ রহস্য ঘুচাতে রিতিমত কৌতুহলী। তবে এবারই প্রথম নয় বেশ কিছুদিন যাবৎ জামায়াত ইসলামীকে অন্য সুরে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু আসলে ধর্মীয় প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান কোথায় ছিল, নতুন প্রজন্ম রিতিমত এ িবষয়ে কৌতুহল অনুভব করে। আসুন একটু পেছনে ফিরে দেখি সেদিনের যুবক মুজিবকে। ভুল বলা হল থাকে আমি দেখানোর কে, যাকে চর্মচক্ষে দেখার সৌভাগ্যও আমার হয় নি তার সম্পর্কে আমার কিবা জানার কথা। তবে মিডিয়ার কল্যানে নিজামী সাহেবকে প্রায় প্রতিদিনই অন্তত টিভি পর্দায় দেখার সৌভাগ্য আমাদের হচ্ছে, সেই সাথে বোনাস হিসেবে পাচিছ তার েদয়া নিত্য নতুন সব তথ্য। যা হোক মুল বিষয়ে ফিের আসা যাক।
টুঙ্গিপাড়ার আত্ববিশ্বাসী আর আত্বপ্রত্যয়ী যুবক শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সুচনা হয় কলকাতা শহরে। ১৯৪০ সালের দিকে তিনি ভর্তি হলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তখন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের রাজনীতি তখন তুঙ্গে। ইতিমধ্যে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মুসলিম লীগ আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। বঙ্গভঙ্গসহ বেশ কয়েকটি প্রশ্নে কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেও ঐ সময়টাতে অন্তত কংগ্রেসের সামনে মুসলিম লীগ একটি সম্পূর্ণই সাম্প্রদায়িক সংগঠন।
এবার কংগ্রেসের দিকে ফেরা যাক। স্পষ্টতই তখন দুইভাগে বিভক্ত এই শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন। দুই মেরুর একদিকে ছিল মহাত্মা গান্ধী অন্যদিকে নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। ইতিহাসবেত্তাদের ধারাভাষ্যে এ দুই নেতার মধ্যে গান্ধীজীকে ঠিক সাম্প্রদায়িক না বলা গেলেও রক্ষনশীল বলা যায় আর নেতাজিকে তারা আক্ষা দিয়েছে মুক্তমনের আধুনিক রাজনীতিবিদ হিসেবে। তিনি তখন গান্ধিজীর উল্টোরথে ভারত স্বাধীনের স্বপ্নে বিভোর। নেতাজি প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ যা কংগ্রেস রাজনীতিতে তখন তুমুল বেগে সক্রিয়।
অন্যদিকে মুসলিম লীগ, কংগ্রেসের বাইরেও ছিল বিভিন্ন কমিউনিষ্ট পার্টি যারা শ্রমিক বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে সংগঠিত এবং যথেষ্ট জনপ্রিয়। এবার আসি শেখ মুজিবের কাছে। এতগুলো পথের মধ্যে তিনি কোন পথকে বেছে নেবেন। কোন দলের হাত ধরে তার রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটবে। মুজিবের মত আত্বপ্রত্যয়ী যুবকের আসলে কোন দলটিকে বেছে নেয়া উচিত? আর কোন দল নয় তিনি যোগ দিলে সাম্প্রদায়িক দল মুসলিম লীগে। হয়ত এটাই পরিস্থিতি সাপেেক্ষ তখন স্বাভাবিক ছিল। এর বাইরেও একটু চিন্তা করি, মুজিবের মুসলিম লীগে অর্ন্তভুক্তির কারণ কি? এক. রাজনৈতিক ভাবে বেশি লাভবান হবার সুযোগ; দুই. ধর্ম বা তার সম্প্রদায়ের প্রতি দুর্বলতা তিন. উপরের দুটোই। আমাদের মত সাধারণ মানুষেরা তিন নম্বরটিকেই কারণ হিসেবে বেছে নিতে বেশী আগ্রহী হয়। অর্থ্যাৎ রাজনৈতিক স্বার্থেও বাইরেও অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর ধর্মের প্রতি দুর্বলতা ছিল।
অতপর দীর্ঘ সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন পারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু এক সময় আওয়ামী লীগের কর্ণধার হলেন। সেই আওয়ামী লীগ হল মুসলিম লীগের পরিবর্তিত রূপ। সেই আওয়ামী লীগ হল সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন শক্তির ছায়ায় চলা আওয়ামী লীগ। এ আওয়ামী লীগ তখনো স্বায়ত্বশাসনে কথা বলেনি। যেসব বাম দলগুলো ধর্ম নিরেপেক্ষতার কথা বলত মাজে মাঝে তাদেরও বিরোধীতা করত আওয়ামী লীগ। সেটা ৬৮ সালের কথা। মুজিব ও তার আওয়ামী লীগ থেমে থাকল না। প্রবল গণজোয়ার নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। বাম দলগুলোর চরম ব্যর্থতাই যেন বঙ্গবন্ধুকে এনে দিল চূড়ান্ত সাফল্য। তিনি তখন জাতিকে উপহার দিলেন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু তখন জাতিকে নতুন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েই ফেলেছেন। মুজিব নামে বাঙালি তখন পাগল। সেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের স্রোতে ভাসা ৭ কোটি বাঙালি তখন মুজিবের বিশাল বপুর আশ্রয়ে।
এ জাতীয়তাবাদের স্বরূপ কিন্তু স্বকিয়। মুসলিম আর হিন্দু জাতীয়তাবাদের হাত ধরে সৃষ্টি হয় পাকিস্তান আর ভারত। এই সব ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শিকড় উপরে ফেলে ’জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে যে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটল তা সত্যিকারেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এখানে ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল, অসাম্প্রদায়িকতা ছিল, বাঙালিত্ব ছিল। তবে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে এ অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের পেছনের মহানায়ক বরাবরই ধর্মীয় প্রশ্নে রক্ষণশীল। হয়ত বা কিছুটা ভয়ও কাজ করেছে। কিন্তু ততক্ষণে হয়ত বঙ্গবন্ধুর মনে ‘ধর্ম নিরেপেক্ষতা’ নামের এ আধুনিকতম চিন্তা আর মতবাদ স্থায়ীভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখানে অবশ্য উল্লেখ্য এ জাতীয়তাবাদী চেতনা আর আন্দোলনের পেছনের শক্তি তখন সামাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকার অশুভ ছায়া তখন আওয়ামী লীগের উপর হতে প্রায় উেঠ গেছে।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেষ নাগাদ পারলেন না। দুর্ভাগ্য বা অদূরদর্শিতা যাই বলা হোক না কেন, তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল পাকিস্তানে। পেছনে ফেলে রেখে গেলেন তার সাত কোটি অসহায় সন্তানকে। ততক্ষণে ধর্ম ব্যবসায়ী, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা তার নিজস্ব রূপ দেখিয়ে ফেলেছে। সে পাকিস্তানকে সমর্থন করে বসল। অবধারিতভাবেই পূর্ব বাংলার পেছনে এসে দাড়াল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন।
তারপর ১০ জানুয়ারি। তিনি ফিরে এলেন স্বাধীন দেেশ। কিন্তু সেই দেশ ছিল অচেনা এক দেশ। পেছনে নেই চিরচেনা সেই মার্কিন শক্তি। চারিদিকে লাশের গন্ধ। নতুন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ তখন সোভিয়েত রাশিয়ার আশ্রয়ে। মন থেকে নাকি বাধ্য হয়েই কে জানে িতনি বললেন সমাজতন্ত্রের কথা। ততক্ষণে ধর্মর্নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তার ভেতরকার স্বপ্নই হয়ে গেছে কারণ তিনি তখন পুরো ৭ কোটি বাঙালির পিতার আসনে অধিষ্ঠিত। ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে তিনি তখন কোটি বাঙ্গালির পিতা। কিন্তু এটাই কাল হল তার জন্য। যে ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়াত সেই নাস্তিকতা আর হিন্দুত্বের অপবাদ জুটল তার কপালে। এ হিন্দু লোকটি নাকি ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেবে। রক্ষনশীল বঙ্গবন্ধুর কপালে জুটলো এ বিপদজনক অপবাদ। পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট এ অপবাদের পেছনে যারা ছিল সেটা আমাদের মত নতুন প্রজন্ম না জানলেও নিজামী সাহেব ভাল করেই জানে।
এ অপবাদ ঘোচাতে যারপরনাই চেষ্টা করল বঙ্গবন্ধু। তিনি বারবার বললেন ‘আমি বাঙালি, আমি মুসলমান।’ প্রতিষ্ঠা করলেন ইসলামী ফাউন্ডেশন, মসজিদ, মাদ্রাসা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অপবাদকারীরা যেন একটু বেশিই শক্তিশালী। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। অপশেষে এ অপবাদ মাথায় নিয়েই চলে যেতে হলো তাকে।
মুজিবকে সে নগ্ন অপবাদ দেয়া ছিল নিজামীদের অস্তিত্বের প্রয়োজন। খুব ধারালো আর স্পর্শকাতর অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা যার নাম ধর্ম। আজকে আবার সুর পাল্টাল কেন নিজামী সাহেব? আবার তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কি? হ্যা, অস্তিত্বের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের গ্রহণযোগ্যতাকে এবার কাজে লাগাতে হবে তাদের।
এ ব্যাপারে মিডিয়ায় ইদানিং চুলচেরা বিশ্লেষন চলছে। ক্ষমতাসীন দলের কাছে আছে জামায়াত বধের অস্ত্র। কিন্তু ধর্মপ্রাণ নিজামী সাহেব আওয়ামী লীগের সামান্য হুমকি ধামকিতেই সুর পাল্টে ফেলেন, এটা কি কোন কাজের কথা হল। এতদিন তাহলে কিসের রাজনীতি করল জামায়াত। বাহ্ আজব দেশ আজব রাজনীতি। রাজনীতি কি, বলা ভাল ব্যবসা। রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা। আর অভিজ্ঞ ধর্ম ব্যবসায়ীদের শিকার দেশের অসহায় জনগণ।
সোয়াদ আহমেদ
[email protected]
শুধু নিজামী না, ব্লগে ব্লগে নিজামীর পোনাদেরও দেখি শেখ মুজিবের প্রতি প্রেম জেগে উঠেছে। সচলায়তনের একটা পোষ্টের শিরোনাম মনে ধরেছিল- “বরাহরা ভাল নেই”।
সোয়াদ আহমেদ,
লেখাটিতে অজস্র বানান ভুলের ছাপ রয়েছে প্রায় প্রতিটি লাইনেই। এত বানান ভুল সমৃদ্ধ লেখা ছাপানো আমাদের নীতিমালার পরিপন্থি।
নীতিমালা দ্রষ্টব্যঃ
২.১৪। লেখায় বানান ভুলের প্রতি সদস্যরা সচেতনতা দেখাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বানান ভুল থাকলে লেখা প্রকাশ করা হবে না কিংবা লেখা সরিয়ে ফেলা হবে।
কিছু উদাহরণ –
ধীনতা (স্বাধীনতা), বত্তপ্তব্যগুলো (বক্তব্যগুলো), বিরোধিতা উপো করে ( বিরোধিতা উপেক্ষা করে?), সংরণ (সংরক্ষণ), একেক কার (একেক কারণ), ধর্মপ্রান (ধর্মপ্রাণ), রিতিমত (রীতিমত), আত্বপ্রত্যয়ী (আত্মপ্রত্যয়ী), রক্ষনশীল (রক্ষণশীল), সাপেে (সাপেক্ষে?), অর্থ্যাৎ (অর্থাৎ), বিমাল বপুর (বিশাল বপু?), দাড়াল (দাঁড়াল) … ইত্যাদি।
আপনাকে বিনীত অনুরোধ করা হচ্ছে, অশুদ্ধ বানানগুলো খুব কম সময়ের মধ্যে ঠিক করে ফেলার জন্য। আপনার লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বানানের প্রতি যত্নবান হলে লেখার গুরুত্ব বজায় থাকে পাঠকদের কাছে।