এটা বড়মণিদের গল্প। চুড়ান্তরকমের প্রাপ্ত বয়স্কদের আসর এটি। ছোটদের প্রবেশাধিকার তাই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলো


সব মানুষের মধ্যেই নাকি একজন ডক্টর জেকিল আর একজন মিস্টার হাইড থাকে। কখনো ডক্টর জেকিল আধিপত্য বিস্তার করে তার উপরে, কখনো সখনো মিস্টার হাইড। কথাটা যে চরম সত্যি তা নিজেকে দিয়েই টের পাচ্ছি আমি। আমার ভিতরের চিরচেনা ভাল মানুষ ডক্টর জেকিলকে গত কয়েকদিন ধরে কুপোকাত করে রেখেছে কুৎসিত চিন্তার কুলাঙ্গার মিস্টার হাইড। তার কুমতলবে এবং কুমন্ত্রণায় গত কয়েকদিন ধরে কয়েক কোটি কুচিন্তা মাথায় নিয়ে কালরাত্রি কাটাচ্ছি আমি। সেইসব কুচিন্তার কুফলই হচ্ছে এই কু-গল্পটা।


গল্পটা শ্লীল না অশ্লীল সেটা জানি না। নিজের লেখা নিজে বিচার করা যায় না। তাই অশ্লীলতা বিচারের ভার মডারেটরদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। তারা যদি মনে করেন যে এটা অশ্লীল গল্প তবে নির্দ্বিধায় ছেটে ফেলে দিতে পারেন মুক্তমনা থেকে। আমার তরফ থেকে বিন্দুমাত্রও ওজর আপত্তি আসবে না। তবে, এটিকে অশ্লীলতার ছাঁচে মাপার আগে আমি মডারেটরদের অনুরোধ করবো বাংলা সাহিত্যের দিকপাল সমরেশ বসু, সৈয়দ শামসুল হক কিংবা হুমায়ুন আজাদকে স্মরণে রাখতে। স্মরণে রাখতে ‘পাতক’, ‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’, ‘খেলারাম খেলে যা’ কিংবা ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসগুলোর কথা।


ভূমিকাতে এত কথা বলার পিছনে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে। প্রথম পাতায় যে কোন কিছু পোস্ট করলে তার বেশ কয়েক লাইন এমনিতেই দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ফাও ফাও পড়ে ফেলা যায় সেগুলো কোন রূপ কষ্টক্লেশ ছাড়াই। এই গল্পের শুরুটাও যেন সেরকমভাবে পড়তে না পারা যায় সেই কারণেই এতখানি বকবক করা, এতখানি সাবধানতা অবলম্বন করা।

 

কাকলীর ফর্সা ভরাট পিঠের উপর কামার্ত ঠোঁট নামিয়ে আনলেন তিনি। ঠোঁট দুটোকে চিরে লাউ ডুগির মত বেরিয়ে এসেছে লকলকে লোলুপ জিভ। জিভকে মখমলের মত চামড়ায় ঠেকিয়ে আলতো করে উঠে যেতে থাকলেন পেলব ঘাড়ের দিকে। নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছে মরুর লু হাওয়া। ফোঁস ফোঁস করে অজগর সাপের মত ফুঁসছেন আজীব মোহাম্মদ গাই।

বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় তার নিজস্ব বাগানবাড়ির পিছনের আঙিনা। আঙিনার পাশেই ঘন অরণ্য। বিশাল এক ছাতার নিচে বড়সড় একটা বীচ চেয়ারে আধশোয়া হয়ে আছেন আজীব মোহাম্মদ গাই। পরনে কুচকানো পাজামা। উর্ধাঙ্গ অনাবৃত। তার গায়ের উপর হেলান দিয়ে শুয়ে আছে কাকলী। সাদা রঙের সালোয়ার আর চুমকির কাজ করা গাঢ় নীল রঙের কামিজ পরে আছে সে। দেখতে আহামরি তেমন কোন সুন্দরী নয়। কিন্তু বুনো একটা সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে সারা গা জুড়ে। যৌবন যেন ফেটে বেরিয়ে আসছে নীল কামিজ ভেদ করে।

ঠোঁটের মিহি আদর আর পিঠের উপর মরুর তপ্ত গরমে অজানা শিহরণে শিরশির করে উঠলো কাকলীর সারা শরীর। হালকা কাঁপুনি উঠলো তার কোমল দেহে। গায়ের লোমগুলো সব কদম ফুলের রোঁয়ার মত খাড়া হয়ে উঠেছে। শিরায় শিরায় রক্তের প্রলয় নাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। আজীব গাই মুখটাকে ঘাড়ের কাছে এনে ফর্সা জায়গাটায় দাঁত বসিয়ে ছোট্ট একটা কামড় দিলেন।  তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো কাকলীর শরীর। যেন হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের ধাক্কা খেয়েছে সে।

ঘাড় থেকে আজীব গাইয়ের ঠোঁট জোড়া গলা বেয়ে কাকলীর বুকের কাছে চলে এলো। লো কাট কামিজ পরে বুকের সৌন্দর্যের অনেকখানিই দৃশ্যমান করে রেখেছে সে। সেই দৃশ্যমান সৌন্দর্যে কিছুক্ষণ হুটোপুটি করে দুই পাহাড়ের বুকে দুটো রক্তজবা এঁকে দি্লেন আজীব গাই। তারপর বুকের মাঝখানের গভীর উপত্যকা বেয়ে নেমে যেতে থাকলো তার নিকোটিনে পোড়া কালো পুরু ঠোট দু’টো। মুচড়ে উঠলো কাকলীর শরীরটা। চুলগুলোকে মুঠো করে ধরে গাইয়ের মাথাটাকে সরিয়ে দিল সে। অস্ফুট ফ্যাসফেসে স্বরে বললো, ‘এ্যাই পাঁজি, হচ্ছেটা কী শুনি?’ কাঁচাপাকা শ্মশ্রুর আড়াল থেকে ঝিলিক মেরে বেরিয়ে এলো গাইয়ের হলুদ দাঁতগুলো। হাসছেন তিনি। তৃপ্তি মেশানো বিমল আনন্দের হাসি। ঝাঁকি দিয়ে মাথাটাকে কাকলীর হাত থেকে মুক্ত করে খানিকটা উঁচু হয়ে কানের লতিতে আলতো করে কামড় বসালেন তিনি। মাথাটা একপাশে সরিয়ে নিতে নিতে কপট রাগ দেখায় কাকলী, ‘দুষ্টু কোথাকার। সারাক্ষণ শুধু খাই খাই, তাই না? এত খেয়েও বুঝি খিদে মেটেনা তোমার।‘

কোন জবাব না দিয়ে হ্যাচকা টানে কাকলীকে বুকের আরো কাছে নিয়ে আসেন তিনি। তার ব্যাকুল ঠোঁট দুটো নেমে আসে কাকলীর কমলার মত গোলাপী ঠোঁটে। ললিপপের মত মুখের মধ্যে পুরে নেন তিনি সেগুলো। ডান হাতটা কাকলীর পিঠ বেয়ে নেমে আসে সরু কোমরে। কাস্তের মত বাঁক খাওয়া কোমরের তীক্ষ্ণ খাঁজে হালকা একটা ভাজ আবিষ্কার করে ওটাকেই সজোরে খাঁমচে ধরেন তিনি। অস্ফুট স্বরে গুঙিয়ে উঠে কাকলী। গাইয়ের বুকের  আরো কাছে সরে আসে সে। হাপাচ্ছে। হাপড়ের মত ঘন ঘন উঠানামা করছে পিনোন্নত পয়োধর। লাল হয়ে উঠেছে ফর্সা গাল দু’টো। গাইয়ের ঠোঁটের আক্রমণে কাকলীর অধর যুগলও আগ্রাসী হয়ে উঠে। গাইয়ের বাঁ হাত কাকলীর কামিজের ভিতর দিয়ে ঢুকে যায় বিনা বাধায়। বুকের পাহাড় পর্বত উপত্যকা চষে ফেলে তা চলে আসে পেটের সমতলভূমিতে। সমতলভূমির ঠিক মাঝখানেই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মত গভীর নাভিমূল। নাভিমূলের চারপাশে আলতো করে তর্জনী দিয়ে কয়েকবার বৃত্ত আঁকেন তিনি।  ভূমিকম্পের আসন্ন অপেক্ষায় তিরতির করে কেঁপে উঠে সমতলভূমি । কম্পমান সমতলভূমি পেরিয়ে দুঃসাহসী হাতটা গড়িয়ে যেতে থাকে মসৃণ ঢালের দিকে। ঢালের ওপাশের গহন অরণ্যের মাঝে বয়ে যাওয়া কোন নদী আবিষ্কারের নেশায় কিলবিল করে উঠে আঙুলগুলো। পাজামার খুঁটে এসে বেরসিকভাবে বাধা পায় সেগুলো। খুঁট খোলার জন্য অস্থির হয়ে উঠে প্রত্যাশী আঙুলগুলো।

ঠিক সেই মুহুর্তেই মোচড় দিয়ে উঠে কাকলী। আজীব গাইয়ের বুকে দুই হাতের ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দেয় সে। সোজা হয়ে বসে চেয়ারের উপর। হতাশ চোখে আজীব গাই তাকান কাকলীর দিকে। কাকলীর চোখে দুষ্টুমি আর প্রশ্রয়ের হাসি। তা দেখে দ্রুতগতিতে আবারো ঝাঁপিয়ে পড়তে যান তিনি তার উপর। কিন্তু তার চেয়েও দ্রুততায় চেয়ার ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায় কাকলী। বেসামালভাবে চেয়ার থেকে ঘাসের উপর উপুড় পড়ে যান আজীব গাই। তার বেসামাল অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে কাকলী। খুশিতে কোমরে দুই হাত রেখে এক পায়ের উপর ভর দিয়ে এক পাক নেচেও নেয় সে।

আজীব গাইকে তার দিকে হাভাতের মত তাকিয়ে থাকতে দেখেই দুই হাত দিয়ে ধরে ধীরে ধীরে কামিজটাকে উঠাতে থাকে সে। সাপ যেভাবে সম্মোহিত করে তার শিকারকে, ঠিক সেভাবে কাকলী যেন খেলতে থাকে আজীব গাইকে নিয়ে। মাথার উপর দিয়ে কামিজটাকে খুলে নিয়ে আজীব গাইয়ের দিকে ছুড়ে দেয় সে। সালোয়ারটাকেও নাচের ভঙ্গিমায় আসতে আসতে নামিয়ে দেয় পায়ের কাছে। এক পা এক পা করে দুই পা-ই তুলে নেয় সালোয়ার থেকে। তারপর নীচু হয়ে মাটি থেকে সালোয়ারটাকে তুলে নিয়ে সেটিকেও ছুড়ে দেয় আজীব গাইয়ের দিকে। কাকলীর পরনে এখন শুধু টকটকে লাল রঙের একটা ব্রা আর প্যান্টি ছাড়া কিছুই নেই। একপাশের গালটাকে একটু ফুলিয়ে জিভ এবং টাকরা দিয়ে অদ্ভুত একটা শব্দ করে সে। তারপর আজীব গাইয়ের দিকে পিছন ফিরে হেলেদুলে জঙ্গলের দিকে রওনা দেয়। গাইয়ের মনে হয় যেন ঠিক যেন একটা আদুরে বিড়াল হেটে যাচ্ছে আয়েসী ভঙ্গিতে। বিড়াল নয়, আসলে বনবিড়াল। মনে মনে ভাবেন আজীব গাই। কাল রাতে কাকালীর যে রূপ তিনি দেখেছেন তাতে বিড়াল না বলে বনবিড়ালই বলা উচিত তাকে। কিছুদূর গিয়ে একটু থেমে ঘাড় ঘুরিয়ে আজীব গাইয়ের দিকে তাকায় সে। চোখে মদির কটাক্ষ। ঠোঁটে সুস্পষ্ট আমন্ত্রণের হাসি।

হাঁচড়ে পাঁচড়ে মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়ান আজীব গাই। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। পা দুটো টলমল। মাত্র দুই পেগ হুইস্কি খেয়েছেন। এমনতো হবার কথা নয়। মদ খেয়ে কখনোই মাতাল হন না তিনি। সকালে ওই বিচ্ছিরি বটিকাটা খাবার পর থেকেই মনে হচ্ছে এমন হচ্ছে। এই বটিকাগুলো তিনি আগে কখনোই খাননি। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেনারেল হোমো্স্বাদ এটা এনে দিয়েছেন তাকে বিদেশ থেকে। কাকলীকে খেতে বলেছিলেন।  সেতো হেসেই খুন। বলে আমার লাগবে না, তোমার প্রয়োজন হলে তুমি খাও। গত রাতের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হলো একটা বোধহয় খাওয়াই প্রয়োজন তার। তাই খেয়েছিলেন একটা সকাল বেলায়।

হোমোস্বাদ এবং তিনি দুজনে জন্মগতভাবেই নারীপ্রেমিক। শয়নে স্বপ্নে নারী ছাড়া অন্য কোন ভাবনা তাদের কাজ করে না। কীভাবে নারীদের প্রেম দেয়া যায় সেই স্বপ্নেই বিভোর থাকেন তাঁরা। তবে বয়স একটু বেড়ে যাবার সাথে সাথে মনের ভাবনার সাথে শরীর কেন যেন আর তাল মেলাতে পারে না আগের মত। তার নিজের অবশ্য এই সমস্যা হয়নি কখনো। কিন্তু হোমোস্বাদ বেশ ভালভাবেই সমস্যাটাতে ভুগছেন। ফলে প্রতিবারই বিদেশে গিয়ে এই সব নিষিদ্ধ ওষুধপত্তর কিনে নিয়ে আসে সে। বন্ধু হিসাবে তাকেও সাধাসাধি করে এক ফাইল ধরিয়ে দিয়েছে হোমোস্বাদ কয়েকমাস আগে। হোমোস্বাদের মত ভালবাসায় অক্ষমতার সমস্যা তাঁর নেই। তবে কেন যেন বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বল্পবয়েসী মেয়েদের প্রতি তীব্র আকর্ষণ তৈরি হয়েছে তাঁর। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখলে নিজেকে সামলাতে বড় কষ্ট হয় তাঁর  এখন।

হোমোস্বাদ যখন ডান্ডা হাতে জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল তখন সৎ সাজার জন্য দেশের সব বড় বড় দুর্নীতিবাজদের ধরে ধরে কয়েদখানায় পুরে দিয়েছিল। ওই দলে তিনিও পড়ে গিয়েছিলেন তখন। তবে জেলে খুব একটা খারাপ ছিলেন না তিনি। ডিভিশন পেয়ে জেলে জামাই আদরেই ছিলেন। একমাত্র সমস্যা ছিল রাতের বেলা মেয়েছেলের অভাব। সেই সমস্যাও বেশিদিন থাকেনি তাঁর। বন্ধু হোমোস্বাদ কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর জন্য জেলখানায় কচি কচি মেয়ে পাঠানো শুরু করে। পুরুষের পোশাক পরিয়ে মেয়েগুলোকে জেলখানায় ঢুকানো হতো।

তিনি যে বয়েসীদের প্রতি এখন আকৃষ্ট হন তার আওতায় কাকলী পড়ে না। বছর তিরিশের পূর্ণ বয়েসী ভরাট যুবতী সে। কিন্তু তারপরও কী কারণে যেন কাকলীকে দেখার পর থেকেই চুম্বকের মত আকর্ষণ অনুভব করেছেন তিনি। পটাতে একটু সময় লেগেছে অবশ্য। এতে তিনি কিছু মনে করেন নি। মেয়ে পটানোর খেলাটা তিনি উপভোগই করেন। অনেকটা মাছ ধরার মত। ছিপ ফেললেই যদি মাছ বড়শি গিলে ফেলে তাহলে কী আর মজা আছে কোনো? যে মাছ যত বেশি খেলাবে,সে মাছ শিকার করাটাও তত বেশি আনন্দের।

অল্প বয়েসী  মেয়েদের ক্ষেত্রে এত সময় লাগে না তাঁর। শুধু বড়শি নয়,একেবারে ছিপসহ গিলে বসে থাকে তারা শুরুতেই। তাঁর নাম শুনলেই মুগ্ধ বিস্ময়ে পতঙ্গের মত তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনে। তাঁর অসংখ্য বৈধ-অবৈধ ব্যবসার মধ্যে একটি হচ্ছে সিনেমায় পুঁজি বিনিয়োগ। কালো টাকাকে সাদা করার জন্য এর থেকে ভালো কোন উপায় আর নেই। তবে সিনেমায় অর্থলগ্নী শুধু তাঁর ব্যবসায়িক মুনাফাই আনছে না। আনন্দের একটা অসাধারণ জায়গাও হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসার সাথে সামান্য একটু আনন্দ স্ফূর্তির মিশেল কখনোই আপত্তিকর মনে হয়নি তাঁর কাছে। কীইবা এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয় এতে।

কমবয়েসী এইসব মেয়েদের বেশিরভাগই নায়িকা হবার প্রবল স্বপ্ন দেখে। আর তাদের স্বপ্নপূরণের জন্য তাঁকেই বেছে নেয় তারা। এর জন্য সবকিছু করতেও প্রস্তুত থাকে তারা। অসংখ্য মেয়েকে তিনি নায়িকা বানিয়েছেন। তারা খুশি তাদের স্বপপূরণ হওয়ায়। তিনি খুশি বিনা পয়সায় আনন্দ স্ফুর্তি পাওয়ায়। তবে এদের কেউ কেউ যে ঝামেলা বাঁধায়নি তা কিন্তু নয়। নায়িকা হবার আগ পর্যন্ত মহা অনুগত থাকে মেয়েগুলো। নায়িকা হবার কিছুদিন পর পর্যন্তও থাকে। তারপর থেকেই বিগড়ে যেতে থাকে এদের কেউ কেউ। অল্পবয়েসী সুদর্শন নায়কগুলোর সঙ্গে ঢলাঢলি শুরু করে দেয় তখন তারা। এই সব বেলেল্লাপনা আর বেয়াদবি কী সহ্য করা যায়? বাধ্য হয়ে তাই গোটা দুয়েক নায়কের নয়নজ্যোতি অকালেই মুছে দিতে হয়েছিল তাঁর। এখন মোটামুটি সবাই বিষয়টা জানে। তাই সমঝে চলে তাকে। চলবেই  বা না কেন? জানের মায়া সবারই আছে।

হোমোস্বাদের দেয়া বটিকাগুলো নিজে না খেয়ে তিনি বরং মেয়েগুলোকেই কায়দা করে খাইয়ে দিতেন। বটিকা খাবার পরে একেকটা মেয়ের যে উন্মাতাল অবস্থা হতো, সেটিকেই রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতেন তিনি। তবে শেষ মেয়েটার ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা হয়েছিল। ওষুধ খাবার পরে ক্ষুধার্ত বাঘিনী হয়ে উঠেছিল মেয়েটা। চুড়ান্ত আনন্দের মুহুর্তে হঠাৎ করেই ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেল মেয়েটার শরীর। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই তাঁর শরীরের নীচে মেয়েটার শরীর নিথর হয়ে গেল। কী যেন ছিল মেয়েটার নাম? ভ্রু কুচকে তিনি মেয়েটার নাম মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন। মাথাটা ঝিমঝিম করায় কষ্ট হচ্ছে নামটা স্মরণে আনতে। হুট করে ঝিলিক দিয়েই নামটা মনে পড়লো তার। বাবলি। ইডেনে পড়তো। টুকটাক মডেলিং করেছে। নায়িকা হবার আশাতে এক সহপরিচালকের সাথে এফডিসিতে এসেছিল সে। সেখানেই তাঁর সাথে পরিচয়।

আগুনের মত রূপ ছিল মেয়েটার। প্রথম দেখাতে তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন তিনি মেয়েটার প্রতি। হস্তগত করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি তাকে। সহপরিচালকের মাধ্যমে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, নায়িকা হতে গেলে আগে তাঁকে খুশি করতে হবে। মেয়েটিও মনে হয় এরকম কিছু একটার জন্য প্রস্তুতই ছিল। পাহাড়ের এই বাগানবাড়িতে আসার প্রস্তাবটা তাই লুফেই নিয়েছিল সে। এত সহজে মেয়েটাকে শিকার করতে পেরেও খুব একটা বিস্মিত তিনি হননি । তার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন যে সিনেমা  লাইনের মেয়েগুলো সব এরকমই হয়। পরনির্ভরশীল,কপট,লোভী এবং উচ্চাভিলাষী।

মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়ান আজীব গাই। পাজামার সামনেটা তাবুর মত উঁচু হয়ে রয়েছে। সমস্ত শরীরটা যেন কামড়াচ্ছে। কাকলীকে তাঁর এখন চাই-ই চাই। কাকলীর পিছনে টলমল পায়ে ধাওয়া করেন তিনি। তাকে এগোতে দেখেই খিলখিল করে হেসে উঠে কাকলী। চঞ্চলা হরিণীর মত এক ছুটে ঢুকে পড়ে জঙ্গলের মধ্যে। নিশিতে পাওয়া মানুষের মত কাকলীকে অনুসরণ করে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়েন আজীব গাই। ঘন অরণ্যের মাঝে কোথাও দেখতে পান না কাকলীকে তিনি। শুধু ক্ষণে ক্ষণে হাসির শব্দ ভেসে আসতে থাকে। মনে হয় কাকলী যেন লুকোচুরি খেলছে তাঁর সাথে। হাসির শব্দকে অনুসরণ করে অন্ধের মত এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কাকলীকে ধরতে পারলে এই জঙ্গলের ভিতরেই কী ঘটবে সেটা ভেবেই চরম পুলক ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাঁর সারা শরীরে।

হঠাৎ করেই গাছ-পালার আড়ালে অস্পষ্টভাবে কাকলীকে ছুটে যেতে দেখেন তিনি। বিপুল উৎসাহে সেদিকে ছুট লাগান আজীব গাই। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ করেই ব্রেক কষেন তিনি। পাহাড় চূড়োর একেবারে শিখরে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সামনেই বিশাল খাদ। একটু উঁকি দিয়ে নীচে তাকালেন তিনি। অনেক নীচে সারি সারি বিশালাকার পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোন কিছু লুকনোর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এটি। বাবলির লাশটাকে বাংলো থেকে এনে এখান থেকেই নীচে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তিনি। জনমানবহীন এই গহীন অরণ্যে কারো লাশ খুঁজে পাবার কোন সম্ভাবনাই নেই।

খসখসে একটা মৃদু শব্দ শুনে পিছন ফিরতে চাইলেন আজীব গাই। কিন্তু তার আগেই পিঠে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলেন তিনি। নিমেষেই শুন্যে উড়ে গেলেন  তিনি সেই ধাক্কা খেয়ে। তারপর মাথা নিচের দিকে করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে থাকলেন গহীন খাঁদের দিকে। বুক চিরে বেরিয়ে এলো বিকট চিৎকার। সেই চিৎকার ধ্বণি প্রতিধ্বণি আকারে ছড়িয়ে পড়লো পাহাড় থেকে পাহাড়ে।

******

আজীব গাই যেখান থেকে খাঁদে পড়ে গিয়েছেন, ঠিক সেই জায়গাটাতে অর্ধ নগ্ন শরীরে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রয়েছে কাকলী। ডাগর চোখ দুটোতে অশ্রুবিন্দু টলমল করছে। গাল দু’টো লোনা জলে সিক্ত। পৃথিবীটাকে বড় বেশি নিষ্ঠুর আর অর্থহীন মনে হচ্ছে তার কাছে এখন। না ফেরার দেশে যে যায় সে যে আর ফেরে না কখনো। পৃথিবীটা এমন দয়ামায়াহীন কেন? ভালবাসার মানুষগুলো সব হারিয়ে যেতে থাকে অজানার দেশে। বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে কাকলীর বুক চিরে। মাথাটাকে সামান্য একটু সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে নীচটা একবার দেখার চেষ্টা করে সে। অনেক নীচে পাহাড়ের পাদদেশে হাত পা ছড়িয়ে ব্যাঙের মত উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে আজীব গাই।

সোজা হয়ে দাঁড়ায় কাকলী। তারপর মাথাটাকে একটুখানি উঁচু করে আকাশের দিকে তাকায় সে। সেদিকে তাকিয়েই ধরা গলায় অস্ফুট স্বরে বলে, ‘বাবলি, ভালো থাকিস আপুনি আমার’।