-মোকছেদ আলী*
(লেখাটি সাধু রীতিতে লেখা)
মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। আমি মুসলমান, একজন খাঁটি মুসলমান। শান্ত-দান্ত ও সচ্চরিত্রের অধিকারী। এই কথা আমি না জানিলেও আমার পরিবার, আমার সমাজ আমার দেশ তথা দেশের অধিবাসীবৃন্দ জানেন। আমি কি, আমার ধর্ম কি, আমার জাত-বংশ কি তাহা সম্বন্ধে আমি অবগতি নহি। আমি কেবল ধর্ম, বর্ণ জাতিকে তুচ্ছ করিয়া নিজেকে মাঝে মধ্যে বিরত রাখিতে জানি। সে বিরতিকালেই আমার এই লেখার প্রয়াস।
দশভূজী দেবী দূর্গার আগমনে সমগ্র বিশ্বের হিন্দুজাতি আজ আনন্দে মুখরিত। রেডিও টিভিতে প্রচারিত হইতেছে আনন্দমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান; প্রকৃতি সেই পরিচিত বাদ্যযন্ত্রের ডুম ডুম শব্দে মুখরিত। পূঁজোর আনন্দ উৎসবে বসিয়াছে বিরাট মেলা। মেলার বিচিত্র মানুষ, বিচিত্র খাদ্য, বিচিত্র খেলনা আর সূক্ষ কারুকার্যে নির্মিত মা দূর্গা দর্শনে পদযাত্রা করিলাম। ফিরিবার পথে ভাবিলাম আজ আমি যে মহৎকার্য সম্পাদন করিলাম তাহা আমার জীবনের সর্বাপেক্ষা মহৎকার্য। শতবার নিজেকে ধন্য ধন্য বলিয়া ফিরিতেছি। হঠাৎ এই ধন্য ধন্য শব্দটি ধিক ধিক শব্দে পরিণত হইল।
টিককির উপর টুপিটা দিয়া কাশফুলের মতই শুভ্র পোষাক পরিহিত নিষ্পাপ ভদ্রলোকটি তাহার উজ্জ্বল চক্ষু হইতে আগুনের ফুলকি নিক্ষেপ করিয়া বলিল, “ধিক! ধিক! তোমাকে শতবার ধিক! টাকা দিয়া পাপ কিনিতে গিয়েছিলে? নিক্ষেপ কর তোমার ঐ মিষ্টান্ন, তোমার ঐ পাপ কখনই ঘুচিবার নহে।”
ভদ্রলোকটির প্রতি অভদ্রতা প্রদর্শন করিয়া আমি বাড়ি ফিরিলাম। মহৎকার্য সম্পাদন করিয়া মহামূল্যবান ‘ধিক’ শব্দ উপহার পাইয়া নিজেকে আবার ধন্য মনে করিলাম। তাহার ঐ মধুমিশ্রিত কণ্ঠের মহামূল্যবান বাণী আমার কর্ণে এতই প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল যে মনে হইল, শুধু কর্ণ কেন এই মস্তকটাও ফাটিয়া গিয়া সমস্ত লাল রক্ত টকটকে লাল অগ্নিতে পরিণত হইয়া ধিকওয়ালাকে কাশফুল হইতে কয়লাতে পরিণত করিবে। সিদ্ধান্ত হইল এই মহামূল্যবান উপহারটি দ্বিতীয়বারের মত অর্জন করিতেই হইবে।
বস্তুত: যে বিক্রেতার নিকট হইতে মিষ্টান্ন ক্রয় করিয়াছিলাম সে ছিল ধিকওয়ালার ভাইপো। ভ্রাতার সমস্ত সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করিয়া সে হইয়াছে উঁচু স্তরের মহামানব আর পিতৃহীন এই বিক্রেতা সম্পত্তি হারাইয়া নিচু স্তরের সাধারণ মানুষ। এই সাধারণ মানুষটিই নিজ লেখাপড়ার ব্যায় চালাইবার নিমিত্ত কিছু লাভের আশায় খোলা আকাশের নিচে কিছু মিষ্টান্ন লইয়া বিক্রেতা সাজিয়াছে। তাহাকে দ্বিগুণ লাভ দিয়া যে মিষ্টান্ন ক্রয় করিয়াছিলাম, চতুর্গুণ লাভ দিয়া সেই মিষ্টান্ন ক্রয় করিলে যে পাপ অর্জন করিতাম তাহা আমাকে স্বর্গলোকেই ঠেলিত।
অবশেষে সেই ক্ষণ উপস্থিত হইল; মহামূল্যবান উপহারটি অর্জন করিবার দিন আসিয়াছে। আজ ত্রিনয়নি তাহার নয়ন হইতে অশ্র“ বিসর্জন করিয়া বিদায় লইবেন। সুতরাং আজ নদীতীরে বিশাল মেলা। মেলা দর্শন শেষে যখন বাসায় ফিরিলাম, কয়েকজন বন্ধু আসিয়া বলিল, “কিরে তুহিন সত্যই কি মাউন হইয়া বসিলি?”
আমি মুসলমান সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। সুতরাং কথাটা শ্রবণ করিবামাত্র আমি কম্পিত হইলাম। আমার কর্ণদ্বয় লজ্জায় লাল হইল। মিথ্যাকে সত্য করিয়া বলিলাম, “এই বঙ্গবাসী কেমন করিয়া তাহাদের মাকে পশ্চাত হইতে পদাঘাতে সমুদ্রের অতল তলেই তলিয়ে দেয় তাহা দর্শন করাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য।”
হিন্দু সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণাবাণী শ্রবণ করিবামাত্র একে একে আমাকে তাহাদের বক্ষ জড়াইয়া ধরিল। আনন্দে তাহাদের বক্ষ জুড়াইল বটে, কিন্তু যে পরিমাণ ব্যাথা সঞ্চয় করিলাম তাহা এখনও নিঃশেষ হয় নাই।
আমি পুনরায় ধন্য হইয়াছিলাম বটে, কিন্তু মনে হইয়াছিল, কাপুরুষের সার্টিফিকেট অর্জন করা দুঃসাধ্য হইলেও দালালীতে পি এইচ ডিগ্রী লাভ করিতে আমাকে কোন রকম বেগ পাইতে হইবে না।
——————————–
অনুলিখন- মাহফুজ
* মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিতি।
অদ্ভূত্…… চমৎকার…… দারুন……অসাধারন লেখার হাত
মিশরের (Egypt-এর) একজন Doctorate Research Scholar আমেরিকাতে থাকত research-এর জন্ন তাকে কয়েক বছর আগে জিজ্ঞাশা করেছিলাম “মালাউন” শব্দের অর্থ কি? কারন উনি আরবিভাশি। প্রথমে বলতে চাননি। বেশ কিছুখহন বঝানর পরে বললও এর অর্থ “Devil to Allah”.
আমার বাংলা লেখা ভাল নঅয়।
আমি জানিনা এগুলও নিয়ে এত শময় নশটও করে কি লাভ। The world is progressing so fast.
@Truthseeker,
ডিকশনারীতে মালাউন শব্দটি খুজলাম। আপনার কথাটি ঠিক। আরো লেখা দেখলাম- শয়তানের দূত।
মালাউন মানে কি?
মালাউন শব্দের অর্থ কি?
@belal,
লেখকের লেখা অনুসারে মালাউন বলতে সম্ভবত হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। এটা তুচ্ছার্থে ব্যবহার হয়।
অনেক সুন্দর হয়েছে
লেখাটা আসলেই ভালো হয়েছে।
@ashraful haque,
ধন্যবাদ। শুধুমাত্র ভালো বললেই তো হবে না, আমি চাই ক্রিটিক।
আপনাকে অজস্রা ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা উপহার দিলেন । :yes:
@একা,
ধন্যবাদের জন্য ধন্যবাদ। আশা করি ভবিষ্যতে লেখকের আরও সুন্দর লেখা উপহার দিতে পারবো।
– মনে হয় মালাউন হবে?
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক ধরেছেন, মাউন হবে না, হবে মালাউন। ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। বুঝতে পারছি লেখা পোষ্ট করার পূর্বে আরও সতর্ক হতে হবে বানানের দিক দিয়ে।
উহ, এমন অগ্নিবীণা সকলে বাজাতে জানেনা।
মাহফুজ সাহেবকে ধন্যবাদ, এমন একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও তাঁর লেখার সাথে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে।
একটা অনুরুধ রইলো, একসাথে একাধিক লেখা না দিয়ে, পাঠককে প্রতিটি লেখা ভালভাবে পড়া ও ঐ লেখার উপর আলোচনা করার সময় দেয়ার জন্যে।
@আকাশ মালিক,
:yes: :yes:
সহমত!
@আকাশ মালিক,
এই অগ্নীবীনা আপনিই কি কম বাজান? আপনি আপনার লেখার মধ্যে যা বাজিয়েছেন- তা তো অগ্নীবীনার চেয়ে কম না।
আপনার পরামর্শ শিরোধার্য। আসলে আমি জানতাম না যে এক সাথে বেশি লেখা পাঠাতে নেই। ধীরে ধীরে স্বশিক্ষিত এই অখ্যাত ব্যক্তির লেখা পোষ্ট করবো।