.

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেছে ’কনসার্ট ফর বাঘাইহাট ভিক্টিমস’! রাঙামাটির বাঘাইহাটে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেওয়ার জন্য ১৯ মার্চ, শুক্রবার বিকাল ৩টায় জেলার রাজবাড়ি অফিস মাঠে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা কালায়ন চাকমা সকালে টেলিফোনে আমাকে এই খবরটি দেন। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। তারপরেও একেবারে শেষ মুহূর্তে কোন কারণ ব্যাখা না করেই তা বন্ধ করে দেওয়া সত্যিই খুব বিস্ময়কর। এতে আমাদের বিপুল আয়োজন ও পরিশ্রম পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেল।’

বলা ভাল, এই সেদিন বাঘাইছড়ির বাঘাইহাটের তথ্য-সংবাদ সংগ্রহ করে রাঙামাটি থেকে যখন খবরগুলো আমি ঢাকার পত্রিকা অফিসে পাঠাচ্ছিলাম, তখন কালায়ন দা’কে দেখেছি, নিজস্ব উদ্যোগে ওই কনসার্টের জন্য পোস্টার ছেপে তা বিলি করতে। অনুষ্ঠানটির আরো নানা গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করছিলেন, নিজস্ব ছো্ট্ট দোকানটির ব্যবসা-পাতি ফেলে।

কালায়ন দা হচ্ছেন পাহাড়ের সেই চারণ শিল্পী, যিনি বনে-বাঁদাড়ে ঘুরে ঘুরে আদিবাসী পাহাড়ি জীবনের নানা অব্যক্ত কথা তার গানে প্রকাশ করেন। ১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর নান্যারচর গণহত্যার পর এমএন লারমার জন্মস্থান নান্যারচরের মাওরুম গ্রামে একটি ঐতিহ্যবাহী চাকমা বিয়ের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে প্রথম পরিচায়। বিয়ে বাড়ির হৈ হট্টগোলের ভেতর কালায়ন দা হারমোনিয়ান বাজিয়ে ওই গণহত্যার ওপর লেখা তার গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন। সে সময় শোকার্ত পাহাড়িদের বেদনার্ত মুখ আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, উৎসবের আড়ালের নেপথ্য যন্ত্রণাটুকু।…

‘কনসার্ট ফর বাঘাইহাট ভিক্টিমস’ বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আসি। এ বিষয়ে ‘বাঘাইহাটের ক্ষতিগ্রস্থদের মানবিক সহায়তা কমিটি’র আহ্বায়ক তনয় দেওয়ান এক বিবৃতিতে জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে কনসার্টটি বন্ধ করার জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত মানবতার ওপর আঘাত বলে আমরা মনে করি। মানুষের দুর্দশার সময়ে সহানুভূতিশীল ও দরদী মানুষেরা মানবিক সহায়তা দিতে পারবেন না–এটি নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। প্রশাসন যে নিরপে ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, তাদের এ সিদ্ধান্তে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’

উদ্যোক্তাদের একজন বাবুল চাকমা জানান, ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে রাঙামাটির রাজবাড়ি অফিস প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিককর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শতাধিক আদিবাসী পাহাড়ি মানববন্ধন রচনা করেন।

গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি বাঘাইহাটের সহিংসতায় ৪৭৪ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর জের ধরে গত ২৩ বাঘাইহাটের খাগড়াছড়ির সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১১৭ টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ পরিবারই পাহাড়ি। বাঘাইছড়ির সহিংসতায় দুজন পাহাড়ি এবং খাগড়াছড়িতে একজন বাঙালি নিহত হন।


ছবি: নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ, বাঘাইহাট, রাঙামাটি, লেখক।


আরো পড়ুন:পাহাড়ের সহিংতার ওপর চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় [লিংক] এবং সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমার বিশেষ সাক্ষাৎকার [লিংক], সরেজমিন: বাঘাইছড়ি-এক [লিংক], সরেজমিন: বাঘাইছড়ি-দুই [লিংক], পাহাড়ে প্রশ্নবিদ্ধ ইউপিডিএফ [লিংক], পাহাড়ে কেনো এতো সহিংসতা? [লিংক]