আবারও রঙ (হাউস কালার?)
ক্যাডেট কলেজ ব্লগে লগ-ইন’এর প্রথম দিনে আমার লেখা প্রথম ব্লগটা ছিল এবারের বই-মেলায় প্রকাশিত আমার প্রথম বই “আমেরিকার গল্পঃ রঙ দিয়ে যায় চেনা” সম্পর্কে পরিচিতমূলক একটা লেখা। লেখাটার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে এফসিসি’র প্রাক্তন ক্যাডেট, সানাউল্লাহ ভাই জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার বইয়ের প্রচ্ছদে শোভা পাওয়া চারটা রঙ কোনো কারনে ফৌজদারহাটের চারটা ‘হাউস কালার’এর কাছাকাছি নয়ত?
আমি জানতামনা ফৌজদারহাটে চারটা হাউস আছে। আমার ধারনা ছিল বাংলাদেশের সবগুলো ক্যাডেট কলেজেই বোধহয় তিনটে করে হাউস এবং ‘হাউস কালার’ও সম্ভবত তিনটেই- সবুজ, নীল ও লাল। ধারনাটা এজন্যে হয়েছিল যে, আমাদের আরসিসি’র খালিদ হাউস, কাসিম হাউস ও তারিক হাউসের ‘হাউস কালার’ যেভাবে যথাক্রমে সবুজ, নীল ও লাল, জেসিসি’র বদর হাউস, খায়বার হাউস ও হুনায়ুন হাউসের ‘হাউস কালার’ও তেমনি করেই যথাক্রমে সবুজ, নীল ও লাল। আমি জেসিসি’র হাউস তিনটের নাম এবং ‘হাউস কালার’ এজন্যেই জানি যেহেতু আমার বাড়ী ঝিনাইদহ এবং আমার এক ভাই জেসিসি’র একজন এক্স-ক্যাডেট (উনি অনেক সিনিয়র; ১০ম ব্যাচ, সম্ভবত ১৯৭৩~১৯৭৯। উনি বদর হাউসের এ্যাসিস্ট্যান্ট হাউস প্রিফেক্ট ছিলেন)।
আমার বইয়ের প্রচ্ছদটা লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, ওখানে চারটা রঙের চারটা ব্লক আছে; যথাক্রমে- কমলা, নীল, সবুজ ও সোনালী।
বইয়ের প্রচ্ছদের লিংকটা আবার দেখুনঃ
না, ‘হাউস কালার’ নয়; চারটা রঙ আসলে মানুষের চরিত্র প্রতিনিধিত্বকারী চারটা ‘True color’। আমি আমার বর্তমান এম্পলয়মেন্ট-এর জায়গায় জয়েন করার প্রথম দিকেই বাধ্যতামূলক একটা এথিক্স্ ট্রেইনিং-এ অংশ নিয়েছিলাম। ট্রেইনিং-এর একটা অংশ ছিল মানুষের চরিত্রের বিভিন্নতা ও বিপরীতমুখীতা নিয়ে। ট্রেইনারদের বক্তব্য বা ট্রেইনিং ম্যাটেরিয়াল্স্ অনুযায়ী পৃথিবীর সমস্ত মানুষ চরিত্রগতভাবে চার ভাগে বিভক্ত এবং কমলা, নীল, সবুজ ও সোনালী রঙ চারটা চার ধরনের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে। ছোট্ট একটা পরীক্ষারও ব্যবস্থা ছিল ট্রেইনিং-এ নিজের রঙ খুঁজে বের করার জন্যে। চারটা রঙের চরিত্রের বিবরন পড়ার পাশাপাশি রঙ সংক্রান্ত শব্দগুচ্ছের একটা ছকে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত ১, ২, ৩, ও ৪ বসিয়ে এবং সংখ্যাগুলোকে যোগ করে যে কেউ বের করতে পারবেন তার উজ্জ্বলতম রঙ কি। এছাড়া বের করতে পারবেন তার ম্লানতম রঙই বা কি। আর যারা বিবাহিত, তারা তাদের সঙ্গীরও উজ্জ্বলতম ও ম্লানতম রঙ বের করতে পারবেন পরীক্ষাটা থেকে (assuming you know your spouse well)। কোনো রঙ আছে যা অন্য রঙের সাথে খুবই কন্ফ্লিক্টিং- যেমন সবুজ ও নীল কন্ফ্লিক্টিং; আবার কমলা ও সোনালী কন্ফ্লিক্টিং। সঙ্গী ভিন্ন রঙের হলে তার সাথে সম্পর্ক কিভাবে উন্নত করা যাবে, সেটারও চমৎকার একটা বর্ননা ছিল ট্রেইনিং-এ।
‘রঙ দিয়ে যায় চেনা’ গল্পটা মূলত আমার ঐ ট্রেইনিংটা নিয়েই লেখা যেখানে রঙের ব্যাপারগুলো চোথা মারা হয়েছে। তবে ট্রেইনিং-এর রঙ বিষয়ক ইংরেজী কন্টেন্টকে বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে ও একে আরও আকর্ষনীয় করে তোলার ক্ষেত্রে আমি যে অসাধারন কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছি, সে সার্টিফিকেট দিয়েছেন স্বয়ং বাড়ীর কত্রী, যার কাছ থেকে কোনো বিষয়ে পাশ মার্ক পাওয়াও রীতিমত ভাগ্যের ব্যাপার।
নর্থ আমেরিকায় বসবাসকারী অনেকেই আমার বইটা হাতে পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন আমি যেন দেশ থেকে বই আনিয়ে এ্যামাজন.কম-এ দিই যেন তারা কিনতে পারেন। দেশে আমার এক ভাতিজাকে খোঁজ-খবর নিতে বলেছিলাম। ইউপিএস, ফেড্এক্স, ডিএইচএল-এ হাত দেয়ার মত না; প্রতি কেজি পাঠানোর খরচ নাকি ৳৩,০০০ থেকে ৳৩,২০০। উল্লেখ্য, এক কেজিতে বইয়ের সংখ্যা মাত্র চার থেকে পাঁচটা। জিপিও’র ইএমএস এদের চেয়ে কিছুটা সস্তা হলেও এ্যামাজন.কম-এ দেয়ার জন্যে bulk আকারে যতগুলো বই দেশ থেকে আনানো প্রয়োজন, তাতে খাজনার চেয়ে বাজনা হয়ে যায় অনেক বেশী। জাহাজে করে সস্তায় বই আনানোর একটা পদ্ধতি নাকি আছে; কিন্তু সেটা কম করেও ছয় মাসের ফ্যাকড়া। তাছাড়া পৌঁছানোর গ্যারান্টিও নাকি সন্দেহজনক। অগত্যা উপায়? এখানকার কমিউনিটির লোকজন দেশে গেলে তাদেরকে হয়ত অনুরোধ করা যায় কিছু বই নিয়ে আসতে। থার্ড লাগেজ হিসেবে পয়সা দিয়ে আনালেও কষ্টিং-এ কিছুটা হয়ত পোষানো যাবে। আপাতত এই পদ্ধতিটা ছাড়া ভাল আর কিছু নজরে পড়ছে না।
তবে হ্যাঁ, আমার এ্যামাজন.কম-এ দেয়া পর্যন্ত (যা কবে সম্ভব হবে, তা কেবল ওপরওয়ালাই জানেন) আপনাকে আমার বইয়ের জন্যে অপেক্ষা করতে হবেনা। আপনি আজই বই-মেলা.কম (Boi-Mela.com)-এ ঢুকে আমার বইয়ের অর্ডার দিতে পারেন। ‘Advance Search’-এ গিয়ে ‘America’ কথাটা লিখলেই যে গোটা কয়েক বইয়ের তালিকা দেখাবে, সেখানে আমার বইটাও আছে। এছাড়া ‘Publishers list’ (অনুপম প্রকাশনী), ‘Aalphabetical booklist’, ইত্যাদি ক্যাটেগোরিগুলো browse করেও আমার বইটাকে সহজেই লোকেইট করতে পারবেন বই-মেলা.কম ওয়েবসাইটে। যদিও বইয়ের প্রচ্ছদের জায়গাটা এখনও blank দেখাচ্ছে ওদের ওয়েবসাইটে, কিন্তু বই যে ওদের ষ্টকে আছে সেটা সহজেই আপনার চোখে পড়বে। দুঃখের বিষয় এখানেও খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী। ১২০ টাকার বইয়ের সিপিং ৭২০ টাকা; মোট ৮৪০ টাকা যা ওদের হিসেবে ডলারে কন্ভার্ট করলে প্রায় সাড়ে বারো ডলার। ভালই খসবে আপনার। তবে ‘ওয়ান টাইম’ শট হিসেবে ডলারের অংকটা সম্ভবত সহনীয়। বইয়ের ভেতর মূল্য লেখা আছে ৳১২০ এবং US $10। কাজেই নিউইয়র্ক বা লস এ্যান্জেলেস্-এর কোনো বাংলাদেশী দোকান থেকে আমার বইটা কিনতে গেলে আপনাকে কিন্তু দশ ডলার দিয়েই কিনতে হতো। সে হিসেবে বই-মেলা.কম থেকে সাড়ে বারো ডলার দিয়ে বইটা কেনা মনে হয় হজমযোগ্য। আর লেন-দেনের বিশ্বাসযোগ্যতা? বই-মেলা.কম-এর একটা অফিস ঢাকাতে এবং আরেকটা অফিস ফ্লোরিডায়। দু’টো অফিসেরই ঠিকানাসহ ফোন নাম্বার দেয়া আছে ওয়েবসাইটে। আমার পরিচিত ক্যালকাটা’র এক ছেলে (প্রাক্তন কলিগ) একবার এখানে বসে একটা বইও কিনেছিল ওদের কাছ থেকে। কাজেই আশা করা যায় ওরা ধুন-ফুন করবে না।
আমি খালিদ হাউসের (হাউস কালার- সবুজ) এবং কাকতলীয়ভাবে আমার উজ্জ্বলতম রঙ সবুজ। আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাই পলাশও (১৯৮৩~১৯৮৯) আরসিসি’র এবং তার উজ্জ্বলতম রঙ যে নীল বা সবুজ কোনোটাই নয়, সেটা অন্তত আমি খানিকটা বলতে পারি (তার স্পাউজ ডেফিনিটলি আরও ভাল বলতে পারবে)। তাহলে বাকি থাকলো কমলা আর সোনালী। দু’টোর কম্বিনেশনকে লাল ধরতে অসুবিধে কোথায়? পলাশ তারিক হাউসের, যেটার ‘হাউস কালার’ লাল। আমার বড় ভাইয়ের সাথে (যিনি জেসিসি’র) আমার বয়সের গ্যাপ অনেক যে কারনে ওনাকে কমলা, নীল, সবুজ ও সোনালী’র কোনোটাতেই ফেলা সম্ভব হচ্ছেনা আমার পক্ষে। তবে ভাবী আমার বইটা ইতিমধ্যেই পড়া শেষ করেছেন। ভাবীকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে ভাইয়ের ব্রাইট কালার কি?
বাড়ির কত্রীর উজ্জ্বলতম রঙ নীল- যা আমার উজ্জ্বলতম রঙ, সবুজের সাথে পুরোপুরি কন্ফ্লিক্টিং। তো সমস্যা কি? সঙ্গী ভিন্ন রঙের হলে তার সাথে সম্পর্ক কিভাবে উন্নত করা যাবে, সেটাতো ঐ ট্রেইনিং-এই আমি শিখেছি এবং আমার বইতে তার বিশদ বর্ননাও আছে যা ইতিমধ্যে বাড়ির কত্রীও পড়েছেন।
[পাদটিকাঃ লেখাটাতে ক্যাডেট কলেজ-ক্যাডেট কলেজ গন্ধ একটু বেশীই, যা লেখাটার ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে এড়ানো সম্ভব হলোনা। আশা করি নন-ক্যাডেট পাঠকরা কিছু মনে নেবেননা।
হাউস- House, ছাত্রাবাস
আরসিসি- RCC, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ
জেসিসি- JCC, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ
এফসিসি- FCC, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ]
রচনাকালঃ ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১০
অভিনন্দন!
এই ট্রু কালার পারসোনালিটি টুল টা নিয়ে আমার একটু খটকা আছে। কেনো তাই বলছি, আমি এদের হিসেবে সোনালী হই। ধরা যাক অফিসে একজন দৃষ্টিহীন কর্মচারী লবিতে রাখা গরম কফি ঢালতে গিয়ে হাতের অপর খানিকটা ফেলে দিলো । যিনি নীল রঙ এর মানুষ তিনি প্রথমেই ফার্স্ট এইডের বাক্স নিয়ে ছুটবেন, যিনি সবুজ তিনি প্রথমেই জানতে চাইবেন কিভাবে ধাপে ধাপে ঘটনা টা ঘটেছে, যেহেতু আমি সোনালী আমি প্রথমেই হাতের দিকে একনজর দিয়েই সেই কর্মী কে জিজ্ঞেস করবো ওয়ার্কার কম্পেন্সেশন কেস করতে চায় কিনা এবং এডিএ কে জানাতে চায় কিনা? যিনি কমলা তিনি বলবেন যেহেতু তেমন কিছু ঘটে নি , আবার কফি বানানো হোক আর আসুন সবাই একসাথে বসে সেটা উপভোগ করি।
এই এক ই ঘটনা যদি আমার ঘরে ঘটে যেখানে আমি মা এবং গৃহিনী আমি কিন্তু নীল এর মত আচরন করবো । কারন আমার রোল এখানে ভিন্ন। অর্থাৎ শুধু মাত্র পারসোনালিটির রঙ ই নির্ধারক নয় পরিবেশ এবং সামাজিক ভুমিকা বা রোলের একটা বিশাল প্রভাব রয়েছে আমার আচরনের ওপর।
পাঠকের জন্যে দুটো অয়েব সাইট দিলাম, দেখতে পারেন আপনার রঙ কি।
http://www.truecolorstest.com/Free-Stuff/TrueColors-Time-Managment.htmhttp://www.truecolorstest.com/index.htm
শুভেচ্ছা রইলো।