আমেরিকার গল্পঃ রঙ দিয়ে যায় চেনা
আব্দুর রহমান আবিদ
“আমার ঘোল্ সবচেয়ে ভাল”– বাজারের তাবৎ ঘোল্ বিক্রেতার প্রত্যেকের দাবী যদিও সন্দেহাতীতভাবে তাই, কিন্তু বাস্তবে সবার ঘোলই কি আর খেতে অত সুস্বাদু? তবে পাড়ার ভোজনরসিক গোপাল কিম্বা আচারী পন্ডিত মশাই যদি বাজারের কারো ঘোল্ চেখে তা ভাল বলেন, তাহলে ঐ ঘোল্ যে খানিকটা ভাল হওয়ার কথা, তা বোধহয় আশা করা যায়- হোকনা ঐ ঘোল্ বিক্রেতা বাজারে নতুন নাকি পুরাতন।
‘অঙ্কুর প্রকাশনী’র ইফতেখার সাহেবের সাথে গতবার এক-আধটু ইমেইল চালাচালি হয়েছিল। সেই ভরসায় এবার ফোন করলাম। উনি অফিসে ছিলেন না। ওনার এক সহযোগী ফোন ধরলেন। সুদূর আমেরিকা থেকে ফোন করেছি জেনেও গলার স্বরের ঝাঁঝ তিনি সামান্যও কমালেননাঃ
: কি নাম বললেন?
: জ্বি, আব্দুর রহমান আবিদ।
: বই বের করতে চান?
: জ্বি।
: তা, বইয়ের বিষয়বস্তু কি?
: জ্বি, ছোট গল্প। অবশ্য, ঠিক ছোট গল্প বোধহয় একে বলা যাবেনা, আমেরিকার দৈনন্দিন জীবনে আমার ব্যক্তিগত বিভিন্ন
অভিজ্ঞতাকে নিয়ে লেখা ছোট ছোট গল্প বলতে পারেন।
: ও! (পরিষ্কার উপেক্ষার সুর গলায়)! না রে ভাই, ওসব আমরা ছাপাইনে।
ভদ্রলোক খটাস করে লাইন কেটে দিলেন। লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পাবার আজীবনের গোপন বাসনাটুকু যখন ধূলোয় মিশে যাবার উপক্রম, তখন মিলন দা’র সাথে ফোনে কথা বলে নিবিড় আঁধারে যেন একটু আশার আলো দেখলাম। উনি বইয়ের বিষয়বস্তু শুনে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও বেশ আন্তরিকভাবেই কথা বললেন আমার সাথে। আমেরিকার কোথায় থাকি, পেশা কি, কবে থেকে লেখালেখি করছি, এর আগে কোনো বই-টই বের করেছি কিনা,…… অনেক খোঁজ-খবর নিলেন। মিলন দা (মিলন কান্তি নাথ) ‘অনুপম প্রকাশনী’র স্বত্তাধিকারী। ফোন ছাড়ার আগে বইয়ের পান্ডূলিপির একটা হার্ড কপি পাঠাতে বললেন- উনি পড়ে দেখবেন ছাপার মত কিনা।
মিলন দা’র সাথে কথা বলার বেশ অনেকদিন আগে ‘মুক্তধারা প্রকাশনী’র সজিব সাহার সাথে ইমেইলে যোগাযোগ হয়েছিল। আমার অনুরোধে ভদ্রলোক স্যাম্পল্ হিসেবে গোটা কয়েক গল্প পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে শর্ত ছিল, হার্ড কপি পাঠাতে হবে এবং নিজ থেকে ওনাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করা যাবেনা। ওনাদের নিয়োজিত জুরি বোর্ড লেখাগুলো পড়ে দেখবেন এবং তাদের পছন্দ হলে ওনারাই সময়মত আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। দেশে আমার এক ভায়রাকে দিয়ে গোটা পাঁচেক গল্প আমি মুক্তধারাকে পাঠিয়েছিলাম গতবছরের এপ্রিল/মে মাসে। সেপ্টেম্বরের শেষতক নাগাদ মুক্তধারার পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ-খবর না পেয়ে ধরেই নিয়েছিলাম, ‘ফেল্’। অক্টোবরের মাঝামাঝি হঠাৎ করেই অভাবিতভাবে সজিব সাহার জরুরী ইমেইল পেলাম, মুক্তধারা আমার বই প্রকাশে আগ্রহী। এবং শুধু আগ্রহীই নয়, বেশ ভালই আগ্রহী। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে অনুপম প্রকাশনীর সাথে আমার সব কথাবার্তা পাকাপাকি হয়ে গেছে! হ্যাঁ, মোট চৌদ্দটা ছোট গল্প নিয়ে এবারের বই-মেলায় বের হচ্ছে আমার সারাজীবনের স্বপ্ন, লেখক হিসেবে আমাকে অফিসিয়ালি স্বীকৃতি দানকারী, আমার প্রথম প্রকাশিত বই- “আমেরিকার গল্পঃ রঙ দিয়ে যায় চেনা”।
তো, এই বই বের হওয়ার সাথে ঘোলের কি সম্পর্ক? হ্যাঁ, পাড়ার ভোজনরসিক গোপাল কিম্বা আচারী পন্ডিত মশাই বাজারের কারো ঘোল্ চেখে তা ভাল বললে, তা যেমন ভাল হওয়ার খানিকটা সম্ভাবনা থেকেই যায়, তেমনি ‘মুক্তধারা প্রকাশনী’র মত নন্দিত একটা প্রকাশনী কোনো বই প্রকাশের আগ্রহ দেখালে তা যে খানিকটা ভাল হওয়ার কথা, তা বোধহয় আশা করা যায়- হোকনা সেই লেখক বইপাড়ায় পরিচিত নাকি অপরিচিত।
— On Tue, 10/20/09, sajib saha <[email protected]> wrote:
From: sajib saha <[email protected]>
Subject: Message from Muktadhara regarding book
To: “Abdur Rahman Abid” <[email protected]>
Date: Tuesday, October 20, 2009, 4:00 AM
Hello Mr. Abid
How Are You?
We have recently got comment from our jurry board regarding your stories, given to us. Our jurry board is happy with your style of writing.
By this time we have communicated with your local representative/relative, he told me that, you have already made agreement with “Anupam” prokasoni, to publish this book from there. If that is true then we have nothing to say.
Then what can u do, is that send the other brand new stories for us. If we can publish that in boi-mela 2010, we must contact with you shortly.
Thanks.
Sajib Saha
Executive Director
মিলন দা’কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “বইয়ের দাম ১২০ টাকা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছেনা? একেবারে নতুন লেখক, এত দাম দিয়ে কেউ কি বই কিনতে চাইবে?” উনি বললেন, “‘রঙ দিয়ে যায় চেনা’ গল্পটায় বেশ কয়েক পৃষ্ঠা কালার ফর্মা থাকছে; এ দাম না রাখলে কষ্টিং-এ কোনোভাবেই পোষানো যাবে না”। হ্যাঁ, দামটা হয়ত একটু বেশীই। তবে এটুকু প্রতিশ্রুতি অন্তত দিতে পারি, “you won’t regret”। বই-মেলার শুরুতেই (অর্থাৎ পহেলা ফেব্রুয়ারীতেই) বইটা বের করবেন বলেছেন মিলন দা। বই-মেলায় গেলে, ‘অনুপম প্রকাশনী’র ষ্টলে আমার প্রথম প্রকাশিত বইটা খোঁজ করতে ভুলবেননা যেন। আর হ্যাঁ, বইটা পড়ে ভাল লাগলে, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের তা জানাতে ভুলবেননা যেন। প্লিজ।
বিনীত,
আব্দুর রহমান আবিদ
১ ফেব্রুয়ারী, ২০১০
@নন্দিনী, সাতরং? সেই নারী বিষয়ক ওয়েব সাইট! ওইটা তো মনে হয় বন্ধ হয়ে গেছে। ভালোই হয়েছে, আমার দেখা নেটে বাংলা সুপার ডুপার ফ্লপ একটা ওয়েব সাইট ছিলো এই সাতরং।a ৩ মাসে একবার পোষ্ট আপডেট হতো। আমার বিশ্বাস ওই ওয়েব সাইটের মডারেটরও সম্ভবত তার সাইটের লেখাগুলো দেখতেন না। নারী মুক্তির আন্দোলনে ওই ওয়েব সাইট যে কি ভূমিকা রেখেছে না বলে সময় নষ্ট নাই করলাম; তবে দুঃখ লাগছে জসিম মল্লিকের জন্যে- সাতরং বন্ধ হওয়ায় বেচারা বোধ হয় বেকার হয়ে গেছে। সাতরং-এ ১০ টা পোষ্ট আসলে দেখা যেতো ৮ টাই তার 😉
অভিনন্দন রইলো। :rose2:
@রাহাত খান,
অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ। বইটা পড়ে অনুভূতি জানালে আরও খুশী হবো।
আবিদ কে অভিনন্দন । বই এর বহুল প্রচার কামনা করছি । তবে অভিজিৎ এর সুরে সুর মিলিয়ে ছোট্ট একটা অনুযোগ করতে হচ্ছে, ফ্ল্যাপে সাতরং এর নামটা ও দেখলাম না । 🙂
@নন্দিনী,
সব অভিযোগ, অনুযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। সাতরং-এর জন্মলগ্ন থেকেই আমি ই-ফোরামটির একজন নিয়মিত লেখক। সেই হিসেবে বইয়ের ব্যাক ফ্ল্যাপে সাতরং-এর নামোল্লেখ না করা গুরুতর অন্যায় হয়েছে। তবে অন্যায়টি ইচ্ছাকৃত নয়। ভুলে নামটা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। আশা করি নন্দিনী হোসেন বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
হুম ! ক্ষমা করা গেলো । 🙂
নতুন বই বের হচ্ছে জেনে খুশি হলাম :rose2: :rose2:
@সৈকত চৌধুরী,
অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ। বইটা পড়ে অনুভূতি জানালে আরও খুশী হবো।
নতুন বই বের করার উপলক্ষে শুভেচ্ছা :rose2:
@ অভিজিত দা- সমস্যা নাই, পেছনের ফ্ল্যাপের কতিপয় ফোরামে প্রতিদিন যেভাবে আমাদের শূলে চড়ানো হয় তাতে উদ্দিষ্ট ফোরামের প্রচারণা হলে আখেরে আমাদেরই লাভ 😀
@পৃথিবী,
শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ। বই পড়ে অনুভূতি জানালে আরও খুশী হবো।
কংগ্রাচুলেশন আবিদ। প্রথম বই প্রকাশের আনন্দটাই অন্যরকম। আপনার আনন্দ সবার সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার বইয়ের বহুল প্রচার কামনা করি। এবারের ২০১০ সালে বেরুনো মুক্তমনা লেখকদের বইয়ের তালিকায় আপনার বইটাও রেখে দিলাম, যদিও বইয়ের পেছনের ফ্ল্যাপে একগাদা ফোরাম আর ওয়েব সাইটের নাম থাকলেও মুক্তমনার নামটা দেখছি না 🙂
@অভিজিৎ ভাই ,মুক্তমনার নাম না থাকার বিষয়টা আমিও নোটিশ করেছি :।মুক্তমনা নাম দেখলে পাঠক কর্তৃক লেখকরে মুরতাদ মনে করার ভয়েই মনে হয়……… 🙂 ।লেখক কে প্রথম বই বের করার আশ্চর্য অনুভূতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে উষ্ণ অভিনন্দন। :rose2: :rose2: :rose2:
@পথিক,
অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ। বইটা পড়ে অনুভূতি জানালে আরও খুশী হবো।
@অভিজিৎ,
সব অভিযোগ, অনুযোগ মেনে নিচ্ছি। তবে এও সত্যি, মুক্তমনায় নিয়মিত কখনো আমার লেখালেখি করা হয়নি। মুক্তমনার পুরোনো লেখকদের কেউ কেউ ছাড়া তুলনামূলক নতুন লেখকরা আমার লেখার সাথে সম্ভবত পরিচিতও নন। কাজেই গুরুদোষে আমাকে দোষী করা বোধহয় উচিত হবেনা। তবে লঘু দোষের অভিযোগ স্বীকার করে নিচ্ছি।
বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮০। প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ (মিলন দা সেরকমই বলেছিলেন)। অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ।
[…] রং দিয়ে যায় চেনা (২০১০, অনুপম প্রকাশনী) আব্দুর রহমান আবিদ […]