দোয়েল,গাছের পাতা, স্বর্ণচাঁপা,টলটলে দিঘি
বলে, “রণক্লান্ত বীরগণ! তোমরা ঘুমিয়ে আছো
ধুলোর শয্যায় স্তব্ধতায়,অথচ হায়েনা নেকড়ের পাল
দিকে দিকে দাঁত নখ বের করে স্বাধীনতাকেই
কি হিংস্র খুবলে খাচ্ছে। তোমরা কি জাগবে না? জাগবে না আর?
হাতে তুলে নেবে নাকি পশু-তাড়ানিয়া হাতিয়ার পুনরায়?
অন্তত ঝিমিয়ে-পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের শিরায় শিরায় আজ
দাও দোলা নব জাগৃতির; প্রকৃত জয়ের হোক উদ্বোধন।”
-শামসুর রাহমান
পতাকা তুলি। পতাকা নামাই। জীবন কাটছে এভাবেই।
সন্তানেরা বলে,”বাবা তুমি এখনো কেন এসব কর? কাজ করতে পার না? কি পেয়েছ এসব করে?
প্রশ্নগুলো শুনে মাঝে মাঝে থমকে যাই।
প্রশ্নগুলোর উত্তর কী আছে আমার কাছে?
উত্তর কি আছে কারো কাছে?
কখনো মনে হয় আছে। কখনো সন্দেহ জাগে। সাময়িক দ্বিধা কাটিয়ে ছেলে মেয়েদের বলি,
“মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার সন্তান। আমি সেই তোদেরকে রেখে চলে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছিলাম? কিসের জন্য গিয়েছিলাম? এই একটা পতাকার জন্যই তো!
জীবনে হাজারো অপ্রাপ্তি আছে। বঞ্চনা আছে।আছে দুঃখ,দারিদ্র্য আর হতাশা। কিন্তু তারপরও এই পতাকার কাছে এলে বুকটা এত্তো বড় হয়ে যায়। এছাড়া তো আমি বেঁচে থাকতে পারবোনা বাবা!”
আমার জীবনে তো আর কিছু নেই। এই পতাকা ছাড়া, এই দেশ ছাড়া। এটা ছেড়ে আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকব……।”
আবদুস সাত্তার সিকদার। কারো কাছে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার, আবার কারো কাছে তিনি কমান্ডার সাত্তার নামে পরিচিত। যখন তিনি কথাগুলো বলছিলেন তখন দুটো জ্বলজ্বলে চোখে টলমল অশ্রু। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রু ধরে রাখা সত্যিই কষ্টকর।
…………………
খুলনার গল্লামারি নামক স্থানের স্মৃতিসৌধ। লাল ইটের তৈরি। পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজ পতাকা। যে পতাকার জন্য নিজের জীবন তুচ্ছকরে সন্তানের মায়া ত্যগ করে যুদ্ধ করেছেন সে পতাকাই এখন তার জীবন। পতাকা ছাড়া কিছু বোঝেন না, করেন না।
প্রতিদিন নিয়ম করে স্মৃতিসৌধে পতাকা উত্তোলন করা আর নামানোই তার এখন একমাত্র কাজ। এই পতাকার মাঝেই তিনি খুঁজছেন জীবনের মানে।
খুলনা শহর থেকে গল্লামারির দূরত্ব প্রায় দু কিলোমিটার। গল্লামারি ব্রিজ পার হয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলে হাতের বাম দিকে গল্লামারি খাল। খালের পারেই স্মৃতিসৌধ এলাকা। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এলাকা চিহ্নিত করা।
…………………
গল্লামারির আছে ভয়াবহ গণহত্যার ইতিহাস। ইতিহাসের উপাদান হবার জন্য দরকার ছিল একটি গবেষণার,যা কেউ করেনি। কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ সাত্তার সিকদাররা আজো সেই স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের বয়স হয়েছে। তারাও হয়তো আর বেশি দিন থাকবেন না। তখন কে করবে স্মৃতিচারণ?
… এজাতির ট্র্যাজেডি- এই অমূল্য ইতিহাস সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। সরকারি তো নেইই, ব্যক্তি উদ্যোগও নেই।
গল্লামারির আকাশ জুড়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সাত্তার সিকদার ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন পতাকা স্ট্যান্ডের কাছে। অশ্রু টলমল চোখে মাথা উঁচু করে স্যালুট করলেন। তারপর আস্তে আস্তে নামাতে থাকলেন পতাকা। পতাকা গলায় জড়ালেন। ধীরে ধীরে আসলেন আমাদের কাছে। আবার শুরু করলেন আলোচনা।
সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার। নিজে কিছু করেননা আগেই বলা হয়েছে। সাত্তার সিকদার বললেন,”দেশ স্বাধীন করেছি যুদ্ধ করে। পতাকা পেয়েছি। আর কিছু চাইনা। কিন্তু বাবা দুবেলা খেয়ে বাঁচতে হবে তো। আরতো পারি না।”
মুক্তি যোদ্ধা সাত্তার সিকদারের চোখে আবারো জলের ধারা। মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি ব্যবসা করতেন। একটি মুদির দোকান ছিল,খেয়ে-পরে চলে যেত ভালোই। সেই ব্যবসা ফেলে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে ফিরে আর কিছুই পাননি।
তার দুটি গরু ছিল। দু’বছর আগে তার সেই গরু দুটি এলাকার কিছু লোক ধরে নিয়ে জবাই করে খেয়ে ফেলে। এর মধ্যে একটি গরুর পাচ কেজি দুধ হতো। এই দুধ বিক্রি করেই কষ্টে হলেও তার সংসার চলত। গরু হারিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। কারা নিয়ে গেছে আপনার গরু?
কিছুতেই তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিলেননা। তাকে বলেছিলাম আমাদের আপনি নাম বলেছেন সেটা প্রকাশ করা হবে না। এবার অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বললেন” কাউকেই তো আর বিশ্বাস করতে পারিনা বাবা। নাম বললে আমি এলাকায় থাকতে পারবো না,থাকতে পারবো না……।”
অনুসন্ধানে জানা যায়,’পার্শ্ববর্তী এলাকার তকিবুর রহমান ও তার ছেলে হাফিজের নেতৃত্বে একদল লোক তার গরু নিয়ে যায়। কে এই তকিবুর রহমান? অনুসন্ধানে জানা যায়,তকিবুর রহমান একাত্তরের একজন নামকরা রাজাকার।’… বদলে যাওয়া সামাজিক প্রেক্ষাপটে তকিবুর রহমানের কোন শাস্তি হয়নি।
তারা আজো টিকে আছে দাপটের সাথে। একাত্তরের পরাজিত দালাল আজ বিজয়ী বীরের ভূমিকায়। আর যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা সাত্তার সিকদাররা আজ জীবনযুদ্ধের পরাজিত সৈনিক। অকুতোভয় কমান্ডার সাত্তার সিকদার আজ একজন রাজাকারের নাম বলতেও ভয় পায়।
……………………
বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে গল্লামারি স্মৃতিসৌধে জাঁকজমক অনুষ্ঠান হয়। এমপি ডিসিরা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে আসেন। আশার বাণী শুনিয়ে চলে যান। সেদিনও পতাকা তোলেন কমান্ডার সাত্তার সিকদার। কিন্তু মূল অনুষ্ঠানে তিনি পেছনে পরে যান। তার কথা কেউ মনেও রাখেনা।
এতে হয়তো তার কিছুই যায়-আসে না। প্রতিদিনের মত যথা নিয়মে পতাকা তোলেন আর নামান। তার জীবনের বাকি সময়টা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে।
—————————————-
এটা ”সাপ্তাহিক ২০০০” এর ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালের প্রতিবেদন(কিছুটা সংক্ষেপিত)। আসুন তার বর্তমান অবস্থা দেখি।
”অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে তাঁর। ঠোট নড়ছে, বিড়বিড় করছেন। এত চেষ্টা করেও তার মুখ দিয়ে একটি বোধগম্য শব্দও বের হলো না। শোনা হলো না মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথাগুলো। শুন্যদৃষ্টিতে শুধুই তাকিয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই মানুষটির। অশীতিপর আবদুস সাত্তার এখন শুধুই প্রহর গুনছেন।
কবে শেষ হবে তা বেঁচে থাকার লড়াই! খুলনা শহরের পশ্চিমে গল্লামারি স্মৃতিসৌধের ঠিক পাশেই একটুকরো জমির উপর আবদুস সাত্তার তার পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন। জীর্ন কুঁড়ের ঘুণে ধরা একটি চৌকির ওপর শুয়ে থাকেন সারাদিন। কোথায় যন হারিয়ে গেছে তার একাত্তরের মনোবল। তিনি যুদ্ধ করেছিলেন নয় নম্বর সেক্টরে।
…………………………
১৯৯৫ সালে গল্লামারী বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হলে বিনা পারিশ্রমিকে এর সংরক্ষনের দায়িত্ব নেন তিনি। প্রতিদিন ভোরে জাতীয় পতাকা তুলতেন তিনি,সন্ধায় আবার নামিয়ে রাখতেন। ১৯৯৮ সালে(শেষ দিকে) প্রথমবার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়। তখন দিন পনেরো পতাকা তুলতে পারেন নি। সুস্থ হয়ে ফের ছুটে যান পতাকা তুলতে।
দ্বিতীয়বার রক্তক্ষরন হবার পর থেকে আর পতাকা তুলতে পারেন না। বাবার দ্বায়িত্ব এখন পালন করছেন মেঝ ছেলে হান্নান সিকদার। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার দেড় হাজার টাকা দিয়ে চলছে তাদের সাতজনের সংসার। তার স্ত্রী বলেন,’ওনাকে তিন বেলা ওষুধ দিতে মেলা টাকা লাগে,তাই এখন এক বেলা ওষুধ দেই।
আল্লার রহমতে তাই এখনো উনি বাইচে আছেন।”
…………………
একাত্তরের যুদ্ধ কেড়ে নেয় তার আর্থিক স্বাধীনতা। বাকহীন দৃষ্টি আজ শুধুই হারানো স্বাধীনতা খুঁজে ফেরে।
(প্রথম আলো-১৮ ডিসেম্বর ২০০৯)
।———————————————————
আমি যখন এই লেখা লিখছি, তখন আমাদের চট্টগ্রাম শহরে নামকরা রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের(সাকা) চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেয়ার অনুষ্ঠানের জন্য মাইকিং হচ্ছে!! (মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিল তখন)
এই যোদ্ধার জন্য কি কিছু করা যায় না? এই এত বড় ব্লগ কমিউনিটিতে খুলনা শহরের কেউ কি নেই? তার নামে কোন একটা ব্যঙ্কে কেউ প্লিজ একটা একাউন্ট খুলে দিয়ে ব্লগে একটা পোস্ট দিন। এরপর আমরা যার যার সাধ্যমত কিছু করব।
এই পোস্টের আপডেট খবর।
আমার এক পরিচিত ভাইয়া কুয়েটে(খুলনা) পড়েন। তাকে আমি এই মুক্তিযোদ্ধার ব্যপারে ডিটেইল খবর নিতে বলেছিলাম। সে নিজে গিয়ে খবর নিয়ে এসেছে।
তার থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রথম আলোতে যা লিখেছে তার মোটামুটি সবই সত্যি। সে তিন বার ব্রেইন স্ট্রোক করেছে। তার বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে(উপায় ছিল না, কারন তার আয়ও বেশি না)। মেঝ ছেলে তেমন কিছুই করে না। ছোট ছেলে ম্যাট্রিক পাশ, ড্রাইভিং শিখেছে, কিন্তু এখন বেকার। আর তারা আগে গল্লামারী সৌধের পাশেই একটা পুকুরে মাছ চাষ করতো আর সাত শতক(কতটুকুতে সাত শতক হয় আমি জানিনা) জমি ছিল। একটা চালের কলও কিনেছিলেন লোন নিয়ে, কিন্তু চালের কল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোন পরিশোধ করতে গিয়ে তার পাচ শতক জমি বিক্রি করতে হয়েছে।
এখন আয় বলতে শুধুমাত্র সরকার থেকে পাওয়া ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতা। কিন্তু প্রতি সাপ্তাহেই নাকি তার পেছনে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকার ঔষধ খরচ যায়।
এই হলো অবস্থা। এখন আমি যাকে খবর নিতে বলেছি সে বলেছে, সে প্রথমে তার ভার্সিটির ছেলেদের সাথে কথা বলে দেখবে কি করা যায়, তারপর যদি সম্ভব হয় তো ছোট ছেলেকে কোথাও( হয়তো ভার্সিটির কাজেই) লাগিয়ে দেবে।
আর যদি কিছু করা যায় বা কিছু করার দরকার হয় তবে আমাকে জানাবে এবং আমি আবার রিপোস্ট দেব।
@মুহাইমীন,
খাটি ইসলাম কি? ওটা কেমন? কিভাবে বুঝব ?
আমি মনে করি খাঁটি ইসলামের অনুসারী বলেই মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলো তখন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল।
ইসলাম ত আন্তর্জাতিকতার পক্ষে জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে। ইসলামিক ভাতৃত্বের পক্ষে। তাহলে যারা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল, তারা কি করে ইসলাম বিরোধিতার কাজ করেছিল আমি বুঝছি না। আমি এই নিয়ে সাবির বলে এক ভদ্রলোকের সাথে বিতর্কের সময় মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা সিরিয়াতে তখন পেপার গুলো কি লিখছিল সেই নিয়ে জেনেছিলেম। কোন এক বাংলাদেশী এগুলো সংগ্রহ করেছেন। সেখানে ইসলামিক ভাতৃত্ববোধের জন্যে ওই দেশগুলি এবং তাদের পেপার পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। সেটা ভুল ইসলাম কেন হবে? আমি ইসলাম বুঝি সামান্যই-কিন্ত আমার ত মনে হয়েছে তারা ইসলামের নীতি মেনেই পাকিস্তান ভাগ হৌকচান নি। তাতে কিছু মেয়ে ধর্ষিত হল বা কিছু বাংলাদেশী মানুষ মারা গেল কি যায় আসে? ইসলাম ত এসবের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ন-তাদের জীবনে? তাই না? তাহলে ভুলটা কোথায়?
@বিপ্লব পাল,
আমি যতদুর জানি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি ন্যায়যুদ্ধ। কোরানে ন্যায়ের জন্য জীবন বাজি রাখতে বলা হয়েছে সকল ক্ষেত্রে- এটাই কোরানের মূলমন্ত্র। কোরান বলছে যে মানুষের ভেতরেই ইশ্বর বাস করতে চায়(বাস করেও) মানুষ যখন তার ভেতরের হৃত ঈশ্বরকে সাধনার মাধ্যমে নিজের ভেতরে থাকতে দেয় তখন প্রত্যেক মানুষের মাঝেই ঈশ্বর সময় ও পরিবেশ পরিস্থিতির সাপেক্ষে প্রত্যাদেশ পাঠায়, মানুষ যদি অন্তরের এই প্রত্যাদেশ কে গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে তৎপর হয় তবে সে ঈশ্বরের নির্দেশের কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করল- কোরানে একেই বলা হয়েছে ‘ইসলাম’ অর্থাৎ ‘যে জীবন ব্যাবস্থায় পরিপূর্ণ ভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা হয়’। অর্থাৎ কোরানের ‘ইসলাম’ অনুযায়ী মানুষকে যদি ‘মুসলিম'( যে পরিপূর্ণ ভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করল) হতে হয় তবে তাকে অবশ্যই ন্যাযের প্রতি সমর্থন দিতে হবে- যেহেতু ন্যায় বিচার করা ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য( আর ঈশ্বরের গুন নিজের মধ্যে লালন না করলে ঈশ্বর নিজের ভেতরে আসবে না আর ঈশ্বরের নিজের ভেতর না আসলে আমাদের ভেতরে তার প্রত্যাদেশও আসবে না ফলে, তা মানা না মানার প্রশ্নই ওঠে না-আর তাহলে মুসলিমও হওয়া যাবে না)।
ভাই, আগে তো ‘এস্লাম’ আর ‘মোস্লেম’ তার পরেই না ভাতৃত্বের প্রশ্ন। যেই জানোয়াররা তাদের অন্ধ ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অহংকারবশত মানুষের প্রতি স্বাভাবিক মমতাবিবর্জিত হয়ে নিরীহ মানুষের উপর পাশবিক( এই শব্দটা বলে শব্দটাকে অপমান করা হল এবং সেই সাথে পশুদেরকেও কারণ, পশুরাও এরকম অমানবিক নয়) আক্রমণ করে কোরান তাদেরকে কি করে ‘মোস্লিম’ হিসাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে তা আমার বোধের অগম্য। কারণ কোরান বলে, নিজের মধ্যে ঈশ্বরকে আনতে গেলে আপনাকে ষড়ঋপু দমন করতে হবে আর নিজেকে অহংকারশূণ্য করতে হবে, কারণ সকল প্রসংশাই একমাত্র সর্বস্রষ্টার প্রাপ্য-মানুষের এতে কোন ভাগ নেই। আর যারা অসহায় নিরীহ নারী দেখে নিজেদের কামাগ্নি দমন করতে পারে না তারা কি করে ‘মোস্লেম’? যেখানে কোন মুসলিমই নাই সেখানে মুসলমানকে সমর্থন দেওয়াটাতো বাপের আগে হাটার মত মনে হয়। আর ভাল কথা যাদের অন্তরে ‘ঈমান’ আছে তাদের তো কাম স্পর্শ করার প্রশ্নই ওঠে না।
অধিকাংশ মানুষ ইসলামের কচুও বোঝে না। তারা যা করেছে তা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য- নিজেদের কামনা বাসনাকে পরিতৃপ্ত করার জন্যই করেছে। এখানে ইসলামের নীতির তো প্রশ্নই ওঠে না।
কোরান বলছে এই বানী মানুষকে বোঝানো একমাত্র ঈশ্বরের দায়িত্ব। ঈশ্বরের নিয়ম এই যে, মানুষ যদি সাধনা করে নিজের ভেতরে ঈশ্বরের পুনঃপ্রবেশ না ঘটায় তবে সে তার বানী, তার রূপ কখনোই অনুধাব্ন করতে পারবে না; কারণ এটা ঈশ্বরের বাণী-তার মত না হলে তার বাণী বোঝা যাবে না। মানুষের অধিকাংশই তো খাসা শয়তান। যেই পাকিস্তানী সৈণ্যরা বাঙ্গালীদের কাফের বলেছে এই কারণে যে তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে কোরান থেকে শতমাইল দূরে চলে গেছে এবং তাই নিজের প্রবৃত্তি অনুসারে তারা ইসলামের এই ব্যাক্ষা করেছে- সে এক বিশাল আলোচনা আজ না হয় নাই বল্লাম।
ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন,
এটাত ইসলামের সুফী ব্যাখ্যা হল। অদ্বৈতবাদি ব্যাখ্যা- আল্লার অস্তিত্ব আমার মধ্যেও। অহম ব্রহ্মন-যা অদ্বৈতবাদি হিন্দু ধর্মেও মানে।
আমি যদ্দুরা জানি, সুফী ইসলামের এই চমৎকার মানবিক ব্যাখার জন্যে অনেক সুফী সাধককে হত্যা করা হয়েছে। আজো ইরানে তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে । এবং আমাদের জোকার লায়েক ভাই বলেই দিয়েছেন দ্বৈতবাদি ইসলামকে অদ্বৈতবাদি বানিয়ে সুফীরা প্যান্থেওনিক হয়েছে এবং তা ইসলামের জন্যে গুনহ।
বালাই ষাঠ-দেখবেন আবার আপনার বিরুদ্ধে না, ফতেয়া না নামে।
@মুহাইমীন,
তার মানে মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলো যখন বাংলাদেশকে সমর্থন না করে পাকিস্তানকে সমর্থন করল, তখন তারা কেউ খাঁটি ইসলাম কি তা জানতোনা, বোধ হয় এখনো খাঁটি ইসলাম সর্ম্পকে তাদের কোনো ধারনা নাই।
@ব্রাইট স্মাইল,
মুহাইমিন সাহেব সেটাই বলতে চাচ্ছেন। আসল ইসলাম খুব কম লোকেই জানে।
এ কথা আসলে প্রায়ই শোনা যায়, নুতন কিছু না।
আসলে মুক্তমনা ব্লগের সদস্য অনেক কম,আর বেশির ভাগই মনে হয় আপনার মত প্রবাসী। আমি নিজেও খুলনা শহরে যেয়ে কিছু করতে পারবো না, তাই আপাতত মনে হয় না কিছু করতে পারবো, শুধু খবরের কাগজে প্রতিবেদন পরা ছাড়া।
আমি সামুতে আর সচলে একই পোস্ট দিয়েছিলাম,কিন্তু ঐদুটাতেই আমি নতুন ব্লগার,তাই এখনো ছাড়পত্র পাই নি।
কি আর করা!! আসেন অপেক্ষা করি কখন তিনি ধুকতে ধুকতে মারা যাবেন, এবং আবার পত্রিকার রিপোর্ট হবেন!! এবং সবশেষে মরার পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় একটা স্যালুট দিয়ে দাফন করা হবে!!! :-Y
@তানভী,
খুব দূঃখজনক। প্রথম আলোর থ্রুতে কিছু করা যায় না? অন্তত তারা যোগাযোগটুকু করে দিক, একাউন্ট সেট করে দিন এসব। ওরা তো এমন বেশ কিছু কাজই করে।
@আদিল মাহমুদ,
আমার প্রথম আলো ব্লগে একাউন্ট নেই। আপনার বা এই ব্লগের অন্য কারো প্রথম আলো ব্লগে একাউন্ট থাকলে আপনি সরাসরি এই লেখা কপি-পেস্ট করে প্রথম আলো ব্লগে দিয়ে দিন। তাহলে ঝামেলা কমে যাবে। এরপর এখানে আপডেট দিন।
এটা করতে পারলে খুব ভালো হয়।
যদি পারেন সব গুলো ব্লগে এটা কপি পেস্ট করে দিন।
আপনার কাছে আমার অনুরোধ রইলো। আর আমি খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি তে(কুয়েট) আমার কিছু পরিচিত মানুষ আছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখি কি হয়।
শেষ পর্যন্ত যদি কিছু করা যায়।
@তানভী,
দেখি, প্রথম আলোর ই-মেইলে মেইল করব।
এখানে
একটা বইয়ের তালিকা দিলাম। যে বই গুলোর তথ্য মিসিং আছে সেগুলোর তথ্য থাকলে যোগ করে দিতে পারেন।আর আপয়াদের কাছে যেসকল বই আছে যেগুলো তালিকায় নেই, সেগুলো যোগকরে দিতে পারেন।
এখানে দারুন একটা বিশ্লষণ পেলাম। আসলে মনে হয় এটাই হতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেও(কল্পনা!!) জামাতের রাজনীতি বন্ধ করা আদৌ যাবে কিনা সন্দেহ আছে।
@তানভী,
মামু, লিঙ্ক তো কাম করে না মনে হয়।
রাজাকার কয়টার বিচার হইলে জামাতের রাজনীতি বন্ধ হবে কে বলল?
@আদিল মাহমুদ,
এখানে
এই বার দেখেন ঠিক হইলো কিনা। আগের বার ক্যমনে দিতে হয় বুঝি নাই।
@তানভী,
হ্যা, এখন পড়া যাচ্ছে।
মূল লেখার ব্যাপারে কেউ কিছু বলল না এখনো।
এই ভদ্রলোককে কিভাবে সাহায্য করা যায়?
মুক্তিযোদ্ধাদের গতানুগতিক করুণ চিত্র। স্বাধীন দেশে যেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের পালিয়ে বেড়ানোর কথা, করুণ অবস্থায় পতিত হবার কথা, সেখানে বাংলাদেশে ঘটেছে পুরোপুরি উলটো ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধারাই নিপতিত হয়েছে নিদারুণ দুঃখ কষ্টের মধ্যে। কেন এটা ঘটেছে তা নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। একজন দুইজন ব্যতিক্রম হতে পারে, কিন্তু কীভাবে সব রাজাকারই মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে ভাল থাকে যুদ্ধের পরে সেটা এক বিরাট রহস্য।
@ফরিদ আহমেদ,
এতে সমাজতত্ত্ব ত অবশ্যই আছে। ইসলামই রাজাকার দের বাঁচিয়েছে। আফটার অল তারা ইমানের পক্ষে! মুক্তিযোদ্ধাদের ইমান ত দুর্বল! মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কবরে পাঠিয়ে সেখানে পাইকেরি রেটে আরবের টাকায় ইসলামকে ঢোকালে ইমানদার রাজাকারদেরই বেঁচে থাকার কথা। সব মুসলমান দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে। সেটাই বা কোন বাংলাদেশী মুসলমান স্বরণে রাখে?
@বিপ্লব পাল,
আমি মনে করি এই ইসলাম বিষয়ক কারনটাই প্রধান। তবে অন্য কিছু কারন ও আছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর পরই যদি এদের বিচার করা হত তাহলে কিন্তু এই ইসলামী ট্রাম্পকার্ড ও কাজে আসত না। মানুষের ক্ষোভের কাছে টুপি ডাড়ি মেডিসিন কোন সহানুভূতি পেত না। তবে বিধি বাম। দুনিয়ায় বড় ধরনের অপরাধীরা মনে হয় কমই সাজা পায়।
সময়ের সাথে সাথে এদের নৃশংসতার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে গেছে, জাকিয়ে বসেছে ইসলামী ব্রাদারহুডের দোহাই। সময়ের সাথে এটা অবধারিত হলেও এ ক্ষেত্রে কাজটা অনেকগুনে এগিয়ে দিয়েছে ৭৫ পরবর্তি সরকারগুলি। এরা একদিকে দেশকে ইসলামী করন করেছে আরেকদিকে ইতিহাসকে করেছে অত্যন্ত সূচতূরভাবে কাটাছেড়া। এখন বিচার তো দুরের কথা অনেকে স্বীকার করতেই চান না যে এদের পৈশাচিকতার পেছনে ধর্মের কোনরকম ভূমিকা ছিল বলে। নানান রকমের ভুজং ভাজং দিয়ে সত্য এড়াতে চান। হাজার হোক নিজের ধর্মের বদনাম কে শুনতে চায়?
তবে আরেকটি ফ্যাক্টর ভুললে চলবে না যেটা আমাদের মতন গরীব দেশে চূড়ান্ত ভূমিকা রাখে, সেটা টাকা পয়সা। মধ্যপ্রাচ্যের আশীর্বাদ পাওয়া এই ঘাতক শ্রেনীর টাকা পয়সার কোনদিনই অভাব ছিল না। ৭১ এর পরে দেশে ইসলাম বিপন্ন এই ছুতায় এরা মধ্যপ্রাচ্যের থেকে বিপুল পরিমান টাকা পয়সা পেয়েছে। ৭৫ এর পর থেকে সেই টাকা এরা ব্যাবসা বানিজ্যে খাটিয়ে বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে গেছে। তাই ভোটের হিসেবে এদের নগন্য মনে হলেও আর্থিক শক্তিতে এরা প্রচন্ড শক্তিশালী। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশই এদের নিয়ন্ত্রনে। নীরিহ মুক্তিযোদ্ধারা এখানে হেরে গেছে যোজন যোজন দূরে। এদের বিচার এখন আবার আইন করে শুরু হলেও আমার আশংকা এই ফ্যাক্টরের কথা কেউই তেমন করে চিন্তা করছে না।
এর প্রভাব দেখা গেছে যুদ্ধের পর পরও। তখন দালাল আইনে অপরাধ তদন্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল থানার ওসিদের। বলাই বাহুল্য থানার ওসিদের কেনার ক্ষমতা রাজাকারদের ভালই ছিল, ঘাতকদের শিকার লোকজনের আত্মীয় স্বজনদের ছিল না।
@বিপ্লব পাল,
@ফুয়াদ,
আপনার জবাব বিপ্লব মনে হয় দেবে।
আমি আপনাকে দুটি নীরিহ প্রশ্ন করি।
১। ৭১ এ মুসলিম দেশগুলির বাংলাদেশে গনহত্যার বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করা ও একচেটিয়া পাকিস্তানীদের সমর্থন দেওয়া কি চোখে দেখেন? এমনকি আমেরিকান সরকার আমাদের বিরুদ্ধে থাকলেও আমেরিকার জনগন কিন্তু আমাদের পক্ষে অনেক কিছু করেছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ৭১ সালে গনহত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিল হয়েছে বলে জানা আছে? ইসরাইল মোসলমান মারলেই শুধু অপরাধ আর মুসলমান মোসলমানে মোসলমান মারলে তাতে সমস্যা নেই? এটা কোন ধরনের ঈমান?
২।জামাতে ইসলামী ও তার সমমনা দলগুলির ৭১ এর ভূমিকা কি চোখে দেখেন? কেন রাজাকার আল বদর বললেই আমাদের চোখে টুপি দাড়িওয়ালা চেহারা ভেসে ওঠে? বিপুল সংখ্যক আলেম ওলামা শ্রেনীর সেসব বাহিনীতে থাকার কারনেই তো, নাকি?
৩। জামাতের কাছ থেকে কিছু স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধের জন্য পদক নেওয়া বিষয়ে কি বলেন?
@ফুয়াদ,
রাজাকারদের ঈমান আর মুক্তিযোদ্ধাদের ঈমানের মধ্যে পার্থক্য আছে। দুই দলের ঈমানের ডেফিনিশন একই ক্যাটেগরিতে পড়েনা।
@ফুয়াদ,
ভাই আপনি মনে হয় ওনার লাইনটার পাশের আশ্চর্যবোধক চিহ্নটা দেখতে ভূলে গেছেন!!!!! নাইলে একথা বলেন ক্যমনে?
উনি ব্যাঙ্গ করে বলতে চেয়েছেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের ঈমান যদি দূর্বল নাই হবে তবে দেশের মানুষ কেন ইসলামের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের ছেড়ে ঘাতক জামাতের দিকে ঝুকবে।
জামাতের বিদেশ থেকে প্রাপ্ত টাকার পরিমানটা এত অতিরিক্ত পরিমান বেশি যে টাকায় মানুষের কাছে তাদের পাপ ঢাকা পড়ে গেছে!!
আমি এক বইয়ে পড়েছিলাম যে “মুক্তির কথা” ফিল্মে এক গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে, ঐ গ্রামের চেয়ারম্যান ছিল রাজাকার। ঐ মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষাৎকারে বলেন,” নিশ্চই আমরা সবাই তাদের মতন রাজাকার হয়ে গেছি, নাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামে কিভাবে একজন রাজাকার চেয়ারম্যান হয়?”
এই ব্যপারটাই এখন হচ্ছে। ”আল মাহামুদ” এখন রাজাকারদের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধার পুরস্কার নেন!!!
বেচে থাকতে যে আরও কত কি দেখতে হবে!!! :-Y
@ফুয়াদ,
রাজাকারগন যে ঈমানের বশবর্তী হয়ে রাজাকারগিরী করেছে সেই ধরনের ঈমান নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধাদের কম।
@বিপ্লব পাল, দয়া করে এর সাথে খাঁটি ইসলামের প্রসঙ্গ এনে এঁকে অপমান করবেন না।
@মুহাইমীন,
১২০০ মিলিয়ান মুসলিমের ১২০০ মিলিয়ান ইসলাম আছে।
খাঁটি ইসলাম ব্যাপারটা কি? সেটা কি মঙ্গল গ্রহে পালনের জন্যে?
না রোবটদের পালনের জন্যে?
আমার প্রশ্ন খুব সহজ এবং সরল। সব মসুলিম দেশ এবং মুসলমানরা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। মানে পৃথিবীতে একজন ও খাঁটি মুসলমান নাই?
আপনার খাঁটি ইসলাম ব্যাপারটা কি?
@বিপ্লব পাল,
যদি এটা সত্যি হয়ে থাকে তবে বলতে হয় যারা বিরোধিতা করেছিল তারা একজনও মুসলমান নয়। আর খাঁটি ইসলাম নিয়ে আমি এখন আলোচনা করতে চাচ্ছি না এই মুহূর্তে।
আর এই কারনেই নানা মুনির নানা মত। তাই তো কোরানে এসেছে-