(১)
ক্রীসমাসের এই ছুটিতে আমেরিকা তথা বিশ্বে সবথেকে আলোচিত টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামেরুনের “অভতার” (বাংলা অবতার)। শুধু অত্যাধুনিক স্টিরিওগ্রাফিক ক্যামেরা বা থ্রি ডাইমেনশনার কম্পুটার গ্রাফিক্সের জন্যেই অবতার নিয়ে এত সোরগোল হচ্ছে তা ঠিক না। হলে গিয়ে মনে হল আমেরিকান বস্তুবাদি সভ্যতায় বিধ্বস্ত অনেকেই ফিরে যেতে চাইছে, ফিরিয়ে দাও সে অরণ্যের যুগে যেখানে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করেই বেঁচে থেকেছে মানুষ।
অভতারের এমন দুড়ন্ত ক্রেজ আমার গত দশ বছরের আমেরিকান জীবনে বিরল অভিজ্ঞতা। আমার বাড়িথেকে ১৫ মিনিটি দুরে দুটো মাল্টিপ্লেক্স। কলম্বিয়ার আই-ম্যাক্সে আছে ১২টা আর আরুনডেলের সিনেম্যাক্সে আছে ২৪ টা থিয়েটার। আই ম্যাক্সের ৫ টাতে আর সিনেম্যাক্সের ১২টা থিয়েটারে চলছে অভতার। এত শো দেখানোর পরেও যা ভীর দেখলাম, সেটা বহুদিন আগে হিন্দি সিনেমার ফার্স্ট ডে ফার্স্টশোতে ভারতে দেখেছি। এখানে সিনেমার জন্যে বিশাল লাইন, ধাক্কাধাক্কি কল্পনাতীত। সাধারনত শো শুরু হওয়ার ত্রিশ মিনিট আগে আমি যাত্রা শরু করি। কাঁটার মতন হিসাব মেলে প্রতিবার। হলে পৌঁছাব ১৫ মিনিটে, পার্ক করে টিকিট কেটে ঢুকে যাব শো শুরু হওয়ার ৫ মিনিট আগে । এখানে কদাচিৎ হলগুলি ৪০% ভর্তি থাকে। শেষ স্ল্যামডগ মিলিয়নারের মতন সুপারহিট সিনেমাতেও দেখেছি ৩০-৪০% মতন সীট প্রাইম টাইমে ভর্তি ছিল। ফলে পার্ক করে, মেশিন থেকে টিকিট কেটে ঢুকে যেতে কোন সময়, লাইন, হ্যাপা কিছুই লাগে না। এবার যথারীতি আই ম্যাক্সের সামনে ২-৪০ নাগাদ পৌঁছালাম। তারপর দেখি গাড়ি ঠেলে ঢুকতেই পারছি না। শেষে ১৫ মিনিট ধরে গাড়ি যখন এগোল না, সোজা আবার বাড়ির দিকে চলে এলাম। এবার ঠিক করলাম ৬টা শো তে ৫টার সময়ে যাব।
ও বাবা। সেখানেও বিধি বাম। এবার পার্ক করে পৌঁছলাম বটে, কিন্ত রাতের বাকী ১৪টা শোতে আই ম্যাক্সে টিকিট নেই।শেষে আরুনডেলের সিনেম্যাক্সে ছুটলাম। ওখানে অনেকগুলো থিয়েটারে চলছে বলে, প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর, অবতারের একটা নতুন শো শুরু হচ্ছে। সেখানে থ্রিডির শেষ শো-রাত দশটার টিকিট পেলাম। সাথে চার বছরের পুত্র সন্তান বলে প্রথমে রাজী হইনি। পরে দেখলাম, কালকেও এর থেকে ভাল কিছু হবে আশা নেই। ফলে চোখ কান বুঁজে ভাগ্যকে মেনে নিতেই হল।
গত সপ্তাহে অভতার, গোটা পৃথিবীতেই হাউসফুল। ৬১৫ মিলিয়ান ডলার তুলেছে এক সপ্তাহের বক্স অফিসে যা এক-কালীন রেকর্ড। কিন্তু কি ম্যাসেজ পাঠালেন ক্যামেরুন, যার জন্যে উত্তাল সারা পৃথিবী?
(২)
প্যান্ডোরা ২১৫৪ ঃ নাভিদের সমাজ এবং মানুষের সাম্রাজ্যবাদ
ক্যামেরুন তার সাক্ষাতকারে, কনফারেন্সে বারবার বলেছেন, অভতারের ম্যাজিক সিনেমার শিল্প বিপ্লবে না। দর্শক আসবে শুধু গল্পের জাদুতে। কিন্ত এ শুধু গল্প না-আমেরিকা তথা বস্তুবাদি সভ্যতার বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন। যা আমরা ইদানিং করছি। কিন্ত অভতারের মতন এত শক্ত বক্তব্য একমাত্রেই শিল্পেই সক্ষম। শিল্পের দরকার ঠিক এই কারনেই – মানুষের নির্লিপ্ত স্তরকে অতিক্রম করে, চেতনার দরজায় ধাক্কা মারে।
আলফা সেঞ্চুরীর গ্রহ পলিফেমাসের উপগ্রহ প্যান্ডোরা। পৃথিবী সাদৃশ জলবায়ু এবং বায়োষ্ফিয়ার। ২১৫৪ সালে ঘটনার শুরু। মানুষ সেখানে পৌঁছে গেছে। পলিফেমাস নিয়ে মানুষের আগ্রহের কারন এই গ্রহে উনোবাটিয়ামের খনি। আনঅবাটিয়াম এন্টি গ্রাভিটি ম্যাটেরিয়াল-পৃথিবীতে এর খুব দাম। আর ডি এ কর্পরেশন, যা পৃথিবীর একটি পাবলিক কোম্পানী, এখানে এসেছে আনঅবাটিয়ামের খনি বানাবে বলে। কিন্ত সেটা করতে গেলে প্যান্ডোরার আদিবাসি নভিদের তাড়াতে হয় তাদের আদিভূমি থেকে। প্রথমে তারা নভিদের লোভ দেখিয়েছে অন্য জায়গায় পুনর্বাসন দেবে বলে। নভিরা রাজি হয় নি। ফলে আর ডি এক্স কর্পরেশন নিয়ে সেছে এক বিরাট প্রাইভেট সেনা বাহিনী। কিন্ত এখনো আক্রমন করছে না। হাজার হলেও মানুষ সভ্য! রেড ইন্ডিয়ানদের মতন নভিদের মেরে ফেললে “ব্যাড প্রেসের” জন্যে শেয়ার প্রাইসে ধ্বস নামবে। অনেকটা টাটা সেলিমদের নন্দীগ্রামে যেমন হয়েছিল আর কি। ওখানে সিপিএমের হার্মাদরা ছিল সেলিমদের প্রাইভেট আর্মি।
তাই নাভিদের বুঝিয়ে পটিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার জন্যে তৈরী হয়েছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মার্ভেল অবতার। এদের ডি এন এ মানুষ আর নভিদের সংকর। অভতারের বায়োলজিক্যাল দেহটা নভিদের কিন্ত তাদের মাথাকে পরিচালনা করে মানুষ। আর ডি এ কর্পরেশনের বেস স্টেশন থেকে। তবে সেই মানবই নভি অবতারের পরিচালক হতে পারবে, যে মানুষটির ডি এন এর সাথে নভির সংকরটি বানানো হয়েছে। অনেকটা কৃষ্ণ যেমন ছিলেন মানুষের দেহে বিষ্ণু অবতার। ক্যামেরুন ঠিক এই সাদৃশ্যের জন্যেই এদের নাম দিয়েছেন অবতার, যা সংস্কৃতে অভতার। নাভিদের দেহে মানুষ অবতার। যাদের আসল কাজ নাভিদের সংস্কৃতিকে ভাল করে জেনে বুঝে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্যে রাজী করানো!
প্যান্ডোরার নাভিরা বিবর্তনের প্যালিওলিথিক ধাপে আছে। কৃষিভিত্তিক সমাজে ঢোকার পূর্বে শিকারী মানুষেরা যেমন ছিল। প্যান্ডোরায় অভিকর্ষজ বল কম। তাই নাভিরা ১০ ফুট লম্বা। এখানকার উদ্ভিদ প্রজাতিও বিশাল লম্বা অভিকর্ষজ বলের অভাবে। আর সেই পরিবেশে বিবর্তনের জন্যে নাভিরা অনেকটাই বিড়াল মানুষ। ক্যাট ফ্যামিলির প্রিডেটরদের মতন ক্ষীপ্র তাদের গতি গাছ থেকে মাটিতে।
কিন্ত গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে নাভিদের সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাস। নাভিরা প্যাগান। আরো নিঁখুত ভাবে লিখলে প্যান্থেওনিক প্যাগান। অর্থাৎ হিন্দুদের মতন এদেরও বিশ্বাস, আশে পাশের সব পশু, পাখী, গাছ-পালা সবকিছুই ঈশ্বর। যদিও এদের সংস্কৃতি আফ্রিকার প্যালিওলিথিক আদিবাসিদের মতন। নভিদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে হিন্দু ধর্মকে আরো প্রবল ভাবে রূপকের আকারে ঢুকিয়েছেন ক্যামেরুন সুপার কনসাসনেশ বা বিশ্বচেতনার মধ্যে দিয়ে। নাভিরা বিশ্বাস করে সমগ্র প্রকৃতির সাথে তারা অবিচ্ছেদ্য-মানসিক এবং দৈহিক ভাবে। এই সিনেমাতে সেটা এসেছে নানা ভাবে। অভতার প্রজেক্টের লিড বিজ্ঞানী ডঃ গ্রেস আগাস্টাইনের বিশ্বাস প্যান্ডোরার বৃতৎতম বটবৃক্ষটির শিকড়গুলি আসলেই নিউরাল নেটওয়ার্ক। যার সাহায্যে সমস্ত নাভিরা একটি সামগ্রিক চেতনার যাথে যুক্ত। শুধু তাই না। নাভিদের ঘোড়া বা উড়ন্ত বিশাল পাখী তারুক সবার সাথেই তারা চুলের মাধ্যমে ‘চেতনার’ বন্ডিং করে তাদেরকে ব্যাবহার করে। এই সামগ্রিক বিশ্বচেতনা বা সুপার কনসাসনেস এর ধারনা শ্রী অরবিন্দের লেখাতে বারবার এসেছে-যাকে অরবিন্দ বলেছেন সুপার মাইন্ড।
“To be in the being of all and to include all in one’s being, to be conscious of the consciousness of all, to be integrated in force with the universal force, to carry all action and experience in oneself and feel it as one’s own action and experience, to feel all selves as one’s own self, to feel all delight of being as one’s own delight of being is a necessary condition of the integral divine living.”
— Sri Aurobindo, The Life Divine
(৩)
বস্তুবাদ বনাম প্যাগানিজমঃ
প্যাগানিজম এই গল্পে প্রকৃতি মায়ের ধারক এবং বাহক। আধুনিক বস্তবাদি তথা একেশ্বরবাদি চিন্তায় প্যাগানিজম হচ্ছে কুসংস্কার। প্যান্থেওনিক প্যাগান হিন্দুদের ইঁদুর বিড়াল গরু পূজা ইত্যাদি বস্তুবাদি বা একেশ্বরবাদি দৃষ্টিতে হাস্যকর। যার জন্যে ইতিহাসে আমরা দেখব হিন্দু বা মায়ান বা রেড ইন্ডিয়ান প্যাগান সভ্যতার ওপর উন্নত মিলিটারীর অধিকারী খ্রীষ্ঠান বা ইসলামিক সভ্যতা বারবার আক্রমন চালিয়েছে। খ্রীষ্ঠান বা ইসলামিক ইতিহাসে এই সব আক্রমনকে দেখা হয় অসভ্য প্যাগানদের সভ্য করার ইতিহাস। এখানেও মানুষ নভিদের সভ্য করতে চেয়েছে বলে দাবী করছে। কিন্ত এই দাবীর অন্তসার শুন্যতা প্রমান হয় প্যান্ডোরাতে আর ডি এ কর্পরেশনের হেড পার্কার সেলফ্রিজ এর কথাবার্তায়। কর্পরেট অফিসার পার্কার এই গল্পে ধনতন্ত্রের প্রতিনিধি এবং এন্টাগনিস্ট। সে এই ব্যাপারে খুবই পরিষ্কার যে আসল মোটিভেশন হচ্ছে ‘লাভ’। সভ্য করার কথাটা সুগারকোট। অথচ বাবরনামা থেকে লর্ড ক্লাইভ-সবার লেখাতেই পার্কারের বক্তব্য পাওয়া যাবে-সেটা হচ্ছে নেটিভ হিন্দু প্যাগানরা সাপ ব্যাঙ পূজ়ো করা অসভ্য-তাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনুন্নত। তাই এদের সভ্য করতে ঈশ্বর তাদের পাঠিয়েছেন। অথচ এদের সবার তলপেটেই ছিল পার্কারের মতন সম্পদের জন্যে লোভ।
কিন্তু এই বস্তবাদি বা একেশ্বরবাদি সভ্যতা যেটা বোঝে না-সেটা হচ্ছে প্যান্থেওনিক প্যাগানিজম কিন্ত একেশ্বরবাদি ধর্মগুলো বা অধুনা বস্তবাদি সভ্যতা থেকে আরো হাজার হাজার বছর পুরানো। হাজার হাজার বছরের বিবর্তন তাদের শিখিয়েছে প্রকৃতি বান্ধবতা। তারা জানে প্রকৃতিই তাদের ঈশ্বর। প্রকৃতি ধ্বংশ হলে তারাও বাঁচবে না। অথচ আজকের বস্তুবাদি মানুষ, এত উন্নত মানুষ কোপেনগেহেনে যে তামাশা আর সার্কাস চালালো, তাতে এটা পরিষ্কার বস্তুবাদি মানুষ প্যাগানদের থেকে বেশী জানতে পারে, কিন্ত বিচক্ষনতায় অনেক পিছিয়ে। আমরা কি চাই? জ্ঞানী না বিচক্ষন মানুষ?
বহুদিন আগে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনির সাথে আলাপে আমি বলেছিলাম, বুদ্ধের আকাঙ্খামুক্ত জীবনাদেশ বস্তুবাদি উন্নতির পরিপন্থী। তিনি হেসে বলেছিলেন, আরো একশো বছর দেখ বাছা-এই রেকলেস গ্রীড বা সীমাহীন লোভ হচ্ছে বাঘ। যখন খাবার পাবে না, সে তোমাকেই খাবে। আধুনিক সভ্যতার বাঘ হচ্ছে বিজ্ঞান। আমি সেই সন্ন্যাসীনিকে দেখে হেঁসেছিলাম। আজ কোপেনহেগেন সম্মেলনের পরে সেই হাঁসি আমাকেই ঠাট্টা করছে।
তবে ক্যামেরুনের গল্পে বিজ্ঞান মোটেও এন্টাগনিস্ট না। বরং সেও প্রকৃতি রক্ষার পক্ষে প্রটাগনিস্ট। কিন্ত ধণতন্ত্রের সেবাদাস যে বিজ্ঞান, সে এক অর্থে বন্দিনী! সেটাই আমরা দেখবে অভতার প্রকল্পের বিজ্ঞানী ডঃ গ্রেসের চরিত্রে। ডঃ গ্রেসের সাথে কর্পরেট অফিসার পার্কার সেলফরিজের কথাবার্তাই বিজ্ঞান বনাম ধণতন্ত্রের সংঘাত বারবার এসেছে। বিজ্ঞানী গ্রেস ও নভিদের দলে-তিনিও চাইছেন না কিছু খনিজের জন্যে এই উপগ্রহের সবুজকে ধ্বংশ করতে। কিন্ত পার্কার তাকে মনে করাচ্ছেন, গ্রেসের স্যালারী তথা অভতার প্রজেক্টের টাকা আসছে শেয়ার হোল্ডারদের টাকায়। যাদের অভতার বা প্যান্ডোরার জৈব বৈচিত্র নিয়ে কোন উৎসাহ নেই। তারা চাইছে উনোবটিয়াম। তারা চাইছে বস্তবাদি সভ্যতার জারজ সন্তান ‘লাভ’। অর্থাৎ অবতার গল্পে খুব পরিস্কার ভাবে বলেছে বিজ্ঞান মোটেও অভিশাপ না। তাকে অভিশাপ বানিয়েছে মানব সভ্যতা। যদিও এই গল্পে বিজ্ঞানকে অভিশাপ বানানোর জন্যে ধণতন্ত্রকেই দোষারোপ করা হয়েছে, বাস্তব সত্য হচ্ছে বিংশ শতাব্দির কমিনিউস্ট দেশগুলিও বিজ্ঞানকে কম অভিশাপ বানায় নি। সেই অর্থে যেকোন বস্তুবাদি সভ্যতাই বিজ্ঞানকে রাজনৈতিক কারনে ব্যাবহার করে তাকে মানব সভ্যতার অভিশাপ বানিয়েছে।
তবে এই গল্পের ভিলেন অবশ্যই আমেরিকান মেরিন। আমেরিকান সেনাবাহিনীর সব ধরনের অসভ্যতাকেই ব্যাঙ্গ করেছে অভতার। দেখিয়ে দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদের সাথে ধনতন্ত্রের পার্টনারশিপ। ক্যামেরুন সাক্ষাৎকারে খুব পরিষ্কার করেই বলেছেন, এ হচ্ছে আমেরিকার হটকারি বিদেশনীতির বিরুদ্ধে হলিউডের প্রতিবাদ। বৃহত্তর অর্থে অবশ্য আমার মনে হয়েছে সামগ্রিক বস্তুবাদি মানব সভ্যতাকেই দুষেছেন ক্যামেরুন।
(৪)
সভ্যতা বনাম সংস্কৃতিঃ
সভ্যতা বনাম সংস্কৃতির লড়াই হলিঊডে এই প্রথম না। ক্যামেরুন নিজেই অভতারেও ওপর ” Dancing with Wolves” এর প্রভাব স্বীকার করেছেন। যেখানে বস্তবাদি সভ্যতায় উন্নত এক মানুষ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে বুঝতে পারে, আদিবাসীরা সভ্যতার বিচারে পিছিয়ে থাকলে কি হবে, সংস্কৃতির বিচারে অনেক এগিয়ে।
আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি বোঝাতে, স্বামী সূপর্ণানন্দর উদাহরনটি প্রানিধানযোগ্য। উনি বলতেন তাজমহলের ইমারতটা হচ্ছে সভ্যতা-আর তাজমহলে কবর দেওয়া সাহাজাহানের মমতাজের প্রতি যে ভালোবাসা সেটা হচ্ছে সংস্কৃতি। একটা মাথার সম্পদ, অন্যটা হৃদয়ের।
এখানেও নভি অভতার তথা গল্পের প্রটাগনিষ্ট জ্যাক সুলি নভিদের বাগে আনতে এসে, নিজেই নভি সভ্যতার প্রেমে পড়লেন। কারন নভিরা বস্তবাদি সভ্যতায় অনুন্নত হলে কি হবে, তাদের সংস্কৃতি অনেক উন্নত। সেই সংস্কৃতি হচ্ছে প্রকৃতি আর মানুষকে ভালবাসা। সেই জন্যে মানুষরা যখন নাভিদের শিক্ষিত করতে চাইল-নাভিরা বলে পাঠালো মানব সংস্কৃতি থেকে তাদের শেখার কিছু নেই। ওই হানাহানি বা লোভের সংস্কৃতি থেকে কি শিখবে তারা?
অবশ্য ক্যামেরুনের এই চিন্তা আবেগের দিক দিয়ে যতটা ঠিক, বিবর্তনের দিক দিয়ে ঠিক না। হিংসা এবং অহিংসা, লোভ এবং স্বার্থবিসর্জন, এই সব বৈপরীত্যের মিশ্রনই আমাদের রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস বাড়িয়ে থাকে। হিংসা আর লোভ আমাদের মধ্যে এমনি এমনি আসে নি। এসেছে বিবর্তনের পথে আমাদের টিকিয়ে রাখতেই। আবার সেই লোভই আমাদের ধ্বংশের পথ দেখাচ্ছে।
থ্রিডিতে প্যান্ডোরাকে যেভাবে মূর্ত করেছেন পরিচালক, তা সত্যিই অনবদ্য। আমারত মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল প্যান্ডোরাতে ঝর্ণার ধারে বসে আছি। অভতারের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে সত্যই অভূতপূর্ব। পরিচালকের মতন আমিও চাই অরবিন্দর সুপার মাইন্ড মানব সভ্যতাতেও আসুক। তবে তা বোধ হয় বৈজ্ঞানিক দিয়ে খুব সঠিক চিন্তা না।
আসলে শক্তির কাছে সবাই মাথা নত করে। তেমনি যে নায়কপ্রটাগনষ্টি জ্যাক সুলি পরিশেষে সবাই তার প্রতি সমর্থন আনে।
লেখক সম্ভবত ‘যান্ত্রিক’ বস্তুবাদ এবং ‘দ্বান্দ্বিক’ বস্তুবাদ কে সমীকরণ করেছেন, যা বহুলচর্চিত কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য ত্রুটি। প্রথমোক্তটি সাম্রাজ্যবাদের পরিপোষক, আর দ্বিতীয়োক্তটি মানবমুক্তির হাতিয়ার। এই পার্থক্য অনুধাবন করতে না পারলে ভাববাদের বিষবাষ্পে আমরা আরো শৃঙ্খলিত হয় পড়বো, যা আমাদের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে।
[১] ক্যামেরুনে অভতারেওপর প্রাচ্য দর্সনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা খুব একটা বিশেষ হয় নি
[২] আসলে শুধু বস্তবাদ দিয়ে মানুষকে বোঝা বা না বোঝার চেয়েও-প্রাচ্যের দর্শনের আরেকটা বড় দিক জন্মান্তরবাদ। যা ঢপের হলেও লোভ প্রশমনে কিছুটা সাহায্য করে। পাশ্চাত্যের বস্তবাদি সভ্যতার যেটা সব থেকে সাংঘাতিক দিক-সেটা হচ্ছে এই একটি জন্মের মধ্যেই “এচিভার” হওয়া চেষ্টা-এর থেকেই বিপুল লোভ এবং যন্ত্র সভ্যতার সৃষ্টি। এখন বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ এই ধরনের স্কুল ডিবেটে না গিয়েও বলা যায়, বস্তবাদি সভ্যতা মানুষকে সীমাহীন লোভী করেছে। আমরা যতই ধর্মকে গালাগাল দিই না কেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্যে শিপ্ল বিপ্লব এবং মানুষের লোভই দায়ী। এবং বর্তমানেও প্রায় সব সমস্যার পেছনেই মানুষের লোভের ভূমিকাকে ছোট করা যাচ্ছে না। বস্তুবাদ অবশ্যই লোভী হতে বলে না-কিন্ত পাশ্চাত্য বস্তবাদের ভিত্তিতে লোভের বিরুদ্ধেও কোন চেক পয়েন্ট নেই। এনরনের সি ই ও একজন নাস্তিকই ছিল-যার যেনতেন প্রকারে ধনী হওয়ার বিরুদ্ধে কোন নৈতিকতা বিরোধি কিছু দেখে নি। এসবও ঘটনা।
[৩] সুতরাং বস্তবাদ দিয়েই আমাদের আত্মিক দর্শনকে বুঝতে হবে-সেখানে ভাববাদি দর্শনের কিছু কিছু দিক আমাদের অবশ্যই পথ দেখাতে পারে। আমাদের মনকে সদা উদার রাখা উচিত। সব দর্শন থেকেই অনেক কিছু শেখার আছে।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব দা, পরকালের আশায় কম হত্য, কম নির্যাতন হয়নি। বহু ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে, হচ্ছে। জন্মান্তরবাদ বা সেমেটিকদের দোযখ, বেহেস্তের লোভ ও ভয় এর চাইতে, মানুষের জন্য বেশী প্রয়োজন সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। যে সমাজে অন্যায় করে সহজে পার পাওয়া যাবে না, সেখানে অন্যায় প্রবনতা কমতে বাধ্য।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও তাই। এখানে জাতিসংঘ ও আর্ন্তজাতিক আদালতকে শক্তিশালী করা গেলে অন্যায় কমবে।
একটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট নাভি-দের ভাষায় ‘i see you’ বলাটা- যেটার মানে তোমাকে দেখছি অর্থাৎ তোমার ভেতরে দেখছি- প্যাগান বা হিন্দুধর্ম জাতীয় দর্শনের দেখাটা এই ভেতরেই- আত্মাকে দেখা- সেটা সেই মুহূর্তে বস্তুবাদী চিন্তার থেকে পিছিয়ে থাকতে পারে, কারণ বস্তুবাদী চিন্তায় শুধু বস্তুটাকেই প্রাইম ইম্পর্ট্যান্স দিয়ে দেখা হচ্ছে, কিন্তু এই ভেতরে দেখাটা আসলে বস্তুটাকে তার বিকাশের একটা পর্যায় হিসেবে দেখছে।
হিন্দুশাস্ত্রে যেভাবে জগৎ-কে দেখা হয়েছে- যা জন্মায় (জ), গতিশীল (গ) ও পরিবর্তিত হয় (ৎ); ফলে সমস্ত কিছুই একটা প্রসেস-এর পার্ট, আর নাভিদের দেখাতেও সেই প্রসেস ব্যাপারটাকে ধরা হয়েছে- যেখানে হরিণ শিকার করলে বলা হয়, তোমার আত্মা এওয়ার কাছে চলে গেল কিন্তু তোমার দেহ আমাদের মধ্যে ঢুকলো- পাতি রিচুয়ালের বাইরে গিয়ে একটা সভ্যতা এই বক্তব্যগুলো কোন পরিস্থিতিতে রাখছে, কোন পরিস্থিতিতে এই কথাগুলো অর্জন করছে সেই aspect টাও দেখা যেতে পারে। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ লড়াই করছে না, প্রকৃতির সঙ্গে অভিযোজিত হচ্ছে- প্রকৃতি শত্রু নয়, প্রকৃতি সহায়ক ফোর্স।
আধুনিক সভ্যতার সংকটে (কোপেনহেগেনের কথা rightly mentioned) এই ভিতরে দেখা, তার পরবর্তী পর্যায়গুলো দেখবার চেষ্টা করার কথা ভাবার জায়গা আসছে- ফলে ৩০০ বছরের শিল্পবিপ্লবের ধারাই মানব বিবর্তনের একমাত্র রাস্তা না সামগ্রিকভাবে দেখতে চাওয়ার প্রাচ্যের ধারাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অল্টারনেটিভ সেই প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অভতারের একটা ভাল রিভিউ পড়লাম। এখানে কিন্ত পরিস্কার ভাবেই ক্যমেরুন তথা অভতারকে সাম্রাজ্যবাদি বিরোধি প্রতিবাদ বলা হয়েছে।
কিন্ত উৎপাদন সম্পর্কটা স্বাধীন ভ্যারিয়েবল না। সেটা সম্পূর্নভাবেই উৎপাদন শক্তি ওপর নির্ভরশীল।
সমাজতন্ত্রের চেয়েও ধণতন্ত্রের উৎপাদনী শক্তি অনেক বেশী। সেই জন্যেই সমাজতন্ত্রের প্রথম সব পরীক্ষাগুলো গোহারা হেরে ভুত হয়ে গেছে।
তার জন্যে সমাজতন্ত্রের দরকার নেই। সব কোম্পানীই একটা প্রোজেক্টেড সেলসএর ওপর ভিত্তি করে, উৎপাদন করে। কম্পুটার এবং ইন্টারনেটের দৌলতে বাজারে তথ্য যত আসবে, তত সারপ্লাস উৎপাদন কমতে থাকবে। সমাজতন্ত্রের এই মুহুর্তে মুল দরকার গবেষনার জন্যে-কারন গবেষনা যা জটিল হয়ে গেছে-অতটাকা আর কর্পরেটের নেই-
সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে সম্প্রতি আরেকটা লেখা লিখেছিলাম।
গণতান্তিক সমাজতন্ত্র + নিয়ন্ত্রিত বাজার ই এর সমাধান। ম্যালথুসিয়ানরা আরো একটা সমাধান দিয়েছে। সেটা হচ্ছে জন সংখ্যা কমানো। এই বাংলাদেশ বা ভারতের প্রয়োজনের ২-৩গুন বেশী জন সংখ্যা আছে। এটা ধনতন্ত্রের জন্যে ভাল।কিন্ত বন্টনের জন্যে ভাল না। উনবিংশ শতকে প্রতিটা মহামারীর পরে ইউরোপে শ্রমিকদের মজুরী, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর বিকাশ বৃদ্ধি পেত। জনসংখ্যা কমানোটা প্রথম শর্ত-তারপরে গনতান্ত্রিক সমজতন্ত্রে যদি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিবর্তন হয়, তা নিশ্চয় ভাল।
এগুলো ফাজি কথা বার্ত্তা। মুঘল সম্রাজ্যকে তাই দিয়ে বিশ্লেষন করে ভবিষ্যত বানী করা যায় না। তার জন্যে কোয়ান্টিটেটিভ মডেল বানাতে হয়-যেটা সামাজিক ক্ষেত্রতত্ত্ব করে। আমাদের ডেফিনিটিভ রেজাল্ট চাই।
এখানে তুমি একটু ভুল বুঝেছ। সব পরীক্ষাই বর্তমান কালে হচ্ছে তা না। অতীতের ডাটাগুলো দিয়েও টেস্টেবিলিটি আসে। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ সর্বত্রই ব্যার্থ-কোন বিজ্ঞানের জগতে এত ব্যার্থতার পরে এটাকে কেও থিসিস হিসাবে টেকাত না। উন্নত ফর্মালিজম তৈরী হত। আমেরিকা তাই করেছে। কিন্ত কমিনিউস্টদের রাজনীতি
সেই ঐতিহাসিক বস্তবাদের মৃতদেহকে জরিয়ে ধরে লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে। তাই তাদের ভবিষ্যতও লাশকাট ঘরেই শুয়ে থাকবে।
জেমস ক্যামেরুন নিশ্চয়ই শতভাগ লোককে সুখী করতে পারবেন না। তবুও আমি বলব দেখার সুযোগ থাকলে ছবিটি দেখে উপভোগ করাই ভালো, কারন উপভোগ করার মত উপকরন ছবিটিতে বিদ্যমান আছে বলেই আমার মনে হ্য়।
@ব্রাইট স্মাইল,
এর সাথে একমত। ভোগ-উপভোগ করার মত সিনেমাই বটে! অলরেডিই এটাতো মাস্ট সি সিনেমায় পরিণত হয়ে গিয়েছে।
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
আপনাকে যেসব ছবি সুখী করছে, সেগুলো কি আপনি উপভোগ করছেন্ না? উপভোগের কি এমন আভিধানিক অর্থ আছে যে বলা যায় এটা কোনো গভীর বিষয়বস্তু বা অর্থ বহন করে এমন কোনো কিছুতে প্রযোজ্য হতে পারবেনা।
হলিউড আমেরিকার আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে এবং পক্ষে থেকেছে। মেল গিবসনের মতন নায়ক এবং পরিচালকরা ভিয়েতনামের যুদ্ধের পক্ষে সিনেমা তৈরী করেছেন। সেখানে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধি সিনেমাও তৈরী হয়েছে অনেক। সেই দিক দিয়ে হলিউড দ্বিধা বিভক্ত। তবে ক্যামেরুনের ক্ষেত্রে বোধ হয় এটা খাটে না-টাইটানিকের ক্ষেত্রেও উনি স্বল্প পরিসরে শ্রেনী দ্বন্দটা ভালোই দেখিয়েছিলেন। ওটা না দেখালে টাইটানিকের কিছু ক্ষতি হত না। কিন্ত উনি বামপন্থী ভাবধারার পরিচালক বলেই সেটা দেখিয়েছিলেন। সব একই গোয়ালের গরু এই ধারনা নিয়ে বসে থাকা ঠিক না।
@বিপ্লব পাল,
==>>টাইটানিকে শ্রেণীদ্বন্দ্ব দেখিয়েছেন? মজা পাইলাম। আমাদের “গরীবের প্রেম”, “বস্তির ছেলে রমজান”, “গরীবের বউ”, “বেদের মেয়ে জোছনা” …… ঢালিউডের শ’খানেক সিনেমাতেও পরিচালক শ্রেণীদ্বন্দ্ব দেখিয়েছেন তাহলে!
ভাই, আমি একটু কমই বুঝি বোধ হয়- তবে আমার বুঝে শ্রেণীদ্বন্দ্ব আর শ্রেণী-বৈষম্য থেকে উদ্ভুত ফান্টাসি দুইটা দুই জিনিস।
==>> তাই নাকি?
===>> নারে ভাই- সবাইরে একই গোয়ালের গরু মনে করি না। কিন্তু হলিউডের বর্তমানে জেনারেল ট্রেন্ডটার কথাই বলতে চাইছিলাম। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পক্ষে সিনেমা বলেন আর ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে সিনেমা বলেন- কিংবা নানা একশন মুভিতে রাশান ভিলেন দেখানো – কখনো রাশানদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো- এগুলো অহরহই পাই- এগুলোকেই মেইনস্ট্রিম বলি- এসবই ব্যবসাসফল-হিট সিনেমাগুলোতেই পাই- Rambo, ট্রান্সপোর্টার, জেমস বণ্ড সিরিজ …. এমন অসংখ্য বক্স ব্লাস্টার সিনেমার নাম দেখানো যাবে। এসবের সাথে হলিউডি সিনেমায় পেন্টাগনের ইনভেস্টমেন্ট, পেন্টাগনের এসাইনমেন্ট- এগুলোকে যদি গণনায় ধরা হয়- তাহলে আরো অনেক কিছু আরো পরিস্কার হতে পারে …
অনেক আলোচনা হলো ….
ধন্যবাদ।
আপনাদের সবার অভিমত খুব নিবিষ্ট মনে পড়ি, আপনারা এত দ্রুত এত গুছিয়ে সবকিছু লিখে ফেলেন যে তা পড়ে বুঝতেই সময় লাগে, নতুন কিছু আর বলার থাকে না। অভতার দেখে মনে হল দু-তিনটে কথা লিখি।
প্রথমতঃ IMAX 3Dতে দেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনন্য, যদি সুযোগ থাকে তবে দেখবেন, এই ধরণের ছবি টেলিভিশনের ছোট পর্দায় দেখলে তার বিশাল রঙ্গিন দৃশ্যপট ও অতল খাদের মাধ্যাকর্ষণে ঝাঁপ দেয়া বোঝা সম্ভব নয়।
আপনারা অনেকেই রাজনৈতিক পটভুমিতে ক্যামেরনের কাজকে মূল্যায়ণ করতে চেয়েছেন। নিসন্দেহে ছবিতে মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক, প্রকৃতির সমস্ত জীবনকে একটি সম্পূর্ণ একক হিসেবে দেখান (যা বিপ্লব পাল তার সূচনার লেখাটিতে ব্যাখ্যা করেছেন), অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি ও আদিবাসীদের শোষণ ও ধ্বংস, ইত্যাদি একটি সরলিকৃত কাহিনী মাধ্যমে দেখান হয়েছে। কিন্ত এহ নিতান্তই বাহ্য। আমি যখন সঙ্গীত শুনি আমি সবসময় চিন্তা করি না (মাঝে মাঝে করি) সেই সঙ্গীত সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে অর্থবাহক কিনা, কিংবা সঙ্গীত প্রযোজক বা শিল্পী এই প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে কতখানি লাভবান হলেন। বিঠোফেন বা চাইকোভস্কী বা নিখিল ব্যানার্জী শুনে আমি সাগরের ফেনিল ঊর্মিমালা কল্পনা করতে পারি কিংবা আকারহীন (ও রাজনিতীবিহীন) এক বোধের জগতে বিচরণ করতে পারি, আমার নিজস্ব প্রয়োজনেই আমি কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তাদের সি.ডি. কিনি। প্রতিটি সৃজনশীল প্রক্রিয়ার একটা মূল্য আছে, আমি সেই মূল্য দিতে প্রস্তুত যদি মনে করি সেই সৃষ্টিতে আমি মানসিকভাবে তৃপ্ত হব। একটি আর্ট ফর্ম হিসেবে CGI কারুকলাকে কতখানি কার্যকর করা সম্ভব সেটা অভতার দেখলে বোঝা যাবে। ভাসমান দ্বীপ, দীপ্যমান অরণ্য, আকাশচুম্বী মহীরুহ, প্রাকৃতিক ভারসাম্যে উদ্ভূত প্রাণিকূল, ইত্যাদি সবই এমন এক অত্যাশ্চর্য রঙ্গিন জগতের অবতারণা করেছে যার মধ্যে নিজেকে পুরোপুরি নিমজ্জন করলে আমাদের দৈনন্দিন জগতোর্ধ এক স্বপ্নের সন্ধান পাওয়া যাবে। অভতারে যে নতুন জগতকে আঁকা হয়েছে তা যে কোন ভ্রমণ, কল্পনা ও ভবিষ্যত-বিলাসীকে উদ্বেলিত করতে বাধ্য।
নাস্তিকের ধর্মকথাকে বলব আপনি ডি সিকা থেকে মাখমলবাক ধারার যে রুচির কথা বলেছেন তার সাথে মনে হয় বিপ্লব পাল ভিন্ন মত পোষণ করেন না সেটা ওনার “কোথায় কুরাসাওয়া আর কোথায় ক্যামেরন” বিস্ময়োক্তি দেখে বোঝা যায়। আমরা অনেকেই কম-বেশী কুরাসাওয়া, ফেলিনি, ইরানি ছবি ও মাইকেল মুরের ভক্ত, তবে বলব শুধু মাছ-মাংস দিয়েই ভাল ভোজন হয় না, তার সাথে আচার ও চাটনিও থাকতে হয়।
নতুন বছরে সবাই ভাল থাকুন।
দীপেন ভট্টাচার্য
@দীপেন ভট্টাচার্য,
এটা যে শিল্পের একটা নতুন ডাইমেনশন খুলে দিল, সেটাই আমি অনেক কে বোঝাতে পারছি না। থিডিতে না দেখলে, এই নতুন আর্ট ফর্মকে অনুভব করা খুব মুশকিল।
@বিপ্লব পাল,
পুজিবাদের চাল বলে থ্রী-ডির সমালোচনা যত সহজ তেমনি কঠিন হল বায়োষ্কপের দিনে ফিরে যাওয়া।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
==>> হলিউডি সিনেমাকে আচার/চাটনি বলে স্বীকার করে নিলে এতো আলোচনার দরকার পড়তো না- কেবল শুরুতে একটা কথাই যথেষ্ট হতো যে, আজকাল লোকে চাটনির পেছনেই অধিক ছুটছে! ক্যামেরুনের এই হটকেক হাইটেক ছবিও যে- চাটনি স্বরূপ সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। এরকম সিনেমা যে দেখি না- তা নয়। লর্ড অব দ্য রিং, ম্যাট্রিক্স, পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ান ইত্যাদিও দেখেছি। এবং দেখার সময় যে খুব বিরক্তি নিয়ে দেখেছি- তাও নয়, বরং অনেক জায়গায় হা হয়ে গিয়েছি, মজা পেয়েছি। এভাটারও ঐভাবে দেখে গিয়েছি। কিন্তু এগুলো এমনই সিনেমা- অনেকটা লজেন্সের মত- যতক্ষণ মুখে থাকে ভালোই লাগে- ফুরিয়ে গেলেই সব শেষ। বাস এইটুকুই। এগুলোকে নিয়ে কথা বলার, মাতামাতি করার কিছু পাই না। চাটনিকে নিয়ে এই মাতামাতিতে কিছুটা বিরক্তিও বোধ করি মাঝেমাঝে।
দেখুন, ডি সিকা- মাকমলবাখ বা মুরের আলোচনা টানার জায়গাটা একটু অন্য। মুরের নাম যখন এনেছিলাম- তখন মুরের ফিল্মের সাথে তুলনার কথা মাথাতেই ছিল না। মুর সহ অসংখ্য শিল্পী সাহিত্যিক মার্কিন বিদেশ নীতির বিরোধিতা নানা সময়ে করেছেন, অনেক শিল্পী সাহিত্যিক তাদের পেশাগত জীবনে তথা শিল্প-সাহিত্য মাধ্যমে হয়তো কোন প্রতিবাদই জানাতে পারেননি- কিন্তু কেবল বিবৃতি দিয়ে হলেও ইরাকে-আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ঐ জায়গাটাই কেবল উল্লেখ করে বলতে চেয়েছিলাম- ঐ সময়ে বা আর কখনো ক্যামেরুনরে মার্কিন বিদেশনীতির বিরুদ্ধে উচ্চকিত হতে – শিল্পী সাহিত্যিকদের সে প্রতিবাদ/প্রতিরোধে সামিল হতে দেখা যায়নি; আজ তিনি বড় গলায় মার্কিন নীতির সমালোচনা করছেন!- এই জায়গা থেকেই মুরের নাম প্রথমবার নিয়েছিলাম।
ফেলিনি-গদার-কিরোস্তামিদের নাম নেয়ার জায়গাটাও ছিল অন্য। এভাটার ন্যারেটিভ না, এটা দর্শককে ভাবায়- এমন আলোচনার প্রেক্ষিতে বলেছিলাম- আমার দেখা হলিউডি প্রায় সিনেমাই ন্যারেটিভ ধাচের, এভাটার তো বটেই। আমার চোখে পার্থক্যটা কেমনে ধরা পড়ে সেটার উদাহরণ দিতেই এনাদের নামোল্লেখ করা, এনারা যা বলতে চান- তার সবটাই সিনেমায় বলে দেননা, বড় অংশ দর্শকদের হাতে ছেড়ে দেন, ফলে দর্শক ভাবতে বাধ্য হয়।
আর পরবর্তীতে মুরের সাথে ক্যামেরুনের তুলনা টেনে- যখন ক্যামেরুনরে শিল্পী হিসাবে দাবী করা হলো (এবং জানানো হলো তিনি রাজনীতিক নন) তখনই- আমার মতে শিল্পী হিসাবে স্ট্যান্ডার্ডটা কেমন – সে জায়গা থেকে কুরোশাওয়া …. প্রমুখের নাম টানা। এবং পার্থক্যটা ধরিয়ে দেয়া। আজ আমি যদি ভালো ডকু ফিল্ম বানাতে আগ্রহী হই তবে আমাকে মাইকেল মুরের ফিল্ম দেখতেই হবে, আর যদি ফিকশন ফিল্ম তৈরি করতে চাই তবে ক্যামেরুনের ফিল্ম দেখলে হবে না- কুরুশাওয়া, আইজেনস্টাইন, কিরোস্তামি, ফেলিনি, গদার ….. প্রমুখদের ফিল্মই দেখতে হবে। এটাই বলতে চেয়েছিলাম। (অর্থাৎ কুরোশাওয়া আর ক্যামেরুনের তুলনামূলক আলোচনা নয়- মুর আর ক্যামেরুনের তুলনামূলক আলোচনা দেখাতেই ফেলিনিদের নাম নেয়া)
বিঠোফেন বা নিখিল ব্যানার্জী, ক্ল্যাসিকাল মিউজিক, তবলা-তানপুরা-সেতার-বাঁশী , – এগুলোর আবেদন একরকম আবার কথানির্ভর গানের আবেদন একরকম। গানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুরের ভূমিকা মুখ্য স্বীকার করে নিয়েও বলছি- কথানির্ভর গানে- কথারও একটা ভূমিকা থাকে। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, বিরহের গান, ঋতুভিত্তিক নানা গানকে আমরা মূলত আলাদা করি কি কথা দিয়েই নয় (সুরের ভ্যারিয়েশনও অবশ্যই একটা ফ্যাক্ট- রবীন্দ্রসংগীতের অনেক নতুন শ্রোতাকে বলতে শুনেছি- সব রবীন্দ্র সংগীতের সুর নাকি একই রকম)? নজরুলের “কারার ঐ লৌহ কপাট”, বা অন্যান্য বিদ্রোহী গানগুলোর আলোচনায় গানের কথাকে কি বাদ দেয়া যাবে? আমাদের স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রের গানগুলোর ক্ষেত্রে কি বলবেন? বা উল্টোদিকে “ওরে আমার সোয়ামি …”, “আমার বুকটা ধ্বক ধ্বক করে, প্রেম জ্বালা মিটাইয়া দাও …”, “বন্ধু যখন বউ লইয়া …” …… এইসব গানের কোনটি কোনটির সুর খারাপ না হইলেও এবং শিল্পীর কন্ঠও খুব সুরেলা ও মিষ্টি হইলেও- গানের কথা নিয়ে সমালোচনা করা কি যায় না?
একইভাবে কোন ফিল্মে যদি রাজনৈতিক বক্তব্য থাকে- তবে সেটা নিয়ে কেন আলোচনা হবে না?
আর, ব্যবসা বা লাভবান হওয়া না হওয়া নিয়ে কখন ভাবিত হই সেটাও বলে শেষ করছি। একবার গোটা ফরিদপুরের অডিও দোকানগুলো চষেও শচীন দেব বর্মনের কোন ক্যাসেট/সিডি পাইনি, একবার খুলনায় একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল- অজয়ের গান খুঁজতে গিয়ে। ঢাকাতে ভাগ্যিস বাবুল ইলেকট্রনিকের খোঁজটা পেয়েছিলাম, তা না হলে বেগম আখতারের গজল আর কোথায় পেতাম? বেগম আখতার দূরের কথা নীলুফার ইয়াসমিনের কীর্তনের সিডি কি বসুন্ধরা, রাইফেল স্কোয়ার, ইস্টার্ণ প্লাজায় খুঁজলে পাওয়া যাবে? কিন্তু হাবিব-ন্যান্সি, বা জেমস, আর্টসেল-ব্ল্যাক এদের সব জায়গাতেই পাবেন। বগুড়ায় ছোটবেলায় ইলিয়াসের খোয়াবনামা খুঁজছিলাম- বইয়ের দোকানদার ‘খাবনামা’ বের করে দিয়েছিল। অথচ হুমায়ুন আহমেদের সব বই-ই পাওয়া যায়, এমন সাইনবোর্ডও কোন কোন বইয়ের দোকানে ঝুলতো! আর এগুলোর জন্যই তখন ঐ ব্যবসা আর মুনাফাবৃত্তির কথাটা না ভেবে পারি না।
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
আপনার অনেক কথার সাথেই একমত। তবে প্রতিটি সৃষ্টিরই বিভিন্ন মাত্রা থাকে, এক এক জন তার রুচি, অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসের তারণায় সেই সৃষ্টির একটি দিক নিয়ে ভাবে। আপনি নিজেই জানেন Matrix এর genre আর Pirates of the Caribbean এবং Lord of the Ringsএর genre সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অভতার (বা এভাটার)কে হটকেক ভাবি নি 🙂 এবং ছবিটি দেখতে দেখতে আমার খুবই প্রিয় জাপানী এনিমেটর হায়াকো মিয়াযাকির (Hayako Miyazaki) কথা মনে হয়েছে। মিয়াজাকি নির্দেশিত দুটি এনিমেশন ছবি (যাতে হাঁতে আঁকা ও কম্পিউটার গ্রাফিক্স দুটি পদ্ধতিরই সাহায্য নেয়া হয়েছে). Nausicaa of the Valley of the Wind এবং Princess Mononokeএ মানুষের হাতে প্রকৃতির ধ্বংসএবং বনের পশুদের কোন অতিপ্রাকৃত শক্তির সহায়তায় তাদের বাসস্থান রক্ষার লড়াই জটিল কিংবদন্তীর কাহিনী মাধ্যমে বলা হয়েছে। আর এভাটারের ভাসমান দ্বীপ তো মিয়াযাকির Laputa – Castle in the Sky এবং বেলজিয়ান শিল্পি রেনে ম্যাগরিটের একটা ছবি থেকে সরাসরি নেয়া। মিয়াযাকির ছবিগুলো সরলরেখায় প্রবাহিত হয় নি এবং অনেক সময়ই দ্বন্দ্বের একটি দিককে বেছে নিতে অসুবিধে হয়। তাছাড়া তার কাহিনীতে নারীবাদী বক্তব্য খুব স্পষ্ট, তাতে যোদ্ধা রাজকুমারী থেকে কিশোরী ত্রাণকর্ত্রী প্রধান ভূমিকায় এসেছে। এর প্রতিটি দিকই জ্যামস ক্যামরন নিয়েছেন (+ Dances with Wolves) যদিও তার কাহিনী পরম্পরা মিয়াযাকি থেকে অনেক দুর্বল।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর সুবিধা হল তা অনেক কিছু নিয়ে পরীক্ষা করতে পারে। উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষকে একটি অবিচ্ছিন্ন আধারে একত্রীভূত করার প্রণালী ক্যামেরন দেখিয়েছেন। এই টেকনিকটা আমি ছবিতে আগে দেখি নি এবং এটা বিবর্তনের ফসল হিসেবে উদ্ভূত হতে পারে কিনা সেটা চিন্তা করা যেতে পারে। এছাড়াও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, তথাকথিত Nobel Savageএর দর্শন এবং জ্ঞানের অগ্রগতির মধ্যে একটা চিরায়ত দ্বন্দ্ব আছে কিনা (আদিবাসী আমেরিকানদের ইকোলজী দর্শন তাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানকে উন্নত করে নি, যদিও এই ছবিতে প্রকৃতি দেহ নিরাময়ের অনেক দায়িত্ব নিয়েছে), এবং প্যান্ডোরার মত সভ্যতা একটা পর্যায়ে গিয়ে আর এগোতে পারবে কিনা, ইত্যাদি।
কোন শিল্পী যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন তো খুবই ভাল কথা। কিন্তু শিল্পের পরিসর রাজনীতি থেকে বড়। আমার ব্যাক্তিগত মতামত শিল্পীর সমাজের কাছে রাজনৈতিক কোন দায়বদ্ধতা নেই । কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলছি এক পর্যায়ে জীবনানন্দ রাজনৈতিক কবিতা লেখেন নি বলে তখনকার প্রগতিবাদী কবি ও পাঠক তাকে প্রায় বয়কট করেছিলেন।
ঠিকই বলেছেন, তবে আর্ট ফর্ম ও টেকনিক সর্বদাই পাল্টাচ্ছে, ইন্টারনেটের বদলে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, ক্যামেরনকে NASA মঙ্গলগ্রহের এক মিশনের জন্য ক্যামেরা বানাতে দিয়েছে, শিল্প ও বিজ্ঞানের অনেক সেতুবন্ধন হচ্ছে, নিসন্দেহে কুরাসাওয়ার (বা কুরোশাওয়ায়) বাইরেও একটা জগত আছে।
অবশ্যই আলোচনা করা যায়। আমি বলতে চাইছিলাম এভাটারে কিছু imagery আছে যাতে সঙ্গীত আছে, ভাষা নেই, পাখীর পিঠে চড়ে ভাসন্ত দ্বীপের মাঝে উড়ে যাওয়া আমাদের অব্যক্ত কল্পনাকেই রূপদান করেছে। আমি ছবির বিশেষ অংশগুলির কথা বলছি, পুরো ছবিতে অবশ্যই রাজনৈতিক বক্তব্য আছে।
এটা একটা সমস্যা, কিন্তু হাবিব-ন্যান্সি, বা জেমস, আর্টসেল-ব্ল্যাক (আমি অবশ্য সব কটা নাম শনাক্ত করতে পারি নি 😀 ) আর একটা নতুন সময়ের নির্দশন, আর হুমায়ুন আহমেদের বই ছাড়া অন্য বই চলে না সেটা আমাদের শিক্ষার দোষ (দোকানদার বা হুমায়ুন আহমেদের নয়)। আর folk-taste একটা জিনিস যাকে আপনি-আমি সমালোচনা করতে পারি, কিন্তু এনেকেই এটা elitism হিসেবে দেখবে। শেষোতঃ কালোবাজারী করা খারাপ কিন্তু মুনাফাবৃত্তিকে পাইকারী ভাবে দুষে লাভ নেই, দোকানদারকে তার জীবিকা অর্জন করতে হবে, শিল্পপতিকে কারখানা গড়তে হবে, আমাদের পুঁজিবাদী সমাজে বাঁচতে হবে, ইত্যাদি 🙂 ।
ভাল থাকবেন।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
===>>দেখেন, শিল্প আর রাজনীতির সম্পর্ক, পার্থক্য, শিল্পীর রাজনৈতিক/সামাজিক দায়বদ্ধতা এগুলো নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী বিরাজমান, সে আলোচনায় যাচ্ছি না; আপনার এখনকার বক্তব্যটিকে ধরে নিলেও বলতে হচ্ছে- এভাটারে ক্যামেরুন একটা রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করার চেষ্টা করেছেন, এবং সাক্ষাতকারে সেই রাজনৈতিক বক্তব্য আরো পরিষ্কার করেছেন। আর আমার আপত্তির জায়গাটা ঠিক ঐখানেই। ক্যামেরুন আসলে যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন সেটার সততা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করি বলেই এই প্রসঙ্গের অবতারণা। তা নহলে- টাইটানিক সিনেমার সময়ে এই ধরণের রাজনৈতিক বক্তব্য ক্যামেরুনের আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা নিশ্চয়ই করতাম না!
==>> হ্যা ড্যান্সেস উইথ উলভস এর নাম শোনা যাচ্ছে। নন সাই-ফাই সিনেমা ড্যান্সেস উইথ উলভস থেকে লাস্ট সামুরাই, কিংবা সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ডিস্ট্রিক্ট নাইন, ডিউন, এনেমি মাইন এসমস্ত সিনেমাতেই এমন গল্প পাওয়া যাবে। যেখানে শুরুতে দেখা যায়- হোয়াইট মানুষ নন-হোয়াইট মানুষ বা কালারড মানুষদের বা কালারড এলিয়েনদের উপর নানা নির্যাতন নিপীড়ন করছে, ন্যাটিভদের তাদের বাসভূমি-সংস্কৃতি-জীবন যাপন সবকিছুর উপর নির্মমভাবে হামলে পড়ছে; এবং এক পর্যায়ে দেখা যায়- এক হোয়াইট মানুষ (যে সিনেমার মূল ক্যারেক্টার) সে পক্ষ পরিবর্তন করছে, নিজ জাতির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে, করে- সেই নির্যাতিত জাতির হয়ে লড়ছে হোয়াইট মানুষদের বিরুদ্ধে (যারা একসময় তার সহযোদ্ধা ছিল) এবং একসময় সে-ই ঐ নির্যাতিত জাতির নেতা হয়ে বসেছে, সেই ঐ জাতির ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই একই কাহিনী ঘুরে-ফিরে মার্কিন সিনেমাগুলোতে বারেবারে আসছে কেন? বিখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিক Annalee Newitz এই বিষয়টাকে অভিহিত করেছেন “white guilt fantasy” নামে- আমার কাছে এই অভিধাকে খুবই যৌক্তিক মনে হয়েছে। কয়েকশো বছরের ঔপনেবিশক দখল, আজকের নয়া ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ- এই অভিজ্ঞতা-স্মৃতিগুলো গোটা দুনিয়ায় আজো জ্বলজ্বল করছে, পাশ্চাত্যের সাদারাও এই কাহিনী-ইতিহাস জানে। ফলে- আজ এসব নিয়ে অপরাধবোধও কাজ করতে পারে, যেখান থেকেই এইরকম ফ্যান্টাসি- যেখানে সেই সাদা চামড়ার লোকই গিয়ে ন্যাটিভদের লড়াইয়ে পুরা নেতৃত্ব দিচ্ছে- ন্যাটিভদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করছে.. ইত্যাদি। এমন সিনেমা/গল্প পাশ্চাত্যের লোকেদের ভালোই স্যাটিসফাই করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এগুলো আমাদেরও সমান স্যাটিসফাই করছে, এবং এর কারণটা কি? আমার ধারণা- আক্রমণ-হামলা-অত্যাচার এসবে নিজেদের উপর অত্যাচারের মিল পাওয়া, শেষে অত্যাচারিতের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের আকাঙ্খা বা বাসনার সাথে মিল পাওয়া এবং অত্যাচারী পক্ষের কেউ কেউ এসে যখন নেতৃত্ব দেয় সেটাকে স্বাভাবিক হিসাবে গ্রহণ করে কারণ- তাদের উপর কয়েকশোও ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে যে মাইন্ড সেট গড়ে উঠে সে জন্য, সমস্ত দিক দিয়েই তাদেরকে নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং সে জায়গা থেকে মনে করে- রক্ষা পেতে গেলেও হয়তো ওদের কারো না কারো সাহায্য দরকার।
Annalee Newitz এর ভাষায় (http://io9.com/5422666/when-will-white-people-stop-making-movies-like-avatar?skyline=true&s=x):
These are movies about white guilt. Our main white characters realize that they are complicit in a system which is destroying aliens, AKA people of color – their cultures, their habitats, and their populations. The whites realize this when they begin to assimilate into the “alien” cultures and see things from a new perspective. To purge their overwhelming sense of guilt, they switch sides, become “race traitors,” and fight against their old comrades. But then they go beyond assimilation and become leaders of the people they once oppressed. This is the essence of the white guilt fantasy, laid bare. It’s not just a wish to be absolved of the crimes whites have committed against people of color; it’s not just a wish to join the side of moral justice in battle. It’s a wish to lead people of color from the inside rather than from the (oppressive, white) outside.
@বিপ্লব পাল,
==>> এইবার তো মনে হইতেছে- শিল্প সম্পর্কে আপনার ধারণা আর আমার ধারণা অনেকটা কাছাকাছি। আমিও তো ভাই ন্যারেটিভ বা ডেসক্রেপ্টিভ ছবি পছন্দ করি না। করি না বলেই তো হলিউডি ফিল্মরে কোন শিল্পই মনে হয় না।
ভাবালেন কোথায়? পুরাটাই তো ফিল্ম মেকার ন্যারেট করে গেলেন। হাতে কলমে ধরে চোখে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন। ভাবনার জায়গাটা কোথায়? মানুষেরা নাভিদের উপর আক্রমণ করছে খনির লোভে, মানুষদের তৈরি এভাটারদের এবং জীব জন্তুর সহযোগীতায় নাভিরা যুদ্ধ করছে, মার খাচ্ছে, দৈবক্রমে জয়লাভ করছে। সব ফকফকা। একদম ডিরেক্ট। হলিউডের ৯৯% সিনেমাই এরকম ন্যারেটিভ (আমি সব দেখিনি- বলতে পারেন আমার দেখা সিনেমাগুলোর মধ্যে)। হ্যা- এই এভাটার ফিল্মে ভিন্নতাও আছে, হাইটেক কারুকার্য দিয়ে দর্শকদের একটা ঘোরের জগতে নিয়ে যায়- নাভিদের চারপাশের প্রকৃতিকে উপস্থাপন করা হয় যখন। কিন্তু ভাবনার জায়গাটা কোথায় বুঝতে পারি না।
ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ানা, স্পেনিশ মুভিগুলো- ডি সিকা, ফেলিনি, গদার, ট্রোফু, রেনোয়া (এরা একেকজন একেক রকম), বা ইরানী কিরোস্তামি বা মাখমলবাখ – এনাদের মুভিগুলো দেখলে বুঝতে পারি- কেমনে একটা ফিল্ম কিরকম ভাবনার খোরাক যোগাতে পারে! (যদিও জানি- কিরোস্তামির চেয়ে মাজিদ মাজেদি’র ন্যারেটিভ মুভিগুলোর দর্শক চাহিদা বেশী, বাজারও ভালো, এবং এটাও বলতে পারি- মাজিদ মাজিদিও যতখানি ভাবাতে পারে, হলিউডি ফিল্ম তার কানাকড়িও পারে না)। এই রুচি, অবশ্যই আমার।
আসলে মুরের ফিল্ম আর ক্যামেরুনের ফিল্মের ধরণেই পার্থক্য আছে। ডকুমেন্টারি-ডকু ফিকশন টাইপের ফিল্ম আর নিখাদ ফিকশন ফিল্ম সম্পূর্ণ আলাদা ঘরানার। মুরের ঘরানায় মুরকে অসাধারণ বলতেই হবে, দুনিয়া জুড়ে যেসব পরিচালক এ ঘরানার ফিল্ম বানান তাদের মধ্যেও মুরকে প্রথম সারিতে রাখতে হবে। উল্টোদিকে ক্যামেরুন যে ঘরানার ফিল্ম বানান- সেই ঘরানায় তিনি এবং আজকের সব হলিউডি ফিল্ম মেকাররা কেউই আসলে এক কুরুশাওয়া বা ওজু বা ফেলিনি বা কিরোস্তামি এদের ধারে কাছেও পৌছতে পারবে না! এটাও আমারই শিল্প রুচি।
ধন্যবাদ।
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
কোথায় কুরোশোয়া, কোথায় ক্যামেরুন। মহামুশকিল। কুরোশয়া কজ়নের ভাল লাগে? আমার লাগে-কারন বেশ মন লাগিয়ে দেখি। সেখানে ঢোকার পরে, বোঝা যায় কুরোশোয়া কত মহান।
ক্যামেরনের ছবিতে মার্কিন সম্রাজ্যবাদের প্রতিবাদ হয়েছে যদি বলা যায়, তা হলে সে মেসেজ্ কত ভাগ জনগনের কাছে পৌঁচেছে “ফারেনহাইট ৯/১১” -এর মাধ্যমে আর কত ভাগ পৌঁচেছে “অভতার” এর মাধ্যমে সেটাও একটা দেখবার বিষয়।
মিডিয়াতে যারা থাকে, বাজার যা চাই, তাই তাদের করতে হয়। নইলে না উপায় করবে কি করে? ওদের কথাও ভাবতে হবে ত। বহুরুপীর কেন? কারন বাজারের ডিমান্ড বহুরূপী।
@বিপ্লব পাল,
শামিমের কমেন্টের জবাবে এটা একটা আলোচনা হতে পারে, এটাও একটা দৃষ্টিভঙ্গী বটে। শামিম ম্যাডোনার কাজ কারবারকে টেনেছে ঐ বাজার বা মুনাফার জায়গা থেকে- যেটা এবারে আপনিও স্বীকার করছেন, শুধু পার্থক্যটা থাকছে- আপনি বাজারের ডিমান্ড মেটানোকে স্বাভাবিক বলছেন, শামিম সম্ভবত এই বাজার তথা মুনাফার বংশবদ হওয়াটাতেই আপত্তি করেন। দু ধরণের চিন্তাই আমাদের চারদিকে বিরাজমান, এক্ষেত্রে আমার অবস্থানটি বলতে হবে শামিমের অবস্থানের কাছাকাছি।
ম্যাডোনার খোলামেলা উপস্থাপন আপনার কাছে সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজম মনে হয়েছে, আমি ম্যাডোনার চিন্তাভাবনা-কর্মকান্ড সম্পর্কে ভালো জানি না, ফলে সে ব্যাপারে বলতে পারবো না- তবে যতটুকু দেখি মিডিয়ায় তার উপস্থাপন- উপস্থিতির বড় আকর্ষণ নগ্নতা, যৌনাবেদনময়তা- এবং সেখান থেকে বুঝতে পারি, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে এসবের চাহিদা আছে বিধায় এসবেরও একটা বাজার মূল্য আছে এবং গান-কন্ঠ-সুর-কথা এগুলোর সাথে সাথে সেক্সটাও পণ্য বটে। যদি ধরেও নেই- ম্যাডোনা সেক্সের বাজারদরের কদর বুঝে এবং সেটার আগ্রহে খোলামেলা হননা- বা নানা আবেদনময়ী ঢং এ নিজেকে উপস্থাপন করেন না, তিনি একান্তই সেক্স পজিটিভ ফেমিনিস্ট বিধায় এহেন করেন- তাহলে আশা করা যায় না কি- তিনি যেকোন পরিস্থিতিতে একই আচরণ করবেন। কিন্তু রে অব লাইট শীর্ষক আধ্যাত্মিক ধাচের এলবামের আগে যখন গেটাপ-এপিয়ারেন্স সবই পাল্টে ফেলেন- ভদ্র পোষাক পরা, মেয়েকে খৃস্টান স্কুলে পাঠানো – এগুলো শুরু করেন, এবং এলবাম ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ার পরে আবার আগের আচরণে ফিরে যান- তখন তার সেই ফেমিনিজমেও কি সন্দেহ জাগতে পারে না? আর ঐ এলবাম উপলক্ষে দুদিনের জন্য রক্ষণশীল আচরণ করা, আধ্যাত্মবাদের চর্চা করা … প্রভৃতিকে ভন্ডামি বলা যেতে পারে না কি? (এক্ষণে বলে রাখছি- ম্যাডোনা আসলেই কি করেছে- তা বলতে পারবো না; এ কথাগুলো বললাম- শামিমের কথাগুলোকে সত্য ধরে। ম্যাডোনার ক্ষেত্রে এমনটা যদি না ঘটে থাকে- তবে কোন একজন শিল্পী যিনি এমনটা করেন- ধরলেও পুরো আলোচনাটা ভ্যালিড থাকে।)
মূল আলোচনা এভাটার আর ক্যামেরুনরে নিয়া। ক্যামেরুন ব্যবসা সফল পরিচালক। টার্মিনেটর ২ করার সময়েও রেকর্ড বাজেটের ছবি করেছেন, টাইটানিকের ক্ষেত্রেও, এবারেও। প্রতিবারেই টাকা উঠে আসতে সময় লাগেনি। তাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বলতে কখনো শোনা যায়নি, যুক্তরাষ্ট্রে মাইকেল মুর সহ যেসব পরিচালকেরা, শিল্পী সাহিত্যিকেরা মার্কিন নীতির বড় সমালোচক- তাদের সারিতে এই এলিট পরিচালক কখনো সামিল হননি মানে গা ভাসাননি। আজ তিনি যখন বড় গলায় বলেন- এই ফিল্ম হলিউডি প্রতিবাদ, তখন এই কথার সততা নিয়ে যথেস্ট সন্দেহ পোষণ করি। এগুলোকে ভন্ডামি এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য তথা মুনাফার কৌশল ছাড়া কিছু মনে হয় না। বাজার বা মুনাফা আপনার কাছে নরমাল মনে হতেই পারে, তবে ভন্ডামিতে আমার আপত্তিকে আশা করি খুব এবনরম্যাল ভাববেন না!
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
এই বক্তব্যর কতগুলি অনুমানের ওপর
দাঁড়িয়ে আছে
(১) নারীবাদের সাথে আধ্যাত্মিকতার সংঘাত ঃ
নারীবাদের সাথে ধর্মের সংঘাত আছে অবশ্যই। কিন্ত আধ্যাত্মিক জীবনের সংঘাত আছে বলে জানা নেই। নারীবাদ মানে নারী যৌনতার মুক্তি অবশ্যই-কিন্ত সেটা মানেই উশৃঙ্খলা নয়। নারী দেহ দেখালে সে আধ্যাত্মিক জীবন থেকে ভ্রষ্ট এই ধারনাটাই ভুল। যৌনতা ছারা আত্মউপলদ্ধি সম্ভব না। বরং যৌনতা ভিন্ন আত্মোপলদ্ধিই ভিত্তিহীন সোনার পাথরবাটি। শেষের কথাটা আমার ত বটেই, ম্যাডোনাকে বহুদিন আগে ইন্টারভিঊতে এই কথাটা বলতে দেখেছি।
(২) ম্যাডোনা শুধু বাজারের জন্যেই দুদিন ধার্মিক হয়ে ছিলেন। এটাও ঠিক না। ম্যাডোনা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বরাবর বলে গেছেন-ধর্মের সাথে পুরুষতন্ত্রের যোগ নিয়েও উনি বলেছেন। এবং তার পরেও উনি যোগ ব্যায়াম করেন, বৈষ্ণব এবং কাবালিস্ট হয়েছেন বেশ কিছুদিন। যদ্দুর দেখেছি নানান ইন্টারভিউ- ব্যাক্তিগত জীবনে ভদ্রমহিলা বেশ ইন্টেলেকচুয়াল-সেন্সিটিভ ফেমিনিস্ট এবং বেশ খবর রাখেন। সব ধর্ম দর্শনেই ওর ইণ্টারেস্ট আছে-এবং একটি ইন্টারভিউটে ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্রের ভালোই কাছা খুলছিলেন। তাই আমার ম্যাডোনার বিরুদ্ধে বক্তব্য আমার অতিসরলীকরন মনে হয়েছে।
উনি কোন বলিউডি ডল না।
ফ্যাকচুয়াল মিসটেক। ক্যামেরুন পরিস্কার বলেছেন আমেরিকার বিদেশনীতি অন্যদেশের মানুষের প্রতি অসংবেদনশীল-এবং সরকারের তা বোঝা উচিত।
Ref:
http://en.wikipedia.org/wiki/Avatar_(2009_film)
Cameron acknowledged that the film implicitly criticizes America’s War in Iraq and the impersonal nature of mechanized warfare in general. In reference to the use of the term “shock and awe” in the film, Cameron stated, ”
ক্যামেরুন মাইকেল মুর না। উনি শিল্পী-তাই শিল্পীর ভাষাতেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
@বিপ্লব পাল,
ক্যামেরনের মার্কিন সম্রাজ্যবাদের প্রতিবাদ নিয়ে অবশ্যই কোন সমস্যা নেই। তিনি বোধহয় সততার সাথেই এটা করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাদের সিনেমা সিনেমাকেই নষ্ট করছে। তিনি চুড়ান্ত পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী মার্কিন স্টুডিওর বিজ্ঞাপন স্টাইলে সিনেমা বানিয়ে নিজের সততা বজায় রাখছেন না বলে মনে হয়। তিনি যথার্থ শিল্পী বলে মনে হয় না। আমার কিন্তু মাইকেল মুর কে আরও উঁচুমানের শিল্পী বলে মনে হয়। “ফারেনহাইট ৯/১১” এর কেবল শিল্প মান এবং ডার্ক হিউমার ক্যামেরনের যে কোন কাজের চেয়ে উৎকৃষ্ট, রাজনৈতিব বক্তব্য বাদ দিলেও।
@শিক্ষানবিস,
শিল্পের প্রশ্নে দ্বিমত থাকাই ভাল। কারন ওটাত আমার পৃথিবী, আমাদের পৃথিবী না। এসব কিছুই আমাদের পারিপার্ষিক বিশ্বাসগুলো [মাইথোস] নিয়ে গড়ে উঠেছে। তাই শিল্পের ব্যাপারে সবকিছু খোলা মনেই গ্রহণ করা উচিত বলে আমার মনে হয়। ফারেন হাইট ৯/১১ প্রটাগনিস্ট আর্ট-সেখানে এন্টাগনিজম নেই। সুতরাং বিশুদ্ধ শিল্পের বিচারে আমি অভতারকেই এগিয়ে রাখব। কিন্ত এই তুলনামুলক ব্যাপারটা শিল্পের ক্ষেত্রে এতই সাবজেক্টিভ যে, সেটা বোধ হয় গুরুত্বপূর্ণ না।
@বিপ্লব পাল,
==>>এ কথাগুলো যদি আমার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে- তবে বলতেই হচ্ছে, আমার আগের কমেন্টের কোন জায়গাটিতে এসবের বিপরীত কথা আমি বলেছি, সেটা বোধগম্য নয়। ম্যাডোনা সম্পর্কিত আমার আলোচনার রেসপেক্টে আপনার ১ম বাক্যটি মাথা পেতে নিচ্ছি, সেটাতো আমার কমেন্টেও উল্লেখ করেছি, আসলেই আমি জানি না- তাই অনুমানের উপর ভিত্তি করে বলেছি। আপনার ১ম বাক্যটি বললেই কেবল হতো- আর কিছুর দরকার ছিল না। বাকিগুলোকে মনে হয়েছে অহেতুক ও অপ্রাসঙ্গিক, মনে হয়েছে- আমার যুক্তির মূল ফোকাস পয়েন্ট আমি ধরাতে পারিনি বলেই- আপনি এসব নানা কথা বলছেন (ব্যর্থতা আমারই- আরো গুছিয়ে বলা উচিৎ ছিল নিশ্চয়ই)।
নারীবাদের সাথে আধ্যাত্মিকতার যোগ আছে কি না, নারীবাদী হলে আধ্যাত্মিক হওয়া যাবে কি না- এগুলো নিয়ে আমার কোন হেডেক ই ছিল না ঐ কমেন্টে। কেবল এটাই বলতে চেয়েছি- কেউ যদি কোন উদ্দেশ্যেকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে স্বার্থসিদ্ধির কারণে- ভোল পাল্টাতে থাকে, তবে তার প্রতিটি ভোল নিয়েই সন্দেহ করা যায় সঙ্গত কারণেই (লক্ষ করুন- এখানে ম্যাডোনা না বলে কেউ যদি বলছি- এই ইঙ্গিতই আমার আগের কমেন্টের শেষে দিয়েছিলাম)। অনেকটা নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার হিজাব-তসবী আলা ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে দেশ ভরিয়ে দেয়ার মত। হাসিনার এই উদাহরণ যখন টানি তখন হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন বলে তিনি তসবী-হিজাব পরতে পারবেন না- এমনটা কখনোই দাবী করিনা। কেবল এটাই বলতে চাই যে, ভোটের সময়ে দুদিনের জন্য হেজাব পরিধান করা এবং সেটা ফলাও করে প্রচার করা- কেবল ভন্ডামিই; এতে তার ধার্মিকতা ও সেক্যুলারিজম দুটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
==>>এইখানেই তো আপনার সাথে আমার পার্থক্য! ক্যামেরুনরে সেইমানের শিল্পী ভাবতে পারিনা। এলিয়েন-টার্মিনেটর-টাইটানিক-এভাটার এগুলানরে উল্লেখ করার মত শিল্পও মনে করি না। হলিউড থেকে বাইর হওয়া ইদানিং কালের কোন সিনেমার কথা মনে করতে পারছি না যেটা শিল্প মানোত্তীর্ণ। কি জানি! হয়তো বা- আমার শিল্পবোধ, রুচি- অনেক সেকেলে এবং আপনাদের মতো ততোটা উন্নত নয়!!
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
শিল্প ব্যাপারটা আমার পৃথিবীর-আমাদের পৃথিবীর না। তাই ভাল খারাপ লাগাটা ব্যাক্তি নির্ভর। কল্প বিজ্ঞান অন্য ধরনের আর্ট। বাণিজ্যের জন্যে শিল্প নষ্ট হয়, আবার তৈরীও হয়। শিল্পের উপাদান অনেক। কার কি ভাল লাগবে বলা মুশকিল।
মাইকেল মুরের ছবি নিশ্চয় ভাল লাগে। কিন্ত সেই শিপ্লের ডাইমেনশন একটাই-প্রটাগনিজম। তুলনায় ক্যামেরুন কিন্ত একশোগুন দর্শকদের ধনতন্ত্র তথা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভাবালেন। সেটাই কিন্ত শিপ্লের ধর্ম-একদম সরাসরি না বলে গল্পের মধ্যে দিয়ে ঢোকা। সরাসরি ন্যারেশনটা-আমার কাছে অনেক ক্রুড-আমি জানি না সেটা আমি শিপ্ল বলতে যা বুঝি, তার মধ্যে নেব কি না।
তবে আবার বলছি-শিল্পের ক্ষেত্রে আমাদের পৃথিবী হয় না-সবটাই আমার পৃথিবী।
ওহ, আরেকটি কথা। একজন ব্যবসায়িক আর শিল্পীর মধ্যে আমি কিছু পার্থক্য করি। একজন ব্যবসায়ী মুনাফার পেছনে ছুটতে পারেন- কিন্তু যখন একজন শিল্পীও বাজারের পেছনে ছুটেন তখন সেটা আমার কাছে মনে খুব দুঃখজনক। মনের টানে, প্রাণের টানে যে কাজ বের হয়- আর টাকার জন্য যেটা বের হয়- সেটাকে এক পাল্লায় মাপি কেমনে? এই মুক্তমনাতে যারা লেখালেখি করছেন- তাদেরকে বাদ দিয়ে একদল পেশাদার লেখককে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হলে- মুক্তমনার চেহারাটা কেমন হবে চিন্তা করেন তো? (ঐ টাকা তুলে ফেলার জন্য নিশ্চয়ই- উপরে নীচে মাঝে মেলা এ্যাডে ভরে যেত, আরো কত কি যে করতে হতো!)
আপনি বিপ্লব পাল যদি টাকার জন্য লেখা আরম্ভ করতেন- তবে এখন যা লিখেন, যেমনটি লিখেন, তেমন মানটা কি থাকতো? আমিও যদি শুরু করতাম, তবে তো কবেই লেখার পর্ব শেষ করে দিতাম, কেননা লেখা এবং তার জন্য পড়ার যে সময় ব্যয় হয় তা আরো অনেক কাজে ব্যয় করলে- ইনকাম কম হতো না নিশ্চয়ই অন্তত, অফিস টাইমে ফাকি ঝুকি কম মেরে কাজে আরেকটু মনোযোগী আরো উন্নতি যে হতো সেটা বলতে পারি (বন্ধু-বান্ধবদেরর দেখে ভালোই বুঝতে পারি)।
ধন্যবাদ।
কালরাতে তড়িহড়ি করে কমেন্ট লিখতে গিয়ে বানান, বাক্যগঠনে কিছু ভুল ছিল- যেহেতু কমেন্ট এডিট করার অপশন আছে- সেহেতু এডিট করে দিচ্ছি। এডিট করার সময়ে দু একজায়গায়- অন্য কয়েকজনের কমেন্টকে উদ্ধৃত করলাম, দু এক জায়গায় এক দু লাইন যুক্তও করলাম – বাদবাকি সবই অবিকৃত থাকলো-
==============================
অনেক আলোচনা হয়েছে দেখছি। আজ রাতে বেশী কিছু বলার সময়-সুযোগ নেই, পরে সম্ভব হলে আরো কথা হতে পারে, দু একটা বিষয়ে কিছু কথা বলছি:
# shamim এর কমেন্টখানি প্রায় আমার মতের কাছাকাছি, ভালো বলেছেন।
# ম্যাডোনার উদাহরণটির প্রাসঙ্গিকতা সম্ভবত বিপ্লব পাল ধরতে পারেননি বলে মনে হয়েছে, সেকারণেই “সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমে”র কথা অহেতুক এনেছেন। ম্যাডোনা সেক্স পজিটিভ ফেমিনিস্ট হতেই পারে (যদিও আমার সন্দেহ আছে), কিন্তু কোনকিছুই যে ব্যবসা বা মুনাফার সাথে সম্পর্কহীন নয়- যে কারণে খোলশ পাল্টাতেও তাদের সময় লাগে না- সম্ভবত এটাই shamim বলতে চেয়েছিলেন।
#
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আসলেই অনেক কিছু কি বলা হয়েছে? হুম, এরা লুন্ঠনকারী, এরা ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানীর মত স্থানীয় বাসিন্দার উপর স্টিম রোলার চালিয়ে দেয়- সেটা দেখানো হয়েছে। এতটুকুকে পজিটিভ বললে বলতেই পারেন। যদিও আমার কাছে এটা আহামরি কিছু মনে হয় না- কেননা এইটা আজ খোদ মার্কিন মোড়লরাও আর রাখ ঢাক কোরে করে না। তার খুব বেশী লজ্জা শরম আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু এই সিনেমায় আসলে কোন ম্যাসেজটা দেয়া হয়েছে? সেটাই আসল প্রশ্ন। এই জায়গায় ফাইটের প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। ফাইটের নেতৃত্বে কে? নাভিরা, নাকি আভাটার? জেক- সেতো মার্কিন প্রতিনিধিই! যে পুরা পরিকল্পনা জেনেই স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এভাটার হয়েছিল! এবং মূল ফাইটে সে-ই লিডার। দ্বিতীয়ত, ঐ বড় লাল পাখি সদৃশ জন্তুটাকে কোন নাভি নয় (কোন এককালে নায়িকা নাভির দাদার দাদা এইটারে বশে আনতে পেরেছিল)- জেক এভাটারই বশে আনে, অথচ সে সমস্ত কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে নাভির কাছ থেকেই! তৃতীয়ত, ফাইটে দুপক্ষের অস্ত্রগুলো যদি দেখি- মানুষদের (মানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের) হাতে যত আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র, যেকোন দর্শক এটাকে খুব স্বাভাবিক হিসাবেই গ্রহণ করবে (আজকে মার্কিন মোড়লদের হাতে যে পরিমাণে ও যত বাহারি অস্ত্র আছে- তা বাকি দুনিয়ার কাছে তো ঐ রকমই অবাক করা!); উল্টোদিকে নাভিদের কি? প্রকৃতি? নাভিরা খালি মাইর খেয়ে গেছে- শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, আর রক্ষাকবচ হয়ে দাড়িয়েছে অতি কাল্পনিক জন্তু জানোয়ারেরা এবং মানুষের মস্তিস্ক অলা নাভি বা এভাটার (এইটা খুব সিগনিফিকেন্ট- মানুষ আর নাভির মূল পার্থক্য তথা মার্কিন মোড়লদের আর তৃতীয় বিশ্বের মার খাওয়া জাতিদের মূল পার্থক্য ঐ মস্তিস্কই!!!)। এবং সবই দৈবাত (যুদ্ধ প্রস্তুতির কোন পরিকল্পনাই ছিল না- জেক এভাটার লাল পাখিরে বশ করে আনার আগে, যুদ্ধ পরিকল্পনায় বিকট জন্তুগুলো পরিকল্পনায় ছিল না বশে আনা ঘোড়া সদৃশ ও পাখি সদৃশ জন্তুগুলো ছাড়া, অথচ হঠাৎ করেই শেষ মুহুর্তে ওরা এসেই শেষ রক্ষাটা করে)। ফলে- আজকের মার খাওয়া জাতিরা নিজেদের সাথে মার খাওয়া আর বিলাপ কান্না পর্যন্ত মিল পাবেন, কিন্তু ফাইটের নানা অতিকল্পনাগুলোর মাধ্যমে এটাই কি বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়াস পায় না যে- এদের বিরুদ্ধে ফাইট সম্ভব নয়?
# রূপকথার গল্প, রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প, এগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিশোর কিশোরীরা এসব পড়বে, এমন কার্টুন ছবি, বা সিনেমা- টিনেমাও কিছু দেখবে, এসবের মাধ্যমে তাদের কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে, বড়রাও মাঝে মধ্যে টাইম পাসের জন্য দেখবে, কিন্তু এমন জিনিসকে এত হই হই রই রই এর প্রয়োজন বুঝি না। শিক্ষানবিশের কমেন্টের সাথে একমত। সেই কোন আমলে তৈরি বাই সাইকেল থিফ, লা স্ট্রাডা, পথের পাঁচালি- অযান্ত্রিক, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, চার্লস চ্যাপলিনের ছবিগুলো- সাদা কালো- কোন কোনটার প্রিন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও- সেই ছবিগুলো বারবার দেখি- বারবার দেখেও ভালো লাগে, বাবেবারেই মনে অন্যরকম অনুভূতি তোৈরি হয়।
# সিনেমার ভাষা কি পাল্টে যাচ্ছে? এনিমেশন ফিল্ম, স্পেশাল ইফেক্টের ছড়াছড়ির ফিল্ম আজ হটকেক- কিন্তু আমি যেন এ ব্যাপারে একটু রক্ষণশীল, পুরানপন্থী! কার্টুন ছবি বা মাঝে মধ্যে এনিমেশন ফিল্ম বা স্পেশাল ইফেক্টের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি না তা নয়; সেগুলোর চেয়ে কেন জানি অরিজিনাল ক্যারেকটার, তাদের অভিনয়- এগুলোর আবেদন বেশী পাই। বিখ্যাত ফিল্ম সমালোচক রবিন উড বলেছিলেন:
(ভদ্রলোক ১৮ ডিসেম্বর মারা গিয়েছেন- যেদিন এভাটার মুক্তি পায়, তা নাহলে এভাটার দেখে তিনি কি বলতেন জানা যেত হয়তো!!)- এই উক্তির সাথে আমি অনেক সময় একমত না হয়ে পারি না।
#
টেকনোলজিকে খোলা মনে গ্রহণ করতে আমার কোন আপত্তি নাই, আপত্তি ঐখানটিতে যেখানে কোন একটি শিল্প মাধ্যমের নিজস্ব ভাষাটির চেয়ে টেকনোলজি অধিক গুরুত্ব পায়- নিজস্ব ভাষাটিকে হটিয়ে দিয়ে টেকনোলজিই একটা ভাষা হয়ে দাঁড়াতে চায় …
বেশী কিছু বলবো না বললেও অনেক কথা বলে ফেলেছি। সবাইকে ধন্যবাদ। আর সময় নাই।
==============================
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
আপনি একটু রক্ষণশীল বলে হয়তো টেকনোলজির মধ্যে শিল্প খুজে পাচ্ছেন না, টেকনোলজি এবং শিল্প দুটোর সংমিশ্রন ঘটানো যাবেইনা এমন কোন কথা বলা যায়না। আমিতো মনে করি টেকনোলজির মাধ্যমেই শিল্পের আরো উন্নত চর্চা করা সম্ভব। আর হ্যা, ছবির সমালোচনা আপনি করতেই পারেন।
@ব্রাইট স্মাইল,
উপরে কমেন্ট করতে পারছি না বলে এভানে করলাম। আপনার প্রথম মন্তব্যের জবাবে আমার মন্তব্যটা দেখেন। ঐখানেই কিন্তু আমি বলেছি যে হাই টেক কেন নতুন কোন কিছুর প্রতিই আমার বিদ্বেষ নেই। আছে সেটার ব্যবহারের প্রতি। আরও বলেছি আজ থেকে ৪০ বছর আগে কুবরিক তার স্পেস অডিসি সিনেমায় টেকনোলজি এবং ভিজুয়াল স্টাইল এর যে শৈল্পিক ব্যবহার ছিল সেটা আজ পযর্ন্ত কেউ অতিক্রম করতে পারে নি। সত্যি বলছি, ৯০ এর দশকের পর প্রযুক্তির অভিনব সবকিছু ব্যবহার করেও স্পেস অডিসি কে ম্লান করা যায় নি, ১৯৬৯ সালের স্পেস অডিসি। তবে চেষ্টা যে হয় নি তা না। ব্লেড রানার, ডার্ক সিটি, সোলিয়ারিস ইত্যাদিকে প্রায় অডিসির সমমানেরই মনে হয়, টেকনোলজির মাধ্যমে আর্ট উপস্থাপনে সেখানে কোন সমস্যাই হয় নি। কিন্তু যখন আর্ট এর চেয়ে ব্যবসা এবং বিজ্ঞাপন মুখ্য হয়ে উঠে তখন সিনেমাটার মাধ্যমে সিনেমার ক্ষতি বৈ অন্য কিছু হয় না। দশর্কদের রুচি নষ্ট হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকে না।
এই ধরনের সমালোচনা শুনে নিশ্চই পুজিবাদিরা গোপনে হেসে কুটি কুটি। পুজিবাদের / বস্তুবাদের সমালোচনা এখন হট কেক (‘কিন্ত এ শুধু গল্প না-আমেরিকা তথা বস্তুবাদি সভ্যতার বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন। যা আমরা ইদানিং করছি‘)। পুজিবাদের গালি দেয়া এখন শুধু মাত্র ফ্যাশনই না ব্যাবসা সফল মডেলও বটে। যেটা এই ছবির মাধ্যমে আবার প্রমানিত হলো। আশা করা যায় বড় বড় পুজিবাদিরা এখন থেকে বেশী বেশী করে পুজিবাদকে গালি দিতে শুরু করবেন এবং সেটা দিয়ে যে পুজি কামাবেন তা ব্যাবহার করবেন আরো বেশী করে পুজিবাদকে গালি দিতে।
এই প্রসঙ্গে ম্যাডোনার ‘রে অফ লাইট’ নামক একটি এলবাম প্রকাশের কথা মনে পড়ল। উক্ত এলবামটি যে সময় প্রকাশপেল তখন ম্যাডোনা এমন ভাবে ভোল পাল্টালো যে মনে হলো অতিতে কৃত তার সমস্ত উশৃংখলতার জন্য তিনি অনুতপ্ত। কাজে, কথায় পোশাক-আশাকে তিনি মিডিয়াকে এমন একটা ভাব দিলেন যে তিনি অবশেষে আলোর দিশা (রে অফ লাইট) পেয়েছেন। তিনি এমন পাবলিসিটি স্টান্ট দিলেন যে তার মেয়েকে একটি বৃটিশ খৃষ্টান স্কুলে ভর্তি করালেন এবং সেই নিয়ে মিডিয়াতে কত হই চই। যেই কেল্লা ফতে হয়ে গেল যে ম্যাডোনা আবার সেই ম্যাডোনাই হয়ে গেল। মাঝখানে আমরা একুল-অইকুল ভেবে দিশে হারা। পুজিবাদিদের বুঝা খুবই দায়। প্রয়োজনে এরা কাউকে মাথায় তুলতে যেমন দেরী করেনা তেমনে প্রয়োজন শেষে আছাড় দিতেও দ্বিধা করেনা। তাই আমি ‘আভাতার’ দেখে এত গদ গদ হই নি। কারন পূজিবাদকে আমি ভিশন ভয় পাই।
পরিচালক বা লেখক ক্যামেরন কেমন তা আমি জানিনা তবে প্রযোজক ক্যামেরন নিশ্চই বেজায় খুশি। নিন্দুকের সব সব সমালোচনা উপেক্ষা করে তার এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। সেই সাথে ব্যাবসায়িরা যারা নতুন নতুন বিজনেস মডেল খুজছেন তারাও বেশ খুশি। আশা করা যায় এই ছবির সাফল্যের মাধ্যমে থ্রি-ডি প্রযুক্তি ব্যাবসা সফল হিসাবে পরিনত হবে। এপ্লাইন্স ম্যানুফেকচারদের জন্য এ একটি নতুন বিজনেস অপারচুনিটি। এখন থ্রিডি সিনেমা ইকুইপমেন্ট, থ্রিডি ক্যামেরা, থ্রিডি টিভি, থ্রিডি চশমা-র বাজার সৃষ্টি হবে। কিছুদিন আগে যারা ‘জাতে’ উঠার জন্য বুব-টিভি ছেড়ে কেবল প্লাজমাতে এসেছিলেন এখন তারা থ্রিডি টিভি কিনে বাজিমাত করতে চাইবেন। পুজিবাদি সিনেমা হল গুলো আইম্যাক্স বসিয়ে সব ব্যাবসা লুটে নিবে কমপুজির হল গুলো থেকে। থ্রিডি সিনেমা বানিয়ে হলিউড চ্যাপ্টা করবে, ঢালিউট, টালিউডকে। জেমস ক্যামেরন টাইপ প্রযোজক পরিচালকরা চলেযাবে ধরা ছোয়ার বাইরে আর ছোট পুজির প্রজোজক আর পরিচালকরা আলুর ব্যাবসাতে ফেরত যাবে। এক সময় তারা যা বানাবে তা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা। এই মনোপলির সুযোগে পুজিবাদিরা নাজায়েজকে জায়েজ করে নিবেন।
@shamim,
সহমত। :yes:
@shamim,
কমিনিউস্টরা ত সেটাও করতে দেয় না! কোন সিস্টেমের সমালোচনা না করতে দিলে, সেই সিস্টেম গণতন্ত্রে শুধরাবে কি করে? নাই মামার থেকে কানা মামা ভাল। তাই বাজার টিকে আছে।
ম্যাডোনা সেক্স পজিটিভ ফেমিনিজমে বিশ্বাসী। সেটা উশৃঙখল হতে যাবে কেন?
মহিলা দৈনিক দুঘণ্টা ব্যায়াম এবং ধ্যান করেন। কোন মহিলা নগ্নতা পছন্দ করলেই সে উশৃঙ্খল? এটাত মোল্লাতন্ত্রের সেবদাসরা মনে করেন। পুরুষতন্ত্রের মোহ আর বামপন্থী মার্কা ডায়ালোগ কি বাঙালী প্রগতিশীলতার ল্যান্ডমার্ক?
এসব আবেগ থেকে বলছেন। সিনেমা বা হলিউডের ইতিহাসে বিগ বাজেটের ছবি আগেও প্রচুর টাকা করেছে। তাতে কম বাজেটের স্বাধীন ছবি আটকায় নি। বরং ভিডিও শেয়ারিং সাইট গুলোর জন্যে এবং আই পিটিভির দৌলতে এখন কম বাজেটের ছবিরই মার্কেট ভাল। সেটাও ধনতন্ত্রেরই দান।
@shamim,
আপনার বিশ্লেষণ চমৎকার লাগল। আমি আগে ব্যাপারটা এভাবে ভেবে দেখি নি। এ ব্যাপারে আমার কোনই সন্দেহ নেই যে চলচ্চিত্র যে একটা আর্ট সেটা মানুষকে ভোলানোর দায়িত্ব নিয়েছে হলিউড। কারণ এতেই তারা সৃষ্টি করতে পারবে তাদের অপেক্ষাকৃত স্থূল সৌন্দর্য্যের সিনেমাগুলো। অভতার তেমন সিনেমা সেটা বলছি না। যদিও এখনও দেখা হয় নি। তাছাড়া সিনেমার থিম অবশ্যই ভাল লেগেছে।
কিন্তু সিনেমা যে টেকনোলজি ব্যবহার করেছে তার প্রতি আমার বিশাল ভীতি আছে। হলিউডের হাই টেক সিনেমা আসার পরই ফেলিনি-বারিমান- কুরোসাওয়া দের আর্ট এর যুগ শেষ হয়েছে। আজ আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমা যখন আম্রিকায় মুক্তি পায় তখন হল ২০% ভর্তি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সিনেমার স্বর্ণযুগ গত হয়েছে। মানুষকে বলা হচ্ছে, এইসব জিনিস থাকলেই কেবল তোমরা সিনেমা দেখতে আসবে, অন্যথায় দরকার নেই। অথচ এসবের সাথে আর্টের সম্পর্ক খুবই কম।
জেমস ক্যামেরন যে সেই হাই টেক হলিউড জগতেরই প্রতিনিধি তাতে কোন সন্দেহ নেই। টার্মিনেটর, টাইটানিক, অভতার এসব তারই প্রমাণ। তিনি নিজেই একজন বড় রকমের পুঁজিপতি। যেমন পুঁজিপতি স্টিভেন স্পিলবার্গ।
এতো কোন সন্দেহ নেই যে আজ থেকে ৫০-৬০ বছর পর টিকে থাকবে দুই পয়সায় বানানো কিয়ারোস্তামির সিনেমা, বা ইউরোপ ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করার পর কোন রকমে বানানো ডেভিড লিঞ্চের সিনেমাই।
আবারও বলি, অভতার এর থিম ভাল লেগেছে। কিন্তু আদতে এটা নিজের প্রতি বিশ্বস্ত নয়। এটা ব্লকবাস্টার এবং ব্লকবাস্টারি ধাঁচেই বানানো বলে মনে হচ্ছে। এগুলো আর্ট এর পসার বৃদ্ধির পরিপন্থী।
@শিক্ষানবিস,
হাই টেক দিয়েও আর্ট ফিল্ম বানানো সম্ভব। হাই টেকের অগ্রযাত্রাকে গ্রহন না করলে পৃথিবীর অগ্রগতিকে রুদ্ধ করা হবে বলে আমার মনে হয়।
@ব্রাইট স্মাইল,
আর্ট ফিল্ম বলতে আসলে আমার কাছে কিছু নেই। সিনেমা ই একটি আর্ট।
আমিও মনে করি হাই টেক দিয়ে আর্ট সৃষ্টি সম্ভব। আমার ক্ষোভ টেকনোলজির প্রতি নয়। টেকনোলজির ব্যবহারের প্রতি। হলিউড এটা ব্যবহার করছে, ব্যবহার করে বুদ্ধিবৃত্তিক সিনেমার জগৎকে ধ্বংস করছে। আমি সত্যজিৎ রায় এবং আব্বাস কিয়ারোস্তামির কিছু সাক্ষাৎকারে দেখেছি বারংবার এটা নিয়ে আক্ষেপ করতে। মানুষ সহজ উপায়ে গল্পপাঠ এবং স্থূল বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। পুরো বিশ্বব্যাপী আম্রিকার একক ওয়ার্ল্ড অর্ডার এবং সব জায়গায় আম্রিকার অভিরুটি প্রণয়নের এটা আরেকটা রূপ মাত্র।
টেকনোলজি নয় টেকনোলজির হলিউডী ব্যবহারকে ধিক্কার…
হাই টেক কিন্তু আজ থেকে ৪০ বছর আগে স্ট্যানলি কুবরিক ও তার “২০০১: আ স্পেস অডিসি” তে ব্যবহার করেছিলেন। সেটার সাথে আজকালকার ব্লকবাস্টার এর তুলনা করে দেখুন। স্পেস অডিসি শুধু কল্পবিজ্ঞান নয় সকল ক্ষেত্রেই সর্বকালের অন্যতম সেরা সিনেমা এবং সেরা ভিজ্যুয়াল স্টাইল হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। ৯০ এর পর এমন একটা সিনেমাও কি হয়েছে? অথচ হাই হাই টেক এর যাত্রা কিন্তু ৯০ এর পরই।
@শিক্ষানবিস,
ভাল কথা বলেছেন।
টেকনোলজীর উন্নতির সাথে শুধু আর্ট নয়, মানবীয় অনেক কিছুর ছোয়াই আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। মুশকিল হল টেকনোলজীর পজ়িটিভ এফেক্ট এত বড় যে ওসম মানবীয় ব্যাপার স্যাপারের কথা কারো মাথায় তেমন করে আসছে না।
ইন্টারনেত এর কথাই চিন্তা করেন। গত শতাব্দীতে মানুষের জীবন মনে হয় সবচেয়ে বৈপ্লবিক ভাবে পরিবর্তিত করে দিয়েছে এই ইন্টারনেট। এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। বছর আটেক আগে আমি দুজন আমেরিকানকে চিনতাম যারা সারা জীবন ই-মেল ব্যাবহার করবে না বলে ঘোষনা দিয়েছিল। জানি না এখনো নীতিতে অটল আছে কিনা। তাদের কথা ছিল যে ই-মেল করে চিঠি লিখে চিঠি লেখার মানবীয় সুন্দর দিকটি হারিয়ে যাচ্ছে যা আরা মানতে পারে না। একটি আসল চিঠি প্রিয়জনের কাছ থেকে খামে করে পেতে যে ভাল লাগে তার কাছে কোথায় লাগে ইলেক্ট্রনিক মেইল?
আধুনিক সভ্যতার এটাই দূঃখজনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। মেনে নিতেই হবে মনে হয়।
তবে আমার আমেরিকানদের কখনো মনে হয় না তারা সভ্যতার পরিনতি বা পরিবেশ বিপর্যয় এসব বিষয়ে সচেতন হতে হলে গিয়ে মুভি দেখে। যেটা চটকদার সেটাই দেখে, আর মিডিয়াগুলির মার্কেটিং সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।
@আদিল মাহমুদ,
এই লেকচারটি একটু দেখেন একজন হিন্দুর , ভাল লাগবে ।
http://www.youtube.com/watch?v=oZTwoDC7b5g
@shamim,
কোনো সিস্টেমই সমালোচনার উর্ধে নয়। খুব বেশী হতাশ না হয়ে নুতন নুতন টেকনোলোজিকে খোলা মনে গ্রহন করাই ভাল বলে আমি মনে করি।
@ব্রাইট স্মাইল,
নিখুঁত, তীক্ষ্ণ এবং যথার্থ সমালোচনাই কিন্তু প্রগতির পথ দেখায়, নির্বিচারে গ্রহণ করা নয়…
@শিক্ষানবিস,
:yes: :yes: :rose2:
@শিক্ষানবিস,
মানলাম,
সমালোচনার পরেও কিন্তু প্রগতির জন্য হাই টেক গ্রহন না করে উপায় থাকছেনা। টেকনোলোজী গ্রহন না করার মানষিকতা এক ধরনের রক্ষনশীল মনোভাবের পরিচয় দেয় বলে আমার মনে হয়, যা নুতনকে খোলা মনে স্বীকার না করার প্রবনতাকে ইংগিত দেয়।
অভতার এর থিমটা চমৎকার লাগলো। এগুলোই পশ্চিমের পোস্টমডার্ন জাগরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এখনো দেখা হয় নি, তবে নিশ্চিত সিনেমা উঁচুমানের। কিন্তু তার কারণ বোধহয় অনেকাংশেই হাই টেক।
এমন মরমী ধাক্কা সবচেয়ে ভাল দিতে পারে কোয়েন ব্রাদার্স। তাদের “দ্য বিগ লবাওস্কি” র চেয়ে তুখোড় মরমী শিল্প বোধহয় আর পাওয়া যাবে না।
আর্ট অনায়াসেই ধর্মের স্থান করে নিতে পারে যদি কেউ আর্ট এর দিকে হাত বাড়ানোর সাহস করে। ধর্ম যেখানে ভিন্ন একটি জগতের কথা বলে আর্ট সেখানে এই জীবনেই ভিন্ন একটি অস্তিত্বের স্বপ্ন দেখায়। সেই স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার পার্থক্যও অচিরেই ঘুচে যায়। যে আর্ট এর এই মজা পেয়েছে সে কোনদিন ধর্মের মত স্থূল বিষয়কে জীবনের বড় অংশে পরিণত করতে পারে না।
বস্তুবাদী আধুনিকতার একটা বড় অপকর্ম হচ্ছে আর্ট এর স্ট্যান্ডার্ড ধ্বংস করে দেয়, আর্টকে অভিজাতদের গেইম এ পরিণত করা। এসব কারণেই স্ট্যানলি কুবরিক “you’re so ugly that you can be a modern art masterpiece” টাইপের গালি ব্যবহার করেছিলেন।
আদিল মাহমুদের সৌজন্যে আভাটার দেখা হইলো। প্রিন্ট একদম জঘণ্য। তারপরেও টানা দেখে গেলাম। স্পেশাল ইফেক্টগুলোর স্পেশাল ছোঁয়া বঞ্চিত ছিলাম- তারপরেও ধরে নিচ্ছি- সেটা হয়তো খুব আহামরি টাইপেরই ছিল, কিন্তু দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে- এই মুভিটা তেমন ভালো লাগেনাই। এইটারে নিয়া এত মাতামাতির কি আছে- এই প্রশ্নটা করতেছি না, কারণ ভালোই বুঝতে পারছি- দিনে দিনে সিনেমার ভাষা মেলা পাল্টাইয়া যাইতেছে, স্পেশাল ইফেক্টের কদর- বড় বাজেটের কদর পাবলিক এখন ভালোই করে ….
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
বিপ্লবের মতে এর আধ্মাতিক আবেদনই মনে হয় বিপুল জপ্রিয়তার কারন। আমার কেন যেন মনে হয় না যে মানুষে মানব জাতির অনিবার্য পরিণতি নিয়ে চিন্তিত বলে মুভি দেখে বলে। মানুষে মুভি দেখে মোষ্টলি বিজ্ঞাপনের তাড়নায়, এরপর ভুত থেকে ভুতে। মানে কেউ দেখে ছড়িয়ে দেবে দারুন মুভি, ব্যাস, চেইন রিয়্যাকশন। এটা মনে হয় ব্যান্ড গান বা হিন্দী গানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তবে আমি যতটুকু আমেরিকানদের দেখেছি, এদের নিজেদের ইতিহাসে আমাদের মতন হাজার বছরের পুরনো রাক্ষস খোক্কসের কেচ্ছার অভাব এরা খুব অনুভব করে। তাই এ জাতীয় গাজাখুরি বেশ চলে। এটা মনে হয় লর্ড অফ দ্যা রিংগস থেকে শুরু হয়েছে। নাহলে পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান কি ভাবে এত জনপ্রিয় হয় কে জানে। তবে ভারতেও সেক্ষেত্রে জনপ্রিয় হল কেন জানি না। স্পেষাল ইফেক্টও লোকে খুব পছন্দ করে, হলে বসে তা দেখা ও শোনার মজাই আলাদা।
যদিও আমি অবতার এখনো দেখিনি, দুয়েকটা সীন একটু দেখেছি; কি সব বিকট চেহারার লেজওয়ালা লোকজন ঘোরাঘুরি করছে দেখে শখ অনেকটা মিটে গেছে। বুঝেছি এটা আমার টেষ্টের না।
মুভি জনপ্রিয় করার সবচেয়ে বড় কৌশল মিডিয়াবাজি।
আমাদের বর্তমান উৎপাদন ব্যাবস্থা যতটানা প্রয়োজন নির্ভর তার চেয়ে বহু গুন মুনাফা নির্ভর। এই সমস্যার সমাধান মার্ক্সবাদেই আছে। অন্তত অধিকতর ভাল কিছুর সন্ধান যতক্ষন আমরা পাচ্ছিনা। আবার যতক্ষন আমরা মার্ক্সবাদের প্রয়োগ না করছি ততক্ষন এর ত্রুটিগুলি আমরা জানতেও পারবোনা।
আমার মনে হয় লেনিনপন্থীদের – সর্বহারা শ্রেনীর একনায়্কতন্ত্রের ধারনা থেকে মুক্তু হতে হবে। আর বিপ্লব করে ক্ষমতা দখলের চিন্তাকে প্রধান অবলম্বন না করে, গনভোটের মাধ্যমে জনগনের রায় নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা তাদেরকে করতে হবে। কারন শ্রেনী সবসময়ই একটা বিমূর্ত ধারনা। শ্রেনীর একনায়কতন্ত্র; শেষ পর্যন্ত ব্যাক্তির একনায়কতন্ত্রে গিয়ে ঠেকে।
এই ইতিহাস থেকে পাঠ গ্রহন না করতে পারলে সেটা বস্তুবাদী মৌলবাদ ছাড়া
আর কিছুই হয়না।
আমার আরো মনে হয়, ক্ষমতার ভারসাম্য থাকাটা খুবই জরুরী। ধনতন্ত্রের একমাত্র চ্যালেঞ্জ, সমাজতন্ত্র থেকেই আসতে পারে। এই চ্যালেঞ্জটা খুবই দরকারী। এটা স্বেচ্ছাচারের সুযোগকে সংকুচিত করে।এইদুই ব্যাবস্থার সংঘাত ও সিন্থেছিছের মাধ্যমেই মানব সভ্যতা অধিকতর মানবিক এক ব্যাবস্থার সন্ধান পাবে।
@আতিক রাঢ়ী, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বা আদি মার্কসবাদ ধরে এখন কিছু করা খুব কঠিন। কারন মার্কসবাদকে মার্কসবাদিরা ভর্তা ্বানিয়েছে। এবং তার দরকারই বা কি? সমাজ বিজ্ঞানের আধুনিক রেজাল্ট গুলো নিয়ে সমা্জ এবং রাজনীতি করাই ত শ্রেয়। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে রাজনীতি, সমাজ, আত্মিক চিন্তা-সব ব্যাপারেই বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে বৈজ্ঞানিক চেতনার উন্মেষ। সেটাই পারে মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে। এই নিয়ে আমি আগে লিখেছিলাম।
(লিংকিং করা যাচ্ছে না আমার কম্পুটারের জন্যে-এটাকে কাট এন পেস্ট করে নিন ব্রাউজারে)
http://www.scribd.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%E0%A6%A8/d/22240607
@বিপ্লব পাল,
সব ব্যাপারে বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে আমরা উৎপাদনের সংকট থেকে মুক্ত হতে পারি কিন্তু উৎপাদন সম্পর্ক অনেক বেশী রাজনৈ্তিক ব্যাপার। রাজনিতীর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে কতটুকু আশ্রয় করা যায় তা আমার কাছে পরিষ্কার না। বিজ্ঞানঙ্কে আশ্রয় করা বলতে যদি এর প্রয়োগকে বুঝিয়ে থাকেন তবে সব সময়ই এর ফলাফল প্রয়োগকারিদের দর্শনের উপর নির্ভর করে। যে করনে রাজনিতী পরিচালিত হয় রাজনৈ্তিক দর্শন দ্বারা, বিজ্ঞান দ্বারা নয়।
আর আপনার বিজ্ঞানবাদের সাথে দ্বান্দিক বস্তুবাদের পার্থক্যাটা ঠিক কোথায় সেটা ধরতে পারলাম না।
@আতিক রাঢ়ী,
এটাত মার্ক্সীয় তত্ত্বের বিরুদ্ধেই যায়। উৎপাদন ব্যাবস্থাই সামাজিক বিবর্তনের চালিকা শক্তি। একমাত্র উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই সামাজিক এবং সেখান থেকে রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে।
বিজ্ঞান মানে এম্পিরিসিজম। কেন যাবে না? রাজনীতি কি? কিছু সিদ্ধান্ত মাত্র। রাষ্ট্রের বিজ্ঞানের চেয়ে আমি অপটিমাইজেশন সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বলব। রাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে ডীভোর্সের নতুন আইন আনতে চায়-কি ভাবে আনবে? তাকে সমাজবিজ্ঞানের গবেষনা করতে হবে বাংলাদেশের সমাজ নিয়ে। তারপর আগামী দিনের নাগরিকদের স্বার্থকে মুখ্য ( অবজেক্টিভ ফাংশন) ধরে , সেই সমাজবিজ্ঞানের গবেষনা লদ্ধ রেজাল্ট থেকেই আইন আনতে হবে।
না। এটা লেনিনিস্টরা বলে। এটা ঠিক না। যাতে প্রয়োগকারীদের দর্শনের ওপর নির্ভর করে ভুল না হয়-তার জন্যেই সমাজ বিজ্ঞান সহ বিজ্ঞানের গবেষনায় নাল-হাইপোথেসিস কাজে লাগানো হয়। কেও স্যাম্পল নিয়ে গুলি মারলে সেটা বিজ্ঞানের দোষ না। বিজ্ঞান নিরেপেক্ষ থাকার রক্ষাকবচ দিয়েছে।
মূলত দুটো পার্থক্য
(১) দ্বান্দিক বস্তুবাদ মূলত সিম্পল সিস্টেমের ওপর খাটে-যেখানে মাত্র দুটি দ্বন্দই মুখ্য-যারা নির্নায়ক। কিন্ত আমাদের বাস্তব হচ্ছে কমপ্লেক্স সিস্টেম-যেখানে একই সাথে একাধিক দ্বন্দের জোট সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রন করে। সেই জনেই ডিম এর চেয়ে অনেক আধুনিকতর ফর্মালিজম হল সামাজিক ক্ষেত্রতত্ত্ব। যেখানে ডিএম কে কমপ্লেক্স সিস্টেমের জন্যে জেনারাইজ করা যায়।
(২)
ডি এমে থিসিসকে ইম্যুনিটি দেওয়া হয়। বিজ্ঞানে হয় না। এখানে থিসিস ভুল হলে ভুল।
বিপ্লবদা,
উৎপাদন শক্তি আর উৎপাদন সম্পর্ক দুটিকে নিয়েই উৎপাদন ব্যাবস্থা। উৎপাদন ব্যাবস্থার সংকট হয়ে থাকে এই দুয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থেকে। সামন্ত ব্যাবস্থার উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে পুঁজিবাদী উৎপাদন ক্ষমতা বহুগুন বেশী। সম্পদের অভাবের জন্য কিন্তু অর্থনৈ্তিক মন্দা হচ্ছে না, হচ্ছে অতি উৎপাদনের কারনে। এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য মার্ক্সবাদ মুনাফা ভিত্তিক উৎপাদনের পরিবর্তে প্রয়োজনের অনুপাতে উৎপাদনের কথা বলে। উদ্বৃত্ত মূল্য সেখানেও তৈ্রী হবে তবে তার ভোগের ধরন ব্যাক্তির না হয়ে সামাজিক করার কথা বলা হয়।
আপনার মতে সম্পদ বন্টনের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি ? বর্তমান করপোরেট কালচারে যেখানে মুনাফা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে যেতে পারাই হচ্ছে টিকে থাকার শর্ত, সেখানে বেকারত্ত্বে্র সমস্যার সমাধান কি ?
আর ডিএম এ একাধারে অনের দ্বন্দ্ব উপস্থিত থাকে সেটা মাও সে তুং বলে গেছেন। এবং অনেক দ্বন্দ্বে্র মধ্যে একটি প্রধান থাকে, যেটাকে উনি মূখ্য দ্বন্দ্ব বলেছেন, বাকি গুলো গৌ্ন দ্বন্দ্ব। মূখ্য ও গৌ্ন দ্বন্দ্বে্র মধ্যে সম্পর্কও দ্বান্দ্বিক। উপযুক্ত শর্তের উপস্থিতীতে এদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়ে থাকে।
থিসিস কে ইম্যুনিটি দেয়ার যে কথা বলেছেন সেটা এজন্য মনে হয় কারন এখানে পরীক্ষা ক্ষেত্র ল্যাব্রেটরি না, সরাসরি মানুষ ও সমাজই হচ্ছে রাজনিতীর ল্যাবরেটরি।
ফরিদ ভাই,
উপদেশ শোনানোর কায়দা আছে।
৭২ হুরপরীর লোভ দেখালে যাবেন কই? ঐ সময়ে বয়স আরো বেড়ে যাবে, জানেনই তো বুড়া বয়সেই মানুষের ভিমরতি হয়।
বিপ্লব,
মুভির লিঙ্ক আগে দিয়েছিলাম, দেখেছিলেন?
আমি ডাউনলোড করে দেখলাম, দিব্বী চলে। শুধু ডিভিডী তে বার্ন করতে হবে।
@আদিল মাহমুদ, না দেখিনি। তবে লিংকটা খুলেছিলাম। আমেরিকাতে ডাউনলোড করা কিন্ত আইন বিরুদ্ধ।
@বিপ্লব পাল,
কত যেন আইন মানি আমরা!
কম্প্যুতে মুভি দেখে আনন্দ পাই না। তাই আর আইনবিরুদ্ধ কাজ করলাম না। তবে, পাইরেটেড কপি কিনতে যাচ্ছি। চীনারা প্রকাশ্যেই সব চলতি মুভির পাইরেটেড কপি বিক্রি করে। মাত্র দুই ডলারে অবতার কেনা যাবে, ভাবা যায়। 😀
@বিপ্লব পাল,
হে হে, আমি আমেরিকায় থাকি না 🙂 ।
আর আমেরিকাতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম্পূটার খুলে চেক করলে কতজন যে পাইরেটেড সফটওয়ারের জন্য জেলে যাবে।
@আদিল মাহমুদ, ফরিদ
আমেরিকাতে রিসেন্ট টাইমে দুজনকে জেলে পুরেছে বলেই জানি। চান্স ১ এ ১০০০,০০০-তবু কেন রিস্ক নেওয়া?
@আদিল মাহমুদ,
নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। এমন ইলিগ্যাল, না জায়েজ কাজটা করতে পারলেন? কিরামান কাতিবিন দুই ফেরেশতা আছেন না দুই স্কন্ধে বসে? খাঁটি মুসলমান যে কোথায় পাই- 😥 :-Y
@আকাশ মালিক,
আগে তে এমন ছিলাম না রে ভাই, বাংলার নাস্তিকদের মুক্তমনা না কি একটা সাইট আছে, ওখানে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করেই এই নৈতিক অধঃপতন রে ভাই। সবই সংগদোষ। তবে অত চিন্তা করি না, আরেকটু বুড়ো হলে হজ্জ করে ফেলব, ব্যাস আর পায় কে! এক্কেবারে মায়ের পেট থেকে বের হবার মতন নিষ্পাপ।
তখন ফরিদ ভাই এর মতন লোকদের বড় গলায় উপদেশ দেব; ছিঃ চোরাই মুভি কেনে না।
আপনাদের সবাইকে দ্বীনের পথে এডভান্সড দাওয়াত থাকল।
@আদিল মাহমুদ,
আমি উপদেশ শুনলেতো। 😉
@বিপ্লবদা,এইমাত্র ডিভিডিতে দেখলাম।হল প্রিন্ট হলেও সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারণ লেগেছে।আর নেপথ্যসংগীত হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।বিপ্লবদাকে ধন্যবাদ গল্পের মূল থিমটা এত চমৎকার ভাবে বলে দেবার জন্য।নইলে ডিটেলটা বুঝতে বেশ অসুবিধা হত।:rose:
আমরা সবাই পৃথিবীতে একটা পারফেক্ট সিস্টেম আশা করি, কিন্তু সেটা কি সম্ভব? দিনের সময়সীমা বেশী হলে রাত্রের সময়সীমাকে কিছু ছাড় দিতে হয়, আবার উল্টোটাও সত্যি। সুতরাং কোনো সিস্টেমের ভালো দিকটার সুফল ভোগ করলে এর কিছু খারাপ দিকের ফলও অবশ্যম্ভাবী হিশাবে এসেই যাবে আর আমাদেরকে সেটাও ভোগ করতে হবে। তবে মনে হয় সমাধান নয়, ব্যালেন্স অথবা ম্যানেজ করাটাই একমাত্র সম্বল। এটা অবশ্য সবাই জানেন, আমি শুধু প্রাসংগিক বলে উল্লেখ করলাম।
আধুনিক সভ্যতার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বস্তুবাদিতাকে গালিগালাজ খুব সহজ, কিন্তু সমাধানটা কি? মনে রাখতে হবে যে বস্তুবাদিতা যে শুধু আমেরিকা বা ধনতান্ত্রিক পাশ্চাত্যের একার সৃষ্টি তা নয়।
আদর্শ ব্যাবস্থা কি হতে পারে? আমরা বিজ্ঞান নিয়ে সীমিত পর্যায়ে গবেষনা করব? অনেকটা ট্রাডিশনাল ধার্মিকরা যেমন্টা বলেন; খোদার উপর খোদগারি চলবে না?
বস্তুবাদিতা কিভাবে এড়ানো যাবে?
@আদিল মাহমুদ,
কথাটা ঠিক ই। সেটা আমি প্রবন্ধের শেষেই লিখেছি-আসলে এই বস্তুবাদি সমাজ বিবর্তনের সূত্রেই পাওয়া। তাই অরবিন্দের মতন সুপার মাইন্ডে ফিরে যাওয়াটা খুব একটা বিজ্ঞান প্রসূত চিন্তা না।
আসল সমস্যাটা এখানে যে জ্ঞানের ভারে আমাদের বিচক্ষনতা চাপা পড়ছে। কোপেনহেগেনে যা হল-তাকে সার্কাস ছাড়া আর কি বলবো? অথচ গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্যে আমরা অলরেডি ঝড় ঝঞ্ঝা বেশী হওয়া দেখছি।
@বিপ্লব পাল,
এ সুযোগটাই ট্রাডিশনাল ধর্মবাদীরা তাদের প্রচার কাজে লাগান। ধর্মের পতাকাতলে না জড়ো হলে এই বস্তুবাদীতা থেকে মুক্তি নেই। বলতে নেই, আমারো মাঝে মাঝে তেমনই মনে হয়। ভুল না ঠিক নিশ্চিত নই। এ যুগে ধর্ম কায়েম করে ফেললেই যে বস্তুবাদ দূর করা যাবে তেমন ভরসাও খুব বেশী পাই না।
আমেরিকায় এজন্যই মনে হয় অনেকে ইসলাম বা বুদ্ধিজম গ্রহন করে। পারিবারিক জীবনে অশান্তি আর ধনতন্ত্রের চরম ভোগবিলাসী চেহারার পাশে ধর্মের নীরিহ শান্তিপূর্ণ চেহারা তাদের মনে একমাত্র ভরসা বলে মনে হয়। ধর্মের বাজে দিকগুলি তখন আর চোখে পড়ে না, বিশেষ করে আমেরিকায় বাজে দিকগুলি ধর্মবাদীরাও দেখাতে পারে না।
আমি যা বুঝি তা হল সভ্যতার উর্ধ্বগামী কার্ভ খুব ভাল, তবে একটা লেভেলে গিয়ে এটাকে জিরো স্লোপ হতে হবে, মুশকিল হল এই লেভেলটা কি কেউই বলতে পারবেন না। বলা উচিতও হবে না বোধহয়। সভ্যতা হয়ত এভাবেই একদিন ধ্বংস হবে। কোপেনহেগেনে যা হল তা এই আশংকাকেই আরো শক্ত করে।
@আদিল মাহমুদ,
এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত না।
আমেরিকাতে আফ্রোআমেরিকানরা ইসলাম গ্রহন করে বর্ণ বিদ্বেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে। মাইকেল জ্যাকসন বা টাইসন ইসলাম গ্রহণ করার পরেও ড্রাগ সেবন ভালোই চালিয়েছেন। বস্তুবাদ থেকে আধ্যাত্মিকতার জন্যে ইসলামে আসে আমেরিকাতে এরকম কেস আমি দেখিনি। ইসলামে আসে মূলত বর্নবিদ্বেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে
নিম্ন মধ্যবিত্ত আমেরিকানরা তাদের হুল্লোর সংস্কৃতির তুলনায় খ্রীষ্ঠধর্মকে নীরস লাগে। সেই জন্যে নাচা গানা যোগা এই সব করতে হিন্দু ধর্ম আকৃষ্ট হয়। উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চ বিত্ত আমেরিকানরা খুব কম সংখায় হিন্দু ধর্মে আকৃষ্ট-হিন্দু ধর্মের আপিলটা আমেরিকান নিম্ন মধ্যবিত্তদের মধ্যেই বেশী। এবং কারনটা হচ্ছে একটু আনন্দ।
তুলনায় উচ্চবিত্ত এবং বৌদ্ধিক দিয়ে উন্নত আমেরিকানরা যদি আধ্যাত্মিক পথে আসে-সেটা বৌদ্ধ ধর্মেই আসে। অবশ্য নিও-বুদ্ধিজম বস্তুবাদই-সেখানে ভাববাদ যেমন জন্মান্তকরন ইত্যাদি বাদ দেওয়া হয়েছে। বুদ্ধও বস্তুবাদিই ছিলেন। তাকে ভাববাদি বানিয়েছে তার শিষ্যরা। মহম্মদের আসল ইচ্ছাকে যেমন তার মৃত্যুর পরেই ভর্তা বানিয়েছে তার শিষ্যরা-বৌদ্ধ ধর্মেও একই ঘটনা ঘটেছে।
@বিপ্লব পাল,
এখানে থেকে ডাউনলোড করতে পারেন। কাজ করে দেখেছি। ডিরেক্ট, টরেন্ট না।
@আদিল মাহমুদ,
মেলা মেলা ধন্যবাদ। এইরকম একটা লিংকই খুঁজতাছিলাম।
@বিপ্লব পাল,
আসলেও কি তাই? আমার কাছে কেনো যোনো মনে হয় জ্ঞান বিচক্ষনতা তাদের নিজ নিজ জায়গাতেই আছে, কিন্তু অধুনা বস্তুবাদী সমাজের বিকাশে এদের যে মূল চালিকা শক্তি অর্থাৎ তার অর্থ ব্যবস্থাপনা। এইটে আছে তথাকথিত কিছু অপদার্থের হাতে। এরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে থোড়াই কেয়ার করে। এদের কাছে ক্ষমতাই আসল, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা স্বার্থগত অস্তিত্ত্ব রক্ষায় এরা কখনো সখনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাহচর্যে আসেন। এই বস্তুবাদী সমাজের মাঝে থেকেও এরা নিজেদের চারদিকে একটা বলয় গড়ে নিজেদের আড়াল করেন। সমাজ যখন আধুনিক আলোয় উদ্ভাসিত হয় তখনতো আর উপেক্ষিত থাকেনা, তখন নিজেদের বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি দিয়ে সেই আলোর উপড়ে ছাই চাপা দেবার ব্যার্থ চেষ্টা করেন। পরিশেষে নিজেরাই আবার ক্ষমতার জোড়ে উদ্ধারকর্তা সেজে সেই সমাজের নেতৃত্ত্বে জেঁকে বসেন। যেই-কে সেই কাজ। এভাবেই এই চাপান-উতোর চলছেই যুগের পর যুগ। তবে হ্যাঁ এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে টেকনোলজীর উৎকর্ষতার কোন এক মহেন্দ্রক্ষনে! আপনার আগের গল্পটাতে তার ইঙ্গীত তো রয়েছেই। কি বলেন?
@কেশব অধিকারী,
আপনি যা বললেন, মিঃ ক্যামেরুনও অভতারে প্রায় তাই বলেছেন। এই কিছুলোক ( ওয়াল স্ট্রীটের অর্থদানবরা) মানব সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রন করছে এবং বলতে গেলে তারাই আসল সমস্যা। এরা নরদানব। সমস্যা হচ্ছে, এদের উলটোদিকে যারা বসে- লেনিন বা মার্কসের বৃত্ত থেকে বেড়চ্ছেন না। মধ্যেখানে বসে ক্ষতি হচ্ছে মানুষের।
বিপ্লব পাল ,
খুবই ভালো লেগেছে বিশ্লেষনটি, তবে ছবিটি দেখার অপেক্ষায় রইলাম। ক্রমাগত প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর তার ভয়াবহতার নিরীখে আপনার এই অংশটির একটা গভীর তাৎপর্য রয়েছে। সেই বিচারে এর বস্তুনিষ্ঠতা কি অস্বীকার করা যায়?
আমরাতো চাই জ্ঞানী এবং বিচক্ষন দুইই। কিন্তু পরমাণুর অন্তঃসলীলার মতোই কি এ-দুয়ের বিরোধ, যে একে কোয়ান্টাম ফিল্ডে ধরা গেলে ওর গতিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়না, আর যদি গতিকে যদি সঙ্গীকরি তো ও নিজেই বেমালুম ধোঁয়া ধোঁয়া! আসলে তা নয়, আমার তো মনে হয় জ্ঞান এবং বিচক্ষনতা আজ বস্তু বাদের অন্ধকূপে বন্দী! শুধু তাই নয়, জ্ঞান এবং বিচক্ষনতার পিঠে করে বস্তুবাদের জঞ্জাল তথা ডলার ইউরো বওয়ানো হচ্ছে, যেখানে হামেশাই সাধনা এবং জ্ঞানের কবরও হচ্ছে! সেই বিচারে প্যাগানিজমকে আমরা যতোটাই কদর্য ভাবিনা কেনো, তার এতনিক ভ্যালুটাকে তো আর হেলা করা যায়না। বস্তুবাদী সমাজের মতো জ্ঞানের উন্মেষ তখন না ঘটলেও প্রকৃতিকে মানিয়ে চলার বাতিকটাতো ছিলো, ধারাবাহিক উপলব্ধী দৃষ্টি এবং অভিজ্ঞতাই হয়তো ছিলো সম্বল। হয়তো অবচেতন ভাবেই ওটা ঢুকেছে ধারাবাহিক বিবর্তিত সভ্যতার ফাঁক ফোকর দিয়ে। সেই প্যাগান সমাজে ওকে কেন্দ্রকরেই যে আচারবিচার সেইতো হলো প্যাগানিজম। বাড়ির আঙ্গীনায় কোন কোণে একটা নিম গাছ থাকলে, পারিবারিক স্বাস্হ্যে তার প্রভাব পরে। এখন নিমগাছ যাতে অরক্ষিত হয়ে নাপড়ে সেই জন্যে হয়তো ওতে দেবতার আমদানী, নিমগাছটির তো রক্ষে হয়েছিলো! প্রকৃতিতো বেঁচেছিলো আমাদের আঙ্গীনায়! আর দেখুন আজকের এই পূঁজির সর্ব্বোত্তম বিকাশের যুগে কিভাবে একে গ্রাস করা হচ্ছে! আমাদের সর্ব্বোত্তম জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগেও-আমাদের আম, আমাদের জাম, আমাদের বিন্নীধান, আমাদের নিম, জারুল, শিমুল, চন্দন সবই পেটেন্টের নামে পরবাসী! সেই ঐ বস্তুবাদের অন্ধকূপে বন্দী! সত্যিই সেলুকাস! কি হবে এরপরে?
@বিপ্লবদা,গল্পটা পড়ে আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজের গায়ার কথা মনে পড়ল। অবতার বাংলাদেশে এখনও আসে নি কারণ একে আনার মত টাকা দেওয়া কোন হলের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পাইরেটেড ডিভিডি মিলছে।
এইডা কি করলেন বিপ্লব দা। আপনারা যারা বাংলাদেশের বাইরে ইউরোপ আমেরিকায় আছেন তারা হগলেই হয়ত এতদিনে অবতার দেখে ফেলেছেন। কিন্তু আমরা যেসকল হতভাগা বাংলাদেশে আছি, তাদের দেখতে তো আরো মেলা দিন বাকি।
মনে করছিলাম একবারে ফ্রেশ অবস্থায় দেখুম। কিন্তু এর মধ্যে আপনে দুম কইরা আইসা গোমর ফাস কইরা দিলেন। ছবির কাহিনী তো জাইনাই ফেলছি। ছবির আকর্ষন ও তো অর্ধেক হইয়া গেল।
@মিঠুন,
সেকি বাংলাদেশে আসেনি? কেন? ভারতে ত সব হলেই রম রমিয়ে চলছে প্রথম দিন থেকে।
আমি জানতাম না।
তবে গল্পটা মোটেও বলি নি। থিমটা বলেছি। গল্পের কিছুই বলি নি। বরং আমার লেখাটা পড়ে গেলে দেখতে বুঝতে সুবিধাই হবে।
মিঠুন আমি এ কারণেই লেখাটির ভূমিকা পড়ে সরাসরি কমেন্ট সেকসন এ চলে এসেছি, ভাগ্য ভাল লেখাটা পড়িনি!
@রামগড়ুড়ের ছানা, আমি মোটেও গল্পটা বলি নি-বিশ্লেষন দিয়েছি মাত্র।
@বিপ্লব পাল,
ঠিক আছে বিপ্লব দা। কিন্তু আমি ছবি দেখার আগে ছবির থিমটাও জানতে চাচ্ছিলাম না। তাই আমি পড়া বন্ধ করে দিয়েছি।
দুভাগ্য আমার। আপনার আর্টিকেল টা পড়তে আরও অপক্ষো করতে হবে। :-Y
@রামগড়ুড়ের ছানা,
হে হে, ভাই আপনি বুদ্ধিমান। আমি বিপ্লবদার আর্টিকেল টা পড়তে পড়তে যখনই বুঝতে পেরেছি যে আমি মুভির থিমটা জেনে ফেলছি সাথে সাথে পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আপাতত অবতার ডাউনলোডের চেষ্টায় আছি। ডাউনলোড় শেষ করে তারপর আর্টিকেলটা পড়ব। 😎
কেউ কি আমাকে অবতার ফ্রি ডাউনলোড করার কোন লিংক বা টরেন্টের সন্ধান দিতে পারেন?
বিপ্লবদা আফসোস আরও আছে। আপনারা দেখছেন থ্রী ডি। আমরা তো এখনও দেখিইনি, তার উপর যা দেখব তাও আবার টু ডি।
@মিঠুন,
আমিও আগে লিংক খুঁজেছি। আমাকে পেলে জানাবেন। টরেন্টে এসেছে কি?
হ্যা এই সিনেমাটিকে ত্রিমাত্রিক বিপ্লব বলা হচ্ছে। আমার ত মনে হয়েছে আমি প্যান্ডোরাতে গিয়ে বসেছিলাম। ভারতে কিন্ত আই ম্যাক্স গুলো থ্রি-ডিতেও দেখাচ্ছে। থ্রি-ডি দেখানো এমন কিছু কঠিন না-শুধু পোলারয়েড চশমা লাগে।