আমার চোখে একাত্তর
(অষ্টম পর্ব)
(প্রথম পর্ব) , (দ্বিতীয় পর্ব) , (তৃতীয় পর্ব) , (চতুর্থ পর্ব) , (পঞ্চম পর্ব) , (ষষ্ঠ পর্ব) , (সপ্তম পর্ব)
মার্চের পনের তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে ঢাকায় এলেন। পথে করাচীতে থেমে জুলফিকার আলী ভূট্টোর সাথেও শলা-পরামর্শ করলেন।
আলোচনা শুরু করলেন শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর শাসনতান্ত্রিক আর অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের নিয়ে। আর অন্যদিকে সামরিক প্রস্তুতিও চলছিল। ঢাকায় এসে প্রথমেই বসেছিলেন সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে। ইয়াহিয়া খান সদিচ্ছা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, মনে হয় না। দিনে প্রেসিডেন্ট হাউসে (এখন বঙ্গভবন) আলোচনা সেরে সন্ধ্যায় মিটিং-এ বসতেন ক্যন্টনমেন্টে।
প্রথম দুই দিন, ষোলই ও সতেরই মার্চ ইয়াহিয়া খান আলোচনায় বসেন শুধু শেখ মুজিবের সাথে, কোন পক্ষেই কোন উপদেষ্টা ছিল না। পরে যোগ দেন দুই পক্ষের উপদেষ্টারা। শেখ মুজিবের সাথে আলোচনায় থাকতেন আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন, কামাল হোসেন, এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম। শেখ মুজিবের ইতিপূর্বে সাতই মার্চের ভাষনে উত্থাপিত চারটি দাবী নিয়ে দেন-দরবার, অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ, এভাবেই প্রথম দিকে উত্তপ্ত আলোচনা শুরু হয়। আলোচনার এজেন্ডা নিয়েও শুরু হয় বাক-বিতন্ডা। দুই পক্ষই আলোচনার টেবিলে নতুন নতুন দাবী আর ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়। সামরিক সরকার প্রথমদিকে পার্লামেন্ট বসার আগেই ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজী হয়, পরে অস্বীকৃতি জানায় শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট সৃষ্টির অজুহাত দিয়ে। আওয়ামী লীগও অনড় অবস্থান নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে। প্রথমে ছয়দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ‘ফেডারেল গভর্নমেন্ট’ ধরণের সম্পর্কের কথা বললেও, পরে ‘কনফেডারেশন’-এর দাবী জানায়। ‘কনফেডারেশন’-ধরণের সম্পর্ক সাধারণত হয় দুই বা ততোধিক স্বাধীন দেশের মধ্যে। নিসন্দেহে, রাজপথের উত্তপ্ত পরিস্থিতিই আওয়ামী লীগকে ক্রমাগত অনমনীয় অবস্থানে ঠেলে দিচ্ছিল।
ইয়াহিয়া খানের উপর্যুপরি পীড়াপীড়ি সত্বেও শেখ মুজিব ভুট্টোর সাথে আলোচনায় বসতে অনীহা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে ভুট্টোও ইয়াহিয়ার তাগাদা সত্বেও সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া মুজিবের সাথে কথা বলতে কোন উৎসাহ দেখাচ্ছিলেন না। ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে না জানিয়েই ভুট্টোকে ঢাকায় আসতে রাজী করান, মুজিব কথা বলতে প্রস্তুত আছে বলে। ভুট্টো ঢাকায় আসেন মার্চের একুশ তারিখে পিপলস পার্টির আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে। এর আগেই পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় এসে পড়েন। ইয়াহিয়াই তাদেরকে ঢাকায় আসতে বলেন। এদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান আর আব্দুল ওয়ালী খান ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম। ভুট্টোর আগমনে পরিস্থিতি আরো সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। রাজপথ তখন শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত, ‘ভুট্টোর মাথায় লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।
ভুট্টোকে ঢাকা বিমানবন্দরে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। সামরিক বাহিনীর প্রহরায় তিনি দলবল নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (এখনকার শেরাটন) ওঠেন। শেখ মুজিব পরদিন বাইশে মার্চ প্রেসিডেন্ট হাউসে ভুট্টোকে দেখলেও তাঁর সাথে আলোচনায় বসতে কোন উৎসাহ দেখালেন না। ভুট্টোও শেখ মুজিবের এহেন মনোভাবে হতাশ হলেন। এই সময়ে ইয়াহিয়া খান তাদেরকে কথা বলার অনুরোধ জানান এই বলে, “আপনার দু’জন লজ্জাবিধুর নবদম্পতির মতো আচরণ করছেন; একটা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন কিছুদিনের মধ্যে, আপনাদের এই আচরণ শোভা পায় না” (সিসন এন্ড রোজ১।
শেখ মুজিব যে কথা বলেন নি ভুট্টোর সাথে, তা কিন্তু নয়। কথা হয়েছিল দু’জনের মধ্যে একান্তে। ইয়াহিয়াকে ছাড়াই। কি বলেছিলেন তাঁরা? সিসন আর রোজ -এর লেখা বইতে উল্লেখ আছে, ভুট্টোর ভাষ্য অনুযায়ী শেখ মুজিব নাকি ভুট্টোকে বলেছিলেন মিলিটারীকে বিশ্বাস না করতে। বলেছিলেন, “আজ তারা হয়তো আমাকে শেষ করবে, তবে কাল যে তোমাকেও করবে না, তা মনে করো না”। কিন্তু অন্য যারা এই কথোপকথন সম্পর্কে অবহিত তাঁরা বলেছেন, ভুট্টোই শেখ মুজিবকে সতর্ক করে বলেছিলেন, মিলিটারী কখনোই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, বাঙ্গালীদের হাতে তো কোনদিনও নয়। মুজিবের উচিত তাঁর (ভুট্টোর) সাথেই সমঝোতায় আসা।
তবে এই ঘটনা নিয়ে একটু ভিন্ন ধরনের বর্ণনাও দেখেছি । ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফেলাচিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে২ ভুট্টো বলেছেন, শেখ মুজিব নাকি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেই রাতেই প্রেসিডেন্ট ভবনে নয়, অন্য কোন স্থানে গোপনে মিলিত হওয়ার জন্য; বলেছিলেন, লোক পাঠাবেন নিয়ে আসার জন্য। ভুট্টো রাজী হন নি, পাকিস্তানের ভাগ্য নিয়ে এভাবে গোপনে মিটিং করতে তাঁর মন নাকি সায় দেয় নি। ভুট্টোর কথা যে কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, তাঁর বানিয়ে কথা বলার অভ্যাস ছিল।
এদিন সন্ধ্যায় শেখ মুজিব সাংবাদিকদের বলেন, ভুট্টোর সাথে তাঁর কোন কথাবার্তা হয় নি, তবে ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনার সময় ভুট্টো সাহেব প্রেসিডেন্ট ভবনে ছিলেন।
পরিস্থিত তুঙ্গে উঠলো তেইশ মার্চ। তেইশে মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবস। আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করার আহবান জানায় দেশবাসীর প্রতি। সেদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচীতে উল্লেখ না থাকলেও ঘরে-বাড়ীতে, মিছিলে-মিটিং-এ বাংলাদেশের নতুন পতাকা (মানচিত্রখচিত) ব্যাপকভাবে উড়তে দেখা যায়।
কোন কোন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ এবং তাদের কিছু অগ্রসর অংশ যে শুধু নেতৃত্বের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারে তাই নয়, বরং নেতৃত্বকেও পারে পথ দেখাতে, দিক নির্দেশ করতে। একাত্তরের মার্চে বাংলাদেশে আমি তাই হতে দেখেছি। অগ্রসর অংশটা একাত্তরের পূর্ব বাংলায় ছিল ছাত্ররা। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রবক্তারা হয়তো বলবেন ওই সময়ে ছাত্রদের ভূমিকা হঠকারী ছিল, শেখ মুজিবও তাদের বাড়াবাড়ির কারণে খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। অনেকের মতো আমারও ধারণা, ছাত্রদের জঙ্গী মনোভাবের প্রতি শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দিনের সহানুভূতি ছিল অনেক বেশি। স্বাধীনতার দাবী প্রসঙ্গে এই সময়ে শেখ মুজিব প্রকাশ্যে কিছুই বলেন নি। তবে ছাত্রদের নতুন বানানো পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্যালুট নিতে দেখা গেছে।
পূর্ব বাংলায় সামরিক বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি করার আয়োজন চলছে আর শেখ মুজিবুর রহমান একেবারে কিছুই আঁচ করতে পারছেন না, তা কিন্তু ঠিক নয়। শুধু তাই নয়, বাঙ্গালীদের ওপর যে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হতে পারে সেই আশঙ্কা তাঁর ছিল, এবং তার পরিণতি কি হতে পারে সে সম্পর্কেও তাঁর বেশ ভালোই ধারণা ছিল। (যদিও আমার মনে হয়, তিনি মনেপ্রাণে চাইতেন তাঁর এই আশঙ্কা যেন সত্যি না হয়।) তা নইলে তিনি ১৬ই মার্চ বিবিসির সাংবাদিক মাইকেল ক্ল্যাটনকে বলতে পারতেন না, “পশ্চিম থেকে পূর্ব পাকিস্তানে তড়িঘড়ি করে সৈন্য আনা হচ্ছে। তাঁরা দূর্গ বানাতে ব্যস্ত। এসবের উদ্দেশ্য কি? পূর্ব পাকিস্তানীরা নিরস্ত্র। আমাদের সংগ্রাম শান্তিপূর্ণ। যুদ্ধ আমরা চাই না। কিন্তু আমি পরিষ্কার ভাবে বলে দিতে চাই সাত কোটি মানুষকে দাবিয়ে রাখার ক্ষমতা কারো নাই। রক্তপাত হতে পারে, এক থেকে দুই বছর – এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। নেতাদের মধ্যে অনেকেকেই জীবন বিসর্জন দিতে হতে পারে – খুবই সম্ভব। কিন্তু মানুষ বদ্ধপরিকর, তাঁদের মনোবল দৃঢ়, তাঁদেরকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হবে”৩।
শেখ মুজিবের এই কথাগুলো প্রফেটিক। নিজের এবং আরো অনেক নেতার মৃত্যু হতে পারে, এটাও তিনি কি অবলীলায় মেনে নিয়েছিলেন। দূর্দান্ত সাহসের অধিকারী না হলে কেউ এমন উচ্চারণ করতে পারে না।
যারা সেই সময়ে ছাত্রদের ভূমিকাকে হঠকারী মনে করেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত এদেরই অবদান। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঊষালগ্নে ছাত্রদের, বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও তার নেতাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। পরবর্তীতে (যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ও বিশেষ করে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে) এদের অনেকেরই কার্যকলাপ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু সে আরেক কাহিনী, আরেক ব্যর্থতার ইতিহাস।
মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে, তবে ইতিহাসও ব্যাক্তিত্বের রূপায়নে ভূমিকা রাখতে পারে। ইতিহাসের কোন কোন ক্রান্তিলগ্নে কোন ক্ষনজন্মা ব্যাক্তিত্ব ইতিহাস সৃষ্টি করে, আবার কখনো কখনো ঘটনাপ্রবাহ ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্বের জন্ম দেয়। একাত্তরে বাংলাদেশে কোনটা ঘটেছিল? ব্যাক্তি শেখ মুজিব ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর ব্যাক্তিত্ব দিয়ে, না ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ শেখ মুজিবের ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছিল? এ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ তর্ক হতে পারে। সেই তর্কে আমি যাবো না। এই লেখার উদ্দেশ্য সেই তর্কের সূচনা বা নিরসন কোনটাই নয়। তবে শেখ মুজিব ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন সেই দুইবছরের – ঊনসত্তরের ফেব্রুয়ারী থেকে একাত্তরের মার্চ পর্যন্ত –ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে। শেখ মুজিবের শত্রুরাও এই সত্যটাকে অস্বীকার করতে পারেন না। শেখ মুজিব সেদিন পূর্ব বাংলার সমগ্র জনগোষ্ঠীর কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন ওই দুইবছরে, হয়ে উঠেছিলেন এক অভূতপূর্ব সংগ্রামী প্রেরণার উৎস বাঙ্গালীদের কাছে।
এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব ও তার ভাবমূর্তি নিয়ে একটা কথা বলার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করছি। কালের আবর্তে এই ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে অনেক ঘটনার বর্ণনায় আর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। পক্ষে-বিপক্ষে দুটি দল তৈরী হয়ে যায়। পক্ষের দল গড়ে তোলেন এক দেবতার ভাবমূর্তি, বিপক্ষের দল এক দানবের। বাস্তবতা হয়তো কোনটার সাথেই মেলে না। কিছু সত্যি ঘটনা হারিয়ে যায়, কিছু মিথ্যে রটনা সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। এই ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে যে কোন যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ বলি হয় আবেগের আর মোহের যুপকাষ্ঠে। বিশ্লেষণকারীর, সত্য অন্বেষণকারীর ভাগ্যে অপবাদ জোটে দালালীর, হয় এই পক্ষের নয়তো অন্য পক্ষের। তাই সিরাজুদ্দৌলাকে কেউ বলেন লম্পট, মদখোর, যোগ্যতাহীন, কেউ বলেন ভাগ্যাহত শহীদ দেশপ্রেমিক শেষ স্বাধীন নবাব। গান্ধী অনেকের কাছেই অহিংসা আর শান্তির ধ্বজাধারী মহাত্মা, আবার কারো কারো কাছে ধর্মান্ধ, গোঁড়া, বিজ্ঞানবিমুখ, চতুর রাজনীতিক।
আরো কয়েকটা ঘটনা ঘটে সেদিন তেইশে মার্চ। বেতারে রেডিও পাকিস্তান ঢাকার বদলে ‘রেডিও ঢাকা’ শোনা যেতে থাকে। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রচারই বন্ধ করে দেয়া হয়, সামরিক বাহিনীর দূর্ব্যাবহারের প্রতিবাদে। অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী সামরিক অফিসারদের সভায় কর্নেল (অব) এম এ জি ওসমানী আর মেজর জেনারেল (অব) এম ইউ মাজিদ বক্তৃতা করেন। তাঁরা সভার পরে ধানমন্ডিতে গিয়ে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন। শেখ মুজিব যে গাড়ীতে প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন তাতে শোভা পাচ্ছিল বাংলাদেশের পতাকা। এ নিয়ে দারুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয় প্রেসিডেন্ট ভবনে।
এই ঘটনাগুলোকে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহিতার প্রমাণ হিসেবে প্রচার করা হয়, তখন এবং এখনও। পাকিস্তানী লেখকেরা, যেমন সিদ্দিক সালিক৪ এবং ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানী উপদেষ্টারা, যেমন, এম, এম, আহমেদ (হাসান জহীর৫), ফলাও করে এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা দেন। উদ্দেশ্য, প্রমাণ করার চেষ্টা যে, বাঙ্গালীদের উস্কানিমূলক আচরণই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বাধ্য করে শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।
ইয়াহিয়া খান তাঁর পঁচিশে মার্চের বেতার ভাষনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার এবং শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করার কারণ হিসেবে এবং দেশদ্রোহিতার আলামত হিসেবে এগুলোর উল্লেখ করেন।
কিন্তু আরো কিছু ঘটনা ঘটছিল তখন লোকচক্ষুর অন্তরালে। সাদা পোষাকে সৈন্য আমদানী চলছিল পি আই এ-র বিমানে প্রতিদিন। এম ভি সোয়াত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে সেই আটাশে ফেব্রুয়ারী। চট্টগ্রাম বন্দরের বাঙ্গালী অফিসার ও শ্রমিকরা মাল নামাতে অস্বীকৃতি জানায় তাই জাহাজটা বহির্নোঙ্গরেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে চব্বিশে মার্চ পর্যন্ত।
তেইশে মার্চ ঢাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও প্রেসিডেন্ট ভবনের আলোচনায় মোটামুটি সন্তুষ্ট তিন পক্ষই – সত্যতা যাই থাকুক, সেই রকমই ধারণা দেয়া হচ্ছিল বহির্বিশ্বকে। সমঝোতা হবে বলে মনে হচ্ছে, এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ করে শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে। সামরিক আইন তুলে নেয়ার সরকারী ঘোষণার খসড়া নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে পরদিন, চব্বিশ তারিখে।
শুধু উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক হয় চব্বিশে মার্চ। তখন অনেকেরই জানা ছিল না এটিই শেষ আলোচনা বৈঠক – পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টায়। আলোচনা হয় ‘প্রেসিডেন্সিয়াল প্রক্লেমেশন’-এর খুঁটিনাটি নিয়ে। বৈঠক শেষে তাজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আর কোন আলোচনার প্রয়োজন নেই, তবে উপদেষ্টা স্তরে আরো দু’একবার বসতে হতে পারে ঘোষণাটির চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য। সংকটের নিরসন হতে যাচ্ছে, তাঁর কথায় এমনই আভাস পাওয়া গেল। কিন্তু তিনি যে শক্ত, অনড় অবস্থানে থেকে কথা বলছিলেন তাও স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল।
কিন্ত আজ আমরা জানি, আর্মি কমান্ড মার্চের বিশ তারিখেই সামরিক কায়দায় সঙ্কট সমাধানের প্রস্তাব দেয়। তেইশ তারিখ বিকেলে ইয়াহিয়া খান সেই প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন৬।
পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিকরা একে একে ফিরে গেলেন, যাওয়া-আসার পথে সাংবাদিকদের আশার বাণী শোনাতে থাকলেন, “আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে”।
পঁচিশ মার্চ বিকেলে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে শেখ মুজিব দেশবাসীর প্রতি সাতাশে মার্চ দেশব্যাপী হরতাল পালনের আহবান জানালেন । কয়েক ঘণ্টা পরেই ইতিহাসের এক বীভৎস অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে – মনে হয় না, শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগের কারোরই এ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল।
____________________________________________
১Richard Sisson and Leo E. Rose, War and Secession: Pakistan, India, and the Creation of Bangladesh, University of California Press, 1990, p. 122.
২Oriana Fallaci, Interview with History, Houghton Mifflin Company, Boston, 1976, p. 193.
৩Richard Sisson and Leo E. Rose, War and Secession, p. 293. মাইকেল ক্ল্যাটনের প্রশ্নটা ছিল, “এই অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাধীনতার শ্লোগান কি আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বন্ধ করে দেবে না ?”
৪Siddiq Salik, Witness to Surrender, Oxford University Press, Karachi, 1977.
৫Hasan Zaheer, The Separation of East Pakistan: The Rise and Realization of Bengali Muslim Nationalism, Oxford University Press, Karachi, 1994, p. 158-9.
৬Richard Sisson and Leo E. Rose, War and Secession, p. 133..
১৬ ডিসেম্বর, ২০০৯।
(চলবে)
আমার জানার পরিধি অত্যন্ত কম তাই মন্তব্য করার সাহস করছি না।।আমার এই অপারগতাকে ঢাকতে কিছু মামুলী প্রশ্নই করি।
বলছিলেন মানচিত্র খচিত পতাকার কথা, মানচিত্রহীন পতাকার শুরুটা কখন কিভাবে কেনো হয়েছিল সে কথাটা অন্য কোন পর্বে জানবার আগ্রহ থাকল।
ভাবতে অবাক লাগছে যে যুদ্ধের আগে সাধারণত নেতারা বলে থাকেন যে যুদ্ধে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হতেই পারে, কষ্টকর তবু এটাকে মেনে নিয়েই যুদ্ধে যেতে হয়। অথচ খুব কমই শুনেছি যে কোন নেতা বলছেন নেতাদের ও জীবনহানীর কথা।
আপনি বলছিলেন ঘটনা ব্যাক্তিত্বের জন্ম দেয় । জানি separte reality আছে, একেক জন একেক ভাবেন দেখেন কিন্তু হঠাৎ এই প্রসঙ্গ তুল্লেন কেন, জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।
পড়ছিলাম যে চট্টগাম বন্দরে বাঙ্গালী অফিসার শ্রমিক রা বিরোধিতা করছিলেন অস্ত্র খালাসের। বাবার মুখে যতদুর শুনেছি ও সময়ে ওই বিরোধিতার ঘটনায় সাধারণ জনতা, সাংস্কৃতিক কর্মীদের যথেষ্ট অবদান ছিলো।সত্যি কি তাই? আচ্ছা ও সময়ে সরকারী কর্মচারীদের এ ধরনের মোর্চায় , এই বিরোধিতার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কারা?
ভন্ডামীর ধরণ টা বোঝার ইচ্ছে হচ্ছে , যদি ২৩ এর বিকেলেই চুক্তি হয়ে গিয়েছিল তাহলে মিটিং টা হয়েছিলো কখন?
আচ্ছা সমঝোতা যদি হতেই যাচ্ছিলো, সংকট নিরসন হতে যাচ্ছে এটা যদি আপাতঃ ধারণা হয়েই থাকে তাহলে ২৭ মার্চের হরতাল ডাকার উদ্দেশ্য টা কেনো এবং কি ছিলো ?
@কেয়ার উত্তরে,
প্রথমেই কেয়াকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সুচিন্তিত প্রশ্নমালার জন্য। আমার মতো সাধারণ একজন ব্লগারের লেখা কেয়া শধু মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন তাই নয়, তাঁর প্রশ্ন থেকে বোঝা যায়, বেশ গুরুত্ব দিয়েও পড়ছেন। এই প্রশ্নগুলো আমাকে আরো পরিষ্কার করে কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করার বাড়তি সুযোগ দিয়েছে। আর কথা না বাড়িয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি –
আমার যতটুকু মনে আছে, ষোলই ডিসেম্বরের পরে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এক অধ্যাদেশের বলে জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত সরকারীভাবে নির্ধারণ করে দেন। পতাকায় মানচিত্র বাদ দেয়ার মূল কারণ মানচিত্র আঁকা বেশ কঠিন কাজ, আর বাংলাদেশের মানচিত্রটাতো বেশ জটিল। তখন সোনালী রং দিয়ে আঁকা হতো। মান (স্ট্যান্ডার্ড) রক্ষা করা হতো না প্রায়ই। আরও একটা সমস্যা ছিল, শুনেছি। স্বাভাবিক কারণে মানচিত্রটাকে পতাকার দু’দিক থেকে দু’রকম দেখাতো। তবে মানচিত্র রাখতে চাইলে এগুলো বোধহয় কোন সমস্যাই ছিল না। আসল কারণ, যুদ্ধের পরে পতাকায় মানচিত্রের উপস্থিতি আর প্রয়োজনীয় মনে হয় নি। আমি এই কথাটা অভিযোগের সুরে বলছিনা। আমার কাছে মানচিত্র তুলে দেয়াটা অস্বাভাবিক মনে হয় নি। বরং একাত্তরের ফেব্রুয়ারী-মার্চে এই পতাকার উদ্ভাবকদের মনে কি কারণে মানচিত্রটাকে পতাকায় উৎকীর্ণ করার চিন্তা মাথায় এসেছিল – তা নিয়ে আমার কৌতুহূল আছে। হয়তো তেমন কোন জোরালো কারণ ছিল না, স্বতস্ফূর্ত ছিল হয়তো চিন্তাটা। সোনার বাংলাকে সোনালী রঙ্গে সঙ্গায়িত করার একটা ইচ্ছা হয়তো ছিল।
শেখ মুজিব যখন কথাটা বলছিলেন বিবিসির সাংবাদিককে, তখন কিন্তু তিনি যুদ্ধের আশঙ্কা করছিলেন, নিজে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছিলেন না। যুদ্ধে যেতে বলছিলেন না মানুষকে। ভাবছিলেন যে, যুদ্ধটা চাপিয়ে দেয়া হবে। তবুও তিনি প্রায়ই ত্যাগের কথা, জীবন বিসর্জনের কথা বলেছিলেন সেই সময়ে। সাতই মার্চে বলেছিলেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো…”। এক পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাকে বিদায়ী সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, পরপারে হয়তো আবার দেখা হবে। শেখ মুজিবের এই ‘জান কবুল’ মনোভাবটা তাঁর ভাবমূর্তি গঠনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
হ্যাঁ, এটা নিসন্দেহে আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা। আমি অন্য কোন উদাহরণ বা তুলনা টানতে চাই না এখানে। প্রসঙ্গটা তোলার কারণ হচ্ছে, আমার ধারণা, দীর্ঘ চল্লিশ বছর পরে মানুষের স্মৃতিতে, লিখিত ব্যাখ্যায়, প্রকাশিত রচনায়, ঘটনার গুরুত্ব হ্রাস পেতে শুরু করেছে, ব্যাক্তিত্বের প্রভাবকে ফোলানো-ফাঁপানো হচ্ছে। আমার লেখায় আমি উল্টোটা করতে চেষ্টা করেছি।
মুক্তমনায় প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় খৃষ্টফার রোজারিওর (কেয়ার বাবা) অসাধারণ সেই লেখা থেকে (http://blog.mukto-mona.com/?p=1344) আমিও জানতে পেরেছি ঐ ঘটনাটার কথা। আমার নিজের কাছে খুব একটা তথ্যও নেই (মুক্তমনায় কেউ এই ঘটনার ওপরে গবেষণা করে একটা লেখা দিলে দারুণ হবে) । তবে সাধারণ জনতার (বিশেষ করে ঐ অঞ্চলের), ছাত্রদের আর সাংস্কৃতিক কর্মীদের অংশগ্রহন ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নাই। চব্বিশ তারখে মারাও গেছে তাদের মধ্যে অনেকেই। মেজর রফিকুল ইসলামের বইতে শুনেছি এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আছে, আমার কাছে বইটা নেই। তাঁর সাথে নাকি সেই সময়ে পাকিস্তানীদের বাধা দেয়া নিয়ে মেজর জিয়াউর রহমানের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। শুনেছি, জিয়া প্রথম দিকে বাধা দেয়ার বিরোধী ছিলেন।
কোন বিশেষ গ্রুপ নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন না স্বতস্ফূর্ত নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল তখন চট্টগ্রামে আমার জানা নেই।
তেইশ তারিখে মুজিব-ইয়াহিয়ার মিটিংটা হয়েছিল সকালে। (হাসান জহীরের বই থেকে জানতে পারছি।) এই মিটিং-এ শেখ মুজিব গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে এসেছিলেন। অপারেশনে সার্চলাইটের পরিকল্পনা শুরু হয়ে ইয়াহিয়া ঢাকা আসার পরপরই, মার্চের আঠারো তারিখ থেকে। তেইশে বিকেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
সাতাশে মার্চের হরতাল ডাকা হয়, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর আর জয়দেবপুরে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে। এই প্রশ্নটা ইতিহাসের সঠিক প্রেক্ষাপটটাকে বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পঁচিশে মার্চ হরতাল ডাকা থেকে প্রতীয়মান হয় সামরিক সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কোন ধারণাই ছিল না। তাঁরা তখনো চাপ সৃষ্টি করে দাবী আদায়ের নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
কেয়াকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়ার জন্য।
@ইরতিশাদ,
সোয়াত থেকে অস্ত্র নামানোয় জিয়ার ভূমিকা নিয়ে অনেক রকম কথা আছে। সীরু বাংগালী নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে জিয়া বাধা দেওয়ার বিরোধী ছিলেন, তার জীপ ব্যারিকেডে আটকে যাওয়ায় অত্যন্ত বিরক্ত হন, উর্দুতে গাগালি করেন। কতটা নির্ভর করা যায় জানি না।
বংগবন্ধুর মার্চ মাসের ভূমিকা নিয়ে অনেক বিতর্ক হতে পারে। অনেকে অনেক কূটতর্ক বাধান। তবে তার কি করা উচিত ছিল পরিষ্কার বলতে পারেন না। হুট করে কি একটা দেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করে দেওয়া যায়? পাকিস্তানীরা ক্ষমতা দিতে দেরী করছে এই ছূতায় দেশের স্বাধীনতা আমরা হয়ত মেনে নিতে পারি কিন্তু বহিঃবিশ্ব কেন মানবে?
২৫শে মার্চ ত বড় গণহত্যার পরে ঘোষনার দেবার পরেই বা কয়টা দেশের স্বীকৃতি আমরা পেয়েছিলাম? তার আগে স্বাধীনতা ঘোষনা করলে আমাদের নিঃসন্দেহে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী হিসেবেই দেখা হত যা পাকিরা দাবী করে আসছিল। তারা চাচ্ছিলও অমন। ৭ই মার্চ তারা ধরেই নিয়েছিল বংগবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষনা করবেন, তাদের সেদিন রেস কোর্সেই বংগবন্ধুর মঞ্চে কামানের গোলা হানার পরিকল্পনা ছিল। বংগবন্ধু তাদের ফাদে পা দেননি।
আমি যা বুঝি, মুজিব-ইয়াহিয়া আলচনার শেষ দিকে সবাই বুঝতে পেরেছিল যে পাকিদের বদ মতলব আছে। কিছু একটা হতে যাচ্ছে। তবে আওয়ামী নেতাদের ব্যক্রিগত স্রৃতিচরন থেকে জানতে পেরেছি যে তাদের আশংকা ছিল বড়জোর ৬৯ সালের মত কিছু একটা হবে। গন গ্রেফতার গোছের কিছু। এত ভয়াবহ কিছুর আশংকা কারো দূ;স্বপ্নতেও আসেনি। সিদ্দিক সালেক তার বইতে দাবী করেছে মুজিবই নাকি তাদের ফোন করে গ্রেফতার করতে বলেছিলেন, এরকম নাকি তিনি আগেও কয়েকবার করেছেন।
@আদিল ভাই,
আপনার সাথে ১০০% একমত। এখানেই শেখ মুজিবুর রাহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার নিদর্শন আমরা দেখতে পাই।
তবে এটাও ঠিক যে কেউ ধারনাও করতে পারেনি যে আমাদের উপরে এই ধরনের হামলা হতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
কি হ’লে কি হ’তে পারতো ধরনের বিতর্ক থেকে এই সিরিজের লেখায় আমি যতটা সম্ভব বিরত থাকতে চেষ্টা করছি। আমি যা ঘটেছে তা কেন ঘটেছে এবং তার পরিণতি কি হয়েছে আমার বিশ্লেষণ তাতেই সীমিত রাখতে চেয়েছি। আগের পর্বগুলোতে আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছি শেখ মুজিব কেন স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারতেন না সাতই মার্চে।
বহির্বিশ্বের স্বীকৃতির ব্যাপারটা এখানে গৌণ। আমার মনে হয় না এই প্রসঙ্গটা বিবেচনার যোগ্য কোন ব্যাপার ছিল তখন। বহির্বিশ্ব মানবেনা বলেই যে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় নি, এ যুক্তি ধোপে টেকে না। তাহলে কোন দেশেই বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার বদল হতো না।
এ প্রসঙ্গে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য বা তথ্যসূত্র আপনার কাছে থাকলে আমি জানতে আগ্রহী। প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়, তিনি সেই ফাঁদে হয়তো পা দেন নি, অন্য ফাঁদে কি দিয়েছিলেন? পঁচিশ তারিখ পর্যন্ত আলোচনার ভড়ং-এ অংশ নিয়ে?
আমিওতো তাই বলতে চেষ্টা করেছি।
এ প্রসঙ্গে আমি লিখেছি আগের কোন একটা পর্বে।
আদিল, আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
@ইরতিশাদ,
এক কথায় দুর্দান্ত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরের পর্বটি চাই।
ধন্যবাদ লেখককে তার এই অসাধারন লেখাটির জন্য।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
@ইরতিশাদ,
(Y)
আপনাকেও ধন্যবাদ । গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিলেন তাই।
আওয়ামীপন্থী ইতিহাস আর বিএনপিপন্থী ইতিহাস বাদ দিয়ে কেউ যদি এই রকম নির্মোহ দৃষ্টিতে আমাদের ইতিহাসটা লিখতো, কী যে ভাল হতো।
অসম্ভব গতিশীল একটি সিরিজ। মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম বরাবরের মতোই।
এই সিরিজটির জন্য মুক্তমনার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এ ধরনের সিরিজ মুক্তমনায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে দেখে সত্যই গর্ব অনুভব করছি।
@অভিজিৎ,
লেখাগুলো মুক্তমনায় প্রকাশ করতে পেরে আমি আনন্দিত। মুক্তমনার কাছে আমিও কৃতজ্ঞ। সহৃদয় মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
ধণ্যবাদ।
কয়েকটা নুতন রেফারেন্স পেলাম। মুজিব-ভূট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠকের কিছু অপ্রকাশিত তথ্যও জানা গেল।
@আদিল মাহমুদ,
লেখাটা আপনার নুতন তথ্য জানতে কাজে লাগছে জেনে খুশি হলাম। পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।