“বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পিতা: ত্যাগ তিতিক্ষা ও মরণে যিনি ছিলেন তাঁহার সঙ্গিনী, কেন তিনি নন জাতির জননী?“/ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
এক বন্ধূ সেদিন উপরের শ্লোগানটির (দাবির?) কথা জানালো। চলতে ফিরতে এমন কত হাস্যরসের জোগান দেয় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো- ফলে সবাই মিলে অনেক হাসলাম। কাউকে কোন টিপ্পনী কাটতে বা স্ল্যাং ইউজ করতে হলো না- শুধু ছাত্রলীগের এই দাবিটূই যথেস্ট প্রাণখুলে হাসার জন্য। হাসলাম।
আরো দু এক জায়গায় এ দাবির কথা জানাতে দেখি তারাও হেসে উঠে, এবারের নির্বাচনে নৌকায় সিল মারা ভদ্রলোকরে জানাতে- তিনিও কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিঃসৃত হাসি দিয়ে জানালেন- জানিতো – জানতাম এরা এরকমই। কিন্তু বিএনপি-জামাত? তাদের কিভাবে ভোট দেই- ওরা তো আরো খারাপ!
আরো খারাপ!
বিএনপি। আওয়ামিলীগ।
আওয়ামিলীগ, বিএনপি। কে বেশী খারাপ? অথবা, এটলিস্ট- ও তো এর চেয়ে একটু ভালো! বিএনপি, না আওয়ামিলীগ? হাসিনা, না খালেদা? কে বেশী ভালো? কে বেশী খারাপ?
ক্যালকুলেশনটা এখানেই সবার সীমাবদ্ধ। (কাউরে কাউরে আজকাল এরশাদ চাচার নাম নিতেও দেখি!!)
আওয়ামিলীগ এই ক্ষতি করেছে- ঐ সমস্যা করেছে? ওহ বুঝেছি- আপনি বিএনপি।
বিএনপি’র এই সমস্যা, ঐ সমস্যা- হ্যা হ্যা আপনি তো একটা আস্তই আওয়ামিলীগার।
ঘুরে ফিরে আওয়ামিলীগ আর বিএনপি- বিএনপি আর আওয়ামিলীগ! এরকম একটা বাস্তবতা মাথায় রেখেই এই রাজনৈতিক পোস্ট লেখার খায়েশ হল। আওয়ামিলীগের প্রথম বছরটা আর দুটা মাস পরেই শেষ হবে। এই প্রথম বছরটা কেমন কাটলো? আওয়ামিলীগের? জনগণের?
আওয়ামিলীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। মেলা মেলা ভোট পেয়েছে। বিএনপি’র মুখে চুনকালি পড়েছে এবারের নির্বাচনে। আওয়ামিলীগ এসেছিল দিন বদলের শ্লোগান নিয়ে। ক্ষমতায় এসেই আমরা কেমন দিন বদল দেখছি? বিস্তারিত কিছু বলবো না- যতখানি সংক্ষেপে আলোচনা শেষ করা যায়- সেই চেস্টাই করবো (লম্বা হয়ে গেলেও দোষ দিয়েন না)।
শুরুর চমক ছিল মন্ত্রীসভা, নতুনদের সমন্বয়ে এবং বিএনপি’র আমলের তুলনায় অনেক ছোট আকারের জন্য আসলেই একটা চমক ছিল। কিন্তু এই দশমাসে আশা করি- মন্ত্রীসভার বিভিন্ন মন্ত্রী একের পর এক চমক দেখাতে দেখাতে শুরুর চমকটা মলিন হয়ে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া, তার পদত্যাগ না ছুটি এনিয়ে নাটক সবমিলিয়ে তো দারুন সব চমক দেখেছে। তবে সবচেয়ে মজার উক্তি ছিল- সাজেদা চৌধুরির- সাংবাদিকদের জানান: “ও তো বাচ্চা একটা ছেলে- কি বলেছে না বলেছে..”। হুম, আমরা জানলাম- সে বাচ্চা ছেলে- তারও ব্যাপক অভিমান হয়- অভিমান করে সবকিছু ছেড়ে ফেলে এভাবে চলে যাওয়াটা তো এক বাচ্চারই কাজ। আমরা অবশ্য প্রশ্ন করিনি যে, এমন একটা বাচ্চাকে দিয়ে মন্ত্রীসভা তৈরি করা জায়েজ কি না? যাক, তাজ বাচ্চা ছেলে- বাকিরা তো আর বাচ্চা নয়! ফলে- বাকি যারা বাচ্চা নয়- মানে বড়, তারা তাদের বড়েমি দেখাতে বেশিদিন নেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ঝাঁজ আমরা কিছুদিনের মধ্যে টের পেয়েছি। ছাত্রলীগের দখলদারি, সন্ত্রাস, চাদাবাজি এগুলো নিয়ে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলো- তখন তিনি প্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন: “বিগত আমলে বিএনপি জোট সরকার কি করেছে? ক্ষমতায় গিয়েই তারা আমাদের ছেলেদের কিভাবে নির্যাতন করেছে!…” ইত্যাদি। হুম, সবাই জানি- ২০০১ এ বিএনপি জামাত কি তান্ডবটাই না চালিয়েছিল। বুঝাই যায়- সাহারা খাতুনদের রাগ থাকাটা স্বাভাবিক। আইনমন্ত্রীকে একই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্বভাবসুলভ ডিপ্লোমেটিক ওয়েতে জানান: “যে-ই অপরাধ করুক না কেন তার শাস্তি হবে। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে অভিযোগ উঠছে- তা কতখানি সত্য”।- যথার্থই একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তি ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ, ফলে তিনি খুবই যৌক্তিক প্রসঙ্গেরই অবতারণা করেছেন বটে। টকেটিভ বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা বলার কিছু নেই। কথা পাগল এই মন্ত্রী যে সবদিক দিয়েই ব্যর্থ (কথা ছাড়া) সেটা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যকলাপে তো মনে হয়- তিনি আমেরিকা ও ভারতের আমলার পিয়ন পর্যন্ত আসলেও তার সাথে মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে পারবেন না। বলবেন কি করে- এরা তো যথাক্রমে বিশ্বের ও দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল দেশ। যাহোক- এই ফিরিস্তি অহেতুক না বাড়িয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি দেয়া যাক….
সরকারে বসার পর পরেই সবচেয়ে কঠিন সময় পার করে আওয়ামিলীগ সরাকার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায়। অনেকেই বলেন- আওয়ামিলীগ দারুন সামাল দিয়েছে। আওয়ামিলীগ আসলেই একটা কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে ছিল। নির্বাচনের এত অল্প সময়ের মধ্যে না হয়ে ঘটনাটা দুই/তিনবছর পরে ঘটলে বা নির্বাচনে এত বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কিংবা আওয়ামিলীগের মত অভিজ্ঞ দল না হলে (মানে বিএনপি’র মত দল থাকলে)- নাকি পরিস্থিতিটাই অন্যরকম হয়ে যেত- সরকারই উচ্ছেদ হয়ে যেত! আমিও একই রকম মনে করি- আসলেই দারুন সামলেছে। সেনাকুঞ্জে সেনা অফিসারদের সাথে শেখ হাসিনার মধুর আলাপ- চারিতা শুনে না বলার কোন উপায়ই নাই- অবশ্যই শেখ হাসিনা সমস্ত বিষয়টা দারুনভাবে ট্যাকেল দিয়েছেন। তরুন অফিসারদের গালমন্দ হজম করেছেন তো কি হয়েছে- তাদের তেল দিতে হয়েছে তো কি হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী হয়েও জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করতে হয়েছে তো কি হয়েছে? পরিস্থিতি সামাল দেয়াটাই বড় কথা। তাতে তিনি সম্পূর্ণ সফল। এমনকি- পুরো বিডিআরের বেয়াদব ও খুনী জওয়ানদের সেনা তত্তাবধানে ছেড়ে দিয়েছেন তো কি হয়েছে, সেনা অত্যাচারে একে একে ৪৬ জন বিডিআর খুনী মারা গেছে তো কি হয়েছে, হাজার হাজার বিডিআর নির্যাতনে পঙ্গু হলেও বা কি হয়েছে- পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগহীন বন্দী জীবন যাপন করলেই বা কি হয়েছে। আসল কথা হচ্ছে- পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক কি না? কোন বিদ্রোহ আছে কি না? সরকারের গদি এখন নিরাপদ কি না? তাহলেই হলো। অবশ্যই শেখ হাসিনা দারুন সামলেছেন। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। অন্য কথায় যাওয়া যাক….
আওয়ামিলীগ স্বপ্ন দেখিয়েছিলো- তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। বিচার? কই শুরুতো হয় না! হবে। হবে। ধৈর্য ধরো বৎস্য – ধীরে ধীরে। সবুরে মেওয়া ফলে। মাঝখানে কিছু তোড়জোর অবশ্য শোনা গিয়েছিল। আইনমন্ত্রী অনেক কথা বলেছেন। জাতিসংঘের সহযোগিতাও নাকি চাওয়া হয়েছে। কেবল বিচারটা শুরু হয়নি। নিন্দুকে অবশ্য বলা শুরু করেছে: “আওয়ামিলীগ কোনদিনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে না- করতে পারে না। এত সুন্দর ইস্যুকে মরে যেতে দেয়ার মতো বোকা বা অনভিজ্ঞ দল আওয়ামিলীগ নয়”। নিন্দুকের কথায় কান দেয়ার কোন দরকার নেই। দৈর্য ধারণ করাই শ্রেয়- কেননা সবুরে মেওয়া ফলে। আরে, ৩৮ বছর ধৈর্য ধরতে পারলে আরো ২০-৩০ টা বছর কেন পারবো না? সবে তো একটা বছরও গেল না- আরো চারটি বছর পড়েই আছে। বিচার নিশ্চয়ই করবে আওয়ামিলীগ। এবার না হলে এর পরে যখন আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসবে সেবার নিশ্চয়ই করবে- তা না হলে- তার পরের বার, বা তারও পরের বার…., যুদ্ধপারাধের বিচার আওয়ামিলীগই করবে- করবেই, সবাই বলুন ইনশাল্লাহ।
এসব বিচার-টিচার বাদ দেন, এবার দেশের কি অবস্থা সেদিকে দৃষ্টি দেই:
ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের এবার দারুন পারফর্মেন্স। দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি সবকিছুতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা পর্যন্ত সমালোচনামুখর হয়েছিলেন। এই তো মেলা- কত উদার প্রধানমন্ত্রী! উদার না হলে কি আর কেউ নিজেদের সোনার ছেলেদের বিরুদ্ধে বলে! ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামিলীগ-আরো নানা লীগ আর বঙ্গবন্ধু অমুক/তমুক পরিষদ- সবাই উঠে পড়ে লেগেছে- দখলদারিত্ব- সন্ত্রাস- টেণ্ডারবাজি-চাঁদাবাজিতে। সাংসদ, সাংসদ পুত্র, মেয়র- মন্ত্রী, সবাই। ক্যাম্পাস-হল, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে শিপ ইয়ার্ড এমনকি পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত দখলের নাম থেকে মুক্ত নয়। মেয়র পর্যন্ত টেন্ডারবাজিতে জড়িত। গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। অবশ্য আরেকটা খবরও প্রচারিত হয়েছে- সেটা হলো এই সরকার এসে শুরুতেই দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, অবশ্য নিন্দুকেরা বলে দখল মুক্ত না করলে লীগের সোনার ছেলেরা দখল করবে কি করে? যাক, এসব আর নতুন কি? সবসময়ই হয়, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলেও ছাত্রদল-যুবদল-শিবিরেরা করেছে, তার আগেও এসব হয়েছে- তার আগেও হয়েছে। ফলে- এসব হবে- এটাই স্বাভাবিক। এসব নিয়ে বলার তেমন কিছু নেই।
তারচেয়ে চলুন দেখি- আওয়ামিলীগ কেমন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছে। আওয়ামিলীগের স্বপ্ন – সন্ত্রাসমুক্ত বাংলা গড়া। আর, সে স্বপ্ন পূরণে র্যাবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দুর্ধর্ষ সব সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার জন্য র্যাব বাহিনী দারুন এ্যাকটিভ। র্যাপিড একশন ব্যাটিলিয়ন। নামেই পরিচয়। যতসব জঘন্য অপরাধের হোতা, মূর্তিমান আতংক ও বিভীষিকা, অসংখ্য মামলার আসামি- এসব সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে পারলেই তো দেশে শান্তির বন্যা বইবে, দেশ উন্নতির পথে দশধাপ এগুবে। এরা তো দেশের দুষ্ট ক্ষত- এগুলোকে কেটে ফেলে দেয়া দরকার। ফলে- ফেল মেরে। “ক্রসফায়ার”। “বন্দুকযুদ্ধ”, “এনকাউন্টার”। এদেরকে ধরার পরে- বা গ্রেফতারের পরে এরা কিভাবে ক্রসফায়ারে নিহত হয়- এ প্রশ্নের জবাব পাচ্ছেন না? আরে বোকা, উত্তরটা তো খুবই সোজা। র্যাব তো একটা সন্ত্রাসী পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না- সে চায় সন্ত্রাসের রুটটাই উৎপাটন করতে। ফলে- যাকে ধরে তাকে নিয়ে বের হয় তার সহযোগিদের ধরতে- এমন সময়ই তো সন্ত্রাসী ব্যাটা র্যাবের হাত থেকে পালাতে গিয়ে ক্রসফায়ারে অথবা, পালিয়ে গিয়ে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মারা যায়। সোজা হিসাব। আর, সবচেয়ে বড় কথা- এদের তো মরাই উচিৎ। আওয়ামি মন্ত্রী, আওয়ামি সাংসদ তো যথার্থই বলেছেন- ক্রসফায়ারের দরকার আছে- এসব সন্ত্রাসীদের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিচার সম্ভব নয়, কেউ সাক্ষী পর্যন্ত দিতে চায় না। বোকার মত আবার প্রশ্ন করে বসেন না যে, সাক্ষী দিতে না চাওয়ার মতো ভয়ের পরিবেশ কেন বিরাজ করছে। কেননা, সকলেই জানে- এই ভয়ের পরিবেশ কাটানোর জন্যই তো ক্রসফায়ার প্রয়োজন। আর, ভুলক্রমে দুএকজন নিরীহ লোকের ক্রসফায়ারে প্রাণ দেয়ার ঘটনার জন্য র্যাব এবং সরকার উভয়ই আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ভুল হয়ে গেলে আর কিই বা করার আছে!
জ্বালানি নিরাপত্তা দরকার। বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়, ঘন ঘন লোডশেডিং এ জনজীবন বিপর্যস্ত। ফলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেজন্য দরকার গ্যাস। শিল্প-কারখানার জন্য দরকার গ্যাস। সারের জন্য দরকার গ্যাস। গ্যাসের অভাবে সারকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। সুতরাং আওয়ামিলীগ সরকার এ বিষয়ে খুব সচেস্ট। বিগত মিলিটারি তত্তাবধায়ক সরকারের আমলেই মডেল পিএসসি ২০০৮ করা হয়েছিল- দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। সে আলোকে সরকার অফশোর গ্যাসব্লক ৫, ১০, ১১ টাল্লো ও কনোকো ফিলিপসের হাতে তুলে দেয়ার আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলেছে।
:গ্যাস সংকটের কথা বলে আবার রপ্তানীর অপশন কেন রাখা?
:সহজ জবাব, রপ্তানি তো করা তো থার্ড অপশন- প্রথমত পেট্রোবাংলাই তো গ্যাস কেনার জন্য প্রথম দাবিদার, ফলে পেট্রোবাংলাই সব গ্যাস কিনতে পারবে।
:পেট্রোবাংলাই যদি সব গ্যাস পায়ই- তবে রপ্তানির অপশন কেন রাখা?
:রপ্তানির কথা না থাকলে বিদেশি কোম্পানি এখানে গ্যাস তুলতে আসতো না।
:তেমনই যদি হয়- তবে কি বলা যায় না এরা রপ্তানির জন্যই আসছে। সুতরাং গ্যাস রপ্তানি হবেই। বাংলাদেশের চাহিদার বেশি গ্যাস তুললেই সেক্ষেত্রে গ্যাস রপ্তানি করতে পারবে না কি?
নিন্দুকেরা নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়। এরা নানা কথা বলে। এরা গ্যাস উত্তোলন চায় না বলেই এরা বাধা দিচ্ছে- এসব প্রশ্ন করছে, এরা আসলে দেশের উন্নয়ন চায় না। সুতরাং- এদের সবকথার জবাব দেয়ার দরকার নেই, গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই- সরাকারের কাজ সরকার করবেই। সেকারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন: যেকোন মূল্যেই গ্যাস তুলবোই। জয়তু শেখ হাসিনা। এই না হলে বাপ কা বেটি!
আরো কত কি আছে! ভারত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে এমন সহযোগিতাটা করলো। ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্র না থাকলে- মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আওয়ামিলীগের এত এত গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কোথায় গিয়ে কাটাতো? কি করতো? ফলে- আমাদের এর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকলে কি হয়? খালি খালি লোকে টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে চিল্লাফাল্লা করছে! আরে, ভারতের এই হাইড্রো প্রজেক্টের মাধ্যমে কত কত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে- সেখান থেকে বন্ধু ভারত বাংলাদেশকেও কিছু দিতে পারে- আর, বাংলাদেশের কিছু লোকজন গাড়লের মত এসবের বিরোধিতা করছে! বাংলাদেশের নানা ক্ষতির ফিরিস্তি আনছে- আরে কি ক্ষতি হবে? ফারাক্কা আর এটা কি এক হলো? সবচেয়ে বড় কথা- ভারত কি এমন কাজ করতে পারে- যাতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হয়! ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিজে এসে এ কথা বলে গেছেন। আর, শেষ পর্যন্ত যদি ক্ষতি হয়েই যায়- তখন তো আওয়ামিলীগ সরকার আছেই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত মুশকিল আশান করে দিবে। ফারাক্কার পানি চুক্তি করতে পারলে- নিশ্চয়ই টিপাইমুখ নিয়েও ভবিষ্যতে এমন দশটা চুক্তি করতে পারবে ইনশাল্লাহ। কেবল তার জন্য দরকার- ভারত বিদ্বেষী বিএনপির বদলে আওয়ামিলীগকে বেশী বেশী করে ভোট দেয়া।
এরপরে আসুন টিফা চুক্তিতে। গোটা দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকার সাথে বানিজ্য সম্পর্কের উদ্দেশ্যে টিফা চুক্তি করতে পারা বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয়ই বটে। সেই ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র টিফা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয়, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার স্বাক্ষরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঐকমত্যে উপনীতও হয়, বেশ কয়েকদফা মার্কিন কর্তাব্যক্তিদের আলোচনাও হয়, ২০০৫ সালে জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি বিষয় যুক্ত টিফার আরেকটি খসড়া বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, ফেব্রূয়ারিতে দুদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে টিফা চুক্তির খসড়া (১৯ টি প্রস্তাবনা ও ৭টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত) চুড়ান্ত হয়। কিন্তু জনগণ-বাম প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর আন্দোলন ও ব্যপক প্রতিক্রিয়া, এমনকি ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দরও বিরোধিতায় বিগত সরকার আর সাহস পায়নি অগ্রসর হতে। কিন্তু আওয়ামিলীগ সরকার তো আর বিএনপি’র মতো নড়বড়ে না যে মুক্তাঙ্গন-শহীদ মিনারে দুটো মিছিল হলেই ভয় পাবে, ভয় পেয়ে মার্কিন ওস্তাদদের মনে দুঃখ দিবে। ফলে- এবার ক্ষমতায় এসেই তড়িঘড়ি করে টিফা চুক্তি করার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির সাথে বানিজ্য মন্ত্রী ও সচিবের সফল বৈঠক, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড বাউচারের বাংলাদেশ সফর এবং সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর মার্কিন সহকারী বানিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল জে ডিলানির বাংলাদেশ সফর- সবকিছুর মূলে এই টিফা চুক্তি; যে চুক্তি সম্পাদনের অগ্রগতি সম্পর্কে মরিয়ার্টির বক্তব্য: সবকিছুই সম্পন্ন- কেবল মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে- আমাদের বানিজ্য সচিবের বক্তব্য: এটা নিয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, আর বানিজ্য মন্ত্রী তারো (পরীক্ষা-নিরীক্ষারও) আগে এই চুক্তির স্বপক্ষে তার ও সরকারের জোরালো অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। এই না হলে আবার বানিজ্য মন্ত্রী! আর, শুরু থেকেই চুক্তির ব্যাপারে আওয়ামিলীগ খুবই সফলতার সাথে গোপনীয়তা বজায় রাখতে পেরেছে। এবারের চুক্তিতে কি কি থাকছে- যুক্তরাষ্ট্র আর কি কি চাপিয়েছে- তার জানার কোন উপায় নেই। উপায় নেই তো কি হয়েছে- যারা জানার তারা তো জানেই, বাকিদের জানার দরকারই বা কি? আমেরিকার সাথে আমাদের বানিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে এতেই আমাদের গর্বিত হওয়া উচিৎ। আমরা গর্বিত, আমরা আনন্দিত।
আরো আছে রে ভাই। দিন বদলের গল্প এতো তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়? আনন্দের অনেক আছে বাকি। এশিয়ান হাইওয়ের কথাটা শুনেন এবারে। বাংলাদেশ এবারে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে যাচ্ছে। কি মজা, কি মজা। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে এশিয়াজুড়ে ভ্রমণ করা যাবে- বানিজ্যের পথও অবাধ হবে, পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে। বাহ বাহ- কি সুন্দর। কে বলে এটা ভারতের করিডোর, কে বলে এর মাধ্যমে কেবল ভারতকে ট্রানজিট তুলে দেয়া হচ্ছে? ভাইসব- যারা এগুলো বলে তারা তো ভারত বিদ্বেষী, তারা দেশের উন্নয়ন চায় না, তারা দেশের শত্রু। হু হু, তারা দেশের শত্রু। সরাসরি মায়ানমারের রুটটি প্রস্তাবনায় না থাকলেই বা কি হয়েছে- ভারতের সেভেন সিস্টারস হয়ে ঘুরে ঠিকই মায়ানমার যাওয়া যাবে- সব জায়গায় যাওয়া যাবে। ভারত তো আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র – ফলে চিন্তা কি? আমাদের এখানে বড় বড় রাস্তা হবে- ঘাট হবে, ব্রিজ-কালভার্ট হবে, অনেক উন্নয়ন হবে, দেশ বিদেশের পণ্য এখানে আসবে- বাইরে যাবে; আহা! কতই না উন্নয়ন হবে! আমাদের রপ্তানি বানিজ্য না বাড়ুক- আমদানি বানিজ্যতো নিশ্চিত অনেক বাড়বেই। মেলা উন্নয়ন হবে। আরে, বাচ্চালোক- তালিয়া বাজাও- জোরসে তালিয়া বাজও!
দিন বদলের গান তো শেষ হবার নয়। আরো আরো আছে। অনেক আছে, আরে এগুলো তো মোটে শুরু। সোনার বাংলা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কত বলবো? ভারতের সাথে বিপা চুক্তির কথা শুনবেন? হ্যা- এটা একটা বানিজ্য চুক্তি। রাশিয়ার সাথে নিউক্লিয়ার পাওয়ার নিয়ে চুক্তির কথা? হ্যা হ্যা- নিউক্লিয়ার চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসবে- বিদ্যুৎ সমস্যা আর থাকবে না- বিদ্যুতের উপর বাংলাদেশ ভাসতে থাকবে, বাংলাদেশও একদিন পরাশক্তি হয়ে যাবে, ডিজিটাল এটম বোমও তৈরি করে ফেলতে পারে! দুর্ঘটনার ঝুকি? বর্জ্যের সমস্যা? প্ল্যান্ট বসানোর হিউজ খরচ? এগুলো কোন ব্যাপারই না। ডিজিটাল আওয়ামিলীগ সরকার আছে না! ডিজিটালি সব মুশকিল আশান করে ফেলবে।
আরে ভাই, আরো আছে। স্বাস্থ্যনীতি-শিক্ষানীতি হচ্ছে। মজুরি কমিশন না হলেও পে কমিশন হয়েছে। খসড়া নীতিগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, শুধু তাই নয়- জনগণের মতামত আহবান করা হয়েছে। এই না হলে গণতন্ত্র! আরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপধাটিটা কি ভুলে গিয়েছেন? গণতন্ত্রের মানসকন্যা। শিক্ষানীতির খসড়ায় শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব সরকারের বদলে ছাত্রছাত্রীদের ও তাদের পরিবারের ঘাড়ে চাপানোর কথা আছে, অভিভাবকদের স্বচ্ছলতার মাধ্যমে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে, বেসরকারী বিদ্যালয় স্থাপনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তো কি হয়েছে? অভিভাবকদের টাকা থাকলে সেটা ব্যয় করবে না? গরীবদের ব্যাপারে তো সরকার দেখবেই। সমস্ত ধারার (কিন্ডারগার্টেন- মাদ্রাসা-বাংলা মিডিয়াম- ইংলিশ মিডিয়াম- সরকারী- বেসরাকারী… ইত্যাদি) শিক্ষাব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রাখা হলেও চিন্তা নেই- সায়েন্স-আর্টস-কমার্স এসব ভাগ তুলে দিয়ে শিক্ষাকে একমুখী করা হবে। বাহ বাহ সাধু সাধু। একমুখী করাটাই বড় কথা, তা সে যেভাবেই হোক। শিক্ষাব্যবস্থা হবে সেক্যুলার। কেমন সেক্যুলার? “মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সকল ধর্মের শিশুদেরকে ধর্মীয়জ্ঞান, অক্ষরজ্ঞানসহ আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসাবে গণ্য করা হবে”। প্রাথমিক পর্যায়েরও আগে- শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা- নৈতিক শিক্ষা? মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডায়? উপাসানলয়ে? এর নাম সেক্যুলার শিক্ষা? এমন যারা প্রশ্ন করছেন- বা অবাক হচ্ছেন- তাদের জ্ঞাতার্থে বলতেই হচ্ছে- ভাই খালি খালি বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। জানেন- এই খসড়াটা কারা প্রণয়ন করেছেন? জাফর ইকবাল স্যারের নাম শুনেছেন? কবীর চৌধুরীকে চেনেন? ধর্মান্ধ জামাতেরা তো এখনই এই শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি করেছে কেন জানেন? তারা বলছে- নাস্তিকদের শিক্ষানীতি মানি না। আর, আপনারা বলছেন- এটা সেক্যুলার না! আলবত এটা সেক্যুলার। এটা সম্পূর্ণটাই ইহজাগতিক। কেননা- এই ইহজগতেই তো জামাতেরা- ধর্মান্ধরা বসবাস করে। তাদের কথাও তো ভাবতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষার কথা- ধর্মীয় শিক্ষার কথা তো তাই রাখতে হবে।
আর কত বলবো? দিন বদলের তো কেবল শুরু। মাত্র আট মাসের তালিকাই দেখুন কত বড় (তদুপরি এটা একটা আংশিক/অসম্পূর্ণ তালিকা মাত্র), বছর পেরুলে- এবারের মেয়াদ পেরুলে- ২০২০ সাল পর্যন্ত লক্ষমাত্রার মেয়াদ পেরুলে- এই বাংলাদেশের কেমন চেহারা হবে একটু কল্পনা করুন! আজ অনেক হয়েছে- সামনে তো অনেক সময় আছেই- আবার না আরেকদিন আরো অনেক গান শোনানো যাবে- দিন বদলের গান। আজ এ পর্যন্তই থাক। শেষ করার আগে- যারা এত কথা পড়তে পড়তে বোর হয়েছেন- তাদের জন্য আরেকটি কমেডি শুনিয়ে শেষ করছি।
ঘোষক আর জনক নিয়ে কত যে চায়ের টেবিল গরম হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এটা আওয়ামিলীগের ভালোই জানা। তো এবার ক্ষমতায় এসেই ভাবলো, জনকের পাল্টা ওরা ঘোষক বলবে- এটা তো হতে দেয়া যায় না! সুতরাং- আদালতের রায়: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই স্বাধীনতার ঘোষক। জাতির জনকের, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতার স্বাধীনতার ঘোষক হওয়ার কি দরকার সেটা বোধগম্য না হওয়ায় একটু একটু হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু এক বন্ধু তার এক ভাগনের গল্প শোনাতে সবকিছুর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ধরতে পেরে প্রাণ খুলে হেসেছিলাম।
ভাগ্নেটি তখন কথা শিখছে, দুই/তিন শব্দে বাক্যও তৈরি করতে পারে। বন্ধুর বোনটি মানে ভাগ্নের মা- বাচ্চাটিকে আদর করে করে- অনেক কিছু বাচ্চাটিকে বলতো, বাচ্চাটিও তাতে রেসপন্স করতো: যেমন মা বলতো তুমি রাজকুমার, বাচ্চা: আমি রাজকুমার? মা: হ্যা। মা: তুমি আমার মানিক সোনা, বাচ্চা: আমি মানিক সোনা? মা: হ্যা। মা: তুমি …ইত্যাদি। তো, বন্ধুটি একদিন বাচ্চার সামনেই কাজের ছেলেটিকে বকা দিয়েছিল: তুই একটা ফাজিল। সাথে সাথে বাচ্চার প্রশ্ন: আমি ফাজিল? মামা: না মামা, তুমি না- এ হচ্ছে ফাজিল। কিন্তু ভাগ্নেটি কোনমতেই রাজী হয় না- তার একটা দাবি: না, আমি ফাজিল। যতই মামা বলে তুমি না- ততই ভাগ্নের জেদ বাড়ে। শেষে জোরে জোরে কান্না শুনে আদালত অর্থাৎ মাকে রায় দিতেই হয়: হ্যা বাবা- তুমি ফাজিল।
সবাইকে ধন্যবাদ।
যতদিন এ পুজিঁবাদী ব্যবস্থা থাকবে এই সমস্যা থাকবেই…..পুজিঁর জন্য পুজিঁপতিরা সবই করতে রাজী…আর সরকার চালায় তো এরাই তাই এই ব্যবস্থায় ভাল কিছু আশা করা বৃথাই বটে….. :-Y
মাননীয় এ ড মিন বিজ য় লে আউ টে সমস্যা হ চ্ছে কে ন ? বল বে ন কি ? প্লিজ …
ত কেই বিকাশ ! আ রো তক হো ক !
কিছুদিন আগে ভেনিজুয়েলা সংসদে নতুন শিক্ষা আইন পাশ হয়েছে (শিক্ষানীতি নয়, শিক্ষা আইন)। আসুন দেখা যাক- সেই শিক্ষা আইনে “সেক্যুলার শিক্ষা” সম্পর্কিত আইনের ধারাটি কিরুপ রাখা হয়েছে:
আজকে যে ভেনিজুয়েলা “preserving its independence from all currents and religious organizations” এর কথা বলছে- সেটা মোটেই শ্যাভেজের আবিস্কার নয়। আরো প্রায় দুশো বছর আগে- আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিলো- রাষ্ট্র তার সমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সম্পর্ক ছিন্ন করবে। মধ্যযুগে চার্চের যে সর্বগ্রাসী ভূমিকা ছিল- সেখান থেকে চার্চের বিরুদ্ধে ফাইট করতে করতেই এই আধুনিক জাতি রাষ্ট্রের ধারণার উৎপত্তি। সেক্যুলারিজম বা ইহজাগতিকতার ধারণাটি ও দাবিটি তখনই উচ্চারিত হয়। সেক্যুলারিজম মানে সব ধর্মকে প্রোমোট করা নয়- সেক্যুলারিজম মানে রাষ্ট্রের প্রতিটি কাজকে একান্তই লৌকিক জায়গা থেকে দেখা ও বিচার করা এবং সে উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্র থেকে চার্চের তথা যাবতীয় ধর্মীয় সংগঠনের স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটানো।
বাংলাদেশেও আজকে সেক্যুলারিজমের চর্চা বা এ সংক্রান্ত কথাবার্তার ক্ষেত্রেও আমাদের এই বিষয়গুলো ভুললে কখনো চলবে না। আমাদের এই শিক্ষানীতিতে- প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হওয়ার কথা প্রস্তাব করার মাধ্যমে এই শিক্ষানীতিকে সেক্যুলারিজমের একশ হাত দূরে সরানো হয়েছে। কেননা- এটাতো সেক্যুলারিজমের মূল দর্শন, আসল স্পিরিটেরই পুরো উল্টো। বাকি বিষয়গুলো আছেই।
জনাব নাস্তিকের ধর্মকথা,
বুঝতে ভুল হচ্ছে মনে হয়। আমি নিশ্চই সব পরিবারের দায়িত্ত্ব নিই নি। বাংলাদেশে আমরা শতকরা ৩০ ভাগ শিক্ষিত মানুষ আছি। এই শতকরা ৩০ ভাগ মানুষের পক্ষেই কি সম্ভব তাদের পরিবারের উপরে নিয়ন্ত্রন আরোপ করা? অন্য পরিবার তো বাদ। সম্ভবনয়। তবে এই ৩০ ভাগের একটি ক্ষুদ্র আংশের পক্ষে সম্ভব স্ব স্ব পরিবারে প্রভাব বিস্তার করা। এবং এর একটি বিস্তৃতি ঘটানো সম্ভব যদি সমাজে এই প্রগতিশীলদের প্রভাব বলয় ক্রমান্বয়ে বাড়ানো যায়। কি করতে হবে সেজন্যে? একটি সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পচন ধরেছে, কেটে ফেলতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু তাতে ক্যন্সারে টার্ন নেবার সম্ভাবনা থেকে যায়। আমি বাড়তে না দিয়ে কন্ট্রোলে রাখতে চাই। পাশাপাশি আ্যন্টিবায়োটিক মানে পরিশিলিত শিক্ষানীতি, ডোজ হিসেব করে করে। প্রথমে সহনীয় অতঃপর চরম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। দেখুন আমিতো বিশ্বাস করি যে, দেশে যে ক’জন স্বল্প সংখ্যক প্রথিতযশা গুনীজন আছেন তাঁদের একটি প্রভাব কম-বেশী মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে কিছুনা কিছু মাত্রায় পড়ছে। প্রথমেই ধরুন মুক্ত-মনার কথা, এখান থেকে যে তরুণ কিংবা তরুণী একটি আইডিয়া তুলে নিচ্ছে এবং পারিবারিক ভাবে শেয়ার করছে, যেটা অন্যদের চিন্তার খোড়াকে পরিনত হচ্ছে সহজে। সংখ্যায় নগন্য তবে এর বিসতৃতি ঘটছে। সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক আনিসুল হক, অধ্যাপক অজয় রায়, অধ্যাপক কবির চৌধুরী, সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী এঁনাদের একটা প্রভাব সমাজে রাষ্ট্রে আছে। যাঁরা গত হয়েছেন তাঁদের কথা বাদই দিলাম। এবং এ পভাব আনেক ক্ষেত্রেই পরিবার পর্যন্ত বিসতৃত। অর্থাৎ পারিবারিক অবষ্থানের মানুষ গুলোকে, তাদের মর্মকে পর্যন্ত নাড়া দেন। আজ যে বাড়িতে ধর্মীয় শিক্ষার নামে স্বধর্মকে শ্রেষ্ঠপ্রতিপন্ন করতে গিয়ে অন্যধর্মাবলম্ভীদের প্রতি হিংসে এবং বিদ্বেস ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটি নিয়ন্ত্রিত হবে। সচেতনতা তাকে সজাগ করবে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এর জন্যে চাই একটি পরিবেশ। আজ যেটি নেই। আপনি যেটা চান আমিও তাই চাই। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে যে আপনার চরম চাওয়াটি আপনি এখনি চান। আমিও। পার্থক্যহলো, আমি পূর্বাপর বিবেচনা, দেশ, পরিস্থিতি, অবকাঠামো, সামাজিক নৈকট্য, পারষ্পরিক আস্থা, শিক্ষা-দীক্ষা এসব বিবেচনায় বলছি, গাছের আগাই আমার টার্গেট তবে মগডালে আগে চড়বো তারপরে বিবেচনা করবো এর উপড়ের ডালে উঠবো কিকরে। তখন আমাকে আবার তখনকার পরিষ্থিতি যাচাই সাপেক্ষেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সমাজের অধিকাংশ মানুষ ধার্মিক হওয়ার পরেও রাষ্ট্র সেকুলার হতে পারে। কিন্তু আমিতো মনে করিনা যে মানুষ ধার্মীক। অধিকাংশই ধর্মান্ধ আর কিছু সংখ্যক শয়তান! সেখানে রাষ্ট্রের সেকুলার চরিত্র! তালগাছের উপড়ে হাঁড়ি চাপিয়ে নীচে মোম জ্বালিয়ে ভাত রান্না করার মতো আরকি! বর্তমানের প্রেক্ষাপটে সেকুলার রাষ্ট্রই যদি সম্ভব তবে সংবিধানের কপালে বিসমিল্লাহ লিখে রেখেছেন কেনো? নামিয়ে আনুন না দেখুন কতটা সহজ! এই সংবিধান আক্ষুন্ন রেখে আপনি আশা করতে পারেন দাবীকরতে পারেন এখনি সেকুলার শিক্ষানীতি, আমি করিনা।
আমি কিন্তু পরিবারে ধর্মচর্চা, ব্যক্তি বিশেষের ধর্মচর্চায় প্রতিবন্ধকতার কথা বলিনি। ধর্মীয় শিক্ষা আর ধর্মচার্চা এ দুয়ের মাঝে আমার সঙ্গায় পার্থক্য আছে। আমি যখন কারো কাছে গনিত শিখি তখন যিনি শেখান, তিনি কিভাবে শেখালেন তা শিখি। তিনি পঠনের কোন অংশে জোড় দিলেন তা শিখি। আর শিক্ষন কে কি ভাবে ব্যবহার করবো, তিনি যেভাবে করলেন তা শিখি। আর আমি যখন গনিত চর্চা করি তখন সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করি, পদ্ধতি কি কি আছে দেখি, কোন টি সহজ যুক্তিগ্রাহ্য বের করি, তারপড়ে চর্চিত বিষয়কে কিকরে কল্যানকর ভাবে ব্যবহার করা যায় তা দেখি এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করি। একটি অপরের দ্বারা প্ররোচিত আর অন্যটি নিজের যুক্তিগ্রাহ্য মননে বিদ্ধ। তাই ধর্মীয় শিক্ষায় আমার আপত্তি চর্চায় নয়। তাই আমি বলেছি, পরিবারেও নয় প্রতিষ্ঠানেও নয়। পরিনত মানুষ তার নিজস্ব বোধ এবং প্রঞ্জাতাড়িত হয়েই ধর্ম চর্চা করবেন তাঁর পরিনত অবস্থানে কিংবা জীবনে।
আর সমস্ত ধরনের কুপমন্ডুকতার অবসান রাষ্ট্র কিংবা পরিবার থেকে নয়, ব্যক্তিগত উৎকর্ষতার মধ্যদিয়ে, মনন দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন চর্চা দিয়ে। রাষ্ট্র কিংবা পরিবার এখানে সহায়ক হতে পারে মাত্র।
আর রাষ্ট্র যদি গনতান্ত্রিক হয় তবে তো আপনাকে আমাকে এতো পরিশ্রম করে লেখালিখি না করলেও মনে হয় চলতো। ৭৫ সালে গনতন্ত্রের লাশের উপরে স্বৈরতান্ত্রিকতার সৌধ নির্মিত হয়েছে । সেই সৌধইতো এখনো ধ্বংস করা যায়নি। স্বৈরতন্ত্রের হৃষ্ট গতরের উপড়ে গনতন্ত্রের চাদর চড়িয়ে চলছি! দেখা যাক কবে গনতন্ত্রের সুবাতাস বয়। আমারতো মনে হয় যতক্ষন না সামরিক তন্ত্রের ছাঁয়া রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের ওপড় থেকে সরে না যাচ্ছে ততক্ষন চাতকের মতোই আমাদের অপেকক্ষা করতে হবে।
উপড়ে মোট ৪৩ টি মন্তব্য আছে। আমি সব গুলো একাধিকবার পড়েই আমার কথাটি বলেছিলাম। আপনি নিজেই সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেন।
আর শেষে এসে আমার ধর্মতত্ত্ব গুলিয়ে ফেরা সম্পর্কে যা বলেছেন, কি জানি হয়তো গুলিয়ে ফেলেছি আপনার দৃষ্টিতে। তবে আমার বোধ টি আমি তুলে ধরেছি ধর্মচর্চা বলতে আমি কি বুঝি সেখানে। আমি জীবনের সব ক্ষেত্রহতেই ধর্মশিক্ষাকে বাতিল করার পক্ষে ঐ একই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। তবে ব্যক্তি প্রঞ্জাবান হলে তিনি ধর্মচার্চা যেকোন সময়েই করতে পারেন। আমার তাতে কোন বিরোধ নেই। আমি মোটেও ভাবতে পারিনা যে ধর্ম-বিঞ্জান পাশাপাশি পড়লেই মানুষ বিঞ্জান মনষ্ক হয়ে উঠবে। আজকাল তো পড়ছে নমুনা তো তার দেখতেই পাচ্ছি। তবে হ্যাঁ, বর্তমানের প্রচলিত ধর্ম-শিক্ষাকে যদি বহাল রাখতেই হয় তবে সব গুলো ধর্মীয় শিক্ষার একটি সাধারন শিক্ষন এবং পরিবিক্ষন নীতিমালা তৈরী করতে হবে। এবং তার আলোকেই কেবল সম্ভব একটি আপাতঃ চলনসই পদ্ধতি, অনেকটা ডঃ বিপ্লব পাল রেমনটি বলেছেন ওরকম, যা আমাদের এগিয়ে নেবে বেশ খানিকটা আশা করা যায়।
আমার মতে ধর্মীয় শিক্ষা দানের আসলে আদৌ কোন প্রয়োজন নেই জীবনের কোন স্তরেই। এটি একটি ভাববাদী দর্শন। এর অনেক প্রবক্তা আছেন। এই প্রবক্তা গনের যিনি, যার দুর্বল মনে স্হান করে নেবেন সংশ্লিষ্ট প্রবক্তার প্রচারিত দর্শন পক্ষান্তরে তার মনজুড়ে বসে যাবে। মানুষ সচেতন হলে, মনের দুর্বলতা হ্রাস পায়। তখন মানুষ হয়ে পড়ে যুক্তি নির্ভর। সুতরাং, যদি যুক্তিবাদী মনে যুক্তি সাপেক্ষে কোন ধর্মীয় দর্শন জায়গা করেও নিতে পারে আবার মুক্তমনার অনেকের মতো তার কাছ থেকে প্রথ্যাক্ষ্যাতও হতে পারে। অর্থাৎ বিষয়টি আসছে কিন্তু যুক্তির সাপেক্ষে। যখন মানুষ যথেষ্ট ব্যুৎপত্তিশালী, বিবেচক, সুশিক্ষিত, যুক্তিবাদী এবং প্রঞ্জাবান হবেন তখন। এবং এটি সে সঞ্জ্যানে, সুবিবেচনা প্রসূত হয়ে যুক্তির দ্বারা তাড়িত হয়েই কেবল বিবেচনায় নেবেন। এক্ষেত্রেই আমরা সংশ্লিষ্টকে ধার্মীক বলতে পারি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ আশা করতে পারি। এর বাইরে যেকোন অবস্থানে ধর্মীয় শিক্ষা মানে ক্যাপস্যূলে ভরে বিষ পান করানোর সামীল।
জনাব আতিক রাঢ়ী,
যেখানে পরিবার গুলো আমাদের আধুনিক মানুষ গুলোর (গুরুত্ত্ববহ এবং বিবেচনাযোগ্য ব্যক্তিত্ত্ব) সংশ্পর্শে থাকা সত্ত্যেও নিয়ন্ত্রনযোগ্যনয় তখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যে শিক্ষাপ্রশাসন তথা রাষ্ট্রীয় চালিকাশক্তি (সমাজের অসুভশক্তির নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত) কে নিযন্ত্রন করবেন কিকরে এই মুহূর্তে?
উপড়ের আলোচনায় দেখুন ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেবার কথা জোড়ের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছেনা। অর্থাৎ আবচেতন মনেই আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি যে আপাততঃ এর হাত থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণের কোন সম্ভাবনা নেই। আর সেটাই আমি বলতে চেষ্টা করেছিলাম আমার মন্তব্যে। ঐযে বললেন না যে,
আমিওতো তাই বলছি। বলছি যে, পর্যায় ক্রমিক ভাবে উদারনৈতিক যুক্তিনির্ভর সমাজের ভিত্ প্রতিষ্ঠার কথা। যেখানে জনাব নাস্তিকের ধর্মকথা আপত্তি তুলেছিলেন। আমি জনাব বিপ্লব পালকে ঠিক এই জায়গাটিতেই সমর্থন যুগিয়েছিলাম। কিন্তু ধারাবাহিক লেখায় দেখলাম তিনি চিরাচরিত ভাবেই বিঞ্গানের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে চালুর পক্ষে। যেহেতু তিনি ধর্মালয়ে বাল্যশিক্ষা পেয়েছিলেন, ঠিক আমারই মতো। আমার নটরডেম কলেজের আড়াই বছর ওরকম জায়গাতেই কেটেছে। কিন্ত আমার সাথে ওখানে সতের দুগুনে চৌত্রিশ জন ছিলো। বাকী তেত্রিশ জনের চিন্তা ভাবনার সাথে এখনো অবধি আমি আমার সমবোধী কারো সন্ধান পাইনি, যদিও কয়েক জনের সাথে আমার যোগাযোগ নেই।
তাই আমি আপাততঃ পরিস্থিতির সাপেক্ষে সাময়িক ভাবে ধর্মীয় শিক্ষা এবং বিঞ্জান পড়া সমর্থন করি, উৎড়ে যাবার পরে করি না। কারণ তার প্রয়োজনও থাকবে না। যেমন আজকে সূর্যের পৃথিবী প্রদক্ষিনের তত্ত্বের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ফুরিয়ে গেছে সমুদ্র দেবতা, পর্বত দেবতা, অগ্নিদেবতা, কিংবা রোমান দেব-দেবীদের প্রয়োজন, শুধু কালের সাক্ষী হিসেবে মানব সভ্যতার বিকাশের ধারাবাহিকতা জানতে আমাদের তা দরকার হয়।
তাই বলছিলাম যে, বর্তমান শিক্ষানীতিকেই যথা-সম্ভব পরিমার্জন করে সম্ভাব্য বৃহত্তম সার্বজনীনতা (অধিক সংখ্যক উপেক্ষিত এবং বঞ্চিত শিক্ষার্থী সমন্বয়ে) দিয়ে কিকরে কার্যকর করা যায়, তার নিষ্কন্টক পথরেখা তৈরী করা। নীতিটিকে বৈহম্যহীন করা। যথাসম্ভব সাম্প্রদায়ীক চরিত্রের পরিবর্তন করে এর আধুনিকায়ন করা।
@Keshab K. Adhikary,
আপনার এ আলোচনা আমার কাছে অপরিষ্কার হলো না। পরিবারগুলো আধুনিক মানুষের সংস্পর্শে আছে বলতে কি বুঝালেন? এমন কয়টি পরিবার গুরুত্ত্ববহ এবং বিবেচনাযোগ্য ব্যক্তিত্ত্বের সংস্পর্শে আছে? এমন ব্যক্তিত্বের সংখ্যাই বা কত?
ইনডিভিজুয়াল পরিবারের সাথে আমার সরাসরি কোন সম্পর্ক আছে কি? সেটার উপর কতখানি প্রভাব আমি সরাসরি রাখতে পারি? কিন্তু রাষ্ট্রকে যদি গণতান্ত্রিক বলি- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা অনুযায়িই আমি কিন্তু রাষ্ট্রের ব্যপারে ভূমিকা রাখতে পারি। সেই জায়গা থেকেই- রাষ্ট্র, তার সমস্ত নীতি- আইন এসব নিয়ে কথা বলতে পারি- দাবী তুলতে পারি। কিন্তু পরিবার নিয়ে কোন দাবী তুলবো?
সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তিমানুষ ধার্মিক হওয়ার পরেও, অধিকাংশ পরিবারই ধার্মিক হওয়ার পরেও- আমরা রাষ্ট্রের চরিত্র সেক্যুলার হওয়ার কথা বলি- সেক্যুলার বানাতে পারি- সেটা তো এই জায়গা থেকেই- রাষ্ট্র তার সমস্ত কাজে কর্মে নীতিতে ইহজাগতিক থাকবে- সমস্ত মানবকূলের স্বার্থরক্ষাটাই তার মূল উদ্দেশ্য হবে। ধর্ম-বর্ণ-জাতি সবকিছু নির্বিশেষে মানুষ পরিচয়টাই রাষ্ট্রের কাছে মুখ্য হবে। ফলে- সেখান থেকেই এমনটা বলা- ব্যক্তিজীবনে একজন নানা ধর্মের হতে পারে, নানা জাতির হতে পারে, নারী বা পুরুষ হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র তাদের দেখবে মানুষ হিসাবেই- রাষ্ট্রের সমস্ত একটিভিটিজ এই মানুষ পরিচয়ের চেয়ে অন্য কোন পরিচয় তার কাছে মুখ্য হবে না। সেখান থেকেই- রাষ্ট্র যে শিক্ষা দিবে- সেটাকেও সেক্যুলার করার কথা বলা হয়- পরিবারে যেমন শিক্ষাই পাক না কেন, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে আসলে তাকে সেক্যুলার শিক্ষাই দিতে হবে।
আমি ব্যক্তি বা পরিবারকে পরামর্শ বা যুক্তি-তর্কে জানাতে পারি যে- ধর্ম-কর্মের চর্চা বন্ধ করো- কিন্তু জোর করতে বা দাবী জানাতে পারি না; কিন্তু রাষ্ট্রকে আমি এই ধর্ম-কর্মের চর্চা বন্ধ করার দাবী জানাতে পারি- কারণ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা অনুযায়িই সে এটা বন্ধ করতে বাধ্য।
আর, সে কারণেই আমি মনে করি- ব্যক্তি/পরিবার পর্যায়েও সমস্ত কুপমন্ডুকতার বর্জন সম্ভব রাষ্ট্রের মাধ্যমে- সেটা কোনদিনই পরিবার থেকে আসবে না।
ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেয়ার কথা জোরের সাথেই উচ্চারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আপাতত এর থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণ সম্ভব নয়- এটাতে আমি প্রবল আপত্তি জানাই- এই বিবেচনা থেকে কোনদিনই একটা নীতি রচিত পারে না- মোটেও উচিৎ নয়।
আপনি হয়তো গুলিয়ে ফেলেছেন- তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, ধর্মের ইতিহাস-দর্শন শিক্ষা আর ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ভেতরে। ধর্ম অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর বটে- একে আপনার জানতে হবে- জানাতে হবে। ধর্মের ইতিহাস- দর্শন এগুলো না জানলে তো আপনি মানুষকেই জানবেন না! মানুষের বিভিন্ন সময়ের চিন্তার পদ্ধতি কেমন ছিল- কিভাবে ধাপে ধাপে আজকের এই চিন্তা কাঠামোতে এলো- এগুলো না জানলে কি করে হবে? আর, এই আলোচনা না করে- আপনি সমাজে – পরিবারে যে ধর্মের বাতাবরণ আছে- তা থেকে মানুষকে মুক্ত করবেন কি করে?
শ্রদ্ধেয় অভিজিৎ স্যার,
উপর্যুক্ত প্রবন্ধ সম্পর্কে আপনার অভিমত একান্তভাবে কামনা
করছি। আশা করি কিছু অবশ্যই লিখবেন।
@লিয়ন,
প্রথম কথা হল, আমাকে ‘স্যার’ বলে ডাকার দরকার নেই। আমি কোন শিক্ষক নই। তাই শুধু অভিজিৎ বলাই যথেষ্ট এবং যুক্তিযুক্ত।
এবার প্রবন্ধটি সম্বন্ধে মত দেই। আমি আসলে রাজনৈতিক লেখা সস্নেহে এড়িয়ে চলি। এর অনেকগুলো কারণ আছে। না আমি রাজনীতি নিয়ে অসচেতন নই, বরং যথেষ্টই সচেতন। কিন্তু বাংলাদেশে সেই একই আওয়ামী-বিএনপির রাজনীতি দেখে দেখে আমি বীতশ্রদ্ধ। আমি এদের নিয়ে লেখার আগ্রহও পাই না, এবং লেখায় মন্তব্যও করি না। যদিও কেউ লিখলে আমি অন্য সবার মতই গুরুত্ব দিয়ে পড়ি।
আমি মনে করি নাস্তিকের ধর্মকথা সত্যই খুব প্রয়োজনীয় কথা উল্লেখ করেছেন। যে প্রত্যাশা নিয়ে একসময় আওয়ামিলীগ যাত্রা শুরু করেছিলো, তার সিকিভাগও বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর চেতনা বেঁচে আর কতদিন? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে কোন আধুনিকতার ছোঁয়াই আসলে লাগেনি। সেই নেত্রী আর আপা নিয়ে কেরিক্যাচার, আর পদলেহনের পুরোনো মামলা। এগুলো দেখতে দেখতে চোখ পঁচে গ্যাছে।
জাফর ইকবাল বা কবির চৌধুরী দুজনকেই আমি উদার বুদ্ধিজীবী হিসেবে জানি, এবং শ্রদ্ধা করি। জাফর ইকবালের সাথে আমার ইমেলেও অনেকবারই যোগাযোগ হয়েছিল। কিন্তু এই ব্যক্তি সম্পর্কের বাইরে এদের সম্বন্ধে আমার ধারণা নাস্তিকের ধর্মকথার মতই। আমি মনে করি জাফর ইকবাল বা কবির চৌধুরীরা যে ‘স্যেকুলারিজম’ এর চর্চা করেন, সেটা আমার চোখে সেক্যুলারিজম নয়, সেক্যুলারিজমের বিকৃতি। অবশ্য আমাদের এই উপমহাদেশে এই বিকৃতিকেই স্যেকুলারিজম বলে চালানো হয়। এ নিয়ে আমি আগে একটা লেখা লিখেছিলাম, সেটা পড়া যাবে এখানে।
আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার মতামত নিয়ে আপনার আগ্রহের জন্য।
অভিজিৎ’দা
প্রশ্নটি আমার কাছে সেক্যুলারিজমের আভিধানিক অর্থ নিয়ে নয়। আমি মনে করি জাফর ইকবাল বা কবির চৌধুরীরাও সেক্যুলারিজমের আসল মানে জানেন। কিন্তু বাস্তবতার বিচারে আমাদের দেশে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মভীরু সেখানে প্রকৃত সেক্যুলারিজমের স্বপ্ন দেখা বা চিন্তা করা আমার মতে একবারেই ইউটোপিয়।
তাহলে আমরা কি করবো, বসে থাকবো? আমি তো বলবো যদি একজন শিক্ষার্থীকে সবগুলো ধর্ম জানতে দেওয়া হয় তবে সেই শিক্ষার্থী নিজেই ধর্মের অসারতা বুঝতে পারবে। কথা হল এটাও বাস্তবে আসলে সম্ভব কিনা? আমাদের দেশে ধর্ম পড়ান কোন এক হুজুর স্যার। এখন সেই হুজুর স্যার যদি অন্য ধর্ম পড়ান তবে নিশ্চয় সেখানে তিনি অন্য ধর্মকে বিকৃত করে পড়াতে পারেন। আবার ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি যদি ভিন্ন ধর্ম পড়ান কিন্ত সবাই দাবী করেন যে তাদের ধর্মই সেরা তবে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি দ্বিধায় পরে যাবে। আসলে বাস্তবে সব ধর্ম সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো ব্যাপারটিও সহজ নয়।
কিন্তু এটাও মানতে হবে যে একেবারে ধর্ম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোন দলই নিতে পারবে না। পারবে সেই দিন যে দিন মুক্তমনা নিজে একটি দল গঠন করে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে। যদি মুক্তমনার সরকার গঠন একটি অসম্ভব চিন্তা বলে মনে হয় তবে প্রকৃত সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা বা রাষ্ট্রের চিন্তা করাও অসম্ভব।
সমালোচনার জন্য শুধু সমালোচনা করে কোন লাভ নেই। জাফর স্যার বা উনাদের সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে সমালোচনা করতে হবে। ছদ্ম নামের আড়ালে অন্তর্জালে বা বিদেশে বসে অনেক কিছুই বলা সম্ভব কিন্তু দেশে মৌলবাদীদের মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে উনারা যে সেক্যুলার শব্দটি এনেছেন শুধু এ কারণেই আমি তাঁদের সম্মান জানাবো। প্রকৃত সেক্যুলার শিক্ষানীতি বলেননি, তারপরেও কি আন্দোলনের হুমকি বন্ধ আছে?
আমি সবাইকে অনুরোধ করবো বাস্তববাদী হোন। ধর্মের অসারতা আমি বা আপনি বুঝতে পেরেছি বলেই যে সবাই সেটা বুঝে যাবে সহজে, ব্যাপারটি কিন্তু অত সহজ নয়। আমার নিজের বাবা/মা উনারা প্রচন্ড রকমের ধর্ম ভীরু, তাই বলে কি উনারা আমার চোঁখে ধর্মান্ধ। অবশ্যই নয়। উনাদেরকে হাজার যুক্তি দিয়েও ধর্মের বিশ্বাস থেকে সরানো যাবে না। সংস্কৃতি, বিশ্বাস এগুলো জিনের মতই বংশ পরম্পরায় চলে আসে। এটাকে মনে হয় মিম বলে। তাই এক প্রজন্মে হাঠাৎ করেই ধর্ম নামক বিষের মুক্তি নেই। এখন যেখানে পরিবার পর্যায়েই ধর্মকে বাতিল করতে পারছি না সেখানে একেবারে রাষ্ট্রে ধর্মকে বাতিল করে দেওয়ার দাবী জানানো আমার কাছে অপরিণত চিন্তার প্রতিফলন।
বিপ্লব পাল এর জবাব:
==>>এটাই হলো লাখ কথার এক কথা, এই কথাটিই আপনার কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বা আমাদের এখানে কোন মাদ্রাসায় ব্যাপক সহীহভাবে বিজ্ঞান পড়ানো হলে- এসব মাদ্রাসা থেকেও দু একজন মুক্তমান বের হতে পারে ঠিকই- কিন্তু সেটাকেই মানদন্ড ধরে বলতে পারি না যে- এগুলোর ধর্ম শিক্ষা ধর্মান্ধতা কাটাতে সহায়ক।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
ভাই, আসল কথা হলো বাংলাদেশের মানুষই খারাপ। তারা ধর্মান্ধ। কোন সন্দেহ নাই। ধর্মভীরু আর ধর্মান্ধর মধ্যে আমি খুব একটা পার্থক্য দেখি না। জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে কত নাটকই না হচ্ছে। আমরা খুব বড় গলায় বলি ৭১ এ আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম “ধর্মনিরপেক্ষ উদার অসাম্প্রদায়িক” চেতনা নিয়ে। বাঙালী জাতি নাকি অসাম্প্রদায়িক! 😀 হায় রে অসাম্প্রদায়িকতা! এজন্যই কি আমরা বলি যে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ধর্মহীন সেকুলার শিক্ষানীতি চলবেনা? আমরা যে আসলে ভিতরে ভিতরে চরম মুসলমান এবং সাম্প্রদায়িক তাতো সেকুলার শিক্ষানীতির বিরোধীতা করার মাধ্যমেই প্রমান করে দিচ্ছি। ভন্ডামীতে তো গিনেস বুকে আমাদের নাম উঠা উচিৎ। দুর্নীতির পাশাপাশি ভন্ডামিতেও আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবো কোন সন্দেহ নাই!
এদেশের মানুষের রক্ত-মাংস, হাঁড় মজ্জায় মুসলমানিত্ত মিশে আছে! সংস্কার তাদের পরতে পরতে! বাসে উঠে কোন হকার ইসলামি বই বিক্রি করার জন্য ইসলামি লেকচার শুরু করলে আপনারা তার বিরোধিতা করতে পারবেন? পারবেননা। কেউ পারবেনা। কারণ যত যাই বলি না কেন বাংলাদেশের মানুষ এখনো মনে প্রাণে মুসলমান। দরিদ্র, মধ্যবিত্ত কি উচ্চবিত্ত সবখানেই। এমনকি গুলশান বনানীর ভোগবাদি, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসারী শ্রেণীও ধর্মকে ভয় পায়, ধর্মকে শ্রদ্ধা করে। দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনে চূড়ান্ত রকম ধর্মহীন হওয়া সত্বেও তারাও ধর্মের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে তাদেরও কিছু বলার সাহস নাই। ধার্মিক হলে সমাজে হাততালি পাওয়া যায়। মুসলমানিত্তের এই রোগ থেকে আশু মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় আমি দেখছিনা!
@তৃতীয় নয়ন,
“এমনকি গুলশান বনানীর ভোগবাদি, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসারী শ্রেণীও ধর্মকে ভয় পায়, ধর্মকে শ্রদ্ধা করে। দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনে চূড়ান্ত রকম ধর্মহীন হওয়া সত্বেও তারাও ধর্মের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।”
ভাই কথাটা খাঁটি সত্য। আমি নিজে এর ভুক্তভোগী।
আজিব ব্যপার! মুক্তিযুদ্ধের আগের সময়ের ইতিহাস তো বাঙালীকে ধর্মান্ধ বলে স্বীকৃতি দেয় না।মুক্তিযুদ্ধের পরেই বাঙালিরা ধর্মান্ধ হওয়া শুরু করেছে,যেখানে ব্যপার হবার কথা ছিল উল্টো!!
@মুহাইমীন আওয়াজ আওয়াজ আওয়াজ- মানে আমি ১০০% খাটি খুলনার ছেলে। আর জাফর স্যারের প্রতি আমার একটা ব্যাক্তিগত দূর্বলতা আছে। কারন তার ”দুষ্টু ছেলের দল” দিয়েই আমার বই পড়ার হাতে-খড়ি।
ধর্ম শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আনা উচিত নয়। এটা হওয়া উচিত পারিবারিক পর্যায়ে।
প্রথম আলোতে জাফর ইকবাল সাহেবের লেখায় দেখলাম তেনারা প্রস্তাব করেছেন ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে নীচু ক্লাসে শিক্ষা দিতে এমনভাবে যাতে ছেলেপিলে ধর্মের ভাল দিকগুলি শেখে কিন্তু সাম্প্রদায়িক না হয়। বুঝলাম, কিন্তু যেটা বুঝলাম না তাহল তার মানে কি ওনারা সব ধর্মের ছেলেপিলের জন্য একটা কমন ধর্ম বিষয়ক কোর্স অফার করছেন, নাকি যে যেই ধর্মের তাকে শুধু সেই ধর্মের দীক্ষাই দেওয়ার প্রস্তাবনা করছেন?
দুটো পদ্ধুতিতেই সমস্যা আছে। কমন ধর্ম কোর্স প্রনয়ন করলে সেটা কি বাস্তবিকতার বিচারে সম্ভব হবে? একজন ইসলাম ধর্ম শিক্ষক হিন্দু ধর্মের পাঠ খোলামনে দেবেন বলে বিশ্বাস করা যায়? আবার যে যেই ধর্মের তাকে শুধু সেই ধর্মের পাঠ দেওয়া মানে প্রতিটা স্কুলে (অন্তত যে সব স্কুলে সেই সেই ধর্মের ছেলেপিলে আছে) সেই ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক লাগবে। আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের ইসলাম ধর্ম ক্লাসের সময় অন্য ধর্মের ছেলেদের হয় ক্লাসে চুপ করে বসে থাকতে হত নাহয় শিক্ষকদের রুমে গিয়ে এক কোনায় বসে থাকতে হত। পরীক্ষার সময় তাদের নাম খাওয়াস্তে একটা পরীক্ষা হত নিজ ধর্মের উপর যার প্রশ্নকর্তা/পরীক্ষক হতেন বাংলা বা অন্য কোন বিষয়ের শিক্ষক। এ ব্যাবস্থা মোটেও কোন ভাল বন্দোবস্ত নয়।
তবে পারিবারিকভাবে শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা দেওয়া মনে হয় এক অর্থে ভাল যে অন্তত বিদ্যালয়ে চক্ষু লজ্জার খাতিরে হলেও অন্য ধর্মের সব লোকে দোযখে যাবে এই জাতীয় শিক্ষা দেওয়া হবে না বলে আশা করা যায় (বাস্তবে হতে নাও হতে পারে) যা সাধারনত পরিবার থেকে শিক্ষা দেওয়া হয়।
তবে কোন শিক্ষক নিজ ক্লাসে বিজ্ঞানের কোণ প্রতিষ্টিত বিষয় পড়াতে না চাইলে বা নিজে বিশ্বাস না করলে তার উচিত চাকরি ছেড়ে দেওয়া বা অন্তত সেই বিষয় না পড়ানো। এ বিষয়ে আইনও থাকা উচিত। উনি যে বিষয় পড়াবেন বলে বেতন নিচ্ছেন তা পড়িয়ে বলবেন বিশ্বাস করার দরকার নেই এটা কেমন কথা?
বিদ্যালয় থেকে ধর্মশিক্ষা হঠাত করে পুরো ছেটে ফেলার প্রস্তাব মোটেও ভাল হবে না মনে হয়। তাতে আরো হিতে বিপরীত হবে। জোরেশোরে ধর্মীয় জোশ চাগিয়ে তোলা যাবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যেহেতু ধর্মের নামে মোটামুটিভাবে অন্ধ তারা বাস্তবতার নিরিখে ব্যাপারটা দেখবে না। এই সরকারের আরো বদনাম আছে এন্টি ইসলামী হিসেবে।
@আদিল মাহমুদ,
==>>>খসড়া শিক্ষানীতিতে (http://www.moedu.gov.bd/notice/1a255d0c7e71d7281997e373c352b409.pdf) ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা পাওয়া যাবে- পৃষ্ঠা ৩, ৬ (অধ্যায় ২: প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা) এবং পৃষ্ঠা ২২ ও ২৩ (অধ্যায় ৭ : ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা)। (অধ্যায়- ৬: মাদ্রাসা শিক্ষা- এর প্রসঙ্গ টানছি না)
# ৩ নং পৃষ্ঠায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ৪ নং কৌশল হিসাবে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় শিশুদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা, অক্ষরজ্ঞান সহ আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। ==>>> সুতরাং উল্লেখ না থাকলেও এটা ধারণা করা যায় যে- মসজিদে মুসলিম বাচ্চারা যাবে এবং সেখানে ইমাম/হুজুর টাইপের কেউই এই ধর্মীয়/নৈতিক/আধুনিক(!) শিক্ষা প্রদান করবে, মন্দিরে হিন্দু বাচ্চারা যাবে ও কোন পুরোহিত/পন্ডিত তাদের ঐসব শিক্ষা দিবেন।
## ৬ নং পৃষ্ঠায় প্রাথমিক স্তরের “শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবস্তু” নামে অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষা পড়ানো হবে না- তৃতীয় শ্রেণী থেকে এটা শুরু হয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এটা আবশ্যিক বিষয় হিসাবেই পড়ানো হবে। বলা হয়েছে: “তৃতীয় শ্রেণী থেকে মূলত জীবনী ও গল্পভিত্তিক বিভিন্ন ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে”। প্রথম আলোর নিবন্ধে জাফর ইকবাল স্যারও বলেছেন: “শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ধর্ম শিক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীর বাংলাদেশের মূল চারটি ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি ঘটানো”।
==>> আপাতভাবে শুনতে ভালো লাগলেও, এই ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার আসল স্বরূপ অধ্যায় ৭ এ পাওয়া যাবে। সেটাই আগে দেখি।
### ৭ নং অধ্যায় (ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) এ শুরুতেই “উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য” অনুচ্ছেদে আছে: “ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্তীর বাংলাদেশের মূল চারটি ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি, আচরণগত উৎকর্ষসাধন এবং জীবন ও সমাজে নৈতিক মানসিকতা সৃষ্টি ও চরিত্র গঠন। বর্তমানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় বিষয় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে”। ===>> এটুকু পড়লে মনে হয় বর্তমান ব্যবস্থা পাল্টানোর প্রস্তাব হয়তো করতে যাচ্ছে এই শিক্ষানীতি। কিন্তু উপরের দুই বাক্যের পরেই এই শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য সম্পর্কে দুটি পয়েন্টে বলা হয়েছে:
* প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে গতিশীল করে যথাযথ মানসম্পন্ন ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান।
*প্রত্যেক ধর্মে ধর্মীয় মৌল বিষয়সমূহের সাথে নৈতিকতার উপর জোর দেয়া হবে। ধর্মশিক্ষা যাতে শুধু আনুষ্ঠানিক আচার পালনের প্রতি জোর না দিয়ে চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় সেদিকে নজর দেয়া আবশ্যক।
বুঝাই যাচ্ছে- বর্তমানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় বিষয় শিক্ষাদানের যে ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে সেটাকেই কেবল গতিশীল করা হবে- অর্থাৎ, আগের মতই আলাদা আলাদা করেই প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মই পড়বে। এটা আরো পরিষ্কার হবে- এর পরে “কৌশল” অনুচ্ছেদে একে একে ক. ইসলাম ধর্ম শিক্ষা, খ. হিন্দুধর্ম শিক্ষা, গ. বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা, খ্রীস্ট ধর্ম শিক্ষা সম্পর্কে প্রতিটির ৪ টি করে দেয়া পয়েন্টের দিকে তাকালে। অন্য ধর্মের সম্পর্কে জ্ঞানদানের/পরিচিতি ঘটানোর কোন কিছুই তাতে পাওয়া যাবে না। ইসলাম ধর্ম শিক্ষার কৌশল সম্পর্কে কি বলা হয়েছে- সেটা দেখলেই পরিষ্কার হবে:
১। শিক্ষার্থীদের মনে আল্লাহ, রাসুল ও আখিরাতের প্রতি অটল ঈমান ও বিশ্বাস যাতে গড়ে উঠে এবং তাদের শিক্ষা যেন আচার সর্বস্ব না হয়ে তাদের মধ্যে ইসলামের মর্মবানীর যথাযথ উপলব্ধি ঘটায় সেইভাবে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয়া হবে।
২। ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।
৩। কালেমা, নামাজ, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের তাৎপর্য বর্ণনাসহ যথার্থভাবে পঠন পাঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। শিক্ষার্থীর চরিত্রে মহৎ গুণাবলি অর্জন ও তাদের নৈতিক চরিত্র গঠনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয়া হবে।
===>> একইভাবে অন্য তিনটি ধর্মশিক্ষা সম্পর্কেও চারটি করে পয়েন্টে কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে কোনজায়গাতেই অন্য ধর্ম সম্পর্কে পরিচিত করার কথা বলা নাই (যদি থাকতোও- তবু তার দ্বারা কিছু হতো না- কারণ ইসলাম ধর্ম শিক্ষায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে পড়ানো হবে আর শিরক নামক অধ্যায়ে বলা হবে মুর্তি পুজা করলে কোন মাফ নেই- কালেমা তাইয়েবা’র মূল কথাই হচ্ছে- আল্লাহ ভিন্ন কোন মাবুদ নাই; আর, সেটা খুব শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে? হিন্দু ধর্ম শিক্ষায় ইসলাম বা বৌদ্ধ ধর্ম পড়ালে সেটাও যে মিনিং ক্যারি করবে- বুঝাই যায়!!)- সুতরাং, জাফর স্যার প্রথম আলোতে যেটি দাবী করেছেন- সেটা কেবল কথার কথা ছাড়া আর কিছু না বলেই মনে হয়। অর্থাৎ, ৭ নং অধ্যায়ের “উদ্দেশ্য ও লক্ষ” অনুচ্ছেদের প্রথম লাইনের “ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্তীর বাংলাদেশের মূল চারটি ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি, …..”- মানে যে মূল চারটি ধর্মের ছাত্র ছাত্রীরা স্ব স্ব ধর্ম সম্পর্কেই পরিচিত হওয়ার কথাটি বলা হয়েছে- তেমনই বুঝতে হবে।
কমনকোর্স প্রণয়ন করলে- হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে একজন শিক্ষক পড়াতে পারবেন- কোন সমস্যা হওয়ারই কথা নয়। ইসলামের ইতিহাস-দর্শন, বা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস-দর্শন- কিংবা এখানকার প্রাচীণ ও নানাবিধ দর্শন, ইতিহাস- এগুলো পড়ার জন্য কোন ধর্মীয় কামেল ব্যক্তি বা পন্ডিতের দরকার নেই। মানবেন্দ্রনাথ রায় ইসলাম ধর্মের ইতিহাস – দর্শন নিয়ে বই লিখেছেন, রাহুল সাংকৃত্যায়ন ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বই লিখেচেন- এবং এসব বই ধর্ম নির্বিশেষে লোকজন গোগ্রাসে পড়েছেও। উপেন্দ্রকিশোরের ছোটদের রামায়ন- ছোটদের মহাভারত- এগুলো কেবল হিন্দুদের পাঠ্য বা এগুলো পড়ানোর জন্য হিন্দু শিক্ষক দরকার- এমনটাই বা মনে করছেন কেন?
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
অনেক ধণ্যবাদ তথ্যগুলো পয়েন্ট করার জন্য।
এটাকে আসলেই একটা প্রহসন মনে হচ্ছে। নতুন বোতলে পুরনো মদ। কিছু মানূষ দেশ সেক্যুলার রাশিয়া তুরষ্ক হয়ে যাচ্ছে বলে এত আতংক ছড়াচ্ছেন কেন বুঝতে পারছি না।
হিন্দু-মুসলিম ধর্ম একজন শিক্ষক কমন কোর্স হিসেবে পড়াতে পারবেন যদি তিনি নিজে ঐ কোন একটি ধর্মের না হন, বা বিপ্লবের মতানুসারে ধর্ম শিক্ষাকে ধর্ম হিসেবে না ধরে সমাজতত্ত্ব হিসেবে ধরা হয় তবেই। নচেত নয়। নিজে ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এটা প্রচার প্রসার না করে কেউ ধর্মশিক্ষা মেনে নেবেন আমার মনে হয় না।
@আদিল মাহমুদ,
===>> কিছু মানুষ সেক্যুলার সেক্যুলার বলে যে আতংক(!) ছড়াচ্ছে- তার মূল কারণ আগেই বলেছি- পুরো উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে- সেক্যুলারিজম সম্পর্কে একটা নেগেটিভ মনোভাব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে- এই জিনিসটা আসলেই একটা আতংকের জিনিস- সেরকম একটা ভাব মানস গড়ে তুলার জন্যে। সেটাকে বলতে পারেন- তাদের পলিটিক্যল স্ট্যান্ড।
এই জায়গা থেকে তারা চিল্লাফাল্লা করছে- আর শিক্ষানীতির যে অংশগুলো থেকে ধর্ম গেলো ধর্ম গেলো বলে- হাহাকার করছে সেগুলো মোটামুটি তিনটা জায়গা থেকে:
১। ক্লাস নাইন/টেনে ধর্ম শিক্ষাকে আবশ্যিক না করে ঐচ্ছিক (৭/৮ টা থেকে একটা নিতে হবে- ভালো মার্ক তোলার জন্য অন্য ভালো সাবজেক্টও সেখানে আছে) করা হয়েছে। ====>>> এবারের শিক্ষানীতিতে নবম থেকে দ্বাদশকে মাধ্যমিক স্তর করা হয়েছে। ফলে নতুন এই স্তরের প্রথম অর্ধেকে আগে ধর্ম শিক্ষা ছিল, পরের অর্ধেকে (উচ্চ মাধ্যমিকে) ছিলনা। এখন নবম-দ্বাদশ কোথাও থাকবে না বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে আগে যখন ধর্মশিক্ষা ছিলনা- তখন কেউ চিল্লাফাল্লা করেনি। উচ্চ মাধ্যমিক- অনার্স/ডিগ্রী মাস্টার্স আবশ্যিক ধর্মশিক্ষা ছাড়া চলতে পারলে- নবম-দশমও চলতে পারবে।
তাছাড়া, এটার কম্পেনসেশন দেয়া হয়েছে প্রি-প্রাইমারী। তুলনা করলে- আমার কাছে- এটা অধিকতর ক্ষতিকর মনে হয়। বড় হয়ে ধর্মশিক্ষা পড়লে/পড়ালে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম। প্রাথমিক লেভেল ধর্মশিক্ষা নামক কিছু থাকার কোন প্রয়োজনই আমি দেখি না। থাকতে পারে- তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব- তাও সেটা আরো বড় হয়ে। একান্তই রাখতেই যদি হয়- তবে ক্লাস ফাইভের পর থেকে কমন বই করে- বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাস, দর্শন, ধর্মের বড় বড় ব্যক্তিদের জীবনী- এসব গল্পাকারে থাকতে পারে।
২। ভূমিকা, উদ্দেশ্য-লক্ষের কিছু কথা- যেগুলো পরে আর বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ বা কৌশল গ্রহণ করা হয় নি। ====>>> এক আধটা উদাহরণ উপরের কমেন্টে আছে। কিন্তু ওদের সেগুলো দেখার দরকার নেই। অসাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞান মনস্কতা গড়ে তুলার জন্য এই শিক্ষানীতি- এসব কথা কেন বলা হলো- এটাই এখন বড় ইস্যু!!
৩। মাদ্রাসা শিক্ষা! একে যুগোপযোগী করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একটু কঠিনও করা হয়েছে- সাধারণ শিক্ষার আবশ্যিক বিষয়গুলো একই পাঠ্যক্রমে পড়তে হবে + আরবী/কোরআন এসব পড়তে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে ভূমিকা-লক্ষ-উদ্দেশ্যে আরো বেশ কিছু কথা লেখা আছে। =====>> মজার ব্যাপার হচ্ছে- এরকম দাবী অনেক দিন ধরে এখানকার মোল্লাদের একাংশই তুলে আসছিল।
আমার এমনটা মনে হয় না। নিজের ছোট একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।
আমার স্কুলে বাংলার এক হিন্দু স্যার ছিলেন, যিনি যথেস্টই নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন- সবাই তাকে পন্ডিত স্যার নামে চিনতাম ও ডাকতাম (হিন্দু ছাত্রদের হিন্দুশিক্ষার ক্লাসও তিনিই নিতেন)। তো সেই স্যারের ক্লাস নোট খুব বিখ্যাত ছিল- স্ট্যান্ড করা ছেলেরাও বিভিন্ন ক্লাসে তার নোট পড়ে পড়েই বাংলায় ভালো নম্বর তুলতো। আমার কাছেও যথারীতি স্যারের নোট ছিল। এবং মনে পড়ে- কোন এক ক্লাসে ছিল গোলাম মোস্তাফার বিশ্বনবী’র অংশ বিশেষ- আরেক ক্লাসে ছিল সম্ভবত শামসুর রাহমানের আযান নামে একটা কবিতা। স্যারের নোট দেখলে কল্পনা করাই মুশকিল সেগুলো এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর লেখা। বিশ্বনবী সম্পর্কে এমন সব বিশেষণ এত প্রশংসা- আযান নিয়ে এত উচ্ছাস, সেগুলো একজন নিষ্ঠাবান হিন্দুর হাত থেকে বের হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক যে না- সেটা এই অভিজ্ঞতার মধ্য থেকেই বুঝেছি।
আমরা বাংলা ক্লাসে যখন অতীশ দীপংকর সম্পর্কে পড়েছি- তখনও মুসলমানরা বা হিন্দুরা কেউ কল্পনাও করিনি যে, ইনি একজন বৌদ্ধ। আমাদের এ মাটির একজন বিরাট পন্ডিতের কথা ভেবেই আমাদের বুক ফুলেছে। আরেকটি উদাহরণ দেই- কলেজের এক মুসলমান বাংলা শিক্ষক (তিনি নিষ্ঠাবান মুসলিম মোটেও নন, তিনি খুবই সংস্কৃতিমনা ছিলেন- জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্যও ছিলেন)- আমাদের নজরুলের “বিদ্রোহী” কবিতা আবৃত্তি ও সেটাতে ব্যবহৃত মিথগুলো সম্পর্কে বলছিলেন। তিনি বলছিলেন- মহাভারত-রামায়ন আমাদের অমূল্য সাহিত্য, এই মাটির সাহিত্য, এটাকে আমরা হিন্দুদের সম্পত্তি করে দিয়েছি, অথচ এই মহাভারত-রামায়ন না বর্জন করা মানে তো নিজের রুটকেই বর্জন করা! জিউস-হেরদের দেবদেবী হিসাবে পুজা করে কতজনে- অথচ পাশ্চিমে সমস্ত মিথিক্যল ক্যারেক্টারগুলো কেমন ওদের সাহিত্যে স্থান পায়- আর আমাদের সাহিত্যে তারা যেন নির্বাসিত!.. ইত্যাদি। আমি তো বটেই, আমার পাক্কা মুসলিম বন্ধুরাও হা করে স্যারের কথা গিলছিল (এমনকি যেসব বন্ধুদের সাথে দুদিন আগে আস্তিক-নাস্তিক নিয়ে তুমুল ঝগড়া করে ফতোয়া দিয়েছিল আমার সাথে ধ্র্ম নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না- তারাও)।
আপনি মুহম্মদের জীবনী পড়ান, সাথে পড়ান যীশুর, পড়ান গৌতম বুদ্ধের, পড়ান রাধা-কৃষ্ণ বা রাম-সীতার মিথ, বা রাম-রাবনের লড়াইয়ের মিথ, সাথে এদের প্রচারিত ধর্মের দর্শনও পাশাপাশি পড়ান- সাথে আমাদের এখানকার এই ভূমির দর্শনগুলো সম্পর্কে পড়ান- লোকায়তিকদের দর্শন পড়ান, প্রভাকর-ভাট্টদের যুক্তি-তর্ক পড়ান, সবই গল্প আকারে দেখান। এগুলো নিয়ে পরম্পরায় পাঠ্যপুস্তক তৈরি করুন এমনভাবে- ঐসব ব্যক্তিদের (মুহম্মদ, বুদ্ধ, যীশু.. প্রমুখ) জীবনী পাঠ করে মনে হবে এঁরা প্রত্যেকেই আমাদের মত রক্ত মাংসের মানুষ – কিন্তু প্রচন্ড শ্রদ্ধা করার মতো। এরপরে তাদের প্রচারিত দর্শনগুলো পাশাপাশি রাখেন- অটোমেটিক ধারণা চলে আসবে- এগুলো এই সব মানুষদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুগে- বিভিন্ন স্থানে প্রচারিত মতবাদ বা দর্শন। একজন মুসলামন শিক্ষক হয়তো পড়ানোর সময় মুহম্মদকে অনেক মমতা দিয়ে পড়াবে- তাকে অনেক উচ্চে তুলবে- কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে থাকলে নিশ্চয়ই বুদ্ধের প্রতি অশ্রদ্ধা আনয়ন করতে পারবে না।
আমি এমনটাই ভাবি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
জনাব নাস্তিকের ধর্মকথা,
আমি জানতাম যে এই পয়েন্টেই আমি আপত্তি পেতে পারি। খুব ভালো লেগেছে আপত্তিতে। আমি মোটেও হতাশ নই। আর আমি চাই ঠিক ওরকম, যেমন মুক্তমনাবৃন্দ চান। আপনি ঠিকই বলেছেন, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সমালোচনা নিশ্চই হবে। কোথাও আমি তাতে বাধ সাধিনি। কিন্তু প্রশ্নটা হলো আমরা কি ঠিক এটি পাচ্ছি কিনা।মানে এই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিটি, নাকি আগের গুলোর মতোই এও চাপা পড়ে যাবে হিম ঘরের বরফের তলায়? সম্প্রতি ছাত্র ইউনিয়ন সহ কিছু ছাত্র সংগঠন সেকুলার শিক্ষানীতির প্রশ্নে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে, পত্রিকায় দেখেছি, আমি আন্তরিক ভাবেই একটি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন যথার্থ সেকুলার শিক্ষানীতির প্রশ্নে আপনাদের সবার সাথেই সহযোদ্ধা। আমার এসংক্রান্ত প্রবন্ধ গুলো মুক্তমনাতেই প্রকাশিত, নীচে লিংক গুলো দেওয়া আছে। প্রথমটিতেই এর আগের আর একটি প্রবন্ধের লিংক পাবেন। আর ২য়টি মুক্তমনার-ই ইংরেজী ভার্সনে পোষ্ট করা হয়েছিলো।
দেখুন, আমি কি চাই, এ প্রশ্নে আমি আমার নিজের দিক থেকে অনেকটাই পরিচ্ছন্ন। কিন্তু সংশয়টা হলো, যা চাই তা অতি প্রত্যাশা বলে পুরোটাই না হাড়াই। জনাব আতিক রাঢ়ী তো বাড়িতে ধর্মচর্চা সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছেন, আমার মতে ধর্ম পরিবার থেকেও উচ্ছেদ করা উচিৎ। কারণ, পরিবারে ঐ ছোট্ট শিশুটিকে আমি ধর্মীয় বিষে নীলকন্ঠ করে গড়ে তুলতে চাইনে।
আমার এক দূরসম্পর্কীয় দাদার বাসায় একদিন গিয়েছিলাম। তার ছোট ছেলেদুটি সিঁড়িঘরে খেলা শেষে বাড়ি ফিরে তাদের মাকে উচ্চস্বরে নালিশ করছিলো এই বলে যে, নীচের তলার তাদের কোন বন্ধু তাদের আজ বলেচছে যে, তারা হিন্দু, তাই আল্লাহ তাদের মৃত্যুর পরে দোজখে পাঠাবেন আগুনে নিক্ষেপের জন্যে! ওদের মা চুপ! আমি বাচ্চা দুটোকে কাছে ডেকে হাসতে হাসতে বল্লাম, ওরা ঠিকই বলেছে! এখন তো খুব বিপদ! কি করা যায় বলোতো? এক কাজ করো, তোমার বন্ধুদের বলো, তোমরা স্বর্গে গিয়ে আনন্দ করতে থাকো, আমি কিছুদিন পরে যষ্ঠি হাতে ওখানে পৌঁছুবো। পেয়াদায় আমাকে আগুনে ফেলতে এলে সবাই মিলে ওদের লাঠি পেটা করে তাড়াবো! তারপরে স্বর্গের সিঁড়িতে আবার আমরা এরকম করে খেলবো! বৌদী ওঘর থেকে চিৎকার করে আমাকে বললেন, দাদা তুমি আর ওদের মাথাটা খেওনা! এমনিতেই খুব যন্ত্রনায় আছি।
এভাবেই আমাদের শিশুরা বড় হয়ে বেড়ে উঠছে। এই বেড়ে ওঠাটা কি সুষ্থ পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশ? সম্পূর্ন সমাজটাই কিন্তু এক অসুস্থ সমাজে রূপ নিচ্ছে। আমাদের শৈশবের যুগ থেকে আগে বের হযে আসতে হবে। শুধু একা আমি আপনি বের হয়ে এলে যে হচ্ছেনা ভাই। দরকার গোটা সমাজেই একটা অলোড়ন তোলা। কারণ আপনি আমি একা নাঙ্গা হাতে এই পশ্চাদপদতায় কি কিছুমাত্র ভূমিকা রাখতে পারবো? যতক্ষন না আমাদের এই বিতর্ককে সাধারনের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছেন, ততক্ষন কি কোন পরিবর্তন প্রত্যাশিত হতে পারে?
আপনি বিপ্লব পালের জবাবে যা বলেছেন, সেখানে আমার একটা উপলব্ধি যোগ করার আছে। আপনি যা দেখছেন, আমার কেনো জানি মনে হয় এটা তাদের একটা ভড়ং। এটা তাদের অতি ধার্মীকতার প্রদর্শনী। ন ইলে পরিবেশের সাথে ঠিক খাপ খাইয়ে যেনো চলা দায়! যেমন, ইদানিং পথে নামলে দেখবেন বোরখার ছড়াছড়ি পথে ঘাটে। একি পর্দাপ্রথার জন্যে? না, পুরোটা নয়। এর অনেকটা সিকিউরিটির জন্যে।
আমার বোন আই. সি. ডি. ডি. আর. বি-র ডাক্তার ছিলেন। একদিন বাসায় এসে কেঁদে কেটে অস্থির! কি হয়েছে, অফিসে যাবার সময় বাস যাত্রী এক মোল্লা পানের পিক্ ছুঁড়ে দিয়ে পাসের সহ যাত্রীকে বলছে, ঐদেখ মালাউন একটা যায়! মাথায় সিঁদূর ছিলোতো তাই বোধ হয়। তাঁর হাজবেন্ড রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক তাকে সান্তনা দিয়ে তখন ঠান্ডা করে বিকেলে একটা রোরখা এনে দিলেন। এর পড়ে দীর্ঘ আড়াই-তিন বছরে আর কোন অভিযোগ শোনা যায় নাই! বলুন এধরনের মানসিক বিকার কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হচ্ছে? না শুরুটা হচ্ছে পরিবারে, আর পরিপক্কতা পাচ্ছে বাইরের পরিবেশে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর বেহাল দশা, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ সব কিছুই জড়িত। যেখানে বেড়ে ওঠাটাই ত্রুটিপূর্ণ। তাই আগে দরকার একটি সহনীয় পরিবেশ, তারপরে বিকাশ। আমার কথাটা (আপাতঃ বিতর্কিত) আমি এই জন্যেই বলেছি।
আমার প্রবন্ধের লিঙ্ক গুলো এখানে রইলো:
. প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিঃ আমার ভাবনা
. Education: Let Us Think
@কেশব অধিকারী,
আমরা মনে হয় একটা উদার ও যুক্তিনির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিনিয়ে কথা বলছি।এক্ষেত্রে যা আমাদের হাতে নেই তা নিয়ে কথা বলে কোন ফল হবার আশা দেখিনা। পরিবার গুলোকে সরাসরি উদারনৈতিক ও যুক্তিনির্ভর করার ব্যাপারে আমাদের সাধ্য খুবই সিমীত। শিক্ষাব্যাবস্থার মাধ্যমে যদি এব্যাপারে সুফল ছাত্রদের পর্যন্ত পৌছান যায় তবে এরাই পরিবার গুলোকে উদার ও যুক্তিনির্ভর উপাদানে সমৃদ্ধ করতে পারবে।
আর কোন উপায়ে অধিক কার্যকরী ভাবে পরিবার থেকে জজ্ঞাল সরান যাবে বলে আমার মনে হয় না।
@আতিক রাঢ়ী,
আমি কিন্তু পরিবার থেকে পাওয়া জঞ্জাল থেকে মুক্ত রাখার ব্যাপারেও কথা বলতে ও দাবী তুলতে আগ্রহী। এক্ষেত্রেও- বর্তমান প্রেক্ষাপট বা বাস্তবতার দোহাই বা আমাদের হাতে নেই- এসব কথা বলে, মূল দাবীটিকে যদি আড়াল করে রাখি- তবে সে আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে জাগবে কি করে?
এটা ঠিক যে- রাষ্ট্র শিক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, কিন্তু পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারে না, অর্থাৎ পরিবার একাট বাচ্চার মাথায় কি ঢুকাবে বা না ঢুকাবে সেটার উপর খবরদারি করতে পারে না। তবে সাথে এটাও মনে করি যে- এক্ষেত্রে একটা ভালো উপায় হচ্ছে, বাচ্চার উপর পরিবারের দায়িত্বটা কমিয়ে ফেলতে পারে- এবং সেটা সম্ভব রাষ্ট্রের দায়িত্বটুকু বাড়ানোর মাধ্যমে। প্রাক-প্রাথমিক থেকেই যদি বাচ্চাকে রাষ্ট্র অনেক বাচ্চার মধ্যে রেখে গড়ে তোলার ভূমিকা নেয়- তবে এর মাধ্যমেও পরিবারের কিছুটা প্রভাব কমতে পারে। মানে- এখন একদম শুরুর অক্ষরজ্ঞানটা শেখে পরিবার থেকে- জগতের বিভিন্ন জিনিস- বিভিন্ন শব্দ শেখে পরিবার থেকে, সেগুলোর বড় অংশও শিখবে প্রি প্রাইমারি স্কুলে। আমি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা খুব অনুভব করি।
এ শিক্ষানীতিতে এটার কথা বলা আছে- ৫+ বয়সের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, যদিও দরকার আড়াই/তিন বছর বয়স থেকেই। কিন্তু- এবারে ১ বছরের প্রিপ্রাইমারির কথা বলে- সেখানে যেটা ঢুকানো হয়েছে- সেটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। মসজিদ-মন্দিরে ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাথে এটা শুরুর হবে- এটা খুবই ভয়াবহ প্রস্তাব।
ধর্ম জানার জন্য পরিবারই যথেষ্ট। একে পাঠ্যসূচীতে নিয়ে আসাটার দরকার আছে বলে মনে হয়না। আর যদি আনতেই হয় তবে এটাকে সমাজ-বিজ্ঞান এর একটা আধ্যায় হিসাবে রাখা যেতে পারে, যেখানে প্রধান প্রধান ধর্মের মুল বানী পাশাপাশি থাকবে সার্বজনীন ভাবে অধ্যয়নের জন্য। সবচেয়ে ভাল হয় পরের অধ্যায়ে দর্শন
রাখলে। তাহলে যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হচ্ছে- ধর্ম সম্পর্কে জানা, সেটা হয়ে যায়।
@আতিক রাঢ়ী, দ্বিতীয় ব্যাপারটাই একমত। সমাজ এবং নৃতত্ব বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই ধর্মকে পড়ানো উচিত। তাহলেই ধর্মান্ধতা কাটবে।
ডঃ বিপ্লব পাল,
ঠিক বলেছেন! আমি আর একটু যোগ করতে চাই, বস্তুতঃ বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় শিক্ষা থাকবে না, এটা আপাততঃ মাথায় না আনাই ভালো। আমি অধিকাংশ সর্ব্বোচ্চ শিক্ষিত মানুষের মাঝেই ধর্মীয় অন্ধত্ত্ব দেখেছি! আমাদের প্রস্তাবিত বর্তমান শিক্ষানীতি আক্ষরিক অর্থে অবশ্যই সেক্যুলার নয়। তবে এর মধ্যে দিয়ে যে আধুনীকতার পথে যাত্রা শুরু হবে সেটাই একে হযতো পরবর্তী ধাপে নিয়ে পৌঁছুবে। আমি শংকিত এখনো এই কারণে যে আদৌ বর্তমান পরিকল্প বা নীতিটি সত্যি বাস্তবতার মুখ দেখবে কিনা! অনেক দ্বৈততা, পারষ্পরিক সাংঘর্ষিকতা, অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও একে বাস্তবতায় এনে কার্যকর করা উচিৎ। আমার এতদ্ সংক্রান্ত প্রবন্ধে খানিকটা আলোকপাতের সুযোগ হয়েছিলো। তবে একটা ব্যপার আমার ভালো লেগেছে এই কারণে যে দেশে আমার আশে পাশে বহু বহু শিক্ষিত জনের ধর্মীয় ব্যাপারে যে রক্ষনশীল মনস্তত্বঃ দেখেছি এবং হতাশ হয়েছি, মুক্তমনায় ফিরে এসে তাকালে আন্তরিক ভাবেই অনুভব করি আমার আশংকা হয়তো সত্যি নয়, আমাদের আগামী দিন গুলো হয়তো অনেক ভাস্বর এবং উজ্জ্বল!
@Keshab K. Adhikary,
কোথায় প্রকাশ করেছিলেন? মুক্তমনায়? আপনার প্রবন্ধটির লিংক কি দিতে পারবেন?
এ অবস্থানটিতেই আমার যত আপত্তি। অন্তত মুক্তমনাতে মুক্তমনাদের এহেন অবস্থানে কিছুটা হতাশও!
বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আর বাস্তবতার দোহাই দেয়ার কি দরকার সেটা আমার বোধগম্য না। আমরা কেমন শিক্ষানীতি চাই- সেক্যুলার শিক্ষানীতি বলতে কি বুঝি- এই শিক্ষানীতির কোন কোন জায়গায় সেটা সেক্যুলার হয়নি- সেগুলো যদি আমরা না বলি তবে কিকরে হবে? কে বলবে?
আমরা যখন এই শিক্ষানীতির সামলোচনা করি- তখন তো প্রকারন্তরে আমরা কেমন কিরূপ শিক্ষানীতি চাই- সেটারই উচ্চারণ করি- তাই না? আজকের বাংলাদেশে আমরা যা যা চাই তার সবকিছুই বাস্তবায়িত হয়ে যাবে- সেটা কিন্তু কেউ মনেও করি না, কিন্তু বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে কি আমরা আমাদের চাওয়া গুলোও উচ্চারণ করবো না?
আওয়ামিলীগের শিক্ষানীতি বলেই কি, কবীর চৌধুরী আর জাফর ইকবাল স্যার কমিটিতে ছিলেন বলেই কি, বিএনপি-জামাতেরা-ধর্মান্ধরা এর বিষোদগার করছে বলেই কি- এর কোন সমালোচনা আমরা করতে পারবো না, উল্টো সমস্ত সমালোচনার জবাব দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবো, বাস্তবতার দোহাই দিয়ে সবকিছুকে অগ্রাহ্য করবো? আমি খুব দুঃখিত, আমি এই এটিচ্যুডটিই মানতে পারছি না।
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
absolutely right.
আমার ত মনে হয়-ধর্ম এবং বিজ্ঞান শিক্ষা পাশাপাশি দেওয়া উচিত। বিজ্ঞান শিক্ষা যাতে ঠিক এবং নির্ভুল হয়-সেটাই আসল। ধর্ম নিয়ে জানা ভাল -্তাতেই ধর্মের অজ্ঞানতা বেশী দুর হয়।
@বিপ্লব পাল,
একটু দ্বিমত করছি, বিজ্ঞান শিক্ষা আর ধর্ম শিক্ষা কখনোই প্যারালাল শুরু হতে পারে না। বেইসটা অবশ্যই শুরু করা দরকার বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে। একটা বাচ্চাকে আপনি কখনোই বিপরীতমুখী বিভিন্ন চিন্তার জঞ্জাল দিয়ে মাথা ভর্তি করতে পারেন না। সে বিজ্ঞান ক্লাসে পড়বে পানিচক্রের কথা আবার ধর্মের ক্লাসে এসে পড়বে মিকাইলের কথা, বিজ্ঞানের ক্লাসে কার্যকরণ সূত্রের কথা পড়বে আর ধর্মের ক্লাসে সবকিছুর মূলে অতিপ্রাকৃত শক্তির কথা পড়বে- এমনটা করে যদি ভাবেন- তাকে মুক্তবুদ্ধি বানাতে পারবেন- তবে বলতেই হচ্ছে, আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণটাই দ্বিমত করছি।
ধর্মকে নিয়ে জানা ভালো- আমিও সেটা মনে করি। কিন্তু সেটা কেমন করে? প্রাক প্রাথমিকে বিজ্ঞান শেখানোর আগেই বাচ্চাকে পাঠাবেন মসজিদ-মন্দিরে-উপাসনালয়ে, এভাবে ধর্মকে জানাবেন? এভাবে জানিয়ে ধর্মের অজ্ঞানতা দূর করবেন? মসজিদে কি হিন্দুরা বা মন্দিরে কি মুসলিম বাচ্চারা ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার জন্য যাবে? তা যদি না যায়- তবে অপরাপর ধর্ম সম্পর্কে জেনে শ্রদ্ধাবোধ আনা সম্ভব (যেমনটি জাফর ইকবাল স্যার বলেছেন)? আমি জানি না সম্ভব কি না। ক্লাস থ্রি থেকে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, খুব ভালো। আপনিও বলছেন- ধর্মকে জানলেই অজ্ঞানতা দূর হবে, স্যার বলেছেন- অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হবে। কিন্তু- সেটা কি করে সম্ভব? সবধর্মের ছাত্ররা কি একই পাঠ্যবইয়ে একই ক্লাসে ক্লাস করতে পারবে? তা যদি না পারে- ধর্ম ক্লাস আসলেই ক্লাসের ছেলেরা আলাদা আলাদা ক্লাসে ঢুকবে- সেটা কি তাদের মনে কোন প্রভাব ফেলবে না? একজন মুসলমান শিক্ষক মুসলমান ছাত্রদের ইসলাম ধর্ম পড়াতে গিয়ে অন্য ধর্মের উপরও লেকচার দিবেন, একজন হিন্দু শিক্ষক হিন্দু ছাত্রদের অন্য ধর্মের উপর লেকচার দিবেন- অনেক অনেক ভালো কথাও না হয় বললেন- কিন্তু আলটিমেট তার ফলাফল কেমন হবে, এখনকার চেয়ে কোথায় উনিশ বিশ হবে সেটা দয়া করে আমাকে একটু বলবেন কি?
আমার বা আমাদের ছেলেমেয়েকেই বা কোন ক্লাসে ঢুকাবো? ইসলাম শিক্ষা না হিন্দু শিক্ষা? (অন্য ধর্ম শিক্ষা শেখানোর স্কোপ তো যারা ঐ ধর্মের- তারাই পায় না!)
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
আমি নিজেই ধর্মীয় স্কুলেই ( রামকৃষ্ণ মিশনে) পড়েছি। সেখানে শুধু স্কুলে ধর্ম শেখায় না-সকালে একবার, রাতে দুবার ধর্ম শিক্ষার ক্লাশ বা পার্থনা নিতে হত। দিনে চার ঘন্টা ধর্ম শিক্ষার মধ্যে থাকতে হত ( যদিও এক বা দুই ঘন্টার বেশী কেও থাকত না) কিন্ত সেখান থেকে ধর্মান্ধ তৈরী হয় না কারন
(১) সেখানে সর্বোচ্চ মানের বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় যাতে ছেলেরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার
বিজ্ঞানী হতে পারে।
(২) বিবেকানন্দের দর্শন পড়ানো হয়-যা যথেষ্ঠ মানবিক এবং যুক্তিপুর্ন। তবে হ্যা বিজ্ঞানের সাথে গন্ডোগল ও আছে।
ধর্মকে ভয় পাওয়ার অত কিছু নেই। রাজনীতিবিদরা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে
নিষ্ঠুরতা সৃষ্টি করেছে-অমানুষ তৈরী করেছে। সেত স্টালিন বা হিটলার বিজ্ঞানকে
কাজে লাগিয়ে আরো নৃশংতা সৃষ্টি করেছে। আমি মনে করি না একজন সত্যিকারের
ধার্মিক রায়োটে অংশ নিয়ে থাকে-বা ধর্মের রাজনীতি করে। যারা ধর্মের রাজনীতি করে-তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদ। জিন্না, আদবানী, সাভারকার-এদের কেওই ধার্মিক নন ব্যাক্তিগত জীবনে। দুদিন আগে বিজেপির পশ্চিম বঙ্গের প্রেসিডেন্ট তথাগত রায়ের সাথে কথা হল-তিনিও রাজনীতিবিদ-কোন ধার্মিক লোকই নন। কিন্ত মনে করেন, ধর্ম রাজনীতির মধ্যে থাকবে।
কিন্ত পুরো ব্যাপারটার আইরনি হল এই-যে ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে এই বিভেদের রাজনীতি তৈরী করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে ধর্ম শিক্ষা কি ধর্মীয় ভাবাবেগকে বাড়াবে না কমাবে? আমার মতে কমাবে যদি ধর্ম শিক্ষাটা মানবিকতাবাদের মোরকে দেওয়া যায়। যা জার্মানী বা ফ্রান্সের স্কুলে দেওয়া হয়। রামকৃষন মিশন স্কুলেও দেওয়া হয়।
আমি স্কুলে অধিক বিজ্ঞান শিক্ষার সাথে সঠিক ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার পক্ষপাতি। ধর্মকে আরো গভীরে জানলেই লোকে ধর্মের গন্ডীর ওপরে উঠতে পারে যদি বিজ্ঞান তার জানা থাকে। লোভ কামনা ক্রোধ অহংকার-এসব দমন করার ভীষন প্রয়োজন আছে। সৎ হওয়ার শিক্ষা বা নৈতিক শিক্ষা বিজ্ঞান থেকেই অবশ্য ভাল পাওয়া যায়। কিন্ত মানবিকতার শিক্ষা বা রিপুদমন করার শিক্ষাটা ধর্ম দিলে ক্ষতি কি? ( যদিও এসব ও
বিজ্ঞানের মাধ্যমেই দেওয়া যায়-তবে আমাদের তৃতীয় বিশ্বের সমাজ এখনো সেখানে পৌছয় নি)-এগুলো জীবনে দরকার ত। কোম্পানীর সি ই ও হয়ে, বা বিলিয়নার হওয়ার পর বাকী জীবন জেলে কাটানো কি ভাল? যা আকছার আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে হচ্ছে?
আমি ধর্মের হয়ে ওকালতি করছি না। কিন্ত বাস্তবকে মেনে, সেখানেও সুবিধা নেওয়া যায়। ধর্মকে ভাল ভাবে জানলে কিন্ত সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা কমে-তবে ধর্মের শিক্ষাটা সঠিক হওয়া চাই-সেটা যদি বাংলাদেশে হয় হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেশ যা সরকারী টাকায় পাকিস্থানে হয়েছে-তাহলে অবশ্যই বর্জনীয়।
@বিপ্লব পাল,
>>আমি মনে করি না একজন সত্যিকারের ধার্মিক রায়োটে অংশ নিয়ে থাকে-বা ধর্মের রাজনীতি করে। যারা ধর্মের রাজনীতি করে-তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদ।>>
বিপ্লব দা, সত্যিকারের ধর্ম ও সত্যিকারের ধার্মীক জিনিস টা কি, একটু ব্যাখ্যা করবেন ? আর ধর্মের রাজনিতী যারা করেন তাদের ক্ষেত্রটা কি বা ভিত্তিটা কারা ?
@বিপ্লব পাল, সত্যিকারের ধার্মিক বলতে আমি তাদের বুঝিয়েছি, যারা ব্যাপারটাকে আত্মিক জিজ্ঞাসার পর্যায়ে নিয়ে গেছে-এই নিয়ে একটা লেখা আমার আগেই ছিলঃ
http://biplabpal2000.googlepages.com/Spiritualism1.pdf
@বিপ্লব পাল,
ভাইয়া আমি আপনার সাথে একদম একমত। কারন, আমি নিজের ব্যপারেই বলি। আমি নিজে ছোট থাকতে নিজের গরজে ধর্ম বিষয়ক অনেক বই পড়েছিলাম বলেই এখন ধর্মের সমস্যাগুলো দেখতে পাই এবং অন্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি।
যদি ধর্ম শিক্ষাকে জোর করে তুলে দেয়া হয়,তবে মানুষ নিজের গরজেই আবার ধর্মের দিকে চলে যাবে। কারন বিজ্ঞানের খুটিনাটি ব্যপারগুলা সাধারন মানুষদের জন্য একটু জটিল হয়ে যায়। আর বাঙালী মাত্রই জটিলতা থেকে দূরে থাকে। ধর্ম তাদেরকে অনেক সহজ পথে বিভ্রান্ত করে। সাধারন মানুষ ‘প্রাণ’ নামের এই জটিল ধারনার কোন আদি অন্ত খুঁজে পায় না। তাই তাদের কাছে সহজ সমাধান হচ্ছে ধর্ম।
তাই যদি ধর্ম আর বিজ্ঞান পাশাপাশি না পড়ানো হয় এবং যদি বিজ্ঞানকে সাধারন মানুষএর কাছে আরো আকর্ষনীয় করে না তোলা হয় তবে শুধু বিজ্ঞান গিলিয়ে কোন লাভ হবে না।উল্টো বিজ্ঞানের জটিলতা সাধারন মানুষএর মস্তিস্কে বদ হজম সৃস্টি করবে।
@তানভী,
আমি নিজেই ধর্ম বিমুখ হয়েছি ধর্মকে ভাল ভাবে জানার পরে। আমি বেদ উপনিষদ পড়েছি বলেই কোন হিন্দু ধর্ম প্রচারক আমাকে উল্লু বানাতে পারে না। আমি বরং তাদের উলটো মুর্গী করতে পারি।
@বিপ্লব পাল,
ভাইয়া আমার হয়েছে জ্বালা। কাউকে ঝাড়তে গিয়ে কোরানের কিছু উল্টাপাল্টা আয়াত শোনাতে গেলে তারা বিজ্ঞের মত ডানে বামে মাথা নেড়ে বলে,”এ নিশ্চই অনুবাদকের ভূল!! কোরানে এরকম আয়াত থাকতেই পারেনা!!”
তার পর যদি বলি,’সবাই কি একই ভুল করবে?’ তখন জবাব পাই,” আরবি এত সোজা না!!”
এরপর ঝাড়ি খেয়ে চুপ হয়ে যেতে হয়। 🙂
@বিপ্লব পাল,
আমার নিজের অভিজ্ঞতাও তাই- বাংলায় কোরআন না পড়াটা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এটা দ্বারা কি প্রমানিত হয়? আজকের আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমার মত বা আপনার এক দুজন বের হওয়া দ্বারাই কি সম্পূর্ণটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়- বা সিদ্ধান্ত নেয়া যায়?
মাদ্রাসায় কোরআন-হাদীসের সাথে খুব ভালো করে বিজ্ঞান পড়ালে বা রামকৃষ্ণ টাইপ প্রতিষ্ঠানে বেদ-বেদান্তের সাথে খুব ভালো করে বিজ্ঞান পড়ালেই কি মনে করেন সকলে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠবে? তাহলে চলেন আমরা দাবী করি- সাধারণ শিক্ষা টিক্ষা সব তুলে দিয়ে- কেবল মাদ্রাসা/সংস্কৃত/রামকৃষ্ণ টাইপ শিক্ষার প্রচলন হোক- যেখানে বিজ্ঞান খুব ভালো করে পড়ানো হবে …..
কিছু মনে করবেন না- আমার অভিজ্ঞতাটা খুব অন্যরকম, আমাদের এখানে মেডিক্যালের সবচেয়ে জ্ঞানী ও ডিগ্রী ধারী টিচারকেও দেখা যায়- তবলিগি করতে – যিনি ক্লাসে ছাত্রদের বিবর্তন বিদ্যা সম্পর্কে পড়াতে গিয়ে ছবক দেন : “আজ যা যা পড়াতে যাচ্ছি- তার সব কিছু বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই!!!” ( আমার ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে শোনা), আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান অনুষদগুলোতে জোব্বা-টুপি-দাড়ির আধিক্য (সে তুলনায় আর্টস ফ্যাকাল্টি- সাহিত্য-দর্শন-ইতিহাস ফ্যাকাল্টি তুলনামূলক উদারমনা), এমনটা কোন কারণ কি? আমার মাথায় এটা দীর্ঘদিনের প্রশ্ন ছিল, খুব অবাক হয়ে ভাবতাম যারা বিজ্ঞান পড়ছেন- পড়াচ্ছেন- এবং বিজ্ঞান সাধনায়ও জীবনপাত করছেন- তারা কি করে ধার্মিক হচ্ছে- হয়? এটার জবাব আমি এক জায়গাতেই পাই- সেটা হলো আমাদের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা- যাকে জগাখিচুড়ি ছাড়া কিছুই বলা যায় না- বাচ্চামনে আপনি অতিপ্রাকৃত এর প্রতি আস্থা ঢুকাবেন- তারপরে সেখানে বিজ্ঞানের ফল্গুধারা বইয়ে দিবেন- সে কিভাবে মুক্তমনা হবে?
এরকম ধারার মধ্য দিয়ে আপনি-আমি-আমরা যারা মুক্তমনা বলে দাবী করছি- তারা কেবলই ব্যতিক্রম মাত্র। দেখবেন- আমাদের ক্ষেত্রে অন্য আরো অনেক কিছুরই হয়তো প্রভাব ছিল; তা না হলে- আমার আশপাশের আরো অনেকেই তো বাংলায় কোরআন পড়েছে- এবং পড়ে আরো ধর্মকেই আকড়ে ধরেছে এমন উদাহরণই তো দেখি বেশি।
(আমার দুই হিন্দু বন্ধু নটরডেমে পড়ার সময় রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রাবাসে থাকার সময় নাস্তিকতার পাঠ নিয়েছে, তাদের মতে নাস্তিকতার পাঠ নেয়ার জন্য এটা একটা উত্তম জায়গা- এখানে ধর্ম-কর্ম সব এমনভাবে চলে যে- এক ঘোরতর আস্তিক ব্যক্তিও নাস্তিক হতে বাধ্য!!)
খুলনা জিলা স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় (অথবা অন্য কোন অনুষ্ঠানে ঠিক মনে পরছে না) একবার জাফর স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ” স্যার ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে যে সংঘর্ষ এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি বললেন ”ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে সংঘর্ষ আছে নাকি? কই আমি জানি না তো।”
মুক্তমনা ভাইরা যদি বিষয়টা ব্যাখ্যা করতেন তবে ভাল হত।
@সামির মানবাদী,
ব্যাপার পরিষ্কার।
ওনাকে বাংলাদেশে বাস করতে হয়। এমনিই রাজাকারদের বিরুদ্ধে লেগে যথেষ্ট ঝামেলায় জড়িয়েছেন।
তাছাড়া তিনি ধর্ম নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করেন বলে অন্তত ওনার লেখা পড়ে কোনদিন মনে হয়নি।
@সামির মানবাদী, আমার কাছে জাফর ইকবাল স্যারকে একটু ‘ইসলামের দিকে ঝোক বেশী‘ এরকম মনে হয়। মনে হয়েছে, তিনি ইসলামকে একটু ‘আদর্শ আদর্শ‘ ভাবেন( ব্যক্তিগত মতামত)।
ভাই আপনিকি খুলনার লোক? হলে আওয়াজ দিয়েন, আমিও খুলনার।
@মুহাইমীন,
জাফর ইকবাল সাহেবের ধর্ম বিষয়ক দর্শন কি এটা আমার জানার খুব ইচ্ছে আছে। এ পর্যন্ত ওনার কোন বইতে এ বিষয়্যে সরাসরি কিছু পাইনি। উনি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সরব, কিন্তু ধর্মের বিরোধীতা করে কিছউ বলতে শুনিনি। আপনি কোথাও ওনার ইসলাম প্রীতি বা যেকোন ধর্মের পক্ষে বিপক্ষে কোন বক্তব্য পেলে রেফারেন্স দিন।
আমার কাছে মনে হয়েছে ধর্ম সম্পর্কে ওনার দৃষ্টিভংগী অনেকটা উদাসীন, অনেকটা হয়ত এরকম যে ব্যক্তিগত জীবনে হয়তবা রিচুয়ালগূলি পালন করেন কিন্তু ধর্মের ব্যাবহারিক দিক নিয়ে চিন্তা করেন না।
ওনার একটা বইতে শুধু একবার অনেকটা মজা করে বলার মত পেয়েছিলাম যে যতদিন না ল্যাব এ জ্বীনের মাস স্পেক্টড়োগ্রাফি করে তার গঠন জানতে পারছি ততদিন জ্বীন বিশ্বাস করি না এ জাতীয় একটা কথা।
@আদিল মাহমুদ,
ভাইরে, মন্তব্য কারকে ফাঁস গায়া 😛 😀 😛 । তাঁর নিজস্ব ধর্ম-দর্শন সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানি না। তাঁর লেখাগুলো পড়ে মনে হয়েছে মানব ধর্মই তাঁর কাছে মূখ্য। আপনি প্রথম আলোয় প্রকাশিত তাঁর সাম্প্রতিক প্রকাশিত কলামেও এর একটা সুর পাবেন। প্রথম আলোয় প্রকাশিত তাঁর এক কলামে পড়েছিলাম তিনি এরকম বলছেনঃ(কথাটা হুবহু মনে নাই) ইসলামের মত শান্তির ধর্মের সবচেয়ে বারোটা বাজাচ্ছে আমাদের দেশের তথাকথিত মৌলবাদিরা। জোট সরকারের আমলে তার লেখা কলাম গুলো পড়তে পারেন। রেফারেন্স জানাতে আমি অপারগ( নিজেই জানি না :rotfl: )।
@মুহাইমীন,
হ্যা জানি, তিনি এই জাতীয় কথাবার্তা প্রায়ই বলেন। তবে ধর্মের বিরুদ্ধে কোনদিন কিছু বলতে শুনিনি। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলা আর ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা তো সম্পুর্ন ভিন্ন ব্যাপার।
তবে তার অগ্রজ হুমায়ুন সাহেব মনে হয় ধড়িবাজ। তিনি দুই দিকই রক্ষা করে চলেন। প্রায় বইতেই কোরানের হাদীসের বানী ব্যাখ্যা সমেত দেন, আবার “প্রকৃতি” এটা করেছে বা সৃষ্টি করেছে এই ভাষায় কথাবার্তা বলেন, যেগুলি ধর্মে বা ইশ্বর বিশ্বাসীরা ব্যাবহার করবেন না।
@আদিল মাহমুদ,
জাফর সাহেবকেও আমার সেমি-ধরিবাজ মনে হয়। কারণ, নিজের জান বাচাতে উনি রাজনীতিকে ব্যবহার করেন, আওয়ামিলীগ সরকার আসার পর এত কম সময়ে এত অরাজকতা হয়ে গেল অথচ উনি উনার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে সামান্য কলামও লিখলেন না ( অন্য অনেক ক্ষেত্রেই কবি নিরব)।
ভাই এই সমাজে সবাই জানের ভয়ে অন্যায়কে চুপ করে সহ্য করে, কোন প্রকৃত অকুতভয় সৈনিক আজও চোখে পড়ল না (আমি নিজেই তাই হবার চেষ্টা করতেছি- কি করব, উপায় নেই গোলাম হোসেন 😕 :-(( নইলে নিজেকেও বিক্রি করে দিতে হবে তবে তার আগেই আমি মৃত্যুকে বরণ করে নেব)
@সামির মানবাদী, আসলে বিজ্ঞানী হলেই যে নাস্তিক বা সংশয়বাদী হতে হবে এমন কোন কথা নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটটাও দেখতে হবে। আপনার কাছে যদি উনি স্বীকার করতেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সংঘর্ষ আছে এবং কোনমতে এটি যদি ছড়িয়ে পড়ত, তাহলে উনি ভালই বিপদে পড়তেন। এমনিতেই তো তিনি “মুরতাদ” হয়ে গিয়েছেন।
আমাদের সমাজ যদি উদার হত, তাহলে হয়ত তিনি ব্রিটেনের স্যার ডেভিড এটেনবরোর মত হতেন। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়াশীল সমাজে স্যার ডেভিড এটেনবরো হওয়াও খুবই বিপদজনক।
মোদ্দা কথা হল, উনার ধর্মবিশ্বাসটি মুখ্য না। দেশের বিজ্ঞান চর্চার জন্য নিবেদিত প্রাণে পরিশ্রম করলেই হল।
শিক্ষানীতি হচ্ছে একটা নীতি, এটার নীতিগত দিকটাই প্রধান- এর পেছনে যে দর্শন থাকে সেটা হচ্ছে শিক্ষাদর্শন- মানে শিক্ষানীতিকে আমি দেখতে চাইবো আমাদের শিক্ষাদর্শনটা কেমন, শিক্ষা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গীটা কি সে আলোকেই।
এটা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে- তা ভিন্ন কথা, সেটা আলাদা অধ্যায়- এবং সেটা কোনভাবেই নীতি হতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- যখন শিক্ষানীতিতে সাধারণ শিক্ষায় ছাত্র:শিক্ষক এর অনুপাত ৩০:১ প্রস্তাব করা হয়- তখন তার মানে হলো- নীতিগতভাবে এটা স্বীকার করে নেয়া হলো যে, আমাদের দেশে ক্লাসরুমের পরিবেশ-শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ক- যথাযথ শিক্ষা প্রদানের জন্য কমপক্ষে ৩০ জন ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষক থাকা দরকার। এখন এটা কিভাবে সম্ভব করা হবে- সেটা ভিন্ন ব্যাপার, সেটা ৫০ বছরেও সম্ভব না হতে পারে- কিন্তু সম্ভব না হলেও মানে কোন কোন জায়গায় ১ জন শিক্ষক শ শ ছাত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও- ঐ শিক্ষানীতির কারণেই বলা সম্ভব- ১ জনের শিক্ষকের দায়িত্বে মোটেও ৩০ জনের অধিক ছাত্রের ভার থাকা উচিৎ নয়।
আজ শিক্ষানীতিতে যা যা আছে- থাকলো, সেগুলো- যেহেতু শিক্ষানীতি নামেই থাকছে- সেহেতু কোনভাবেই, বাস্তবায়ন কিভাবে করা হবে এ প্রশ্ন তুলে বা বাস্তবতার দোহাই দিয়ে- এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলা মানে এটার প্রয়োজনীয়তার কথা নীতিগতভাবে স্বীকার করে নেয়া নয় কি? শিক্ষাক্ষেত্রে বহুবিধ ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে- সব জায়গায় কেবল অভিন্ন পাঠ্যপুস্তক চালু করার মাধ্যমেই সমান মান নিশ্চিত করার কথা বলা মানে নীতিগতভাবে এটাই স্বীকার করা যে- বহুধারায় বিভক্ত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সমান মানের পথে অন্তরায় কেবল ভিন্ন ভিন্ন পাঠ্যপুস্তক!!!! মির্জাপুর ক্যাডেট স্কুলের একজন ছাত্র আর গোকুল চন্দ্র বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ধুপধোনা’র একজন ছাত্র কেবলমাত্র একই পাঠ্যপুস্তক পেলেই সমান মানের শিক্ষা পাবে? সম্ভব?
জাফর ইকবাল স্যার গতকালের প্রথম আলোতে সুন্দর জানালেন-
শুনতে আপাতভাবে ভালো লাগে। কিন্তু একটা বাচ্চার মনে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জাগানোটা কি কখনো সেক্যুলার শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে? এক বাচ্চার সেক্যুলার মনন, বিজ্ঞানমনস্কতা কি এভাবে গড়ে তোলা সম্ভব? সকল ধর্মদর্শন, এগুলোর ইতিহাস সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রদান করা যায়- সেটাকে কি ধর্ম শিক্ষা নামে অভিহিত করা যায়? সেটা হতে পারে ইতিহাস, সেটা হতে পারে দর্শন- পড়ানো হোক, সমস্ত ধর্মের- সমস্ত ধরণের বিশ্বাসের পরম্পরাগুলো, ইতিহাসগুলো- সেগুলোর অন্তনিহিত দর্শন গুলো। কিন্তু ধর্ম শিক্ষা? এর মধ্য দিয়ে আগের তুলনায় কোন ব্যতিক্রমটা গড়ে উঠা সম্ভব?
আসলে, জাফর ইকবাল স্যার যতখানি বলেছেন- ততটুকুও সম্ভব নয়, আপনারা যদি শিক্ষানীতিটি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলেই বুঝতে পারবেন। অন্য ধর্ম সম্পর্কেও জানানো হবে বলা হচ্ছে- কিন্তু ধর্মশিক্ষার নাম তো হবে নিজের ধর্মের নামেই (মানে ইসলাম শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা… এসবই থাকবে), এবং শিক্ষানীতিতে এটাও বলা হচ্ছে :
এই হলো সেক্যুলার শিক্ষানীতির নমুনা (ব্যক্তিগতভাবে আমি আচার সর্বস্ব মুসলিমদের সাথে বেশি কমফোর্ট ফিল করি- তাদের ইসলাম পালন মানে – নামাজ পরা আর রোযা রাখা- বাকি পুরো জীবনটা আর দশজনের মতই কাটায়- ধর্ম-টর্ম নিয়ে মাথাও ঘামায় না- ইসলামের মর্মার্থ নিয়ে কোন মাথাব্যথাই তাদের নেই- এরা দেখেছি অনেক সহনশীল এবং উদার। উল্টোদিকে ইসলাম যাদের কাছে কেবল আচারসর্বস্ব নয়- বরং এর মর্মার্থ নিয়েও যারা অনেক বেশী চিন্তিত ও ভাবিত- তাদেরকে আমরা মোল্লা হিসাবেই দেখি ও চিনি)
যাহোক, সবচেয়ে বড় সমস্যাটা দেখছি- এইসব জিনিস থাকার পরেও, প্রগতিশীলরা চুপ করে আছে, আর ধর্মান্ধরা চিল্লাফাল্লা করে যাচ্ছে!!! জাফর ইকবাল স্যারও মনে হলো- আরেকটু উসকে দিলেন- বাস্তবে এই শিক্ষানীতি যা না- তা হিসাবে দাবি করে, ক্ষতিই করলেন। তার লেখার সমাপনীটা দ্রষ্টব্য:
তিনিও ধর্মান্ধদের বিরোধিতার কথা তুলে- এটাকে সেক্যুলার বানানোর দিকে গেলেন; যেমনটি আমাদের বেশীরভাগেরই অবস্থা। যেমনটি উপরের কমেন্টে সুমন বলেছেন:
সেই পুরানো চক্র।
১।গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার…।
২।ব্যার্থ, দূর্ণীতিপরায়নতা, দলবাজী।…
৩।জ়ণগণের তীব্র অসন্তো…
৪। এক পর্যায়ে দেশজুড়ে চরম অস্তিরতা ও বিশৃখলা
৫। সরকার বদল
৬। প্রত্যাশার ফুলঝুড়ি
এর পরেই আবার অবধারিতভাবে ১ থেকে কেচে গন্ডুষ
এর কোনরকম আশু পরিবর্তন সম্ভব বলে আমি অন্তত মনে করি না। তবে এ সরকারের থেকে এত জলদি এতটা দূরাশা করিনি।
তবে যুদ্ধপরাধের বিচার প্রসংগে বলতে হয় যে কাজটি শুনতে যতটা সহজ মনে হয় ততটা মোটেই নয়, আমি আগেও বলেছিলাম। কেউ কেউ বিরক্ত হয়েছিলেন আমি হতাশা ছড়াচ্ছি বলে। তবে সরকারের প্রতিশ্রুতি দেবার আগে সেটা বোঝা উচিত ছিল। দুয়েকদিন আগেই দেখলাম অর্থমন্ত্রী বলছেন পাকিস্তান নাকি লবিং করছে এর বিরুদ্ধে। খুবই সম্ভব। পাকিস্তান নিজে কিছু করতে না পরলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে অবশ্যই তাতাতে পারে।
শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অলরেডী ব্যাপক আলোড়ন লক্ষ্য করা যাছে। মূল অভিযোগ দেশকে সেক্যুলার বা ধর্মহীন করে ফেলার নীল নকশা আকা হয়েছে।
ভাই, উনাদের দোষ দিয়া লাভ নাই। ইসলামী দেশে যতই সেকুলার শিক্ষানীতি প্রনয়নের পায়তারা করেন, সেকুলার শিক্ষানীতি ইসলামী না হইলে বাঙ্গালী মুসলমান শান্তি রক্ষার্থে মাঠে নামবে। এই শিক্ষানীতি দিয়া আগে মানুষকে লাইনে আনা হোক, তারপর না হয় মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডা বাদ দেওয়া যাবে।
@পৃথিবী,
সহমত আপনার সাথে। একবারে সব হবেনা, ধীরে ধীরে লাইনে আনতে হবে… সমকালে দেখলাম জাতিয়তাবাদী শিক্ষক সমিতি তিনমাসের কর্মসুচী দিয়েছে, এই শিক্ষানীতিতে নাকি ধর্মকে নশ্বাত করার নীলনকশা আকা হয়েছে। এবার সামলান ঠেলা! ধন্যবাদ।
@পৃথিবী,
সহমত।কবীর চৌধুরীর মত সংশয়বাদী নাস্তিকেরও পরিস্থিতি সামাল দিতে দোয়া পড়ার অভিনয় করতে হয়েছিল।মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ধর্মশিক্ষার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সব ধর্ম সম্পর্কে জানা ও সহনশীলতার কথা বলেছেন।কোন ধর্মের শাস্ত্র সহনশীল?আর শুধু কবীর চৌধুরী ও জাফর ইকবালের পক্ষে একটা সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ণ করা অসম্ভব।অধিকাংশ লোকই ধার্মিক ও ধর্মান্ধ।
@পৃথিবী,
এখানটিতেই আমি আপনার সাথে দ্বিমত করি। এটাকে আপনি বা যারা (গতকালের প্রথম আলোতে জাফর ইকবাল স্যারও সেরকম দাবী করেছেন দেখলাম) সেক্যুলার শিক্ষানীতি প্রণয়নের পায়তারা বলছেন- সেটার সাথে সম্পূর্ণই দ্বিমত। “সেক্যুলার শিক্ষানীতি ইসলামী”- না হইলে কি হবে সেটা তো পরের বিষয়, কথা হলো শিক্ষানীতি ইসলামী হলে আর সেটাকে সেক্যুলার বলা যায় কি না? ফলে- আপনার ভাষাটা যদি এমন হয়- এমন ইসলামী দেশে সেক্যুলার শিক্ষানীতি করাটা অসম্ভব- বা ইসলামী শিক্ষানীতি না করলে বাঙালি মুসলামান মাঠে নামবে… ইত্যাদি বললেও তাও মানানসই হয়; কিন্তু আপনার বলা “সেক্যুলার শিক্ষানীতি” একইসাথে “ইসলামী” হতে পারে সেটাই বোধগম্য আমার হচ্ছে না।
আর, যদি বঙ্গীয় মুসলমানদের জু জু যদি প্রকৃতই ওনাদের কাছে এত বড় হয়ে থাকে- তাহলে ওনাদের ঐ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটিতে যাওয়ারই কোন দরকার ছিল বলে মনে করি না। জাতীয় খতিবরে দিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলে যে জিনিসগুলো পয়দা হতো- সেই একই জিনিস যদি দুএকজন সংশয়বাদী নাস্তিক- প্রগতিশীল হিসাবে পরিচিত মানুষের হাত ধরে আসে- তবে তার পরিণতি ভয়াবহ। কেননা, যদি একজন খতিব প্রাক প্রাইমারীতেই ধর্মীয়/নৈতিক শিক্ষার প্রস্তাব করতেন (সেটা আবার মসজিদ-মন্দির-উপাসনালয়ে)- তাহলে আমরা সকলে মিলে তারে ও সেই শিক্ষানীতিরে তুলা ধুনা করতে পারতাম, (এই মুক্তমনাতেই কত পোস্ট আসতো সেটা কল্পনা করুন) – কিন্তু কবীর চৌধুরী ও জাফর ইকবাল স্যারেরা যখন এর সাথে যুক্ত- তখন মোল্লারা চিল্লাফাল্লা করছে- আর জাফর ইকবাল স্যার কলাম লিখে প্রমাণ করার চেস্টা করছেন- এটা খুব সেক্যুলার!!
(কল্পনা করুন- বাংলাদেশে মুসলিম ব্লকে জনপ্রিয় একজন মোল্লা/খতিবরে দিয়ে যদি এমন একটা শিক্ষানীতি বাইর করা যেত- যেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপারে/পক্ষে সামান্য কিছু প্রস্তাব রাখা হলো- আর, প্রাথমিক লেভেল থেকে ধর্ম শিক্ষা তুলে দেয়া হলো ও মাধ্যমিক লেভেলে ধর্ম শিক্ষা রাখা হলো- কিন্তু ঐচ্ছিক করা হলো। এর ফলাফলটা কেমন হবে? আমরা নাস্তিকেরা তারপরেও চিল্লাফাল্লা করবো- কেন একজন মোল্লারে দিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলো- কেন মাদ্রাসার এই সব প্রস্তাবনা রাখা হলো.. ইত্যাদি- এই চিল্লাফাল্লা টেকনিক্যল কারণেই করতে হবে বৈকি- আর উল্টোদিকে- মোল্লা সাহেব, তার ব্লকরে মানে অপরাপর মোল্লাদের রাগ প্রশমনে- কলাম ধরবেন- নাহ এই শিক্ষানীতি যথেস্ট ধর্মবান্ধব- এটা মোটেও সেক্যুলার না- দেখ না সেক্যুলার না বলেই নাস্তিকেরা কেমন চিল্লাফাল্লা করছে…… ইত্যাদি) ===>> আমার মনে হয়েছে- বর্তমানে যা হচ্ছে তা ঠিক এটার বিপরীত।
আমি অবশ্যই দোষ দেই। তবে হ্যা কেবল ব্যক্তি কবীর চৌধুরী বা জাফর ইকবাল স্যারকে দোষ দেই না, ব্যক্তি হিসাবে দুজনই চমৎকার- বিশেষ করে জাফর ইকবাল স্যারকে যতখানি চিনি- তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। সমস্যাটা আসলে আমাদের দেশের পুরা সাংস্কৃতিক জগতেরই। এখানকার সমস্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, সমস্ত বুদ্ধিজীবিই (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) বেসিক্যালি আওয়ামিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন দল আওয়ামিলীগ- সেখান থেকেই শুরু, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসীম আনুগত্য- এখানকার আবহাওয়াকেই তেমন বানিয়েছে। ফলে- এরা আওয়ামিলীগরে একটু আলাদা চোখে দেখেন।
আওয়ামিলীগ যে কোনমতেই ৭১ এর চেতনাকে আর ধারণ করে না, ৭২ এর সংবিধানের মূল চারনীতি থেকে তারা কবেই সরে এসেছে, তারা যে আর কোনমতেই সেক্যুলার দল নয়- সেই উপলব্ধিই এদের এখন পর্যন্ত হলো না। ফলে- আওয়ামিলীগের শিক্ষানীতিও যে সেক্যুলার হতে পারে না- ৯০ এর দশ দফার আলোকে হতে পারে না, সেই ধারণাই তো এদের হয় না।
অবশ্যই কবীর চৌধুরী আর জাফর ইকবাল স্যার আওয়ামিলীগের এহেন কুপমুন্ডুক শিক্ষানীতি প্রণয়নের দোষে দোষী। কি আর করার আছে- এটা কখনোই যুক্তি হতে পারে না- সেটা হচ্ছে অজুহাত। আর, এই অজুহাতটাও গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ যে জিনিসটা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পর্যন্ত ছিল না সেটাই এখানে ঢুকানোর পেছনে এমন অজুহাত কি চলে? তিন-চার বছরের বাচ্চাকে মসজিদ মন্দিরে পাঠানো হবে? তাদের ধর্মীয়/নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে? অ/আ শেখানোর আগেই অ/আ শেখানোর বয়সেই আপনি একটা বাচ্চাকে উপাসনালয়ে পাঠাবেন? এটা তো খোদ ধর্মীয় নেতারাও দাবী করে বলে মনে হয় না!!
ভাইরে রাজনীতি নিয়া ঝাড়া ঝাড়ি কইরা লাভ কি?
একবার বিএনপি,একবার আওয়ামিলীগ আবার একবার আওয়ামিলীগ,আবার বিএনপি এভাবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে চঅ অ অ অ অ অ অ অলতেই ই ই ই ই ই ই থাকবে…………….infinite
আমরা আম জনতা সর্বদাই মাইনকার চিপায়।
উপায় কি? জামাতরে তো জিতান যাইবোনা, এরশাদতো হিসাবেই নাই। 🙁