রাষ্ট্রের কথা এবং মানুষের কথা বলতে গেলে ধর্ম ও শ্রেনী বিভেদ এই দুইটি প্রসংগ চলে আসে অবধারিত ভাবে। আমার কাছে ধর্ম মানুষের ভাষার মতই একটি অংশ। পৃথিবীর সমস্ত কিছু যেমন গতিশীল, সর্বদা পরিবর্তনশীল, তেমনি ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি সর্বদা পরিবর্তনশীল। এক সমাজের ভাষার সাথে অপর সমাজের ভাষার সংমিশ্রনের ফলে তাদের মাঝে এক ধরনের আদান প্রদান ঘটে। সে পরিবর্তন খুব ধীরে ঘটে থাকে, কিন্তু তা চোখে পড়ার মত। আজ আমাদের ভাষায় ইংরেজীর অতি মিশ্রন, সেরকম একটি রুপান্তর এর বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংস্কৃতিতে হিন্দি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উপস্থিতিও চোখে পড়ার মত। এ ধরনের পরিবর্তন আমার আপনার ভাল লাগুক বা না লাগুক তাতে সমাজের কিছু আসে যায়না। আপনি আপনার সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম আরো বেশি করে আকঁড়ে ধরতে পারেন। তাতে পরিবর্তনের গতিটাকে কমাতে পারবেন কিন্তু প্রতিরোধ করতে পারবেন না। একে আমি তুলনা করবো নদীর প্রবাহের সাথে। আপনি বাঁধ দিয়ে নদী প্রবাহকে থামাতে পারবেন না, সে যেদিক দিয়ে পারবে সেইদিক দিয়ে বয়ে যাবে। মানুষের মাঝে পরিবর্তনটি সেরকম। যখন তার মাঝে পরিবর্তন এর জোয়ার আসবে তখন সে নিজের অজান্তেই সে জোয়ার এর অংশ হয়ে যাবে। এটাই মানুষের চরিত্র।
সেইদিন হয়তো বেশী দূরে নয়, সহস্র বছর কিংবা তারও কম সময়, যখন মানুষের মাঝে কেবল একটি ভাষা, একটি সংস্কৃতি, একটি শ্রেনী এবং একটি ধর্ম বিদ্যমান থাকবে। সেই ধর্ম হবে মানব ধর্ম। যেখানে কোন মহাপ্রভু বসে থাকবে না মৃত্যুর পরে পাপীদের শায়েস্তা করার জন্য। যেখানে সকল মানুষ হবে আক্ষরিক অর্থে সমান। যেখানে মানুষকে কোন কাল্পনিক মহাপ্রভুকে উদ্দেশ্য করে সেজদা করতে হবে না। যেখানে মানুষ নিজেই তার নিয়তি ঠিক করবে। বিজ্ঞান হবে তার পথ পদর্শক। যে বিজ্ঞান মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করবে, নয় ধ্বংসের জন্য।
শ্রেনীভেদ মুক্ত সমাজ হতে পারে সবার শেষ পর্যায়ে। তার আগে মুক্ত হতে হবে ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতির বিভেদ। যতদিন এই বিভেদগুলোর একটিও বর্তমান থাকেব ততদিন শ্রেনীবিভদ থাকবে। তবে এটা ঠিক যে, সবকিছুর মত মানুষের শ্রেনী বিভেদও সাম্যব্যবস্থার দিকে থাবিত হচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃত শ্রেনীবিভেদ দূর করা সম্ভব কেবল শ্রমের প্রয়োজন বিলুপ্তির মাধ্যমে। যখন শিল্প-কারখানায় কিংবা বাসা বাড়িতে কিংবা অফিস আদালতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ গুলো সয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অথবা রোবটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে তখ্ন শ্রমের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। উন্নতদেশ গুলোয় জনসংখার ঘাটতি থাকায় তারা সব ক্ষেত্রেই কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থার ব্যবহার বেশি করছে। সেখানে মানুষের জীবনযাত্রার মান এক ধাপ এগিয়ে অনুন্নত দেশগুলোর তুলনায়। তবে যতদিন মানুষের আধিক্য থাকবে ততদিন মানুষ নিজের প্রয়োজনেই শ্রমের প্রয়োজন বাচিয়ে রাখবে। শ্রমিক শ্রেনীর আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলে গেলেই শ্রেনী বিভেদ দূর হয়ে যাবে না। শ্রমিক শ্রেনী ক্ষমতার অংশ হয়ে গেলেই শ্রমের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে না। তবে শ্রমিকদের নুন্যতম মৌলিক আধিকারগুলো (খাদ্য, বাসস্থান, চিকিত্সা, এবং শিক্ষা) বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি, এবং তার জন্য আন্দোলন হতে পারে। প্রকৃত শ্রেনীবিভেদ মুক্ত সমাজ একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
সেরকম প্রকৃত ধর্ম বিভেদ দূর হওয়াও দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে এই ঈশ্বরযুক্ত ধর্ম হতে মানুষ মুক্ত হতে পারবে। মানুষের মনে ঈশ্বরের এই অবস্থান মানুষের জন্ম লগ্ন থেকেই। আমারা যদি একটু মানব সভ্যতার ইতিহাসটিকে পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাই যে মানুষ চরিত্রগত ভাবে খুব দুর্বল প্রকৃতির। কিন্তু তার বেঁচে থাকার আকাঙ্খা অত্যন্ত প্রবল। যে কোন অবলম্বনে সে বেঁচে থাকতে চায়। মানব সভ্যতার একদম আদিম যুগে যখন সে কিছুই জানতো না, তখন সে রাতের অন্ধকারকেই ভয় পেত। সে কামনা করতো যেন এই অন্ধকার চলে যাক, এবং সুর্য যেন অতিসত্বর চলে আসুক। পরবর্তীতে যখন সুর্য উদয় হয়, সে ভাবে কেহ তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছে। সেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক তার কাছে প্রাধান্য পায় তার সাময়িক মুক্তি, এবং তাতেই সে আনন্দিত। অতপর সে যখন আগুন আবিষ্কার করলো, রাতের অন্ধকারকে তার আর তেমন ভয় লাগে না, কিন্তু এখনো প্রাকৃতিক দূর্যোগকে তার ভয় লাগে। ওই কালো মেঘ, বিকট শব্দে পতিত বজ্রপাতকে তার বড় বেশি ভয় লাগে। সে গুহায় বাস করিতে শিখল। সংঘবব্ধ ভাবে বাস করা শিখল। কৃষিকাজ, পশুপালন করা শিখল। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ, মহামারী রোগ, অনিশ্চিত বিপদ তাদের পিছু ছাড়ে না এবং ঈশ্বরের প্রয়োজনও তাদের ফুরিয়ে যায় না।
মানুষে মানুষে ছোট পরিবার হয়, পরিবার থেকে সমাজ হয়, বিভিন্ন গোত্র হয়। গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ হয় পানির জন্য, খাবারের জন্য, নারীর জন্য, ক্ষমতার জন্য, সর্বোপরি বেঁচে থাকার জন্য। সেই যুদ্ধে জেতার জন্য ঈশ্বরের প্রয়েজনীয়তা নুতন করে অনুভিত হয়। ধীরে ধীরে সভ্যতার বিকাশ ঘটে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজ, গোত্র, মিলে রাষ্ট্র গঠিত হয়। রাষ্ট্র মানুষের দায়িত্ব নেয়। মানুষ কাজ করে নিজের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য। মানুষ এখন অনেক সংগঠিত। মানুষের হাতে ব্যবহার করার জন্য অনেক নুতন যন্ত্র, যা দিয়ে সহজেই পর্যাপ্ত ফসল ফলানো সম্ভব হয়। এই প্রথম কিছু মানুষের হাতে বাড়তি সময় থাকে চিন্তা করার জন্য। মানুষ চিন্তা শুরু করে। প্রশ্ন করে কে আমি? কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন? ঈশ্বর কে? ঈশ্বরের অবস্থান কোথায়? দেখা যায় ঈশ্বর সম্পর্কে তাদের ধারনা মোটেই পরিষ্কার নয়। কিন্তু ঈশ্বরের প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে। ঈশ্বরকে তারা অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখাতে সাহস পায়না। তাই ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করা তাদের বিশেষ প্রয়োজন। ঠিক এরকম একটি সময়ে মানুষ ঈশ্বরকে কল্পনা করে, রুপায়িত করে এবং হরেক রকমের বিশেষণে ভুষিত করে। কিন্তু রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সে সংজ্ঞা, বিশেষণ ভিন্ন হয়। যার দরুণ পূর্বে যে যুদ্ধ ছিল শুধু রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্র, তা এখন হল ঈশ্বর বনাম ঈশ্বর। এই ঈশ্বর বনাম ঈশ্বরের যুদ্ধ আজো সভ্য সমাজে বংশ পরম্পরায় আমরা বয়ে চলছি।
যুদ্ধ মানুষকে আরো অমানুষ করে দেয়। মানবের যে মানবীয় গুণগুলো মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীবে পরিনত করে সে গুণগুলো চাপা পড়ে গেল যুদ্ধের মানসিকতার ফলে। হিংসা, বিদ্বেষ, শ্রেনীভেদ বহুগুনে বেড়ে গেল এবং তা মানুষের চরিত্রের অংশ হয়ে গেল। এর মাঝেও বিক্ষিপ্ত কিছু মানুষ সর্বদা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, যাদের আমারা বলে থাকি দার্শনিক। কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষের তুলনায় সে সংখা ছিল এতই নগন্য যে তারা শুধু ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল। এর মাঝে কিছু ঈশ্বর প্রেরিত দাবীকৃত কিছু পুরুষ এর আগমন ঈশ্বরের মহিমাটিকে আরো কয়েকগুনে বৃদ্ধি করে দিল এবং বলা যায় আমাদের ধর্মের সাম্যবস্থায় যাওয়াটিকে সহস্র বছর পিছিয়ে দিল। বলাই বাহুল্য ঈশ্বরের হাত ধরে তাদের সাম্রাজ্য সারা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়লো অগনিত মানুষের প্রানের বিনিময়ে। যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা, শোষনের প্রয়োজনীয়তা আর দূর্বল মানুষের ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা কখনই বিলীন হয়নি মানুষের মন থেকে।
তারপর শুরু হয় সভ্যতার নুতন যুগ। বিজ্ঞানের যুগ, যুক্তির যুগ। মানুষ বিজ্ঞানকে চিন্তে শুরু করেছে। মানুষ যুক্তিকে বুঝতে শুরু করেছে। মানুষ শুধু প্রশ্ন করতে শিখেনি, মানুষ শিখেছে কিভাবে ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন করে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু আবিষ্কার করতে শুরু করেছে। এক একটি বিজ্ঞানের আবিষ্কার তাকে আরেকটি নুতন আবিষ্কারের নেশায় মাতিয়ে তুলে। কিছু মানুষ এখন আর নিজেদের নিয়ে চিন্তা করে না। তারা সমগ্র মানবকূলের কথা চিন্তা করে। বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কার তাই মানুষের জীবন ধারাকে বদলে দিল। গাড়ি হল, জাহাজ হল, কল কারখানা হল। পৃথিবী গতিময় হল, পৃথিবী ছোট হয়ে এল, একে অপরের কাছাকাছি হল, ধর্ম ভাষা সংস্কৃতির আদান প্রদান হল। কিন্তু মানুষের মাঝে লুকায়িত স্বার্থপরতার বীজ কখনই দূর হয়নি। তাই বিজ্ঞানের অগ্রগতি সত্বেও কিছু মানুষের হঠকারিতার জন্য শুরু হল নুতন সমস্যা, যার নাম সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদের নেশায় এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিল। এই সাম্রাজ্যবাদ এসেছে কখনো পুজিবাদী রাষ্ট্র থেকে, কখনো সমাজতন্ত্রবাদী রাষ্ট্র থেকে আবার কখনো ধর্মবাদী রাষ্ট্র থেকে। ধর্মবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, পুজিবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ সব সমার্থক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের জয়যাত্রা কখনই থেমে থাকেনি। মানুষ যত বেশী জেনেছে, মানব ধর্ম তত বেশী সমৃদ্ধশালী হয়েছে। মানুষ জেনেছে কেন প্রতিদিন সূর্য অস্ত যায় আবার ঊদিত হয়, মানুষ জেনেছে কেন কালো মেঘ হয়, কেন বজ্রপাত হয়, কেন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হয়, কেন মহামারী হয়। তাই ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে এসেছে পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছে।
কিন্তু আজো মানুষের মাঝে সংঘাত রয়েছে। এখনো সাম্রাজ্যবাদ রয়েছে, শ্রেনী বিভেদ রয়েছে, শোষণ রয়েছে, অনিশ্চয়তা রয়েছে। আগে যে মানুষের অনিশ্চয়তা ছিল শুধু রাতের অন্ধকারে, কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে আজ সেটা ভর করেছে এক বেলা খাবার আয়োজনের অনিশ্চয়তায়, ক্যান্সার এইডস এর মত প্রানঘাতী রোগের অনিশ্চয়তায়, আত্মঘাতী বোমা হামলার মত অনিশ্চয়তায়। বিজ্ঞান এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আজো আমরা সকল রোগকে জয় করতে পারিনি, এবং যা পেরেছি তা সকল মানুষের দুয়ারে পৌছে দিতে পারিনি। তাই আজো মানুষ অসুস্থ হলে, প্রিয়জন মৃত্যুর মুখোমুখি হলে কিংবা অজানা বিপদের সম্মুখিন হলে ঈশ্বর এর উপর ভরসা করে। ঈশ্বরের প্রয়োজন আজো তাই ফুরিয়ে যায়নি অনেক মানুষের কাছে।
তাই বলে কি আমরা ঈশ্বর বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করবো? অবশ্যই নয়। তারা দুর্বল বলেইতো তাদের কাছে ঈশ্বর এর প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। তাদের হাতটিকে যদি একটু সবল করে দেওয়া হয় তাহলে সে প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। তাই ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনাকারী সকল নিরীশ্বরবাদীদের বলবো- কল্পনার ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ করা চলে না। আপনার যুদ্ধ ঘোষনায় সে আরো বেশী ভীত হয়ে পড়বে এবং আরো বেশী করে ঈশ্বরকে আকঁড়ে ধরবে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যান বিপুল গতিতে, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করুন, দেখবেন তাদের ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে আজি হতে সহস্র বছর পরে।
ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্ম বর্বরতার প্রতীক হিসেবে আপনারা গ্রহণ করতে পারেন তবে অন্যান্য ধর্মও এথেকে মুক্ত নয়। বিশেষ করে মহম্মদের শান্তি চুক্তি ভঙ্গ ,প্রাচীন পারস্য তথা ভারতবর্ষে ইসলামের নামে হাজার হাজার লোক হত্যা,তুর্কীদের কনস্ট্যান্তিনোপল আক্রমণ, ইসলামের তরবারি তৈমুর লং এর কীর্তিকলাপ,সিরিয়ায় ম্যারোনাইট খ্রিস্টানদের হত্যা, ইহুদিদের স্বভূমি ত্যাগে বাধ্য করা এগুলি কোন সভ্য ভদ্র মানবতা তা আমার জানা নেই।
আরেকটা গুরুত্ব পূর্ণ জিনিস লিখতে ভুলে গেলাম।
আমাদের আশে পাশে সবাই এত ধার্মিক-তাহলে ধর্মকে কি ভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো সব থেকে ফলপ্রযূ? বা লোকজন যখন আমাকে দেখিয়ে বলছে তুমি এই সব আচার আচরন মানছ না-তখন তোমার যুক্তি কি? লোকে যখন বলছে ধর্ম মানছ না -তাই আল্লা পাপ দেবে-তখন কি বলা উচিত তাকে?
তখন কি আস্তিক -নাস্তিক বিতর্ককে সামনে নিয়ে আসা উচিত?
আমি এটা করি না। আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কে যাই না। আমি শ্রেফ বলে দিই-আমার একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ছেলে-পুলে মানুষ করা-ভবিষ্যত প্রজন্মের সবার উন্নতির জন্যে করা। এর সাথে ধর্মীর আচরনের কোন সংযোগ খুঁজে পাই না। অনেকেই বলবে কেন? ছেলের জন্যে মানত কর! পুজো দাও ইত্যাদি? আমি বলি এগুলো ইয়ার্কি মারা কথা বার্তা না?
পুজো করে যদি ছেলে মানুষ করা যেত বা আল্লার কাছে দোয়া করলেই ছেলে মানুষ হয়ে যেত, তাহলে পৃথিবীতে ধার্মিক এবং ঈশ্বর বিশ্বাসীদের ছেলেপুলেরাই মানুষ হত! পশ্চিম বাংলার দিকে তাকালে উলটোটাই দেখা যায়। সব থেজে ভাল ছাত্ররা মূলত প্রগতিশীল বাম পরিবারের ছাত্র-যারা ধর্ম থেকে উদাসীন। তাছাড়া যত বড় বড় বিজ্ঞানীদের দেখেছি তারা ত স্বভাব ধর্মেই নাস্তিক-শুধু তাই না-এখানকার যত শিল্পপতি বা সি এই ও , বিরাট উকিল বা ডাক্তারদের থেকেছি-তাদেরও প্রায় ৯৫% নাস্তিক। সুতরাং আমার অভিজ্ঞতাই বলে দিচ্ছে নাস্তিক থাকলেই ভবিষ্যত প্রজন্মের মঙ্গল। কারন তাতে তাদের স্বাধীন চিন্তার বিকাশ হবে-যাতে করে তারা মননশীল নাগরিক হতে পারে-জীবনে ও উন্নতি করতে পারে। পেশাদারী জীবনে ধনতন্ত্রে আমাদের মূল্য হচ্ছে কে কত সঠিক এবং বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেই ভিতটা কি আস্তিকের মতন ধর্মীয় জীবন যাপন করলে নিজের ছেলে মেয়েকে দিতে পারব?
এর পরের প্রশ্ন হচ্ছে-যেটা নির্ঘাত পাবেন-তাহলে এত লোক ধার্মিক তাদের ছেলেপুলে মানুষ হচ্ছে না। নিশ্চয় হচ্ছে। কিন্ত সংখ্যাতত্ত্ব বা নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পরিস্কার ভাবেই দেখা যাচ্ছে নাস্তিক লোকেদের [ বা যারা ছেলে মেয়েদের ওপর ধর্ম চাপায় নি] ছেলে মেয়েরা সমাজে আরো অনেক বেশী প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
কিন্ত কেন এই আর্গুমেন্ট আনি? কারন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মাত্রই বোঝে প্রতিষ্ঠানিক ধর্মের চেয়ে ছেলে মেয়ে মানুষ করা জীবনে অনেক বড় ধর্ম। এটা নিয়ে দ্বিমত আজ পর্যন্ত পাই নি-সেই লেভেলের ধর্মান্ধ এখনো দেখি নি। সুতরাং এই পথে আর্গুমেন্ট দিলে, আস্তিক বা নাস্তিক একটি সাধারন উদ্দেশ্যকে লক্ষ্য করে তর্ক করে-যে আসলে আমাদের উদ্দেশ্যটা এক। কিন্ত আমি নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাই দেখে, ভালোটা বেছে নিয়েছি। আসলে সে তখন আমার নাস্তিক হওয়ার ব্যাপারটা কিছুটা হলেও এপ্রিশিয়েট করে-কারন তার আসল যে ধর্ম তার সাথে ত আমি সহমত। পার্থক্যটা পথের।
এই ভাবে আমি যখন নাস্তিকতার যুক্তি দিয়ে থাকি, তখন দুটো ব্যাপার হয় (১) আস্তিক দের সাথে সংঘাত এড়ানো যায় (২) অধিকাংশ আস্তিক মনে করে নাস্তিকরা যৌন স্বাধীনতার জন্যে নাস্তিক হয়। কিন্ত যখন শোনে , জীবনের আসল উদ্দেশ্যের সাধনের জন্যে কেও নাস্তিক -তাতে তাদের কিছুটা ভরসা বারে।
ঈশ্বর আছে কি নেই-সেই যুক্তি আগে দিতাম। ওগুলো কোন কাজে আসে না। কারন তার সাথে মানুষের জীবনের আসল উদ্দেশ্যের কোন সম্পর্ক নেই।
@Biplab Pal,
সহমত। ঠিক একই কথাটিই আগের মন্তব্যে বুঝাতে চেয়েছিলাম। ঈশ্বর আছে কি নেই তার চুড়ান্ত উপসংহারে পৌছানো যায় না। তাই তর্ক শেষে সেই তিমিরেই থাকা হয়। এর চেয়ে প্রমান করা সহজ যে মানব ধর্মটি কি হওয়া উচিত। নীতিবোধ কিভাবে আসে। নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে ঈশ্বর না মানলে, পাপ-পূন্যের বিচারের ভয় না থাকলে, স্বর্গ-দো্যগ না থাকলে মানুষের মাঝে নীতি বোধ জন্ম নিবে না। কিন্তু একজন মানুষকে যদি দেখানো যায় যে ধর্ম গ্রন্থ ছাড়াও, আল্লাহর প্রতি ভয় ছাড়াও, কিছু মানুষের মাঝে নীতিবোধ আরো বেশিই আছে, তাহলে আরো বেশি কাজ হবে। নীতিবোধ নিয়ে একদিন লেখার ইচ্ছে আছে। আজ এটাই বেশি সত্য যে, ঈশ্বর আছে কি নেই সেটার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীতে কোন প্রথাগত ধর্মের প্রয়োজন নেই। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি এটাই বলি যে ঈশ্বর থাকা বা না থাকার সাথে আমার মূল্যবোধ বা নীতিবোধ এর কোন পার্থক্য হবে না। ঈশ্বর থাকলেও আমি মানুষের ভালোর জন্য চিন্তা করে যাবো, সৎ পথে চলার চেষ্টা করবো আবার ঈশ্বর না থাকলেও সেটা করবো। শধু তোমার আর আমার মাঝে পার্থক্য এই যে তুমি বিশ্বাস করো ওই ধর্মে বিশ্বাস না করলে তুমি শাস্তি পাবে, আর আমি বিশ্বাস করি সেটা না করলেও- যদি আমি ভাল থাকি, আর ঈশ্বর যদি থাকেনও- আমার অবস্থান তোমার উপরেই হবে, নীচে নয়।
@স্বাধীন ও বিপ্লব,
আমিও আপনার সাথে মোটা অংকে সহমত। ঈস্বর আছে কি নেই এটা একটা অর্থহীন বিতর্ক যার কোন ভিত্তি নেই। বিতর্ক কি নিয়ে হয়? যা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে তা নিয়ে। যেখানে যুক্তিবিহীন বিশ্বাস হল মূল সেখানে বিতর্ক করার কোন মানে হতে পারে না। তাই অবধারিতভাবে একসময় এ বিতর্ক ব্যাক্তিগত আক্রমন প্রতিআক্রমনে ঠেকে।
তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে কে আস্তিক কে নাস্তিক বলে নিজেকে ঘোষনা করেন তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। কেউ যদি এক বা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কিন্তু প্রথাগত ধর্মীয় গোড়ামী থেকে মুক্ত থাকতে পারে তবে ক্ষতি কি? তার বিশ্বাস তারই থাক না, সে অন্য কারো ক্ষতির কারন না হলেই তো হয়।
ধর্ম এসেছে মানব জাতির কল্যানের জন্য, মত পার্থক্য নির্বিশেষে সব ধার্মিকের এতে একমত হবার কথা। তাই ধর্মের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানব কল্যান, কে কিভাবে বা কতবার আল্লাহ, ঈস্বর বা বিভিন্ন দেবদেবীকে ডাকাডাকি করল তা গুরুত্ত্বপূর্ন হওয়া উচিত না। আর ঈশ্বর আছে কি নেই এ বিশ্বাসের উপর মানুষের নীতিবোধের তেমন পার্থক্য হয় না।
তাই আপনাদের সাথে একমত হয় হয়ে বলি যে নাস্তিকদের উচিত আল্লাহ ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব নেই তা খন্ডন করতে সময় নষ্ট না করে প্রথাগত ধর্মীয় বিধিবিধানে কি কি সমস্যা তা দেখাতে, আর ধার্মিকদের উচিত তাদের প্রথাগত বিশ্বাস বা ধর্ম দিয়ে মানব জীবনের কি উন্নতি বা অবনতি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করা। এভাবে দু শ্রেনীর সমন্বয় হতে পারে।
আস্তিকদের যেমন উচিত না নাস্তিক মানেই ভয়াবহ বদলোক এমন ধারনা বর্জন করা তেমনি নাস্তিকদের ও মনে রাখা উচিত যে প্রথাগত ধর্ম মানেই সবকিছু খারাপ তা নয়। অভিজ্ঞতারও তো মূল্য আছে। প্রথাগত ধর্মগুলি যেহেতু বহু পুরানো, তাই সেগুলিতে অশরীরি গডের বাণী না থাকলেও মানূষের অভিজ্ঞতাবশত জ্ঞান বা মূল্যবোধ থাকতেই পারে। সেগুলির থেকে তাই হয়ত শেখার কিছু থাকে।
@আদিল মাহমুদ,
। একেই বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। তবে ব্যাপার সাপার অত সহজ না-এব বলার পরেও বিবেকানন্দ ফলোয়ারদের অনেকেই পূজো আর ঈশ্বরেই পচছে। কিছু মাত্র লোক, এটাকে মানতে পেরেছে। তাই আমি খুব সিউর না, এই ভাবে প্যাকেজ করে কিছু হতে পারে। সেই চেষ্টা বিবেকানন্দ করেছেন ত। তার ফল কিছু ভাল হয়েছে-কিন্ত সেটা নগন্য সমাজ বদলের জন্যে।
@বিপ্লব,
আমিও জানি যে আমি সমস্যার অতি সরিকরন করে ফেলছি। আমি আসলে খুব মোটা দাগে সমাধানের পথ খুজেছি, যাকে বলা যায় ফ্রেময়ার্ক।
যেকোন একটি ধর্মে বিশ্বাস খুব গভীর হলে তা থেকে অন্য মানুষের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা খুব প্রবল মাত্রায় থাকে। ধার্মিকদেরই দায়িত্ব বেশী বর্তায় যেন তাদের ধর্মকে কোনভাবেই ঘৃণা সৃষ্টির উপায় হিসেবে ব্যবহার না করা যায় সেভাবে রিফর্ম করা। তাদের বোঝা উচিত যে তাদের ধর্ম মানব উপকারী তা দেখাতে পারলে আপনা থেকেই অন্যরা সে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবে। কোন রকম ভয় ভীতি হুমকির দরকার হবে না।
সুচিন্তিত ও সুন্দর প্রবন্ধ।জানি না কেন রেটিং এর লিঙ্কটা দেখা যাচ্ছে না!তবে বলে দিচ্ছি ১০ এ ১০!!
মানবসমাজে আদৌ সাম্য আসবে কিনা তা জানি না।তবে বিজ্ঞানের কল্যাণে বৈষম্য কমে যাবে।কিন্তু অবাক লাগে মানুষের স্বার্থবুদ্ধির কথা ভেবে।মানুষ কি তখনো শোষণের নিত্য-নতুন উপায় খূঁজে বের করবে না?কিছু মানুষ যদি স্বভাবতই স্বার্থপর না হত,তাহলে তো পৃথিবীর ইতিহাস সাম্যেরই হোত,হানাহানি থাকতো না।
ধর্ম আমার জীবনকে এতদূর নষ্ট করেছে যে আমি যে শার্লক হোমসের মত ৭% কোকেন নিচ্ছি না এটাই মাঝে মাঝে অবাক লাগে।
তবুও ধার্মিকদের ঘৃণা করা যায় না।কারণ এদের মধ্যে অনেক অনেক ভালো মানুষ আছে।
তবে জানতে ইচ্ছে করে ধর্মীয় আগ্রাসন ঠেকানোর কৌশ্লগুলো।এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের করনীয় কি?
@আগন্তুক,
ধন্যবাদ আপনাকে।
সেটাই। প্রকৃতগত ভাবেই যদি মানুষের সংখ্যা উৎপাদনের তুলনায় বেশি থাকে তবে সেখানে ডারউইনের তত্ব অনুসারেই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম থাকবেই। সেই সংগ্রামে কিছু মানুষ অসৎপথ অবলম্বন করার চেষ্টা করবেই। তবে মানুষের সংখ্যাটি যদি খুব বেশি না হয় তবে স্বার্থপর মানুষগুলো একাকী হয়ে যাবে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারেই। তবে সেটা আমাদের সময় হতে অনেক অনেক দূরের কথা যেটার কথা আমরা চিন্তা না করলেও পারি।
ধর্মের বিরুদ্ধে যেসব তরুন যুবকরা যুদ্ধ ঘোষনা করেছে, তাদের শুধু এই অভিজ্ঞতাটুকুই বলতে পারি
[১] অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাবলম্বী ত বটেই-বেশ ভাল অর্থনৈতিক অবস্থায় এলে,
তখন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা অনেক সহজ হয়-কারন সমাজকে উপেক্ষা করে চলা খুব সহজ হয়।
[২] ধর্মকে আঘাত কর-ধার্মিককে না।
[৩] সিরিয়াসলি না বলে একটু হিউমার দিয়ে যুক্তি দাও
[৪] বই এর কথা না বলে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বল
আমার সাথে ধার্মিক লোকেদের খুব একটা সমস্যা হয় না। আমি ওদের কথা শুনি। এপ্রিশিয়েট করি। আসলে ওরা যেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন [ এবং না বুঝেই] সেটা ধর্ম না-রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস। যে ধর্ম কর্ম না মানলে ছেলে মেয়েটা খারাপ হয়ে যাবে। আমি বোঝায় ছেলে মেয়েদের একই উপদেশ বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়েও দেওয়া যায় এবং উচিতও।
তবে এটাও ঠিক হিন্দুদের মধ্যে ধর্মান্ধ এখন অনেক কমে গেছে। মুসলিমদের মধ্যে এটা এখনো আসে নি-আসবে। আসতেই হবে। নইলে খেতে পাবে না। সোজা কথা।
@বিপ্লব পাল,
হক কথা।আমার মনে হয় যেহেতু ভারতবর্ষে নাস্তিক্য দর্শনের প্রাধান্য ছিল সেহেতু জিনগত ও সংস্কৃতিগত দিক থেকে হিন্দুরা ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে একটু বেশি অগ্রসর।আরব্য সমাজে এমন চর্চা না থাকায় মুস্লিমরা এই গোলকধাঁধা থেকে সহজে বেরুতে পারছেন না।আর ধার্মিকদের ঘৃণা করতে শুরু করলে নাস্তিক্যও এক ধরনের মৌলবাদে পরিনত হয়।
@আগন্তুক,
আমার মনে হয় সনাতন হিন্দু ধর্ম এতটাই অমানবিক ও অযৌক্তিক ছিল যে হিন্দুদের ধর্মান্ধতা থেকে বের না হয়ে উপায় ছিল না। ইসলাম যেহেতূ তত্ত্ব্বীয়ভাবে হিন্দু ধর্ম থেকে তূলনামুলকভাবে অগ্রসর ও আধুনিক তাই মোসলমানদের সেই চেতন এখনো হিন্দুদের মত ব্যাপকভাবে আসেনি।
তবে আমিও মনে করি যে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে অস্তিত্ত্ব বিলীন হবার দশাই হবে।
@আদিল মাহমুদ,
হিন্দু ধর্ম বলতে আদৌ কিছু বোঝায় না। আস্তিক এবং নাস্তিক এই দুই ধরনের আদি ধর্ম ভারতে ছিল। নাস্তিক্য হিন্দু ধর্ম ( ন্যায় বা সাংখ্য দর্শন-এদের মধ্যে অর্থডক্স এবং হেটারোডক্স আছে ) ইসলামের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল-কিন্ত ১% হিন্দুও তা জানত না। ৯৯% হিন্দু বা ভারতীয় যা অনুসরন করত সেটা ব্রাহ্মন্য ধর্ম। যা ইসলামের চেয়েও বিশাল বড় গারবেজ এবং অমানবিকও। ফলে বিবেকানন্দ বা রামমোহন যখন হিন্দু ধর্ম সংস্কার করা শুরু করলেন, তখন তাদের হাতে উন্নততর হিন্দুদর্শন গুলি ছিল। রামকৃষ্ণ মিশন যেমন সৎনামী সম্প্রদায়ের -যারা অদ্বৈতবাদ বা নাস্তিক্য হিন্দু ধর্মেই বিশ্বাস করে। তাবে তাতে কিছু যায় আসে না-এই মিশনের সন্ন্যাসীরা কালী কালী করে তাদের মিশনটাকে আস্তিক্য করেই তুলে ফেলেছে!
উপনিষদ অনুযায়ী নিজের জীবনে সত্যের উপলদ্ধিই ধর্ম। কি ভাবে সত্যে উপনীত হবেন, তা আপনার ব্যাপার। তবে হিন্দুধর্মের এই সংজ্ঞা মানলে প্রতিটি সত্য সন্ধানীই হিন্দু। অবশ্য আমার এত কথাই কিছু যায় আসে না-অধিকাংশ হিন্দু হিন্দু ধর্ম বলতে এসব বোঝে না-কিছু গারবেজ বোঝে যা ইসলামের থেকেও বাজে। তবে সমাজ বিজ্ঞানের দিক থেকে, হিন্দু ধর্মে যেটা সুবিধা-এখানে বই এর চেয়েও গুরুর গুরুত্ব বেশী। ফলে হিন্দু ধর্ম সংস্কার সহজ হয়েছে- ইসলামে এই সুবিধা নেই। যাইহোক এসব কিছুই গারবেজ-এমন কিছু কোন কাজের জিনিস কোন ধর্মে নেই, যা আমি বিজ্ঞান থেকে পেতে পারি না। বিজ্ঞানের সত্যই আমাদের সব থেকে বড় পাথেয়।
বিজ্ঞানকে কি ভাবে ধর্মের স্থান নিতে পারে সেই নিয়ে আগে লিখে ছিলাম
@আদিল মাহমুদ,
আসলে এককভাবে কিছু বলা মুশকিল।সব ধর্মের সব নিয়মই দেশকাল নির্ভর।আমার এক স্যারের স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ধর্মতত্বের অধ্যাপিকা।স্যারের মুখ থেকেই ঘটনাটি শোনা।ওনার ক্লাসে এক শিবিরকর্মী একবার আপনি যা বললেন সেই একই কথা বলেছিল।জবাবে তিনি বলেছিলেন,যাকে তোমরা আধুনিকতা বলছ সেটা পুরনো অনেক ধর্মেই ছিল।এরপর শিবির ওনাকে মুরতাদ ঘোষণা করে।
তত্ত্বীয়ভাবে ইসলামের অনেক কিছুই যেমন হিন্দুধর্মের চেয়ে অগ্রসর,আবার পুরনো হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুধর্ম,ইহুদি ধর্ম ও খ্রীস্টধর্মের অনেক কিছুই ইসলাম ধর্মের চেয়ে মানবিক ও যৌক্তিক ছিল।যেমন মদের ওপর নিষেধাজ্ঞা হয়তো তখনকার প্রেক্ষিতে ঠিক ছিল হয়তো, কিন্তু বস্তুত এটা অযৌক্তিক।হিন্দুধর্মে এটা ছিল না।আবার হিন্দুধর্মের অবিচ্ছেদ্য বিবাহ-বন্ধন অযৌক্তিক।হিন্দুধর্মের সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর ব্যাপার হচ্ছে এখানে উদার-অনুদার সব বাণিই পাবেন।মনে হয় এগুলো ঋষিদের সোমরস পানের প্রভাব।
রামায়ণে যেমন তপস্যার অপরাধে শুদ্রহত্যার বিবরণ আছে,মহাভারতে তেমনি শুদ্র সৌতির ব্রাহ্মণত্ব-প্রাপ্তির উপাখ্যানও রয়েছে।এখানে জন্মগত জাতির অমোঘতা বর্ণিত হয়েছে তো হয়তো পরের পৃষ্ঠাতেই কর্মের গুণগান করা হয়েছে।পড়ুন…প্রচুর বিনোদন পাবেন।কাব্যগুণে হিন্দুশাস্ত্রগুলো কিন্তু দিব্যি উপাদেয়!! :laugh:
@আগন্তুক ও বিপ্লব
ধণ্যবাদ আপনাদের। হিন্দু ধর্ম যে আসলে কি তা আমি কোনদিনই পরিষ্কার বুঝি না। বেদ, উপনিষদ, ভগবতগীতা, রামায়ন মহাভারত কোনটা যে মুল ধর্ম গ্রন্থ বা প্রধান কোনটা অপ্রধান এগুলি সবই রহস্যময় লাগে।
আজ আবার আপনারা জানালেন নাস্তিক্য হিন্দু ধর্মের কথা, আমাকে আরো গুলিয়ে দিলেন। নাস্তিক্যবাদ জাতীয় কিছু আবার কেমনর ধর্ম?
হতেও পারে। ছেলেবেলা থেকে বাংলাদেশের যেসব হিন্দুদের দেখতাম তারা এক ভগবানে বিশ্বাসী, সাথে অজস্র দেবদেবী…। কারো কাছে দুর্গা বড়, কারো কাছে গণেশ? এখন আবার কিছু আধুনিক হিন্দু দেখছি (বিবেকানন্দের শিষ্য) এনারা কোন অস্তিত্ত্বওয়ালা ভগবানে বিশ্বাসী না, এনাদের মতে “কার্মা”ই হল ভগবান; মানে যেমন কর্ম এ জীবনে করবে পরজীবনে সেহিসেবে মানুষ বা পশুপাখী হবে। এটাও ঠিক বুঝি না, হিন্দুদের কাছে নরক স্বর্গের কথাও শুনি আবার কখনো শুনি যে তারা শুধু পূণঃজন্মে বিশ্বাস করে। পুরো বাপারটাই যথেষ্ট গোলমেলে মনে হয়।
নিজে যেহেতু কোন ঘটা করে কোন ধর্ম পালন বড় করে দেখি না তাই বই পুস্তক ঘেটে জানারও উতসাহ বোধ করিনি।
হ্যা, ভাল খারাপ তূলনামুলক ভাবে সব ধর্মেই কিছু কিছু থাকবে, তবে তারপরেও তূলনামুলক বিচারে মনে হয় বৌদ্ধ ধর্ম সবচেয়ে মানবিক আর ইসলাম সবচেয়ে আধুনিক এটা মনে করা ভুল হবে না।
@আদিল মাহমুদ,
আপনাকে এসম্বন্ধে মন্তব্য করতে হলে আরও পড়তে হবে,প্রত্যেক ধর্মের
দর্শন সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।তবেই একটির সাথে আরেকটি
ধর্ম তুলনার জায়গায় আপনি পৌঁছবেন।নাহলে আপনার আলটপকা মন্তব্য
সেই বিখ্যাত ইংরাজি প্রবাদকে মনে করাবে `A little learning is a dangerous thing.’
@আদিল মাহমুদ,
আপনি একটি জায়গায় ভুল করছেন।আপনি যেহেতু ‘তত্ত্বীয়’ তুলনামূলক বিচারের কথা বলেছেন,কাজেই আমিও কয়েকটি ‘তত্ত্বীয়’ উদাহরণ দিয়েছি।আপনি যদি ভারতবর্ষের দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন তো দেখবেন যে ছয়টি প্রধান দর্শনের ৫টিই নাস্তিক এবং বেদান্তও ব্যক্তি ঈশ্বরকে স্বীকার করে না।তবে রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে এটা ছিল মানুষকে ফাঁকি দেবার ‘সূক্ষ নৌকা’।কাজেই ‘দার্শনিক’ বিচারে ইসলাম কখনোই সর্বাধুনিক ধর্ম নয়,শুধু মাত্র ‘সময়ের ‘বিচারেই ইসলাম সর্বাধুনিক।আবার এটাও ঠিক যে,ভারতবর্ষে প্রচলিত ব্রাহ্মণ্যবাদের মত বর্বরোচিত ও অমানবিক ধর্ম পৃথিবীতে কমই এসেছে।এবং বৌদ্ধ দর্শনের সাথে নাস্তিক্যবাদী হিন্দুদর্শনগুলোর সাদৃশ্য এত বেশি যে পৃথক করা মুশকিল হয়ে পড়ে।কাজেই আপাতদৃষ্টিতে আপনার মতামত ঠিক মনে হলেও দার্শনিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে আমি দ্বিমত পোষণ করছি।বিপ্লবদার মন্তব্যটা পড়লাম।আমার মনে হয় তিনিও মোটামুটি এটাই বুঝিয়েছেন।
@আগন্তুক,
হাতে পারে আপনি যা বলেছেন তাই ঠিক, আগেই বলেছি আমার ধর্ম বিষয়ক কোন তত্ত্বীয় পড়াশুনা নেই। যা জানি বা বলি তার প্রায় পুরোটাই নিজের অভিজ্ঞতা বা বড়জোর কিছু মানুষজনের খন্ডিত বক্তব্যের জের।
বেদান্ত ব্যাক্তি ইশ্বরকে স্বীকার করে না তা আমার জানা ছিল না। তাই সবসময় কনফিঊজ হই যখন দেখি হিন্দুরা আমাদের আল্লাহর মতই ভগবানে বিশ্বাস রাখছেন বলে।
@আদিল মাহমুদ,
তবে বেদান্ত সম্পর্কেও আমি সংশয়বাদী।বেদান্তের মতবাদ একটু ‘হটকে’ হলেও রাহুল সাংকৃত্যায়ন যা বলেছেন,সেটা একান্তই যৌক্তিক দাবি বলে আমার মনে হয়েছে।এ ব্যাপারে কেউ আরেকটু আলোকপাত করলে বিষয়টি পরিস্কার হত।
@বিপ্লব পাল,
এই দু’টি কথায় বেশি সহমত।
তবে এটাও আমি বলবো যে ধর্মকে সরাসরি আঘাত না করে ধর্মের গোঁড়ামিকে, খারাপ দিকগুলোকে ফোকাস করা উচিত। কাউকে সাহায্য করা উচিত ধর্ম থেকে মুক্ত হবার জন্য নয়, গোঁড়ামী থেকে মুক্ত হবার জন্য। আর ধর্মের গোঁড়ামিগুলো থেকে মুক্ত হলে সেই ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে নিজেই ধর্মের বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
@স্বাধীন,
কোনটা গোঁড়ামি আর কোন গোঁড়ামি না-কে ঠিক করবে? এটা ত এগ চিকেন প্রব্লেম হয়ে গেল! আল্লাকে মানা কি গোঁড়ামি? মোটেও না!
আল্লা কোরান দিয়েছেন-এইটা? উনি থাকলে কোরান দিতেই পারেন। তাহলে এটাও গোঁড়ামো না। আবার কোরান যদি মহান আল্লার বানী হয়-তাহলে কোরান অভ্রান্ত- এটাও গোঁড়ামী? না? কারন আল্লাকে ত আপনি মেনে নিয়েছেন!!!
কি বলেন? যুক্তিতে কোথাও ভুল আছে? সেই জন্যে এই টুকু ধর্ম করলে ঠিক আছে-এটা করলে ভুল আছে-এসব ঠিক চলে না। অর্থহীন ভাবনা। ভাবতে হবে চিন্তা করতে পারছ কি না-ভালর সাথে মন্দর পার্থক্য করতে পারছ কি না-সহানুভুতি শীল অথচ সৎ হৃদয় গড়ে উঠছে কি না। স্বাধীন মন গড়ে উঠেছে কি না।
ধর্মের গোড়ামি কিন্ত অনেকটাই কমে আসছে। আজ মানুষ ধর্মে বিশ্বাষ করলেও তা পালন করা বা ক্ষতিকর প্রয়োগ গুলো কমই দেখা যাচ্ছে। পুরোপুরি নাস্তিক বিশ্ব না দেখলেও আধুনিক সমাজে তাকালে মনে হয়না ইশ্বর এর প্রেতাত্তা এখনও সমাজে ঘুরাঘুরি করে।
@হেলাল,
সেটাই। আজ অনেকেই নিজেকে নাস্তিক হিসেবে বলেন না, কিন্তু ধর্মও বেশি পালন করেন না। আরেকটি দল আছে যারা চিন্তা করেন দরকার কি সরাসরি নাস্তিকবাদী হওয়া। যদি কেউ থেকেই থাকে, তবে অন্তত বলতে তো পারবো, আমি অবিশ্বাসী ছিলাম না। তারা মনে করে এইভাবে অন্তত কিছুটা হলেও শাস্তি কম পেতে পারে!!!!!!!
@স্বাধীন,
আপনি লেখাটি বেশ ভাল লাগলো। কিন্তু আপনি যেসব কথা বললেন তা কি বাংলাদেশের মত দেশে প্রকাশ্যে বলতে পারবেন? ধরুন কোন সামাজিক অনুষ্ঠান বা কোন প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে অনেক লোকের সামনে? আমাদের বাস্তবতার কথাটা ভেবে দেখা উচিৎ। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এসব সারা জাগানো, ক্ষুরধার যুক্তিসম্পন্ন আলোচনা প্রকাশ্যে করার কোন scope নাই। বাস্তবে দেখা যায় আমরা সবাই সংখ্যায় অতি নগন্য। বেশিরভাগ মানুষ ঐ ধর্মের কাছেই আত্নসমর্পন করছে। আমাদের দেশে এত টিভি চ্যানেল। সেখানে টক শো’র অভাব নেই। এসব মুক্ত আলোচনা টক শো’র বিষয় বস্তু হতে পারতো। সেখানে ধার্মিক, অধার্মিক, আস্তিক,নাস্তিক সকলেই আমন্ত্রিত হয়ে খোলা মনের এসব আলোচনা করতে পারতেন। তাতে সাধারণ মানুষ নিজেরাই বিচার বিবেচনা করে গ্রহন ও বর্জন করতে পারতো। কিন্তু হায়! আমাদের মিডিইয়াগুলোর সেই সাহস নেই! তারা রোজার মাসে ইসলামি অনুষ্ঠানের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে। ভাবখানা এমন যে বাংলাদেশে সবাই পুত পবিত্র সাধু হয়ে গিয়েছে । আর তাদের টকশো গুলো বস্তাপচা রাজনৈতিক আলোচনায় ভরপুর থাকে। মোদ্দাকথা হলো এই দেশে প্রকাশ্যে মুক্ত আলোচনা করতে গেলে মুরতাদ ঘোষিত হবার সম্ভাবনার আছে। তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ খুলে তখন সবার মুসলমানিত্ব বের হয়ে আসে। আমাদের মত বি্ধর্মী ,কাফের,নাসারা, মুনাফেকদের জন্য মুক্তমনায়ই শেষ আশ্রয় ।
@তৃতীয় নয়ন,
এক্কেরে মনের কথাডা কইছেন তৃতীয় নয়ন। মুক্তমনা ছাড়া আমাগো জায়গা নাই। বাপ মা-ই ত্যাজ্য পুত্র বানাইবার চায় আর সমাজ তো কোন ছাড়! মুক্তমনা- জিও মেরে লাল… আর স্বাধীন কে ধন্যবাদ তার চমতকার লেখার জন্য।
@তৃতীয় নয়ন,
আপনার হতাশা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বিবর্তন প্রক্রিয়া যেমন ধীর গতির তেমনি সমাজের এই পরিবর্তন গুলোও। আপনার নিজের একটি লেখায় দেখলাম এই নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। চিন্তা করে দেখুন পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে, শুধু এই কথাটি বলা এক সময় কতটা কঠিন ছিল। আজ হয়তো ধর্মের বিপক্ষে বলা সে রকম। কিন্তু মানুষ কি বলছে না? মুক্তমনা বা সকল ব্লগেই কিন্তু এ নিয়ে তর্ক হচ্ছে, নতুন জেনেরাশেন তো জানতে পারছে। আমাদের পরবর্তী জেনেরাশেনে কিন্তু ধর্মে অবিশ্বাসীর সংখ্যা বাড়বে। আর আমাদের দেশের যা শিক্ষার হার তাতে সেই প্রক্রিয়া আরো ধীরে হবে সেটাইতো স্বাভাবিক।
আরেকটি জিনিস হল প্রকৃতির পরিবর্তন আর সমাজের পরিবর্তন সব কিছু নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মাঝদিয়ে যায়, যা আমরা হয়তো বিস্তারিত জানি না। একে কিছুটা ত্বরান্বিত করারা চেষ্টা করতে পারি কিন্তু তাতে ভালো হবে না খারাপ হবে সেটা কিন্তু বলতে পারি না। মার্ক্স যেমন বিপ্লবের মাঝে দিয়ে ক্ষমতায় যেয়ে কমিউনিষ্ট সমাজের কথা চিন্তা করেছিলেন, সেই সমাজ কি তারা রক্ষা করতে পেরেছিলেন? আমি আমার লেখায় সেটাই বলার চেষ্টা করেছি, যদি আপনি ঈশ্বর বিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধ করতে যান তবে হয় আপনি জিতবেন অথবা তারা জিতবে। এক্ষেত্রে আপনার জিতার সম্ভাবনা কম কারন তারা সংখ্যায় বেশি। যদি আপনি ধৈর্য ধরেন তবে আপনি জিতবেন।
আরেকটি হল মানুষের বুদ্ধিমত্তায় বিভিন্নতা আছে। আমার সুপারভাইজার একজন ভিন্ন ধরণের মানুষ। তিনি কখনই আমাকে একেবারে সব বলেন না, কারণ জানেন আমি নিতে পারবো না। বললেও আমি বুঝবো না। যখন দেখেন যে আমার জ্ঞানের পরিধি বেঁড়েছে তখন পরবর্তী করণীয় বলেন। এ রকম, সাধারণ সব মানুষকেই আপনি ধর্মের বিপক্ষের সবযুক্তি তুলে ধরলেই যে সবাই তা বুঝঁতে পারবে সেটা কিন্তু না। তার উপর গোঁড়ামিতো আছেই, না বুঝতে চাওয়ার মানসিকতাতো আছেই। আমি মনে করি নিজে থেকে যদি কেউ বুঝতে না চায় তবে হাজার যুক্তি দিয়ে আপনি কাউকে ধর্মে নিতেও পারবেন না আবার ধর্ম থেকে বেরও করতে পারবেন না।
ধর্মের কথা বাদই দিন। ধর্মের মতই আরো একটি বিশ্বাস হল মার্ক্সবাদ ও পূঁজিবাদ। যারা মার্ক্সবাদ পড়েন তাঁরা যে কোন মানুষের তুলনায় অনেক বেশি জ্ঞান রাখেন। আবার যারা কট্টর পূঁজিবাদী তারাও যে কম জ্ঞান রাখেন তা নয়। কিন্তু আপনি এদেরকে বুঝাতে পারবেন না যে দুটোরই ভাল এবং খারাপ দিক আছে। সুতরাং উগ্রপন্থাই আসলে খারাপ। ধর্মের ও ভাল খারাপ দু’টোই দিক আছে। পুরোপুরি ধর্ম বিহীন সমাজ এখনো অনেক দূরে। ততদিন ধর্মের ভাল দিকগুলোকে তুলে ধরা যেতে পারে। মানুষকে শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়া যেতে পারে, বিজ্ঞানের সুফল সবাইকে দিতে হবে, সবাইকে অর্থনৈতিক ভাবে সবল করতে হবে। তখন ধর্ম আপনা আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
@স্বাধীন,
তাহলে হয়তো অন্তত আমরা সেই পরিবর্তন দেখে যেতে পারবোনা। আমাদেরকে এই সংকট এবং দোটানার মধ্য দিয়েই জীবন পার করতে হবে…
@তৃতীয় নয়ন,
আপনি কি সত্য সত্যই আশা করেন যে আমরা আমাদের জেনারেশনে ধর্মমুক্ত পৃথিবী দেখবো? চারদিকে তাকিয়ে কি তাই মনে হয়?
আমি জানি না ধর্মমুক্ত পৃথিবী কখনো আসবে কিনা, তবে বলতে পারি যে আরো অনেক জেনারেশন পার হলে হয়ত বা হলেও হতে পারে।
@তৃতীয় নয়ন,
বিবর্তন প্রক্রিয়ার ফল কি যার মাঝে হয় সে ভোগ করতে পারে? পারে না। ভোগ করে পরবর্তী জেনেরাশেন। আবার তাদের মাঝে যে অভিজোযন হবে তার ফল ভোগ করবে তার পরবর্তী জেনেরাশেন। এভাবেই চলতে থাকবে। জিন্ হতে জিন্ এ। এখন এটাকে মেনে নেওয়াই কি মুক্তমনের কাজ নয়? ভাল থাকুন। আশা করি আপনার মনের হতাশা কেটে যাবে।
স্বাধীন, মুক্তমনায় স্বাগতম। লেখাটিও খুব চমৎকার হয়েছে। ভাল লাগলো পড়ে।
ধন্যবাদ অভিজিত,দা। প্রথম ধন্যবাদ আপনার সকল কর্মকান্ডের জন্য, এ রকম একটি সাইট ও ফোরাম বানানোর জন্য। আমি অনেক আগেই থেকেই মুক্তমনার পাঠক ছিলাম। মুক্তমনার কিছু প্রবন্ধ আমাকে আমার অনেক অনিশ্চয়তা দূর করতে সাহায্য করেছে। আপনার মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান লেখা পড়ে আমি নিজে মার্ক্স এর দর্শন নিয়ে পড়েছি, এবং মার্ক্স এর দর্শন নিয়ে বেশ বড় একটি সিরিজ সচলে শেষ করেছি। অনুমতি দিলে লেখাগুলো মুক্তমনার পাঠকের জন্যও দিতে পারি। সর্বশেষে ধন্যবাদ মুক্তমনায় লেখার সুযোগ করে দেবার জন্য। আশা করি পরস্পরের মিথষ্ক্রিয়ায় আমরা সকলেই উপকৃত হতে পারবো।
@স্বাধীন,
চমৎকার। আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে সত্যই ভাল লাগছে।
অবশ্যই দেবেন। আমরাও চাই ব্লগে বৈচিত্র আনতে। আমার মতের সাথে মিলুক আর নাই মিলুক, আপনার লেখা নিঃসন্দেহে হবে আমাদের জন্য নতুন চিন্তার খোরাক।
আপনি ঠিকই ধরেছেন-রোবোটিক্স, অটোমেশন আর ইনফর্মেশন-এর মিলনেই সাম্যবাদি সমাজ আসবে-এবং একটি মাত্র জাতিতেই মানব সভ্যতা কনভার্জ করবে। এই নিয়ে আমি অনেক লেখা বহুদিন থেকেই লিখছি। অনেক সমাজবিজ্ঞানীরাও বহুদিন থেকেই তাই বলে আসছেন।
অর্থাৎ সামাজিক বিপ্লব বলে কিছু হবে না-প্রযুক্তি বিপ্লবের মাধ্যমেই সমাজের আসল বিবর্তন হবে-যা প্রকৃত মার্ক্সবাদ। কারন উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন না হলে সামাজিক বিবর্তন হয় না-আর তা হয় শুধু মাত্র প্রযুক্তি বিপ্লবের মাধ্যমে। মার্ক্সের পরবর্ত্তীকালের কমিনিউজম এবং তার থেকে লেনিনের বিপ্লব-সবটা ধাপ্পাবাজি। এই সব কমিনিউস্ট বিপ্লব করতে যাওয়া মানে খামোকা কিছু রক্তপাত। সমাজের বিবর্তন তা দিয়ে সম্ভব না।
প্রযুক্তির প্রয়োগে ওয়েব দুনিয়াতে আমরা সেই সাম্যর স্বাদ আস্তে আস্তে পাচ্ছি। এখানে সবাই সমান। এটাই ক্রমশ বৃহত্তর রূপ নেবে।
সেই দিন সমাগত যেদিন পৃথিবীতে হিন্দু-মুসলমান-খ্রীষ্ঠান থাকবে না। দেশ থাকবে না। জাতি থাকবে না। থাকবে শুধু মানুষ।
@বিপ্লব পাল,
আপনার সাথে সহমত এই ব্যাপারে।
এ কথাটির প্রথম অংশের সাথে সহমত প্রকাশ করছি তবে সেটাই প্রকৃত মার্ক্সবাদ এই কথাতে দ্বিমত প্রকাশ করছি। মার্ক্স এর মেটিরিয়ালিস্টিক দর্শনের কথা যদি বলেন তবে আমি বলবো সমাজের প্রকৃতিটি তিনি বেশ ভালভাবে ধরেছিলেন। কিন্তু সমাধানের কথা যদি বলেন, যেভাবে তিনি সর্বহারাদের শাসনে সাম্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা আমার চোখে তার দর্শনের বেশ বড় একটি ভুল ছিল। এই সবই মিলেই তার মার্ক্সবাদ। তাই প্রকৃত মার্ক্সবাদ বললে আসলে কি বুঝানো হয় সেটা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। বরং এভাবে ঢালাওভাবে এটাই প্রকৃত মার্ক্সবাদ বললে অতি উৎসাহীদের উৎসাহিত করা হয়। অনেকটা কেউ যদি বলে যে এটাই প্রকৃত কোরানের ব্যাখ্যা যার সাথে বিবর্তনের বা বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। মার্ক্স এর দর্শন নিয়ে আমার নিজের কিছু লেখা আছে, যদিও বুঝতে পারছি না সেটা এই ফোরামের সাথে সামঞ্জস্য হবে কিনা।
@স্বাধীন,
মার্ক্স ১৮৬০ সালের পর থেকে যা কাজ করেছেন, তা ডগম্যাটিক কম্যুনিজম।
১৮৬০ সালের আগে পর্যন্ত তার কাজ যথেষ্টই বিজ্ঞান প্রস্যু ছিল-সেটাকেই আমি প্রকৃত মার্ক্সবাদ বলছি যা দ্বান্দিক বস্তুবাদের ওপর তৈরী-ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ওপর না।
এই নিয়ে আমার দুটি লেখা মুক্তমোনাতেই ছিলঃ
1.
http://biplabpal2000.googlepages.com/MarxistScience.pdf
2.
http://www.mukto-mona.com/Articles/biplab_pal/marxbaad_shoshonmukti.htm
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ লেখাগুলোর জন্য। সময় করে পড়বো নিশ্চয়ই। মুক্তমনার অনেক লেখাই পড়া বাকী আছে। আস্তে আস্তে পড়তে হবে।