১৫ আগষ্টের অভ্যুথানের সময় যে ভাষ্যটি গুজবের চেয়েও শক্তিশালীভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল ,যে বিবরণ সে সময় প্রকাশিত হয়েছিল সেটায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ও বিরাট ধাপ্পা । ভাষ্যটি এমন -মেজর রশিদ মেজর ফারুক ও মেজর ডালিমের নেতৃত্বে মাত্র ছয়জন জুনিয়র অফিসার তিন’শ লোক সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করে । অভ্যুথানের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছিল , শেখ মুজিব ও তার সহযোগীদের ওপর বিদেশী সাংবাদিক গোষ্ঠীর সবাই এই ভাষ্যটি গ্রহণ করে । এন্থনী মাসকারেনহাসও পরে ফারুক-রশীদের সাক্ষাতকার নিতে আগ্রহী হন । লিফশুলজও শুরুতে এই ভাষ্যেই ইমান আনেন (পরে অবশ্য মুজিব হত্যা সিআইএ কানেকশন আবিষ্কারে উদ্যোগী হন ) । বস্তুত ,বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় । তথাপি ২০ আগষ্ট কয়েকজন সাংবাদিক ব্যাংকক হয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েন কিন্তু ২২ তারিখেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয় । ঢাকায় অবস্থানের পুরো সময়টা তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তরীণ রাখা হয় । সে সময় বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে অভ্যথানের যাবতীয় তথ্যের সূত্র হয়ে দাড়ান একজন স্থানীয় বাঙালি সাংবাদিক । রয়টার ও বিবিসির বাংলাদেশ প্রতিনিধি এই সাংবাদিকের ভাষ্যই আগষ্ট ঘটনাবলীর প্রতিষ্ঠিত ভাষ্যের মুল উৎস হয়ে দাড়ায় । হোটেলে এসে বিদেশী সহকর্মীদের সাথে কথা বলেন । (সুত্রঃ মুজিব হত্যায় সিআইএ, এশিয়া পাবলিকেশন ,১৯৯৬)
এই সাংবাদিকই ( আর এনায়েতুল্লাহ খান) খালেদকে ভারতের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন । (সুত্রঃ লিফশুলজের The Unfinished Revolution, Page 64 )
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান রেডিওতে কাজ করতেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন । যুদ্ধের পর বেশ কিছুদিন তাকে জেলখানায় আটক রাখা হয় । পরে শেখ মুজিবের আদেশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় । (দ্র. বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস,অধ্যাপক আবু সাইয়িদ , পৃ ১২২ )
ইনি ’৭৫এর নভেম্বরে লন্ডন পালিয়ে যান । জাসদ তাকে নাকি নির্যাতনের হুমকি দিয়েছিল । পরে হুমকিদাতারা যখন গ্রেফতার হন এবং তাহেরের অভ্যুথান সম্পুর্নভাবে বানচাল হয়ে যায় তখন তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন । সে সময় তিনি জিয়ার সামরিক শাসনের প্রকাশ্য সমর্থক হয়ে উঠেন । ‘৭৭ সালে জিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দিলে বিদ্রোহীদের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতন । ২৭ অক্টোবর দি ফাইনেন্সিয়াল টাইমস জানায় ১০০০ জনেরও বেশি প্রধানত সিপাহি বিশেষ সামরিক আদলতে বিচারের প্রতীক্ষায় আছে । অক্টোবরের পর ৬০০ জনের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়-এই খবর জানা যায় ‘৭৮ সালের ৫ মার্চ প্রকাশিত দি সানডে টাইমস থেকে ।
এই সাংবাদিক সাহেব সশস্ত্রবাহিনীতেপাইকারী মৃত্যুদন্ডদানের পরেও শাসকদের হয়ে প্রকাশ্যে ওকালতি করেন । রবিবাসরিয় হলিডেতে ( ৩০ অক্টোবর’৭৭) ইনি এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে পথভ্রস্টদের প্রতি সহানুভুতির জন্য গাল দেন । তিনি এই গণ মৃত্যুদন্ডদানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রশ্ন করেন,”বাংলাদেশের কি করা উচিত ছিল ?এদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবে যাতে পরে আরো শক্তি নিয়ে ওরা আক্রমন করতে পারে ?”
বিবিসির এই সংবাদদাতা জিয়াকে রাজনীতিতে যোগদানের আহ্বান জানান হলিডের নিবন্ধের শেষে । ১৯৭৯ এর মার্চের দিকে জিয়ার সামরিক সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয় । তিনি প্রকাশ্যে দি গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে (১ মার্চ ’৭৯) অভিযোগ করেন, ১৯৭৯ এর ১৮ ফেব্রুয়ারী যে সংসদীয় নির্বাচন হয় তাতে জিয়া ব্যাপক কারুচুপির আশয় নিয়েছেন ।
এই সাংবাদিক আতিকুল আল্ম নাকি এনায়েতুল্লাহ খান?
আপনার মূল লেখায় আলম নেই, আছে এনায়েত।
“এই সাংবাদিকই ( আর এনায়েতুল্লাহ খান) খালেদকে ভারতের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন । (সুত্রঃ লিফশুলজের The Unfinished Revolution, Page 64 )”
এই সাংবাদিকের নাম আতিকুল আলম । ইনি বাংলাদেশে বিবিসি ও রয়টারের প্রতিনিধি ছিলেন । মুজিব হত্যায় সিআইএ আর মোশতাক চক্রের ভূ্মিকা গোপন করতে মিথ্যা ভাষ্য প্রচার করেন ।
শুরু থেকেই জিয়ার সমর্থক থাকিলেও তিনি ১৯৭৯ এর মার্চের দিকে জিয়ার সামরিক সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয় । দি গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে (১ মার্চ ’৭৯) অভিযোগ করেন, ১৯৭৯ এর ১৮ ফেব্রুয়ারী যে সংসদীয় নির্বাচন হয় তাতে জিয়া ব্যাপক কারুচুপির আশয় নিয়েছেন ।
তিনি লিখেছিলেন-”বাংলাদেশের খুব কম লোকই মানতে রাজি হবেন যে, BNP নামের এই তিন মাস বয়সী দলটির নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ দলটির নেতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মোহবিস্তার ক্ষমতা এবং তা’ ১৯৭৫ এর সামরিক অভ্যুথানে নিহত জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের চাইতে বেশী ।”
নভেম্বরের চার ও পাঁচ তারিখে এই সাংবাদিক ঢাকায় কুটনীতিকে
মহলে ঘুরে ঘুরে দাবি করেন যে তার কাছে কারান্তরীণ
বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও মুজিব মন্ত্রীসভার প্রাক্তন
সদস্য তাজউদ্দিন আহমদ-এর লেখা একটি চিঠি
রয়েছে। ভারতীয় হাই-কমিশনার সমর সেনকে লেখা
কথিত এই চিঠিতে অভ্যুত্থনের প্ল্যান ও প্রস্তুতির পূর্ণ
বিবরণ লেখা ছিল। বিদেশি কুটনীতিদের তিনি বোঝান যে, এই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল ‘ভারতপন্থী তাউদ্দিন আহমেদকে জেল থেকে বের করে এনে ক্ষমতায় বসানো। আলমের দেখানো এই চিঠির ফলে কূটনীতিকে মহলে রটে যায় যে খালেদের
অভ্যুত্থানে পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে।
তার সহযোগী সাংবাদিক বন্ধুদের মতে এধরনের
কোন চিঠির অস্তিত্বই ছিল না, পুরো ব্যাপারটাই একটা
বাজে প্রচারণা মাত্র। (সুত্রঃ লিফশুলজের অসমাপ্ত বিপ্লব )