হায়রে প্রশাসন!

সামির মানবাদী

তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি হাত ঘড়িটির দিকে। চিরাচরিত নীতিতে সেকেন্ডের কাঁটা ঘুরে চলছে ডান দিকে। কাঁটায় কাঁটায় সন্ধ্যা ৭টা। নদীর বাতাস কোমলভাবে বয়ে যাচ্ছে আমার শরীর বেয়ে। দাঁড়িয়ে আছি জেলখানাঘাট মোড়ে। না চাইতেও তারিখটা মস্তিস্কে কড়া নাড়ে চুপিসারে, বলে-আজ ৭ই মার্চ। বহু পরিচিত দৃশ্য।

আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একই পোষাকের কয়েকটি লোক-এরাই নাকি পুলিশ! মানুষের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত। চলছে তাদের সাথে আমার অনীচ্ছাকৃত বাধ্যতামূলক কথোপকথন। আলাপচারিতা শেষে এক পর্যায়ে আমি দোষী সাব্যস্ত হই। কিন্তু তা সত্ত্বেও খুলনা থানার এস,আই, রফিককে প্রশাসনিক উদারতা, মহানুভবতা, ক্ষমাশীলতা এবং আরও বহু কিছুর চলমান প্রতিকৃতি বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ, তিনি আমার ভয়ানক অপরাধের জন্য আমাকে মৃত্যুদন্ড, সশ্রম কারাদন্ড, অশ্রম কারাদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড কিছুই দেননি। এমনকি সামান্য শারীরিক নির্যাতনটূকু পর্যন্ত করেননি। তিনি সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত জনগণের রক্ষক নামের নির্বোধ, দূর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অবব্যবহারকারী, বর্বর, অযোগ্য ভক্ষক। যদিও আমি জানি, মাঠ পর্যায়ে তার রয়েছে অনেক ক্ষমতা। তিনি ইচ্ছা করলে প্রশাসনের নব আবিস্কৃত ক্রসফায়ারে- তুড়ি মেরে পাঠিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু হুজুরের দয়ার শরীর, হুজুর শুধু আমাকে কিছুক্ষণ মানসিক ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন। না, আমি দেশের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করিনি, সমাজতন্ত্রের ব্যানারে চরমপন্থী সংগঠন খুলে পুঁজিবাদীদের স্বার্থে, অর্থলোভে তাদের ভাঁড়াটে খুনী সাজিনি, রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করিনি, কোনো মুক্ত চিন্তার লেখক, সাংবাদিক অথবা বুদ্ধির কোনো জীবকেও কখনো হত্যা করিনি, স্বার্থ আদায়ের জন্য শেষ বয়সে এসে সারা জীবনে অর্জিত জ্ঞান-বুদ্ধি, ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিয়ে যোগ দেইনি কোনো নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনৈতিক দলে-করিনি তাদের দালালি, অভাবগ্রস্থ বাসার অসহায় কিশোরী কাজের মেয়েকে সারারাত একনাগাড়ে ধর্ষণ করিনি, কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়ে ভগুর অর্থনীতিকে ঠেলে দেইনি পংগুত্বের দিকে, ৩৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপির তালিকায় প্রথম স্থান দখল করিনি, অস্ত্র চালানের হোতা হইনি, দাঙ্গা বাঁধানোর প্রেরণা দেইনি, মাদক দ্বারা যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেইনি, সরকারী টাকায় বিদেশে P.H.D. করতে গিয়ে দেশে না ফিরে চিরদিনের মত সেখানে আস্তানা গাড়িনী, দূর্নীতি করিনি, কোনো প্রকার কালোবাজারির সাথেও আমার কোনো যোগসূত্র নেই, শুধু আমার অপরাধ হয়েছে সংবিধানের একটি আইন বহির্ভূত আচরণ করাটা। আমি দুঃখিত ডঃ কামাল হোসেন, আমি জানতাম না, আপনার লেখা সংবিধানের কোন সংষ্করনে এই নব্য আইনরে ধারাটি সংযোজিত হয়েছে, যেখানে প্রকাশ্যে রাস্তায় একটি মেয়ের হাত ধরে হাঁটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং যার নূন্যতম শাস্তি হল পুলিশ কর্তৃক অভিযুক্তের সপরিবার মানসিক ধর্ষণ। যার অংশ হিসেবে এস, আই, রফিক, আপনি আমার বাবাকে বলেছিলেন আপনি ভাবীকে নিয়ে enjoy করেন। মিঃ এস, আই সাহেব আপনি enjoy শব্দটি দ্বারা কি বোঝোতে চেয়েছেন, তা আমার বাবা হয়তো ভালো করেই বুঝেছেন, আমি উপলিব্ধি করতে থাকি সন্তানের জন্য কথাটি শুনে আমার বাবা ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে মাটির সাথে, ডেবে যাচ্ছে মাটির কয়েকশো হাত গভীরে। তাই এখন আর বাবা-মারা প্রেমিক সন্তান চায় না, চায় পুলিশ সন্তান। এদেশে চোর খুনি ডাকাতেরা বুক ফুলিয়ে ঘোরে। প্রেমিকরা সাজা পায় খুনির মত। আর খুনিরা হয় দেশ নেতা, দেশপ্রেম বিক্রেতা।

আমাকে বলা হয়, তোর এত বড় সাহস একজন পুলিশ অফিসারের মেয়েকে নিয়ে ঘুরিস, এস,আই, এর কথা শুনে নিজেকে খুব দুঃসাহসী মনে হয়। শুনেছি, মধ্যযুগে রাজ্যের কোন প্রজা পর্দার আড়াল ভেঙ্গে যদি রাজকুমারীর দিকে তাকাত তাহলে তার চোখ উপড়ে ফেলা হত। খুব শীঘ্রই হয়ত পাঠ্য বইয়ে প্রবাদ পড়ানো হবে, মাছের রাজা ইলিশ, বাতির রাজা ফিলিপস, আর….. মানুষের রাজা পুলিশ!

কিছু সময়ের জন্য আমি আমার শৈশবে ফিরে যাই। মনে পড়ে বাসার সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কনসার্ট হচ্ছিল, আমি আর আমার এক বন্ধু স্টেজের পেছনে রিক্সার লকারে বক্সের ওপর বসে গান শুনছিলাম। কিছুক্ষণ পরে একদল টহল পুলিশ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, কিরে এখানে বসে আছিস্ কেন? হোলে কি চর্বি জমে গেছে? কথাটি আমার কচি মনে সেসময় প্রচন্ডভাবে আঘাত হেনেছিল। এমন বিভৎস কথা তার আগে আমি কখনো শুনিনি। তারপর অনেক বছর কেটে গেছে, অনেক কিছু জেনেছি-শিখেছি, তবু সে দিনের প্রশ্নের উত্তর আমি আজও দিতে পারিনি। পুলিশ প্রায়ই সিনেমায় সেন্সর নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন হলে হানা দেয়, তারা হয়তো জানে না সিনেমার নগ্ন দৃশ্যের চেয়ে তাদের মুখের অশ্লীল ভাষা অনেক বেশী ক্ষতিকর।

একটি জাতি কতটা সভ্য সেদেশের পুলিস বাহিনীর দিকে তাকালেই তার একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। বিদেশে-ইউরোপ, আমেরিকায় পুলিশ জনগণের সবচেয়ে বড় বন্ধু। অতি তুচ্ছ ক্ষেত্রেও তারা পুলিশের সাহায্য নেয়। আর এদেশে জনসাধারণ প্রতিমূহুর্তে পুলিশি হয়রানীর শিকার হচ্ছে।মানুষ রাস্তায় পুলিশের গাড়ি থামানো দেখলে নিরাপত্তা বোধের বদলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। কাঁটা বিছানো রাস্তায় খালি পায়ে যেতে রাজি। তবুও ঐ পথে যেতে রাজি নয়। সাধারণ মানুষ যতটা না দুর্বৃত্তকারীদের জন্য মাঝরাতে রাস্তায় বেরোতে বিব্রত বোধ করে, তার চেয়েও বেশী ভয় পায় পুলিশি হয়রানীর জন্য। ধর্ষিত না হলেও সমাজের সবচে নম্র মেয়েটিকে হয়তো থানায় যেতে হবে বেশ্যার অপবাদ নিয়ে। পুলিশই এখন মূল দুর্বৃত্তকারী। কোন মাংসাশী পশুই ভরা পেটে কাউকে শিকারে পরিণত করে না। কিন্তু এদেশের পুলিশ বাহিনী তার চেয়েও হিংস্র। তাদের মানববেশী হাঁয়নার লোলুপ দৃষ্টি একনাগাড়ে সকলকে গ্রাস করে চলেছে। এদের বুক পকেটের খাদ্য ক্ষুধা কখনোই মেটে না। এরা যে হারে খেতে থাকে এদের ক্ষুধাও সে হারে বাড়তে থাকে। আজ তারা রিক্সাওয়ালার কাছ থেকে ৫ টাকা নিচ্ছে, কাল বাদে পরশু ভিখারির কাছ থেকে ১ টাকা নেবে। রিক্সাওয়ালারা টাকা না দিলে চাকায় ভ্রমর দেথে দেয়। ভিখারির বেলায় কি করবে? ভিক্ষার ফুটা থালা কেড়ে রাখবে? টাকার জন্য এরা সব করতে পারে। দূর্নীতিকে সন্ত্রাসে পরিণত করতে তাদের অদম্য প্রয়াস র্সবদা অব্যাহত।

প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার চালায়। কানসাটে সাধারণ মানুষের উপরে পুলিশের ৩য় দফা গুলিবর্ষণ তারই একটি উদাহরণ। ‘৫২ তে ভাষার দাবীতে মিছিল করলে তার ওপর গুলি চালায় পশ্চিমা শোষক বাহিনী। আজ নিজ দেশে বিদ্যুতের দাবীতে মিছিলের ওপর গুলি চালায় স্বদেশী শোষক বাহিনী। প্রকৃতপক্ষে আমরা কতটুকু সাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি সেটা ভাবার সময় এসেছে।

মাঝে জানতে পারি আমার এক বন্ধু খুলনার রূপসা বাইপাস সড়কে রিক্সায় ঘুরাকালীন পুলিশি হয়রানীর শিকার হয়েছে। প্রথমে পুলিশ বন্ধুটির মোবাইল সেটটি কেড়ে নেয় যাতে সে কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। তাদের বলা হয় ১০ হাজার টাকা না দিলে থানায় ধরে নিয়ে যাবে। এতে পারিবারিক জটিলতা সৃষ্টি হবে ভেবে অনেক আকুতি মিনতির পরে ৫০ টাকার বিনিময়ে পুলিশের মোবাইল থেকে এক বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মীকে ফোন করা হলে তিনি গিয়ে ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন এবং পরে মেয়েটির বড় বোন গিয়ে আলাদা ভাবে মেয়েকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিযে আসে।

আসলে বাজারে দ্রব্য মূল্যের যে ঊর্দ্ধগতি তাতে পুলিশের শুধু ঘুষ আর জেলখানাসহ বিভিন্ন স্পটে আসামীদের কাছে মাদক বিক্রি করে পোসাচ্ছে না। তাই বর্তমান প্রযুক্তির সাথে তাল রেখে পিঠে অদৃশ্য সাইনবোর্ড সেঁটে মোবাইল ব্যবসায় নেমেছে। কিন্তু বিভিন্ন দোকানে যেখানে কলরেট ২/৩ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ সেখানে পুলিশ কেন এত নেবে? আসুন আমরা পুলিশের কলরেট কমানোর দাবীতে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া মানববন্ধনে অংশ নেই। আর ব্রীজ কর্তৃপক্ষের উচিৎ বিলবোর্ড বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি একটি নতুন মূল্য সংযোজন করা, যেখানে সবার ওপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে, ”প্রতি জুটি ১০০০০ টাকা”।

বহুদিন ধরে পত্র পত্রিকায় পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মের কথা প্রকাশ হয়ে আসছে। আইনী জটিলতা ও অসহযোগীতার জন্য সাধারণ মানুষ পুলিশের বিপক্ষে কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস করে না। চলছে দলবদ্ধ ধর্ষণ- রাতে গ্রামে ঘেরাও করে পুলিশ দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ করে গৃহবধুদের, কয়েক বছর আগে ঠাকুরগায়ে এ ঘটনা ঘটে। নিজেদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে পুলিশ দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করে এক বালিকাকে। ১৯৯৫ এর আগষ্টে দিনাজপুরে, যার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারা শহর এবং প্রাণ দেয় সাতজন। জমি সংক্রান্ত শত্রুতার জের ধরে প্রতিবেশীর ছেলেকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করে ঢাকার ওসি রফিক। কয়কে বছর আগে চট্টগ্রামের উপ-পুলিশ কমিশনার আকবরের নেতৃত্বে ক্রিকেট মাঠে সাংবাদিকের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। বিদেশী খেলোয়াড়রা এ ঘটনা ডিজিটাল ক্যামেরায় ভিডিও করে নিয়ে যায়।

rafiq

নাচিকেতা আপনার অসংখ্য জীবনমুখি গানের মধ্যে থেকে একটি গানের দু’ লাইনের জন্য আপনাকে আজ খুব মনে পড়ছে। সেখানে আপনি বলেছেন ”প্রকাশ্য চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কখনই নয়” এরই সত্যতা প্রমানে ঢাকার কোন এক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জোর করে টাকা ঢুকিয়ে দেয় রিপোর্টারের বুক পকেটে। Chanel 1 এর একটি রিপোর্ট বানচাল করতে এবং সেই সাথে সাথে ক্ষমতাসীন দলের তোষামোদ করতে থাকে। সেসব অবশ্য তার বেখেয়ালের কারণে ভিডিও ক্যামেরায় ধরা পড়ে যায় এবং সে রাতে Chanel 1 এর সংবাদে প্রচার করা হয়, একটি ঘটনা হয়তো সকলের সামনে ধরা পড়েছে, তবে সারা দেশে এমন আরও কত লক্ষ হাজার অমন ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে অজানা থেকে যাচ্ছে তা কে জানে? সরকার কি জানে তার প্রতিটি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছে তারা কতটা অযোগ্য, যার প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ? আমি এখন আর কাউকে দোষ দেই না। আসলে যেমন বীজ লাগানো হবে তেমন ফসলই আমরা পাব। এটাই চিরন্তন সত্য। যেদেশে সরকারি দলীয়করণের টানে পুলিশের এস, আই পদে মনি-র মত নিয়মিত নারীভোগী আর বকুলের মত খুলনা গল্লামারীর ৩৬ লাখ টাকার ছিনতাই কেসের আসামীরা নিয়োগ পায় সে দেশে এর চেয়ে ভাল আর কীবা হতে পারে? আগামীতে হয়তো দেখা যাবে এরা তাদের রোজকার অপকর্মটি থানার মধ্যেই সেরে নিচ্ছে। কেউ অফিসের টেবিলের ওপর ছিনতাইয়ের মাল ভাগ করছে। এখন অবশ্য লোকসম্মুখেই ঘুষের টাকা চালাচালি হয়। আর মনি-র মতো কউে অসহায় কোনো মেয়েকে ধরে এনে থানা হাজতের ভেতর সরকারি প্যান্টের চেন খুলে জবরদস্তি যৌন সুখ দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, শুধুমাত্র সাক্ষী হিসাবে নব সংস্কৃতির পোষাকে লেগে থাকবে কিছু অবাধ্য অশ্লীল দাগ-এই আর কী……….

দলীয়করণ ব্যতীত প্রকৃত মেধা যাচাইয়ে এরা সরকারি কামলা হওয়ারও যোগ্য না। আর কমিশনে পর্যায়ে যাদের উচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক সনদপত্র রয়েছে তাদের কর্মজীবনে প্রাইমারী বইয়ের শিক্ষাটুকুর আবছা ছাপও পড়েনি।

স্যারের মেজাজ বড্ড খারাপ। হীরার হারের জন্য ভাবী কয়েকদিন যাবৎ স্যারের শয্যাত্যাগ করেছে, যে করেই হোক এমাসের মধ্যেই হারটা দিতে হবে। শারীরিক ক্ষুধা স্যার আর সহ্য করতে পারছেন না। আমি আবার স্যারের একমাত্র ভরসার পাত্র। তাইতো পুরো টাকাটার ভার একা আমার ওপর দিয়েছেন। না দিতে পারলে এমন রমরমা জায়গায় পোষ্টিংটা যে আবার হারাতে হবে। -এই হল প্রশাসনে শিক্ষিত কীটদরে অবস্থা। দুর্নীতিই হল তাদের চলমান জীবনের পরম নীতি। তাই তাদের কাছ থেখে উৎকৃষ্ট কিছু কামনা করাই বোকামী। স্বল্প বেতনের পুলিশের চাকরি পেয়ে তারা এজন্য খুশি হয় না যে তারা সরকারি বেশে সাধারণ মানুষকে সেবা করার সুযোগ পাচ্ছে, বরং চাকরিতে নিয়োগের আগে থেকেই ৬ হাজার টাকা বেতনের সাথে কয়েকটি অবৈধ শূণ্য দেখে লোভে তাদের চোখ চক চক করে ওঠে। সেই সাথে রয়েছে ব্যক্তি জীবনে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি প্রদর্শনের নিদারূন সুযোগ। পুলিশ ঘুষ খাবে না, এটি একটি দুর্লভ ব্যাপার। কবে হয়তো দেখা যাবে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে দীর্ঘ দিন শীর্ষে রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকার জন্য পুলিশ প্রধান সরকারের কাছে গোল্ড মেডেল দাবী করছে।

তারা যে হীন দৃষ্টিতে বেতনের দিকে তাকায়, তারা হয়তো জানে না তাদের প্রতি এটা কোন ধনীর নিজস্ব অনুদান নয়। এদেশের প্রতিটি পতিতা, মেথর, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, মাঝি, মুচি, ফেরীওয়ালা, রিক্সাওয়ালা সকলের অকৃত্রিম শ্রমের একটি অংশ থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে ঐ স্বল্প টাকার বান্ডিলটি অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল এই তৃতীয় বিশ্বের দেশটিতে।

রাজারা আগে ছিল এখনো আছে, শুধু রাজা নাম বদলে হয়েছে রাজীনীতিবিদ। এদেশে দুর্বৃত্তদের সবচেয়ে বড় পেশা হচ্ছে রাজীনীতি। এদের কেউই প্রতিভাবন নয়,নেই কোন সাধনা, নিজ থেকে একটি বাণী লেখারও কারো কোনো যোগ্যতা নেই। এরা কেউই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান নয়। রাজনীতি আজ রাজাকার ও পুঁজিবাদীদের মিলনাস্থল-যেখানে এক কালের স্বাধীনতা বিরোধীরা সেই রাষ্ট্র পরিচালনার অংশ হয় আর অন্যদিকে পুঁজিবাদীরা তাদের রাজনৈতিক বিনিয়োগকে জ্যামিতিক হারে বাড়ানোর সুযোগ পায়। এরা রাজীনীতির কিছু না বুঝলেও ব্যবসা ভালই বোঝে। তাই পার্লামেন্টের অন্তরালে চলে তাদের রমরমা ব্যবসা। আর লুই আইকানের অনবদ্য সৃষ্টি পরনিত হয় শুয়রের খোয়ারে।

আজ রাজনৈতিক অঙ্গন রূপান্তর হয়েছে প্রকাশ্য অপরাধ জগতে। যেখানে প্রধান দুই দল মূল্যবান ২টি লাশের বিজ্ঞাপন নিয়ে সদা ব্যস্ত। অতীতের রাজারা জাকজমক চোখ ধাঁধানো পোষক বদলে দেখা দিয়েছে স্বদেশী স্বাভাবিক আমেজে, ভন্ডের বেশে। আর সে সময়ের লাঠিয়াল বাহিনীকে সরকারী পোষাক আর আগ্নেয়ান্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পুলিশ নামের পেটোয়া বাহিনী। মনে হয় পুলিশের পোষাকের মধ্যে একটি ঐশ্বরিক শক্তি আছে। যা পরার পর আমাদের সমাজের নেংটি ইদুরগুলো পাগলা কুকুরে পরিণত হয়্ আর পথে নেমে এসে যাকে তাকে কামড়াতে শুরু করে। এখানো, মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে, মন্দির-মসজিদ, দোকান-রেস্তোরায় তারা ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষমতাসীন মহলের স্বার্থ আদয়ের খলিফা হিসাবে। সাধারণ মানুষের বৈপ্লবিক চরিত্রকে দমন করতে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ এমনকি লুটপাটও করছে।আর দু’দলের ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আপামর জনতা। উপরের নির্দেশে হাজার হাজার মানুষকে বিনা কারণে হাজতে পুরো ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন পেন্ডিং কেসে তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাদের এ বিষয়ে পূর্বে কোন সম্পৃক্ততাই ছিল না। এর থেকে উদ্ধারের জন্য এসব পরিবারকে পোহাতে হচ্ছে অভাবনীয় মানসিক ও চারিত্রিক দুর্ভোগ। সাধারণ শ্রমজীবি মানুষকে রক্ত পানি করা টাকা দিতে হচ্ছে লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের কাছে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের অপ্রয়োজনীয় সার্টিফিকেটের জন্য। যারা আজ সাধারণ মানুষের চারিত্রিক সনদপত্র বিলি করছে, তাদের চারিত্রিক সনদপত্র কে দিবে?

এই হলো আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি, এ দেশে এখনো ঈমানরে থেকে টুপির সংখ্যা বেশী। দেশ এমনি এক উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে যেখানে ক্রমেই আমরা হাবুডুবু খেতে খেতে নিষ্প্রান হয়ে চলেছি। নিজেকে বাঁচানোর জন্য এক গুচ্ছ কচুরিপানাও কারও হাতের নাগালে নেই। আমাদরে জীবনরে অর্ধেকটা কেটে যায় সঙ্গম, সন্তান প্রসব ও লালন পালনে। তবু আজও আমরা একটি বিশুদ্ধ প্রজন্ম প্রসবে পুরোপুরি ব্যর্থ।আমাদরে প্রিয় মাতৃভূমি প্রতিনিয়ত নিজের দুবৃত্ত সন্তানদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে চলেছে। আর বাদবাকি আমরা বিকলাংগ মানুষরে মত অপলক দৃষ্টিতে সেই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে চলেছি।

সত্যিই কি আমরা কখনো এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম? আমরা কি নিকৃষ্টতা ছাড়া এত বছরে সত্যিই কোন পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি? নাকি দিনে দিনে এগিয়ে চলেছি নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতমের দিকে। এই জন্যেই কি দীর্ঘ নয় মাস বাঙলা থেকে ফুলের বদলে বারুদের গন্ধ বেরিয়েছিল? হাসি মুখে প্রাণ দিয়েছিল ৩০ লক্ষ মানুষ, পরবর্তী প্রজন্মকে উত্তম কিছু দেওয়ার জন্য। ধর্ষিত হয়েছিল হাজারো নারী যাতে স্বাধীন দেশে আমরা ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে পারি। পুড়েছিল অগণিত ঘরবাড়ি যাতে স্বাধীন বাঙলার রাস্তার দু’ধারে বিরাজমান আকাশ ছোঁয়া অত্যাধুনিক টাওয়ারে সারাক্ষণ পত পত করে উড়তে পারে স্বাধীন বাঙলার লাল সবুজ পতাকা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবকিছুই কি তবে অহেতুক ছিল না? সকল ক্ষেত্রে আজ আমরা চরমভাবে ব্যর্থ। নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার এড়িয়ে অন্যকোন ভীন্ন জাতির ঘাড়ে চাপানোর উপায় আজকে আর এই স্বাধীন দেশে নেই। আমাদের নীরবতা আজ আমাদের অক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। আমাদের অজান্তেই আমাদের নীরবতা শাসক শ্রেণীর প্রতি আমাদের আনুগ্যতা প্রকাশ করে চলেছে। এদেশে স্বপ্ন দেখতে মানা তবু আম স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমাদেরকেই আমাদের নীরবতা ভাঙ্গতে হবে। স্বজাতীয় শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধে যেতে হবে। সকলে প্রস্তুত তো?