ডারউইন দিবসের বিশেষ পুরস্কার
মুক্তমনা র্যাশনালিস্ট এওয়ার্ড (২০০৯) পেলেন শিক্ষানবিস
ডারউইনের জন্মের দ্বিশতবার্ষিকী আর তার বিখ্যাত বই অরিজিন অব স্পিশিজ-এর দেড়শত বছর পূর্তিকে স্মরণ করে আমরা মুক্তমনার পক্ষ থেকে খুব জমজমাটভাবেই ডারউইন দিবস (২০০৯) উদযাপন করলাম। অনেক লেখক আর পাঠকদের লেখালিখি আর পদচারণায় ধন্য হয়েছে আমাদের সাইটটি। দূর-দূরান্ত থেকে ভাল ভাল লেখা পেয়েছি এন্তার। সেই সাথে আমরা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি বিবর্তন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার সাইটোজেনেটিক্স গবেষণাগারের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ম আখতারুজ্জামানের। মুক্তমনার ডারউইন দিবসের উদ্যোক্তা হিসেবে বললে হয়ত এটি অতিশয়োক্তি শোনাবে – কিন্তু বর্নাঢ্যতায় আর গুনে মানে -সব মিলিয়ে এবারকার ডারউইন দিবস আমাদের আগেকার সকল উদ্যোগকে একেবারে ছাড়িয়ে গেছে। এ আমার কথা নয় – অনেক পাঠকেরই অভিমত। একজন পাঠক আমাদের সাইটে এসে এও বলেছেন – বিজ্ঞানমনস্কতা প্রচারে মুক্তমনা যে সবসময়ই অগ্রগামী তারা আরো একবার প্রমাণ করলো। আমরা আমাদের আয়োজন শুধু ইন্টারনেটেই সীমাবন্ধ রাখিনি, আমাদের সদস্যরা বাংলাদেশে শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ এবং বিজ্ঞানচেতনা পরিষদের সাথে মিলে অংশ নিয়েছে এক ঐতিহাসিক র্যালীতে। বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক শ্লোগানের পরিবর্তে ডারউইনীয় শ্লোগান দিচ্ছে, আহবান জানাচ্ছে অন্ধবিশ্বাস পরিহার করে বৈজ্ঞানিক সত্যকে গ্রহণ করার – এ চিন্তা-চেতনার উত্তোরণ সত্যই অভাবনীয়।
কি ভাবছেন? এবারের ডারউইন দিবসের গল্প তাহলে ফুরোলো, আর নটে গাছটি মুড়োলো?
না নটে গাছের কপাল আসলেই খারাপ। শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। মনে আছে নিশ্চয়ই মুক্তমনার পক্ষ থেকে ডারউইন দিবস উদযাপন উপলক্ষে সবার কাছ থেকে যে প্রবন্ধ আহবান করা হয়েছিলো তাতে একটি ছোট ঘোষণা ছিলো। সেরা লেখককে মুক্তমনার তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হবে! বিভিন্ন ডামাডোলে ব্যাপারটা চাপা পড়ে গেলেও আমরা কিন্তু ভুলে যাইনি।
আমরা – মুক্তমনা মডারেশন টিমের সদস্যরা এই বিশেষ দিনের জন্য পাওয়া লেখকদের লেখা নিয়ে নিজেদের মধ্যে এ ক’দিন অনেক পর্যালোচনা করেছি। ডারউইন দিবসে পাওয়া বিভিন্ন লেখা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আলোচনা করেছি, এবং শেষপর্যন্ত সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্তে এসেছি যে এবারের ডারউইন দিবসের পুরস্কারের দাবীদার হচ্ছেন শিক্ষানবিস। মুক্তমনার ঝানুমাথা লেখকদের মধ্যে হয়তো কনিষ্ঠই হবেন তিনি (এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকাননি), কিন্তু মেধা, প্রজ্ঞা আর জ্ঞানে অতিক্রম করে গেছেন অনেককেই। বিজ্ঞান নিয়ে অনেকদিন ধরেই তিনি লিখছেন। মহাকাশ, বিগ-ব্যাং, সৌরজগত আর গুপ্ত পদার্থের রকমারী রহস্য তাকে নিরন্তর আবিষ্ট করে। বিজ্ঞানের মোহনীয় সৌন্দর্যে তিনি হন আপ্লুত। তার প্রবন্ধে তাই উঠে আসে রহস্যময় সময়, সোফির জগতের কথা, কিংবা লাইকার প্রতি ভালবাসা। সেই ভালবাসার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই মুক্তমনা আর সচলায়তনের পাতায়। আজন্ম বিজ্ঞানানুরাগী এ তরুন তার স্বচ্ছ বৈজ্ঞানিক এবং যৌক্তিক চিন্তা দিয়ে আমাদের প্রতিদিনই মুগ্ধ করে চলেছেন, নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন বিজ্ঞানপুরী। এ ছাড়া উইকিপিডিয়ার বিজ্ঞানের বাংলা অংশের কলেবর বৃদ্ধিতেও তিনি অবদান রেখে চলেছেন ক্রমাগত।
তিনি এবারকার ডারউইন দিবস উপলক্ষে তিনি সায়েন্টিফিক আমেরিকান থেকে আমাদের অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন দুটি গুরুত্বপুর্ণ প্রবন্ধ – একবিংশ শতকের ডারউইন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরীক্ষা এবং আরেকটি প্রবন্ধ জ্যারেড ডায়মন্ডের সভ্যতা শুরুর আগে । তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ ক’দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তার – জাকির নায়েকের মিথ্যাচার: প্রসঙ্গ ‘বিবর্তন’ প্রবন্ধটি। তিনি বিবর্তন নিয়ে অজ্ঞতা, মিথ্যাচার আর ভন্ডামীর মুখোশ উন্মোচন করেছেন নিপূন দক্ষতায়, নিপুন তুলির আঁচরে। এ নিয়ে ইন্টারনেটের ব্লগ পাড়ায় এখন রীতিমত তোলপার! মুলতঃ বিজ্ঞানের হরেক রকমের মজাদার গল্প নিয়ে লেখা লিখি করলেও মাঝে মধ্যেই তার ক্ষুরধার কলম নিয়ে আবির্ভূত হন কুসংস্কারের বিপরীতে বিজ্ঞানমনস্কতাকে ডিফেন্ড করতে। তার হাত দিয়েই কিছুদিন আগে বেরিয়েছিলো ইসলামী বিজ্ঞানের পৌরাণিক কাহিনী। এ প্রবন্ধগুলো থেকে বোঝা যায় তিনি শুধু ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ মার্কা বিজ্ঞামুলক প্রবন্ধ লিখেই নিজের সামাজিক দায়িত্ব শেষ করেন না, দর্শন নিয়েও তার যথেষ্ট পড়াশনা আর আগ্রহ আছে; তিনি বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদকে মানুষের মধ্যে পৌঁছিয়ে দিতে চান, গড়ে তুলতে চান বিজ্ঞানসচেতন এক স্পর্ধিত প্রজন্ম। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া র্যালী এবং কর্মশালার ছবিগুলোও তার বদান্যতাতেই পাওয়া।
র্যাশনালিস্ট এওয়ার্ড প্রদানের ঘটনা মুক্তমনার জন্য নতুন কিছু নয়। মুক্তমনার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৬ সালে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন অনন্ত বিজয় দাস। আমাদের এ পুরস্কার যে বৃথা যায়নি তা অনন্তের ক’বছরের কর্মকান্ডই প্রমাণ। লেখালিখির বাইরেও সিলেটে যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠা, মরোনোত্তর চক্ষুদান এবং যুক্তি (১ | ২) ম্যাগাজিনের আত্মপ্রকাশ সেই সত্যকেই তুলে ধরে।
আমরা এ বছরের বিশেষ দিনে শিক্ষানবিসকে মুক্তমনা র্যাশনালিস্ট এওয়ার্ড (২০০৯)-এর জন্য মনোনীত করে আনন্দিত। আমরা আশা করব শিক্ষানবিস তার শিক্ষা আর যুক্তির আলো দিয়ে আমাদের সমাজের আঁধার আরো বেশি করে কাটাবেন।
মুক্তমনার তরফ থেকে তিনি পুরস্কার হিসেবে পাচ্ছেন –
১) মুক্তমনা লেখকদের নির্বাচিত বই এবং ম্যাগাজিন ( আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, বিবর্তনের পথ ধরে, মুক্তান্বেষা এবং যুক্তি)
২) রিচার্ড ডকিন্সের এন্সেস্টর টেল
৩) চার্লস ডারউইনের On the Origin of Species: The Illustrated Edition (David Quammen)
৪) সায়েন্টিফিক আমেরিকান ম্যাগাজিনের এক বছরের ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন।
ঢাকায় শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে খুব তাড়াতাড়ি এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
আমি মুক্তমনার পক্ষ থেকে শিক্ষানবিসকে অভিনন্দন জানাই।
অভিজিৎ রায়
প্রতিষ্ঠা সম্পাদক,
মুক্তমনা (www.mukto-mona.com)
অভিনন্দননননননননননন শিক্ষানবিস। 🙂
শিক্ষানবীশ কে প্রাণঢালা অভিনন্দন। যুক্তির জয় হোক।
অভিনন্দন শিক্ষানবিশ….জাকির নায়েকের ভন্ডামি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য একটা মেগা ধন্যবাদ ! আর অন্যান্য প্রবন্ধগুলোও পড়েছি, খুব ভাল লেগেছে। ভবিষ্যতে আরও আরও অনেক ভাল প্রবন্ধের প্রত্যাশায় রইলাম।
থ্রি চিয়ার্স ফর শিক্ষানবিশ !!!!! :party:
গায়ক সুম েনর ভাষায় ” তোমাকে অ ভিবাধন” !
শিক্ষানবিশ, আপনার আসল নামটি কি জানতে পারি? খুব জানতে ইচ্ছা করছে আপনি ঢাকার কোন বিশ্ববিদ্যাল্য়ের ছাত্র…..
@Talat,
আসলে একসময় সবাইকে পরিচয় জানিয়ে দিতাম। কিন্তু একটা সময়ের পর সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। কেন না সেটা আশাকরি বুঝতে পারছেন। আমার লেখাই না হয় আমার পরিচয় হোক।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পুরস্কার প্রদানের জন্য মুক্তমনাকে বিশেষ ধন্যবাদ।
আমি আসলে এতটা ভাবতেও পারিনি। বাড়িতে গিয়েছিলাম, এজন্য গত দুই দিন ধরে আন্তর্জাল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এসে পুরস্কারের কথা শোনার পর বিশ্বাসই হতে চায়নি। এটা আসলে অনেক বড় পাওয়া…
আমি সবসময়ই ভাল কিছু লিখতে চাই। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য সুসভ্যতা সৃষ্টিতে অবদান রাখা। অবদান না রাখতে পারলেও অন্তত সুসভ্যতার চর্চা করা। সুসভ্যতার মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “মূল্যবোধ” এবং “যুক্তিবিচারের প্রতিষ্ঠা”। এই দুটি বৈশিষ্ট্য অর্জন এবং ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি সবসময়ই চেষ্টা করবো।
আপডেটঃ
সচলায়তনে নুরুজ্জামান মানিকের পোস্টের সূত্র ধরে রায়হান আবীর জানিয়েছেন – শিক্ষানবিসের চাচা সম্প্রতি মারা গেছেন। সেজন্য তিনি ময়মনসিংহে আছেন। সঙ্গে নেট না থাকায় প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছেন না।
অভিনন্দন শিক্ষানবিস
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আমাদেরকে শান্ত করুণ। আপনার সাড়া না পেয়ে আমরা চিন্তিত।
Is Anonto Bijoy Das “ShikshaNabis”? Whatever …He deserves hearty cogratulations. My added felicitations for reading and translating Jarred Diamond, an extremely intelligent and sensitive writer with an inquisitive and analytical mind deserving to be called a Darwinist.
Sorry to have missed the celebrations of Darwin Day in Dhaka. I was a victim of circumstances that prevented me ftom attending. It is a great pity as I had been spreading the reminder of Darwin’s bicentennary this year since 2005 through my published article and word of mouth.
Farida Majid
@Farida Majid,
No, he’s not. Ananta writes from Sylhet, and Shikkhanobish writes from Dhaka.
কেউ কি শিক্ষানবিসের কোন খোঁজ জানেন? পুরস্কার ঘোষণার প্রায় দুই দিন হতে চললো, কিন্তু তা কোন প্রতিক্রিয়া নেই, খোঁজও নেই। কয়েকবার ইমেল করেও কোন জবাব পাইনি। আমি ঠিক জানিনা তার বাসা ঢাকার ঠিক কোথায়, কিন্তু দেশের এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে যে কোন আশংকার কথাই সবার আগে মনে আসে। আশা করি তিনি ভাল আছেন। এখানে যদি শিক্ষানবিসের বন্ধুবান্ধব কেউ থেকে থাকেন, তা হলে তার সম্বন্ধে আপডেট জানাতে অনুরোধ করছি।
অভিনন্দন শিক্ষানবীস। ভালো থাকুন সব সময়।
এক্কেবারে যথাযথ নির্বাচন । শিক্ষানবিসকে অভিনন্দন ।
নন্দিনী
অভিনন্দন শিক্ষানবিস
তুমি হয়ত জানোনা, তুমি আমাদের মনে কী আশার আলো জ্বেলে রেখেছ। অল্প যে ক’টি জিনিস নিয়ে আমরা এখনো আমাদের দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভরসা পাই—তুমি আর তোমার মত ক’জন সাগ্নিক তাদের অন্যতম।
তোমার এ আগুন জ্বলুক নিরন্তর, ঘুঁচে যাক আমাদের সকল সংস্কারের আঁধার!!
শুভেচ্ছা
অভিনন্দন শিক্ষানবিসকে।
শিক্ষানবিসকে অনেক অনেক অভিনন্দন…
অভিনন্দন শিক্ষানবিস এবং অতি অবশ্যই প্রাণঢালা।
সাথে সাথে কৃতজ্ঞতা মুক্তমনার সাথে জড়িত সকলের প্রতি। সবকিছু দেখে মনে হয়, আমরা পিছিয়ে নেই, এগিয়ে যাচ্ছি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আর তৈরী হচ্ছে আমাদের মূল্যবোধ।
আরো একবার অভিনন্দন শিক্ষানবিস।
:yes: Congratulations Shikkhanobish !
Carry on.
With best regards,
Nuruzzaman Manik
শিক্ষানবিসকে অসংখ্য অভিনন্দন–
বাংলাভাষায় এমন শিক্ষানবিস আরো ঊঠে আসুক-এটাই কাম্য।
শিক্ষানবীশকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। আপনার সত্যকে জানার আর জানানোর সংগ্রাম সফল হোক। এই শুভকামনায় –
My heartiest congratulations to the young man, who I hope, will become
the new voice of reason for the new generation.
Mizan Rahman.
Congratulations!
Keep it up.
Hasan Mahmud
Congratulations Muhammad and lots of good wishes for you. With Kind Regards,
Tanbira
অনেক অনেক অভিনন্দন শিক্খানবীশ !
মঙ্গল কামনায়,
কেশব অধিকারী
Congrats…
Well done, Shikkanobish. Congratulations!!
বাহ! এ তো দারুন ব্যাপার। বিজ্ঞানমনস্ক তরুনকে শুভেচ্ছা।
কাজীর বিচার যথার্থ হইছে।
অভিনন্দন শিক্ষানবিস! আমিই বৌনি করলাম!