বাঙালী না ভারতীয়? বাঙালী না মুসলমান?
বিপ্লব পাল
(১)
আমার ” বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া ভিডীওটি” নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের ফোরামগুলিতে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কারুর ভালো লাগবে-কারুর লাগবে না-সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিতর্কের মূলসূরটা অবশ্যই এই-বাঙালী অস্তিত্বটা তাহলে কি? আসলে ব্যার্থ রাজনীতির জাঁতাকলে দুই বাংলার অস্তিত্বেই এখন নাভিশ্বাস। জীবিকা নির্বাহের জন্যে বাধ্য হয়েই সবাই দেশের বাইরে। অথচ আমাদের সমস্যাটাকেও আমরা স্বীকার করতে চাইছি না। এমনকি আজকাল এপার বাংলা, ওপার বাংলা বলতেও ভয় হয়। পাছে ওদিকের ইসলামিস্টরা বলেন “ওসব আগে ছিল-এখন এটা বাংলাদেশ”। আর আমাদের দিকের নব্য হিন্দুত্ববাদিরা বলবেন বাংলাদেশীরা বাঙালী হল কবে? আসলে এরা একই মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। মুদ্রার নাম ঘৃণা, অজ্ঞতা এবং আত্মবিস্মৃতি।
(২)
আগে ভারতীয় পরে বাঙালী-এটা আমাদের দিকের অনেকেই বলেন। এটা বাস্তবেও ঠিক না। সংবিধানের দিক দিয়েও ঠিক না। কারন আমি দেখি নাই বাঙালীদের [যারা প্রবাসী নয়] অবাঙালী বন্ধু সার্কল থাকে বলে। দু একজন থাকে। অস্তিত্বের যেখানে ৯০% বাঙালী-সেখানে আমি প্রথমে বাঙালী না-এটা অস্বীকার করাই প্রথম বোকামি। আর ভারতীয় বলে আলাদা কিছু সংবিধানে নেই। প্রথমেই বলা হয়েছে প্রতিটি জাতিসত্ত্বা তাদের সংস্কৃতির আলাদা বিকাশ করবে। তাদের ওপর অন্য কোন সংস্কৃতি রাষ্ট্র চাপাবে না। বাজেটে বাংলা ভাষার জন্যে পশ্চিম বঙ্গের বরাদ্দ বাংলাদেশের দেখে বেশী-৫০০ কোটি টাকা বছরে-যার জন্যে আমাদের এদিকের সরকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভাল বাংলা সিনেমা স্পনসর করে। তনভীর মোকাম্মেল এই জন্যে আমার কাছে আক্ষেপ করেছিলেন। আসলে আমাদের রাজ্যের অবস্থা এমন খারাপ-আমাদের দিকের বাঙালীরা নিজের জাতিসত্ত্বায় লজ্জা পায়। এটা কোন তামিল বা তেলেগুদের মধ্যে দেখিনি। ওরা ২০ কোটি টাকা দিয়ে তেলেগু সিনেমা করেও টাকা তুলে নিচ্ছে-আমরা ৫ কোটি টাকার সিনেমা করার ও মুরোদ রাখি না। অথচ আমরা সংখ্যায় অনেক বেশী।
এই বাঙালী সত্ত্বাটা আমাদের মধ্যে হারিতে গিয়ে গোলমাল হয়ে গেছে। আমি আই আইটিতে দশ বছর ছিলাম। কোন দিন দেখিনি বাঙালী ছেলেরা অবাঙালীদের সাথে একসাথে থাকে বলে। দশ বছরে অন্তত ৯ টা উইং যে থেকেছি (উইং মানে ১০ টা ঘর নিয়ে একটা উইং হয়)। সেখানে বাংলাদেশী পেলেও অবাঙালী পাওয়া দুষ্কর। তাই বাঙালী সত্ত্বা ছাড়া যেখানে আমরা বাঁচতে পারি না-সেখানে বাঙালী সত্ত্বাকে অস্বীকার করার যে প্রবনতা দেখছি-সেটাই এদের ভুল পথের যাত্রী করেছে। এমন কি এই আমেরিকাতে বাঙালীদের মন্দির ও আলাদা-এরা শুধু কালী বাড়ি আর দুর্গাবাড়ি যায়-সেখানে শুধু বাঙালীরা আসে। অবাঙালী মন্দিরে এরা যায় না। দুর্গাবাড়ি গুলো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হওয়াতে-সেখানে দুচারটে মুসলমান ও পাওয়া যায়-কিন্তু অবাঙালী পাওয়া যাবে না। এসব দেখার পরেও লোকের চক্ষুদোয় হয় না। এসব যারা করে-তাদের এই কথা স্মরণ করালে বলবে আমি আঞ্চলিকতাবাদ প্রাধান্য দিচ্ছি-অথচ এরাই ভারতীয় ফোরামের থেকে বাংলার ফোরামেই আড্ডা মারে সারাক্ষন। কারনটা স্বাভাবিক-প্রাণের যোগ যাদের সাথে, তাদের সাথেই সবাই সময় কাটাতে ভালোবাসে। কিন্তু সেটা বললেই লোকে বলবে আঞ্চলিকতার দোষে দুস্ট!
(৩)
এটা বাঙালী মুসলমানদের জন্যেও সত্যি। মুসলমান বলে যে সত্ত্বা-তার ত কোন নির্মান নেই-সেটা শুধুই কাল্পনিক শত্রুর সাথে শুন্যে গদাযুদ্ধ। তাই বাঙালী মসজিদ ছাড়া তারা অন্য মসজিদে যেতে পারে না আমেরিকাতে। সে খাচ্ছে বাংলা, বলছে বাংলা, গান শুনছে বাংলা, প্রেম করছে বাংলা-আর আরবী ভাষায় দুটো লাইন মুখস্ত পড়লেই, মুসলমান হয়ে গেল! যা আরবী সংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়। লাখে লাখে বোরখা আমদানি করে, দাঁড়ির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে কি আরবী (পড়ুন মুসলমান) হওয়া যায়? এই কৃত্রিম “সত্ত্বার” বিরুদ্ধেই আমাদের বলে যেতে হবে। আমি আগেই বলেছি-হিন্দুত্ব কোন সত্ত্বাই নয়। কারন হিন্দুধর্মে সত্যের সন্ধান করতে বলে। তাতে কি কোন নৃতাত্ত্বিক সত্ত্বা তৈরী হয়? তেমনই মুসলমান শব্দটাও কোরানে নেই। আধ্যাত্মিক ইসলাম কি আরবী হতে বলে? জালালুদ্দিন রুমি কিন্তু অনেক দিন আগেই বলে গেছেন-আমি মুসলমান, খৃষ্ঠান, ইহুদি নই-আমি আল্লার পথে সত্যের, সৌন্দর্য্যের সন্ধান করি। সুফিদের সাথে বৈষ্ণব ধর্মের কোন পার্থক্য নেই। ধর্মের নীতিমালা, আচার বিচার মেনে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় একথা সুফীরা বলেন নি-তারা পরিস্কার ভাবেই বলেছেন ধর্মের ওপরে উঠতে পারলে-তবেই উচ্চতর উপলদ্ধির জগত পাওয়া সম্ভব। সেই আন্দোলনের পথে ধরেই আমরা দেখবো রবীন্দ্রনাথ, লালন ফকির এবং নজরুল ইসলাম “সবার ওপর মানুষ সত্যের” পথে অখন্ড বাঙালী জাতিসত্ত্বার স্বপ্ন দেখেছেন। তার কি কোন মূল্য নেই? কোন এক আদবানী বা কোন এক নিজামীর জন্যে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমরা বর্জন করবো? তাহলে আমাদের থাকবে কি?
ধর্ম দিয়ে যে সত্ত্বা তৈরী হয়-তার বাস্তব অস্তিত্ব নেই বলে-সেই অস্তিত্ব তৈরী করে রাজনীতি-বোঝায় আমাদের ওপর ওরা অত্যাচার করছে। এই ধার্মিক সত্তার নির্মান কৃত্রিম-এবং এর ধারক ও বাহক হচ্ছে রাজনীতিবিদরা। ভারতে বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যে হিন্দুধর্মটা কি সেটা নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না। শুধু চারিদিকে কলরব-বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানে হিন্দুরা বিপন্ন। জামাত থেকে ইসলামিক পার্টিগুলির ও একটাই রা-ইসলাম বিপন্ন! হিন্দুত্ববাদি আর ইসলামিস্টদের কথা বার্ত্তা, ক্যাডারদের ভাবধারা সব এক-হুবহু। অর্থাৎ যে অস্তিত্ব নেই-সেই অস্তিত্বকে জোর করে ঢোকানো হচ্ছে বাঙালীদের মনে। কারন বাঙালী সেন রাজাদের আমলেও হিন্দুত্ব চাপানোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, পাকিস্থানে ইসলামি শাসন চালানোর বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে। বাঙালী প্রতিবাদি জাতি। আমাদের মনের গান আর প্রাণের আবেগের সাথে ওয়াহাবি ইসলাম বা উগ্র হিন্দুত্ব কোনদিনই খাপ খেতে পারে না।
একটা কথা মনে রাখবেন-যে বাঙালী আজ হিন্দু-কাল মুসলমান হতে পারে। উলটোটাও হতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই একটা বাঙালী অবাঙালী হতে পারে না। কারন বাঙালী অস্তিস্ত্ব তার ভাষার স্বাস প্রশ্বাসে।
(৪)
অথচ ঘরের সামনেই আমাদের উদাহরন ছিল। আজ ভারতে তামিল, তেলেগু আর কন্নররা এগিয়ে গেল। ওরা কি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছে? না কোন দিন ই চাই নি। অথচ তামিল নাডুতে ১৯৬০ সাল থেকেই সি এন আন্নাদুড়াই এর নেতৃত্বে তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের শুরু। এরা ছিল নাস্তিক-এবং এই আন্দোলন ছিল সর্বত ভাবে ধর্ম নিরেপেক্ষ আন্দোলন। ওদের আদর্শও ছিল কংগ্রেস বা বামপন্থি বা হিন্দুত্ববাদিদের থেকে অনেক আধুনিক। ফলে আজ তামিলনাড়ু একটি সফল রাজ্য। একজন তামিল চাইলে মাদ্রাসে ফিরতে পারে-অনেক চাকরী- অনেক সুবিধা। আর আমাদের মাদ্রাসে যেতে হয়। চিকিৎসার জন্যে বা চাকরির জন্যে। দ্রাভির জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের পথেই তেলেগু দেশম এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। আজ হায়দ্রাবাদ ভারতের আধুনিকতম শহর। আই এ এস বা আই আই টি তে এখন তেলেগু ছাত্ররাই বেশী সফল। আবার তেলেগু সিনেমা হিন্দি সিনেমার সমান বাজেটে তৈরী হয়। আমাদের সিনেমা শিল্প ধুঁকছে। জাপান থেকে তামিল এবং তেলেগুদের দেখে, আমি নিশ্চিত-কোন নৃতাত্ত্বিক জাতি সত্ত্বা যদি নিজেদের অতীত নিয়ে আত্মবৃষ্মৃত হয়-তাহলে ভবিষ্যতের আধুনিকতাও তারা গ্রহন করতে পারে না। কোন সন্দেহ নেই তেলেগু বা তামিলরা জাতি হিসাবে যতটা এগোল-আমরা পেছলাম। ওরা কিন্তু ভাষা ভিত্তিক জাতিয়তাবাদের পথে হেঁটেই একটা বাঙ্গালোর, একটা হায়দ্রাবাদ, একটা মাদ্রাস ভারতকে উপহার দিয়েছে। আমরা শুধু দিয়েছি বন্ধ্য্যা সংস্কৃতির একরাশ লজ্জা-কিছু না বুঝেই কতগুলো রাশিয়ান ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরার চেস্টা। অথচ তামিল জাতিয়তাবাদও প্রথমের দিকে কম্যুনিউস্ট আন্দোলন দ্বারা ভালো ভাবেই প্রভাবিত ছিল। তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলন কিন্তু মার্ক্সবাদ-লেনিনিজমের ভালদিক গুলিই নিয়েছে। ব্যার্থতার দিকটা বর্জন করেছে। আর আমরা বাঙালীরা সেটাকে আত্মকরনের বদলে লাল শালুমোড়া নারায়ণ শীলা ভেবে পুজো করে চলেছি। গোটা পৃথিবী বদলাবে। আমাদের দিকের কমিনিউস্টরা লেনিন-স্টালিনকে পুজো দিতেই থাকবেন। এক অদ্ভুত সেলফ ডিনায়ালে ভোগে বাম-বাঙালী।
আজ বাঙালী জাতিয়তাবাদি শক্তি পশ্চিম বঙ্গে থাকলে মমতার আত্মঘাতি আন্দোলন সম্ভব হত না। বুদ্ধদেব প্রকাশ কারাতের ক্রীতদাসত্ব স্বীকার করে পশ্চিম বঙ্গের ক্ষতি করতে পারতেন না। দিল্লীর মুখ চেয়ে কংগ্রেসী নেতাদের বসে থাকতে হত না। আমাদের এই দুরাবস্থা অন্ধ্রে বা তামিলনাডুতে হবে না। নরেন মোদির মতন হিন্দুত্ববাদিও হিন্দুত্বের আলখাল্লা ছেড়ে গুজরাটি জাতিয়তাবাদের দিকেই হাঁটছেন। তাই গুজরাটের উন্নতির জন্যে মন্দির ভাঙতেও পিছপা হচ্ছেন না। আর আমাদের হিন্দুত্ববাদিরা সেই এক অস্তিত্বহীন হিন্দুত্ব সত্ত্বার পূজোই বিভোর।
অথচ তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেই এটা শেখা যেত। আমি তেলেগুদের অনেক অনুষ্ঠানে গেছি আমেরিকাতে। সবাই তেলেগু হিসাবে গর্বিত-রাজ্যের জন্যে কিছু না কিছু করছেন। ওদের কেও আঞ্চলিকতাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। আমরা তুলি। এবং তারপরে হায়দ্রাবাদের চাকরির সন্ধানে যেতে হয়। তারপর সেখানে থেকে “প্রবাসী বাঙালী” তকমা চাপিয়ে দুর্গাপুজো কমিটিতে দলাদলি করে বাঙালী অস্তিত্বের ভজন-আরাধন।
আসলে “বুদ্ধিজীবির ভাং” বাঙালীর সবথেকে বড় রোগ। যা তাকে সম্পূর্ণ অন্ধ করেছে। ফলে আজ় সে আত্মঘাতি।
(৫)
বাংলাদেশেও যারা বাঙালী সত্ত্বা ছেড়ে ইসলাম বা বাংলাদেশ সত্ত্বায় আশ্রয় খুঁজছেন-তাদের জন্যেও একই কথা বলা যায়। অথচ বাঙালী এবং বাংলাদেশী সত্ত্বায় কোন সংঘর্ষ থাকাই উচিত না। কারন একটা জাতির জন্মই হল বাঙালী সত্ত্বার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু হচ্ছে-কারন বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ফরেদাররা বাংলাদেশী সত্ত্বার সাথে কয়েক মন ওজনের ইসলামকেও জুরে দিয়েছেন রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে। তা বাঙালী হতে পারে না। যেমন আমরা এদিকে লোকজনকে কোন ধর্মীয় সম্বোধন করি না। ঈশ্বর মঙ্গল করুন-এসব কথাবার্ত্তা পশ্চিম বঙ্গে আর শুনতে পাবেন না। অথচ বাংলাদেশে খোদা হাফেজ, আল্লা হাফেজ, সেলাম আলেকুম সর্বত্র শুনবেন। টিভি থেকে মাঠে ঘাটে। এগুলো আসলে ইসলামের নামে আরবী হনুকরনের অপপ্রচেষ্ঠা। এভাবে ইসলামের আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকেও ছোঁয়া যায় না-শুধু নিজেকে আত্মপ্রতারিত করা হয়। এটা নিছক ধর্মীয় পরিচয়ের সংকট ছাড়া কিছু নয়। অথচ কেমন আছেন? ভাল আছেন? ভাল থাকুন বলেই আরো অনেক ভাল ভাবে এই কাজ চালানো যায়। আলেকুম সেলামের বদলে “ভাল আছেন?” এরা বলেন না-আসলে সেই নিজের বাঙালী সত্ত্বায় লজ্জা পাওয়া-ইসলামের সত্ত্বায় গৌরব বোধ করে। এটা না তার নিজের জন্যে ভাল-না ভাল বাংলাদেশের জন্যে।
(৬)
যারা মনে করেন বিবর্তনের পথে সবই উড়ে যাবে বা আসল সমস্যা শ্রেনীদ্বন্দে-তাদের জন্যে দুটো কথা বলি। শ্রেনীর আসলেই কি কোন অস্তিত্ব আছে? আমার হাউসমেড মাসে দুবার মার্সডিজে চেপে ঘর পরিস্কার করতে আসে। আমাদের পোষাকি ভাষায় সে ‘ঝি‘। সে কি প্রলেতারিয়েত? প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই ধরনের শ্রেনী বিভাজ়ন আরো ধোঁয়াশার মধ্যে পড়বে। কারন কায়িক শ্রম, ক্রমশ যন্ত্রের দ্বারাই সাধিত হবে। কিন্তু ভাষাটা বাস্তব। কমরেডরা ভাবুন-ভাষা না শ্রেনী? কোনটার বাস্তব অস্তিত্ব বেশী? আর ভাষাত শুধু ভাষা নয়-ভাষার পেছনে থাকে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস। প্রলেতারিয়েত যন্ত্রের সাথে বদলিয়ে বুর্জোয়া হবে-কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাঙালী কি অবাঙালী হবে?
যেদিক দিয়েই দেখি না কেন-আমাদের এই বাঙালী সত্ত্বা, এই নৃতাত্ত্বিক পরিচয় বাদে সমস্ত কিছু আদর্শবাদ-হিন্দুত্ব, ভারতীয়ত্ব, ইসলাম বা কমিনিউজমের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তব। এবং দৃঢ়। একে অস্বীকার করে অন্য কিছু পাকামি করা মানে, আত্মঘাতের দিকে আরো এক পা অগ্রসর হওয়া।
আবার স্মরন করিয়ে দিই-
আজ যে কম্যুনিস্ট কাল সে ক্যাপিটালিস্ট হয়ে যেতে পারে। আকছার ই এমন হয়।
প্রলেতারিয়েত ও বুর্জোয়া হয়। আস্তিক নাস্তিক হয়-নাস্তিক, ঈশ্বরে বিশ্বাস খুঁজে পায়। বাঙালীদের রাজনৈতিক বিশ্বাস বদলায়। ধর্ম বদলায়। দেশ বদলায়। আজকের ভারতীয় বাংলাদেশী পাসপোর্ট কালকে আমেরিকান পাশপোর্ট হতে পারে।
কিন্তু একজন বাঙালী– বাঙালী সত্ত্বা বদলিয়ে অবাঙালী হয় না।কারন এই সত্ত্বা দেশ কাল আদর্শে বন্দী না। এই সত্ত্বা আমাদের প্রতিটা নিশ্বাসে। আমরা যে কোনদিনই অবাঙালী হতে পারবো না-শুধু এটুকু বুঝলেই-এইসব আটভাটের চেয়ে আমাদের জীবনে বাঙালী সত্ত্বার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী-এবং সেই পথেই আমাদের ভবিষ্যত-এটা হয়ত অনেক সহজ হত বোঝা। এটাকে যত আমরা অস্বীকার করব-তত নীচে নেমে যাব।
আ গে ো বাদী কী ? বিস্তারিত জান তে চাই । প্লিজ….
একটা ব্যাপার আমার কাছে পরিষ্কার হলো না। কেউ যদি তার নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের চাইতে তার বিশ্বাসগত পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়, তাহলে সমস্যা কোথায়? ইসলাম ধর্মের ব্যাপারটাই এ রকম যে, এটি তার অনুসারীদের কাছে ধর্মীয় পরিচয়কে অন্য সকল কিছুর উপরে রাখতে ইচ্ছুক। (এর প্রভাব ভালো কী খারাপ সে তাত্ত্বিক আলোচনায় নাই বা গেলাম!)
পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালী সত্ত্বা তো প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। আর বাংলাদেশে বাঙ্গালী পরিচয়ের উপরে বাংলাদেশি পরিচয়টাই মূখ্য। কেননা, বাঙ্গালী পরিচয়ে পরিচিত হতে গিয়ে আমরা শুরুতেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম, যার জের আজো টানতে হচ্ছে।
ধন্যবাদ।
মিঃরায়,
আরেকটা জিনিস লিখতে ভুলে গেছি। সিপিএম সরকার রবীন্দ্র জয়ন্তীগুলো স্পনসর করত বটে-কিন্তু আসলে কিশোর এবং যুবকদের মধ্যে বাম ভাবধারা প্রচারের কাজেই লাগাত। যেমন চিরকার এই চারটে কবিতা থাকত প্রতিযোগিতা তে-ওরা কাজ করে, আফ্রিকা, বিদ্রোহী আর রানার। বিতর্কের টপিকও তাই-রবীন্দ্রনাথের চোখে আমেরিকা বনাম রাশিয়া, আন্তর্জাতিকতা বনাম জাতিয়তাবাদ, মাটির কবি বনাম রোম্যান্টিক কবি- এসব খারাপ না। ভালোই। শাস-বহু সিরিয়ালের থেকে অনেক ভাল। সমস্যা হচ্ছে এক বিরাট হাঁসজারু বামপন্থী তৈরী হয়েছে আমাদের দিকে-যাদের না আছে ধর্ম নিয়ে সঠিক অবস্থান, না অর্থনীতি বোঝে ঠীকঠাক। এটা নেগেটিভ হলে পজিটিভ দিকটা হচ্ছে বাংলাদেশের থেকে পশ্চিম বঙ্গে ধর্মের উৎপাত কম। নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদির সংখ্যা বা তাদের প্রাবল্য সমাজে অনেক বেড়েছে। তবে মুসলমানদের মধ্যে আরবের টাকায় এদিকেও অধঃপতন অব্যাহত-তারা আগের থেকে বেশী ধার্মিক। জীবনে হিজাব-বোরখা আমাদের ওদিকে দেখি নি। উচ্চশ্বরে সাউন্ড পল্যুশন করে আজান দিতেও দেখি নি। এখন দেখছি। হিন্দুদের মধ্যে ধর্মের প্রাবল্য অনেক কম-কিন্তু তার মানে এই নয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা কিছু মাত্র কমেছে। অনেক বেড়েছে। সরকারী সংখ্যালঘু তোষন নীতিই এর কারন-অথচ মুসলমানরা সরকারী চাকরীতে মোটে ৪-৫%! শিক্ষাতে আদিবাসিদের চেয়ে পিছিয়ে।
This is not true either although I am direct activist against CPM. But I should not lie. During 1980-1995, CPM did support a lot of cultural events even at grassroot level and new literacy movement was also based on new generation of Bengali literate people. Also it did set up a lot of Rabindrasadan-auditoriums in small towns to boost local cultures and drama. It did help people outside Kolkata a lot culturally but death came with Cable TV. That was unstoppable.
১৯৮০-১৯৯৫ পর্যন্ত গ্রাম শহরে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আমি অবশ্য পড়াশোনার জন্যে মফঃশহর ছেড়েছি ১৯৮৯ সালে-১৯৯৫ সালেও দেখেছি রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালন করা হচ্ছে ৩ মাস ধরে। একটা ১০ হাজার লোকের শহরে অন্তত বিশটা অনুষ্ঠান হত-আমার নিজেরা পাড়ার ক্লাবেই আমরা তিন দিন ধরে ( নো জোক) রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তী উদজাপন করতাম-বিরাট সমাবেশ এবং উদ্দিপনা দেখেছি। একটা দিন লাগত শুধু বাচ্চাদের কবিতার প্রতিযোগিতা শেষ করতে। আমার মনে আছে একবার ১৪০ জন বাচ্চা প্রতিযোগী দেখেছিস শুধু কবিতা বিভাগে। স্কুলে যখন পড়তাম এই সিপিএম সরকার তখন যুব মঞ্চ থেকে অনেক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করত। বছরভর নাটক, বিতর্ক, নাচ, গান এসব আমাদের জীবন সঙ্গী ছিল।
দুটো জিনিস পুরো বারোটা বাজিয়েছে। প্রথমটা কেবল টিভি। হিন্দি সংস্কৃতি মোটেও গ্রাম বাংলার গভীরে ঢোকে নি সেটা আমিও দেখেছি। কিন্তু ওই শাশুরী-বৌমার ঝগড়ার তৃতীয় শ্রেনীর বিনোদন সব ডুবিয়ে দিয়েছে।হিন্দি সিরিয়ালগুলোর বাংলা করা হল।
দ্বিতীয় ব্যাপারটা হল কোলকাতায় মধ্যবিত্তরা ছেলে মেয়েদের ইংরাজিমিডিয়াম ছাড়া পড়ালো না।
এটা আশির দশক থেকেই হয়েছে। আমার বন্ধুদের অধিকাংশ বাংলা পড়তে পারে-লিখতে বললে মুশকিল। কারন ইংরাজী মিডিয়ামে পড়লে বাংলা লেখার অভ্যেসটা হয় না। তবে তাদের পড়তে অসুবিধা হয় না-কারন সংবাদ পত্র সহ বাড়ির প্রায় সব সাহিত্যই ত বাংলাতে।
এটা গ্রাম-শহর গুলোতে হয় নি। কারন কোলকাতা আর কিছু শিল্প শহর ছাড়া-ভাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নেই। ফলে ৮০% ভাগ ছাত্রের জন্যে বাংলা মিডীয়ামে পড়া আজও ভরসা। আমাদের বাংলার শিক্ষকরা খুবই ভাল ছিলেন। আমরা যত্ন নিই নি-কারন ওটা পেশাদারি জীবনে লাগবে না বলে। সেটা পুরো অন্য ব্যাপার।
ডিটিপি আসাই আজকাল লিটল ম্যাগাজিন প্রচুর বেরোচ্ছে। নদীয়া জেলা থেকেই এক সময় ১৫০টা ম্যাগাজিন অনিয়মত বেড়োত। আমার মেশোমশাই নদীয়ার সাহিত্য সংসদের সভাপতি ছিলেন-উনার কাছে শুনেছি, নদীয়া জেলা থেকে কবিতার বই বেরোই বছরে দুশোর ওপরে।
সুতরাং কোলকাতার উলটো দিকটাও আছে।
Kolkata was the shrine of the Bangalee culture, which has inspired generations with the divine poetry, literature, song, movie, drama, etc., providing nourishment for the entire Bangalee culture. When the shrine is down, so could be the culture. Culture needs nourishment for growth, without which only a dwarf culture may survive in the West Bengal.
How did this happen? The Bangalee culture died in Kolkata without patronage and nourishment from the communist rulers of the West Bengal, who got indoctrinated overnight with an imported Cultural Revolution from China/Russia. The people soon became culturally confused, and the void was filled immediately by the South Indian (Bombay) culture. What Bangalees of Bangladesh could overcome, Bangalees of Kolkata could not. In the end, it’s a sad story!
That is not true. It is vanishing from 1 crore people of Kolkata. But remaining 7 crores understand only Bengali and small towns/villages are still buzzing with Bengali culture. Number of little magazines published, number of dramatics groups in these small towns flourished at an unimaginable rate. Next thing they need is local Cable channel to air their programme..That is also coming up. Remember literacy rate of WB is around 87%-news papers sold is around 25 lakhs copy while 3 crore people read bengali daily and that number is increasing due to new literate.
Kolkata is hopeless place for bengali culture now..but small towns are thriving.
Nice! The foreign ideological powers have conducted relentless propaganda to influence the Bangalee-culture in Bangladesh/East Bengal from the beginning of time, so to speak. Yet, they have been largely unsuccessful. It is extremely delightful to see that, recently, more and more Bangladeshi-Bangalees have been using Bengali-names, and using Bengali-titles (Ma, Baba, Kaka, Dada, etc.) to address relatives and others, which were abandoned before as being the usage of Hindus. I find encouragement when I listen to modern Bengali songs, sang by young singers on the Bangladeshi TV channels, as against Hindi songs due to popular demands from the audiences in the cultural forums, organized by the Baglalee from the West Bengal. While Bangalee-culture thrives in Bangaldesh, it vanishes from the West Bengal. What a shame!
ভাই Bright Smile আপনি একটু ভুল করেছেন, প্রথমে যিনি কমেন্ট করেছেন তিনি Sumon, Suman না। আমার নাম suman আর আমি বাংগালী নাস্তিক। দুঃখিত এমন সিরিয়াস আলোচনায় বাম হাত ঢোকানর জন্যে। সবাই ভালো থাকুন।
In reference to the comment (First One) made by Suman.. I can tell for sure that “Chora Na Shone Dharmer Kahini”.
হিন্দু বা ইসলাম কোনটাই বাংলার অতীত না। ইসলাম যখন বাংলায় এসেছে-তখন বাঙালী ধর্ম এক সহজিয়া ধর্ম-যা লালন ফকির-বাউলরা আজও বহন করছে। সেন রাজবংশ হিন্দুত্ব নিয়ে আসে-সেটা ১০২৪ সাল। আর ইসলাম এলো আরো ১০০ বছর বাদে। অর্থাৎ ইসলাম এবং ব্রাহ্মন্য হিন্দু ধর্ম একই সময়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে। এবং সেই জন্যে ব্রাহ্মন্য হিন্দু ধর্ম বা ইসলাম, দুটোই বাঙালীর ওপর চাপানো। এটা না হিন্দুরা জানে, না জানে মুসলমানরা।
বিজয়ী গোষ্ঠি ইতিহাস তাদের মতন করেই লেখে। আজ বাঙালী যদি বিজয়ী হয়-তাদের ইতিহাসটা লেখা উচিত নিরেপেক্ষ ভাবে। যে এই ধর্মগুলি বাঙালী নৃতাত্ত্বিক সত্তার ওপর চাপানো হয়েছে।
বাঙালী হিন্দুদের লোকাচার হিন্দুদের থেকে আলাদা-কারন তা বাঙালী গোষ্ঠিগুলির অনেক দিনের ঐতিহ্য। এগুলোকে হিন্দু না বলে বাঙালী বলা উচিত।
অবশ্য নমষ্কার বা সুপ্রভাত শব্দটার মধ্যে কেও যদি বাঙালী বাদ দিয়ে হিন্দুয়ানির গন্ধ পায়, তার মাথাটা একদম গেছে ফর্সা হয়ে।
দারুণ চিন্তা জাগানিয়া একটা প্রবন্ধ। বাঙালির আত্ম-পরিচয়ের ভাবনাকে গদা মেরে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে এই লেখা নিঃসন্দেহে। ধন্যবাদ বিপ্লব, জরুরী এই বিষয়টিকে সামনে তুলে আনার জন্য।
পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিদের বাঙালি অস্তিত্ব নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না। কেননা ওই বিষয়ে আমার তেমন কোন একটা ধারণা নেই। তবে বাংলাদেশের লোক জনের বাঙালিত্ব সম্পর্কে ভাবনাগুলো আমার জানা আছে মোটামুটি। সে আলোকেই কিছু কথা বলছি।
আমার যেটা ধারণা, তা হচ্ছে যে, আমাদের মত আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগা জাতি মনে হয় না পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন একটা আছে। আমরা কি সেটা আমরা নিজেরাই জানি না। বিভ্রান্তিতে ভুগছি আমরা নিদারুণভাবে। আমাদের এই বিভ্রান্তি এসেছে সেই সুদূরকাল থেকেই। একই জাতিসত্ত্বার লোকজনের চেয়ে হাজার হাজার মাইল দূরের অপরিচিত লোকজনকে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের মিলের কারণে আমরা আপন ভেবে নিয়েছি অনেক আগে থেকেই। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেটা ভাবতে গিয়ে আমরা নিজেদের লোককে ঠেলে দিয়েছি অপরিচিতের আঙিনায়। হাজার মাইল দূরের ধূসর মরুভূমির সেই সব লোকজনের বিজাতীয় রুক্ষ সংস্কৃতি এবং দুর্বোধ্য ভাষাকে আমরা ভেবেছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বা ভাষা হিসাবে। আর পলিমাটিতে জন্ম নেওয়া আমাদের নিজেদের যে সংস্কৃতি সেটাকে হিন্দুদের মনে করে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছি আমরা। আমরা কি বাঙালি, নাকি মুসলমান সেটা নিয়ে সংশয়ে ভুগছি বহু যুগ ধরেই। বাঙালি মুসলমানরা বাঙালি হওয়ার চেয়ে মুসলমান হওয়াটাকে বেশি পছন্দ করেছে ইতিহাসের একটা বিশাল সময় জুড়ে। সেই মুসলমান জাতীয়তাবাদটাকেই বাংলাদেশে বাংলাদেশি নামের নতুন এক জাতীয়তাবাদ হিসাবে চালু করে দিয়েছে বিএনপি জামাত সহ দক্ষিণপন্থীরা। যা কিছু বাঙালিত্ব বা বাঙালিয়ানা, তাকেই হিন্দুয়ানী বলে প্রত্যাখানের প্রবনতা শুরু হয়েছে এই জাতীয়তাবাদের মাধ্যমেই।
আমাদের ইতিহাস শিক্ষাটা এর জন্য বেশ খানিকটা দায়ী। আমাদের ইতিহাস বইয়ের মত এই রকম বিচিত্র, কদর্যময় এবং বিভ্রান্তিপূর্ণ ইতিহাস বই আর কারো আছে কিনা জানা নেই আমার। বিদেশী দখলদারীদেরকে নিজেদের হিরো হিসাবে দেখার প্রবনতা আর কোন দেশের ইতিহাস বইতে আছে কিনা সেটাও আমার জানা নেই। কার ইতিহাস যে আমরা পড়ি কে জানে? এমনভাবে ইতিহাসগুলো লেখা হয়েছে যাতে মনে হবে যে মুসলমান বহিরাগতরাই আমাদের নিজেদের লোক আর বাংলায় যে হিন্দুরা ছিল তারাই আমাদের আসল শত্রু। ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর মত একজন দস্যু যখন আমাদেরই পূর্বপুরুষদেরকে মেরেকেটে বাংলা দখল করে নেয়, আমরা উল্লসিত হই মুসলমানের বিজয় ভেবে। ইতিহাস বইতে আমরা সগর্বে নিজ জাতির রক্তে রঞ্জিত সেই রক্তাক্ত দখলকে বাংলা বিজয় বলে মহিমান্বিত করি। ভাবখানা এরকম যে, ওই ডাকাতের বাংলা দখলের সাথে সাথে মনে হয় আমরাও বুক চিতিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম তার পাশে ঘোড়ায় চড়ে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে।
সেই প্রাচীন বিভ্রান্তির জের এখনো চলছে বাংলাদেশে। শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের কারণে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর লোক আরবী, ফার্সী, উর্দুকে পবিত্র ভাষা মনে করে, বিজাতী আরবী সংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতি বলে মনে করে। এতো সুন্দর নিজেদের একটা ভাষা থাকতেও আমাদের নাম বেছে নিতে হয় আরবী থেকে। একটা জাতির জন্য এর থেকে লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে? এই যে দেখুন না, আমার পছন্দ অপছন্দের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই আমার ঘাড়েই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কি রকম আজব এক আরবী নাম। 🙁
বাংলাদেশের বাঙালিদের নিজেদের জাতিগত পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি এবং আত্মপরিচয়ের সংকট নিয়ে স্যাটায়ারধর্মী একটি লেখা আমি লিখেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে ‘কনফিউজড এক জাতির গল্প’ নামে। এখানে সেই লেখাটি প্রাসঙ্গিক বিধায় লিংকটা দিয়ে দিলাম। আগ্রহী পাঠকেরা ঢু মেরে দেখতে পারেন।
http://www.mukto-mona.com/Articles/farid_ahmed/confused_nation.htm
অসংখ্য ধন্যবাদ ডঃ পাল। খুব-ই চমৎকার তথ্যবহুল লেখা। এই বাংলাদেশেও বাঙ্গালী আর বাংলাদেশী বিতর্কে আমরা জর্জরিত। সেকুলার বাঙ্গালীর জায়গায় ইসলামী তক্মায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জায়গা করে নিল। অথচ, বিভক্ত বাংলাদেশীরা ভারতীয় বাংলাভাষীদের সাথেই সখ্য গড়ে তুলছেন অবলীলায় যা অন্যান্য জাতিসত্যার সাথে হচ্ছে না প্রবাসীদের মাঝে। অর্থাৎ, ধারনা প্রসূত আরপিত জাতীয়তাবাদের আগল ভেঙ্গে চিরায়ত বাঙ্গালীর নিজস্ব সত্বার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সত্যিইতো, ধর্মান্তরিত হওয়া যায়, পাসপোর্ট বদলানো যায় কিন্তু বাঙ্গালীত্ব ঘোচানো যায়না।
আপনি কারে কি কন? আমেরিকাতে কি কোন বটগাছ নাই। সেইহানে গিয়া এইসব কন। তাইলে যদি কোন কাম হয়। নাইলে যে লাউ সেই কদুই থাকবো। হ্যারা আরবী, বাঙালি না বাংলাদেশীও না। আরবী সংস্কৃতির দালাল। হ্যারা বিদেশী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কয়, মাগার আরবী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কিছু বোঝে না। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চিতকার পারে। কিন্তু ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কিছু জানেনা।
তাই কইছিলাম, আপনের এইগুলান কথা আটলান্টিকরে কন, ডলফিন তিমিরা বুঝবো। মাগার আমরা না।
Religion is not created by God. It is created by man to rule the people. Adam and Eve were not belonged any religion.Human is created for Humanism,not for fight or to kill the human in the name of Allah,God,Issawar,Bhagaban,or Jesus!
Definitely State should be separated from the religion to stablished the equity and equality.
১। রাষ্ট্র এবং জাতিয়তাবাদ ভবিষ্যতে থাকবে না এটা ঠিক। ভারত ও একটা রাষ্ট্র যা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সব থেকে আধুনিক রাষ্ট্র এই জন্যে যে-নানান জাতি সেখানে এক সাথে বাস করছে এবং তাদের নিজেদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাচ্ছে। কিন্তু সেখানেও শিল্প এবং বিদেশী বিনিয়োগ আনার জন্যে রাজ্যগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা ভারতের উন্নতির সহায়ক। ওর্থাৎ এই জাতিয়তাবাদকে ভালো এবং মন্দ দুই কাজেই ব্যাবহার করা যায়। বিজ্ঞান দিয়ে এত হাজার লোক ধ্বংশ করা যায় মানেই বিজ্ঞান খারাপ হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে এই জাতিয়তাবাদের ব্যাবহার কি ভাবে আমরা করব।
২| পৃথিবীতে এমন কোন উদাহরন আছে দুটি মুসলমান রাষ্ট্র পাশাপাশি শান্তিতে থেকেছে? ইরানের সাথে আফগানিস্থান, আফগানিস্থানের সাথে পাকিস্থান এনং ইরান, ইরানের সাথে ইরাক-শান্তি কোথায়? কে ইসলামের জাতিয়তাবাদি বিরোধি বানী শুনেছে? শোনে নি। কারনটা কি জানেন?
কারন ইসলাম সহ সব ধর্মের প্রথম কাজ, এটাকে শাসক শ্রেনীকে ক্ষমতায় রাখা। আফগানিস্থানের শাসককুল ইরানের শাসককুলকে মানবে কেন? যেকারনে চীন এবং রাশিয়াতেও যুদ্ধ হয়েছে। এগুলো জ্বলন্ত প্রমান এই সব মহান আদর্শবাদ যা রাষ্ট্রহীন রাজনীতির কথা বলে, তা আসলেই “লোক ভোলাতে” শাসক শ্রেনী ব্যাবহার করে। নাশের ত আরব জাতিয়তাবাদ ব্যাবহার করেছেন-যা ইসলাম বিরুদ্ধ। তিনি ত আবার মুসলমান নেতাদের মধ্যে হিরো।
স্ট্যালিন রাশিয়ান জাতিয়তাবাদি ছিলেন। এটা কমপালসন না পার্ভাসন? এটাকে পার্ভাসন মানলে, ইতিহাস বলেই সেটাই বাস্তব।
৩। ধর্ম নিরেপেক্ষ তামিল জাতিয়তাবাদ এবং হিন্দু ধর্মালম্বী মারাঠী জাতিয়তাবাদি শক্তির মধ্যে অনেক পার্থক্য। প্রথমটি লিবারেটিং, পরের টি ফাসিজম। তামিল রা, অতামিলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে না-তাদের তাড়ানোর জন্যে। মারাঠিরা করে। সেটা ফ্যাসিজম।
৪| কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসি জাতিগুলি অন্যদের থেকে ভাল করে। এই জন্যে ইউরোপে জার্মানী এগিয়ে। ভারতেও যেসব রাজ্যে জাতিয়তাবাদি শক্তিশালী তারা ভাল করেছে। কিন্তু এটা ভুল পথে গেলেত মিলিটারী সন্ত্রাস হবে।
We are “Manush”.
If you are a follower of Atheism religion, the above rationale is for you. But for a follower of Islam he/she is a Muslim first.
প্রথমে বলে নেয়া ভাল যে মহাজ্ঞানী আল্লাহ আমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে তৈরি করেছেন। এর পিছনে মহাত্য এই যে আমারা যাতে একে অন্যর সংস্কৃতি, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। পৃথিবীতে বহুজাতিক অবস্থান ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি বা ভিন্নমতের উৎস হওয়া উচিত নয় বরং এটা আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও পরিচিত হবার পন্থা হওয়া উচিত।
আমরা কোরানে এর সপক্ষে নিচের আয়াত দেখতে পারি ..
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (Al-Hujurat – 49:13).
http://quraanshareef.org/indexU.php?sid=49&&ano=18&&st=0
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আরো বলেছেন
আর তোমার পালনকর্তা যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই সব মানুষকে একই জাতিসত্তায় পরিনত করতে পারতেন আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না। (Hud – 11:118-119)
http://quraanshareef.org/indexU.php?sid=11&&ano=123&&st=105&&arabic=
এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ চেয়েছেন মানুষকে বিভিন্ন রঙ্গে,জাতিতে ও অবস্থানে তৈরি করতে প্রত্যক মানুষ নিজ থেকেই অন্য জাতি ও দেশ পরিভ্রমন করে ও জানার চেষ্টা করে। আমাদের জানা উচিত ইসলাম দেশ, জাতি বা গায়ের রঙের অসমতার উপর ভিত্তি করে কোনো আহবানকে সমর্থন করে না।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন ,
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। (৪৯:১৪)
বিদায়ী হাজ্জ এর ভাষনে, যেখানে বিশ্বের মুসলিম এর জন্য সংবিধান তৈরি হয়েছে, মহানবী(সাঃ) বলেছেন,
“কোনো আরব অন্য কোনো অনারব এর চেয়ে উপরে নয়, তেমনি কোনো কালো মানুষ কোনো সাদা চামড়ার মানুষের চেয়ে নিচু নয়। শুধুমাত্র তাকওয়া(আল্লাহভীতি) ও বিবেক সম্পন্নরাই উচ্চতর অবস্থানের”।
যদি জাতিয়তাবাদ বলতে আমরা বুঝি অতিরঞ্জিত স্বদেশপ্রেম ও অন্ধ অনুকরন যা মুসলিম ব্রাদারহুড ও মুসলিম জাতির একতার বিপক্ষে হয় তাহলে এ সম্পর্কে Sheikh Yusuf Al-Qradawi এর বক্তব্য হল,
“যারা অন্ধ জাতিয়তাবাদ এর ডাক দেয় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কাধে কাধ বেধে একসাথে বিরোধিতা করতে হবে। তাদের কিছু কিছু চেতনা ও আহবানের আমরা সম্পুর্ন বিপক্ষে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
১) তারা বিশ্বাস করে জাতিয়তাবোধ সবকিছুর উপর প্রাধান্য পাবে, এমনকি আল্লাহ ও মহানবী (সাঃ) এর আনুগত্য এর চেয়েও। তারা বিশ্বাস করে জাতিয়তাবোধের উপর সম্পুর্ন আনুগত্য প্রকাশের ও সচেষ্ট থাকে মানুষের হ্রদয় থেকে হ্রদয়ে ছড়িয়ে দিতে। তারা আরো বিশ্বাস করে যে সব রাজনৈতিক, কালচারাল ও শিক্ষামুলক ব্যবস্থা হবে জাতিয়তাবোধকে কেন্দ্র করে অন্য সব মতবাদ ও দর্শন কে উপেক্ষা করে।
২) জাতিয়তাবাদের ফলাফল যে জনসাধারন তাদের “কার্যকরন” কে অন্য সবকিছুর উপর প্রাধান্য দিবে। তাই দেখা যায় আরব জাতিয়তাবাদীরা আরবদের অনারবদের উপর অধিক কাম্য করে ও ধর্মীয় বাধনের কথাও ভুলে যায়। যা কোরান এর স্পষ্ট বিরোধিতা
“মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই”(হুযরাত – ৪৯:১০)
কোরান নির্দেশ দিয়েছে সব বিবেচনা ও সম্পর্ক পাশে রেখে আমাদের ইসলামিক বাধনের(islamic bond) পথে চলার। আল্লাহ আরো ঘোষনা করেছেন
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী”।(৯:২৩)
জাতিয়তাবাদী গোষ্ঠী আমাদের দোষারোপ করবে যদি আমরা কাস্মীর, ইথিওপিয়া অথবা রাশিয়ার মুসলিমদের পাশে এসে দাড়াই কিন্তু তারা কোনো পাপ দেখবে না হিন্দু, কমিউনিস্ট অথবা অন্য কাউকে একই কাতারে বা দলে সামিল করতে জাতিয়তাবোধের ভিত্তিতে।
৩) জাতিয়তাবাদীরা রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা করার আহবান করে। তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র(secular state) ও ধর্মকে শুধু উপাসনালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায় এভাবে যে ধর্ম শুধুমাত্র কিছু রীতিনীতি, আধ্যাতিকতা বিবর্জিত আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের কাছে বাস্তব জীবনে ধর্মের প্রভাব নিস্প্রোয়োজন বরং এটা পড়ে থাকবে আলমিরা এর উপরে, বুক শেলফে কিন্তু ধর্ম যে জীবন পরিচালনের মূল নির্দেশক এ ধারনার মূলোৎপাটন ঘটানোই তাদের কাম্য। তাদের কাছে মানুষের আচরনের(human behaviour) ফ্রয়েড(Freud) থিওরি গ্রহনযোগ্য এবং জীবন ও শিল্পকলা ব্যাখ্যায় সারে(Sartre)
এর মতামত অগ্রগন্য। তারা কখনই চিন্তা করে দেখবে না যে ওসব মতাদর্শ ইসলামের সাথে খাপ খায় কিনা।
৪) জাতিয়তাবাদ একটি অজ্ঞ মতাদর্শ যা ইসলামপূর্ব যুগে যাযাবর ও গোত্রসমূহ এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল এবং যা ইসলাম স্পষ্টভাবে বাতিল ও বিরোধিতা করেছে। হাদিসে আছে মহানবী (সাঃ) বলেছেন : “যে বিভেদ(’asabiyyah’, sectarianism) সৃষ্টি করে সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়, যে বিভেদ তৈরিতে সংগ্রাম করে সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়। যে বিভাজন সৃষ্টিতে মৃত্যুকে বরন করে সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।” জাতিয়তাবাদী ধ্যান-ধারনা অত্যাচারীকে সমর্থন ও অত্যাচারিতের পরাজয়ে অনেক ক্ষেত্রে সমর্থন করে। আজকের বিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
৫) ইসলামী জাগরন ও ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ( ইসলামের শিক্ষা ও পথনির্দেশের দিকে ফিরে আসার সংগ্রাম) জাতিয়তাবাদীরা ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের মত আচরন করে। দুটো জিনিষ থেকে এই শত্রুতা জন্ম নেয় ,
ক) তাদের ইসলাম গ্রহনযোগ্যতা তাদের সেকুলার(Secular) বিশ্বাসকে ধংস করবে এবং মুসলিম একতার বিরুধ্বে তাদের সংগ্রামকে অর্থহীন করে তুলবে।
খ) জাতিয়তাবাদী ধারনার বীজ ও সমর্থন প্রথমে সামন্তবাদী পশ্চিমা বিশ্ব ও মিশনারীরা শুরু করেছিল।
http://www.islamonline.net থেকে সংগৃহীত।