ইশতেহারে যায় চেনা……
দিনমজুর
রঙচঙে মুখোশে যতই মুখ ঢাকবার চেষ্টা করা হউক না কেন, মুখোশে কিন্তু ঠিকই মুখের একটা আদল ফুটে উঠার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আওয়ামী- বিএনপি- জামাত নির্বাচনী ইশতেহারে যতই ভালো ভালো কথা বলার চেষ্টা করুক না কেন, শ্রেণী চরিত্রের কারণেই তাদের গণবিরোধী অবস্থান একটু খেয়াল করলেই উন্মোচিত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি , জামাত … এদের বিরুদ্ধে একটা সাধারণ অভিযোগ হলো যে এরা এদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনা। আমরা যে বিষয়টি বলতে চাই তা হলো শ্রেণীগত কারণেই এদের পক্ষে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আর প্রতিশ্রুতি যে এরা একেবারে রক্ষা করেনা তা নয়- এরা যাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে সেই বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি কিন্তু ঠিকই রক্ষা করে।
তারপরও যদি ধরে নেই, কোন ভাবে এরা হঠাৎ করে তাদের নির্বাচনী ইস্তিহারে জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবয়ন করতে শুরু করল- সেক্ষেত্রেও কি এদের গণবিরোধী অবস্থানের পরিবর্তন হবে? আমরা মনে করি এ প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূণ। এর উত্তর খুজঁতে গিয়ে এখানে আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি , জামাত এই তিনটি প্রতিনিধিত্বশীল বুর্জোয়া দলের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের খাত ওয়ারী তুলনামূলক আলোচনা করব।
শিল্প/বিনিয়োগ:
আওয়ামী লীগ:
#বেসরকারী ও বিদেশী বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরী করা হবে (আর্টিক্যাল ৯.১ ও ৯.২)
বিএনপি:
#বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্য বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া এবং বেসরকারী খাতকে সর্বপ্রকার উৎসাহ দেয়াই বিএনপি অর্থনীতির দর্শন (আর্টিক্যাল ৪)
জামাত:
#বেসরকারী খাতের উন্নয়নের উপর যথাযথ গুরুত্বপ্রদান, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেষ্টা করা ও বিনিয়োগবোর্ডকে শক্তিশালী করা হবে( অর্থনীতি, পৃষ্ঠা ১৬)
মন্তব্য:
#আওয়ামী লীগ, বিএনপ , জামাতের ইশতেহার থেকে পরিস্কার বোঝা যায় এদের মূল ধান্দা হলো রাষ্ট্রীয়খাতের বেসরকারীকরণ, বিদেশী বিনিয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জোয়া মালিক শ্রেণী ও সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক কেননা এদের মাঝে উপরে উপরে বিভিন্ন পার্থক্য থাকলেও মূলগতভাবে এরা সবাই এক- পুজিপতি শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।
# সবার নিশ্চয়ই মনে আছে, ভারতের টাটা কোম্পানি ২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইস্পাত কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সার কারখানা করার কথা বলায় হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেশের একমাত্র ইস্পাত কারখানা চট্টগ্রাম স্টীলমিল কেন বন্ধ করা হয়েছে? কেন কাফকোকে পানির দামে গ্যাস দিয়ে সর্বনাশ করা হয়েছে? কেন আদমজী বন্ধ, কেন পাট-সূতা-বস্ত্র-চিনি কলগুলো বন্ধ, কেন মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বন্ধ ইত্যাদি নিয়ে এদের ইশতেহারে আলোচনা নেই।
ইশতেহারে যা থাকতে পারে…..
#ঢালাও বিরাষ্ট্রীয়করণ, বিনিয়ন্ত্রণ, উদারীকরনের আত্মঘাতী নীতি পরিত্যাগ করা। রাষ্ট্রীয় কলকারখানাকে লাভজনক করা। একই সঙ্গে ব্যাক্তিখাতে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের শিল্প-ব্যাবসার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
কিংবা-
#টিএন্ডটি এবং ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করা। অতীতে বিরাষ্ট্রীয়করণকৃত কারখানাসমূহ বন্ধ হওয়া-সহ সকল দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের তদন্ত ও বিচার করা।
#বিদেশী বিনিয়োগের নামে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির লুটপাট বন্ধ করা।
কৃষি খাত
আওয়ামী লীগ
#কৃষি উপকরণে ভর্তুকী বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করণ, কৃষি জাত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করণ, ভূমি সংস্কার কমিশন গঠন, ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ, বাণিজ্যিক কৃষি, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এর বিকাশ ইত্যাদি। (আর্টিক্যাল ৭)
বিএনপি:
#কৃষিকে আধুনিক করা, সার-বীজ-কীটনাশক সহজলভ্য করা,মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌড়াত্ব হ্রাস করা, কৃষিপণ্যের বাজার জাত করণ সহজ করার জন্য কৃষি মার্কেট তৈরী করা, সার-কীটনাশকের পার্শপ্রতিক্রিয়া থেকে রার জন্য কৃষি শ্রমিক কে সচেতন করা ইত্যাদি। (আর্টিক্যাল ৭)
জামাত
#কৃষিতে ভর্তুকীর পরিমাণ বাড়ানো, বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, সার-বীজ-কীটনাশক সহজলভ্য করণ, ভূমি সংস্কার, কৃষি ভিত্তিক রপ্তানী প্রকৃয়াজাতকরণ অঞ্চল গঠন ইত্যাদি। (কৃষি ও খাদ্য-পৃ ১৭,১৮)
মন্তব্য:
#কৃষিখাতে বুর্জোয়াদলগুলো খুব ভালো ভালো কথা বলার চেষ্টা করেছে যদিও অতীতে যখন এরা ক্ষমতায় ছিল তখনও এরকম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকা স্বত্বেও এর কোনটিই বাস্তবায়নের ধারে কাছেও যায়নি। এদিক থেকে এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আরও কয়েকটি বিষয়ে এদের মিল লক্ষ করা য়ায়:
#এরা কেউই জাতীয় বাজেটের ঠিক কত ভাগ কৃষি খাতে বরাদ্দ দেবে সে বিষয়ে কোন কথা বলেনি।
#কৃষককে ন্যায্য মূল্য পাইয়ে দেয়ার কথা বললেও সেটা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজটি অর্থাৎ সরকারী ভাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনে নেয়ার বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে।
#বহুজাতিক কোম্পানীর কাছ থেকে হাইব্রিড /টারমিনেটর বীজ আমদানী কিংবা পরিবেশ ধ্বংসকারী কীটনাশক ও প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ রোধ করা বিষয়ে কোন কথা বলেনি।
#কেউ কেউ ভূমি সংস্কারের কথা বললেও কোন সুনির্দিষ্ট ভিত্তিতে ভূমি সংস্কার হবে সে বিষয়ে নিরব, জমির সিলিং বেধে দেয়ার ব্যাপারেও নিরব।
ইশতেহারে যা থাকতে পারে…..
#খোদ কৃষক ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে আমূল ভূমি সংস্কার, কৃষি সংস্কার ও গ্রাম জীবনের মৌলিক পুনর্গঠন করা। কৃষি ও কৃষকের উৎপাদন সমস্যাগুলোর সমাধান করা। বীজ, সার, ঋণ, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি খোদ কৃষকের জন্য সহজলভ্য করা। ক্ষতিকর হাইব্রিড বীজ আমদানী নিষ্দ্ধি করা। বহুজাতিক কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণে কর্পোরেট ফার্মিং করার সুযোগ বন্ধ করা। কৃষিপণ্যের উৎসাহমূলক ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। জাতীয় স্বার্থে কৃষিখাতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সাবসিডি প্রদান করা।
কিংবা-
#জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% বরাদ্দ দেয়া; কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। সব বড় হাট-বাজারে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালু করা যাতে ফসল ওঠার সাথে সাথে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ফসল ক্রয় ও সংগ্রহ করা যায়।
# সরকারি খাস জমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া। আমূল ভূমি সংস্কার। বে-দখল সকল জমি-সম্পত্তি উদ্ধার। ঢাকাসহ সব বড় শহরে জমির সিলিং ঘোষণা।
#টার্মিনেটর বীজসহ জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ধ্বংসকারী কীটনাশক ও প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ রোধ করা। কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়া।
স্বাস্থ্য/চিকিৎসা খাত:
আওয়ামী লীগ:
#সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি পুর্নমূল্যায়ন করা, এই নীতির আলোকে কমিউনিটি কিনিক চালু, পুষ্টি , শিশু ও মাতৃমঙ্গল নিশ্চিত করা(১১.১)
বিএনপি:
#দেশে উন্নত ও বিশেষায়িত চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো হবে যাতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে কাউকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে না হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম বিনা শুল্কে আমদানীর সুযোগ দেয়া হবে।(৯-ক)
জামাত:
#গণমূখী স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা, অঞ্চল গোত্র নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে সরকারী ও বেসরকারী সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ করা হবে।(চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য, পৃষ্ঠা-২৫)
# স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারী চিকিৎসক ও সম্ভব হলে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিক্যাল কোরকে সম্পৃক্ত করা হবে।(চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য, পৃষ্ঠা-২৬)
মন্তব্য:
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে বুর্জোয়া দলগুলো গণমুখী চিকিৎসা, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি কথা বললেও সকলেই কিন্তু সরকারী হাসপাতালে সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার যে অধিকার জনগণের রয়েছে সে বিষয়ে নিরব বরং তারা সকলেই সুকৌশলে চিকিৎসাকে বেসরকারী বাণিজ্যের হাতে ছেড়ে দেয়ার কথা বলছে যেকারণেই তারা চিকিৎসা খাতে বিনোয়োগকারী পুজিপতিদের বিনাশুল্কে যন্ত্রপাতি আমদানীর সুযোগের কথা বলে, সরকারী-বেসরকারী সমন্বয়ের কথা বলে। যেমন: আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারের ২য় পৃষ্ঠায় তার সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে বলছে: সরকারী উদ্যোগে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি চিকিৎসার যন্ত্রপাতির উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও কিনিক প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করা।
ইশতেহারে যা থাকতে পারে…..
#সকল নাগরিকের জন্য সুষম ও অভিন্ন গণমুখী চিকিৎসানীতি, স্বাস্থ্যনীতি ও ওষুধ নীতি চালু করা।
#হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রসারিত করা এবং সেখানে শ্রমজীবী ও মেহনীতি মানুষের জন্য চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
কিংবা-
# সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত করা, ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা।চিকিৎসা ব্যবসা ও দুর্নীতি বন্ধ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি ৫০০ জনে ১ জন ডাক্তার নিয়োগ করা। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং কারখানায় হেলথ্ সেন্টার চালু করা ও ডাক্তার নিয়োগ দেয়া। স্বাস্থ্যনীতি-২০০৮ বাতিল করা। এনজিওর হাতে হাসপাতাল ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
শিক্ষা খাত
আওয়ামী লীগ:
#যুগোপযোগী নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করা হবে। ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতা মুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক সেবায় পরিণত করা হবে।(১০.১)
# মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তোলা হবে।(১০.২)
বিএনপি:
# দেশের সকল নাগরিকের জন্য যথোপযুক্ত শিক্ষা লাভের দ্বার অবারিত করা হবে এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যে যাতে দেশের কোন মানুষ নিরর না থাকে এবং যাতে কোন শিশু শিক্ষাঙ্গনের বাইরে না থাকে তা নিশ্চিত করা হবে।(৮-খ)
#দরিদ্র অথচ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যাবস্থা করা হবে যাতে আর্থিক দীনতার কারণে কোন মেধাবী ছাত্রছাত্রী অকালে ঝরে না যায়।(৮-জ)
জামাত:
#মেয়েদের মত ছেলেদেরও ক্রমান্বয়ে এইচএসসি পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।(শিক্ষা,পৃষ্ঠা-১৪)
#ফোরকানিয়া মাদ্রাসা সহ মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে।(শিক্ষা,পৃষ্ঠা-১৪)
# আলিয়া ও কওমী মাদ্রাসা যুগোপযোগী করার ব্যাবস্থা করা হবে।(শিক্ষা,পৃষ্ঠা-১৪)
মন্তব্য:
#আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত শিক্ষা নিয়ে ভালো ভালো কথা যেমন সবার জন্য শিক্ষার ব্যাবস্থা করা, নিরক্ষরতা দূর করা ইত্যাদি বললেও শিক্ষা ব্যাবস্থা রাষ্ট্রীয়করণ করা, কিংবা কিন্ডার গার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম, ক্যাডেট, মাদ্রাসা ইত্যাদি বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যাবস্থার অবসান ঘটিয়ে একধারার সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থার কথা বলছেনা। এরা মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন করার কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়া তার মাসের বেতন মাদ্রাসায় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু নিজের দুই ছেলের একটাকেও মাদ্রাসায় পড়াননি। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা মাদ্রাসার জন্য আগের সরকারের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছিলেন কিন্তু নিজের ছেলেকে মাদ্রাসায় দূরে থাক দেশেও পড়াননি। এরশাদ, গোলাম আজম, নিজামী, মাওলানা মান্নান থেকে শুরু করে অসংখ্য মাদ্রাসাপ্রেমীর সন্তানরা মাদ্রাসায় পড়ে না। এরা মাদ্রাসার কথা বলে স্রেফ মানুষের ধমীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য।
#এরা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যেসব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন উৎসাহিত করে এবং পর্যাপ্ত সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে যেভাবে উচ্চশিক্ষাতে ক্রমান্বয়ে ধনীক শ্রেণীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের ব্যাবস্থা করে চলেছিল সে বিষয়েও ইশতেহারে কোন ব্যাক্তব্য নেই।
ইশতেহারে যা থাকতে পারে…..
#সার্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, বৈষম্যহীন, একই ধারার গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা ৩ বছরের মধ্যে প্রতি ২ বর্গকিলোমিটারে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮ বছরের মধ্যে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
# পর্যায়ক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করার উদ্যোগ নেয়া।
কিংবা-
# সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদ ও ’৯০-এর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফার ভিত্তিতে সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার ও একমুখী গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি চালু করা। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও সর্বোচ্চ বেতন কাঠামো চালু, উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা।
# সবার জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত করা, শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রের খাতে ন্যস্ত করা। প্রতি দুইশ’ পরিবারের জন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু ও ড্রপ-আউট বন্ধ করা। স্নাতক পর্যন্ত সবার জন্য বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা চালু করা, প্রত্যেক জেলায় কমপক্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। টাকা দিয়ে বিদ্যা কেনার বিদ্যা-বিপণী বন্ধ করা। ব্র্যাকের হাতে প্রাইমারি স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
আবাসন খাত
আওয়ামী লীগ:
#আবাসন বিষয়ে এদের পৃথক কোন বক্তব্য খুজে পাওয়া যায়নি। দারিদ্য বিমোচনের অংশে বলা হয়েছে – বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ আশ্রায়ন, গৃহায়ন, আদর্শ গ্রাম, ঘরে ফেরা বাস্তবায়ন করা হবে।( ৪.১)
বিএনপি:
# রিহ্যাবের সহায়তায় দেশের ছোট ও মাঝারি শহরে নতুন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।(১৮)
# গৃহহীন মানুষদের জন্য সরকারি পতিত জমিতে স্বল্প ব্যায়ে গৃহনির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এ ব্যাপারে বেসরকারী খাত ও এনজিওদের সহায়তা নেয়া হবে।(১৮)
জামাত:
# শহরে বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তদের আবাসন বিষয়ে জামাতের কোন প্রতিশ্র“তি নেই। “স্থানীয় সরকার ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং পল্লী উন্নয়ন” আর্টিক্যালে বলা হয়েছে: “সরকারী আনুকুল্যে পল্লী গৃহনির্মাণ প্রকল্প চালু ও সুদবিহীন গৃহনির্মাণ ঋণের ব্যবস্থা করা হবে”।(পৃষ্ঠা-২৫)
মন্তব্য:
#আবাসন সমস্যা নিয়ে বুর্জোয়া দলগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি নেই। আর যেসব প্রতিশ্র“তি আছে সেগুলো ফাঁপা, খন্ডিত এবং বেসরকারী খাতে আবাসন সমস্যা সমাধানের অভিপ্রায় প্রকাশ করে এবং এর মাধ্যমে সরকারী জমিতে হাউজিং ব্যবসার সুযোগ করে দেয়ার ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে দিয়ে বাসস্থান যে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার যার ব্যাবস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের সে বিষয়টি এরা পুরোপুরি অস্বীকার করছে।
# শুধু ঢাকা শহরের আশেপাশের এলাকায়ই ৩০ হাজার বিঘা জমি ১০টি হাউজিং কোম্পানির দখলে আছে বলে জানা যায়। এগুলোর কোন প্রতিকার আগেও তারা করেনি, এবারও এসব বিষয়ে কোন কথা বলেনি তারা। অথচ বস্তি এলাকার খাস জমিতে সরকারি উদ্যোগে কমদামি বহুতল ভবনের পাশাপাশি পাঁচ ইঞ্চি দেয়াল দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সুবিধাসহ সহজলভ্য ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে ৩০ লাখ বস্তিবাসীর মধ্যে হস্তান্তর করলে অথবা ভাড়া দিলে রাজস্ব আয় বাড়ত এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটত। এখন সন্ত্রাসী ও পুলিশ বখরা তুলে খায়। আর ক্ষমতাধররা সময়-সুযোগ বুঝে আগুন লাগিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করে জায়গা দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে। এসব নিয়ে এদের ইশতেহারে কোন কথা নেই।
ইশতেহারে যা থাকতে পারে …..
# উপযুক্ত পূর্ণবাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ বন্ধ করা। দরিদ্র নিম্নবিত্তদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণপ্রকল্প চালু করা। বস্তিবাসীর জন্য পৌরজীবনের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা। শহরের খাস জমি উদ্ধার করে সেখানে সরকারীভাবে কলোনি, ডরমেটরি ইত্যাদি নির্মান করে তা গরীব শ্রমজীবী মানুষের মাঝে বরাদ্দ দেয়া। বাস্তুহীন ও নিম্নবিত্ত সকল পরিবারের জন্য ৩ বছরের মধ্যে ন্যূনতম বাসস্থানের ব্যাবস্থা করা।
কিংবা-
# শহরে খাস জমিতে স্বল্পমূল্যে ঘর নির্মাণ এবং বস্তিবাসীসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে কিস্তিতে হস্তান্তর করা, ভাড়া দেওয়া। পুনর্বাসন ছাড়া রিক্সা-হকার-বস্তি উচ্ছেদ বন্ধ।
প্রাকৃতিক সম্পদ, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ
আওয়ামী লীগ:
# দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানী নীতি করা হবে। বেসরকারী খাতে ১০, ২০ ও ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বিদ্যূৎ কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হবে।(৩.১)
# তেল ও নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আহরনের কাজে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।(৩.২)
বিএনপি:
#নির্বাচিত বিএনপি সরকার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই জাতীয় স্বার্থে তেল, গ্যাস ও কয়লার সর্বোত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করার জন্য যথার্থই অভিজ্ঞ ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় জ্বালানী নীতি প্রণয়ন ও তার আলোকে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করবে।(৬)
জামাত:
#দেশের তেল ও গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরনের প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।(পৃষ্ঠা-২১)
মন্তব্য:
#আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত নতুন জ্বালানী নীতির কথা এবং তেল-গ্যাস আহরণে জোর প্রচেষ্টার কথা বললেও কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
# ১৯৯২ সাল থেকে দেশের গ্যাস সম্পদকে ২৩টি ব্লকে ভাগ করে প্রথমে বিএনপি সরকার ৫টি ও পরে আওয়ামী লীগ সরকার ৭টি ব্লক মার্কিন-বৃটিশ কোম্পানীর হাতে তুলে দিয়েছে। তাদের করা উৎপাদন বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী গড়ে এই গ্যাসের ৭৯ ভাগ ওদের আর ২১ ভাগ আমাদের। নতুন করে তেল-গ্যাস আহরণের ক্ষেত্রে কোন নীতি মালা অনুসরণ করা হবে সে বিষয়ে কোন পরিস্কার কথা তাদের ইশতেহারে নেই।
# পূর্বতন অসম উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি)সহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল করা বিষয়ে তারা নিরব
# তেল-গ্যাস আহরণ করা হবে কি বিদেশী বহুজাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে নাকি আমাদের দেশীয় কোম্পানী পেট্রবাংলার মাধমে সে বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি নেই, যেমন প্রতিশ্রুতি নেই আহরিত জ্বালানী রপ্তানী নিষিদ্ধ করা বিষয়ে ।
ইশতেহারে যা থাকতে পারে…..
#প্রাকৃতিক সম্পদ জল, জমি, বন বিরাষ্ট্রীয়করনের আওতামুক্ত করে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। প্রাকৃতিক সম্পদ শতভাগ জনগণের মালিকানায় রেখে সম্পদ আহরণ ও ব্যাবহারে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় স্বার্থকে সকল প্রকার বাণিজ্যিক স্বার্থের উর্ধ্ধে রাখা । তেল-গ্যাস-কয়লা ও তা থেকে সৃষ্ট পণ্য আইন করে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা।
কিংবা-
#তেল-গ্যাসের উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি)সহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল করা। তেল গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর-রেলওয়েসহ সকল জাতীয় সম্পদ সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীর গ্রাস থেকে রক্ষা করা। মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় ছাতক গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংস ও সম্পদ নষ্টের ক্ষতিপূরণ আদায় করা। কথিত সিস্টেম লস ও চুরি এবং দফায় দফায় বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বন্ধ করা। লোডশেডিং দূর করা। সারাদেশের ৮০% বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। উত্তরবঙ্গ-দণিবঙ্গসহ সারাদেশে ৯৪% গ্যাস সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে গ্যাস সরবরাহ করা।
উল্লেখ্য যে, উপরের আলোচনায় “ইশতেহারে যা থাকতে পারে” শিরোনামের প্যারাগুলো নেয়া হয়েছে সরাসরি সিপিবি ও বাসদের ইশতেহার থেকে। (“ইশতেহারে যা থাকতে পারে” পরবর্তী অংশটুকু সিপিবির ইশতেহার থেকে এবং “কিংবা” পরবর্তী অংশটুকু বাসদের ইশতেহার থেকে)।
ইশতেহারের কয়েকটি খাত নিয়ে শুধু এখানে আলোচনা করা হলো- এগুলো ছাড়াও কর্মসংস্থান, শ্রমনীতি, সাম্প্রাদায়িকতা, প্রতিরক্ষা নীতি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ. বিএনপি, জামাত ইত্যাদি বুর্জোয়া দলগুলোর গণবিরোধী চেহারা পরিস্কার হয়ে উঠে। যে কারণে আজ জনগণের কাছে এসব দলের চরিত্র পুরোপুরি উন্মোচিত, যদিও ট্রাজেডি হচ্ছে এই যে- উপযুক্ত বিকল্পের সন্ধান না পেয়ে প্রথমত দিশেহারা এবং বুর্জোয়া প্রচারণায় শেষ পর্যন্ত এই দলগুলোকেই ভোটের সমর্থন জানিয়ে আসবে তারা (উৎসবের আমেজে, খেলার মত পক্ষ-বিপক্ষ ঠিক করে হারজিতের প্রতিযোগিতায় কিংবা মন্দের ভালো ধরণের সমীকরণে)। এভাবেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার নিজের শোষণের বৈধতা তুলে দেয় এই বুর্জোয়া দলের হাতেই। কাজেই শোষণ মুক্তির জন্য এখন প্রয়োজন হলো এসব গণবিরোধী বুর্জোয়া দল এবং তাদের লেজুড় হিসাবে থাকা দল গুলোর মিষ্টি কথায় আর না ভুলে এদেরকে বর্জন করা এবং বিকল্প বামগণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা।
ভালো লাগলো দিনমুজুর ভাই আপনার লিখা পড়ে।
আমাদের রাজনীতি না পেটনীতি. আপনার মত করে যদি সবাই বুঝতো।
Thanks to Dinmojur for providing the comparative discussion on Election Manifestos of the major 3 political parties of Bangladesh as well as providing alternatives. However, the bad people will say that CPB or BSD will never be able to form a government in Bangladesh which is why they can afford to make such nice “gono mukhi” promises. May I suggest the following to our left wing politicians in order to regain some relevance after the collapse of the Soviet Union:
* First of all they need to learn their own ideology (eg. Marxism/Communism), understand it and analyze it objectively instead of accepting it blindly like “bedo-bakko” (or Quranic/Biblical verses). There are some nice articles on Mukto-mona which might also prove helpful:
– http://www.mukto-mona.com/Articles/avijit/marxism_scientific.htm
– http://www.mukto-mona.com/Articles/avijit/response_Azahar_marxism.htm
– http://blog.mukto-mona.com/?p=353
* Modernize the ideology by eliminating the utopian and unscientific theories that has been proven to be wrong in former proletarian countries. Provide a new forward thinking, scientific, humanistic model.
* Set up a process to manufacture future leaders, workers and supporters. I admire the process used by Bangladesh Islamic Chhatra Shibir in this regard which has been proven to be very successful.
* Try not to rely too much on discovering bourgeois/imperialistic conspiracies on everything. These claims sound stale now a days and won’t get many votes from the youths like it did once.