ধর্মীয় মৌলবাদ ঠেকাতে বামপন্থীরা ব্যার্থ কেন?
(১)
ট্রেন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে ইন্টারনেট ই রাজনীতির ভবিষ্যত। ব্লগার, ইউটীঊব, স্যোসালনেটওয়ার্কিং-এগুলো আস্তে আস্তে টিভি ক্যম্পেইন, দেওয়াল লিখন, নিউজপেপার ভিত্তিক রাজনীতির উত্তরাধিকারী। এবার ওবামার জয়, ইন্টারনেট মিডিয়ার ক্ষমতায়নের জ্যান্ত প্রমান। যদিও ভারত বা বাংলাদেশে এমন হতে ঘোর দেরী-রাজনৈতিক আলোচনা এবং বিতর্কে ইন্টারনেট এখানেও এখন সেরা মিডিয়া। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যা ছিল গুটিকয় কিছু বাঙালীর সংগঠন-এখন ইণ্টারনেট মাধ্যমেই বাঙালীর রাজনীতির সবথেকে বেশী চর্চা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের দিকের ইন্টারনেট রাজনীতি চারটি ভাগে বিভক্ত-বাম (সিপিএম), অতিবাম (নক্সাল) , এনার্কিস্ট প্রগ্রেসিভ (যারা দক্ষিন পন্থী, বামপন্থী উভয় রাজনীতি বিরোধি) এবং হিন্দুত্ববাদি দক্ষিনপন্থী। বাংলাদেশের দিকে মূলত তিনটি গ্রুপ দেখি-দক্ষিনপন্থী ইসলামিক জাতিয়তাবাদি, সাবেকি বামপন্থি এবং নতুন প্রজন্মের প্রগ্রেসিভ বুদ্ধিজীবি। বাংলাদেশের ধর্ম নিরেপেক্ষ শক্তিটির মধ্যে দুটি ভাগ-প্রথমটি বাম ঐতিহ্যের ঘরানা, যারা মূলত শ্রেনীগত অবস্থান এবং শ্রেনীদ্বব্দ ভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখেন। আবার ইসলামের বিরুদ্ধেও তারা যাবেন না–বরং এদের অনেকেই মনে করে ইসলাম সাম্যবাদি শক্তির সহায়ক এবং ইসলামিক মৌলবাদ তথা সন্ত্রাসবাদের উত্থানের পেছনে সবদোষ আমেরিকার। ইসলাম তথা মুসলমানদের কোন দোষ নাই-তারা সাম্রাজ্যবাদি শক্তির বোরে মাত্র। বা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে অনেকেই মনে করেন, ইসলাম সাম্রাজ্যবাদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পশ্চিম বঙ্গের বামপন্থি (সিপিএম) গোষ্ঠিটিও ইসলাম সম্মন্ধে একই মত পোষন করে। তবে হিন্দুত্ববাদি শক্তির বিরুদ্ধে তারা কঠোর। কিন্ত তারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়াই- পশ্চিমবংগের নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রগ্রেসিভ এনার্কিস্টরা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে যারা সব ধর্মেকে নুইসেন্স বলেই মনে করে। এবং নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিমান বিবেকবান বাঙালীরা, ধর্ম নিয়ে সিপিএমের সুবিধাবাদি অবস্থানের সাথে কখনোই একমত হবে না। বাংলাদেশেও এই ভাবে ধর্মনিরেপেক্ষ আন্দোলনে “ধর্ম বিরোধী ধর্মনিরেপেক্ষ” গ্রুপ গড়ে উঠছে-যারা ধর্ম ভালো, ধার্মিক খারাপ জাতীয় সুগারকোট দিয়ে ধর্মীয় শক্তিকে তোষন করার নীতির বিরোধিতা করছে। ভারতের দিকের বাঙালীদের এটা বিশাল সমস্যা-যারা প্রগ্রেসিভ কিন্তু বামপন্থীদের ইসলাম তোষনে বিরক্ত-তাদের সবাই যে পগ্রেসিভ ব্লকে আসছে তা নই-বরং একটা বড় অংশ, ইসলাম বিরোধিতা করতে গিয়ে হিন্দুত্ববাদি রাজ়নীতির শরিক হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের। কারন হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি করে আসলেই ইসলামিক মৌলবাদকে উস্কে দেওয়া হয়। ধর্মের বিরুদ্ধে পরিষ্কার অবস্থান না নিলে, বামপন্থী শক্তির যে ভিত্তি-তরুণ প্রজন্মের বিদ্রোহী চেতনা-সেখানে ধ্বস নামবে। দক্ষিন পন্থী শক্তিগুলি ভারত এবং বাংলাদেশের বামপন্থীদের এই ব্যার্থতার সুযোগ নিচ্ছে। ভারত এবং বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের পেছনে, বামপন্থীদের এই ধর্মর সাথে আপোস করে চলার নীতিকেই আমি প্রথম দোষারোপ করব। কারন দক্ষিনপন্থি শক্তি তার কাজ করবেই-কিন্তু বামপন্থীরা যদি তার বিরুদ্ধে সঠিক অবস্থান না নিতে পারে-বিক্ষুব্ধ তরুন প্রজন্ম দক্ষিনপন্থী রাজনীতির দিকেই ঘেঁসবে। ভারতে বিজেপির উত্থানের পেছনে এটাকেই আমি সবথেকে বড় কারন বলে মনে করি। বিজেপির সবাই যে “রামনাম নেওয়া” হিন্দু তা না-বরং একটা বড় অংশই নাস্তিক, গরু খাওয়া পার্টি। ধর্মে মোটেও বিশ্বাস নেই। এদের ত প্রগ্রেসিভ ব্লকে থাকা উচিত-কিন্ত সেই ভিত্তিটা আমরা হারাচ্ছি। ধর্ম নিয়ে বামপন্থীর ভুল অবস্থান-এই সুযোগ করে দিচ্ছে-ধর্মনিরেপেক্ষ শক্তিকে দুর্বল করছে। এই প্রবন্ধে বামপন্থীদের ভুলের ঐতিহাসিক এবং তাত্ত্বিক বিশ্লেষন করব।
(২)
ভারতে কমিনিউস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজফর আহমেদ। ধর্ম নিয়ে তার অবস্থানে ভুল ছিল একথা বলা যাবে না। উনি প্রথম যৌবনে ধর্ম ভিত্তিক খিলাফৎ আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন। ইসলামকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি অবস্থান যে আসলেই মুসলিম এলিটদের শক্তিশালী করার আন্দোলন এবং তাতে গরীব মুসলমানদের লাভের বদলে ক্ষতি বেশী-এটা বুঝেই খিলফৎ আন্দোলন ছেড়ে ভারতে বলশেভিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে কমিনিউস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন কাকাবাবু। ইসলামকেন্দ্রিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি আন্দোলনের আসল শ্রেণী অবস্থান –অর্থাৎ জমিদার এবং উচ্চশিক্ষিত মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত খিলাফত আন্দোলন আসলেই যে মুসলমানদের মধ্যে সুবিধাভোগী শ্রেণীটির ক্ষমতায়নের প্রয়াস-সেটা বিলক্ষন বুঝেই গরীব মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার্থে তিনি বলশেভিক মতাদর্শের দিকেই ঝুঁকলেন। এবং পরিষ্কার বুঝেছিলেন গরীব মুসলমান প্রজাদের মধ্যে হিন্দু জমিদার শ্রেণীর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত আছে-যা আসলেই শ্রেনীদ্বন্দ ছারা কিছু নয়-তা অচিরেই সাম্প্রদায়িকতার রূপ নেবে এবং মুসলিমলীগ এর সুযোগ নেবে।
ইসলাম ভিত্তিক প্রতিবাদি আন্দোলন যে গরীব মুসলমান প্রজাদের স্বার্থ বিরোধি-সেই অবস্থান থেকেই কৃষক প্রজা পার্টির জন্ম মূলত জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটাতে (১৯৩০)। কৃষক প্রজা পার্টির বামপন্থি ভিত্তি তাসের ঘরের মতন ভেঙে পড়ল-যখন ফজলুল হক ক্ষমতার লোভে ১৯৩৭ সালে মুসলীম লীগের সাথে হাত মিলিয়ে মন্ত্রীসভা দখল করলেন। ফলে সামসুদ্দিন আহমদের মতন নেতারা ক্ষমতা লোভেই হোক বা ধর্ম নিরেপেক্ষতার জন্যেই হোক ফজলুল হকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। ফজলুল হক মুসলীম লীগের ‘৩৭ সালের লক্ষ্ণৌ সেসনে,সরাসরি মুসলীম লীগে যোগ দিলেন। সামসুদ্দিন আহমেদ ও প্রবল মুসলিম জোয়ারের বেগ আটকাতে পারলেন না-ক্ষমতার লোভে তিনিও সেই দিকেই গা ভাসালেন। অর্থাৎ বাঙালি তথা বাঙালী মূসলমানদের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রথম বামপন্থি শক্তিশালী আন্দোলনকে ধর্মীয় শক্তি খেয়ে ফেললো। কারন? মুসলীম লীগকে দোষ দেবেন? না ফজলুল হককে দোষ দেবেন? পার্থক্যটাই বা কি? ইতিহাস বলছে মুসলীম লীগ এবং ফজলুল হক ক্ষমতার খেলাটাই খেলছিলেন। কেও ইসলাম বা কেও গরীব প্রজাদের কথাটা সামনে রেখে বোরে সাজাচ্ছিলেন। ফলে ফজলুক হক তার শ্রেনীগত অবস্থানের সুবিধার জন্যে একদিন না একদিন মুসলীমে লীগে পা রাখতেন ই। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল কি? মুসলমান প্রজাদের জমিদারদের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ-যা ছিল শ্রেণী দ্বন্দ -সেটা কৃষক প্রজা পার্টির সাহায্যে মুসলীম লীগ হাইজ্যাক করে এবং দ্বিজাতি তত্ত্বকে গরীব মুসলমান প্রজাদের মধ্যে ছড়াতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ বাঙালীর ইতিহাসে আমরা প্রথম থেকেই দেখবো ইসলামিক বামপন্থা-আসলেই মুসলমান প্রজাদের শ্রেনীদ্বন্দকে হাইজ্যাক করে তা প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিন পন্থী ইসলামিক শক্তির হাতে তুলে দিয়েছে। মিশর, ইরাক, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া-সর্বত্রই ইসলামিক বামপন্থার এটাই আসল ইতিহাস। নাশেরিজম গোটা আরববিশ্বে একসময় প্রবল জনপ্রিয় হয় (১৯৫০-১৯৮০)। মিশরের স্বৈরতন্ত্রী শাসক গামাল আবদেল নাশেরের সম্রাজ্যবাদ বিরোধি সমাজতান্ত্রিক আরব জাতিয়তাবাদ-যা ছিল নাজিজম, কম্যুনিজম এবং ইসলামের ককটেল-তা কি আরব বিশ্বে ধর্মনিরেপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক আদর্শ কিছু মাত্রায় বাড়াতে পেরেছে? বরং ১৯৮০ সালের পর, যখন ইরানের ইসলামিক বিপ্লব সফল হল এবং কম্যুনিউস্টরা আফগানিস্তান দখল করলো, ইসলামিক বিশ্বের তরুন সমাজের কাছ “কম্যুনিজম” বর্জ্য পদার্থে পরিণত হয়। নাশেরিজম বাতিল করে নতুন প্রজন্মের কাছে দক্ষিন পন্থী ” ইসলামিক আদর্শ রাষ্ট্রের” ধারনাই প্রবল জণপ্রিয় হতে শুরু করে। সেই ক্রম বর্ধ মান দক্ষিনপন্থী ট্রেন্ড আজও চলছে। বর্তমানে ইহাই সমস্ত ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের মূল রাজনৈতিক শক্তি।
তাহলে এইধরনের ইসলামিক বামপন্থায় পরম প্রাপ্তিটা কি? দক্ষিন পন্থী ইসলামিক শক্তিগুলিই সব দেশে এই সব বামপন্থী ইসলামিক নামের হাঁসজারু গ্রুপটিকে গিলে ফেলছে-তিমির তলপেট বলে কথা। ফলে পাকিস্থান বা বাংলাদেশে আজ একটাও বৃহৎ বামপন্থী দল নেই-এদের বুর্জোয়া পার্টি গুলি “আদর্শ ইসলামিক সমাজের” কাছে নাক খঁত দিয়ে বসে আছে। তারতম্যটা শুধু মাত্রার।
পশ্চিম বঙ্গের সিপিএম আন্দোলনেও একই দৃশ্যের পুরনাবৃত্তি। ২৯৫ টা সিটের বিধান সভায় প্রগতিশীলতা এবং ধর্মনিরেপেক্ষতার দাবিদাররা ধর্ম এবং জাত দেখেই পার্থী দিয়ে থাকেন। হিন্দুকেন্দ্রে হিন্দু, মুসলিম কেন্দ্রে মুসলিম পার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেস কখনো সখনো ব্যাতিক্রম দেখালেও সিপিএম কোন দিন হিন্দুপ্রধান এলাকাতে মুসলিম বা মুসলিম এলাকাতে হিন্দু পার্থী দেয় নি। ধর্মীয় পরিচয় যদি বাস্তবতার সীমাবদ্ধতা হয়, আরো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বলে পার্থীর জাতও খুব গুরত্বপূর্ণ সিপিএমের নেতৃত্বে। আমাদের নিজেদের কেন্দ্রেই দেখেছি। মাহেষ্য প্রধান এলাকা-তাই গত চল্লিশ বছরে সিপিএম মাহেষ্য পার্থী দিয়ে এসেছে। অন্যজাতের নেতারা উঠতেই পারে নি স্থানীয় পার্টিতে। অর্থাৎ মানুষের ধর্মীয় বিচ্যুতিগুলির বিরুদ্ধে না গিয়ে, সেগুলো স্বীকার করে নেওয়া হল ভোটের জন্য। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসকে হঠাতে সিপিএম জোট বাঁধে বিজেপির সাথে। বিগ্রেডে জ্যোতিবাবু-বাজপেয়ী-আদবানি একসাথে সভা করলেন। ধান্ধা ক্ষমতার। ফলটা হল এই যে বিজেপি আসন বাড়াল ২ থেকে ৯০। আজ তারা ভারতের বৃহত্তম পার্টি। আর সিপিএম যে ভাগারে ছিল সেখানেই আছে। হিন্দুত্ববাদিদের উত্থানের পেছনে সব থেকে বড় কারন সিপিএমের “ঐতিহাসিক ভুল”। আজও সিপিএমে সেই ট্রাডিশন চলছে-এদের ভোট সঙ্গীরা হয় চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক, না হয় জাতপাতের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির লোকজন। ‘৯১ সালে এই প্রশ্নটা আমি অনেক সিপিএম নেতার কাছে করেছি। কি করে এবং কি অর্থে মুলায়েম সিং বা লাল্লুপ্রসাদ এর মতন প্রতিক্রিয়াশীল নেতারা কংগ্রেসের থেকে ‘ভাল‘ যে এদের নিয়ে তৃতীয় শক্তির ‘চতুর্থ শ্রেনীর সার্কাস‘ ইনারা আপামর ভারতবাসীকে উপহার দিতে চান? কম্প্রোমাইজ করার ফলটা এই যে আজ পশ্চিম বঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিষ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তসলীমা ইস্যুতেও সিপিএমের ধর্মনিরেপেক্ষ সার্কাস আমরা সবাই দেখলাম। বাঙালীরা ভাগ্যবান-কোন বুদ্ধিমান ক্যারিসমাটিক হিন্দুত্ববাদি বাঙালী নেতা নেই।
ইরান থেকে ভারত-শিক্ষা একটাই। ক্ষমতা দখলের জন্যে বামপন্থীরা ধর্মীয় শক্তিগুলির তোষন করা মাত্র নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং দক্ষিনপন্থার বল্গাহীন উত্থান হয়েছে। ইসলামিক বিশ্বে সেটা আরো দ্রুত হয়েছে কারন ইসলামের নিজস্ব বিকল্প রাষ্ট্র ব্যাবস্থা এবং আইন আছে।
(৩)
কেন ধর্ম সাথে আপস করতে গেলে ধর্ম খেয়ে ফেলছে বামপন্থাকে? আমি ধাপে ধাপে বিশ্লেষন করব।
ইসলাম ধর্ম পালন করা মানে কি? হজ্জ যাত্রা, নামাজ পড়া?
না ইসলাম অনুসারে পুত্র,পিতা,স্বামী, সামাজিক লোক হিসাবে নিজের দ্বায়িত্ব পালন করা? হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রেও এটা খাটে? হিন্দু ধর্ম মানে কি পুজ়া করা? না আমাদের নানান অস্তিত্বগুলো অনুযায়ী কর্তব্য পালন করা?
আমি কে? পিতা,পুত্র, স্বামী, বন্ধু ইত্যাদি সামাজিক এবং জৈবিক অস্তিত্বের বাইরে আমার কি পৃথক কোন অস্তিত্ব আছে? তাহলে পূজা, নামাজ, হজ্জ ইত্যাদি আমাদের এই সব অস্তিত্বের কোথায় লাগে?
কোরান এবং গীতার রচয়িতারা মোটেও এই অস্তিত্ববাদি প্রশ্নটি গোলান নি। খুব পরিষ্কার ভাবেই সামাজিক দ্বায়িত্বগুলির পালনকেই ‘ধর্ম‘ বলে নির্দেশ দেওয়া আছে। দ্বায়িত্ব, কর্তব্য ছেড়ে পূজা পূজা খেলা গীতাতে নিন্দিত। এখন কেও যদি আদর্শ মুসলমান স্বামী বা স্ত্রী হিসাবে দ্বায়িত্বপালন করতে চাই-রাষ্ট্রের বৈবাহিক আইন ইসলামিক না হলে সে রাজী হবে কেন? সুতরাং অস্তিত্ববাদির দৃষ্টিতে রাষ্ট্র এবং সমাজ থেকে ধর্মকে পৃথক করা যাচ্ছে না। তাই ধর্ম থাকবে, আবার ধর্ম নিরেপেক্ষ রাষ্ট্রও থাকবে সেটা অনেকটাই সোনার পাথর বাটি। আমি একজনকে বল্লাম ইসলাম পালনে ক্ষতি নাই, কিন্তু রাষ্ট্রের বৈবাহিক আইন বৃটীশ হবে, সেটা কিভাবে সম্ভব? আমি আগেই দেখিয়েছি নামাজ, হজ্জ ইত্যাদি করে ইসলাম ধর্ম পালন হয় না-ধর্মের আসল পালন স্যোসাল কনট্রাক্টগুলিতে। সুতরাং ধর্মকে মেনে নিলে সে রাজনীতিতে ঢুকবেই। গীতা এবং কোরান দুটোই পলিটিক্যাল এবং স্যোসাল থিসিস। অস্তিত্ববাদির দৃষ্টিতে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের থেকে আধ্যাত্মিকতা আলাদা হতে পারে না। গীতা এবং কোরান, তাই আধ্যাত্মিকতাকে রাষ্ট্রের সাথে আলাদা করে নি। এই ধর্মগ্রন্ধ গুলো মোটেও ভুল করে নি। ভুল করেছে বামপন্থী এবং তথা কথিত “ধর্ম ভাল তবুও ধর্ম নিরেপেক্ষবাদি”র দল-যারা ধর্মের সাথে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যার্থ।
তাহলে পাল্টা প্রশ্ন উঠবে-ইউরোপে এবং আমেরিকাতে কিভাবে ধর্ম নিরেপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরটা বোঝা খুবই জরুরী আমাদের ধর্মনিরেপেক্ষ গোষ্ঠির জন্যে। ইউরোপে চেতনা মুক্তির আন্দোলন চলেছে ছয় শতাব্দি ধরে। আমাদের দেশে যুক্তিবাদি আন্দোলন এখনো শৈশবে। এখানকার সিপিএম নেতারা কালীপূজা করেন-হজ্জেও যান! চেতনা মুক্তির আন্দোলনে ধর্মের আদর্শগুলি এবং কুসংস্কারকে সরাসরি আঘাত করার পথেই উনবিংশ শতাব্দিতে স্টুয়ার্ট মিল বা বেন্থাম তাদের ধর্মনিরেপেক্ষ “উলিটারিয়ানিজম” দর্শনের জন্ম দিতে পেরেছেন-যা আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্বরূপ। আমরা সেই সব ধর্মনিরেপেক্ষ আইনগুলি বৃটীশদের কাছ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি-কিন্তু আমাদের সামাজিক যুক্তিবাদের ভিত্তি ইউরোপের উনবিংশ শতাব্দির থেকেও নিম্নমানের রয়ে গেছে। সুতরাং মানুষের চেতনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ যতক্ষন না পর্যন্ত রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যাক্তি ধর্মের ওপর বিজ্ঞানকে স্থান দিতে রাজী না হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত ধর্মনিরেপেক্ষ রাষ্ট্র বা রাজনীতির ভিত্তিই তৈরী হয় না। ক্রিয়েশনিজমকে কেন্দ্র করে এটা আমরা আবার ভালো বুঝলাম। ক্রিয়েশনিস্টরা আমেরিকাতে জিততে পারলো না। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্রীষ্টিয়ান এতে বিশ্বাসী। তাবড় তাবড় রিপাবলিকান নেতারা-বুশ, ববি জিন্দাল ইহা চান। তাও আমেরিকাতে ডারউনিজম স্কুলের সিলেবাসে টিকে গেল। ক্রিয়েশনিজমকে আটকানো গেল। এর একটা বড় কারন হল, সংখ্যাগরিষ্ঠ খৃষ্ঠানরা এতে ক্রিয়শনিজমে বিশ্বাস করলেও খুব অল্প কয়েকজন ডারউনিজমকে স্কুল সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষপাতি।
অর্থাৎ ব্যাপার ছিল এই রকম- সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রীষ্ঠান এবং যুক্তিবাদিরা ডারউনিজিম চাইছে।
আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রীষ্ঠানরা ক্রিয়েশনিজমও চাইছে-কিন্ত ডারউইনবাদিরা এর বিরোধিতা করেছে তীব্রা।
এক্ষেত্রে ফুকোর ক্ষমতার তত্ত্ব অনুযায়ী যহেতু কনসেনসাস বা সাধারন মতামত ডারুইনিজমের পক্ষে, তাই দ্বন্দের কারনে, ক্রিয়েশনিজম টিকবে না। কিন্তু এটা যদি পাকিস্থানে হত? ধরা যাক মৌলবাদিরা দাবি তুললো ডারুইনিজম কোরানের বিপক্ষে, তাই তুলে দিতে হবে (বলাই বাহুল্য -অনেক মুসলীম রাষ্ট্রেই স্কুল সিলেবাস থেকে ডারুইনিজম তুলে দেওয়া হয়েছে কোরান বিরোধিতার আছিলায়)। সেক্ষেত্রে ডারুউনিজম তুলে নিতেই হত-কারন পাকিস্থানের মতন রাষ্ট্রে কনসেনসটা তৈরী হবে “কোরান অভ্রান্ত” এই ধারনাটাকে কেন্দ্র করে-সেটাই ক্ষমতার উৎস। তাই তার বিরুদ্ধে কেও যাবে না। গেলেও উড়ে যাবে।
অর্থাৎ জনসাধরনের চেতনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ধর্ম এবং ধর্ম্ননিরেপেক্ষতাকে একই সাথে স্বীকার করে নেওয়াটা ধর্মনিরেপেক্ষ শক্তিগুলির রাজনৈতিক আত্মহত্যা। কারন এই ধরনের গোঁজামিলের বিরুদ্ধে দক্ষিনপন্থী শক্তিগুলি দ্রুত নিজেদের ক্ষমতার অবস্থান দৃঢ় করে নেবে। যেহেতু দক্ষিনপন্থী ক্ষমতার উৎস “ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাণী” কে বামপন্থীরাও স্বীকার করে নিচ্ছে এবং “ঈশ্বরের অভ্রান্ত বানী” রাষ্ট্রের সাধারন কনসেসসাস হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে ইরানে শাহর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিপ্লবে কমিনিউস্ট এবং ইসলামিস্টরা একসাথে অংশ নিলেও- পরবর্ত্তী কালে ক্ষমতা ইসলামিস্টদের হাতেই আসে। এবং সেই দক্ষিনপন্থী মোল্লাতন্ত্র অনায়াসেই এক লক্ষ কমিনিউস্টকে হত্যা এবং অত্যাচার করে ধর্মনিরেপেক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে। অথচ পৃথিবীর তাবৎ বামপন্থীরা, ইরানের মোল্লাতন্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ-যেহেতু তা আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি। হুগো শাভেজ বা ফিদেল কাস্ত্রো ইরানকে ঢালাও বিপ্লবী সার্টিফিকেট দেওয়ার পথে একবারও ভেবে দেখেন না যে-তাদের সুবিধাবাদি অবস্থান “ঈশ্বরের অভ্রান্ত বানী” কেই শক্তিশালী করছে-যা মুসলিম বিশ্বে দক্ষিনপন্থী ক্ষমতার সাশ্বত উৎস।
আসলে আমাদের উপমহাদেশের বামপন্থীদের মৌলিক চিন্তাশক্তি খুব ই কম। অবশ্য এটা আমাদের জাতিগত ত্রুটি। ফলে ধর্মের ব্যাপারে তারা এঙ্গেলেস এবং লেনিনের গাইডলাইনকেই অনুসরন করেন। এই গাইডলাইন হচ্ছে ধার্মিক শ্রমিক বা কৃষকরাও কম্যুনিউস্ট পার্টিতে যোগ দিতে পারবে। এবং আস্তে আস্তে মার্ক্সবাদের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে শ্রেণীদ্বন্দ এবং ধর্মের প্রতিক্রিয়াশীল দিকগুলি। এটা ইউরোপে চলে-কারন তাদের চেতনামুক্তির আন্দোলন অনেক দিনের। আমাদের উপমহাদেশে এই একই গাইডলাইন ফলো করলে, ধর্মীয় বিচ্যুতি পার্টিকে ধ্বংস করবে। সেটা সিপিএমের মধ্যে আমরা ১০০% দেখেছি। এখানে ধর্মের সাথে আপস করা মানে ধর্মের সাপ এইসব বামপন্থিদের ব্যঙাচীর মতন গিলে ফেলবে।
(৪)
ধর্ম সম্মন্ধে সঠিক অবস্থান নিতে ব্যার্থ হওয়ায়, নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ প্রগতিশীলরা বামপন্থী আন্দোলনের প্রতি ক্রুদ্ধ সেটা আগেও বলেছি। ধর্মীয় মৌলবাদ থেকে সন্ত্রাসবাদ-সর্বত্রই আমেরিকার ভূত দর্শন বামপন্থীদের ছোঁয়াচে রোগ। জন সাধারন বোকা নয়। পাকিস্থান এবং আফগানিস্থানে ইসলামিক মৌলবাদের পেছনে আমেরিকার অবদান এবং অনুদান সবাই জানে। ইরাক আক্রমনে কিভাবে পৃথিবীতে ইসলামিক মৌলবাদকেই উস্কে দেওয়া হল-সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তসলীমার বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ মুসলিম ফ্যানাটিকদের শান্ত করতে তাদের বামপন্থী এম পি মহম্মদ সেলিম যখন বলেন তসলিমা আমেরিকার গুপ্তচর-বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে। তখন সেটা ভোটের তাগিদে মৌলবাদি শক্তিগুলির সাথে ভয়ংকর রকমের আপস। এতে “ঈশ্বরের অভ্রান্ত তত্ত্ব” কেই মেনে নেওয়া হয়। এবং ঈশ্বর, আল্লারা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু কি না-তাই ইহা একই সাথে হিন্দু মুসলিম সমস্ত মৌলবাদি শক্তিকেই একসাথে সমর্থন। মৌলবাদের একমাত্র ধর্ম মৌলবাদ।
সিপিএম এবং কংগ্রেসের মহিলা নেতৃত্বই ধর্মের বিরুদ্ধে কিছুটা সঠিক অবস্থান নিতে পেরেছে। ইমরানার শ্বশুর তাকে ধর্ষন করলে শরিয়া যখন শ্বশুরকে বিয়ে করার নিদান দেয়-সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সমস্ত পুরুষ বামপন্থীদের নীরবতা আমাকে অবাক করেছিল। একমাত্র বৃন্দা কারাত ই গর্জন করে উঠে সিপিএমকে সঠিক অবস্থান নিতে বাধ্য করিয়েছেন। কংগ্রেসের রেনুকা চৌধুরীও সেক্স এডুকেশনের বিরুদ্ধে থাকা বিজেপির হিন্দু নেতাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন। আসলে ধর্ম নিরেপেক্ষতা ব্যাপারটা পুরুষ নেতাদের কাছে ক্ষমতা দখলের আরেকটা উপায় মাত্র। ধর্ম নিরেপেক্ষ সমাজ নারীর স্বার্থে, কিন্তু পুরুষের স্বার্থের বিপক্ষে। কারন ধর্মই নারীগর্ভে পুরুষের জেনেটিক সারভাইভাল নিশ্চিত করে। ফলে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে থেকে দেখেছি বামপন্থী পুরুষরা ধর্মীয় রাজনীতির বিরোধিতা করলেও, ধর্মের বিরোধিতার ব্যাপারে উদাসীন। ধর্মের প্রতিক্রিয়াশীল দিকটা বামপন্থী নারীরাই নিজেদের জীবন দিয়ে উপলদ্ধি করেন-ধর্মের বিরোধিতা তাদের কাছে খূব প্রয়োজনীয় এবং জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা প্রতিবাদ। সুতরাং আমাদের উপমহাদেশে বামপন্থী আন্দোলন যতদিন না মেয়েদের হাতে না আসবে-ততদিন বামপন্থী দলগুলি ধর্মের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার সাহস দেখাবে না। তেমনটা হওয়া খুব কঠিন। কারন সংসার, চাকরী করার পর অধিকাংশ মেয়েদের হাতে রাজনীতি করার মতন সময় বা এনার্জি কোনটাই থাকে না।
(৫)
তাহলে ধর্মের বিরুদ্ধে সঠিক অবস্থান কি হবে? ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে দাও, ধর্মকে গুঁড়িয়ে দাও বললে কিছুই হবে না। হিতে বিপরীত হবে। কারন ধর্ম আমাদের উপমহাদেশের মানুষের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ধর্ম যেসব সামাজিক, নৃতাত্ত্বিক এবং মানসিক দাবি মেটাচ্ছে-সেটা সঠিক এবং বিজ্ঞান সম্মত ভাবে বোঝা দরকার। এটা বুঝতে হবে ধর্মগুলির সব কিছুই প্রতিক্রিয়াশীল নয়। এগুলো ঐতিহাসিক প্রতিবাদি আন্দোলন ও বটে। জনগনকে বোঝানো দরকার ধর্ম তাদের যেসব দাবি মেটাচ্ছে, তা বিজ্ঞান দিয়ে আর ভালো ভাবে মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ তাদের চেতনা মুক্তি ঘটাতে বিবর্তনের এই ধারাটিকেই বোঝাতে হবে। আমি প্রশ্নউপনিষদের বিরুদ্ধে না গিয়ে বরং বোঝাবো উপনিষদের প্রশ্নগুলি-যেমন প্রান কি? প্রানের স্বরুপ কি তা বিজ্ঞান দিয়েই ভাল বোঝা যায়। মুসলমানদের বোঝাতে হবে হজরত মহম্মদ যা করেছিলেন, সেটা ছিল সেই যুগের দাবী। এবং তিনি তার কাজটি ভালোই করেছেন। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারে ফলে, বিজ্ঞান দিয়েই বর্তমান যুগের দাবী মেটাতে হবে। সেখানে কোরান নিয়ে আসা মানে সভ্যতার সংঘাতে মুসলীমরা পিছিয়ে পড়বে। কোরান বেদ অভ্রান্ত এসব মানা যাবে না-কারন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অভ্রান্ত, পরম সত্য বলে কিছু হতে পারে না। পরম সত্যে বিশ্বাস মারাত্মকতম বিচ্যুতি। আর সেটা যদি সমাজ সংক্রান্ত হয়, তাহলে শাস্বত সত্য বলে আরোই কিছু হয় না-কারন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বলে সমাজ দ্রুত পালটাচ্ছে। জেনেটিক্সের উন্নতিতে বিয়ে বা সংসারের ধারনাটাই হয়ত আগামী শতাব্দিতে লুপ্ত হবে। জেনেটিক্স যদি মানব মনের মৃত্যুকে আটকাতে পারে, পরকালের ধারনাটাই লোপ পাবে।
মোদ্দা কথা আমাদের উপমহাদেশে চেতনা মুক্তির আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্র মানে রাষ্ট্রের উৎপাদন ব্যাবস্থাকে শুধু সরকারী করা নয়-এর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে সমাজতান্ত্রিক করা। সেটা না হলে সমাজতন্ত্র বলে কিছু নেই। যেটা আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ান এবং পূর্ব ইউরোপে কমিনিউস্ট ব্লকের পতন থেকে ভাল ভাবে জেনেছি। ওখানে সমাজতন্ত্র ছিল-কিন্তু সমাজতান্ত্রিক মানুষ ছিল না। মানুষকে সমাজতান্ত্রিক বানানো বর্তমানে প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। আমি মনে করি না সেটা রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটিয়ে সম্ভব। তাতে খামোকা স্টালিনের মতন দৈত্য তৈরী হবে-প্রচুর লোক খুন হবে বা অনাহারে মারা যাবে।
বরং বিজ্ঞান এবং গণতন্ত্রের পথেই সমাজতান্ত্রিক মানুষের আগমন আসন্ন। বাজার থাকলেও বাজার অর্থনীতির পতনআজ ত্বরান্বিত-কারন গোটা পৃথিবীটাই একটা সিঙ্গল মার্কেট হয়ে যাচ্ছে এবং সেই বাজারে অনিশ্চয়তা হ্রাস পেতে পেতে শুন্য হবে কম্পুউটার এবং ইনফর্মেশন এক্সপ্লোশনে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষের চাহিদাগুলো অতি সহজেই মেটানো সম্ভব হবে-সেক্ষেত্রে শ্রেনী দ্বন্দ, মানুষের ধনতান্ত্রিক প্রয়াস হ্রাস পাবে। ফলে প্রযুক্তির হাত ধরে যখন সমাজতন্ত্রের আগমন ত্বরান্বিত-তখন আমাদের বামপন্থীদের মেহনতি মানুষের জন্য লাশ হওয়া এবং লাশ ফেলার বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি এক তৃতীয় শ্রেনীর অবুঝ সার্কাস ছাড়া কিছু নয়। আসুন আমরা বিজ্ঞানের চেতনায় মানুষকে উদবুদ্ধ করি-জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্ত এবং সমাজের উন্নতির পথে বিজ্ঞানকেই আমরা হাতিয়ার করি। আমাদের সমাজে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং গণতন্ত্রের বিকাশ হলে, নিশ্চিত ভাবেই আমরা সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবো। সেটাই প্রযুক্তি নির্ভর সমাজের ভবিষ্যত।
৬/১২/০৮
খুবই ভালো লেখা। কিন্তু কয়েকটা জাগাত দ্বিমত পোষন করছি।
টেকনোলজি সাম্যবাদী সমাজও গড়ে তুলবে এমনটা হবে কি? অটোমেশনের কবলে পড়ে ম্যানুফ্যাকচারের প্রতিটা স্টেপে মানুষের কাজ হয়ে গেছে অক্সিলারি। মেশিন ঠিকমতন চলছে কিনা, কাঁচামাল ঠিকমতন যাচ্ছে কি না, বেশিরভাগ কাজ হয়ে যাচ্ছে এমন। ব্যাপারটা এখানেই থামছে না। AI এতটা এগিয়ে যাচ্ছে যে প্ল্যানিঙয়েও ঢুকে পড়ছে অটোমেশন। জব শিড্যুলিং, আউটসোর্সিং এগুলোও দিন দিন অটোমেশনের কবলে পড়ছে। এর ফলে মানুষের জন্য দিন দিন বেশিরভাগ কাজ হয়ে পড়ছে আরও একঘেয়েঃ মেশিন মেইনটেইন্যান্স আর ম্যাশিন ক্লিনিং টাইপের। হ্যা ক্রিয়েটিভিটির ডিমান্ড আরও বাড়ছে দিন দিন, কিন্তু সেই সাথে ম্যাশিনের অক্সিলারি হিসেবে কাজের জন্যও মানুষের প্রয়োজন পড়ছে আরও বেশি বেশি করে। আর এই সব মানুষ যত হ্রস্বদৃষ্টির হয় ততই ভালো। তার যদি ঐ ম্যাশিন মেইনটেন্যান্সের বাইরে দুনিয়ার কিছু না জানে তাতে আরও ভালো। এই ধরনের মানুষেরা বুঝছেনই তো হতে হবে মোডারেট ধার্মিক। যারা একদিকে ধর্মের জয়জয়কার করবে আর অন্যদিকে কষ্টের কামাই ভোগের পিছনে দিয়ে দেবে। আফিম এখানে শুধু ধর্ম একা না, ধর্ম + টেকনোলজির চাকচিক্য।
এককথায় আমি বলব টেকনোলজি তার নিজস্ব ট্রেন্ডেই আরেক শোষক স্বত্বা হয়ে ওঠার পথে। তাই টেকনোলজি একা সাম্যবাদ নিয়ে আসবে বলে মনে হয় না।
বিপ্লব বাবু, আপনার দেয়া লিঙ্কে ‘সমাজবাদী’মানবের তত্ব পেলাম না। এমনিতেও এটা উইকিপেডিয়া, যেটি কিনা নানা চিন্তার লোকে সম্পাদনা করে থাকেন। সমাজ বাদ যেখানে মার্ক্সবাদীদের চূড়ান্ত লক্ষ্যই নয় লক্ষ্যটি সাম্যবাদ, সমাজবাদ শ্রেণীর অস্তিত্ব সহ এক অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা মাত্র, সেখানে সমাজবাদী মানবের কথা মার্ক্স বলবেন কী করে? মার্ক্সবাদীরা শুধু আশা করে মানুষ নিজের শ্রমের উপর সমস্ত অধিকার অর্জন করে , এমন কি পশুবৎ দরকারের জীবন থেকেও মুক্ত হয়ে এক পরিপূর্ণ মানব হবে। সাম্যবাদী মানব বলেও কোন ধারণা মার্ক্সবাদে আছে বলে জানি না। অন্তত সমস্ত মানবজাতি নিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা শুনিনি। আমি নিচে মার্ক্সবাদী সাইটের লিঙ্ক দেব, আপনি সেখান থেকে পারলে সমাজবাদী মানবের ধারণার সম্পর্কিত উদ্ধৃতি দেখিয়ে দেবেন । “মার্কসবাদের অপব্যখ্যার চূড়ান্ত। মার্কসবাদে শুধু মাত্র শ্রেণির ভিত্তিতে, মালিক বনাম শ্রমিক, শোষিত বনাম শাসক এই ভাবেই দেখা হয়।” দেখুন ভাই, রাগ করবেন না, আপনার লেখা পড়ে এটাতো বোঝা গেল আপনি মার্ক্সবাদী নন, আপনার কোন বিপ্লবী কর্মসূচি নিয়ে চিন্তাও নেই। যদিও দুনিয়ার প্রায় সব নাস্তিকই শ্রেণি টেনি নিয়ে কথা বলেন। স্বয়ং মার্স্কের রচনাতেও স্রেফ দুই সমান্তরাল শ্রেণির কথা বলে কজথা ফুরিয়ে যায় নি, তবু সংখ্যালঘু জাতিসত্বাগুলোর পক্ষে যে বলশেভিকেরাও দাঁড়িয়েছিল, আর দাঁড়িয়েছিল বলেই সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়ে উঠেছিল, আর পরে যেই লাইন পাল্টালো তখনই সোভিয়েতে ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেল এর এক ধারণ আপনি জাতি সমস্যা নিয়ে সাতলিনের ১৯১৩তে এই লেখাতে পাবেন, দরকারে আমি পরে আরো দেবো। আর আপনার শ্রেণি ব্যাখ্যা যদি ঠিকও হয়, তবে তাতেই বা কী? যদি দুনিয়ার সব সাম্যবাদী দল সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তবে বুঝে নিয়ে হবে যে তাঁরা ‘মার্ক্সের ধারনা’ থেকে এগিয়ে এসছেন। নিশ্চয়ই মার্ক্সবাদীরা নাস্তিকদের থেকে মার্ক্সবাদের দীক্ষা নেবেন নাঃhttp://www.marxists.org/reference/archive/stalin/works/1913/03a.htm#s7 আর ইসরায়েলে কমিউনিষ্টরা দাঁড়াবে ‘মানুষে’র পক্ষে আপনার এই কথা বড় বিমূর্ত হয়ে গেল । সেই মানুষ কি তার মানে কোন সংগঠিত শক্তি নয়? কোনো জোটেও যাবে না, মার্ক্সবাদীরা? আপনার তত্ব মানতে গেলে যদ্দিন ইসলামী মৌলবাদীরা ফুরিয়ে না যাচ্ছে, তদ্দিন কমিউনিষ্টদের উচিত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে হাত পা গুটিয়ে বস এথেকে মার্কিনি আর ইহুদিবাদী দের মুক্ত বিচরণের সুবিধে করে দেয়া উচিত, কেননা কমিউনিষ্টদের জন্যেই তো মৌলবাদীদের এতো বাড়বাড়ন্ত। আপনার পুরো লেখা নিয়ে আমি কোন কথা বলিইনি। দেখুন ভাই, কেউ নাস্তিক হলেই বস্তুবাদী হয় না, কেউ ভাববাদী বা বস্তুবাদী তা বাস্তবের কষ্টিপাথরে যাচাই হয়, আপনি মূলত যে কথা এই নিবন্ধে লিখলেন তাতে বোঝা গেলো যে মুসলমান মৌলবাদীদের পক্ষে বামেরা দাঁড়ান বলেই হিন্দুত্ববাদীদের এতো বাড় বাড়ন্ত। ধরুন আপনার এই কথা সত্য। আমি কিন্তু সিপিএমকে কমিউনিষ্ট দল বলে মনেই করিনা। তবু ধরে নিলাম যে তারাও বাম। তো তাদের মুসলমান মৌলবাদ সংযোগের জন্যে কি হিন্দুত্ববাদীদের বাড়বাড়ন্ত সবচে বেশি পশ্চিম বাংলা বা কেরলে হওয়া উচিত ছিল না? গুজরাটে, মধ্যপ্রদেশে, উত্তর প্রদেশে , কর্নাটকে আপনি বাম পেলেন কৈ? কিম্বা বাংলাদেশেই আপনি হিন্দুত্ববাদী পেলেন কোথায়? কই , বামেরা মুসলমান দলগুলোর পাশে দাঁড়াবার জন্যে সেখানে যে হিন্দুত্ববাদীদের বাড়বাড়ন্ত সেরকম খবরতো আপনার লেখাতেও পেলাম না। ভারত থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দালাল বোর্জুয়া আর নানা সামন্তীয় শ্রেণিগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে শাসন এবং শোষন করছে যে সাম্রায্যবাদ তাঁর নিজের চেহারা লুকোতে তাঁকেই য এনানা অর্থনীতি বহির্ভূত উপায়ে নিজের শাসনকে বৈধতা দিতে হয়, আর তাতে করে সে ইসরায়েলে যেমন ইহুদীবাদীদের সঙ্গে জোট বাঁধে তেমনি ভারতেও যেখানেই এই শাসকদের বাজার কেন্দ্রের বাড়বাড়ন্ত সেখানেই হিন্দুত্বের বাড়বাড়ন্ত, (কর্ণাটকের হিন্দুত্ববাদীদের উত্থানের ব্যাখ্যা এভাবেই করা যায়), কিম্বা সৌদী-কাতারের মতো দেশে সরকারী ইসলামের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ এগুলো আপনার নজরেই পড়ল না। বামেরা মুসলমানদের সঙ্গে দাঁড়ানোতে যদি কোনো হিন্দু বিজেপির দিকে চলে যায়, তো হাজারবার যাক, তার মানে সে শাসক শ্রেনির লোক, কোন বিপ্লবী লক্ষ্যই নেই। শুধু শুধু ‘বামব্লক’ বাড়িয়ে নাস্তিকদের সুবিধে করে দেবে কেনো বলুন? আপনি সত্যি বলেছেন হিন্দুত্ব শিবিরে প্রচুর নাস্তিক আছেন। তার মানে দাঁড়ালো, নাস্তিক হলে মৌলবাদী হতে এবং শাসকীয় কৌশলের সঙ্গে মিশে যেতে কারো কোন অসুবিধে হয় না। ‘নাস্তিকতা’ নিজে থেকে তাই কোন বাহাদূরীর বিষয়ই নয়। চীনের বর্তমান শাসকেরাও নাস্তিক। পৃথিবীর সবচে নিপীড়ক সেনা শাসিত পূঁজিবাদী দেশ, যারা সামাজিক বৈধতা লাভ করে এক প্রবল হান জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে।
@সুশান্ত কর,
লেখা কোট করার খুবই সহজ একটা পদ্ধতি আছে। এটা করলে যারা পাঠক তাদের মন্তব্য পড়তে আর বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন ধরুন আপনি একটা লাইন কোট করতে চাচ্ছেন যেটা হল বিল্পব পালের এই লাইনটাঃ
মার্কসবাদের অপব্যখ্যার চূড়ান্ত। মার্কসবাদে শুধু মাত্র শ্রেণির ভিত্তিতে, মালিক বনাম শ্রমিক, শোষিত বনাম শাসক এই ভাবেই দেখা হয়।
এটাকে যখন আপনার মন্তব্যে কোট করবেন তখন এই লাইনটাকে কপি করে আপনি আপনার মন্তব্যের যেখানে কোট করতে চান সেখানে পেস্ট করবেন। করার পরে লাইনটাকে মাউসের কার্সর দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে নির্বাচন করবেন ঠিক যেমনভাবে কপি করার সময় নির্বাচন করেছিলেন। এরপরে নির্বাচন করা অবস্থায় মন্তব্য ঘরের উপরের দিকে লেখা উদ্ধৃতি ট্যাবে ক্লিক করবেন। তাহলেই হয়ে গেল। মন্তব্য করা শেষে যখন সেটা প্রকাশিত হবে তখন সেটা কোট হয়ে যাবে। নিশ্চিত হবার জন্য মন্তব্য করুন এর পাশেই প্রিভিউ লেখা ট্যাবে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।
আলোচনা চলতে থাকুক।
–মুক্তমনা মডারেটর
মার্ক্সীয় সমাজব্যবস্থায় প্রবেশের একটা গুরুত্বপূর্ন ধাপ সমাজতান্ত্রিক মানুষের সৃষ্টি। আমার ধারনা ছিল এই সামান্য তথ্যটা যারা মার্ক্সবাদের বাংলা চটি বই পড়েছে তারাও জানে। আপনার জন্য ও দিলাম
http://en.wikipedia.org/wiki/Marx's_theory_of_human_nature
মার্কসবাদের অপব্যখ্যার চূড়ান্ত। মার্কসবাদে শুধু মাত্র শ্রেণির ভিত্তিতে, মালিক বনাম শ্রমিক, শোষিত বনাম শাসক এই ভাবেই দেখা হয়। আপনার এই অভিনব মার্কসবাদটি কার আবিস্কার তা জানলে বাধিত হয়। কারন ধর্ম জাতির ভিত্তিতে সংখ্যালঘু ব্যাপারটা মেনে নেওয়া মানেই ক্লাসকে অস্বীকার করা।
সাম্য প্রতিষ্ঠা হয় উৎপাদন এবং বন্টনে সম অধিকারে। সেটার ধাপের মধ্যে সংখ্যালঘু তোষন পড়ে না। এই ধরনের উদ্ভট মার্কসবাদের উৎস কি?
তারা মানুষের পক্ষে দাঁড়াবে। এক মৌলবাদির পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্য মৌলবাদ ধ্বংস করা যায় না। এটা ইতিহাসের সরল শিক্ষা।
@বিপ্লব পাল,
প্রায় চার বছর আগে এই লেখাটা লিখেছিলেন। বিগত চার বছরে বাংলাদেশে অনেক ধর্মীয় (পড়ুন ইসলামী) সন্ত্রাসী কান্ড ঘটেছে, আর সব ঘটনায়ই, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঙ্গালী নিধনে, সাতক্ষীরায় হিন্দু পাড়ায়, রামু্র বৌদ্ধ পাড়ায় আমাদের কম্যুনিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা আমেরিকার ষঢ়যন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন, এমন কি আরিফের কার্টুনেও। আমেরিকার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে গিয়ে বামপন্থি নেতা কার্টুনিষ্ট আরিফের বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের মিছিলে যোগদান করেছিলেন এরও সাক্ষী আছে। হালের নাফিসের ঘটনায় বাংলাদেশে আমেরিকার সামরিক ঘাটি স্থাপনের ফন্দিও আবিষ্কার করে ফেলেছেন। একটি লেখায় পড়েছিলাম-
আপনি কি জানেন, এই তথ্যটা কতটুকু সঠিক?
@আকাশ মালিক,
মনসুর হেকমতের জীবনী নিয়ে একটু নারাচারা করুন-জানতে পারবেন ইরানের কমিনিউস্ট আন্দোলন যা পল্লভ রেজভির সময় খেমেইনির চেয়ে বেশী শক্তিশালী ছিল, তা ইসলামিক বিপ্লবের কাছে সম্পূর্ন আত্মসমর্পন করে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Mansoor_Hekmat
http://www.m-hekmat.com/
ইরানে মনসুর হেকমত এর মিলিটান্ট কমিনিউস্ট পার্টি একমাত্র খেমেইনিকে মেনে নেয় নি। যার জন্যে ইসলামিক বিপ্লবের পরেই হেকমতকে পালাতে হয় ইরান ছেরে।
“
“মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্র মানে রাষ্ট্রের উৎপাদন ব্যাবস্থাকে শুধু সরকারী করা নয়-এর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে সমাজতান্ত্রিক করা। ” এটা কোথায় পেলেন জানি না। মার্স্কবাদীদের কাছে সমাজবাদ চূড়ান্ত লক্ষ্যই নয়। আবার সমাজতান্ত্রিক মানুষ বানাবে কেন? ওখানে আটকে গেলে স্তালিনের মতো দত্য হবেন বটে? শুধু, স্তালিন কেন ক্রুশ্চেভ থেকে ব্রেজনেভ, দেং শিয়াও পিং থেলে লি পেঙ-ও হবেন। কিন্তু যেটি বললেন, মার্ক্সবাদীরা প্রথমত সংখ্যালধুদের পক্ষে দাঁড়াবেনই। সে ধর্মীয় হোক, বা ভাষিক বা নৃগোষ্ঠীগত। যিনি দাঁড়াবেন না, তিনি মার্ক্সবাদী নন, তাঁর কোন সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নেই। আর বাংলাদেশের বা ইরাণে মতো দেশে যে ইসলামপন্থীরা সাম্রায্যবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন তাদের সঙ্গে আঁতাতও করবে। আঁতাত মানে আত্মসমর্পণ নয়। মার্ক্সবাদ সংগ্রাম এবং ঐক্যের নীতি মেনে চলেন। যেই যে মিশরে গণবিদ্রোহ হলো, তাতে ইসলামী গোষ্ঠীগুলো ছিল। তাতে কি মার্ক্সবাদীদের উচিত ছিল সরে থাকা? তাতে কিছু লোক ‘বামব্লকে’ থাকতেন বটে কিন্তু মূল সংগ্রামের কী হতো? সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাঁড়াবার জন্যে যদি ভারতে কিছু লোক বিজেপির দিকে চলে যায়–তাদের যাওয়াই উচিত। এদের নিয়ে বাম ব্লক করে লাভ? আপনিতো বিপ্লব চাইছেন না। তাই আপনি ‘বামব্লক’চাইছেন। সে আপনি চাইতেই পারেন। কিন্তু তাদের যে লক্ষ্য আলাদা। কিন্তু যখন জল-জমিন -জঙ্গলের জন্যে লড়েন মানুষ তখনো কি তারা বিজেপি-র দিকে চলে যান? বিজেপি -থাকে কৈ? সেই লড়াই গুলোহে বামেদের স্থিতি এবং শক্তি নির্ধারণ করে । নাস্তিকতা এবং নিরপেক্ষতা নয়। তাতে আপনিও বামেদের প্রতি মোহ হারাতে পারেন। সে আপনার ইচ্ছে। কিন্তু তাই বলে তাঁরা লড়াই এবং কৌশলগুলো বাদ দেবেন কেন? এই যে ইসরায়েল গাজাতে হামলা চালাচ্ছে, বামেরা কী করবে? ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়াবে? কেননা উল্টোদিকে আছে হামাস–মৌলবাদী! তাতে যদি কোন দেশে কিছু দিন বাম শক্তি মাথা তুলে নাও দাঁড়ায় তাতেই বা কী? বাম শক্তি মতাদর্শের জোরে দাঁড়ায় না শুধু। তার বাস্তব পরিস্থিতি তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
@সুশান্ত কর,
আমি আপনার জবাবে নীচে একটি নতুন থ্রেড খুলেছি।
:guli:
বিপ্লব পালকে ধন্যবাদ। আমাদের উপমহাদেশ এর কমুনিস্ট আন্দোলনের এক অতিব
বেদনাদায়ক ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য। ধর্মিয় অপবিস্বাস, নিয়তিবাদ, পরমেশ্বর,
পরকাল জাতিয় ধ্যানধারনার বিরুদ্ধে মননশীল যুক্তিনিষ্ঠ সামাজিক সাংসকৃ্তিক আন্দোলন
গড়ে তোলার মত চিনতা চেতনা কমুনিস্ট নেতাদের ছিলনা। এমনকি ক্ষমতায় সমাসীন
হয়েও যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্কুল সিলেবাসের অন্তরভুক্ত করার
প্রয়োজনীয়তা টুকুও অনুভব করেননি। যদি করত তবে বিন্দু বিন্দু করে তা আজ
সিন্ধুতে পরিনত হত। যা হয়নি তা নিয়ে আফশোষ করে লাভ নেই। হয়তবা তা পঞ্ছাশ
বছর পিছিয়ে গেছে কিন্তু প্রদীপ শিখা নিভে যায়নি। কমুনিস্ট আন্দোলন ও বামপন্থিদের
অনেক ভুলভ্রান্তি, অদুরদর্শিতা ছিল ও আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিনতু সমাজপ্রগতির
ধারায় বাম মতাদর্শের যে অনেক অনেক অবদান আছে তা সিকার করতেই হবে। আমার মনে হয় এই মুক্তমনার সদস্যের প্রায় একশো জনই বাম ঘরানার ফসল। এবং আগামি
দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ধরেই নিনা বামপন্থিরা হালচাষ করে দিয়ে গেছেন
বীজ রোপন থেকে ফসল তোলার দায়িত্ত আজকের দিনের প্রগতিবাদিদের।
ভাল লেখা। এধরণের লেখা আমাদের সবার বারবার পড়া উচিত। লেখককে ধন্যবাদ।
This is disgusting but not surprising. I was shocked to find out that the CPB office in Sylhet, BD was recently been reclaimed by a hindu family who claims that it was illegally occupied by the party. So much for the social reform (“shomaj poriborton”) by the comrades. No wonder what happened in eartern Europe. Pity that there is no alternative political party yet based on scientific and progressive ideology. The Comis are taking this advantage and deceiving people by claiming their ideoloy is scientific.
খুবই সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় লেখা বিপ্লবের। আমি বিপ্লবের অনেক বক্তব্যের সাথেই একমত। বামপন্থি ব্লগারদের বিভিন্ন লেখা সাইট এবং ব্লগে আমি দেখেছি। তাদের অনেকেরই একটাই সমস্যা। মৌলবাদকেও তারা সময় সময় শ্রেনী সংগ্রাম এবং বিপ্লবের ছাঁচে ফেলে বৈধতা দিতে চান। ৯/১১ এর পর পর ফরহাদ মজহার সাহেব বলেছিলেন – ওটা নাকি বিপ্লব। তিনি বিন লাদেনকে স্ট্যালিনের সমতুল্য মনে করেছিলেন। আর এক বামব্লগার সম্প্রতি মুম্বাইইয়ের ঘটনার দিন কয়েক পরেই একটা কন্সপিরেসি থিওরী লিখে ফেললেন – হিন্দু জঙ্গিরাই নাকি মুম্বাইয়ের ঘটনার পেছনে দায়ী। আরেকটা লেখার অনুবাদ আবার প্রথম আলোতে পাঠিয়েছেন – আমেরিকাকে এই ঘটনার পেছনে দায়ী করে। আমেরিকা যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাতে কোনই সন্দেহ নেই, পৃথিবীর অনেক কুকীর্তির পেছনেই আমেরিকা বহুলাংশে দায়ী – কিন্তু আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ রুখতে এখন ইসলামী মৌলবাদকে তোষন করা শুরু হবে এমন তো কোন কথা নেই। আসলে এই জায়গাতেই ওই সব বামপন্থিরা দারুনভাবে ব্যর্থ। তারা বোঝেন না যে, মানুষকে বস্তুবাদের আওতায় আনতে হলে মৌলবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করা জরুরী। মৌলবাদকে তোষণ করে মার্ক্সিজম কায়েম করা যায় না। মুশকিল হল, এই পতিত বামপন্থীদের অনেকেই ধর্মীয় আবেদন এবং এর ফলশ্রুতিতে বেড়ে ওঠা মৌলবাদকে জনগনের অংশ হিসেবে দেখেন, তারা বোঝেন না যে, Religious Fundamentalism Does NOT Represent the Interests of the Masses। তারা বোঝেন না যে, বিপ্লবের তত্ত্ব কথা আউড়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে বৈধতা দিতে গিয়ে প্রকারান্তরে তারা মৌলবাদের হাতকেই শক্ত করে তোলেন।
আমি আধুনিক বামপন্থিদের মধ্যে একমাত্র বব এভেকিয়ান এবং তার সংগঠনকেই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে একই রকমভাবে সোচ্চার থাকতে দেখেছি। আমি মনে করি পতিত বামপন্থীরা এভেকিয়ানদের লেখা থেকে তাদের নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারবেন। আমি এখানে Sunsara Taylor এর একটা লেখা দিলাম। এটা বামপন্থিদের জন্য অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিৎ। —
U.S. Imperialism, Islamic Fundamentalism…and the Need for Another Way
নাইম,
ঈশ্বরের অভ্রান্ত সত্যকে মেনে নিলে পৃথিবীতে কোন দিন ই শান্তি আসবে না। কারন ঈশ্বরের বাণীগুলো একটু পুরানো কি না। আর আজকাল কেও নতুন কোন নবীকে মেনেও নেবে না? আমার শেষ পারাতে আমি বলেছি কি করা যেতে পারে। নাস্তিকতা-আস্তিকতা কোন ইস্যু ই না। আসল ইস্যুটা হল-আমাদের মানসিক বা নৃতাত্ত্বিক চাহিদা গুলো ধর্ম না বিজ্ঞান মেটাবে? যদি ধর্ম মেটায়-তাহলে ধর্মীয় পরিচিতির সমস্যা থেকেই যাবে। রাষ্ট্র এবং ধর্ম-কোনটাই ভবিশষ্যতে টিকবে না। তাই এগুলোকে আগে বিদায় করাই ভাল। ধর্ম উঠে যাওয়া মানেই ঈশ্বর/আল্লা থাকবে না তাও নয়-ধর্ম বিহীন আধ্যাত্মিকতা ও সম্ভব-বৌদ্ধ ধর্ম যেরকম-সেই রকম অনেক দার্শনিক চিন্তাও মানুষকে একই জিনিস দেয় যা ধর্ম দিয়ে থাকে।
apni ki dhormer gorami thekate chachen naki dhormo ke thekate chan? ai duniata kokhonoi nastik ba sudhu austiker ovoy vumi hobena eta dhore nea jae. amar mone hoy sokoler shanti purno shoho obosthsn e amader kammo. ushke dea opobekha dea somadhaner pothke choto kore ki lav ? birodh ke sohoneo matrae nea ashar jonno notun kono poth khujte hobe.
desh nea judha hote parle dhormo nea judho hote parbena keno ? ami dhormeo goramir birudhe. dhormo nea barabari valo noy abar dhormo hinota neao barabari valo noy, eta valo hoyni kokhono, ekhono valo hochena ar kokhonoi valo hobena, karon amra sobai valo ar shustho chinta theke ekhono onen dure auchi.
There is no doubt Islamist took best advantage of youtube media. I told this to founder of this site Avijit to take advantage of youtube as that is the media at present. But again there is a very little audience for bengali scientific media-my bengali political cultural video gets around 1000 hits per content in 6 months where as for scientific contents in Bengali-turn out is only 200 per video. However, scientific contents in English against religion is very popular in youtube-my experience is around 1500 hits per content in 6 months. Hit is nothing, but it speaks of Bengali mindset.
নন্দিনী,
একটা গল্প বলার লোভ সামলাতে পারছি না।
বছর দুই আগে দেশে বাড়িতে গিয়ে এক প্রতিবেশী সিপিএম কাকুর বাড়িতে গেলাম। যিনি কেন্দ্রীয় স্তরের শ্রমিক নেতা। তার স্ত্রী ও অনেক দিন থেকেই নেত্রী।
ছেলের সদ্য বিয়ে দিয়েছেন। মাসিমা আমাকে ডেকে বললেন-তোমার কাকুর ভিমরতি হইছে,বুঝল্যা
আমি বল্লাম -কেন কি হইলো?
-আরে বলো না, সে বৌমা কে চাকরি করতে দেবে না। এইটা কি আমাদের মতন প্রগ্রেসিভদের মানায়, তুমি ই বল? আমি জোর করে তাকে চাকরি করতে পাঠালাম।
হয়ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা-কিন্তু এটাই পুরুষ বামপন্থীদের চরিত্র। এরা নিজেদের বৌদের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে উদার থাকলেও ছেলের বৌদের বেলায়, পুরুষতন্ত্রের ঢেকুর তোলে। চেনতা মুক্তির আন্দোলন না হলে-এমন ই হবে।
@Supa,
I could not post this article to CPM forum in orkut (which is probably largest internet group of CPM members with 25,000 members) where I have been banned even before I have written anything. They are very crude and intolerant leftist. However, Naxilde leftist groups have welcomed my writings even if we have stiff ideological differences. What CPM thinks on religion-we had a debate on party policy recently and knowledge of the comrades are disgusting.
One more thing: I find it ironic that the “medieval” Islamists have huge presence in modern internet, whereas you wont find a lot of info on so called “scientific” minded progressive movement.
You will find web sites, youtube videos from ICS (Islamic Chhatra Shibir) etc. but not much info on BCU (Bangladesh Chhatra Union) who made a lot of positive impact in pre-independent Bangladesh (East Pakistan). Also, I have met individual talents from those “progressive” parties, but none of them has any “process” to produce leaderships. The only exception is ICS (previously known as Islami Chhatra Shongho). I give full credit to them for their organisational processes and I think the “progressive” “scientific minded” parties have a lot to be learned from them.
Good thinking Biplob – keep it up. I have seen 99.99% socialists/communists know very little about their ideology and “believe” that Marx’s verses are scientific and have emmotional attachment to it. However, they often forget that science is dynamic and scientific theories are not based of blind faith but experiments and facts.
Wish I could forward these articles to CPM, CPB, CPI and others who might benefit from these articles. Also, it’s unfair to hear one side of the story. I wonder what’s their thought on this subject and whether they have any strategies for future relevance.
বিপ্লব, আপনার এই অসাধারণ লেখাটার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আমাদের উপমহাদেশের বিশেষ করে বাঙ্গালী হিন্দু/মুসলিম বামপন্থীদের চিন্তা-চেতনা,আচার আচরণ সম্পর্কে আপনি যে বিশ্লেষণ করেছেন – তার সাথে আমি পুরোটাই একমত । বাংলাদেশেও আজ যে জামায়াতী ইসলামী সহ অন্যান্য ধর্মবাদী দলগুলো শনৈ শনৈ বেড়ে চলেছে তার পিছনে বাংলাদেশের বামপন্থীদের অবদান ও বড় কম নেই । তারা সব কিছুতেই আমেরিকার ষড়যন্ত্র দেখেন । ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিরীহ মানুষ মারা পরে শয়ে শয়ে – তাতেও ‘ধর্মে’র দোষ নেই, সব দায় ‘আমেরিকার’ ! আমাদের বামপন্থী দলগুলোর মারাত্বক এই ব্যর্থতার দায় আমাদের বহন করতে হচ্ছে । আরো কতকাল তা বহন করতে হবে কে জানে । হ্যাঁ, চেতনা মুক্তির আন্দোলন ছাড়া কোন পথ তো আসলেই দেখিনা ।
আপনার উপরের এই কথাগুলোর সাথে আমি দ্বিমত করার কোন কারণ দেখিনা । কেনো যেনো আমার সব সময়ই একটা কথা মনে হয় – ‘ধর্মনিরেপেক্ষতা’ অথবা এই জাতীয় শব্দগুলো একজন নারী যতখানি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করে,বা করতে সক্ষম,ততটা পুরূষ পারেনা । কারণটা খুবই সহজ – দেশে দেশে পারিবারিক,সামাজিক,রাষ্ট্রিয় এবং ধর্মীয় যত নিগড় আছে, সবইতো নারীর জন্য – পুরূষের তো সে অর্থে বড় কোন ক্ষতি নেই ! তাই নারীর সামগ্রিক জাগরণটা বড় জরুরী । বামদলের কিছু নারী দিয়ে কি হবে ? উপমহাদেশের মুসলিম নারী প্রজাতির মাথা তো জ্যামিতিক হারে হিজাবে ঢেকে যাচ্ছে – এদের মুক্ত চিন্তার অবসর বা সুযোগ কোথায় ? আমি একজন নারী হিসেবে এই যে হতাশার কথাটা বার বার উচ্চারণ করি – কারণ এ আমার বড় বেশী কাছ থেকে,ভিতর থেকে দেখা সব । এখানে আমি আশার কিছু দেখিনা । তারপর ও আমি মানুষটা যেহেতু হতাশাবাদী নই – কিছু সময়ের জন্য হলেও খড়-খুটো পেলে, তা ধরে উজ্জিবীত হবার চেষ্টা করি …।
Its a very good article. Excellent analysis. Thanks.